মনোজ বসু
মনোজ বসু (২৫ জুলাই ১৯০১ – ২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক।[১]
মনোজ বসু | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭ | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | আশুতোষ কলেজ |
পেশা | বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক |
পিতা-মাতা | রামলাল বসু (পিতা) |
পুরস্কার | সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনামনোজ বসুর জন্ম ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে জুলাই বৃটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রামের এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে। তবে পরিবারটির বংশগৌরব ও খ্যাতি ছিল ।তার পিতার নাম রামলাল বসু। মাত্র আট বৎসর বয়সে যখন তিনি পিতৃহীন হন, তখন তিনি পাঠশালার গণ্ডি পার হননি। প্রথমে নিজ গ্রামে পরে,১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর খুলনার বাগেরহাট কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি বিপ্লবী দল যুগান্তরের সংস্পর্শে আসেন ও স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই.এ. পাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সাউথ সুবারবন কলেজ, বর্তমানের আশুতোষ কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে, আইন পড়া শুরু করলেও আর্থিক কারণে তা শেষ করতে পারেননি।
কর্মজীবন
সম্পাদনাকলকাতার ভবানীপুরে সাউথ সুবারবন স্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক রচনায় মনোনিবেশ করেন। প্রকাশনার জন্য পরবর্তীতে নিজের প্রকাশনা সংস্থা "বেঙ্গল পাবলিশার্স" প্রতিষ্ঠা করেন। শেষে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষকতা পেশা পরিত্যাগ করেন।
সাহিত্য জীবন
সম্পাদনাসাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ বাল্যকাল থেকেই ছিল। সাত বছর বয়স থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় সহপাঠীদের নিয়ে হাতে লিখে দেওয়াল পত্রিকা বের করতেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা প্রথম গল্প ছিল "গৃহহারা"। তার গল্পের সংকলন 'বনমর্মর' ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। নিজে যখন নিয়মিত কবিতা গল্প লেখালেখা শুরু করেন, সেই সাথে অন্যান্য প্রকাশনার কাজও করে গেছেন। গুরুসদয় দত্ত রচিত ব্রতচারীদের জন্য অপরিহার্য সঙ্গী -'ব্রতচারী সখা' র (১৯৩৩) প্রকাশনা করেন মনোজ বসু।[২] এছাড়াও, গুরুসদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত 'বাংলার শক্তি'(১৯৩৬) মাসিক পত্রিকার সম্পাদনাও করতেন তিনি। প্রকাশনা ও সম্পাদনা কাজের পাশাপাশি তিনি নিজে উপন্যাস রচনা শুরু করেন। তার প্রতিটি উপন্যাসে দেশ, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের মানুষের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি সমস্যা, বাংলার নিসর্গ চিত্র, গ্রামীণ মানুষের জীবনাচরণ চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখায়। সেসময়ের সশস্ত্র বিপ্লবীদের ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ "ভুলি নাই"। মূলতঃ,মানুষের জীবনকথা আর তাদের জগৎ নিয়ে বিভিন্ন পটভূমিতে তার অভিজ্ঞতা পরিস্ফুট হয়েছে অসংখ্য কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে আর ভ্রমণকাহিনীতে। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি হিন্দী, ইংরেজি, গুজরাটি, মারাঠা, মালয়ালম ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণও হয়েছে। মনোজ বসু পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন। ভারতের বহু সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংস্থার পৌরহিত্য করেছেন ও ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে বহুবার বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। মনোজ বসু ছিলেন একজন প্রথম শ্রেনীর ছোটগল্পকার। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -
প্রাক-স্বাধীনতা পর্বের রাজনৈতিক পটভূমিতে রচিত গ্রন্থ -
- 'ভুলি নাই' (১৯৪২)
- 'সৈনিক' (১৯৪৬)
- 'আগস্ট ১৯৪২'
- 'বাঁশের কেল্লা'
গল্পগ্রন্থ-
- 'বনমর্মর' (১৯৩২)
- 'নরবাঁধ' (১৯৩৩)
- 'দেবী কিশোরী'( ১৯৩৪)
- 'পৃথিবী কাদের' (১৯৪০)
- 'কাঁচের আকাশ'
- 'খদ্যোত'
- 'দিল্লি অনেক দূর'
- 'দুঃখ-নিশার শেষে'
- 'উলু'
- 'কুঙ্কুম'
জীবনের অভিজ্ঞতায় প্রতিফলিত উপন্যাস ও অন্যান্য গ্রন্থ-
- 'আমি সম্রাট'
- 'সেই গ্রাম সেইসব মানুষ'
- 'নবীন যাত্রা'
- 'ওগো বধূ সুন্দরী'
- 'এক বিহঙ্গী'
- 'কিংশুক'
- 'মায়াকন্যা'
- 'একদা নিশীথকালে'( ১৯৪২)
- 'জলজঙ্গল' (১৯৫১)
- 'বৃষ্টি বৃষ্টি' (১৯৫৭)
- 'আমার ফাঁসি' (১৯৫৯)
- 'রক্তের বদলে রক্ত' (১৯৫৯)
- 'রূপবতী' (১৯৬০)
- 'বন কেটে বসত' (১৯৬১)
- 'নিশিকুটুম্ব' (১৯৬৩)
- 'সেতুবন্ধ'
- 'ঝিলমিল'
- 'পথ কে দেখাবে'
- 'বকুল'
- 'শত্রুপক্ষের মেয়ে'
- 'সবুজ চিঠি'
- 'মানুষ নামক জন্তু'
স্বদেশানুরাগদীপ্ত নাটক -
- 'প্লাবন'
- 'নতুন প্রভাত' (১৯৪৩)
- 'রাখীবন্ধন' (১৯৪৯)
অন্যান্য নাটক-
- 'শেষলগ্ন'
- 'বিপর্যয়'
- 'বিলাসকুঞ্জ বোডিং'
- 'ডাকবাংলো' - 'বৃষ্টি, বৃষ্টি' উপন্যাসের নাট্যরূপ
ভ্রমণকাহিনী -
- 'ভ্রমণকাহিনী'
- 'চীন দেখে এলাম'
- 'সোভিয়েতের দেশে দেশে'
সম্মাননা
সম্পাদনাসাহিত্যকীর্তির জন্য স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিখ্যাত "নিশিকুটুম্ব" উপন্যাসটির জন্য ভারতের সাহিত্য সম্মাননা - সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ পুরস্কারে,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শরৎচন্দ্র পদক ও পুরস্কারে' সম্মানিত হয়েছেন।
জীবনাবসান
সম্পাদনাবাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা সাহিত্যিক মনোজ বসু ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে ডিসেম্বর ৮৬ বছর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৯৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার- ব্রতচারী সখা"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২০।