মহর

ইসলামি বিবাহশাস্ত্রে স্ত্রীকে প্রদান করা বাধ্যতামূলক অর্থ

ইসলামে, মহর বা মোহর ( আরবি: مهر;  ; ফার্সি: مهريه) হল বিবাহের সময় কনের দাবিকৃত অর্থ বা সম্পদ, যা বর বা বরের পিতার পক্ষ থেকে কনেকে প্রদান করতে হয়।[] এটি প্রদান করা বাধ্যতামুলক। মহরের মাধ্যমেই পুর্ণাঙ্গ বিয়েকে বৈধ করা হয়। প্রাচীন আরবে যৌতুক দেয়ার প্রথা চালু ছিল, নবুয়াত প্রাপ্তির পর মুহাম্মদ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে যৌতুক প্রথাকে নিষিদ্ধ করে আবশ্যক দেনমহরপ্রথা চালু করেন। ইসলামে মহরের কোন সীমারেখা নেই। যা বরের আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়।

পবিত্র কুরআনে আরো উল্লেখ আছে :

আর নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময় — Rawai Al-bayan কুরআন ৪:২৪

তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর। [কুরআন ৪:৪]

রাসূল বলেছেন, বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হল মোহর। মিশকাতুল মাসাবিঃ ৩১৪৩

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দেনমোহরের কিছু উদাহরণ:

রাসূল জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও আনতে বলেন, তাতে অক্ষম হলে শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা দেয়ার কথা বলেন। মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২০২

আবু হুরায়রা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া (চার শ দিরহাম)। সুনানে নাসায়ী ৬/১১৭

আয়িশাকে রাসূলুল্লাহের মোহরানা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বারো ঊকিয়া ও এক নাস্স।’ আমি বললাম, ‘নাস্স্’ কি? তিনি বললেন, এক ঊকিয়ার অর্ধেক। সুনানে আবু দাউদ ২১০৫

তৎকালীণ সময়ে রুপার তৈরি মূদ্রাকে দিরহাম বলা হত। এক উকিয়া হচ্ছে- ৪০ দিরহাম। এক দিরহাম= ২.৩ গ্রাম রৌপ্য

সর্বনিম্ন সাড়ে আঠারো তোলা রৌপ্য বা কনের মতামত অনুযায়ী তার সমমূল্যের অর্থ বা সম্পদ কনেকে তার সম্মতি অনুযায়ী মোহর হিসেবে প্রদান করা যাবে। মোহর বাকি না রেখে যথাসাধ্য আদায় করতে বলা হয়েছে, যেনো কনের মহর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।

সতর্কতাঃ সাবধান! তোমরা নারীদের মোহর নির্ধারণে সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ যদি তা দুনিয়ার মর্যাদার বস্তু হতো এবং আল্লাহর নিকট পরহেজগারীর বস্তু হতো, তবে তোমাদের চেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এর যোগ্যতম ব্যক্তি। অথচ তিনি তাঁর স্ত্রীদের কারো মোহর এবং তাঁর কন্যাদের কারো মোহর বারো ঊকিয়ার অধিক ধার্য করেননি। সুনানে আবু দাউদ ২১০৬

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Spies, O. (২০১২)। In P. Bearman; Th. Bianquis; C.E. Bosworth; E. van Donzel; W.P. Heinrichs (eds.).। "MAHR"Encyclopaedia of Islam. (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_sim_4806