ব্যবহারকারী:DeloarAkram/বিজিপাতা ৪৬
উইউন আল-আছার ফি ফুনুন আল-মাগাজি ওয়াশ-শামায়িল ওয়াস-সিয়ার হলো সীরাতুন্নবী সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ। এটি ইবনে সাইয়িদ আন-নাস আন্দালুসি সংকলন করেছেন। এটি তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রসিদ্ধ রচনা। এই গ্রন্থটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং পরবর্তী যুগের বিদ্বানদের প্রশংসা অর্জন করেছে। লেখক বইটি লেখার সময় নবীজির জীবনীর কালানুক্রমিক ঘটনা অনুসরণ করেছেন। তাজউদ্দিন আস-সুবকি, ইবনে কাসির আদ-দামেশকি, ইবনে হাজার আল-আসকালানি, মুহাম্মদ আশ-শাওকানি, বুরহানুদ্দিন আল-হালাবিসহ বহু আরব গবেষক বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
গ্রন্থটির গুরুত্ব
সম্পাদনাউইউন আল-আছার গ্রন্থটি সীরাত বিষয়ে রচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশুদ্ধ গ্রন্থগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর গুরুত্ব প্রমাণ করে যে অনেক প্রখ্যাত লেখক এই গ্রন্থের উপর নির্ভর করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের জন্য এর উপাদান গ্রহণ করেছেন। ইবনে সাইয়িদ আন-নাস তার গ্রন্থের সূচনায় গ্রন্থ রচনার কারণ বর্ণনা করেছেন:[১]
“ | আমি প্রাচীন এবং আধুনিক যুগের লোকেরা নবী (সা.)-এর সীরাত, মাগাজি, এবং অন্যান্য বিষয়ে যা সংগ্রহ করেছেন, তা পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু সেগুলোর কিছু অত্যধিক দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর, আবার কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় উপেক্ষা করেছে। এরপর তিনি তার পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন, এই গ্রন্থে আমার অবদান কেবল তাদের কথার মধ্য থেকে সঠিক বিষয়গুলো বেছে নেওয়া এবং তাঁদের ধারাবাহিকতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া। | ” |
— ইবনে সাইয়িদ আন-নাস |
যেমন আস-সালিহি আদ-দামেশকি তার বিখ্যাত সুবুল আল-হুদা ওয়ার-রাশাদ ফি সীরাত খাইরিল-ইবাদ গ্রন্থে এবং আলী ইবনে ইবরাহিম আল-হালাবি তার ইনাস আল-উইউন ফি সীরাত আল-আমিন আল-মামুন গ্রন্থে এই বইটির উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও এই গ্রন্থটি পরবর্তী যুগের আলেমদের কাছে ব্যাখ্যা, পদ্যে রূপান্তর এবং সংক্ষেপণে বিশেষ যত্ন পেয়েছে। এছাড়াও পরবর্তী যুগে কিছু লেখক বইটির ব্যাখ্যা গ্রন্থ লিখেছে, এরমধ্যে হাফিজ বুরহানুদ্দিন আল-হালাবির লেখা নূর আন-নিবরাস ফি শারহি সীরাত ইবনে সাইয়িদ আন-নাস এবং ইউসুফ ইবনে হাসান আল-হানবলির লেখা ইকতিবাস আল-ইকতিবাস লিহাল মুশকিল সীরাত ইবনে সাইয়িদ আন-নাস বইটি উল্লেখযোগ্য।
গ্রন্থের বিন্যাস
সম্পাদনাগ্রন্থটির রচয়িতা এর ঘটনাগুলোকে কালানুক্রমিকভাবে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে বিন্যস্ত করেছেন। তিনি গ্রন্থটি শুরু করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশপরিচয় ও জন্মের উল্লেখ দিয়ে। এরপর তিনি নবী (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব ও পরবর্তী জীবনের বিবরণ দিয়েছেন। এরপর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত এবং হিজরতের পর সংঘটিত যুদ্ধ ও অভিযানগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি মক্কা বিজয় এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলো আলোচনা করেছেন, যা শেষ হয়েছে নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের বিবরণ দিয়ে। নবী (সা.)-এর চরিত্র, গুণাবলি, নৈতিকতা, তাঁর সন্তান, স্ত্রী এবং আত্মীয়স্বজনের উল্লেখ দিয়ে গ্রন্থটির সমাপ্তি হয়েছে।
মূল্যয়ন
সম্পাদনাবইটির সৃজনশীলতা, বাচনভঙ্গি, বর্ণনার উপায়, সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ প্রভৃতি থেকে বইটি নানা গুণীজনের নজর কেড়েছে। অনেক মানুষের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রশংসা ও মন্তব্যের কিছু হলো:
- ইমাম তাজউদ্দীন আস-সুবকি (মৃ. ৭৭১ হিজরি) বলেছেন, শাইখ ফাতহুদ্দীন 'মাগাজি ও সীর' সম্পর্কে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম 'উইউন আল-আছার', এবং তিনি এতে চমৎকার রচনা করেছেন।[২]
- ইবনে কাসির আদ-দামেশকি (মৃ. ৭৭৪ হিজরি) বর্ণনা করেছেন: তিনি দুটি খণ্ডে একটি সুন্দর সীরাত সংগ্রহ করেছেন।[৩]
- ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানি (মৃ. ৮৫২ হিজরি) বলেছেন: তিনি সীরাত নিয়ে 'উইউন আল-আছার' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা তার বিষয়ে উত্তম একটি রচনা।[৪]
- ইমাম মুহাম্মদ আশ-শাওকানি (মৃ. ১২৫০ হিজরি), যিনি বলেছেন: তার বেশ কয়েকটি রচনা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সেই বিখ্যাত সীরাতুন্নবী, যা তাঁর যুগের মানুষ এবং পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হয়েছে।