মটরশুঁটি
মটরশুঁটি হলো লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ Pisum sativum এর গোলাকার বীজ।[১] প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে। যদিও এটি এক প্রকারের ফল,[২] এটি মূলত সবজি হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। শুকনো মটরশুটি ছিলে ভেঙে দ্বিখণ্ডিত করে মটর ডাল তৈরি করা হয় ।[৩]
মটরশুঁটি / Pea Pisum sativum | |
---|---|
Peas are contained within a pod | |
মটরশুঁটি ফুল | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
বিভাগ: | Magnoliophyta |
শ্রেণীবিহীন: | eudicots |
বর্গ: | Fabales |
পরিবার: | Fabaceae |
উপপরিবার: | Faboideae |
গোত্র: | Vicieae |
গণ: | Pisum |
প্রজাতি: | P. sativum |
দ্বিপদী নাম | |
Pisum sativum L. |
P. sativum একটি একবর্ষজীবী, দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শীত মৌসুমে চাষ করা হয়ে থাকে। গড়ে প্রতিটি মটরশুঁটির ওজন ০.১ হতে ০.৩৬ গ্রাম। [৪] মটরশুঁটির বীজকে সবজি হিসাবে তাজা, জমাটবাঁধা, অথবা ক্যানে ভর্তি করে পরে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
বুনো মটরশুঁটি মধ্যপ্রাচ্য এবং নিকটপ্রাচ্যে খাওয়া হয়। প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসারে নিওলিথিক যুগের সিরিয়া, তুরস্ক, এবং জর্ডান এ মটরশুঁটির খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিশরের নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায় প্রায় ৪৮০০-৪৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এবং উচ্চ মিশরে ৩৮০০-৩৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এর ব্যবহারের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। জর্জিয়াতে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দের দিকে এর ব্যবহার হতো। এসব এলাকার পূর্ব দিকে মটরশুঁটির ব্যবহার অনেক পরে শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানে মটরশুঁটির নজীর পাওয়া যায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ। পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষের হরপ্পা এলাকায় ২২৫০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মটরশুঁটির চাষ হতো। গাঙ্গেয় অববাহিকা এবং দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ নাগাদ মটরশুঁটির চাষ শুরু হয়।[৫]
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ৩৩৯ কিজু (৮১ kcal) |
১৪.৫ g | |
চিনি | ৫.৭ g |
খাদ্য আঁশ | ৫.১ g |
০.৪ g | |
৫.৪ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ সমতুল্য | ৫% ৩৮ μg৪% ৪৪৯ μg |
থায়ামিন (বি১) | ২৬% ০.৩ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৮% ০.১ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ১৪% ২.১ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ২% ০.১ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ১৫% ০.২ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ১৬% ৬৫ μg |
ভিটামিন সি | ৪৮% ৪০.০ মিগ্রা |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ৩% ২৫.০ মিগ্রা |
লৌহ | ১২% ১.৫ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৯% ৩৩.০ মিগ্রা |
ফসফরাস | ১৫% ১০৮ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ৫% ২৪৪ মিগ্রা |
জিংক | ১৩% ১.২ মিগ্রা |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
পুষ্টিগুণ
সম্পাদনামটরশুঁটিতে শ্বেতসার রয়েছে। তবে এটি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি ৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, তামা, আয়রন, দস্তা এবং লুটেইন সমৃদ্ধ।[৬]
বিশেষ কথা
সম্পাদনাগ্রেগর জোহান মেন্ডেল তার বংশগতি সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলিতে এই উদ্ভিদের সাহায্য নেন।
মটর গাছের অভিযোজন
সম্পাদনামটর গাছ স্থলজ, স্বভোজী উদ্ভিদ। মটর লতাগাছ। এই উদ্ভিদে প্রধানত আরোহণের জন্য অভিযোজন ও পুষ্টিঘটিত অভিযোজন দেখা যায়। নিচে এ সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হল: আরোহণের অভিযোজন: মটর গাছের কাণ্ড খুব নরম ও দুর্বল। কাণ্ড খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। যাতে গাছ ঠিকমতো আলো পায় সেজন্য কাণ্ড কোন আশ্রয় অবলম্বন করে উপরের দিকে ওঠে। এই রকম উদ্ভিদকে আরোহী উদ্ভিদ (Climbing Plants) বলা হয়। যে অঙ্গ উদ্ভিদকে উপরে উঠতে সাহায্য করে তাকে আরোহণ-অঙ্গ (Climbing Organs) বলে। মটর গাছের আকর্ষ (Tendril) আরোহণ-অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।যৌগ পত্রের সামনের দিকের পত্রকগুলি আকর্ষে পরিবর্তিত হয়। পত্রক থেকে আকর্ষ উৎপন্ন হয় বলে এই রকম আকর্ষকে পত্রকাকর্ষ (Leaflet Tendril) বলে। এরা খুবই সুবেদী এবং সুযোগ পেলেই খাড়া কোন অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে উপরে ওঠে। ফলে কাণ্ডও উপরের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মটর গাছের পাতার পত্রকগুলি আকর্ষে পরিবর্তিত হওয়ার ফলে পাতার সালোক সংশ্লেষের এলাকা কমে যায়। এই অভাব পূরণ করতে নিচে অবস্থিত উপপত্রগুলি পাতার মতো বড়ো হয় এবং সালোকসংশ্লেষে অংশ গ্রহণ করে।
পুষ্টিঘটিত অভিযোজন: মটর গাছ স্বভোজী, সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে নিজেদের দেহে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে। কিন্তু নাইট্রোজেন ঘটিত লবণের জন্য অনেকাংশে এদের একরকম ব্যাকটিরিয়ার উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই মটর গাছে মিথোজীৰীয় পুষ্টি (Symbiotic Nutrition) ঘটে। এদের মূলে ছোট ছোট গুটি (Nodules) থাকে। এই গুটির মধ্যে রাইজোবিয়াম (Rhizobium) নামে একরকম ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধে। এই ব্যাকটিরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে উদ্ভিদের মূলকে দেয়। বিনিময়ে ব্যাকটিরিয়া মূল থেকে শর্করা-জাতীয় খাদ্যরস গ্রহণ করে। ফলে দুটি জীবই উপকৃত হয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবের এই রকম পুষ্টি পদ্ধতিকে মিথোজীবীয় পুষ্টি (Symbiotic Nutrition) বলে।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Oxford English Dictionary - Pea
- ↑ Rogers, Speed (2007). Man and the Biological World Read Books. pp. 169–170. আইএসবিএন ১-৪০৬৭-৩৩০৪-০ retrieved on 2009-04-15.
- ↑ http://en.m.wiki.x.io/wiki/Split_pea
- ↑ Pea
- ↑ Zohary, Daniel and Hopf, Maria (2000). Domestication of Plants in the Old World, third edition. Oxford: University Press. আইএসবিএন ০-১৯-৮৫০৩৫৬-৩ p. 105–107
- ↑ "Nutrition Facts: Peas"। Nutrition। vegonline.org। ২০১২-০১-০৬। এপ্রিল ২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫।
- ↑ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শিরোনাম:অভিযোজন প্রকাশক=শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৮৬, পৃঃ ১৩৬-১৩৮