ধর্ম অবমাননা
ধর্ম অবমাননা বা ধর্মনিন্দা বা ব্লাসফেমি হল পরমেশ্বর, পবিত্র জিনিস কিংবা পবিত্র বা অলঙ্ঘনীয় বিবেচিত এমন কোন কিছুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, ঠাট্টা করা বা অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশেই ব্লাসফেমি, ধর্মীয় অবমাননা এবং ধর্মত্যাগ শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ বাস্তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শত্রুতা, জমি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রেও হাতিয়ার করা হয় এসব আইনকে৷[১]
উদ্ভব
সম্পাদনাধর্ম অবমাননার উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগে। এখন থেকে এক হাজার ৪৫০ বছর আগে রোমের সামন্ত রাজারা প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের সহায়তায় জনগণের ওপর ধর্মের নামে অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ‘ধর্ম অবমাননা’র ব্যবহার শুরু করেছিল। আধুনিক যুগে এসে যখন চার্চ ও রাষ্ট্রকে আলাদা করা হয়, তখন থেকে এ আইনের বিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন দেশের আইনে ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও আচরণের জন্য আইন থাকলেও তার আর প্রয়োগ সেভাবে নেই।[২]
ইসলামে ধর্ম অবমাননা
সম্পাদনাতবে, মুসলিম বিশ্বে সবশেষ আলোচিত ব্লাসফেমি'র উদাহরণ পাকিস্তানের খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবি'র ঘটনাটি। ২০১০ সালে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি পাওয়া আসিয়া বিবি আট বছর কারাভোগ করার পর গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট তার রায় বাতিল করে। [৩]
ইসলামী গ্রন্থে শাস্তির বিধান
নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় - আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে অভিশাপ দেন, এবং তাদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। যদি এই প্রতারকেরা , আর ঐ সব লোকেরা যাদের অন্তরে কলুষতা আছে, এবং ঐ সকল লোকেরা যারা শহরে মিথ্যা সংবাদ রটিয়ে থাকে তারা, (তাদের এসব কাজ থেকে) বিরত না হয়, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে তাদের উপর শক্তিশালী করে দেবো: এরপর তারা শহরে আপনার কাছে অতি অল্পকালই অবস্থান করতে পারবে
এছাড়া অনেক আলেম ধর্ম অবমাননা আইনের সমর্থন হিসেবে বেশ কিছু হাদিসের প্রতিও ইঙ্গিত করে থাকেন, যেখানে আল্লাহ, নবীর প্রতি কটূক্তি বা তিরষ্কারমূলক বক্তব্য প্রদান করার অপরাধে ব্যক্তিবিশেষকে দন্ড দেয়া হয়েছিল, এই হাদিসগুলোর মধ্যে কা'ব ইবনে আশরাফ নামক ইহুদি নেতাকে শাস্তির নির্দেশ দেয়ার হাদিসটি উল্লেখযোগ্য, যিনি বদর যুদ্ধে নিহত মুসলিম পুরুষদের তিরস্কার করেছিল এবং মুসলিম নারীদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছিল[৪]। তবে, পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামিক পণ্ডিত জাভেদ আহমদ ঘাদামি বলেছেন, ইসলামের কোথাও ধর্ম অবমাননা আইনের সমর্থনে কিছু বলা নেই। [৫] অনেক মুসলিম আইনবিদেরা একে ‘শরিয়ার’ অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন।[৬][৭][৮][৯][১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ব্লাসফেমি আইন ও মানবাধিকার, ডয়েচে ভেলে। প্রকাশের তারিখঃ ২৭-০২-২০২০।
- ↑ জামায়াতের দাবিই উত্থাপন করল হেফাজত ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৯-২৮ তারিখে,রাশেদ খান মেনন, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৩-০৪-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন মুসলিম দেশগুলোতেই বেশি কঠোরভাবে চর্চা করা হয়: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল" বিবিসি বাংলা।
- ↑ সহীহ বুখারী, ৪:৫২:২৭০ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৫:৫৯:৩৬৯ (ইংরেজি), সহীহ মুসলিম, ১৯:৪৪৩৬ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৩:৪৫:৬৮৭ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৪:৫২:২৭১ (ইংরেজি)
- ↑ Islamic scholar attacks Pakistan's blasphemy laws Guardian 20 January 2010. Retrieved 23 January 2010
- ↑ "Ruling for blassphemy in Islam: Zakir Naik"। Islamic Voice। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ Association of Islamic Charitable Projects, The Types of Blasphemy (2010)
- ↑ Lawton, D. (1993). Blasphemy. Univ of Pennsylvania Press
- ↑ CW Ernst, in Eliade (Ed), Blasphemy - Islamic Concept, The encyclopedia of religion, New York (1987)
- ↑ Marshall and Shea (2011), Silenced, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৮১২২৮৮