মিজানুর রহমান খান (জন্ম: ১১ জুন ১৯৫২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

মিজানুর রহমান খান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

মিজানুর রহমান খানের জন্ম জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দী গ্রামে। তার বাবার নাম রিয়াজুল ইসলাম খান এবং মায়ের নাম নুরুন্নাহার খানম। তার স্ত্রীর নাম আলেছা বেগম। তাদের কোনো ছেলেমেয়ে নেই। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। জুন মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের পর তাকে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জে পাঠানো হয়। ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক আবু তাহের (বীর উত্তম) তাকেসহ ৪৮ জনকে নিয়ে একটি দল গঠন করে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন। তিনি তাদের সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থানে তারা সম্মুখযুদ্ধ করেন। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর বড় একটি দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কামালপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। সেদিন তিনিসহ ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাহেরের সঙ্গে ছিলেন। তাদের ওপর নির্দেশ ছিল কামালপুরের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান দখলের সঙ্গে সঙ্গে তারা ১০ জন সেখান থেকে অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা যুদ্ধের একপর্যায়ে মেজর তাহের আকস্মিকভাবে আহত হন। সে সময় তিনি ও তার এক সহযোদ্ধা দ্রুত আহত মেজর তাহেরকে ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। সেদিন শেষ পর্যন্ত কামালপুর যুদ্ধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মিজানুর রহমান খান স্বাধীনতার পর পড়াশোনা শেষ করে জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর ছিল সীমান্ত এলাকা। গ্রামের মাঝামাঝি ছিল এ সীমান্ত বিওপি’র অবস্থান। ওই বিওপি ঘিরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেদিন মুক্তিবাহিনীর স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে ভোররাতে আক্রমণ করেন। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ সদরুজ্জামান (বীর প্রতীক)। মিজানুর রহমানসহ দলের ৪৮ জনের সবাই ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তুরায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাদের ৪৮ জনকে ১১ নম্বর সাবসেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে সাহসিকতার সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে মিজানুর রহমান, আমানুল্লাহ কবীর (বীর বিক্রম) সহ কয়েকজন যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তাদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে যুদ্ধে আমানুল্লাহ কবীরসহ তার সাত সহযোদ্ধা শহীদ হন। এ যুদ্ধের শুরুতে রাতের অন্ধকারে সীমান্তের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন মিজানুর রহমান খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ভোররাতে তারা আকস্মিক আক্রমণ করলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। শুরু হয়ে গেল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। প্রায় আধা ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময় ধরে চলা তুমুল এ যুদ্ধে নিহত হলো আট-নয়জন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিবাহিনীরও বেশ ক্ষতি হয়। মিজানুর রহমান খানের সাত সহযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হলেন।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১১-১২-২০১১"। ২০১৬-১২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৬ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা

সম্পাদনা

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা