মক্কার বলীখেলা
মক্কার বলী খেলা বা মক্কারো বলীখেলা এক বিশেষ ধরনের কুস্তি খেলা, যা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার অন্তর্গত মাদার্শা ইউনিয়নে প্রতিবছর বাংলা সনের ০৭ই বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বলা হয় বলী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি, বলীখেলা নামে পরিচিত।[১][২]
লক্ষ্য | প্রতিপক্ষকে আঘাত |
---|---|
কঠোরতা | পূর্ণ সংস্পর্শ |
উৎপত্তির দেশ | বাংলাদেশ |
বিখ্যাত অনুশীলনকারী | দিদারুল আলম |
মূল | ঐতিহাসিক |
অলিম্পিক খেলা | না |
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রায় আড়াই-তিন শতাধিক বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কা থেকে আগত ইয়াছিন মক্কী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শার পাহাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু করেন, তখন থেকে এলাকাটি মক্কারবাড়ী নামে পরিচিত লাভ করে।[১] ইয়াছিন মক্কী এলাকায় ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি কিছু ব্যবসাও শুরু করেন। হজ্ব মৌসুমে তিনি বাংলাদেশের অনেক হাজীকে হজ্ব করানোর জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যেতেন। এক সময় তিনি সাতকানিয়ার মাদার্শা এলাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। সে সুবাদে সাতকানিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে তিনি বিপুল পরিমাণ জায়গা ক্রয় করে নেন। ইয়াছিন মক্কী এক হজ্ব মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু হাজী নিয়ে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার পরবর্তী প্রজন্ম জমিদারি প্রথা চালু করেন।[৩][৪] পরবর্তীতে ইয়াছিন মক্কীর নাতি কাদের বক্সু ১৮৭৯ সালে তাদের প্রজাদের থেকে খাজনা আদায়ের সময় আনন্দ দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম বলি খেলার সূচনা করেন এবং তার মৃত্যুর পর এটি মক্কারো বলী খেলা নামে পরিচিত লাভ করে। বলীখেলার শুরুর দিকে বাড়ির সামনে বিশালাকৃতির একটি গাছের টুকরো রাখতেন।[২][৫]
খাজনা দিতে আসা এবং স্থানীয় লোকদের মধ্য থেকে যারা ওই গাছের টুকরো উপরে তুলতে পারতেন তারাই কেবল বলী খেলার উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হতেন। গাছের টুকরা ওঠানোর যারা যোগ্যতা অর্জন করতেন তাদের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা বলি খেলা হতো এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দিতেন।বলী খেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বৈশাখী মেলারও আয়োজন করা হয়।[১][২] [৩][৫]
মল্ল পরিবার ও বলীখেলা
সম্পাদনাচট্টগ্রাম বলীর দেশ। কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের উনিশটি গ্রামে মল্ল উপাধিধারী মানুষের বসবাস ছিল। প্রচণ্ড দৈহিক শক্তির অধিকারী মল্লরা সুঠামদেহী সাহসী পুরুষ এবং তাদের বংশানুক্রমিক পেশা হচ্ছে শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন। এই মল্লবীরেরাই ছিলেন বলীখেলার প্রধান আকর্ষণ ও বলীখেলা আয়োজনের মূল প্রেরণা। চট্টগ্রামের বাইশটি মল্ল পরিবার ইতিহাস প্রসিদ্ধ। আশিয়া গ্রামের আমান শাহ মল্ল, চাতরি গ্রামের চিকন মল্ল, কাতারিয়া গ্রামের চান্দ মল্ল, জিরি গ্রামের ঈদ মল্ল ও নওয়াব মল্ল, পারি গ্রামের হরি মল্ল, পেরলা গ্রামের নানু মল্ল, পটিয়ার হিলাল মল্ল ও গোরাহিত মল্ল, হাইদগাঁওর অলি মল্ল ও মোজাহিদ মল্ল, শোভনদন্ডীর তোরপাচ মল্ল, কাঞ্চননগরের আদম মল্ল, ঈশ্বরখাইনের গনি মল্ল, সৈয়দপুরের কাসিম মল্ল, পোপাদিয়ার যুগী মল্ল, খিতাপচরের খিতাপ মল্ল, ইমামচরের ইমাম মল্ল, নাইখাইনের বোতাত মল্ল, মাহাতার এয়াছিন মল্ল, হুলাইনের হিম মল্ল, গৈরলার চুয়ান মল্ল।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "মক্কার বলী খেলা পরিচিতি"। chittagong.gov.bd। ১৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ গ "মক্কার বলী খেলার ১৪০তম আসর কাল"। ntv bd। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ "দর্শনীয় স্থান - সাতকানিয়া"। satkania.chittagong.gov.bd। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ "মক্কার বলীখেলায় দিদার ও সামশু যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ "সাতকানিয়ায় মক্কার বলি খেলার ১৩৯তম আসর সম্পন্ন"। বীরকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ বন্দর শহর চট্টগ্রাম, আবদুল হক চৌধুরী পৃঃ ২৪৪