ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান সম্প্রদায়

ব্রিটিশ ভারত থেকে আগত চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ও অভিবাসীদের বংশধর দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক

দক্ষিণ আফ্রিকাতে বর্তমানে প্রায় ১১ লক্ষ ৫০ হাজার লোক বাস করে (দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ২.৫%), যাদেরকে ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান বলে ডাকা হয়। এদের প্রায় ৮০% কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে, ১৫% গুয়াটেং (প্রাক্তন ট্রান্সভাল) এলাকায় এবং বাকী প্রায় ৫% কেপটাউন এলাকায় বাস করে। কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে ভারতীয়রা মূলত ডারবান শহর এলাকায় বাস করে। ডার্বানের উপকূলীয় এলাকায় চ্যাট্‌সওয়র্থ, ফিনিক্স, টোনগাট এবং স্টেঞ্জার এলাকায় প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয় বাস করে। ডার্বানের কাছেই নাটালের অভ্যন্তরে পিটারমারিৎস শহরটিতে প্রায় ২ লক্ষ ভারতীয় বাস করেন; এই শহরটির কাছেই মহাত্মা গান্ধী জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হন, এবং এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ঐ শহরে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জীবনের দুই দশকেরও বেশি সময় দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাটিয়েছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের পিটারমারিৎস শহরের কেন্দ্রে চার্চ সড়কে মহাত্মা গান্ধীর ব্রোঞ্জ মূর্তি

বাকী ভারতীয়রা কোয়াজুলু-নাটালের অন্যান্য শহর যেমন লেডিস্মিথ, ডান্ডি এবং গ্লেনকো-তে বাস করে। গুয়াটেং এলাকাতে ভারতীয়রা মূলত জোহানেসবার্গ এবং প্রিটোরিয়ার বিভিন্ন শহরতলীতে বাস করে। এছাড়া ইস্টার্ন কেপ এবং অন্যান্য প্রদেশেও ছোট ছোট ভারতীয় সম্প্রদায় আছে।

কোয়াজুলু-নাটালের ভারতীয়দের মধ্যে ৫১% তামিল ভাষা, ৩০% হিন্দি ভাষা, ৭% গুজরাতি ভাষা, ৬% তেলুগু ভাষা, ৪৭% ওড়িয়া ভাষা এবং ৫% উর্দু ভাষাতে কথা বলে। তবে প্রায় সব বাসাতেই ইংরেজি ভাষাই প্রধান ভাষা। একাধিক ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় ইংরেজির পরে হিন্দি ভাষাই প্রাধান্য পায়।

ইতিহাস

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকের আবির্ভাব ঘটে ১৮৬০ সালে। মাদ্রাজ থেকে ট্রুরো নামের জাহাজে চড়ে ৩৪২ জন চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় শ্রমিক ১৮৬০ সালের ১৬ই নভেম্বর ডার্বান বন্দরে অবতরণ করেন। এর ১০ দিন পরে কলকাতা থেকে আগত বেলভেডের জাহাজে করে আরও ৩৪২ জন ভারতীয়ের আবির্ভাব ঘটে। এরপর ১৯১১ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বহু ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে অভিবাসী হন। এরা বেশিরভাগই তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ নাটালের ক্ষেতেখামারে, আখ প্ল্যান্টেশনগুলিতে, মিলগুলিতে মজুরির কাজ করত। চুক্তি শেষ হয়ে যাবার পর এরা কৃষক হিসেবে কিংবা ছোট ব্যবসায়ী হিসেবেই থেকে যায়।

প্রাথমিকভাবে বেশির ভাগ ভারতীয় বর্তমান তামিল নাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশ এলাকা থেকে এসেছিল। কিছু কিছু ভারতীয় উত্তর প্রদেশবিহার অঞ্চল থেকেও এসেছি। ১৮৮০-র পর আরেক দল ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে পাড়ি জমায়। এরা নিজেদের পয়সায় জাহাজ ভাড়া দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিল। এরা মূলত গুজরাত থেকে আগত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।

যদিও ১৮৬০ সাল থেকেই ভারতীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করত, ১৯৬১ সালের আগ পর্যন্ত তাদেরকে পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কিন্তু নাগরিকত্ব লাভের পরেও তারা কৃষ্ণাঙ্গদের মত জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়। ১৯৯৪ সালের পর নতুন দক্ষিণ আফ্রিকায় তারা সমস্ত দক্ষিণ আফ্রিকানের মত সমমর্যাদা লাভ করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৯৯ সালের সংসদ নির্বাচনে ৪০০ জন নির্বাচিত সদস্যের মধ্যে ৪১-ই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত (১০%)। সংসদের স্পিকার, সরকারের চারজন মন্ত্রী এবং ২ জন উপমন্ত্রীও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান সংসদের ২৫ জন সদস্য, সরকারের ১ জন মন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ক্রিকেট দলে প্রথমবারের মত একজন ভারতীয় দক্ষিণ আফ্রিকানকে টেস্ট দলের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়; তার নাম হাশিম আমলা