বাইতুল কুরআন
বাইতুল কুরআন (আরবি: بيت القرآن, অর্থ: কুরআনের ঘর) বাহরাইনের হুরায় অবস্থিত ইসলামি শিল্পের উপর বিশেষায়িত একটি কমপ্লেক্স।[২] এটি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কমপ্লেক্স এখানকার ইসলামি জাদুঘরের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি পৃথিবীর প্রসিদ্ধতম ইসলামি জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম।[৩]
بيت القرآن | |
স্থাপিত | ১৯৯০ |
---|---|
অবস্থান | হুরা, মানামা, বাহরাইন |
ধরন | ইসলামি |
সংগ্রহের আকার | ১০,০০০ বই ও পাণ্ডুলিপি |
পরিচালক | সামার আল গাইলানি[১] |
ওয়েবসাইট | অফিসিয়াল ওয়েবসাইট |
প্রতিষ্ঠা
সম্পাদনা১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এই কমপ্লেক্সের নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে জাদুঘর চালু করা হয়। আবদুল লতিফ জাসিম কানু এর উদ্বোধন করেন। কুরআন ও অন্যান্য দুর্লভ বইয়ের মূল্যবান পাণ্ডুলিপি রক্ষার জন্য এটি নির্মিত হয়। একটি আঞ্চলিক ম্যাগাজিনের মতে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে এই উদ্যোগ অভাবনীয়।[৪] জাদুঘরের মূলে রয়েছে কানুর ব্যক্তিগত কুরআনের পাণ্ডুলিপি সংকলন ও ইসলামি শিল্পের নিদর্শন। তাকে একজন আগ্রহী সংগ্রাহক বলা হয়ে থাকে। তার সংগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে তিনি তার সংগ্রহে থাকা দুর্লভ পাণ্ডুলিপির প্রতি দায়িত্ব অনুভব করেন বলা হয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে তিনি তার সংগ্রহ দান করেন। কুরআন ও ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন জাদুঘরের মধ্যে এটি প্রথম।[৩]
এই কাজের অর্থায়ন জনসাধারণের দানের মাধ্যমে করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষার্থী পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই কাজে সহায়তা করে। সাধারণ জনগণের জন্য বাইতুল কুরআনের সুযোগ সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।[৫]
এই প্রতিষ্ঠান ও এর জাদুঘরে আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ কুরআনের ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি রয়েছে। এখানে পূর্বে চীন থেকে পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত ইসলামি বিশ্বের নানা স্থানের কুরআনের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। এর মাধ্যমে হিজরি প্রথম শতাব্দী থেকে ইসলামি স্বর্ণযুগসহ বর্তমান অবধি ক্যালিগ্রাফি শৈলীর অগ্রগতি বোঝা যায়।[৬][৭]
সুযোগসুবিধা
সম্পাদনাবাইতুল কুরআন কমপ্লেক্স শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে।[৮] জটিল গঠনের বাহ্যিক নকশা ১২শ-শতাব্দীর প্রাচীন মসজিদের নকশার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।[৭] কমপ্লেক্সে মসজিদ, গ্রন্থাগার, অডিটোরিয়াম, মাদ্রাসা এবং দশটি প্রদর্শন হলযুক্ত জাদুঘর রয়েছে। মূল হল ও মসজিদের উপর বড় আকারের স্ট্রেইন্ড গ্লাসের গম্বুজ রয়েছে। মিহরাব নীল সিরামিক দিয়ে আবৃত। এর উপর কুরআনের আয়াত উৎকীর্ণ রয়েছে।[৯]
গ্রন্থাগারে ইসলামের উপর লিখিত আরবি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় প্রায় ৫০,০০০ বই ও পাণ্ডুলিপি রয়েছে। জাদুঘরটি ইসলামি শিল্প বিষয়ে বিশেষায়িত। এর অধিকাংশ রেফারেন্স বই আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পন্ন। অফিস চলাকালে গ্রন্থাগার ও পাঠকক্ষ সাধারণের জন্য খোলা থাকে। এখানে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে।[৭]
কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামের নাম মুহাম্মদ বিন খলিফা বিন সালমান আল খলিফা লেকচার হল। এটি ১৫০ জন দর্শক ধারণ করতে পারে। এটি মূলত বক্তৃতা ও একাডেমিক সম্মেলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি বক্তারা বাহরাইনে এসে থাকেন। বিভিন্ন সমিতি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার জন্য সম্মেলন হল প্রায় সাধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।[৯]
ইসলামি শিক্ষা বিষয়ক ইউসুফ বিন আহমেদ কানু স্কুল এই স্থানে অবস্থিত। এই স্কুলে সাতটি ভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হয়। নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক ক্লাসে কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়।[৯]
জাদুঘর
সম্পাদনাআল হায়াত জাদুঘর এই কমপ্লেক্সের সবচেয়ে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। এতে দুইটি তলায় দশটি হল রয়েছে। এসব হলে হিজরি প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগে লিখিত কুরআনের পাণ্ডুলিপি রক্ষিত রয়েছে। মক্কা, মদিনা, দামেস্ক, বাগদাদে পার্চমেন্ট কাগজে লিখিত পাণ্ডুলিপি এখানে রক্ষিত রয়েছে।[৭] পাণ্ডুলিপির সুরক্ষার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়। দুর্লভ পাণ্ডুলিপির মধ্যে ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে মুদ্রিত কুরআনের একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে। ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত কুরআনের পাণ্ডুলিপি জাদুঘরে রয়েছে। এটি কুরআনের প্রাচীনতম অনুবাদগুলোর অন্যতম।[৭] খলিফা উসমানের আমলে লিখিত কুরআনের পাণ্ডুলিপি এখানে রক্ষিত আছে। এছাড়াও কিছু ক্ষুদ্র আকারের কুরআনের পাণ্ডুলিপি রয়েছে যা পড়ার জন্য আলোকীয় যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।[৭]
১৪শ শতাব্দীতে বর্তমান পাকিস্তানে শস্য, ডাল ও চালের উপর লিখিত কুরআনের বিভিন্ন সূরা এই জাদুঘরে রয়েছে।[৭] এছাড়াও বিভিন্ন যুগে ইরাক}, তুরস্ক, ইরান ও মিশরে নির্মিত দুর্লভ স্বর্ণ ও তামার পাত্র এবং কাচ জাদুঘরে রয়েছে।[৭]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া সহ অন্যান্য ইসলামি পণ্ডিতদের রচনা জাদুঘরে রক্ষিত আছে। দাবি করা হয় যে "এটি কুরআন ও কুরআন অধ্যয়নে নিবেদিত পৃথিবীর একমাত্র প্রতিষ্ঠান"।[১০]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "People in the field of Islamic manuscripts." (ইংরেজি ভাষায়)। The Islamic Manuscript Association। ১৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ The Middle East, Volume 1 (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। ২০০৪। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 9780313329234।
- ↑ ক খ Nawwab, Ni'Mah Isma'il (মে–জুন ২০০০)। "Beit Al Qur'an Religion, Art, Scholarship"। Saudi Aramco World (ইংরেজি ভাষায়)। Volume 51 (3)। ৭ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Beit Al Qur'an" (ইংরেজি ভাষায়)। TimeOut Bahrain। আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Beit al-Quran in Manama, Bahrain" (ইংরেজি ভাষায়)। Lonely Planet। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Muqueem Khan, Shaista (নভেম্বর ২০০৮)। "Islamic Manuscripts" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। World Congress of Muslim Librarian & Information Scientists। পৃষ্ঠা 10, 11। ১৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ "بيت القرآن يستأنف فعالياته غداً السبت الاول من سبتمبر" (আরবি ভাষায়)। Bahrain News Agency। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "Bait al Quran" (ইংরেজি ভাষায়)। Ministry of Culture (Bahrain)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ "Beit Al Qur'an in Bahrain" (ইংরেজি ভাষায়)। TimeOut Bahrain। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Arabic Textbook" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। Yale University Press। ৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১২।