মুয়াবিয়া সিয়াসনে

মুয়াবিয়া সিয়াসনে (আরবি: معاوية سياسني) একজন সিরীয় ব্যক্তি, যিনি সিরীয় গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটানোর ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য পরিচিত। ২০১১ সালের মার্চ মাসে ১৪ বছর বয়সে, সিয়াসনে ও তার বন্ধুরা মিলে দারা শহরের একটি স্কুলের দেয়ালে সরকারবিরোধী গ্রাফিতি আঁকে।[] এই প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ'র শাসনের বিরুদ্ধে সিরীয় বিপ্লবের সূচনা হিসেবে দেখা হয়, যা শেষ পর্যন্ত এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

মুয়াবিয়া সিয়াসনে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দারায় জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠেন। শহরটি পরে "সিরীয় বিপ্লবের আঁতুড়ঘর" হিসেবে পরিচিতি পায়। তিনি একটি রক্ষণশীল সুন্নি মুসলিম পরিবারে বড় হন, যেখানে বেকারত্ব ও যুব সমাজের জন্য সীমিত সুযোগ-সুবিধা ছিল নিত্যসঙ্গী। আসাদের স্বৈরশাসনের অধীনে এই কঠিন পরিবেশে বেড়ে ওঠা সিয়াসনে ও তার সম্প্রদায়কে আরও অসন্তুষ্ট করে তোলে, বিশেষত দারার নিরাপত্তা প্রধান আতেফ নাজিব'র আগমনের পর।

গ্রাফিতির ঘটনা

সম্পাদনা

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরব বসন্ত আন্দোলনের মিশর ও তিউনিসিয়ার বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, সিয়াসনে ও তার বন্ধুরা দেয়ালে "এজাক এল দোর, ইয়া দাক্তার" ("এবার তোমার পালা, ডাক্তার") শব্দগুলো লিখে প্রতিবাদ জানান। বাক্যটি দিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া আসাদকে ইঙ্গিত করেছিল। এই গ্রাফিতি আঁকার জেরেই আসাদ-সরকার সিয়াসনেহ সহ তার কিশোর বন্ধুদের গ্রেপ্তার করে ২৬ দিন আটকাবস্থায় ভয়ানক নির্যাতনের চালায়। সিয়াসনে পরবর্তীতে বলেন, "তারা আমাকে তারের বেত দিয়ে পেটায়, বরফ ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয় এবং বহুবার ইলেকট্রিক শক দেয়।"

তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন দেখে দারায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকার এই বিক্ষোভ দমন করতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করলে, এই অস্থিরতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা সিরীয় বিপ্লবের সূচনা করে[]। পরবর্তীয় এই বিপ্লব একপর্যায়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। [][]

সিরীয় গৃহযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

গ্রাফিতির ঘটনা সিরীয় বিপ্লবের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে সিয়াসনে ফ্রি সিরীয় আর্মি (এফএসএ)-তে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তার অবসরপ্রাপ্ত স্থপতি প্রকৌশলী বাবা মসজিদে যাওয়ার সময় একটি রকেট হামলায় নিহত হন। এই ঘটনার পর সিয়াসনে অস্ত্র তুলে নেন। এই প্রসঙ্গে সিয়াসনেহ বলেছিলেন, "আমি আগে কখনো কাউকে গুলি করার কথা ভাবিনি, কিন্তু তিনি ছিলেন আমার সবকিছু, এবং আমি তার জন্য লড়াই করতে চেয়েছিলাম।"[]

উত্তরাধিকার

সম্পাদনা

মুয়াবিয়া সিয়াসনের কর্মকাণ্ড আধুনিক সিরীয় ইতিহাসে প্রতিরোধের একটি প্রতীক এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও, সিয়াসনে ও তার বন্ধুরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা নিয়ে গর্বিত। তিনি তার বিধ্বস্ত শৈশবের বাড়িতে তার বিধবা মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে দারায় বসবাস করছেন।[]। সিয়াসনের গ্রাফিতি দিয়ে শুরু হওয়া সিরীয় বিপ্লব এবং পরবর্তী গৃহযুদ্ধ অবশেষে ২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন নিশ্চিত করে।

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. "Syria's Graffiti Boy Recalls Start of Deadly Conflict"Anadolu Agency। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫ 
  2. "The Boy Who Started the Syrian War"Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫ 
  3. "From Graffiti to Civil War: How a Teen's Act Sparked Chaos in Syria"Hindustan Times। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫ 
  4. "Syrian Civil War: How Teen Mouawiya Syasneh's Graffiti Led to Assad's Downfall"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫ 
  5. "Man Whose Youthful Protest Ignited Syria Uprising Admits Defeat"The Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫ 
  6. "How Syrian Teen's Graffiti Became Bashar al-Assad's Writing on the Wall"NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৫