মুহাম্মদ আবদুল বারী

বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ

মুহাম্মদ আব্দুল বারী (১ সেপ্টেম্বর ১৯৩০- ৪ জুন ২০০৩) বাংলাদেশের ইসলামী পণ্ডিত, লেখক ও শিক্ষাবিদ। তিনি এম এ বারী নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।[] তিনিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য[] এছাড়াও তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞানের জগতকে সমৃদ্ধ করতে অবদান রেখেছেন।[]

ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ:)
সভাপতি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস
কাজের মেয়াদ
১৯৬০ – ২০০৩
চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বাংলাদেশ)
কাজের মেয়াদ
১৯৮১ – ১৯৮৯
৫ম ও ৯ম উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কাজের মেয়াদ
১৯৭১ – ১৯৭২
কাজের মেয়াদ
১৯৭৭ – ১৯৮১
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০
(দিনাজপুর, বাংলাদেশ)
মৃত্যু৪ জুন, ২০০৩
ঢাকা
জাতীয়তা বাংলাদেশ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅধ্যাপনা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
যে জন্য পরিচিতইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
ধর্মইসলাম

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

তিনি ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় শিবগঞ্জ থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার আটরাই, খোলাহাটী গ্রামে।

শিক্ষা জীবন

সম্পাদনা

এম এ বারী (রহ:) এর পিতা মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল বাকী ছিলেন অবিভক্ত ভারতে মুসলিম লীগের সহ সভাপতি, কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক পরিষদ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য, পাকিস্তান গণপরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এবং একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ। বারী বাল্যশিক্ষা তার পিতা থেকেই গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি গ্রামের মাদ্রাসা থেকে জুনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষা এবং নওগাঁ কো-অপারেটিভ হাই মাদ্রাসা থেকে ১৯৪৪ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) থেকে আই.এ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে ১৯৪৯ সালে বি.এ সম্মান এবং ১৯৫০ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে যথাক্রমে নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক ও বাহরুল উলুম উবায়দী সোহরাওয়ার্দী স্বর্ণপদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক লাভ করেন।

এরপর পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ প্রফেসর এইচ.এ.আর গিব ও প্রফেসর যোশেফ শাখতের তত্ত্বাবধানে ১৯ শতকে বাংলার মুসলিম সংস্কার আন্দোলনের ওপর গবেষণা করে ১৯৫৩ সালে ডি.ফিল ডিগ্রি লাভ করেন।[] তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছুকাল গবেষণা করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ‘নাফিন্ড ফাউন্ডেশন ' ফেলোশিপ লাভ করে পূর্ব লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চ সম্পন্ন করেন।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

আব্দুল বারী ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান শিক্ষাসার্ভিসে সরাসরি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। প্রথমে তিনি ঢাকা কলেজ এবং পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজের আরবি বিভাগে তিনি অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ‘রীডার' পদে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্বপালন করেন। এছাড়াও তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন, জিন্নাহ হলের প্রভোস্ট, সিন্ডিকেট সদস্যসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন

তিনি ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই ৪০ বছর বয়সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ঐ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয়বারের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। এরপর ১৯৮৯-১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৯ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনকারী দলের উপদেষ্টা পদে নিয়োগলাভ করেন। এতে দায়িত্ব পালনকালে তার প্রায় প্রচেষ্টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯২ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।

দায়িত্ব পালন

সম্পাদনা

পেশাগত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক শিক্ষামূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত দু'টি কমিটিরই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।[][] এছাড়াও তিনি ২০০২ সালে জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান, ১৯৯০ সালে মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান, ইসলামী বিশ্বকোষ প্রণয়ন সম্পাদনা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।[] এ পদে চার বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৬ সালে তিনি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ইসলামী কার্যক্রম

সম্পাদনা

তিনি ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস' নামক ইসলামী দাওয়াতী সংগঠনের সভাপতি ছিলেন । তিনি কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়েই ১৯৬০ সাল থেকে মৃত্য পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সংগঠন সারা দেশে ইসলামী দাওয়াতের প্রসারে ভূমিকা রেখেছিলো। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু মাদরাসা, মসজিদ, ইয়াতিমখানা ।[][]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

আব্দুল বারী (রহ:) ব্যক্তিগত জীবনে ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন ও দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত অসংখ্য আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে যোগদান করেছেন।[]

পুরস্কার

সম্পাদনা

১৯৬৯ সালে তিনি "শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক" হিসাবে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ পদক লাভ করেন।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ইসলামি পণ্ডিত ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ:) ২০০৩ সালের ৪ জুন, ৭৩ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। দিনাজপুরের নুরুল হুদায় (আটরাই, খোলাহাটী, পার্বতীপুর) পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।[]

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ansonika। "List of Vice-Chancellor, University of Rajshahi"রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯-০৯-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৪ 
  2. ইফতিখারুল আলম মাসউদ (১১ জুন ২০১১)। "প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুল বারী : মনীষার প্রতিকৃতি"dailysangram.comদৈনিক সংগ্রাম। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৭ 
  3. ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "বাংলাদেশ"বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৪ 
  5. জমঈয়তে আহলে হাদীসের পরিচয়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা