ব্যাথোলিথ
ব্যাথোলিথ (শব্দের উৎপত্তি গ্রিক bathos-গভীর ও lithos-শিলা থেকে), এক ধরনের বৃহৎ ভর বিশিষ্ট আগ্নেয় শিলা (প্লুটোনিক শিলা নামেও পরিচিত) আয়তন ১০০ বর্গ কিলোমিটার (৪০ বর্গ মাইল)[১] অপেক্ষা বেশি এবং এর উৎপত্তি গভীর ভূত্বকের শীতল ম্যাগমা থেকে। প্রায় বেশিরভাগ সময়েই ব্যাথোলিথ শিলাগুলো ফেলসিক বা অন্তঃজ শিলা হিসেবে থাকে; যেমনঃ গ্রানাইট, কোয়ার্টজ মনজোনাইট অথবা ডায়োরাইট।
গঠন
সম্পাদনাব্যাথোলিথগুলো দেখতে যদিও প্রায় একইরকম, তবে এদের গঠন কাঠামো আসলে জটিল ও ব্যাপক ইতিহাস সংবলিত। এগুলো একাধিক ভর বা প্লুটন এর সমন্বয়ে গঠিত, আগ্নেয় শীলার দেহগুলো অনিয়ত মাত্রার(সাধারণত কমপক্ষে কয়েক কিলোমিটার হয়)। যার ফলে শিলার বয়স,গঠন কাঠামো, গাঠনিক বৈচিত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কিছু মাপদন্ডের দ্বারা আপেক্ষিকভাবে অন্যান্য অগ্নেয় শিলা থেকে আলাদা করা যায়। প্লুটনগুলো ম্যাগমা থেকে আলাদা হয়ে কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়, যা পৃথিবীর ভূত্বকের গোড়ার কাছাকাছি আংশিক গলিত একটি অঞ্চল থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে যাত্রা করে।
প্লুটনগুলো প্লুটোনিক ডায়াপির নামক বৃহৎ আয়তনের ব্যুয়ান্ট ম্যাগমার আরোহণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কারণ ডায়াপিরগুলো তরল এবং খুব গরম অবস্থায় আশেপাশের ঘিরে থাকা স্থানীয় শিলার মধ্য দিয়ে উঠে আসে। উঠে আসার সময় শিলা গুলোকে একপাশে ঠেলে দেয় এবং আংশিকভাবে গলিয়ে দেয়। তবে বেশিরভাগ ডায়াপির আগ্নেয়গিরি গঠনের জন্য ভূপৃষ্ঠে পৌছাতে পারে না, তার পরিবর্তে সেগুলো ধীরে ধীরে নিচে নেমে যায়, শীতল হয় এবং শক্ত হয়ে সাধারণত ৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ প্লুটন হিসেবে জমা হয় (পাতালপুরীর রোমান দেবতা প্লুটো এর নামানুসারে তাই প্লুটন শব্দটি ব্যবহৃত হয়)। একটি বিকল্প ধারণা হলো প্লুটনগুলো সাধারণত বড় বড় ম্যাগমার আরোহণের কারণে গঠিত হয় না, বরং ক্ষুদ্র আয়তনের ম্যাগমার সংমিশ্রণ দ্বারা গঠিত হয় যা ডাইক হিসেবে আরোহণ করে।[২]
একটি ব্যাথোলিথ তৈরি হয় যখন বহু প্লুটন একটি বিশাল বিস্তৃত গ্রোনাইটিক শিলা সম্পূর্ণরূপে ঢেকে ফেলতে সক্ষম হয়। কিন্তু ব্যাথোলিথ গুলো আরও বিশাল হয়ে থাকে, অতীত ও বর্তমানের সমান্তরাল সাবডাকশন অঞ্চল এবং অন্যান্য তাপ উৎসগুলো মহাদেশীয় ভূত্বকে ১০০ কিলোমিটারের মতো বিশাল জায়গা জুড়ে থাকে। এরকম একটি ব্যাথোলিথ হলো সিয়েরা নেভাদা ব্যাথোলিথ, যা একটি অবিচ্ছিন্ন গ্রানাইটিক গঠন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদার বেশিরভাগ অংশ গঠন করে। আরও একটি বৃহত্তর ব্যাথোলিথ, উপকূলীয় প্লুটনিক কম্পলেক্স, এটি মূলত পশ্চিম কানাডার উপকূলীয় পর্বতমালায় পাওয়া যায়; এটি ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে দক্ষিণ আলাস্কায় পৌছেছে।
পৃষ্ঠতলের বহিঃপ্রকাশ ও ক্ষয়
সম্পাদনাব্যাথোলিথ হলো একটি অবিচ্ছিন্ন শিলার উন্মুক্ত অঞ্চল (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) যা ১০০ বর্গ কিলোমিটার (৪০ বর্গ মাইল) অপেক্ষা বড় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত থাকে। ১০০ বর্গ কিলোমিটার থেকে ছোট অঞ্চলকে স্টক্স(stocks) বলা হয়ে থাকে।[৩] ভূপৃষ্ঠে দৃশ্যমান(আউটক্রোপিং এর মাধ্যমে) বেশিরভাগ ব্যাথোলিথ এর ক্ষেত্রগুলো ১০০ বর্গ কিলোমিটার এর চেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থান করে। এ স্থানগুলো ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে প্রকাশিত হয় ১০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন বছর ধরে চলা মহাদেশীয় ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া কয়েক দশক গভীরতা বিশিষ্ট শিলা স্তরকে সরিয়ে দেয়, ফলে গভীরে সমাহিত ব্যাথলিথ স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।
ভূগর্ভের গভীর অবস্থান থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হওয়ায় ব্যাথোলিথগুলোতে চাপের তীব্র পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের স্ফটিক কাঠামো শিথিল হয়ে সময়ের সাথে সাথে সামান্য প্রসারিত হতে থাকে। তা এক্সফোলিয়েশন (exfoliation) নামক একধরনের চলন(ঢালের) সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে। আবহাওয়ার কারণে ব্যাথোলিথ গুলোর উন্মুক্ত পৃষ্ঠে অপেক্ষাকৃত পাতলা স্তরের সৃষ্টি হয় যা উত্তল এবং কিছুটা আলগা অবস্থায় থাকে। (ফ্রস্ট ওয়েজিং দ্বারা ত্বরান্বিত একটি প্রক্রিয়া) ফলে শিলাটির চেহারা মোটামুটি মসৃন ও গোলাকার হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার একটি সুপরিচিত উদাহরণ হলো ইয়োসেমাইট ভ্যলির হাফ ডোম।
উদাহরণসমূহ
সম্পাদনাআফ্রিকা
সম্পাদনা- আসোয়ান গ্রানাইট ব্যাথোলিথ
- কেপ কোস্ট ব্যাথোলিথ, ঘানা
- পার্ল রক, সাউথ আফ্রিকা
- ডার্লিং ব্যাথোলিথ, সাউথ আফ্রিকা
- হুক গ্রানাইট ম্যাশিফ, জাম্বিয়া
- মুবেন্ডে ব্যাথোলিথ, উগান্ডা
এন্টার্টিকা
সম্পাদনাএশিয়া
সম্পাদনা- অঙ্গরা-ভাইটিম ব্যাথোলিথ, সাইবেরিয়া
- ভঙির ফর্ট ব্যাথোলিথ, তেলাঙ্গানা, ভারত [৪]
- মাউন্ট আবু, ভারত
- গ্যাংডিস ব্যাথোলিথ, হিমালয়
- ট্রান্স-হিমালায়ান ব্যাথোলিথ, হিমালয়
- কালবা-নারিম বাথোলিথ, কাজাখস্তান
- কারাকরুম ব্যাথোলিথ, হিমালয়
- টাক ব্যাথোলিথ, থাইল্যান্ড
- তাইয়েন শান ব্যাথোলিথ, মধ্য এশিয়া
- রাচি ব্যাথোলিথ, ভারত
ইউরোপ
সম্পাদনা- বিন্ড্যাল ব্যাথোলিথ, নরওয়ে
- কর্নাবিয়ান ব্যাথোলিথ, ইংল্যান্ড
- কর্সিকা-সার্ডিনিয়া ব্যাথোলিথ
- ডোনেগাল ব্যাথোলিথ, আয়ারল্যান্ড
- লেইন্সটার ব্যাথোলিথ, আয়ারল্যান্ড
- ম্যান্সেলিয়ান ব্যাথোলিথ, ফ্রান্স
- নর্থ পেনিন ব্যাথোলিথ, ইংল্যান্ড
- জুসিডাল ব্যাথোলিথ, সুইডেন
- মাউন্ট লুইস-এন্ডোরা ব্যাথোলিথ
- রিগা ব্যাথোলিথ, ল্যাটিভা
- সালমি ব্যাথোলিথ,কেরা, রাশিয়া
- সানহর্ডেল্যান্ড ব্যাথোলিথ, নরওয়ে
- ট্রান্সক্যান্ডিনেভিয়ান ইগ্নিওয়াস বেল্ট, সুইডেন ও নরওয়ে
- রেভসান্ড ম্যাশিভ
- রাতান ব্যাথোলিথ
- সামারল্যান্ড-ভার্মল্যান্ড(Småland–Värmland) বেল্ট
নর্থ আমেরিকা
সম্পাদনা- ব্যাল্ড রক ব্যাথোলিথ
- বউল্ডার ব্যাথোলিথ
- ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড
- চেম্বারস-স্ট্র্যাথি ব্যাথোলিথ
- চিলিওয়াক ব্যাথোলিথ
- গোল্ডেন হর্ন ব্যাথোলিথ
- আইড্যাহো ব্যাথোলিথ
- আইলিমাউস্যাক ব্যাথোলিথ, গ্রীনল্যান্ড
- কেনোশা ব্যাথোলিথ
- লিবার্টি বেল মাউন্টেইন, ওয়াশিংটন
- পেনিনস্যুলার রেঞ্জেস,বাজা ও সাউথার্ন ক্যালিফোর্নিয়া [৫]
- পাইক'স পিথ গ্রানাইট ব্যাথোলিথ
- রুবি মাউন্টেইন
- রিও ভার্ডে ব্যাথোলিথ, মেক্সিকো
- সিয়েরা নেভাদা ব্যাথোলিথ
- সাউথ মাউন্টেইন ব্যাথোলিথ, নোভা স্কটয়া
- স্টোন মাউন্টেইন
- টাউন মাউন্টেইন গ্রানাইট ব্যাথোলিথ, টেক্সাস
- ইওমিং ব্যাথোলিথ[৬]
সামুদ্রিক
সম্পাদনা- কুলেন ব্যাথোলিথ, অস্ট্রেলিয়া
- কসচিউস্যক (Kosciuszko) ব্যাথোলিথ, অস্ট্রেলিয়া
- মরুয়া ব্যাথোলিথ, অস্ট্রেলিয়া
- স্কটসডেল ব্যাথোলিথ, অস্ট্রেলিয়া [৭]
- মেডিয়ান ব্যাথোলি, নিউজিল্যান্ড
- নিউ ইংল্যান্ড ব্যাথোলি, অস্ট্রেলিয়া
সাউথ আমেরিকা
সম্পাদনা- এচালা ব্যাথোলিথ, আর্জেন্টিনা
- এন্টিওকুইয়া ব্যাথোলি, কলম্বিয়া
- গুয়ানাম্বি ব্যাথোলিথ, ব্রাজিল
- পারগুয়াজা রাপাকিভি গ্রানাইট ব্যাথোলি, ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া
- কেরো আসপেরো ব্যাথোলিথ, আর্জেন্টিনা
- কোস্টাল ব্যাথোলিথ, পেরু
- কলাঙুইল (Colangüil) ব্যাথোলিথ, আর্জেন্টিনা
- করডিলেরা ব্লানকা ব্যাথোলিথ, পেরু
- ভাইক্যুনা ম্যাকেনা(Vicuña Mackenna)৷ ব্যাথোলিথ, চিলি
- এলক্যুই-লিমারি ব্যাথোলিথ, চিলি ও আর্জেন্টিনা
- ফুতরনো-রিনিহিউ(Futrono-Riñihue) ব্যাথোলিথ, চিলি
- ইলেস্কাস ব্যাথোলিথ, উরুগুয়ে
- কোস্টাল ব্যাথোলিথ, মধ্য চিলি
- প্যাঙুইপুল্লি ব্যাথোলিথ, চিলি
- প্যাটাগোনিয়ান ব্যাথোলিথ, চিলি ও আর্জেন্টিনা
- নর্থ প্যাটাগোনিয়ান ব্যাথোলিথ
- সাউথ প্যাটাগোনিয়ান ব্যাথোলিথ
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Petersen, James F.; Sack, Dorothy; Gabler, Robert E. (২০১৭)। Physical Geography (11th edition)। Boston: Cengage Learning Inc.। পৃষ্ঠা 614। আইএসবিএন 978-1-305-65264-4।
- ↑ Hall, Clarence A., Jr. (২০০৭)। Introduction to the geology of southern California and its native plants। Berkeley: University of California Press। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 9780520249325।
- ↑ GLENCOE SCIENCE | Earth Science Twelfth Grade High School Textbook (Georgia); pg. 115 paragraph 1, pg. 521 question 9
- ↑ http://www.deccanchronicle.com/nation/in-other-news/010616/telangana-bhongir-fort-s-batholith-marvel.html
- ↑ Douglas M. Morton, Fred K. Miller, Peninsular Ranges Batholith, Baja and Southern California, Geological Society of America, 2014
- ↑ Davin A. Bagdonas; Carol D. Frost; C. Mark Fanning (২০১৬)। "The origin of extensive Neoarchean high-silica batholiths and the nature of intrusive complements to silicic ignimbrites: Insights from the Wyoming batholith, U.S.A." (পিডিএফ)। American Mineralogist। 101: 1332–1347। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১৬।
...Neoarchean granite batholith, herein named the Wyoming batholith, extends more than 200 km across central Wyoming in the Granite and the Laramie Mountains.
- ↑ Stratigraphic revision and remapping of the Mathinna Supergroup between the River Tamar and the Scottsdale Batholith, northeast Tasmania, Department of Infrastructure, Energy and Resources. Mineral Resources Tasmania. June 2011