মিনার মাহমুদ
মিনার মাহমুদ (জন্ম: ১০ মার্চ, ১৯৫৯ - মৃত্যু:২৯ মার্চ, ২০১২) একজন বাঙ্গালী সাংবাদিক যিনি ১৯৮০-এর দশকে তার সামরিক শাসন বিরোধী ভূমিকার জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিন্তা পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। ১৯৮০-এর দশকে সামরিক শাসক রাষ্ট্রপতি এরশাদের রাজত্বের বিরূদ্ধে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কবি তসলিমা নাসরিন-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন তসলিমার তৃতীয় স্বামী। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় কিছু কাল লেখালিখি করেন। এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক বিচিন্তা পুনঃপ্রকাশ করেন যদিও কয়েকটি সংখ্যারর পর এটি আর প্রকাশ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ তারিখে তিনি আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেন।[১][২]
মিনার মাহমুদ | |
---|---|
জন্ম | ১০ মার্চ ১৯৫৯ ফরিদপুর বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ২৯ মার্চ, ২০১২ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতার পিতৃপ্রদত্ত নাম মোহাম্মদ আলী মিনার। নামের শেষাংশ 'মিনার' আসলে তার ডাকনাম। বাড়ী ফরিদপুর-এ। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিএসএস (সম্মান) এবং ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন। [৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাছাত্র জীবনে তিনি লেখালিখি শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিচিন্তা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। অকপটে সামরিক শাসন বিরোধী বক্তব্য প্রকাশের জন্য তাকেঁ ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেপ্তার করা হয়। সামরিক শাসক পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় এলে তিনি পুনরায় সপ্তাহিক বিচিন্তা প্রকাশ করেন। কিন্তু কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর দীর্ঘকাল আর তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন নি। ২০০৯-এ দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করার চেষ্টা করেন।এছাড়া বিচিন্তা পুনঃ প্রকাশ করেন। এবছরের শুরুতে তিনি শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বলা হয়েছে বাংলাদেশে সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পত্রিকায় রিপোর্টিং ভিত্তিক বিদ্রোহীধারার আধুনিকতার প্রবর্তক ছিলেন মিনার মাহমুদ।[৪] মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি আজকের প্রত্যাশা নামক একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। [৫]
বিচিন্তা
সম্পাদনা[৬][৭] বলা হয়েছে বিচিন্তা ছিল দুই মলাটের ভিতর নিষিদ্ধ বারুদ।[৮]
মৃত্যু
সম্পাদনা২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ তারিখে দিবাগত রাত্রে তিনি আত্মহত্যা করেন। তিনি গভীর বিষাদে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘ মার্কিন প্রবাস শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর জাগতিক অসফলতা তাকে গভীরভাবে হতাশগ্রস্ত করেছিল। মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি স্বীয় স্ত্রীকে সম্বোধিত কাছে স্বীকারোক্তিমূলক একটি চিঠি রচনা করেন। তারপর অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেন। এতেই তার মৃত্যু হয়।[১][২] [৯][১০][১১] তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে সকল স্তরে শোক ছায়া নেমে আসে। দেশের বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সমাজে তোলপাড় শুরু হয়। পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালিখি হয়।[১২] মিরপুর বুদ্ধজীবী কবরস্থানে মিনার মাহমুদকে ৩১ মার্চ তারিখে দাফন করা হয়।[১৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "1pinless.com বিষক্রিয়ায় মিনার মাহমুদের মৃত্যু"। ২০১৯-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১।
- ↑ ক খ "জীবন ছিল দাসত্বের"। ৩১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১২।
- ↑ স্ত্রীকে লেখা মিনারের শেষ চিঠি
- ↑ "আমদের সময়-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন ৩০ মার্চ ২০১২"। ১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১২।
- ↑ "মিনার মাহমুদ হঠাৎ চলে যাবেন ভাবিনি"। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ তিনি নেই তিনি আছেন-আসিফ নজরুল
- ↑ "প্রতিবাদী এক মৃত্যু"। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১২।
- ↑ "আরেক অভিমানী মায়াকোভস্কি"। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ "আমদের সময়-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন ৩০ মার্চ ২০১২ শেষের পাতা"। ৩১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১২।
- ↑ বুকভরা অভিমানে বিচিন্তা সম্পাদক মিনার মাহমুদের আত্মহত্যা
- ↑ মিনার মাহমুদের মৃত্যু বিষক্রিয়ায় ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে
- ↑ "একজন মিনার এবং হারাকিরি"। ৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ চিরনিদ্রায় শায়িত মিনার মাহমুদ