বিজয়কুমার ভট্টাচার্য
বিজয়কুমার ভট্টাচার্য ( ১৭ জানুয়ারি ১৮৯৫ – ২ জানুয়ারি ১৯৯৩) ছিলেন একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক। [১] মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে শিক্ষাদানের জন্য বর্ধমানের কলানবগ্রামে গড়ে তোলেন বুনিয়াদি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান শিক্ষানিকেতন।
বিজয়কুমার ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২ জানুয়ারি ১৯৯৩ | (বয়স ৯৭)
দাম্পত্য সঙ্গী | সাধনা গুহরায় |
পিতা-মাতা | হেরম্বচন্দ্র ভট্টাচার্য |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাবিজয়কুযার ভট্টাচার্যের জন্ম ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানা তথা খণ্ডঘোষ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত ওঁড়ারি গ্রামের এক খ্যাতনামা পণ্ডিতবংশে। পিতা হেরম্বচন্দ্র ভট্টাচার্য। বাল্যকালেই বিজয়কুমার বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাঁওতাল পরগনার অধুনা ঝাড়খণ্ডের পাকুড় রাজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও পরে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। স্নাতকস্তরে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন উত্তরবঙ্গের রাজশাহী কলেজে। সেখানকার আদি অনুশীলন সমিতির সদস্য ও জননেতা যতীন্দ্রমোহন রায়ের সংস্পর্শে আসেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় হন। ইতিপূর্বে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ও সেবাধর্মে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাএম.এ পাশের পর বিজয়কুমার হুগলি জেলার ভাণ্ডারহাটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ১৯২১ খ্রিস্টাব্দেই মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে শিক্ষকতা ছেড়ে হুগলি জেলা কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাণ্ডারহাটি ইউনিয়ন কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে লিপ্ত হন। এরমাঝে তিনি খ্যাতনামা সংস্কৃত পণ্ডিত কালীপদ তর্কাচার্যের কাছে ন্যায়শাস্ত্রের পাঠ নেন। সহপাঠী বিপ্লবী বন্ধু সতীশচন্দ্র সেনগুপ্তর আহ্বানে হুগলির হরিপাল কল্যাণ সংঘে যোগ দিয়ে পল্লীসংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ হতে চার বৎসর সংস্থাটির দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে যাদবেন্দ্রনাথ পাঁজার আহ্বানে বর্ধমানে গিয়ে ডাণ্ডি পদযাত্রা তথা লবণ সত্যাগ্রহ পরিচালনায় ব্রতী হন। এই সমস্ত কাজে সক্রিয় অংশ নেওয়ার বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে দামোদরে জলস্ফীতির কারণে বন্যা দেখা দিলে তিনি বর্ধমানে আসেন এবং জ্যোতিষচন্দ্র রায় ও উপেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে মিলে জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক আইন সভার নির্বাচনে, বর্ধমানের মহারাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতায় জিতে জেলা বোর্ডে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেসের যাদবেন্দ্রনাথ পাঁজা ও জিতেন্দ্রনাথ মিত্র জয়লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে বিজয়কুমার একাকী পদব্রজে রাঢ় অঞ্চলের নানা জায়গায় বিশেষকরে বর্ধমান জেলায় ছয়শোর বেশি গ্রামে ঘুরে যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তব্য প্রচার করেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বর্ধমান জেলার সংগ্রাম পরিষদের প্রধান নির্দেশক এবং অবিভক্ত বাংলার সব জেলার সঙ্গে গোপনে সমন্বয়কের কাজ করতে থাকেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অবশ্য তিনি গ্রেফতার হন এবং তিন বৎসর কারারূদ্ধ থাকেন। তিনি "রাঢ়ের গান্ধী" নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে অধুনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হোটরে যান। সেখানে বুনিয়াদি শিক্ষা চালু করার উদ্দেশ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এখানে তিনি তার সহকর্মিনী সাধনা গুহরায়কে বিবাহ করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সস্ত্রীক তার পূর্বের কর্মক্ষেত্র কলানবগ্রামে ফিরে আসেন এবং সেখানে গান্ধীর বুনিয়াদী শিক্ষা মতাদর্শ অনুসরণে গড়ে তোলেন এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- "শিক্ষানিকেতন"। নিরলসভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দরিদ্র গ্রামবাসীদের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেন এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সক্রিয় ছিলেন তবে আমৃত্যু সংস্থার প্রাণপুরুষ হিসাবে পথনির্দেশনার কাজ করে গেছেন।
বিজয়কুমার যোগ্যতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কখনও দলীয় বা প্রশাসনিক পদ গ্রহণ করেন নি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি.লিট উপাধি প্রদান করে। শিক্ষা সংক্রান্ত কিছু গ্রন্থ ছাড়াও তার বহু নিবন্ধ মফস্বলের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-
- গান্ধীজির শিক্ষা
- বুনিয়াদি শিক্ষা
- বুনায়াদি শিক্ষা পদ্ধতি
- ইংরেজির প্রয়োজন
- অনূদিত গ্রন্থ-
- গঠন কর্মপন্থা
- বুনিয়াদি শিক্ষার অর্থ
মৃত্যু
সম্পাদনাবিজয়কুমার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৫৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬