ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার প্রশিক্ষণ একাডেমী
(ভারতীয় সামরিক একাডেমি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভারতীয় সামরিক একাডেমি বা ইংরেজিতে Indian Military Academy (ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি) (ইংরেজি নামটিই বহুল ব্যবহৃত) হচ্ছে ভারতের সেনাবাহিনীর জন্য কমিশন্ড অফিসার পদ পাওয়ার জন্য প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রায়শঃই কেন্দ্রটিকে আইএমএ (ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি এর সংক্ষিপ্ত রূপ) বলা হয় বা কখনো কখনো আইএমএ দেহরাদুনও বলে সম্বোধন করা হয় কারণ এটি দেহরাদুনে অবস্থিত। এটি হিন্দি ভাষায় भारतीय सैन्य अकादमी (ভারতীয় সৈন্য একাডেমী) নামে পরিচিত। এটি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতীয় সামরিক একাডেমি
নীতিবাক্যवीरता और विवेक (বীরত্ব এবং বিবেক)
ধরনসামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
স্থাপিত১ অক্টোবর ১৯৩২; ৯২ বছর আগে (1 October 1932)
প্রধান আদেশদানকারী কর্মকর্তালেঃ জেনারেল
অবস্থান, ,
ভারত
পোশাকের রঙরক্ত লাল এবং লৌহ ধূসর
  
মানচিত্র

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমির মেইন বিল্ডিং

ভারতীয় সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানানোর দাবী

সম্পাদনা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতীয় নেতারা একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাখার কথা ভাবেন যার মাধ্যমে ভারতীয়রা নিজেদের দেশের প্রতি অনুগত থাকবে। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দেরকে সামরিক কমিশন প্রদান বা কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের অনুমতি দিতনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত কোনো স্থানীয় ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে কমিশন পাননি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় সৈনিকদের দক্ষতা দেখে ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালনকারী 'সেক্রেটারী অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া' এডউইন স্যামুয়েল মনটেগু এবং ১৯১৬ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর-জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ফ্রেডরিক দেসিগার, ১ম ভিসকাউন্ট চেমসফোর্ড প্রতি বছরে ১০ জন ভারতীয়কে সামরিক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ লাভের জন্য ব্রিটেনের রাজকীয় সামরিক মহাবিদ্যালয়, স্যান্ডহার্স্টে পাঠানোর কথা বলেন। ১৯২২ সালে দেহরাদুনে 'প্রিন্স অব ওয়েলস রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ' (এখন 'রাষ্ট্রীয় ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ' নামে পরিচিত) নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় তরুণ ভারতীয়দের স্যান্ডহার্স্টে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রস্তুত করার জন্য। সেনাবাহিনীর 'ভারতীয়করণ' শুরু হয়ে যায় ৩১ জন ভারতীয়কে কমিশন দেওয়ার মাধ্যমে। এই প্রথম কমিশন পাওয়া ব্যাচের মধ্যে ছিলেন শ্যাম মানেকশ’ যিনি ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দাবী থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশরা বেশি ভারতীয়কে কমিশন দিতে চায়নি। ভারতীয় নেতারা ১৯৩০ সালে 'রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স'-এ বিষয়টি উত্থাপন করেন। কনফারেন্সের অন্যতম আলোচনার মধ্যে ছিলো ভারতীয়দের জন্য সামরিক বাহিনীতে কমিশন প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ফিল্ড মার্শাল স্যার ফিলিপ চেটওড 'ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ কমিটি' নামের একটি সভার সভাপতিত্ব করেন এবং ১৯৩১ সালে তিনি বলেন যে দেহরাদুনে একটি 'ভারতীয় সামরিক বিদ্যাপীঠ' গড়ে তোলা হবে যেখানে যেখানে প্রতি দু'বছরে ৪০ জন ভারতীয়কে কমিশন দেওয়া হবে দুই বছর এবং ছয় মাস প্রশিক্ষণ শেষে।

উদ্বোধন থেকে স্বাধীনতা

সম্পাদনা

সরকার দেহরাদুনস্থিত ভারতীয় রেলওয়ে এর 'রেলওয়ে স্টাফ কলেজ' এর ২০৬ একর জমি সামরিক একাডেমি বানানোর জন্য দিয়ে দেয়। ব্রিগেডিয়ার এল. পি. কলিন্সকে একাডেমির প্রথম অধিনায়ক এবং ৪০ জন ভারতীয়কে প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয়; যারা 'জেন্টলম্যান ক্যাডেট' হিসেবে ১ অক্টোবর ১৯৩২ তারিখে প্রশিক্ষণ শুরু করে। ফিল্ড মার্শাল চেটওড প্রশিক্ষণের প্রথম মেয়াদের শেষে ১০ ডিসেম্বর ১৯৩২ তারিখে প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন।

১৯৩৪ সালে প্রথম ব্যাচ প্রশিক্ষণ শেষ করার আগে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড উইলিংডন রাজা পঞ্চম জর্জের পক্ষে একাডেমিকে পতাকা প্রদান করেন। প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেটদের প্রথম ব্যাচ ঐ বছরেরই ডিসেম্বর মাসে কমিশনপ্রাপ্ত হয়, এখন যাঁরা অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত, এদের মধ্যে রয়েছেন শ্যাম মানেকশ’ (পরে জেনারেল, ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালনকারী ভারতের সেনাপ্রধান, '৭৩ সালে ফিল্ড মার্শাল), মুসা খান (পরে জেনারেল, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন) এবং লেফটেন্যান্ট-জেনারেল স্মিথ ডুন যিনি বার্মীজ সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী থেকে ১৯৪৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

১৯৪১ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৬টি ব্যাচ একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে বের হয় এবং এর মাধ্যমে মোট ৫২৪ জন কমিশনপ্রাপ্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণার্থী ঢোকানো হয়, অস্থায়ীভাবে প্রশিক্ষণ মেয়াদ ছয়মাসে নামিয়ে আনা হয় এবং ক্যাম্পাস বড় করা হয়। ১৯৪১ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৯৪৬ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ৩৮৮৭ জন কমিশনপ্রাপ্ত হয়, যাদের মধ্যে ৭১০ জন ব্রিটিশও ছিলো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য। যুদ্ধ শেষে একাডেমির প্রশিক্ষণ আবার আগের মত দুই বছর এবং ছয় মাস করে দেওয়া হয়।[]

স্বাধীনতার পর

সম্পাদনা

১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতের স্বাধীনতার মাসে বেশ কিছু প্রশিক্ষক এবং ক্যাডেট ব্রিটেন এবং পাকিস্তানে চলে যায়। ব্রিগেডিয়ার ঠাকুর মহাদেও সিং, ডিএসও প্রথম ভারতীয় হিসেবে একাডেমির অধিনায়ক হন।

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান কর্মকর্তাগণ ফিল্ড মার্শাল ক্লড অচিনলেকের ১৯৪৬ সালের একটি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি নতুন যুগ্ম সামরিক (সেনা-বিমান এবং নৌ) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানানোর কথা বলেন। তারা ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতেই যুগ্ম সামরিক (তিন বাহিনীর ) প্রশিক্ষণ করানোর কথা ভাবেন। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিকে 'আর্মড ফোর্সেস একাডেমি' নামে নতুনভাবে নামকরণ করা হয় এবং ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারী নতুন 'জয়েন্ট সার্ভিসেস উইং' (জেএসডব্লিউ) তৈরি করা হয়, সেনাবাহিনীর জন্য 'মিলিটারি উইং' এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়।[][]

বিদ্যাপীঠটিকে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারী 'ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি' (এনডিএ) নামকরণ করা হয়। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পুনে'র কাছে 'খড়কওয়াসলা'তে নতুন 'জয়েন্ট সার্ভিসেস ট্রেনিং একাডেমি' খোলা হয়, এনডিএ নামটির সঙ্গে সঙ্গে 'জয়েন্ট সার্ভিসেস উইং'ও খড়কওয়াসলাতে স্থানান্তরিত হয়। দেহরাদুনের একাডেমিটির নাম ' মিলিটারি কলেজ' রাখা হয়।

১৯৫৬ সালের শেষের দিকে ব্রিগেডিয়ার এম এম খান্না ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে পাশ করা প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যাপীঠটির অধিনায়ক নিযুক্ত হন।

১৯৬০ সালে বিদ্যাপীঠটির নাম পুনরায় ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি করা হয়। ১৯৬২ সালের ১০ ডিসেম্বর, বিদ্যাপীঠটির ৩০তম উদ্বোধনী অধিবার্ষিকীতে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ বিদ্যাপীঠটিকে নতুন পতাকা প্রদান করেন।

যুদ্ধের সময় একাডেমী

সম্পাদনা

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ সংক্ষিপ্ত করে তাদেরকে ২য় লেফটেন্যান্ট/লেফটেন্যান্ট বানিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, একই রকম কাজ ১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়েও করা হয়েছিলো।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. http://indianarmy.nic.in/Site/FormTemplete/frmTemp10P24C.aspx?MnId=B28%20lZtuZS8=&ParentID=2YOl%20zJaUq0=
  2. "NDA History"। ২০১২-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৩ 
  3. Khanduri, Chandra B. (১৯৬৯)। Thimayya:An Amazing Life। New Delhi: Centre for Armed Historical Research, United Service Institution of India, New Delhi through Knowledge World। পৃষ্ঠা 151। আইএসবিএন 81-87966-36-X। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১০