ব্যবহারকারী:Sbb1413/সাধু ভাষা/কলিকাতা
ইহা সাধু ভাষায় রচিত একটি ব্যক্তিগত নিবন্ধ, যা মূলত পরীক্ষামূলক উদ্দেশে তৈয়ারী করা হইয়াছে। দয়া করিয়া মূল নামস্থানে স্থানান্তরিত করিবেন না। |
কলিকাতা (ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী ও বৃহত্তম নগর এবং ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। হুগলী নদীর পূর্ব্বতীরে অবস্থিত কলিকাতা পূর্ব্ব ভারতের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। দক্ষিণ এশিয়ায় কলিকাতা তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক নগরী। কলিকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম সচল বন্দর তথা দেশের প্রধান নদী বন্দর। ২০১১ খ্রীষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে, কলিকাতার জনসংখ্যা ৪৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৯৪ এবং ইহা ভারতের সপ্তম সর্ব্বাধিক জনবহুল নগর। অন্যদিকে, বৃহত্তর কলিকাতার জনসংখ্যা ১ কোটি ৪১ লক্ষ ১২ হাজার ৫৩৬ এবং ইহা ভারতের তৃতীয় সর্ব্বাধিক জনবহুল মহানগর অঞ্চল। ক্রয়ক্ষমতা সমতার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অনুযায়ী, বৃহত্তর কলিকাতার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক আনুমানিক ২৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যবর্ত্তী। ইহা অনুযায়ী ভারতে মুম্বই ও নয়াদিল্লির পরে কলিকাতা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক নগরী।[১][২][৩]
)সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর নামক তিনটি গ্রাম মিলিত হইয়া মূল কলিকাতা নগরের পত্তন হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর অন্তিম পর্য্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাঙ্গালার নবাবগণ। ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী নবাবের থেকে বাঙ্গালায় বাণিজ্য সনদ লাভ করে।[৪] ইহার পর কোম্পানী কলিকাতায় একটি দুর্গবেষ্টিত বাণিজ্যকুঠি স্থাপন কর। ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলিকাতা জয় করিয়াছিলেন, কিন্তু পরবর্ত্তী বৎসরে কোম্পানী আবার নগরটি জয় করে। ইহার কয়েক দশকের মধ্যে কোম্পানী বাঙ্গালায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করে। ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দে "নিজামত" বা স্থানীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়া এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্ব্বভৌমত্ব কায়েম করে। কোম্পানীর শাসনকালে এবং ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনকালের প্রথমার্দ্ধে কলিকাতা ছিল ভারতের ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চলসমূহের রাজধানী। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্তিম হইতে কলিকাতা স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র হইয়া উঠিয়াছিল। ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে ভারতবর্ষের মত একটি বৃহৎ রাষ্ট্র শাসনে ভৌগোলিক অসুবিধার কথা চিন্তা করিয়া এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে ক্রমবর্দ্ধমান জাতীয়তাবাদী কার্য্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতবর্ষের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় নয়াদিল্লীতে। স্বাধীনতার পর কলিকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হইয়াছিল। ব্রিটিশ আমলে কলিকাতা ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞানচর্চ্চা এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র, কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্ত্তী দশকগুলিতে কলিকাতা এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার সম্মুখীন হইয়াছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাঙ্গালার নবজাগরণের কেন্দ্রস্থল ছিল কলিকাতা। ইহা বাঙ্গালা তথা ভারতবর্ষের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সাহিত্য, নাটক, শিল্পকলা ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে কলিকাতা নগরী এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্য বহন করিয়াছে। কলিকাতার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হইয়াছেন। ইঁহাদের মধ্যে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্রও কলিকাতা নগরী, যেখানে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন বহু বিখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রহিয়াছে। ইহাদের মধ্যে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় সংগ্রহালয় ও জাতীয় গ্রন্থাগারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগ্রি হর্টিকালচারাল সোসাইটি অব ইণ্ডিয়া, ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ, ভারতীয় উদ্ভিদ সর্বেক্ষণ, কলিকাতা গাণিতিক সমিতি, ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থা, জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ ও ইণ্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের মতো কয়েকটি পেশাদার বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলিকাতায় অবস্থিত। এই নগরীতে একাধিক ক্রিকেট প্রাঙ্গণ ও ফ্র্যাঞ্জাইজী থাকিলেও কলিকাতার অধিবাসীগণ ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়া থাকেন, আর কলিকাতা ভারতবর্ষের "ফুটবলের মক্কা" বলিয়া প্রসিদ্ধ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ John Hawksworth; Thomas Hoehn; Anmol Tiwari (নভেম্বর ২০০৯)। "Which are the largest city economies in the world and how might this change by 2025?" (পিডিএফ)। PricewaterhouseCoopers। ১৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "India's top 15 cities with the highest GDP Photos Yahoo! India Finance"। Yahoo! Finance। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২। ৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Parilla, Alan Berube, Jesus Leal Trujillo, Tao Ran, and Joseph (২০১৫-০১-২২)। "Global Metro Monitor"। Brookings (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৮।
- ↑ Dutta, K.; Desai, A. (এপ্রিল ২০০৮)। Calcutta: a cultural history। Northampton, Massachusetts, US: Interlink Books। পৃষ্ঠা 9–10। আইএসবিএন 978-1-56656-721-3।