মজিবর রহমান দেবদাস
মজিবর রহমান দেবদাস (১ জানুয়ারি ১৯৩০ - ১৮ মে ২০২০) হলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। ২০১৫ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে একুশে পদক লাভ করেন।[১] বার্ধক্যজনিত কারণে ২০২০ সালের ১৮ মে জয়পুরহাট জেলার মহুরুল গ্রামে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।[২]
মজিবর রহমান দেবদাস | |
---|---|
জন্ম | মজিবর রহমান ১ জানুয়ারি ১৯৩০ |
মৃত্যু | ১৮ মে ২০২০ মহুরুল গ্রাম, জয়পুরহাট | (বয়স ৯০)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩০-১৯৪৭) পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১) বাংলাদেশী (১৯৭১-বর্তমান) |
পুরস্কার | একুশে পদক |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনামজিবর রহমান ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত জয়পুরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে খঞ্জনপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএ পাশ করার পর তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের করাচী শহরের নাজিমাবাদ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মজিবুর ফলিত গণিত এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।[৩]
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনাবাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে মজিবুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট একটি চিঠি পাঠালে বিশ্ববিদ্যালয় এই চিঠি সেনাবাহিনীকে পাঠিয়ে দেয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই মে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সেনা ছাউনিতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করায় মজিবর পরবর্তীকালে তার স্মৃতিশক্তি হারান।[৩] মজিবর রহমান দেবদাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি মিলিটারীদের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। চোখের সামনে পাকিস্তানিরা এ দেশের বাঙ্গালী মুসলমানদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। জীবন রক্ষার্থে অনেকেই যখন হিন্দু নাম বাদ দিয়ে মুসলিম নাম রাখা শুরু করেছিল তখন এর প্রতিবাদ ও ক্ষোভে পিতা-মাতার দেয়া ইসলামী নাম মজিবর রহমান পরিবর্তন করে রাখেন দেবদাস।
সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মজিবর রহমানকে সংবর্ধনা দেয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট সদস্য মফিদুল হক তাকে নিয়ে কান পেতে রই নামক একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেন।[৩] ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক পুরস্কার প্রদান করেন।[১][৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "চলে গেলেন 'জীবন্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী' মজিবর রহমান"। বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর। ১৮ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০২৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২০-০৫-১৯)। "মুজিবুর রহমান 'দেবদাস': আমাদের অমোচনীয় পাপ"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৭।
- ↑ ক খ গ "একুশে পদকের জন্য মনোনীত জয়পুরহাটের মজিবর- পরিবারের সঙ্গে খুশি গ্রামবাসী"। প্রথম আলো। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৫।
- ↑ সোহরাব, হোসেন (১৯ মে ২০২০)। "মুজিবুর রহমান 'দেবদাস': আমাদের অমোচনীয় পাপ" (এইচটিএমএল)। ঢাকা: প্রথমআলো। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০২৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]