বৌদ্ধধর্মে অ ধ্বনি

অ (দেবনাগরী: अ, সিদ্ধং: 𑖀) ধ্বনি হলো মহাযান ও  বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং বীজমন্ত্র।

সিদ্ধং লিপিতে অ অক্ষর।

মহাযানে

অ সংস্কৃত বর্ণমালার প্রথম স্বরবর্ণ। মহাযান বৌদ্ধধর্ম শূন্যতার মতবাদের সাথে যুক্ত, রহস্যময় তাৎপর্যের সাথে ধ্বনিটিকে বিনিয়োগ করেছে। সংস্কৃতে, যখন অ উপসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এটি শব্দের অর্থকে অস্বীকার করে। উদাহরণ স্বরূপ, স্বভাব, “সার সহ,” অস্বভাব, “সার ছাড়া” পরিবর্তন করা যেতে পারে।

প্রজ্ঞাপারমিতার মহাযান শিক্ষাকে বোঝাতেও বর্ণটি এসেছে। প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্রগুলির মধ্যে সংক্ষিপ্ত সূত্র হলো একাক্ষরিমতপ্রজ্ঞাপারমিতা (এক শব্দাংশে প্রজ্ঞা মায়ের পরিপূর্ণতা)। সূত্রটি সাধারণ প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্রের মতো খোলে ও বন্ধ হয় (সাধারণ পরিচায়ক নিদান সহ), কিন্তু সূত্রের প্রকৃত শিক্ষা শব্দাংশ: অ। এই সূত্র অনুসারে, সমস্ত প্রজ্ঞাপারমিতা শিক্ষা "অ"-এ রয়েছে।

পঞ্চবিংশতিসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতাসূত্র অনুশীলনের অংশ হিসাবে অরপচন বর্ণমালা এর অক্ষরগুলির উপর ধ্যান করার পদ্ধতি রয়েছে, যাকে দরজার ধারা বলা হয় "প্রবেশদ্বাঅক্ষরের প্রকাশ"।  অ অক্ষর দিয়ে শুরু করে, সূত্রটি বলে যে অক্ষরটি অনুৎপাদ, "অ-উত্থিত" বা "জন্ম না হওয়া" বোঝায়।  সূত্রটি বলে যে অ "অন্তর্দৃষ্টির দ্বার যে সমস্ত ধর্ম প্রথম থেকেই অনুপস্থিত।"

বিবৃতিটি পরে তার নিজস্ব মন্ত্রে পরিণত হয়, যা হেবজ্র তন্ত্রে পাওয়া যায়। অনুৎপাদ মহাযান বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা চূড়ান্ত সত্য ও শূন্যতার সাথে যুক্ত। পঞ্চবিংশতিসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা বলে যে "যে কোনো বোধিসত্ত্ব যে এই দক্ষতাটি অ, ইত্যাদি অক্ষরে উপলব্ধি করে, তাকে কোনো ধ্বনি দ্বারা আবদ্ধ করা হবে না, তিনি সমস্ত ধর্মের অভিন্নতার মাধ্যমে সবকিছু সম্পন্ন করবেন, এবং তিনি শব্দের জ্ঞানের দক্ষতা অর্জন করবেন।" ধর্মের অভিন্নতা বোঝায় কিভাবে সমস্ত ঘটনা সমানভাবে শূন্য ও সারমর্ম (স্বভাব) ছাড়া।

এডওয়ার্ড কোনজে- এর মতে ধারণাটি মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের মতবাদের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে যা মনে করে যে বুদ্ধ শুধুমাত্র একক ধ্বনি নির্গত করে শিখিয়েছিলেন যা বিভিন্ন শ্রোতাদের দ্বারা বিভিন্ন উপায়ে শোনা যায় (তাদের প্রয়োজন অনুসারে)।

তথাগতগুহ্য সূত্রেও অ আবির্ভূত হয়, যেখানে এটি ধারণী হিসাবে আবির্ভূত হয় যাকে বলা হয় "ধর্মের বৈশিষ্ট্যে প্রবেশের ধারণী দরজা।"

চ্যান/জেনের পূর্বএশীয় বৌদ্ধ ঐতিহ্যে, অ অক্ষরটিকে মাঝে মাঝে বুদ্ধ প্রকৃতির প্রতীক হিসেবেও দেখা যায়। রিনজাই সম্প্রদায়ে, অ কখনও কখনও নির্দিষ্ট ধ্যান কৌশলের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

বজ্রযানে

রংধনু থিগলের ভিতরে সাদা তিব্বতি অক্ষর অ হলো জোগচেনের সাধারণ প্রতীক।

অ অক্ষরটি বৈরোচনসম্বোধি সূত্রে বীজ শব্দাংশের মন্ত্র হিসাবে উপস্থিত হয় যা বলে:

অ অক্ষরটি সমস্ত মন্ত্রের সারাংশ, এবং এটি থেকে সর্বত্র অপরিমেয় মন্ত্রগুলি প্রকাশিত হয়;

সমস্ত ফালতু তর্ক বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি দক্ষ প্রজ্ঞা তৈরি করতে সক্ষম হয়।

রহস্যের প্রভু, কেন [অক্ষরটি] সমস্ত মন্ত্রের সারাংশ?

বুদ্ধ, দুই পায়ের প্রাণীদের মধ্যে সম্মানিত, শিখিয়েছেন যে অ অক্ষরটিকে বীজ বলা হয়।

অতএব, সবকিছু এইরকম, [এর বীজ হিসাবে অ অক্ষর থাকা] এবং এটি সমস্ত অঙ্গে বিরাজ করে;

এটি যথাযথভাবে বরাদ্দ করার পরে, নিয়ম অনুসারে সর্বত্র এটি প্রদান করুন।

কারণ সেই আদি অক্ষর (অর্থাৎ, অ) বর্ধিত বর্ণগুলিকে বিস্তৃত করে,

অক্ষরগুলি শব্দ গঠন করে এবং অঙ্গগুলি এর থেকে উদ্ভূত হয়।

গুহ্য শিঙ্গোন সম্প্রদায়ে, অ অক্ষরটিকে বৈরোচনের বীজ বাক্যাংশ বা বীজমন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধর্মকায়কে প্রতিনিধিত্ব করে, এবং চূড়ান্ত বাস্তবতা। এটি অজিকান (অক্ষর অ') নামক ধ্যানের অনন্য ও জনপ্রিয় রূপে ব্যবহৃত হয়। এই ধ্যানে, ধ্যানকারী চাঁদের চাকতিতে সিদ্ধং অ কে কল্পনা করে, যা সমস্ত প্রাণীর মধ্যে অজাত (অনুৎপাদ) বুদ্ধ প্রকৃতির পাশাপাশি বুদ্ধ বৈরোচনকেও প্রতীকী করে। এই শিক্ষা ও অনুশীলন হলো জাপানী তান্ত্রিক গুরু কুকাই দ্বারা শেখানো শিঙ্গোন পদ্ধতির অন্যতম মৌলিক উপাদান।

র্ন্যিং-মা এবং বনের জোগচেন ঐতিহ্যে, বীজ উচ্চারণ অ ব্যাপকভাবে প্রতীকীভাবে এবং বিভিন্ন ধ্যানে ছন্দগত শব্দাংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।  জোগচেন-এ, অ অক্ষরটি সাধারণত আদিম অবস্থা বা স্থল নির্দেশ করে।