মিশেল আফলাক

সিরীয় দার্শনিক, সমাজবিদ ও আরব জাতীয়তাবাদী

মিশেল আফলাক (আরবি: ميشيل عفلق‎, ১৯১০ – ২৩ জুন ১৯৮৯[])[] ছিলেন একজন সিরিয়ান দার্শনিক, সমাজবিদ ও আরব জাতীয়তাবাদিবাথিজম নামক মতাদর্শ গঠনের ক্ষেত্রে তার চিন্তাধারা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অনেক বাথিস্টের মতে তিনি বাথিজমের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। [] জীবদ্দশায় তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দ্য ব্যাটল ফর ওয়ান ডেস্টিনি (১৯৫৮) এবং দ্য স্ট্রাগল এগেনস্ট ডিস্টরটিং দ্য মুভমেন্ট অব আরব রেভলুশন (১৯৭৫)।

মিশেল আফলাক
ইরাকি বাথ পার্টির ন্যাশনাল কমান্ডের সেক্রেটারি জেনারেল
কাজের মেয়াদ
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮ – ২৩ জুন ১৯৮৯
ডেপুটিশিবলি আল আয়সামি
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীসাদ্দাম হোসেন
বাথ পার্টির ন্যাশনাল কমান্ডের সেক্রেটারি জেনারেল
কাজের মেয়াদ
১৯৫৪ – এপ্রিল ১৯৬৫
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীমুনিফ আল রাজ্জাজ
বাথ পার্টির ন্যাশনাল কমান্ডের সদস্য
কাজের মেয়াদ
৬ এপ্রিল ১৯৪৭ – ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯১০
দামেস্ক, উসমানীয় সিরিয়া
মৃত্যু২৩ জুন ১৯৮৯ (বয়স ৭৮-৭৯)
প্যারিস, ফ্রান্স
রাজনৈতিক দলআরব বাথ মুভমেন্ট (১৯৪০–১৯৪৭)
বাথ পার্টি (১৯৪৭–১৯৬৬)
ইরাকি বাথ পার্টি (১৯৬৮–১৯৮৯)
ধর্মগ্রীক অর্থোডক্স খ্রিষ্টান

তিনি দামেস্কের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ভবিষ্যত রাজনৈতিক সঙ্গী সালাহউদ্দিন আল বিতারের সাথে তার সাক্ষাত হয়। ১৯৩২ সালে তিনি সিরিয়ায় ফিরে আসেন এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিতে যোগ দেন। সিরিয়ান-লেবানিজ কমিউনিস্ট পার্টি ফরাসি ঔপনিবেশিক নীতি সমর্থন করলে তিনি তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। পরে ১৯৪০ সালে আফলাক ও বিতার আরব ইহইয়া আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে জাকি আল আরসুজির একই নামের দলের সাথে মিলিয়ে তার নাম বদলে আরব বাথ মুভমেন্ট রাখা হয়। আন্দোলন সফল বলে প্রতীয়মান হয় এবং ১৯৪৭ সালে আরব বাথ মুভমেন্ট আরসুজির আরব বাথ অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হয়ে আরব বাথ পার্টি গঠন করে। আফলাক দলের নির্বাহী কমিটিতে ও প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৯৫২ সালে আরব বাথ পার্টি আকরাম আল হাউরানির আরব সোশ্যালিস্ট পার্টির সাথে একীভূত হয়ে আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি গঠন করা হয়। ১৯৫৪ সালে আফলাক এই দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৫০ এর দশকের মধ্যভাবে দল জামাল আবদেল নাসেরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক গঠিত হয়। নাসের আফলাককে দল বিলুপ্ত করতে চাপ দেন। দলের সদস্যদের সাথে আলোচনা না করে তিনি তা করেন। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের বিলুপ্তির অল্পকাল পর বাথ পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়। ১৯৬৩ সিরিয়ান অভ্যুত্থানের পর দলে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাকে দলের প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। ১৯৬৬ সিরিয়ান অভ্যুত্থানের সময় তাকে বিতাড়িত করা হয়। তিনি প্রথমে লেবানন ও পরে ইরাক চলে যান। ১৯৬৮ সালে আফলাক ইরাকের বাথ পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। তার মেয়াদে কোনো ডি ফেক্টো ক্ষমতা তিনি ধারণ করতেন না। ১৯৮৯ সালের ২৩ জুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

আফলাকের চিন্তাধারা যা বাথিজমে আত্মীকৃত করা হয় তাতে আরব বিশ্বকে একটি একক আরব জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয় যাতে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। পুজিবাদ ও সমাজবাদ উভয়ের প্রতিই তিনি সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতেন। কার্ল মার্ক্সের তিনি সমালোচনা করেছেন। বাথিস্ট চিন্তাধারায় স্বাধীনতা ও আরব বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ আরব সমাজবাদকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক ছিলেন তবে নাস্তিকতার বিরোধিতা করেন। ব্যক্তিজীবনে খ্রিষ্টান হলেও ইসলামকে তিনি আরব কৃতিত্ব হিসেবে দেখতেন। ১৯৬৬ সালে বাথ পার্টি বিভক্ত হওয়ার পর সিরিয়ার বাথ পার্টি আফলাকের বিরুদ্ধে জাকি আল আরসুজির চিন্তাধারা নকলের অভিযোগ তোলে। ইরাকের বাথ পার্টি তা প্রত্যাখ্যান করে। তারা বাথিস্ট চিন্তাধারায় আল আরসুজির অবদান আছে বলে বিশ্বাস করত না।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Helms 1984, পৃ. 64–65
  2. "Michel ʿAflaq | Syrian political leader | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১২ 
  3. Reuters (১৯৮৯-০৬-২৫)। "Michel Aflaq Dies in Paris at 79; Founder of Iraq's Baathist Party"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১২ 

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা