মঞ্জুর আহমেদ
মঞ্জুর আহমেদ (জন্ম: ১৯৫২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
মঞ্জুর আহমেদ | |
---|---|
জন্ম | ১৯৫২ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামনজুর আহমেদের জন্ম ঢাকায়। তার বাবার নাম আবদুস সুলতান মল্লিক এবং মায়ের নাম মনিরুননেসা বেগম। তার স্ত্রীর নাম গুলশান মঞ্জুর। তাদের দুই ছেলে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭০-৭১ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদানের অপেক্ষায় ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। মে মাসে মুহুরী নদীর এক সেতু ধ্বংসে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন তিনি। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পর্কে খবর সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে যান। জুন মাসে তাকে প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে ছাতক, রাধানগর ও গোয়াইনঘাট আক্রমণে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালে সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিলো সিলেট জেলার অন্তর্গত গোয়াইনঘাট এলাকায়। গোয়াইনঘাট উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। ছাতক অপারেশনের পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গোয়াইনঘাট আক্রমণের জন্য সমবেত হয় ৫ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে। লেংগুরা গ্রামের দক্ষিণে ব্রিজহেড তৈরির মাধ্যমে নদী অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বপাড়ের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে আলফা কোম্পানি। ওই কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ। মধ্যরাতে মঞ্জুর আহমেদ শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি সহযোদ্ধাদের নিয়ে অবস্থান নিতে থাকলেন। শেষ রাতের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও মঞ্জুর আহমেদের প্রচেষ্টায় দ্রুত সংগঠিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাল। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। দুপুরের পর পাকিস্তানি আক্রমণের প্রচণ্ডতা আরও বেড়ে গেল। মঞ্জুর আহমেদ এতে বিচলিত না হয়ে বীরত্বের সঙ্গে তার দলের নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। তার সাহসিকতায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও বেড়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ২৩ অক্টোবর রাতে সেখানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। কিন্তু স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতির খবর পেয়ে যায়। ২৪ অক্টোবর ভোর আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা পরিখা খনন করে প্রতিরক্ষা অবস্থান তৈরি করছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা এতে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় মঞ্জুর আহমেদ সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। দুপুরের পর হেলিকপ্টারযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নতুন দল এসে শক্তি বৃদ্ধি করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলে। পুরো গোয়াইনঘাট এলাকা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়। কোনো কোনো স্থানে হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাদের ফায়ার পাওয়ার এতই বেশি ছিল যে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কোনো একটি অবস্থানেও টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। তার পরও তারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১০-০১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩০২। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ২৩১। আইএসবিএন 9789843338884।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।