ভাইপেই জাতি
ভাইপেই জাতি (ভাইপুই নামেও ডাকা হয়[৩]) হল একটি নৃগোষ্ঠী যারা উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য মণিপুর এবং এর প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে (বার্মা) বাস করে। তারা দক্ষিণ এশীয় জাতি সম্বন্ধিত গোষ্ঠীর অন্যান্য উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অংশ।
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৪২,৭৪৮ (India)[১][২] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
উত্তর-পূর্ব ভারত, মিয়ানমার (বার্মা) | |
ভাষা | |
ভাইপেই ভাষা | |
ধর্ম | |
খ্রিস্টধর্ম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
মণিপুরী (জাতি) · জৌ জাতি · চিন জাতি · কুকি · হ্মার জাতি · মিজো জাতি · সিমতে জাতি · গ্যাংতে জাতি · জো জনগোষ্ঠী · পাইতে জাতি |
পরিচয়
সম্পাদনাতৎকালীন লুসাই পাহাড়ের প্রথম সুপারিনটেনডেন্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল জে. শেক্সপিয়র (১৮৮৭ - ১৯০৫), তাদের মণিপুরের কুকি গোষ্ঠীর একজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন [৪] এবং মণিপুর সরকার কর্তৃক চিন-কুকি-মিজো (জো জনগোষ্ঠী) উপজাতির অংশ হিসেবে তারা স্বীকৃত।[৫] গোষ্ঠীটি মূলত চিন রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত সিয়িন উপত্যকা থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়।[৬]এরা ভাইপেই ভাষায় কথা বলে। [৭]
ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনা'ভাইপেই' নামের উৎপত্তি নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু সাধারণ ধারণা হল এই নামটি বার্মার খাওভাইপেই নামক একটি গ্রাম থেকে এসেছে। এই স্থানেই ভাইপেই জাতি সফলভাবে নিজেদের জন্য একটি উপযুক্ত বসতি গড়ে তুলেছিল। ভাইপেইরা চিন-কুকি-মিজো-জোমি-হ্মার উপজাতিদের মধ্যে একটি এবং তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে তাদের পূর্বপুরুষরা খুল, খুর, সিনলুং বা ছিনলুং গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।[৮]
সংস্কৃতি
সম্পাদনাভাইপেই উপজাতির সংস্কৃতিতে বেশ কিছু প্রথা রয়েছে। এমনই একটি প্রথা হল অনাগত শিশুর স্বাগত অনুষ্ঠান। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের প্রায় সাত বা আট মাস গর্ভের সময় নাওয়ুনেক নামে এই অনুষ্ঠানটি হয়। সন্তানের জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্ম অনুষ্ঠান হয়। শিশুটির বাবা গ্রামবাসীদের জন্য একটি ভোজের আয়োজন করে। বিয়েকে একটি পবিত্র কাজ বলে মনে করা হয় এবং ছেলেটির জন্য নিখুঁত পাত্রী হিসেবে বিবেচিত হয় তার মামার মেয়ে।[৮]
মৃত ব্যক্তির মাথা পূর্ব দিকে মুখ করে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। গবাদি পশুর রান্না করা প্লীহা, মৃত ব্যক্তির খাদ্য হিসাবে মৃতদেহের সাথে কবর দেওয়া হয়।[৮]
এই উপজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হল ভাইপেই পুয়ান্ডুম, খিয়াংকাউই বা চিয়াংকাউই এবং থানসুয়া পুয়ান। এদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলি হল সাওম জু, ওআ আই, থাজিংলাম, সা-আই, বু-আই এবং লম জু।[৮]
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাএই গোষ্ঠীর প্রতিটি গোত্রের একজন প্রধান থাকে যার নাম 'উপা'। ভাইপেই উপজাতিদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য রয়েছে। সমাজ পিতৃতান্ত্রিক ও বংশনাম প্রকৃতির।[৮] ভাইপেই জনগণ জ্যেষ্ঠাধিকারের আদিম পদ্ধতি অনুসরণ করে চলে যেখানে জ্যেষ্ঠ পুত্র তার পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। এই গোষ্ঠী মণিপুরে বসতি স্থাপনকারী চিন-কুকি-মিজো গোষ্ঠীগুলির মধ্যে প্রথম হিসাবে মনে করা হয় এবং তাই মণিপুরের বর্তমান সীমান্তে আগমন এবং বসতি স্থাপনের ভিত্তিতে "পুরানো কুকি" গোষ্ঠীর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Abstract of Speakers' Strength of Languages and Mother Tongues - 2011" (পিডিএফ)। censusindia.gov.in। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ "Distribution of the 100 non-scheduled languages"। Censusindia.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-০৮।
- ↑ "PEOPLE NAME: VAIPHUI OF INDIA"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Shakespear, J. (২০০৬)। The Lushei Kuki Clan। Kessinger Publishing। পৃষ্ঠা 148–149। আইএসবিএন 978-1-4286-2698-0।
- ↑ Tarapot, Phanjoubam (২০০৩)। Bleeding Manipur। Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-81-241-0902-1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-০৩।
- ↑ K. S. Singh; V. Bhalla (১৯৯৪)। People of India: national series। People of India। Anthropological Survey of India। পৃষ্ঠা 1167 The Vaiphei people believed that they emerged out from Khul/Chhinlung/Sinlung। আইএসবিএন 978-0-19-563255-2। ওসিএলসি 67867100।
- ↑ Yamuna Kachru; S. N. Sridhar (১৯৯৬)। Language in South Asia। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 978-0-521-78141-1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-০৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Vaiphei Tribe, Manipur"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
টেমপ্লেট:জো জনগোষ্ঠীটেমপ্লেট:উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য উপজাতি