মাহবুবুর রহমান (বীর উত্তম)

শহীদ মাহবুবুর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। []

মাহবুবুর রহমান
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

শহীদ মাহবুবুর রহমানের জন্ম দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর পৌরসভার অন্তর্গত ঈদগাহবস্তি এলাকায়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম এ এম তাছিরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং মায়ের নাম জরিনা খাতুন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

মাহবুবুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সে। ১৯৭১ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৯ মার্চ সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর তাকে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দিয়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানির অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জামালপুর জেলার কামালপুরসহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের নভেম্বরের মধ্যভাগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান সম্মুখ প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল সিলেটের কানাইঘাটে। এর অগ্রবর্তী এলাকা জকিগঞ্জ, আটগ্রাম ও চারগ্রাম তখন মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। আটগ্রাম-চরখাই-সিলেট অক্ষের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কানাইঘাট দখলে রাখা ছিল যেকোনো পক্ষের জন্য অপরিহার্য। সেখানে প্রতিরক্ষায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল। সেখানে যুদ্ধের ব্যাপকতায় কয়েকটা দিন প্রায় নিদ্রাহীন কেটেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বেশ ক্লান্ত। তাদের অবস্থান জঙ্গলের ভেতরে। মধ্যরাতে কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগই ঘুমিয়ে। ভোর হয় হয় এমন সময় সেখানে গোলাগুলির শব্দ। নিমেষে শান্ত এলাকা পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। গোটা এলাকা তুমুল গোলাগুলিতে প্রকম্পিত। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান। গোলাগুলির শব্দ শুনে তিনিও দ্রুত উঠে পড়েছেন। মাহবুবুর রহমান বিচলিত হলেন না। এ রকম যুদ্ধে রক্তপাত, মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। অবচেতন মনে মৃত্যুচিন্তা যোদ্ধাদের নিত্যসঙ্গী। তিনি সব ভয় আড়াল করলেন আশার আড়ালে। কারণ, তাকে দেখেই যোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হবেন। মৃত্যুভয় মন থেকে ঝেড়ে ফেলে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। তার দলের ওপর আক্রমণ করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে সিলেট অভিমুখে অভিযান শুরু করে। ১৫ নভেম্বর তারা প্রথমে চারগ্রাম এবং পরে জকিগঞ্জ দখল করে। এরপর আবার চারগ্রামে ফিরে গিয়ে পুনঃসংগঠিত হয়ে কানাইঘাটের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর উত্তর তীর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে কানাইঘাটের দুই মাইল দূরে গৌরীপুরে পৌঁছান। সেখানে তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল (আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি) সুরমা নদীর উত্তর তীরে এবং অপর দল (চার্লি ও ডেল্টা কোম্পানি) দক্ষিণ তীরে অবস্থান নেয়। ২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের মূল ডিফেন্সিভ পজিশন ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়ে আকস্মিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। এতে তাদের আলফা কোম্পানি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। এই কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন মাহবুবুর রহমান। ওই অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে তা-ই করতে থাকেন। কিন্তু তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি এসে লাগে তার শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শহীদ হন। এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হন।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৯-০৬-২০১২"। ২০১৭-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫০। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা