বেতড়
বেতর ছিল বাংলার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার শিবপুর-সংলগ্ন অঞ্চল অতীতে বেতর নামে পরিচিত ছিল।
আধুনিক কলকাতা শহর গড়ে উঠেছিল মূলত সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলিকাতা গ্রাম তিনটিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এই তিনটি গ্রামের বাইরেও কলকাতায় ও হুগলি নদীর অপর পাড়ে হাওড়ায় মোট চারটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি হল চিৎপুর, সালকিয়া, কালীঘাট ও বেতর। অতীতের নামকরা বাণিজ্যকেন্দ্র বেতর সপ্তদশ শতাব্দীতে লুপ্ত হয়ে যায়।[১]
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে বিপ্রদাস পিপলাইয়ের লেখা মনসামঙ্গল কাব্যে এই অঞ্চলের প্রথম বিশ্বাসযোগ্য ভৌগোলিক বিবরণ পাওয়া যায়। এই সময় হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে ব্যান্ডেল ও সপ্তগ্রামের মাঝখানে অবস্থিত সাতগাঁ বা সপ্তগ্রাম ছিল একটি প্রধান বন্দর। সেই যুগে নদীর নিম্ন অববাহিকায় একই পাড়ে অবস্থিত বেতড় ছিল একটি বিরাট বাজার-শহর। এখানে থেমে যাত্রীরা যাত্রার প্রয়োজনীয় রসদপাতি কিনে নিতেন এবং এখানকার বিখ্যাত মন্দিরে দেবী চণ্ডীর উদ্দেশ্যে পুজো দিতেন। চিৎপুর ও কলিকাতা গ্রাম পেরিয়ে পৌঁছতে হত চিৎপুরে। সেই যুগে সুতানুটি ও গোবিন্দপুর গ্রামদুটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কালীঘাট ছিল একটি ছোটো ধর্মস্থান।[১]
ভেনিসীয় পর্যটক সিজার ফ্রেডেরিক ১৫৬৩ থেকে ১৫৮১ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে প্রাচ্য পর্যটন করেছিলেন। ফ্রেডেরিকের রচনা থেকে সেকালের ভারত তথা বাংলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর, বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্রের কথা জানা যায়। তিনি লিখেছেন, “উজানে সাতগাঁওয়ে আসার আগে বেতর নামে একটি জায়গা আছে। তার উত্তরে নদী বেশ সংকীর্ণ এবং তাতে জলও কম।”[২]
বেতর শহরটি হারিয়ে গেলেও, বেতরের বিখ্যাত বেতাইচণ্ডীর মন্দিরটি আজও আছে।[৩][কখন?]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Cotton, H.E.A., Calcutta Old and New, 1909/1980, pp. 1-4, General Printers and Publishers Pvt. Ltd.
- ↑ Patree, Purnendu, Purano Kolkatar Kathachitra, (a book on History of Calcutta), (বাংলা), first published 1979, 1995 edition, p. 67, Dey’s Publishing, আইএসবিএন ৮১-৭০৭৯-৭৫১-৯.
- ↑ Bandopadhyay, Amiya Kumar, Howran Jelar Purakirti, (বাংলা), 1976, p.102, Govt. of West Bengal.