মশাজানের দিঘী বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা শহরের  পাঁচ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত একটি দিঘী।[১][২] দিঘীটি স্থানীয় ভাবে মশাজানের দিঘী নামে পরিচিত, ষোল’শ শতকের প্রথম দিকে দুইশত একর সীমানার মধ্যভাগে অবস্থিত এ দীঘির প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্নিকপুরুষ খ্যাত সৈয়দ গোয়াস উদ্দীন[৩] তিনি ছিলেন মধ্য যোগীয় মহাকবি সৈয়দ সুলতানের[৪] জ্যেষ্ঠসন্তান এবং সিলেট ও তরফ বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন'র ষষ্ঠ অধস্থনপুরুষ। দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল এ দীঘিটি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসাবে স্বীকৃত।[৫][৬]

মশাজানের দিঘী
মশাজানের দিঘী
অবস্থানহবিগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচ মাইল দক্ষিণে মশাজান গ্রামে এই দিঘীর অবস্থান।
স্থানাঙ্ক২৪°১৯′৩৯″ উত্তর ৯১°২৭′০৮″ পূর্ব / ২৪.৩২৭৪১° উত্তর ৯১.৪৫২২৬° পূর্ব / 24.32741; 91.45226
মানচিত্র


দিঘীর বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

চারপাশে ঘন গাছগাছালি পরিবেষ্টিত লম্বাটে চৌকোণা আকৃতির দিঘীটির তলভাগে কোন রহস্যজনক কারণে অসংখ্য ছোটবড় নিকষকাল রঙের অমসৃণ শিলাখণ্ড বিদ্ধমান। দৃশ্যত (পরীক্ষিত নয়) এই পাথরগুলো উল্কাপিণ্ডের সাথে হুবহু সামঞ্জস্যপূর্ণ। হয়তো এই পাথরগুলোর প্রভাবেই এর পানি কাঁচের ন্যায় এতটাই স্বচ্ছ যে অনেক গভীরের তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্টত দেখা যায়। এই দিঘীর পানিতে বিভিন্ন রকম মাছ থাকা স্বত্বেও আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এতে কোনও ধরনের কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ, সাধারণ কীটপতঙ্গ বা জোঁক-ব্যাঙ একেবারেই টিকে থাকতে পারেনা।[৭] তাছাড়াও স্থানীয় জনগণের পরীক্ষিত বিষয় হিসেবে এটাও স্বীকৃত যে এই দিঘীতে কয়েকবার গোসল করলে সাধারণ চর্মরোগ সেরে যায়। কিন্তু এসবের কারণ নিরূপণে স্মরণকাল যাবত অলির কেরামত[৮] বলে প্রচলিত একটা লোকশ্রুতি ব্যতীত বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে বলে জানা যায়নি। মশাজানের দীঘির মতো এমন আরো জলাধার আছে যা আউলিয়ায়ে কিরামদের কারামতের সাথে সম্পৃক্ত। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী এবং আনা সাগরের অলৌকিক ঘটনা।

দিঘী সৃষ্টির উপাখ্যান

সম্পাদনা
 
 
মাশাজান দীঘির পানির নিচের একটি পাথরের ছবি।
 
 

আবহমান কাল থেকে প্রচলিত লোকশ্রুতি বা স্থানীয়দের লালিত কিংবদন্তি যে, অত্র বিজন স্থানে একটি সুপেয় জলাশয়ের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তার প্রিয় অলী সৈয়দ গোয়াস উদ্দীন মদদ প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আকাশ আলোকিত করে নেমে আসা ফেরেশতাদের দ্বারা এক রাতেই এই দিঘী সৃষ্টি হয়েছে।[৯] একারণেই সৃষ্টির পর থেকে কখনও এ দিঘিকে সংস্কার কিংবা পুনঃখননের প্রয়োজন হয়নি, কালক্রমে নিজে থেকেই এটা গভীরতা প্রাপ্ত হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Mashajan Dighi · বাংলাদেশ"Mashajan Dighi · বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-৩০ 
  2. UNESCO World Heritage Centre। "Nubian Monuments from Abu Simbel to Philae"।
  3. আব্দুল্লাহ, সৈয়দ। গবেষণার আলোকে তরফ বিজয়আইএসবিএন 9789843310569 
  4. বই:বঙ্গ বাঙ্গালা বাঙ্গালী ; লেখক: ফাহমিদ-উর-রহমান; প্রকাশনী :মক্তব প্রকাশন ;
  5. অবস্থান।, মশাজানের দিঘীঅবস্থানহবিগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচ মাইল দক্ষিণে মশাজান গ্রামে এই দিঘীর। "মশাজানের দিঘী"Teachers Portal। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০২ 
  6. "Google Maps"Google Maps। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৮ 
  7. http://archive.bbarta24.net/parzoton/2016/04/12/29034
  8. হযরত শাহজালাল রঃ ও তাঁর কারামত। লেখকঃ সৈয়দ মোস্তফা কামাল। প্রকাশঃ ১৯৮৪ সন।
  9. স্থানীয় ঐতিহ্যমুলক পুস্তকঃ মসাজান দর্পণ। প্রকাসকঃ সৈয়দ মকলিছ মিয়া, সৈয়দ আব্দুন নবী ও সৈয়দ আব্দুল বারী জেলা প্রশাসক। প্রকাসঃ ১৯৮০ সন।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • গবেষণা গ্রন্থঃ গবেষণার আলোকে তরফ বিজয়। লেখকঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক,গবেষক, লেখক। ISBN 978-984-33-1056-9
  • গবেষণা প্রবন্ধঃ মরমী সাহিত্য ও সূফী সাধনা। লেখকঃ সৈয়দ হাসান ইমাম হুসেনী। লেখক, গবেষক, সমাজ সংস্কারক। প্রকাসঃ ১৯৮৪ ইং
  • গবেষণা প্রবন্ধঃ তরফ বিজয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। লেখকঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ,ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক,গবেষক, লেখক। প্রকাসঃ ১৯৯৪ সন
  • গবেষণামূলক সম্মেলিত প্রকাসনাঃ হবিগঞ্জ পরিক্রমা। প্রকাসঃ ১৯৯৪ সন।
  • স্থানীয় ঐতিহ্যমুলক পুস্তকঃ মসাজান দর্পণ। প্রকাসকঃ সৈয়দ মকলিছ মিয়া, সৈয়দ আব্দুন নবী ও সৈয়দ আব্দুল বারী জেলা প্রশাসক। প্রকাসঃ ১৯৮০ সন।
  • গবেষণামুলক গ্রন্থঃ হযরত শাহজালাল রঃ ও তাঁর কারামত। লেখকঃ সৈয়দ মোস্তফা কামাল। প্রকাসঃ ১৯৮৪ সন।
  • ফার্সিতে লিখিত প্রাচীন মশাজানের সৈয়দ বংশের নসবনা।