মোবিনুল আজিম

বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী

মোবিনুল আজিম (২৪ নভেম্বর ১৯৩৪ - ১ নভেম্বর ১৯৭৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তাকে ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে তাকে ভারত উপমহাদেশের অন্যতম চিত্রশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হত। ১৯৬১ সালে তার প্রথম দ্বৈত চিত্রকলা প্রদর্শনীর পর তিনি পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৭টি একক ও ৩৭টি দলগত প্রদর্শনী করেছেন। তিনি ১৯৬৩, ১৯৬৪ ও ১৯৬৭ সালে করাচি আর্ট কাউন্সিলের বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। আজিম শিল্প জীবনে শিখরে থাকাকালীন ১৯৭৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯৭৬ সালে ঢাকা ক্লাবে ও ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তার চিত্রকলার প্রদর্শনী হয়। বাংলাদেশ সরকার সম্মানের প্রতীক হিসাবে তার একটি বিশ্বমানের চিত্রকর্ম যুক্তরাজ্যের লন্ডনের সোনালী ব্যাংক শাখায় এবং একটি বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে টাঙ্গিয়ে রেখেছে। চিত্রকলায় তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে তাকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।[]

মোবিনুল আজিম
১৯৫২ সালে আজিম
জন্ম(১৯৩৪-১১-২৪)২৪ নভেম্বর ১৯৩৪
লৌহজং, বিক্রমপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১ নভেম্বর ১৯৭৫(1975-11-01) (বয়স ৪০)
ঢাকা, বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনচারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচিত্রশিল্পী
কর্মজীবন১৯৫৭-১৯৭৫
দাম্পত্য সঙ্গীমমতাজ আজিম
(বি. ১৯৬৫; মৃ. ১৭৯৫)
সন্তান

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

আজিম ১৯৩৪ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) বিক্রমপুরের লৌহজংয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[] তিনি আরমানিটোলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন, এবং পরবর্তী কালে ১৯৫১ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। সেখানে তার শিক্ষক ছিলেন জয়নুল আবেদিন। ১৯৫২ সালে তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২১শে ফেব্রুয়ারির মিছিলে গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে মিটিং সংগঠিত করেন এবং ভাষা আন্দোলনের উপর অনেক পোস্টার ও চিত্র অঙ্কন করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

তিনি শিল্পচর্চার জন্য ১৯৫৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহরে চলে যান এবং সেখানে ষোল বছর কাটান। আজিম পাকিস্তানের অ্যালায়েন্স ফ্রান্সিস করাচিতে শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। তিনি পাকিস্তানের করাচির পাক-আমেরিকান সেন্টার এবং ঢাকার শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষকও ছিলেন।

তার প্রথম দ্বৈত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে।[] বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের চারুকলা বিভাগে শিক্ষক পদে যোগদান করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন।[] জীবদ্দশায় তার ৫৪টি চিত্রকলা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়; যার ১৭টি ছিল একক এবং ৩৭টি দলগত প্রদর্শনী। পশ্চিম পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে তার ৪০টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৪টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে।[] ১৯৭৩ সালে ঢাকার দেশ আর্ট গ্যালারিতে তার একটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।।[] মরণোত্তর তার দুটি একক প্রদর্শনী হয়; ১৯৯৮ সালে শিল্পকলা একাডেমীতে তার ছবির প্রদর্শনী হয়, ১৯৭৬ সালে ঢাকা ক্লাবে ও ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তার চিত্রকলার প্রদর্শনী হয়।[] ২০১২ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি যৌথ প্রদর্শনীতে তার চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়।[]

ব্যক্তি জীবন ও মৃত্যু

সম্পাদনা

আজিম ১৯৬৫ সালে মমতা আজিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই কন্যা - হুমায়রা আজিম ও সুমায়রা আজিম। আজিম ১৯৭৫ সালের ১লা নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[] তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মমতাজ মোবিনুল আজিমকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন, নিবন্ধ ও আলাপচারিতা এবং তার কর্মসমূহ সংরক্ষণ করেন এবং এসব বই আকারে নথিবদ্ধ করেন। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স আজিমের সম্মানার্থে ২০১৫ সালে মোবিনুল আজিম - কালারস অ্যান্ড ড্রিমস (মোবিনুল আজিম - রঙ ও স্বপ্ন) নামে এই সংগ্রহ প্রকাশ করে।।[] এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে মোবিনুল আজিম - কনটেম্পরারী আর্ট সিরিজ (মোবিনুল আজিম - সমসাময়িক শিল্পের ধারাবাহিক) নামে আরেকটি বই প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা
  • করাচি আর্ট কাউন্সিলের বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনীর প্রথম পুরস্কার - ১৯৬৩, ১৯৬৪ ও ১৯৬৭
  • শিল্পকলায় একুশে পদক (মরণোত্তর) - ২০১২[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "একুশে পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ 
  2. "চিত্রকর মোবিনুল আজিমের জন্মবার্ষিকী আজ"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৪ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Homage to MUBINUL AZIM"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ 
  4. "'Mubinul Azim: Colours and Dreams'"দ্য ডেইলি অবজারভার। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫। ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ 
  5. "চিত্রকর মোবিনুল আজিমের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ"দৈনিক জনকণ্ঠ। ১ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. হোসেন, মনোয়ার (১ নভেম্বর ২০১১)। "চিত্রশিল্পী মোবিনুল আজিম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের শিল্পকর্মের স্রষ্টা"দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "Mubinul Azim - Remembering a pioneer in Bangladeshi art"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ 
  8. "একুশে পদক পেলেন ১৫ জন"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা