মানুষের শিশ্ন (ইংরেজি: Human penis) বা পুরুষাঙ্গ হল বহিস্থিত পুরুষ যৌনাঙ্গ যা প্রস্রাবনালীর কাজও করে থাকে। শুক্রাণু-নির্গমদ্বার ([১]), মৈথুনাঙ্গ ছাড়াও সাধারণভাবে প্রস্রাব ত্যাগের নালি হিসাবে শিশ্ন ব্যবহৃত হয়। শিশ্নের মূল অংশগুলি হল আন্তঃভাগ (radix) , গাত্রভাগ (corpus) এবং আবরণী কলা (epithelium) যা দ্বারা শিশ্নের দণ্ড (shaft) অংশের চামড়া এবং শিশ্নের সন্মুখ অংশ ঢেকে রাখা চামড়া (foreskin) গঠিত হয়। শিশ্নের গাত্রভাগ তিনধরনের কলা দ্বারা নির্মিত, ওপরের দিকে দুই তরফা corpora cavernosa এবং দুয়ের নিচের তলের দিকে corpus spongiosum কলা দেখা যায়।

মানব শিশ্ন
A flaccid penis
বিস্তারিত
পূর্বভ্রূণজেনিটাল টিউবারকল, Urogenital folds
ধমনীলিঙ্গ ধমনী পৃষ্ঠ, deep artery of the penis, artery of the urethral bulb
শিরাDorsal veins of the penis
স্নায়ুDorsal nerve of the penis
লসিকাSuperficial inguinal lymph nodes
শনাক্তকারী
লাতিন'উপস্থ, পুরুষাঙ্গ'
মে-এসএইচD010413
টিএ৯৮A09.4.01.001
টিএ২3662
এফএমএFMA:9707
শারীরস্থান পরিভাষা
পুরুষাঙ্গ

মানব শিশ্নে লিঙ্গাস্থি ([২]) থাকে না, কিন্তু অন্যান্য প্রায় সকল স্তনপায়ী প্রাণী এবং সকল বন-মানুষের শিশ্নে একটি অস্থি বা হাড় থাকে যা একে স্থায়ী ভাবে কঠিন করে রাখে।[] পুরুষের ইউরেথ্রা শিশ্নের মাঝ দিয়ে গিয়ে প্রস্টেট গ্রন্থিতে বীর্যনালির সঙ্গে সংযুক্ত হয়, ফলে শিশ্নের ভিতর দিকে থাকা মূত্রনালি দিয়ে প্রস্রাব এবং বীর্য দুই-ই প্রবাহিত হয়। শিশ্নের শেষাংশে মূত্রনালির খোলা বাঁধাটিকে ম্যেটাস (meatus) নামে অভিহিত করা হয়, যার মাধ্যমে প্রস্রাব এবং বীর্য দুই-ই শরীর থেকে নির্গত হয়

বিভিন্ন আকারের পুরুষাঙ্গ। ব্যাক্তিভেদে পুরুষাঙ্গের আকারে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

শিশ্নের আধার অংশে মূত্রনলীর সঙ্গে কৌপার গ্রন্থিদ্বয় ([৩]) থেকে আসা নালিরও সংযোজন হয়, যে নালিতে যৌন উত্তেজনার সময়ে ক্ষারকীয় শ্লেষ্মার প্রাক-ক্ষরণ ঘটে। এই কার্যই মূল মূত্রনালিটির ভিতর অংশ মসৃণ করে এবং সেইসঙ্গে সেখানে থাকা অবশিষ্ট আম্লিক প্রস্রাবকে[] প্রশমিত করে নালিটি পরিষ্কার করে, যাতে প্রস্রাব মূল-স্খলনের সময় বেরিয়ে আসা শুক্রাণু ([৪]) সমূহকে নষ্ট করতে না পারে।[]

সাধারণ অবস্থায় পুরুষাঙ্গ ছোট আকৃতিতে থাকে। কিন্তু যৌন কাম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তার আকার ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং পেশি শক্ত হতে থাকে। ২" থেকে ৭" পর্যন্ত হতে পারে।

 
সাধারণ অবস্থায় ও যৌনকাম উত্তেজনা অবস্থায় পুরুষাঙ্গ

শিশ্নের অংশসমূহ

সম্পাদনা

   

শিশ্নের গঠন

সম্পাদনা
 

শারীরবৃত্তীয়

সম্পাদনা
ঋজুতাকালীন সংঘটন
উল্লম্বভাবে উপর থেকে
দৃষ্টিকোণ (°)
পুরুষদের মধ্যে
শতাংশ
০–৩০ ৪.৯
৩০–৬০ ২৯.৬
৬০–৮৫ ৩০.৯
৮৫–৯৫ ৯.৯
৯৫–১২০ ১৯.৮
১২০–১৮০ ৪.৮
লিঙ্গোত্থান বিকাশ
 
লিঙ্গোত্থান বিকাশ

হস্তমৈথুন

সম্পাদনা

হস্তমৈথুন হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ নিজের জননাঙ্গে যৌন উদ্দীপনা প্রদান করে যাতে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয় এবং যৌন সুখ লাভ হয়। সাধারণত রাগমোচন লাভ পর্যন্তই এটি চালিয়ে যাওয়া হয়।[] এই উদ্দীপনায় হাত, আঙ্গুল, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বস্তু, যৌনখেলনা যেমন ভাইব্রেটর, বা এগুলোর মিলিত ব্যবহার করা হতে পারে।[][] সঙ্গীর দ্বারা মানব নিয়ন্ত্রিত উদ্দীপনা যেমন অঙ্গুলিসঞ্চালন, হ্যান্ডজব বা পারস্পরিক স্বমেহন হচ্ছে সাধারণ যৌন ক্রিয়া, এবং এগুলো ভেদনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, স্বমেহন সকল লিঙ্গ, সকল বয়সেই দেখা যায় যদিও এদের স্বমেহনের হারে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্যকর যৌনক্রিয়ার অনেক চিকিৎসাসংক্রান্ত এবং মানসিক উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে, যার মধ্যে স্বমেহনও রয়েছে। স্বমেহন ও কোন মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক পাওয়া যায় নি।[]

[]

পাশ্চাত্যে ব্যক্তিগত স্থানে স্বমেহন করা, অথবা সঙ্গীর সাথে স্বমেহন করাকে সাধারণত স্বাভাবিক ও যৌন উপভোগের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হিসেবেই দেখা হয়। হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনকর্ম নাকি যৌনবিকৃতি কি-না এই বিষয়ে দীর্ঘকাল থেকে বিতর্ক চলমান ছিল, কিন্তু এখন আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে হস্তমৈথুনকে একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক মানসিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।[][][১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫] অনেক স্থানেই প্রাণীর স্বমেহনকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই স্বমেহন পাওয়া গেছে।[১৬][১৭][১৮][১৯][২০]

হস্তমৈথুন একটি কামোদ্দীপক প্রক্রিয়া যার চূড়ান্ত পরিণতিতে সাধারণত পুরুষের বীর্যপাত হয়ে থাকে। তবে বীর্যপাতের আগেই হস্তমৈথুন পর্ব শেষ হতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য অর্থাৎ হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নারীর রাগমোচন হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। হস্তমৈথুন নিজেই একটি সুখপ্রদায়ী প্রক্রিয়া। এটি আসক্তিজনক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যাসঙ্কুল হতে পারে।

কৌশল —

হস্তমৈথুনের মূল কৌশল উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই একই রকম, আর তা হচ্ছে যৌনাঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা নাড়াচাড়া ও ঘর্ষণ করা। এটি আঙুল দ্বারা বা কোনো কিছুর মাধ্যমেও (যেমন: বালিশ) হতে পারে। এছাড়া বৈদ্যুতিক কম্পক বা ভাইব্রেটরের মাধ্যমেও ভালভা বা শিশ্নকে উত্তেজিত করে তোলা যায়। এটি একই সাথে যোনিপায়ু পথেও প্রবেশ করানো যায়। পারস্পরিক হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের সদস্যরা তাদের পরস্পরের স্তনবৃন্ত বা অন্যান্য কামোত্তেজক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্পর্শ করাকেও উপভোগ্য মনে করতে পারেন। অনেকেই হস্তমৈথুনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য মুখের লালা, তেল বা পিচ্ছিলকারক দ্রব্য ব্যবহার করে।

বৈচিত্র্য —

হস্তমৈথুন মূলত স্বকাম; তবে এতে মানুষ স্বীয় হাত-আঙ্গুলি ছাড়াও যৌনখেলনা যেমন কৃত্রিম যোনি বা কৃত্রিম শিশ্ন ব্যবহার করে থাকে।

পুরুষের হস্তমৈথুন

সম্পাদনা
 
একজন পুরুষ স্বমেহনে লিপ্ত

সচরাচর স্বীয় শিশ্ন হাতের মুঠিতে আঁকড়ে ধরে ওপর-নিচ ওঠানামা করে পুরুষ মানুষ হস্তমৈথুন করে থাকে। এর জন্য অপরিহার্য হলো উত্থিত শিশ্ন। এর ফলে এক পর্যায়ে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে এবং বীর্যপাত হয়ে রাগমোচন অর্থাৎ চরমানন্দ লাভ হয়। হস্তমৈথুনের জন্য সুবিধার্থে অনকে ব্যাক্তি লুব্রিকেটিং জেলী, তৈল,লালা বা অনুরূপ পদার্থ ব্যবহার করে থাকে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৮ 
  2. http://www.innerbody.com/image_repmov/repo16-new2.html
  3. http://www.kinseyinstitute.org/resources/bib-penis.html
  4. Robinson, Jennifer (৪ মার্চ ২০১০)। "Masturbation – Is Masturbation Normal or Harmful? Who Masturbates? Why Do People Masturbate?"WebMD। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১১ 
  5. Based on "masturbation" in Merriam-Webster's Collegiate Dictionary, Eleventh Edition, Merriam-Webster, Inc., 2003
  6. Coleman, Eli (২০১২) [2002]। "Masturbation as a Means of Achieving Sexual Health" (পিডিএফ)। Bockting, Walter O.; Coleman, Eli। Masturbation as a Means of Achieving Sexual Health। New York: Routledge, Taylor & Francis Group। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-0-7890-2047-5ওসিএলসি 50913590। Archived from the original on ২২ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৮Despite the scientific evidence indicating that masturbation is generally a normal variant of sexual expression and that it does not seem to have a causal relationship with sexual pathology, negative attitudes about masturbation persist and it remains stigmatized. 
  7. Hallikeri, Vinay R.; Gouda, Hareesh S.; Aramani, Sunil C.; Vijaykumar, A.G.; Ajaykumar, T.S. (জুলাই–ডিসেম্বর ২০১০)। "MASTURBATION—AN OVERVIEW"Journal of Forensic Medicine and Toxicology27 (2): 46–49। আইএসএসএন 0971-1929। ২১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Today, masturbatory act is considered as a healthy practice when done in private and an offence if done in the public in most of the countries. 
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Merck নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; patton নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; boulware নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Szasz নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Shpancer2010 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Coon2014 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  14. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Sigel2004 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  15. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Wood2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  16. Aldo Poiani (১৯ আগস্ট ২০১০)। Animal Homosexuality: A Biosocial Perspective। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-1-139-49038-2 
  17. "Breeding Soundness Examination of the Stallion"। Petplace.com। ২০১৪-১২-১০। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১১ 
  18. Bagemihl, Bruce (১৯৯৯)। Biological Exuberance: Animal Homosexuality and Natural Diversity। St. Martin's Press। আইএসবিএন 978-0-312-19239-6। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৫ 
  19. "Breeding Soundness Examination of the Stallion"। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১০ 
  20. For further references, see also the main article Animal sexuality#Autoeroticism (masturbation).

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা