ব্যবহারকারী:Prantoshaha/গোপীনাথপুর মন্দির

একটি অতি প্রাচীন মন্দির হলো জয়পুরহাট জেলার গোপীনাথপুর মন্দির বা গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির। এটি প্রায় ৫শ’ বছরের পুরানো একটি মন্দির। মন্দিরটি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা সদর হতে ৭ কি.মি. পূর্বে গোপীনাথপুরে অবস্থিত। জানা যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ্‌ এই মন্দিরের নামে তাম্রফলকে লিখে পূর্ণ গোপীনাথপুর এবং গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে প্রদান করে যান। তবে বাদশার দেওয়া এই তাম্রপত্রটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়ে যায়।

এই মন্দির সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে যে, ৫শ’ বছর পূর্বে ভারতের নদীয়া জেলার শান্তিপুর ছিল শিক্ষা-দীক্ষায় খুব নামকরা একটি স্থান। শান্তিপুরে প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামী নাকি সবসময় ঈশ্বরের ধ্যান করতেন। তার স্ত্রী সীতা দেবীও ছিলেন অত্যন্ত সতী-সাধ্বী নারী। এ সময় ২৪ পরগণার যুবক নন্দ কুমার ও নদীয়া জেলার আর এক যুবক যজ্ঞেশ্বর রায় প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামীর নিকটে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে চান। এরপর অদ্বৈত গোস্বামী মহোদয় তাদের সব কথা শুনে সীতাদেবীর কাছে পাঠান। সীতাদেবী ধ্যান যোগে জানতে পারেন যে, এই যুবকেরা পূর্ব জম্মে জয়া এবং বিজয়া নামে দুই সখী ছিলেন। তখন সীতাদেবী ওই যুবকদের মাথা ন্যাড়া করে স্মান করে আসতে বলেন। সীতাদেবীর নির্দেশ মতো কাজ শেষ করে এলে তিনি তাদের দীক্ষা দেন। তারা কৃষ্ণমমেত্র দীক্ষা নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সেবা শুরু করেন। সীতাদেবী তখন নন্দকুমারের নাম নন্দিনী এবং যজ্ঞেশ্বরের নাম রাখেন জংগলী। নন্দিনী প্রিয়া বরেন্দ্র এলাকায় বর্তমান জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের ১ কি.মি. উত্তরে এক গভীর জংগলে নদীর ধারে একটি মন্দির স্থাপন করেন।

জানা যায়, ১৫২০-১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ্‌ নন্দিনী প্রিয়ার পূজা পার্বনে ও অতিথি সেবার কথা শুনে খুশি হন এবং তাম্রফলকে লিখে পূর্ণগোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে দান করেন। তখন পূর্ণ গোপীনাথপুর মন্দিরটি নির্মিত হয়। পাল যুগের নির্মাণ কৌশলের সঙ্গে এই মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত হয়। এরপর ১৩০৪ বাংলা সালে এক ভূমিকম্পে এই মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২৮-১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্তমান মূল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। তবে এখনও পুরাতন কারুকার্যের কিছু নমুনা মূল ভবনে রয়েছে। মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট। এর নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ টাকা হয়েছিল।

জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি ও মধ্যাহ্নে আধামণ চালের অন্নভোগ দেওয়া হয়। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাতে এখানে বিশাল মেলা বসে। এই মেলা চলে ১৩দিন ধরে। অবশ্য আগে এক মাস ধরে মেলা চলতো। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন এবং বিশাল মেলা। ছায়াঘন সবুজে ঘেরা অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এলাকাটিকে বিশেষভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে। দুর-দুরান্ত হতে প্রতিদিন ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু ব্যক্তিরা এখানে আসেন। যে কারণে পিকনিক স্পট হিসেবেও এই স্থানটি খ্যাতি অর্জন করেছে। আপনি ইচ্ছে করলে জয়পুরহাটের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে যেতে পারেন। এটি আমাদের দেশের কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তথ্যসূত্রঃ www.bd-traveler.com