মেট্রোসেক্সুয়াল
পৌরকামী কথাটি দিয়ে (বিশেষত শিল্প-বিপ্লবোত্তর ও পুঁজিবাদী) পৌর বা মহানগর এলাকাতে বসবাসকারী কিছু পুরুষকে বোঝানো হয়, যারা তাদের সাজসজ্জা এবং প্রদর্শনীর ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন ও যত্নবান, এর পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় এবং অর্থও তারা পোশাক ও প্রসাধনী কেনাকাটার পেছনে ব্যয় করে থাকে।[১] এর ইংরেজি পরিভাষা "মেট্রোসেক্সুয়াল" একটি জোড়কলম শব্দ, যা মেট্রোপলিটান ও সেক্সুয়াল শব্দ দুইটিকে জোড়া লাগিয়ে ১৯৯৪ সালে উদ্ভূত হয়। উক্ত নবসৃষ্ট শব্দটি ঐ সব বিপরীতকামী পুরুষকে বোঝানোর ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা বাহ্যিকভাবে সাধারণত মহিলা বা সমকামী পুরুষদের অনুরূপ বেশভুষাশৈলী ও জীবনচর্যা অনুসরণ করে থাকে। যদিও উক্ত পরিভাষাটি মূলত বিপরীতকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোহ্য, তার পরেও যে কোন যৌন অভিমুখিতার ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই পরিভাষাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।[২]
-
লন্ডনের জেরেমি স্ট্রিট-এর পুরুষদের একটি বস্ত্রালয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত আদর্শিক রিজেন্সি শপার বো ব্রুমেল-এর সম্মানার্থে নির্মিত একটি ভাস্কর্য।
-
মেট্রোসেক্সুয়াল পুরুষের মতবাদটির সঙ্গে পুরুষদের বেশভুষাশৈলীর শিল্প ও ভোগ্যপণ্য শিল্প ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
-
২০০২-র সিম্পসন প্রবন্ধে ডেভিড ব্যাকহ্যামকে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় মেট্রোসেক্সুয়াল পুরুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা এই পরিভাষাটির জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
-
খুচরা বিক্রয় গবেষক মার্শাল কোয়েনের ২০০৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুষেরা তাদের নিজের পোশাকের ৬৯ শতাংশ নিজেরাই কিনছেন, যার অধিকাংশটাই পূর্বে তাদের নিকটসম্পর্কের নারীরা তাদের জন্য কিনে দিতেন।
সম্পর্কিত পরিভাষা
সম্পাদনাআরেকটি উদাহরণ হল স্বল্প-স্থায়ী পরিভাষা "উবারসেক্সুয়াল"; আরবান ডিকশনারি অনুযায়ী: "একজন পুরুষ যে মেট্রোসেক্সুয়াল সমতুল্য হয়েও নিজ যৌন অভিরুচি সম্পর্কে কোন সন্দেহ না রেখেই আত্মবিশ্বাস, শক্তি, ও শ্রেণীমর্যাদার মত প্রথাগত পৌরুষ গুণাবলি প্রদর্শন করে। "[৩]। এই পরিভাষাটি দ্য ফিউচার অব দ্য মেন নামক গ্রন্থের লেখক ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপকেরা তৈরি করেছিলেন এবং সম্ভবত এটি সিম্পসনের ব্যবহৃত উবের-মেট্রোসেক্সুয়াল নামক পরিভাষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যা ডেভিড ব্যাকহ্যামকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত।[৪]
নার্সিসবাদ
সম্পাদনাসিম্পসনের বক্তব্য অনুসারে, মেট্রোসেক্সুয়াল মতবাদের পেছনে আত্মকাম সূক্ষ্মভাবে ভূমিকা পালন করে। মেল ইম্পারসনেটরস নামক বইয়ে তিনি "পৌরকাম বোঝার জন্য আত্মকাম বোঝা কতটা কার্যকর" তা ব্যাখ্যা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আত্মকামের উপর ফ্রয়েডের দেয়া তথ্যসূত্র উল্লেখ করেন, যা আত্মকামের মনস্তাত্ত্বিক উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করে এবং আত্মকামী প্রেমকে ব্যাখ্যা করে:[৫]
একজন ব্যক্তি প্রেমে পড়তে পারে: (১) আত্মকামী ধরন অনুসারে: (ক) যা সে নিজে, (খ) যা একদা সে ছিল, (গ) যা সে হতে চায়, (ঘ) এমন কেউ যে পূর্বে কখনো তার নিজের অংশ ছিল।
— সিগমুন্ড ফ্রয়েড, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের প্রধান রচনাবলী
২০০২ সালে, মিডিয়া স্পোর্ট স্টারস: ম্যাস্কুলিনিটিজ অ্যান্ড মোরালিটিজ বইতে উক্ত মতবাদটি আরও বিশদভাবে আলোচিত হয়, যেখানে গ্যারি ওয়েনেল ইংরেজ ফুটবল খেলোয়াড় ডেভিড বেকহ্যামের আত্মকামী আত্ম-শোষণকে প্রচলিত বিজয়ী পুরুষত্ব নীতির একটি ভাঙ্গন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Collins, William। "Metrosexual"। Collins Unabridged English Dictionary। Harper Collins। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Simpson, Mark (২২ জুলাই ২০০২)। "Meet the metrosexual"। Salon। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "TOP DEFINITION: Ubersexual"। Urban Dictionary। ১১ অক্টোবর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Simpson, Mark (২০০৫)। "Metrodaddy v. Ubermummy"। 3am Magazine। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Freud, Sigmund (১৯৫২)। The major works of Sigmund Freud। Chicago: William Benton।
- ↑ Coad, David (২০০৮)। The Metrosexual: Gender, Sexuality and Sport। Albany, NY: State University of New York Press, Albany। পৃষ্ঠা 187। আইএসবিএন 9780791474099। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Simpson, Mark (2011).'Metrosexy: A 21st Century Self-Love Story'
- O'Reilly, Ann; Matathia, Ira; Salzman, Marian (2005). The Future of Men, Palgrave Macmillan. আইএসবিএন ১-৪০৩৯-৬৮৮২-৯.
- Rodney E. Lippard (২০০৬)। "The Metrosexual and Youth Culture"। Greenwood Publishing Group। Contemporary Youth Culture: An International Encyclopedia (illustrated সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 288–291। আইএসবিএন 0-313-33729-2।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- 'Metrodaddy Speaks!' Mark Simpson answers questions from the global media in 2004
- 2005 reassessment by Simpson
- "The Metrosexual Defined; Narcissism and Masculinity in Popular Culture" Article exploring the commercial and sociological sides of the metrosexual
- [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে The Metrosexual: Gender, Sexuality, and Sport by David Coad. Albany, New York: SUNY Press, 2008
- Media Sport Stars: Masculinities and Moralities, Gary Whannel, Jstor, 2002[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]