মাধুরী চট্টোপাধ্যায়
মাধুরী চট্টোপাধ্যায় (১৬ ডিসেম্বর ১৯৪০ - ১৯ অক্টোবর ২০১৩) কলকাতার একজন বাঙালি গায়িকা। তিনি ১৯৬০, '৭০ এবং '৮০ এর দশকে অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান গেয়েছেন।[১] গীত, গজল, বাংলা আধুনিক সঙ্গীত, হালকা ধ্রুপদী সংগীত, নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতে তাঁর অবদানের জন্য মাধুরী চট্টোপাধ্যায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি শ্যামা সঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
শ্রীমতী মাধুরী চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্ম | কলকাতা, বঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৯
মৃত্যু | ১৯ অক্টোবর ২০১৩ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৭৩)
ধরন | নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী |
পেশা | গায়িকা |
জীবন
সম্পাদনাপার্ক স্ট্রিটের একটি নার্সিং হোমে মাধুরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং উত্তর কলকাতার বলরাম বসু ঘাট রোডে তাঁর মামার বাড়িতে বেড়ে উঠেছিলেন।[২] তাঁর পিতার নাম শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি একজন বিখ্যাত কীর্তনিয়া (কীর্তন গায়ক) ছিলেন। পিতাই সঙ্গীতের ব্যাপারে মাধুরীর প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন। ছোট থেকেই মাধুরী, গায়িকা উমা দে, উস্তাদ কেরামতুল্লাহ খান এবং পণ্ডিত হরিহর শুক্লাজীর মত বিশিষ্ট শিল্পীদের অধীনে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। পিতা ছাড়াও তিনি বিশিষ্ট গায়ক রথীন ঘোষের কাছে কীর্তন গানের শিক্ষা লাভ করেন।[২] তাঁর স্বামীর নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কন্যা রূপা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অতুলনীয় প্রতিভা এবং অসাধারণ অবদান সত্ত্বেও, মাধুরী চট্টোপাধ্যায় প্রচারমাধ্যম থেকে সর্বদা নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন।
গায়িকা হিসেবে
সম্পাদনামাধুরী ১৯৫৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটি অডিশনে অংশ নেন এবং চৌদ্দ বছর বয়সে গায়িকা হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে পূজা অ্যালবাম হিসাবে মেগাফোন রেকর্ডস থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই দুটি গানের সুরকার ছিলেন নচিকেতা ঘোষ। "অলি অমন করে নয়" ও "তোমায় আমায় প্রথম দেখা" এই দুটি গান তাদের প্রথম আবির্ভাবেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠে এবং বাঙালিদের রোমান্টিক মানসিকতায় একটি স্থায়ী আসন লাভ করে।[২] প্রথম রেকর্ডে তাঁর নাম মাধুরী বন্দ্যোপাধ্যায় হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
মেগাফোন রেকর্ডস এর মালিক কমল ঘোষ, সলিল চৌধুরীর সাথে মাধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৬০ সালে মাধুরী, সলিল চৌধুরী কর্তৃক রচিত দুটি গান, "নিজেরে হারায়ে খুঁজি" ও "এবার আমার সময় হলো যাবার" নিয়ে তাঁর পূজা অ্যালবাম প্রকাশ করেন।[২] মাধুরী সলিল চৌধুরীর বেশ কিছু গান গেয়েছেন। "ওই যে সবুজ বন বীথিকায়" রচনার সময় সলিল চৌধুরী, বেটোফেন এর সিক্সথ সিম্ফোনি এর কিছু অংশ জুড়ে দেন যা মাধুরীর কণ্ঠস্বরের সাথে চমৎকারভাবে খাপ খেয়েছে।[৩]
বহু বছর ধরে মাধুরী ডোভার লেন রিজার্ভ ব্যাংক কোয়ার্টারে বসবাস করেছেন, এবং সেসময় স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী
সম্পাদনারথীন ঘোষ সঙ্গীতে মাধুরী চট্টোপাধ্যায়ের গুরু ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গীত পরিচালনায় মাধুরী ১৯৬৪ সালে বাংলা চলচ্চিত্র "মহা তীর্থ কালীঘাট" এ নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। চলচ্চিত্রে নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনয় অধিকারী এবং মানস মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গে তিনি একটি সমবেত গানে অংশ নেন। একই বছর তিনি বাংলা চলচ্চিত্র "রাধাকৃষ্ণ" তে গান গেয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি "রূপ সনাতন" চলচ্চিত্রে একটি কীর্তন গান গেয়েছিলেন। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায় ১৯৬৬ সালে তিনি "উত্তর পুরুষ" চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যেখানে তাঁর গাওয়া "একবার ব্রজে চলো ব্রজেশ্বর" গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যান্য যেসব চলচ্চিত্রে তিনি কণ্ঠ দেন তা হল "শচিমার সংসার" (১৯৭১), "স্বর্ণ মহল" (১৯৮২), "তানিয়া" (১৯৮৭) ইত্যাদি।[২]
পুরস্কার
সম্পাদনা২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মাধুরী চট্টোপাধ্যায়কে "সঙ্গীত সম্মান" প্রদান করা হয়। [৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Renowned Musician Madhuri Chattopadhyay Died"। ২০ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "নিজেরে হারায়ে খুঁজি"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৩।
- ↑ Jha, S N (২০১৪)। Current affairs 2014। Kalinjar Publications। পৃষ্ঠা ২৯৯।
- ↑ "Information and Cultural Affairs" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১।