৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট (ইংরেজি: The 49th Bengalee Regiment), যা বাঙালি পল্টন, বেঙ্গলি প্লাটুন, বেঙ্গলি রেজিমেন্ট, বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি৪৯তম বেঙ্গলি নামেও পরিচিত, ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সামরিক ইউনিট। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালিদের নিয়ে গঠিত হয়। সৈন্যদের বঙ্গ প্রদেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং করাচিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে এটিই ছিল বাঙালিদের প্রথম সামরিক সংগঠন। নবগঠিত বাঙালি পল্টনের সরকারি নাম ছিল ‘বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি’, যা পরবর্তীকালে ‘৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট’-এ রূপান্তরিত হয়। তারা মেসোপটেমিয়ায় যুদ্ধ করেছিল এবং বাগদাদে অবস্থান করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরে তারা মধ্যপ্রাচ্যের কুর্দিবিদ্রোহ দমন করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই রেজিমেন্টের ৪৯ জন সদস্য যুদ্ধে প্রাণ হারান। তাদের সম্মানে কলকাতায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। এই বাঙালি পল্টনের আয়ুষ্কাল মাত্র চার বছর ছিল। বেশিরভাগ সৈনিক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার থেকে এসেছিল এবং ইউনিটের উল্লেখযোগ্য সৈন্যরা ছিলেন খাজা হাবিবুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, রণদাপ্রসাদ সাহামাহবুবুল আলম[][][][]

৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট
The 49th Bengalee Regiment
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাঙালি প্লাটুনের শহীদ সেনাদের স্মৃতিস্তম্ভ, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা
প্রতিষ্ঠা২৬শে জুন ১৯১৭
দেশ ব্রিটিশ ভারত
আনুগত্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
শাখা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী
ধরনপদাতিক
আকার২ টি কোম্পানি; ৪৬৫ জন সেনাসদস্য
গ্যারিসন/সদরদপ্তরফোর্ট উইলিয়াম সেনানিবাস, কলকাতা
করাচি ডিপো, কলকাতা ডিপো, ঢাকা ডিপো
ডাকনাম
  • বেঙ্গলি রেজিমেন্ট
  • বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি
  • ৪৯তম বেঙ্গলি
  • বেঙ্গলি প্লাটুন
  • বাঙালি পল্টন
বার্ষিকী২৬শে জুন
সরঞ্জামাদিলি-এনফিল্ড
যুদ্ধসমূহপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ
বিযুক্ত৩০শে আগস্ট ১৯২০
কমান্ডার
অধিনায়কলেফটেন্যান্ট এস. জি. টেইলর
প্রাচীন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] মেসোপটেমিয়ার মানচিত্র।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রথম মহাযুদ্ধে পরাজয় ঠেকানোর জন্য ইংল্যান্ডের অনেক সৈন্য প্রয়োজন হয়, এ ছাড়া বাঙালিসহ ভারতীয়দের আর্থিক সমর্থনও জরুরি ছিল। ফলে আগে যেসব জাতি থেকে সৈনিক নেওয়া হতো না, সেখান থেকেও সৈনিক সংগ্রহ শুরু হয়। বাঙালির জন্য তার ‘অসামরিক জাতি’র দুর্নাম ঘোচানোর সুযোগ এসে যায়। বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ৭ আগস্ট ১৯১৬ সালে ঢাকায় বাঙালি পল্টন গঠনের ঘোষণা দেন। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম সেনানিবাসে বাঙালি পল্টন সৈন্য ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ৩০ আগস্ট ১৯১৬ সালে। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ সালে প্রথম দশ জন সৈন্য প্রশিক্ষণের জন্য নওশেরা যাত্রা করে। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ সালে ঢাকায় সৈনিক ভর্তি শুরু হয়। ক্যাপ্টেন ডালাস স্মিথকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানুয়ারি ১৯১৭ সালে নওশেরাতে প্রশিক্ষণ শেষে সৈনিকরা করাচি পৌঁছেন। ২৬ জুন ১৯১৭ সালে প্রথম ব্যাটালিয়নটি গঠিত হয়। মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধে যোগ দিতে করাচি ত্যাগ করে বসরা, মাকিনা হয়ে সেপ্টেম্বর ১৯১৭ সালে বাগদাদ পৌঁছেন। জানুয়ারি ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বাগদাদে অবস্থান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে নভেম্বর ১৯১৮ সালে তানুমাতে তারা যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করেন। কুর্দিস্থানে বিদ্রোহ দেখা দিলে বিদ্রোহ দমনে এপ্রিল ১৯১৯ সালে এ ব্যাটালিয়নের ২৩৫ জন সৈনিক অংশ নেন। আগস্ট ১৯২০ সালে সৈন্যরা করাচি হয়ে কলকাতা ফিরে আসেন। ৩০ আগস্ট ১৯২০ সালে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেয়া হয়।[][][][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মুহাম্মদ লুৎফুল হক (২০১২)। "বাঙালি পল্টন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. Illustrated Weekly of Pakistan (ইংরেজি ভাষায়)। Pakistan Herald Publications। ১৯৬৮। পৃষ্ঠা 8। 
  3. Bangladesh Quarterly (ইংরেজি ভাষায়)। Department of Films & Publications, Government of Bangladesh.। ২০০৮। পৃষ্ঠা 66। 
  4. মুহাম্মদ লুৎফুল হক। বাঙালি পল্টন : ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি রেজিমেন্ট। বাংলাদেশ: প্রথমা প্রকাশন। আইএসবিএন 9789848765944 
  5. "বাঙালি পল্টন"গুডরিড্‌স। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩০ 
  6. "বাঙালি পল্টন ও ঢাকা শহর"www.prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Ghotona। "বাঙালি পল্টনের ইতিহাস"ghotona.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা