মালজোড়া গান বলা হয় তত্ত্বভিত্তিক বিতর্কমূলক বাউল গানকে। গানের মাধ্যমে একটি বিষয়ের উপর বাউলগণ নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপন করেন।

প্রচলিত রেওয়াজের বাইরে ত্রিশের দশকে এক ব্যতিক্রমী ধারার বাউলগানের প্রচলন শুরু হয় নেত্রকোনায়। এর নাম ‘মালজোড়া বাউলগান’। মনে করা হয়, মালজোড়া বাউলগানের ধারণাটি এসেছে কবিগান থেকে। নেত্রকোনাসহ পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলে একসময় কবিগানের জয়জয়কার ছিল। কবিগান ছিল মূলত দুই কবিয়ালের লড়াই বা বাগ্‌যুদ্ধ। সেই ধারাটিই বাউলগানে সংমিশ্রিত হয়ে ‘মালজোড়া বাউলগান’ নামে নতুন আরেক ধারার প্রচলন করে। মালজোড়া বাউলগানের ‘মাল’ শব্দটি এসেছে ‘কুস্তির লড়াই’ থেকে। এ অঞ্চলে আগে যাঁরা কুস্তি করতেন তাঁদের ‘মাল’ বলা হতো। মালজোড়া বাউলগানও একধরনের লড়াই। গানে গানে তাত্ত্বিক বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের লড়াই এটি। এখানেও একজন আরেকজনকে পরাস্ত করার চেষ্টা করেন। তাই মালজোড়ার শিল্পীরাও পান ‘মাল’–এর খ্যাতি।[] নেত্রকোনাসহ গোটা ভাটি অঞ্চলে মালজোড়া বাউল গানের যে জয়জয়কার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার মূল প্রবর্তক ছিলেন বাউল রশিদ উদ্দিন[] গোলাম এরশাদুর রহমান প্রণীত 'নেত্রকোনার বাউলগীতি' বই মারফত জানা যায়, ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রশিদ উদ্দিনের সক্রিয় উদ্যোগে নেত্রকোনা শহরের গরুহাট্টায় সর্বপ্রথম তত্ত্বভিত্তিক বিতর্কমূলক বাউল গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়। এ বিতর্কে বাউল রশিদ উদ্দিন, জালাল উদ্দিন খাঁ ও চান খাঁ প্রমুখ অংশ নেন। বিচারক ছিলেন সাধক ও পীর আছমত আলী শাহ্ ফকির। বাউলের এ ব্যতিক্রম আসরে প্রখ্যাত কবিয়াল বিজয় নারায়ণ আচার্য, বাউল তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, ইদ্রিছ মিয়া ও চানমিয়াসহ বহু বাউল কবিয়াল উপস্থিত ছিলেন। ওই আসরের পর থেকেই নেত্রকোনা ও আশপাশের এলাকায় তত্ত্বভিত্তিক বিতর্কমূলক 'মালজোড়া বাউলের প্রসার ঘটে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সরকার, সঞ্জয় (২০২১-০৬-২৯)। "লোকসংস্কৃতি চর্চার উর্বর ভূমি"আজকের পত্রিকা। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫ 
  2. "বাংলার আরেক সংস্কৃতি 'মালজোড়া গান'"। ১০ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২২ 
  3. সরকার সঞ্জয়, "নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি , পৃষ্ঠা -৬১ , প্রকাশক, আবিষ্কার,কাঁটাবন, ঢাকা। প্রকাশকাল- মাঘ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ ।