মনতোষ রায়

ভারতীয় বডিবিল্ডার

মনতোষ রায় (১৯১৭-২০০৫) ১৯৫১ সালে গ্রুপ ৩ অ্যামেচার বিভাগে মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব[] বিজয়ী প্রথম এশীয়[][][] তথা বঙ্গসন্তান মনতোষ রায় একজন ভারতীয় বডিবিল্ডার ছিলেন।

মনতোষ রায়
জন্ম২১ অক্টোবর ১৯১৭
গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ মহকুমা,ঢাকা জিলা,বাংলা প্রদেশ ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৯ জুন ২০০৫ (বয়স ৮৮ বৎসর)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাদেহসৌষ্ঠব
পিতা-মাতারসিক লাল রায়

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

ঢাকা জেলার অন্তর্গত মেঘনা নদীর তীরের একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম গজরিয়াতে ১৯১৭ সালের ২১ শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রসিক লাল রায়।[] শৈশবে তাকে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল। তিনি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করতেন। মাত্র বারো বছর বয়স থেকে তিনি শরীরচর্চা করতে শুরু করেছিলেন এবং বিষ্ণুচরণ ঘোষকে তিনি তার গুরু বলে মেনেছিলেন। মনতোষ রায় সর্বদা বিষ্ণুচরণ ঘোষের ছবি সামনে রেখে শরীর চর্চা করতেন এবং এমতাবস্থায় একদিন মনতোষ বাবু ওনার চক্ষুগোচরে আসলে উনি ওনাকে ওনার শিষ্য বলে মেনে নেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৩৯ সালে তিনি প্রথম দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্ধীতা করেন কিন্তু সেখানে তিনি সাফল্যলাভ করতে পারেননি। তাই এরপর তিনি আরও কঠোর অনুশীলনের জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প করেন। এরপর ১৯৩৯এ ইস্ট ইন্ডিয়ান বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ[] এবং ১৯৪৭ সালে অল ইন্ডিয়া বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ[] বিজেতা হন।

এরপর ১৯৫১ সালে শ্রী রায় যুক্তরাজ্যে উড়ে যান গ্রুপ ৩ অ্যামেচার বিভাগে মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার জন্য এবং গর্বের সাথে সেই প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভ করেন। সেখানকার দর্শককুল ওনার সুগঠিত মাংসপেশি দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টার মত সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ওনার সাক্ষর নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই খেতাব জয়ের পর ইন্ডিয়া হাউসে ভারতীয় হাই কমিশনার তাকে সংবর্ধিত করেন।

ভারতে ফিরে আসার পর তিনি বিভিন্ন ফিজিক্যাল কালচার ক্লাবে প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। এমনকি বিভিন্ন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের যোগা এবং ফিটনেস বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতেন। ১৯৫৮সালে তিনি ইন্ডিয়ান বডি বিল্ডিং ফেডারেশন এবং [] এশিয়ান বডি বিল্ডিং ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল কলেজে শিক্ষকতাও করেছিলেন। বিভিন্ন সাময়িক পত্র পত্রিকায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রবন্ধ লেখালেখি করতেন[]। যোগার উপর তিনি কিছু বইও লিখেছিলেন। এমনকি দূরদর্শনেও ওনার যোগার উপরে অনুষ্ঠানের সম্প্রচার হয়েছিল। কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তিনি যোগকেন্দ্রও গড়ে তুলেছিলেন।

পরবর্তী জীবন

সম্পাদনা

১৯৯৮ সালে কলকাতায় মনতোষ রায় ওনার বাড়ির কাছেই একটি মাল্টিজিম স্থাপন করেন কিন্তু এইরকম একজন কর্মঠ মানুষের জীবনের পরবর্তী দিনগুলি শয্যাশায়ী[] হয়ে কাটাতে হয়। অবশেষে ২০০৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[][]

উত্তরাধিকার

সম্পাদনা

মনতোষ রায়ের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত মাল্টিজিমটি তার পুত্র মলয় রায় পরিচালনা করেন। মলয় রায় নিজেই আটবার মিস্টার ইন্ডিয়া খেতাব জয়ী এবং অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুর পর ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী এবং পি. ডব্লু. ডি. মন্ত্রী ওনাদের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ওনার নামে নামাঙ্কিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Monotosh Roy: The first Asian to be crowned Mr. Universe (1917 - 2005)"Mr. Universe 2011। Indian Bodybuilding and Fitness Federation। ২১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৪ 
  2. ঘোষ, অনিল চন্দ্র (ফেব্রুয়ারি ২০০৮) [১৯২৭]। ব্যায়ামে বাঙালী [ব্যায়ামে বাঙালী]। কলকাতা: প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরী। পৃষ্ঠা ৫৫–৫৬। আইএসবিএন 81-89466-04-6 
  3. "দ্য ইন্ডিয়ান অ্যাটলাস"দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। জুলাই ৩, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৪ 
  4. "Monotosh Roy"Sandow and the Golden Age of Iron Men: The Online Physical Culture Museum। ২৭ ডিসেম্বর ২০০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৪ 
  5. সাহাদাত পারভেজ। গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। পৃষ্ঠা ২৬৪, ২৬৫।