ব্যবহারকারী:Mazhar13/কৃষক প্রজা পার্টি
কৃষক-প্রজা পার্টি
আবুল মনসুর তাঁর বইয়ের বয়ান শুরু করছেন জমিদারের বিরুদ্ধে তাঁর নিজের একটা ঘটনা দিয়া। ঘটনাটা হইতেছে আবুল মনসুর জমিদারের নায়েবরে তুই তুকারি করছেন। কেন? মনসুর দেখতেছেন নায়েব আমলারা সমাজের মু্রুব্বিদের ‘তুমি’ বইলা সম্বোধন করে, মুরব্বিদের কাছারিতে বসতে দেয় না। পাশের গ্রামের যে গণক ঠাকুর মনসুরদের বাড়িতে ভিক্ষা করতে আসেন কাছারিতে তারও বসার জায়গা আছে। এসব দেইখা আবুল মনসুর অসহ্য হইয়া গেছেন। তারপর একদিন মওকা বুইঝা মুখের উপর নায়েবরে তুই ফিরাইয়া দিলেন।
আবুল মনসুরের সময়টা হইতেছে ভারতবর্ষে বৃটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি উত্থানপর্বের সময়। ভারতবর্ষের মধ্যবিত্ত শ্রেণী জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারন কইরা রাজনৈতিক সংগঠন আকারে সংগঠিত হওয়া শুরু করছে। এই কালপর্বে পূর্ব-বাংলার কৃষক-প্রজারাও আবার নতুন আশায় সংগঠিত হইতে শুরু করে। তাদের সংগঠিত হওয়ার বয়ান ইতিহাস আমরা আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছরে পাই।
১৯১১ সালে দরিরামপুর মাইনর স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন আবুল মনসুর আহমদ একটা প্রজা সভা ডাকেন। তাতে কাছারিতে প্রজাদের শ্রেণীমত বসিবার আসন দাবী এবং শরার বরখেলাফ কালী পূজার মাথট আদায় মওকুফ রাখিবার অনুরোধও করা হইল(পৃষ্ঠা ১০)।এইটারে আবুল মনসুর প্রজা আন্দোলনের বীজ বইলা আখ্যায়িত করছেন। এই বীজ ১৯২৯ সালে নিখিল-বঙ্গ প্রজা সমিতি গঠনের মাধ্যমে চারায় পরিণত হয়।
শুধু সমিতি আকারে সংগঠিত হওয়া নয়, কৃষকদের স্বার্থের প্রতিনিধি হিশাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করে প্রজা সমিতি।আবুল মনসুর ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রজা সম্মিলনীতে প্রাদেশিক আইন পরিষদের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে একটা নির্বাচন মেনিফেস্টো লেখেন । “এই মেনিফেস্টোতে বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি উচ্ছেদ, খাজনা নিরিখ হ্রাস, খাজনা ঋণ মওকুফ, মহাজনী আইন প্রণয়ন, সালিশী বোর্ড প্রভৃতি দাবি লিপিবদ্ধ করা হয়(পৃষ্ঠা ৬৭)।” এই সম্মিলনীতেই প্রজাদের আরো ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রজা সমিতির নাম কৃষক-প্রজা সমিতি করা হয়।