বৌদ্ধধর্মের সহিত হিন্দুধর্মের সম্বন্ধ
বৌদ্ধধর্মের সহিত হিন্দুধর্মের সম্বন্ধ (মূল ইংরেজিতে: Buddhism, the Fulfilment of Hinduism) হল হিন্দু সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের দেওয়া একটি বক্তৃতা। ১৮৯৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শিকাগোয় বিশ্বধর্মমহাসভায় তিনি এই ভাষণটি দেন। এই বক্তৃতায় তিনি বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্মের পূর্ণ প্রকাশ বলে উল্লেখ করেন।[১]
তারিখ | ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ |
---|---|
অবস্থান | শিকাগো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ওয়েবসাইট | www |
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনা১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে শিকাগোর বিশ্বধর্ম মহাসভায় (১১-২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩) যোগ দেন। এই সভায় তিনি ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সভাটিই ছিল একসঙ্গে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ধর্মীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত প্রথম সভা। ১১ সেপ্টেম্বর সভায় প্রথম ভাষণ দেন বিবেকানন্দ। এই বক্তৃতায় তিনি বিশেষ কোনো ধর্মের সপক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলেননি। এরপর তিনি ১৫, ১৯, ২০ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ধর্মীয় নানা বিষয়ে ভাষণ দেন।[২]
বক্তৃতা
সম্পাদনা১৮৯৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই ভাষণটি দেওয়া হয়েছিল।[৩][৪] "নব্য-বেদান্তবাদী" হিসেবে পরিচিত স্বামী বিবেকানন্দ[৫] বিশ্বধর্ম মহাসভায় দেওয়া এই ভাষণে ভারতে গৌতম বুদ্ধকে অবতার হিসেবে পূজা করা এবং চীন, জাপান ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মের প্রাধান্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্মের বিদ্রোহী সন্তান বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, বুদ্ধের শিক্ষা বিশ্বকে দেওয়া একটি উপহার এবং এর প্রভাব খ্রিস্টধর্মেও দেখা যায়।[৫] হিন্দুধর্ম একটি বৈদিক ধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক শাক্যমুনি বুদ্ধও ছিলেন হিন্দু। তিনি বেদের গুপ্ত সত্যগুলিকেই প্রকাশ করে গিয়েছেন। বুদ্ধের শিক্ষাগুলি নতুন নয়, সেগুলির উল্লেখ বেদেও আছে। বুদ্ধের শিক্ষাই প্রথম ভারতীয় মতবাদ যা ভারতের বাইরে প্রচারিত হয়। অন্যান্য ধর্মীয় প্রচারকেরা অনেক পরে ভারতের বাইরে মত প্রচার করেছিলেন। আরও একটি পার্থক্যের কথা তিনি তাঁর ভাষণে বিশেষভাবে তুলে ধরেন: ইহুদিরা মতপার্থক্যের জন্য যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করলেও, হিন্দুরা বুদ্ধকে অবতার হিসেবে পূজা করে। তবে তিনি সমসাময়িক পৃথিবীতে যেভাবে বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন হয়, তার সমালোচনা করেছিলেন।[৩][৫]
মহাযান বৌদ্ধধর্ম কেন ভারত থেকে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়ে গেল, তার একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টাও বিবেকানন্দ করেছেন। তিনি বলেন, "বৌদ্ধধর্মের জন্মস্থান ভারতে আজ আর এমন কেউ নেই যিনি নিজেকে বৌদ্ধ বলেন।" তার কারণ হিসেবে তিনি দেখান, বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে কোথাও কোথাও বেদের বিরোধ বেধেছিল। বেদ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রাণ। আর ব্রাহ্মণরাই সমাজের প্রধান স্থানে থাকতেন। তাঁরা বুদ্ধের আনীত পরিবর্তনক্র গ্রহণ করেননি। এই জন্যই বৌদ্ধধর্ম ভারতে টেকেনি। বুদ্ধের উপদেশ যখন সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, "আমি দরিদ্র জনসাধারণের জন্য মত প্রচার করি। তাই আমাকে মানুষের ভাষাতেই বলতে দাও।" বিবেকানন্দ এও বলেন যে, বৌদ্ধধর্ম ভারতে সমাজ সংস্কার, দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতি ও দানধ্যানের যে মহান আদর্শকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন, ভারত তা হারিয়ে ফেলে।[৩][৫]
বিবেকানন্দ বলেন, খ্রিস্টধর্ম ও স্যালভেশন আর্মির মধ্যে যে মতোগত পার্থক্য আছে, সেই রকম বৌদ্ধধর্ম ও বেদান্ত এক নয়।[৫] তিনি বলেন, বৌদ্ধধর্ম হল হিন্দুধর্মের পূর্ণ প্রকাশ। তাই বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণ্যবাদের মস্তিষ্ক ও দর্শন ধার নিয়েছিল। তেমনি বৌদ্ধরাও হিন্দুধর্মের হৃদয় হয়ে উঠেছিল।[১]
গুরুত্ব
সম্পাদনাস্বামী বিবেকানন্দ অন ইন্ডিয়ান ফিলোজফি অ্যান্ড লিটারেচার গ্রন্থের লেখক রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তের মতে, এটি বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ।[৬] ১৮৯৫ সালের ২৯ জুন দি ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকায় এই বক্তৃতার একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশিত হয়। এই সংক্ষিপ্তসারে বক্তৃতার শেষ কথাগুলির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।—[৭]
We cannot live without you, nor you without us. Then believe that separation has shown to us, that you cannot stand without the brain and the philosophy of the Brahman [sic], nor we without your heart. This separation between the Buddhist and the Brahman [Brahmin] is the cause of the downfall of India. That is why India has been the slave of conquerors for the past 1000 years. Let us then join the wonderful intellect of the Brahman [Brahmin] with the heart, the noble soul, the wonderful humanising power of the Great Master.
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Amore 1979, পৃ. 74।
- ↑ Ghosh 2003, পৃ. 81।
- ↑ ক খ গ Vivekananda, পৃ. 28।
- ↑ "The 1893 World's Fair"। Vivekananda Vedanta Society of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ King 2013, পৃ. 97।
- ↑ Dasgupta 1996, পৃ. 102
- ↑ "A summary of Buddhism, the Fulfilment of Hinduism"। The Indian Mirror। ২৯ জুন ১৮৯৫। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Amore, Roy C. (১৯৭৯)। Developments in Buddhist Thought: Canadian Contributions to Buddhist Studies। Wilfrid Laurier Univ. Press। আইএসবিএন 978-0-919812-11-6।
- Dasgupta, Rabindra Kumar (১৯৯৬)। Swami Vivekananda on Indian philosophy and literature। Ramakrishna Mission Institute of Culture। আইএসবিএন 978-81-85843-81-0।
- Ghosh, Gautam (২০০৩)। The Prophet of Modern India: A Biography of Swami Vivekananda। Rupa & Company। আইএসবিএন 978-81-291-0149-5।
- King, Richard (৩ এপ্রিল ২০১৩)। Orientalism and Religion: Post-Colonial Theory, India and "The Mystic East"। Routledge। আইএসবিএন 978-1-134-63234-3।
- Vivekananda, Swami। Swami Vivekananda at the Parliament of Religions। Indic Publication। আইএসবিএন 978-1-301-19120-8।