ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সঙ্গীতের ধারা

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ভারতে বৈদিক যুগ হতেই চলে আসছে। প্রায় ২০০০ বছরের পুরোনো এই চর্চা মূলতঃ মন্দিরে পরিবেশিত স্তোত্র হতেই সৃষ্টি হয়েছে। সামবেদে সঙ্গীতকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত বিষয় হিসেবে আলোচনা করা হয়েছে।[][]

১৭৩৫ সালে একজন নারী তানপুরা বাজাচ্ছে।

বর্তমানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান দুটি ধারা বিদ্যমান:[]

হিন্দুস্থানী ও কর্নাটকী সঙ্গীতের কিছু কাঠমোগত বৈশিষ্ট ও রীতি রয়েছে। উভয় ধরনের সঙ্গীতেই রয়েছে দুটি মৌলিক উপাদান যা তালরাগ হিসেবে পরিচিত।[] রাগ সাতটি সুর সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি এবং ২২ টি শ্রুতির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা হয় মূলতঃ দু'ভাবে, কন্ঠে ও বাদ্যযন্ত্রে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এককভাবে পরিবেশনকারী যন্ত্রসমূহ হচ্ছে সরোদ, সেতার, সুরবাহার, বীণা, সারেঙ্গী, বাঁশী, হারমোনিয়াম, বেহালা, সন্তুর, তবলা, মৃদঙ্গ। এছাড়াও সহায়ক যন্ত্রসমূহ হচ্ছে তানপুরা, এস্রাজ, পাখোয়াজ ইত্যাদি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচলন মূলতঃ উত্তর ভারতে এবং কর্ণাটকীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত মূলতঃ দক্ষিণ ভারতে দেখা যায়।

হিন্দুস্থানী সঙ্গীত

সম্পাদনা

হিন্দুস্থানী সঙ্গীত বা হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চা বৈদিক যুগ হতে চলে আসলেও কেবলমাত্র হিন্দু সঙ্গীতের ঐতিহ্যই এতে নিবদ্ধ থাকেনি। বৈদিক দর্শন, ভারতের দেশজ শব্দ সুর এবং পারস্যের সাঙ্গীতিক প্রভাবে ঋদ্ধ হয়েছে উত্তর ভারতের এই হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত।[] পারস্যের সাঙ্গীতিক প্রভাব এসেছে মূলতঃ আফগান ও মুঘল সম্রাটদের মাধ্যমে।

হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের মূল প্রেরণা এসেছে হিন্দু ধর্মে নব রস হতে। রাগ আশ্রিত এই সাঙ্গীতিক প্রকাশ বর্তমান অব্দি অতি জনপ্রিয়তায় আসীন হয়ে আছে। সাত সুর ও ২২টি শ্রুতির সমন্বয়ে আরোহণ অবরোহন বিন্যাস, বাদী ও সমবাদী স্বরের প্রয়োগ এবং মীড়, গমক ও অন্যান্য সাঙ্গীতিক কৌশলের মাধ্যমে উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত রাগসমূহপরিবেশন করা হয়। ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতব্দীতে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধারা সমমায়িক ধর্মীয়, লোকগীতি এবং নাট্যকলার সাঙ্গীতিক প্রকাশ হতে স্বতন্ত্র রূপ লাভ করেছে। ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের প্রকাশভঙ্গী। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে খেয়াল

পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডে (১৮৬০-১৯৩৬) বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ সমূহকে দশটি ঠাট বা গ্রুপে ভাগ করেছেন। এর আগে এগুলো বিভাজিত ছিল রাগ (পুরুষ), রাগিণী (স্ত্রী) এবং পুত্রা (সন্তান) হিসেবে। কেউ কেউ মনে করেন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সময় ও কাল নির্ভর রাগ রয়েছে প্রায় ৬,০০০ টি।

কর্ণাটী সঙ্গীত

সম্পাদনা

কর্ণাটী সঙ্গীত বা কর্ণাটকীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত হচ্ছে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আদিতম রূপ। দক্ষিণ ভারতে উদ্ভূত কর্ণাটী সঙ্গীত হচ্ছে পৃথিবীর প্রচীনতম সঙ্গীতসমূহের একটি। এটিতেও রাগ ও তালের প্রকাশ ঘটেছে ভিন্ন মাত্রায়। কর্ণাটী সঙ্গীততে ৭২টি মেলোডিক কোড রয়েছে যেগুলোকে মেলাকারটা রাগ বলা হয়। এর সাথে সঙ্গত করবার জন্য রয়েছে ১০৮ ধরনের তাল।[]

পূরণধারা দাসকে (১৪৮০-১৫৬৪) কর্ণাটী সঙ্গীতের পিতা বলা হয়। তিনি ছিলেন একজন সন্ন্যাসী ও হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ (বিষ্ণু, বিত্তল অবতার)-এর ভক্ত।[] তিনি প্রায় ৪,৭৫,০০০ সঙ্গীত রচনা করেছেন যার বেশীর ভাগই হারিয়ে গেছে। তিনিই পরবর্তী যুগের কর্ণাটী সঙ্গীতের রচয়িতাদের প্রেরণা ছিলেন।

তথ্য উৎস

সম্পাদনা
  1. উইলিয়াম ফোর্ড থম্পসন (২০১৪)। সামাজিক ও ব্যবহারিক বিজ্ঞানে সঙ্গীত: একটি জ্ঞানকোষ (Music in the Social and Behavioral Sciences: An Encyclopedia)। SAGE Publications। পৃষ্ঠা ১৬৯৩–৯৪। আইএসবিএন 978-1-4833-6558-9 
  2. বেক ১৯৯৩, পৃ. ১০৭-৯, উদ্ধৃতি (বঙ্গানুবাদ): "এটি সাধারণত অনুমত যে ভারতীয় সঙ্গীত আসলেই উৎপত্তি লাভ করেছে সামবেদের ভজন-গীতির থেকে যা 'সাম' বা চরণের একটি বিশাল সমাহার। এগুলোর অনেকই এসেছে ঋগ্বেদ থেকে যাতে সুর যোগ করে উদ্গতা নামক গাতক পুরোহিতেরা গাইতেন।"।
  3. সোরেল ও নারায়ণ ১৯৮০, পৃ. ৩–৪।
  4. সোরেল ও নারায়ণ ১৯৮০, পৃ. ১–৩।
  5. তে নিজেনুইস ১৯৭৪, পৃ. ৮০।
  6. "রয়াল কার্পেট: কর্ণাটী পরিভাষার টিপ্পনী - T (Royal Carpet: Glossary of Carnatic Terms T)"karnatik.com 
  7. Ramesh N. Rao; Avinash Thombre (২০১৫)। আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ: ভারতীয় প্রেক্ষাপটে (Intercultural Communication: The Indian Context)। SAGE Publications। পৃষ্ঠা ৬৯–৭০। আইএসবিএন 978-93-5150-507-5