মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য

মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক (জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ১২ জানুয়ারী, ২০১৪ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪ তারিখে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[][][] ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জামানত হারান। []

মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক
সাবেক মন্ত্রী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1941-02-16) ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ (বয়স ৮৩)
কালিকাপুর, মান্দা, নওগাঁ জেলা
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সন্তানশেফায়েত জামিল প্রামাণিক (সৌরভ) সুজাউদ্দৌলা প্রামাণিক (বিপ্লব)
পেশারাজনীতিবিদ
ধর্মমুসলিম
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬)

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ জেলা মান্দা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে।[] তার পিতা হযরতুল্যা প্রামাণিক এবং মাতা তুলা বেগম। তিনি তার পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান।

শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ১৯৪৮ সালে মান্দা উপজেলার চক কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি স্থানীয় কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। অতঃপর তিনি ১৯৬১ সালে নওগাঁ বিএমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬৫ সালে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

নওগাঁ ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন নওগাঁ মহুকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রতিটি গ্রামে/মহল্লায় মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিলে জনাব ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক তার নির্বাচনী এলাকা মান্দা থানা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার লক্ষ্যে মান্দার সর্বত্র জনসংযোগ করে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মান্দা থানা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ-এর সভাপতি, নওগাঁ মহুকুমা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মালদহে ৭নং সেক্টর জোনাল কাউন্সিলরের সদস্য, ১৯৮৬ থেকে অদ্যাবধি নওগাঁ জেলা অফিসার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি, জুলাই ২০০৮ হতে অদ্যাবধি প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ নওগাঁ জেলার সহ-সভাপতি এবং ১৯৮৬ হতে অদ্যাবধি পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব, শেরে বাংলা নগরের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী/প্রবাসী সরকার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্প গুলোতে অবস্থানকারী বাঙ্গালিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করণের জন্য তার উপর দায়িত্ব প্রদান করলে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন।

ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক স্থানীয়ভাবে মান্দা থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন । তিনি মান্দা থানা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, নওগাঁ মহকুমা সংগ্রাম পরিষদেও উপদেষ্টা এবং ৭ নম্বর সেক্টরের জোনাল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধেও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অকস্থানকারীদেরও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন।

১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। পরে ১৯৭৩ সালে ১ম সংসদ, ১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ, ১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ, ২০০৮ সালে ৯ম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।[][] এ ছাড়া তিনি ১৯৮৯ সালে মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১ম সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, ২য় সংসদে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং ৯ম সংসদে সরকারি হিসাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯ম সংসদে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। টিআইবি কর্তৃক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ৩য় সংসদে তিনি শ্রেষ্ঠ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর যখন প্রথম সংসদ ভেঙ্গে যায় তখন তিনি নিজ এলাকায় গিয়ে প্রথমে পাটের ফরিয়া ব্যবসা এবং পরে কাপড়ের দোকানদারী করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন।[][]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার প্রথম দুই সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। পরবর্তী দুই সন্তান বর্তমানে দেশেই বসবাস করছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "'আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই'"প্রথম আলো। ২৮ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ 
  2. "গাজীর মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নিলেন প্রামাণিক"NTV Online। ২০১৯-০১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "শিক্ষক-ছাত্রের লড়াই"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ 
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০১-১৪)। "জামানত হারিয়েছেন একাদশ সংসদের ৯ জন সংসদ সদস্য"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৪ 
  5. "নওগাঁ-৪: শিক্ষক-ছাত্রের ভোটযুদ্ধ"যুগান্তর। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ 
  6. "দুই ভিআইপির আসনে নতুন মুখের প্রত্যাশা"সমকাল। ১১ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ 
  7. "নওগাঁ-৪: ইমাজের ইমেজ নষ্ট পাঁচ পাণ্ডবে"banglanews24.com। ২০১৭-০৫-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫ 

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা