বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকা
বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকা নিচে দেওয়া হয়েছে।
অ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কী? | সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; সমতুল্য- 'কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?' |
অকর্মা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর | অক্ষমতার দুর্বলতা ঢাকতে অকর্মারা বেশি ভড়ং দেখায়; তুলনীয়- 'হরিনামে খোঁজ নেই স্ফটিকের রাঙা থোপ'; পাঠান্তর- 'অকেজো নাপিতের থলিভরা ক্ষুর'। |
অকর্মারা সর্বদাই ক্ষুধার্ত | অকর্মারা একটি কাজই জানে শুধু বসে বসে খাওয়া। |
অকস্মাৎ/বিনামেঘে বজ্রাঘাত | অপ্রত্যাশিতভাবে কোন বিপদের সংঘটন। |
অকারণে কিছু হয় না | বিনাকারণে গাছের একটি পাতাও নড়ে ন; সমতুল্য- 'ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে'। |
অকারণে হৈ চৈ | অহেতুক চিন্তা; সমতুল্য-'মাথা নেই তার মাথাব্যাথা'। |
অকালকুস্মাণ্ড১ | অকালে জাত চালকুমড়ার পূজায় বলি হয় না ভাবার্থে- অকর্মণ্য; অকেজো; কোন কাজের নয় ইত্যাদি। |
অকালকুষ্মাণ্ড২ | পরিবারের অনিষ্টকারী সদস্য; (উৎসকাহিনী- গান্ধারী অকালে কুষ্মাণ্ডাকার এক মাংসপিণ্ড প্রসব করেন; এই মাংসপিণ্ড থেকে শতপুত্র জন্ম নেয়; শতপুত্রের কারণে কুরুবংশ ধ্বংস হয়।) |
অকাল গেল সুকাল এল পাকল কাঁটাল কোষ, আজ বন্ধু ছেড়ে যাও, দিয়ে আমার দোষ | অসময়ে উপকৃত হয়ে নানা অজুহাতে সুসময়ে উপকারীকে অস্বীকার করা। |
অকালমেঘ | অকালে মেঘ উদয়ের মত সম্পদ হঠাৎ আসে হঠাৎ চলে যায়। |
অকালে/আকালে কী না খায় | অসময় বা দুর্ভিক্ষের সময়ে খাবারের বাচবিচার করা সম্ভব হয় না, যা হাতের কাছে পায় তাই খেতে বাধ্য হয়; সমতুল্য- 'প্রয়োজনীয়তা কোন নিয়ম মানে না'। |
অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখ কিছুকিছু | সুখদুঃখমিশ্রিত জীবনের সুখের দিনগুলিতে দুঃখের দিনগুলি ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। |
অকালে না নোয় বাঁশ পাকলে করে ট্যাঁশট্যাঁশ | কাঁচা অবস্থায় বাঁশ না নোয়ালে পাকলে পরে কটকট শব্দ করে; শিশুকালে নীতিশিক্ষা না দিলে উত্তরকালে হাজার উপদেশ দিলেও তা বৃথা যায়। |
অকালে বাড়ে সকালে মরতে | দ্রুত বৃদ্ধি দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে। |
অকালের তাল বড়ই মিষ্টি | অকালে দুস্প্রাপ্য জিনিস পেলে তৃপ্তিবোধ মাত্রাতিরিক্ত হয়। |
অকালের বাদল/বাদলা | অপ্রত্যাশিত বাধা। |
অকুলীনোহপি শাস্ত্রজ্ঞো দৈবতৈরপি পূজ্যতে | কুলীনবংশে জন্মগ্রহণ না করলেও শাস্ত্রজ্ঞকে দেবতারা পর্যন্ত সমাদর করেন; সম্পর্কীত প্রবাদ-'কিং কুলেন বিশালেন গুণহীনস্তু যো নরঃ'। |
অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা কৃতজ্ঞ কুকুর শ্রেয় | কুকুরের বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষ থেকে অনেক বেশি; তুলনীয়- 'যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভাল লাগছে'। |
অকৃতজ্ঞের নরকবাস | অকৃতজ্ঞের কঠোর শাস্তি প্রাপ্য; সমতুল্য- 'আত্মপ্রচার করো না এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না'। |
অকেজো নাপিতের থলিভরা ক্ষুর | 'অকর্মা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর'- দ্রষ্টব্য; পাঠান্তর- 'অকেজো মিস্ত্রির থলিভরা যন্ত্র'। |
অকেজো বউ লাউ কুটতে দড় | যে কোন কাজ জানে না সে সহজ কাজটা আগে বেছে নেয়। |
অকেজো মিস্ত্রি যন্ত্রের দোষ ধরে | অকর্মণ্যের অজুহাতের অভাব হয় না; সমতুল্য- 'নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাচ না আওয়ে/জানে অঙ্গন টেরা'। |
অকেজো মানুষের কথা বেশি কাজ কম | কাজে ফাঁকি দিতে বা অক্ষমতা ঢাকতে নানা অজুহাত দেখায়; ফলে বেশি কথা বলার প্রয়োজন হয়। |
অকেজোর তিন কাজ বড়, ভোজন ক্রোধ নিদ্রা দড় | অকম্মারা তিনটি বিষয়ে বড় গুণধর- খায় বেশি; রাগ দেখায় বেশি; আর ঘুমায় বেশি। |
অক্ষমের অজুহাত খাড়া | অক্ষমের অজুহাতের অভাব হয় না। |
অখণ্ডিত রত্ন মেলে না | রত্ন একটি সম্পূর্ণ ধারণা। |
অগভীর জলে সফরি ফরফরায় | অল্পবিদ্যানেরা সর্বদা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'। |
অগরমগর করনা | কিছু করা বা না করার পক্ষে নানা উক্তি দেখানো। |
অগস্ত্যযাত্রা | চিরদিনের জন্য প্রস্থান; যে-যাত্রায় বিদেশযাত্রী আর ফিরে আসে না; (উৎসকাহিনী- সুমেরুপর্বতকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরতে দেখে সূর্যকে বিন্ধ্যপর্বত বলে তাকেও যেন সে প্রদক্ষিণ করে; সূর্য তাতে অসম্মত হয়; বিন্ধ্যপর্বত ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের আকার বৃদ্ধি ক’রে সূর্যের গতিপথ রুদ্ধ করে; জগৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে; সকলে বিন্ধ্যপর্বতক সঙ্কুচিত হতে অনেক অনুরোধ করে; বিন্ধ্যপর্বত অসম্মত হলে সকলে বিন্ধ্যপর্বতের গুরু অগস্ত্যমুনিকে সমস্যার প্রতিকার করতে অনুরোধ করে; অগস্ত্যমুনি বিন্ধ্যপর্বতের কাছে উপস্থিত হলে বিন্ধ্য নতমস্তকে গুরুকে প্রণাম করে; গুরু তাকে আশীর্বাদ ক’রে বলেন, ‘বৎস, আমি দক্ষিণাপথে যাচ্ছি, যতদিন না আমি ফিরি তুমি এই অবস্থায় অবস্থান কর'; অগস্ত্যমুনি সেই যে গেলেন আর উত্তরাপথে ফিরলেন না; বিন্ধ্যও আর মাথা তুলতে পারল না; ভাদ্রমাসের পয়লা দিনে অগস্ত্যমুনি দক্ষিণে যাত্রা ক’রেছিলেন এবং আর ফিরে আসেন নি বলে মাসের প্রথমদিনে বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ।) |
অগা লোকের কাজ ঝকমারি | অকাজের লোকেরা কাজের ক্ষেত্রে বিভ্রাট সৃষ্টি করে। |
অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিত, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে১ | অগাধজলে থেকেও রুইমাছের বিকার নেই অর্থাৎ অহঙ্কারী হয় না; অথচ অল্পজলে পুঁটিমাছ ফরফর করে গর্বে লাফায়। |
অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে২ | জ্ঞানীপুরুষেরা জানে যে তারা অতি অল্প জানে; তাই তারা বিনয়ী হয়; কিন্তু অল্পজ্ঞানীরা মনে করে যেন তারা বড় বেশী জানে; তাই তারা অহঙ্কারী হয়। |
অগুণ মানুষ গুণ না চিনে, মূষা না চিনে বিড়ালী; অপ্রেমী যে প্রেম না চিনে, কাঠ না চিনে কুড়ালী। | মানুষের চেতনার বড় অভাব; বুদ্ধিশুদ্ধি একটু কম। |
অগুণস্য হতং রূপম | নির্গুণব্যক্তি রূপবান হলেও সেই রূপ বৃথা। |
অগুরু চন্দন ফেলে চায় শেওড়া কাঠ, কোকিলের ধ্বনি ফেলে বানরের নাট | ভালো ছেড়ে মন্দের প্রতি মানুষের অযৌক্তিক আকর্ষণ থাকে; স্বভাবদোষে মানুষ মন্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়। |
অগ্নি, ব্যাধি ও ঋণ, রেখোনা তিনের চিন (চিহ্ন) | আগুন, ব্যাধি ও ঋণের শেষ রাখতে নেই; থাকলে এগুলি ক্রমশঃ বাড়তে থাকে; আগুন নিবিয়ে ফেলা, রোগ সারিয়ে ফেলা এবং ঋণ শোধ করে ফেলা আশু কর্তব্য। |
অঘটন ঘটায় বিধি | বিধানকর্তা ভালমন্দ সব ঘটনার কারিগর। |
অঘটনে স্বজন চেনা যায় | দুর্বিপাকে পড়লে প্রকৃত বন্ধু পাশে এসে দাঁড়ায়। |
অঘটির (আদেখলা) ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণটা গেল | কোন জিনিসের প্রথম প্রাপক আনন্দের আতিশয্যে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে; সমতুল্য-'অদন্তের দাঁত হলো, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল'। |
অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি | কয়লা হাজার ধুলেও যেমন রঙ বদলায় না তেমনিই কুলোক কখনো কুপ্রবৃত্তি ছাড়ে না; সমতুল্য- 'ইল্লৎ যায় না ধুলে'; 'যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ'; 'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি; বাংলা পাঠান্তর-'অঙ্গার হাজার ধুলেও ময়লা ছাড়ে না'। |
অচিন্ত্যং হি ফলং সূতে সদ্যঃ সুকৃতপাদপঃ | পূণ্যরূপ বৃক্ষ তাৎক্ষণিক অভাবনীয় ফলদান করে। |
অচেনা/অজানা বন্ধু থেকে চেনা/জানা শত্রু ভাল | অজানা বিষয় থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। |
অচেনা পথ আর জঙ্গল সমান অজানা জল আর জানা শ্মশান | এই চারটি বিষয় জীবনে চলার পথে বিপদের কারণ হতে পারে। |
অজগরকা দাতা রাম | অজগর নিশ্চলভাবে এক জায়গায় পড়ে থাকে; মুখের কাছে খাবে এলে তবে খায়; তার খাবারের অভাব হয় না; রামই তার খাবার যুগিয়ে দেন; ভগবানই জীবের অন্নদাতা; তুলনীয়- 'অনাথো দেবরক্ষকঃ'; সমতুল্য- 'জিভ দিয়েছেন যিনি আহার যোগান তিনি'; বাংলা পাঠান্তর- 'অজগরের দাতা রাম'। |
অজানা পথ আর জঙ্গল সমান, অজানা জল আর জানা শ্মশান | এগুলি হল ভয়ের কারণ। |
অজাযুদ্ধে ঋষিশ্রাদ্ধে প্রভাতে মেঘডম্বরে দাম্পত্যকলহে চৈব বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া | অজার লড়াই, ঋষির শ্রাদ্ধ, সকালের মেঘগর্জন ও দাম্পত্যকলহে প্রথমে একটু বাড়াবাড়ি হয় তবে শেষে ফল সামান্যই হয়। |
অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার | ছাগল অন্য ছাগল দেখলে দূর থেকে লাফিয়ে আসে; কিন্তু সামনে এলে ভুলে যায়; আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে ফললাভের সম্ভাবনা সামান্য হলে প্রবাদটি বলা হয়। |
অজুহাত মিথ্যার চেয়ে খারাপ | অজুহাত মিথ্যাকে রক্ষা করে। |
অজীর্ণে ভোজনং বিষমং | হজমের আগে পুনরায় ভোজন বিষতুল্য। |
অজীর্ণে ভেষজং বারি; জীর্ণে বারি বলপ্রদম্ | বদহজমের একমাত্র ওষুধ জল; দুর্বলকে জল শক্তি যোগায়। |
অজ্ঞতাই ভক্তি করে, ভক্তি হলো অজ্ঞতার কন্যা | অজ্ঞান ও ভয় থেকে মানুষের মনে ভক্তিভাবের উদয় হয়। |
অজ্ঞাতকুলশীলস্য বাসো দেয়ো ন কস্যচিৎ | কখনো অচেনা লোককে গৃহে স্থান দিতে নেই। |
অজ্ঞানতা শ্রেষ্ট দারিদ্র্য | অজ্ঞানের সারাজীবনটা বৃথা যায়; অজ্ঞানের মত দীন আর কেউ নয়। |
অজ্ঞান বন্ধু থেকে জ্ঞানী শত্রু অনেক ভালো | বন্ধু হলেও অবোধের কাছ থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। |
অজ্ঞানে আকস্মিক ও দৈব ঘটনার যুক্তি খাড়া করে | কিছুই আকস্মিক নয়; অকারণে কিছু হয় না; ব্যাখ্যায় অক্ষম হলে লোকে দৈবের দোহাই দেয়; সমতুল্য-'পরুষ্কারেণ বিনা দৈব ন সিদ্ধতি'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভাগ্যং ফলতি সর্বত্র ন চ বিদ্যা ন পৌরুষম্'। |
অজ্ঞানে করে পাপ জ্ঞান হলে মনস্তাপ | শিশুবয়সে না বুঝে দোষত্রুটি হয়; বড়বয়সে জ্ঞান হলে সেগুলি শুধরে নেওয়া যায়; কিন্তু জ্ঞানকৃত পাপ কখনো খণ্ডায় না; পাঠান্তর- অজ্ঞানে করে পাপ জ্ঞান হলে সরে; সজ্ঞানে করে পাপ সঙ্গে সঙ্গে ফেরে'। |
অজ্ঞানে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করে, জ্ঞানী আজরাত্রের মধ্যেই কাজ শেষ করে। | জ্ঞানীরা অনিশ্চিতের মধ্যে থাকে না; তুলনীয় উক্তি- আগামীকাল আর আসে না'; 'কাল করলে আজ নয় কেন, আজ করলে এখন নয় কেন'। |
অজ্ঞানে বাপান্ত করে জ্ঞানবানে তাই কি ধরে? | অজ্ঞরা কিছু দোষ করে ফেলতে পারে; জ্ঞানীরা সেই দোষ ধরে না; তুলনীয়- 'নীচ যদি উচ্চ ভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হাসে'। |
অজ্ঞানের কানদুটো ছোট ও জিভটা বড় হয় | অজ্ঞানেরা শোনে খুব কম, কিন্তু কথা বলে বড় বেশি। |
অজ্ঞানের কালে জানে না, অমানুষের কালে মানে না | শিশুরা বুঝতে পারে না বলে দোষ করে; বয়স্করা কিন্তু দোষকে অগ্রাহ্য করে; অপকর্মকে অপকর্ম বলে স্বীকার করে না; মানুষের স্বভাবই হল দোষ করা; স্বভাবদোষে মানুষ অপকর্ম করে। |
অতি অস্পষ্ট কালির লেখাও উৎকৃষ্ট স্মরণশক্তি থেকে বেশি উজ্জ্বল | স্মৃতিশক্তি বড়ই দুর্বল; লেখা কিন্তু চিরস্থায়ী। |
অতি আশ সর্বনাশ | অতি আশা প্রবঞ্চনা করে; বেশি লোভ করলে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; সমতুল্য- 'অতি লোভে তাঁতি নষ্ট';'খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে/হেলে গরু কিনে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'অতি আশায় মরে চাষা'। |
অতিকথায় বার্তা নষ্ট | বাকচাতুর্যে মূলবক্তব্য হারিয়ে যায়; সমতুল্য- 'ভাষা ভাব লুকায়'। |
অতি ক্ষুধা যার হাড় কাটা তার | বেশি খেলে শরীর নষ্ট হয়। |
অতিগর্জনে/মেঘে ফোঁটাবৃষ্টি | হাঁকডাকওয়ালারা কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা; অকর্মারা বকে বেশি; যে বেশি বকে সে কাজ অষ্টরম্ভা। |
অতি ঘরন্তী না পায় ঘর অতি বরন্তী না পায় বর | ভাগ্যদোষে অতি নিপুণা ঘরণীও সংসার পাততে পারে না এবং পতিকর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষাপ্রাপ্তা বরাঙ্গনাও বর পায়। |
অতি চতুরের ভাত নেই, অতি সুন্দরীর ভাতার নেই | বেশি চালাকের অন্ন জোটে না, বেশি সুন্দরীর বর জোটে না; বাছবিচারে সময় চলে যায়; তুলনীয়- 'অতি চালাকের গলায় দড়ি'। |
অতি চালাকের গলায় দড়ি | বেশি চালাকি করে অপরকে ঠকাতা চাইলে নিজেকেও বিপদে পড়তে হয়। |
অতি চালাকের গলায় দড়ি, অতি বোকার পায়ে বেড়ি | বেশি চালাক ও বেশি বোকা- উভয়ই বিপদে বেশি পড়ে; অতি ভাল ভাল নয়। |
অতি চেনার কদর নেই | সহজলভ্য জিনিসের মূল্য নাই; সমতুল্য- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। |
অতি জ্বালে ব্যঞ্জন নষ্ট | বেশি জ্বাল দিলে দ্রব্যগুণ নষ্ট হয়; কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভাল নয়। |
অতিথির্বালকশ্চৈব রাজা ভার্যা তথৈবচ, অস্তি নাস্তি নয়া জানন্তি দেহি দেহি পুনঃপুনঃ | অতিথি, বালক, রাজা ও পত্নী- এরা আছে কি নেই বিবেচনা করে ন, কেবল বলে দাও দাও। |
অতিথি সর্বময় গুরুঃ/পূজ্যঃ | অতিথি গুরুর মতই পূজনীয়; তুলনীয়- 'সর্বদেবময়োহতিথি'। |
অতিদর্পে হতা লঙ্কা | অহংকার করলে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'অত্যুচ্চায় পতনায়'; 'সর্বমত্যন্তমগর্হিতম'। |
অতি দর্পে হতা লঙ্কা, অতিমানে চ কৌরবাঃ, অতিদানে বলির্বদ্ধঃ সর্বমত্যন্তম গর্হিতম্ | অতিরিক্ত অহঙ্কারে লঙ্কা বিনষ্ট হয়; অতিরিক্ত অভিমানে কৌরবেরা বিনষ্ট হয়; অতিরিক্ত দানে বলি বামনের কাছে বন্দী হয়; কোনকিছুতে বাড়াবাড়ি ভালো না; মাত্রাতিরিক্তের পরিণাম সুখকর হয় না। |
অতি দানে বলির পাতালে হল ঠাঁই | অতিরিক্ত দান করতে গিয়ে বলি বামনের কাছে বন্দী হয়; সৎকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি অন্যের কৌশলে ভোগান্তির শিকার হয়; সুতরাং অতিশয় কিছু ভালো নয়। |
অতি পীরিত যেখানে অতি বিচ্ছেদ সেখান | পীরিত বেশি হলে তাড়াতাড়ি বিচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে। |
অতি পীরিত যেখানে, নিত্য যাবে না সেখানে; যদি যাবে নিত্যি, ঘটবে একটা কীর্তি | যেখানে ভালোবাসা গভীর শেখানে প্রতিদিন না যাওয়াই ভালো; তা না হলে কলঙ্ক বা বিরোধ ঘটতে পারে। |
অতিপ্রেমে অমিত বিচ্ছেদ | যেখানে ভালোবাসার বাড়াবাড়ি সেখানে বিচ্ছেদবেদনাও তীব্র হয়; সম্পর্কীত প্রবা্দ- 'যতহাসি ততকান্না, বলে গেছে রামসন্না(শর্মা)'। |
অতিবড় ঘরণী না পায় ঘর, অতিবড় সুন্দরী না পায় বর | বেশি বাছাবাছি করতে গিয়ে প্রায়শঃ ঘরকন্নার কাজে অতিনিপুণা নারীর স্বামীর ঘর এবং বরাঙ্গনার বর জোটে না। কোনবিষয়ে অনন্যসাধারণ হলে সবসময় তার জুড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না। |
অতিবড় সোদর (সহোদর ও সহোদরা) তিনদিন করবে আদর | যত প্রীতির সম্পর্কই হোক না কেন তার কাছ থেকে অতি পাওয়ায় আদর ক্রমশঃ কমতে থাকে। |
অতিবাড় বেড়ো না ঝড়েতে উড়াবে, অতি ছোট হয়ো না ছাগলে মুড়োবে | অহঙ্কার বেড়ে গেলে পতন হবেই; আবার বেশি বিনীত হলেও উপেক্ষিত হবে; সুতরাং চরমপন্থা নয়, মধ্যপন্থাই শ্রেষ্ঠপন্থা; তুলনীয়- 'অত্যুচ্ছায় পতনায়'; পাঠান্তর- 'অতি বাড় ভাল নয়'। |
অতিপরিচয়ে দোষ ব্যক্ত | অন্তরঙ্গতায় লুকানো দোষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। |
অতিপরিচিতি উপেক্ষার জন্ম দেয় | কোন বিষয় বেশি পেলে তার প্রতি আকর্ষণ, আগ্রহ কমে। |
অতিবুদ্ধির কোমরে/গলায়/হাতে দড়ি, অতি বোকার পায়ে বেড়ি | অতিচালাকি করতে গিয়ে মানুষ মরে;একইভাবে অতিবোকামির জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সুতরাং বেশি বাড়বাড়ি কখনো ভালো নয়। |
অতিবুদ্ধির হা-ভাত | চালাকি করতে গিয়ে অস্থিরতার কারণে ভাত যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়; সুতরাং ভাল নয় অতিশয়। |
অতিভক্তি চোরের লক্ষণ১ | ভক্তির আতিশয্যে গোপন উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন থাকে; অসঙ্গতমাত্রায় কিছু করলে স্বাভাবিকভাবেই মনে সন্দেহ জাগে; সমতুল্য- 'কেশব, গোপাল, হরিহরি, হরহর'। |
অতিভক্তি চোরের লক্ষণ২ | খারাপ উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাধু সাজার চেষ্টা। |
অতি ভালো, ভালো নয় | সব বাড়াবাড়িই শেষপর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে; সমতুল্য- 'অল্প আগুনে গা গরম হয়; বেশি আগুনে ঘর পোড়ে'; 'সর্বম্ অত্যন্তম্ গর্হিতম্' ইত্যাদি। |
অতিভুক্তিরতীবোক্তিঃ সদ্য প্রাণাপহারিণী | অতিরিক্ত ভোজন ও বাচালত্য সদ্য প্রাণনাশক। |
অতিমন্থনে বাসুকীর বিষ | উৎসকাহিনী-ক্ষীরোদসাগর মন্থনে প্রথমে অমৃত ওঠে; কিন্তু অমৃত নিয়ে দেবাসুরে ঝগড়া শুরু হলে দ্বিতীয়বার সমুদ্রমন্থন করা হয়; এবার ওঠে বিষ; কোন ভালদ্রব্য নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলে দ্রব্যগুণ নষ্ট; অনেকসময় বারবার শোনা ভালকথাও মন্দ মনে হয়; সমতুল্য- 'লেবু চটকালে তেতো হয়'; পাঠান্তর- 'অতিমন্থনে বিষ উঠে'; 'অতিমন্থনে মিঠা তিতা'। |
অতিমেঘে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি | বেশি মেঘ জমলে বৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; আড়ম্বর বেশি হলে কাজ ভাল হয় না; সমতুল্য-'অতি গর্জনে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি'; 'অধিক গর্জনে অল্পবর্ষণ';'অনেক গর্জনে ফোঁটাবৃষ্টি' ইত্যাদি। |
অতিযত্নে মরণফাঁদ | বেশি যত্ন নিলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- শরীরের নাম মহাশয়; যা সহাইবে তাই সয়'। |
অতির কিছুই ভাল নয় | দান, দয়া, প্রেম, মান ইত্যাদি কোন গুণাবলীও মাত্রাতিরিক্ত হলে সেটা ভাল হয় না। |
অতিলোভে তাঁতি নষ্ট | বেশি লোভ করলে নিজেরই ক্ষতি হয়; সর্বস্ব খোয়ানোর আশঙ্কা থাকে; বেশি বাড়াবাড়ি ভাল নয়; (উৎসকাহিনী- এক রাজার এক গরু ছিল; একদিন দুধ দিতে দুরন্তপনা করায় রাজা বলেন, 'কাল সকালে উঠে যার মুখ দেখব তাকেই গরু দিয়ে দেব'; পথ চলতি এক তাঁতী কথাটা শুনতে পায়; লোভী তাঁতী ঘরে ফিরে সারাদিন ধরে ঘরে যত সূতা ছিল তা দিয়ে দড়ি বানিয়ে পরের দিন সকালবেলা রাজদরবার উপস্থিত হয়ে রাজাকে গরুটি দিতে বলে; ক্রোধে রাজা দ্বারী দিয়ে তাকে পিটিয়ে বিদায় করেন; তাঁতীর গরুতো পাওয়া হল না পরন্তু বেজায় মার খেল এবং সম্বল সব সূতা হারাল); সমতুল্য- 'অতি আশ সর্বনাশ';'অতি আশায় মরে চাষা'; 'খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে গরু কিনে' ইত্যাদি। |
অতি লোভো ন কর্তব্যঃ, লব্ধং নৈব পরিত্যজেৎ | বেশী লোভ করতে নেই; আবার পাওয়া জিনিসও ছাড়তে নেই। |
অতিশয় ভালো নয় বুদ্ধি হলেই পড়তে হয় | বেশি বুদ্ধি হলে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'অতি চালাকের গলায় দড়ি'। |
অতি সাধ অতি বিষাদ | বেশি আশা পূর্ণ না হলে মনে বিষাদে ভরে যায়; ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া |
অতি সোদর হয় গালে তুলে দেয়, টিকলেতো/গিললেতো হয় | ভাই বলে কেউ যদি তোমার মুখে মিষ্টি তুলে দেয়, সেটা গিলতে না পারলে কোন লাভ নেই; ব্যবহার করতে না জানলে কোন বস্তু নিয়ে লাভ নেই। |
অতীত থেকে শিক্ষা নাও, ভবিষ্যতে ভুল হবে না | অতীতকে জানলেই ভবিষ্যৎ জানা যায়। |
অতীতকে শুধরানো যায় না | অতীতকালে ফিরে যাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'গতস্য শোচনা নাস্তি', 'যা গেছে তা গেছে' ইত্যাদি। |
অতুভুক্তিরতীবোক্তি সদ্যঃ তীব্র প্রাণাপহারিণী | অপরিমিত আহারে স্বাস্থ্যনাশ হয়। |
অতৃণে পতিত বহ্নিঃ স্বয়ামেবোপশাম্যতি | ঘাসহীনস্থানে আগুন পড়লে আপনাহতেই নিভে যায়। |
অত্তাস কুত্তা বত্তাস ভূঁকৈ | ভীতু কুকুর বাতাসের শব্দে ভয় পেয়ে ঘেউঘেউ করে;অনাবশ্যক ভয় পেয়ে ভীতু লোকেরা চিৎকার জুড়ে দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'। |
অত্যুচ্ছায়ঃ পতনায়ন্তে/পতনহেতুঃ | বেশি বাড়লে পতন অনিবার্য; অতিবাড় পতনের কারণ; সমতুল্য- 'অত দর্পে হত লঙ্কা'; 'সর্বমত্যন্তমগর্হিতম'; পাঠান্তর- 'অত্যুচ্চায়ঃ পতনায়'; 'অত্যুচ্চায়ো পতনহেতুঃ'। |
অদন্তের দাঁত হলো, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল | শিশুর দাঁত উঠলে কামড়ে পাগল করে দেয়; কোন নতুন দ্রব্য পেয়ে অত্যধিক ব্যবহার করলে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; সমতূল্য- 'অঘটির ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণটা গেল'। |
অদন্তের হাসি দেখতে ভালোবাসি | দন্তহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হাসি দেখে কৌতুকে এই প্রবাদটি বলা হয়। |
অদাতা বংশদোষেণ কর্মদোষাদ্ দরিদ্রতা, উন্মাদো মাতৃদোষেণ পিতৃদোষেণ মূর্খতা | বংশদোষে কৃপণ, কর্মদোষে দরিদ্র, মাতৃদোষে পাগল এবং পিতৃদোষে মূর্খ হয়। |
অদৃষ্টে করলা ভাতে, বীচি কচকচ করে তাতে; পড়ল বীচি বুড়োর পাতে | ভাগ্যে লেখা থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হবেই; দুখীর ভাগ্যে সুখ লেখা নেই। |
অদৃষ্টের কিল ভূতেও কিলোয় | অদৃষ্ট খারাপ হলোে নির্বিচারে সবাই ভোগায়; পাঠান্তর- 'অদৃষ্টের কিল পুতেও (ছেলে) কিলোয়'। |
অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল | কপালের লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না; কপালে যা লেখা আছে তা ঘটবেই; সমতুল্য- 'নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'; বিরুদ্ধ উক্তি- অদৃষ্টের ফের কাপুরুষের উক্তি; পাঠান্তর- 'অদৃষ্টের লিখন না যায় খণ্ডন'। |
অদ্য ভক্ষ্য ধনুর্গুণ১ | গল্পের শিয়ালের মত না ভেবে কাজ করা; অদূরদর্শিতার লক্ষণ; বিচারবিবেচনা না করে কাজ করলে বিপদ অনিবার্য। |
অদ্য ভক্ষ্যো ধনুর্গুণ২ | ঘরে অন্নাভাব; দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া; সমতুল্য- 'আজকের খেয়ে নেড়া নাচে'। |
অধনশ্চ/অধনেন ধনং প্রাপ্য তৃণবন্মন্যতে জগৎ | নির্ধনের ধন হলে সে সকলকে তৃণজ্ঞানে তুচ্ছ করে; অর্থের সামর্থ হলোে অহঙ্কারে অধমের মাটিতে পা পড়ে না। |
অধমা ধনমিচ্ছতি ধনং, মানং চ মধ্যমা, উত্তমা মানোমিচ্ছন্তি মানং মানো হি মহতাং ধনম | অধম ধন চায়, মধ্যম ধন ও মান চায়; উত্তম শুধু মান চায়। |
অধরেস্বমৃতং হি যোষিতাং হৃদি হলাহলমেব কেবলম | রমণীদের অধরে অমৃত কিন্তু হৃদয়ে বিষ থাকে। |
অধর্মবিষবৃক্ষস্য পচ্যতে স্বাদু কিং ফলম? | অধর্মরূপ বিষবৃক্ষে কী স্বাদু ফল ফলে? |
অধর্মের পথ বড়ই পিচ্ছিল | অধর্মের পথে চলতে গিয়ে একবার পড়লে সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন; নরকের দ্বার থেকে আর ফেরা যায় না। |
অধর্মের পথ বড়ই সরল | অধর্মের পথে চলতে কোন অনুশাসন, নিয়মশৃঙ্খলা মানার প্রশ্ন থাকে না; তাই মানুষ মনোরম মন্দপথেই চলতে পছন্দ করে; সমতুল্য- 'নরকের দ্বার খোলা'। |
অধিক খেতে করে আশা, তার নাম বুদ্ধিনাশা | বেশি খাওয়া স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর; পেটুক না হলে কেউ বেশি খায় না। |
অধিক দিন থাকলে গাজন কে করত শিবের ভজন? | আধিক্যে সোনার মূল্যও হ্রাস পায়। |
অধিকগর্জনে অল্পবর্ষণ | আড়ম্বর অনুসারে কার্য হয় না; যে বেশি বকে, সে কাজে বেশিদূর এগোয় না; সমতুল্য- 'অতিমেঘে অনা/ফোঁটা বৃষ্টি';'অনেকগর্জনে ফোঁটা বৃষ্টি';'ঘেউঘেউ করা কুত্তা কদাচিৎ কামড়ায়'; ইত্যাদি। |
অধিক/অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট | এক কাজে অনেক লোক জুটে গেলে মতভেদের কারণে কাজ পণ্ড হয় সমতুল্য-'অনেক রাঁধুনীতে ব্যঞ্জন নষ্ট'; 'এক হেঁসেলে দুই রাঁধুনি, পুড়ে গেল তার ফেনগালুনি';'ঘরের মধ্যে ঘর, সবাই মাতব্বর';'ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর';'দশ পাগলের ঘর, খোদায় রক্ষা কর';'সাত সতীনের ঘর খোদায় রক্ষা কর' ইত্যাদি। বিরুদ্ধ উক্তি- 'দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ'। |
অধিকন্তু ন দোষায় | প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে ক্ষতি নেই, তবে যদি সেটা সৎকার্য হয়; বরং কম হলেই দোষের হয়; বিরুদ্ধ উক্তি-'অতি ভাল ভাল নয়';'সর্বম্ অত্যন্তম্ গর্হিতম্'ইত্যাদি। |
অধিকার দায়িত্ব আরোপ করে | সমাজে অগ্রগণ্য ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালনের উদারতা আশা করা হয়। |
অধিগুণে মোঘা যাচ্ঞা (অপি) বরম অধমে লম্বকামা | গুণবানের কাছে বিফল প্রার্থনা, সেও ভালো, কিন্তু অধম ব্যক্তির কাছে সফল প্রার্থনা ভালো নয়; তুলনীয়- 'বরং রামান্ন রাবণাৎ'; 'বরঞ্চ পণ্ডিতঃ শত্ৰ ন চ মূর্থেণ মিত্রত'। |
অধ্যয়নং তপঃ | অধ্যয়ন তপস্যার সমান। |
অনটনের তিনগুণ ব্য়য | একাধিকদ্রব্য একসাথে কিনলে বা একটা দ্রব্য বেশি পরিমাণ কিনলে দামে সস্তা হয়; কিন্তু অর্থের টানাটানিতে একটা একটা করে একটু একটু করে একাধিকবার কিনলে ব্যয় তিনগুণ হয়। |
অনটনের সংসারে দুনো ব্যয় | অভাবগ্রস্তের সংসার খরচ নানাকারণে দ্বিগুন হয়ে যায়। |
অনন্ত শাস্ত্রং বহুবেদিতব্যম | শাস্ত্রের শেষ নেই; বহু বিষয় জানার আছে। |
অনাথো দেবরক্ষকঃ | অসহায়ের সহায় স্বয়ং ভগবান; তুলনীয়- 'অজগরের দাতা রাম'। |
অনায়কা বিনশ্যন্তি, নশ্যন্তি শিশুনায়কাঃ, স্ত্রীনায়কা বিনশ্যন্তি, নশ্যন্তি বহুনায়কাঃ। | পরিচালিকহীন, শিশু, নারী ও বহুজনদ্বারা পরিচালিত জন বিনাশপ্রাপ্ত হয়; তুলনীয়- 'অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট'। |
অনবসরে যাচিতমিতি সৎপাত্রমপি কুপ্যতে দাতা | সৎপাত্রও অসময়ে যাচ্ঞা করলে দাতা কুপিত হন। |
অনভ্যস্তা বিষং বিদ্যা বৃদ্ধস্য তরুণী বিষম, আরোগে তু বিষং বৈদ্যা অজীর্ণে ভোজনং বিষম | অনভ্যস্ত বিদ্যা বিষের সমান; যুবতীনারী বৃদ্ধের কাছে বিষের সমান; নীরোগব্যক্তির পক্ষে বৈদ্য বিষের সমান; হজমের আগে পুনরায় ভোজন বিষের সমান। |
অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে | অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে প্রথমে একটু কষ্ট হয় বা একটু অস্বস্তিবোধ হয়; অনভ্যস্ত কাজ কাউকে দিলে তার কষ্ট হয়। |
অনাথো দৈবরক্ষক | অনাথের রক্ষক স্বয়ং ভগবান; ভগবানে বিশ্বাস করেই সে বেঁচে থাকে; একমাত্র বিশ্বাসই তার বেঁচে থাকার রসদ; হরি হে দীনবন্ধু; বিরুদ্ধ উক্তি-'অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়';'অভাগার যমও নাই'; পাঠান্তর- 'অনাথের দৈব সখা'। |
অনাগত বিধাতা চ প্রত্যুন্মতিসস্তথা, দ্বাধেতি সুখমেষেতে যদ্ভবিষ্যো বিনাশ্যতি | যে অনাগত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে প্রত্যুৎপন্নন্মতিত্বের পরিচয় দেয় সে সুখী হয়; যে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকে সে বিনাশপ্রাপ্ত হয়। |
অনাবৃষ্টে রাজ্য মজে, পাপে মজে ধর্ম; কোটালে গৃহস্থ মজে, আলস্যে মজে কর্ম। | বৃষ্টি না হলে দেশের ক্ষতি; পাপে ধর্ম বিপদগ্রস্ত; নদীর বাড়ে লোকালয় বিপদগ্রস্ত; অলসতায় কর্ম নষ্ট। |
অনাহ্বানের নিমন্ত্রণ, না আঁচালে বিশ্বাস নেই | উপযাচকের ইচ্ছা অনেকসময় পূর্ণ হয় না; যেকোন কাজেই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তার আশঙ্কা থাকে; সম্পর্কীত প্তবাদ- 'কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে অনেক ফাঁক আছে'। |
অনিচ্ছুক গাধা/ঘোড়াকে জল খাওয়ানো যায় না | অনিচ্ছুক হলে কারো কাছ থেকে কাজ আদায় করা অসম্ভব। |
অনিশ্চিতের আশায় নিশ্চিত ত্যাগ করো না | সম্ভব ছেড়ে অসম্ভবের পিছনে ছূটো না; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটো পাখির সমান'। |
অনিষ্ট হতে ইষ্ট লাভ | মন্দঘটনা থেকে ভাল ঘটনার উৎপত্তি; সমতুল্য- 'অহিতে বিপরীত'; 'শাপে বর'; বিরুদ্ধ উক্তি- হিতে বিপরীত'। |
অনুপস্থিতি হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে | দুরত্ব প্রেমিক প্রেমিকার আকর্ষণ তীব্র করে; কালিদাস তাঁর মেঘদূত কাব্যে তা ছত্রেছত্রে বর্ণনা করে গেছেন। বিরুদ্ধ উক্তি- 'চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল'। |
অনুরাগ বিনে গৌর আসবে কেনে? | প্রীতি ও প্রেমের পূণ্যবাঁধনে স্বর্গ রচিত হয়। |
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা | অনুরুদ্ধ হয়ে নিতান্ত বাধ্য হয়ে কোন কাজ সম্পাদন করা। |
অনুশীলনে পাথর ক্ষয় হয় | পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; সমতুল্য- পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; বিরুদ্ধ উক্তি- নুড়ি সহস্রবছর জলে থাকলেও রসসিক্ত হয় না'। |
অনুশীলনে মানুষ নিঁখুত/সম্পূর্ণ হয় | দক্ষতা অর্জনে ধারাবাহিক অনুশীলন একান্ত জরুরি; সমতুল্য- 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কোন মানুষ নিখুঁত/সম্পূর্ণ নয়'; চাঁদেরও খুঁত আছে'। |
অনেক কালের ছিল পাপ ছেলে হল সতীনের বাপ | সবই কর্মফল; পাপ করলে শাস্তি আছেই; পাপ বাপকেও ছাড়ে না; পাপের ফলভোগ কোন-না-কোনভাবে করতেই হয়; পাঠান্তর- 'অনেক কালের ছিল পাপ বড়ছেলে সতীনের বাপ'। |
অনেক খেলে অল্প খাবে; অল্প খেলে অনেক খাবে | সারাজীবনের আহার নির্দিষ্ট; প্রতিদিন বেশিবেশি খেলে অল্পদিনে তা ফুরিয়ে যাবে অর্থাৎ সল্পায়ু হবে; অপরপক্ষে অল্পঅল্প খেলে তা বেশিদিন ধরে খাবে অর্থাৎ দীর্ঘায়ু হবে; মিতাহারের পক্ষে সওয়াল; পাঠান্তর- 'অনেক খাবে তো অল্প খাও, অল্প খাবে তো অনেক খাও'। |
অনেক গর্জনে ফোঁটা বৃষ্টি | অকর্মারা বেশি হাঁকাহাঁকি করে; সমতুল্য- অতিমেঘে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি; 'যত গর্জে তত বর্ষে না'; 'বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া' ইত্যাদি। |
অনেক/অগাধ/গভীর জলের মাছ | সহজে ধরা দেয় না এমন সুচতুর ব্যক্তি; অবিচলিত চিত্ত গম্ভীর-স্বভাবযুক্ত ব্যক্তিসম্পর্কে প্রযোজ্য উক্তি |
অনেক দক্ষতা কোন দক্ষতা নয়- জাপানী প্রবাদ | বেশি কাজের লোক হলে কাজ হয় না; বেশি জানলে কিছুই জানা হয় না; অনেক কাজের কাজী কোন কাজের হয় না; সবজান্তারা সম্যক কিছু জানে না। |
অনেক যদি মাছ পায় বিড়াল কাঁটা বেছে খায় | প্রয়োজনের বেশি উপলব্ধ হলে নির্বাচনের প্রশ্ন আসে। |
অনেক রাঁধুনিতে ব্যঞ্জন নষ্ট | এক কাজে অনেক লোক জুটে গেলে মতভেদের কারণে সে কাজ পণ্ড হয়; পাঠান্তর- 'অনেক ফকিরে দরগা নষ্ট'; 'অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্'; 'অনেক মাতব্বরে বিচার নষ্ট'। |
অনেক সুখ যদি কপালে ছেঁড়া কাঁথা কেন বগলে | কপাল বলে কিছু নেই; মানুষ কর্মদোষে দুঃখ ভোগ করে। |
অনেক হল পাপ এবার ছাড়ো বাপ | সারাজীবনে ভোগবিলাস অনেক হয়েছে; এবার দিনান্তে এসে ওসব ছেড়ে ধর্মেকর্মে মন দাও। |
অন্তঃসারবিহিনানামুপদেশ ন বিদ্যতে | অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তিদের নানা উপদেশ দিলেও কোন ফললাভ হয় না; সমতুল্য- চন্দনগাছের সংসর্গে এলেও বাঁশ চন্দন হয় না; বিরুদ্ধ উক্তি- চন্দঙ্গআছের সংস্পর্শে এলে শেওড়াগাছও চন্দনগন্ধ পায়। |
অন্তরে এত খলতা, মুখে তোর অতি শীলতা | অতিভক্তি সন্দেহ জাগায়; অতিভক্তি চোরের লক্ষণ |
অন্ধ কয়বার নড়ি (লাঠি) হারায় | একবারও না; যার যেটা একমাত্র অবলম্বন সেই বিষয়ে সে খুব সতর্ক থাকে। |
অন্ধকার আছে বলেই আলোর কদর | বদগুণ ভালো নয় বলেই সদগুণের কদর; সমতুল্য- 'মেঘ আছে বলেই সুর্যের কদর'। |
অন্ধকার আলো দূর করে না, আলো অন্ধকার দূর করে | জ্ঞানের আলোতে মনের অন্ধকার দূর হয়। |
অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খোঁজা | নিস্ফল প্রচেষ্টা, যা হবার নয়; সমতুল্য-'খড়ের গাদায় সূচের খোঁজ'; পাঠান্তর- 'অন্ধকারে উকুন বাছা'। |
অন্ধকার রাত্রির পরেই ঊষার আগমন | কখনো নিরাশ হ’তে নেই; সুসময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয়; সমতুল্য- 'মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে'। |
অন্ধকারকে অভিশাপ দেওয়া থেকে একটি প্রদীপ জ্বালানো ভাল | কোন সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ না জানিয়ে সমস্যাটির সমাধানে সচেষ্ট হওয়া উচিত। |
অন্ধকারে ঢিল/ঢেলা ছোঁড়া/মারা | নিস্ফল/বৃথা প্রচেষ্টা; ফল কি হবে না জেনে আন্দাজে কাজ করা; সমতুল্য- 'এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে. বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে'; পাঠান্তর- 'অন্ধকারে লাউ কোটা'। |
অন্ধকারে সব বিড়ালকে ধূসর দেখায়১ | অস্পষ্ট বিষয়ে অনুমান করতে ভুল হয়। |
অন্ধকারে সব বিড়ালকে ধূসর দেখায়২ | বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের গুরুত্ব নেই; বাহ্যিক চেহারার নীচে সব মানুষ দেখতে একরকম। |
অন্ধকে দর্পণ দেখানো১ | নির্বোধকে নীতিজ্ঞান দেওয়া |
অন্ধকে দর্পণ দেখানো২ | নিস্ফল প্রচেষ্টা |
অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ- রবীন্দ্রনাথ | সকলের মনের অন্ধকার দূর কর; অজ্ঞানকে জ্ঞানী কর; সমতুল্য- 'তমোসা মা জ্যোতির্গময়'। |
অন্ধ জাগো না কিবা রাত্রি কিবা দিন | যার কষ্টের সীমা-পরিসীমা নেই সে সব বিষয়েই নিস্পৃহ; সকল অবস্থাই যাদের কাছে সমান তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য; পাঠান্তর- 'অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন'। |
অন্ধস্য দীপো, বধিরস্য গীতং, মুর্খস্য শাস্ত্রং কিমু সানুরাগং | যার যে ইন্দ্রীয় নেই তার সেই ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য বিষয় লাভের চেষ্টা বৃথা। |
অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত | জগৎ চলে তার নিজের নিয়মে, ব্যক্তি সেখানে নিমিত্তমাত্র; পাঠান্তর- 'চক্ষু বুজলেই প্রলয় বন্ধ হয় না'। |
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন১ | যে দিন ও রাত্রির প্রভেদ বোঝে না তার কাছে দিন রাত্রি দুই সমান। |
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন২ | যে অন্যের কাজের ফলভোগ করতে অক্ষম তার কাছে দিনরাত্রির কোন প্রভেদ নেই, দুই সমান। |
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন৩ | যে অভাগার কষ্টের সীমাপরিসীমা নেই তার কোনকিছুর বাছবিচার করা বাতুলতা; তুলনীয়- 'শালগ্রামশিলার শোয়া আর বসা'। |
অন্ধের দেশে কানা রাজা১ | অজ্ঞানদের মধ্যে একজন স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি বিরাট জ্ঞানী। |
অন্ধের দেশে কানা রাজা২ | দুইই সমান অপদার্থ |
অন্ধের দোকানে কালা খরিদ্দার | দুজনেই সমান অপদার্থ; সমতুল্য-'গুরু বোবা, শিষ্য কালা'; 'দাদা কানা, আমি দেখিনা'; 'হব/হবুচন্দ্র রাজাঢ় গব/গবুচন্দ্র মন্ত্রী' ইত্যাদি। |
অন্ধের নগরী চৌপট রাজা টাকা সের ভাজি টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ | যে রাজার শাসন কোন শাসন নয়; যে রাজ্যে শাসন ব্যবস্থায় কোন অনুশাসন নেই; এমন এক রাজ্য যেখানে মুড়িড়কির সমান দর; কোথাও চূড়ান্ত অপশাসন দেখা দিলে এই উক্তি করা হয়। |
অন্ধের নড়ি/যষ্ঠি | অন্ধ চোখে দেখে না তাই সে লাঠির ওপর-ই ভরসা করে চলে; লাঠিই তার একমাত্র অবলম্বন। |
অন্ধের নড়ি, কৃপণের কড়ি | কৃপণের কাছে কড়ি এবং অন্ধের কাছে লাঠি- উভয়ই মহামুল্যবান। |
অন্ধের নাম নয়নসুখ | গুণহীনকে গুণবান করার হাস্যকর প্রয়াস; সমতুল্য- 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন';'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'ঘুঁটেকুড়ানীর ছেলের নাম চন্দবিলাস' ইত্যাদি। |
অন্ধের বৌয়ের প্রসাধনের প্রয়োজন নেই | যখন কোন বিষয়ের বাইরের দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তখন এই উক্তি করা হয়। |
অন্ধের মত চলা১ | সতর্ক হয়ে চলা; পা ফেলার যায়গা পরীক্ষা না করে অন্ধ পা ফেলে না। |
অন্ধের মত চলা২ | অসতর্ক হয়ে চলা; কিছু-না-বুঝে কোন কাজ করা; না চলার পক্ষে ওকালতি; সম্পর্কীত প্রবাদ- চলৎ একেন পাদেন তিষ্টতি বুদ্ধিমান'। |
অন্ধের হস্তীদর্শন | পরিষ্কার ধারণা না নিয়ে শুধু অংশবিশেষ পর্যালোচনা করে কোন বিষয়সম্পর্কে সম্পুর্ণ মতামত ব্যক্ত করা ভুল। |
অন্ন আর অর্থবিনা কোন কাজ সঠিক হয় না | পেটে ভাত আর পকেটে টাকা না থাকলে কোন কাজ ঠিকমত হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- অন্নচিন্তা চমৎকারা কালিদাস বুদ্ধিহারা'। |
অন্নচিন্তা চমৎকারা কাতরে কবিতা কুতঃ | ঘরে অন্নের চিন্তা থাকলে কোন কাজই সফল হয় না; (উৎসকাহিনী- একদিন কালিদাস রাজসভার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন; এমন সময় গৃহিণী তাঁকে বলেন, 'ঘরে তণ্ডুল বাড়ন্ত; আসার সময় তণ্ডুল নিয়ে এসো'; কালিদাস ভাবতে ভাবতে রাজসভায় উপস্থিত হন; সেদিন রাজা বিক্রমাদিত্য কয়েকটি সমস্যা সমাধানের জন্য কালিদাসকে দেন; তিনি কিন্তু কোন সমস্যারই সমাধান করতে পারেন না; বিস্মিত রাজা কালিদাসক কারণ জিজ্ঞাসা কর'লে কালিদাস বলেন- ‘অন্নচিন্তা চমৎকারা, কাতরে কবিতা কুতঃ’।); পাঠান্তর- 'অন্নচিন্তা চমৎকারা কালিদাস বুদ্ধিহারা'; 'অন্নচিন্তা চমৎকারা ঘরে ভাত নাই জীয়ন্তে মরা'। |
অন্নজলের বরাত ওঠা১ | জীবনান্ত; পরমায়ু শেষ |
অন্নজলের বরাত ওঠা২ | জীবিকা অর্জনের উপায় শেষ |
অন্নজলের নাড়ী কোটা | শিশুর ভাতজল খাওয়ার তথা অন্নপ্রাসনের বয়স হওয়া। |
অন্নদাতা ভয়ত্রাতা যস্য কন্যা বিবাহিতা, জনয়িতোপনতা চ পঞ্চৈতে পিতরঃস্মৃতা | যিনি অন্ন দান করেন, যিনি ভয় থেকে রক্ষা করেন, যিনি কন্যা দান করেন (শ্বশুর), যিনি জন্মদান করেন, যিনি উপনয়ন দান করেন- এই পাঁচজন পিতার স্বীকৃতি পান। (পঞ্চপিতা কারা?) |
অন্নদানাৎ পরং দানং, ন ভূতং ন ভবিষ্যতি | অন্নদানের পর আর কোন দান নেই; পূর্বেও ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না। |
অন্ন দেখে দেবে ঘি, পাত্র দেখে দেবে ঝি | ভালো ভাতে ঘি দিলে ভাত সুস্বাদু হয়; সুপাত্রে দান করলে কন্যা সুখী হয়; সববিষয়ে ভেবেচিন্তে নির্বাচন করা উচিত; মহার্ঘবস্তুর অপব্যবহার করা অনুচিত। |
অন্ন নাই যার ঘরে, তার মানে কি বা করে | হাভাতের কোন মানসম্মান নেই। |
অন্নপূর্ণা যার ঘরে, সে কাঁদে অন্নের তরে | এমনই দুরদৃষ্ট যে চাষীর মুখে অন্ন জোটে না। |
অন্নপ্রাশনের ভাত উগরে ওঠা | বৃদ্ধবয়সে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করা। |
অন্নবল নেই, অগ্নিবল আছে | অভাগার অন্ন যোগাড় করার অর্থ নেই, কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা আছে। |
অন্নবিনা চর্ম গড়ি, তৈলবিনা গায়ে খড়ি | পেটে অন্ন না পড়লে শরীরে চাকচিক্য আসে না; অন্নাভাবে দূরবস্থা; পাঠান্তর- 'অন্নবিনা ছন্নছাড়া'। |
অন্নাদষ্টগুণং পিষ্ট পিষ্টাদষ্টগুণং পয়, পয়সোহষ্টগুণং মাংসং মাংসাদষ্টগুণং ঘৃতম্ | অন্নের তুলনায় পিষ্টক আটগুণ পুষ্টি দান করে; পিষ্টকের তুলনায় দুগ্ধ আটগুণ পুষ্টি দান করে; দুগ্ধের তুলনায় মাংস আটগুণ পুষ্টি দান করে; এবং মাংসের তুলনায় ঘৃত আটগুণ পুষ্টি দান করে। |
অন্নেন ধার্যতে সর্বং জগদেতচ্চরাচরং | সমগ্র চরাচর একমাত্র অন্নদ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। |
অন্নের জ্বালা বড় জ্বালা একদিনে লাগে তালা | পেটে ভাত না পড়লে জীবন ওষ্ঠাগত সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়; পাaঠান্তর- অন্নের বড় জ্বালারে ভাই অন্নের বড় জ্বালা, দুই হাঁটু ঠকঠক করে কর্ণে লাগে তালা। |
অন্যলোকে ভুরা (গুড়ের নিকৃষ্ট অংশ) দেয় ভাগ্যে আমি চিনি | সেয়ানা লোককে ঠকানো সহজ নয়। (ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কাব্যের হীরা মালিনীর উক্তি) |
অন্যলক্ষিতকার্যস্য যতঃ সিদ্ধিঃ ন জায়তে | যে কাজের কথা অন্যলোক আগেই জেনে ফেলে সে কাজে সাফল্য আসে না। |
অন্যায় করাটা কিছুই না, যদি না তুমি সেটা সর্বক্ষণ মনে রাখো- কনফুসিয়াস | অজ্ঞানে অন্যায় করলে সেটা ভুল; জ্ঞানতঃ অন্যায় করলে সেটা পাপ; পাপীই অন্যায় করার ইচ্ছা মনের মধ্যে পুষে রাখে। |
অন্যে পরে কা কথা | বিধাতার বিড়ম্বনায়- রামের বনবাস হয়েছিল; সীতা আগুনে পুড়েছিলেন; কৃষ্ণ অপঘাতে নারা যান; অন্যেরও তাই হবে- এর আর বেশি কথা কি। |
অন্যে যার গুণ গায় সে নির্গুণ হলেও গুণী; নিজের গুণগানে ইন্দ্রও ছোট হয় | গুণীলোক পরের গুণ গায়; নির্গুণ শুধু নিজের ঢাক পিটিয়ে ছোট হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয় লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়'। |
অন্যের যা খারাপ মনে কর নিজের মধ্যেও তা খারাপ মনে করতে শেখো | স্বভাবদোষে মানুষ নিজের দোষ দেখে না; এটা করতে পারলে সবার মঙ্গল হত। |
অন্যের মধ্যে কি দোষ আছে অন্বেষণ করো না বরং নিজের মধ্যে কি দোষ অন্বেষণ কর- কনফুসিয়াস | আগে নিজেকে সংশোধন করা উচিত। |
অপচয়ে লক্ষ্মীনাশ/লক্ষ্মী ছাড়ে | অপচয়ে অর্থসঙ্কট দেখা দেয়। |
অপদার্থ যেখান থেকে শুরু করে সেখানেই ফিরে আসে | অপদার্থের কাজের নীটফল শূন্য। |
অপচয়/অপব্যয় করো না, অভাবে পড়ো না | আয় বুঝে ব্যয় করলে অভাব হয় না; যে কোনদিন অপচয় করে নি সে প্রয়োজনের সময় সব পায়। |
অপব্যয়ে লক্ষ্মী ছাড়ে | অকারণে ব্যয় করলে কুবেরের সম্পত্তিও একদিন শেষ হয়; সমতুল্য-'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশিতে প্রদীপ ভাতি'। |
অপমানের পরাণ সম্মানকে ডরান | অতি বিনযী ও নম্রপ্রকৃতির মানুষ সম্মানকে অতি তুচ্ছ মনে করে। |
অপরং বা কিং ভবিষ্যতি | (যা যা ঘটার নয় তার সবই ঘটল); না জানি আর কি বা কপালে আছে; সমতুল্য- 'অদৃষ্টের লখন না যায় খণ্ডন'; |
অপরাধবোধের ফরিয়াদীর প্রয়োজন হয় না | অপরাধী অপরাধ স্বীকার করলে অভিযোগ জানানোর প্রয়োজন হয় না। |
অপরের মন্দ নিজের হিত, না করিও কদাচিৎ | এইপ্রকার চিন্তাভাবনা পাপবোধের জন্ম দেয়। |
অপাত্রঃ পাত্রতাং যাতি যত্রো পাত্রো ন বিদ্যতে, নিরস্ত পাদপদেশে এণ্ডোহপি দ্রূমায়তে | যেখানে গুণীব্যক্তি নাই সেখানে নির্গুণব্যক্তি পূজিত হয়; যেদেশে বৃক্ষ নাই সেদেশে এরণ্ডবৃক্ষও বৃক্ষের স্বীকৃতি পায়। |
অপেক্ষা কর প্রতিটি কুকুরের দিন আছে | সবার জীবনেরই সৌভাগ্য বা সাফল্যের একটা সময় থাকে; যখন কোন ব্যক্তি জীবনে সৌভাগ্য বা সাফল্যের দেখা পায় না তখন এই উক্তিটি করা হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অপেক্ষার সময় শেষ হয় না'। |
অপেক্ষার সময় শেষ হয় না | কিছু পাবার আশায় বসে থাকলে অনন্তকাল বসে থাকতে হবে; অপেক্ষায় কার্যসিদ্ধি হয় না; অপেক্ষা করায় রাবণ স্বর্গের সিঁড়ি বানাতে পারেন নি। |
অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না | অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে কেউ চায় না। |
অপ্রিয়স্য চ পথ্যস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ | হিতকর বাক্যের বক্তা ও শ্রোতা দুই দুর্লভ; এমন বাক্য কেউ বলতে বা শুনতে চায় না। |
অবরকে/অবুঝকে বুঝাব কত বুঝ নাহি মানে, ঢেঁকিকে বুঝাব কত নিত্য ধান ভানে-প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় | মুর্খকে সদুপদেশ দিতে নাই। |
অবংশো পতিতো রাজা মুর্খপুত্রশ্চ পণ্ডিতঃ, অধনস্য ধনং প্রাপ্য তৃণবন্মন্যতে জগৎ | অযোগ্যব্যক্তি যদি রাজপদ পায়, মূর্খের পুত্র যদি পণ্ডিত হয় এবং দরিদ্র যদি হঠাৎ বড়লোক হয় তবে তারা জগতকে তৃণের মত জ্ঞান করে। |
অবলা বোলে দড়, অফলা ফলে দড় | শারীরিক বল কম থাকায় অবলা মুখের বোলে তা পুষিয়ে নেয়; অবলার মুখ ছোটে বেশি; একবার বকতে শুরু করলে তাকে থামানো মুশকিল; যে গাছে ফল ধরে না সে গাছে একবার ধরলে প্রচুর পরিমাণে ফলে; পাঠান্তর- 'অবলার মুখই বল'; 'অফলা ফলে বেশি অবলা বলে বেশি'; 'আগাছার বাড় বেশি'। |
অবলানাং রোদনাং বলং | অবলাদের ক্রন্দনই বলস্বরূপ; কথায় বলে কেঁদে জেতা। |
অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতং কর্ম শুভাশুভম | শুভই হোক আর অশুভই হোক কৃতকর্মের ফল জীবকে ভুগতেই হবে। |
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা | সামর্থের বাইরে কখনো যেও না; সমতুল্য়- 'আয় বুঝে ব্যয় করা'; 'ওজন বুঝে চলা'; খাট ভাঙলে ভূমিশয্যা'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটা'; 'যখন যেমন তখন তেমন' ইত্যাদি। |
অবাক করলি ভবি/রাধা অম্বলে দিলি আদা | গৃহকর্মে অনিপুণ বউ কাজ থেকে অকাজ বেশি করে; যা করার নয় তাই করলে এই উক্তি করা হয়। |
অবাক্ কল্লে নাকের নথে, কাজ কি আমার কানবালাতে | নাকের নথেই রূপ খুলেছে তখন কানপাশার আর প্রয়োজন নেই; কুরূপার সাজসজ্জার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
অবাক কলির অবতার, ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার | অযোগ্যের হাতে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দেখে খেদ বিস্ময় বা বেদনাপ্রকাশ। |
অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যা চেদবান্ধবা, পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা | বিদ্যাহীনের জীবন শূন্য; বন্ধুহীনের সকলদিক শূন্য, পুত্রহীনের গৃহ শূন্য আর দরিদ্রের সকলই শূন্য। |
অবিবেকঃ পরমাস্পদম | বিবেকশূন্যতাই সব আপদের মূল। |
অবিমিশ্র সুখ হয় না | শুধু ভাল হয় না; ভালমন্দ মিশিয়ে থাকে; সমতুল্য- 'আলার পিছে কালা আছে', 'কলঙ্কবিনা চাঁদ নাই'; 'কাঁটাবিনা গোলাপ/পদ্ম হয় না'; 'প্রদীপের নীচে অন্ধকার' ইত্যাদি। |
অবিয়ন্তির ঠুনকোর (স্তন) ব্যথা | যে নারীর সন্তান হয় নি তার স্তনে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই; যা হবার নয় তা শুনলে লোকে এই প্রবাদ বলে। |
অবিশ্বস্তকে বিশ্বাস করবে না; বিশ্বস্ত বন্ধুকেও অতিরিক্ত বিশ্বাস করবে না | বিচার বিবেচনা না করে বিশ্বাস করা ভাল নয়; বিনা বিচারে কিছু মানা ঠিক নয়; বিরুদ্ধ উক্তি- অবিশ্বাস করে ঠকা থেকে বিশ্বাস করে ঠকা ভাল'; 'মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো মহাপাপ'। |
অবিশ্বাস করে ঠকা থেকে বিশ্বাস করে ঠকা অনেক ভাল | অবিশ্বাস করে ঠকলে একটি বিশ্বাসীলোককে হারাতে হয়; বিশ্বাসীলোক হাজারে একটা হয়; সুতরাং কোনভাবেই অবিশ্বাসকে মনে স্থান দেওয়া নেই। |
অবুঝে/অবোধারে বুঝাব কত বুঝ নাহি মানে; ঢেঁকিরে বুঝাব কত নিত্য ধান ভানে। | অজ্ঞানে সদু উপদেশ নিস্ফলা; যে কিছু বোঝে না তাকে অতিরিক্ত কিছু বোঝানো চেষ্টা বৃথা; ঢেঁকি ধানভানা ছাড়া অন্য কাজ জানে না; সমতুল্য- 'ভৈঁসকে আগে বীণ বাজাওয়ে ভৈঁশ ঠাঢ় পগুরায়'। |
অবোধারে মারে বোধায়, বোধারে মারে খোদায় | বোকাকে চালাক ঠকায়; চালাকলোক বিধাতার কাছে শাস্তি পায়। |
অবোধের খাটনি ভারি | বোকাকে বেশি খাটানো যায়; সমতুল্য-'গাধার পিঠে ভারী বোঝা'। |
অবোধের গোবধে আনন্দ | বোকারা দুস্কর্ম করে বেশি আনন্দ পায়; নির্বোধের পাপপূণ্য বোধ নেই। |
অবোধের সাত খুন মাপ | অজ্ঞানকৃত গুরুতর অপরাধও মার্জনীয়; পাগলের শাস্তি হয় না। |
অবোলা চলে বড় অফলা ফলে বড় | পথ চলতে চলতে যে কথা বলে না সে অনেকটা পথ যায়; যে গাছে ফল ধরে না সে গাছে একবার ফল ধরলে প্রচুর পরিমাণে ফলে। |
অব্রাহ্মণের দীর্ঘফোঁটা | অক্ষম বেশি ভান করে; সমতুল্য- 'ভণ্ড ব্রাহ্মণের ভড়ং বেশি'। |
অভদ্রা বর্ষাকাল হরিণী চাটে বাঘের গাল; শোনরে হরিণী তোরে কই সময়গুণে সবই সই | প্রচণ্ড বর্ষায় খাবারের অভাবে বাঘ মৃতপ্রায়; হরিণ এসে তার গাল চাটছে; বাঘ বলছে- ওরে হরিণ তুই আমার খাদ্য; এখন তুই এসে স্বচ্ছন্দে আমার গাল চাটছিস; মন্দভাগ্যে আমি তাই সহ্য করছি; মন্দসময়ে প্রবলব্যক্তি অসহায় হয়ে পড়লে দুর্বলব্যক্তিও তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে; সমতূল্য- 'হাতি কাদায় পড়লে চামচিকেতে লাথি মারে'। |
অভাগা চোর যে বাড়ী যায় হয় কুকুর ডাকে নয় রাত পোহায় | ভাগ্য অভাগাকে সবদিক থেকেই মারে। |
অভাগা যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে | যেখানেই যাও না কেন অদৃষ্টও তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাবে; সমতুল্য- 'অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়'; 'পোড়া কপাল জোড়া লাগে না'; 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'আম যাই বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে'। |
অভাগা যদ্যপি/যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়১ | ভাগ্য নিতান্ত মন্দ হলে অভাগা কোনোদিক থেকেই সাহায্য পায় না; বিত্তশালীরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। |
অভাগা যদ্যপি/যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়২ | অভাগা যাতেই হাত দেয় তাতেই ব্যর্থ হয়। |
অভাগার গরু মরে শকুনের ভাগ্য বাড়ে | একজনের ক্ষতি হলে অবশ্যই অন্য একজনের লাভ হয়; সমতুল্য- কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ'। |
অভাগার গরু মরে ভাগ্যবানের বউ/মাগ মরে | গরু মরলে মূলধনের ক্ষতি, সেই অর্থে মালিক অভাগা; বউ মরলে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে অর্থলাভ হয়, সেই অর্থে পুরুষ সৌভাগ্যবান। |
অভাগার যমও নেই | এমনই দুর্ভাগ্য যে মরে একটু শান্তি পাবে শে তারও উপায় নেই; যম তাকে সেই সুযোগ দেয় নাই; জীবনযন্ত্রণায় বিদ্ধস্ত ব্যক্তিমন চিরঘুমে শান্তি খোঁজে। |
অভাগার হারাবার কিছু নাই | যার কিছু নাই তার কিছু হারাবার ভয় নাই। |
অভাগীর লগনে চাঁদ নাই গগনে | অভাগীর ভাগ্যাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ থাকে না থাকে শুধু অমাবস্যার অন্ধকার। |
অভাগিনী দুয়ো, নেটি পেটি সুয়ো | কোন লোকের দুই স্ত্রী থাকলে সুয়ো স্বামী সোহাগিনী হয় এবং দুয়ো অভিমানী হয়ে পড়ে। |
অভাগিনীর দুটি পুত একটি দানা একটি ভূত | সৌভাগ্যবতীর পুত্র হয়; কিন্তু দুটো পুত্রই যদি বদ হয় তবে সে নারী অভাগিনী ছাড়া আর কিছু নয়। |
অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানলা দিয়ে পালায়- সেক্সপিয়র | অভাব মনের সব সুকুমার অনুভূতি নষ্ট করে। |
অভাবে স্বভাব নষ্ট | অভাব হলে অবস্থার চাপে ভালো মানুষও অসৎ হয়; সৎ থাকা খুবই কষ্টকর; সমতুল্য- 'স্বভাবে করে না অভাবে করে'। |
অভাবের সময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু | কঠিন সময়ে প্রকৃতবন্ধুর কাছ থেকে সৎ পরামর্শ পাওয়া যায়। |
অভাবে স্বভাব নষ্ট মুখ নষ্ট বরণে; ঝরায় ক্ষেত নষ্ট স্ত্রী নষ্ট মারণে। | অভাব মানুষকে নষ্ট করে; ব্রণ মুখের শ্রী নষ্ট করে; ঝড় চাষ নষ্ট করে এবং মারধোর করলে স্ত্রী নষ্ট হয়। |
অভিজ্ঞতা হল চিরুনীর মত, সব চুল পড়ে গেলে প্রকৃতি যা আমাদের দেয় | জীবনযন্ত্রণায় পোড় খেতে খেতে মানুষ অভিজ্ঞ হয়। |
অভিজ্ঞতায় মানুষ বিজ্ঞ হয় | অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া লোক সহজে বোকা হয় না। |
অভিমানে বলির পাতালে হল ঠাঁই | বড় দাতা বলে বলির অভিমান ছিল; তাই বামনরূপী নারায়ণ তাঁকে পাতালে ঠেলে পাঠান। |
অভেদাত্মা হরিহর | অভিন্নহৃদয়ের দুইবন্ধু; পুরাণে হরি এবং হর অভেদাত্মা বলে বর্ণিত। |
অভ্যাস অভ্যাস সারায় | বাজে অভ্যাস সারাতে হলে ভাল অভ্যাস করা চাই। |
অভ্যাস দড়ির মত আমরা প্রতিদিন দড়ি পাকাই এবং শেষপর্যন্ত সেটা ছিঁড়তে পারি না | অভ্যাস ছাড়া বড় কঠিন; বদ অভ্যাস হলে তো কথাই নেই; সমতুল্য- অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি |
অভ্যাস দোষ না ছাড়ে চোরে শূন্য ভিটায় মাটি খোঁড়ে | মানুষ অভ্যাসের দাস; অভ্যাস একক্সময় স্বভাবে দাঁড়ায়; কোন মানুষ অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে কোন বদকাজ করলে ব্যঙ্গ করে এই উক্তি করা হয়; সমতুল্য- 'কুকুরের আড়াই পাক'; 'বিড়ালের তিন পা' ইত্যাদি। |
অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি | অভ্যাস থেকেই মানুষের স্বভাব গড়ে ওঠে। |
অভ্যাস প্রথমে মাকড়সার জাল শেষে মোটা রশি | অভ্যাস শেষে প্রকৃতিতে পরিণত হয় যা ছাড়া কঠিন। |
অভ্যাসহীন বিদ্যা বিষতুল্য | অধিতবিদ্যার চর্চা না হলে তার ফল নেই। |
অভ্যাসে সয় অনভ্যাসে নয় | অনায়াসে কিছু হয় না; অভ্যাসেও আয়াস লাগে; সম্পর্কীত প্রবাদ- শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাইবে তাই সয়'। |
অভ্যুথানাং হি পতনায় | বৃদ্ধি হলে পতন হবে; বৃদ্ধি পতনের মূল কারণ; তুলনীয়- 'অতি বাড় ভাল নয়'। |
'অমানিশায় অন্ধকার ঘরে অনুপস্থিত অসিত অশ্বডিম্বের অন্বেষণ | নিস্ফল প্রচেষ্টা; যা হবার নয়; লক্ষনীয়- এটি একটি অসাধারণ অ-এর অনুপ্রাস; সমতুল্য- 'অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খোঁজা'। |
অমাবস্যায় আর পূর্ণিমায় যেবা ধরে হাল তার দুঃখ থাকে চিরকাল; তার বলদের হয় বাত, ঘরেতে না থাকে ভাত- খনা | অমাবস্যায় আর পূর্ণিমায় হাল ধরতে নেই; যে ধরে তার ঘরে চিরকাল দুঃখ বাঁধা থাকে; বাতে বলদ কাবু হয়; নানাকারণে তার চাষ নিস্ফল হয়; ঘরে অন্নাভাব দেখা দেয়। |
অমাবস্যার চাঁদ | অমাবস্যায় আকাশে চাঁদ ওঠে না, অদৃশ্য থাকে; দুতরাং- অসম্ভব ঘটনা; কোন অসম্ভব ঘটনা বর্ণনা করা হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
অমাবস্যার প্রদীপ টিপটিপ করে১ | ঘোর অন্ধকারে প্রদীপের টিমটিমে আলো যথেষ্ট নয়। |
অমাবস্যার প্রদীপ টিপটিপ করে২ | ঘোর বিপদে মৌখিক সান্ত্বনা যথেষ্ট নয়। |
অমৃত ও বিষ উভয়েরই আকর জিভ | জিভ থেকেই অমৃত উৎপন্ন হয়; বিষও উৎপন্ন। |
অমৃত না জানি কি পদার্থ খেয়ে দেখি না জল | না-ব্যবহার-করা দ্রব্য নিয়ে কতই-না ভ্রান্তধারণা থাকে; ব্যবহারে ধরা পড়ে যে এদের অনেকগুলিই অতি সাধারণ বস্তু; সমতুল্য- 'গঙ্গা গঙ্গা না জানি কত রঙ্গা চঙ্গা'। |
অমৃতং বালভাষিতম | শিশুর কথা বড়ই শ্রুতিমধুর; তাদের অসংযত কথাবার্তাও কারো বিরক্তি উদ্রেগ করে না। |
অমৃতং সুভাষিতম | সুবচন/সুভাষিত বচন অমৃতসমান। |
অমোঘাঃ পশ্চিমে মেঘাঃ | পশ্চিমদিকে মেঘ হলোে বৃষ্টি হবেই; শীতকালে পশ্চিমীঝঞ্ঝায় বৃষ্টিপাত হয়। |
অম্বল, কম্বল, ডম্বল তিন শীতের সম্বল | টক, কম্বল ও ব্য়াযাম তিন থাকলে শীত কাবু থাকে। |
অযথা বিপদের মধ্যে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নয় | বিপদ এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। |
অরগুণ নাই বরগুণ আছে | অন্তর্গুণ নেই বহির্গুণ আছে; কোন ভালগুণ নেই, শুধু মন্দগুণ আছে; দুঃখনাশের গুণ নেই, শুধু দুঃখবৃদ্ধির গুণ আছে; সমতুল্য- 'আরগুণ নাই ছারগুণ আছে'। |
অরণ্যে রোদন করা | নিস্ফল প্রার্থনা করা; বৃথা কান্নাকাটি করা; সমতুল্য- 'পাথরে মাথা ঠোকা'। |
অরণ্যে শৃগালঃ ধূর্তং পক্ষী ধূর্তং বায়সাঃ। নরানাং নাপিত ধূর্তং দেব ধূর্তং নারদা। (চাণক্য) | বনে শিয়াল ধূর্ত; পাখীদের মধ্যে কাক ধূর্ত; মানুষের মধ্যে নাপিত ধূর্ত এবং দেবতাদের মধ্যে নারদ ধূর্ত। |
অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম | রসের কথা শুধু রসিককেই বলা যায়; অরসিককে বলা অর্থহীন; নির্গুণের কাছে গুণের কোন কদর নেই; সমতুল্য- 'উলুবনে/বেনাবনে মুক্তা ছড়ানো'; 'ভৈঁসকে আগে বীণ বাজাওয়ে'। |
অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম শিরসি মা লিখ মা লিখ মা লিখ | কবি দুঃখ করে বলেছেন- হে বিধাতা তুমি আমার অদৃষ্টে অন্য যতপ্রকার দুঃখ আছে দাও কিন্তু অরসিকলোকের কাছে রসের নিবেদনরূপ দুঃখ আমার অদৃষ্টে লিখিও না, লিখিও না, লিখিও না। |
অরাঁধুনির হাতে পড়ে কই/রুই মাছ কাঁদে; না জানি রাঁধুনি আমার কেমন করে রাঁধে | রাঁধুনী ভাল না হলে কইমাছের ঝাল বা রুইমাছে কালিয়া বিস্বাদ হয়ে যায়; উত্তমবস্তু পেতে গেলে উপযুক্ত লোককে দায়িত্ব দিতে হবে। |
অরুচির অম্বল, শীতের কম্বল; বর্ষার ছাতি, ভটচায্যির পাঁতি (পুথি) | অরুচিতে অম্বল খুব কার্যকরী; শীতকালে কম্বল খুব প্রিয়; বর্ষাকালে ছাতা অবশ্য প্রয়োজনীয়; ব্রাহ্মণ/পণ্ডিতের ক্রিয়াকর্মে পুথি অপরিহার্য। |
অর্থং অনর্থং ভাবয় নিত্যং | সবসময় ভাবো অর্থই অনর্থের কারণ/মূল। |
অর্থ অর্থ আনে/টানে | অর্থই সবকিছুর উৎস; সমতুল্য- 'টাকা টাকা বল ভাই টাকার মত জিনিস নাই টাকাবিনে সংসারেতে সব যন্ত্রণা'; বিরুদ্ধ প্রবচন- 'অর্থই অনর্থের মূল'। |
অর্থ তোমার নয় আমার নয়, অর্থ প্রয়োজনের | সার্থক কাজে না লাগলে সে অর্থ থাকা না-থাকা সমান। |
অর্থ থাকলে অভাবের অভাব হয় | অভাবের অভিজ্ঞতা না থাকলে সম্পদের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বোঝা যায় না; অর্থশালীরা বোঝে না অভাবের প্রয়োজনীয়াতা কি। |
অর্থ নষ্ট কিছুই নষ্ট নয়; স্বাস্থা নষ্ট সামান্য নষ্ট; চরিত্র নষ্ট তো সব নষ্ট | চরিত্র হল মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ; চরিত্রের জোরে মানুষ সোজা দাঁড়ায়। |
অর্থ নিজেই শয়তানকে কিনতে পারে | অর্থের অপরিসীম শক্তি। |
অর্থবিনা জীবন বৃথা, অর্থসহ জীবন সুখের নয় | অর্থ থাকা বা না-থাকা উভয়ই সমান, উভয়ই দুঃখের কারণ হয়; সমতুল্য- 'অর্থই অনর্থের মূল'। |
অর্থ যার মামলা/শক্তি তার | অর্থ সব যায়গায় আধিপত্য বিস্তার করে। |
অর্থই অনর্থের মূল | অর্থের কারণে, অর্থের জন্য এবং অর্থদ্বারা যত গণ্ডগোল হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়; |
অর্থতুরাণাং ন গুরুঃ ন বন্ধুঃ | অর্থলোলুপ ব্যক্তির গুরু বা বন্ধু কেউ নেই। |
অর্থনাশং মনস্তাপং গৃহে দুশ্চরিতানি চ, বঞ্চনঞ্চাপমানঞ্চ মতিমান্ ন প্রকাশয়েৎ | ধনক্ষয়, মনঃকষ্ট, ঘরের দুরাচার, বঞ্চনা ও অপমানের কথা প্রাজ্ঞ অন্যের কাছে ব্যক্ত করে না। |
অর্থশালীর কাছে আইন আকাশের মত, অর্থহীনের কাছে আইন মাকড়সার জালের মত | বড়লোক আইনে জালে জড়ায় না; গরিবলোক আইনের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়। |
অর্থস্য পুরুষো দাসঃ, দাসস্ত্বর্থো ন কস্যচিৎ | অর্থ কারো দাস নয় বরং পুরুষই অর্থের দাস। |
অর্থে যে সমস্যার সমাধান হয় সেটা সমস্যা নয়, পণ্যমুল্য | সমস্যার কেনাবেচা হয় না। |
অর্থেন সর্বে বশাঃ | অর্থদ্বারা সকলকেই বশ করা যায়। |
অর্থের অপ্রতুলতার জন্য সবাই অভিযোগ করে, বুদ্ধির অপ্রতুলতার জন্য কেউ অভিযোগ করে না | সবাই ভাবে সে বেশি বুদ্ধি ধরে; সুতরাং অভিযোগ জানানোর কোন প্রশ্নই নেই। |
অর্ধসত্য মিথ্যা অপেক্ষা ভয়ঙ্কর | আলো-আঁধারে ধাঁধা বেশি হয়। |
অর্ধেক বললে গাধাও বোঝে, সব বললে কে না বোঝে? | সবাই বুঝনদার; কিছু বোঝে না- এমন কেউ নেই। |
অর্ধো ঘটো ঘোষোমুপৈতি নুনম | কলস আধা-পূর্ণ হলেই শব্দ করে; অল্পবিদ্যানেরা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সমতুল্য- 'উনা কলসীর দুনা শব্দ'। |
অলকার তিলক সার | অলকা-তিলকা বৃথাই গেল কাজে এলো না। |
অলক্ষ্মীর দ্বিগুণ ক্ষুধা | অলক্ষ্মীর একটাই কাজ- পড়েপড়ে শুধু খাওয়া; অন্নহীনের খিদে প্রবল হয়। |
অলক্ষ্মীর নিদ্রা বেশি কাঙালের ক্ষুধা বেশি | অলক্ষ্মীরা শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়; কাঙাল শুধু খাই খাই করে। |
অলভ্যের বাণিজ্যে কচকচিই সার | যে কাজে লাভ নেই সেখানে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে । |
অলমতিবিস্তরেণ | আর বেশি বলার বা লেখার কিছু নেই; বাহুল্যে প্রয়োজন নেই; পাঠান্তর- 'অলম অতি বিস্তরেণ'। |
অলমিতিবিস্তরেণ | অধিক কি লিখিব; এখানেই লেখা শেষ করছি; পাঠান্তর- 'অলম ইতি বিস্তরেণ'। |
অলস ভেড়া ভাবে তার পশম বড় ভারী | অলস একটু ভারও বইতে নারাজ; অলসের ফিরে শুতেও কষ্ট হয়। |
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা | কিছু করার না থাকলে অকাজ করার চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরঘুর করে, যত উদ্ভটরকমের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অলসতা মনে জং ধরায়'। |
অলসতা দারিদ্র ডেকে আনে | কাজ না করায় অন্ন জোটে না; কষ্ট ছাড়া কেষ্ট নাই। |
অলসতা মনে জং ধরায় | চিন্তাভাবনা করার ইচ্ছা মনে জাগে না। |
অলসস্য কুতো বিদ্যা, অবিদ্যাস্য কুতো ধনম্, অধনস্য কুতো মিত্রম্, অমিত্রস্য কুতো সুখম্ | অলসের বিদ্যা কোথায়; অবিদ্যার ধন কোথায়; নির্ধনের বান্ধব কোথায় এবং নির্বান্ধবের সুখ কোথায়? |
অলসব্যক্তি বাকপটুতায় নিরলস | অলসব্যক্তি বকে বেশি। |
অলসের অন্ন জোটে না | অলসের ভাগ্য অলসের মতই শুয়ে থাকে। |
অলসের অলব্ধ-লাভ হয় না | অলসের প্রাপ্তি শূন্য |
অল্প আগুনে গা গরম হয়; বেশি আগুনে ঘর পোড়ে | সব বিষয়ে মাত্রাজ্ঞান থাকা দরকার; সম্পর্কীত প্রবাদ- ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম্'; পাঠান্তর- 'অল্প আগুনে শীত হরে, বেশি আগুন পুড়িয়ে মারে'। |
অল্পকথাতেই জ্ঞানীরা বোঝে | জ্ঞানীরা সারসংক্ষেপ পছন্দ করে। |
অল্প খেলে বেশি খাবে, বেশি খেলে অল্প খাবে | অল্প খেলে আয়ু বেশি দিন হয় ফলে বেশি দিন ধরে খাওয়া যায়। |
অল্পগর্জনে অতিবৃষ্টি/ভারীবর্ষণ | কাজের লোকেরা কম কথা বলে; বাজে লোকের বেশি কথা বলে। |
অল্পজলে সফরি ফরফরায়তে | অল্পবিদ্যার অধিকারীরাই বেশি বিদ্যা জাহির করে; অল্পজ্ঞানীরা অহঙ্কারী হয়। |
অল্পজলে পুঁটিমাছ ফরফর করে; অগাধজলে কাৎলামাছ নিঃশব্দে সরে | অল্পজ্ঞানীদের অহঙ্কার বেশি হয় এবং সেই অহঙ্কারে কথাবার্তায় জাহির করে; জ্ঞানীরা নিঃশব্দে কাজ সারে। |
অল্পজলের মাছ১ | অসারব্যক্তি |
অল্পজলের মাছ২ | চঞ্চলপ্রকৃতির লোক |
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী | সামান্য বিদ্যা খুব ক্ষতিকর কারণ এতে অহংকার জন্মে অথচ প্রকৃত পাণ্ডিত্য লাভ হয় না; অল্প লেখাপড়া জানা ব্যক্তিরা অতিদর্প দেখায়; এরা যেখানেই হাত দেয় সেখানেই অনর্থ বাঁধায়। |
অল্পবৃষ্টিতে কাদা বেশিবৃষ্টিতে সাদা১ | অল্পজ্ঞানীর ভাবনাচিন্তা অসচ্ছ হয়; জ্ঞানীপুরুষের ভাবনাচিন্তা সচ্ছ হয়। |
অল্পবৃষ্টিতে কাদা বেশিবৃষ্টিতে সাদা২ | অল্পকান্নায় শোক বৃদ্ধি পায়, কিন্তু টানাকান্নায় শোকের অনেকটা লাঘব হয়। |
অল্পশোকে কাতর অধিকশোকে পাথর | অল্পশোকে মানুষ হা-হুতাশ করে, কিন্তু বেশি শোকে শোক প্রকাশের পথ না পেয়ে দুঃখী মূক, নিথর বা নিঃসাড় হয়ে যায়। |
অশক্তস্তস্করঃ সাধুঃ কুরূপা চ পতিব্রতা | চুরি করতে অক্ষম হলে চোর সাধু হয়; নারী কুরূপা হলে পতিব্রতা হয়; এককথায় নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'কারে পড়ে গঙ্গাস্নান'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম' ইত্যাদি। |
অশুভস্য কালহরনম | অশুভ কাজে কালক্ষেপণ কর্তব্য। |
অশ্ন তে স হি কল্যাণং ব্যসনে যো ন মুহ্যতি | যে ব্যক্তি বিপদে মুহ্যমান হয় না সে শ্রেয় প্রাপ্ত হয়। |
অশ্বডিম্ব | অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- আঁটকুড়ের ব্যাটা, আকাশকুসুম, এঁড়ে গরুর দুধ, কাঁঠালের আমসস্ত্ব, ঘোড়ার ডিম, পশ্চিমে সূর্যোদয়, ভস্মকীট, সোনার পাথরবাটি, সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি |
অশ্বতরী (গাধী) গর্ভ ধরে আপন মরণে | ধারণা করা হয় যে গর্ভবতী অশ্বতরী সন্তানপ্রসবের সময় যন্ত্রণায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়; এ যেন ইচ্ছা করে বিপজ্জনক কাজে অগ্রসর হওয়া; বিপজ্জনক কাজে অগ্রসর হলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। |
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ | অসত্যকে কৌশলে সত্যরূপে প্রকাশ করা; সত্যের আড়ালে মিথ্যা কথন; সব কথা না বলে কিছু কথা গোপন করা; মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের একবারমাত্র মিথ্যাভাষণের উল্লেখ আছে। |
অশ্বত্থের ছায়াই ছায়া, মায়ের মায়াই মায়া | অশ্বত্থগাছ বিরাট ও বিশাল; তার ছায়া সুশীতল; আশ্রয় নিতে হলে অশ্বত্থগাছে মত মহতের কাছে নিতে হয়; মায়ের স্নেহ ও মমতারও কোন তুলনা হয় না; আসলের কাছেই আসল জিনিস পাওয়া যায়। |
অসংভাব্যং ন বক্তব্যং প্রত্যক্ষমপি দৃশ্যতে | অসম্ভব ঘটনা স্বচক্ষে ঘটতে দেখলেও বলা উচিত নয়। |
অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা অনেক ভালো | কোন মন্দই ভালো নয়। |
অসৎ কাজের অসৎ পরিণতি হয় | অশুভকাজের ফল শুভ হয় না; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'; পাঠান্তর- 'অসৎকাজের বিপরীতফল'। |
অসৎপথের আয় অসৎপথেই যায় | অসৎপথের আয়ের সঠিক ভোগ হয় না; সমতুল্য- 'উৎপাতের আয় চিৎপাতে যায়'; 'পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায়' ইত্যাদি। |
অসৎ সঙ্গ থেকে নিঃসঙ্গতা ভাল | দুর্জনের সংসর্গ কাম্য নয়; সমতুল্য- 'দুষ্ট গরু থেকে শূন্য গোয়াল ভাল'; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভালো'। |
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ; সৎসঙ্গে স্বর্গবাস | সঙ্গদোষে মানুষ নষ্ট হয়; সঙ্গগুণে সম্মান বৃদ্ধি পায়। |
অসতী নারী, ফুটো হাঁড়ি ও ভগ্নপ্রায় বাড়ী পরিত্যজ্য | তিনই বিপদ ডেকে আনতে পারে। |
অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মা অমৃতং গময় | আমাকে নিয়ে চলো অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে অমৃতে। |
অসত্য ও ছলনার মাধ্যমে লাভবান হওয়া থেকে সত্য ও সঠিক পথে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভাল | অসৎপথে লাভবান হওয়া ন্যায়ের পথ নয়। |
অসন্তুষ্টা দ্বিজা নষ্টা | দ্বিজ অসন্তুষ্ট হলে বিনষ্ট হয়। |
অসময়ের দিনগুলি দীর্ঘতর হয় | অসময়ের দিনগুলি কাটতেই চায় না। |
অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু | প্রয়োজন বন্ধুত্ব বিচারের কষ্টিপাথর; প্রয়োজন না হওয়া পর্যন্ত বন্ধু চেনা যায় না। |
অসময়ে সকলি সই, শোনরে দুঃখ তোরে কই | দুর্ভাগ্যের সব ফের গা-সহা হয়ে গেছে। |
অসম্ভব কোন কাজ বলা সহজ করা কঠিন | বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা বলা সহজ, করা কঠিন। |
অসম্ভবের পিছনে ছোটো না | যা হয় না তা পাওয়ার চেষ্ঠা করা বৃথা। |
অসম্মানীয় ব্যক্তি অপরকে অসম্মান করে | যার সম্মানবোধ নেই সে কাউকে সম্মান করতে জানে না |
অসহ্যং জ্ঞাতিদুর্ব্বাক্যং মেঘান্তরিত রৌদ্রবৎ | জ্ঞাতিজনের দুর্বাক্য মেঘমুক্ত আকাশের রৌদ্রতাপের মতই অসহ্য। |
অসাধারণ জ্ঞানীরা অবোধ বলে প্রতিভাত হয় | অতিজ্ঞানীদের কাণ্ডজ্ঞান কম হয়; ধরণধারণ একটু বিপরীত হয়। |
অসারে খলু সংসারে সারমেতচ্চতুষ্টয়ম। কাশ্যাংবাসঃ সতাং সঙ্গো গঙ্গাম্ভ শিবপূজনম।। | অসার এই সংসারে মাত্র চারটি সার বস্তু আছে, যথা- কাশীবাস, সাধুজনের সঙ্গলাভ, গঙ্গাজল ও শিবপূজা। |
অসারে খলু সংসারে সারং শ্বশুরমন্দিরম্ | অসার সংসারে সার শ্বশুরের ঘর; কৌতুকে- জামাই আদরের কথা বলা হয়েছে। |
অসারে জলসার১ | সার না থাকলে জলই সারের কাজ করে। |
অসারে জলসার২ | যখন আর কোন আশা নেই তখন কোন উপায় অবলম্বন করে কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা। |
অসারের তর্জন গর্জন সার১ | গুণহীন অক্ষম ব্যক্তিরা বৃথা আস্ফালন করে; 'গুণহীনের গুণহীন নয়' প্রমাণের বৃথা চেষ্টা; |
অসারের তর্জন গর্জন সার২ | ক্ষমতাহীন ব্যক্তি সাধারণতঃ আস্ফালন বেশী করে; আসলে অনেক ক্ষমতা ধরে বোঝানোর ব্যর্থ প্রয়াস; সমতুল্য- 'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি','ফোঁপরা ঢেঁকির চোপর বেশি' ইত্যাদি। |
অসি থেকে মসী বড় | পেশীর জোর থেকে বুদ্ধির জোর বেশি; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'কথার চেয়ে কাজের গলার জোর বেশি'। |
অসৈরণ সইতে নারি | অসহ্য ব্যাপার সহ্য হয় না। |
অস্তি নাস্তি না জানন্তি দেহি দেহি পুনঃপুনঃ | আছে কি নেই ভাবে না, কেবল বলে দাও দাও; প্রবাদটি অতিথি শিশু ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
অস্থানে তুলসী অপাত্রে রূপসী | উৎকৃষ্ট বিষয়ের অপব্যবহার; অপবিত্র জায়গায় তুলসীগাছ মানানসই নয়; তেমনি কোন সুন্দরী নারীর অযোগ্য/অসুন্দর বরের সাথে বিয়ে হলে তা মানানসই হয় না; সমতুল্য- 'বানরের গলায় মুক্তোর মালা'। |
অস্থির চিত্ত প্রতিষ্ঠা পায় না | অশান্ত মনে কার্যসিদ্ধি হয় না। |
অস্থির পতঙ্গ আগুনে পোড়ে | অস্থিরচিত্তের প্রতিষ্ঠা নেই; অস্থির মন নানাদিক থেকে বিপদে পড়ে; পাঠান্তর- 'অস্থির পোকা জালে পড়ে'; 'অস্থির বাঘ জালে পড়ে'। |
অস্থির মধ্যে যা পুষ্ট তা মাংস ভেদ করে বাইরে আসে না | সযত্নে লালিত বিষয় নষ্ট হয় না। |
অহংকারীরা অল্পজ্ঞানী হয় | অল্পজ্ঞানীরা বিনয় কি বস্তু জানে না। |
অহংকারে গদগদ, মাটিতে পড়ে না পদ | অহংকারীরা সাধারণ মানুষকে মানুষ বলে গ্রাহ্য করে না। |
অহংকার পতনের মূল | অহঙ্কারে পতন অনিবার্য; পাঠান্তর- 'অহঙ্কার পতন ডেকে আনে'; 'অহঙ্কারে ছারখার'। |
অহংকারে পথ দেখতে পায় না | অহংকারীর বিচারশক্তি থাকে না; গর্বী মানুষ মাথা উঁচু করে হাঁটে; নীচের দিকে পথ চেয়ে চলে না; ফলে সে পথ দেখতে পায় না। |
অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম, শেষা স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃপরম | প্রতিদিন মানুষ যমালয়ে যাচ্ছে দেখেও অবশিষ্টরা ভাবে তাদের মৃত্যু হবে না; এর থেকে আশ্চর্যের আর কি হতে পারে? |
অহিংসা পরমো ধর্মঃ | দয়াই শ্রেষ্ঠ ধর্ম; কারো হিংসা না করা বা অনিষ্ট না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। |
অহিতে বিপরীত | খারাপ হতে গিয়ে ভাল হয়ে যাওয়া; দুর্ভাগ্য অনেক স্থলে সৌভাগ্যের কারণ হয; সমতুল্য- 'শাপে বর'; বিপরীত উক্তি- 'হিতে বিপরীত'। |
আ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
আইতেও একা যাইতেও একা কার সঙ্গে বা কার দেখা | কেউ কারো নয়; কেউ কারো সঙ্গে আসে না এবং কাউকেও সঙ্গে নিয়েও যায় না। |
আইতে ছাগল যাইতে পাগল | দেরী সয় না; বড় তড়বড়ে। |
আইতে শাল যাইতে শাল তার নাম বরিশাল | বরিশালের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে গেলে শালতি ছাড়া সম্ভব নয়। |
আইন বিত্তশালীর কাছে আকাশের মত বিত্তহীনের কাছে মাকড়সার জালের মত | আইন বড়লোকদের রক্ষা করে এবং গরিবদের সংহার করে। |
আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো | আইনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকা। |
আইবুড়ো নাম খণ্ডানো/ঘুচানো | বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও বিবাহিত/বিবাহিতা না হওয়ার কালিমা ঘুচানো |
আউশধানের চাষ লাগে তিনমাস- খনা | রোপণের তিনমাসের মধ্যে আউশধান ঘরে তোলা হয়। |
আওয়াজওয়ালা বিড়াল ইঁদুর ধরে না | ধীরস্থির না হলে কাজে সাফল্য আসে না; সমতুল্য- 'চিল্লানে কুত্তা কামড়ায় না'। |
আওলে (অস্থির) বাঘ জালে পড়ে | অস্থির মন সমস্যায় জড়ায়। |
আঁখ কে অন্ধে গাঁট কে পুরে | মুর্খ ধনবান, টাকার বেলায় টনটনে জ্ঞান। |
আঁখ কে অন্ধে নাম নয়নসুখ | গুণহীনকে গুণবান করার হাস্যকর প্রয়াস; সমতুল্য- 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন';'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'ইত্যাদি। |
আঁচ আছে আগুন নাই | শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। |
আঁটকুড়ের ব্যাটা/পুত | নিঃসন্তানের সন্তান অসম্ভব ব্যাপার; থাকলে নিশ্চয়ই সে অবৈধ সন্তান- ভাবার্থে জারজসন্তান বলে গালি |
আঁটকুড়েরা মানুষ নয় | নিঃসন্তানের বাৎসল্যবোধ থাকে না। |
আঁটাআঁটি হলেই লাঠালাঠি হয় | মন কষাকষি হলেই ঝগড়াঝাটিতে পরিণত হয়। |
আঁটি চোষা | পদার্থের সার অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়া; অসার কাজে ব্যস্ত থাকা। |
আঁটুনিকসুনি সার | কেবল সরগরম করা; কাজের কিছুই নয়। |
আঁত পাওয়া ভার | মনের অন্ত পাওয়া ভার; মনোভাব বোঝা কঠিন। |
আঁতে ঘা দেওয়া | অন্তরে আঘাত দেওয়া; মর্মপীড়া দেওয়া। |
আঁতর টান | নাড়ির টান; রক্তের টান। |
আঁধার ঘরের মাণিক | পরম আদরের সন্তান। |
আঁস্তাকুড়ের পাত কখনো স্বর্গে যায় না১ | নীচ কখনও উচ্ভাচপদ প্সায় না। |
আঁস্তাকুড়ের পাত কখনো স্বর্গে যায় না১ | মন্দব্যক্তি ভালসঙ্গ পায় না। |
আকন্দে যদি মধু পাই তবে কেন পর্বতে যাই | সহজে কিছু পেলে কেউ কষ্ট স্বীকার করতে চায় না; সমতুল্য-'আমড়াতলায় আম পেলে, আমতলায় কেবা যায়'; 'হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই'। |
আকস্মিকপ্রাপ্তি কাকতালীয়, দৈবঘটনা নয় | অকারণে কিছু হয় না; বিধি পুরুষাকারের জন্য অপেক্ষা করে; বিরুদ্ধ প্রবচন-'কাশীধামে কাক মরেছে কালিঘাটে/কুমিল্লাতে হাহাকার |
আকাটা নায়ের সাজ বেশি | নৌকা তৈরী হওয়ার আগেই সাজসঞ্জাম প্রস্তুত; বেশি বাড়াবাড়ি; তুলনীয়- 'ডোলি না কাহার বিবি বৈঠা হায় তৈয়ার'; রামের আগে রামায়ণ; |
আকামের মাঝু কদু কুটনের যম। | অকর্মা বউ লাউ কুটতে খুব ওস্তাদ। |
আকালে কিনা খায় পাগলে কি না কয়/বলে | আকালে সবাই সবকিছু খায়, বাচবিচার করে না; পাগলেও না বুঝে বাচ্য অবাচ্য অনেক কথা বলে; অজ্ঞানের কথাবার্তা না ধরাই শ্রেয়। |
আকালে কিনা খায়, বিবাদে কিনা যায় | দুর্ভিক্ষে খাবারের বাছবিচার চলে না; ঝগড়াবিবাদে জড়ালে অর্থ, সুখ, শান্তি- সবই নষ্ট হয়। |
আকালের ভাতযুগের খোঁটা | অসময়ে কোন উপকার করে সারাজীবন ধরে তারজন্য কথা শোনানো হলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ/সীমা নাই | চাওয়ার কোন শেষ নেই; একটা মিটলে আরেকটা এসে উপস্থিত হয়। |
আকাশকুসুম কল্পনা | যে চিন্তা কোনদিন বাস্তবায়িত হবে না; অসম্ভব ব্যাপার যা হবার নয়; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; এঁড়েগরুর দুধ; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; ঘোড়ার ডিম; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি। |
আকাশপাতাল চিন্তা/ভাবনা | নানারকমের দুশ্চিন্তা। |
আকাশে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে১ | আত্মীয়স্বজনের নিন্দা করলে নিজেরই নিন্দা করা হয়; পাঠান্তর- 'আকাশে ধূলো ছোঁড়ে, আপনচোখে এসে পড়'। |
আকাশে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে | বোকার মত কাজ করলে নিজের ক্ষতি হয়। |
আকাশে ফাঁদ পেতে চাঁদ ধরতে চায় | দূরাশায় বসে থাকা; যা হয় না তার জন্য চেষ্টা করা; বৃথা চেষ্টা থেকে কোন ফললাভ হয় না; পাঠান্তর- 'আকাশে ফাঁদ পেতে বনের পাখি ধরতে চায়'। |
আকাশে যত ঝড় ওঠে গোয়ালে তত গরু ছোটে | পূর্ব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থেকে বিপদের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়। |
আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া | দুর্লভবস্তু হাতে পাওয়া। |
আকাশের নীচে কিছুই অসম্ভব নয় | বাস্তবঘটনা অনেকসময় কল্পনাকেও হার মানায়। |
আকৃতি থেকে প্রকৃতি/আচরণ ভালো১ | রূপ থেকে গুণের কদর বেশি। |
আকৃতি থেকে প্রকৃতি/আচরণ ভালো২ | সুন্দর কাজের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। |
আক্কেলে সকল বন্দী, জালে বন্দী মাছ; স্ত্রীর কাছে পুরুষ বন্দী ছালে বন্দী গাছ | কেউ স্বাধীন নয়; জন্মের পরমুহূর্ত থেকে সবাই কোথাও-না-কোথায় বন্দী অবস্থায় থাকে। |
আক্রমণই প্রতিরোধের প্রকৃষ্ট উপায় | সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পাওয়াঢ় সম্ভাবনা থাকে। |
আখ আর সর্ষে না পিষলে রস কিসে? | রস পেতে হলে রসেভরা জিনিস কচলাতে হয়; রসিকমনের কাছে না গেলে রসের খোঁজ পাওয়া যায় না; কষ্ট না করলে কেষ্ট নাই। |
আগ নাংলা যেদিকে যায় পাছ নাংলা সেদিকে যায় | চাষে লাঙলকে পিছনের লাঙলগুলি সারি বেঁধে অনুসরণ করে; অন্ধভাবে কারো কাজের অনুকরণ করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আগচ্ছতি/আজগাম যদা লক্ষ্মীর্নারিকেলফলাম্বুবৎ | নারকেলে জল কোথা থেকে আসে যেমন কেউ জানে না তেমনই লক্ষ্মী সবার অলক্ষেে আসেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নির্গচ্ছতি/নির্জগাম যদা লক্ষ্মীর্গজভুক্ত কপিত্থবৎ'। |
আগাছা ছাড়া বাগান হয় না | দোষেগুণে মানুষ; সংসারে ভালোমন্দ মিশিয়ে মানুষ আছে; সমতুল্য- 'অবিমিশ্র সুখ বা দুঃখ হয় না'। |
আগাছার বাড় বেশি | জগতে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর প্রাচুর্য বেশি হয়; বিনা পরিশ্রমে যেমন প্রয়োজনীয় বস্তু পাওয়া যায় না তেমনি বিনা পরিচর্যায় যোগ্যমানুষ হয় না; সমতুল্য- 'ধান একগুণ ঘাস শতগুণ'; 'অবলা বলে বেশি, অফলা ফলে বেশি'; 'ধানের আগে উড়ি ফুলে'; 'ঠগ বাচতে গাঁ উজাড়' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ প্রবচন- 'আগাছে ফল বেশী'। |
আগামীকাল কখনো আসে না | ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত; আজকের জন্য বাঁচো আগামীকাল কখনও আসবে না; কাল করবো বলে কোন কাজ কেউ ফেলে রাখলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আগামীকাল জন্মায় নি, গতকাল মৃ্ত, আজই সত্য | আজ খাওদাও আনন্দ কর, ভূতভবিষ্যৎ ভেবে কোন লাভ নেই; আগামীকাল আমরা সবাই থাকবো না। |
আগামীকাল নিজের যত্ন নেবে- আরবী প্রবাদ | আগামীকালের জন্য আগাম ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। |
আগামীকাল নিয়ে চিন্তা করা মানেই আজকে অসুখী হওয়া | আগাম দুশ্চিন্তা করে অনর্থক স্বাস্থ্যহানি করার প্রয়োজন নেই। |
আগামীকাল সর্বদাই আছে- আরবী প্রবাদ | আগামীকালের জন্য আগাম ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। |
আগামীকালের একটি হাঁস থেকে আজকের একটি ডিম বেশি দামী | আগামী কাল থেকে আজকের দাম অনেক বেশি; আগামীকাল অনিশ্চয়তায় ভরা; সমতুল্য- 'নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকীর খাতায় শূন্য থাক, দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে মাঝখানেতে বেজায় ফাঁক'; 'হাতের একটি পাখি বনের দুটি পাখির সমান'। |
আগামীকালের জন্য অজ্ঞানে অপেক্ষা করে; জ্ঞানী আজরাত্রের মধ্যেই কাজ শেষ করে | জ্ঞানীরা অনিশ্চিতের মধ্যে থাকে না; বিপরীত প্রবচন- জ্ঞানীরা বলেন, 'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
আগুন কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না | সত্য গোপন করা যায় না; পাঠান্তর- 'আগুন চাপা থাকে না'; 'আগুন ছাইচাপা থাকে না'। |
আগুন কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না | পাপ কখনো ঢাকা থাকে না। |
আগুন দিয়ে আগুন তাড়ানো/নেভনো যায় না | শত্রুতায় শত্রুনাশ হয় না, প্রেমে হয়। |
আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না | কার্যের পিছনে কারণ থাকে; অকারণে কিছু হয় না; তুলনীয়- 'অকারণে গাছের একটি পাতাও নড়ে না। |
আগুন নিয়ে খেলা | বিপজ্জনক বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করা। |
আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয় | অবিমিশ্র সুখ হয় না; জীবনের সবক্ষেত্রেই কিছু অর্জন করতে হলে, কিছু ঝামেলা সহ্য করতে হয়; সমতুল্য- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়';'ন হি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'। |
আগুনে পুড়ে সোনা/সীতা খাঁটি | জীবনযন্ত্রণায় না পুড়লে মানুষ অভিজ্ঞ বা খাঁটি হয় না। |
আগুনে হাত দিলে ইচ্ছাতেও পোড়ে, অনিচ্ছাতেও পোড়ে১ | আগুনের কোন বাছবিচার নেই |
আগুনে হাত দিলে ইচ্ছাতেও পোড়ে, অনিচ্ছাতেও পোড়ে২ | বিপদকে আহ্বান করলে বিপদ এসে জড়িয়ে ধরে; বিপজ্জনক জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে নেই। |
আগুনের কাছে ঘি | নারী ঘির সমান; পুরুষ আগুনের সমান; পুরুষের সামনে নারী স্থির থাকে না; সমতুল্য- 'ঘৃতকুম্ভসমা নারী তপ্তাঙ্গারসমঃ পুমান'; পাঠান্তর- আগুনের কাছে ঘি গাঢ় থাকে না'। |
আগুনের শেষ রাখতে নেই | আগুন সম্পূর্ণ নির্মূল না করলে পরে জ্বলে উঠতে পারে; সমতুল্য- 'ঋণের শেষ রাখতে নেই'; 'ঋণের শেষ রাখতে নেই';'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'। |
আগুয়ান ঘটনা সামনে তার ছায়া ফেলে | কি ঘটতে চলেছে আগেভাগেই তা অনুমান করা যায়। |
আগে আপন পরে পর আপন সামালে পরকে ধর | পরের দোষ না দেখে আগে নিজের দোষের খোঁজ ন্যায়; পরে নিজের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে; পাঠান্তর- 'আগে আপন সামাল কর পরে গিয়ে পরকে ধর'। |
আগে আপন পরে পর, আপন সামালে পরকে ধর২ | নিজে ভাল না থাকলে পরের ভালো করা যায় না; বৈদ্য আগে নিজেকে সামলায় পরে পরকে সামলায়। |
আগে আমি, পরে বাপ | আগে নিজের স্বার্থ সামলাও পরে অপরের স্বার্থ সামলাবে; সমতুল্য- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; বিরুদ্ধ প্রবচন-'পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও, তার মত সুখ কোথাও কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও'। |
আগে উপযুক্ত হও, পরে আকাঙ্ক্ষা কর | কিছু চাইতে গেলে আগে পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। |
আগে কড়ি পিছে কাজ | মাগনায় কিছু হয় না; নগদ দাম দাও, তবে জিনিস দেব; সমতুল্য- 'ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর'। |
আগে কাজ পিছে আরাম/বাত | কাজের দাবী সর্বাগ্রে; কাজ ফেলে অকাজ করা নেই; পাঠান্তর- 'আগে লাথ পিছে বাত'। বাদ |
আগে কুঁয়া, পিছে খাই (খাল) | উভয়সঙ্কট, দুদিকেই বিপদ; কোন নিস্তার নেই; সমতুল্য-'জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ'; 'এগুলে রাবণ, পিছুলে রাম' ইত্যাদি। |
আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে টাকা/সোনা পায়১ | যে আগে থাকে বাঘ আগে তাকেই আক্রমণ করে; ঝড়ঝাপ্টা আগের লোককেই প্রথমে লাগে। |
আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে টাকা/সোনা পায়২ | তাড়াতাড়ি করা নেই, তাতে কাজে ভুল হয়; কার্যসিদ্ধির জন্য সময় লাগে; সমতুল্য-'বিলম্বে কার্যসিদ্ধি'; 'যে সয় সে রয়'; 'সবুরে মেওয়া ফলে';'সয়ে গেলে রয়ে যায় ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি-'আগের/ভোরের পাখি পোকা/মাছি ধরে'। |
আগে গেলেও দোষ পাছে গেলেও দোষ১ | উভয়সঙ্কট। |
আগে গেলেও দোষ পাছে গেলেও দোষ২ | ভাগ্য বিরূপ হলে সব কাজই বিফল হবে। |
আগে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা পাছে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা | এমন এক অবস্থা যেখানে নিন্দাছাড়া সাধুবাদ নাই; কোন অবস্থাতেই প্রশংসা লাভের আশা নেই; পাঠান্তর- 'আগে গেলেও ভেড়ের ভেড়ে, পাছে গেলেও ভেড়ের ভেড়ে'। |
আগে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা পাছে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা২ | দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না। |
আগে ঘর পরে পর ঘর সামলে পরকে ধর | খয়রাত ঘর থেকে শুরু হয়; প্রবাদটিতে স্বার্থের গন্ধ আছে; সমতুল্য- 'আগে আমি পরে বাপ'; 'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম'; 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' ইত্যাদি। |
আগে (যাচ্লে) জামাই কাঁঠাল খান না শেষে জামাই ভোঁতাও পান না | অনেকে আছে, যাদের সাধাসাধি করলে উপেক্ষা করে; তাদের ভাগ্যে কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু জোটে না। |
আগে তিতা শেষে মিঠা১ | স্বাস্থ্যের কারণে বৈদ্যের বিধান- তিতা দিয়ে আহার শুরু মিষ্টি দিয়ে আহার শেষ করা উচিৎ। |
আগে তিতা, শেষে মিঠা২ | অনেককিছুই প্রথমে অপ্রীতিকর মনে হয় শেষে সেটাই সুখকর হয়। |
আগে দর্শনদারী পরে গুণ বিচারী | বাহ্যিকসৌন্দর্যই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করে; চটকই প্রথম চোখ টানে;
দেখতে ভাল হলেই আদর পায়; শুধু গুণে আকৃষ্ট হতে কিছু সময় লাগে; সমতুল্য- 'যো দেখতা হ্যায় উয়ো বিক্তা হায়';'ঠাট-ঠমকে বিকোয় ঘোড়া' ইত্যাদি; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি'; 'শুধু দেখনাই ভাল হলেই চলে না গুণ থাকা চাই' ইত্যাদি। |
আগে দুখ পরে সুখ | তাতে মানসিক কষ্ট কম হয়, শান্তি বেশি হয়। |
আগে দেও কড়ি, তবে দেবো বড়ি | নগদদাম দাও তবে জিনিস দেবো; নগদ লেনদেনের পক্ষে ওকালতি; সমতুল্য- 'ফেলো কড়ি, মাখো তেল'; 'রোখা কড়ি চোখা মাল' |
আগে দেখ পরে লও শেষে দাও কড়ি | আগে দেখে পছন্দ কর তারপর দাম দিয়ে জিনিস নেবে তা-না-হলে ঠকতে পারো ঠকার সম্ভাবনার প্রতি চেতাবনী। |
আগে দেখো, পরে লাফাও | বিপদের কথা চিন্তা না করে কোন সিদ্ধান্ত নিও না; বিচার বিবেচনা করে কাজ কর; বিবেচক এক পা দেখে এক পা রাখে। |
আগে না বুঝিলে বাছা যৌবনের ভরে, পশ্চাতে কাঁদিতে হবে নয়নের ঝোরে | যৌবনের অহঙ্কারে বেহিসাবী হলোে বৃদ্ধবয়সে পস্তাতে হতে পারে; ভুল পথে গেলে শেষে আফশোস করবে এবং কেঁদে কূল পাবে না; সমতুল্য- 'যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালি'। |
আগে নিজেকে সংশোধন কর, পরে অপরের সংশোধন করবে | নিজে ভালো না হলে পরের ভাল করা যায় না; সমতুল্য- আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও'। |
আগেপাছে লন্ঠন কাজের বেলায় ঠনঠন | আয়োজনের আড়ম্বরে বাড়াবাড়ি কাজের বেলায় ফাঁকি। |
আগে পাজি, পরে কাজী, পরে হাজী, শেষে গাজী | শুরুতে দুস্কৃতি; পরে সুবুদ্ধিসম্পন্ন; তারপরে ধর্মভীরু, শেষে ধর্মব্যবসায়ী; সুতরাং শুরু যেখানে শেষ সেখানে; ধর্মব্যবসায়ীরা পাকা শয়তানস্বরূপ; পাঠান্তর-
আজের কাজী, পরে হাজী, পরে গাজী'। |
আগেপিঠে দড় তবে ঘোড়ার পিঠে চড় | শক্তি ও সামর্থ থাকলে তবেই কঠিন কাজে হাত দাও। |
আগে ফাঁসি পরে বিচার | উদ্ভট কার্যকলাপ; উল্টোপুরাণ। |
আগে ভাল ছিল জেলে জালদড়া বুনে, কি কাজ করিল জেলে এঁড়ে গরু কিনে | বেশি লোভ করলে ফল খারাপ হয়; অভ্যস্ত কাজ ছেড়ে অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে ফল ভালো হয় না। |
আগের চেয়ে দেরী ভালো | ভালো কাজ হলে ভেবেচিন্তে দেরীতে করাই ভালো; সমতুল্য- 'আগে গেলে বাঘে খায় পাছে গেলে টাকা পায়';'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
আগের (ভোরের) পাখি পোকা/মাছি ধরে | সামনের লোকের সুযোগ সদব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে সোনা পায়'; 'বিলম্বে কার্যসিদ্ধি'; 'যে সয় সে রয়';'সবুরে মেওয়া ফলে'; 'সয়ে গেলে রয়ে যায়' ইত্যাদি। |
আগের লাঙল (হাল) যে দিকে যায় পাছের লাঙল/হাল সে দিকে যায় | অন্ধভাবে অন্যের অনুকরণ করা মানুষের স্বভাব; আমরা সবাই ভেড়ার পাল। |
আগে রামনাম পরে সবকাম | দুর্বলচিত্তের লোক ভগবানের নাম নিয়ে সবকাজ শুরু করে। |
আগে রাহ বাতায়ে পাছে গোঁতা | প্রথমে পথ দেখায় পরে ধাক্কা মারে; সমতুল্য- 'গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া'। |
আগে সামলা ধাক্কা, পরে যাবি মক্কা | আগে তো বাঁচো; পরে ভগবানের নাম করা যাবে। |
আগে হলাম আমি, পিছে হল মা; হাসতে হাসতে দাদা হলো বাবা হলো না | অর্থহীন হেঁয়ালি; অসংলগ্ন কথাবার্তা; কথার কোন মাথামুণ্ড নেই; পাগলের প্রলাপ; অর্থহীন আজেবাজে কথা বললে এই প্রবাদ বলা হয়। |
আগে হাঁটে, পাঁঠা কাটে, প্রদীপ উস্কোয়, দই বাঁটে; ভাণ্ডারী, কাণ্ডারী, রাঁধুনী বামুন, যশ পায় না এই সাতজন | এই সাত কাজের লোকেরা ঠিকঠাক কাজ করলে প্রশংসা পায় না; কিন্তু একটু ভুল হলেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। |
আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না | সহজলভ্য জিনিসের আকর্ষণ বা মূল্য নেই; সমতুল্য- 'কালিঘাটের মানুষ কালীদর্শন করে নঢ়;'গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না'; 'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না';'যত মন্দিরের কাছে তত ঈশ্বর থেকে দূরে' ইত্যাদি। |
আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয় | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য-'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে'; 'চড় মারলে চড় খেতে হয়';'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি। |
আঙুর ফল টক | অলভ্য জিনিস মন্দ হয়; মন্র সান্ত্বনা; সমতুল্য-'কর্তা পান না তাই খান না'। |
আঙুল ঘুরিয়ে পাঁচিল দেওয়া | ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় বিরাট কাজ সম্পন্ন করার প্রয়াস |
আঙুল ফুলে কলাগাছ১ | অবৈধপথে দ্রুত উন্নতি লাভ। |
আঙুল ফুলে কলাগাছ২ | হঠাৎ বিশালী; অল্পদিনে নির্ধনের ধন হলে বিদ্রূপে এই প্রবচন ব্যবহৃত হয়। |
আচরণ দ্বিতীয়প্রকৃতি | আচরণ থেকেই স্বভাব গড়ে ওঠে। |
আচরণ দড়ির মত, আমরা প্রতিদিন দড়ি পাকাই এবং শেষপর্যন্ত সেটা ছিঁড়তে পারি না | অভ্যাস বা আচরণ সহজে ছাড়া যায় না; আমরা সবাই গুটিপোকার মত নিজের সূতায় নিজে বাঁধা; |
আচার ভ্রষ্ট, সদা কষ্ট | অনুশাসন না মানলে জীবনে ভোগান্তি আছে। |
আচারে বাড়া বিচারে এড়া | আচারসর্বস্ব ব্যক্তি, যে যুক্তির ধার ধারে না। |
আচারে লক্ষ্মী, বিচারে পণ্ডিত | সর্ব্যবগুণসম্পন্ন/সম্পন্না। |
আছে কাজ তাই সকালসকাল সাজ | কাজ থাকলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। |
আছে গরু না পায় হালে, দুঃখ না ছাড়ে কোন কালে- খনা | গরু আছে অথচ চাষ করে না, তার অভাব কখনই যাবে না; পরিশ্রমবিনা সৌভাগ্য আসেনা। |
আছে যথেষ্ট নেই অদৃষ্ট | ভাগ্য না থাকলে সম্পদ ঠেকেও ভোগ হয় না। |
আজ আমীর/বাদশা কাল ফকির | সবদিন কারো সমান যায় না; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুখানি চ সুখানি চ'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; পাঠান্তর- 'আজ রাজা কাল ভিখারী ফুটানি করে দিন দুচারি'; 'আজ যে রাজা কাল সে ফকির'। |
আজই সত্য, আগামীকাল কখনো আসে না | আজকের কথা আজ ভাব, কালকের কথা কাল হবে; অনিশ্চিতের পিছনে ছোটা নেই। |
আজ খেতে কাল নেই | কোনরকমে দিন চলে; সমতুল্য- 'দিন আনে দিন খায়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নূন আনতে পান্তা ফুরায়'। |
আজ খায় না রাগে, কাল সবার আগে | ঠাণ্ডামাথায় বুদ্ধি খোলে; রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলে। |
আজ নগদ কাল ধার ধারের পায়ে নমস্কার | যতদূর সম্ভব নগদ অর্থে কাজ-কারবার করার পরামর্শ। |
আজ বুঝলি না বুঝবি কাল, বুক চাপড়াবি পাড়বি গাল | সময়ের কাজ সময়ে না করলে উল্টোবিপত্তি হতে পারে সেই সম্পর্কে চেতাবনি; কাউকে বারবার সাবধান করা সত্বেও না শুনলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আজ মরলে কাল দুদিন হবে | দুঃসহ জীবনযন্ত্রণা; ভোগান্তির দিনগুলি যেন কাটতেই চায় না। |
আজ মুচি কাল শুচি | ব্যবহারগুণে ব্যক্তির চরিত্র পরিবর্তিত হয়। |
আজ রাজা কাল ভিখারী ফুটানি করে দিন দুচারি | 'আজ আমীর/বাদশা কাল ফকির'- দ্রষ্টব্য |
আজের কাজী, পরে হাজী, পরে গাজী | আগে পাজি, পরে কাজী, পরে হাজী, শেষে গাজী- দ্রষ্টব্য |
আটঘাট বাঁধা | অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য সকল পথ বন্ধ করা; প্রস্তুতি নেওয়া; (উৎসকাহিনী- তবলার আনুসঙ্গিকসরঞ্জাম থেকে প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে; তবলার গায়ে ছোটছোট ঘুঁটি বাঁধার জন্য ঘুঁটির ওপর চামড়ায় থাকা দুটি ফিতার মধ্যস্থ চাকের অংশকে ঘাট বলে; প্রতিটি তবলাতে আটটি ঘাট থাকে। দুটি ফিতার মাঝখানে আটটি ঘুঁটি আটকানো থাকে; কোন ঘাট বেসুরে না বাজার জন্য তবলাবাদক বাজনা শুরুর আগে হাতুড়ি দিয়ে ঘুঁটিগুলিকে ঠুকেঠুকে সুর বেঁধে নেয়। তার থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি। |
আটে কাটে/পিঠে দড় ত ঘোড়ার পিঠে চড় | দক্ষতা ও নৈপুণ্য থাকলে বা চৌকশ হলেপরে দুরূহ কাজ করতে যাওয়া উচিত। |
আঠারো মাসে বছর ফুরায় | অতিশয় দীর্ঘসূত্রতা; সমতুল্য- 'বত্রিশ দিনে মাস ফুরায়'। |
আড়াই আঙ্গুল দড়ি, সৃষ্টি জুড়ে বেড়ি | অল্প আয়োজনে সব প্রয়োজন মেটাবার আপ্রাণ চেষ্টা; সামান্য উপায়ে বিশাল কাজ সম্পাদনের চেষ্টা; সমতুল্য- আঙুল ঘুরিয়ে পাঁচিল দেওয়ার চেষ্টা'। |
আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল | অল্প পরিমাণ দ্রব্য পাওয়ার জন্য অনেক দাবীদার; ফলে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি; যোগান অত্যল্প চাহিদা প্রচুর হলে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়; এমন পরিস্থিতির উদভব হলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'এক আনার সৌ বীমার'; 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'। |
আড়াই দিনের বাদশাহী | অল্পদিনের ফুটফুটানি। |
আড়ে নাই অসাড়ে (অসার)১ | দৈর্ঘ্যে নাই প্রস্থেও নাই। |
আড়ে নাই অসাড়ে (অসার)২ | কাজে নেই, অকাজে দড়। |
আড়ে হাতে লওয়া | ভীষণ শত্রুতা করা। |
আড়ে হাতে লাগা১ | প্রাণপণ চেষ্টা করা। |
আড়ে হাতে লাগা২ | ভীষণ শত্রুতা করা। |
আড়ের সাঁত আর ছিরে বুড়োর মাড়ি | সাধারণে দাঁত দিয়ে যা করে বৃদ্ধ শ্রীরাম মাড়িতে তাই করে; অপরে আয়াসে এবং সুবিধা পেলে যে কাজ করে ব্যক্তিবিশেষে অসুবিধাসত্বেও সেই কাজ অনায়াসে সম্পন্ন করে। |
আতি চোর পাতি চোর হ’তে হ’তে সিঁদেল চোর | ক্রমশঃ দাগী আসামীতে পরিণত; সামান্য অপরাধ করতে করতে শেষে বিরাট অপরাধ করে ফেলে। |
আতুরে নিয়ম নাস্তি | অসমর্থের পক্ষে নিয়ম খাটে না; রোগীর পক্ষে উপবাস নিয়ম নিষিদ্ধ; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'আতুরে নিয়মো নাস্তি'। |
আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রানুসারিণঃ | নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- 'আপনার কথা কয় না শালী পরকে বলে টেবোগালী'; 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চোখ নিজেকে দেখতে পায় না'; পাঠান্তর- 'আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রং পদেপদে'। |
আত্মতুষ্টি সঙ্কীর্ণ মনের পরিচয় | শুধু নিজেরটা হলেই হল এমন ভাবনা সঙ্কীর্ণমনের পরিচয়। |
আত্মনং বিদ্ধি | নিজেকে জানাই প্রথম কাজ। |
আত্মনং সততং রক্ষেৎ পশ্চাদ্দার ধনানি চ | (যেকোন মূল্যে) নিজেকে সর্বদা রক্ষা করবে; তারপর স্ত্রী ও ধনাদি রক্ষা করবে; সমতুল্য- আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা'। |
আত্মবৎ সর্বভূতেষু য পশ্যতি সে পণ্ডিত | যিনি সকলপ্রাণীকে আত্মসম বিবেচনা করেন তিনি পণ্ডিত। |
আত্মবন্মন্যতে জগৎ | আপনার মত জগৎ দেখা; যে যেরূপ প্রকৃতির ব্যক্তি সে জগতের সকলকে সেইরূপ জ্ঞান করে; গুণী কোন নির্গুণ খুঁজে পায় না, নির্গুণ আবার কোন গুণী খুঁজে পায় না; পাঠান্তর-'আত্মবৎ মন্যতে জগৎ'। |
আত্মবুদ্ধি শুভকরী/শুভঙ্করী | নিজের বুদ্ধি কল্যাণকর; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরবুদ্ধিঃ বিনাশায়'; 'স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী'।- |
আত্মানং সততং রক্ষেৎ পশ্চাদ্দার ধনানি চ | নিজের জীবনকে সর্বদা রক্ষা করবে; পরে ধন পরিজন রক্ষা করবে; এটাই ধর্ম; তুলনীয়- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা'। |
আত্ম রেখে ধর্ম পরে পিতৃকর্ম | আপনি বাঁচলে বাপের নাম; নিজেকে দিয়েই দানছত্র শুরু করা উচিত; দাতব্য ঘরেই শুরু হয়। |
আত্মারাম খাঁচাছাড়া | প্রচণ্ড ভয়ে বিবর্ণ; প্রাণপাখি উড়ে গেছে। |
আত্মার্থে পৃথিবীং ত্যজেৎ | নিজের জীবন রক্ষার্থে পার্থিব সবকিছু পরিত্যাগ করবে। |
আদব শেখো বেয়াদবের কাছে | বেয়াদব যা করে তার উল্টোটাই হল আদবকায়দা। |
আদম ছিলেন প্রথম ভাগ্যবান ব্যক্তি যার শাশুড়ি ছিল না- ইহুদি প্রবাদ | দজ্জাল শাশুড়িদের প্রতি বক্রোক্তি। |
আদর যখন জুটে, ফুটকলাই দিয়ে ফুটে; আদর যখন টুটে, ঢেঁকি দিয়ে কুটে | আদর যখন করে ফুটকড়াইয়ের মত ভরে দেয়; তিরস্কার যখন করে ঢেঁকিতে চাল কোটার মত কোটে; সবতাতেই বাড়াবাড়ি; আদিখ্যেতা। |
আদরে বাঁদর বনে | প্রশ্রয়ে চরিত্রগুণ নষ্ট হয়। |
আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন | প্রীতিভরে খাওয়ালে প্রীতিতেই পেট ভরে যায়, ব্যঞ্জনে নজর থাকে না; সমতুল্য- 'বড়লোকের ভুরিভোজ থেকে গরিবের শাকান্ন ভাল', 'রাজার ভুরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'আদরের ডাল-ভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না'। |
আদা ওষুধের আধা | আদা্র ঔষধি গুণ এমন যে আদা খেলে যে কোন রোগ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। |
আদা কাঁচকলাসম্বন্ধ / আদায় কাঁচকলায় | আদা ও কাঁচকলা একসাথে সিদ্ধ হয় না; সুতরাং পরস্পর বিরুদ্ধগুণবিশিষ্ট; চির বৈরীভাব; স্বভাব-শত্রুতা |
আদাজল খেয়ে লাগা | কার্যসিদ্ধির জন্য কষ্ট করে প্রাণপণ চেষ্টা করা; দৃঢ়সংকল্পে উদ্যমের সাথে কাজে লাগা; পূর্ণোদ্যমে কাজে লাগা; সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কোন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা; সমার্থক বাগধারা- উঠে পড়ে লাগা |
আদা ঝালের গাদা | গুণহীন পুরুষের রাগরূপ ঝাল বেশী। |
আদা শুকালেও ঝাল যায় না | আদা কাঁচা অবস্থায় যেমন ঝাল শুকালেও তেমনই ঝাল থাকে;
দ্রব্যের স্বাভাবিক ধর্ম কোনকালেই লোপ পায় না; দুষ্টলোক দমিত হলেও দুষ্টবুদ্ধি ছাড়ে না; সমতুল্য- 'কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না'; 'মূলো খেলে মূলোর ঢেঁকুর ওঠে'; 'যার যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ'; 'রসুন ধুলেও গন্ধ যায় না';'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি। |
আদাড়গাঁয়ে/বনে শিয়াল বাঘ/রাজা | বুনোগাঁয়ে শিয়ালকেই বাঘ বলে মনে হয়; যেখানে বিদ্বান লোক নেই সেখানে অল্পবিদ্বানেরা পাণ্ডিত্য ফলায়; সমতুল্য- 'দূর্বাবনে খটাশই বাঘ'; 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল'; 'নিরস্তপাদপদেশে এড়েণ্ডোহপি দ্রূমায়তে';'সোঁদর বনে বানর রাজা ইত্যাদি। |
আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক | আদা রেচক কাঁচকলা ধারক; দু'য়ে একসাথে সিদ্ধ হয় না; তাদের মধ্যে চিরবৈরীতা তিক্তসম্পর্ক; তারা শত্রুভাবাপন্ন ও বিরুদ্ধ স্বভাবযুক্ত; সমতুল্য- অহিনকুলসম্পর্ক; দা-কুমড়া সম্পর্ক; বাঘে-গরুতে সম্পর্ক; বুনো ওল-বাঘা তেঁতুলসম্পর্ক;; সাপ-নেউল সম্পর্ক (আধা কাঁচকলা সম্পর্ক দ্রষ্টব্য) |
আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয় | তুচ্ছলোকেরা বড় ব্যাপারে নাক গলায়; অনধিকার চর্চার বিষয়; সমতুল্য-'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চায়'; 'ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয়'; 'মশা এসে হাতীর ওজন জানতে চায়' ইত্যাদি। |
আদি অন্ত পাওয়া ভার | ভেবে কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না; সমস্যার অন্ত নেই। |
আদি/আদ্দি কহিলে মানুষ রুষ্ট | কুলের কথা শুনতে কারও ভাল লাগে না; মানুষ অতীত ঘাটতে চায় না; অতীত ঘাটলে অনেক অপ্রীতিকর কথা সামনে এসে যায়; তাতে মানুষ রুষ্ট হয়। |
আদুরে গোপাল | অত্যন্ত আদরে পালিত সন্তান; লাই দিয়ে যার ইহকাল পরকাল ঝরঝরে করা হয়েছে; সমতুল্য- 'আলালের ঘরের দুলাল।' |
আদেখলার ঘটি হল, জল খেতে খেতে পরাণ গেল | আগে একদম দেখেনি এমন কিছু দেখলে মানুষ সাধারণতঃ প্রথমে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে। |
আদ্দিকালের বদ্দিবুড়ো | অতিবৃদ্ধব্যক্তি; থুত্থুড়ে বুড়ো। |
আধা কাঁচকলাসম্বন্ধ | জাতিবিরোধসম্পর্ক, যেখানে একটা কাঁচকলাকেও অর্ধেক করে ভাগ করা হয়; ফলে জাতিগতবৈরিতা সৃষ্টি হয়; সমতুল্য- 'তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ কর; তোমরা যে সব ধেড়েখোকা ভারত ভেঙে ভাগ কর'- অন্নদাশঙ্কর রায়। |
আধা বটের আধা তিতর | আধাখেঁচড়া; অসম্পূর্ণ; বটের, তিতির ইত্যাদি পাখী সম্পূর্ণ নয়; তারা আধা-খেচর। |
আধিক্যে কুফল আছে | বেশি টানাটানি করলে সূতা ছিঁড়ে যায়; বাড়াবাড়ি ভাল নয়; সমতুল্য- 'কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে'; 'ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'। |
আন্ কাপাস নে তুলো | কাঁচামাল আনো জিনিস নিয়ে যাও; পণ্যবিনিময় প্রথা |
আন শুনতে কান/ধান শোনে | কালা; উল্টোপাল্টা শোনে। |
আন (অন্য) মাগীর আন (অন্য) চিন্তে, দুয়ো মাগীর পতি চিন্তে | অন্যান্য নারীরা সংসারের নানাচিন্তায় ব্যস্ত থাকে; যে নারীর সতীন আছে, সে স্বামীছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না। |
আন (অন্য) সতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে | নিজের লোকেরাই বেশি আঘাত হানে; রক্তের সম্পর্কের লোকেরা বেশি অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল'; 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি। |
আনন্দ ও কাজ সময়কে সংক্ষিপ্ত করে | মনের আনন্দে কাজ করতে করতে কীভাবে যে সময় কেটে যায় বা কিভাবে যে কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তা বোঝা যায় না। |
আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে | পরছিদ্রান্বেষী; নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য-'চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছন দেখি ছ্যাঁদা';'চালুনি বলে ধুচুনিভায়া তুমি বড় ফুটো';'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা'; 'নিজের পাছায় ন'মণ গু আমারে বলে তোর খান ধু'; 'হাঁড়ি বলে কড়াই তোর পিছনটা বড় কালা' ইত্যাদি। |
আন্ধেরা নগরী চৌপট রাজা; টাকা সের ভাজী, টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ১ | অসারের মেলায় গুণের কদর নেই। |
আন্ধেরা নগরী চৌপট রাজা; টাকা সের ভাজী, টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ২ | এমন অরাজক অবস্থা যে মুড়ি মুড়কির একদর; কোথাও চূড়ান্ত অপশাসন দেখা দিলে এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয়। |
আন্ধা-এ দোকানদেরে, খরিদ করে কালে | দোকানদার অন্ধ; খরিদ্দার কালা- দুইই সমান অপদার্থ। |
আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি | আপৎকালে নানাপ্রকার বৈরিতা উৎপন্ন হয়; তুলনীয়- 'ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি'; 'ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তী'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'। |
আপ্ ভলা তো জগ্/সব ভলা | ভালোর চোখে সবই ভালো; যে নিজে ভালো সে সবকে ভালো দেখে এবং সবাই তাকে ভালো দেখে। |
আপন কখনো পর হয় না | কাছের মানুষ কখনো দূরের হয় না; সমতুল্য-'বসূধৈব কুটুম্বম'; বিরুদ্ধ প্রবাদ-'আপন থেকে পর ভাল'; 'কাছের লোক কাছের নয়'; 'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি';'ভাইভাই ঠাঁই ঠাঁই';'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি। |
আপন/আপনার কোটে পাই চিঁড়ে কুটে খাই | নিজের আয়ত্বে কাউকে পেলে আর ছেড়ে কথা নেই; তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়। |
আপন/আপনার কোলে ঝোল সবাই টানে | সবাই নিজের স্বার্থ দেখে, পরার্থের কথা ভাবেই না। |
আপন/আপনার গাঁয়ে কুকুর/শিয়াল রাজা | নিজের ঘরে সবাই রাজা; নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; নিজের গণ্ডীতে সবাই নিজেকে বড় মনে করে; জিন্দি পাঠান্তর- 'আপনা মহল্লামে কুত্তা শের'। |
আপন/আপনি গেলে ঘোল পায় না চাকরকে পাঠায় দুধের তরে | যেখানে নিজের অনুরোধ রক্ষা হয় না সেখানে অপরকে দিয়ে কোন কাজ করার ব্যর্থ চেষ্টা; যখন আগে থেকেই অনুমান করা যায় যে কারো প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হবে, তখন তার প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য-'মনিব গেলে ঘোল পায় না বেঁশোকে পাঠায় দুধের তরে'। |
আপন/আপনার ঘর রাজপ্রাসাদ | নিজের ঘরের মত সুন্দর স্থান জগতে নেই। |
আপন/আপনার ঘরে সবাই রাজা | নিজের ঘরে যেমন প্রভুত্ব করা যায় অন্যত্র তেমন পারা যায় না। |
আপন/আপনার ঘোল কেউ টক বলে না | নিজের জিনিস খারাপ বলে বিক্রেতা দাম কমায় না। |
আপন/আপনার চরকায় তেল দাও | নিজের কাজে মন দেওয়া উচিৎ; পরনিন্দা, পরচর্চা করা কাম্য নয়। |
আপন/আপনার চেয়ে পর ভালো, পর চেয়ে জঙ্গল ভালো | নিজের লোক নিজের হয় না; অনেকক্ষেত্রেই আত্মীয় উপেক্ষা করে; অনাত্মীয়রা সাহায্যের হাত বাড়ায়; সমতুল্য-'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি';'ভাইভাই ঠাঁইঠাঁই';'যতই রক্তের কাছাকাছি তঈই রক্তারক্তি' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আপন কখনো পর হয় না'; 'বসূধৈব কুটুম্বম' ইত্যাদি। |
আপন/আপনার ছাগল বেঁধে রাখি পরের ছাগল হাততালি দিই | হাততালি দিলে ছাগল পালায় এবং তাকে ধরতে কষ্ট হয়; নিজে সাবধান থেকে পরের অনিষ্ট করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আপন/আপনার ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খোঁজে | লোকে নিজের দোষ দেখে না শুধু পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- ছুঁচ বলে চালুনি তোর পিছন কেন ছ্যাঁদা? |
আপন/আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ | খ্যাঁদা নাক দর্শন বিদেশযাত্রার পক্ষে অশুভ বিবেচনা করা হয়; তাই নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার চেষ্টা; নিজের অনিষ্ট করে পরের অনিষ্ট করার অপচেষ্টা। |
আপন/আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় মাথায় হাত দিয়ে | এক জ্যোতিষী নিজের পাঁজি অন্যকে দেওয়ায় গণনা করতে পারে না; ফলে তার রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যায়; অন্যের উপকার করতে গিয়ে কেউ নিজের ক্ষতি করলে তার অবস্থা বর্ণনা করতে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'আপন/আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় পথে পথে'। |
আপন/আপনার পাঁঠা লেজে কাটি | স্ব-ইচ্ছা কাজ করার পক্ষে ওকালতি; নিজের অধিকারে থাকা সব কাজ স্বাধীনভাবে করা যায়। |
আপন/আপনার পানে চায় না শালি পরকে বলে তোবড়াগালি | স্বার্থপর অহঙ্কারী নারীরা নিজের রূপকে ভুলে গিয়ে পরের রূপ বিচার করতে যায়, যা উচিত নয়। |
আপন/আপনার পায়ে কুড়াল মারা | নির্বুদ্ধিবশতঃ জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করা। |
আপন/আপনার বুদ্ধিতে ছিল ভাল, পরবুদ্ধিতে পাগল হল // আপন বুদ্ধিতে তর, পরবুদ্ধিতে মর | নিজের বুদ্ধিতে চলা ভালো; পরের বুদ্ধিতে চলা ঠিক নয়; পরের বুদ্ধিতে চলে যদি কোন ক্ষতি হয় তবে আফশোসের সীমা থাকে না। |
আপন/আপনার বুদ্ধিতে ফকির হই, পর বুদ্ধিতে বাদশা নই | নিজের বুদ্ধি অনেক ভালো; ভাল হোক বা মন্দ হোক অনেকে এই গোঁ ধরেই কাজ করে; পাঠান্তর- 'আপন বুদ্ধিতে ভাত, পরের বুদ্ধিতে হা-ভাত'। |
আপন/আপনার বেলায় আঁটিসাটি, পরের বেলায় দাঁতকপাটি | নিজের স্বার্থের দিকে ষোলআনা নজর; পরের স্বার্থ চুলোক যাক। |
আপন/আপনার বেলায় চাপন-চোপন পরের বেলায় ঝুরঝুরে মাপন | ক্রেতা হলোে ওজনে ঝুঁকতি চায়; বিক্রেতা হলোে পাল্লার কাঁটার দিকে নজর রাখে; আপনার দিকে ঝোঁক বেশি রাখে পরকে দেয় সামান্য। |
আপন/আপনার বোন ভাত পায়না শালীর তরে মন্ডা | একপেশে সঙ্কীর্ণ বিচার; ন্যায্য দাবীদারকে উপেক্ষা করে অপর কাউকে সাহায্য করা; বৌয়ের আঁচলধরা ব্যক্তি; যখন কোন ন্যায্য দাবীকে উপেক্ষা করে কেউ অপরকে সাহায্য করে তখন তাকে তিরস্কার করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; পাঠান্তর- 'আপন ভাই ভাত পায় না শালার তরে মণ্ডা'। |
আপন ভাল তো জগৎ ভাল | ভালোর চোখে সবই ভাল; হিন্দি পাঠান্তর- 'আপ ভলা তো জগ ভলা'। |
আপন ভাল পাগলও বোঝে | যার বিন্দুমাত্র বোধজ্ঞান আছে সেও নিজের স্বার্থটা ভালো বোঝে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'জাতে মাতাল তালে ঠিক'। |
আপন মান আপন/আপনার ঠাঁই | নিজের মান নিজের আশ্রয়। |
আপন মান আপনি রাখো, কাটা কান চুলদে ঢাকো১ | ঘরের কুৎসা বাইরে প্রচার করতে নেই। |
আপন মান আপনি রাখো, কাটা কান চুলদে ঢাকো২ | নিজের সম্মান নিজে বাঁচাও। |
আপনা গলিমে কুত্তা শের | নিজের ঘরে সবাই রাজা; নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; পাঠান্তর-আপনা মহল্লামে কুত্তা শের |
আপনা মাংসে হরিণা বৈরি১ | হরিণের শত্রু তার নিজের মাংস; |
আপনা মাংসে হরিণা বৈরি২ | কারো কোন ভালকাজ যখন ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। |
আপনা মুঁহ মিয়াঁ মিট্ঠু বনানা- | আত্মপ্রশংসা করা; সজ্জন লোকের আত্মপ্রশংসা করা উচিত নয়। |
আপনা হাত জগন্নাথ | খুব কৃপণস্বভাবের লোক; কাউকে কিছু দিতে হলোে একেবারে ঠুঁটো (হস্তহীন) জগন্নাথ হয়ে পড়ে। |
আপনা হাত জগন্নাথ, পরের হাত এঁটো পাত | নিজের সব জিনিস ভালো, সমর্পযায়ের পরের সব জিনিস খারাপ; পরের জিনিসকে ঘৃণা করার প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করতে এই প্রবাদ বলা হয়। |
আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত | নিজেকে যে বড় বলে সে তত ছোট হয়; 'মানুষ হল ভগ্নাংশের মত; লব হল সে নিজে এবং হর হল সে নিজেকে যা ভাবে; নিজেকে সে যত বড় ভাবে ততই সে ছোট হতে থাকে'- টলস্টয়। |
আপনার আপনার কিছু নয়, জগৎ কেবল মায়াময় | এই সংসারে আমার তোমার বলে কিছু নেই, সবই অনিত্য। |
আপনার আপনি ডোর আর কাপনি | সন্ন্যাসীর কাছে লেঙ্গট আর কটিবন্ধই সব; শে অন্যলোকসম্পর্কে ভাবনা-চিন্তাহীন; শুধু নিজের চিন্তাতেই মগ্ন; নিজের পাওনাটা হলেই হল। |
আপনার কথা কয় না শালী পরকে বলে টেবোগালী | নিজের ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- 'চালুনী বলে সুঁই তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনী বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'; আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রং পদেপদে' ইত্যাদি। |
আপনার ঢাক আপনি বাজায়/পেটায় | নিজেই নিজের গুণগান করে; নিজের কথা পুনঃপুনঃ উল্লেখ করে; নিজের বক্ত্যব্যকে গুরুত্ব দেয়; পাঠান্তর- 'আপনার কথা পাঁচকাহন'। |
আপনার কিছু নয়, জগৎ মায়াময় | এই সংসারে তোমার আমার বলে কিছু নেই, সবই অনিত্য; এ মায়া প্রপঞ্চময়। |
আপনার গায়ে/গুয়ে গন্ধ নেই পরের গায়ে/গুয়ে গন্ধ | নিজের সব ভালো; পরের সব খারাপ; পাঠান্তর- 'আপনার ঘামে/বগলে গন্ধ নেই পরের ঘামে/বগলে গন্ধ'। |
আপনার ঘোল কেউ টক বলে না১ | নিজের জিনিস কেউ খারাপ বলে না। |
আপনার ঘোল কেউ টক বলে না২ | নিজের দোষ কেউ দেখে না। |
আপনার চড়কায় তেল দাও | নিজের কাজ কর পরের কাজে নাক গলিয়ো না। |
আপনার চেয়ে পর ভাল; পরের চেয়ে জঙ্গল ভাল | আমার নিজের বা আমার আপন জন ধারণাটাই সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বা মিথ্যা। |
আপনার ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খোঁজে | নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খোঁজে; সমতুল্য- চালুনি করে ছুঁচের বিচার'; 'কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে';'ঝাঁজরি বলে খৈচালা তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা';'নিজের পাছায় ন'মন গু আমারে বলে তোরখান ধু' ইত্যাদি। |
আপনার ছেলেটি খায় এতটি চলে/বেড়ায় যেন ঠাকুরটি; পরের ছেলেটা খায় এতটা, চলে/বেড়ায় যেন বানরটা | মন্দ হলেও নিজের বস্তু ভালো; ভালো হলেও পরের বস্তু মন্দ; নিজের ছেলের প্রতি যত্ন-আত্তি; পরের ছেলের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য। |
আপনারটা ঢাকা থাক পরেরটা বিকিয়ে যাক | পরের অনিষ্ট হয় হোক নিজের স্বার্থ বজায় থাকলেই হলো। |
আপনার ঢোল আপনি পেটায়/বাজায় | আত্মপ্রশংসায় পঞ্চমুখ। |
আপনার ধন পরকে দিয়ে দেবকী মরে মাথা খুঁড়ে | আগে অধিকার ছেড়ে পরে হাহুতাশ করে; সম্পদ বিলিয়ে দিলে শেষে পরের অনুগ্রহে বাঁচতে হয়; পাঠান্তর- 'আপনার ধন পরকে দিয়ে মর এখন পাত কুড়িয়ে'। |
আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা | নিজের ক্ষতি স্বীকার করে পরের ক্ষতি করা। |
আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় মাথায় হাত দিয়ে | অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করা; প্রয়োজনীয় জিনিস পরের হাতে থাকলে দরকারের সময় অনেক অসুবিধা হয়। |
আপনার পাঁঠা লেজে কাটে | আপনার বিষয়ে যা খুসি করা যায়; তাতে কারো কিছু বলার থাকে না; নিজের ভাল সবাই বোঝে। |
আপনার পায়ে কুড়ুল মারে | জেনেশুনে নির্বুদ্ধিতায় নিজের ক্ষতি করে। |
আপনার বেলায় আঁটিসাটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি | নিজের বেলায় কড়াকড়ি; পরের বেলায় কিছু না। |
আপনার বিড়াল পথ্যি পায় না | যার নিজের অন্নের সংস্থান নেই তার পক্ষে অন্যকে সাহায্য করা অসম্ভব। |
আপনার বেলায় পাঁচকড়ায় গণ্ডা | নিজের স্বার্থ বিলক্ষণ বোঝা; নিজের জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা, পরের বেলায় বিপরীত; পাঠান্তর- 'আপনার বেলায় ছকড়ায় গণ্ডা, পরের বেলায় তিনকড়ায় গণ্ডা'। |
আপনার ভাল পাগলেও বোঝে | আপনার ভাল সবাই বোঝে; যার সামান্য বুদ্ধি আছে সেও স্বার্থটা ভালো বোঝে। |
আপনার মত জগৎ দেখা | নিজের আয়নায় পরকে দেখা; গুণী কোন নির্গুণ খুঁজে পায় না, নির্গুণ আবার কোন গুণী খুঁজে পায় না; সমতুল্য- 'আত্মবৎ মন্যতে জগৎ'। |
আপনার মাথা আপনি খায় | নিজের ক্ষতি নিজেই করে। |
আপনার মন দিয়ে পরের মন জানা | নিজেকে দিয়ে পরের বিচার করা; নিজের আয়নায় পরকে দেখা। |
আপনার মান আপনি রাখি কাটা কান চুলদে ঢাকি | আত্মসম্মান নিজের হাতে; নিজের মান নিজেকেই বাঁচাতে হয়; ঘরের কথা বাইরে যে বলে সে আহাম্মক; পাঠান্তর- 'আপনার মান আপনার কাছে/হাত'। |
আপনার পায়ে আপনি কুড়ুল মারা | জেনেশুনে নিজের সর্বনাশ করা। |
আপনারটা ঢাকা থাক পরেরটা বিকিয়ে যাক | পরেরটা নষ্ট হয় হোক, নিজেরটা ভালো থাকলেই হল। |
আপনারটা ষোলআনা পরেরটা কিছু না | নিজের বেলায় সবটাই নেবো, পরের বেলায় কিছু দেবো না। |
আপনারটা সবাই বড় দেখে | নিজের জিনিস অন্যের জিনিসের তুলনায় মুল্যবান মনে হয়। |
আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়; লোকে যারে বলে বড় সেই হয়- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত | আত্মপ্রশংসা মান্যতা পায় না। |
আপনি আচরি ধর্ম অন্যেরে/অপরে শিখাও | যে আচরণ অপরকে শেখাবে তা নিজে আগে শেখ; নিজে আচরণ করে পরকে অনুপ্রাণিত করতে হয়; যা নিজে মানো না তা অপরকে শেখাতে যেও না; সমতুল্য- 'উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ/দৃষ্টান্ত ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'যা বলি তাই কর, যা করি তাই করো না'। |
আপনি খেতে ভাত পায় না শঙ্করাকে ডাকে | অন্যের দয়ায় বেঁচে থেকে অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা; নিজের আয় দিয়ে নিজের চলে না; অথচ অন্যের জন্য খরচ করে; আহাম্মকের রকম-ফের; পাঠান্তর- আপনি ঠাকুর ভাত পায় না শঙ্করাকে ডাকে; 'আপনি শুতে ঠাঁই পায় না শঙ্করাকে ডাকে'। |
আপনি গেলে ঘোল পায় না চাকরকে পাঠায় দুধের তরে | যেখানে নিজের অনুরোধ রক্ষা হয় না সেখানে অপরকে দিয়ে কোন কাজ করার চেষ্টা; যখন আগে থেকেই অনুমান করা যায় যে কারো প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হবে, তখন তার প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য-'মনিব গেলে ঘোল পায় না বেঁশোকে পাঠায় দুধের তরে'। |
আপনি তুষ্টে জগৎ তুষ্ট | নিজে সন্তুষ্ট থাকলে জগৎ সন্তুষ্ট থাকে। |
আপনি পাগল ভাতার পাগল পাগল তার চেলা; এক পাগলে রক্ষা নেই তিন পাগলের মেলা- লালন | বাউলের ভাববাদী দর্শন; এই সংসার পাগলের মেলা। |
আপনি পায় না পরকে বিলায় | অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। |
আপনি বড় ভালো, তাই লোককে বলেন কালো | নিজে মন্দ হয়েও অপরকে মন্দ বলে-এমন নীচব্যক্তির প্রতি বক্রোক্তি। |
আপনি বাঁচলে বাপের নাম | আত্মরক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম; নিজের জীবনের মূল্য অন্য সবকিছু থেকে বেশি; নিজের স্বার্থ দেখা বা নিজেকে বাঁচিয়ে চলা উচিত; সমতুল্য-'আগে ঘর পরে পর, ঘর সামলে পরকে ধর'; 'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম';'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' ইত্যাদি। |
আপনি ভালো তো জগৎ ভালো | নিজে ভালো হলোে অন্যরাও ভালো হয়। |
আপনি ভালো তো জগৎ ভালো তারই মান থাকে, আপনি মন্দ তো জগৎ মন্দ কে তার মান রাখে? | ভালো লোকেরা সমাজে সম্মানির হয়; মন্দলোকেদের কেউ পোছেও না। |
আপনি যেমন জগৎ তেমন | আপনার আশিতে পরকে দেখা; আপনি ভালো তো জগৎ ভালো' সমতুল্য- 'আপ ভালা তো জগৎ ভালা'। |
আপনি যেমন ঢেমন জগৎ দেখি তেমন | যে নিজে দুশ্চরিত্র, সে অপরকে দুশ্চরিত্র ভাবে। |
আপনি যেমন বীজ বপন করবেন তেমন ফসল পাবেন | মানুষ কর্মফল অনুসারে তিরস্কৃত ও পুরস্কৃত হয়; সমতুল্য-'যেমন কর্ম তেমন ফল'; 'যেমন শয্যা তেমন শয়ন'। |
আপনি শুতে ঠাঁই নাই শঙ্করাকে ডাকে | যার নিজের শোয়ার স্থান নেই তার পক্ষে অন্যকে শুতে আহ্বান করা নির্বুদ্ধিতা; বিরুদ্ধ উক্তি- 'যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় নজন'। |
আপনে গলিমে/মহল্লামে কুত্তা শের | নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; সুযোগ পেলে ভৃত্যও প্রভুত্ব করে। |
আপনে রামকো ভজৈ, রিঝ ভজে বা খিজ | ইষ্টদেবতাকে যেভাবেই ভজনা কর-না-কেন তিনি ঠিক বুঝতে পারেন। |
আপ ভলা তো জগৎ/সব ভলা | নিজের মন ভাল হলে সবাইকে ভাল মনে হয় এবং সবার কাছে ভাল ব্যবহার পাওয়া যায়। |
আপ রুচি খানা, পোর রুচি পরনা (পিহনা) | নিজের রুচিমত খাও তবে অন্যের চোখে যে বেশ ভালো দেখায় তাই পরিধান কর। |
আপেল গাছের তলাতেই পড়ে | বংশধররা সাধারণত পূর্বপুরুষদের মতোই হয়। শিশুরা বড় হয়ে তাদের পিতামাতার মত হয়; তুলনীয়- 'নরানাং মাতুলাক্রম'; পাঠান্তর- 'আপেল গাছের দূরে পড়ে না। |
আবর তাঁতী গোবর খায় স্ত্রীর বাক্যে মরতে যায় | আগে ধারণা ছিল তাঁতীরা খুব বোকা হয়; এই ভাবার্থে কোন বুদ্ধিহীন লোক সম্পর্কে এই প্রবাদটি প্রযুক্ত হয়। |
আবাগের বেটা ভূত | হতভাগ্যের বেটা অপদার্থ,কাণ্ডজ্ঞানহীন- গালি বিশেষ |
আবালে না নোয়ালে বাঁশ, বাঁশ করে টাঁশ টাঁশ | 'কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ বাঁশ করে টাঁশ টাঁশ'- দ্রষ্টব্য |
আবিল দৃষ্টি সব হলদে দেখে | মন্দের চোখে সবই মন্দ; সমতুল্য- 'কামলার চোখে সব শ্যামলা মনে হয়'। |
আবুহোসেন | গিরীশ ঘোষ প্রণীত রঙ্গনাটক 'আবুহোসেনের' প্রধান চরিত্র; অপব্যয়ী বিলাসী যুবকের উপমাস্থল; ছেঁড়া কাথায় শুয়ে যারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে তাদের বিদ্রূপ করে আবুহোসেন আখ্যা দেওয়া হয়। |
আবৃত্তিঃ সর্বশাত্রাণাং বোধাদপি গরিয়সী | সব শাস্ত্রবোধ থেকে আবৃত্তির গৌরব অনেক বেশি। |
আম না থাকলে আমড়া চোষে | সারবস্তু না পেলে অসারবস্তু উপভোগ করতে বাধ্য হয়; সার না পেলে অসারই সই; একটা কিছু হলেই হল; অভাগার এর বেশি কিছু জোটে না; পাঠান্তর- ১আম না পেয়ে আটিঁ চোষে'। |
আম না হতে আমসত্ব | কাজ না হতেই ফলের আশা; আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছে না উঠতেই এককাঁদি'; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি। |
আম পাকলে মিঠা, মানুষ পাকলে তিতা | পরিণতবুদ্ধি হলে মানুষ স্বার্থান্বেষী হয়; নিজের ভালো ও পরের মন্দ খোঁজে। |
আম শুকালে আমসী যৌবন ফুরালে কাঁদতে বসি | বয়স বাড়লে রস শুকায়; নারীর যৌবন ফুরালে আদর থাকে না। |
আমও গেল ছালাও গেল | লাভ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারানো। |
আমড়াগাছে আম ফলে না | কুবংশে সুসন্তান জন্মায় না; মন্দলোকের কাছে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করা যায় না; সমতুল্য- 'ছাগলের লোমে পশম হয় না'। |
আমড়াতলায় আম পেলে আমতলায় কেবা যায় | সহজে কিছু পেলে কেউ কষ্ট স্বীকার করতে চায় না; সমতুল্য- 'আকন্দে যদি মধু পাই তবে কেন পর্বতে যাই'; 'হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই'। |
আমরা বাঁচার সাথে সাথে একটু একটু করে মরি | বয়স দিনেদিনে বৃদ্ধি পায়; আয়ু দিনেদিনে ক্ষয় হয়; সমতুল্য- 'আয়ুর্যাতি দিনে দিনে'। |
আমরা যতই জানি ততই নিজের অজ্ঞানতা আবিস্কার করি | জ্ঞানী জানে যে সে কিছুই জানে না; বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি- রবীন্দ্রনাথ। |
আমাদের প্রধান বিশ্বাসগুলি হল অন্ধবিশ্বাস | রিপু নামক অন্ধকারের তাড়নায় কেউ আলোর (সত্য) খোঁজ পায় না; বিশ্বাস যুক্তির ধার ধরে না। |
আমার আমার যত করি, চিনির বলদ হয়ে মরি | সংসারীরা আসলে ভারবাহী জন্তুছাড়া আর কিছু নয়; সংসারের ভার বইতে গিয়ে তারা সুখ আর উপভোগ করতে পারে না। |
আমার নাম নিতাই, এক খাই আর এক থিতাই | অতি সতর্কলোক, যে বর্তমানের সাথে সাথে ভবিষ্যতেরও সংস্থান করে থাকে; যে ব্যক্তি অভিষ্ট বস্তু পাওয়ার পর পুনরায় সেটা পাওয়ার চেষ্টা করে তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য। |
আমার পরে পৃথিবী ধ্বংস/মহাপ্লাবন | আমি নেই তো পৃথিবী নেই; সুতরাং আমার কোন ভাবনাও নেই; তুলনীয়- 'চোখ বুজলে সব অন্ধকার'। |
আমার বুদ্ধি শোনো, ঘরদোর ভেঙে ফেলে নটে শাক বোনো | মানুষ ভাবে সে বড় বুদ্ধিমান; স্বভাবদোষে সবাইকে পরামর্শ দেয়; এমনকি যে নিজের ভালমন্দ বোঝে না সেই নির্বোধও অপরকে পরামর্শ দিয়ে যায়; আহাম্মক আহাম্মকের মতই পরামর্শ দেয়; তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আমার হাতদুটি ধর, তাহলোেই তোমার হাতদুটি আমার ধরা হবে | মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য; একতাই বল; আমরা পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় বাঁচি। |
‘আমি আমি’ করেই মানুষ মল | অহংকারেই মানুষ মরে। |
আমিও ফকির হলাম দেশেও আকাল (মন্বন্তর) এলো | জীবিকা নির্বাহের জন্য একব্যক্তি ফকির হয়েছিল এই আশায় যে ভিক্ষালব্ধ অর্থে জীবনধারণ করবে; কিন্তু তার এমনই দুর্ভাগ্য যে সেই সময় দেশে আকাল এলো; ফলে তার ভিক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠল; কোন কাজ অস্বাভাবিকভাবে বাধাপ্রাত হলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়। |
আমি কম্বল ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু কম্বল আমায় ছাড়ছে না | বিপদ এড়াতে চাইলে কি হবে, বিপদ আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকে; (উৎসকাহিনী- একটা ভাল্লুক নদীতে ভেসে যাচ্ছিল; ভাল্লুককে কম্বল ভেবে সেটা নিতে একটি লোক নদীতে নামে; সে ভাল্লুককে জড়িয়ে ধরলে ভাল্লুকও তাকে জড়িয়ে ধরে; কেউ কাকে ছাড়ে না; লোকটি ডুবে যাচ্ছে দেখে তীরের বন্ধু তাকে কম্বল ছেড়ে দিয়ে উঠে আসতে বলে; উত্তরে লোকটি তখন উপরোক্ত বাক্যটি বলে; কোন বিরক্তিকর কাজ ছেড়ে দিতে চাইলেও ঘটনাক্রমে সেই কাজ থেকে মুক্তি না পেলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'হাম ছোড়া লেকিন কমলি ছোড়তা নেহি'। |
আমি কি নাচতে জানিনে, মাজার ব্যাথায় পারিনে | মিথ্যা ওজরে নিজের অক্ষমতা ঢাকার অপচেষ্টা। |
আমি কি নেড়ি ভেড়ি আমার পাঁচখানা কাপড় ধোপার বাড়ী | গরিবের বড়লোকী চাল; কিছু নেই তবু তার বড়াইয়ে কার্পণ্য নেই; সম্পদের প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা। |
আমি জানি না-বলতে শেখাটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা-হিব্রু প্রবাদ | কারো পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়; জানতে জানতে জানা যায়; জানার কোন শেষ নাই। |
আমি জীবনপাত্রের তলানিটুকু নিঃশেষে পান করব- মিলটন | জীবন চুটিয়ে ভোগ করার লিপ্সা; চার্বাকী দর্শন- 'হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয়'। |
আমি নেই তো জগৎ নেই | আমি মরল সব শেষ; ভবিষ্যৎ সম্পর্কেে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই; সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরের মত চিন্তাধারা; সমতুল্য- 'আমার পরে মহাপ্লাব'; 'চোখ বুজলে সব অন্ধকার'। |
আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে | হতভাগ্যের ভাগ্য কখনো ফেরে না; অভাগার অদৃষ্ট কখনো সঙ্গ ছাড়ে না; সমতুল্য- 'অভাগা যে দিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়'; 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে'; 'পোড়া কপাল জোড়া লাগে না'। |
আমি যা বলি তাই কর আমি যা করি তা নয় | এমন অনেক মহানচরিত্রের মানুষ আছেন যাঁরা সদুপদেশ দেন কিন্তু নিজেরা অনুরূপ আচরণ করেন না; তাঁরা অবশ্য নিজেদের চারিত্রিক দুর্বলতাসম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন এবং সেটা তারা স্বীকারও করেন; তুলনায়- 'মাকড় মারলে ধোকড় হয়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরোপদেশে পাণ্ডিত্যং সর্বেষাং সুকরং নৃণাম্'। |
‘আমি’ যাবে মলে | অহমহমিকাবোধ নিয়ে মানুষ মরে। |
আমি যার করি আশ সেই করে সর্বনাশ | যার কাছ থেকে সাহায্য প্রত্যাশা করা হয় সেই উল্টে সর্বনাশ করে। |
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি১ | উপরতলায় গলাগলি, নীচের তলায় হেলাফেলা; পাঠান্তর- 'আমে দুধে এক হয়,আদাড়ের আঁটি আদাড়ে যায়'। |
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি | যোগ্য যোগ্যের সাথে মিলিত হয়, নিস্প্রয়োজনীয় বস্তু ফেলা যায়। |
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি৩ | দুইপক্ষের মধ্যে মিমাংসা হয়ে গেলে মধ্যস্থকারী সরে যায়। |
আমে ধান তেঁতুলে বান- খনা | আমের ফলন বেশি হলে ধান বেশি ফলে; তেঁতুলের ফলন বেশি হলে দেশে বন্যা হয়। |
আয় বুঝে ব্যয় কর | অপব্যয় করো না, মিতব্যয়ী হও; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নাও'; 'ওজন বুঝে চল'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটো'; 'জিত্নি চদ্দর দেখো, উৎনি পৈর ফৈলাও' ইত্যাদি |
আয়না যে মুখ দেখে সেই মুখ দেখায় | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; ধাক্কা দিলে পাল্টা ধাক্কা খেতে হয়; সমতুল্য-'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়';'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে','চড় মারলে চড় খেতে হয়';'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি। |
আয়-ব্যয় শূন্যস্থিতি | যা আয় হয় সব খরচ হয়ে যায়, কিছুই বাঁচে না; টানাটানির সংসার। |
আয়ুর্ম্মর্ম্মাণি রক্ষতি | সকলসঙ্কট থেকে আয়ু প্রাণকে রক্ষা করে; আয়ু থাকলে কেউ মরে না; তুলনীয়- 'রাখে কেষ্ট/হরি মারে কে?' |
আয়ুর্যাতি দিনেদিনে | আয়ু দিনেদিনে ক্ষয় হয়; বয়বৃদ্ধির সাথেসাথে আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলি। |
আর কি নেড়া বেলতলায় যায় | যে একবার ঠকেছে সে খুব সতর্ক থাকে যাতে দু'বার ঠকতে না হয়। |
আর গাব খাব না, গাবতলা দিয়ে যাব না; গাব খাব না ত খাব কি, গাবের মত আছে কি | তৃপ্তিসাধনে কিছু করে বিপদে পড়লে দ্বিতীয়বার তা না করার প্রতিজ্ঞা করে; কিন্তু বিপদ থেকে মুক্ত হলেই আগের মূর্তি ধরে; লোভ-রিপুকে সম্বরণ করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। |
আরগুণ নাই ছারগুণ আছে | আর কোন গুণ নেই, শুধু নষ্ট করার গুণ আছে; কোন ভালগুণ নেই, শুধু মন্দগুণ আছে; দুঃখনাশের গুণ নেই, শুধু দুঃখবৃদ্ধির গুণ আছে; পাঠান্তর- 'অরগুণ নাই বরগুণ আছে'। |
আরম্ভ করলে শেষ হতে আর কতক্ষণ? | আরম্ভ করতেই অর্ধেক সময় যায়; আরম্ভ করলেই অর্ধেক কাজ সমাপ্ত |
আরম্ভ করলে শেষ দেখে ছাড়তে হয় | আধা-খেঁচড়া কাজ করা উচিত নয়। |
আরম্ভসদৃশোদয়ঃ | যেভাবে আরম্ভ হয় শেষ বা সমাপ্তিও সেইভাবে হয়। |
আরশোলা হল পাখি, রইল কী আর দেখতে বাকি | ডানা থাকলেই পাখি হয় না; কাগজ নাড়াচাড়া করলেই বিচারক হয় না; দুই অসম বিষয়ের তুলনা হয় না; কিসে আরে কিসে সোনা আর সিসে; যে যা নয় সেই দাবী করলে এই প্রবাদ তার প্রতি ব্যঙ্গ হিসাবে প্রযোজ্য হয়; পাঠান্তর-আরশোলাও পাখি, মুন্সেফও হাকিম'। |
আরাম অলসের ধন | অলসব্যক্তি খুব আরামপ্রিয় হয়। |
আরাম হারাম হায় | আরাম করা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর; পরিশ্রমই শেষ কথা। |
আরের দাঁত আড় ছিরে বুড়োর মাড়ি | সমর্থলোক দাঁত দিয়ে যে কাজ করতে পারে একটা বুড়োলোক মাড়ি দিয়ে সেইকাজ অনায়াসে করতে পারে; অপরে বহু আয়াসে যেকাজ করতে পারে ব্যক্তিবিশেষে সেই কাজ অনায়াসে করতে পারে। |
আরের মন আর দিকে চোরের মন বোঁচকার দিকে | কোন লোকে কেবল নিজের স্বার্থের দিকে নজর রাখলে এই বাক্য প্রযুক্ত হয় |
আলখাল্লা/আলখিল্লা পরলেই মোল্লা হয় না | পোষাক সত্যকথা বলে না; বাহ্যিক আড়ম্বরে ধার্মিক হওয়া যায় না; অন্তরে ভক্তি ও নিষ্ঠা থাকা প্রয়োজন; সমতুল্য-'চকচক করলেই সোনা হয় না'; 'তিলক পরলেই বৈষ্ণব হয় না';'পৈতা থাকলেই বামুন হয় না'; 'মন্দিরে গেলেই সাধু হয় না' ইত্যাদি। |
আলগা চুলে খোঁপা বাঁধা১ | দুর্বলের উপর সবলের বলপ্রয়োগ। |
আলগা চুলে খোঁপা বাঁধা২ | শিথিলব্যবস্থাকে অনুশাসনের মধ্যে আনা। |
আলগা জিহ্বা দুষ্ট দুটোহাত থেকেও খারাপ | অসংযত কথাবার্তা বলে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
আলগা পেলে সন্ন্যাসীও মাতে | কঠোর অনুশাসন কারও মনঃপুত নয়; মনোরম ঢিলেঢালা জীবন পরম আদরণীয়; সবাই রিপুর অধীন; সাধুসন্ন্যাসীরাও বাদ যায় না। |
আলগা মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়/হাগে | নরম লোক পেলে সাবাই তার উপর আধিপত্য ফলায়। |
আল ভেঙে জল যাচ্ছে, ভালুকে তালি মারছে | একজনের ক্ষতিতে অন্যজনের আনন্দ প্রকাশ। |
আলস্যং হি মনুষ্যানাং শরীরস্থো মহান রিপু | শরীরের আলস্য মানুষের প্রধান শত্রু; |
আলস্য হেন ধন থাকতে দুঃখের অভাব কি? | অলসে দুঃখভোগ করবে এটা সুনিশ্চিত; অলসের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
আলার নীচেই কালা রয়েছে | প্রদীপের নীচেই অন্ধকার থাকে; ঈশ্বরের পিছনেই শয়তানের বাস; শয়তান পিছু ছাড়ে না; পারস্পরিক সহাবস্থান। |
আলালের ঘরের দুলাল | ধনীর ঘরের অতি আদরের ও আবদারে সন্তান যে অতিরিক্ত আদরযত্ন পেয়ে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। |
আলো এলে অন্ধকার পালায় | জ্ঞানের আলোতে মানুষের মনের অন্ধকার দূর হয়। |
আলোচাল দেখলে ভেড়ার মুখ চুলকায় | ঈপ্সিতলোভের জিনিস দেখলে সবারই লালসা বৃদ্ধি পায়। |
আলো বাতাস বেঁধো না, রোগ ঘরে ডেকো না- খনা | শরীরমন সুস্থ রাখার জন্য ঘরে আলোবাতাস থাকা/খেলা প্রয়োজন। |
আলোর পর আঁধার আসে | সুখ ও দুঃখ ঘুরে ফিরে আসে; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'। |
আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুঁইড়া দেয | ঈশ্বর যখন দেন ঢেলেই দেন; তুলনীয়- 'ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়'; 'ভাগ্যবানের প্রতি ভগবান অকৃপণ'; 'সৌভাগ্যবান বিধির বরপুত্র'। |
আল্লা হরি আমি গাছের থেকে পড়ি | মনে সন্দেহ থাকলে কার্যসিদ্ধি হয় না; (উৎসকাহিনী- এক মুসলমান ও এক হিন্দুর মধ্যে তর্ক বাঁধে- আল্লা বড় না, হরি বড়; মুসলমান বলে আল্লা বড়; হিন্দু বলে হরি বড়; তর্কের মিমাংসায় তারা স্থির করে- নিজেদের ইষ্টদেবতার নাম করে গাছ থেকে ঝাঁপ দেবে; সেই অনুসারে মুসলমান আল্লা বলে উঁচুগাছ থেকে ঝাঁপ দেয়; তার কোন ক্ষতি হয় না; সন্দেহবাতিক হিন্দু 'আল্লা হরি আমি গাছের থেকে পড়ি' বলে গাছ থেকে ঝাঁপ দেয় এবং ঠ্যাংদুটি ভাঙে।) |
আশমান জমিক ফারাক | বিরাট তফাৎ; আকাশ ও পাতালের মত বিশাল দুরত্ব। |
আশা আর ফুঁ আছে, দুধ আর বাটি নেই | গরম দু্ধ ফুঁ দিয়ে খাবার ইচ্ছা হয়, কিন্তু দুধও নেই বাটিও নেই; ঈপ্সিত বস্তুর অভাব হলে এই বাক্য ব্যবহৃর হয়; অভাগার হাহুতাশ। |
আশা আর বাসা ছোট করতে নেই | আশা থাকলে তা পাওয়ার চেষ্টা থাকে; চেষ্টা থাকলে সাফল্য আসে; সুতরাং আশা বড় হলে সাফল্যও বড় হয়; ছোটকুঠরীতে স্বচ্ছন্দে বাস কর যায় না; ছোটছোট বিষয় মনকে সঙ্কীর্ণ করে, হতাশাগ্রস্ত করে। |
আশাই পরম সুখ আশাই পরম দুখ | সীমাহীন আশার একটা পূর্ণ হলে আরেকটা এসে উপস্থিত হয়; সুতরাং সুখভোগ আর হয় না; আশা নিবৃত্ত করতে পারলে নৈরাশ্যের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। |
আশা করে ঘর বাঁধে কেউ হাসে কেউ কাঁদে | সবার ঘর-সংসার করা সুখের হয় না। |
আশা করেছেন কাও পাকলে খাবেন ডেও | যেদিন ড্যাফল পাকবে সেসিন খাবে সেই আশায় কাক অপেক্ষা করে আছে; খুব দূরবর্তী আশা করে কেউ বসে থাকলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আশা গরিবের খাদ্য | আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। |
আশাবধিং কো গতঃ | আশার অবধি বা শেষ নেই; আশার সীমা পর্যন্ত কেউ পৌঁছাতে পারে না; আশা অনন্ত ও অসীম। |
আশা বৈতরণী নদী | পাপীরা যার অন্ত পায় না (পাপীরা স্বর্গে যেতে পারে না) সেই বৈতরণী নদীর মত আশারও কোন অন্ত নাই। |
আশমান জমিন ফারাক | বিপুল পার্থক্য। |
আশায় আমার পড়ল ছাই এখন বল কোথায় যাই | আশাভঙ্গে চরম হতাশা। |
আশায় খেলিছে পাশা | মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে, আশা নিয়ে মরে। |
আশায় বাঁচে চাষা | গরিবেরা এই আশা নিয়েই বেঁচে থাকে যে একদিন-না-একদিন তাঁদের ভাগ্য ফিরবে, সুদিন আসবে। |
আশায় মরে চাষা | আষাঢ়মাসে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার আশায় এবং না হওয়ার আশঙ্কায় সবসময় চাষা আতঙ্কিত থাকে। |
আশার অর্ধেক ফল | সবসময় আশানুরূপ ফল হয় না; অর্ধেক হলেই যথেষ্ট পাওয়া হয়; যথা লাভ। |
আশার চেয়ে নিরাশা ভাল, হয়ে গেল তো হয়ে গেল | আশায় না থাকলে নিরাশ হতে হয় না; ফলে দুঃখ পেতে হয় না। |
আশার শেষ নেই | আশা কুহকিনী; দরিদ্র চায় লাখোপতি হতে; লাখোপতি চায় ক্রোড়পতি হতে; ক্রোড়পতি চায় কুবেরের ধন; কামনা-বাসনার কোন শেষ নেই। |
আশাহি পরমং দুঃখং, নৈরাশ্যং পরমং সুখং | আশার সীমা নেই; একটা আশা পূর্ণ হলে আরেকটা আশার জন্ম হয়; সুখভোগ আর হয় না; সুতরাং আশা ত্যাগ করতে পারলেই প্রকৃত সুখলাভ হয়। |
আশ্বিন মাসে কুঠে (কুষ্ঠরোগগ্রস্ত) পাঁঠাতেও কড়ি | দুর্গাপুজার সময় সকল প্রকার পাঁঠা চড়া দরে বিক্রি হয়; দরকারের সময় মন্দ জিনিসও ভালও দামে বিক্রি হয়; উপযুক্ত সময়ে লোকে লাভবান হয়। |
আশ্রয়, ফল ও ছায়া বড়গাছের তলায় নিতে হয় | বটগাছের তলায় আশ্রয় নিলে ফল না পেলেও আশ্রয় ও ছায়াতো পাওয়া যাবে; সবসময় বড়ঘাটে খেয়া বাঁধতে হয়, ক্ষমতাবান লোকের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিতে হয়। |
আষাঢ়মাস চাষার আশ | চাষা আশা করে বসে থাকে আষাঢ় মাসে সময়মত বৃষ্টি আসবে এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হবে। |
আষাঢ়ে গল্প | কল্পনামূলক, আজব বা অবাস্তব গল্প; উৎস-আষাঢ় মাসের অঝোরে বৃষ্টি পড়ার কালে অলস মুহূর্তের গল্পের আসর থেকেই ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে। |
আষাঢ়ে না হলে সূত, হা সূত যো সুত; ষোলতে না হলে পুত হা পুত যো পুত | আষাঢ়মাসের দিনগুলি দীর্ঘ হয়; সেইসময় সূতা না কাটলে সূতা পেতে কষ্ট হয়; ষোলবৎসর বয়সে কোন স্ত্রীলোকের সন্তান না হলে পরে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে; সময়ের কাজ সময়ে করার জন্য চেতাবনী। |
আসতেও একা, যেতেও একা, কার সঙ্গে বা কার দেখা | কেউ কারো নয়, জগত মায়াময়; সমতুল্য- 'তুমি কার, কে তোমার, কারে বলরে আপনার'? |
আসনং চালয়েৎ দৃষ্ট্বা পথি নারী বিবর্জিতা। জাগরণে ভয়ং নাস্তি অতিক্রোধো নিবর্যতে।। (চাণক্য) | আসন দেখে চালনা করতে বসতে হয়; পথ চলতে ত্রীলোককে সঙ্গে নিতে নেই; জেগে থাকলে ভয় নেই; ক্রোধ সবসময় সংবরণ করবে। |
আসন্নকালে বিপরীতা বুদ্ধি১ | মৃত্যু আসন্ন হলে ভালকে মন্দ এবং মন্দকে ভাল মনে হয়; তুলনীয়- 'বিনাশ/মরণ কালে বিপরীতবুদ্ধি'। |
আসন্নকালে বিপরতা বুদ্ধি২ | অবস্থা শোচনীয় হলে কার্যকলাপও দুর্বুদ্ধিপ্রসূত হয়; উচ্ছন্নে যাওয়ার সময় লোকের মন্দবুদ্ধি বেশি কাজ করে। |
আসন্নকালে বিপরীতা বুদ্ধি৩ | বিপদকালে মানুষের বুদ্ধিভ্রম হয়; সঠিক কাজ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলে। |
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া১ | নিজের ঘর না সামলে পরের ঘর সামলানো; পাঠান্তর-'আসলে মুষল নেই ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া'। |
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া২ | প্রয়োজনের দিকে নজর নেই অপ্রয়োজন নিয়ে বাড়াবাড়ি; আবশ্যক কাজে অবহেলা অনাবশ্যক কাজে গুরুত্ব দেওয়া। |
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া৩ | সংগতিহীন হয়েও বড়মানুষি চাল; সমতুল্য- 'ভিতরে ছুঁচোঁর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'। |
আসল ছেড়ে ছায়ার পিছনে ছূটো না | অনিশ্চিতের আশায় নিশ্চিত ত্যাগ করো না; ঘরের মুরগী ছেড়ে বনের মুরগীর পিছনে ছুটো না। |
আসলের খোঁজ নেই, তার সুদের খবর | আসল ফিরে পাবার সম্ভাবনা নেই, অথচ তার সুদের জন্যে ব্যস্ততা; ক্ষুদ্রস্বার্থের জন্য বৃহৎস্বার্থ ত্যাগ। |
আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি১ | আসলের চেয়ে সুদের কদর বেশি; মহাজন আসল ফেরত পাওয়া থেকে সুদ পেতে বেশি পছন্দ করে। |
আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি২ | দাদাঠাম্মার কাছে ছেলে থেকে নাতির আদর বেশি হয়। |
আসেন লক্ষ্মী যান বালাই১ | সৌভাগ্য এলে দুর্ভাগ্য কাটে। |
আসেন লক্ষ্মী যান বালাই২ | যার উপস্থিতিতে কিছু আসে যায় না অর্থাৎ এলেও লাভ নেই গেলেও ক্ষতি নেই তার সম্পর্কে প্রযোজ্য। |
আস্কে (পিঠে) খায় তার ফোঁড় গোণে না | আসকে চালের গুঁড়ো গিয়ে তৈরী একপ্রকার ফোঁড়যুক্ত পিঠে; খাবার সময় কেউ নজর করে না আস্কেতে কয়টা ফোঁড় আছে; যারা খায়দায় স্ফুর্তি করে বেড়ায় কিন্তু খবর রাখেনা কোথা থাকে খাবার দাবার আসছে তাদের লক্ষ্য করে এই প্রবাদ বলা হয়; তুলনীয়- 'কত ধানে কত চাল তার হিসাব রাখে না' 'গকুলের ষাঁড়'; 'গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো লোক'। |
আস্কে (পিঠে) খেয়েছো তার ফোঁড় গোন নি? | আস্কে খাওয়ার সুখ পেয়েছো কিন্তু উত্তাপে তার গায়ে কত ফোঁড় হয়েছে তা গোণার কষ্ট সহ্য করো নি? (আস্কেপিঠের ফোঁড় গোনা সম্ভব নয়); পরিনামের কথা চিন্তা না করে কোন দুরুহ কাজ সহজ মনে করার প্রতি চেতাবনি; তুলনীয়- 'ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখ নি'। |
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না১ | নীচ কখনো উঁচুপদ লাভের উপযুক্ত হয় না। |
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না২ | নীচ কখনো উঁচুমনের পরিচয় দেয় না; নীচ কখনো মহৎকার্য করে না। |
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না৩ | পরমুখাপেক্ষী কখনো সমৃদ্ধিলাভ করে না। |
আহাম্মক তিন যায়গায় বিষ্ঠা মাখে | ভুলবশতঃ প্রথমে পায়ে; সন্দেহ হওয়াতে পা থেকে আঙুলে; নিঃসন্দেহ হতে আঙুল থেকে নাকে; আহাম্মকির পরাকাষ্ঠা |
আহাম্মক যে হয়, পিছনে সে কথা কয় | পিছনে কথা বলা যুক্তিযুক্ত নয়। |
আহাম্মক এক, যে পরের মালে করে টেঁক; | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক দুই, যে পরের চালে তোলে পুঁই | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক তিন, যে ঋণ করে দেয় ঋণ | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক চার, যে মধ্যস্থ হয়ে খায় মার | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক পাঁচ, যে পরের পুকুরে ছাড়ে মাছ | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক ছয়, যে একের কথা আরে কয় | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক সাত। যে শ্বশুরবাড়ী খায় ভাত | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক আট, যে মাগকে পাঠায় হাট | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক নয়। যে ঘর থাকতে পরের ঘরে রয় | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মক দশ, যে মাগের কথায় বশ | অর্থ স্পষ্ট। |
আহাম্মকের সাথে তর্ক করো না, মানুষ ভুল করে তোমাকে আহাম্মক ভাবতে পারে | বুদ্ধিমান আহাম্মকের সাথে তর্ক করে না; আহাম্মকের সাথে তর্ক করার অর্থ পাথরে মাথা ঠোকা। |
আহার করবে ধীরে, কোনদিকে না চাবে ফিরে | স্বস্থ্যের কারণে বৈদ্যের বিধান। |
আহার নিদ্রা ভয় যতই করবে ততই হয় | আহার, নিদ্রা ও ভয় যতই বাড়িয়ে যাওয়া যায় ততই বাড়তে থাকে। |
আহুঃ সপ্তপদী মৈত্রী | যার সাথে সাত পা হাঁটা যায় তার সাথে বন্ধুত্ব হয়। |
আহ্লাদে আটখানা, ল্যাজা মুড়ো দশখানা | বেজায় খুশি; আনন্দের সীমাপরিসীমা নেই; যে সামান্য বিষয় নিয়ে অযথা আনন্দ প্রকাশ করে তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
আহ্লাদে আটখানা মূল্য পাঁচ-আনা | আহাম্মকের অতিরিক্ত আহ্লাদের প্রতি তির্যকোক্তি। |
আহ্লাদে পুতুল | কেবল আমোদপ্রমোদে রত দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি। |
ই/ঈ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ইঁচোড়ে পাকা | অকালপক্ক; ইঁচোড় অবস্থায় কাঁঠাল পাকলে স্বাদ-গন্ধ কিছু থাকে না; সেইরকম অকালপক্ক ছেলের মুখে বিজ্ঞের মত কথাবার্তা শুনলে বিস্বাদ বিসদৃশ লাগে। |
ইঁদুর চেনে না ভাগবত পুঁথি | নির্গুণ গুণীর কদর বোঝে না। |
ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে১ | একদল কষ্ট করে অন্যদলে তার ফল ভোগ করে; তুলনীয়- 'উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ'; 'কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ;। |
ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে২ | দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার করে; প্রকৃতির নিয়ম হল- যোগ্যতমের জয়। |
ইঁদুর ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালায় | মানুষ বিপদে পড়লে উপকৃতরা আগে তাকে ছেড়ে পালায়। |
ইঁদুর বিড়াল দৌড় খেলা | পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা; স্বার্থসিদ্ধির বা নিজের উন্নতির জন্য বেপরোয়া প্রতিযোগিতা। |
ইকড়ি মিকড়ি চাম-চিকড়ি, চামের কাঁটা মজুমদার | আপাতঃ অর্থহীন অথচ অসাধারণ অর্থপূর্ণ শিশুদের একটি ছড়া (ড. মোহাম্মদ আমীন সাহেবের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) |
ইক্ষু পিষ্ট হলেও মিষ্টত্ব ত্যাগ করে না | কোন অবস্থাতেই গুণী তার গুণ হারায় না। |
ইঙ্গিতে বুঝলে মন কাজ হতে কতক্ষণ | মন পড়তে পারলে কাজ আদায় করতে বেশি দেরী হয় না। |
ইচ্ছা আছে যার উপায়/পথ আছে তার | ইচ্ছা থাকলে কাজের উপায় বেরুবেই; যতই দুরুহ হোক-না-কেন উপায়জ্ঞের কাছে সবকাজই সহজসাধ্য মনে হয়; ইচ্ছুকের কাছে কিছুই অসম্ভব নয়; পাঠান্তর- 'ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়'; 'উপায় থাকলেই কার্যসিদ্ধি হয়'। |
ইচ্ছা ঘোড়া হলে সব অভাবীরা তার ওপর চাপ'ত | ইচ্ছাতে পেট ভরে না; শুধু ইচ্ছা থাকলেই বৈতরণী পার হওয়া যায় না; পরিশ্রম চাই; সৌভাগ্যবানের ইচ্ছার সাথে পরিশ্রমের আগ্রহ থাকে। |
ইচ্ছাকৃতভাবে যে তোমার দিকে একটা আঙুল বাড়ায় সে তোমার দিকে তার সমগ্র হাতও বাড়াবে- জিপসি প্রবাদ | যে সাহায্য করতে চায় সে মনেপ্রাণেই সাহায্য করতে চায়। |
ইচ্ছার ভার বোঝা মনে হয় না | যার কাজ করার ইচ্ছা আছে সে আনন্দের সাথে কাজ করে; তার কাছে কাজ করাতে কষ্টবোধ হয় না। |
ইজ্জত দৌলতে বজায় থাকে | অর্থই ইজ্জত পরিমাপের মাপকাঠি। |
ইজ্জত যাওয়ার আগে প্রেস্টিজ যায়- রবীন্দ্রনাথ | ইংরাজীয়ানারপ্রতি প্রবলপ্রীতির বিরুদ্ধে কবিগুরুর বিদ্রুপোক্তি। |
ইজ্জত যায়না ধুলে স্বভাব যায় না মলে | মানীর মান নষ্ট হওয়া যেমন কঠিন, বদলোকের স্বভাব পরিবর্তন হওয়াও তেমন কঠিন। দুটি চিরসত্য এক প্রবাদে বলা হয়েছে। |
ইজ্জতের দাম লাখ টাকা | ইজ্জত হেলাফেলা করার বিষয় নয়। |
ইট পড়লে পাটকেলও পড়ে | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; কারো সাথে দুর্ব্যবহার করলে প্রতিদানে দুর্ব্যবহার পেতে হয়; সমতুল্য- 'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে/থাকে'; 'চড় মারলে চড় খেতে হয়'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়'। |
ইটে নাই ভিটে নাই বাইরে মর্দানী | ঘরে অন্ন নেই, বাইরে বাবুয়ানা; সমতুল্য- 'ফতো নবাব';
'ফতোবাবুর ফুটানি'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন' ইত্যাদি । |
ইতরতাপশতানি যথেচ্ছয়া বিতর তাহে সহে চতুরানন, অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম শিরসি মা লিখ মা লিখ মা লিখ | কবি দুঃখ করে বলেছেন- হে বিধাতা তুমি আমার অদৃষ্টে অন্য যতপ্রকার দুঃখ আছে লিখে দাও কিন্তু অরসিক লোকের কাছে রসের নিবেদনরূপ দুঃখ আমার অদৃষ্টে লিখিও না, লিখিও না, লিখিও না। |
ইতর সন্তোষ প্রকাশ করে ব্যবহার মত | নীচমনোভাবাপন্ন লোকের ভালমন্দ বিচারের মাপকাঠি হল তার প্রাপ্তির পরিমাণ। |
ইতিহাস হল বিজয়ীর লেখা বিজিতে সম্পর্কে একরাশ মিথ্যা ও কুৎসা | বিজয়ীরা ইতিহাস লেখে, পরাজিতরা নয়; পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ইতিহাস রচিত হয়। |
ইতো ভ্রষ্টস্ততো নষ্টঃ | এদিকও গেল ওদিকও গেল, কোনদিক আর রইল না; সমতুল্য- 'একুল ওকুল দুকল যাওয়া';পাঠান্তর- ইতো নষ্টঃ ততো ভ্রষ্টঃ। |
ইন্দুর উই কুজন ভাল ভাঙ্গে তিনজন; সূঁচ সোহাগা সুজন ভাল করে তিনজন | ইঁদুর উই এবং অসাধুলোক সব নষ্ট করে; অপরপক্ষে সূঁচ সোহাগা এবং সাধুলোক সব ভালো করে। |
ইন্দ্রোহপি লঘুতাং যাতি স্বয়ং প্রখ্যাপিতৈর্গুণৈঃ | স্বয়ং ইন্দ্রও যদি নিজের প্রশংসা করেন তবে তিনি লঘুত্বপ্রাপ্ত হন; নিজেকে যে বড় বলে সে বড় নয়। |
ইল্লত যায় ধুলে. স্বভাব যায় মলে | জল দিয়ে ধুলে যেমন নোংরাস্থান পরিষ্কার হয়, তেমনি মৃত্যুর পর মানুষ কলঙ্কমুক্ত হয়; বিপরীত উক্তি-'ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে'। |
ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে | জল দিয়ে ধুলে যেমন সব নোংরা যায় না, তেমনি স্বভাবও আমৃত্যু বদলায় না; সমতুল্য- 'অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'; 'কয়লা ছাড়ে না ময়লা'; 'দুধ খাওয়ালেও সাপের বিষ কমে না'; 'দুধ ঢাললেও নিম নিষ্টি হয় না'; 'যার যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ' ইত্যাদি। |
ইসারায় দিশাহারা | প্রলোভনে বিভ্রান্তি। |
ইস্তক জুতো সেলাই, নাগাদ/লাগাত চণ্ডীপাঠ | মুচির জুতাসেলাই থেকে ব্রাহ্মণের চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সব কাজ; সংসারের যাবতীয় ভালমন্দ কাজের কাজি। |
ঈদের চাঁদ / ঈদকা যাঁদ | যে চাঁদ দেখার জন্য সমগ্র মুসলমানজগৎ উদ্গ্রীব থাকে অথচ সহজে দেখা পায় না; দুর্লভদর্শন; তুলনীয়- 'ডুমুরের ফুল'। |
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগৎ্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্॥ (উপনিষদ) | ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু অনিত্যবস্তু, সবই ঈশ্বরের দান। ত্যাগের মধ্য দিয়ে ভোগ কর। কারও ধনে লোভ করো না। |
ঈশানকোণের মেঘ | সঙ্কটের পূর্বাভাস |
ঈশান কোণের মেঘে ঝড় ওঠে বেগে | উত্তর-পূর্ব কোণে মেঘ জমলে ঝড় অবশ্যাম্ভাবী। |
ঈশ্বরই একমাত্র সত্য | সত্যই চরম, পরম ও শেষ কথা; সত্যকে ধ্যান করা উচিত; তুলনীয়- 'সত্যম্ পরম্ ধীমহি'। |
ঈশ্বর ঈশ্বর করে যেই, তার ঘরে ভাত নেই | শুধু ভজনায় কার্যসিদ্ধি হয় না; ঈশ্বর কোথাও বলেন নি যে কাজ না করে ফল পাওয়া যায়। |
ঈশ্বর করেন কাম, মানুষের বদনাম | আমরা যন্ত্র তিনি যন্ত্রী যেমন চালান তেমনি চলি; সুতরাং কোন দোষ হলে সেটা তাঁরই দোষ। |
ঈশ্বর যদি করেন, কর্তা যদি মরেন তবে ঘরে বসে কীর্তন শুনবো | পরের বাড়ীতে কীর্তন শুনতে না পেরে এক আহাম্মক স্ত্রীলোকের খেদোক্তি; (এক মুখরানারী পরের বাড়ীতে কীর্তন শুনতে না গিয়ে বসার জায়গা না পেয়ে রেগে গিয়ে সকলকে শুনিয়ে বলে যে ঈশ্বরের ইচ্ছায় কর্তা অর্থাৎ স্বামী যদি মারা যায় তবে সে নিজের বাড়ীতে আসর বসিয়ে কীর্তন শুনবে; ক্ষুদ্র-অভিলাষের পূরণের জন্য কেউ যদি বেশি ক্ষতিস্বীকারের ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
ঈশ্বর যখন দেন অল্প অল্প দেন /দু'হাত ভরে দেন | ভাদ্য প্রসন্ন হলে কল্যাণকর বিষয়গুলি পরপর আসতে থাকে; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুইড়া দেয়'; 'বিধি যখন মাপায় উপরি-উপরি মাপায়'; 'সৎকল্যাণপরম্পরা'। |
ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন | ঈশ্বরের ইচ্ছা অনিচ্ছা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এই বিশ্বাস এই ভাবনা মনে রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হয় না; মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। |
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি | ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজ করেন। |
উ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
উঁচান বাড়ি বড় ভয়, পড়লে বাড়ি সয়ে যায় | উঁচানো লাঠি দেখলে ভয় হয় কতনা লাগবে; লাঠি পড়লে সয়ে যায়; তেমনি কাজ শুরুর আগে ভয় হয়; অথচ কাজ একবার শুরু হলে অতি কঠিন কাজও সহজে সম্পন্ন হয়। |
উঁচুগাছেই ঝড় বেশী লাগে | বড়কেই সংসারের সব ঝক্কিঝামেলা সামলাতে হয়। |
উঁচুগাছেই মই বাঁধো | ফললাভের আশায় থাকলে যেখানে সম্ভাবনা বেশি সেখানেই উপস্থিত থাকতে হয়। |
উঁচুমনের মানুষ যা খোঁজে নিজের মধ্যে খোঁজে, নীচমনের মানুষ যা খোঁজে পরের মধ্যে খোঁজে- কনফুসিয়াস | মহানব্যক্তি নিজের দোষ খোঁজে পরের দোষ দেখে না;াহীনব্যক্তি পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়, নিজের দোষ গেখে না। |
উঁচী/উচী দুকান্ ফীকি পকান্ | দোকানের জাঁকজমকপূর্ণ কিন্তু মিষ্টি মিষ্টতাশূন্য; দেখনদারী; বাইরের আড়ম্বরমাত্র; সমতুল্য- 'উপরে চিকণ চাকণ ভিতরে খেড়'। |
উক্তস্য পুনঃ কথনং | কথিত বিষয়ের পুনরুক্তি। |
উঁচু যদি হতে চাও নীচু হও তবে | বিনম্রস্বভাবের লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে; নম্রতাই মহত্বের লক্ষণ; পাঠান্তর-উঁচু হবে, তবে নীচু হয় |
উঁচু হলে ঝড়ে উড়াবে, নীচু হলে ছাগলে মুড়াবে | উঁচু-নীচু, উভয় অবস্থাতেই ভয় আছে; মধ্যমপন্থা শ্রেষ্ঠপন্থা। |
উঁট কে মুঁহমে জীরা | প্রয়োজনকালে ন্যূনতম বিধান; প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম প্রাপ্তি। |
উই ইঁদু্র কুজন ভালো ভাঙে তিনজন, সুঁই সোহাগা সুজন- ভালো করে তিনজন | উই ইঁদু্র ও কুজন- এই তিনে ভালো জিনিস নষ্ট করে এবং সুঁই সোহাগা ও সুজন- এই তিনে ভালো জিনিস গড়ে তোলে। |
উকিল আর গাড়ীর চাকা তেল চর্বি দিয়ে রাখা | তেল না দিলে উভয়েই নড়ে না; খাবার পেলে সবাই দাস। |
উকিল নিজের ওকালতি করে না | তাহলোে তো নিজের পক্ষে মিথ্যাকথা বল'তে হয়। |
উকুনের দায়ে মাথা মুড়ানো | তুচ্ছ বিপদের মারাত্মক আকার ধারণ করা। |
উক্তস্য পুনঃ কথনং | উক্তবিষয়ের পুনরুক্তি। |
উচিৎকথায় আহাম্মক বেজার/রুষ্ট | উচিৎকথা কইতে মানা; উচিতকথা সবসময় তিক্ত হয়; শুনে নির্বোধও রাগ করে। |
উচিৎকথায় দেবতা তুষ্ট, উচিৎকথায় মানুষ রুষ্ট | দেবতা বা দেবতুল্যলোক উচিৎ কথা শুনে সন্তুষ্ট হন, কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানুষ মনঃপুত না হলে উচিৎকথা শুনে ক্ষেপে যায়। |
উচিতকথায় বন্ধু/মামা বেজার | ন্যায্যকথা কেউ শুনতে নারাজ; ন্যায্য তথা সত্যকথা বললে আপনজনও ক্ষুব্ধ হয়; সুতরাং মা ব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম। |
উচিৎকথার ভাত নাই | উচিৎকথা দাম পায় না। |
উচিৎকথার মার নাই | সত্যকথার বিঘ্ন নাই। |
উচোট খেয়ে প্রণাম১ | ইচ্ছা করে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম নয়; আকস্মিকভাবে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে; তাই প্রণামস্বীকার (ঠাকুরমশাই পেন্নাম হই; উঃ পায়ে বড় লাগলো); সমতুল্য-'পড়ে দিয়ে পদ্মনাভ';'হোঁচট খেয়ে প্রণাম/পদ্মনাভ'। |
উচোট খেয়ে প্রণাম২ | দায়েপড়ে কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করে ফেলা। |
উচ্চপ্রাণের লোকেরা তত্ত্ব নিয়ে চর্চা করে; মধ্যমপ্রাণেরা লোকেরা ঘটনা নিয়ে চর্চা করে; ক্ষুদ্রপ্রাণের লোকেরা পরনিন্দা করে | জ্ঞানীরা তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকে; সাধারণলোকেরা সংসারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে; হীনলোকেরা শুধু পরচর্চা পরনিন্দা করে বেড়ায়। |
উচ্ছে খাবে কচি পটল খাবে বীচি | দুইই উপাদেয় এবং স্বাস্থের পক্ষে মঙ্গল। |
উচ্ছের কচি, পটলের বীচি, ছাগলের ছা, মাছের মা- এগুলি বেছে খা- খনা | কচি-উচ্চে, পালা-পটল, কচিপাঁঠার মাংস ও পাকামাছ- এগুলি হল উপাদেয় খাদ্য। |
উছল নদীর কলকলানি বেশি১ | উদ্দাম যৌবনে চঞ্চলতা বা ঝলকানি বেশি |
উছল নদীর কলকলানি বেশি২ | অল্পজ্ঞানীরা বেশী কথা বলে বা বেশি লম্ফঝম্ফ করে। |
উজাড় (শূন্য) বনে শিয়ালরাজা | যেখানে বাধা দেবার কেউ নেই সেখানে সাধারণলোকও কর্তৃত্ব করে। |
উটের কাঁটাভোজ | অল্পসুখের জন্য বেশি কষ্টস্বীকার; পাঠান্তর- 'উষ্ট্রের কণ্টকভোজন'। |
উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে বাড়া ভাত খেয়ে | কোন কথাবার্তা নেই, কোন সম্ভাবনা নেই, হঠাৎ কাজ এসে উপস্থিত এবং 'এখনই করতে হবে' এমন অবস্থা; বিনাপ্রস্তুতিতে হঠাৎ কোন গুরুতর বা চেষ্টাসাধ্য কাজ করার আহ্বান।; সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় কাজ করার ডাক। |
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়১ | চারাগাছের পাতা দেখেই বোঝা যায় বড় গাছ কেমন হবে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কোথাকার জল কোথায় গড়ায়'; পাঠান্তর- 'উঠন্তিমূলো পত্তনিতেই চেনা যায়'। |
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়২ | কাজের আরম্ভ দেখেই বোঝা যায় কাজের শেষটা কিরকম হবে। |
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়৩ | মানুষের গুণগুলি তার শৈশবেই ভালভাবে বোঝা যায়; সমতুল্য- 'সকাল দিনের আভাস দেয়'। |
উঠল বাই তো কটক যাই | চটজলদি সিদ্ধান্ত; বিচার-বিবেচনার অবকাশ নেই; |
উঠান ভরা লাউ শশা ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা- খনা | যে চাষীর উঠান লাউ শশায় ভরে থাকে তার কোন অভাব হয় না। |
উঠোন পেরুলেই অর্ধেক সফর | কাজ শুরু হলেই অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে যায়। |
উঠে পড়ে লাগা | কোমর বাঁধা; পূর্ণোদ্যমে কাজে লাগা; সব বাধা অতিক্রম করে কোন কাজ করার চেষ্টা করা; সমতুল্য- 'আদাজল খেয়ে লাগা'। |
উড়কিধানের মুড়কি দেবো সরুধানের চিঁড়ে | অস্তিত্বহীন বস্তু; কল্পিত সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য (ছেলে ভুলানো মূল ছড়া- 'উড়কিধানের মুড়কি দেব পথে জল খেতে; সরুধানের চিঁড়ে দেব শাশুড়ি ভুলাতে'। |
উড়তে পারে না পোষ মানে | খাঁচার পাখি উড়তে ভুলে গিয়ে বাধ্য হয়ে পোষ মানে;অক্ষমের পরনির্ভরশীলতা; নিরুপায় হয়ে কোন কাজ করতে বাধ্য হওয়া। |
উড়তে পারে না ফুরফুর করে | অক্ষমের বাড়াবাড়ি; কাজ করার শক্তি নেই, তবুও কাজ করার ইচ্ছা জাগে। |
উড়ে এসে জুড়ে বসা | অযাচিতভাবে (বিনা অধিকারে) হঠাৎ এসে সর্বেসর্বা হয়ে বসা। |
উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ১ | অলভ্য, হাত ছাড়া দ্রব্য দানের ভাণ করা; তুলনীয়- 'পরের গোয়ালে গোদান'। |
উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ২ | প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে বাধ্য হয়ে কোন সৎকার্য করা। |
উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে যায় | অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বাজেভাবে খরচ হয়। |
উৎপীড়কেরা কাপুরুষ হয় | সাহসীরা দুর্বলকে আঘাত করে না। |
উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে শত্রুনিগ্রহে রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স বান্ধব | যে ব্যক্তি উৎসব বিপদকাল দুর্ভিক্ষ যুদ্ধ বিচারালয় এবং শ্মশানে পাশে উপস্থিত থাকে, সেই প্রকৃত বন্ধু- প্রকৃত বন্ধুর পরিচিতি। |
উত্তমপুরুষ যা খোঁজে নিজের মধ্যে খোঁজে, অধমপুরুষ যা খোঁজে পরের মধ্যে খোঁজে- কনফুসিয়াস | জ্ঞানীলোকেরা আত্মানুসন্ধান করে; সামান্যলোকেরা পরছিদ্রান্বেষণ করে বেড়ায়। |
উত্তমমধ্যম দেওয়া | আচ্ছা করে ধোলাই/পিটুনি দেওয়া;প্রচুর প্রহার করা |
উত্থায় হৃদি লীয়ন্তে দরিদ্রনাং মনোরথাঃ | দরিদ্রের বাসনা হৃদয়ে উদয় হয়েই বিলীন হয়; অর্থের টানাটানিতে বাস্তবায়িত হয় না। |
উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত (উপনিষদ) | ওঠো; জাগো; জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জ্ঞানপ্রাপ্ত হও। |
উদ (জল) খেতে ক্ষুদ নেই নেউলে বাজায় শিঙে | একমুঠো খুদ মুখে দিয়ে জল খাবে এমন সামর্থ নেই অথচ বাঁশি বাজিয়ে বেড়ায়; ঘরে অন্নের সংস্থান নেই বাইরে আস্ফালন করে; সমতুল্য- 'উদুখলে (শস্য রাখার পাত্র) ক্ষুদ নাই চাঁটগায়ে বরাত'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'। |
উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ | উদবিড়ালে কষ্ট করে মাছ ধরে; খটাশ এসে তাতে ভাগ বসায়; একের পরিশ্রমের ফল অন্যে এসে ভোগ করে; সমতুল্য- 'ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে'; 'কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ'। |
উদমা/উদোম ঢেঁকির হড়কা পাহার | উলঙ্গ/খোলা/নগ্ন- এমন ঢেঁকিতে পা হড়কানোর সম্ভাবনা থাকে; ফালতু কাজে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। |
উদর চিরলে ক বেরোয় না | মহামূর্খ; সমতুল্য- 'ক অক্ষর গো-মাংস'। |
উদারচরিতানান্তু বসুধৈব কুটুম্বকম | উদারচরিত্রের ব্যক্তির কাছে- জগতবাসী সকলেই আত্মীয়, আপনার জন; সমগ্র মানবজাতি একটি পরিবার। |
উদিতে তু সহস্রাংশৌ ন খদ্যোতো ন চন্দ্রমাঃ | সূর্য উঠলে চন্দ্র জোনাকি ইত্যাদি ম্লান হয়ে যায় এবং তাদের আর কোন প্রয়োজন থাকে না।। |
উদুখলে (শস্য রাখার পাত্র) ক্ষুদ নাই চাঁটগায়ে বরাত | ঘরে অন্নের সংস্থান নেই, অথচ অন্যলোককে অন্যস্থানে টাকা নেবার দায়িত্ব দেয়; নিতান্ত বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'উদ (জল) খেতে ক্ষুদ নেই নেউলে বাজায় শিঙে'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'। |
উদে (উদবিড়াল) মাছ ধরে খটাশে তিনভাগ করে | কের পরিশ্রমের ফল অন্যে ভোগ করে। |
উদো/উধোর (মূর্খ) বোঝা/পিণ্ডি বুধোর (পণ্ডিত) ঘাড়ে১ | দোষীব্যক্তির অপরাধ নির্দোষব্যক্তির ওপর পতিত হওয়া; একের কৃতকর্মের ফল অন্য একজন নিরীহব্যক্তির ঘাড়ে চাপানো; চরম বিশৃঙ্খলা; চুড়ান্ত অপশাসন; সমতুল্য- 'কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি'। |
উদো/উধোর (মূর্খ) বোঝা/পিণ্ডি বুধোর (পণ্ডিত) ঘাড়ে২ | একজনের কাজের দায় বা দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো; |
উদ্যমেন হি সিদ্ধান্তি কার্যাণি ন মনোরথৈ। নহি সুপ্তস্য সিংহস্য মুখে প্রবিশন্তি মৃগা॥ (চাণক্য) | উদ্যোগেই কার্যসিদ্ধি হয়, শুধু মনের ইচ্ছাতে হয় না; ঘুমন্ত সিংহের মুখে হরিণ স্বেচ্ছায় প্রবেশ করে না। |
উদ্যোগিনং পুরুষ্পসিংহমুপতি লক্ষ্মী দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষা বদন্তি | উদ্যোগীপুরুষ লক্ষ্মী লাভ করে; লক্ষ্মী উদ্যোগীপুরুষকে আশ্রয় করে; একমাত্র কাপুরুষেরা বলে- 'ভাগ্যে যা আছে তাই পাবো'। |
উদ্যোগীর অসাধ্য কিছুই নেই | উদ্যোগী কখনো অসফল হয় না। |
উদ্যোগীর কাছে কোন পথই দূর নয় | উদ্যোগীর কাছে কোন পথই অনতিক্রম্য নয়। |
উনপাঁজুরে বরাখুরে | লক্ষ্মীছাড়া; হতভাগা- গালিবিশেষ; দুশ্চরিত্র অন্নহীনকে এই বলে গালি দেওয়া হয়। |
উনবর্ষায় দু্ন শীত- খনা | বৃষ্টি কম হলে শীত বেশি পড়ে। |
উনভাতে দুন বল অতি/ভরাভাতে রসাতল | কম খেলে শরীর সুস্থ থাকে; বেশি খেলে শরীর ভারী হয়। |
উন/উনা কলসির দুন/দুনা শব্দ১ | কলসি একটু ভর্তি হলেই জোরে শব্দ করতে শুরু করে |
উন/উনা কলসির দুন/দুনা শব্দ১ | অল্পশিক্ষিতরা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সমতুল্য-'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি'। |
উনিশ বিশ১ | তুচ্ছ প্রভেদ, সামান্যপার্থক্য; সমতুল্য- যাহা বায়ান্ন তাহাই তিপ্পান্ন |
উনিশ-বিশ২ | বিপুলভারের উপর অতিরিক্ত সামান্যভার কিছুই মনে হয় না; |
উপকারগৃহীতেন শত্রুণা শত্রুমুদ্ধরেৎ। পাদলগ্নং করস্থেন কণ্টকেনেব কণ্টকম্॥ (চাণক্য) | হাতের কাঁটা দিয়ে যেমন পায়ে কাঁটা তোলা হয়, তেমনি উপকারগ্রহণকারী শত্রু দিয়ে শত্রুনাশ করতে হয়- শত্রু নিধনের উপায়। |
উপকার প্রতিদান প্রত্যাশা করে | কেউ উপকার করলে প্রতিদানে তার উপকার করা উচিত; সম্পর্কীত প্রবাদ- উপকারীকে বাঘে খায় |
উপকারীগাছের ছাল থাকে না | উপকারীগাছের সবই উপকারী, কিছুই ফেলা যায় না; ওষধি গুণযুক্ত গাছের বাকল সবাই নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য |
উপকারী গাছের ছাল থাকে না | কোন গাছের ওষধি গুণ থাকলে লোকের তার ছাল কেটে নিয়ে যায়; ফলে গাছ তার সৌন্দর্য হারায়; সেই গাছকে কেউ অসুন্দর বললে ভুল হবে; তাছাড়া সাধারণত অসুন্দর বস্তু বেশী কাজের হয়; কানা বেগুনের গুণ বেশি; সুতরাং কোন কিছুর বাহ্যিক রূপ দেখে তার গুণ বিচার করা হলে ভুল হতে পারে। |
উপকারীকে বাঘে খায় | উপকৃত উপকারীর বেশি ক্ষতি করে। |
উপকারো জগত্তাতো, বিশ্বস্য জননী দয়া | পরোপকার জগতের পিতাস্বরূপ; দয়া বিশ্বের জননীস্বরূপা। |
উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ/দৃষ্টান্ত ভাল | নিজে করে অপরকে অনুপ্রাণিত করতে হয়; সমতুল্য- 'আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখায়'। |
উপদেশো হি মূর্খানাং প্রকোপায় না শান্তয়ে | উপদেশ মুর্খকে শান্ত করে না পরন্তু ক্রুদ্ধ করে। |
উপবাসী প্রাণ করে আনচান | খিদের ছটফটানি। |
উপবাসে যাবে দিন ধার করলে হবে ঋণ | অন্নের সংস্থান না থাকলে একদিন কেটে যাবে তবু ধার করে খাওয়া নাই; একবার ঋণের ফাঁদে জড়ালে তার থেকে মুক্তি নেই। |
উপরটায় চিকন চাকন ভিতরটায় খেড় | ফোঁপরালোকের দেখনদারি; বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ লোকের ভিতরটা শূন্যগর্ভ হয়; পাঠান্তর- উপরে বাবুয়ানা ভিতরে খড়ের বেনা (পোষাক) |
উপরতলায় গলাগলি; নীচের তলায় হেলাফেলা | স্বার্থের মিলন; সমতুল্য- আমে দুধে মিশে যায় আঁটি খায় গড়াগড়ি'। |
উপর থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ-সাত; যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত | যার যেখানে স্বার্থ তার সেখানে নজর; সমতুল্য- যে পরেছে সেই জানে জুতা কোথায় চিমটি কাটে'। |
উপরে মধু অন্তরে বিষ ত্যজো তারে অহর্ণিশ | মন্দলোকের সঙ্গ সবসময় পরিত্যজ্য। |
উপরোধে ঢেঁকি গেলা১ | অনুরোধ এড়াতে না পেরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কাজ করা। |
উপরোধে ঢেঁকি গেলা২ | অনুরোধে দুরূহ কাজ করতে সম্মত হওয়া; সমতুল্য- অনুরোধে ঢেঁকি গেলা |
উপস্থিত অন্ন ত্যাগ করতে নেই | অন্যত্র খাওয়ার আশায় প্রস্তুত খাদ্য ত্যাগ করলে সেদিন অদৃষ্টে খাদ্য নাও জুটতে পারে; সমতুল্য-'হাতের একপাখি বনের দুইপাখির সমান'; 'হাতের পাখি ছাড়তে নেই'; 'ভবিষ্যতের আশায় বর্তমান ত্যাগ করতে নেই। |
উপায়ং চিন্তয়েৎ প্রাজ্ঞঃ অপায়মপি চিন্তয়েৎ | প্রাজ্ঞব্যক্তি উপায় চিন্তা করেন; বাধাবিঘ্ন নিয়েও চিন্তা করেন। |
উপায়জ্ঞের কাছে দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য মনে হয়- (চাণক্য) | উপায়জ্ঞ সমাধানের সহজ পথ খুঁজে পায়। |
উপোস করলেই ধর্ম হয় না | আচারসর্বস্বতার অসারতার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
উপোসে কেউ নয়, পারণের গোঁসাই১ | অনাহারের সময় কেউ খোঁজ নেয় না ভোজনে এসে ভাগ বসায়। |
উপোসে কেউ নয়, পারণের গোঁসাই২ | কষ্টের সময় কেউ আসে না, ফলভোগের সময় সবাই হাজির। |
উভয়প্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো১ | অতিরিক্ত পরিশ্রম বা শক্তিক্ষয় করা |
উভয়প্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো২ | অর্থের অপচয় করা; সমতুল্য- দিনের বেলায় মোমবাতি জ্বালানো |
উরুৎ বেয়ে রক্ত ঝরে চোখ গেলোরে বাবা১ | সম্পর্কবিহীন দুই কাজ |
উরুৎ বেয়ে রক্ত ঝরে চোখ গেলোরে বাবা২ | দুটি বাক্যের মধ্যে কোন সম্বন্ধ নেই; পাগলের প্রলাপবাক্য; সমতুল্য- 'এখান থেকে মারলাম তীর; তীর লাগল কলাগাছে; চোখ গেলোরে বাবা'। |
উলুখাগড়ার প্রাণ যায় | সাধারণমানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত |
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো১ | উলুঘাসে মুক্তা ছড়ালে কেউ তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না; তেমনি অযোগ্যের হাতে মুল্যবানদ্রব্য দেওয়া বৃথা; সমতুল্য- 'অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম'; 'বানরের গলায় মুক্তাহার'; পাঠান্তর- 'বেনাবনে মুক্তা ছড়ান'। ো |
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো২ | যে আদর করতে জানে না বা মূল্য বোঝে না তার কাছে কোন বিষয়ের উপস্থাপন করা। |
উলুবনে সাঁতার দেওয়া | আহাম্মকের কাজ; কথিত আছে- এক আহাম্মক জ্যোৎস্না রাতে উলুবনকে পুকুর ভেবে সাঁতার দিতে গিয়েছিল। |
উলোর মেয়ের কুলুজী, অগ্রদ্বীপের খোঁপা; শান্তিপুরের হাত নাড়া, গুপ্তিপাড়ার চোপা | উপরের চারটি বিষয়ের জন্য চার অঞ্চলের স্ত্রীলোকের প্রসিদ্ধি ছিল। |
উলটা বুঝলি রাম১ | ভালকথার বা সদুপদেশের মন্দ ব্যাখ্যা করা। |
উলটা বুঝলি রাম২ | ভ্রান্তধারণার বশবর্তী হয় উল্টোপাল্টা কাজ করা। |
উল্টা চোরা কোতয়ালকে ডাঁটে | দোষ করেও চোর কোতয়ালকে চোখ রাঙায়; সমতুল্য- 'চোরের মায়র বড় গলা'। |
উল্টে চোরা মশান গায়১ | দোষ করেও চোর নির্দোষ বলে গলা ফাটায়; তুলনীয়- 'উল্টা চোরা কোতয়ালকে ডাঁটে'। |
উল্টে চোরা মশান গায়২ | অপরাধ স্বীকার করা তো দূরের কথা, চোরে ধর্মকাহিনী শোনাতে ব্যস্ত (মশান= শ্রীমন্তের মশান পালা)। |
উষ্ণো দহতি চাঙ্গারঃ শীতঃ কৃষ্ণায়তে | কয়লা গরম থাকলে হাত পোড়ায়, ঠাণ্ডা থাকলে হাত ময়লা করে; ভাবার্থ- নীচব্যক্তি শত্রু হলে অনিষ্ট করে, মিত্র হলে লোকনিন্দা হয়। |
উষ্ট্রের কণ্টকভোজন | অল্পসুখের জন্য বেশি কষ্টস্বীকার। |
উসকো মাটিতে বিড়াল হাগে | দুর্বলের উপর সবল আধিপত্য ফলায়; সমতুল্য- আলগা মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়'। |
ঊ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঊনো পাঁজুরে বরাখুরে | হতভাগ্য, অলুক্ষণে বলে গালি। |
ঊনো বর্ষায় দুনো শীত- খনা | যে বছর বৃষ্টি কম হয় সে বছর শীত বেশি পড়ে। |
ঊনো ভাতে দুনো বল, অতি ভাতে রসাতল | পরিমিত আহারে স্বাস্থ্য রক্ষা হয়; অপরিমিত আহারে স্বাস্থ্যহানি হয়; এবং মৃত্যু পর্যন্ত হয়। |
ঊরুৎ বেয়ে রক্ত পড়ে, চোখ গেলোরে বাবা | একের সাথে অন্যের কোন সম্পর্ক নেই; অর্থহীন প্রলাপ। |
ঋ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিণী। ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্র শত্রুরপণ্ডিতঃ॥ (চাণক্য) | ঋণগ্রহীতা পিতা, দুশ্চরিত্রা মাতা, অতিরূপবতী স্ত্রী এবং মূর্খ পুত্র শত্রু রূপে বিবেচিত হয়ে থাকে। |
ঋণশেষোহগ্নিশেষশ্চ ব্যাধিশেষস্তথৈব চ। পুনশ্চ বর্দ্ধতে যস্মাৎ তস্মাচ্ছেষং ন কারয়েৎ॥(চাণক্য) | ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ রাখতে নেই; এগুলি শেষ না হলে বৃদ্ধি পায়। |
ঋণং কৃত্বা ধৃতং পিবেৎ (চার্বাক) | ক্ষণস্থায়ী জীবন দুদিন বইত নয়; সুতরাং যত পারো সুখ ভোগ করে নাও। |
ঋণের শেষ রাখতে নেই | ঋণ সম্পূর্ণ শোধ না করলে পরে বেড়ে যেতে পারে; সমতুল্য- \আগুনের শেষ রাখতে নেই'; 'রোগের শেষ রাখতে নেই';'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'। |
ঋদ্ধিশ্চিত্তবিকারিণী | সম্পদ চিত্তে বিকার আনয়ন করে। |
এ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
সুন্দর ডুমুর পাকলে ঝরে পড়ে; সুতরাং সৌন্দর্যের জন্য গর্ব করা বৃথা। | |
এই দৃঢ় বিশ্বাস মনে রেখো, জীবিত বা মৃত, ভাললোকের কোন ক্ষতি হয় না (উপনিষদ) | সৎপথে থাকলে ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। |
এই বিড়াল বনে গেলে বনবিড়াল হয় | পোষা বিড়াল ঘরে বেশ শান্তশিষ্ট; কিন্তু বনে গেলে এই বিড়ালই হিংস্র বনবিড়াল হয়ে উঠে; অবস্থান্তর ঘটলে স্বভাবেও পরিবর্তন আসে; সমতুল্য- 'যে যায় লঙ্কায় ষে হয় রাবণ'। |
এই মানুষ বনে গেলে বনমানুষ হয় | দুষ্টচক্রে পড়লে বা বদশিক্ষা পেলে সৎমানুষও অসৎমানুষে পরিণত হয় |
এই সংসার ধোঁকার টাটি | জগৎ মায়াময়, সব ভুলে ভরা। |
এঁচোড়ে পাকিলে অচিরেই গোল্লায় যায় | ছেলেবেলায় উচ্ছন্নে বা জেঠিয়ে গেলে তার আর উন্নতি হয় না। |
এঁটে ধরলে চিঁচিঁ করে ছেড়ে দিলে লম্ফ/লঙ্কা মারে | ভীরুলোক কড়া হাতে বা কায়দায় পড়লে জব্দ থাকে, ঢিলে দিলে লম্ফঝম্ফ বা মহা আস্ফালন করে। |
এঁটো খায় মিঠার লোভে, যদি এঁটো মিঠা লাগে | লাভের গন্ধ থাকলে মানুষ নীচু কাজ করতেও পিছুপা হয় না। |
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না১ | আস্তাকুঁড়েতে ফেলে দেওয়া শুকনো এঁটো পাতা বাতাসে উড়ে উপর দিকে উঠে কিন্তু বেশী উপরে উঠে না একটু উঠে নীচে পড়ে যায়। |
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না২ | নীচু কখনো উঁচুপদ লাভের উপযুক্ত হয় না। |
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না৩ | পরমুখাপেক্ষী কখনো বড় হয় না। |
এঁড়ে গরু না টেনে দো | যা সম্ভব নয় তাই করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'চাল নাই তবে ভাতে ভাত রাঁধো'। |
এঁড়ে গরুর দুধ | অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; আঁটকুড়ের ব্যাটা; আকাশকুসুম; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; ঘোড়ার ডিম; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি। |
এঁদো (পঙ্কিল/পরিত্যক্ত/পানাবিশিষ্ট) পুকুরে ডুবে মরা | বিরাট কাজ করে সামান্য ভুল করা। |
এক অঘ্রাণে ধান তিন শ্রাবণে পান- খনা | অঘ্রাণমাসে একবৃষ্টিতে ধান পাওয়া যায়, কিন্তু শ্রাবণমাসে তিনবৃষ্টি না পেলে পান চাষ ঠিক হয় না (ধান ও পান চাষ পদ্ধতি) |
এক আঁচড়ে চেনা যায় | কৃপণ গায়ে তেল মাখে না; তাই আঁচড় কাটলেই তার গায়ে খড়ি ফোটে; এই ভাবার্থে সামান্যপরীক্ষা করে মানুষ চেনা যায়; সামান্য চিহ্নের ভিত্তিতে ব্যক্তি বা বস্তুর গুণাগুণ বোঝা যায়। |
এক আনার সৌ বীমার | বস্তু একটি, কিন্তু দাবীদার অনেক; একটা বিষয় নিয়ে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি; সমতুল্য- 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'; আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল'। |
এক আকাশে দুই সূর্য | দুই প্রবলশক্তির পাশাপাশি থাকা, যা সম্ভব নয়; সমতুল্য- 'এক খাপে দুই তরোয়াল'; 'একবনে দুই বাঘ' ইত্যাদি। |
এক আঙটা বিকল তো সমস্ত শিকল বিকল | মানুষের দুর্বলতম স্থানের প্রতি ইঙ্গিত। |
এক আঙুলে তুড়ি লাগে না | দ্বন্দ্বে দু’পক্ষ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন |
একই ফাঁদে শিয়ালকে দু'বার ধরা যায় না | চতুরব্যক্তি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়; তুলনীয়- 'ন্যাড়া দুবার বেলতলা যায় না'। |
একই শ্রেণির দুই লোক কখনো একমত হয় না' | স্বার্থের কারণে নিজের লোক বেশি শত্রুতা করে; তুলণীয়- 'ভেয়ের শত্রু ভেয়ে নেয়ের শত্রু নেয়ে'; যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি'। |
একই সাথে মনোহর ও হিতকারী বাক্য দুর্লভ | সত্যকথা সর্বদা অপ্রিয় হয়; সমতুল্য- হিতং মনোহারি চ দুর্লভং বচঃ। |
এক ওয়াকিফহাল সাত নবিসিন্দা | একজন পারদর্শী সাতজন শিক্ষানবিশীর সমান; সাতজন শিক্ষানবিশী যা করতে পারে একজন বিশেষজ্ঞ তাই করতে পারে। |
এক ঔর এক গ্যারহ হতে হৈঁ | সংগঠনে শক্তি বাড়ে; সকলে মিলে কাজ করলে কাজ শতগুণ বৃদ্ধি পায় এবং কাজ সহজ হয়; সমতুল্য- 'একতাই বল'। |
এককড়া বুদ্ধি নেই চার কড়ার মেজাজ | অবোধের হম্বিতম্বি বেশি। |
এক কড়ার মুরোদ নেই কিল/ভাত মারার গোঁসাই | দুর্বলতা লুকোতে অক্ষমের দুর্ব্যবহার। |
এককড়াই/কলসী/গামলা/বালতি দুধে একফোঁটা চোনা১ | দুধে একফোটা চনা পড়লে সব দুধ নষ্ট; এমন উৎকট মন্দ জিনিস যার অত্যল্প পরিমাণ প্রচুর ভালো জিনিস নষ্ট করে |
এককড়াই/কলসী/গামলা/বালতি দুধে একফোঁটা চোনা২ | সর্বাংশে ভাল কাজ করে ছোট্ট একটা দোষে বদনাম কেনা বা সব সুনাম নষ্ট; শেষরক্ষা না হওয়া। |
এক কাটে ভারে, আরেক কাটে ধারে | অস্ত্রের ভার বা ধার না থাকলে যেমন কোন কিছু কাটা যায় না; তেমনি পয়সার জোর থাকলে সহজে কার্যসিদ্ধি হয়, অন্যথায় বুদ্ধির জোরে কার্যসিদ্ধি করতে হয়। |
এককাঠি বাজে না | নিজের সাথে ঝগড়া বা দ্বন্দ্ব হয় না; ঝগড়া বা দ্বন্দ্বে দুইপক্ষ লাগে। |
এক কান কাটা বাজার/রাস্তা/সহরের ধার দিয়ে যায়, দুকান কাটা বাজার/রাস্তা/সহরের মাঝদিয়ে যায় | অল্প-বেহায়ার কিছু লজ্জাবোধ থাকে; নির্লজ্জ-বেহায়া নিজেকে বেশি জাহির করে আনন্দ পায়; পূর্ণমাত্রার বেহায়ার লজ্জাশরম নেই। |
এক কানা আরেক কানাকে পথ দেখালে দুজনেই খানায় পড়ে | দুজনেই বিচারে অক্ষম; সবক্ষেত্রে এক এক মিলে দুই হয় না। |
এক কানে শোনে অন্য কানে বেড়োয়১ | কাজে একান্ত অমনোযোগী। |
এক কানে শোনে অন্য কানে বেড়োয়১ | কোন সদুপদেশ গ্রহণ করে না, এমন ব্যক্তি। |
এককাল ঠেকেছে তিনকাল গিয়ে | অতিবৃদ্ধ লোক। |
এক কিলো জিনিসে পাঁচ কিলো ঠকায় | মাত্রাহীন/লাগামছাড়া চুরি। |
এক কূল ভাঙে তো এক কূল গড়ে | সংসারে শুধু ভাঙা গড়ার খেলা চলে। |
এক কেঁড়ে দুধে এক ছিঁটে চোনা | একটু দোষে সব কাজ পণ্ড। |
এক্-কে আর দেখবে বেগার | বেগার ধরে কাজ করালে কাজ প্রায়ই ঠিক হয় না; এক করতে গিয়ে অন্যরকম হয়ে যায়। |
এককোপে বটগাছকে ফেলা যায় না | বৃহৎ বা বিশালকে সহজে কাবু করা যায় না। |
একক্ষুরে মাথা কামানো১ | সকলে একগোত্র বা গোষ্ঠীর লোক; সমতুল্য- একব্রাশে রং করা'। |
একক্ষুরে মাথা কামানো২ | সকলে একই দোষে দুষ্ট। |
একক্ষুরে মাথা কামানো৩ | সকলের এক দশা। |
একখাপে দুই তরোয়াল | দুই প্রবলশক্তি পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- 'এক আকাশে দুই সূর্য'; 'এক বনে দুই বাঘ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'একস্থানে দুই তরোয়াল'। |
এক খায় এক থিতায়১ | একটা খায় সঙ্গে পরেরটা কি খাবে ভাবে। |
এক খায় এক থিতায়২ | বর্তমানে খায় সঙ্গে ভবিষৎ খাবারের সংস্থান করে। |
এক খায় এক থিতায়৩ | অভিষ্টবস্তু পাওয়ার সঙ্গে পুনরায় সেটি পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়। |
এক খাল কেটে অন্য খাল ভরায় | চূড়ান্ত ধান্ধাবাজী। |
একগাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্যগাঁয়ে মাথা ধরে১ | সম্পর্কবিহীন কাজে মাথাব্যথা হওয়ার কারণ নেই; কেউ অনধিকার চর্চা করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; তুলনীয়- 'কাশীধামে কাক মরেছে কালীঘাটে/কুমিল্লায় হাহাকার'। |
এক গাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্য গাঁয়ে মাথা ধরে২ | বিনাকারণে কষ্ট পাওয়া; গুপ্ত স্বার্থ থাকার ইঙ্গিত। |
একগাঁয়ের কুকুর অন্যগাঁয়ে ঠাকুর | স্থানান্তরে নিজ পরিচয় লুকিয়ে সাধু সাজা যায়; সমতুল্য- অতিচেনার কদর নেই। |
এক গাছের ছাল অন্য গাছে জোড়া লাগে না১ | সমধর্মী না হলে মিল হয় না; সমতুল্য- 'তেলে-জলে মিশ খায় না'। |
এক গাছের ছাল অন্য গাছে জোড়া লাগে না২ | পর কখনো আপন হয় না। |
এক গালে চূণ অন্য গালে কালি মাখানো/লাগানো | চরম অপমান করা। |
এক গুরলে/গুলতিতে/ঢিলে দুই পাখি মারা | একচেষ্টায় দুই কাজ সম্পন্ন করা; একসঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জন করা; এক কাজ করার উপলক্ষে অন্য কাজ করা; সমতুল্য- 'রথ দেখা কলা বেচা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'এক গোলি দো চিড়িয়া'। |
এক গোয়ালে বিয়াইছে গাই সেই রিস্তায় চাচাতো ভাই | গোঁজামিল দিয়ে মিলানোর অপচেষ্টা; গুপ্ত স্বার্থ থাকার ইঙ্গিত। |
এক গাঙের চিল / এক গোয়ালের গরু | একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক জলাশয়ের/ঝিলের মাছ'; 'একঝাঁকের কই'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল'; 'এক লাউয়ের বিচি' ইত্যাদি |
এক চন্দ্রই যে অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না | হাজার নির্গুণে সমাবেশে এক গুণীর সৃষ্টি হয় না। |
এক চন্দ্রে জগৎ আলো | একাই একশ। |
এক চাকাতে রথ চলে না | নিজের সাথে বিবাদ হয় না; বিবাদে দুপক্ষ থাকে। |
এক চির পান দুই চির হল সোনার সিংহাসনে ভাগ বসিল | সপত্নী আসাতে স্বামী বিভক্ত হওয়ায় প্রথমা স্ত্রীর প্রভুত্ব ক্ষুণ্ণ হল এবং সেইজন্য তার খেদোক্তি। |
একচুল ক্ষতি করতে না পারা | বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে না পারা। |
এক চেয়ে দুই মাথা ভাল | দ্বিতীয়ব্যক্তির মতামত পরামর্শ ইত্যাদি সর্বদা মূল্যবান। |
একচোখে কাঁদা অন্যচোখে হাসা১ | কপটচারিতা- কপটচারী লোক পরের দুঃখে লোক দেখানোর জন্য কাঁদে কিন্তু মনে মনে হাসে; পাঠান্তর- 'একচোখে কান্না একচোখে হাসি'। |
একচোখে কাঁদা অন্যচোখে হাসা২ | হরিষে বিষাদ; অবিমিশ্র সুখ হয় না; সুখ-দুঃখ মিলিয়ে সংসার; একইসঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ এলে এমন মনের অবস্থা হয়। |
একচোখো মাসি কারে ভালোবাসি | মা ও মাসি সমান হতে পারে না। |
একছাতার তলে বাস | এক স্বভাবের লোক; সমদোষে দুষ্ট; সবাই মন্দলোক; সবারই একই দশা। |
একছেলে তার ফুলের শয্যে, পাঁচছেলে তার কাঁটার শয্যে | একছেলে সবসময় আদরযত্ন পায়; পাঁচছেলে হলে কারো ভাগ্যে আদরযত্ন জোটে না। |
একছেলে যার হাজার মানত তার | মা-বাবা অজানা আশঙ্কায় সবসময় ভীত থাকে। |
এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকে না | দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- এক আকাশে দুই সূর্য থাকে না'; 'এক তালুকে দুই ভাল্লুক থাকে না'। |
একজন উৎপীড়ক সবসময় কাপুরুষ | যে ব্যক্তি দুর্বলতর ব্যক্তিকে আখাত করে সে আক্ষরিক অর্থে কাপুরুষ। |
একজন ঘুমন্ত মানুষ আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারে না | নির্গুণের ছোঁয়ায় কেউ গুণী হয় না। |
একজন বন্ধুর চেয়ে একজন শত্রু থাকা ভালো | সেক্ষেত্রে নিজের দোষ জানতে পারা যায়। |
একজন বন্ধুলাভ দশজন বন্ধুহারানোর সমানই | কোন প্রাপ্তিযোগই হারাতে নেই। |
একজন ভিক্ষুক কখনো দেউলিয়া হয় না | যার কিছু নাই তার হারাবারও কিছু নাই। |
একজন ভিক্ষুক নির্বাচনকারী হতে পারে না | ভিক্ষুকের পছন্দ-অপছন্দ নেই; সমতুল্য- 'ভিক্ষার চালা কাঁড়া আর আকাঁড়া' |
একজন মা বুঝতে পারে একজন শিশু যে কথা বলে না- ইহুদী প্রবাদ | মাতৃহৃদয়ের তুলনা হয় না; একমাত্র মা-ই বোঝে শিশুমনের কথা। |
একজন মানুষ যা করতে পারে তার বেশি সে পারে না | সাধ্যের বেশি কেউ করতে পারে না, করার চেষ্টা করাও উচিত নয়। |
একজন শত্রুর স্মিতহাসি থেকে একজন বন্ধুর ভ্রুকুটি ভাল | সেক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে। |
একজনকে বন্ধু করার আগে তার সাথে এক যোজন পথ হাঁটো | হাত বাড়ালেই প্রকৃত বন্ধু মেলে না; বন্ধু চিনতে সময় লাগে। |
একজনের কাছে অমৃত অন্যজনের কাছে বিষ | সব জিনিস সবার কাছে সমান বা উপযোগী নয়; একজনের কাছে যা অতি পছন্দের, অন্যের কাছে তা বর্জনীয়। |
এক জলাশয়ের/ঝিলের মাছ | একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু'; 'একঝাঁকের কই'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল' ইত্যাদি। |
একজায়গায় থাকলে হাঁড়িতে হাঁড়িতে ঠোকাঠুকি হয় | যত কষাকষি তত লাঠালাঠি; অন্তরঙ্গতায় মন কষাকষির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। |
এক জুতা সব পায়ে গলে না | নানামানুষ নানাজাতের নানামতের হয়; তুলনীয়- হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়। |
একঝাঁকের কই | একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল'; 'এক লাউয়ের বিচি' ইত্যাদি। |
এক ঝিকরে/টানেতে মাছ গাঁথে না এ কেমন বঁড়শি, এক ডাকেতে সাড়া দেয় না সে কেমন পড়শি? | ভাল বঁড়শি হলে এক টানেতেই মাছ উঠার কথা; উপকারী পড়শি হলে এক ডাকেতেই আসা কথা; গুণের না হলে কাজের হয় না। |
এক টাকা সঞ্চয়ের অর্থ এক টাকা আয় | অর্থের অপচয় সমর্থনযোগ্য নয়; পাঠান্তর- 'এক পয়সা জমানো মানে এক পয়সা রোজগার'। |
একটি অলস ভেড়া তার পশমকে ভারী মনে করে | অলস লোকেরা সব থেকে সহজ কাজকেও কঠিন মনে করে। |
একটি আজকাল দুটি আগামীকালের সমান | আজ নিশ্চিত কাল অনিশ্চিত; অনিশিচতের পিছনে ছুটতে নেই; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটি পাখির সমান'। |
একটি কড়িকাঠ যত বড়ই হোক-না-কেন সমগ্র বাড়ীর ভার বইতে পারে না- চীনা প্রবাদ | একার শক্তি কোন শক্তি নয়; এক পায়ে খাড়া থাকা যায় না; তুলনীয়- 'এক আর একে এগারো হয়'; 'একতাই বল। |
একটি কালো আঙুর সাদা আঙুরের মতই মিষ্টি | বাইরের আবরণের ভিত্তিতে গুণের বিচার করা যায় না। |
একটি কালো মুরগী একটি সাদা ডিম পাড়ে১ | সাদা চোখে যা দেখি তা সব সময় সত্য হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চামড়র রঙ মানুষ চেনায় না'; 'মলাট দেখে বই বিচার হয় না' ইত্যাদি। |
একটি কালো মুরগী একটি সাদা ডিম পাড়ে২ | প্রবাদটি মানুষকে বোঝায় যে, সবকিছু সম্ভব, তা যতই অসম্ভব বলে মনে হোক-না-কেন। এটি পরামর্শ দেয় যে এমনকি এমন কিছু যা অসম্ভব বলে মনে হয় যথেষ্ট প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায় দিয়ে অর্জন করা যেতে পারে। |
একটি খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে ভাল | দেওয়া অজুহাত হাস্যকর বলে মনে হলেও তা গ্রহণ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে; পাঠান্তর- 'একটি খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে খারাপ নয়'। |
একটি খারাপ আপোস একটি ভাল মামলা থেকে ভাল | কিছু ক্ষতি স্বীকারে আপসের পক্ষে ওকালতির যুক্তি হল- মামলার নিস্পত্তি হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়; প্রবাদটি জ্ঞানী এবং সাবধানে সিদ্ধান্ত নেওয়া শেখায়; তুলনীয়-'সর্বোনাশো সমুৎপন্নে অর্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ'। |
একজন খারাপ লোক একটি খারাপ নামের চেয়ে ভাল | বদনাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি খারাপ লোক সেখানে পৌঁছানোর আগেই সর্বত্র পৌঁছে যায়'; |
একটি খারাপ শুরু একটি খারাপে শেষ হয় | খারাপ শুরু পরবর্তী কাজে প্রভাব ফেলে; ফলে কাজ শেষ হতে অযথা বিলম্ব হয়; তুলনীয়- 'এড়া কাজে বেড়া বেশি'। |
একটা/টি ছোট্ট ছিদ্রও বিরাট জাহাজকে ডোবাতে পারে | একটি ছোট ভুল বিরাট ক্ষতি করতে পারে; প্রবাদটি মূলতঃ মানুষকে ছোটছোট খরচ থেকে সাবধান থাকতে বলে; তুলনীয়- 'অপচয় করো না বিপদে পড়ো না'। |
একটা/টি ছোট্ট তিন-ইঞ্চির জিভ সাত-ফুটের একজন দশাসই লোককেও ধরাশায়ী করতে পারে | স্বাস্থ্যের কারণে রসনা সংযত রাখার পক্ষে চেতাবনি। |
একটা/টি দিয়াশলাই কাঠি খাণ্ডবানল সৃষ্টি করতে পারে | কোন তুচ্চ বিষয় তুচ্চ নাও হতে পারে; পাঠান্তর- 'একটি স্ফুলিঙ্গ দাবানল সৃষ্টি করতে পারে'। |
একটা/টি দোষ বহু গুণকে গ্রাস করে | দোষের প্রতিক্রিয়াশক্তি বহুগুণ বেশি। |
একটা/টি পতন তোমাকে জ্ঞানীমানুষ করে তোলে | পতন থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। |
একটা/টি পদক্ষেপে হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় | সব বিশালের শুরু সামান্য দিয়েই শুরু হয়। |
একটা/টি পয়সা সঞ্চয় হলে একটি পয়সা অর্জিত হয় | সঞ্চয় অর্থোপার্জনের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। |
একটি পাখি তার গানদ্বারা পরিচিত হয় | একটি মানুষকে তার কথাবার্তা দিয়ে চেনা যায়; সমতুল্য- 'বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচীয়তে'। |
একটা/টি বই যেন একটি আস্ত ফুলের বাগান | বই পড়ে রূপ রস গন্ধ- সবকিছু আহরণ করা যায়। |
একটি ভালো শুরু/সূচনা হল অর্ধেক কাজ/যুদ্ধ জয় | পরিকল্পনা সঠিক হলে অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। |
একটি মন্দ সকাল ভাল দিনে পরিণত হতে পারে | সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিও সময়ের পরিবর্তনে মন্দ ভালতে পরিণত হতে পারে; অসুবিধার মুখে ইতিবাচক থাকতে উত্সাহিত করতে উক্তিটি করা হয; বিরুদ্ধ উক্তি- 'সকাল দিন দেখায়'। |
একটি মিথ্যা আরেকটি মিথ্যার জন্ম দেয় | সত্য একটা; মিথ্যা হাজারটা হয়; ফলে মিথ্যা চাপতে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়; সত্য চাপার প্রয়োজন হয় না। |
একটি সুতা তার সবচেয়ে পাতলা জায়গাতে ছিঁড়ে | অকর্মণ্য কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্টান ধ্বংস হয়; সমতুল্য- 'একটি শিকল তার দুর্বল আংটার মতই সমান শক্তিশালী'। |
একটি নরম উত্তর ক্রোধ দূর করে, একটি কঠোর শব্দ রাগ জাগিয়ে তোলে- বাইবেল- হিতোপদেশ | মানুষের প্রতি সদয় হলে তারা চিরদিন অনুগত থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ- -মিষ্টি কথায় কষ্ট নেই'। |
একটি বদরোগ ভাল করা যায়, একটি বদনাম ঘুচানো যায় না | বদরোগের কোন দোষ/কলঙ্ক নেই, বদনামে দোষ/কলঙ্ক মিশে থাকে। |
একটি বনাঞ্চল গড়তে দশবছর সময় লাগে, একটি মানুষ গড়তে একশবছর সময় লাগে | মানুষের অনুশীলন অনেক সময়সাপেক্ষ। |
একটি ভাত টিপলে, হাঁড়িসুদ্ধ ভাতের খবর মেলে | সবাই এক গুণসম্পন্ন হয়। |
একটি ভাল বই একজন ভাল বন্ধু | ভাল বই বন্ধুর মত ভাল পরামর্শদাতা হয়। |
একটি মিথ্যা ঢাকতে দশটা মিথ্যা কথা বলতে হয় | মিথ্যাকে সত্য প্রতিপন্ন করতে অনেক কথা বলতে হয়। |
একটি মূলার জন্য একটা গর্ত (চীনা প্রবাদ) | যে যার নিজের কাজ কর; অন্য অর্থে- কেউ অপরিহার্য নয়। |
একটি শিকল তার দুর্বলতম আংটার সমান শক্তিশালী | অংশ বাদ দিয়ে সমগ্র হয় না; দুর্বল অংশ সমগ্রকে সমানভবে দুর্বল করে তোলে; দলের সাফল্য তার প্রতিটি সদস্যের সাফল্যের উপর নির্ভর করে; সমতুল্য- 'একটি সুতা তার সবচেয়ে পাতলা জায়গাতে ছিঁড়ে'; পাঠান্তর- 'এক আংটা বিকল তো সমস্ত শিকলটাই বিকল'। |
একটি সুন্দর শুরু কাজের অর্ধেক সাফল্য আনে | পরিকল্পনা সঠিক হলে কাজের অর্ধেক শুরুতেই শেষ। |
একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে | কোন ঘটনাই উপেক্ষা করা উচিত নয় |
একটু আগুন দ্রুত নিভে যায় | ক্ষুদ্র সমস্যা অচিরেই সমাধান করা যায়; তাকে বাড়তে দিলে সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে; তুলনীয় - 'সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়'। |
একটু জানা/শেখা বিপজ্জনক ব্যাপার | অর্ধ-জ্ঞানী বিশেষজ্ঞ সেজে ভুল তথ্য জানায়। |
একটু হাসি দশবছর আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে | বাঁচতে হলোে হাসতে শেখো; হাসির মত ওষুধ হয় না; পাঠান্তর-'একটু হাসি দশবছর বয়স কমিয়ে দিতে পারে'। |
একটু হাসি লক্ষ দুশ্চিন্তা মুছে দিতে পারে। | হাসি নির্মল আনন্দের উৎস। |
একডানায় পাখি উড়ে না | চলতে গেলে সহায় লাগে, এক ঠ্যাঙে হাঁটা যায় না; আমেরিকাবাসীরা দ্বিতীয় গ্লাস গরম পানীয় নেওয়ার ইচ্ছা প্রকশে কৌতুকচ্ছলে উক্তিটি করে। |
একডালে দুইপাখি, গা্য়েগায়ে মাখামাখি | মনের মিল থাকলে পাশাপাশি বাস করা যায়। |
একঢিলে দুইপাখি মারা | এক চেষ্টায় দুই কাজ সম্পন্ন করা; একসঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জন করা; এক কাজ করার উপলক্ষে অন্য কাজ করা; সমতুল্য- 'ঘটি কেনা গঙ্গাস্নান'; 'রথ দেখা কলা বেচা'। |
একতাই বল | সমষ্টির শক্তিই আসল শক্তি। |
এক তালুকে দুই ভালুক থাকে না | দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- এক আকাশে দুই সূর্য থাকে না'; 'এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকে না'। |
একতায় উত্থান, বিভেদে পতন | সংঘবদ্ধতার শক্তি অসীম। |
একদিকে ছুঁচ গলে না, অন্যদিকে হাতি গলে | ছোটখাটো বিষয়ের দিকে আমরা বেশি নজর দিই। |
একদিন শয়তান তো চিরদিন শয়তান | চোর কখনো সাধু হয় না। |
একদুয়ার বন্ধ তো হাজারদুয়ার খোলা | ভিক্ষুকের প্রতি বক্রোক্তি। |
এক দেখে শেখা আরেক ঠেকে শেখা | নানাভাবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। |
এক দোষে সব গুণ ক্ষয় হয় | ছোট্ট একটা বদনাম সব সুনাম নষ্ট করে দেয়। |
এক পন্থ দো কাজ | এক উপায়ে দুই কাজ করা; দ্বিগুণ লাভ; সমতুল্য- 'এক ঢিলে দুই পাখি মারা'; 'রথ দেখা কলা বেচা'। |
এক পয়সা জমানো মানে এক পয়সা রোজগার | স্বল্পসঞ্চয় থেকে একদিন বিরাট অর্থে পরিণত হয় |
তেঁতুলবিচি পেছন করে খিচিখিচ | হঠাৎ বড়লোক হলে প্রচণ্ড অহঙ্কারী হয়ে পড়ে; তুলনীয়- 'নির্ধনের ধন হলোে দিনে দেখে তারা'। |
এক পাঁঠা তিনবার কাটা | ধান্ধাবাজী করে এবং ধান্ধাবাজী ধরা পড়ে; একটা জমি তিনবার তিনজনকে বিক্রি করার ধান্ধা বা একটা বই লিখে একাধিক লোককে উৎসর্গ করা; সমতুল্য- 'এক মুরগী সাত জায়গায় জবাই'। |
এক পা জলে এক পা স্থলে১ | দ্বিধা-দ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- 'কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা'; 'সসেমিরা অবস্থা'। |
এক পা জলে এক পা স্থলে২ | দুকুল রাখার চেষ্টা; দুটি পরস্পরবিরোধী কাজ একইসাথে সম্পন্ন করার প্রয়াস; সমতুল্য- 'দু নৌকায় পা'। |
এক পাগলে রক্ষা নেই সাত-পাগলের মেলা | চরম বিশৃঙ্খলা; বিরক্তির একশেষ; একটা সমস্যাতেই জর্জরিত, সেখানে একাধিক সমস্যা এসে উপস্থিত। |
এক পায়ে খাড়া | উদগ্রীব; এখনি রাজী। |
এক পালকের পাখি এক যায়গায় ভিড় করে | সংঘবদ্ধ হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক ধর্ম। |
এক পুতের আশ/আশা, নদীর তীরে বাস/বাসা | সদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত; একছেলের বাবা ও মা সবসময় অপুত্রক হওয়ার আশঙ্কায় ভোগে; পাঠান্তর-'এক পুতের আশ নদীর তীরে বাস ভাবনা বারোমাস'। |
এক পুরুষে রোপে তাল, পর পুরুষে করে পাল; তার পর যে সে খাবে, তিন পুরুষে ফল পাবে- খনা | তিন পুরুষে তাল গাছের ফল ভোগ করে; বিরুদ্ধ বচন- বারো বছরে ফলে তাল যদি না লাগে গরুর লাল'। |
এক ফুলে মালা হয় না | বিরাট কাজে যৌথ উদ্যোগ চাই। |
একফোঁটা শিশিরেও বন্যা হতে পারে, যদি গর্তটা পিঁপড়ের হয় (ফারসী প্রবাদ) | সব কিছুই আপেক্ষিক। |
একবনে দুই বাঘ থাকে না | দুই প্রবলশক্তি পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- 'এক আকাশে দুই সূর্য থাকেনা', 'এক খাপে দুই তরোয়াল থাকে না' ইত্যাদি। |
একবরের মাগ চিংড়ীমাছে খোসা দোজবরের মাগ নিত্য করে গোঁসা // একবরের স্ত্রী হেলফেলা দোজবরের স্ত্রী গলায় মালা | দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী তুলনায় স্বামীর বেশি আদরণীয়া হয়। |
একবাক্সে সব ডিম রাখা ঠিক নয় | গেলে সব একসাথে যাবে। |
একবার করার আগে দু'বার ভাবো | বুদ্ধিমান এক পা চলার পর একটু থামে; তুলনীয়- 'চলৎ একেন পাদেন তিষ্ঠতি বুদ্ধিমানঃ' |
একবার দংশন দুইবার কুণ্ঠা | অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শিক্ষা দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়', 'গরম জলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় ইত্যাদি। |
একবার না পারিলে দেখ শতবার | কার্যসিদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত থামতে নেই। |
একবার রোগী একবার রোজা১ | অভিজ্ঞতা থাকলে প্রতিকার করা যায়; ভূক্তভোগী পরের বারের জন্য সতর্ক থাকে; তুলনীয়- 'নেড়া দুইবার বেলতলাতে যায় না'; পাঠান্তর- 'একবারের রোগী আরবারের রোজা'। |
একবার রোগী একবার রোজা২ | আজ যে সাহায্যপ্রার্থী কাল সে সাহায্যকর্তা হতে পারে। |
একবৃক্ষে যদা রাত্রৌ নানা পক্ষীসমাগম। প্রভাবতে তু দিশো যান্তি কা কস্য পরিবেদনা।। (চাণক্য) | রাত্রিকালে বাসের জন্য নানা পক্ষী এসে সমবেত হয়; প্রভাতসমাগমে তারা নানাদিকে চলে যায়; সুতরাং কার জন্য কি বেদনা? |
এক ব্যঞ্জন ভাত তাও আবার নুনে পোড়া/বিষ১ | কষ্টের ওপর কষ্ট; |
এক ব্যঞ্জন ভাত, তাও আবার নুনে পোড়া/বিষ২ | একমাত্র ছেলে দুশ্চরিত্রের হলে মাবাবার কষ্টের সীমা থাকে না। |
একব্রাশে রং করা | একগোষ্ঠীর লোক; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'একক্ষুরে মাথা কামানো'। |
এক ভস্ম আরেক ছার (ক্ষার=ছাই), দোষগুণ কব কার | কে কারে দোষে, দুইই সমান অপদার্থ, দুই সমান অপরাধী; তুলনীয়- 'একের ছয়টি এবং আরের আধডজন'। |
এক মন হলে সমুদ্র শুকায়১ | সবাই একসাথে কাজ করলে অসাধ্যসাধন করা যায় সমতুল্য- 'একতাই বল'। |
এক মাঘে শীত যায় না১ | বিপদাপদ শুধু একবারই আসবে এমন ধারণা ভুল; একটা বিপদ কাটলেই আরেকটা এসে হাজির হয়। |
এক মাঘে শীত যায় না২ | প্রতিশোধ নেবার সুযোগ কখনো হারায় না। |
এক মাণিক (বড় রত্ন) সাত রাজার ধন | পরমপ্রিয় পুত্র। |
একমাত্র বিজ্ঞতম এবং মহামূর্খরাই পরিবর্তিত হয় না- কনফুসিয়াস | উভয়ই নিজের ধারণাসম্পর্কে গোঁড়া হয়। |
একমাত্র মৃত্যুই সকলকে সমান করে | মড়ার কোন জাতবিচার হয় না। |
এক মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয় | এক মিথ্যা চাপতে হাজার মিথ্যা কথা বলতে হয়। |
এক মুখ সোনা দিয়ে ভরা যায়, তিন মুখ ছাই দিয়েও ভরে না | একজনকে সন্তুষ্ট করা যার সবাইকে পারা যায় না। |
এক মুখে দুই/তিন কথা শুনে মনে/প্রাণে লাগে ব্যথা | নীতিহীনতা পীড়াদায়ক; যে কথা দেয় কিন্তু কথা রাখে না বা অস্বীকার করে তাকে কেউ পছন্দ করে না; কথার হেরফের সত্যিই বেদনাদায়ক। |
এক মুরগি কয়জায়গায়/বার জবাই | চুড়ান্ত ধান্ধাবাজী; একটা জমি বিক্রি করার নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে আগাম নেওয়ার মত ধান্ধাবাজী ধরা পড়ে; সমতুল্য- এক পাঁঠা তিনবার কাটা' পাঠান্তর- 'একমুরগি সাতজায়গায়/বার জবাই'। |
একমেবাদ্বিতীয়ম | ঈশ্বর এক, দ্বিতীয় ঈশ্বর নেই। |
একযাত্রায় পৃথক ফল | অভিন্ন কাজের একজন পুরস্কৃত তো অন্যজন তিরস্কৃত। |
একরত্তি দড়ি সকল ঘর বেড়ি১ | সামান্য সলতেতে প্রদীপ জ্বাললে সারা ঘর আলোকিত হয়। |
একরত্তি দড়ি সকল ঘর বেড়ি২ | অসাধ্যসাধনের চেষ্টা; সামান্য ক্ষমতায় বা সম্পদে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। |
একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা | অল্পবিষয়ের বহু প্রার্থী; যোগান অল্প চাহিদা প্রচুর হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'এক আনার সৌ বীমার'; 'আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল'। |
এক/একা/একে রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর | যে একাই যথেষ্ট, যার সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই তাকে সাহায্য করতে আসা; কষ্টের ওপর কষ্ট; একের বিক্রমই যার যথেষ্ঠ তার আবার সঙ্গীর কি প্রয়োজন; একের বিক্রমেই প্রাণ ওষ্ঠাগত দুইয়ের বিক্রমে মরলাম। |
এক/একা/একে রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর | কষ্টের ওপর কষ্ট। |
এক লাউয়ের বিচি | একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু' ইত্যাদি। |
এক লাউয়ের বিচি কেউ করছে কচরকচর, কেউবা আছে কচি | এক পিতামাতার পাঁচটা ছেলে পাঁচরকম প্রকৃতির হয়; তুলনীয়- 'হাতের পাঁচটা আঙুল এক রকম হয় না'। |
একলা ঘরের গিন্নী চাবীকাটি ঝুলিয়ে নাইতে যাব | প্রতিটি নারীর সুপ্তবাসনা থাকে এমন ঘরে বিয়ে যেন হয় যেখানে জটিলাকুটিলাস্বরূপা শাশুড়ী ননদ থাকবে না; ঘরের, বাক্স-সিন্ধুকের চাবি আঁচলে ঘুরিয়ে প্রভুত্ব করতে পারবে। |
একলা চলা চলা নয় | সবাই মিলে না চললে মানসিক অবসাদ আসতে পারে। |
একলাঠিতে সাত সাপ মারি | এক কৌশলে বহুকাজ হাসিল করার চেষ্টা। |
একলাফেই তালগাছে ওঠা যায় না | সবকিছুতেই আয়াস লাগে, সময় লাগে। |
একলা মানুষ, মানুষ নয় | মানুষ সামাজিক জীব, একলা থাকতে পারে না বা ভালবাসে না। |
এক সুপুত্রে বংশ ধন্য | সু-এর তুলনা হয় না। |
এক হেঁসেলে দুই রাঁধুনি, পুড়ে গেল তার ফেনগালুনি | খণ্ড কর্তৃত্ব কাজে আসে না; সমতল্য- 'অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট'; 'অধিক সাঁধুনীতে ব্যঞ্জন নষ্ট'; |
এক হাজার পদক্ষেপ নিয়ে এক মাইলের যাত্রা শুরু- চীনা প্রবাদ | প্রতিটি বিশাল কাজের একটি ছোট্ট শুরু থাকে। |
এক হাটে কিনে অন্যহাটে বেচা | বুদ্ধিমান, লাভের উদ্যোগ। |
এক হাত নড়ে না দুই হাত নড়ে | দুপক্ষ না হলে বিবাদ হয় না। |
এক হাত গলায় এক হাত পায় | ইচ্ছা ক'রে অপমান করে পরে ক্ষমা চায়; তুলনায়- 'লাথি মেরে পায়ে ধরা'। |
এক হাত পায় এক হাত মাথায় | কখনো সম্মান করে কখনো অপমান করে। |
এক হাতে তালি বাজে না | এক পক্ষের দোষে বিবাদ হয় না; jঝগড়া করতে দুইজন লাগে |
একাই একশ | সব গুণের অধিকারী |
একা কাঁদি, একা হাসি; গরম রেঁধে খাই বাসি | সুখেদুঃখে ভরা জীবন; একাকীত্বের জ্বালা। |
একাকী ব্যক্তি সর্বত্র বাড়িতে থাকে | আমরা সকলেই আমাদের নিজেদের চামড়ার ভিতরে বদ্ধ অবস্থায় নির্জন কারাবাসে দন্ডিত। |
একাকীত্ব ও বদসঙ্গের মধ্যে একাকীত্ব পছন্দ | একাকী মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে; কেউ একাকীত্ব পছন্দ করে, কেউ বা করে না। |
একাকীত্ব চিন্তার বাসা | একাকীত্ব চিন্তার অবকাশ দেয়। |
একাকীত্বের চেয়ে ঝগড়া ভালো- | মানুষ নিঃসঙ্গ থাকতে পারে না; আপনি একা থাকলে আপনি বদসঙ্গে আছেন; বিরুদ্ধ উক্তি - 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল'; |
একাকীত্ব দুঃখের প্রথম উৎস | পাঁচজনে মিলেমিশে থাকলে দুঃখ অনুভূত হয় না। |
একাগ্রচিত্তে কাজ করলে পাহাড় টলানো/ডিঙানো যায় | চেষ্টায় কি না হয়; চেষ্টা করলে পঙ্গুও পাহাড় ডিঙাতে পারে। |
একা ঘরের বউ, খেতে বড় সুখ, মারতে এলে ধরতে নাই, তাতে বড় দুখ | অনেক মেয়েই যৌথসংসারে থাকতে চায়না; নিজের সংসারে তারা সুখ পায়; কিন্তু স্বামীস্ত্রীতে যখন ঝগড়া বাঁধে তখন মিটমাট করিয়ে দেওয়ার লোক থাকে না। যৌথপরিবারের সুফল এবং এককপরিবারের কুফল বর্ণনা করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
একাদশে বৃহস্পতি | চরম সৌভাগ্য। |
একান্নও পাপ, বাহান্নও পাপ | পরিমাণ গুণে পরিবর্তন আনে না; গল্পে আছে এক দস্যু নদীর ধারে এক নারীর সতীত্ব রক্ষা করতে গিয়ে অত্যাচারীকে হত্যা করতে গিয়ে এই উক্তি করেছিল। |
একা রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব/লক্ষণ তার দোসর | 'এক রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর'-দ্রষ্টব্য |
এ কি ছেলের হাতে পিঠে/মোয়া? | সবদ্রব্য সহজলভ্য নয়; ভুলিয়েভালিয়ে ছেলের হাত থেকে মোয়াটা নেওয়া যায়, পাকা লোককে বোকা বানানো যায় না। |
একি বিধির খেলা কাকের/বকের/বিড়ালের গলায় তুলসীমালা | ভেকধারী ধার্মিকের প্রতি বক্রোক্তি। |
এ কি মোর জ্বালা মেয়ে চামকাঠ ডালা, কানে দুটো ঘুরুঘুরে গলায় মোতির মালা | মেয়ে দেখতে কুৎসিত, তায় আবার কানে ঘুরঘুরে পোকার মত দুল এবং গালায় মোতিরমালা পরে দেহের শোভাবর্ধন করেছে; কোন অসহনীয় বিষয়সম্পর্কে প্রযোজ্য। |
একুল ওকুল দুকল গেল অকূল পারে গোকুল | এদিকও গেল ওদিকও গেল, কোনদিক আর রইল না; সমতুল্য- 'ইতো নষ্টঃ ততো ভ্রষ্টঃ'। |
একুশকোড়া গুণে খান, ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান১ | অতি সুখী শরীর বা অভিমানী মন; গল্পে আছে এক রাজকন্যা উপপতির সব অত্যাচার সহ্য করত, কিন্তু ফুল ছূঁড়ে মারলে মূর্ছা যেত |
একুশকোড়া গুণে খান ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান২ | অত্যন্ত সুখী শরীরের অভিমানী মেয়ের ভানের প্রতি তির্যক উক্তি। |
একে গুণগুণ দুইয়ে পাঠ; তিনে গোলমাল চারে হাট | অধ্যয়ন বিষয়ক প্রবাদ; অভিজ্ঞতায় বলে একজন শিক্ষার্থী হলে পাঠে মন বসে না; দুইজন শিক্ষার্থী একসাথে পড়শুনা করলে পরস্পরের সাহায্যে লেখাপড়া ভাল হয়; তিনজন শিক্ষার্থী হলে পড়াশুনা বিশৃঙ্খল হয় এবং চারজন শিক্ষার্থী একত্র হলে পাঠের পরিবর্তে হাট বসে যায়; পাঠান্তর- 'একে রুণুঝুণ্ দুইয়ে পাঠ; তিনে গোলমাল চারে হাট'। |
একে চায় আরে পায় | কাঙ্ক্ষিত বস্তু ছাড়াও অন্য মনোমত বস্তু পেলে আনন্দে নেচে ওঠে। |
একে ছেঁড়াকাঁথা তায় শততালি | কষ্টের ওপর কষ্ট। |
একে তো উমা তায় তুষার ধুমা | কষ্টের ওপর কষ্ট। |
একে তো ছাই- তার উপর বাতাস | কষ্টের ওপর কষ্ট। |
একে তো মধুপর্কের বাটি তায় আবার কাত | নানাদোষে দুষ্ট। |
একে তো হনুমান তায় আবার রামের বাণ | যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা; সমতুল্য- একে রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর। |
একেন পাপ শতেন কিংবা | একটা পাপ করলেও যা পাঁচটা করলেও তা; পাপ করতে যাওয়ার আগে পাপীর মনোভাব; শোমোটূলয়- 'যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন'। |
একে নাচনি বুড়ি তাতে পড়েছে ঢোলের বাড়ি | ইন্ধন যোগানো; উস্কে দিলে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়; পাঠান্তর- 'একেই নাচনি বুড়ি তায় নাতনীর বিয়ে'; 'একে তো নাচুনি কালী, তাতে মৃদঙ্গের তাল'; 'একে বউ নাচনি তায় খেমটার বাজনি'। |
একেনাপি কুবৃক্ষেণ কোটরস্থেন বহ্নিনা। দহ্যতে তদ্বনং সর্বং কুপুত্রেণ কুলং যথা।। (চাণক্য) | যেমন একটিমাত্র কুবৃক্ষের কোটরের আগুনের দ্বারা সেই সমগ্র বন দগ্ধ হয়, তেমনি একটিমাত্র কুপুত্রের দ্বারা সমগ্র কুল কলঙ্কিত হয়। |
একেনাপি সুবৃক্ষেণ পুষ্পিতেন সুগন্ধিনা। বাসিতং স্যাদ্ বনং সর্বং সুপুত্রেণ কুলং যথা।। (চাণক্য) | যেমন সুগন্ধ ফুলে ভরা একটিমাত্র গাছের দ্বারাই সমগ্র বনভূমি (সুগন্ধে) আমোদিত হয়, তেমনি একটিমাত্র সুপুত্রের দ্বারা সমগ্র বংশ গৌরবান্বিত হয়। |
এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটাপাত্রে বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে- রবীন্দ্রনাথ১ | মানুষের বাসনাকামনার শেষ নেই; একটি বাসনার পরিতৃপ্তি অন্য বাসনা ডেকে আনে। |
এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটাপাত্রে. বৃথাচেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে- রবীন্দ্রনাথ২ | নিস্ফল বা বৃথা প্রচেষ্টা; সমতুল্য-'অন্ধকারে ঢিল/ছোঁড়া/মারা'; 'অন্ধকারে লাউ কোটা'। |
একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো১ | কিছু না হওয়া অকাজের সামিল; কোনক্ষেত্রেই শূন্যতা সমর্থনযোগ্য নয়য়। |
একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভাল২ | তবুতো কিছু পাওয়া যাবে; দেরীতে হলেও কিছু করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানাতে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়। |
একেবারে কিছু না করলে কুকাজ করা হয় | অলস না থেকে কিছু-না-কিছু করা উচিৎ। |
একে মা মনসা তায় আবার ধূনার গন্ধ | ইন্ধন যোগানো; কোপনস্বভাবের ব্যক্তিকে উস্কে দিলে সে আরও ক্রোধান্বিত হয়। |
একে মা রাঁধে না তার ওপর তপ্ত আর পান্তা | সামান্য বিষয় জোটে না, অসামান্যের দাবী; অনায্য দাবী। |
একের ছয়টি এবং অন্যটির আধডজন | যখন আমরা মনে করি দুটি জিনিস সমান পছন্দের বা অপছন্সের তখন এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; তুলনীয়- 'এক ভস্ম আরেক ছার দোষগুণ কব কার'। |
একের বোঝা, দশের আঁটি/লাঠি | ভাগাভাগি করলে সমস্যা অর্ধেক হয়ে যায়। |
একো হি দোষো গুণসন্নিপাতে নিমোজ্জতীন্দোরিতি | বহু গুণের মধ্যে একটি দোষ থাকলে সেটা গুণসাগরে নিমজ্জিত হয়। |
একো হি দোষো গুণসন্নিপাতে নিমোজ্জতীন্দোরিতি যো বভাষে। নূনং ন দৃষ্টং কবিনাপি তেন দারিদ্র্যদোষো গুণরাশিনাশী | বহু গুণের মধ্যে একটি দোষ থাকলে সেটা গুণসাগরে নিমজ্জিত হয়- এই উক্তি যে কবি করেছেন তিনি জানেন না যে, একমাত্র দারিদ্রদোষে সব গুণ নষ্ট হয়ে যায়। |
এখন শুনলে না বঁধু যৌবনভব্রে, পশ্চাতে কাঁদিতে হবে অঝরঝরে | যৌবনের অহংকারে সব কিছু ফুৎকারে ওড়ালে বৃদ্ধবয়সে কপালে দুঃখ আছে; কেউ কথা না শুনলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
এখনই সন্দেশ খেয়েচি, চায়ে চিনি দিওনা, সুগার আছে | নিজেকে জাহির করার মানসিকতা; দেখনদারী। |
এ গিরগিটি নয় সাক্ষাৎ মা মনসা | তীব্রশক্তিরক্ষেত্রে প্রযুক্ত; ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে পারে। |
এগুনে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী | গুণ অদ্শ্য; রূপ দৃশ্য; তাই রূপই প্রথম আকর্ষণ করে; পরে গুণের বিচার হয়। |
এগুলে রাম, পেছুলে রাবণ | উভয়সঙ্কট; প্রাণপণ খেটেও কারও সন্তোষবিধান করা যায় না; পাঠান্তর- 'এগুলে সর্বনাশ, পেছুলে নির্বংশ'; 'এগুলে নির্বংশের ব্যাটা, পেছুলে নির্বংশের ব্যাটা'। |
এঙ লাফায় বেঙ লাফায় চেঙ বলে আমিও লাফাই | অক্ষমের উচ্চাশা; অনুকরণপ্রিয়তা; উৎকৃষ্টকে অনুকরণ করে নিকৃষ্টের হাস্যাস্পদ হওয়া; সমতুল্য- 'খঞ্জনের নাচ দেখে চড়ুইয়ের নাচ'; 'ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতারের নাচ'। |
এড়া কাজে বেড়া | জটিল বাঁকাধরনের কাজে বিপত্তি বেশি হয়। |
এড়ে (ছেড়ে) দিয়ে তেড়ে ধরে | পাওয়া সুযোগ হেলায় ছেড়ে দিয়ে ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা। |
এত বড় হাবা জন্ম দেয়নি কারো বাবা | মহামূর্খ। |
এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গভরা- ঈশ্বর গুপ্ত | নানাসমস্যায় বাংলা বারবার বিদীর্ণ হচ্ছে তবুও তার ভাবজগৎ নানা ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ। |
এত সুক্ষ্ম যে না বললেও হয় | কারো বুদ্ধি এত সূক্ষ্ম যে উল্লেখ না করলেও চলে; বুদ্ধিহীনের প্রতি বক্রোক্তি। |
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে১ | বাহ্যলক্ষণ দেখে মনে হয় মেকি সুখী; মেকি সুখের ভান |
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে২ | কারো আত্মগৌরব প্রচারে অবিশ্বাস; বলছে সুখে আছে, কিন্তু বাহ্যিক আচরণ তা বলে না; নিজের অবস্থা বাড়িয়ে বর্ণনাকারীকে উপহাস করার জন্য ব্যবহৃত প্রবাদবাক্য। |
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে৩ | গরিবের ভাগ্য সর্বদা সহায় হয় না। |
এতে কিছু যায় আসে না কত আস্তে তুমি হাঁটছো, যতক্ষণ না তুমি থামছো- কনফুসিয়াস | চলাটাই হল আসল কথা; জীবন কখনো স্থির নয়; বেদের উপদেশ- চরৈবেতি চরৈবেতি। |
এ তো মূলোবাড়ী নয় এ তো বেগুনবাড়ী | বছরে একবার মূলোরর চাষ হয়; বেগুন বারোমেসে; যেস্থানে একসময়ে সাহায্য পাওয়া যায় সেটি হল মূলোবাড়ী; যেস্থানে অল্প হলেও সবসময় সাহায্য পাওয়া যায় সেটি হল বেগুনবাড়ী। |
এ তো সবে কলির সন্ধ্যে | অধঃপতনের সবে শুরু; ভয়াবহ সঙ্কটের সূচনামাত্র। |
এদিক নেই ওদিক আছে | বাড়াবাড়ির প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
এনে দাও কাছে মারি, বাপের পূণ্যে নড়তে নারি | অলসের উক্তি। |
এবারকার রোগী সেবারকার রোজা১ | যন্ত্রণাভোগী ব্যক্তি পরের বারের জন্য সতর্ক থাকে। |
এবারকার রোগী সেবারকার রোজা২ | আজ যে সাহায্যপ্রার্থী কাল সে সাহায্যকারী হতে পারে। |
এমন মানবজীবন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা | ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করলে জীবনরূপ জমি ফুলে-ফলে ভরে তোলা যায় |
এমনকি একজন বোকারও একটি প্রতিভা আছে | কেউই একেবারে বোধশূন্য হয় না; কাউকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে নেই। |
এমনকি একটা/টি খরগোশও কামড়াতে পাড়ে যদি সে কোণঠাসা হয় | প্রাণীমাত্রই মরণ পণ করে আত্মরক্ষা করতে চায়। |
এমনকি বানরেরাও গাছ থেকে পড়ে | দক্ষ মানুষেরও কাজে ভুল হতে পারে। |
এমনি কেউ কারও বন্ধু নয় বা শত্রু নয় | অকারণে কিছু হয় না। |
এমনি যায় না মাস, তায় আবার দুদিন বেশি১ | প্রচণ্ড টানাটানি। |
এমনি যায় না মাস, তায় আবার দুদিন বেশি২ | কষ্টের ওপর কষ্ট; যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা। |
এ যদি গোরাচাঁদ হয়, তবে কালাচাঁদ কেমন? | বলার সাথে কাজের কোন মিল নেই। |
এ যে ঘোর কলি | প্রচণ্ড অন্যায়; সহ্যের বাইরে। |
এরণ্ডোহপি দ্রুমায়তে | (বৃক্ষহীন দেশে) ভেরেণ্ডাগাছও বৃক্ষ বলে গণ্য হয়। |
এর মুণডু ওর ঘাড়ে | একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো। |
এল ডোরাডো | সোনার দেশ; স্বর্ণখনি। |
এলো দারুণ বর্ষাকাল হরিণী চাটে বাঘের গাল | খুব খারাপ সময়; শত্রুমিত্রের কোন ভেদাভেদ নেই; প্রবল শত্রুরাও এখন পরস্পরের মিত্র। |
এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই | এলোমোলো অবস্থায় সুযোগ নেওয়া; সমতুল্য- 'ঘোলা জলে মাছ ধরা'। |
এলোশ্রাদ্ধের গুঁতোদক্ষিণা | যে কাজে শৃঙ্খলা নেই সেখানে লাভ না হয়ে লোকসানই হয়। |
এসেছি একা, যাবোও একা, কার সঙ্গে কার বা দেখা। | কেউ কারো নয়; সম্পর্কীত প্রবচন- 'ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয় মিছেই ভ্রম ভূমণ্ডলে'। |
এ্যাঙ যায়, ব্যাঙ যায়, খলসে বলে আমিও যাই- অমৃতলাল বসু১ | অযোগ্যও সমান বা সঙ্গী হতে চায়; যে কাজে সে অসমর্থ সেই কাজ করতে গিয়ে হাস্যাস্পদ হয়; অনুকরণপ্রিয়তার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি; সমতুল্য- 'ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতার পাখি নাচে'; পাঠান্তর- 'এ্যাঙ লাফায়, ব্যাঙ লাফায়, খলসে বলে আমিও লাফাই'।- |
এ্যাঙ যায়, ব্যাঙ যায়, খলসে বলে আমিও যাই- অমৃতলাল বসু২ | 'বামুন কায়েতরা জাত নিয়ে মারামারি করে, তাঁতিরা বলে আমরা চুপ করে থাকি কেন?'-টেকচাঁদ ঠাকুর |
এ্যায়সা দিন নেহি যায়েগা, জোয়ারমে ভাটা গিরেগা, খেয়াল ঠিক রাখনা। | অবিমিশ্র সুখদুঃখ হয় না; সুখের পরে দুঃখ আসে, দুখের পরে সুখ; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'। |
ঐ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঐ দিন আর নাইরে নাথু খাবলা খাবলা খাবা ছাতু | সুযোগ নেবার দিন শেষ। |
ঐ ধান ঐ চাউল গিন্নিগুণে আউল-ছাউল | সব এলোমেলো; পাঠান্তর- 'সেই ধান সেই চাল গিন্নিবিনা আলথাল'। |
ঐশ্বর্য অর্জন করা সহজ, রক্ষা করা কঠিন। | ধনসম্পদ যত সহজে পাওয়া যায় তত সহজে রাখা যায় না। |
ঐশ্বর্য চিত্তের বিকার ঘটায় | ঐশ্বর্য ভোগলিপ্সা বাড়ায়, চিত্তের স্থিরতা নষ্ট করে। |
ঐশ্বর্যের দেমাক থেকে অন্তরের টান অনেক বেশি আদরণীয়; | সমতুল্য- 'আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন', 'আদরের ডাল-ভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না', 'রাজার ভুরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি। |
ঐশ্বর্যের সময় দারিদ্রের কথা ভেবো, দারিদ্রের সময় ঐশ্বর্য্যের কথা ভেবো না | তাতে চিত্তের বিকার ঘটবে। |
ও
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ওজন বুঝে চলা১ | আত্মসম্মান বজায় রেখে চলা। |
ওজন বুঝে চলা১ | অপব্যয় না করা, মিতব্যয়ী হওয়া; সমতুল্য- অবস্থা বুঝে ব্যবস্তজা'; 'আয় বুঝে ব্যয় করা'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটা' যখন যেমন তখন তেমন' ইত্যাদি। |
ওঝার ঘাড়ে বোঝা // ওঝার ঘাড়ে ভূতের বোঝা | বিপদ যে থেকে রক্ষা করে সে এখন বিপদে পড়েছে; রক্ষাকর্তার উপর অতিরিক্ত চাপ |
ওঝার বেটা বনগরু | পণ্ডিতের ছেলে মহামূর্খ; (ওঝা ব্রাহ্মণের পদবী; কৃত্তিবাস ওঝা ব্রাহ্মণ সন্তান ছিলেন।); সমতুল্য- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার'। |
ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে নেকড়ায় আগুন দিয়ে | কথা নেই বার্তা নেই সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় কাউকে কিছু করতে বলা; যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ কিছু করতে আহ্বান করা; পাঠান্তর- 'ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে বাড়া ভাত খেয়ে'। |
ওপরে চিকণ চাকণ ভেতরে খ্যাড়(=খড়) | বাইরে বাবু ভিতরে ফকির। |
ওম জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। | প্রভাতী সূর্যপ্রণামমন্ত্র। |
ওরে পাগল খাবিনে, না। হাত ধোব কোথা? | সেয়ানা পাগল। |
ওল কচু মান তিনই সমান | গলা চুলকানোর ক্ষেত্রে সবগুলি তুল্যমূল্য; উনিশ-বিশ। |
ওল খেয়ে গোল | সমস্যার সম্মুখীন। |
ওল বলে, মানকচু তুই নাকি লাগ | নিজের ত্রুটির প্রতি নজর নেই পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়। |
ওলো রঙ্গী তোর ঘর পড়েছে, 'পুড়ুক গিয়ে ঘর; আমার ত রঙ পুড়বে না কো, কিবা তা'তে ডর | রূপসী রূপের গর্ব নেচে বেড়ায় অন্য কোনদিকে নঞ্জর করে না; সেদিক থেকে সুপরামর্শের প্রবাদ- 'জাতের নারী কালাও ভালা','বিয়ে কর কালো
তাই গৃহস্থের ভালো'। |
ওষুধ ধরেছে | কাজের কাজ হয়েছে; প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। |
ওষধার্থে সুরাপান | মদ খাওয়ার পক্ষে বাহানা। |
ওষুধের চেয়ে পথ্যি ভালো | সুসমখাদ্য ডাক্তারের চেয়ে ভাল ডাক্তার। |
ওস্তাদের মার শেষ রাতে | দক্ষ ব্যক্তি শেষমূহুর্তে তার দক্ষতা দেখায়। |
ঔ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঔষুধ ধরেছে | ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে; ফল ফলতে শুরু করেছে। |
ঔষুধার্থে সুরাপান, পান না বাড়ালেই থাকে মান | পরিমিত সুরাপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। |
ক
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ক অক্ষর গোমাংস | যে কখনো আদ্যাক্ষর ক নিষিদ্ধ গরুর মাংসের মত মুখে আনে নি; অক্ষরজ্ঞানহীন মহামূর্খ ব্যক্তি; পাঠান্তর- 'ক লিখতে কলম ভাঙে'; 'ক লিখতে হ লিখে'। |
কঃ পরঃ প্রিয়বাদিনাম্ | মিষ্টভাষীদের কেউ পর বা শত্রু হয় না। |
কঃ প্রাজ্ঞ বাঞ্ছতি স্নেহং সিকিতাসু | কোন জ্ঞানীপুরুষ বালুকায় স্নেহরস পেতে ইচ্ছা করেন? অর্থাৎ বালুকায় স্নেহরস বলতে কিছু নেই। |
কইতে কইতে মুখ বাড়ে, খাইতে খাইতে পেট বাড়ে | সব কিছুতেই পরিমিতিবোধ থাকার প্রতি ইঙ্গিত। |
কইতে জানলে ঠকি না,বসতে জানলে উঠি না | জ্ঞানীগুণীরা কখনো অপ্রতিভ বা অপ্রস্তুত হয় না। |
কইতে পারি সইতে পারি না | কথা শোনাতে পারে কিন্তু কথা শুনতে নারাজ। |
কই মাছের প্রাণ অল্পেতেই না যান | কাটা কইমাছ কড়াতেও লাফায়; কষ্টসহিষ্ণু লোক অল্পতে কাবু হয় না; পাঠান্তর- 'কইমাছের প্রাণ শক্ত বড়'। |
কইয়ের তেলে কই ভাজা | যার কাজ তাকে দিয়েই কাজ হাসিল করা; বিনা পরিশ্রমে কার্যোদ্ধার; সমতুল্য- 'গঙ্গাজলে গ্ঙ্গাপূজা'; ।মাছের তেলে মাছ ভাজা'। |
কইলাম কথা সবার মাঝে/মধ্যে; যার কথা তার গায়ে বাজে/বিন্দে | পরোক্ষে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা। |
কইলে যায় মনের দুখ খাইলে যায় পেটের ভুখ | চুপচাপ বসে থাকা যায় না; না খেলেও বাঁচা যায় না। |
কই হইল আগরতলা আর কই চৌকিরতলা | দুই অসম বিষয়ের মধ্যে তুলনা হয় না; তুলনীয়- কিসো আর কিসে সোনা আর সিসে'। |
কংস রাজার বদ (বধ) ফরমাশ | অন্যায় ও অসম্ভব আদেশ। |
কখনো অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না | কেউই অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে চায় না। |
কখনো খেওনা ওলে/তালে আর ঘোলে; কখনো ভুলো না ঢেমনার (লম্পট) বোলে | বিরুদ্ধ বস্তুর মিশ্রণ খেতে নেই; প্রবঞ্চকের কথায় বিশ্বাস করতে নেই; করলে প্রাণ ওষ্টাগত হবে। |
কখনো না হওয়া থেকে দেরীতে হওয়া ভালো | তবুতো কিছু হবে; দেরীতে হলেও কিছু করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানাতে এই উক্তি করা হয়। |
কখনো প্রমাণ করতে যেওনা যা কেউ সন্দেহ করে না | যেখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই সেখানে প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। |
কঙালী মেঁ আটা গীলা | কষ্টের ওপর কষ্ট; দুঃখীর আরো দুঃখী হওয়া। |
কচলা (বিশেষভাবে রগড়িয়ে ধোয়া) কাপড় ছাড়তে নাই | ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কোন কাজ ছাড়তে নেই। |
কচি উচ্চে পাকা পটল, কচি পাঁঠা, পাকা কাতল (কাৎলা মাছ) | এইসব খাদ্য বড়ই সুস্বাদু। |
কচি পাঁঠা, পাকা মেষ, দইয়ের আগা ঘোলের শেষ, এইগুলি খেতে বেশ | এইসব খাবার খেয়ে বড়ই তৃপ্তি পাওয়া যায়। |
কচি খুকি কুলোয় শুয়ে তুলোয় দুধ খান | নির্বুদ্ধি বয়স্কা মহিলা সম্পর্কে প্রযোজ্য। |
কচু কাটতে কাটতেই ডাকাত | লেগে থাকলে একদিন সিদ্ধি হবেই। |
কচুপোড়া খাও১ | 'অণ্ডকোষ পুড়িয়ে খাও' অর্থে কুতসিৎ গালিবিশেষ। |
কচুপোড়া খাও২ | ব্যর্থ মনোরথ হয়ে পড়ে থাকো |
কচুবনে ছড়ালে ছাই খনা বলে তার সংখ্যা নাই | কচুবনে ছাই ছড়ালে কচুর সংখ্যা দ্রুত ও তেজে বাড়ে। |
কচুবনের কালাচাঁদ | লম্পঢ়; দুশ্চরিত্র ব্যক্তি; গল্পে আছে রমণীদের ভোলাবার জন্য রাতের অন্ধকারে লম্পট চরিত্রের লোকেরা কচুবনে লুকিয়ে থাকে। |
কচুর বেটা ঘেঁচু, তার আবার মান | কচুজাতীয় মূলের মধ্যে মানই সবথেকে বড়; নীচু যত বড়ই হোক-না-কেন নীচু নীচুই থাকে; অপদার্থের কোন মানসম্মান হয় না; পাঠান্তর- 'কচুর বেটা ঘেচু, বড় বাড়েন তো মান'। |
কঞ্চি খবরদার | মুল্যবান বস্তুর দিকে নজর নেই সামান্য বস্তুর দিকে কড়া নজর; সমতুল্য- 'ঘি আদুড় ঘোল ঢাকা'। |
কঞ্চিতে বংশলোচন জন্মানো | নীচের উচ্চপদ পাওয়া (উৎসকাহিনী- বংশলোচন হলো বাঁশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন শর্করা জাতীয় বস্তু; যা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়; কঞ্চিতে বংশলোচন জন্মালে কঞ্চি বাঁশের উচ্চপদ লাভ করে।) |
কটি ছেলে? না, পুড়িয়ে খাব | বদ্ধকালার অসংলগ্ন কথাবার্তা। |
কড়াক্কড় চৌকী-আইন খারাপ; সদর বন্ধ খিড়কি ফাঁক | একদিকে আঁটোসাঁটো অন্যদিকে শিথিলতা; কাজের আয়োজনের সময় খুব কড়াকড়ি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শিথিলতা; ছোটখাট ব্যাপারে নিয়মের বাড়াবাড়ি কিন্তু বড় বিষয়ে উদাসীন; সমতুল্য- 'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো'। |
কড়িকপালে | বিত্তশালী ব্যক্তি। |
কড়িকাঠ গুণে যাও | ব্যর্থমনোরথ হয়ে পড়ে থাকো; অলসভাবে সময় কাটাও। |
কড়িতে কড়া, কাহনে কানা | অল্প খরচে কিপ্টেমি, বেশি খরচে দরাজহস্ত; তুলনীয়- 'বুড়িতে চতুর, কাহনে কানা'। |
কড়ি থাকলে বাঘের দুধ মেলে | অর্থের অসীম শক্তি। |
কড়ি থাকলে বেয়াইয়ের বাপের শ্রাদ্ধ হয় | টাকা থাকলে অপচয় করা যায়। |
কড়ি দিয়ে কানা গরু কেনা | অজ্ঞতাবশতঃ টাকা খরচ করে ঠকে গেলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
কড়ি দিয়ে কিনবো দই গোয়ালিনী মোর কিসের সই১ | পয়সা খরচ করে জিনিসপত্র কেনার সময় রিশতার কোন প্রশ্ন নেই; পাঠান্তর- 'কড়ি দিয়ে খাই দই, কি করবে মোর গয়লা সই'। |
কড়ি দিয়ে কিনবো দই গোয়ালিনী মোর কিসের সই২ | কোন বিষয়ে কারো কাছে বাধ্য নয় এমন মানসিকতার ব্যক্তি করে। |
কড়ি দিয়ে হেঁটে নদী পার হওয়া | অর্থ গেল পরন্তু পরিশ্রমও করতে হল। |
কড়ি দেখছো ঝাল দেখোনি | অর্থ-আয়ের সম্ভাবনা দেখছো কিন্তু তারজন্য পরিশ্রম যে কি ভয়ানক গেল তা দেখছো না; (উৎসকাহিনী-কোন এক জমিদার দিঘি কাটার জন্য জল সেঁচ্ছিলেন; কিন্তু যেখানে জল সেঁচে ফেলা হয়, সেই ঝাল এত উঁচু ছিল যে মজুরেরা অতদূরে জল সেঁচতে পারছিল না; তাতে জমিদার দ্বিগুণ অর্থ দিতে রাজী হন; তাই শুনে এক দরিদ্র মজুরের স্ত্রী স্বামীকে যাবার জন্য তাড়না করলে সে বলে, ‘কড়ি দেখছো ঝাল দেখনি'; কষ্ট না দেখে কেবল লাভ দেখ’লে এই প্রবাদ বলা হয়); তুলনায়- 'ঘুঘু দেখেছো ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি'। |
কড়ি নেবে গুণে পথ চলবে শুনে | টাকাপয়সা নেবার সময় গুণে নিতে হয়; পথ জেনে তবে পথ চলতে হয়; বিচার-বিবেচনার সাথে কাজ সম্পাদন করা উচিৎ। |
কড়িপিশাচ | অতি কৃপণব্যক্তি। |
কড়ি পেলে কাঠের ঘোড়া (ধর্মরাজ) হাঁ করে | ঘুষের দাপট। |
কড়ি ফটকা চিঁড়ে দই, কড়ির মত বন্ধু কই | টাকা খরচ করলে সব পাওয়া যায়; টাকার মত বন্ধু হয় না। |
কড়ি বই বন্ধু নেই | টাকা থাকলে কোন ভাবনা থাকে না। |
কড়ি হলে বাঘের দুধ মেলে- ভারতচন্দ্র | পয়সা খরচ করলে যেকোন দুস্প্রাপ্য বস্তু পাওয়া যায়। |
কড়ির জিনিস পড়িস না১ | দামী জিনিস কম ব্যবহার করবে। |
কড়ির জিনিস পড়িস না২ | মূল্যবান সামগ্রী সাবধানে ব্যবহার করবে। |
কড়ির মাথায় বুড়োর বিয়ে১ | কড়ি থাকলে বুড়ো বয়সেও বিয়ে করা যায়। |
কড়ির মাথায় বুড়োর বিয়ে২ | বুড়োর যে বিয়ে তার মুলে আছে অর্থ। |
কড়ির যত্ন নাও কাহন (সঞ্চিত অর্থ) তোমার যত্ন নেবে | প্রয়োজনকালে অর্থের অভাব হবে না। |
কণশঃ ক্ষণশ্চৈব বিদ্যামর্থং চ সাধয়েৎ | একটু একটু করে এবং বহুসময় ধরে বিদ্যা ও অর্থ উপার্জন করবে। |
কণ্টকবিনা কমল নাই কলঙ্কশূন্য চন্দ্র নাই | জগতে কিছুই নির্দোষ নয়; অবিমিশ্র কিছু হয় না। |
কণ্টকেনৈব কণ্টকম | কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা; সমতুল্য- 'বিষস্য বিষমৌযধং'; 'শত্রু দিয়ে শত্রু নাশ'। |
কত আস্তে তুমি হাঁটছো তাতে কিছু যায় আসে না যতক্ষণ না তুমি থামছো- কনফুসিয়াস | কত আস্তে তুমি হাঁটছো সেটা প্রশ্ন নয় প্রশ্ন হল তুমি হাঁটছো কিনা; জীবনে এগিয়ে যেতে হবে এটাই মূলকথা; জীবন চলিষ্ণু; তুলনীয়- 'চরৈবেতি চরৈবেতি'। |
কত আর থাকিব আমি লক্ষ্মণের ফল ধরা হয়ে | কিছু লোক আছে যাদের যতটুকু কাজ করতে বলা হয় ততটুকু কাজই করে, তার বেশি একটুও করে না; এদের লক্ষ্য করে বিদ্রূপে এই প্রবাদাংশটি ব্যবহৃত হয়; (উৎসকাহিনী- বনবাসকালে রামচন্দ্র প্রতিদিন লক্ষ্মণের হাতে ফল দিয়ে বলতেন, 'ধর'; লক্ষ্মণ ফলটি ধরতেন এবং তুলে রেখে দিতেন; রামচন্দ্র কোনদিন 'খাও' বলেন নি বলে তিনি খেতেন না; দেশে ফির এলে তিনি সব ফল রামাচন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন।) |
কতই বা দেখবো আর ছুঁচোর/বানরের গলায় চন্দ্রহার১ | অযোগ্যের হাতে মহার্ঘবস্তু দেখে আক্ষেপ। |
কতই বা দেখবো আর ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার২ | যে ব্যক্তি অবস্থার অতিরিক্ত বেশভূষা করে যে ব্যক্তি হাস্যাস্পদ হয় তার প্রতি বক্রোক্তি। |
কতই সাধ ছিলরে চিতে মলের আগে চুটকি দিতে | অক্ষমের বাসনা; নৈরাশ্যব্যঞ্জক উক্তি; যা হবার নয় তাই হবার ষে সম্পর্কে খেদোক্তি; পাঠান্তর- 'কতই সাধ হয়রে চিতে, ফোকলাদাঁতে মিশি দিত'; 'কত সাধ হয়রে চিতে বেগুন গাছে আঁকশি দিতে'। |
কতক্ষণ রহে শিলা শূন্যেতে মারিলে- কাশীরাম দাস | মাটির কাছাকাছি থাকাটাই স্বাভাবিক; মাটির টান বড় টান; প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধ কিছু করা যায় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পঙ্কো হি নভসি ক্ষিপ্তঃ ক্ষিপ্তু পততি মূর্ধানি'। |
কত জলে কত চাল/চিঁড়ে/মুসুরি ভেজে দেখো | যা জানতে না তা এখন জেনে নাও। |
কত ঢং দেখালি গুয়ে, তুলসীতলায় শুয়ে শুয়ে | কপট আচারের প্রতি বক্রোক্তি। |
কত ধানে কত চাল জান না কোন হিসাব রাখ না | কোনো বিষয়ের প্রকৃত অবস্থার খবর/হিসাব করে চলার প্রতি ইঙ্গিত। |
কত রঙ্গ দেখালে মাসি | আদিখ্যেতার প্রতি বক্রোক্তি। |
কত রবি জ্বলেরে কেবা আঁখি মেলেরে! | অতি-অলস কিছু দেখতে বা শুনতেও তলসতা করে। |
কত শত গেল রথি শেওড়াতলার চক্রবর্তী | অক্ষমের আস্ফালন; বুদ্ধিহীনের বড়াই; পাঠান্তর-'কত হাতী গেল তল ভেড়া/মশা বলে কত জল'; 'মহাগজা পলায়ন্তে মশকানাং তু কা গতিঃ'। |
কথং মারাত্মকে ত্বয়ি বিশ্বাসঃ | তোমার মত দুস্কৃতিকে বিশ্বাস কি? |
কথা কম কাজ বেশী | কথা থেকে কাজের দাম বেশী। |
কথা কম বললে ক্ষতি কম হয় | খারাপ পরিস্থিতি ভুলে যেতে পারি যদি আমরা সে সম্পর্কে আলোচনা বন্ধ করি। |
কথা কয় না ঘাড় নাড়ে সেই বাঘ মানুষ মারে | কম কথা বলার লোক খুব খতরনক হয়। |
কথা টলার চেয়ে পা টলা (আছাড় খাওয়া) ভালো১ | কথা দিলে কথা রাখতে হয়; অঙ্গীকার পালন করা অবশ্য কর্তব্য। |
কথা টলার চেয়ে পা টলা ভালো১ | যেখানে কথা দিলে কথা নড়চড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে না থাকাই ভালো। |
কথা দিয়ো ধীরে; কাজ করো তীরে (দ্রুত) | চিন্তাভাবনা করে কথা বলা উচিৎ; গদাইলস্করি চালে কাজ করা উচিৎ নয়, কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত। |
কথা বললে বার্তার সৃষ্টি হয় | একাকী ঘরের কোণে গোমড়া মুখে বসে থাকা নেই; তুলনীয়- 'বাত কর তো বাত বনে'- হিন্দী প্রবাদ |
কথা বলা থেকে কথা শোনার দাম বেশী | জ্ঞানীরা শোনে বেশি বলে কম। |
কথা বলার আগে যথেষ্ঠ সময় নিতে হয় যাতে কথা ফলের মত পরিপক্ক (সার্থক) হয় | চিন্তাভাবনা করে কথা বলতে হয় যাতে কার্যসিদ্ধি হয়। |
কথা বেচে খাওয়া১ | কথার বিনিময়ে অর্থোপার্জন; উকিলেরা কথা বেছে খায়। |
কথা বেচে খাওয়া২ | লোক ঠকিয়ে জীবিকানির্বাহ; রাজনীতিকরা কথা বেছে খায়। |
কথাবার্তায় ক্রোধের পরিমাণ খাবারের লবণের মত | পরিমিত হলোে রুচিকর বেশি হলোে ক্ষতিকর। |
কথা শুনে পেটের ভাত চাল হয়ে যায় | বিপদের কথা শুনে আশঙ্কায়/ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে যায়। |
কথা শুনে হরিভক্তি উড়ে গেল | নিতান্ত অশ্রদ্ধার কথা, যা শুনে সব শ্রদ্ধা নষ্ট হল। |
কথা শোন দ্রুত কথা বল ধীরে | কেউ কিছু বললে তৎক্ষণাৎ তার কথা শোন এবং ধীর ও স্পষ্টভাষায় কথার উত্তর দাও। |
কথায় কথা বাড়ে ভোজনে পেট বাড়ে | বাকবিতণ্ডায় অনাবশ্যক কথার অবতারণা হয়; তর্ক বন্ধ হলেই গোলযোগ মিটে যায়; বেশি আহারে আহারের স্পৃহা বাড়ে। |
কথায় কথা বাড়ে, ক্রোধে হয় ঝড়, কথা না বাড়িয়ে সখি যাও তবে ঘর | অনাবশ্যক কথা বাড়িয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ানো উচিত নয়। |
কথায় কথায় রাজা উজীর মারে | লম্বাচওড়া কথা বলে। |
কথায় কলসী/পেট ভরে না১ | শুধু কথায় কাজ হয় না; ফাঁকা আওয়াজে কাজ হয় না; ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল হয় না; পাঠান্তর- 'কথায় চিঁড়ে ভেজে না'; 'কথায় ভাত রাঁধে না'। |
কথায় কলসী/পেট ভরে না২ | চাটুকারি করে কিছু অর্জন করা যায় না। |
কথায় টলার চেয়ে পায়ে টলা ভালো | কথা টলার চেয়ে পা টলা ভালো- দ্রষ্টব্য |
কথায় নয় কাজে পরিচয় | কাজ দিয়ে ব্যক্তির গুণাগুণ বিচার হয়। |
কথায় বড় হতে হবে না, কাজে বড় হও | আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? |
কথায় বলে কথায় থাকো | প্রবাদে বলে সবার সাথে সম্পর্ক রাখো। |
কথায় মন ভিজে চিঁড়ে ভেজে না | শুধু কথায় কারো মন জয় করা যায় কিন্তু কোন কার্যসিদ্ধি হয় না। |
কথার কথা কাজের নহে | বাজে কথার মূল্য নেই। |
কথার কোন মাথা নেই ব্যাঙে খায় চিঁড়ে দই | নিতান্ত অবিশ্বাস্য আজগুবি কথা যার কোন অর্থ হয় না; পাগলের প্রলাপ। |
কথার গুণে বার্তা নষ্ট১ | বাকচাতুর্যে আসল কথা হারিয়ে যায় |
কথার গুণে বার্তা নষ্ট২ | বাক্যদোষে ঈপ্সিত ফললাভ হয় না। |
কথার চেয়ে কাজের গলা বেশি দরাজ | মানুষ কাজ চায় কথা চায় না; সময়ে কাজ পেলে খুশি হয়। |
কথার বেলায় ঢুসঢাস কাজের বেলায় হাওয়া | কথাবার্তায় বেশ পটু, কাজে বেলায় অষ্টরম্ভা; পাঠান্তর- 'কথার বেলায় সরগম কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা'। |
কদম গাছের কানাই | লম্পট চরিত্রের লোক। |
কন্ওয়া বৈল্ বয়ারে সন্কৈ | কানা গরু বাতাস বইলেই ভয় পায়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়'। |
কনের ঘরের মাসি বরের ঘরের পিসি১ | যে ব্যক্তি বিবদমান দুইপক্ষের সঙ্গেই সদ্ভাব রেখে চলে। |
কনের ঘরের মাসি বরের ঘরের পিসি২ | যে ব্যক্তি দুইপক্ষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভালমানুষ সেজে একের বিরুদ্ধে অন্যকে ব্যবহার করে। |
কনের বাপ বসে বসে চোখের জলে ভাসে বরের বাপ বসে আছে পাঁচশটাকার আশে | বিয়েতে অনায্য উপঢৌকনের প্রতি ইঙ্গিত। |
কনের মা কাঁদে আর টাকার পুটুলি বাঁধে | কন্যা বিক্রয়ে মায়ের মনোভাব ব্যক্ত; একদিকে কন্যার জন্য শোক; অন্যদিকে টাকার জন্য লালসা। |
কন্যা বরয়তে রূপং মাতা বিত্তং পিতা শ্রুতম্। বান্ধবাঃ বরয়তে কুলমিচ্ছন্তি মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ। (চাণক্য) | কন্যা বরের রূপ; মাতা বরের অর্থ; পিতা বরের গুণ, আত্মীয়রা বরের কুল আর অতিথিরা ভোজন প্রত্যাশা করে। |
কপটপ্রেমে লুকোচুরি মুখে মধু হৃদে ছুরি | কপট প্রেমে বা বন্ধুত্বে মুখে মিষ্টি কথা বলে আর মনে মনে অনিষ্ট করার চিন্তা করে; কপটতাসম্পর্কে সচেতন থাকতে চেতাবনি; পাঠান্তর- 'কপটবন্ধুর লুকোচুরি মুখে প্রেম অন্তরে ছুরি'। |
কপট বন্ধুত্ব প্রকাশ্য শত্রুতা থেকে খারাপ | ভণ্ডামী কোন অর্থেই সমর্থনযোগ্য নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অজুহাত মিথ্যার চেয়েও খারাপ'; 'মনের কষ্ট শরীরের যন্ত্রণার চেয়েও খারাপ' ইত্যাদি। |
কপালগুণে গোপালঠাকুর | ভাগ্য ভালো থাকলে অযোগ্য ব্যক্তিও বড় হয়। |
কপালছাড়া পথ নাই | ভাগ্যভিন্ন গতি নাই; অদৃষ্টে যা আছে তাই ঘটবে। |
কপাল ভাঙ্গলে জোড়া লাগে না | মন্দভাগ্য সহজে পালটায় না; একবার ভাগ্য অপ্রসন্ন হলে সহজে উন্নতি হয় না। |
কপাল ভালো তো সব ভালো | সৌভাগ্য থাকলে যাতে হাত দেবে তাই সফল হবে। |
কপালমূলং খলু সর্বদুঃখম | কপালই সব দুঃখের মূলকারণ; অদৃষ্টই সকল দুঃখকষ্টের মূল। |
কপাল যখন বাঁকে বেনাবনে বাঘ ঝাঁকে | কপাল মন্দ হলোে যেখানে বিপদের আশঙ্কা নেই সেখান থেকে বিপদ এসে উপস্থিত হয়; পাঠান্তর- 'কপাল যখন পোড়ে, শুকনো ডাঙায় পিছলে পড়ে'। |
কপাল যখন মন্দ হয় বন্ধুলোকে মন্দ কয় | কপাল মন্দ হলোে বন্ধুলোকে নিন্দা করে অথবা বন্ধুলোকের ভালকথা কানে মন্দ শোনায়। |
কপাল সঙ্গে সঙ্গে যায় | যা হবার তা হবে; অভাগার কোথাও সুখ লেখা নেই; সমতুল্য- 'আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে'; পাঠান্তর- 'কপাল সাথে সাথে ফেরে'। |
কপালে তোর নেইকো ঘি ঠকঠকালে হবে কি? | ভাগ্যে না থাকলে প্রত্যাশা করে কোন লাভ নেই; যার কপালে সুখ লেখা নেই ষে শত চেষ্টাতেও কপাল ফেরাতে পারে না। |
কপালের লিখন যায় না খণ্ডন | ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবেই; ভাগ্যে ভোগান্তি থাকলে ভুগতেই হয়। |
কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা/মারা | সম্পূর্ণ বিনাশ করা |
কবে রাম রাজা হবে, তবে সীতা উদ্ধার পাবে | দীর্ঘ প্রতীক্ষার কারণে হতাশা প্রকাশ। |
কম জলের/পানির মাছ বেশি জলে/পানিতে উঠলে ও মাছে বেশি লাফালাফি করে | প্রাণীমাত্রই নিজের পছন্দের পরিবেশ পছন্দ করে। |
কম্বল ও কমণ্ডুল না নিলে সাধু হওয়া যায় না | ভেক না ধরলে ভিখ পাওয়া যায় না; ভেকধারীদের প্রতি ব্যাঙ্গোক্তি। |
কম্বল(ভল্লুক) আমি ছেড়ে দিয়েছি কম্বল আমায় ছাড়ে না | নাচ্ছোড়বান্দার পাল্লায় পড়ে নাজেহাল। |
কম্বলের লোম বাছলে থাকে কি? | যেখানে সবাই মন্দ সেখানে মন্দলোক বাচতে যাওয়া বৃথা; সমতুল্য- 'ঠগ বাছতে গা উজাড়'। |
কয়লা খেয়েছো আঙরা হাগো | দোষ করেছো শাস্তি পাও; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল মশা মারতে গালে চড়'। |
কয়লা ছাড়ে না ময়লা | কয়লা হাজার ধুলেও যেমন রঙ বদলায় না তেমনিই কুলোক কখনো কুপ্রবৃত্তি ছাড়ে না; স্বাভাবিক ধর্ম কখনো লোপ পায় না; সমতুল্য- 'অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'; 'আদা শুকালেও ঝাল যায়না'; 'ইল্লৎ যায় না ধুলে'; 'রসুন ধুলেও গন্ধ যায় না' 'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কয়লা ধুলে ময়লা যায়না'; 'কয়লার রং ময়লা;। |
কয়লা পুড়লে ময়লা যায় | আগুনে শুদ্ধ হলে কয়লার ময়লা যায়; জ্ঞানাগ্নিতে শুদ্ধ হলে মানুষের মনের অজ্ঞতা দূর হয়। |
কর গোবিন্দ বাপের শ্রাদ্ধ, আরও বামুন আছে | নগণ্য কাজের জন্য লোকের অভাব হয় না। |
কর যদি তাড়াতাড়ি ভুলের হবে বাড়াবাড়ি | তাড়াতাড়ি করলে নজর এড়িয়ে কাজে অনেক ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
করছে কীসের জাঁক, ময়না টিয়ে উড়িয়ে দিয়ে খাঁচায় পোষে কাক | অবিমৃষ্যকারিতার প্রতি ইঙ্গিত। |
করা থেকে বলা সহজ | কিছু করতে গেলে পরিশ্রম লাগে। |
করার আগে ভাবো, ভাবার আগে কোরো না | তাতে হটকারিতা কখনো হবে না। |
করুণার পাত্র হওয়া থেকে শত্রু হওয়া ভাল | অনুকম্পার পাত্রকে সকলে ঘৃণা করে। |
কর্কশ কথা আগুনের জ্বালার চেয়েও ভয়ঙ্কর | অনেকের অনুভূতিই সেইরকম। কাউকে কটাক্ষ করা নেই। |
কর্জ করে যেই কষ্ট পায়/ভোগে সেই | ঋণী বড় দুখী; অঋণী খুবই সুখী; ঋণ করলে দুশ্চিন্তা বাড়ে, ভয়ের সম্ভাবনা থাকে ; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ঋণং কৃত্বয়া ধৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ'; পাঠান্তর- 'কর্জ নেই কষ্ট নেই'। |
কর্তব্যো নাতি সঞ্চয়ঃ | বেশি সঞ্চয় করা উচিৎ নয়; তাতে নানা দোষ আসতে পারে, যেমন- কার্পণ্য, দুশ্চিন্তা, বিলাসিতা, দম্ভ ইত্যাদি। |
কর্তা মুগের ডাল খান না; কেন খান না; পান না, তাই খান না | অলভ্য জিনিস মন্দ; দুস্প্রাপ্য জিনিসে বৈরাগ্য; সমতুল্য- 'আঙুরফল টক'। |
কর্তা যে ঘি খান না, তা এক আচঁড়েই মালুম | যার গায়ে আঁচড় টানলে গায়ে খড়ি পড়ে তিনি নিশ্চয়ই ঘি খান না; পরীক্ষাতেই বিদ্যা প্রকাশ পায়। |
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম উলুবনে কেত্তন | সবলের অনুচিত ইচ্ছাপূরণ; সবল যা ইচ্ছা তাই করতে পারে; অন্যের প্রতিবাদ বৃথা যায়; আইন বা যুক্তির ধার ধারে না; কর্তার ইচ্ছাই আইন; স্বেচ্ছাচারিতার মনোভাব। |
কর্মণা বাধ্যতে বুদ্ধিঃ ন বুদ্ধ্যা বাধ্যতে কর্ম | কর্ম (অদৃষ্ট) বুদ্ধিকে বশীভুতটাকে; বুদ্ধি কর্মকে অনুসরণ করে; বুদ্ধি কর্মের অনুগামী না হয়ে তাকে বশীভুত কর'তে চাইলে বুদ্ধিনাশ হয়, যেমন- সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে শ্রীরামচন্দ্রের হয়েছিল। |
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন | বিহিতকর্মেই আছে অধিকার, কর্মফলে কখনো নয়; কাজ করে যাও ফলের কথা ভেবো না। |
কর্মদোষেণ দরিদ্রতা | কর্মদোষেই মানুষ অভাগা। |
কলঙ্ক গঙ্গাজলে ধুলেও যায় না | বদনাম কখনো ঘুচে না। |
কলঙ্ক বিনা চাঁদ নাই | অবিমিশ্র সুখ হয় না; দোষেগুণে মানুষ। |
কলসির জল গড়তে গড়তেই শেষ | সীমিত সম্পদ দ্রুত শেষ হয়; অব্রাযয়ীম আয়ের উৎস না থাকলে সঞ্চিত অর্থে বেশি দিন চলে না; পাঠান্তর- 'কলসির জল গড়তে গড়তে কত থাকে'। |
কলাপোড়া খাও | ব্যর্থ হয়ে পড়ে থাকো; সমতুল্য- 'কচুপোড়া খাও'। |
কলার ভেলায় সাগর পার১ | অসম্ভব কাজ |
কলার ভেলায় সাগর পার২ | সামান্য উপায়ে বিরাট কাজ করার বৃথা চেষ্টা; সমতুল্য- 'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'মুড়া কোদালে পুকুর কাটা'; 'সাঁতার দিয়ে সিন্ধু পার' ইত্যাদি। |
কলিতে সোনা পিতল হলো | এখন সৎ বলে কেউ নেই সবাই অতি বদ; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো মহাপাপ'। |
কলির অবতার | চরম বদমায়েশ |
কলির অর্জুন | অদ্বিতীয় ধানুকী; তৃতীয়পাণ্ডব অর্জুন অদ্বিতীয় ধানুকী ছিলেন; লক্ষ্য ছিল তার অব্যর্থ; তাই কেউ যদি উৎকৃষ্ট ধনুর্ধর হয় তবে তাকে প্রবাদে 'কলির অর্জুন' বলে। |
কলির কেষ্ট১ | একসঙ্গে বহুনারীর প্রেমিক; বহুবল্লভ (উৎসকাহিনী- মহাভারতের শ্রেষ্ট চরিত্র যুগপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ একই সঙ্গে বহুগোপিনীর সাথে প্রেমলীলা করতেন; |
কলির কেষ্ট২ | বিদ্রূপে- নারীসঙ্গভোগী নব্যপ্রেমিক; কেতাদুরস্ত লম্পট চরিত্রের লোক |
কলির প্রহ্লাদ | বিদ্রূপে-কুপিতার কুসন্তান; (উৎসকাহিনী- দৈত্যাধিপতি হিরণ্যকশিপুর পুত্র ছিলেন প্রহ্লাদ; দৈত্যরা চিরদিনই দেববিরোধী; প্রহ্লাদ কিন্তু ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত; কুপিতার সুসন্তান; বর্তমানে লম্পট পিতার লম্পট সন্তানকে প্রবাদে 'কলির প্রহ্লাদ' বলা হয়। |
কলির ভীম/ভীমসেন | বিদ্রূপে- মহাপেটুক; দ্বিতীয়পাণ্ডব ভীমসেন দেহের গঠনে, বাহুবলে ভোজনের পটুতায় তুলনাহীন ছিলেন; তাই থেকে মহাপেটুককে প্রবাদে কলির ভীম বা 'যেন কলির ভীমসেন' বল হয়; |
কলির যুধিষ্ঠির | বিদ্রূপে- ধার্মিকতার ভাণকারী কপটব্যক্তি; জেষ্ঠপাণ্ডব যুধিষ্ঠির ধর্মপুত্র বলে প্রসিদ্ধ; অদ্বিতীয় ধর্মনিষ্ঠা ও সত্যবাদিতার জন্য প্রবাদে বলা হয়- 'যেন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির'; বর্তমানে এই রকম চরিত্র দুর্লভ। |
কলির লক্ষ্মী | বিদ্রূপে- লক্ষ্মীছাড়া গৃহবধু, যে লক্ষ্মীভাণ্ডের জমানো অর্থে সংসারের প্রয়জোনীয় দ্রব্য না কিনে নিজের অঙ্গসাজ কেনে। |
কলির সন্ধ্যা | ভয়াবহ দুর্দিনের/দুর্ভাগ্যের সূত্রপাত। |
কলুর বলদ | নিজের ভালমন্দ না বুঝে পরের নির্দেশমত শুধু মুখবুজে খেটে মরা লোক। |
কল্পনার ডানা পাখা মেলে | কল্পনার রঙে না রাঙালে সবকিছু শুস্কং কাষ্ঠং থেকে যায়, নিরস তরুবর হয় না; সমতুল্য- 'গল্পের গরু গাছে চড়ে'। |
কল্পান্তস্থায়িনো গুণাঃ | সৎকর্ম, কীর্তি ইত্যাদি অবিনাশী। |
কল্লার (দুষ্ট) ঘাড় বোল্লায় (বোলতা) ভাঙে | দুষ্টের শাস্তি হবেই। |
কল্লে যত্ন মেলে রত্ন | সাধনায় সিদ্ধি হবেই। |
কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে | বেশি টানাটানি করলে সূতা ছিঁড়ে যায়; বাড়াবাড়ি ভাল নয়; সমতুল্য- 'আধিক্যে কুফল আছে'; 'ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'। |
কষ্ট দিয়ে দান আর পিত্তি মেরে ভোজন | কথা শুনিয়ে দান করলে গ্রহীতার মনে সুখ হয় না; পিত্তি পড়ার পর খাওয়ায় সুখ হয় না। |
কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলে না | পরিশ্রম না-করলে সফলতা পাওয়া যায় না; বিনা পরিশ্রমে কিছুই মেলে না; কিছু পেতে গেলে কিছু ঝামেলা সইতে হয়; সমতুল্য- 'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়';'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'নহি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'; 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'; 'লেগে থাকলে মেগে খায় না'; 'সাধনা না করলে সিদ্ধি নাই'; 'সাধিলেই সিদ্ধি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কষ্ট বই ইষ্ট নাই'; 'কষ্টবিনা কৃষ্ণ মেলে না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'। |
কষ্টবিনা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না, ঘর্ষণবিনা রত্ন উজ্বল হয় হয় না- কনফুসিয়াস | অনায়াসে কিছু লব্ধ হয় না। |
কসুরও নাই কামাইও নাই | কোন ছাড়ছোড় নেই অবিচ্ছিন্নভাবে চলছে। |
কস্য নাভ্যুদয়ে হেতুর্ভবেৎ সাধুসমাগমঃ | সাধুসঙ্গ কার না উন্নতির কারণ হয়? |
কস্য মাতা, কস্য পিতা, কস্য ভ্রাতা সহোদরঃ কা কস্য পরিবেদনা | কার মা, কার বাবা, কার ভাই- এসব ভেবে কাজ নেই। |
কহাঁ রাজা ভোজ ঔর কহাঁ গঙ্গু তেলী | দুজন মানুষ মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকে; সমতুল্য- কিসে আরে কিসে সোনা আর সীসে', 'কোথায় রাণী ভবানী, কোথায় ফুলি জেলেনি' ইত্যাদি। |
কাঁচপোকায় আরশোলা খায়/ধরে | এমন অবস্থা যার থেকে নিস্কৃতি নেই। |
কাঁচা কাজ করা নেই | অবিবেচনাপ্রসূত কাজ কয়ড়া নেই; বোকামি করা নেই। |
কাঁচা খাই ডাসা খাই আর খাই পাকা | সর্বভুক। |
কাঁচা গাঁথুনির দুনো খাটুনি | একবার পরিশ্রম করে গড়ে; ভেঙে গেলে দ্বিতীয়বার পরিশ্রম করে সেগুলি সারায়; কাঁচা গাঁথুনি কম মজবুত হওঁয়; কাঁচা কাজ করা নেই; পাঠান্তর- 'কাঁচা গাঁথুনির নেই আঁটুনি'। |
কাঁচা গুয়ে ঢিল মারা | অপ্রীতিকর কাজ করে নিজের অনিষ্ট করা। |
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা১ | অল্পবয়সেই শরীর জীর্ণ হওয়া |
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা২ | অল্পবয়সেই দুশ্চরিত্র হওয়া। |
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরে না | সতেজ তরুণমনে পাপবোধ জন্মে না। |
কাঁচা মাটিতে পা দেওয়া১ | ভুল জায়গায় আগ বাড়া। |
কাঁচা মাটিতে পা দেওয়া২ | ভিত্তি সুদৃঢ় না হলে কাজে সাফল্য আসে না। |
কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ট্যাঁশট্যাঁশ | পাকা বাঁশ নোয়ালে কটকট শব্দ হয়; শিশুকালে নীতিশিক্ষা না দিলে বড়বয়সে হাজার উপদেশ দিলেও তা কোন কাজে লাগে না; সন্তান মানুষ হয় না; সমইয়ের কাজ অসময়ে করলে কোন কাজ হয় না বোঝাতে এই প্রবাদ বলা হয়; তুলনীয়- 'ডাল যেমন বাঁকাবে গাছও তেমনি বাড়বে'। |
কাঁচে কাঞ্চনে সমান১ | কোনটা অল্পমূল্যের, কোনটা বেশি মূল্যের তা বোঝার সামর্থ নেই। |
কাঁচে কাঞ্চনে সমান২ | সংসারবৈরাগি কাছে দুইই সমভাবে উপেক্ষণীয়। |
কাঁচের ঘরে বসে পরের জানালায় ঢিল ছোড়া | নিজের খুঁত থাকতে অন্যের খুঁত ধরা উচিত নয়। |
কাঁটাগাছের তলায় থাকা | সবসময় চিন্তার থাকা, শঙ্কিত থাকা; সমতুল্য- 'নদীর তীরে বাস, ভাবনা বারোমাস'। |
কাঁটাচামচের আগে আঙ্গুলের জন্ম | হাতে খাওয়ার পক্ষে ওকালতি। |
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা১ | একদুষ্টের বিরুদ্ধে অন্যদুষ্ট লেলিয়ে দিয়ে উভয়ের বিনাশ সাধন করা। |
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা১ | শত্রু দিয়ে শত্রুনাশ করা; সমতুল্য- 'জল দিয়ে জল বার করা'; 'ঢিল দিয়ে ঢিল ভাঙা'। |
কাঁটা বিনা কমল/গোলাপ নাই | অবিমিশ্র সুখ হয় না; সুখদুঃখ জড়িয়ে জীবন। |
কাঁঠালের আমসস্ত্ব | অবাস্তব বস্তু; অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব, আঁটকুড়ের ব্যাটা, আকাশকুসুম, এঁড়ে গরুর দুধ, ঘোড়ার ডিম, পশ্চিমে সূর্যোদয়, ভস্মকীট, সোনার পাথরবাটি, সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি |
কাঁড়ানো চালে তিন ঘা পাড় (ঢেঁকির আঘাত) | সম্পন্ন কাজে পুনরায় পরিশ্রম করা নিস্প্রয়োজন। |
কাঁধে কুড়ুল রেখে বনময় খোঁজে | কাছে থাকা জিনিস নানাস্থানে খুঁজে বেড়ানো; ভোলেভালা লোক; সমতুল্য- 'কাঁধে গামছা ঘরময় খোঁজে' 'চোখে চশমা ঘরময় খোঁজে'; 'বগলে ছাতা/পুঁথি ঘরময় খোঁজে'। |
কাউকে বুকে করা কাউকে পিঠে করা | কাউকে আদর করা, কাউকে অনাদর করা। |
কাক কখনো রাজহাঁস হয় না | মণিমাণিক্য ইত্যাদি নান ভূষণে সাজালেও কাক কখনো রাজহাঁস হ না; তুলনীয় সংস্কৃত উক্তি-'তথাপি কাকো চ ন রাজহংসঃ'; পাঠান্তর- কাক কখনো বক হোয় না। |
কাক কাঁকুড়ের জ্ঞান নেই | দুইবস্তুর তত্ত্বগত পার্থক্য বুঝতে না পারা। |
কাক-কোকিলে ভেদজ্ঞান নেই | ভাল-মন্দের তফাৎ বুঝতে না পারা। |
কাক ও কোকিল একই বর্ণ কিন্তু স্বরে ভিন্ন ভিন্ন | আকৃতিতে সাধু-অসাধু চেনা যায় না; কাজে বা প্রকৃতিতে তাদের চেনা যায়। |
কাক কোকিলের সমান দাম | ভালমন্দ বিচার নেই; ভালমন্দের তফাৎ করতে অক্ষম; সমতুল্য- 'মুড়িমিছির/মুড়িমুড়কির সমান দর'। |
কাক কাকের মাংস খায় না | স্বজাতির ক্ষতি কেউ করে না বা চায় না। |
কাক খায় কাঁঠাল বকের মুখে আঠা১ | কাক চুরি করে কাঁঠাল খেয়ে ধরা পড়ার ভয়ে বকের মুখে আঠা লাগিয়ে দিল; ফলে বক উত্তমমধ্যম খেল; একজনের অপরাধে অন্যজনের শাস্তি; সমতুল্য-'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'; 'কাক খেলো ধান, ব্যাঙের পায়ে দড়ি'। |
কাক খায় কাঁঠাল বকের মুখে আঠা২ | একের সৌভাগ্য দেখে অপরের ঈর্ষা হওয়া। |
কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি১ | চরম বিশৃঙ্খলা। |
কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি২ | একজনের অপরাধে অন্যজনের শাস্তি; চুড়ান্ত অপশাসন; সমতুল্য- 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'; 'কাক খায় কাঁঠাল, বকের মুখে আঠা'। |
কাক গু খেয়ে মুখ ধুলে গঙ্গা অপবিত্র হয় না | নীচের নোংরামিতে মহতের মাহাত্য হ্রাস পায় না। |
কাক চুরির দ্রব্য লুকিয়ে মনে করে কেউ সেটা দেখে নি | বোকা অনেক সময় অভিজ্ঞকে ফা^কি দিতে পেরেছে ভেবে মিথ্যা আত্মতৃপ্তি লাভ করে। |
কাকতালীয়বৎ প্রাপ্তং দৃষ্টাপি নিধিমগ্রতঃ | কুড়িয়ে নিতে গেলেও চেষ্টা করা চাই। |
কাক ধুলে বক হয় না | কালো ধুলে সাদা হয় না; কু কখনো সু হয় না; সমতুল্য- 'কয়লা ধুলে ময়লা যায় না'; 'কালা ধুলে ধলা হয় না'। |
কাকপক্ষীও টের পাবে না | কেউ টের পাবে না; অতিসতর্ক কাকের কিছুই নজর এড়ায় না। |
কাক ভেজে জলে ব্যাঙের লাগে সর্দি | আজগুবি কথা, যা কখনো হয় না; কার্য-কারণসম্পর্কবিহীন। |
কাক ভাবে আমি বড় সেয়ানা | আহাম্মকের আত্মগরিমা। |
কাক মরল ঝড়ে, প্যাঁচা ভাবে আমার শাপ লাগল হাড়েহাড়ে | অক্ষমের সান্ত্বনা; শত্রুনিপাত হলে বিপক্ষ ভাবে তার অভিশাপেই এমন ঘটনা ঘটেছে; সম্পর্কীত প্রবাদ- ঝড়ে কাক মরে, ফকিরের কেরমতি বাড়ে'। |
কাক সকলের মাংস খায়, কাকের মাংস কেই খায় না | ঠগ সবাইকে ঠকায়, কিন্তু কেউ ঠগকে ঠকাতে পারে না। |
কা কস্য পরিবেদনা | কে কার কথা বিবেচনা কর? কে কার জন্য বেদনা অনুভব করে? কে কার ধার ধারে? বৃথা সব হাহুতাশ।; সব মায়া। |
কাকিলা বধু ছেলে ধরতে জানে না | কোকিল সন্তান প্রতিপালন করতে পারে না; ন্যাকামি করা বউয়ের ক্ষেত্রে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। |
কাকে নিয়ে গেল কান, কাকের পিছনে ছোট | নিজে বিবেচনা করে না, পরের কথায় উত্তেজিত হয়। |
কাকের উপর কামান দাগা | অল্পদোষে বেশি শাস্তি; সমতুল্য- 'মশা মারতে কালাম দাগা'; 'লঘুপাপে গুরু দণ্ড'; পাঠান্তর- 'কাউয়ার ওপর কামানের গুলি'। |
কাকের ডানায় মুক্তা বসালেও কাক রাজহাঁস হয় না | সোনাদানার গহণা পড়লেও কাক কখনো রাজহাঁস হয় না; অসারবস্তু কখনো সারবস্তু হয় না; নকল কখনো আসল হয় না; পাঠান্তর- 'কাকের লেজে ময়ূরপালক লাগালেও কাক ময়ূর হয় না'। |
কাকের ডিম সাদা হয়, বিদ্বানের ছেলে গাধা হয়। | কাকের ডিম সাদা হলেও ছানা কালোই হয়; বিদ্বানের ছেলে বিদ্বান না হয়ে মূর্খ হতে পারে; অস্বাবাভাবিক কিছু নয়। |
কাকের পিছনে ফিঙে লাগা | কাউকে অনবরত উত্যক্ত করা। |
কাকের বাসায় কোকিলের ছা, জাতস্বভাবে করে রা | জাতস্বভাব কখনো বদলায় না; সমতুল্য- স্বভাব যায় না মলে। |
কাকের মাংস কাকে খায় না | সমধর্মী লোকেরা পরস্পরের ক্ষতি করে না। |
কাকের লুকানো (খাদ্য) | বোকার মরণ; সে জিনিস এমনভবে লুকায় যে পরে কাকের মত আর খুঁজে পায় না। |
কাকো ন চ রাজহংসঃ | কাক কখনো রা জহাঁস হয় না। |
কাঙলা আপনা সমালা | আগে সবাই নিজেকে সামলাক; পরের উপকার পরে করা যাবে; সমতুল্য- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'। |
কাঙালকে শাকের ক্ষেত দেখাতে নেই | অভাবীলোককে লোভ দেখাতে নেই; যাতে লোকের লোভ বাড়ে এমন কাজ করতে নেই; সমতুল্য- 'ছাগলকে ভাঙা বেড়া দেখাতে নেই'। |
কাঙালী মেরে কাছারি গরম | গরিব মেরে আসর গরম করা। |
কাঙালের অশ্রুতে যে রক্ত ঝরে ভগবান দেখেও কিন্তু দেখে না | ভগবান বড়লোকের ঘরে বাঁধা। |
কাঙালের কথা বাসি হলে খাটে/ফলে | নগণ্যের সঠিক কথা প্রথমে উপেক্ষিত হলেও পরবর্তীকালে সঠিক প্রতিপন্ন হয়। |
কাঙালের কাছে মুড়কিই সন্দেশ | অভাবীর কাছে এককড়ারও দাম আছে; তার পক্ষে যা পাওয়া সম্ভব তাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে, সেটাই তার কাছে মূল্যবান; পাঠান্তর- 'কাঙালের কাছে রাংতাই সোনা'। |
কাঙালের ক্ষিদে বেশি | কাঙাল শুধু খাই খাই করে। |
কাঙালের/ কাঙালের পুতের ঘোড়ারোগ | যা পাওয়ার অধিকারী নয় তাই পাওয়ার অনুচিত ইচ্ছা। |
কাঙালের ঠাকুরব্যাধি | যে খেতে পায় না সেও পূজা করতে চায়; অবস্থার অরিতিক্ত ব্যয়ের বাসনা। |
কাঙালের মরণ বিটকেল | কাঙাল সুখে মরতেও পারে না, অনেক কষ্ট পেয়ে মরে। |
কাচঃ কাচঃ মণির্ম্মণি | যে যা তাই থাকে; কাঁচ কাঁচই থাকে; মণি মণিই থাকে; কাচ মণি হয় না; মনি কাচ হয় না। |
কাচে কাঞ্চনে সমান১ | মুড়ি-মিছরির এক দর; কোনটার দাম কম, কোনটার দাম বেশি বোঝার ক্ষমতা নেই। |
কাচে কাঞ্চনে সমান২ | সংসারবিরাগীর কাছে কাঁচ ও কাঞ্চন সমানভাবে উপেক্ষণীয়। |
কাছা খুলতে দেরী হয়১ | কাজে সবসময় ঢিলে ঢালা |
কাছা খুলতে দেরী হয়২ | কপাল চাপা; অদৃষ্ট সহজে সুপ্রসন্ন হয় না। |
কাছা দিতে কোঁচা আঁটে না, কোঁচা দিতে কাছা আঁটে না১ | দুইদিক সামলাতে পারে না; সমতুল্য-'পা ঢাকে তো মাথা ঢাকে না, মাথা ঢাকে তো পা ঢাকে না' |
কাছা দিতে কোঁচা আঁটে না, কোঁচা দিতে কাছা আঁটে না১ | অভাবের সংসার; সবসময় অর্থের টানাটানি। |
কাছা দিতে/খুলতে দেরী হয় | কাজে ঢিলেঢালা |
কাছের লোক কাছের নয় | বিপদের সময় কাছের লোক দূরে সরে থাকে; ঘরের লোক বেশি শত্রুতা করে; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল', 'ভাইভাই ঠাঁই ঠাঁই', 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আপন কখনো পর হয় না'; 'বসুধৈব কুটুম্বম' ইত্যাদি। |
কাছের লোক গাড়ী ফসকায় | লোকের গয়ংগচ্ছভাবের প্রতি তির্যোক্তি। |
কাজ আটকালে বুদ্ধি যোগায় | সমস্যায় পড়লে বুদ্ধি খোলে; সমস্যা সমাধানের উপায় আপনা হতেই মাথায় আসে;সমতুল্য- প্রয়োজনীয়তা আবিস্কারের জননী |
কাজ নেই কাজ করে ধানে চালে এক করে | কাজ নেই তো অকাজ, কুকাজ করে। |
কাজও নেই কামাইও নেই | অনির্দিষ্ট কাজের কোন নিয়ম থাকে না; যখন-তখন উপস্থিত হতে হয় বলে অনির্দিষ্ট কাজে বিরাম পাওয়া যায় না। |
কাজ নেই তো ভাজো খই | অকাজে সময় নষ্ট করা। |
কাজ বুঝে সাজ | কাজের পরিমাণ বুঝে প্রস্তুতি; সমতুল্য- 'বিষয় বুঝে ব্যবস্থা'। |
কাজ শুরু হলেই অর্ধেক কাজ শেষ | কাজের প্রস্তুতিতেই অর্ধেক সময় ব্যয় হয়। |
কাজ সরিয়ে রাখলে কাজ বরবাদ | কালে পেলে কজ কোনদিন শেষ হয় না। |
কাজীর কাছে হিঁদুর পরব | ভিন্নমতাবলম্বীর কাছে স্বীয়মতের পোষকতা পাওয়া যায় না। |
কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই | সরকারি কাজে হিসাবের গোলমাল। |
কাজীর বিচার১ | তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক; মাঝামাঝি রফা |
কাজীর বিচার২ | অন্যায় বিধিবিরুদ্ধ পক্ষপাতদুষ্ট বিচার; একপেশে বিচার |
কাজে এড়া অকাজে দেড়া | কাজ করে না অকর্ম করে। |
কাজে এড়া আচারে দেড়া | আচারসর্বস্ব। |
কাজে এড়া ভোজনে দেড়া | যে চাকর খাটে কম খায় বেশি তার সম্পর্কে প্রযোজ্য; পাঠান্তর- 'কাজে কম খেতে যম'; 'কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা খাবার বেলায় বেশিবেশি'। |
কাজে কুঁড়ে ভোজনে দেড়ে বচনে মারে তেড়েফুঁড়ে | অলস ভোজনপটু ও কর্কশভাষী বচনসর্বস্ব নির্গুণ ব্যক্তিসম্পর্কে প্রবচন। |
কাজে খল দুধে জল তার দুঃখ চিরকাল | অসৎলোকের দুঃখ কোনদিন যায় না, তার চিরদিনের সঙ্গী হয়ে থাকে। |
কাজের কথা মনেই থাকুক মুখে প্রকাশ করো না | গোপন কথা বা মূল্যবান কথা পাঁচকান কর'তে নেই। |
কাজের কাজি | কর্মঠ দক্ষ কাজের লোক, যে কার্যত করে, শুধু মুখে বলে না। |
কাজের বেলায় পায় না খুঁজে, খাবার বেলা সবার আগে | পরিশ্রমে বিমুখ কিন্তু খাবার বেলায় প্রথমপাত; পাঠান্তর- 'কাজের বেলায় ভাগে খাবার বেলায় আগে'। |
কাজের বেলায় কাজি কাজ ফুরালে পাজি | কাজ করে দেওয়ার জন্য সম্পর্কস্থাপন, কাজ হয়ে গেলেই সম্পর্কছেদ; কার্যোদ্ধার হতেই উপকারীকে অগ্রাহ্য; প্রয়োজনের সময় তোষামোদ করা আর প্রয়োজন শেষ হলে ভুলে যাওয়া। |
কাজের বেলায় ভাগে খাবার বেলায় আগে | সুবিধাবাদী আচরণ। |
কাজের মধ্যে চাষ রোগের মধ্যে কাশ | দুইই সমানভাবে কষ্টদায়ক। |
কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই | চুড়ান্ত অলসের প্রতি শ্লেষোক্তি; সমতুল্য-'অলসের চূড়ামণি'; 'নিকম্মার ঢেঁকি'। |
কাজের হাত পা মাথা ও মুণ্ডু- কিছুই নেই | বিশৃঙ্খল কাজ। |
কাটতে কাটতে নির্মূল | বড় জিনিস কাটতে কাটতে এমন ছোট হল যে আর কাজে আসে না; মূল প্রবাদ- 'ছিল ঢেঁকি হল শুল কাটতে কাটতে নির্মূল'। |
কাটলে রক্ত নেই কুটলে মাংস নেই | অসার শুকনা কাঠের মত শরীর। |
কাটা কইয়ের/পাঁঠার মত ছটফট করা | নিদারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করা (ভাবার্থে) |
কাটা কাটা কথা আগুনের জ্বালার চেয়েও জ্বালাময় | অন্তরে তীব্র জ্বালা ধরায়। |
কাটা কান চুলদে ঢাকি | কানকাটা লোক ঘরের কলঙ্ক পাঁচকান করে না, লুকিয়ে রাখে; মূল প্রবাদ- আপনার মান আপনি রাখি কাটা কান চুলদে ঢাকি'। |
কাটা ঘায়ে নূনের ছিটে১ | অপমানের উপর অপমান। |
কাটা ঘায়ে নূনের ছিটে২ | ব্যথার উপরে আরও ব্যথা দেওয়া; যন্ত্রণার ওপর যন্ত্রণা। |
কাটো তো খুন নহীঁ | কাটো ক্ষতি নাই তবে রক্ত যেন না পড়ে; প্রচণ্ড ভয়ে ভীত; ভয়ে আধমরা অবস্থা। |
কাঠ খায় আঙরা হাগে১ | উনুন কাঠ খায়, কয়লা নিঃসারণ করে। |
কাঠ খায় আঙরা হাগে২ | দোষ করলে শাস্তি আছে; মন্দকাজ করলে মন্দ ফলভোগ করতে হবে; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
কাঠবিড়ালীর সাগর বাঁধা১ | অসাধ্যকাজ সম্পাদনের প্রচেষ্টা। |
কাঠবিড়ালীর সাগর বাঁধা১ | মহৎকাজে নগণ্যের সাহায্য উপেক্ষণীয় নয়। |
কাঠে কাঠে কাঠাকাঠি | সমানে সমানে লড়াই; সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি; যেমন কুকুর তেমন মুগুর। |
কাঠের বিড়াল হোক না ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো | উপায়, যন্ত্র যাই হোক কাজ হলেই হলো। |
কাঠের ভিতর পিঁপড়ে বলে চিনি ছাড়া খাবনি; চিন্তামণি চিন্তা করে যোগায় তারে অমনি | জীবের রক্ষাকর্তা ভগবান; অপ্রত্যাশিত স্থলেও ভগবান লোকের অভিলাষ পূরণ করেন; সমতুল্য- 'যে খায় চিনি তারে যোগান চিন্তামণি'। |
কাণ্ডজ্ঞানবিশিষ্ট লোক থেকে সতর্ক থেকো যদি সে ক্রুদ্ধ হয় | ধীরস্থির লোকেরা কুপিত হলে অনর্থ ঘটে যায়। |
কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোহমতীব বিচিত্র | কে তোমার স্ত্রী, কে তোমার পুত্র; সংসারের এইসব ব্যাপার অতি বিচিত্র; কেউ কারো নয়; সব মিথা মায়া। |
কাদায়/খানায়/গর্তে পড়লে হাতি চামচিকেতে মারে লাথি | অসহায় অবস্থায় পেলে সকলেই দুর্ব্যবহার করে। |
কাদায় গুণ ফেলা | ধৈর্য ধরে থাকা; সমতুল্য়-'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
কান চায় সোনারে সোনা চায় কানেরে | পরস্পর অনুরক্ত লোকে পরস্পরের সান্নিধ্য খোঁজে। |
কান টানলে মাথা আসে | উপলক্ষ্য ধরে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়; একটা বিষয়ের খোঁজ নিতে চাপ দিলে সম্পর্কিত অন্য বিষয়ের খোঁজও পাওয়া যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'টানবার যে সে না টানলে কোন লাভ নাই অঝোরে কাঁদলে'। |
কান নিয়ে গেল কাকে কাকের পিছনে পিছনে ছোটা | বিচার বিবেচনা না করে উদ্ভ্রান্তের মত কাজ করা। |
কানপুর হয়ে নাগপুর যাওয়া | ঘুরিয়ে/বাঁকাপথে কাজ করা; অযথা সময় নষ্ট করা; সমতুল্য-
'অমরকণ্টক হয়ে অমরনাথ যাত্রা'; কামাখ্যা হয়ে কাশীধামযাত্রা'; লণ্ডন ঘুরে মক্ যাত্রা' ইত্যাদি। |
কানমন্ত্রে মন নাশ | কান ভাঙানিতে মনে মালিন্য জন্মে। |
কানাইয়ের মা | পরের ছেলের মা; তুলনীয়- 'না বিইয়ে কানাইয়ের মা' |
কানাকড়ির মা-বাপ | অত্যন্ত কৃপণ, যে একট ফুটোপয়সাও খরচ করতে কাতর হয়। |
কানাকড়ির মুরোদ/মূল্য নাই, কিল মারার গোঁসাই১ | ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় না শুধু কর্তৃত্ব ফলায়- অসহায় স্ত্রীর খেদোক্তি; সমতুল্য- |
কানাকড়ির মুরোদ/মূল্য নাই, কিল মারার গোঁসাই২ | তুচ্ছলোকের হাঁকডাক। |
কানা কয়বার নড়ি (লাঠি) হারায় | একবারও না; যার যেটা একমাত্র অবলম্বন সেই বিষয়ে সে খুব সতর্ক থাকে। |
কানা কাঁদেন সোনারে, সোনা কাঁদেন কানারে১ | সোনা পরলে কানের শোভা বাড়ে, আবার কানে গেলে সোনার সৌন্দর্য বাড়ে; পাঠান্তর- 'কানা চায় সোনারে, সোনা চায় কানারে'। |
কানা কাঁদেন সোনারে, সোনা কাঁদেন কানারে২ | পরস্পর অনুরক্ত লোকে পরস্পরের সান্নিধ্য খোঁজে। |
কানা কুঁজো খোঁড়া, তিন অসতের গোড়া | লোকের বিশ্বাস এই তিনধরণের লোক দুষ্টপ্রকৃতির হয় (সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা); পাঠান্তর- 'কানা খোঁড়া কুঁজা তিন নয় সুজা (সহজসরল)'। |
কানাখোঁড়ার এক গুণ বাড়া১ | শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি বেশি অনুভবী হয়; অক্ষমব্যক্তির এক অঙ্গ কমজোরী হলে অন্য অঙ্গ বেশি কার্যকরী হয়। |
কানাখোঁড়ার এক গুণ বাড়া২ | নির্গুণের অহংকার/বড়াই বেশি হয়; লোকের ধারণা এরা একটু স্বতন্ত্রপ্রকৃতির হয়; তুলনীয়- 'ফাঁপা ঢেকির শব্দ বেশি'। |
কানাগরু বাতাস বইলেই ভয় পায় | দুর্বলের একটুতেই ভয় হয়। |
কানাগরু বামুনকে দান | অবজ্ঞা/অশ্রদ্ধার দান;অকেজো বা অপ্রয়োজনীয় বস্তু দান করে পূণ্যলাভের আকাঙ্ক্ষা। |
কানাগরুর ভিন্ন গোঠ/পথ/মাঠ | অজ্ঞান/কাণ্ডজ্ঞানহীন লোক কানাগরুর মত গোয়ালের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে যায় অর্থাৎ নিরাপদ পথ ত্যাগ করে বিপধে যায়; বুদ্ধিহীন লোক যুক্তির পথে হাঁটে না। |
কানাগলিতে ঘুরে মরা | দিশাহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো; নিস্কৃতির পথ হন্নে হয়ে খুঁজে মরা। |
কানাঘোড়ার সিধা দৌড় | আহাম্মকের বিপথে চলা। |
কানাচোখে দিয়ে কাজল আপনরূপে আপনি পাগল | আপনার চেয়ে কেউ বেশি সুন্দর নয়। |
কানাছেলের নানারোগ১ | অক্ষমের নানাদিক থেকে ঘাটতি থাকে। |
কানাছেলের নানারোগ২ | ক্লিষ্টলোকের নানা কষ্ট থাকে। |
কানাছেলের নাম পদ্মলোচন | কুৎসিতকে সুন্দর করার হাস্যকর প্রয়াস; গুণহীনে গুণের আরোপ; অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মানদান; সমতুল্য- 'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ'; 'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'ঘুঁটেকুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি। |
কানামেঘের বৃষ্টি সর্বত্র নয় দৃষ্টি১ | অবিবেচকের একদেশদর্শী বিচার। |
কানামেঘের বৃষ্টি সর্বত্র নয় দৃষ্টি২ | খামখেয়ালী বড়লোকের দান সাধারণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয় না। |
কানায়ে ভাগনে/ভাগিনা | লম্পটচরিত্রের লোক। |
কানার মাঝে ঝাপসা ভালো | মন্দের ভালো। |
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই১ | একই অনীপ্সিত কথার পুনরুক্তি। |
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই২ | একমাত্র গতি; অনন্যোপায়; সমতুল্য- 'নান্য পন্থা বিদ্যতে অয়নায়'। |
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই৩ | সকল প্রসঙ্গে একই বিষয়ের উথাপনা। |
কানে কলম গুঁজে দুনিয়াভর খোঁজে | কাছে থাকা জিনিস নানাস্থানে খুঁজে বেড়ানো; সমতুল্য- কাঁধে কুড়ুল রেখে বনময় খোঁজে'; 'কাঁধে গামছা রেখে ঘরময় খোঁজে'; 'চোখে চশমা রেখে ঘরময় খোঁজে'; 'বগলে ছাতা/পুঁথি ঘরময় খোঁজে' ইত্যাদি। |
কানে কানে কথা থাকে না গোপনে | কথা পাঁচকান হলে সে কথা গোপন থাকে না। |
কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো | কিছুতেই কিছু না করা; সবকিছু অগ্রাহ্য করা। |
কানে হাত না দিয়েই বলে কান নিয়ে দেল চিলে | অবিবেচকের মত কাজ; অবোধা পরের কথায় নেচে মরে। |
কানের জল, জল দিলেই বেরোয় | বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়। |
কানের পিছনে উকুনের বাসা | ব্যক্তির পিছনে শত্রু দাঁড়িয়ে আছে; সতর্ক করার জন্য় সতর্কবাণী |
কান্তা রূপবতী শত্রু | রূপবতী ভার্যা শত্রুতুল্য |
কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক আছে১ | সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ শেষ হয় না; শেষেরও শেষ থাকে; এমনকি সমাপ্তির মুখে এসেও কোন কাজ নানা বাধাবিঘ্নের কারণে বিফল হতে পারে; সমতুল্য- 'না আঁচালে বিশ্বাস নাই'; 'তীরে এসে তরী ডোবা' ইত্যাদি |
কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক আছে২ | আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য-'কালনেমির লঙ্গাভাগ';'গাছে না উঠতেই এককাঁদি'; 'ডিম ফোটার আগেই মুরগীর ছানা গোনা'; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি। |
কাপড় বুঝে জামা কাটো | ক্ষমতা বুঝে কাজ কর; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা'; 'আয় বুঝে ব্যয় কর'; 'যতদূর মাদুর ততদূর পা ছড়াও', 'যতদূর চাদর দিয়ে পা ঢাকতে পারো ততদূর পা ছড়াও' ইত্যাদি। |
কাপড় হলে পচা, আঙ্গুল হয় খোঁচা১ | অপকর্মের সমর্থনে একটা কোন অজুহাত দেখানো। |
কাপড় হলে পচা, আঙ্গুল হয় খোঁচা২ | অদৃষ্টে ক্ষতি লেখা থাকলে সামান্য বিষয় থেকেও ক্ষতি হতে পারে। |
কাপড়ে আগুন ঢাকা যায় না১ | সত্যকে মিথ্যার আবরণে ঢাকা যায় না। |
কাপড়ে আগুন ঢাকা যায় না২ | কলঙ্ক বা পাপকে কোন অজুহাতে চাপা যায় না। |
কাপড়ের দাগ যায় ধুলে, মনের দাগ যায় মলে। | মনের দাগ জীবনে যায় না। |
কাপুরুষ মৃত্যুর আগে বহুবার মরে- সেক্সপিয়ার | ভীরুরা অর্ধেকসময় ভয়েই মরে থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সাহসী একবার বই দুবার মরে না'। |
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড় | যার কাজ নেই সে ফালতু কাজ বেশী করে। |
কামড়াতে না পারো তো দাঁত দেখিয়েও না | মিছিমিছি ভয় দেখিয়ো না। |
কামড়িয়ো না দাঁত দেখাও | কোন ক্ষতি করো না, ভয় দেখাও; পাঠান্তর- 'কামড়িয়ো না ফোঁস কর'। |
কাম নাই কামাইও নাই | নির্দিষ্ট কোন কাজ থাকাতে অনির্দিষ্ট কাজে যখন-তখন উপস্থিত হতে হয়; ফলে কাজে বিরাম পাওয়া যায় না। |
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড় | যার কাম থাকে না সে আকাম বেশি করে। |
কামলা (ন্যাবা রোগী) আপনি সামলা | বৈদ্য নিজেই নিজের রোগ সারাও; যে যার নিজেরটা দেখুক। |
কামলা সব শ্যামলা দেখে | মন্দচোখে সবই মন্দ দেখে; সমতুল্য- 'আবিল দৃষ্টি সব হলদে দেখে'। |
কামাতুরানাং ন ভয়ং ন লজ্জা | কামার্তব্যক্তিদের ভয় বায়া লজ্জা থাকে না। |
কামাতে না পারা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর | অক্ষমের ভড়ং বেশি; কিছু কাজ জানে না, শুধু কিছু কথা শিখে রেখেছে; পাঠান্তর- 'কামাতে পারে না নাপিত ধামাভরা ক্ষুর, কামাতে কামাতে যায় রঘুনাথপুর'। |
কামানো মাথায় ক্ষুর বোলায় | অপ্রয়োজনীয়/বাহুল্য কাজ। |
কামার বুড়ুলে লোহা শক্ত হয় | বৃড়োকামার লোহা পিটতে না পেরে বলে লোহা শক্ত হয়েছে; অক্ষমের অজুহাত; সমতুল্য- 'নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা'। |
কামারের কাছে ছূঁচ বেচতে আসা | উপরচালাকি; চতুরের সাথে চাতুরী; অভিজ্ঞ চোখকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা; তুলনীয়- 'সেকরা কাছে সোনা চুরি'; পাঠান্তর- 'কামারের কাছে লোহা চুরি'। |
কামারের কাছে লোহা জব্দ | বলবানকে বলবানই দমন করতে পারে; শক্তপাল্লায় পড়লে সবাই বাগে থাকে। |
কামারের কাজ কুমোরের সাজে না | অনধিকারে হাত বাড়ানো ঠিক নয়; যে কাজে পটু নয় সেই কাজ করতে গেলে বিপত্তি হয়; পাঠান্তর- 'কামারের কুমোরবৃত্তি'। |
কামারের নেহাই হাতুড়িকে ভয় পায় না | শক্তসমর্থ ও পরিশ্রমী ব্যক্তি কষ্টকর পরিস্থিতি ও সমস্যাকে ভয় পায় না। |
কামালে কুমালে বর লেপুলি পুছুলি ঘর | পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় জিনিস সুন্দর দেখায়। |
কার কপালে/ভাগ্যে কেবা খায় | কেউ কারো সুখ-দুঃখের ভাগীদার নয়; সকলেই নিজনিজ অদৃষ্ট অনুসারে সুখ-দুঃখ ভোগ করে। |
কার শ্রাদ্ধ কে বা করে, খোলা কেটে বামুন মরে | যার কাজ তার মনযোগ নেই অন্যে তারজন্য খেটে মরে; একজনের সমস্যার জন্য অন্যের চিন্তা করা বৃথা; (উৎসকাহিনী- একরাজার পিতৃশ্রাদ্ধে রাজপুরোহিত কলার খোলা কাটছিলেন; এমনসময় এক অন্ধ সভাসদ সেইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন; তিনি দেখতে না পেয়ে কলার খোলাগুলি মাড়িয়ে ফেললে রাজপুরোহিত ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে শাসুন করেন; অন্ধ সভাসদ বিরক্ত হয়ে তখন এই উক্ত করেন; কথাটা রাজার কানে যায়; রাজা সভাসদকে ডেকে তাঁর উক্তির ব্যাখ্যা জানতে চান; সভাসদ বলেন তিনি রাজপুত্র নন; রাজা মায়ের কাছে জন্মবৃত্তান্ত জেনে সঙ্গে সঙ্গে শ্রাদ্ধ বন্ধ করে দেন; এই গল্প থেকে প্রবাদের উৎপত্তি; প্রবাদের নির্যাস হল- কোন কাজের গোড়ায় গলদ থাকলে বিশৃঙ্খলায় কাজ সফল হয় না।); পাঠান্তর- 'কার শ্রাদ্ধ, বামুন হদ্দ'। |
কার সাধ্য মারে তারে, খোদা হেসে রাখে যারে | ঈশ্বর যাকে রাখে তার ক্ষতি হয় না। |
কারণ বই কার্য নাই | অকারণে কিছু হয় না; সমতুল্য- ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে; বিনা কারণে গাছের পাতা নড়ে না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অকারণে হৈ চৈ'; 'নেই মাথা তার মাথা ব্যাথা' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কারণবিনা কেউ বন্ধু নয়, কেউ শত্রু নয়'। |
কারে পড়ে আল্লার নাম | বিপদে না পড়লে কেউ ঈশ্বরকে ডাকে না; সমতুল্য- 'চাপ পড়লে বাপ'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম', 'বিপদে পড়লে শ্রীমধুসূদন'; 'সাধে কি আর বাবা বলি গুঁতোর ঠেলায় বাবা বলায়' ইত্যাদি। তূলনীয়- 'বিনা বজ্রপাতে কেউ রামনাম লয় না'। |
কারে পড়ে গঙ্গাস্নান | ধর্মাচারের ধমক না থাকলে লোকে গঙ্গাস্নান করে না; প্রয়োজনে ধার্মিক সাজা। |
কারে ভজে কার দাস | খণ্ড ঈশ্বরধারণার জন্য খেদোক্তি; 'জাতের ধর্ম বজ্জাতেরা করে'। |
কারো আগেও নয় কারো পাছেও নয় | কোনপ্রকার তোষামোদি নয়; কোনপ্রকার উঁচুনীচু নয়; |
কারো উপকার করলে কখনো বলো না কেউ উপকার করলে কখনো ভুলো না | আত্মপ্রচার করো না এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না; তুলনীয়- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'। |
কারো কড়ি/ধার ধারি না১ | কারো কাছে ঋণী নই; সুতরাং কাউকেই গ্রাহ্য করি না। |
কারো কড়ি/ধার ধারি না২ | চাটুকারিতা করতে অনিচ্ছুক, মোটেই পছন্দ নয়। |
কারো ঘর পোড়ে কেউ আগুন পোহায় | কারো ঘরে ঝাড়বাতি জ্বলে; কারো ঘরে প্রদীপ জ্বলে না; কারো প্রয়োজনীয় বিষয়ে অতিরিক্ত বিদ্যমান; কারো প্রয়োজনীয় বিষয়ে বিঘ্ন; একের বিপদে অন্যের সুখভোগ; কারো দুঃখ কারো বা সুখ; সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ'; 'কারো শাকে বালি, কারো দুধে চিনি'; পাঠান্তর- 'কারো ঘর পোড়ে কেউ ধোঁয়া খায়'; 'কারো ঘরে ঝাড়বাতি কারো ঘর নিস্প্রদীপ'। |
কারো চাকর নই, কারো প্রভুও নই- এব্রাহাম লিঙ্কন | সমানে সমানে ব্যবহার চাই; সাম্যের অধিকার; সাম্যের গান গাই। |
কারো দুধে চিনি কারো শাকে বালি | কারো সুখের ওপর সুখ, কারো দুখের ওপর দুখ; সমতুল্য- 'কারো ঘরে ঝাড়বাতি কারো ঘর নিস্প্রদীপ'। |
কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ | একই কাজে কারো বিরাট লাভ, কারো বিরাট ক্ষতি; কেউ সৌভাগ্যবান কেউ হতভাগ্য; সমতুল্য- 'কারো ঘর পোড়ে, কেউ ধোঁয়া খায়'; 'গোমড়কে মুচির পার্বণ'। |
কারো প্রতি অটুট শ্রদ্ধা রাখার একমাত্র উপায় হল তার সাথে কখনো দেখা না করা | বেশি ঘনিষ্টতায় দোষগুণ ধরা পড়ে। |
কারো সাথে ভাগাভাগি করলে সমস্যা অর্ধেক হয়ে যায় | কাজ ভাগ করে নিলে কাজ হালকা হয়; দশের লাঠি, একের বোঝা। |
কারোকে বুকে করা কারোকে পিঠে করা | একজনকে আদর করা অন্যজনকে অনাদর করা। |
কার্তিকের জল উনো, ধান জন্মে দুনো- খনা | কার্তিকমাসে যত জল কম হবে গাছে তত বেশী ধান ফলবে। |
কার্যকালে সমুৎপন্নে ন সা বিদ্যা ন তদ্ধনম্ | প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে না, এমন বিদ্যা নয়, এমন ধন ধন নয়; (মূলশ্লোক- 'পুস্তকস্থা তু যা বিদ্যা পরহস্তগতং ধনম্...') |
কার্য থাকলে কারণ আছে | কারণ বিনা কোন কাজ হয় না; সমতুল্য- 'অকারণে কিছু হয় না', 'ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে', 'পর্বতো বহ্নিমান ধুমাৎ' ইত্যাদি; বিরুদ্ধউক্তি- 'অকারণে হৈচৈ', 'মাথা নেই তার মাথাব্যথা' ইত্যাদি। |
কাল ছিলাম বসে স্বর্ণপিঁড়ে আজ বসেছি আস্তাকুঁড়ে | অবস্থা বিপর্যয়ের জন্য খেদোক্তি; সুখের পরে দুঃখ। |
কালনেমির লঙ্কাভাগ | আগাম সুখকল্পনা করা; ঘটনা ঘটার আগেই লাভের হিসাব; (উৎসকাহিনী- ইন্দ্রজিতের শক্তিশেলে লক্ষণ মুর্ছিত হয়ে পড়লে হুনুমান ওষুধ আনার জন্য হিমালয়ে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে; পথে লক্ষ্মণকে কৌশলে বধ করার জন্য রাবণ মামা কালনেমিকে পাঠান; সর্ত ছিল হনুমান নিহত হলে কালনেমি লঙ্কার অর্ধেক অংশ পাবেন; কালনেমি সাধুর ছদ্মবেশ হুনুমানের কাছে গিয়ে তার বাসায় অতিথি হতে আমন্ত্রণ জানায়; হনুমান উপস্থিত হলে কালমেনি তাকে স্নান করার জন্য কুমিরে পরিপূর্ণ কালীদহে পাঠায়; হনুমান ফিরতে দেরী করায় কালনেমি ভাবে যে হনুমান নিহত হয়েছে; তখন সে লঙ্কার কোন অংশ নেবেন তার হিসাবনিকাশে বসে; এমন সময় হনুমান এসে তাকে হত্যা করেন; এই হাস্যাস্পদ 'কার্যের আগেই ফলাকাঙ্খা' থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়; সম্পর্কীত প্রবাদসমূহ- 'আম না হতে আমসি/আমস্বত্ব'; 'গাছে না উঠতে এককাঁদি'; 'গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল'; 'না ডোলী না কাহার বিবি হ্যায় তৈয়ার'; 'পাত্রপাত্রীর দেখা নাই, শুক্রবারে বিয়ে'; 'রাবণের ছাদনাতলা';'রাম না হতে রামায়ণ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'মনে মনে লঙ্কাভাগ'; 'লঙ্কাভাগ'। |
কাল যায় না জল যায় | জলেস্রোতের মত সময় বয়ে যায়। |
কাল রাম রাজা হবে আজ তার বনবাস | আকস্মিক বিপদ এসে উপস্থিত; সুখভোগের মুহূর্তে দুঃখভোগ; আনন্দের মাঝে দুঃসংবাদ; আশায় নৈরাশ্য ইত্যাদি এমন অবস্থার উদ্ভব হলে প্রবাদটি বলা হয়। |
কালস্য কুটিলা গতিঃ | কালচক্রের গতি বোঝা ভার; কখন যে কি হবে কেউ তা জানে না। |
কালা অক্ষর ভৈঁসা বরাবর | অশিক্ষিত, একদম লিখতে পড়তে জানে না। |
কালা জগতের আলা | শ্রীকৃষ্ণ বিনা সব অন্ধকার। |
কালা কাজলের মাটি, তা'র লাগি ছ'মাস হাঁটি; সুন্দর ধুতুরার ফুল, তা'র নাই কড়ার মূল | গুণবতী কালো হলেও ভালো; গুণহীনা রূপবতী হলেও গন্ধহীন ধুতুরা ফুলের মতই মূল্যহীন; সমতুল্য- 'জাতের নারী কালাও ভালা, নদীর পানি ঘোলাও ভালা','রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি'। |
কালা ধুলে ধলা হয় না | কালো রকগ কখনো সাদা হোয় না; মন্দ কখনো ভালো হয় না; সমতুল্য-'কাক ধুলে বক হয় না'। |
কালা (কানে খাটো) পুরুত তোতলা যজমান | এমন মনিকাঞ্চনযোগে মন্ত্রপড়ার কাজ এগোয় না; শ্রাদ্ধের কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে; পাঠান্তর- 'কালা যজমান তোতলা পুরুত'। |
কালা বলে গায় ভালো, কানা বলে নাচে ভালো | অবোধের অবুঝ দাবী; অজ্ঞরা জ্ঞানীর ভান করলে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
কালা শোনে ঢাকের বাদ্যি কালা বলে আমার বিয়েরর বাদ্যি | একের কাজে অন্যের কাজ আরোপ। |
কালি কলম পাত, তবে লেখার হাত১ | কালি কলম ও কাগজ ভাল হলে কাঁচা হাতেও সুন্দর লেখা বেরোয়; পাঠান্তর- 'কালি কলম পাত, যেমন তেমন হাত'। |
কালি কলম পাত, তবে লেখার হাত২ | উত্তম উপায় ও উত্তম উপকরণ হলে কাজও উত্তম হয়। |
কালি কলম মন, লেখে তিন জন | লেখার উপকরণ ভাল হলে এবং মনোসংযোগ থাকলে লেখাও সুন্দর হয়। |
কালিদাস আর কি, যে ডালে বসে সেই ডাল কাটে | মহাকবি কালিদাস বাগদেবীর বরে কবিত্বশক্তি পাওয়ার আগে মহামূর্খ ছিলেন; কথিত যে তিনি একদিন গাছের যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন; তার থেকেই এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়। |
কালির অক্ষর/আঁচর নাইকো পেটে, চণ্ডী পড়ে কালীঘাটে | মুর্খ বামুনে চণ্ডীপাঠ করে; আগে কালিঘাটের এই দুর্নাম ছিল। |
কালীঘাটের লোকের কালীদর্শন হয় না | গয়ংগচ্ছভাবের জন্য কাছের লোকের দেরী হয়; সমতুল্য-'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না'; 'গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না';'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না ইত্যাদি। |
কালে কালে কতই হল পুলিচিঠের লেজ গজালো | কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'কালে কালে কতই হলো বেগুনের হাড় হলো'। |
কালে দত্তং বরং হ্যল্পমকালে বহুনাপি কিম্ | সময়ে অল্প দেওয়াও ভাল; অসময় বহু দিলেও কোন ফল হোয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়'। |
কালেন ফলতে তীর্থং সদ্য বহুসাধুসমাগমঃ | তীর্থভ্রমণের ফল কালক্রমে ফলে, কিন্তু সাধুসঙ্গের ফল সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। |
কালের আবার কালাকাল | মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হবে কেউ বলতে পারে না, তার আসার সময় অসময় নেই; তুলনীয়- 'নিশ্বাসে বিশ্বাস নেই।' |
কালো আঙুর সাদা আঙুরের মত সমান মিষ্টি | উপস্থিতি ও রঙ দেখে মানুষ বিচার হয় না; বাইরেরটা দেখে বিচার করা উচিত নয়। |
কালো আর কালোয় মিলে ধলো হয় না১ | সমজাতীয়/ধর্মীয় মিলনে ভিন্ন জাত/ধর্ম উৎপন্ন হয় না। |
কালো আর কালোয় মিলে ধলো হয় না২ | সবসময় বিষে বিষে বিষক্ষয় হয় না। |
কালো আর ধলো বাইরে কেবল, ভিতরে সবাই সমান রাঙা | রক্তের রঙ লাল। |
কালোকাপড় রুক্ মাথা লক্ষ্মী বলেন যাবো কোথা | পরিচ্ছন্নতাই পবিত্রতা; অপরিচ্ছন্নতায় লক্ষ্মী ছাড়ে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ছেঁড়া কাপড় রুখু মাথা দুঃখ বলে যাবো কোথা?' |
কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর | কুৎসিতকে সুন্দর করার ব্যাপার; যা নয় তাই হওয়ার চেষ্টা; সমতুল্য-'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ'; কানাছেলের নাম পদ্মলোচন; 'ঘুঁটে কুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি। |
কালোবামুন, কটাশুদ্র, বেঁটেমুসলমান, ঘরজামাই, পোষ্যপুত্র- পাঁচজনাই সমান | বলা হয় যে এই পাঁচজনের স্বভাব ভালো হয় না। |
কালো মুরগী সাদা ডিম পাড়ে | ফলাফলই একমাত্র বিচার্য |
কালো হাঁড়ি কেয়া পাত তবে দেখবি জগন্নাথ | অতীতে সবাই পায়ে হেঁটে জগন্নাথদেব দর্শন করতে যেতো; পথে চটিতে বসে কেয়াপাতায় ডালভাত খেতো; কষ্ট না করলে দেবদর্শন হয় না। |
কাশীধাম ঘুরে কাঞ্চীপুরপম/কামাখ্যা যাত্রা | ঘুরপথে/বাঁকাপথে কাজ করা। |
কাশীধামে কাক মরেছে কালীঘাটে/কুমিল্লাতে হাহাকার | অকারণ হৈচৈ; অনধিকার চর্চা; মাথা নেই মাথাব্যথা; সমতুল্য-'একগাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্যগাঁয়ে মাথা ধরে'। |
কাশীধামে ভূমিকম্প | কোন অসম্ভব ঘটনার সংগঠন; মানুষের বিশ্বাস শিবের ত্রিশুল কাশীতে ভূমিকম্প হতে দেয় না। |
কাশ্মীরজস্য কটুতাপি নিতান্তরম্যা | কুঙ্কুমের কটুত্বগুণ থাকলেও সেটা অতি রমনীয়। |
কাস্তে ভেঙে গড়ে করতাল | চাষী কীর্তনীয়া হতে চায়; একটা হুজুগ পেলেই হলো; যোগ্য অযোগ্য সবাই সেই ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়ে; তুলনীয় 'ছিল যত নাড়াবুনে সব হলো কীর্তুনে'। |
কি অপূর্ব সৃষ্টি মা তিতা ছা মিঠা | পলতা তিতা পটল মিষ্টি; কু থেকে সু সৃষ্টি হতে পারে। |
কি দিব কি দিব খোঁটা গয়ায় মরেছে বাপবেটা | নিন্দা করার কিছু না পেলে যা খুশি বলে নিন্দা কর। |
কিং করিষ্যন্তি বক্তারঃ শ্রোতা যত্র ন বিদ্যতে | যে সভায় যোগ্য শ্রোতা নেই সেখানে বক্তা কী করবেন? |
কিংকর্তব্যবিমূঢ় | দ্বিধা-দ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- ত্রিশঙ্কু অবস্থা'; 'বেড়ার ওপর বসে'। |
কিং কুর্বন্তি গ্রহা সর্ব্বৈ যস্য কেন্দ্রী বৃহস্পতিঃ | তুঙ্গে যার বৃহস্পতি অন্যান্য গ্রহেরা তার কিছু করতে পারবে না। |
কিং কুলেন বিশালেন গুণহীনস্তু যো নরঃ | কুলীনবংশে জন্মগ্রহণ করলেও গুণহীন ব্যক্তি সার্থকতা কোথায়? সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অকুলীনোহপি শাস্ত্রজ্ঞো দৈবতৈরপি পূজ্যতে'। |
কিং জীবিতেন পুরুষস্য নিরিক্ষরেণ | মূর্খ পুরুষের বেঁচে থাকা নিস্ফল। |
কিং দূরং ব্যবসায়িনাম্ | ব্যবসায়ীর কাছে কোনপথই দূর নয়। |
কিংবা স্বয়ম্ভূ শিবশক্তিবিষ্ণুঃ কপালদুঃখং ন করোতি দূরম্ | ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর কেউই কপালের দুঃখ দূর করতে সমর্থ নহেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'স্বকর্ম ভোগং কুরুতে জীবং কপালমূলং খলু সর্বদুঃখম'। |
কিছু এসে যায় না কত আস্তে তুমি হাঁটছো যদি না তুমি থেমে যাও | চলার নাম জীবন; থামার নাম মৃত্যু। |
কিছু করার আগে তিনবার ভাববে | ভালভাবে ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিৎ; তুলনীয়- 'ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিয়ো না'। |
কিছু করারক্ষেত্রে যারা আগে উপস্থিত হয় তাদের শাস্তি দাও এবং যারা পরে উপস্থিত হয় তাদের বাধা দাও | কোন কিছুতেই ব্যগ্রতা সমর্থনযোগ নয় আবার দীর্ঘসূত্রিতাও সমর্থনযোগ্য নয়; সময়ানুবর্তিতাই আদর্শ হওয়া উচিত; প্রাণের বিকাশে প্রকৃতি বিপ্লবী মতবাদ নয় বিবর্তন মতবাদ সমর্থন করে। |
‘কিছু না’ করলে কিছু হয় না | কাজ না করলে কার্যসিদ্ধি প্রশ্ন নেই। |
‘কিছু না’ করা কুকাজ করার সামিল | না এগুনোর অর্থ পিছিয়ে যাওয়া। |
'কিছু না' থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভাল | কোনক্ষেত্রেই শূন্যতা কাম্য নয়; তুলনীয়- 'নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল'; 'নেই রুটির চেয়ে অর্ধেক রুটি ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল'; |
কিছু না' থাকার চেয়ে বাজে অজুহাত ভালো | তবুতো শেষ পর্যন্ত কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
'কিছু না’ শিখলে অকাজ করা শেখা হয়। | অলসভাবে সময় কাটানো নেই। |
কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয় | দক্ষিণাবিনা কার্যসিদ্ধি হয় না। |
‘কিছুই শিখি নি’ বলতে পারাটাই সব থেকে বড় শিক্ষা | অসীম জ্ঞানভান্ডার থেকে ক্ষুদ্রজীবনে অনুপরিমাণ জ্ঞান আহরণ করা যায়। |
কিনতে ছাগল, বেচতে পাগল | কেনার সময় ছাগলের মত তাড়াতাড়ি করে এবং বেচার সময় পাগলের মত হন্যে হয়ে মরে; অবিবেচক; বেহিসাবী; কোন কিছুতে তর সয় না। |
কিবা জ্যেষ্ঠ কি কনিষ্ঠ, যেই বুঝে সেই শ্রেষ্ঠ | বয়স যাই-হোক-না-কেন জ্ঞানীর স্থান সর্বাগ্রে; সমতুল্য- 'বয়সে না বড় হয়, বড় হয় জ্ঞানে'। |
কি, বাজার যাচ্ছেন? না, বাজার যাচ্ছি; ও আমি ভাবলাম বাজার যাচ্ছেন | ্দুই বদ্ধকালার কথোপকথন; বদ্ধকালার প্রতি বিদ্রুপোক্তি। |
কি ভাবে কথা বলতে হয় না জানলে অন্তত কিভাবে চুপ থাকতে হয় তা শিখে নাও | অক্ষমতা লুকাতে চেষ্টা করো; এটাও একধরণের শিক্ষা। |
কিমাশ্চর্য্যমতঃপরম্ | কি অদ্ভুত ব্যাপার; এর পর/বেশি আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? (উৎসকাহিনী- বকরূপী ধর্ম যুধিষ্টিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- পৃথিবীতে আশ্চর্য কি; প্রত্যুত্তরে যুধিষ্টির বলেছিলেন- জগতে প্রতিদিন শতশত লোক মারা যায়; তা দেখেও যারা ভাবছে-তারা মরবে না, তারা অমর- এরথেকে বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে? বর্তমানে বাজারে পাঁঠার মাংসের দর কেজপ্রতিি হাজার টাকা এবং মানুষের মাংসের দর কেজপ্রতিি দশ টাকাও নয়; এরথেকে বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে?) |
কিমাদ্রবণিজো বহিত্রচিন্তয়া | আদারব্যাপারীর জাহাজের খবরের কাজ কী? |
কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে (বিষধর সাপ) দংশেনি যারে- কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার | সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; ভুক্তভোগীই একমাত্র বোঝে যন্ত্রণার জ্বালা কি; ব্যথিতহৃদয়ের বেদনা একমাত্র সমব্যথীই বুঝতে পারে; প্রকৃত মৰ্ম্মজ্ঞই মৰ্ম্মীর মৰ্ম্মকথা বুঝিতে পারেন; সমতুল্য- 'অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কি?' |
‘কি হতে পারি’ কথা নয়, কথা হল ‘কি করতে পারি' | নিজের চেষ্টায় করার আনন্দই আলাদা। |
কিল খেয়ে কিল চুরি/হজম১ | অপমানিত হয়েও ঘটনা গোপন করা। |
কিল খেয়ে কিল চুরি/হজম২ | মার খেয়েও পালটা মার না দেওয়া। |
কিল মারার গোঁসাই | সুখ দিতে পারে না দুঃখ দিতে সবসময় মুখিয়ে আছে। |
কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো | সময়ের আগেই কার্যসিদ্ধির চেষ্টা। |
কিল্লা/কেল্লা ফতে | সফল কার্যোদ্ধার; সিদ্ধিলাভ |
কিসে আর কিসে সোনা আর সীসে | দুটো অসম বিষয়ের তুলনা হয় না। |
কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি | অবিবেচনাপ্রসূত কাজ; পান্তাভাতে ঘি দিয়ে খাওয়া রীতিবিরুদ্ধ এবং হাস্যকর; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট, বাপের বাড়ী ঝি নষ্ট'; পাঠান্তর- 'কিসের নাই কি পান্তা ভাতে ঘি'। |
কিসের মধ্যে কি, বেগুন পোড়ায় ঘি | বেগুনপোড়ায় তেল দেয় ঘি দেয় না; অযথা অর্থের অপচয় করে বড়লোকিপনা দেখাতে গিয়ে হাস্যাস্পদ হওয়া; পাঠান্তর- 'কিসের নাই কি বেগুনপোড়ায় ঘ'। ি |
কিসের মাসী কিসের পিসী, কিসের বৃন্দাবন; মরাগাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন | মায়ের সাথে কারো তুলনা হয় না; মায়ের জন্য সমগ্র পৃথিবী ত্যাগ করা যায়; সমতুল্য- 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'। |
কীচকবধ | কাউকে ভীষণভবে প্রহার করে হলে কীচক বধের তুলনা দেওয়া হয়; মভাভারতের বিরাটরাজের শ্যালক কীচক দ্রৌপদীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে ভীম মেরে তার হাড়গোড় ভেঙে দিয়েছিলেন। |
কীর্তির্যযস্য স জীবতি | যার কীর্তি আছে তিনিই অমর; কীর্তিমান ব্যক্তিরা মানুষের মনে চিরজীবী হয়ে থাকেন; মূলপ্রবাদ- 'চলচ্চিত্তং চলদ্বিত্তং...' দ্রষ্টব্য। |
কীর্তিমান জনকের পুত্র হওয়া বৃথা | সূর্যের আলোয় তারা ঢাকা পড়ে। |
কুঁজী না ও খুঁজি | যে যা ভালোবাসে সে তাই খুঁজে বেড়ায়। |
কুঁজী না ঐ পুঁজি | তবুতো কিছু আছে; কুঁজ ভাঁঙিয়ে অন্ন জোগাড় হয়। |
কুঁজীর মন্ত্রণা | দুষ্টলোকের কুমন্ত্রণা। |
কুঁজোর ইচ্ছা চিৎ হয়ে শোয় | অক্ষমের দুরাশা; সামর্থহীনতায় ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়ায় নৈরাশ্য। |
কুঁড়ে কৃষাণ অমাবস্যা খোঁজে- খনা | কাজ না করার অজুহাত খোঁজে (অমাবস্যায় কিষাণ লাঙল ছোঁয় না)। |
কুঁড়ে গরুর এঁটুলি সার১ | অলসের ভাগ্যে অসার বস্তু বই কিছু জোটে না। |
কুঁড়ে গরুর এঁটুলি সার২ | অলসের মুখেই শুধু আস্ফালন; কাজে কিছু করারা সামর্থ নেই। |
কুঁড়েঘরে বসে লাখটাকার স্বপ্ন দেখা | অক্ষমের বড়লোক হওয়ার বাসনা; স্বপ্ন দেখতে পরিশ্রম করতে হয় না; স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না; যে অবস্থার যা উপযুক্ত তাই নিয়ে সকলের সন্তুষ্ট থাকা উচিত; পাঠান্তর- 'কুঁড়েঘরে বাস খাট-পালঙ্কের আশ'। |
কুঁড়ের অন্ন জোটে না | পরিশ্রম না করলে সিদ্ধিলাভ হয় না। |
কুঁড়ের বাক্যে পুড়ে মরি | কুঁড়ের বাগাড়ম্বর খুবই বিরক্তিকর; কোন কাজ করে না শুধু কথায় কথায় রাজা উজীর মারে। |
কুঁড়ের বাথান বৈদ্যনাথ | অলসব্যক্তি তীর্থ করতে গিয়েও ভিক্ষাবৃত্তি করে অন্ন জোগাড় করে। |
কুঁড়ের মুখে আঁটুনি | অকর্মণ্য মুখ সর্বস্ব হয়; বচনবাগীশ। |
কুঁড়েরে কুঁড়ে কয়- আমি ঘুমাই, তুই দোর দে; কুঁড়েরে কুঁড়ে কয়- বাতাস বয়; দোরটা দিলে ভালো হয় | দু'জনই দমান মাত্রারিক্ত কুঁড়ে; সমতুল্য- গোঁফখেজুরে'; 'পিপুফিশু'। |
কুঁদের মুখে বাঁক থাকে না১ | যোগ্যশাসনে দুষ্টলোক শিষ্ট হয় (কুঁদযন্ত্র বাঁকাকাঠকে সোজা কাটে); পাঠান্তর-'কুঁদিলে বাঁকা কাঠও সোজা হয়'। |
কুঁদের মুখে বাঁক থাকে না | শক্তলোকের পাল্লায় পড়লে বাঁকালোকও সোজা হয়। |
কুকুর বিড়াল সম্পর্ক | শত্রুতার সম্পর্ক; তুলনীয়- সাপে-নেউলে সম্পর্ক |
কুকুর রাজা হলেও জুতা খায় | জাতস্বভাব কেউ ছাড়তে পারে না। |
কুকুরকে লাই দিলে কাঁধে চড়ে | নীচকে প্রশ্রয় দিতে নেই; নীচকে প্রশ্রয় দিলে প্রশ্রয়দাতার ক্ষতি হয়; পাঠান্তর- 'কুকুরকে লাই দিলে মাথা ওঠে'। |
কুকুরের আড়াই পাক | কুকুরে স্বভাব; অভ্যাস দ্বিতীয়প্রকৃতি। |
কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা বলে কি কুকুরের কামড় মানুষের শোভা পায় | অবোধার কাজ বোধার সাজে না। |
কুকুরের কামড় হাঁটুর নীচে১ | নগণ্য বিরাট ক্ষতি করতে অক্ষম। |
কুকুরের কামড় হাঁটুর নীচে২ | শত্রু বিশেষ ক্ষমতা ধরে না; শত্রুকে তাচ্ছিল্য করতে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; |
কুকুরের দৌড় ছাড়া হাঁটা নেই | অস্থিরচিত্ত সবসময় ছটফট করে। |
কুকুরের লেজ কাজে লাগে না | বাহুল্যের কোন মূল্য নেই। |
কুকুরের পেটে ঘি সয় হয় না১ | অনভ্যস্ত লোককে ভালো জিনিস দিলেও সেটা তারপক্ষে প্রীতিকর হয় না। |
কুকুরের পেটে ঘি সয় হয় না২ | মন্দলোকে ভাল উপদেশ নেয় না; |
কুকুরের লেজে ঘি মাখলেও সোজা হয় না | বেয়াড়া লোককে সংশোধন করা যায় না; বহু চেষ্টাতেও স্বভাব অতিক্রম করা যায় না; সমতুল্য- 'বারোবছর চোঙার মধ্যে থাকলেও কুত্তার লেজ সোজা হয় না'; 'স্বভাব যায় না মলে'। |
কুকুরের স্থান পায়ের নীচে | নীচের জিনিস নীচেই থাক, উপরে ওঠে না; হীন কখনো উচ্চ আসন পায় না। |
কুজন-পিরিত কাঁচ ভাঙিলে ফুরায়, সুজন-পিরিত সোনা ভেঙে গড়া যায় | মন্দজিনিস বাতিল করতে হয়; ভালজিনিস ব্যবহার করতে হয়। |
কুজনের নেই লাজ নেই অপমান, সুজনের এককথা মরণ সমান | মন্দলোকের লাজঘেন্না বলে কিছু নেই কিন্তু একটু কটু কথা শুনে ভদ্রলোক মৃতপ্রায় হয়। |
কুটুম্বের মধ্যে শালা, গয়নার মধ্যে বালা | দুইই সমান আদরণীয়। |
কুঠে মুরগির ঠোঁটে বল | দুর্বলেরা বাকসর্বস্ব হয়। |
কুড়ি হলেই বুড়ি | অর্থ স্পষ্ট; স্ত্রীলোকের মধ্যে প্রচলিত; বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক। |
কুৎসিত ছেলের নাম দিব্যসুন্দর | বিসদৃশ নামকরণ; যা নয় তাই হওয়ার হাস্যকর চেষ্টা। |
কুতো বিদ্যার্থিন সুখম | বিদ্যা শিক্ষার্থীদের সুখ কোথ্যয়? কঠোর পরিশ্রম নয়া কর'লে বিদ্যাশিক্ষা হয় না। |
কুপুত্রমাসাদ্য কুতো জলাঞ্জলি | কুপুত্রের কাছে জলপিণ্ডের প্রত্যাশা করা নিরর্থক। |
কুপুত্র যদ্যপি হয়, কুমাতা কখনো নয় | পুত্ররা যতই অত্যাচার করুক, মায়েরা কখনো বিরূপ বা স্নেহশূন্যা হয় না; পাঠান্তর- 'কুপুত্র হয় যথাতথা কুমাতা নয় কখন তো'। |
কুপুত্রেণ কুলং যথা | বনের মধ্যে একটা কু-গাছ থাকলে তার আগিনে যেমন সারা বন দগ্ধ হয় তেমনই এক কুপুত্রের জন্য বংশ বিনষ্ট হয়। |
কুবাক্যান্তং চ সৌহৃদম | বন্ধুত্বের সীমা কুবাক্য পর্যন্ত, অর্থাৎ কুবাক্য প্রয়োগ করলে বন্ধুত্ববিচ্ছেদ। |
কুবার্তা/সংবাদ বাতাসের আগে ছোটে/ধায় | দুঃসংবাদ তড়িৎ গতিতে ছড়ায়;পরের কুৎসা গাইতে মানুষ মুখিয়ে থাকে;পরের কুৎসা মুখরোচক খাদ্য। |
কুবেরের ঐশ্বর্য্য/ভাণ্ডার | ধনাধিপতি যক্ষরাজা ধনদৌলত; অপরিমিত ধনসম্পদ। |
কুব্জার মন্ত্রণা | কুমন্ত্রণা; কৈকেয়ীর দাসী কুব্জার মন্ত্রণায় রাম বনবাসী হয়েছিলেন। |
কুভোজ্যেন দিনং নষ্টম | অখাদ্য খাবার খেলে সারাদিনটাই নানারোগে নষ্ট হয়ে যায়। |
কুমির যখন জলে থাকে ডাঙায় ডিমে নজর রাখে | মাতৃহৃদয়ের তুলনা নেই; মা জগতের শ্রেষ্ঠরূপা নারী। |
কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করে জলে/পানিতে বাস | যার যেখানে প্রভুত্ব, সেখানে তার সাথে বিবাদ করে বাস করা যায় না। |
কুম্ভকর্ণ নিদ্রাগত | ভীষণ অলস যে বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। |
কুম্ভকর্ণের নিদ্রা | মড়ার মত ঘুম যে ঘুম সহজে ভাঙানো যায় না; (উৎস্কাহিনী- ব্রহ্মার বরে কুম্ভকর্ণ ছয়মাস ঘুমাতো এবং একদিন জাগতো; যুদ্ধের কারণে অসময়ে সেই ঘুম ভাঙ্গাতে শেষপর্যন্ত মত্তহাতীর সাহায্য নিয়ে হয়েছিল; তার থেকে 'কুম্ভকর্ণের নিদ্রা' প্রবাদটির উতপত্তি হয়েছে)। |
কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ | দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত কোন সরকারি কাজে সহসা হাত পড়েছে। |
কুয়ো হয় আমের ভয়, তাল তেঁতুলের কিছুই নয়– খনা | কুয়াশা আমের বৌল নষ্ট করে; তাল তেঁতুলের করে না। |
কুরূপা নারী পতিব্রতা | কারে পড়ে মানুষ সৎ সাজে; সমতুল্য- 'বৃদ্ধা বেশ্যা তপস্বিনী'। |
কুর্যাৎ ক্ষীরান্তরাহারম দধ্যন্তং ন কদাচন | (স্বাস্থ্যের কারণে) দুধ খেয়ে খাওয়া শেষ করতে হয়; দই খেয়ে খাওয়া শেষ করা কখনো নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'লবণান্নকটুঞ্চানি বিদাহীনি যাতি চ তু, তদ্দোষং হর্তুমাহারং মধুরেণ সমাপয়েৎ'। |
কুল রাখি না শ্যাম রাখি | উভয়সঙ্কটে পড়া; ভালমন্দ বিচারে দ্বিধা। |
কুলায়/কুলোয় শুয়ে তুলায়/তুলোয় করে দুধ খায় | শিশুর মত অতি সরল, যেন কিছু জানে না- এমন কপটব্যক্তির প্রতি বিদ্রুপোক্তি; (গ্রামে নবজাত শিশুকে কুলায় শুইয়ে রোদে রাখা হতো এবং তুলার পলতের একপ্রান্ত দুধের বাটিতে ও অপরপ্রান্ত শিশুর মুখে দিয়ে দুধ খাওয়ানোর প্রথা এই ব্যঞ্জনা।) |
কুশিক্ষিত হওয়া থেকে অশিক্ষিত থাকা ভাল | বদনাম দোষণীয়, অজ্ঞানতা কোন দোষের নয়। |
কুসংবাদ বাতাসের আগে ছোটে/ধায় | বাজে খবর লোকের কানে আগে ছড়ায়। |
কুসঙ্গে থাকার চেয়ে একা/সঙ্গীহীন থাকা ভাল | তাতে বদনাম কুড়াবার ভয় থাকে না; সমতুল্য- 'দুষ্ট গরু থেকে শূন্য গোয়াল ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভাল'। |
কূপোদকং বটচ্ছায়া শ্যামা স্ত্রী ইষ্টকালয়ম্। শীতকালে ভবেদুফ গ্রীষ্মকালে চ শীতলম্।। (চাণক্য) | কূপের জল, বটগাছের ছায়া, মধ্যযৌবনে উপনীত স্ত্রী এবং ইটের তৈরি বাড়ি- এগুলি শীতকালে উষ্ণ থাকে আর গ্রীষ্মে থাকে শীতল। |
কৃতং কর্ম শুভাশুভম | (শুভ ও অশুভ যাই হোক) সব কৃতকর্মের ফলভোগ করে যেতে হবে। |
কৃতঘ্ন বিশ্বাসঘাতকের ইহকালও নেই পরকালও নেই | বিশ্বাসঘাতকের কোনদিন ভাল হয় না; সমতুল্য- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'। |
কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয় | কুকুরের কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষ থেকে অনেক বেশি; সমতুল্য- যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভালো লাগছে। |
কৃতস্য করণং নাস্তি, মৃতস্য মরণং যথা। গতস্য শোচনা নাস্তি ইতি বেদবিদ্যাং মতম॥ (চাণক্য) | পণ্ডিতগণ বলে থাকে- মৃতব্যক্তির যেমন পুনরায় মরণ নেই, তেমনিই কৃতকর্মের আর করণ নেই; অর্থাৎ যা গত হয়েছে তার জন্য শোক করে লাভ নেই। |
কৃপণের মত দাতা নেই | নিজে ভোগ না করে পরের ভোগের জন্য সন অর্থ রেখে যায়। |
কৃপণের ধন চোরে/বর্বরে/বাটপাড়ে খায় | কৃপণ সৎকাজে অর্থ ব্যয় করে না; অথচ প্রবঞ্চকের পাল্লায় পড়ে সব অর্থ হারায়। |
কৃপণের সন্তান অমিতব্যয়ী হয | ভোগের অর্থ হাতে থাকলে অপব্যয়ে খামতি হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- কেনারামের ছেলে ভোগীরাম'। |
কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুল | তুচ্ছ বিষয় থেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হল; সামান্য বিষয়ের অনুসন্ধান থেকে গুরুতর বিষয় প্রকাশিত |
কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা১ | সামান্য উপকরণ দিয়ে বিরাট কাজ সম্পন্ন করা। |
কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা২ | একজনের সাহায্যে অন্যের অনিষ্ট করা। |
কে একবার আমার হাত মুচড়েছিল মনে রাখি; কে দশবার আমার হাত ধরেছিল ভুল যাই | চরম অকৃতজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত। |
কে কার ঝাড়ে বাঁশ কাটে | কে কার কথা বিবেচনা করে; তুলনীয়- 'কা কস্য পরিবেদনা'। |
কে তুমি হরিদাস পাল? | কোন বিষয়ে কেউ কর্তৃত্ব ফলাতে গেলে ব্যঙ্গ করে তার প্রতি এই বাক্য উক্ত হয়; (উৎসকাহিনী- বিংশশতাব্দীর কল্পকাতার এক ধনাঢ্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন হরিদাস পাল) |
কেউ কারো মিত্র নয় কেউ কারো শত্রু নয়, ব্যবহারে শত্রুমিত্র হয় | হাত বাড়ালেই বন্ধু, হাত ছাড়ালেই শত্রু। |
কেউ মরে, কেউ হরি হরি বলে | একের দুঃখে অন্য আনন্দ করে' সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ'। |
কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ | একের পরিশ্রমের ফল অন্যের ভোগ করে; সমতুল্য- 'ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে'; 'উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ'। |
কেউই জ্ঞানী হয়ে জন্মায় না। | শিক্ষায় জ্ঞান অর্জিত হয়। |
কেনা চালে গোণা ভাত কম পড়লে যাবে জাত | বাইরে কেনা খাওয়াতে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। |
কেন্দু (হলুদ রঙের ফল) গাছে কেন্নোটা (পোকা) | উজ্জ্বলবর্ণের পোষাক পরে থাকা কালো কুৎসিত ব্যক্তির প্রতি কটাক্ষ। |
কেবল মন দিয়েই মন জয় করা যায় | গায়ের জোরে মন জয় করা যায় না। |
কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিবির্ণয়ঃ | কেবল শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে কোন কাজ করা অনুচিত; কারণ যুক্তিহীন বিচারে ধর্মহানি হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'যুক্তিহীন বিচারে তু ধর্মহানি প্রজায়তেঃ'। |
কেলেমাণিকের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর | বিসদৃশ নামকরণ; যা নয় তাই হবার ইচ্ছা। |
কেল্লা/কিল্লা ফতে- আরবী প্রবাদ | সফল কার্যোদ্ধার, সিদ্ধিলাভ |
কেশব, গোপাল, হরিহরি, হরহর | দেবতাদের নাম নিয়ে সোনারির সোনাচুরির ধান্ধাবাজি; (উৎসকাহিনী- তিলকধারী এক সোনারি ও তার কর্মচারী দোকান চালাতেন; একবার কিছুলোক গয়না কিনতে দোকানে আসে; তাদের প্রতি নমস্কার করে কর্মচারী বলে উঠলেন- কেশব, কেশব; কর্মচারী প্রশ্নচ্ছলে জানতে চায় কে সব? অর্থাৎ এরা কারা? মালিকও কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে-গোপাল, গোপাল; মালিক প্রত্যুত্তরে জানায় এরা গরুর পাল অর্থাৎ বোকাসোকা লোক; কিছুক্ষণ পরে ওজন করার সময় গয়না মাথায় ঠেকিয়ে কর্মচারী আবার 'হরি হরি' বলে; আসলে সে জানতে চায় ওজনে চুরি করবে কিনা; মালিকও কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে- হর হর; অর্থাৎ নিশিন্তে চুরি কর; খদ্দেররা ভাবল- এত ধার্মিক এরা, এদের উপর ভরসা করা যায়; বাস্তবে তারা ভুল ওজনে বেশী দাম দিয়ে ঠকে চলে গেল!) |
কোঁদলে জাত নষ্ট | বিবাদই সকল অনিষ্টের মূল। |
কোকিলানাং স্বরো রূপম্ নারীরূপং পতিব্রতম্। বিদ্যা রূপং কুরূপাণাং ক্ষমা রূপং তপস্বিনাম্॥ (চাণক্য) | কোকিলের কণ্ঠস্বরই তার রূপ, পাতিব্রত্যই স্ত্রীর রূপ, কুৎসিত পুরুষের বিদ্যাই রূপ এবং তপস্বীদের ক্ষমাই রূপ। |
কোকিলা বধু ছেলে ধরতে জানে না | কোকিলা সন্তান প্রতিপালন করতে জানে না; ন্যাকামী করা বউয়ের প্রতি বক্রোক্তি। |
কোণঠাসা ইঁদুর বিড়ালকে কামড়ায় | বিপদে পড়লে দুর্বলও দুঃসাহসী হয়ে ওঠে। |
কোথাও কিছু নাই খালি ফপরদালালি | সেই সব মানুষ যারা কাজে কম কথায় বেশি তাদের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি |
কোথাকার জল কোথায় গড়ায়/মরে | অনিশ্চিত পরিণতি; শুরু দেখে কাজের পরিণতি বোঝা যায় না; বিরুদ্ধ উক্তি- উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়'; 'উঠন্তিমূলো পত্তনিতেই চেনা যায়'; 'সকাল দেখে দিন কেমন যাবে জানা যায়'। |
কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকিরতলা | দুই অসমবস্তুর মধ্যে তুলনা হয় না; পাঠান্তর- 'কোথায় অযোধ্যার রঘু আর কোথায় বাঁশবনের ঘুঘু'; 'কোথায় রাজাভোজ, আর কোথায় গঙ্গুতেল'; 'কোথায় রাণী ভবানী আর কোথায় ফুলী জেলেন'। ী |
কোথায় রাম রাজা হবেন, না তার বনবাস | সুদিনের পরিবর্তে দু্র্দিন; সুখের কল্পনা ভেঙে চুরমার; পাঠান্তর- 'কোথা রাম রাজা হবে, না কোথা রাম বনে যাব'। |
কোথায় স্বর্গ, কোথায নরক কে বলে তাহা বহুদূর;মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর (রেজাউল করিম) | স্বরটা-নরক মানুষের কল্পনামাত্র; আচার আচরণের মাধ্যমে মানুষ তা ইহজগতে রচনা করে। |
কোদাল পাড়লেই/মারলেই চাষ হয় না | দক্ষতাবিনা কার্যসিদ্ধি/ফললাভ হয় না। |
কোদালকে কোদাল বল১ | নিজের সম্পর্কে লুকোচুরি করা নেই। |
কোদালকে কোদাল বল২ | সোজা কথা সরল ভাষায় বল, রঙ চড়িও না; স্পষ্ট কথা স্পষ্টাপষ্টি বল। |
কোদালে কুড়ুলে মেঘ দেখিলে চাষিকে বলে বাগাগে হাল- খনা | পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে কাজকর্মে সহায়তা আসে। |
কোদালের শিয়র কুড়ুলের পাশ, যে যাবে তার সর্বনাশ | দুর্জনের সঙ্গ পরিত্যজ্য। |
কোন কাজ অর্ধসমাপ্ত রাখা নেই | অর্ধসমাপ্ত কাজ না-কাজের সামিল। |
কোন কাজেই তাড়াহুড়ো করা নেই | তাড়াতাড়িতে কাজে ভুলভ্রান্তি হয় এবং তাতে কাজ সম্পন্ন করতে দেরী হয়। |
কোন কাজের শুরুটা বাজে হলে শেষটাও বাজে হয় | সুন্দরভাবে শুরু করলে সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয়। |
কোন কাজের শেষ ফেলে রাখতে নেই | কালে পেলে কোনকালে কাজ শেষ হবে না। |
কোনকালে নাইকো গাই চালুনি নিয়ে দুইতে যাই | না জানা কাজ করতে গিয়ে হাস্যস্পদ হলে এই প্রবাদ উক্ত হয়; সমতুল্য- কোন জন্মে ছিল না ডুলি আগে দুই পা তুলি। |
কোনকালে নেই ষষ্ঠীপূজা একেবারে দশভুজা১ | যে সাধারণ কাজ করে নি তার পক্ষে বিরাট কাজ করতে যাওয়ার মত অসম্ভব বা বিসদৃশ ব্যাপার। |
কোনকালে নেই ষষ্ঠীপূজা একেবারে দশভুজা২ | কৃপণের বৃহৎ ক্রিয়াকর্ম। |
কোন খবর না-থাকাটাই সুখবর | দুঃসংবাদ অজ্ঞাত থাকে না। |
কোন জন্মে ছিল না ডুলি আগে দুই পা তুলি | কোনকালে নাইকো গাইল চালুনি নিয়ে দুইতে যাই-এর অনিরূপ। |
কোন্কালে/জন্মে হবে পো ন্যাকড়া-কানি তুলে থো | দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ হবে তার জন্য এখনি উদ্যোগ করা; আগাম পরিকল্পনা। |
কোন মানুষই পুর্ণাঙ্গ নয় | কোন মানুষই সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারে না। |
কোন সংবাদ সুসংবাদ নয় | কোন খবর না-থাকাটাই সুখবর; আসলে দুঃসংবাদ অজ্ঞাত থাকে না বা 'দুঃসংবাদ বাতাসে ছড়ায়। |
কোন্ বা বিয়ে তার দুপায়ে আলতা | নগণ্য কাজের জন্য় আড়ম্বরের আবশ্যকতা নেই। |
কোন্ বে-আক্কেলে কয় সংসার আমার নয়? | সংসার গড়তেই তো জগতে আসা। |
কোমল ব্যবহার সংঘর্ষ এড়ায় | মিষ্টি ব্যবহারে মানুষের মন জয় করা যায়। |
কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ডাল১ | সরকারি জিনিসের প্রতি দরদ নেই; (১৮৬১ সালের আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেশ শাসন কর'ত।) |
কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ডাল২ | পরের জিনিসের অপচয়, হেলেফেলায় ব্যবহার; সমতুল্য- 'পরের ঘি পেলে প্রদীপে দেয় ঢেলে'; 'পরের জিনিস পায় হেগ পোঁদে খায়'। |
কোয়লাকা ময়লা ছুটে যব্ আগ্ করে পর্বেশ | আগুনে শুদ্ধ হলে কয়লার ময়লা যায়; জ্ঞানাগ্নিতে শুদ্ধ হলে মানুষের মনের অজ্ঞতা দূর হয়; সমতূল্য- 'কয়লা পুড়লে ময়লা যায়'। |
কোয়লা ধোয়ে না উজ্রৈ লাশুন তজৈ না বোয় | কয়লা ধুলে ময়লা যায় না; রসুন ধুলে গন্ধ যায় না; যার যা স্বভাব তা ছাড়ে না; বাংলা পাঠান্তর- 'কয়লা ছাড়ে না ময়লা'। |
কোলটানা ছ | নিজের দিকে টানা; 'ছ' অক্ষর লিখতে কোলের দিকে রেখাটা টানতে হয়। |
কোহতিভারঃ সমর্থানাং | সক্ষমব্যক্তির কাছে কোন কাজই কঠিন নয়। |
অসুস্থ লোকেরা, যারা ভোগে বেশি তারা সুস্থ লোকেদের তুলনায় বাঁচে বেশি। | |
ক্রশ/ক্রুশের পিছনেই শয়তানের আস্তানা | প্রদীপের নীচেই অন্ধকার; ভালো ও মন্দের সহাবস্থান; অবিমিশ্র কিছু হয় না। |
ক্রিয়া শব্দের চেয়ে বেশি জোরে কথা বলে | কিছু বললে এবং কিছু করলে লোকেরা করাকাজকে মনে রাখবে, বলা-কথাকে মনে রাখবে না। |
ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে/থাকে | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য-'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়';'চড় মারলে চড় খেতে হয়'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি। |
ক্রোধ এবং ঘৃণা সুপরামর্শের পক্ষে বাধাস্বরূপ | রিপু মানুষকে অন্ধ করে; জ্ঞানর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। |
ক্রোধের প্রকাশ দৃষ্টিতে; গুণের প্রকাশ শিষ্ট আচরণে | আচরণে মানুষ চেনা যায়। |
ক্রোধো বৈবস্বতো রাজা | মানুষের ক্রোধ কৃতান্তস্বরূপ। |
ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি | আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় বারবার আঘাত লাগে; তুলনীয়- 'আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি'; 'ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তি'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'। |
ক্ষমা পরমোধর্মঃ | ক্ষমার মত ধর্ম নেই। |
ক্ষমাই যদি করতে না পার, তবে তাকে ভালোবাস কেন? (রবীন্দ্রনাথ) | ভালবাসার লোককে সহজে ক্ষমা কয়ড়া যায় |
ক্ষমার বড় গুণ নাই, দানের বড় পূণ্য নাই | ক্ষমাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং দানই শ্রেষ্ট কর্ম। |
ক্ষিপ্রতা শয়তানের পছন্দ , করুণাময় ঈশ্বরের পছন্দ ধৈর্য | শয়তান সবসময় আগ বাড়িয়ে থাকে, করুণাময় ঈশ্বর সবসময় সহিষ্ণু। |
ক্ষীণে কস্যাস্তি গৌরবম্ | দুর্বল কোথায় গৌরব অর্জন করে থাকে? সকলেই সবলের সহায়ক; সমতুল্য- 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'। |
ক্ষুদ খেয়ে পুঁজি করে দুপুরুষে খরচ করে | কার্পণ্যের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল | সব বিশাল সৃষ্টি অসংখ্য ক্ষুদ্রের সমষ্টিতে গড়ে উঠে। |
ক্ষুদ্র শরীরে একটি বিরাট আত্মা বাস করে | আত্মার সীমা পরিমাপ করা যায় না। |
ক্ষুধা/ক্ষিদে থাকলে নূন দিয়েও ভাত খাওয়া যায় | আগে পেট পরে রসনা; ক্ষিদের কোন পছন্দ-অপছন্দ নেই। |
ক্ষুধা/ক্ষিদে পেলে দুহাতে খেতে চায় | জঠরজ্বালা মানুষকে জ্ঞানশূন্য করে। |
ক্ষুধার/ক্ষিদের কোন জাত নেই | ক্ষিদের বাছবিচার নেই। |
ক্ষুধার/ক্ষিদের চোটে পাটকেল কামড়ায়১ | ক্ষিদের জ্বালায় অভক্ষ্যও খাদ্য হয়। |
ক্ষুধার/ক্ষিদের চোটে পাটকেল কামড়ায়২ | প্রয়োজনর সময় যা পাওয়া যায় তাই নিতে হয় ভালোমন্দ বাছবিচার চলে না। |
ক্ষুধার্ত পাকস্থলীর জিভ থাকে না | ক্ষিদের পছন্দ-অপছন্দ নেই; ক্ষিদের পেট বাছবিচার করে না। |
ক্ষুধার্ত পেটের কান নেই | ক্ষুধার্ত পেট কোন বাধা নিষেধ শোনে না, মানে না। |
ক্ষুরে ক্ষুরে দণ্ডবৎ | ব্যঙ্গার্থে- পরোক্ষভাবে অপরকে পশু বলে তার নিকট নিষ্কৃতি প্রার্থনা |
ক্ষুরের ধার ছুঁতে কাটে | তীক্ষ্ণাধার বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া করা নেই। |
ক্ষেত্রে কর্ম বিধিয়তে | ক্ষেত্র বিচার করে কাজের বিধান হয়। |
ক্ষেপই হারে, জনম হারে না | মানুষ একবারই ঠকে; সারাজীবন ধরে ঠকে না। |
খ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
খইয়ের বন্ধনে পড়া | এমন বাধাবিঘ্নের মধ্যে পড়া যে সহসা তার থেকে নিস্কৃতি পাওয়া কঠিন; কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা; (উৎসকাহিনী- এক তাঁতী ঘরের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে ছিল; সেই সময় তাকে খই খেতে দিলে সে খুঁটিটাকে মধ্যে রেখে দুহাত পেতে খই গ্রহণ করে; তার ভাবনা হয় হাত সরালে খই পড়ে যাবে; আবার খুঁটি কাটলে ঘরের চাল পড়ে যাবে; এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থাকে প্রবাদে খইয়ের বন্ধনে পড়া বলে। |
খঞ্জনের নাচ দেখে চড়ুইয়ের নাচ | অক্ষমের উচ্চাশা; অনুকরণপ্রিয়তা; উৎকৃষ্টকে অনুকরণ করে নিকৃষ্টের হাস্যাস্পদ হওয়া; সমতুল্য- 'এঙ লাফায় বেঙ লাফায় চেঙ বলে আমিও লাফাই'; ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতারের নাচ'। |
খড় কেটে বন উজাড় | বসতি স্থাপন করতে গিয়ে প্রাকৃতিক সঙ্কট সৃষ্ট। |
খড়ম পায়ে দিয়ে গঙ্গা পার | অসাধ্যসাধন করার ব্যর্থপ্রয়াস। |
খড়ের আগুন যেমনি জ্বলে তেমনি নেভে | বদরাগীর রাগ চড়তে দেরী হয় না, আবার পড়তেও দেরী হয় না; কাজে উৎসাহ তাড়াতাড়ি আসে, আবার তাড়াতাড়ি উবেও যায়। |
খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা | অসাধ্যকাজে নিয়োজিত হওয়া; অসম্ভব কাজ যা হবার নয়; সমতুল্য- 'অন্ধকারে উকুন বাছা'; 'অন্ধকারে কালো বিড়াল খোঁজা' ইত্যাদি |
খনা ডেকে বলে যান, রোদে ধান ছায়ায় পান | আলোতে ধান এবং ছায়াতে পানের চাষ করতে হয়। |
খয়রাত ঘর থেকে শুরু হয় | আগে ঘর সামলাতে হয়, পরে অপরকে দেখার প্রশ্ন আসে; সমতুল্য- 'আগে ঘর পরে পর ঘর সামালে পরকে ধর'। |
খয়ের খাঁ | প্রভুর হিতৈষী; প্রভুর তুষ্টির জন্য অন্যের সর্বাধিক অনিষ্ট করতে পারে। |
খরনদীতে চর পড়ে না | সতেজ মনে কলুশ জমে না; সমতুল্য- 'গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না'। |
খরচের আঁকে আনতে জমার আঁকে কুলায় না | অর্থের টানাটানি; সমতুল্য- 'ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলায় না, 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' ইত্যাদি। |
খল যায় রসাতল | দুষ্টের পরিণতি ভাল হয় না। |
খলঃ করোতি দুর্বৃত্তং, নূনং ফলতি সাধুষু | দুষ্টের দুস্কৃতির ফল সঙ্গদোষে সাধুকে ভোগ করতে হয়। |
খলঃ কেন নিবার্যতে | দুর্জনকে কে নিবৃত্ত করবে; দুর্জনের সাথে পারা যায় না। |
খলের ছলের অভাব হয় না | ছলচাতুরীতে খল ভারী ওস্তাদ; কার্যসিদ্ধির জন্য দুষ্টের উপায়ের অভাব হয় না; সমতুল্য- 'দুষ্টের আটারোগাছি পথ'। |
খাঁচায় পুরে খোঁচা মারে | আয়ত্তে এনে অত্যাচার করে; দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। |
খাঁচার পাখি গান গায় না | অধীনের মনে আনন্দ থাকে না। |
খাঁদা নাকে নথ গোদা পায়ে মল | বিশ্রী বেমানান সাজ; যে সাজে মানায় না সেইরকম সজ্জা করলে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'খাঁদা নাকে তিলক কাটা'; 'খাঁদা নাকে গোঁফের বাহার'। |
খাই দাই কাঁসি/বাঁশি বাজাই কারো খবর রাখি না | খেদেদেয়ে সুখেই আছি, দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ করি না; সাদাসিদেলোক কোন ঝুটঝামেলার মধ্যে নেই; (উৎসকাহিনী- একব্যক্তি কবির লড়াইয়ে ঢুলির সাথে কাঁসি বাজাতো; একদিন কোনস্থানে কবি গাওনের পর এক শ্রোতা তাকে জিজ্ঞাসা করে, হ্যাঁ হে কাল নাকি কবির সাথে ঢুলির খুব কচালি হয়েছিল?' সে উত্তরে বলে, 'আমি খাইদাই কাঁসি বাজাই কচালির ধার ধারি না'; যে লোক নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে পরের বিষয়ে নাক গলায় না তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়; পাঠান্তর-'খাই দাই কাঁসি বাজাই, কারো ধার ধারি না'। |
খাই দাই তবলা বাজাই দুদিন বইতো নয় | ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুখ করে নাও; সমতুল্য- 'হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয়, কে জানে কখন কার সন্ধ্যে হয়'। |
খাই দাই ভুলি না তত্বকথা ছাড়ি না১ | সংসারে থেকেও ধর্মচর্চা করা যায়। |
খাই দাই ভুলি না তত্বকথা ছাড়ি না২ | আমাকে খাইয়ে পড়িয়ে যতই ভোলাও না কেন ঈপ্সিত লক্ষ্য থেকে
আমি সরছি না। |
খাই না-খাই আছি ভালো ভাঙাঘরে চাঁদের আলো | নিজেকে নিয়ে নিরন্নের রসিকতা; পেটে ভাত নেই, তবু ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোয় তার দিলখুশ। |
খাওয়ার বেলায় আগে কাজের বেলায় ভাগে | সুবিধাবাদী আচরণ; 'খাবার বেলায় আগে'- দ্রষ্টব্য |
খাওয়ার সাথে খিদে আসে | খিদে না হলে খাওয়া নেই- বৈদ্যের বিধান; খিদে না থাকলে সন্দেশও বিস্বাদ। |
খাওয়াবে হাতির ভোগে দেখবে বাঘের চোখে | ছেলে মানুষ করার স্বীকৃত পদ্ধতি; সন্তানকে ভাল খাওয়াবে কিন্তু কঠোর শাসন করবে; শ্রেষ্ঠ শিক্ষা গৃহে শুরু হয়। |
খাচ্ছিল জেলে জাল বুনে কাল হল তার হালের গরু কিনে১ | অভ্যস্ত কাজ ছেড়ে অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে ফল ভালো হয় না; পাঠান্তর- 'খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে গরু কিন'; 'খাচ্ছিল আবদুল চাষ করে ছিল ভাল চৌকিদারির কাজ নিয়ে আবদুল মল'। |
খাচ্ছিল জেলে জাল বুনে, কাল হল তার হালের গরু কিনে২ | বেশি আশা করলে বেশি নিরাশা হতে হয়; অন্যের কথায় বেশি লাভের আশায় পেশা বদল করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'অতি আশ সর্বনাশ'; 'অতিলোভে তাঁতী নষ্ট'; অতি আশায় মরে চাষা' ইত্যাদি। |
খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি | মূলকাজের চেয়ে অনাবশ্যক কাজে আড়ম্বর বেশি। |
খাট ভাঙ্গলে ভূমিশয্যা | শেষসম্বল নষ্ট হওয়ার আগে সতর্কবার্তা; যখন যেরকম অবস্থা সেইভাবেই মানিয়ে চলা; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা'। |
খাটে খাটায় লাভের গাঁতি, তার অর্ধেক মাথার ছাতি; ঘরে বসে পুছে বাত তার ঘরে হা-ভাত (খনা) | যে ব্যক্তি কাজের লোকের সাথে খাটে সে পূর্ণফল পায়; যে ব্যক্তি কাজের লোকের ওপর নজর রাখে সে অর্ধেক ফল পায়; যে কাজ করে না, কাজে নজরও দেয় না তার ফললাভ শূন্য। |
খাড়া-বড়ি-থোর থোর-বড়ি-খাড়া | আগে-পরে একই রকম এবং বৈচিত্র্যহীন অবস্থা |
খাণ্ডারের যোগ্য খাণ্ডারনী | ভীষণ কুঁদুলেপ্রকৃতির লোকের ভীষণ কুঁদুলেপ্রকৃতির স্ত্রী; তুলনীয়- 'বাঘের যোগ্য বাঘিনী' |
খানায় পড়লে হাতি চামচিকেতে মারে লাথি | অসহায় অবস্থায় পেলে সকলেই তার সুযোগ নেয়। |
খানে কে দাঁত অঔর, দিখানে কা দাঁত অঔর- হিন্দি প্রবাদ | কিছু আছে যা করার জন্য দেখানোর জন্য নয়; আবার কিছু আছে
যা দেখানোর জন্য করার জন্য নয়, যেমন হাতীর দাঁত; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মরদ কি বাত হাতী কা দাঁত'। |
খাব না খাব না অনিচ্ছে, তিন রেক চাল একটা উচ্চে | প্রথমে খাবো না, খাবো না বলে অনিচ্ছা প্রকাশ; শেষে একটা উচ্চে সিদ্ধ দিয়ে তিনরেক চালের ভাত খেয়ে ফেলা। |
খাবার আগে/সময় শোবার চিন্তা | আগাম ভাবনায় সতর্কতা; দুশ্চিন্তায় কাতর ব্যক্তির প্রতি বক্রোক্তি। |
খাবার আছে চা'বার নেই, দেবার আছে নেবার নেই | চুড়ান্ত ভারসাম্যহীনতা; চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। |
খাবার বেলায় আগে কাজের বেলায় ভাগে | খাবার পেতে যত ঔৎসুক্য, কাজের বেলায় তত অনীহা; খেতে প্রস্তুত, সাহায্যে অপ্রস্তুত; পাঠান্তর- 'খাবার বেলায় নেবার মা উলুর বেলায় মুখে ঘা'; 'খাবার বেলায় বেশি বেশি কাজের বেলায় অষ্টরম্'। ভা |
খায় না খায় সকালে নায়; হয় না হয় দুবার যায় তার কড়ি বদ্যি না খায় | সকালে স্নান, দিনে দুবার মলত্যাগ করলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে ফলে বদ্যি ডাকার প্রয়োজন হয় না। |
খায় মালকোঁচা মেরে, ওঠে হাঁটু ধরে | অপরিমিত আহার; মহাপেটুক। |
খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে ভাল | হাস্যকর অজুহাত হলেও কিছু তো একটা আছে। |
খারাপ আপোস ভালো মামলা থেকে ভালো | আপসে মামলার নিস্পত্তি হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়। |
খারাপ লোক খারাপ নামের চেয়ে ভাল | বদনাম খুব দ্রুত ছড়ায় অপরদিকে খারাপলোক দ্রুত সর্বত্র পৌঁছাতে পারে না। |
খারাপ শুরু খারাপভাবে শেষ হয় | সতর্কভাবে কাজ শুরু করার পক্ষে চেতাবনী; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'এড়া কাজে বেড়া'; 'শুরু ভাল হলে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন'; 'সব ভাল যার শেষ ভাল'। |
খাল কেটে কুমির আনা // খাল কেটে বেনো জল ঢোকানো | বাইরের বিপদ ঘরে ডেকে আনা; সমতুল্য- 'বাঁশ কেন ঝাড়ে আয় আমার ঘাড়ে'; 'সাধ করে শাল নেওয়া'। |
খাল পার হলে কুমিরকে কলা | বিপদ কেটে গেলে সবাই বীরপুরুষ; কার্যসিদ্ধি হয়ে গেলে লোকে উপকারীকে ভুলে যায়; পাঠান্তর- 'খাল পার হলে পাটনী শালা'; 'ঘাট পার হলে খেয়ানি শালা'। |
খালি কলসি বাজে বেশি | হালকাচরিত্রের লোক বেশি বকে; অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে তর্জন-গর্জন করে; সমতুল্য- ফোঁপরা ঢেঁকির শব্দ বড়'। |
খালি কলসি বাজে বেশি ভরা কলসি বাজে না, রূপ নাই কইন্যার সাজন বেশি রূপের কইন্যা সাজে না | সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য- যার রূপ নেই তার অলঙ্কারের প্রয়োজন হয়; যার রূপ আছে তার অলঙ্কারের প্রয়োজন হয় না। |
খালি দুয়া (দোয়া) করলে পুয়া (ছেলে) অয় (হয়) না | বিনাপরিশ্রমে শুধু প্রার্থনাতে কার্যোদ্ধার হয় না; অনায়াসে কিছু পাওয়া যায় না; কিছু পেতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়; সমতুল্য-'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়'; 'কণ্টকবিনা কমল হয় না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'নহি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে' ইত্যাদি। |
খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল | খালি পেটে জল খাওয়া নেই এবং ভরা পেটে ফল খাওয়া নেই- বৈদ্যের বিধান। |
খালি বস্তা খাড়া থাকে না | গুণহীন লোকের প্রতিষ্ঠা নেই। |
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না১ | আকর্ষণীয় বস্তু না থাকলে কেউ আকৃষ্ট হয় না। |
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না২ | কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়। |
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না৩ | যার কিছু নেই তার হারাবার কিছু নেই। |
খিচুড়ি পাকানো | কোন কাজ বিশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করা। |
খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, সদরে দিয়ে ছুঁচ গলে না১ | পিছনের খবর কেউ রাখে না; সামনের দিকেই যত কড়াকড়ি যত নজরদারি; পাঠান্তর- 'খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, সদরে বাধে ছুঁচ'। |
খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, দরে দিয়ে ছুঁচ গলে না২ | অজান্তে অনেক খরচ হয় জানতে খরচ করা কষ্টকর। |
খিদে থাকলে নূন দিয়েও ভাত খাওয়া যায় | আগে পেট পরে রসনা; সমতুল্য- 'খিদের কোন পছন্দ-অপছন্দ, বাচ-বিচার নেই'। |
খিদে পেলে বাঘ ধানও খায | খিদের জাতবিচার নেই; প্রয়োজন নিয়ম মানে না। |
খিদে পেলে দুহাতে খায় | জঠরজ্বালা মানুষকে পাগল করে; জ্ঞানশূন্য করে। |
খিদেয় বাঘ লোকালয়ে | খিদেয় মানুষ পাগল হয়। |
খিদের কোন বাচ-বিচার নেই | খিদের সময় কি ভক্ষ্য, কি অভক্ষ্য কেউ দেখে না। |
খিদের চোটে পাটকেলে কামড় | খিদের সময় কেউ ভক্ষ্য় বা অভক্ষ্যবিচার করে না। |
খুঁট-আঁখুরে দেশের বালাই | অল্পশিক্ষিতরা সমাজের বোঝাস্বরূপ; অল্পশিক্ষিতরা অনেক অশান্তির সৃষ্টি করে। |
খুঁট আখুরে বরাখুরে | অপদার্থ কোন কাজের নয় বলে গালি/তিরস্কার |
খুঁটি না থাকলে ঘর আপনি পড়ে১ | পরের শক্তিতে লড়া যায় না। |
খুঁটি না থাকলে ঘর আপনি পড়ে২ | সাহায্যকারী না থাকলে সংসারে দাঁড়ানো কষ্টকর। |
খুঁটির গোড়ায় নেইকো মাটি, কিসে ঘর রবে খাঁটি- লালন | ভাল মুরুব্বির থাকলে উন্নতি সহজ হয়। |
খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে/লড়ে১ | 'খোঁটার জোরে মেড়া লড়ে'; 'খোঁটার বলে গাড়ল যুঝে'। |
খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে/লড়ে২ | সহায়তা পেলে গুরুতর কাজে এগুনো যায়' |
খুঁড়িয়ে বড় হওয়া | নিম্নবিত্তলোকের উচ্চবিত্তের সমকক্ষ হওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস। |
খুচরো কাজের মুজরো নেই | ছোট ছোট কাজের হিসাব দেওয়া যায় না। |
খুদের জাউ পায় না ক্ষীরের জন্য কাঁদে১ | যোগ্যতার বাইরে প্রত্যাশা করা। |
খুদের জাউ পায় না ক্ষীরের জন্য কাঁদে২ | দরিদ্রের উচ্চাভিলাষ। |
খুব কাছে ভালো নয়; খুব দূরে নিস্ফলা | মধ্যপন্থা শ্রেষ্টপন্থা; ভাল নয় অতিশয়। |
খুরে খুরে দণ্ডবৎ | ব্যঙ্গার্থে- পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্টকে পশু বলে তার নিকট নিষ্কৃতি প্রার্থনা |
খুশখবরের ঝুটাও ভাল | তাতে মন খুশি থাকে। |
খেঁকিকুকুরের ঘেউ ঘেউ সার | নগণ্যের কোন গুরুত্ব নেই। |
খেতে দিলে/পেলে শুতে চায় | সুযোগ পেলে আরও সুযোগ খোঁজে; আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। |
খেতে দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই | ভালো করতে পারে না মন্দ করতে মুখিয়ে আছে। |
খেতে পায় না পুঁটি হাতে পরে আংটি | দরিদ্রের বাহ্যাড়ম্বর; সমতুল্য- ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'। |
খেতে পারি দিতে পারিনা | আত্মসর্বস্ব/সঙ্কীর্ণমনা ব্যক্তি; যে নিতে পারে দিতে পারে না। |
খেতে ভাল ভাজা-চাল, দেখতে ভাল মুড়ি; রসে ভাল একছেলের মা, দেখতে ভাল ছুঁড়ি | ভাজা-চাল দেখতে ভাল নয়, কিন্তু খেতে ভাল; মুড়ি দেখতে ভাল কিন্তু খেতে তেমন নয়; একইভাবে এক সন্তানের মা রসিকতায় ভাল, কিন্তু দেখতে অল্পবয়স্কা নারীই ভাল। |
খেদাই না তোর উঠান চষি১ | কড়াকথা ঘুরিয়ে বলা। |
খেদাই না তোর উঠান চষি২ | মুখে কিছু না বলে কার্যতঃ ক্ষতি করা। |
খেয়ার কড়ি গুণে দিয়ে সাঁতরে নদী পার | সুযোগ নষ্ট করা হল; অর্থও ব্যয় করা হল, আবার পরিশ্রম করাও হল। |
খেয়ে দেয়ে একাদশী | আচারবিচারে আস্থা নেই। |
খেয়ে যার হজম হয়, ব্যাধি তার দূরে রয় | হজম হওয়া সুস্থতার লক্ষণ। |
খেলতে জানলে কানা কড়ি দিয়েও খেলা যায় | উপায়জ্ঞের কাছে উপায় কোন সমস্যা নয়; যে উপাদান পায় তাই দিয়েই সে সমস্যার সমাধান করে। |
খেলে ধন পাতাল যায়, না-খেলে ধন আকাশ ধায় | খেলে সম্পদ কাজে আসে; না-খেলে সম্পদ নষ্ট হয়। |
খেল খতম পয়সা হজম | যা বলার সব বলা হয়ে গেছে; বলার আর কিছু নেই; গল্প শেষ। |
খেলে ধন পাতাল যায়, না-খেলে ধন আকাশ ধায় | ভোগ করলে সম্পদ কাজে লাগে; না-খেলে সম্পদ নষ্ট হয়। |
খেলোয়াড়দের চেয়ে দর্শকেরা বেশি খেলা দেখে- চীনা প্রবাদ | বাইরে থেকে সমস্যা বেশি অনুধাবন করা যায়। |
খৈয়ের বন্ধনে পড়া১ | উভয়সঙ্কটে পড়া; (খইয়ের বন্ধন দ্রষ্টব্য) |
খৈয়ের বন্ধনে পড়া২ | নির্বুদ্ধিতার জন্য কষ্টে পড়া। |
খোঁড়ার পা গর্তে পড়ে | অসহায়ের পদেপদে বাধা; যার যে বিষয়ে বিপদের আশঙ্কা, সে সেই বিপদেই পড়ে; পাঠান্তর- 'ভাঙা পা খানায় পড়ে'। |
খোদা পহাড় নিকলী চুহিয়া | কঠিন পরিশ্রমে অল্পপ্রাপ্তি; বাংলা পাঠান্তর- 'পর্বতের মুষিক প্রসব'। |
খোদা যারে দেয় ছাদ ফুঁইড়াই দেয় | কারো কারো ক্ষেত্রে ভগবানের অসীম করুণা অঝোরে ঝরে। |
খোদায় মারে দোহাই দেবো কার | প্রতিকারের কোন উপায় নেই; সমতুল্য- 'মারে কৃষ্ণ/হরি রাখে কে'। |
খোদার উপর খোদকারী | যোগ্য লোকের কাজে অযোগ্য লোকের অসঙ্গত হস্তক্ষেপ। |
খোদার খাসি | হৃষ্টপুষ্ট চেহারাযুক্ত লোক। |
খোদার মার দুনিয়ার বার | আল্লাহর বিধান অপ্রতিরোধ্য; সমতুল্য- 'মারে হরি রাখে কে |
খোদার কর্ম খোদাই জানে | কর্ম কি হবে তা কর্তাই জানে। |
খোদার নাও দোয়ায় চলে | সংসারের সবকিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন। |
খোলা দরজা সাধুকেও প্রলুব্ধ করে | আলগা পেলে সবাই সুযোগ নিতে চায়। |
খোলা মুখে মাছি ঢোকে | সতর্ক না থাকলে ক্ষতি হতে পারে। |
খোলা শত্রুতার চেয়ে কপট বন্ধুত্ব বেশি খারাপ | কপটতা খুবই নিন্দনীয়; কপট বন্ধুর থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। |
খোশখবরের ঝুটাও ভাল | মিথ্যা সুসংবাদ শুনলে আনন্দ হয়। |
খোষে তৈল নাই কলাবড়ার সাধ | যা পাওয়া সম্ভব নয় তা পাওয়ার আশা করা অন্যায়। |
খ্যাপা শেয়াল, ভাঙা দেয়াল আর বড়লোকের খেয়াল- তিনই সমান | তিনটিই সমান বিপজ্জনক- প্রথমটি কামড়াতে পারে; দ্বিতীয়টা আচমকা ভেঙে পড়তে পারে; এবং তৃতীয়জন জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলতে পারে। |
গ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
গঙ্গা গঙ্গা না জানি কত রঙ্গা চঙ্গা | যা আমরা দেখি না তা বড়ই দুন্দর মনে হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- -অমৃত না জানি কি পদার্থ খেয়ে দেখি না জল'। |
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা১ | গঙ্গাদশমীতে গঙ্গাস্নান করে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করা হয়। |
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা২ | যার জিনিস তাকেই দান; তাকে দিয়েই তার তুষ্টিবিধান; পরের অর্থে পরোপকার; পরের ওপর দিয়ে চলা। |
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা৩ | কোন কাজের লাভ থেকে সে কাজ চালানো; বিনাব্যয়ে কার্যসিদ্ধি; সমতুল্য- 'মাছের তেলে মাছ ভাজা'। |
গঙ্গাজলে ধুলেও কলঙ্ক যায় না | কলঙ্ক যাবার নয়; মরার আগে কলঙ্ক মোছে না' সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে'। |
গঙ্গা মড়া আলেন না১ | যতই মড়া ফেলা হোক-না-কেন গঙ্গা বলেন না যে আমি আর বইতে পারছি না, আমি আর সইতে পারছি না; নীরবে সে বয়ে নিয়ে যায়। |
গঙ্গা মড়া আলেন না২ | নির্বিরোধী লোককে যে কাজই দাও-না-কেন সে অনিচ্ছা জানায় না। |
গঙ্গায় ময়লা ফেললে গঙ্গার মাহাত্য যায় না | নিন্দাবাদে মহতের মহত্ব নষ্ট হয় না; তুলনীয়- 'কাকে গু খেয়ে মুখ ধুলে গঙ্গা অপবিত্র হয় না', |
গঙ্গার জল গঙ্গায় রইল, পিতৃপুরুষ উদ্ধার হল | বিনাপ্রয়াসে বিনাব্যয়ে কার্যসিদ্ধি; তর্পণের সময় গঙ্গার জল তুলে গঙ্গাতেই ফেলা হয়; এতে গঙ্গার জল গঙ্গায় থাকে, আবার পিতৃপুতুষও উদ্ধার পায়। |
গঙ্গার দুকূল ভাঙে না | এক কাজের দুই ফল একই হয় না; কিছু গেলে কিছু আসে; কিছু হারালে কিছু পাওয়া যায়। |
গচ্ছন্ পিপীলকো যাতি যোজনানাং শতান্যপি। অগচ্ছন্ | পিঁপড়ে চলতে থাকলে শত যোজন এগুতে পারে। |
গজকচ্ছপী/ গজকচ্ছপের লড়াই | অনর্থক ও অবিরাম ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা জ্ঞাতিদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ। (উৎসকাহিনী- মহাভারতে উল্লিখিত এক ঋষি বড় বদরাগী ও সঙ্কীর্ণমনা ছিলেন; ধনসম্পদের উপর তাঁর খুব লোভও ছিল; সম্পত্তি ভাগ করতে তিনি ব্দেন ছোটভাইয়ের সাথে। কিন্তু ভাগ মনঃপুত না হওয়ায় ক্ষেপে গিয়ে ছোটভাইকে হাতি হবার অভিশাপ দিয়ে বসেন। ভাইও কন যান না; তিনি বড়ভাইকে কচ্ছপ হবার অভিশাপ দিয়ে দিলেন; পরস্পরের অভিশাপে পশুতে পরিণত হয়েও চেতনাশূন্য হয়ে তারা অবিরাম অমিমাংসিত লড়াই চালিয়ে গেলেন; এই কাহিনী থেকে এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়। |
গজভুক্তকপিত্থবৎ১ | সবার অলক্ষ্যে গজনামক পোকা খেয়ে যেভাবে কয়েৎবেলকয়ে সারশূন্য করে সেইভাবে লক্ষ্মী সবার অলক্ষ্যে ঘর ছেড়ে চলে যান; তুলনীয়- 'ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ'; ‘ মেঘান্তরিতরৌদ্রবৎ’; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নির্গচ্ছতি যদা লক্ষ্মীর্গজভুক্তকপিত্থবৎ'। |
গজভুক্তকপিত্থবৎ২ | গজনামক পোকায় খাওয়া সারশূন্য শূন্যগর্ভ কয়েৎবেলের মত অন্তঃসারশূন্য অবস্থা/ব্যক্তি। |
গজমাত্রেই মোতি থাকে না | সব মানুষ মহৎ হয় না। |
গড্ডলিকা প্রবাহ১ | ভেড়ার পালের মত একের অন্যকে অনুসরণ; ভালোমন্দ না বুঝে অন্ধভাবে অনুসরণ। |
গড্ডলিকা প্রবাহ২ | গতানুগতিকতা; প্রচলিত ধারার অনুগামিতা। |
গড়তে চায় ঠাকুর হয়ে যায় কুকুর | ভালো করতে চায় কিন্তু মন্দ হয়ে যায়। |
গড়তে যত সময় লাগে ভাঙ্গতে তত সময় লাগে না | সৃষ্টির ছন্দ অতি ধীর; ধ্বংস চোক্ষের পলকে শেষ। |
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না১ | অস্থিরমতির সঞ্চয় হয় না। |
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না২ | এক জায়গায় থিতু না হয়ে যে ব্যক্তি ঘন ঘন পেশা পরিবর্তন করে সে কখনো জীবনে সাফল্য লাভ করে না। |
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না৩ | গতিশীল মনে ময়লা জমে না; সমতুল্য-'খরনদীতে চর পড়ে না'। |
গড়িমসিতে সময় চুরি যায় | আজ নয় কাল করে সময় নষ্ট হয়; গয়ংগচ্ছভাবে অযথা সময় বয়ে যায়। |
গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে১ | অল্পজলে সফরী লাফিয়ে বেড়ায়; মূলপ্রবাদ- 'অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'। |
গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে২ | অল্পশিক্ষিতরা বেশি বিদ্যার জাহির করে। |
গতর নেই চোপায় দড়, মেঙ্গে খায় তার পালি (পঙ্ক্তি) বড় | অক্ষমের গলার জোর বেশি; কাঙালীভোজনে লম্বা লাইন পড়ে। |
গত্র পোষা | পরিশ্রম না করা; অলসভাবে জীবন কাটানো। |
গতস্য শোচনা নাস্তি | যা গেছে তা গেছে; তারজন্য অনুশোচনা করে লাভ নেই। |
গদাইলস্করী চাল এক | গদাই লস্কর নামক বিপুল আকৃতির এক ধনীব্যক্তির মন্থরগতি ও কাজকর্মে ক্ষিপ্রতার অভাব থেকে 'গদাইলস্করী চাল' প্রবাদটির উতপত্তি হয়েছে। |
গন্ধবিহীন শিমুলফুল সুন্দর হ’লেও আদরণীয় নয় | গুণহীন বাহারিবস্তুর কোন আকর্ষণ নেই। |
গন্ধমাদন বয়ে আনা | কাউকে একটা জিনিস আনতে বললে সে দশটা জিনিস নিয়ে আসে। |
গব্য থাকলে আগে পাছে কী করবে তার শাকে-মাছে? | আগে ঘি পরে দুধ থাকলে শাক মাছের প্রয়োজন হয় না। |
গভীর জলে কাৎলা নিঃসাড়ে চলে; অল্প জলে সফরী ফরফরায় | জ্ঞানীরা বিদ্যা জাহির করে না; অল্পজ্ঞানীরা বিদ্যা জাহির করে বেড়ায়; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'। |
গভীর জলের মাছ | অচঞ্চল স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি; অনেক বুদ্ধি ধরে; অত্যন্ত ধূর্ত ও চাপাস্বভাবের লোক; যার ক্রিয়াকলাপের উদ্দেশ্য বোঝা দুষ্কর। |
গভীর নদী ধীরে/নিঃসারে বয় | জ্ঞানীমানুষেরা চিন্তাভাবনা করে ধীরসুস্থে কাজ করে। |
গয়ার পাপ/ভূত বিদায় করা | গয়ায় পাপ করলে সহজে সেই পাপ খণ্ডন করা যায় না; যাকে সহজ বিদায় করা যায় না, তাকে বিদায় করা। |
গরজ বড় বালাই১ | প্রয়োজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য; প্রয়োজনের দাবি না মিটিয়ে উপায় নেই। |
গরজ বড় বালাই২ | প্রয়োজন হলে মানুষ দুস্কর্ম করতেও পিছুপা হয় না। |
গরজে গঙ্গাস্নান | দায়ে পড়ে পূণ্যকর্ম করা; স্বার্থের জ্বালা বড় জ্বালা; সমতুল্য- 'গরজ বড় বালাই'। |
গরজে গয়লা ঢেলা বয় | প্রয়োজনের জ্বালা বড় জ্বালা; গয়লার বাঁকে যদি একদিকে হাঁড়ি থাকে তবে ভারসাম্য রাখার জন্য অন্যদিকে ইঁটপাথর রাখে; অর্থাৎ আবশ্যক হলে পরিশ্রমসাধ্য অনাবশ্যক কাজও করতে হয়; সমতুল্য- 'দোয়া গাইয়ের চাঁট সই'। |
গরব কর যৌবনভরে, কাঁদিতে হবে অঝোর ঝরে | যৌবন ফুরিয়ে গেলে নানা দুস্কর্মের কথা মনে পড়বে; তখন এবং তারজন্য অনুশোচনা করতে হবে। |
গরম অম্বল ঠাণ্ডা দুধ যে খায় সে নির্বোধ | দুইই স্বাস্থ্যের পক্ষে সমান হানিকর। |
গরমজলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় | বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যে একবার ঠেকেছে সে দ্বিতীয়বার সেই কাজে এগোয় না; সমতুল্য- 'গরম দুধে যার মুখ পুড়েছে সে ফুঁ দিয়ে ঘোল খায়'; 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলে ভয় পায়'; 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; দগ্ধ শিশু আগুন দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলায় একবার যায়' ইত্যাদি। |
গরম দুধ অমেয় মিঠা | গরম দুধ অমৃতসমান; প্রাণবর্ধক। |
গরমদুধে যার মুখ পুড়েছে সে ফুঁ দিয়ে ঘোল খায় | 'গরমজলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায়'-দ্রষ্টব্য |
গরমভাতে ঘি ঢালা | অপকার করার ছলে উপকার করা; শাস্তি দেবার ভান করে উপকার করা। |
গরমভাতে বিড়াল বেজার, উচিৎকথায় বন্ধু বেজার | কাউকে অপছন্দের জিনিস দিলে তার মন খারাপ; উচিৎকথা বললে বন্ধুর মন খারাপ। |
গরানো পাথরে শ্যাওলা জমে/ধরে না | সচল মনে জং ধরে না; সচল মনে ময়লা জমে না। |
গরিব খোঁজে খাদ্য, ধনী খোঁজে খিদে | গরিব খিদের জ্বালায় পাগল হয় আর ধনী খিদে না হওয়ার জ্বালায় পাগল হয়। |
গরিবের কথা বাসি হলে ফলে/ সত্য হয় | নগণ্যের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু পরে ঠেকে বুঝতে পারে আগে তার কথা শুনলে ভাল হতো। |
গরিব মানুষ ফড়িং খায় ঘোড়ায় চেপে বাহ্যি যায় | দুর্গতিতেও আড়ম্বর বজায় রাখার চেষ্টা। |
গরিবের ঘোড়ারোগ | পাওয়ার যোগ্য নয় তবু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা; সামর্থ নেই তবু ধার করে খরচ করে লোক দেখানো বড়লোকি করা; তুলনায়- 'গরিবের ঠাকুরব্যাধি'। |
গরিবের ঠাকুরব্যাধি | যে খেতে পায় না তার বাড়ীরে ঠাকুরসেবা করার মত অবস্থার অতিরিক্ত ব্যয়ের সাধ; তুলনায়- 'গরিবের ঘোড়ারোগ'। |
গরিবের বৌ সবার ভাবি১ | গরিবের মধ্যে অন্তরঙ্গতা/আন্তরিকতা বেশী থাকে। |
গরিবের বৌ সবার ভাবি২ | গরিবের কাছে সবাই একটু বেশি সুবিধা নেবার চেষ্টা করে। |
গরিবের মরণ বিটকেল | গরিব অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যায়। |
গরিবের মুড়কিই সন্দেশ | নিজের অবস্থায় যা পাওয়া সম্ভব তাই পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা; তুলনীয়- 'গরিবের রাঙ/রাঙ্তাই সোনা'। |
গরিবের রাঙ/রাঙ্তাই সোনা১ | খুব অল্পদামের জিনিসও গরিবের কাছে বহু মুল্যবান; যার যা আছে তাই তার কাছে অমূল্য়। |
গরিবের রাঙ/রাঙ্তাই সোনা২ | গরিব অল্পেতেই সন্তুষ্ট; তুলনীয়- 'গরিবের মুড়কিই সন্দেশ'। |
গরু গামলার ঘাস খায় না | সহজলভ্য জিনিসের আদর/কদর নেই; সমতুল্য- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না'; পাঠান্তর- 'গরু গোয়ালের পাশের ঘাস খায় না'। |
গরু ছাগলের মুখে বিষ১ | মুড়ালে গাছের বৃদ্ধি হয় না। |
গরু ছাগলের মুখে বিষ২ | মুর্খের কথাবার্তা অশালীন। |
গরু বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়১ | দোহনকালে অনেক গরুর সব দুধ দেয় না কিছু লুকিয়ে রাখে; পরে মাঠে চরার সময় বাছুরকে দুধ খাওয়ায়; পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে ফাঁকিতে কাজ করা যায়। |
গরু-বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়২ | মনের মিল বড় মিল। |
গরু জরু ধান রাখো বিদ্যমান | এই তিন সম্পদ নিজের আয়ত্বে রাখতে হয়; অপর হাতে পড়লে তা নষ্ট হয়। |
গরু মেরে জুতো দান১ | গরু মেরে তার চামড়ায় জুতা বানিয়ে ব্রাহ্মণকে দান; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'জুতো মেরে গরু দান'। |
গরু মেরে জুতো দান২ | জঘন্য অন্যায় কাজ করে প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে সামান্য প্রতিদান দেওয়া। |
গরু মেরে জুতো দান৩ | পাপকার্যের সাহায্যে পূণ্য অর্জনের চেষ্টা। |
গরু যার গোবর তার | অর্থ স্পষ্ট; তুলনীয়- 'লাঙল যার মাটি তার'। |
গরুড়শয়ন | দীর্ঘনিদ্রা; (উৎসকাহিনী- কশ্যপের তৃতীয় পত্নী বিনতা দুটি অণ্ড প্রসব করেছিলেন; একটি অণ্ড অকালে ভাঙা হয়; তাতে নিম্নাঙ্গ হীন অরূণের জন্ম হয়; দ্বিতীয় অণ্ড না ভেঙে শত বৎসর অপেক্ষা করা পর গরুড়ের জন্ম হয়); সমতুল্য- 'কুম্ভকর্ণের ঘুম'। |
গর্জনওয়ালে বরষাতে নহীঁ | যে বেশি কথা বলে সে বেশি কিছু করে না; সমতুল্য- 'যে মেঘ গর্জায় সে বর্ষায় না'। |
গর্জায় কিন্তু বর্ষায় না | ভয় দেখায় তবে ভয়ঙ্কর নয়। |
গর্তে পড়লে বুদ্ধি গজায় | বিপদ থেকে মানুষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে; তুলনীোয়'; 'ধাক্কা খেলে সোজা হয়'। |
গর্তের সাপ খুঁচিয়ে বার করা | অনুপস্থিত বিপদকে কাছে ডেকে আনা। |
গলা টিপলে দুধ বেরোয় | শিশু পাকা পাকা কথা বললে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়। |
গলা ধরে কাঁদবে তবু মালা ছুঁতে দেবে না | ক্ষেত্রবিশেষে একসাথে থাকলেও স্বার্থত্যাগ করে না। |
গলায় কাঁটা ফুটলে বেড়ালের পায়ে ধরে/পড়ে | বিপদে পড়লে নগণ্যের কাছেও সাহায্য চায়। |
গলায় গলায় পীড়িত | অতিমাত্রায় প্রীতি-ভালবাসা- বিদ্রুপচ্ছলে ব্যবহৃত। |
গলার নীচে গেলে আর কিছু মনে থাকে না | গলায় কাঁটা ফুটলে যন্ত্রণায় দেবতার কছে মানত করে; কাঁটা নেমে গেলেই মানতের কথা ভুলে যায়; কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায়; সমতুল্য- 'খাল পেরুলে পাটনী শালা'; 'গাঙ পেরুলে কুমিরকে কলা'; 'বিয়ে হয়ে গেলে ছাদনাতলায় লাথি' ইত্যাদি। |
গল্প থেকে বাস্তবঘটনা বেশি বিস্ময়কর | বাস্তব অনেকসময় কল্পনাকেও হার মানায়। |
গল্প শেষ | যা বলার বলা হয়ে গেছে, আর কিছু বলার নেই; সমতুল্য- 'অলমিতি বিস্তরেণ'; 'খেল খতম পয়সা হজম'। |
গল্পের গরু গাছে চড়ে১ | মুখেমুখে একটা কথা ঘুরলে ফুলেফেঁপে সেটা বিরাট আকার ধারণ করে; যতটা বলা হয় কার্যতঃ বিষয়টা অত গভীর নয়; তুলনীয়- 'যত কয় তত নয়'। |
গল্পের গরু গাছে চড়ে২ | বর্ণনায় রঙ চড়ানো না হলে ঘটনা সুন্দর হয় না; তুলনীয়- 'কল্পনার ডানা পাখা মেলে'। |
গাই ছিল না হলো গাই চালুনি নিয়ে দুইতে যাই | কোন বিষয়ে কারো অজ্ঞতা প্রকাশ পেলে তাকে ব্যঙ্গ করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
গাই নাই তো বলদ দুয়ে দে | যেভাবেই হোক কোন কাজ করিয়ে নিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া; পাঠান্তর- 'গাই নাই তো বলদ দো'। |
গাই নেবে দুইয়ে বলদ নেবে বেয়ে | গুণ বিচার করে বস্তু নির্বাচন করা উচিত। |
গাই বাছুরে পীরিত থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয | 'গরু বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়'- দ্রষ্টব্য |
গাইতে গাইতে গায়েন, বাজাতে বাজাতে বায়েন | অধ্যবসায়ের ফলে দক্ষতা আসে; অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি; মানুষ ক্রমে ক্রমে বিজ্ঞ হয়; সমতুল্য- 'ভবতি বিজ্ঞতম: ক্রমশো জন'। |
গাইতে চাইলে বলতে শেখো | সববিষয়েই আগাম প্রস্তুতি লাগে। |
গাঁ নাই তার সীমানা | অন্যায়/অবাস্তব দাবী; আদিখ্যেতা; বাড়াবাড়ি পর্যায়ের আকাঙ্খা; তুলনীয়- 'গাঁয়ের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া'; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'নাস্তি গ্রাম্যঃ কুত সীমাঃ?' |
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া১ | ছোটগাঁয়ে কয়েক ঘরের বাস; সেখানে একাধিক পাড়া থাকে না; অস্তিত্বহীন বস্তুর কল্পনা। |
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া২ | নির্গুণব্যক্তির গুণের উল্লেখ। |
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া৩ | বৃহতের ন্যায় ক্ষুদ্রের আস্ফালন। |
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল | অন্যে স্বীকার করে োঁড়ে, তবুও নি প্রধান বলে মনে করে কর্তৃক ফলানোর হাস্যকর প্রয়াস; অযোগ্যব্যক্তির অপরের উপর অযাচিতভাবে কর্তৃত্ব করার চেষ্টা; আত্মম্ভরী ব্যক্তি। |
গাঁয়ের গুণে গড়ে (অলস) গরু বিকোয় | সবাই একযোগে বললে মিথ্যাও সত্য হয়। |
গাঁয়ের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া | নগণ্যের বাড়াবাড়ি, আদিখ্যেতা; অতি ক্ষুদ্রবস্তুর ভাগ হয় না; তুলনীয়- 'গাঁ নাই তার সীমানা'। |
গাঙ পেরুলেই কুমীরকে কলা১ | ভয় কাটলেই বীরপুরুষ। |
গাঙ পেরুলেই কুমীরকে কলা২ | কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায়; তুলনীয়-
'গলার নীচে গেলে আর কিছু মনে থাকে না'। |
গাঙে গাঙে দেখা হয়, বোনে বোনে দেখা নেই | বহুদূর বয়ে গিয়ে দুটি নদীর মিলন সম্ভব, কিন্তু কখনো দুইবোনের মিলন সম্ভব নয়। |
গাছ গুণে গোটা, গাই গুণে ঘি, বাপ গুণে বেটা মা গুণে ঝি | গাছ ভালজাতের হলোে ফল ভাল হয়; গরু ভালজাতের হলোে ঘি ভালো হয়; বাবা-মা ভাল হলোে ছেলেরা বাবার এবং মেয়েরা মায়ের প্রকৃতি পায়। |
গাছ থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ সাত, যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত | যার যেখান স্বার্থ তার সেখানে নজর; সমতুল্য- 'জুতা যে পরেছে সেই জানে কাঁটা কোথায় বিঁধছে'। |
গাছ থেকে ফল ভারি নয় | অখণ্ড থেকে খণ্ড বড় হয় না; যে যার থেকে উৎপন্ন সে তার থেকে বড় নয়। |
গাছগাছালি ঘন রোবে না; গাছ হবে তার ফল হবে না- খনা | আলো না পেলে গাছ ফলবতী হয় না। |
গাছে উঠতে পারে না বড় আমটি আমার | অক্ষমের অতিরিক্ত/অন্যায় আবদার। |
গাছে উঠে পড়তে, জামিন হয় মরতে | গাছে উঠলে পড়ার ভয় থাকে; জামিন হলেই অর্থদণ্ড দেওয়ার ভয় থাকে। |
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল১ | গাছের কাঁঠাল গাছেই আছে, সেটা খেতে গেলে পাছে আঠা লাগে তাই আগের থেকেই গোঁফে তেল মাখানো হচ্ছে। |
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল২ | পাওয়ার আগেই ভোগের আয়োজন; আগাম সুখকল্পনা; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'রাম না হ্তে রামায়ণ'। |
গাছে গাছে আগুন জ্বলে, বৃষ্টি হবে খনায় বলে- খনা | বনাঞ্চলে আগুন লাগলে দ্বিগুণ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; পাঠান্তর- 'গাছে গাছে লাগলে আগুন বৃষ্টি হবে দ্বিগুণ দ্বিগুণ'। |
গাছে চড়ানো | অযথা প্রশংসা করা; চাটুবাক্যে গর্বিত করা; সমতুল্য- 'তোল্লাই দেওয়া'। |
গাছে তুলতে সবাই আছে, নামাতে কেউ নেই | বিপজ্জনক কাজে নামিয়ে দিতে সবাই তৎপর, কিন্তু বিপদে পড়লে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসে না। |
গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া | বিপজ্জনক কাজে নামিয়ে উদ্ধারের উপায় বন্ধ করে কেটে/সরে পড়া; উৎসাহ দিয়ে কাজে প্রবৃত্ত করে অসহায় অবস্থায় ফেলে সরে দাঁড়ানো। |
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি১ | কাজ নামার সঙ্গে সঙ্গেই অপ্রত্যাশিত কিছু ফলপ্রাপ্তি। |
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি২ | কাজ নামার আগেই ফললাভের প্রত্যাশা; আগামা সুখকল্পনা। |
গাছের পরিচয় ফলে | আচরণই মানুষকে চেনায়; পাঠান্তর- গাছ তোমার নাম কি, ফলেন পরিচয়তে'। |
গাছের ভয় বাতাসে, পদ্মের ভয় শিশিরে, সজ্জনের ভয় দুর্জনে | প্রত্যেকেরই একটি করে ভয়ের যায়গা থাকে; ভয়মুক্ত কেউ নয়। |
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায়১ | নিতান্ত স্বার্থপরের মত ব্যবহার। |
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায়২ | সম্পদের সবটুকুই ভোগ করে; সব সুবিধাগুলি পেতে চায়। |
গাছের দশটা থেকে পাতের একটাই ভাল | সম্ভাব্য কোন বড়প্রাপ্তি থেকে নিশ্চিত এক ছোটপ্রাপ্তি অনেক ভাল; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটি পাখির সমান'; 'হাতের জিনিস ফেলে দূরের জিনিস নিতে নেই'। |
গাজনের নেই ঠিকানা, ডেকে/শুধু বলে ঢাক/বাজনা বাজা না | কাজের কোন ঠিক নাই, শুধু আসর গরম করে; তুলনীয়- বর-কনের দেখা নেই শুক্কুরবারে বিয়ে'। |
গাজীসাহেবের মোরগ, পেটে গেলেও ডাক দেয় | যে জিনিস আত্মসাৎ করা অসম্ভব সেইক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য। |
গাড়িপর লা (নৌকা) লাপর গাড়ি | কখনো গাড়ির উপর নৌকা কখনো বা নৌকার উপর গাড়ি; অবস্থা সবসময় সমান থাকে না; সমতুল্য- 'চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়' |
গাড়ী কিনতে গিয়ে বাড়ী বিক্রি | সামান্য বিষয়ে অসামান্য ব্যয়; তুলনীয়- 'ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি'। |
গাড়োয়ানের চুমকুড়ি গরুতে চেনে | চেনাজানা লোক একে অপরকে বুঝতে পারে; সমতুল্য- 'সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে'। |
গাধা কি জানে কুসুমের গন্ধ/মধুর স্বাদ | নির্গুণকে গুণের কথা বলা বৃথা। |
গাধা জল ঘোলা করে খায় | বোকা সুষ্ঠভাবে কাজ করতে অপারগ। |
গাধা ডাকলে তুমিও তার সাথে ডেকো না | বোকামিকে সমর্থন করা উচিৎ নয়, লোকে বোকা ভাবতে পারে। |
গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা | স্থূলবুদ্ধিসম্পন্নকে শিখিয়ে পড়িয়ে তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন করার মত কঠিন কাজ করা। |
গাধা পেটালে ঘোড়া হয় না | শত ছেষ্টাতেও নির্বুদ্ধিকে বুদ্ধিমান করা যায় না; নির্গুণ গুণী হয় না; হেয় জিনিস হেয়ই থাকে মূল্যবান হয় না। |
গাধা সকল বইতে পারে ভাতের কাঠি বইতে নারে | যে খুব শ্রমসাধ্য কাজ করতে পারে সে সামান্য কাজে অক্ষমতা জানালে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
গাধা সিংহের ছাল পড়লে সিংহ হয় না | নকল কখনো আসল হয় না; তুলনীয় ময়ূরপুচ্ছ পর'লে কাক ময়ূর হয় নাল তুলনীয়- 'গাধার পিঠে সোনার বোঝা চাপালেও সে গাধাই থাকে'। |
গাধাকে প্রশ্ন করো না সে মোট বইবে কিনা | নিত্য কাজের খবর করা অর্থহীন। |
গাধার পিঠে ওজন চাপে | বোকাকে বেশি খাটানো যায়; তুলনীয়- 'অবোধের খাটনি ভারি'; পাঠান্তর- 'গাধার পিঠে ভারী বোঝা'। |
গাধার পিঠে সোনার বোঝা চাপালেও সে গাধাই থাকে | অবোধ কখনো বোদ্ধা হয় না; কাক কখনো বক হয় না; কালো কখনো সাদা হয় না। |
গাবতলা দিয়ে যাবনা, আর গাব খাবনা, গাব খাব না তো খাবো কি, গাবের মত আছে কি | গাব খেতে গিয়ে এক কাকের ঠোঁট আঠায় জড়িয়ে যায়; বিপদে পড়ে সে প্রতিজ্ঞা করে আর গাব খাবে না; আঠা ছেড়ে যেতেই সে দ্বিতীয় বচনটি আওড়ায়; কারে পরে প্রতিজ্ঞা; বিপদ কেটে যেতেই স্বমূর্তি; প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতে কতক্ষণ! |
গায়ে ওড়ে খড়ি, কলপ দেওয়া দাড়ি | ঘরের অবস্থা মন্দ, বাইরে আড়ম্বর প্রদর্শন; সমতুল্য- 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'। |
গায়ে গণ্ডারের চামড়া | অপমানসূচক কথা যার গায়ে লাগে না; নির্লজ্জ-বেহায়া। |
গায়ে গু মাখলে যমেও ছাড়ে না | অপরাধ করলে কোনো অছিলাতেই শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'পাপ বাপকে ছাড়ে না'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো | নির্ভাবনায় বাবুয়ানা ও ফুর্তি করে বেড়ানো। |
গায়ে ফোসকা পড়া | তীব্র অসহিষ্ণু হওয়া। |
গায়ের কালি ধুলে যায়, মনের কালি ম’লে যায় | ভুলত্রুটি সংশোধন করা যায়, কিন্তু মনের গ্লানি মরার আগে মুছে না। |
গায়ের গন্ধে ভূত পালায়, মাথায় মাখে খুসবু/ফুলেল তেল | অবস্থার বিপরীত আচরণ; আদিখ্যেতা; বাড়াবাড়ির প্রতি তিরস্কার। |
গাল টিপলে দুধ বেরোয় | একেবারে অবোধ; নিতান্ত শিশু ব'লে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। |
গাল বাড়িয়ে চড় খাওয়া১ | শখ করে বিপদ ডেকে আনা। |
গাল বাড়িয়ে চড় খাওয়া২ | নির্বুদ্ধিতার কারণে অপমানিত হওয়া। |
গালে চুনকালি দেওয়া১ | অপরাধের শাস্তিস্বরূপ লাঞ্ছনা করা। |
গালে চুনকালি দেওয়া২ | বংশের বা আত্মীয়স্বজনের কলঙ্কের কারণ হওয়া। |
গিন্নি ভাঙলে হাঁড়ি হয় খলা (পোড়া) বউ ভাঙলে হাঁড়ি হয় খোলামকুচি (ভাঙা হাঁড়ির টুকরা) | একই কাজে শাশুড়ির বেলায় ভাল, বউয়ের বেলায় খারাপ; আমাদের স্বভাব পরের মেয়ের নিন্দা করা। |
গিন্নির উপর গিন্নিপনা ভাঙা পিঁড়েয় আলপনা১ | আগ বাড়িয়ে কাজ নষ্ট। |
গিন্নির উপর গিন্নিপনা ভাঙা পিঁড়েয় আলপনা২ | অনধিকারে কর্তার উপর কর্তৃত্বপনা। |
গিন্নির দোষে/পাপে গৃহস্থ নষ্ট | গিন্নি অকর্তব্য কাজ করলে সংসার সুখের হয় না; সমতুল্য- 'রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সংসার সুন্দর হয় রমণীীর গুণে'। |
গিন্নির হাতে রাঙা পলা বউয়ের হাতে সোনার বালা | মর্যাদার উল্লঙ্ঘন। |
গিন্নি হলোে চুন্নি হতে হয় | সংসারের শান্তি বজায় রাখার কারণে গিন্নিকে মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলতে হয়। |
গির্জার পাশের লোক গির্জায় যায় না১ | যখন খুশি যাওয়া যাবে এই ভাবনায় আলসেমি করে যাওয়া হয় না। |
গির্জার পাশের লোক গির্জায় যায় না২ | সহজলভ্য দ্রব্যের আকর্ষণ/আদর কম; সমতুল্য়-'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না'; 'কালীঘাটের লোকের কালীদর্শন হয় না'; 'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না' ইত্যাদি। |
গুজব বাতাসে ওড়ে | গুজব খুব দ্রুত ছড়ায়; গুজব মানুষের প্রিয় খাদ্য। |
গুটিপোকা গুটি করে নিজের ফাঁদ নিজে গড়ে | নিজের কাটা গর্তে নিজেই পড়া; নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে পরা। |
গুড় অন্ধকারেও মিষ্টি লাগে | ভাল জিনিস সকল অবস্থাতেই ভাল। |
গুড় দিয়ে খেলে গুণচটও (থলি) মিষ্টি লাগে | ভালোর সংস্পর্শে এলে মন্দও ভাল হয়। |
গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না১ | অর্থ না থাকলে কোন কাজ হয় না; হিন্দি পাটান্তর- 'গৈর্ গুড় পুয়া নহী বনতে হৈ'। |
গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না২ | ভালো কিছু পেতে হলে ভালোর সম্মেলন চাই; |
(রেকো) গুণঃ খলু নিহন্তি সমস্ত দোষান | একটিমাত্র গুণ সমস্ত দোষকে বিনষ্ট করে। |
গুণ থাকলে দোষের ভয় | দোষে-গুণে মানুষ; কোন অবস্থাতেই মানুষ সমালোচনা এড়াতে পারে না। |
গুণবানের আশ্রয়ে নির্গুণও গুণী হয় | আলোর স্পর্শে এলে অন্ধকার কাটে; সমতুল্য- 'চন্দন বনে অচন্দনও চন্দন হয়'। |
গুণলুব্ধা স্বয়মেব সম্পদ | সম্পদ গুণানুরাগী; গুণ থাকলে সম্পদ আপনা থেকেই আসে। |
গুণী গুণং বেত্তি, ন বেত্তি নির্গুণঃ | গুণী গুণের কদর বোঝে, নির্গুণে বোঝে না; অর্থাৎ অসারের সার বোঝার ক্ষমতা নেই। |
গুণী গুণং বেত্তি, ন বেত্তি নির্গুণো বলী বলং বেত্তি ন বেত্তি নির্বলঃ | গুণী গুণবানের গুণ বোঝে, নির্গুণে তা বোঝে না; বলীই বলবানের শক্তি অনুধাবন করতে পারে দুর্বলে পারে না। |
গুণে কড়ি জলে ফেলি সেও ভাল | কাজ বুঝে নেওয়াই উচিত। |
গুণে নুন দিতে নেই | নূন দিলে ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয়, কিন্তু নূন দিলেও নির্গুণ কখনো গুণী হবে না; নির্গুণের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে, বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে- হরিশ্চন্দ্র মিত্র | মানুষ হল ভগ্নাংশের মত; আসল 'সে' হলো হর এবং ভাবনার 'সে' হল লব; নিজেকে ছোট ভাব তাহলেই বড় হবে। |
গুণের ঘাট (ঘাটতি) নেই১ | যে কোন অপকর্ম করেছে, তার প্রতি বিদ্রুপোক্তি। |
গুণের ঘাট (সীমা) নেই২ | বদগুণের সীমা-পরিসীমা নেই; নির্গুণের প্রতি বিদ্রুপোক্তি; পাঠান্তর- 'গুণের বালাই নেই'। |
গুণের বালাই দেখে মরি | সদগুণের অভাব দেখে খেদোক্তি। |
গুণের বালাই নেই | বদগুণের আধিক্য দেখে খেদোক্তি; পাঠান্তর- 'গুণের ঘাট নেই'। |
গুণে সরস্বতী রূপে লক্ষ্মী | সর্বগুণসম্পন্না ও অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারিণী বরাঙ্গনা নারী। |
গুবরেপোকার পদ্মমধু খাবার সাধ | অক্ষমের উচ্চাশা; নীচের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; তুলনীয়- কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার সাধ'। |
গুমরে মাটিতে পা পড়ে না | অহংকারী মেজাজে সবাইকে তুচ্ছজ্ঞান করা; তুলনীয়- 'ধরাকে সরাজ্ঞান করা'। |
গুয়ের এপিঠ আর ওপিঠ, দু’পিঠই সমান | অপকৃষ্টতায় উভয়ে তুল্যমূল্য; মন্দের সবই মন্দ। |
গুয়ে বলে গোবরদাদা তোর গায়ে গন্ধ | নিজের দোষ জানে না পরের দোষ খোঁজে; সমতুল্য- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে ছ্যাঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'। |
গুরু ছেড়ে গোবিন্দ ভজে, সে জন নরকে মজে | ইষ্টগুরু সর্বাগ্রে পূজ্য। |
গুরু বোবা শিষ্য কালা, যেমন গুরু তেমন চেলা | উভয়ই সমান মন্দ/মূর্খ; মনিকাঞ্চনযোগ। |
গুরুমারা বিদ্যা১ | অনিষ্ট করার জন্য গুরুর কাছে প্রাপ্তশিক্ষা তারই উপর প্রয়োগ; উপমায়- 'অর্জুন-দ্রোণাচার্য' |
গুরুমারা বিদ্যা২ | বিদ্যায় গুরুকে অতিক্রম। |
গুরু মোতে দাঁড়িয়ে তো শিষ্য মোতে পাক দিয়ে | গুরু থেকে শিষ্য তীক্ষ্ণ; মূল অপেক্ষা শাখা প্রবল; সমতুল্য- 'তালৈয়ের চেয়ে পুতরা ভারি'; 'বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়'; 'বাপের চেয়ে ছেলে কড়া'; 'সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি' ইত্যাদি। |
গুরুর কথা শোনে না কানে প্রাণ যায় তার হেঁচকা টানে | গুরুজনদের কথা অগ্রাহ্য করলে বিপদে পড়তে হয়। |
গুরুর দোষগুলি ব্যক্ত করবে | দোষ সবসময় অমঙ্গলময়, নিন্দনীয়; সম্পর্কীত উক্তি- 'শত্রুর গুণগুলি ব্যক্ত করবে'। |
গৃহ স্থির আগে কর্ গৃহিণী স্থির তারপর | আগে ব্যবস্থা না করে কোন কাজে হাত দেওয়া উচিত নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ-'পরিকল্পনাবিহীন কাজ লাগামাছাড়া ঘোড়াতুল্য'। |
গৃহিণী গৃহমুচ্যতে | গৃহিণী থাকলে গৃহ প্রকৃত গৃহে পরিণত হয়; গৃহিণী থাকলে তবেই গৃহ বাসযোগ্য হয়। |
গৃহীত ইব কেশেষু মৃত্যুনা ধর্মমাচরেৎ | যম চুলের মুঠি ধরে আছে এই ভেবে ধর্মাচরণ করবে। |
গেঁয়ো যোগী কল্কে/ভিখ পায় না | নিজের দেশে বা স্বজনর কাছেে গুণীলোকের কদর নেই; অতিপরিচিত হলে গুণীলোক সঠিক মর্যাদা পায় না; সমতুল্য- 'অতি চেনার কদর নেই'; তুলনীয়- 'গরু গামলার ঘাস খায় না'। |
গেরস্ত কাওরা (অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়) শোরে কড়ি | কাওরা জাতীয় গৃহস্থীরা শুয়োর বিক্রি করেও লাভবান হয়। |
গেরস্তেরে ভূতে পায়, চাল কুটে পিঠে খায় | বহু কষ্ট স্বীকার করে সেই ভাতই খায়। |
গৈর্ গুড় পুয়া নহী বনতে হৈ | গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না; অর্থ না থাকলে কোন কাজ হয় না। |
গোঁফ খেজুরে | নিতান্ত অলস; অলসচূড়ামণি; (উৎস-কাহিনী- একদিন এক অলস-চূড়ামণি এক খেজুরগাছের তলায় শুয়ে ছিল; একসময় একটা খেজুর তার গোঁফ-জোড়ার মাঝখানে পড়ে; জিভ দিয়ে একটু কসরত করে খেজুরটাকে সে মুখের ভিতর ঠেলে পেটে চালান করতে পারত; কিন্তু এই কষ্টটুকু স্বীকার করতেও সে নারাজ; পাশে তার দোসর শুয়েছিল; তাকে সে খেজুরটাকে মুখে ঠেলে দিতে বলে; এই পরিশ্রম করতে তারও ভীষণ আপত্তি ছিল; ফলে অলসচূড়ামণি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে এই আশায় শুয়েই থাকে কখন খেজুরটা এমনি এমনি গড়িয়ে তার মুখে এসে পড়বে, আর সে খেজুর খাবে; এই গল্প থেকেই অলস লোকটাকে সকলে বলতে শুরু করল- গোঁফখেজুরে।); সমতুল্য- পি পু ফি শু। |
গোঁফ দেখলে শিকারী বেড়াল চেনা যায় | চোখের দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থা বোঝা যায়। |
গোঁফ নাইকো কোনকালে দাড়ি রেখেছেন তোবড়াগালে | নিতান্ত বাড়াবাড়ি; বিসদৃশ সাজ। |
গোঁয়ারের মরণ খোঁয়ারে | গোঁয়ারের পতন বিশ্রীভাবেই হয়; হটকারী গোঁয়ার্তুমি করে মরে; সমতুল্য- 'বেদের মরণ সাপের হাতে'; পাঠান্তর- গোঁয়ারের মরণ গাছের আগায় |
গোকুলের ষাঁড় | স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি, যে পরের অনিষ্ট করে বেড়ায়; দোষ করলেও শাস্তি পায় না। |
গোঙ্গা ছেলের নাম তর্কবাগীশ | গুণহীনে গুণের আরোপ; অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মানদান; কুৎসিতকে সুন্দর করার হাস্যকর প্রয়াস; যা নয় তা হওয়ার ইচ্ছা; সমতুল্য-'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ' 'কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন'; 'ঘুঁটে কুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি। |
গোজন্ম ঘুচে গন্ধর্বজন্ম হল | অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্ভাগ্য কেটে গিয়ে সৌভাগ্যলাভ। |
গোড়া কেটে আগায় জল/পানি দেওয়া১ | দোষ শুধরানোর চেষ্টা। |
গোড়া কেটে আগায় জল/পানি দেওয়া২ | কারো সর্বনাশ করে সামান্য উপকার করতে যাওয়া। |
গোড়ায় গলদ | শুরুতেই ভুল; বিসমিল্লায় গলদ। |
গোদা পায়ে আলতা | বিসদৃশ সাজ। |
গোদা পায়ে লাথি১ | অমূলক ভয়। |
গোদা পায়ে লাথি২ | খেলে বরঞ্চ আরাম লাগে। |
গোদা বাড়ি, ছাদন দড়ি এখন তুমি কার, যখন যার কাছে থাকি তখন আমি তার | পরের চাটুকারি করে যে জীবিকা নির্বাহ করে তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তুলনীয়- ইন্দ্রের শচী। |
গোদের ওপর বিষফোঁড়া | বিপদের ওপর বিপদ। |
গোনা গরু বাঘে নেয় না | সুরক্ষিত বিষয় নষ্ট হয় না; সমতুল্য- 'সাবধানের মার নেই'। |
গোপন কথা গোপন থাকে না | গোপন কথা পাঁচকান হয়ে গোপন থাকে না; সাবধানে কথা বলার জন্য চেতাবনি; তুলনীয়- 'ষটকর্ণে মন্ত্রভেদ'। |
গোপনকথা তোমার গোলাম; ফাঁস করলে তুমি গোলাম | গোপন কথা ফাঁস করলেই সমূহ বিপদ। |
গোবর গ্ণেশ | স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন লোক |
গোবরে পদ্মফুল | নির্গুণের ঘরে গুণী সন্তান; তুলনীয়- 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ'। |
গোবর দিয়ে ঘাস এলানো | কথায় না বলে কাজে অনিষ্ট করা (গোবর ছিটানো ঘাস খায় না) |
গোবরে পোকার পদ্মমধু খেতে সাধ | নীচের উচ্চাভিলাষ। |
গোভাগ্য নেই এঁটুলি ভাগ্য আছে | গোয়ালে গরু বাঁচে না; শুধু এঁটুলি পোকায় ভর্তি; সৌভাগ্য নেই শুধু দুর্ভাগ্য আছে। |
গো-মড়কে মুচির পার্বণ | একের ক্ষতিতে অন্যের লাভ; সমতুল্য- 'কারো সর্বনাশ, কারো পৌষমাস'; পাঠান্তর- গো-মড়কে শকুনের ভোজ। |
গোয়ায় নাই ছাল চামড়া খোদার নামে দেয় সাত দামড়া | সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে লোক দেখানো পর্যায়ের কোরবানি দেওয়া; সমতুল্য- 'গরিবের ঠাকুরব্যাধি'। |
গোল গর্তে চৌকো পেরেক | এমন অবস্থায় পতন যা ব্যক্তির প্রকৃতি বা যোগ্যতানুসারী নয়। |
গোলাপ/পদ্ম তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয় | অনায়াসে কিছু পাওয়া যায় না; অবিমিশ্র সুখ হয় না; কিছু পেতে গেলে কিছু ঝামেলা সইতে হয়; সমতুল্য-'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়; তুলনীয়-'ন সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'; 'সাধনা না করলে সিদ্ধি নাই' ইত্যাদি। |
গোলাপে আছে কণ্টক, চাঁদে আছে কলঙ্ক | দোষগুণ মিলিয়ে মানুষ; কোন কিছুই অবিমিশ্র হয় না। |
গোলাপের জাহির নেই | গুণের প্রচার লাগে না। |
গোলেমালে চণ্ডীপাঠ১ | অব্যবস্থার সুযোগে কাজে ফাঁকি দেওয়া; পাঠান্তর- 'গোলে হরিবোল দেওয়া'। |
গোলেমালে চণ্ডীপাঠ১ | অপরের যোগসাজশে গোলমাল পাকিয়ে কোনপ্রকারে কাজ সারা; |
গৌর হতে বাকি অনেকদিন | পূণ্যাত্মা হওয়া সহজ নয়। |
গ্রহণ হলে সবাই দেখে | পরের বিপদ সবাই উপভোগ করে। |
গ্রহণের চাঁদ | সকলের লক্ষ্যের বিষয়। |
গ্রাম নেই তার আবার সীমানা | নেই-বস্তুর খোঁজের অর্থ হয় না; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'নাস্তি গ্রাম্যঃ কুত সীমাঃ?' |
গ্রাম বড় তার মাঝের পাড়া | অন্যায্য দাবী; ছোটগ্রামে মাত্র কয়েকঘর পরিবারের বাস; সেখানে একাধিক পল্লী হতে পারে না। |
গ্রামের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া | নগণ্যের বাড়াবাড়ি, আদিখ্যেতা; অতি ক্ষুদ্রবস্তুর ভাগ হয় না। |
ঘ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঘটকালি করতে গিয়ে বিয়ে করে আসা১ | পরের কাজ করতে গিয়ে নিজের কাজ করা। |
ঘটকালি করতে গিয়ে বিয়ে করে আসা২ | সুকাজ করতে গিয়ে কুকাজ করা। |
ঘট গড়তে পারে না, মেটের/জালার বায়না নেয়১ | ক্ষমতার বাইরে প্রত্যাশা করা। |
ঘট গড়তে পারে না, মেটের/জালার বায়না নেয়২ | ক্ষুদ্রের বৃহৎ কাজ করতে যাওয়া বিড়ম্বনামাত্র। |
ঘটি কেনা গঙ্গাস্নান | দুই কাজ একসঙ্গে সারা; সমতুল্য- 'একঢিলে দুইপাখি মারা'; 'রথ দেখা কলা বেচা'। |
ঘটি ডোবে না, নামে তালপুকুর | ক্ষুদ্রব্যক্তির বড় নামগ্রহণ; একসময়ের বড়লোকের এখন চরম আর্থিক অনটন; তুলনীয়- 'নামের চোটে গগন ফাটে'। |
ঘটির তলায় দিয়ে আঠা যোগেযাগে কাল কাটা | অভাবের সংসারে কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটানো। |
ঘটিরাম ডেপুটি | অযোগ্য রাজকর্মচারী; (উৎসকাহিনী- দীনবন্ধু মিত্র রচিত 'সধবার একদশী' নামক প্রহসনমূলক নাটকের মুখ্যচরিত্র কেনারাম ঘোষ মফস্বলের ডেপুটি মেজিস্ট্রেট; একদিন তাঁর আদালতে ঘটিরাম নামে এক ফরিয়াদির ডাক পড়ে; কেউ সাড়া না দিকে তিনি মামলা খারিজ করে দেন; পরে মুচিরাম নামক একব্যক্তি হাজির হয়ে নানা কায়দায় প্রমাণ করে ঘটিরাম ও মুচিরম একই ব্যক্তি; তার বক্তব্যে খুশি হয়ে বুদ্ধিতে খাটো কেনেরাম মামলাটি গ্রহণ করেন; তখন থেকে তার নাম হয় 'ঘটিরাম ডেপুটি' যার মর্মার্থ- অযোগ্য হাকিম।) |
ঘটে বুদ্ধি নাই | আহাম্মক; বুদ্ধিহীন। |
ঘড়িক্কে ঘোড়া ছোটা১ | মুহূর্তের মধ্যে বিপুল পরিবর্তন হতে পারে। |
ঘড়িক্কে ঘোড়া ছোটা২ | মুহূর্তের মধ্যে মত পরিবর্তন হতে পারে। |
ঘনাম্বুনা রাজপথে হি পিচ্ছিলে ক্বচিদ্ বুধৈরপ্যপথেন গম্যতে১ | বৃষ্টির জলে রাজপথ পিচ্ছিল হলে বিজ্ঞলোকও কখনো কখনো অপথে গমন করেন। |
ঘনাম্বুনা রাজপথে হি পিচ্ছিলে ক্বচিদ্ বুধৈরপ্যপথেন গম্যতে২ | পথ সহজসরল না হলোে বুদ্ধিমানও বাঁকাপথ ধরেন। |
ঘন্টা বাজিয়ে দুর্গোৎসব, ইতু পূজায় ঢাক | কাজের অনুরূপ ব্যবস্থা না করে বিপরীত ব্যবস্থাগ্রহণ। |
ঘনদুধের ফোঁটা, বড়মাছের কাঁটা | ভাল জিনিসের অল্পও ভালো। |
ঘরও ঢোকে, পাও কাঁপে | লোভও সম্বরণ করতে পারে না আবার ভয়ও পায়। |
ঘরকন্না করতে গেলে ঘটিবাটিতে ঝগড়া/ঠোকাঠুকি হয় | নানাবিধ চরিত্রের জন্য সংসারে মনোমালিন্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। |
ঘরকুনোর বিদ্যা হয় না | কিছু জানতে গেলে বাইরে বেরুতে হয়। |
ঘরকা ভেদী লংকা ঢায়ে | ঘরের শত্রু অনেক দুর পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে; বাংলা পাঠান্তর- 'ঘরভেদী/ ঘরের শত্রু বিভীষণ'। |
ঘরকা/কী মুরগী দাল বরাবর | ধরের মুরগী ডালের সমান; মুল্যবান বস্তু সহজলভ্য হলোে তেমন আদর হয় না বা গুরুত্ব পায় না; তুলনীয়- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না'। |
ঘরচোরকে পেরে ওঠা দায় | নিজের লোক অনিষ্টকারী হলে সেই অনিষ্ট রোখা কঠিন। |
ঘরচোরের পার নেই | ঘরের শত্রুর বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত। |
ঘর জামাইয়ের পোড়া মুখ, মরা-বাঁচা সমান সুখ | ঘর জামাই হয়ে থাকা কাঙ্খিত নয়; ঘর জামাইকে সকলে হীনচোখে দেখে। |
ঘর জ্বালানে/নো পর ভুলানে/ভুলানো | আত্মীয়ের কাছে পীড়াদায়ক, কিন্তু পরের কাছে প্রিয় এমন স্ত্রীলোকের প্রতি ইঙ্গিত। |
ঘরণীীর কাজ কখনও শেষ হয় না | সংসারের টুকিটাকি কাজ লেগেই থাকে; কাজের অন্ত নেই। |
ঘর থাকতে বাবুই ভেজা | মুর্খামি; সুযোগ থাকতে সুযোগ না নেওয়া; বাবুইপাখি এমন সুন্দর বাড়ী বানায যাতে ভিতরে বৃষ্টির জল না ঢোকে; তবুও বাবুই পাখি বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে এসে বৃষ্টিতে ভেজে; তার থেকে মুর্খামি; স্বচ্ছদৃষ্টিভঙ্গির অভাবে অপব্যাখ্যা; আসলে বাবুই কেন, সব পাখিরাই বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে আসে পরিষ্কার জলে স্নান করার জন্য; তাতে মূর্খতা নেই, বিজ্ঞতা আছেে। |
ঘরদোর নেইকো যার, আগুনে ভয় কি তার | অভাগার কিছুতে ভয় পাওয়ার নেই; আসলে অভাগার হারাবার কিছু নেই। |
ঘর নেই দোর বাঁধে, বৌ নেই ছেলের জন্য কাঁদে | নিস্ফল কার্যকলাপ। |
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় | কোন পূর্বঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তব্যক্তি অনুরূপ ঘটনার সূচনা দেখলে বিপদের সম্ভাবনায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়; কোন কাজে একবার যে ঠকেছে সে ঐ কাজ দ্বিতীয়বার করে না; সমতুল্য- 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; দগ্ধশিশু আগুন দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলায় দুবার যায় না'; 'যার ছেলে কুমীরে খায় সে ঢেঁকি দেখলে ডরায়' ইত্যাদি। |
ঘর পোড়ার কাঠ | যেখানে সবই যাচ্ছে সেখানে যা আসে তাই লাভজনক। |
ঘর ফাঁদতে দড়ি ঘর বাঁধতে কড়ি | কাজে নামার আগে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগাড় থাকা প্রয়োজন। |
ঘর বাঁধে ছায় না, ধার দেয় চায় না | দুইই চুড়ান্ত মুর্খামি; নির্বোধেরক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
ঘরভেদী/শত্রু/সন্ধানী বিভীষণ | গৃহশত্রুতার কারণে সংসার ভাঙে; ঘরে শত্রু থাকলে বিনাশ অনিবার্য; পাঠান্তর- 'ঘরভেদে/সন্ধানে রাবণ নষ্ট'; (বিভীষণ দ্রষ্টব্য) |
ঘরমুখো বাঙালি, রণমুখো সেপাই | যার যা স্বভাব; প্রবাসী বাঙালী সবসময় ঘরে ফিরতে চায়; যুদ্ধের সময় সেপাইকে ঘরে আটকে রাখা যায় না (বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক) |
ঘরামির ঘর ছেঁদা | পরের কাজ করে বেড়ায়, নিজের কাজে নজর নেই; নিজের কাজে অমনযোগিতা; পাঠান্তর- 'ঘরামির ঘরে জল পড়'; 'ঘরামির মটকা আদুল'। |
ঘরে আওয়ে অন্ঘেরী বাত কহে বনায়, জানিও পুরৌ বৈরী | অচেনালোক ঘরে এসে চাটুকারী করলে জানবে সে পুরোমাত্রায় শত্রু। |
ঘরে চাল নেই ভাতে ভাত রাঁধো | অসম্ভববস্তুর প্রত্যাশা; বিপরীত বুদ্ধি; সমতুল্য- 'এঁড়ে গরু টেনে দো'; 'নাই ভাত নুন দিয়ে খাবো'। |
ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন | ঘরে অন্নের সংস্থান নেই, অভাবের জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছে অথচ বাইতে লোক দেখানো বড়লোকি ভাব দেখাচ্ছে এমন অবস্থা; বাইরে বাবুগিরি; বাড়িতে চরম দারিদ্র্য; প্রকৃত অবস্থা গোপন করে আড়ম্বর প্রদর্শন; পাঠান্তর- 'ঘরেতে অষ্টরম্ভা, বাইরে কোঁচা লম্বা'; 'ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি'; 'ঘরে নেই ভাত কোঁচা তিনহাত';'ঘরে নেই ঘটিবাটি কোমরে মেলা চাবিকাঠ'। |
ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি১ | ঘরে দেখার কেউ নেই তাই নির্ভাবনায় বাইরে আনন্দ করে বেড়ায়। |
ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি২ | 'ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন' এর অনুরূপ। |
ঘরে নেই ভাজাভুজা, নিত্য করেন গোঁসাই পূজা | ঘরে অন্ন নেই, তবু নিত্যপূজার বিরাম নেই; ভগবানে ভয়ে ভীত দুর্বলচিত্তের লোক। |
ঘরে নেই যা, বাছা মাগে তা। | অভাগী মায়ের মনঃকষ্ট। |
ঘরে বসে কেল্লামারা | ঘরে বসে সারা পাড়ার খবর রাখা; সমতুল্য- 'পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর নেয়'। |
ঘরে বসে পুছে বাত তার ঘরে হা ভাত- খনা | অলসের অন্নের সংস্থান হয় না। |
ঘরে বসে কেল্লা মারা | ঘরে বসে সারা পাড়ার খবর রাখা; তুলনীয়- 'পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর'। |
ঘরে বসে রাজা উজির মারা | লম্বাচওড়া কথা বলে অকর্মার নিজেকে জাহির করা। |
ঘরে ভাত নেই, দ্বারে বাহারী পর্দা | দৈন্যাবস্থা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা; সমতুল্য- 'ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন';'ঘরে শাক সিজানা বাইরে বাবুয়ানা'। |
ঘরে ভাত না থাকলে শালগ্রামের সোনা বেচে খায় | বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে লেজেগোবরে; সমতুল্য- 'অভাবে স্বভাব নষ্ট'। |
ঘরের ইঁদুর বাঁশ কাটলে ধরে রাখে কে? | নিজের লোক ক্ষতি করলে তা নিবারণ করা কঠিন; পাঠান্তর- 'ঘরের ইঁদুর বাস (কাপড়) কাটলে ধরে রাখে কে?' |
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় | নিজের টাকায় পরের উপকার করে; বিনাপারিশ্রমিকে পরের জন্য খেটে মরে; তুলনীয়- 'ঘরের মা ভাত পায় না, পরের জন্য মাথাব্যথা'। |
ঘরের দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয় | খোলা দরজা সজ্জনকেও প্রলুব্ধ করে; তুলনীয়- 'আলগা পেলে সন্ন্যাসীও মাতে'। |
ঘরের ঢেঁকির কুমির হওয়া | লুকিয়ে শত্রুতা করা |
ঘরের মধ্যে ঘর, সবাই মাতব্বর/হাওলাদার | সংসারের সবাই নিজেকে মাতব্বর মনে করে। |
ঘরের মা ভাত পায় না, পরের জন্য মাথাব্যথা | ঘর ছেড়ে পরকে নিয়ে পড়া; তুলনীয়- 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়'। |
ঘরের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা | ইচ্ছা করে নিজের অমঙ্গল ডেকে আনা। |
ঘরের শত্রু বরযাত্র | মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত বরযাত্রদের অত্যাচার দেখে প্রবাদটির সৃষ্টি হয় (বর্তমানের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক) |
ঘরের ষাঁড়ে পেট ফাঁড়ে | নিজের লোক অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'ঘরের শত্রু বিভীষণ'। |
ঘর্ষণবিনা রত্ন উজ্বল হয় হয় না, কষ্টবিনা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না। কনফুসিয়াস | অনায়াসে কিছু লব্ধ হয় না। |
ঘষতে ঘষতে পাথরও ক্ষয় হয় | পরিশ্রম করলে সিদ্ধি আসে; নিয়ত অভ্যাসে স্থূলবুদ্ধিও সূক্ষ্মবুদ্ধিতে পরিণত হয়। |
ঘষে মেজে রূপ ধরে বেঁধে সোহাগ | স্বাভাবিক সৌন্দর্য না থাকলে যতই সাজো-না-কেন রূপ খুলবে না; আন্তরিক অনুরাগ না থাকলে জোর করে প্রণয় হয় না। |
ঘাট পার হলে খেওয়ানি শালা | অকৃতজ্ঞ; উপকার নিয়ে উপকারীর কথা ভুলে যায়; সমতুল্য- 'কাজের সময় কাজি কজ ফুরালেই পাজি'; খাল পেরুলে কুমিরকে কলা'। |
ঘাড়ে ভূত চেপেছে | দুষ্টবুদ্ধি মাথায় চাড়া দিয়েছে। |
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া | বড় কোনো বিপদ থেকে নিস্কৃতিলাভ। |
ঘা শুকালেও চিহ্ন থাকে | মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতি চিরদিন মনে জাগরুক থাকে। |
ঘায়েই মাছি বসে | দুস্কর্ম লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। |
ঘি আদুড়/আদুল ঘোল ঢাকা | মুল্যবানবস্তুর দিকে নজর নেই; সামান্যবস্তুর দিকে কড়া নজর; সমতুল্য- 'কঞ্চি খবরদার'। |
ঘি ঢাললেও/মালিশ করলেও কুকুরের লেজ সোজা হয় না | স্বাভাবিক চরিত্রবৈশিষ্ট্য বদলায় না; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মলে'। |
ঘি দিয়ে ভাজো নিমের পাতা, তবু যায় না জাতের জাতা | জাতবৈশিষ্ট্য কখনো যায় না; মন্দ কখনো ভাল হয় না; তুলনীয়-'স্বভাব যায় না মলে';'ঘি মালিশ করলেও কুকুরের লেজ সোজা হয় না'। |
ঘি-ঘাত খেয়ে মুখ পুড়লো | মুখে ছ্যাঁকা লাগায় গরম ঘিমাখা ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলো; কেউ সুখের আশ্রয় ছেড়ে দিলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
ঘুঁটেকুড়ুনির ছেলের নাম চন্দনবিলাস/পদ্মপলাশ | আত্মপ্রচারের হাস্যকর প্রয়াস; যা নয় তাই ভেবে মনের সান্ত্বনা; যা নয় তাই হওয়ার চেষ্টা; তুলনীয়- 'অন্ধের নাম নয়নসুখ'; 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন; কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'গোঙ্গাছেলের নাম তর্কবাগিশ' ইত্যাদি। |
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে; তোমার একদিন আছে শেষে | পরের দুঃখে আনন্দ করে কিন্তু ভুলে যায় সে বিপদ নিজেরও হতে পারে। |
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি১ | ঘুঘুর আনন্দ-বিচরণই দেখছ, তার ফাঁদে পড়ার যন্ত্রণা দেখনি। |
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি২ | আরম্ভের সুখটাই দেখেছো, শেষের দুঃখটা দেখনি; সুখের মুখটা দেখেছো, দুঃখের পরিচয় পাও নি। |
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৩ | লোভে পড়ে এগিয়েছো, ফাঁদে যে পড়তে পারো ভাবো নি। |
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৪ | কাউকে বিপন্ন করার ভয় দেখান। |
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৫ | চতুরব্যক্তির প্রতি শাস্তিপ্রাপ্তির ইঙ্গিত। |
ঘুম নাই যোগীর আর রোগীর | যোগী যোগসাধনা করে আর রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করে তাই উভয়ে নিদ্রাশূন্য। |
ঘুমন্ত কুকুরকে জাগিয়ো না | উটকো ঝামেলায় জড়িয়ো না; স্বেচ্ছায় বিপদকে ডেকো না; পাঠান্তর- 'ঘুমন্ত কুকুরকে ঘুমাতে দাও'; 'ঘুমন্ত বাঘকে খুঁচিও না'। |
ঘুমন্ত বাঘ শিকার ধরে না | শুয়ে থাকলে ভাগ্যও শুয়ে থাকে; অলসের সৌভাগ্য হয় না; পাঠান্তর- 'ঘুমন্ত বিড়াল ইঁদুর ধরে না'; 'ঘুমন্ত শিয়ালের হাঁস বা মুরগি জোটে না'; 'ঘুমন্ত সিংহের মুখে হরিণ ঢোকে না'। |
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে -সেক্সপিয়ার | শিশুবয়সে যে চরিত্র আমরা গঠন করি প্রাপ্তবয়সে সেই অনুসারে আমরা পরিচালিত হই। |
ঘুষ পেলে আমলা/পুলিশ তুষ্ট | সরকারি কর্মচারীর সহজাত প্রবৃত্তি। |
ঘৃণায় ঘৃণা বাড়ে | ঘৃণা তিক্ততা বাড়ায়, মনে মালিন্য সৃষ্টি করে। |
ঘৃতকুম্ভ সমা নারী তপ্তাঙ্গারসমঃ পুমান্ | নারী ঘিপূর্ণঘটের সমান; পুরুষ জ্বলন্ত আগুনের সমান। |
ঘেউ-ঘেউ করা কুকুর কামড়ায় না বা কদাচিৎ কামড়ায় | যে মারব বলে লাফায় সে কদাচিৎ মারে; পাঠান্তর- 'ঘেউ-ঘেউ করা কুকুর কদাচিৎ কামড়ায়'। |
ঘেয়ো কাঁঠালের মুচি খদ্দের | উভয়ে সমান মন্দ। |
ঘোড়া চিনি কানে, ছাগল চিনি বিয়ানে; যোগী চিনি ধ্যানে আর নাপতের পুত রাজা হইছেন হলে তার চিনি দানে | কান দেখে ঘোড়া চেনা যায়; দুধ দেওয়া দেখে ছাগল চেনা যায়;
যোগী চেনা যায় ধ্যানে আর নাপিতে ছেলে রাজা হলে তাকে চেনা যায় তার দানের বহর দেখে। |
ঘোড়া চিনি কানে, দাতা চিনি দানে; মানুষ চিনি হালে, মণি চিনি জলে | কান দেখে ঘোড়া গুণাগুণ জানা যায়; দানের পরিমাণ দেখে দাতার মনের প্রসারতা জানা যায়; অবস্থা দেখে মানুষ বিচার করা যায় এবং জলের স্বচ্ছতা সাথে তুলনা করে হীরা ইত্যাদির গুণাগুণ জানা যায়। |
ঘোড়া চিনি কানে, রাজা চিনি দানে; নারী চিনি হাসে, পুরুষ চিনি কাশে | কান দেখে যুদ্ধের ঘোড়া চেনা যায়; দানের পরিমাণ দেখে রাজার উদারতা জানা যায়; হাসি শুনে নারীর প্রকৃতি জানা যায় এবং বাচন ভঙ্গীতে পুরুষ চেনা যায়; সম্পর্কীত প্রবাদসমূহ- 'কথাবার্তায় মানুষ চেনা যায়'; 'গান শুনে পাখি চেনা যায়'; 'ফল দেখে বৃক্ষ চেনা যায়'। |
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া | উদ্যোক্তাকে এড়িয়ে গিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করা; উপরওয়ালাকে ডিঙিয়ে নিজের কাজ হাসিল করা। |
ঘোড়া থাকলে চাবুকের ভাবনা | বেশীটা হয়ে গেলে নিশিন্তি, অল্পের জন্য ভাবনা নেই; বড় কাজটা হয়ে গেলে ছোট কাজটার জন্য চিন্তা হয় না; পাঠান্তর- 'ঘোড়া হলে চাবুক আটকায় না'। |
ঘোড়া দেখে খোঁড়া | বিলাসপ্রিয় অলসব্যক্তি; আরাম পাওয়ার সুযোগ পেলেই নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা। |
ঘোড়া ভেড়ার একদর | ভালোমন্দের বিচার নেই; মুড়ি মিছরির পার্থক্য নেই; শ্রেষ্ঠত্বের দাম নেই; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অন্ধেরা নগরী চৌপাট রাজা, টাকা সের ভাজি টাকা সের খাজা'। |
ঘোড়ার আগে গাড়ী জুতা | বিপরীতবুদ্ধির কাজ; সমতুল্য- 'জল খেয়ে জলের/জাতের বিচার'। |
ঘোড়ার আস্তাবলে ভেড়া ঢোকা | বিপদাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা। |
ঘোড়ার ঘাস কাটা | অকাজ করা; বৃথা কাজে সময় নষ্ট করা; তুলনীয়-ঢ়'মরাগরুর ঘাস কাটা'। |
ঘোড়ার ডিম | অসম্ভব ব্যাপার; ধোঁকাবাজি; যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; আঁটকুড়ের ব্যাটা; আকাশকুসুম; এঁড়ে গরুর দুধ; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি। |
ঘোড়ার পেট, গাধার পিঠ, খালি থাকে কদাচিৎ | যার যা কাজ সে তাই করে- ঘোড়া সবসময় খায় আর গাধা সবসময় খাটে। |
ঘোড়ার মত ক্ষুধার্ত | ঘোড়ার পেট কখনো খালি থাকে না। |
ঘোমটার নীচে খেমটা নাচ১ | আড়ালে কুৎসিত আচরণ। |
ঘোমটার নীচে খেমটা নাচ২ | সাধুত্বের আড়ালে ভণ্ডামি; বাইরে সাধু, ভিতরে ভণ্ড। |
ঘোর কলিকাল | পাপাচারের বাড়াবাড়ি হলে প্রবাদটি বলা হয়। |
ঘোল, কুল, কলা- তিনে নাশে গলা | গলার পক্ষে তিনটি খাদ্য অনিষ্টকর। |
ঘোল খাবে রামা কড়ি দেবে শ্যামা | একজনের সুখের জন্য অন্যজনের অর্থব্যয়। |
ঘোল চাইতে গিয়ে পিছনে ভাঁড় | কোন বিষয়ে লুকোচাপা করা হলে প্রবাদটি বলা হয়; যা করার তা সামনে করাই ভালো। |
ঘোলা জলে মাছ ধরা | বিশৃঙ্খলার সুযোগে কাজ হাসিল করা; সমতুল্য- 'এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই'। |
ঘোলা জলে মাছ ধরাটা মুখ্য যাদের ধর্ম, তারা পারে না করতে, নেইকো এমন কর্ম। | দুস্কৃতি সব কিছুই করতে পারে। |
চ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
চকচক করলেই সোনা হয় না | নকল না খাঁটি চেহারা দেখে বোঝা যায় না; বাহ্যিকরূপ বিষয়বস্তুর গুণ প্রকাশ করে না; বাইরের চাকচিক্য দেখেই সব কিছু বিচার করা চলে না; সমতুল্য- 'আলখাল্লা পরলেই মোল্লা হয় না'; 'তিলক কাটলেই বৈষ্ণব হয় না'; 'পৈতা থাকলেই বামুন হয় না'; 'মন্দির/মসজিদে গেলেই সাধু হয় না' ইত্যাদি; হিন্দি পাঠান্তর- 'হর চমকনেওয়ালী চিজ সোনা নহি হোতী'; পাঠান্তর- 'যা চকচক করে তাই সোনা নয়'। |
চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুঃখানি চ | সুখদুঃখ চক্রাকাঁড়ে পরিবর্তিত হয়; সমতুল্য- 'আজ আমীর/রাজা কাল ফকির'; 'আলোর পর আধার আসে'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; 'মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে' ইত্যাদি। |
চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন | স্বচক্ষে দর্শন করে শ্রুতবিষয়সম্পর্কে সকল সন্দেহ নিরসন করা। |
চক্ষু থাকতে কানা | দেখেও দেখে না; চক্ষু আছে তবে জ্ঞানচক্ষু নেই- অবোধের প্রতি তির্যোক্তি। |
চক্ষুদোষে সব হলদে | বাঁকাচোখ সব মন্দ দেখে। |
চক্ষু বুজলেই অন্ধকার | মরলেই সব ফুরায়; পাঠান্তর- 'চোখ বুজলেই সব অন্ধকার'; সমতুল্য- 'আমি নেই তো জগৎ নেই'; 'আমার পরে মহাপ্লাবন'। |
চক্ষু বুজলেই/মুদলেই প্রলয় বন্ধ হয় না১ | জগৎ চলে তার নিজের নিয়ম, ব্যক্তি জগতের অংশমাত্র; পাঠান্তর- 'অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না'। |
চক্ষু বুজলেই/মুদলেই প্রলয় বন্ধ হয় না২ | ব্যক্তি দেখছে না বলে জগৎ মিথ্যা হয় না। |
চক্ষুলজ্জার মাথা খাওয়া | নির্লজ্জ বেহায়ার মত আচরণ করা |
চক্ষু সবকিছু দেখে শুধু নিজেকে দেখতে পায় না১ | নিজেকে চক্ষু দেখে না মন দেখে। |
চক্ষু সবকিছু দেখে শুধু নিজেকে দেখতে পায় না২ | কেউ নিজের দোষ দেখে না। |
চক্ষে চক্ষে যতক্ষণ প্রাণ পোড়ে ততক্ষণ | না দেখলে নাই; চোখের নেশা; অস্থায়ী মেকি প্রণয়। |
চক্ষে দেখলে শুনতে চায় এমন নির্বোধ আছে কোথায়? | মহাহাম্মকই শুধু প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছেড়ে দিয়ে শোনা কথায় আস্থা রাখে। |
চক্ষে সরষে ফুল দেখা | ভীষণ বিপদে পড়ে দিশেহারা/হতবুদ্ধি হওয়া। |
চটকস্য মাংসং ভাগ শতকং | অত্যল্প সম্পত্তির বেশিসংখ্যক ভাগ হলোে কারো ভাগে কিছু পড়ে না; সমতুল্য- 'আড়াই কড়ার কাসুন্দি হাজার কাকের গোল'; 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'। |
চড় মারলে চড় খেতে হয় | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য- 'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি। |
চড় মেরে চড় খাওয়া | ইচ্ছা করে বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'ঢিল মেরে ঢিল খাওয়া'। |
চড় মেরে গড় করা | ইচ্ছা করে অপমান করে ক্ষমা প্রার্থনা করা; ইচ্ছা করে লাথি মেরে ক্ষমা চাওয়া। |
চড়াই পাখির প্রাণ অল্পেতেই যান | ক্ষীণজীবী। |
চড়ুকে বাতিক | গাজনের সময় চড়কগাছে পাক খাওয়ার লোভে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা। |
চড়ুকে হাসি | কাষ্ঠহাসি; পিঠফুঁড়ে চড়কগাছে চড়ে যে সন্ন্যাসী পাক খায়, সে যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েও লোকদেখানো হাসি হাসে। |
চণ্ডালোহপি নরঃ পূজ্য যস্যাস্তি বিপুলং ধনম | প্রভুত ধনশালী হলোে হীনব্যক্তিও সমাজে সম্মানিত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অর্থেন সর্বে বশাঃ। |
চণ্ডীচরণ ঘুঁটে কুড়োয় রামা চড়ে ঘোড়া | লেখাপড়া যেমনই হোক-না-কেন কপাল না থাকলে সুখভোগ হয় না; ভাগ্যের কারণেই কেউ বা রাজা কেউ বা ফকির; (উৎসকাহিনী- এক গল্পের চণ্ডীচরণ ও রামচরণ দুই ভাই; বড় চণ্ডীচরণ লেখাপড়ায় কৃতবিদ্য ছিল; ভাগ্য সহায়তা না করায় সে আর্থিক সঙ্কটে ছিল; ছোটভাই রামচরণ লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা; করে খাওয়ার কিছু বিদ্যাই সে জানত না; ভাগ্যক্রমে সে এক বিত্তশালীর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে শ্বশুরের দৌলতে গাড়ীঘোড়া চড়ে বাবুগিরি করার সুযোগ পায়; এই গল্প থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে।) |
চণ্ডীপাঠ ইস্তক/থেকে জুতো সেলাই | সবরকমের কাজ; সকল কাজের কাজী। |
চঞ্চলা নদীর গভীরতা কম | অল্পজ্ঞানী লোকেরা লঘুচরিত্রের হয়। |
চতুরের ফতুর হওয়া | অতিচালাক সর্বশান্ত হয়; সমতুল্য- 'অতিচালাকের গলায় দড়ি'। |
চতুরের সাথে চতুরালি | অসতের সাথে অসততাই হলো সঠিক আচরণ; তুলনীয়- সারল্যং সরলে কুর্যাৎ; সমতুল্য- 'সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি'; 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন'। |
'চ'তে গুরু 'ম'তে শিষ্য | গুরু ও শিষ্য, দুজনেই সমান নেশাসক্ত; গুরু চণ্ডুখোর, শিষ্য মদখোর; সমতুল্য- 'যেমন গুরু তেমনি চেলা'। |
চন্দনগাছ ছেদন করলেও সুগন্ধ ত্যাগ করে না | গুণী অবস্থা বিপর্যয়েও চরিত্রগুণ হারায় না। |
চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না১ | নির্গুণ কখনো গুণী হয় না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'চন্দনগাছের সংস্পর্শে এসে শেওড়াগাছও সুগন্ধ পায়'। |
চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না২ | চরিত্র বা প্রকৃতি কখনো পালটায় না; তুলনীয়- 'কাক কখনো কোকিল/বক হয় না'; 'স্বভাব যায় না মলে'। |
চন্দনগাছের সংস্পর্শে এসে শেওড়াগাছও সুগন্ধ পায় | গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়; বিরুদ্ধ উক্তি-'চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না'। |
চন্দনং ন বনে বনে | ভালোর অল্পি হয়। |
চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকি ধরে বাতি; বাঘ পালালো বিড়াল এলো শিকার করতে হাতি; | অক্ষমের আস্ফালন; যে কাজ ক্ষমতাশালী করতে পারে না সেই কাজ করতে অক্ষম এগিয়ে যায়; মহতের অভাব কোন নগণ্য মেটাতে পারে না; তুলনীয়- হাতীঘোড়া গেল তল মশা/মাছি বলে কত জল'; পাঠান্তর- 'চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকি ধরে বাতি; মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি'। |
চমড়ী যায়ে পর দমড়ী না যায় | মহা কৃপণব্যক্তি |
চরণামৃত চরণামৃত না জানি কি অমৃত, খেয়ে দেখি জল১ | অপরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকে দূর থেকে বিরাট বলে মনে হয়; আসলে সবই অতি সাধারণ। |
চরণামৃত চরণামৃত না জানি কি অমৃত, খেয়ে দেখি জল১ | ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিরাট করে দেখানো লোকগুলি দোষেগুণে ভরা সাধারণলোকের এক অংশমাত্র। |
চরিত্রের গুণে মানুষ সবার চোখে বাসে | আপনগুণে অচেনা মানুষ পরম আত্মীয় হয়। |
চরিত্র সৎলোকের অনেক দোষ ঢেকে দেয়, চরিত্র অসৎলোকের গুণ ঢেকে দেয় | আচরণেই মানুষ চেনা যায়; চরিত্রের কারণেই সম্মানীয়ব্যক্তি সম্মান হারায়, আবার নগণ্যব্যক্তি সম্মানিত হয়। |
চরৈবেতি চরৈবেতি | এগিয়ে চলো, এগিয়ে চলো; এগিয়ে চলাই ধর্ম; এগিয়ে চলাই জীবনের লক্ষণ। |
চর্চায় সিদ্ধিলাভ হয় | অনুশীলনে ফললাভ হয়। |
চলচ্চিত্তং; চলদ্বিত্তং চলজ্জীবনযৌবনম্ | মন, ধন, জীবন যৌবন- সবই এ জগতে অস্থায়ী ও চঞ্চল; |
চলছো যদি বঙ্গে, কপাল যাবে সঙ্গে | যেখানেই যাও না কেন অদৃষ্টও তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাবে। |
চলতে চাইলে দাঁড়াতে শেখো | সবকিছুতেই প্রাক-প্রস্তুতি লাগে। |
চলতে না পারলে উঠোন বাঁকা | কাজ করতে না পারলে অপরের দোষ খোঁজে; অক্ষমের অজুহাত খাড়া; পাঠান্তর- 'নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাচতে নয়া জানে, অঙ্গন টেড়া/টেরা'। |
চলতে পারে না বন্দুক ঘাড়ে | ছোট কাজ কর'তে পারে না বড় কাজের বরাত নেয়। |
চলতে শিখলে পড়তে হয় না | সক্ষমব্যক্তি কখনো ব্যর্থ হয় না। |
চলত্যেকেন পাদেন তিষ্ঠত্যেকেন বুদ্ধিমান্ | বুদ্ধিমান ব্যক্তি একপা চলেন, একপা স্থির থাকেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নাহসমীক্ষ্য পরং স্থানং পূর্বমায়তনং ত্যজেৎ' |
চললে পোয়া, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ? | পারা বা না-পারা- সবই আপেক্ষিক ব্যাপার; অলস না হলে কোন কাজই অসাধ্য নয়; অযথা কালক্ষেপ না করলে সব কাজই সময়ে সম্পন্ন হয়। |
চললেই চল্লিশ বুদ্ধি, না চললে হতবুদ্ধি | শিখতে শিখতেই পরিণত হয়; ভাগ্য ভাল হলে যেকোন কাজ নানা উপায়ে সিদ্ধ হয়; ভাগ্য বিরূপ হলে কোন কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয় না। |
চলার পথ আর বলার মুখ কেউ আটকাতে পারে না | কারো বশ্যতা মানুষ স্বীকার করতে চায় না; তুলনীয়- 'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে কে বাঁচিতে চায়'। |
চশমে বদ তু | তোর মুখ কালা/পোড়া (কুদৃষ্টি এড়ানোর জন্য তুক)। |
চাঁদে আছে কলঙ্ক, গোলাপে কণ্টক | কোন কিছুই বিশুদ্ধ নয; কোন কিছুই অবিমিশ্র সুখের হয় না; জগতে নির্দোষ বলে কিছু হয় না; সমতুল্য- 'মদেরও তলানি আছে'; পাঠান্তর- 'চাঁদেরও কলঙ্ক আছে'। |
চাঁদের কাছে জোনাকি, ঢাকের কাছে টেমটেমি | দুই অসমানে তুলনা হয় না; তুলনীয়- 'কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকিরতলা'; 'কোথায় ভোজরাজা আর কোথায় গঙ্গুতেলী'; 'জাহাজের কাছে জেলে-ডিঙি' ইত্যাদি। |
চাঁদের সভার মাঝে তারা বর্ষে বারি মুষলধারা- খনা | চাঁদের সভার মধ্যে তারা দেখা গেলে মুষলধারায় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। |
চাইলেন জিরা পাইলেন হীরা | অপ্রত্যাশিতভাবে মূল্যবান বস্তুপ্রাপ্তি। |
চাকরি মেঘের ছায়া মিথ্যা কর মায়া | এই আছে এই নাই এমন বিষয়ের উপর নির্ভর করতে নেই; তুলনীয়- 'তালপাতার ছায়া মিথ্যা কর মায়া'; 'শঠের মায়া তালের ছায়া'। |
চাচা আপন চাচী পর, চাচীর মেয়ে বিয়ে কর | মুসলমান সমাজে প্রচলিত প্রবাদ; অর্থ স্পষ্ট। |
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা | আগে নিজের প্রাণ বাঁচাও, পরে অন্যের জন্য ভাবনা; সমতুল্য-'আগে ঘর পরে পর, ঘর সামলে পরকে ধর'; 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম';'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম'; 'কামলা আপনা সামালা' ইত্যাদি। |
চাচা বল কাকা বল কলার জোড়া দশটাকা | যতই আত্মীয়তা করা হোক-না-কেন স্বার্থ কেউ ছাড়ে না; ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে আত্মীয়তার সাযুজ্য নেই। |
চাটাইয়ে/ ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা | অক্ষমের বা গরিবের উচ্চাভিলাষ। |
চাটুকারিতা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক যতক্ষণ না তুমি তা গিলছো | চাটুকারিতায় তৃপ্ত বা বশীভূত হলোে চরিত্রগুণ নষ্ট করে। |
চাদরে যতটা পা ঢাকে ততটা পা মেলো | সীমার মধ্যে থাকো; মাত্রাজ্ঞান হারিয়ো না;তুলনীয়- 'ওজন বুঝে চলন'। |
চাপ পড়লেই বাপ | বেকায়দায় পরলে লোকে বশ্যতা স্বীকার করে; সঙ্কটে পড়ল সবাই বাপ বাপ করে; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'গরজ বড় বালাই'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম', 'ঠেলার নাম বাবাজী'; 'বিপদে পড়ে শ্রীমধুসূদন'; 'সাধে কি আর বাবা বলি গুঁতোর ঠেলায় বাবা বলায়' ইত্যাদি; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বিনা বজ্রপাতে কেউ রামনাম নেয় না'; পাঠান্তর- 'চাপের নাম বাপ'। |
চাপানো বোঝার ভার বেশি মনে হয় | উপর চাপানো কাজ স্বভাবতঃই অপছন্দের হয় এবং তার প্রভাব মনে উপর পড়ে। |
চামচিকে আবার পাখি | বাহ্য আকার বড়র মত হলোেই বড় হওয়া যায় না; বড়র মত হতে হলোে বড়র গুণ থাকা চাই; তুলনীয়-'শুয়োর বড় হলেই হাতী হয় না'। |
চামচিকেতে লাথি মারে | নগণ্যব্যক্তির কটুক্তি। |
চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক | সামান্যের মধ্যেও বিস্তর ফাঁক থাকে; এক ও দুইয়ের মধ্যে অসীম সংখ্যক সংখ্যা আছে; সীমার মধ্যে অসীম লুকিয়ে আছে। |
চায়ের পেয়ালায় তুফান১ | তুচ্ছবিষয় নিয়ে তুলকালামকাণ্ড; সাধারণ বিষয় নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা; |
চায়ের পেয়ালায় তুফান১ | কাজের ক্ষেত্রে কাজ না করে কেবল ঘরের আড্ডায় জোর আলোচনা |
চার দিনকা চাঁদনী ফির আঁধেরি রাত | সুখের দিনগুলি স্বল্পই হয়; চলে গেলেই অন্ধকারের মত কষ্টের দিন শুরু হয়; অনুভূতির ব্যাপার মনে হয় সুখের দিনগুলি যেন তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল; কষ্টের দিনগুলি যেন আর কাটতে চাইছে না। |
চাল না চুলো, ঢেঁকি না কুলো বিধাতা করেছে দোর বুলো বুলো | অন্নের সংস্থান নেই, বাসস্থান নেই, একেবারে নিঃসম্বল; শুধু পরের দরজায় দরজায় ঘুরে পেট ভরানো; পাঠান্তর- 'চাল নেই চুলো নেই, নিত্যানন্দ গোঁসাই'। |
চাল নেই ধান নেই গোলাভরা ইঁদুর | অন্তঃসারশূন্য। |
চাল নাই তবে ভাতে ভাত রাঁধো | যা সম্ভব নয় তাই করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'এঁড়ে গরু না টেনে দো'। |
চাল নেই তার ধুচুনি নাড়া | দৈন্যাবস্থা চাপা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। |
চালাকি করো না ফাঁদে পড়ো না | বেশি চালাক নিজের পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে। |
চালাকিদ্বারা মহৎকার্য হয় না | ফন্দিবাজী সৎপথ নয়। |
চালাকের ঠোঁটে তৎক্ষণাৎ উত্তর সাজানো থাকে | চালাকের মস্তিষ্ক খুব পরিষ্কার হয়; ফলে বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়। |
চালুনি করে ঘোল বিলানো | যা করা সম্ভব নয় তাই করার কথা বলা; প্রচ্ছন্ন ভাষায় চাতুর্যে মিথ্যা কথা বলা; তুলনীয়- 'কাপড়ে তেল ভরে রাখা'; 'জালে সরষে বেঁধে রাখা'। |
চালুনি করে ছুঁচের বিচার | নিজের বড় দোষ নজরে পড়ে না; পরের ছোট দোষে তীক্ষ্ণদৃষ্টি; সমতুল্য- 'আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে'; 'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা'; 'নিজের পাছায় ন মন গু, আমারে বলে তোর খান ধু' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'। |
চালে খড় নেই ঘরে বাতি | মুখ্যকাজ ছেড়ে দিতে গৌণকাজ করে; সমতুল্য- 'এদিক নেই ওদিক আছে'। |
চালের কি দর? না মামার ভাতে আছি | খায় দায় ফূর্তি করে বেড়ায় সংসারে কোথায় কী হচ্ছে তার খবর রাখে না এমন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
চালের বাতায় মাণিক থুয়ে উলুবনে হাতড়ানো | হাতের কাছে জিনিস রেখে চারিদিকে খুঁজে মরা; ০সমতুল্য- 'কাঁধে কুড়াল রেখে বনময় খোঁজা'; 'কপালে চশমা রেখে ঘরময় খোঁজা'। |
চাষা কি জানে মদের স্বাদ | সাধারণলোকে গভীর বিষ্যের মর্ম বুঝতে পারে না। |
চাষার গদ্দী কাস্তের ঠোকর | চাষী কাস্তের খোঁচা মেরে আদর করে; যার যেমন শিক্ষা তার তেমন ব্যবহার। |
চাষী আর চষা মাটি, এই দুইয়ে দেশ খাঁটি (খনা) | চাষী চষা মাটিতে সোনা ফলায়। |
চাষী করে চাষ, ফড়ে খায় ফসল | একের পরিশ্রমের ফদল অন্যে ভগ করে; তুলনীয়- 'জেলের পাছায় টেনা নিকারীর কানে সোনা'; 'যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই'। |
চাষীর গরু অমাবস্যা খোঁজে | অমাবস্যায় হাল চালানো নিষিদ্ধ; অলসের কাজে অনীহা। |
চাষীর চাষ দেখে চাষ করলো গোয়াল; ধানের সঙ্গে খোঁজ নেই রাশিরাশি পোয়াল (খড়) | অব্যবসায়ী ব্যবসায়ের সুফল পায় না; তুলনীয়- 'যার কাজ তার সাজে অন্যের তাতে লাঠি বাজে'। |
চাহিলেন জিরা পাইলেন হীরা | আকাঙ্ক্ষা ছিল সামান্য বস্তুর; পেয়ে গেল মহার্ঘ বস্তু। |
চিঁড়া কাঁচকলার যোগ | এই দুটি দ্রব্য একসাথে ব্যবহার করা হয় না; উভয়ের মধ্যে কোন সদভাব নেই। |
চিঁড়ার বাইশ ফের | একটি সাধারণ বিষয়কে ক্রমশঃ জটিল করে তোলা; প্রথমে দাড়ি পাল্লার দুইদিকে একটি করে চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; দ্বিতীয়ধাপে ডানপাল্লার চিঁড়া বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় দুটি চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; তৃতীয়ধাপে ডানপাল্লার চিঁড়াদুটি বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় চারটি চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; চতুর্থধাপে ডানপাল্লার চারটে চিঁড়া বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় আটটি চিঁড়া রেখে ওজন সমান করা হল; এইভাবে বাইশবার ওজন করলে মোট চিঁড়ার সংখ্যা হবে ৪,১৪,৭০৩টি; এর ওজন হবে ৫০ থেকে ৬০ কেজির মত; এরই নাম চিঁড়ার বাইশ ফের। উল্লেখ্য যে দাবাখেলার চৌষট্টি ঘরের ফেরের সংখ্যা মানুষের কল্পনাকে হার মানায়। |
চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিষেধ ভাল | রোগে ওষুধ না খেয়ে নিরোগ থাকা শ্রেয়; পাঠান্তর- 'প্রতিকার থেকে প্রতিষেধ ভাল'। |
চিৎকারে চাকা তেল পায় | প্রাপ্য আদায়ে সরব হতে হয়; প্রতিবাদ না করলে অন্যায়ের সুরাহা হয় না। |
চিৎপাতের কড়ি উৎপাতে যায় | অসতী নারীর অর্জিত অর্থ অপব্যয়ে নষ্ট হয়। |
চিত্তে বাচি ক্রিয়ায়াং চ সাধুনামেকরূপতা | সাধুরা মনে বাক্যে ও কাজে এক। |
চিনি খেয়ে জলকে টান তেমনি বোনের ভাইকে টান | চিনি খেয়ে যেমন জল খেতে ইচ্ছা করে; তেমনি বোন ভাইকে পছন্দ করে; বিপরীত- 'শসা খেয়ে জলকে টান তেমনি ভাইয়ের বোনকে টান'। |
চিনির পুতুল | চিনির পুতুল যেমন জলে পড়লেই গলে যায় তার লক্ষণায় অল্প পরিশ্রমে কাতর; সমতুল্য- ননীর পুতুল। |
চিনির বলদ | ভারবাহী কিন্তু ফলভোগী নয়। |
চিন্তা করো না যে কেউ তোমায় জানে না, শুধু চেষ্টা কর জানার যোগ্য হতে- কনফুসিয়াস | কর্মে মানুষ বড় হয়, যোগ্য হয়। |
চিন্তা জ্বরো মনুষ্যাণাং | মানুষমাত্রই চিন্তায় আক্রান্ত হয়; দুশ্চিন্তা মানুষের জ্বরস্বরূপ; দুশ্চিন্তায় মানুষকে কুরে কুরে খায়; দুশ্চিন্তায় মানুষ জর্জরিত হয়। |
চিন্তাবিদেরা নাস্তিক হয় | চিন্তাবিদেরা যুক্তিবাদী হয়; যুক্তিবাদীরা অন্ধবিশ্বাস করে না। |
চিন্তায় চিন্তা বাড়ে | চিন্তা করলে দুশ্চিন্তা বাড়ে। |
চিন্তায় পোড়ে মন চিতায় পোড়ে দেহ | দুশ্চিন্তা মনের ওপর প্রভাব ফেলে। |
চিন্তার মায়ের বড় চিন্তা, হাটের লোক শোয় কোথা? | অকারণে দুশ্চিন্তা; চিন্তার মাথামুণ্ড নেই; (উৎসকাহিনী- হাটে প্রচুর লোক দেখে চিন্তার মা চিন্তিত হয়ে পড়ে এরা কোথায় শোয়) |
চিন্তাহীন শিক্ষা পণ্ডশ্রম, শিক্ষাহীন চিন্তা বিপজ্জনক | চিন্তাহীন শিক্ষা ফলপ্রসূ হয় না; অপরপক্ষে অপরিশীলিত চিন্তা ধ্বংসাত্মক হয়। |
চিরদিন কারো সমান নাহি যায়- নজরুল | চিরকাল সমান যায় না; ভাগ্য ওঠানামা করে; সুখ-দুঃখে মিশ্রিত জীবন; সমতুল্য- 'আজ আমীর কাল ফকির'; গাড়িকাপর লা, লাকাপর গাড়ি'; 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'; 'মেঘ দেখে তুই করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে' ইত্যাদি। |
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন ব্যথিতবেদন বুঝিতে কি পারে, কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে'- কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার | সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; একমাত্র সমব্যথী ব্যক্তিই দুঃখীর ব্যথা অনুধাবন করতে পারে; সমতুল্য- 'অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কী?' |
চিরাগের/চেরাগের নীচেই অন্ধকার১ | ভালো ও মন্দের সহাবস্থান; তুলনীয়- 'দেবালয়ে শয়তানের বাস'; পাঠান্তর- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার'। |
চিরাগের/চেরাগের নীচেই অন্ধকার২ | যে লোকটা পরকে উপদেশ দেয় তার নিজের সবটাই ভুলে ভরা। |
চিল চিনে উচু ডাল; মাছ চিনে গভীর জল | নিজের পছন্দ অনুসারে ব্যক্তি তার স্থান নির্বাচন করে। |
চিল পড়লে কুটোটাও নিয়ে ওঠে১ | কর্মঠ লোক বৃথা শ্রম নষ্ট করে না। |
চিল পড়লে কুটোটাও নিয়ে ওঠে২ | শত্রু/লোভী কিছু-না-কিছু ক্ষতি না করে নিবৃত্ত হয় না। |
চিলকে বিল দেখানো | ঘরে বিপদ ডেকে আনা; নিজের ক্ষতি করা; সমতুল্য- 'খাল কেটে কুমীর আনা'; 'চুলকে ঘা করা'। |
চিলে কান নিয়ে গেল | পরের কথায় বিশ্বাস করা; পাঠান্তর- 'কান নিয়ে গেল চিলে'। |
চিল্লানে কুকুর কদাচিৎ কামড়ায় | ধীর স্থির না হলে কাজে সাফল্য আসে না; যে বকে সে কাজ করে না; সমতুল্য- 'আওয়াজওয়ালা বিড়াল ইঁদুর ধরে না'; পাঠান্তর- 'চিল্লানে কুকুর কামড়ায় না'। |
চুরিবিদ্যা বড়/মহাবিদ্যা যদি না পড়ে/পড়ো ধরা | ফাঁকিতে প্রচুর লাভ হয়; তবে ধরা পড়লে পরিণাম দুঃখজনক হতে পারে স্মরণ করিয়ে দিয়ে চুরি না করার উপদেশবাক্য। |
চুল থাকে তো বাঁধি, গুণ থাকে তো কাঁদি | চুল থাকলে বাঁধার প্রশ্ন আসে; গুণীলোকের প্রয়াণে আমরা চোখের জল ফেলি। |
চুলকে ঘা করা | ইচ্ছা করে নিজের বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'খাল কেটে কুমীর আনা'; 'চিলকে বিল দেখানো'। |
চুলোমুখো দেবতার ঘুঁটের ছাই নৈবদ্য | ভালোর জন্য ভালো মন্দের জন্য মন্দ বরাদ্দ হয়। |
চুলোর উপর ক্ষীর, মনে নহে স্থির | সামনে লোভের বস্তু থাকলে মন স্থির থাকে না। |
চূড়ার উপর ময়ূরপাখা | সৌন্দর্যের উপর সৌন্দর্য; অতিবাহার; মণিকাঞ্চন যোগ। |
চূন খেয়ে গাল পুড়েছে, দই দেখলে ভয় করে | পূর্ব-বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার আশঙ্কা থেকে ভীতি; ভয় থেকে ভ্রান্তি; অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শিক্ষা দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলা একবার' ইত্যাদি। |
চেতনে অবচেতন১ | জেনেও না জানার ভান। |
চেতনে অবচেতন২ | আবেগে অন্ধ। |
চেনা বামুনের পৈতে লাগে না | অতিপরিচিত ব্যক্তির অন্য পরিচয় লাগে না; বাহ্যপ্রমাণ দেখিয়ে পরিচিতকে নিজের পরিচয় দিতে হয় না; (উৎস- বাংলায় ব্রাহ্মণজাতি ছাড়াও বৈদ্য ও শুদ্রজাতিও গলায় পৈতা ধারণ করে; সেইকারণে অপরিচিত ব্রাহ্মণকে প্রমাণস্বরূপ পৈতা বার করে দেখাতে হয়।) |
চেরাগের নীচেই অন্ধকার | যে উপদেশ দেয় সে নিজেই নিয়ম মানে না। |
চেলা-চামুণ্ডা১ | দুষ্টস্বভাবযুক্ত শিষ্য ও অনুগামীরা |
চেলা-চামুণ্ডা২ | দেবী চামুণ্ডা ও তাঁর সঙ্গিনীরা; (উৎসকাহিনী- চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গা এক ভয়ানক মুর্তি ধারণ করেন; চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ডচ্ছে করে তিনি চামুণ্ডা নামে পরিচিত হন; তাঁর সঙিনীরা ছিল- ডাকিনী, প্রেতিনী, যোগিনী, শাঁখিনী ইত্যাদি।) |
চেষ্টাবিনা কেষ্টা নেই | বিনাপরিশ্রমে কিছুই পাওয়া যায় না। |
চেষ্টার অসাধ্য কোন কাজ নেই। | চেষ্টা বৃথা যায় না। |
চেষ্টার শেষ নেই | একবার চেষ্টাতে সাফল্য নাও আসতে পারে; কথায় বলে- একবারে না পারিলে দেেখ শতবার'; সুতরাং মাঝপথে চেষ্টা ছাড়া নেই। |
চেহারা দেখে মানুষ চেনা যায় না | কোনো জিনিসকে তার চেহারা দিয়ে বিচার করো না; তূলনীয়- 'যা চকচক করে তা সোনা নয়'; 'মানুষের মুখে মুখোশ আঁটা'; বিরুদ্ধ উক্তি- মুখ দেখলে সব জানা যায়; পাঠান্তর-'চেহারা প্রতারণামূলক'। |
চৈতের কুয়ায় (কুয়াশা) আমের ক্ষয়- খনা | চৈত্রমাসে কুয়াশ পড়লে আমের ফলন ভাল হয় না। |
চৈতের কুয়ো (কুয়াশা) ভাদ্রে বান, নরের মুণ্ড গড়াগড়ি যান- খনা | চৈত্রমাসে কুয়াশ পড়লে এবং ভাদ্রমাসে বন্যা হলে দেশে মড়ক লাগে। |
চৈতের গীত বৈশাখে গায় তারে পুছে কোন শালায়/হালায় | সময়ের কাজ সময়ে না করলে কোন ফললাভ হয় না। |
চৈত্রে কাঁপে থর থর, বৈশাখে ঝড়পাথর, জৈষ্ঠ্যেতে তারা ফোটে তবেই জানবে বর্ষা বটে- খনা | যে বছর চৈত্রমাসে শীত থাকে, বৈশাখ মাসে শিলাবৃষ্টি হয় এবং জৈষ্ঠ্যমাসে আকাশ পরিষ্কার থাকে সে বছর প্রবল বর্ষণ হয়। |
চোখ বুজলেই সব অন্ধকার | আমি মরলেই সব শেষ; আমি নেই তো জগৎ নেই; স্বার্থপরের মত চিন্তাধারা; তুলনীয়- 'আমার পরে মহাপ্লাবন'। |
চোখ থাকতে কানা | দেখেও দেখে না। |
চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না১ | জগৎ তার নিজের নিয়মে চলে; এককব্যক্তি তার এক অত্যল্প অংশমাত্র। |
চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না২ | সব ছেড়েছুড়ে বসে থাকলে বিপদ এড়ানো যায় না। |
চোখ মনের আয়না | চোখের দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থা বোঝা যায়; মনের ভাবনা চোখের মণিতে লেখা থাকে। |
চোখ সব দেখে কেবল নিজেকে দেখে না১ | চোখ সবার দোষ নজর করে শুধু নিজের দোষ নজরে পড়ে না। |
চোখে চোখে যতক্ষণ প্রাণ পোড়ে ততক্ষণ | শুধু চোখের নেশার মেকি প্রণয়; প্রাণের টান নেই; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়'। |
চোখে ঠুলি পরা | অগ্রাহ্য করা; ইচ্ছা করে না দেখা; উদাসীন থাকা। |
চোখে দেখে শুনতে চায়, এমন বোকা আছে কোথায়? | নিজের চোখকেও যে বিশ্বাস করে না পরের কথায় আস্থা রাখে, এমন আহাম্মক |
চোখে ধূলা দেওয়া | এমন কৌশলে ঠাকানো যে ক্ষমতা থাকা সত্বেও ক্ষমতা ব্যবহার করতে অপারগ হয়; অনেকসময় ঠগেরা লোকের চোখে ধূলাবালি ছুঁড়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে পালাতো; চোখ পরিষ্কার করার আগেই ঠগ পগার পার। বর্তমানে ফাঁকি দেওয়া অর্থে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। |
চোখে ভেলকি লাগা | মতিভ্রম হওয়া; মোহাচ্ছন্ন হওয়া। |
চোখে সর্ষে ফুল দেখা | বিপদে পড়ে দিশেহারা হওয়া; সমতুল্য- 'চোখে ধোঁয়া দেখা'। |
চোখের আড়াল হলে মনের/স্মৃতির আড়াল হয় | দেখাসাক্ষাৎ না হলে মনে থাকে না; মৌখিক ভালবাসা; মেকি প্রেম; সমতুল্য- 'মানুষের কুটুম এলে গেলে'; 'নজরোসে দূরে বাহর মন কি'; বিপরীত উক্তি- 'অনুপস্থিতি হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে'। |
চোখের আড়াল তো মনের আড়াল নয় | অন্তরের দেখা চোখের দেখার উপর নির্ভরশীল নয়। |
চোখের জল নারীর বল | নারী চোখের জলে সবকিছু জয় করতে চায়। |
চোখের জলের মত কিছুই দ্রুত শুকায় না | মানুষ দ্রুত শোক ভুলে যায় বা ভু'লতে চায়। |
চোখের দোষে সব হলদে | মন্দলোক সব মন্দ দেখে, ভালো জিনিস খুঁজে পায় না; দুর্যোধনের চোখে সবাই মন্দ ছিী। |
চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত১ | কাউকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাতও সমান হয়। |
চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত২ | প্রতিশোধ নেবার প্রবল ইচ্ছা। |
চোদ্দশাকের মধ্যে ওল পরামাণিক | ভূতচতুর্দশীর দিনে চোদ্দশাক খাওয়ার রীতি আছে; কোথাও কোথাও চোদ্দশাকের মধ্যে ওলপাতা মিশিয়ে দেওয়া হয়; কিছু একজাতীয় বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভিন্ন কোন বিষয়বস্তু মিশিয়ে দিলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
চোর খোঁজে অন্ধকার | সকলেই সুবিধাজনক অবস্থা খোঁজে। |
চোর চায় ছেঁচা বেড়া | নজরদারি না থাকার সুবিধা; অন্যায় কাজের সুযোগ অন্বেষণ; পাঠান্তর- ' চোর চায় ভাঙা তালা'। |
চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়১ | চোরে সাধুতে তফাৎ নেই; চুরি কর'তে অক্ষম সাধু হয়; বিপরীতে সুযোগ পেলে সাধু চুরি করে; সমতুল্য- আলগা পেলে সবাই চোর'। |
চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়২ | নাচারে পরে সাধুসাজা; তুলনীয়- 'নারী কুরূপা হলোে পতিব্রতা হয়'; রোগে পড়লে মানুষের ভক্তিবৃদ্ধি হয়; 'বৃদ্ধা হলোে বেশ্যা তপস্বিনী হয়' ইত্যাদি। |
চোর ছেঁচড় চোপায় দড়, আগে দৌড়ায় ঠাকুর ঘর | ভণ্ডরা মন্দকাজের সাফাই দিতে বড়বড় কথা বলে এবং কথায়কথায় ঈশ্বরের শপথ নেয়। |
চোর ধনী হলে সজ্জন হয় | অর্থকরী সমাজব্যবস্থায় অর্থবল থাকলে সবই হয়; |
চোর চলে গেলে চৌকিদার আসে | বিপদে পড়লে হতবুদ্ধি; বিপদ কাটকেই বুদ্ধি খোলে; সুযোগ হাতছাড়া হলোে মাথায় নানা ফন্দি-ফিকির আসে; সময়ে বুদ্ধির অভাব ঘটলে এই প্রবাদ উক্ত হয়; তুলনীয় 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'; 'রোগী মরলে বৈদ্য আসে'; 'যুদ্ধের পর সিপাই হাজির'। |
চোর ধরতে চোর লাগে | অবৈধ কার্যকলাপ উদঘাটনের জন্য অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করা; কৌশলে কার্যসিদ্ধি; সমতুল্য- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'; পাঠান্তর- 'চোর ধরতে চোরকে নিয়োগ'। |
চোর পর মোর১ | চোরের কাছ থেকে চোরাই মাল চুরি; ঠগকে ঠকানো; বাংলা পাঠান্তর- 'চোরের উপর বাটপাড়ি'। |
চোর পর মোর২ | বেইমানের সাথে বেইমানি করা উচিৎ; সমতুল্য- 'শঠে শাঠ্যাং সমাচরেৎ'। |
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে | চোর চলে গেলে চৌকিদার আসে'-এর অনুরূপ |
চোর ভাল তো বেকুব ভালো না | বুদ্ধিহীন সহ্যের বাইরে; একটু সতর্ক থাকলে চুরি আটকানো যায়, কিন্তু বেকুব কোনদিক থেকে ক্ষতি করবে বোঝা ভার। |
চোর মচায়ে শোর | চোর ধরা পড়লে 'চোর চোর' বলে চিৎকার করে ছুটে পালায়। |
চোর মজে সাতঘর মজায়ে১ | চোর ধরা পড়লে অনেককে মকদ্দমায় ফাঁসায়। |
চোর মজে সাতঘর মজায়ে২ | চোর ধরতে পুলিশ চোরের চেনাজানা একাধিক নির্দোষ লোককে হয়রান করে। |
চোর সাধুতে তফাৎ নেই | জন্মজ কারণে উভয়ে সমান; কেউ চোর বা সাধু হয়ে জন্মায় না; আবার প্রবাদে বলে দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয়; তুলনীয়- 'চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়'। |
চোরকে বলে চুরি কর, গেরস্তকে বলে সজাগ থাকো | যে দুইপক্ষকেই হাতে রাখতে চায়; স্বভাব-কপটচারী; সমতুল্য- 'দুমুখো সাপ'। |
চোরকে ধর্মের কাহিনী শুনানো আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা | অসৎব্যক্তিকে উপদেশ দিলেও সে সৎ হয় না; মন্দকে সদুপদেশ দেওয়া বৃথা; পাঠান্তর- 'চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী'। |
চোরা গরুর সাথে কপিলার বন্ধন | দোষীর সঙ্গে থাকলে নির্দোষও শাস্তি পায়; (উৎসকাহিনী- ইন্দ্র সগররাজার অশ্ব চুরি করে কপিলমুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন; অশ্বরক্ষগণ আশ্রমে সেই অশ্ব খুঁজে পেয়ে কপিলমুনিকে চোর সাব্যস্ত করে তাঁকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা করে।) |
চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী- কাশীরাম দাস | অসৎ/দুষ্টকে সদুপদেশ দেওয়া বৃথা। |
চোরে কামারে দেখা নেই সিঁধকাঠি গড়া | পরস্পরের অগোচরে কোন মন্দকাজ সম্পন্ন হলে এই প্রবাদ বলা হয়; লোকের বিশ্বাস রাতে চোর একটা লোহার টুকরা কামারশালার সামনে রেখে যায়; সকালবেলা কামার সেটা দেখে বুঝতে পারে সিঁধকাঠি গড়ার জন্য চোর রেখে গেছে; কামার সেইমত একটা সিঁধকাঠি গড়ে দরজার সামনে রেখে দেয়; রাত্রিবেলায় চোর এসে সেখানে মজুরিমূল্য রেখে সিঁধকাঠিটি নিয়ে যায়; এই কাহিনী থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়। |
চোরে চায় ভাঙা বেড়া | মন্দলোকে স্বার্থসিদ্ধির উপায় খোঁজে। |
চোরে চোরে আলি (আত্মীয়তা) এক চোরে বিয়ে করে আরেক চোরের শালী | দোসরহিসাবে এক অসৎ আরেক অসৎকেই পছন্দ করে; (উৎসকাহিনী- এক গল্পে আছে চারচোর একগৃহস্থের বাড়িতে চুরি করে চোরাই মালপত্র পাশের এক আস্তাবলে থেকে একটা খাটিয়া এনে তাতে চাপাচুপি দিয়ে ভোরেরদিকে 'বল হরি হরিবোল' ধ্বনি দিয়ে পালাতে থাকে; পথে আরেক পাকাচোরের সঙ্গে তাদের দেখা; সে হেসে বলে- 'গাড়ুর নল দেখা যাচ্ছে যে'; চোরের দল বুঝতে পারে তারা ধরা পড়ে গেছে; তাড়াতাড়ি গাড়ুর নল ঢাকা দিয়ে তারা বাটপাড়কে বলে, 'ভাগ নেবে তো চলে এসো'; মুচকিহেসে 'মেসো কবে মারা গেছে' বলে বাটপাড় খাটিয়ায় কাঁধ লাগায়; এই গল্প থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে;) পাঠান্তর- 'চোরে চোরে কুটুম্বিতা'; 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই'। |
চোরের উপর বাটপাড়ি | চোরের কাছ থেকে চোরাই মাল চুরি; উপরচালাকি করে ঠগকে ঠকানো; হিন্দি পাঠান্তর- 'চোর পর মোর'। |
চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া | বিপরীত বুদ্ধি; চোরের কিছুই হল না,পরন্তু নিজের ক্ষতি হল; রাগে অন্ধ হলে নিজের ক্ষতি হয়; তুলনীয়- 'মটকা/রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলে যায়'। |
চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন১ | কুকর্মের ফল একদিন ভুগতেই হয়; পাঠান্তর- 'চোরের শতেক রাত গৃহস্থের একরাত'। |
চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন২ | পাপ কাজ কখনো চাপা থাকে না। |
চোরের ধন বাটপাড়ে খায়/লয় | অসৎ উপায়ে অর্জিত ধন কেউ নিজে ভোগ করতে পারে না। |
চোরের বল মিথ্যায় আশ্রয় | বাঁচতে গিয়ে নানান কথা। |
চোরের মন চৌকিদারে | ধরা পড়ার ভয়ে পাপীরা সবসময় শঙ্কিত থাকে; সমতুল্য- 'মাটিতে থাপ্পড় পরলে গুনাহগার চমকে ওঠে'। |
চোরের মন পুঁই আদাড়ে/বোঁচকার দিকে | সকলেই আপনার স্বার্থচিন্তায় মগ্ন থাকে। |
চোরের মায়ের কান্না | অসৎ কাজের জন্য গোপনে অশ্রুপাত। |
চোরের মায়ের বড় গলা | অপরাধ করে নিরপরাধ সাজার চেষ্টা; অসৎকাজ চাপা দেওয়ার জন্য আস্ফালন; যে যতবেশি অসৎ সে ততবেশি সাধুতার ভান করে। |
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা | স্বার্থের কারণে এক অসৎ অন্য অসৎকে সমর্থন করে; সমতুল্য- 'শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল'। |
চৌকিদারি কি ঝকমারি | সবসময় স্বার্থহানির চিন্তায় পাগল; লাভ অল্প, কষ্ট বেশি। |
চৌকো পেরেক গোল গর্তে | ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে অসচ্ছান্দ কাজের পরিবেশ; পাঠান্তর- 'গোল গর্তে চৌকো পেরেক'। |
চৌঘরি মাত দেখানো | দাবাখেলায় ব্যবহৃত; ভীষণ সঙ্কটে ফেলা। |
চৌরে গতে বা কিমু সাবাধানম | চোর পালালে আর সাবধান হয়ে কি ফল হবে? পণ্ডশ্রম; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'; 'নির্বাণদীপে কিমু তৈলদানম'। |
ছ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ছ-আনার কাপড়ে ন-আনার পাড় | অল্পদামের জিনিস বেশিদামের উপকরণে সাজানো; মূলবিষয় থেকে আনুসঙ্গিক বিষয় অনেক বেশি; কাজ থেকে আড়ম্বর বেশি; আচরণে বাড়াবাড়ি; তুলনীয়- বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি'; 'বারো হাত কাপড়ের তেরো হাত দশী' ইত্যাদি। |
ছকড়া নকড়া করা | অতি সামান্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা হেলেফেলা করা। |
ছড়ায় যে জন পথের কাঁটা তার যেন থাকে জুতা আঁটা | পরের অনিষ্ট করতে গেলে নিজেরও অনিষ্ট হতে পারে। |
ছল করে জল আনা | এক কাজের ছুতায় অন্য কার্যসিদ্ধি। |
ছাঁচের জলে খাবি খায়, সমুদ্রপার হতে চায়/যায়। | যে সামান্য কাজ করতে ভয় পায় সে বড় কাজে হাত বাড়ায়; অক্ষমের উচ্চাশা; সমতুল্য- 'আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়'; 'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে যায়'। |
ছাঁদনদড়ি গোদাবাড়ী যে আমার আমি তারি | যখন যে আদর যত্ন করে তখন তার অধীন; প্রশংসার্থে- কৃতজ্ঞতাবোধ আছে; নিন্দার্থে- দৃঢ় নীতিবোধের অভাব; তুলনীয়- ইন্দ্রের শচী'। |
ছাইচাপা আগুন১ | অব্যক্ত ক্রোধ/মর্মবেদনা। |
ছাইচাপা আগুন২ | ভিতরে তেজ আছে কিন্তু বাইরে তার প্রকাশ নেই। |
ছাইচাপা আগুন৩ | সুপ্তপ্রতিভা। |
ছাইতে জানিনে গোড় চিনি | কাজ করতে পারে না, অথচ দাবী করে পরের কাজের দোষত্রুটি ভালই বোঝে; হাস্যকর দাবী। |
ছাই পায় না মুড়কি জলপান | যোগ্যতার অতিরিক্ত আশা করা; অল্প পাওয়ার আশা নেই বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা; হাস্যজনক অভিলাষ। |
ছাই পেতে কাটা | নির্মমভাবে শত্রু নির্যাতন করা; সমতুল্য- পাঁশ পেড়ে কাটা। |
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো১ | তুচ্ছ কাজ করার জন্য অবহেলার পাত্রের খোঁজ;অবহেলার পাত্র, কিন্তু কাজের সময় ডাক পড়ে। |
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো২ | সংসারে যে ব্যক্তি অকিঞ্চিতকর এবং অপ্রীতিকর কাজ করে। |
ছাই মাখলেই সন্ন্যাসী হয় না১ | রঙীন হলেই দামী নয়; |
ছাই মাখলেই সন্ন্যাসী হয় না২ | সাধু সাজলেই সাধু নয়; ভণ্ডামী ধরা পড়ে। |
ছাইমুঠো ধরলে সোনামুঠো হয় | ভগ্যোদয়ে যৎসামান্য কাজেও দুটো পয়সা আসে। |
ছাগল দিয়ে ধান চাষ | অকেজোকে দিয়ে কোন বড় কাজ করার চেষ্টা, যা হওয়ার নয়; কোন কাজে ব্যর্থ হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; পাঠান্তর- 'ছাগল দিয়ে যব মাড়ানো'। |
ছাগল বলে আলুনি খেলাম; গেরস্ত বলে প্রাণে ম‘লাম | অসন্তুষ্টকে কখনো তুষ্ট করা যায় না; কোন কাজে অপযশ হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'বক্রা অপনে জান্সে গয়া, খানেওয়ালা স্বাদ নহি পায়া'। |
ছাগলকে ভাঙা বেড়া দেখাতে নেই | লোভীকে লোভের সামগ্রী দেখাতে নেই; যাতে লোভ বাড়ে এমন কিছু করা নেই; সমতুল্য- 'কাঙালকে শাকের খেত দেখাতে নেই'। |
ছাগলে কিনা খায়, পাগলে কিনা বলে | অবোধ ছাগলে খাদ্য-অখাদ্যে বাছবিচার করে না-সব খায়; অবোধ পাগলে বাচ্য-অবাচ্য বোঝে না- সব বলে; অবোধদের গুরুত্ব দিতে নেই। |
ছাগলের লোমে পশম হয় না | মন্দলোকের কাছে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করা যায় না; তুলনীয়-'আমড়াগাছে আম ফলে না'। |
ছাড়া পাখী ফিরে আসে বলা কথা ফেরে না | যে পাখিটা তুমি ছেড়ে দিয়েছো সে আবার ফিরে আসতে পারে, যে কথাটা মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে সেটা আর ফিরিবে না। |
ছাতা দিয়ে মাথা রাখা | উপকার করা; সামান্য় উপকার হলে কৌতুকে এই উক্তি করা হয়; সমতুল্য- 'ভাঙ্গাঘর ছেয়ে দেওয়া'; পাঠান্তর- 'ছাতা দিতে মাথা বাঁচানো'। |
ছাতার (পাখি) বলে গাঁ আমার | নিকৃষ্টের অন্যায্য দাবী; (উৎস- পাখিদের মধ্যে ছাতার নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত)। |
ছাতারে কীর্তন চলছে | অনর্থক গোলমাল হচ্ছে (উৎস- ছাতার পাখির দল এক জায়গায় জড়ো হলে কিচিরমিচির শব্দে উতক্ত করে তোলে।) |
ছাতুর হাঁড়িতে বাড়ি পড়া১ | অকস্মাৎ বিপদে পড়ে দিশেহারা। |
ছাতুর হাঁড়িতে বাড়ি পড়া২ | সব লণ্ডভণ্ড হওয়া। |
ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ | অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা বা ধর্ম। |
ছায়া আর কায়া | কায়া থাকলে কায়া থাকবেই; অঙ্গাঙ্গী-সম্পর্ক; আলো আর কালো; দেহ আর মন; দিন আর রাত; ভালো আর মন্দ ইত্যাদি। |
ছায়া চাইলে বড়গাছের তলায় নিও | ক্ষমতাসম্পন্ন লোকের কাছে আশ্রয় নিতে হয়; পাঠান্তর- 'আশ্রয়, ফল ও ছায়া বড়গাছের তলায় নিতে হয়'। |
ছায়া ভালো ছাতার তল; বল ভালো নিজের বল- খনা | ছাতার তলার ছায়া বড় মিষ্টি; নিজের শক্তিই আসল শক্তি। |
ছায়াতে ভূত দেখা | অমূলক আশঙ্কা করা। |
ছায়ার পিছনে ছুটে ছায়া ধরা যায় না | অতি আশা সর্বনাশা; অনিশ্চিতের প্রত্যাশায় থেকো না; পাঠান্তর- 'ছায়ার পিছনে ছোট এবং আসল হারাও'। |
ছাল নেই কুত্তা, নাম তার বাঘা | অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মান জানানো; যে গুণ নেই সেই গুণ আরোপ; আদিখ্যেতা, বাড়াবাড়ি। |
ছিঁড়লো দড়া তো ছুটলো ঘোড়া১ | নিয়মের কড়াকড়ি উঠতেই সবাই উদ্দাম; শৃঙ্খলা না থাকলে সবাই বিশৃঙ্খল হয়। |
ছিঁড়েছিঁড়ে কাটুনী, পুড়েপুড়ে রাঁধুনী | অভ্যাসে অভিজ্ঞ হয়; অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি। |
ছিকলি কাটা টিয়ে | একবার যে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে, তাকে ফের অধীন করা সুকঠিন ব্যাপার। |
ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তী | ছিদ্র পেলেই অনর্থগুলি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়; ছেঁড়াকাপড় সেলাই না করলে ছিদ্র ক্রমশঃ বাড়তে থাকে; দোষ সংশোধন না করলে এক দোষ থেকে বহুদোষের জন্ম হয়; তুলনীয়- 'আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি'; 'ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'। |
ছিল ঢেঁকি হল শূল কাটতে কাটতে নির্মূল | কাটতে কাটতে ছোট হয়ে গেছে; খুঁতখুঁতানিতে কাজ পণ্ড। |
ছিল না কথা দিল গাল আজ না হয় হবে কাল | নারীসঙ্গলোলুপ লম্পটের দুরাশা। |
ছিল যত নাড়াবুনে সব হলো কীর্তুনে | চাষাত বেটা কীর্তনীয়া হতে চায়; একটা হুজুগ পেলেই হলো; যোগ্য অযোগ্য সবাই সেই ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়ে; তুলনীয় 'কাস্তে ভেঙে গড়ে করতাল'। |
ছিলাম রোগী হয়েছে রোজা | ঠেকায় পড়ে লোকে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করে। |
ছুঁচ, সোহাগ, সুজন- ভালো করে তিনজন; উই, ইঁদু্র, কুজন- মন্দ করে তিনজন। | তিন ভাল সুসঙ্গী ও তিন কুসঙ্গীর প্রতি ইঙ্গিত। |
ছুঁচ হয়ে ঢোকে ফাল (লাঙ্গলের ফলা) হয়ে বেরোয়১ | উপকার করার নামে ঢোকে, অনিষ্ট করে বেরোয়; বন্ধু হয়ে ঢোকে শত্রু হয়ে বেরোয়। |
ছুঁচ হয়ে ঢোকে ফাল (লাঙ্গলের ফলা) হয়ে বেরোয়২ | সুযোগ নিয়ে সবাই দাঁও মারার মওকা খোঁজে। |
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ১ | নেই-লাভের কারবার করে অখ্যাতি অর্জন। |
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ২ | হীনব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে সুনামের বদলে দুর্নাম কুড়ানো। |
ছুঁচোয় যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে?১ | নীচ কোনভাবেই উঁচুতে ওঠে না। |
ছুঁচোয় যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে?১ | মন্দ সাধু সাজার চেষ্টা করলেও তার মন্দস্বভাব বেরিয়ে পড়ে। |
ছুঁচোর গু ওষুধে লাগে ছুঁচো গিয়ে পর্বতে হাগে | নীচলোকের কাছে উপকার চাইলে সে গর্বে স্ফীত হয়ে উপকার করতে অস্বীকার করে। |
ছুঁচোর গোলাম চামচিকে মাইনে তার চোদ্দ সিকে | তুচ্ছলোকের প্রতি অবজ্ঞাসূচক উক্তি। |
ছেঁড়াকলার পাত একবউকে ভাত দেয় না আরো বউয়ের সাধ | হাতের কাজই শেষ করতে পারে না আরো কাজের খোঁজ করে। |
ছেঁড়াকাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা | সামর্থ্য নেই অথচ প্রাচুর্যের প্রত্যাশা; দরিদ্রের উচ্চাভিলাষ। |
ছেঁড়াকাপড় রুখু মাথা দুঃখ বলে যাবো কোথা? | দুঃখ অপরিচ্ছন্নতাকে জড়িয়ে ধরতে ভালবাসে। |
ছেঁড়াচুলে খোঁপা বাঁধা১ | পরচুলায় সৌন্দর্য খোলে না; ধার করা জিনিসে ভাল কাজ হয় না। |
ছেঁড়াচুলে খোঁপা বাঁধা২ | পরের স্বার্থে জড়িয়ে পড়া। |
ছেঁড়াবস্তায় খাসাচাল১ | অগুণীর ঘরে গুণবান সন্তান; পাঠান্তর- 'ধুকড়ির মধ্যে খাসা চাল' |
ছেঁড়াবস্তায় খাসাচাল২ | কুদর্শন হলেও গুণের ছেলে। |
ছেঁড়াসম্পর্ক জোড়া লাগে না | সম্পর্ক একবার ভাঙলে পুরানো সম্পর্ক ফিরে পাওয়া কঠিন। |
ছেঁদাপয়সার মা-বাপ | অত্যন্ত কৃপণ, যে একট ছেঁদাপয়সা (বৃটিশ আমলের এক পয়সা) খরচ করতেও কাতর হয়; পাঠান্তর- 'ফুটোপয়সার মা-বাপ'। |
ছেঁদোকথা মাথার জটা, খুলতে গেলে বিষম ল্যাঠা | চুলের জটা মত অসংলগ্ন কথাবার্তা সহজে বোধগম্য হয় না। |
ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা | সুযোগ হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার প্রয়াস। |
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি | কোনরকমে সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার কাতর ইচ্ছা; আমি আর উপকার চাই না, এবার নিস্কৃতি দাও; তোমার হাত থেকে মুক্তি চাই; সমতুল্য- 'ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও'। |
ছেলে থেকে ছেলের মাথা ভারী | অতি বুদ্ধিমান ছেলে। |
ছেলে নষ্ট হাটে বউ নষ্ট ঘাটে | বদসঙ্গে মিশে ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়। |
ছেলের চেয়ে ছেলের গু ভারী | মূল থেকে আনুসঙ্গিক ব্যাপার অনেক বেশি; সমতুল্য- বারোহাত কাঁকুড়ের তেরোহাত বীচি'; 'বারোহাত কাপড়ের তেরোহাত দশী'; 'বারোহাত পুকুরে তেরোহাত মাছ'; 'মিঞা থেকে মিঞার ডিঙি ভারি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ছেলের থেকে ছেলের ঘুনসি বড়'। |
ছেলের হাতের মোয়া নয় যে ভোগা দেবে | বয়স্কলোককে কেউ বোকা বানাতে চাইলে এই প্রবাদ উক্ত হয়। । |
ছেলেদের প্রতিভা এবং মেয়েদের রূপ দুইই জন্মগত ও প্রলয়ঙ্কর। | এই দুটি বিষয় দুনিয়াকে উলটপালট ক'রে দিতে পারে। |
ছোঁড়া ঢিল/তীর ফেরে না | ছেড়ে দেওয়া সুযোগ ফিরে আসে না; সমতুল্য- 'বলা কথা ফেরে না'; 'ভাত সিদ্ধ হয়ে গেছে'; 'মুখের কথা ফেরে না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মরার আগে পর্যন্ত ফিরে আসার সুযোগ থাকে'। |
ছোট কাঁটাটি ফোটে পায়, তুলে ফেলো নইলে দায় | ছোটদোষ থেকেও বড়ক্ষতি হতে পারে। |
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক করলে বেশি সময় নষ্ট হয় | ছোটখাটো বিষয়ে সকলেরই কিছু-না-কিছু জ্ঞান থাকে। |
ছোটছোট চোখে বড়বড় স্বপ্ন দেখা | অসম্ভবের পিছনে ছোটা; যোগ্যতার বাইরে গিয়ে কিছু প্রত্যাশ করা; হিন্দি পাঠান্তর- 'ছোটেছোটে আঁখে আউর বড়াবড়া স্বপ্না'। |
ছোটমুখে বড়কথা১ | ছোটদের মুখে বড়দের মত কথাবার্তা; লোকের মর্যাদা না রেখে কথা বলা; পাঠান্তর- 'যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'ছোটে মুঁহ বড়ী বাত'। |
ছোটমুখে বড়কথা২ | অনুচিত কতাবার্তা বলা; ওজন না বুঝে নিজের অবস্থানের উপরে উঠে কথা বলা। |
ছোট্টশরীরে একটি বিরাট আত্মা বাস করে | আত্মা শাশ্বত; আত্মাকে অক্ষয় এবং সময়ের ঊর্ধ্বে বলে বিবেচনা করা হয়। |
ছ্যাঁকা (গরম জলে) খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় | অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যে একবার ঠেকেছে সে দ্বিতীয়বার সেই কাজে এগোয় না; সমতুল্য- 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; 'দগ্ধ শিশু আগুন দেখলে ভয় পায়';'নেড়া বেলতলায় একবার যায়' ইত্যাদি। |
ছ্যাঁদাকলসি, চোরাগাই, চোরপড়শী ধূর্তভাই; মূর্খছেলে স্ত্রী নষ্ট, এই কয়টি বড়ই কষ্ট | ফুটোকলসি কাজের নয়; দোহনের সময় যে গাই দুধ চুরি করে তার প্রতিপালন করা বৃথা; নিজের- ভাই ধূর্ত, ছেলে মূর্খ এবং স্ত্রী দুশ্চরিত্রা হলে খুব কষ্টের বিষয় হয়; পাঠান্তর- 'ছ্যাঁদাপয়সা, চোরাগাই, চোরপড়শী ধূর্তভাই; মূর্খছেলে স্ত্রী নষ্ট, এই কয়টি বড়ই কষ্ট |
জ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
জগৎ আনন্দময় যার মনে যা লয় | সংসার আনন্দময়; এখানে সবসময সুখীমন আনন্দভোগ করে আর দুখীমন দুঃখভোগ করে; পাঠান্তর- 'সংসার আনন্দময় যার মনে যা লয়'। |
জগৎজুড়ে জাল ফেলেছে পালিয়ে বাঁচবি কোথা?১ | সংসারজালরূপ বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। |
জগৎজুড়ে জাল ফেলেছে পালিয়ে বাঁচবি কোথা?২ | যমের হাত থেকে নিস্কৃতি নাই। |
জগৎ মায়াময়, শুধু ছায়ার খেলা | তুমি কার, কে তোমার, কেউ কারো নয়; সবই অনিত্য। |
জগতে ত্রুটিহীন কাজ দুর্লভ | কাজ করলে ভুলত্রুটি হবেই; নির্দোষ কিছু হয় না। |
জগতে ভালো কে, যার মনে লাগে যে | যার যাকে পছন্দ সেই তার কাছে ভাল; তুলনীয়- 'ভিন্নরুচির্হি লোকঃ'। |
জগন্নাথ পেতে গেলে হাড়ীর ঝাঁটা খেতে হয় | কষ্ট না করলে ইষ্ট পাওয়া যায় না; (জগন্নাথদর্শনে গিয়ে পাণ্ডার ছড়ির বাড়ি না খেয়ে জগন্নাথ দর্শন করা যায় না)। |
জগাখিচুড়ি১ | পুরীর জগন্নাথদেবের ভোগ; বহু আবশ্যক ও অনাবশ্যক শাকসব্জির পাকে প্রস্তুত খাদ্য যা সুস্বাদু হয় না। |
জগাখিচুড়ি২ | বিভিন্ন অবাঞ্ছিত বস্তুর সংমিশ্রণ। |
জগাখিচুড়ি পাকানো | কোন বিষয়কে নানাভাবে জটিল করে তোলা; গোলমাল বাঁধানো। |
জঙ্গল মে মঙ্গল হোনা- হিন্দি প্রবাদ | শান্ত নির্জনস্থানে নিরুপদ্রবে মনের আনন্দে বাস করাঈ মঙ্গলজনক। |
জঙ্গলা কখনো পোষ না মানে, মন সদা তার কেওড়া/সোঁদর বনে১ | বাঘের মন থেকে বন মোছে না; বন্ধনে কেউ জড়াতে চায় না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'বনের পাখী পোষ মানে'। |
জঙ্গলা কখনো পোষ না মানে, মন সদা তার কেওড়া/সোঁদর বনে২ | যার যা অভিলাষ সেইদিকে তার টান। |
জড়ভরত | অকর্মণ্য নিস্ক্রিয় নিরুদ্দম জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- মহারাজ ভরত পরজন্মে এক ব্রাহ্মণপরিবার জাতিস্মর হয়ে জন্মগ্রহণ করেন; সর্বক্ষণ তিনি ভগবানের আরাধনায় ব্যাপৃত থাকতেন; কোন কাজ করতেন না; কারো সাথে কথাবার্তা বলতেন না; এই জন্য তিনি জড় ভরত নামে আখ্যাত হন।) |
জন জামাই ভাগনা, এ তিন নয় আপনা | মজুর, জামাই আর ভাগনে- এই তিনজন যতই উপকার করুক-না-কেন কোনদিন আপনার হয় না; তুলনীয়- 'যম জামাই ভাগনা কেউ নয় আপনা'। |
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী | জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও মহীয়সী, সর্বাপেক্ষা পূজনীয়; তুল্নীয়- 'কিসের মাসী কিসের পিসী কিসের বৃন্দাবন; মরাগাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন'। |
জন্তু দাঁত বার করলে ভেবো না সে হাসছে, সে কামড়াতে চায় | পশুপ্রকৃতির লোকেদের আচরণ হিংস্র হয়। |
জন্ম, মৃ্ত্যু, বিয়ে তিন বিধাতা দিয়ে // জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, তিন না জানেন বরাহ (বরাহমিহির) | নিয়তি বা বিধাতা সব নিয়ন্ত্রণ করে; মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন প্রশ্ন নেই। |
জন্মদিনের উৎসাহে মনে রেখো মৃত্যুর দিকে একধাপ এগুলে | আনন্দের দিনে দুঃখকেও মনে রেখো, ভুলে যেও না; দুঃখকে মনে রাখলে আনন্দ বেশি মধুর হয়। |
জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? | জীবমাত্রই মরণশীল; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু'। |
জন্মে দেখেনি লোহার মুখ, কোদালকে বলে গুণছুঁচ | অবোধের আগ বাড়িয়ে বাজে বকা; অবোধে না জানা বিষয়ে মন্তব্য করে হাসির খোরাক হয়। |
জন্মের মধ্যে কর্ম নিমুর চৈত্রমাসে রাস | সামান্য একটি কাজ করে অহঙ্কার; (নবাব সিরাজদ্দৌল্লার আমলের পুরোহিতব্রাহ্মণ নিমু গোঁসাই বাৎসরিক পর্বের মধ্যে চৈত্রমাসে এক রাসযাত্রার আয়োজন করতেন; এই একটি কাজ করে তিনি খুব গর্ব প্রকাশ করতেন; এই ঘটনাকে বিদ্রূপ করতে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়।) |
জপতপ কর কি? মরতে জানলে ডর কি? | মরার ভয়ে মানুষ ঈশ্বরকে ডাকে; কিন্তু জপতপে যমকে এড়ানো যায় না। |
জপতপ কর কি মরতে জানলে হয় | জপতপের কোন মূল্য নেই; একজন সারাজীবন জপতপ করে গেল, প্রতিদিন গঙ্গাস্নান করলো অথচ মরার সময় গঙ্গা পেল না; অন্যজন সারাজীবন গঙ্গা কি জানলো না অথচ মরার সময় গঙ্গা পেলো; আচারসর্বস্বতার প্রতি ব্রিদ্রুপ। |
জপ নেই তপ নেই ভস্মমাখা গায় | ভেকধারী সন্ন্যাসী; ধর্মের ভান; বাহ্যিক আড়ম্বর; আচারসর্বস্বতা। |
জপের কোন খোঁজ নেই ফটিকে রাঙা থোপ | পূর্বের অনুরূপ; (ফটিক- কটিকের জপের মালা) |
জব বরসতা তব গরজতা নহী, জব গরজতা তব বরসতা নহী- হিন্দি প্রবাদ | সারবান ব্যক্তির আড়ম্বর নেই; সারশূন্য হলেই আড়ম্বর দেখায়। |
জমি না দেখে জমি ছেড়ো না | পা রাখার যায়গা পেলে পা তোল। |
জমির অভাবে উঠান চষা | কাজ না পেলে অকাজ করা; সমতুল্য- 'নেই কাজ তো খই ভাজ'। |
জয়কেতে | জয়ীরদিকে কাত; সবসময় বিজয়ীর পক্ষে থাকা; যে ব্যক্তির পক্ষে থাকলে স্বার্থসিদ্ধির সম্ভাবনা তখন অপরপক্ষ ছেড়ে দিয়ে তার দিকে ঢলে পড়া এবং তার গুণগান করা। |
জল উঁচু তো উঁচু, জল নিচু তো নীচু | তোষামোদকারী; নিজস্ব কোন চিন্তাধারা নেই এমন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ; সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ব্যক্তি। |
জল এগোয় না তৃষ্ণা এগোয়১ | যার প্রয়োজন সেই এগুবে; যে অভিলাষী শে এগুবে, অভিলাষিত বস্তু নয়। |
জল খেয়ে জলের বিচার // জল খেয়ে জাতের বিচার | উল্টাপুরাণ; বিপরীতবুদ্ধি; আগের কাজ পরে করা; কাজে নামার আগে দোষগুণ বিচার করা উচিৎ; সমতুল্য- 'ঘোড়ার আগে গাড়ী জুতা'; 'ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিও না'। |
জলছাড়া কুমির/মৎস | কুমির যতক্ষণ জলে থাকে ততক্ষণ তার বিক্রম; ডাঙায় উঠলেই বিক্রম শেষ- ডালছাড়া বানর |
জল জল বৃষ্টির জল, বল বল বাহুর বল | বৃষ্টির জলের তুলনা হয় না, ছেঁচাজলে বেশিক্ষণ চলে না; নিজের বলই শ্রেষ্ঠ বল; পরের বলে নির্ভর করা যায় না। |
জল, জোলাপ, জুয়াচুরি, এই তিন নিয়ে ডাক্তারি | বলা হয় যে ডাক্তারেরা এই তিনটি বিষয় বেশি পছন্দ করেন। |
জল থেকে রক্ত গাঢ় | পারিবারিক সম্পর্ক এবং আনুগত্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; সমতুল্য- রক্তের টান বড় টান'; বিরুদ্ধ উক্তি- রক্তের টানে রক্তারক্তি; রক্তের টানের থেকে মনের টান বড়। |
জল দিয়ে জল বার করা | কানে জল ঢুকলে জল দিয়ে সে জল বার করা হয়; শত্রুকে দিয়ে গোপন মন্ত্রণা জানতে হয়; শত্রু দিয়ে শত্রুনিধন; সমতুল্য- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'। |
জল দিলে হয় কালা, কালা ছুঁড়িরে কয় ভালা | কালো রূপের নারী সর্বদা সমাজে অবহেলিত। |
জল নদীতে সুস্বাদু, সমুদ্রে বিস্বাদ | আধারগুণে চরিত্র বদলায়। |
জল নেড়ে জোঁকের বল বোঝা১ | জল নাড়লে বোঝা যায় জলে জোঁক আছে কিনা |
জল নেড়ে জোঁকের বল বোঝা২ | কথার আভাসে অন্যের মনোভাব বোঝা; সমতুল্য- 'বেড়া নেড়ে গৃহস্থের মন বুঝা'। |
জলন্ত আগুনে ঘি দেওয়া/পড়া | বেশিমাত্রায় উত্তেজিত করা; তুলনীয়- 'অগ্নিতে ঘৃতাহুতি'। |
জলবিন্দুপাতেন ক্রমশঃ পূর্যতে ঘটঃ | ফোঁটাফোঁটা জল পড়ে ঘট ভর্তি হয়; সৃষ্টি তিলেতিলে গড়ে ওঠে; সমতুল্য- 'ক্ষুদ্রক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দুবিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল'; বিন্দু বলে আয়রে বিন্দু গড়ে তুলি মহাসিন্ধু'। |
জল মে রহ কর মগর সে বৈরী | অধীনতায় থেকে শত্রুতা করা যায় না; সমতুল্য- 'জলে থেকে কুমীরের সাথে বিবাদ'। |
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ, যে পারে সে ভাঙে ঘাড় | উভয়সঙ্কট, দুদিকেই বিপদে পড়া; সমতুল্য- 'এগুলে রাম পিছুলে রাবণ';'শাঁখের করাত'; 'যেতেও কাটে আসতেও কাটে'; 'সাপের ছুঁচো গেলা' ইত্যাদি। |
জলে জল বাঁধে | জমিতে একটু জল থাকলে, সামান্য বৃষ্টিতেও জল দাঁড়ায়; শুকনো জমি জল শুষে নেয়; সমতুল্য- 'পয়সায় পয়সা আসে'। |
জলে জল খাপ/মিশ খায় | সমপ্রকৃতির বস্তুর মিলন হয়। |
জলে তেল সহজে বিতায় | সমমর্মী হলে সৌভ্রাতৃত্ব সহজে গড়ে ওঠে। |
জলে তেলে খাপ/মিশ খায় না১ | বিষমপ্রকৃতির দুই বস্তুর মিলন হয় না। |
জলে তেলে খাপ/মিশ খায় না১ | মতের মিল না হলে মনের মিল হয় না। |
জলে না নামিলে শেখে না সাঁতার, হাঁটিতে শেখে না, না খেলে আছাড় | অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলোে কার্যক্ষেত্রে নামতে হয়; কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়; সমতুল্য জাপানী প্রবাদ- বাঘের খাঁচায় না ঢুকলে বাঘের বাচ্চা পাওয়া যায় না'। |
জলে পাথর গলে/পচে না১ | আকাট মূর্খ জ্ঞানী হয় না। |
জলে পাথর গলে/পচে না২ | দুর্বল শক্তিশালীকে কাবু করতে পারে না; শক্তিশালী সহজে বিনষ্ট হয় না। |
জলে বাস করে কুমীরের সাথে বিবাদ | প্রভাবপ্রতিপত্তিশালীর এলাকায় বাস করে তারই সাথে বিবাদ; যার অধীনে বাস তার সাথে বিবাদ করা চলে না; যাকে অস্বীকার করার উপায় নেই তার সাথে টক্কর দেওয়া চলে না; সমতুল্য- 'রোমে বাস করে পোপের সাথে বিবাদ'; তুলনীয়- 'সসর্পে চ গৃহবাসঃ মৃত্যুরেব ন সংশয়'। |
জলে ভাসে শিলা | অসম্ভব ঘটনা। |
জলের কুমির ডাঙ্গায় এলো | বিপদ সামনে উপস্থিত। |
জলের গতি নীচের দিকে | স্নেহ নিম্নগামী। |
জলের চেয়ে পাঁক ঠান্ডা; সূর্যের চেয়ে বালি গরম | নগণ্য ব্যক্তিরা নম্র হয়; নকল ব্যক্তিরা উদ্ধত হয়। |
জলের চেয়ে রক্ত গাঢ় | রক্তসম্পর্ক বা জ্ঞাতিত্বের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন; তুলনীয়- 'রক্তের টান বড় টান'। |
জলের ছিঁটে দিয়ে লগির গুঁতো খাওয়া | লগি দিয়ে শালতি বাওয়ার সময় একজন যদি অসাবধানতায় অন্যজনের গায়ে জলের ছিটা দেয় তবে অন্যজন প্রথমকে লগিপেটা করে; সামান্য অনিষ্ট করতে গিয়ে বিষম শাস্তি পাওয়া। |
জলের তিলক | অচিরে মুছে যায়; সল্পস্থায়ী বিষয়। |
জলের ফোঁটা পাথর ক্ষয় করে, সূতার করাত গাছ কাট | নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকলে কঠিন কাজও সহজে করা যায়; সমতুল্য- 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'। |
জলের রেখা খলের পীরিত | জলের রেখা যেমন ক্ষণস্থায়ী দুষ্টের প্রীতিও তেমন অতি ক্ষণস্থায়ী। |
জলের শত্রু পানা মানুষের শত্রু কানা | প্রকৃত গুণগ্রাহীরাই গুণীর গুণ বুঝতে সমর্থ। |
জহুরী জহর চেনে | অভিজ্ঞচোখকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। |
জাঁকজমকে বিকোয় ঘোড়া | জিনিসপত্র বেচাকেনায় অঙ্গসজ্জা অপরিহার্য; তুলনীয়- 'আগে দর্শনধারী পাছে গুণবিচারী' |
জাগন্ত ঘরে চুরি নাই | সতর্কচক্ষুকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব; সমতুল্য- 'গোনাগরু বাঘে ধরে না'; 'সাবধানের মার নাই'। |
জাড্যং ধিয়ো হরতি সিঞ্চতি বাচি সত্যং মানোন্নতিং দিশতি পাপমকরোতি। চেতঃ প্রসাদয়তি দিক্ষু তন্যেতি কীর্তিং সৎসঙ্গতিঃ কথয় কিং ন করোতি পুংসাম্॥ (চাণক্য) | সৎসংসর্গ মানুষের বাহ্যিক জড়তা দূর করে; বাক্যে সত্যতা স্থাপন করে; সম্মান বৃদ্ধি করে; পাপ দূর করে; চিত্ত প্রসন্ন করে; দিকে দিকে যশ বিস্তার করে- কী না করে থাকে? |
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু | জন্মিলে মরিতে হবে, এটা ধ্রুব সত্য; বাংলা পাঠান্তর- 'জন্মিলে মরিতে হবে?' |
জাত খুইয়ে বৈষ্ণব | বৈষ্ণবের কোন জাত নেই; যে কেউ বৈষ্ণব হতে পারে। |
জাত গেল পেটও ভরল না | ক্ষতি স্বীকার করেও ইষ্ট মিলল না; সমতুল্য- 'একূল, ওকূল- দুকূল গেলো অকূল পারে গোকুল'। |
জাত গোয়ালার কাঁজি ভক্ষণ | গোয়ালা দুধ খায় না, আমানি খায়; ব্যবসায়ী তার নিজের জিনিস ভোগ করতে পারে না; তুলনীয়- 'ময়রা সন্দেশ খায় না'; 'সন্দেশওয়ালা মুড়ি খায়'। |
জাত তো বাক্সের ভিতর | অর্থে সবাই বশীভূত; সমতুল্য- 'অর্থেন পুরুষঃ দাসঃ'। |
জাতে মাতাল তালে ঠিক | কিছু মানুষকে দেখে বেহিসাবি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে নিজের কাজে তারা খুব হিসাবি, যেমন- 'তোমার মা আমার মা, আমার মা তোমার মা; তোমার বউ আমার বউ, আমার বউ আমার বউ।' |
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া- নজরুল | খণ্ড ঈশ্বরধারণার জন্য ক্ষোভ; জাতের ধর্ম ধর্ম নয়, ধর্মের ব্যবসা; তুলনীয়- 'কারে ভজে কার দাস'। |
জাতের নারী কালাও ভালা/ভালো, নদীর পানি ঘোলাও ভালা/ভালো১ল | নারী নির্বাচনে গুণবতী কালো হলেও ভালো; গুণহীনা রূপবতী হলেও ভাল নয়; সমতুল্য- 'কালা কাজলের মাটি, তা'র লাগি ছ'মাস হাঁটি; সুন্দর ধুতুরার ফুল, তা'র নাই কড়ার মূল'; 'রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি'। |
জাতের নারী কালাও ভালা/ভালো, নদীর পানি ঘোলাও ভালা/ভালো২ | বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নির্বাচনে আগে গুণ বিচার না করে তার জাত বিচার করা হত, যাকে পালটি ঘর বলা হয়; বর্তমানে জাতবিচার হয় না, গুণ বিচার হয়। |
জান যায় তো জবান/বাত না যায় | প্রাণ যায়, কথা থাকে। |
জান যায়, মান না যায় | প্রাণ যায় যাক ইজ্জৎ যেন থাকে। |
জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তির্জানাম্যধর্মং ন চ মে নিবৃত্তিঃ, ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথ করোমি | দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ করে বলছেন, 'ধর্ম কি তা আমি জানি কিন্তু তাতে আমার আসক্তি নেই; অধর্ম কি তাও আমি জানি কিন্তু তাতে আমি অনাসক্ত নয়; হে হৃষীকেশ তুমি হৃদয়ে থেকে আমাকে যেভাবে চালাচ্ছ আমি সেইভাবে চলছি; আত্মসংশোধনের প্রার্থনা হিসাবে প্রকৃত অর্থ- 'হে হৃষীকেশ তুমি যেভাবে আমাকে ধর্মপথে চালাচ্ছো আমি যেন সেইভাবে চলতে পারি'; আত্মদোষ ক্ষালনের উপায় হিসাবে ব্যঙ্গার্থ- 'হে হৃষীকেশ ধর্ম অধর্ম আমি কিছু বুঝি না তুমি যেভাবে আমাকে চালাচ্ছো আমি সেইভাবে চলছি। |
জানার কোন বয়স/শেষ নেই | আমৃত্যু শেখা যায়। |
জানিনি, পারিনি, নেইকো ঘরে, এই তিনকে দেবতা ডরে | কারো কাছে এই তিন উত্তর শোনার পর তার সাথে আর কোন কথা চলে না। |
জামা-জোব্বা বেশুমার আক্কল বিনা ছারখার | পোশাকের আড়ম্বরে বুদ্ধির দৈন্যতা দূর হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'দূরতঃ শোভতে মূর্খো লম্বশাটপটাবৃতঃ। তাবৎ শোভতে মূর্খো যাবৎ কিঞ্চিন্ন ভাষতে'। |
জামাইয়ের জন্য মারে হাঁস, গুষ্টি সুদ্ধ খায় মাস | একজনের দোহাই দিয়ে সকলের সুবিধা ভোগ। |
জামিন হয় দিতে, গাছে ওঠে মরতে | উভয়কাজেই অনিষ্ট হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা। |
জালছেঁড়া, পলোভাঙা মাছ | দুর্দান্ত ধড়িবাজ লোক। |
জালে পড়লে মাছ বেশি লাফায় | আবদ্ধ অবস্থায় প্রাণ ছটফট করে; তুলনীয়- 'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে, কে বাঁচিতে চায়'। |
জালে সরষে বেঁধে রাখা | বাস্তবে যা সম্ভব নয় তাই করার কথা বলা; আসলে 'ইঁদুরের তুলাদণ্ড খাওয়ার' মত প্রচ্ছন্নভাবে মিথ্যাকথা বলে অনিচ্ছা প্রকাশ করা, যেমন- 'তোর জালটা দিবি মাছ ধরবো? প্রত্যুত্তর- 'পারবো না জালে সরষে বেঁধে রেখেছি'; তুলনীয়- 'চালুনি করে ঘোল বিলানো'; 'কাপড়ে তেল ভরে রাখা'। |
জাহাজের কাছে জেলে ডিঙি | বড়র সঙ্গে ছোটর তুলনা; সমতুল্য- 'চাঁদের কাছে জোনাকি'; 'ঢাকের কাছে টেমটেমি'। |
জাহাজের পাছে নোঙ্গর | অপরিহার্য সঙ্গী; পাঠান্তর- 'জাহাজের পাশে জালিবোট'। |
জিঘাংসন্তং জিঘাংসিয়াৎ | হননকারীকে হনন করা দোষনীয় নয়; সমতুল্য- 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ'। |
জিতক্রোধেন সর্বং হি জগদেতদ বিজীয়তে | যে ক্রোধকে জয় করেছে সে জগতকে জয় করেছে। |
জিত্নি চদ্দর দেখো, উৎনি পৈর ফৈলাও | যতদূর চাদর দিয়ে পা ঢাকতে পারো ততদূর পা ছড়াও; সমতুল্য- 'আয় বুঝে ব্য়য় কর'; কাপড় বুঝে জামা কাটো'। |
জিত্নি মুঁহ উতনি বাতো | নানালোকের নানাবক্তব্য; সমতুল্য- 'নানা মুনির নানামত'। |
জিদের ভাত কুকুরে খায় | জেদ ধরলে নিজের ক্ষতি হয়। |
জিভ টলে আছাড় খাওয়া থেকে পা-টলে আছাড় খাওয়া ভাল | বেঁফাস কথা না বলা ভাল। |
জিভ দিয়েছেন যিনি আহার যোগান তিনি | ঈশ্বরই সকলের অন্নদাতা; কালকের জন্য ভাবতে হবে না; অদ্ষ্টবাদে বিশ্বাসী অভাগা; অক্ষমের যুক্তি। |
জিভ পুড়লো নিজের দোষে, কি করবে হরিহর দাসে | নিজের দোষে কষ্ট পেলে অপরের করার কিছু নেই; সমতুল্য- 'স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা দোষ কারো নয়গো মা'। |
জিভে দাঁতেসম্বন্ধ | অসূয়াসম্পর্ক; ভালমন্দের সম্পর্ক; দাঁতের কোন অসুখে জিভ তার কাছে যায়, পাশে দাঁড়ায়, অথচ সুযোগ পেলেই সেই দাঁতই জিভকে কামড়ায়। |
জিয়ন্ত মাছে পোকা পড়ানো১ | অনর্গল মিথ্যাকথা বলে; দিনকে রাত করে; সত্যকে মিথ্যা করে, হয়কে নয় করে |
জিয়ন্ত মাছে পোকা পড়ানো২ | মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুচরিত্রকে কালিমালিপ্ত করা। |
জিয়ন্তে মরা | দুঃখকষ্টে জীবন্মৃত; জীবিতাবস্থায় মৃতবৎ। |
জিলিপির পাক/প্যাঁচ | অসরলভাব; কুটিলতা; দুষ্টুবুদ্ধি; পেঁচোয়া মন |
জিস্কী লাঠি উস্কী ভৈঁস | যার লাঠি তার মোষ অর্থাৎ যার শক্তি আছে সেই সকল বিষয়ের অধিকারী হয়; সমতুল্য- 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'লাঠি যার মাটি তার'; পাঞ্জাবী পাঠান্তর- 'জিস্দা তেগ উস্দা দেগ'। |
জিসকো না দে খোদাতাল্লা উস্কো না দে শকে কই উদ্দৌলা | ঈশ্বর যাকে দেন না কোন রাজা-বাদশা তাকে দিতে পারে না; (উৎসকাহিনী- অযোধ্যার নবাব আশাউদ্দৌলা খুব বড় দাতা হিসাবে ছিলেন; নগর পরিভ্রমণকালে একদিন তিনি দেখেন এক ফকির বলছে, ‘জিসকো না দে খোদাতালা উসকো দে আশাউদ্দৌলা’; নবাব ফকিরকে দরবারে দেখা করতে বলেন; ফকির দরবারে এলে নবাব তাকে একটা তরমুজ দেন; ফকির ভাবে, ‘হায় কপাল এমন দরাজদিল নবাব আমাকে একটা তরমুজ দিলেন!’ ফকির তরমুজটা বাজারেে বিক্রি করে সেই পয়সায় চানাভাজা কিনে খায়; পরের দিন নবাব ফকিরকে দরবারে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তরমুজটা তুমি কি করেছো?’ সে উত্তর দেয়, ‘চারআনায় বিক্রি করে সেই পয়সায় চানাভাজা কিনে খেয়েছি’; নবাব ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘বেকুব ফকির তোমাকে যে তরমুজটা দিয়েছিলাম তার ভিতরে মোহর ছিল’; এই কথা শুনে ফকির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে; তখন নবাব তাকে বলেন, ‘এখন থেকে বলবে, জিসকো না দে খোদাতালা উসকো না দে আশাউদ্দৌলা’।) |
জিস্দা তেগ উস্দা দেগ | যার তলোয়ার তার দেশ অর্থাৎ যার শক্তি আছে সেই সকল বিষয়ের অধিকারী হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'জিস্কী লাঠি উস্কী ভৈঁস'। |
জিহ্বা টলতি ধীরস্য | ধীর সংযতব্যক্তির জিভও কখনো কখনো বিচলিত হয়, অসংযত কথাবার্তা বলে; তুলনীয়- মুনিনাঞ্চ মতিভ্রমঃ। |
জীবন একপেয়ালা চায়ের মত, যতই তৃপ্তির সাথে পান করি ততই তলার দিকে যেতে থাকি | একদিন বাঁচার অর্থ মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে যাওয়া। |
জীবন চলমান ছায়া ছাড়া আর কিছুই নয় | জীবন মায়াময় আলোছায়ার খেলা; সবই অনিত্য। |
জীবনপাত্রের তলানি পর্যন্ত নিঃশেষে করিব পান- কবি মিল্টন | জীবনকে পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার বাসনা। |
জীবন সত্যই সরল, কিন্তু আমরা তাকে জটিল করার উপর জোর দিই- কনফুসিয়াস | মানুষের দুর্ভাগ্য যে সে সহজ সরল হতে পারে না। |
জীবনে মরণে সৎলোকের কোন ক্ষতি হয় না- উপনিষদ | সততা জীবনের শ্রেষ্ঠমন্ত্র। |
জীবনে শেষ বলে কিছু হয় না | চলমান জীবনে সবসময়ই কিছু-না-কিছু নতুন অপেক্ষা করে থাকে। |
জীবনের পাতা বইয়ের পাতা থেকে অনেক বেশি কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায় | অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ শ্রেষ্ট শিক্ষালাভ করে। |
জীবনের প্রতিটি সিঁড়িতে পা রেখেই ওপরে ওঠা উচিৎ, ডিঙ্গিয়ে নয় | সতর্ক পদক্ষেপে চলা উচিৎ; ধীর ও স্থির পদক্ষেপ। |
জীবনের লম্বা পথ বড় আঁকাবাঁকা | উত্থান-পতনে মোড়া মানুষের জীবন। |
জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর- বিবেকানন্দ | জীবে দয়াই শ্রেষ্ট ধর্ম। |
জুতো মেরে গরু দান | অপমান করে পরে ক্ষমা প্রার্থনা। |
জুতো মেরেছে, অপমান তো করে নি | নির্লজ্জ বেহায়ার উক্তি; বিন্দুমাত্র মান-অপমানবোধ নেই। |
জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ | সংসারের ছোটবড় ভালোমন্দ সবরকম কাজকর্ম। |
জুয়াচোরের বাড়ি ফলার, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। | অনিশ্চয়তাসম্পর্কে সন্ধিহান; শেষ না হলে বিশ্বাস নেই; তুলনীয়- 'ঠগের বাড়ী নেমন্তন্ন না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'ঠোট ও কাপের মাঝে বিস্তর ফারাক'। |
জেলের পাছায় টেনা, নিকারীর কানে সোনা | জেলে মাছ ধরে কিন্তু তার দারিদ্র যায় না, অপরদিকে এই মাছ নিয়ে যারা কারবার করে তারা সকলে ধনবান; তুলনীয়- চাষী করে চাষ, ফড়ে খায় ফসল'; 'যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই'। |
জৈসা কা তৈসা | যেমন তেমনি; যার যেমন তার তেমন; তুলনীয়-'যোগ্যং যোগ্যেন যুজ্যতে'। |
জৈসা দেওগে বৈসা পাওগে | যেমন দেবে তেমন পাবে; আয়নায় যেমন মুখ দেখাবে তেমন মুখ দেখবে; তুলনীয়- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
জৈসা দেশ ঐসা বেশ | সময়ানুসার ব্যবহার; অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয়; সমতুল্য- 'যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান'; 'যস্মিন দেশে যদাচার' ইত্যাদি। |
জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ভরা; শস্যের ভার সহে না ধরা- খনা | জৈষ্ঠ্যেমাসে রৌদ্র থাকলে এবং আষাঢ়্মাসে বৃষ্টি হলে ফলন খুব ভাল হয় এবং শস্যের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়; পাঠান্তত- 'জৈষ্ঠ্য মারে আষাঢ়ে ভরে, কাটিয়া মাড়িয়া ঘর করে'। |
জোঁকের মুখে চুন/নুন | তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়লে দুর্দান্ত চরিত্রের লোকও নেতিয়ে যায়; সমতুল্য- 'সাপের মুখে ঈষার মূল'। |
জোঁকের গায়ে জোঁক বসে না | সমধর্মীরা পরস্পরের ক্ষতি করে না; তবে মানুষ তার ব্যতিক্রম; তুলনীয়- 'কাক কাকের মাংস খায় না'। |
জো করে টোট্কা উন্হীকো ঘুমকে পরৈ ফট্কা | পরের অনিষ্ট করতে গেলে নিজের অনিষ্ট হয়। |
জো গরজ্তা বহ বরস্তা নহি | যে মেঘ গর্জায় সে বর্ষায় না; বাংলা পাঠান্তর- বহু আড়ম্বরে লঘু ক্রিয়া'; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া'। |
জোঘরে আগুন লেগেছে | জতুগৃহে অ্যাগুন লেগেছে; বদরাগী লোকটাকে প্রচণ্ড ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। |
জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো | হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে তাই দিয়ে কোনমতে কাজ চালানো। |
জো পেলে জোলায় বোনে১ | জলমগ্ন নিম্নভূমি চাষোপযোগী হলে চাষী সেই জমিতেও চাষ করে। |
জো পেলে জোলায় বোনে২ | জোলা কাপড় বোনে, চাষ করে না; কিন্তু সে যদি জো অর্থাৎ সুযোগ পায় তবে সে কাপড় না বুনে শস্য বুনে। |
জোয়ার-ভাঁটা ও সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না | জীবন সময়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলে। |
জোয়ার থাকলে ভাঁটা আছে | সুখ-দুঃখ মিলিয়ে জীবন; অবিমিশ্র কিছু হয় না। |
জোয়ারের জল আর কতক্ষণ? | সুখের দিনগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় না; আসলে মনে হয় হঠাৎ যেন ফুরিয়ে গেলো। |
জোর যার মুল্লুক তার | শক্তি থাকলে সবকিছু জয় করা যায়; শক্তিশালীরা নানাদিকে রাজা হয়; সমতুল্য-জিস্কী লাঠি উস্কী ভৈঁস'; 'জিস্দা তেগ উস্দা দেগ'; 'লাঠি যার মাটি তার'; 'শক্তি যার দখল তার' ইত্যাদি। |
জোরে প্রশংসা কর এবং আস্তে দোষ দাও | মুক্তকণ্ঠে পরের প্রশংসা করা উচিত এবং কারো দোষ ধরা উচিত নয়। |
জ্ঞানস্যাভরণং ক্ষমা | ক্ষমা জ্ঞানের আভরণস্বরূপ। |
জ্ঞানহীন চিন্তা লাগাম ছেঁড়া ঘোড়ার মতো | আবোলতাবোল চিন্তায় মনে বিকার উৎপন্ন হয়। |
জ্ঞানহীনতা চরমতম দারিদ্রের লক্ষণ | অজ্ঞানের সারাটা জীবন বৃথাই যায়। |
জ্ঞানার্জন লবণাক্ত জলের মত, যত পান করবে তত জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়বে | যতই জ্ঞান অর্জন হয়, জ্ঞানপিপাসা ততই বাড়তে থাকে। |
জ্ঞানী আগে চিন্তা করে পরে বলে, মূর্খ আগে বলে পরে চিন্তা করে | জ্ঞানীরা ভেবে কাজ করে; মূর্খেরা কাজ করার পর ভাবে। |
জ্ঞানী মূর্খকে চিনতে পারে, মূর্খ জ্ঞানীকে চিনতে পারে না | জ্ঞানীর গুণ চিনতে পারা; মূর্খের গুণ চিনতে না পারা। |
জ্ঞানী কথা বলে কম শোনে বেশি বোকা কথা বলে বেশি শোনে কম | জ্ঞানীরা স্বল্পভাষী হয় বোকা বাচাল হয়। |
জ্ঞানী শোনে বোকা বলে | জ্ঞানীর শোনার আগ্রহ বেশী বোকার বলার আগ্রহ বেশি |
জ্ঞানীর কান বড় আর জিভ ছোট হয় | জ্ঞানীরা শোনেন বেশি, বলেন কম |
জ্ঞানী যা শোনে যুক্তি দিয়ে বিচার করে, বোকা যা শোনে বিশ্বাস করে | বুদ্ধিহীনের বিশ্বাসই সম্বল |
জ্ঞানীর মন সদাপরিবর্তনশীল, বোকারা রক্ষণশীল | জ্ঞানী বহমান নদীর মত; বোকা যেন বদ্ধ জলাশয়। |
জ্ঞানীর জিভ জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে | জ্ঞানীরা সংযতভাবে কথাবার্তা বলে। |
জ্ঞানীর সম্পদ তার জ্ঞান, মূর্খের সম্পদ তার অর্থ | জ্ঞানী জ্ঞানের কাঙাল; মূর্খ অর্থের কাঙাল। |
জ্ঞানেনহীনাঃ পশুভিসমানাঃ | জ্ঞনহীন লোক পশুর সমান; অজ্ঞান ও মূর্খ পশুর সমান। |
জ্যান্ত পোড়ে চিন্তায় মড়া পোড়ে চিতায় | দুশ্চিন্তা মানুষকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। |
জ্যান্ত মাছে পোকা পড়ানো | মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুচরিত্রকে কালিমালিপ্ত করা। |
জ্যান্ত মাছে পোকা পড়ে না | সতেজ মন পাপ এড়িয়ে চলে। |
জ্যান্তে দেয় না চালভাজার খোলা (পাত্র) মরলে দেবে রামায়ণের পালা | জীবিত অবস্থায় কাউকে কোনপ্রকার সাহায্য না করে মরার পর অনেক কিছু দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। |
জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালা | অধিকতর উত্তেজিত করা। সমতুল্য- 'অগ্নিতে ঘৃতাহূতি'। |
ঝ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঝকমারির মাসুল | নির্বুদ্ধিতার দণ্ড; সমতুল্য- 'আক্কেল সেলামি'। |
ঝড় উঠলে আশ্রয় খোঁজো | সবসময় নিরাপদ অবস্থায় থাকার পক্ষে ওকালতি। |
ঝড় থেমে গেলে সব কিছু শান্ত হয় | যেকোন প্রকার উথালপাথালের পর প্রকৃতি শান্ত হয়; ঝড়ের পর শান্তি আসে; সমতুল্য- 'মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে'; 'মেঘের পর রৌদ্র আসে' ইত্যাদি। |
ঝড়ে কাক/বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে | অন্যের কৃতিত্ব নিজের বলে জাহির করা; (উৎসকাহিনী- একসময় ঝড়ে এক কাক মারা পড়ে; একইসময়ে এক ফকির সেই গাছের তলায় বসে কাক মারার মন্ত্র পড়ছিল; সম্পূর্ণ কাকতালীয় ঘটনা; কিন্তু ফকির ভাবে তার মন্ত্রের জোরে কাক মরেছে; কাকতলীয়ভাবে কেউ কোন কাজের কৃতিত্ব পেলে এই প্রবাদ বলা হয়); সমতুল্য- 'হরি বাঁচান প্রাণ, বৈদ্যের বাড়ে মান'; 'কাক মরল ঝড়ে প্যাঁচা ভাবে আমার শাপ লাগল হাড়েহাড়ে'। |
ঝড়োকাক | ঝড়ে কাক যেমন দুর্দশাগ্রস্ত হয় তেমন উদভ্রান্ত বিপদগ্রস্ত বিপর্যস্ত ব্যক্তি |
ঝাঁকের কই ঝাঁকে ফেরে/মেশ/যাক | সমধর্মীরা একসাথে থাকতে ভালবাসে; (উৎসকাহিনী- জনৈক বদরাগী ব্রাহ্মণ চাকরসহ এক শিষ্যবাড়ী গিয়েছিল; শিষ্ট বড় বড় অনেক ডিমওয়ালা কইমাছ এনে দিয়েছিল; ব্রাহ্মণ রান্নাশেষে নিজে পাতে আটদশটা মাছ নেয় এবং চাকরকে একটা ডিমশূন্য মাছ দেয়; চাকর রেগে গিয়ে 'ঝাঁকের কই ঝাঁকে যাক' বলে মাছটা ব্রাহ্মণের পাতে ছুঁড়ে দেয়; এর ফলে চাকরের ভাগ্যেই সবকটি মাছ জুটে। |
ঝাঁকি/ঝাঁঝরি বলে চালনি তুই বড় ছেঁদা | নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; নিজের দোষে নজর পড়ে না পরের দোষে তীক্ষ্ণদৃষ্টি; পরছিদ্রান্বেষী; সমতুল্য- 'আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে'; চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'; 'হাঁড়ি বলে কড়াই তোর পিছনটা বড়া কালা' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বড় ফোঁড়ওয়ালা'। |
ঝাঁপাবার আগে দেখে নিও, ঝাঁপালে ফিরে দেখো না | দেখেশুনে কাজ করার পক্ষে চেতাবনি। |
ঝাড়ের দোষ | আকরের/ বংশের দোষ। |
ঝাড়ের বাঁশ পড়ে না | সংঘবদ্ধ থাকলে বিপদের পড়তে হয় না। |
ঝামেলায় না পড়লে ঝামেলার (দুশ্চিন্তা) পিছু নিও না | অনাবশ্যক ঝামেলায় না জড়ানোর পক্ষে চেতাবনি। |
ঝাল লঙ্কার লাল চামড়া | দুর্জনের রঙটা সুন্দর বা সে সুন্দর দেখতে হয়। |
ঝালে, ঝোলে, অম্বলে | সবঠেকেই উপস্থিত; সমতুল্য- 'সর্বঘটের কাঁঠালী কলা'। |
ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো | কন্যাকে শাসন করে পুত্রবধুকে শিক্ষা দান; পরোক্ষে তিরস্কার; ইঙ্গিতে কার্যসাধন। |
ঝি জব্দ কিলে, বৌ জব্দ শিলে, পাড়াপড়শী জব্দ চোখে আঙুল দিলে | প্রহারে কন্যা, বাটনা বাটতে দিলে বৌ এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখিয়ে দিলে প্রতিবেশী ঠাণ্ডা হয়। |
ঝিনুক দিয়ে সাগর ছেঁচা | ক্ষুদ্র উপায়ে বিরাট কাজ করার চেষ্টা; সমতুল্য- 'কলার ভেলায় সাগর পার'; 'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'নরুণ দিয়ে তালগাছ কাটা'; 'মুড়া কোদালে পুকুর কাটা'; 'সাঁতার দিয়ে সিন্ধু পার' ইত্যাদি। |
ঝিনুকমাত্রেই শুক্তি থাকে না | সব ঝিনুকে মুক্তা হয় না; হাত পা থাকলেই মানুষ হয় না; সব মানুষ মানুষ নয়; সমতুল্য- 'চকচক করলেই সোনা হয় না'। |
ঝির ঝি করবে কি? | কন্যাই বড় উপকার করল এখন তার কন্যা এসে উপকার করবে; কোন উপকার পাওয়া যাবে না লক্ষণায়- ব্যঙ্গোক্তি। |
ঝুঁকি না নিলে লাভ হয় না | জীবনে ঝুঁকি আছে; ঝুঁকি না নিলে আখেরে লাভ হয় না। |
ঝুটে কা মুঁহ কালা সচ্চে কা বোলওয়ালা | শেষপর্যন্ত সত্যের জয় হয়; সমতুল্য- 'সত্যমেব জয়তে'। |
ঝোপ বুঝে কোপ মারা | অবসরে সুযোগগ্রহণ/কার্যসাধন; অবস্থাবুঝে ব্যবস্থাগ্রহণ; সুযোগমতো আঘাত করা; সুযোগ বুঝে কাজ করা। |
ঝোল টানো নিজের পাতে | নিজের স্বার্থ গুছিয়ে নাও। |
ঝোল ভাত খাওয়া | অনেকদিন ধরে রোগে ভুগে পথ্য করা |
ঝোল ভাত খাওয়ানো১ | দীর্ঘকাল ধরে রোগের কামনা করে গালি দেওয়া |
ঝোল ভাত খাওয়ানো২ | হাত পা ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখার ভয় দেখানো |
ঝোলে, ঝালে, অম্বলে- সবটেকে বেগুন চলে | নানাগুণের গুণী; সমতুল্য- 'সব সাজে মোহিনীমোহন'; 'সর্বঘটের কাঁঠালী কলা'। |
ঝোলে অম্বলে এক করা | দুইই সুখাদ্য কিন্তু দুইয়ের মিশ্রণ অখাদ্য; যাদের পৃথক থাকা উচিত তাদের মিশ্রিত করলে এই প্রবাদ উক্ত হয়। |
ট
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
টক টসো আঁটিসারা শস্যশূন্য আঁশ ভরা, সেই আম বিলাবার ধারা | বিলাবার জন্য নিকৃষ্ট দ্রব্যই নির্বাচন করা হয়। |
টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস | ছোটযন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে গিয়ে বড়যন্ত্রণায় পড়া; তুলনীয়- 'তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ'; 'বিছার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে সাপের মুখে পতন'। |
টাক, প্রকৃতি, গোদ মরণে হয় শোধ | মাথাভরা টাক, স্বভাব ও পায়ের গোদ মরার আগে ছাড়ে না। |
টাকা উড়ে চলে যায়, টাকা রাখা বিষম দায় | লক্ষ্মী চঞ্চলা; যত্ন না নিলে লক্ষ্মী ঘর ছাড়ে; পাঠান্তর- 'টাকার ডানা আছে, উড়ে যেতে কতক্ষণ?' |
টাকা গাছের ফল নয় যে, ছিঁড়ে/পেড়ে নিলে হল | অর্থ পরিশ্রমের ফল। |
টাকা টাকা বল ভাই, টাকার মত জিনিস নাই, টাকা বিনে সংসারেতে সব যন্ত্রণা | অর্থ না থাকলে সুখ ভোগ সম্ভব নয়। |
টাকা চিটেগুড়- মক্ষি টানে | অর্থ থাকলে পাশে অনেক উমেদার জুটে যায়। |
টাকা তুমি যাচ্ছ কোথা? পিরিত যথা; আসবে কবে? বিচ্ছেদ যবে | টাকা ধার দেওয়ার সময় পিরিত থাকে; টাকা ফেরত চাইলেই যত ঝগডাঝাটি, বন্ধু বিচ্ছেদ। |
টাকা তোমারও নয়, টাকা আমারও নয়, টাকা প্রয়োজনের | প্রয়োজনের সময় কাজে না লাগলে সেই অর্থ থাকা বা না-থাকা সমান কথা। |
টাকা থাকলে অভাবের অভাব হয় | অর্থশালী কিভবে অর্থ ব্যয় করবে ভেবে পায় না; অভাব না থাকায় অর্থশালী অসদুপায়ে অর্থ ব্যয় করে। |
টাকা থাকলেই অপব্যয় | অর্থশালী প্রয়োজনের তুলনায় আড়ম্বরে বেশি খরচ করে; দেখনদারী। |
টাকা থাকলে ভদ্রলোক, না থাকলেই ছোটলোক | সমাজে উচ্চবিত্তরা সম্মানার্থে ভদ্রলোক এবং নিম্নবিত্তেরা তুচ্ছার্থে ছোটলোক আখ্যায়িত হয়। |
টাকা থাকলে ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হয় | অর্থ থাকলে নয়ছয় করা যায়; পাঠান্তর- টাকা থাকলে বেয়ানের বাপের শ্রাদ্ধ হয় |
টাকা দিয়ে চিনি নারী, নারী দিয়ে নর | যে নারী অর্থলোলুপ নয় এবং যে পুরুষ নারীলোলুপ নয় তারাই প্রকৃত সৎ নারী ও পুরুষ। |
টাকা দিলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে | অর্থ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। |
টাকা ধার চাইলে বন্ধু বিচ্ছেদ | একবার ঋণ নিলে সে ঋণ আর শোধ হয় না। |
টাকা না থাকলে ভাল কাজ করা যায় না | অর্থের রূপালীরেখা হল- বহু ভালো কাজে অর্থ ব্যয়িত হয়। |
টাকা বাড়লে দেমাক বাড়ে | খুব কম অর্থশালীই বিনয়ী হয়। |
টাকা মাটি, মাটি টাকা- রামকৃষ্ণ | টাকা টাকা করে টাকার প্রতি বেশি নজর না দিতে ঠাকুরের হিতোপদেশ; টাকা ও মাটি দুইই সমান তুচ্ছ; উভয়ই আসক্তির বন্ধনে জড়ায়, ঈশ্বরের সন্ধান দেয় না। |
টাকা যার মামলা/শক্তি তার | অর্থের কাছে বিচার নতজানু হয়; অর্থের জোরে বিচার কেনা যায়; যে বেশি খরচ করে সে মকদ্দমায় জেতে; তুলনীয়- লাঠি যার মাটি তার'। |
টাকায় টাকা আনে/টানে১ | ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ করলে লাভ হিসাবে অর্থ আয় হয়; সমতুল্য- 'বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী'। |
টাকায় টাকা আনে/টানে২ | যার অর্থ আছে তার অর্থাগম হয়; সমতুল্য- 'জলে জল বাঁধে'; পাঠান্তর- 'পয়সায় পয়সা আসে'। |
টাকায় বাঘের দুধ মেলে | অর্থে জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। |
টাকায় সব দোষ ঢাকা পড়ে/যায় | অর্থে সব সমালোচনায় মুখ বন্ধ করা যায়। |
টাকার কোন গন্ধ নেই | টাকা সবার কাছে সমান আদরণীয়। |
টাকার নৌকা পাহাড় দিয়ে যায় | অর্থ থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। |
টানবার যার সে না টানলে লাভ নাই কোন কাঁদলে | যার দেখার কথা সে না দেখলে কেঁদে কেটে কোন লাভ হবে না। |
টেকোমাথায় উঠলো চুল মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল১ | অতি হীন অবস্থা থেকে ভাল অবস্থায় উন্নীত হওয়া। |
টেক মাথায় উঠলো চুল মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল২ | বুড়োবয়সে বিয়ে করতে যাওয়া। |
টেনে বুনতে কুলোয় না | অর্থের টানাটানি; অভাবের সংসার; এদিক আনতে ওদিক কুলায় না। |
টোপ ফেললে খায় না সেই বা কেমন বঁড়শি, ইসারায় বোঝে না সেই বা কেমন পড়শি | উভয়ই কোন কাজে আসে না। |
ট্যাক খালি তো মুখ কালি | অর্থের টানাটানিতে মন দুশ্চিন্তায় পোড়ে। |
ট্যাক ভারি তো মন হালকা | অর্থ থাকলে সব আকাঙ্খা মেটে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে। |
ট্যানা (ছেঁড়া টুকরা কাপড়) নাই ফ্যানা আছে | শূন্যগর্ভ লোকের অহঙ্কার বেশি হয়। |
ঠ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঠগ বাছতে গাঁঁ উজাড়/শূন্য | ভালমন্দের বিচারে মন্দর সংখ্যাই বেশী; যেখানে প্রায় সবাই অসৎ সেখানে বাছাবাছি করা কঠিন; তুলনীয়- 'কম্বলের লোম বাছলে থাকে কি?' |
ঠগের বাড়ী নেমন্তন্ন না আচাঁলে বিশ্বাস নেই | অসাধুর দেওয়া কথাসম্পর্কে সন্ধিহান; কাজ হলেই তবে বিশ্বাস হয়; সমতুল্য 'জুয়াচোরের বাড়ি ফলার, না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'বেল্লিকের নিমন্ত্রণ না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'ঠোট ও কাপের মধ্যে বিস্তর ফারাক'। |
ঠাঁট ঠমকে বিকোয় ঘোড়া | গুণে নয় জমকে বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি হয়; বাহ্যিক ভড়ং দেখে লোকে ভোলে; সমতুল্য- 'আগে দর্শনধারী পিছে গুণবিচারী'; 'যো দেখতা হ্যায় উয়ো বিক্তা হায়' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি'; 'শুধু দেখনাই ভাল হলেই চলে না গুণ থাকা চাই' ইত্যাদি । |
ঠাকুর ঘরে কে আমি কলা খাই নি | অপরাধী দুর্বলচিত্তের হয়; চালাকি করতে গিয়ে ধরা পড়া; অতি সতর্কতায় দোষ-স্বীকার; এককথার অন্য উত্তর দিয়ে বদ মনোভাব প্রকাশ করে ফেলা; তূলনীয়- 'যে অজুহাত দেখায় সে দোষ স্বীকার করে'। |
ঠাকুরকে দেখিয়ে কলা নৈবিদ্যি নিয়ে পালা | প্রবঞ্চনা করা। |
ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি খোলে | মাথা গরম হলে বুদ্ধি গুলিয়ে যায়। |
ঠুঁটো জগান্নাথ | কাজ করতে বিমুখ ব্যক্তিকে ঠুঁটো জগান্নাথের সঙ্গে তুলনা করা হয়। |
ঠেঁটা লোকের মুখে আঁট বাইরে থেকে কাটে গাঁট | ধূর্তলোক মিষ্টিকথায় ভুলিয়ে প্রবঞ্চনা করে। |
ঠেকে শেখে আর দেখে শেখে | অজ্ঞানীরা নিজের কষ্ট থেকে শিক্ষা পায়; জ্ঞানীরা অপরের অজ্ঞতার ফল দেখে শিক্ষা নেয়। |
ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর | দুই সতীনের ঝগড়ায় স্বামীবেচারা প্রাণ ওষ্ঠাগত, কাকে ছেড়ে কাকে রাখে। |
ঠেলায় পড়লে ঠাকুরদাদি, নইলে তার নাকে পাঁদি (বাতকর্ম) | বিপদে পড়ে কারো শরণ নেওয়া; বিপদ সরে গেলেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। |
ঠেলায় পড়ে ঢেলায় সেলাম১ | প্রকৃত বিষয় গোপন করে সম্ভ্রম রক্ষা করার চেষ্টা; গল্পে আছে- পা পিছলে পড়ে যেতে একজন বলল- কি পড়ে গেলে? উত্তরে সে বলল-পড়ব কেন, শিবকে প্রণাম করলাম। |
ঠেলায় পড়ে ঢেলায় সেলাম১ | বিপদে পড়ে ঈশ্বরকে স্মরণ; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম', 'বিপদে পড়লে শ্রীমধুসূদন' ইত্যাদি। |
ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না | বিপদে পড়লে যেকোনভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়। |
ঠেলায় পড়লে বাঘেও ঘাস খায় | বাধ্য হলে অপছন্দকেও স্বীকার করতে হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পড়েছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে'। |
ঠেলায় পড়লে বেড়াল মান্দার গাছেও (একপ্রকার কাঁটাযুক্ত গাছ) উঠে | বিপদে পড়লে কোন বাধাই বাধা নয়। |
ঠেলায় পড়লে শালগ্রাম নইলে পাথরের ঢেলা | ভয় থেকে ভগবানে ভক্তি। |
ঠেলায় পড়লে বামণ শালগ্রামের পৈতা/সোনা বেঁচে খায় | বিপদে পড়লে ভগবানে ভক্তি শিকেয় ওঠে। |
ঠেলার নাম বাবাজী | বিপদে পড়লে সবাই বাপ বাপ বলে; বিপদের সময় অবজ্ঞাতকে সমাদর করতে হয়; সমতুল্য- 'সাধে কি বাবা বলি গুতোর চোটে বাবা বলায়'। |
ঠোঁক কাটা কাক | সববিষয়ে ঠোক্কর মারা লোক; যে সববিষয়ে খুঁত ধরে। |
ঠ্যাং থাকতে লাঠি কেন? | দুর্বলের প্রতি বক্রোক্তি। |
ড
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ডজনে তেরো | ফাউয়ের হিসাব; অতি স্বাভাবিক ব্যাপার; একটা ফাউ সবাই চেয়ে থাকে এবং পেয়ে থাকে। |
ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না (নেই) | অর্থের টানাটানি; আয় থেকে ব্যয় বেশি; আয় অল্প কিছুতেই সংকুলান হয় না; সমতুল্য- 'খরচের আঁকে আনতে জমার আঁকে কুলায় না'; 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ডাইনে আনতে বামে ফুরায়'। |
ডাইনের মায়া বুঝা ভার | কপটীর কপটতা বুঝা খুব কঠিন। |
ডাইলের মধ্যে মুসুরি, সাগাইয়ের (আত্মীয়) মধ্যে শাশুড়ি। | উভয়ে গুণে এবং উপকারিতায় শ্রেষ্ঠ। |
ডাকয়ে পক্ষী না ছাড়ে বাসা; উড়িয়ে বৈসে খাবে করি আশা; ফিরে যায় বাসে না পায় দিশা খনা ডেকে বলে সেইতো ঊষা | রাতের পাখীরা যখন বাসার মধ্যে থাকে; বাসা ছেড়ে উড়ার ইচ্ছা হয় তবু উড়তে পারে না; বার বার দেশে হারা হয়ে বাসায় ফিরে আসে; রাত্রিশেষের সেই সময়টাই ঊষাকাল। |
ডাকলে ডাক, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ | অলসতার প্রতি বক্রোক্তি; চলার পথে কারো ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লে এক ডাকের পথ (যতদূর থেকে চিৎকার শোনা যায় ততটা একডাকে পথ) চলার সময় নষ্ট; একবার বসে পড়লে এক ক্রোশ পথ যাওয়া্র সময় নষ্ট হয়; পাঠান্তর- 'দাঁড়ালে পোয়া, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ'। |
ডাঙায় বাঘের ভয়, জলেতে কুমীর | উভয়সঙ্কট; সমার্থক বাগধারা- এগুলে রাম পিছুলে রাবণ, শাঁখের করাত, যেতেও কাটে আসতেও কাটে; সাপের ছুঁচো গেলা ইত্যাদি। |
ডান হাতখান দিলে বাম হাতখান পাওয়া যায় | হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায়। |
ডানপিটের মরণ গাছের আগায় | গাছ থেকে পড়ে হাত পা ভাঙে; দুর্দান্ত লোকের প্রায়শঃই অপঘাতে মৃত্যু হয়। |
ডানহাতের কাজ বামহাত যেন না জানে | কোন গোপন কাজ দ্বিতীয়ব্যক্তি যেন না জানে। |
ডাল যেমন বাঁকাবে গাছ তেমনি বাড়বে | একজনব্যক্তির উপর প্রাথমিকশিক্ষা স্থায়ী প্রভাব ফেলে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে টাঁশটাঁশ'। |
ডালছাড়া বানর | বানর যতক্ষণ ডালে থাকে ততক্ষণ তার বিক্রম; ডাল ছাড়লেই বিক্রম আর থাকে না; অনভ্যস্তস্থানে স্বাভাবিক হওয়া যায় না; সমতুল্য- জলছাড়া কুমির/মাছ; তুলনীয়- 'গোল গর্তে চৌকো পেরেেক'। |
ডিডি ঢল্লে | ধরা পড়ার ভয় থেকে রঙ্গচ্ছলে বলা হয়; উৎসকাহিনী- তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় লিখিত স্বর্ণলতা উপন্যাসের অবলম্বনে রচিত গিরিশ ঘোষের নাটক 'সরলা'এর মুখ্য পুরুষচরিত্র গদাধর; নির্বোধ গদাধর দুষ্টুমিতে পটু; স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না; দ'কে 'ড' বলে; গদাধরকে গডাঢড় বলে; তাকে শাড়ী পরিয়ে তার দিদি নিয়ে যাচ্ছিল; তার চলনে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ থেকে দাঁড়াতে বলে; ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলে ওঠে, 'ডিডি ঢল্লে'। |
ডিমফোটার আগেই মুরগীর ছানা গোনা | আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য- 'কাপ ও ঠোঁটের মাঝে বিস্তর ফারাক'; 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছে না উঠতেই এককাঁদি';'রাবণের ছাদনাতলা'ইত্যাদি। |
ডিমের খোলে চেপে সাগরপার করা | অবাস্তব কল্পনা, যা হবার নয় তাই করার ব্যর্থ প্রয়াস; সমতুল্য- 'কলার ভেলায় সাগরপার'; 'শামুকের খোলে জল সেচা' ইত্যাদি। |
ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়'। | খুব কঠিন অবস্থাতে পড়লে সামান্যতম সাহায্যকেও আঁকড়ে ধরে;
সঙ্কটকালে পাওয়া সামান্য সাহায্য বিরাট সাহায্য বলে মনে হয়; মরণাপন্ন মানুষের শেষচেষ্টা; হিন্দি পাঠান্তর- 'ডুবতে কো তিনকে (খড়, ঘাস) কা সহারা |
ডুবে ডুবে খাই পানি, আল্লা জানে আর আমি জানি | গোপনে করা কাজ ধরা দুঃসাধ্য ব্যাপার; গোপনে যারা দুস্কর্ম করে তাদের উদ্দেশে বলা হয় (উৎস- রোজার দিনে জল খাওয়া নিষিদ্ধ; গাজনের সন্ন্যাসীর জল খাওয়া নিষিদ্ধ); পাঠান্তর- 'ডুবে ডুবে জল খায়, শিবের বাবাও টের না পায়'। |
ডুবে ডুবে জল/পানি খাওয়া | গোপনে কাজ করা; লোকচক্ষুর অগোচরে অন্যায় কাজ করা। |
ডুবেছি না ডুবতে আছি, দেখি পাতাল কতদূর? | বিপর্যয় লুকানোর প্রচেষ্ঠা। |
ডুমুরের ফুল, সাপের পা, কল্পনা শুধু কল্পনা | অশ্বডিম্ব, অমাবস্যার চাঁদ, কোকিলের বাসা, ডুমুরের ফুল, সাপের পা ইত্যাদি হয় অদৃশ্য নয় অবাস্তব কল্পনা। |
ডেকে ডেকে খনা গান, রোদে ধান ছায়ায় পান | রৌদ্রপূর্ণ জমিতে ধান এবং ছায়াপূর্ণ জমিতে পান চাস করতে হয়; তাতেই বেশি ফসল পাওয়া যায়। |
ডেকে শাল নেওয়া | শখের বিপদ; ইচ্ছা করে বিপদে পড়া। |
ডোবা দেখলেই ব্যাঙ লাফায় | প্রিয়বস্তু দেখলে সবারই আনন্দ হয়। |
ডোলভরা আশা, কুলোভরা ছাই | আশা অনেক কিন্তু কোন আশাই সফল হয় না; আশার শেষ নেই, নিরাশারও শেষ নেই। |
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার১ | যাবার জন্য বধু সেজেগুজে বসে আছে, অথচ পালকী ও বাহকের দেখা নেই; |
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার২ | কাজের যোগাড় নাই অথচ কাজের লোক প্রস্তুত; কারণের আগে কার্য; বিপরীতবুদ্ধির কাজ। |
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার | যাবার জন্য সবাই সেজেগুজে বসে আছে অথচ যাবার কোন জায়গা নেই। |
ঢ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ঢাকঢাক গুড়গুড় | প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা; কলঙ্ক চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা। |
ঢাক বাজিয়ে ইঁদুর ধরা | সাড়ম্বরে সামান্য কাজ করা। |
ঢাকী শুদ্ধু বিসর্জন | সমূলে বিনাশ। |
ঢাকের কাছে টেমটেমি | খুববড় ও খুবছোটর মধ্যে তুলনা হয় না; সমতুল্য- 'চাঁদের কাছে জোনাকি'। |
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি১ | আসল খরচ থেকে আড়ম্বরের খরচ বেশি; বাজে কাজে অযথা অর্থব্যয়। |
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি২ | অসার বাহ্যাড়ম্বর করতে গিয়ে আসল জিনিস হারানো। |
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি৩ | সামান্য বিষয়ে অসামান্য ব্যয়; তুলনীয়- 'গাড়ী কিনতে গিয়ে বাড়ী বিক্রি'। |
ঢাকের বাঁয়া | কাছে থাকে কিন্তু কাজে লাগে না। |
ঢাকের বাদ্য থামলে মিষ্টি১ | কর্ণজ্বালা থেকে মুক্তি; বিরক্তিকর একঘেয়েমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি; যা অসহ্য তার ইতি হওয়াই ভালো; পাঠান্তর- 'ঢাকের বাদ্যি আর ঢেঁকির কচকচি চুপ করলেই ভাল'। |
ঢাকের বাদ্য থামলে মিষ্টি২ | ঝগড়া-বিবাদ থেমে গেলেই ভাল। |
ঢাল নেই তলোয়ার নেই আদ্দিরাম/নিধিরাম সর্দার | শূন্যহাতে বাহাদুরি; অক্ষমের আস্ফালন; নিজের অযোগ্যতাকে কথার মারপ্যাঁচে ঢাকা; পাঠান্তর- 'ধন নেই কড়ি নেই নিধিরাম পোদ্দার'; 'ধান নাই চাল নাই, আন্দিরাম মহাজন'। |
ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়১ | আঘাতের উত্তরে আরও বড় প্রত্যাঘাত আসে; পাঠান্তর- 'ঢিল মারলে পাটকেল পড়ে'; 'ঢিলের বদলে পাটকেল' |
ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়২ | পরের ক্ষতি করতে চাইলে নিজেরও ক্ষতি হয়। |
ঢিল দিয়ে ঢিল ভাঙা | কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা; সমতুল্য- 'কণ্টকেনৈব কণ্টকম'। |
ঢিল মেরে ঢিল খাওয়া | বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'চড় মেরে চড় খাওয়া'। |
ঢিলা দিয়ে টেনে আনা | আগে আলগা দিয়ে পরে নিয়ন্ত্রণে আনা; সমতুল্য- 'ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা'। |
ঢেঁকি অবতার | আহাম্মক, নির্বোধ; হাবাগোবা। |
ঢেঁকি কেন গাঁ বেড়াক না গড়ে পড়লে হল | অন্য কাজ যা খুশি করুক, আমার কিছু যায় আসে না, আ্রমার কাজটা হলেই হল। |
ঢেঁকি ভজে স্বর্গে যাওয়া | নিস্ফল প্রচেষ্টায় মোক্ষ নেই। |
ঢেঁকির কচকচি থামলেই মিষ্টি১ | বিরক্তিকর একঘেয়েমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি; পাঠান্তর- 'ঢেঁকির কচকচি আর ঢাকের বাদ্যি চুপ করলেই ভাল'। |
ঢেঁকির কচকচি থামলেই মিষ্টি২ | ঝগড়াঝাটি মিটে গেলেই ভাল। |
ঢেঁকির তসুলি | ঢেঁকির মধ্যবর্তী কীলক তসুলির একদিকে আঘাত করলে সেটা অন্যদিকে যায় লক্ষণায় যে দুদিকের মন জুগিয়ে চলে এমনব্যক্তি।শ্বেত |
ঢেঁকির শব্দ বড় | যার ভিতরে যার কিছুই নেই তার বাজে বেশি; সমতুল্য- 'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি'; পাঠান্তর= 'ফোঁপরা ঢেঁকির চোপর বেশি'। |
ঢেঁকিশাল/ঢেকশেল দিয়ে কটক যাওয়া | ঘুর/বাঁকাপথে কাজ করা; সহজ কাজ জটিল উপায়ে করা; সমতুল্য- 'অমরকণ্টক হয়ে অমরনাথ যাওয়া';'কানপুর হয়ে নাগপুর যাওয়া'; 'কামাখ্যা হয়ে কাশীধাম যাওয়া' ইত্যাদি। |
ঢেঁকিশালে/ঢেকশেলে যদি মানিক পাই, তবে কেন পর্বতে যাই১ | ঘরে বসেই যদি সুখ পাই তবে সুখের অন্বেষণে অন্যত্র ঘোরাঘুরির প্রয়োজব নেই; তুলনীয়- 'আমড়াতলায় আম পেলে আমতলায় কেবা যায়'। |
ঢেঁকিশালে/ঢেকশেলে যদি মানিক পাই, তবে কেন পর্বতে যাই২ | কাছে অভীষ্ট সিদ্ধ হলে দূরে যাওয়া নেই; পরিশ্রমে অনিচ্ছা। |
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে১ | যার যা স্বভাব তা মরলেও ছাড়তে পারে না। |
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে২ | মন্দভাগ্যের কোনো অবস্থাতেই ভালো কিছু হতে পারে না; তুলনীয় ‘অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়’; ‘আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে’। |
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে৩ | অবস্থার উন্নতি হলেও নিজের কাজ নিজেকেই করা উচিত। |
ঢেউ দেখে লা (নৌকা) ডুবিও না | ঢেউয়ের বহর দেখে ঘাবড়িয়ো না; বিপদে হতবুদ্ধি না হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করো। |
ঢোল কা ভিতর পোল (ফাঁপা) | আজকাল বেশিরভাগ লোকের বাইরের আড়ম্বর বেশি; সমতুল্য- বাইরে বাবুয়ানা ভেতরে খেড়'; 'ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন'; 'বাইরে কোঁচার পত্তন' ইত্যাদি। |
ঢোলের পাছে কাসি | অপরিহার্য সঙ্গী। |
ঢ্যাকার আগে চলা | ধাক্কা দেবার আগেই যাওয়া ভালো। |
ত
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
তক্রান্তং খলু ভোজনম | ভোজের শেষপাতে ঘোল খাওয়া ভাল। |
তত্র মৌনং হি শোভনম | বর্ষাকালে ব্যাঙেরা যখন বক্তা হয় তখন কোকিলেরা চুপ থাকে; সেই লক্ষণায় অজ্ঞানরে ভিড়ে মৌন থাকাই শোভন। |
তথাপি কাকো চ ন রাজহংসঃ | নানা মণিমাণিক্যের ভূষণে সাজালেও কাক কখনো রাজহাঁস হয় না। |
তথাস্তু | তথা অস্তু; তাই হউক। |
তন দেখলে মন নাশ, তল দেখলে সাধু নাশ | গল্পে ব্যাখ্যাটা ভাল হবে; একবনে এক ঋষি তেঁতুলগাছে উল্টা ঝুলে বহুবছর ধরে ধ্যান করছিলেন; রাজার ইচ্ছা হল উনার ধ্যান ভাঙাবেন। অনেক চেষ্টাতেও ভাঙাতে না পেরে ঘোষণা করে দিলেন যে ওই ঋষির ধ্যান ভাঙাতে পারবে তিনি তাকে পুরস্কৃত করবেন। এক মেয়ে এসে বললো, 'এটা কোন ব্যাপারই নয়; আমি ঋষির ধ্যান ভাঙিয়ে আপনার কাছে হাজির করাবো'; মেয়েটা কথা রেখেছিল কিছুদিন পর সে সাধুকে নিয়ে রাজার কাছে হাজির হল; সাধুর কাঁধে ছিল মেয়েটির গর্ভজাত ও সাধুর ঔরষজাত পুত্রসন্তান! |
তন্নষ্টং যন্ন দীয়তে | যাহা দান করা হয় না তাহাই নষ্ট হয়। |
তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ | ছোট বিপদ এড়াতে বড় বিপদে পড়া; সমতুল্য- 'টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস'; 'বিছার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে সাপের মুখে পতন'। |
তপ্তজলে ঘর পোড়ে না | জল গরম হলেও স্বাভাবিক শৈত্যগুণ হারায় না লক্ষণায়- ঠাণ্ডালোক রেগে গেলেও বেশি ক্ষতি করে না কিংবা সামান্য ভুলে বেশি ক্ষতি হয় না। |
তপ্ত ভাতে ঘি ঢালা | অপকার করার ভান করে উপকার করা; শাস্তি দেবার ছলে উপকার করা। |
তপ্ত ভাতে নুন জোটে না, পান্তা ভাতে ঘি | সামান্য বিষয় জোটে না অসামান্যের দাবী। |
তমসোমা জ্যোতির্গময়, অসদোমা সদগময়, মৃত্যোর্মা অমৃতগময় | আমাকে- অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে চল; অসৎপথ থেকে সৎপথে নিয়ে চল; মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে নিয়ে চল। |
তমোগুণে অধোগতি | মোহ থাকলে পতন অনিবার্য। |
তর্কই জ্ঞানের উৎস | বাদ থাকলে প্রতিবাদ হয়; প্রতিবাদ থেকে সম্বাদে উত্তীর্ণ হয়। |
তর্কে জেতা নয়, তর্কে না জড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ | বুদ্ধিমানেরা তর্কে জড়ায় না; কথায় বলে 'তর্কে তর্ক বাড়ে'। |
তর্কে তর্ক বাড়ে | তর্কের কোন মীমাংসা নেই। |
তলোয়ার যার, দেশ তার | বলশালী ক্ষমতা ভোগ করে; সমতুল্য- 'জিস্কি লাঠ উস্কি ভৈঁস'; 'জিস্দা তেগ উস্দা দেগ'; 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'লাঠি যার মাটি তার' ইত্যাদি। |
তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্টঃ | ঈশ্বরের সন্তোষে জগৎ তৃপ্ত। |
তস্য তদেব মধুরং যস্য মনো যত্র সংলগ্নম | যার মন যাতে অনুরক্ত তার কাছে সেটাই মনোহর; সমতুল্য- 'যার সাথে যার মজে মন, কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম'। |
তাঁতীকুলও গেল, বৈষ্ণবকুলও গেল | দু’দিক সামালাতে গিয়ে দুদিকই হারালো; এইকাজ ওইকাজ করতে গিয়ে দুইকাজই নষ্ট হলো; (উৎসকাহিনী- তাঁত বোনার কাজে আর পয়সা নেই দেখে আরামে থাকতে এক তাঁতী বৈষ্ণবের ভেক নিল; আখড়ার মোহান্ত তাকে প্রথমেই ভিক্ষা করতে পাঠায়; সে দেখলো এ তো মহাজ্বালা; আগে ঘরে বসে কাজ করা যেত; এখন দ্বারেদ্বারে ভিক্ষার জন্য ঘুরতে হবে; সে বেঁকে বসল; ফলে মোহান্ত তাকে তাড়িয়ে দিলো; এদিকে ভেক নেওয়ার জন্য তাঁতীকুলেও আর তার স্থান হল না; এই ভাবে সে দুকুল হারালো;) তুলনীয়- 'একূল গেল ওকূল গেলও অকূল পারে গোকুল'। |
তাঁতী রাগে কাপড় ছেঁড়ে, আপনার ক্ষতি আপনি করে | রাগে অন্ধ হলে বুদ্ধি গলতে শুরু করে; নির্বোধলোক রাগে নিজেরই ক্ষতি করে। |
তাজমহল একদিনে তৈরী হয় নি | মহানসৃষ্টি অনেক পরিশ্রমের ফসল; তিলে তিলে গড়ে ওঠে; তুলনীয়- 'তিলে তিলে তিলোত্তমা'; 'রোমনগরী একদিনে সৃষ্টি হয় নি'। |
তাড়াতাড়িতে বাড়াবাড়ি | তাড়াতাড়ি করলে নজর এড়িয়ে কাজে অনেক ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
তাড়াহুড়া করলে বিলম্ব হয় | তাড়াআড়ি করলে ভুলভ্রান্তি হয় এবং শেষপর্যন্ত কাজে দেরী হয়; পাঠান্তর- 'তাড়াহুড়োয় সময় নষ্ট'। |
তাত সয় তো বাত সয় না১ | কথা শুনতে নারাজ; বাতাসের গরম সহ্য হয়, কিন্তু কথার গরম সহ্য হয় না। |
তাত সয় তো বাত সয় না২ | গরম বাতাস সহ্য করা যায় কিন্তু শীতল বাতাস সহ্য করা যায় না। |
তাত সয় তো বাত সয় না৩ | গরম হাওয়া খারাপ কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ হাওয়া আরও খারাপ। |
তাতে কিছু যায় আসে না কত আস্তে তুমি হাঁটছো যদি না তুমি থেমে যাও- কনফুসিয়াস | চলাই জীবনের ধর্ম; এগিয়ে যেতে হবে এটাই জীবনের মন্ত্র; তুলনীয়- 'চরৈবেতি চরৈবেতি'। |
তাদের প্রায়শই পরিবর্তন করতে হবে, যারা সুখ এবং জ্ঞানে অবিচল থাকবে - কনফুসিয়াস | চারপাশের চলমান পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রেখে আমাদের চলতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে; তবেই সুখ ও জ্ঞান বজায় থাকবে; জীবনে চলার পথে অবশ্যই নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। |
তালগাছের আড়াই হাত১ | তালগাছে ওঠার ক্ষেত্রে শেষ ও কঠিন অংশ; বিশেষ কাজের শেষ কঠিন অংশ। |
তালগাছের আড়াই হাত২ | তালগাছকে একহাত পরিমাণ ধরলে বিশাল উঁচুকিছু। |
তাল তামাক পাশা তিন কর্মনাশা | এই তিন বিষয়ে আসক্তি ভালো নয়; এতে সময় ও কাজ নষ্ট হয়। |
তালপাতার ছায়া | ক্ষণস্থায়ী বিষয়; এই আছে তো এই নেই। |
তালপাতার ছায়া মিছা কর তার মায়া | ক্ষণস্থায়ী বিষয়ের উপর নির্ভর করা যায় না; পাঠান্তর-'চাকরী মেঘের ছায়া মিথ্যা কর মায়া';তুলনীয়- 'শঠের মায়া তালেের ছায়া'। |
তালপাতার সেপাই | শীর্ণ কৃশ শক্তিহীন লোক। |
তালপুকুর নামে ঘটি ডোবে/বোড়ে না১ | নামডাক খুব আছে কিন্তু কাজে কিছু না। |
তালপুকুর নামে ঘটি ডোবে/বোড়ে না২ | কড়িশূন্য নামডাকওয়ালা লোক; একসময়ের বিত্তশালী এখন ফোঁপরা |
তালপুকুরে খাবি খায় সমুদ্র পার হতে চায় | অক্ষমের আস্ফালনের প্রতি বিদ্রুপোক্তি। |
তালপ্রমাণ বাড়ে তিলপ্রমাণ কমে | দোষ বা রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। |
তাল বাড়ে ঝোপে খেজুর বাড়ে কোপে (খনা) | তালগাছ না ছাঁটলে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং ফলন বেশি হয়; অপরপক্ষে খেজুরগাছ ছাঁটলে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং ফলন বেশি হয়। |
তালৈয়ের (ভাই/বোনের শ্বশুর) চেয়ে পুতরা ভারি; | আসলের চেয়ে নকলের আস্ফালন বেশি; মালিকের চেয়ে অনুচরের দাপাদাপি বেশি; সমতুল্য- 'গুরু থেকে শিষ্য তীক্ষ্ণ'; 'দারোগার চেয়ে চৌকিদারের হাঁক বেশি'; 'বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়'; 'বাপের চেয়ে ছেলে কড়া', 'সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি' ইত্যাদি। |
তাস তামাক পাশা এ তিন সর্বনাশা/তাস দাবা পাশা তিন কর্মনাশা | এই তিন জিনিস অকারণ সময় নষ্ট হয়; ক্ষতিকর এই তিন বিষয়ে আসক্তি ভলো নয়। |
তিনইঞ্চির একটা জিভ একজন সাতফুট মানুষকেও কাৎ করতে পারে | অপরিমিত আহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর; রসনা সংযত রাখার পক্ষে পরামর্শ; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বেশি যদি খেতে চাও কম খাও তবে'। |
তিন কানে গেলে গুপ্তকথা প্রকাশ হয়ে যায় | তৃতীয়ব্যক্তি জানলে গোপন কথা আর গোপন থাকে না; কথা চালাচালিতে গুপ্তকথা ফাঁস হয়ে যায়; তুলনীয়- তিনজন জানে তো ত্রিশজন জানে; 'ষটকর্ণে মন্ত্রভেদ'। |
তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে | বাল্য, যৌবন ও প্রৌঢ়কাল গিয়ে শেষে বৃদ্ধকালে এসে ঠেকেছে; অতিবৃদ্ধ; মৃত্যুকাল আসন্ন। |
তিনজন জানে তো ত্রিশজন জানে | গোপন কথা একটু ব্যক্ত হলেই সকলে জেনে যায়; তুলনীয়- 'ষটকর্ণে মন্ত্রভেদ'। |
তিনটি জিনিস বেশিদিন লুকিয়ে থাকে না, যথা- চন্দ্র সূর্য ও সত্য | এই তিনটি বিষয় বেশিদিন চাপা যায় না। |
তিনটি বই একবার পড়ার চেয়ে একটি বই তিনবার পড়া শ্রেয় | বিষয়বস্তু হৃদয়ঙ্গম করতে হলে একটা বই একাধিকবার পড়া উচিৎ; যা কিছু দেখবে গভীরভাবে দেখবে। |
তিনদিনের যোগী ভাতকে বলে অন্ন | আদিখ্যেতা; জাহির করার ইচ্ছা; বাড়াবাড়ি। |
তিন নকলে আসল খাস্তা১ | নকলের আধিক্যে আসলকেই নকল বলে ভুল হয়। |
তিন নকলে আসল খাস্তা২ | একটি জিনিস বারবার নকল করলে আসলের আর কিছু থাকে না; নকল সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়ে যায়। |
তিনমাথা যার (অতিবৃদ্ধ লোক) বুদ্ধি নেবে তার | জীবনের অভিজ্ঞতা যার সর্বাধিক তার কাছেই পরামর্শ নেওয়া উচিৎ; সমতুল্য- 'বৃদ্ধস্য বচনং গ্রাহ্যং'। |
তিলক পরলেই বৈষ্ণব হয় না | বাহ্যিক আড়ম্বরে ধার্মিক হওয়া যায় না; অন্তরে ভক্তি ও নিষ্ঠা থাকা প্রয়োজন; সমতুল্য- 'আলখাল্লা পরলেই মোল্লা হয় না'; 'চকচক করলেই সোনা হয় না'; 'ফেজটুপি পাদরী বানায় না'; 'মন্দির/মসজিদে গেলেই সাধু হয় না' ইত্যাদি। |
তিল কুড়িয়ে তাল | বৃহৎমাত্রই অসংখ্য ক্ষুদ্রের সমষ্টি; সমতুল্য- 'রাই কুড়িয়ে বেল'। |
তিলকে তাল করা | সামান্য বিষয়কে অযথা গুরুতর করে তোলা । |
তিল পড়লে তাল পড়ে | সামান্য অনিষ্ট করা হলোে প্রতিক্রিয়ায় বিশাল ক্ষতি হতে পারে। |
তিষ্ঠত্যেকাং নিশাং চন্দ্রঃ শ্রীমান সম্পূর্ণমণ্ডল | ষোলকলায় পূর্ণ চন্দ্র মাত্র একরাত্রি থাকে লক্ষণায়- সুখ দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় না। |
তীরে এসে তরী ডোবা | শেষপর্যায়ে এসে কাজ পন্ড হওয়া; সাফল্যের মুখে পতন। |
তীর্থের কাকের মত বসে থাকা | পরপ্রত্যাশী হওয়া। |
তুঁষহীন তণ্ডুলের অঙ্কুরোদ্গম হয় না | সহায় ছাড়া কাজ হয় না। |
তুঁষের আগুন | তুঁষের আগুন সহজে নিভে না লক্ষণায় যে ক্রোধানল সহজে নিভে না; ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকা মর্মযন্ত্রণা। |
তুকতাক ছয়মাস কপালে যা বারোমাস | চেষ্টাচরিত্র করে কিছুদিন সুখভোগ করা যায়; ভাগ্য না থাকলে দুঃখভোগ এড়ানো যায় না। |
তুফানে ছেড়ো না হাল নৌকা হবে বানচাল | বিপদের সময় ভয় পেতে নেই; শক্ত হাতে হাল ধরতে হয়, নতুবা বিপদের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। |
তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন- বঙ্কিমচন্দ্র | অসৎ চিরদিন নিন্দিত; বিরুদ্ধ উক্তি- শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ। |
তুমি কার, কে তোমার, কারে বলরে আপনার? | এসেছো একা, যাবেও একা; এ জগৎ মিথ্যা মায়াময়, শুধু ছায়ার আসা যাওয়া; সমতুল্য- 'আসতেও একা, যেতেও একা, কার সঙ্গে বা কার দেখা'। |
তুমি কি শান্ত থাকতে পারো, তবে তুমি জ্ঞানী, তুমি কি রেগে যাও, তবে তোমার মত মূর্খ নেই | জ্ঞানীরা ধীরস্থির হয়; মুর্খরা কথায় কথায় মাথা গরম ক'রে। |
তুমি চল/ফেরো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় | এককাঠি বাড়া; টেক্কা মারা; পাঠান্তর- তুমি চল/ফেরো পাতায় পাতায় আমি চলি শিরায় শিরায় |
তুমি চল ভাগ্য তোমার সাথে চলবে | মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে। |
তুমি যতক্ষণ না থামছো ততক্ষণ তুমি কতটা ধীরে যাচ্ছো তা বিবেচ্য নয়- কনফুসিয়াস | চলমান জীবনে চলাটাই মূলমন্ত্র; চলার গতি কখনোই বিবেচ্য নয়; উপনিষদ বলেছে- চরৈবেতি চরৈবেতি। |
তুমি যতটা মূল্যবান ঠিক ততটা সমালোচনার পাত্র | সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ নয়। |
তুমি যাবে বঙ্গে কপাল যাবে সঙ্গে | অভাগার অদৃষ্ট সঙ্গ ছাড়ে না। |
তুমি প্রশ্ন কর উত্তর পাবে; তুমি খোঁজ কর সন্ধান পাবে, তুমি দরজায় কড়া নাড়ো দরজা খুলে যাবে | কিছু কর আর কর্মফল ভোগ কর। |
তুমি হৃদয় দিয়ে যে প্রকার ভাব তোমার প্রকৃতিও সেইপ্রকার হয় | প্রকৃতি মানুষকে চেনায়। |
তুলসী বনের বাঘ | সাধু হিসেবে পরিচিত দুর্জন ব্যক্তি |
তুলোধুনা করা | নির্দয়ভাবে প্রহার করা; বিপর্যস্ত করা। |
তুলো শুনতে নরম, বুনতে নয় | সরল কাজ সবসময় সহজ হয় না। |
তৃণবন্মন্যতে জগৎ | সহসা কারো অবস্থার উন্নতি হলে সে জগতকে তৃণের মত তুচ্ছ জ্ঞান করে। |
তৃণৈগুণত্ব মাপন্নৈর্বদ্ধন্তে মত্তদন্তিনো | যে তৃণ সহজে ছিন্ন হয় সেই তৃণনির্মিত রজ্জুতেই মত্তহস্তী বাঁধা যায়; একতাই বল। |
তৃষ্ণা এগোয় না জল এগোয়? | অভিলাষের গরজ বেশি, অভলাষিতের নয়; সুতরাং তৃষ্ণাই এগুবে জল নয়; অন্বেষণ না করলে কাম্যবস্তু মুখের কাছে এগিয়ে আসবে না। |
তৃষ্ণাবধিং কো গতঃ | তৃষ্ণার শেষপ্রান্তে কে আর যেতে পেরেছে? স্বয়ং ভগবানও নয়; গরিব লক্ষপতি হতে চায়; লক্ষপতি ক্রোড়পতি; ক্রোড়পতি চায় রাজত্ব; রাজা সাম্রাজ্য; সম্রাট ইন্দ্রত্ব; ইন্দ্র চায় ব্রহ্মপদ; ব্রহ্ম বিষ্ণুপদ এবং বিষ্ণু শিবত্ব; এইভাবে তৃষ্ণা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়; সুতরাং তৃষ্ণার কোন শেষ নাই। |
তৃষ্ণৈকা তরুণায়তে | সর্বাঙ্গই জীর্ণ হয়ে আসে, কেবল বাসনাই চিরনতুন থাকে। |
তেজসাং হি ন বয়ঃ সমীক্ষতে | তেজস্বীপুরুষের বয়স বিবেচিত হয় না। |
তেন তক্তেন ভুঞ্জীথা, মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্ | ত্যাগের মধ্য দিয়ে ভোগ করবে; কারও ধনে লোভ করো না। |
তেল কম ভাজা মচমচ | আয়োজন কম প্রত্যাশা বেশী। |
তেল তামাক ময়দা যত ডলো/রগরাও ফয়দা | এই তিনটি দ্রব্য ডলাইমলাই করলে ফল ভাল হয়, বেশী উপাকারী হয়। |
তেল থাক থলি পেলেই বাঁচি | ভাবার্থ- 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি; 'ভিক্ষা চাই না তুমি তোমার কুকুর সামলাও'। |
তেল দাও সিঁদুর দাও ভবি ভোলবার নয় | নাছোড়বান্দা; যতই তার তোষামোদ করা হোক-না-কেন, যতই তাকে প্রলোভন দেখানো-হোক-না-কেন সে জেদ ছাড়ার বান্দা নয় বা প্রলুব্ধ হওয়ার নয়। (ভবি এক কাল্পনিক মেয়ে) |
তেলাপোকা আবার পাখি ভেরাণ্ডা আবার গাছ | তুচ্ছের প্রতি তাচ্ছিল্য; উভয়ই নগণ্য, পাতে পড়ার মত নয়। |
তেলাপোকার পাখি হওয়ার সাধ | অক্ষমের উচ্চাশা; সমতুল্য- 'বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো'। |
তেলা মাথায় তেল দেওয়া | যার আছে তাকে আরো দেওয়া; বঞ্চিতকে বাদ দিয়ে সুবিধাপ্রাপ্তকে পুনরায় আনুকুল্য দেখানো; পাঠান্তর- 'তেলা মাথায় তেল দিতে সবাই পারে'। |
তেলামাথায় ঢালো তেল রুখু/শুখনো মাথায় ভাঙো বেল | যার আছে তাকে আরো দাও এবং যার নেই তার অভাব পূরণ দূরে থাক আরো কষ্ট দাও; সবলের উমেদারী করা এবং দুর্বলের ওপর অত্যাচার করা মানুষের সহজাত প্রকৃতি; সমতুল্য- 'ধনীর মাথায় ধর ছাতি, নির্ধনেরে মার লাথি'; 'যে খেয়েছে সাতবার তার জন্য ভাত বাড়ো, যে খায় নি একবার তার জন্য চাল ঝাড়ো'। |
তেলে জলে খাপ/মিশ খায় না | বিষম মিলন স্বাভাবিক নয়। |
তেলেজলেই মানুষের শরীর। | মানুষমাত্রই অনুভূতিপ্রবণ। |
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা | হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া। |
তেহি নো দিবসা গতাঃ | আনন্দ ও সুখের সেইদিনগুলি চলে গেছে; (উৎসকাহিনী- রামচন্দ্র সীতাকে নির্বাসিত করার পর অতীতের সুখের দিনগুলি স্মরণ করে আক্ষেপসূচক এই উক্তিটি করেন); সম্পর্কীত প্রবাদ- 'স্মৃতি সতত সুখের'। |
তৈরী খাবার ছেড়ো না' | উপস্থিত অন্ন ত্যাগ করতে নেই; তুলনীয়- হাতের পাখি ছাড়তে নেই'; হিন্দি পাঠান্তর- 'তৈয়ারী খানা ছোড় মৎ'। |
তৈরী খাবার ছেড়ো না২ | পাত ছেড়ে উঠা অনুচিৎ। |
তোমার পিঠে তখন একটি লোক উঠবে যখন তুমি পিঠ নীচু করবে | দুর্বলতা দেখালে লোকে পেয়ে বসে। |
তোমার পীর সিন্নি খেয়েছে | তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। |
তোমার ভাবনা অনুসারে তোমার জীবন গড়ে ওঠে- কনফুসিয়াস | তুমি যেমন হবে তোমার জীবনও তেমনি হবে। |
তোমার যেমন ভালোবাসা মুসলমানের মুর্গীপোষা | স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভালোবাসার ভান। |
তোমার রাগে অন্য পুড়বে না তুমি নিজে পুড়বে | রাগে শরীর নষ্ট হয়। |
তোমার সামনে খাড়া ছাগলকে ভয় কর; পিছনে খাড়া ঘোড়াকে ভয় কর, আর চারিদিকে খাড়া মূর্খগুলিকে ভয় কর | বোকার পাল্লায় একবার পড়লে প্রাণান্তকর অবস্থা হবে। |
তোমারে দেখিয়া দুঃখে মোর বুক ফাটে তুমি খাও ভাঁড়ে জল আমি খাই ঘাটে | বক্তা বেশি দরিদ্র; শ্রোতা অপেক্ষাকৃত বেশি স্বচ্ছল; তোমার কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কি করবো তোমার থেকে আমার অবস্থা আরও শোচনীয়। |
তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে | অগোচরে প্রাণসংশয়ের কারণ বৃদ্ধি। |
তোর ঢেকে রাখ মোর বিকিয়ে যাক | স্বার্থপরব্যক্তি নিজের স্বার্থ আগে দেখে; তুলনায়- 'নিজের পাতে ঝোল টানা'। |
তোর তেল আঁচলে ধর আমার তেল বোতলে ভর | স্বার্থপরব্যক্তি নিজের স্বার্থ আগে দেখে। |
তোর পায়ে গড় না, তোর কাজের পায়ে গড় | কাজের জন্যই ব্যক্তিকে খোসামোদ করা হচ্ছে। |
তোর লেগে মরি না, তোর গুণের লেগে মরি | ব্যক্তি হিসাব পছন্দ নয় কিন্তু ব্যক্তির গুণকে প্রশংসা করা হচ্ছে। |
তোর শিল তোর নোড়া তোরই ভাঙি দাঁতের গোড়া১ | শত্রুর অস্ত্রে শত্রু নিধন। |
তোর শিল তোর নোড়া তোরই ভাঙি দাঁতের গোড়া২ | তোমার যুক্তিতে তোমাকেই কাৎ করবো। |
তোর শিল তোর নোড়া তোরই ভাঙি দাঁতের গোড়া৩ | তোমার পথে চলে তোমাকেই নাশ করবো। |
তোরে মেরে কুমীরে খাক আমারে শালুক তুলে দে | ক্ষতিস্বীকার করেও কোন কাজ করে দেওয়ার আকুতি; অতি স্বার্থপরব্যক্তি। |
ত্রাতা মধুসূদন | বিপদ থেকে রক্ষাকারী শ্রীকৃষ্ণ। |
ত্রাহি মধুসূদন | বিপদ থেকে বাঁচতে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হওয়া। |
ত্রিশঙ্কু অবস্থা১ | দ্বিধাদ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- 'কিংকর্তব্যবিমূঢ়'। |
ত্রিশঙ্কু অবস্থা২ | দুইদলের গোলমালে কোন পক্ষে না যাওয়া; সমতুল্য-'বেড়ার ওপর বসে'। |
ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথ করোমি | হৃষীকেশ তুমি হৃদয়ে থেকে যেভাবে আমাকে চালাচ্ছো আমি সেইভাবে চলছি; ঈশ্বরে পরম নির্ভরশীলতা। |
ত্বরা বর্জ্য তোলে | বেশি তাড়াতাড়ি করলে বেশি ভুলভ্রান্তি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে; তুলনীয়- 'বেশি তাড়াতাড়ি ধীরগতি'। |
থ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
থলি ভর্তি হওয়ার আগে মুখ বাঁধো | সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতি ইঙ্গিত। |
থলির বিড়াল বাইরে এলো | সত্য প্রকাশিত। |
থলির মধ্যে হাতি পোড়া | অসাধ্যসাধনের প্রয়াস; কার্যত অসম্ভব। |
থাক মান যাক প্রাণ | অসম্মানিত হওয়ার আগে মৃত্যু হওয়া শ্রেয়; মাথা উঁচু রাখার প্রতিজ্ঞা; ইজ্জৎ সবার আগে; তুলনীয়- 'শির উঁচা রহে হামারা'; তুলনীয়- 'বরং অবসন্ন হবে তবু হীনতা স্বীকার করবে না'। |
থাকরে কুকুর আমার আশে, ভাত দেবো তোরে ভাদ্র/পৌষমাসে | অনির্দিষ্টকালের জন্য কাউকে আশা দিয়ে রাখা। |
থাকলে তালৈয়ের বাপের শ্রাদ্ধ হয়, না থাকলে নিজের বাপের শ্রাদ্ধ হয় না | টাকা থাকলে অপব্যয় করা যায়; টাকা না থাকলে প্রয়োজনীয় খরচও করা যায় না। |
থাকলে সোনার মান হয় না, হারালেই সোনার মান | সহজলভ্য বস্তুর কদর নেই। |
থাকে যদি চুড়ো বাঁশি, মিলবে রাধা হেন কত দাসী | কিছু পেতে হলে কিছু থাকতে হয়; গুণ থাকলে সব কার্যসিদ্ধি হয়; তুলনীয়- 'ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না'। |
থিয়ে (শুয়ে) তল যাবে তবু নুয়ে ডুব দেবে না | মরবে তবু হীনতা স্বীকার করবে না; সমতুল্য-'ভাঙবে তবু মচকাবে না'; 'বরং অবসন্ন হবে তবু হীনতা স্বীকার করবে নয়া'। |
থুতু দিয়ে ছাতু গোলা/মলা | অসম্ভব কাজ করার ব্যর্থচেষ্টা। |
থোঁতা মুখ ভোঁতা করা/হওয়া১ | উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া/পাওয়া। |
থোঁতা মুখ ভোঁতা করা/হওয়া২ | উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া/পাওয়া; দর্পচূর্ণ করা/হওয়া; বড় মুখ ছোট করা/হওয়া। |
থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড় | বৈচিত্রহীন একঘেয়ে জীবন। |
দ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
দই খাবে মেধো কড়ি/দাম দেবে সেধো | চরম বিশৃঙ্খলা; একজনের পরিশ্রমের ফল অন্যে ভোগ করে; তুলনীয় 'উদোর পিণ্ডি বুখোর ঘাড়ে'। |
দই দুধ করব ভোগ ওষুধ খেয়ে সারব রোগ | সুখ ও দুঃখ একসাথে নিয়েই চলার পক্ষে ওকালতি। |
দকে পড়া | আকস্মিক দুরবস্থায় পড়া; হঠাৎ বিপদগ্রস্ত হওয়া |
দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার | মহতী অনুষ্ঠান বিরাট বাধার সন্নুখীন হয়ে লণ্ডভণ্ড; (উৎসকাহিনী- প্রজাপতি দক্ষ জামাইকে অপমান করার উদ্দেশ্যে শিবহীন যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন; আমন্ত্রিত না হয়েও কন্যা সতী যজ্ঞে উপস্থিত হলোে দক্ষ শিবনিন্দা শুরু করেন; পতিনিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ কর'লে ক্রোধে শিব বীরভদ্র নামে এক ভয়ঙ্কর অনুচর সৃষ্টি করেন; বীরভদ্র এসে দক্ষপত্নীসহ সবাইকে প্রহার কর'ত শুর করে এবং অবশেষে দক্ষের শিরোচ্ছেদ করে; এই ঘটনাকে দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার বলা হয়।) |
দক্ষিণদুয়ারি ঘরের রাজা পূর্বদুয়ারি তার প্রজা;পশ্চিম দুয়ারির খাজনা নাই; উত্তরদুয়ারির মুখে ছাই (খনা) | দক্ষিণদুয়ারি ঘর সর্বোত্তম, কারণ দক্ষিণদুয়ারি ঘর আলো বাতাসে পরিপূর্ণ থাকে; পূর্বদুয়ারি ঘর ভালো তবে তুলনায় একটু খাটো, কারণ ভাল আলো পাওয়া গেলেও বাতাস তেমন পাওয়া যায় না; পশ্চিমদুয়ারি ঘর মন্দের ভাল, কারণ পড়ন্তরোদের তাপ বড়বেশি উপরন্তু বাতাস পাওয়া যায় না; উত্তরদুয়ারি ঘর নিকৃষ্টতম, কারণ আলো বাতাস নামেমাত্র পাওয়া যায়; উপরন্তু শীতকালে উত্তরের বাতাসে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়; নবাবী আমলে উত্তরদুয়ারি ঘরের জন্য খাজনা ধার্য হত না। |
দগ্ধ শিশু আগুন দেখলে ভয় পায় | অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; ক্ষতিগ্রস্তব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যেপথে একবার ঠেকেছে সে সেপথে দ্বিতীয়বার কেউ এগোয় না; সমতুল্য- 'গরম জলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায়'; 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়' ইত্যাদি। |
দণ্ডেন গোগর্দভৌ | লাঠির আঘাতে গরু এবং গাধাকে শাসন করা যায়। |
দধির অগ্র ঘোলের শেষ | দইয়ের উপরে ক্ষীরভাগ থাকে এবং ঘোলের উপরিভাগের জলীয় অংশের নীচে সারভাগ থাকে; ফলে দুই-ই খেতে বেশ সুস্বাদু হয়; এই লক্ষণায় প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে। |
দয়া করে দেয় নূন, ভাত মারে দশগুণ | একটু সুখ পেলে আরও সুখ পেতে চায়; সমতুল্য- 'খেতে পেলে শুতে চায়'। |
দয়ার পর ধর্ম নাই, হিংসার পর পাপ নাই | অর্থ স্পষ্ট; সমতুল্য স্ংস্কৃত প্রবচন- 'দয়া পরমো ধর্ম'। |
দয়ে (দহ) পড়া/ মজা | গভীরসঙ্কটে পড়া। |
দরকার পড়লে খোঁড়াও লাফায় | প্রয়োজন হলে অকর্মাও কাজে ঝাঁপায়; গরজে একেজোও কেজো হয়; সমতুল্য- 'গরজ বড় বালাই'; 'গরজে গঙ্গাস্নান'। |
দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয় | প্রলোভন এড়ানো দুস্কর; সবাই এমনকি সাধুরাও রিপুর অধীন। |
দরিদ্র খোঁজে অন্ন, ধনী খোঁজে ক্ষুধা | বৈচিত্রময় অভাববোধ; সম্পদবণ্টনের বৈষম্যের প্রতি তীব্র বক্রোক্তি। |
দরিদ্রদোষে গুণরাশি নাশে | অশেষগুণের অধিকারী হয়েও দরিদ্র তার গুণের বিকাশ করতে পারে না; উপরন্তু অভাবের তাড়নায় তার সব গুণ ধীরেধীরে নষ্ট হয়। |
দরিদ্রস্য গুণাঃ সর্বে ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ | দারিদ্রের গুণসমূহ ভস্মাচ্ছাদিত আগুনের মত থাকে অর্থাৎ স্ফুরিত হয় না। |
দর্দ্দূরা যত্র বক্তারস্তত্র মৌনং হি শোভনম | ভেকেরা যেখানে মকমক করে অর্থাৎ মূর্খেরা যেখানে কথা বলে সেখান চুপ করে থাকাই শোভন। |
দর্পণে মুখ দেখা | আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে রকম মুখভঙ্গী করা হয় প্রতিবিম্বও সেইরকম মুখভঙ্গী করে লক্ষণায় লোকের সাথে যেমন ব্যবহার করবে তেমন ব্যবহার ফেরৎ পাবে; তুলনীয়- 'ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়'। |
দর্পণে হাতের শাঁখা দেখা | ঘোরাপথে বা বাঁকাপথে কাজ করা; সমতুল্য- 'কামাক্ষ্যা ঘুরে কাশী যাওয়া'; 'লণ্ডন ঘুরে মক্কা যাওয়া' ইত্যাদি। |
দর্পহারী শ্রীমধুসূদন | ঈশ্বর সকলের দর্প চূর্ণ করেন। |
দল(জলজ তৃণস্তূপ) ভাঙলে যে, কৈ খাবে সে | ন্যায্য অধিকার; যে পরিশ্রম করেছে সে ফলভোগ করবে। |
দশচক্রে ভগবান ভুত | অনেক চেষ্টায় সত্যকে মিথ্যা বানানো; চক্রান্ত করে সত্য মিথ্যায় পরিণত করা; কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে তাকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়; (উৎসকাহিনী- ভগবান নামে এক ব্রাহ্মণ রাজানুকূল্যের ছত্রছায়ায় ছিলেন; বিষয়টা অন্য রাজপারিষদের সহ্য হচ্ছিল না; তারা ষড়যন্ত্র করে রাজসভায় ভগবানের আসা বন্ধ করে এবং রটিয়ে দেয় যে ভগবান মারা গেছে; রাজার সন্দেহ হওয়ায় সবার কাছে জানতে চান; সকলে একই কথা বলে; রাজাও তাই বিশ্বাস করেন; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'ভগবান ভূতানাং গতঃ'। |
দশদিন চোরের একদিন গৃহীর/সাধুর | কুকর্মের ফল একদিন ভুগতেই হয়। |
দশমুখে ধর্ম | দশজন যা উচিতকর্ম বলে মানে সেটাই ধর্ম। |
দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ | সকলে মিলেমিশে কাজ করে ব্যর্থ হলেও তাতে ক্ষতি বা লজ্জা নেই; দশজনরে পরামর্শমত কাজ করা উচিৎ; সমতুল্য- 'একতাই বল'। |
দশে লাগে ভূত ভাগে | দশজনে মিলে কাজ করলে অতি দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য বলে মনে হয়। |
দশের মুখে জয় দশের মুখে ক্ষয় | দশজন প্রশংসা করলে নিন্দিতও যশস্বী হয়; আবার দশজন নিন্দা করলে গুণীও নিন্দিত হয়; ভালো না হলেও দশজনের কথা মেনে চলা উচিৎ। তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার। |
দশের লাঠি একের বোঝা | কোনো কাজ একার পক্ষে করা কঠিন, কিন্তু দশজনের পক্ষে খুব সহজ; দশজনে মিলে কোন শ্রমসাধ্য কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়; সমতুল্য- 'ভাগাভাগি করলে সমস্যা অর্ধেক হয়'। |
দস্তানাপড়া বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না১ | কিছু কাজ আছে যেগুলি করতে কঠোর মনোভাব লাগে। |
দস্তানাপড়া বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না২ | ফিটফাট কাপুড়েবাবু কষ্ট করতে পারে না বা কাজের লোক হয় না; সমতুল্য- 'কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না'। |
দাঁড়ালে পোয়া বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ? | পথ চলতে চলতে দাঁড়িয়ে গেলে কিছুটা এবং বসে পড়লে বেশ কিছুটা পথের ফেরে পড়ে সময় নষ্ট হয়; কাজ একাগ্রমনেই করা উচিৎ; সমতুল্য- 'ডাকলে ডাক, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ'। |
দাঁড়িকে মাঝি করা মরা গাঙে ডুবে মরা | অনভ্যস্ত লোককে কাজের দায়িত্ব দিলে সে কাজ নিশ্চিতভাবে পণ্ড হবে। |
দাঁত গেল তো আঁত গেল | ফোকলা দাঁতে উদরপূর্তির সুখ নাই। |
দাঁত-জিহবাসম্পর্ক | মন্দভালোর সম্পর্ক; দাঁত অসুস্থ হলে জিভ পাশে এসে দাঁড়ায়; দাঁত কিন্তু সুযোগ পেলে জিভে কামড় মারে। |
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা জানে/বোঝে না১ | সময়েপ্রাপ্ত সুযোগের সদব্যবহার করে না; সময়ের কাজ সময়ে করে না। |
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা জানে/বোঝে না২ | সময়ে হিতকারীর মঙ্গলপ্রয়াস উপলব্ধি করে না। |
দাঁত নড়লে পড়াই ভালো | কারো সাথে মতদ্বৈধতা হলে তার থেকে দূরে সরে থাকা ভালো। |
দাঁতে দড়ি দিয়ে পড়ে থাকা | অনাহারে পড়ে থাকা; অনাহারে পড়ে থাকলে দাঁত নাড়াতে হয় না। |
দাইয়ের কাছে কোঁক চাপা | ধাত্রীর কাছে গর্ভ গোপন রাখা কঠিন লক্ষণায় যে ঘরের কথা সব জানে, তার কাছে লুকাবার কিছু নেই বা লুকাবার চেষ্টা করা বৃথা। |
দা-কুমড়াসম্পর্ক | ছেদ্য-ছেদকসম্পর্ক; পরস্পর ভীষণ শত্রুভাবাপন্ন ব্যক্তিদ্বয়। |
দাতাকর্ণ / দাতা যেন কর্ণসেন | প্রশংসার্থে- অতি দানশীল ব্যক্তি; বিদ্রূপে- মাত্রাতিরিক্ত দানশীল ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- মহাভারতে বর্ণিত কয়েকজন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের মধ্যে একজন ছিলেন কর্ণ; কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র তিনিই অর্জুনকে যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম ছিলেন; কর্ণ তাঁর ত্যাগ, সাহসিকতা, দানশীলতা, বীরত্ব এবং নিঃস্বার্থপরতার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন; দানে এবং আতিথেয়তায় অদ্বিতীয় ছিলেন; তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে সূর্যদেবতাকে আরাধনার সময় আগত কোন ভিক্ষাপ্রার্থীকে তিনি শূন্য হাতে ফেরাবেন না; এমনই একদিন শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মণবেশে উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে কবচকুন্ডল প্রার্থনা করেন; কর্ণ সত্য বুঝেও সহাস্যে কৃষ্ণকে কবচকুন্ডল দান করেণ; কথিত যে তিনি নিজের হাতে পুত্রকে হত্যাকে করে তার মাংস খাইয়ে অতিথি সৎকার করেছিলেন; তার থেকে এই প্রবাদের জন্ম হয়।) |
দাতা দান করে কৃপণের মন পোড়ে | বদান্যদাতা দান করে, অর্থের অপচয় দেখে সঙ্কীর্ণমনা তাতে কষ্ট পায় এবং বাধা দিতে চেষ্টা করে; হিন্দি পাঠান্তর- 'দাতা দান দেয় ভাণ্ডারীকা পেট পিরায়'। |
দাতার চেয়ে কৃপণ ভালো ত্বরিতে জবাব দেয় | দাতা দেব বলে আশ্বাস দে্য, পরে দেয় না; কৃপণ সোজাসুজি 'না' বলে দেয়। |
দাতার নারকেল কৃপণের বাঁশ কমে না বাড়ে বারোমাস১ | নারকেল যত পাড়বে তত ফল ফলবে; অপরপক্ষে বাঁশ গাছ যত কাটবে তত ঝড়ে নষ্ট হবে। |
দাদ ভালো করতে শেষে কুট হলো | সামান্য বিষয়ের প্রতিকার করতে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনা হল। |
দাদা কানা ভাই চোখে দেখে না | দু'জনেই সমান অপদার্থ। |
দাদা বলেছে চষতে তাই চষতেই আছি | অনিচ্ছা সহকারে কারো আদেশ পালন করা, কাজে কোন মন নেই; তুলনীয়- 'ধর কাছি তো ধরেই আছি'। |
দাদারও দাদা আছে | কেউই অজেয় নয়; তিমি থাকলে তিমিঙ্গিল আছে; তিমিঙ্গিল থাকলে তিমিঙ্গিলগিল আছে। |
দান যেমন দক্ষিণা তেমন | কাজের উপযুক্ত পারিশ্রমিক হওয়া উচিত। |
দানেন ন ক্ষয়ং জাতি বিদ্যারত্নং মহাধনম্ | দানে বিদ্যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না; সুতরাং বিদ্যারূপরত্ন মহাধনস্বরূপ। |
দানেন বর্ধতে নিত্যং বিদ্যারত্নং মহাধনম্ | দানে বিদ্যা সদাবৃদ্ধি পায়; সুতরাং বিদ্যারূপরত্ন মহাধনস্বরূপ। |
দানে বিদ্যা বর্ধিত হয় দানে ধন ক্ষয় হয় | অর্থ স্পষ্ট; জ্ঞানের তুলনা হয় না। |
দামু ঘোষের ছেলে শিশু পাল | অসঙ্গতির উদাহরণ, ঘোষের ব্যাটা পাল হতে পারে না; কোন সম্পর্ক নেই এমন অনধিকারচর্চাকারী ব্যক্তিকে অবজ্ঞা করে প্রবাদটি বলা হয়; (উৎসকাহিনী- চন্দ্রবংশীয় চেদীরাজ দমঘোষের ছেলের নাম ছিল শিশুপাল); তুলনীয়- 'হরির খুড়ো মাধাই দাস'। |
দাম্ভিক আর মিথ্যাবাদী পরস্পর তুতোভাই | বদগুণের আত্মীয়তা। |
দায় মোদ্দায় রাজি, কি করবেন কাজী | বাদী-বিবাদী এক হয়ে গেলে বিচারকের আর কিছু করার থাকে না। |
দা’য়ে বালি, কুড়ুলে শিল, ভালমানুষকে ভালোকথা, বজ্জাতকে কিল | শান দিতে- দা'এর চাই বালি, কুড়ালের চাই শিল; ভালমানুষ মিষ্টি কথায় তৃপ্ত হয়, আর বজ্জাতকে উত্তমমধ্যম দিলে সে শান্ত হয়; যার যেটা প্রয়োজন তাকে সেটাই দিতে হবে। |
দায়ে পড়লে বাপ বলে | বিপদে পড়লে পায়ে পড়ে; বিপদ কেটে গেলেই আর মনে রাখে না; সমতুল্য- 'ঠেকায় পড়লে ঠাকুরদাদা'; 'ঠেকায় পড়লে ঠাকুরদাদি নইলে তার নাকে পাঁদি'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম' ইত্যাদি। |
দায়ে পড়ে দা‘ঠাকুর | দায়ে পড়লে ন্যায়-অন্যায় বোধ থাকে না; সমতুল্য- 'গরজ বড় বালাই'; পাঠান্তর- 'দায়ে পড়লে ল্যাংড়াও লাফায়'; 'দায়ে পড়লে বামুন শালগ্রামের পৈতা/সোনা বেচেও খায় ইত্যাদি। |
দারা-পুত্র-পরিবার কেউ নয় আপনার | সংসার মায়াময়; কেউ আপনার নয়; অনিত্য সংসারে কেউ কারো সঙ্গে আসেনি কারো সঙ্গে যাবে না; পাঠান্তর- 'দারা-পুত্র-পরিবার তুমি কার কে তোমার'; তুলনীয়- 'ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয় মিছেই ভ্রম ভূমণ্ডলে'। |
দারিদ্র্যদোষো গুণরাশিনাশী | দারিদ্রদোষে গুণীর সব গুণ নষ্ট হয়। |
দারিদ্রদোষেণ করোতি পাপম | দারিদ্রের কারণে লোকে পাপ কাজ করতে বাধ্য হয়। |
দারুভূত জগন্নাথ/নারায়ণ/মুরারি | জগন্নাথ নানাকারণে মনোকষ্টে কাঠের পুতুল হয়েছেন; সংসারের নানাচিন্তায় মানুষ কাঠ হয়; (উৎসকাহিনী- মুর নামক এক দৈত্যকে নিধন করেছিলেন বলে শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম মুরারি; ‘দারুভূত মুরারি' বলতে পুরীর জগন্নাথদেবকে নির্দেশ করে; জগন্নাথদেবের মূর্তি নিমকাঠে নির্মিত; জগন্নাথদেব নানা দুশ্চিন্তায় কাঠ হয়ে গেছেন; প্রথমতঃ প্রথমপত্নী লক্ষ্মী সদাচঞ্চলা; দ্বিতীয়পত্নী সরস্বতী সদামুখরাঃ; পুত্র মদন সমগ্র বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ায়; নিজে বাসুকিসাপের অনন্তশয্যায় শায়িত ইত্যাদি; এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই তিনি একেবারে কাঠ হয়ে গেছেন; প্রবাদের ভাবার্থ হলো কোন ব্যক্তি নানা সমস্যায় পড়লে তার অবস্থা দারুভূত মুরারির মত হয়।) |
দারোগার চেয়ে চৌকিদারের হাঁক বেশি | আসল লোকের চেয়ে তার অনুচরের আস্ফালন বেশি; মালিকের চেয়ে অনুচরের দাপাদাপি বেশি; সমতুল্য- 'গুরু থেকে শিষ্য তীক্ষ্ণ'; 'তালৈয়ের চেয়ে পুতরা ভারি'; বাঁশের কঞ্চি দড়'; 'বাপের চেয়ে ছেলে কড়া'; 'সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি' ইত্যাদি। |
দাল মে কুছ কালা হৈ | ভিতরে নিশ্চই কিছু গোলমাল আছে; অজ্ঞাতসারে কাজে কিছু ভুল থেকে গেছে; সন্দেহজনক ঘটনা ইত্যাদি। |
দিও কিঞ্চিৎ না করিও বঞ্চিৎ | যাচককে কিছু দিও, একেবারে কাউকে বঞ্চিৎ করো না; অতিথি আপ্যায়ন, মেহমানদারির প্রতি ভালোবাসার ইঙ্গিত |
দিন আনে দিন খায়১ | দিনমজুরি করে সংসারযাত্রা নির্বাহ করে। |
দিন আনে দিন খায়২ | কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে; সমতুল্য- 'আজ খেতে কাল নেই'। |
দিন কাটে তো রাত কাটে না১ | অলসরাতের নিরবতায় কষ্টটা মনে বেশি চাপ সৃষ্টি করে। |
দিন কাটে তো রাত কাটে না২ | দিনের কর্মব্যস্ততায় কষ্টের কথা ভুলে থাকা যায়; রাতের একাকীত্বে অনুভূতিটা বেশি প্রকট হয়; মুহূর্তগুলি যেন কাটতে চায় না। |
দিনগত পাপক্ষয় | গতানুগতিকভাবে প্রতিদিনের কাজ করে সময় অতিবাহন। |
দিন থাকতে বাঁধে আল তবে খায় নানা শাল- খনা | আগে থাকতে জমিতে জল বেঁধে রাখলে নানা ধরনের শালি ধান উৎপন্ন হয়; সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। |
দিন গেল আলে ডালে রাত হলোে চেরাগ/প্রদীপ জ্বালে | সারাদিন অলসভাবে কাটিয়ে রাতের বেলায় আলো জ্বেলে কজ করতে বসে; সময়ে কাজ সম্পন্ন না করে অসময়ে সম্পন্ন করা। |
দিনদুপুরে চাঁদ উঠেছে রাত পোহালো তার, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠে নি দুপুর অন্ধকার | অর্থহীন অসংলগ্ন কথা; প্রলাপোক্তি; যে বক্তব্যের কোন মাথামুণ্ড নেই; তুলনীয়- লঙ্কায় মরল রাবণ, বেহুলা হলো বিধবা'। |
দিনদুপুরে ডাকাতি১ | অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। |
দিনদুপুরে ডাকাতি২ | সকলের জ্ঞাতসারে/ প্রকাশ্যদিবালোকে অপরের সম্পত্তি আত্মসাৎ। |
দিন যাবে রবে না | সুখেই হোক আর দুঃখেই হোক, সম্পদেই হোক আর বিপদেই হোক দিন বয়ে যায়, কারো জন্য রয় না। |
দিন যায় কথা থাকে১ | মহার্ঘবচনের আবেদন চিরকালীন। |
দিন যায় কথা থাকে২ | কাউকে মর্মভেদী কথা বললে সে চিরকাল সেই কথা মনে রাখে। |
দিন যায় তো ক্ষণ যায় না | অপার মানসিক যন্ত্রণার অভিব্যক্তি; ভাবী কোন বিষয়ের জন্য উৎকণ্ঠা থাকলে দিনগুলি কোনমতে কেটে যায়, কিন্তু নির্দিষ্ট উৎকণ্ঠার মুহূর্ত যত এগিয়ে আসে সেই মুহূর্তগুলি যেন কাটতে চায় না। |
দিনকে রাত করা, রাতকে দিন করা১ | অত্যন্ত বাড়িয়ে বলা। |
দিনকে রাত করা, রাতকে দিন করা২ | মাত্রাহীনভাবে মিথ্যাকথা বলা। |
দিনে কেন সিঁধ? গরজ বড় বালাই | অভাবগ্রস্তলোকের কাজের সময় অসময় নেই; অর্থের প্রয়োজনে অসময়েও উপার্জন করে; চব্বিশ ঘণ্টাই তার কাজের সময়। |
দিনে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বস; রাতে খাওয়ার পর অনেক্ষণ হাঁটো | স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বৈদ্যের বিধান। |
দিনে দেখে তারা | কোন অসম্ভব ঘটনার সাথে তুলনা করতে হলে প্রবাদটি বলা হয়, |
দিনে বাতি যার ঘরে, তার ভিটায় ঘুঘু চরে | অবিবেচকের মত কাজ করলে দুর্দশায় পড়তে হয়; তুলনীয়- 'দুইপ্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো'; 'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশিথে প্রদীপ ভাতি'। |
দিনের পরিকল্পনা সকালেই হয় | প্রতিটি সুষ্টকাজের প্রাক-পরিকল্পনা থাকে। |
দিব্যং চূতফলং প্রাপ্য ন গর্বং যাতি কোকিলঃ | কোকিল আমফল খেয়েও গর্ব অনুভব করে না; গুণীরা সংযমী হয়। |
দিল্লিকা লাড্ডু যো খায়া সো পস্তায়া, যো ন-খায়া সো ভি পস্তায়া | এএমন আজব মিঠাই যে, যে খেয়েছে সেই মজেছে; যে খায় নি সেও মজেছে; (উৎসকাহিনী- এক প্রতারক মিষ্টিব্যবসায়ী কাঠের গুঁড়ার সাথে গুড় মিশিয়ে দিল্লির লাড্ডু বলে বিক্রি করতে থাকে; দেখতে দেখতে সব লাড্ডু বিক্রি হয়ে যায়; প্রতারক মূল্য নিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালায়; পরে যারা লাড্ডু কিনতে এসেছিল তারা না পেয়ে পস্তাতে থাকে; আর যারা কিনেছিল তারা বাজে মিষ্টি কিনে ঠকে যাওয়ার জন্য পস্তাতে থাকে; দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হল-মুঘল আমলে দিল্লীর জানানাবাজারে বিক্রীত সুন্দরী রমণীদের 'দিল্লিকা লাড্ডু' বলা হতো; এই সুন্দরী নারী যারা কিনেছে তারা নানাকারণে আফশোস করেছে; যারা কিনতে পারেনি তারাও না পাওয়ার জন্য আফশোস করেছে।) |
দীয়তাং ভুজ্যতাং | দিতে থাকো; খেতে থাকো; বিরাট আয়োজনের বাড়ীতে ভূরিভোজনসম্পর্কিত উক্তি। |
দীওয়ারো কে ভি কান হোতেঁ হৈ | দেওয়ালেরও কান আছে-এর অনুরূপ। |
দীর্ঘরাত্রিও অবসান আছে | কোন দুঃখই চিরস্থায়ী নয়। |
দীর্ঘসূত্রতা সময়ের তস্কর | দীর্ঘসূত্রতার কারণে অযথা সময় নষ্ট হয়; পাঠান্তর- 'দীর্ঘসূত্রতা কালপরাহক'। |
দুই অসতের মধ্যে একজনকে পছন্দ করা সঠিক নির্বাচন নয় | অসৎসঙ্গ সর্বোতভাবে পরিত্যজ্য। |
দুই অসতের মধ্যে কম ক্ষতিকরকে পছন্দ কর | নির্বাচন যদি করতেই হয় তবে কম ক্ষতিকরই গ্রহণযোগ্য; পূর্বোক্তির বিরুদ্ধ উক্তি। |
দুই নৌকায় পা১ | দুকুল বজায় রাখার চেষ্টা, যা কখনো সম্ভব হয় না, পরন্তু বিপদে পড়তে হয়; সমতুল্য- 'শ্যাম রাখি বা কুল রাখি'। |
দুই নৌকায় পা২ | দুটি পরস্পরবিরোধী কাজ একইসাথে সম্পন্ন করার প্রয়াস; সমতুল্য- 'এক পা জলে এক পা স্থলে'। |
দুই নৌকায় পা৩ | দ্বিধা-দ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- 'কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা'। |
দুইপ্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো | অর্থের অপব্যয় করা; সমতুল্য- 'দিনের বেলায় মোমবাতি জ্বালানো'। |
দুই মাথা এক চেয়ে ভাল | দ্বিতীয়ব্যক্তির মতামত, পরামর্শ সর্বদা মূল্যবান। |
দুইয়ে দুইয়ে চার-এর মতই সহজ | অতি সহজ ও সরল। |
দুইহাঁড়ি একত্র থাকলেই ঠোকাঠুকি লাগে | একঘরে দুইজন ব্যক্তি থাকলে মাঝে মাঝে একটি আধটু ঝগড়া হয়; দ্বন্দ্ব এড়ানো যায় না; তুলনীয়- 'ভাইভাই ঠাঁইঠাঁই'। |
দুঃখবিনা সুখ হয় কি মহীতে১ | কিছু পেতে গেলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়; সমতুল্য- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নেই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; সংস্কৃত পাঠান্তর-'ন সুখং দুঃখৈর্বিনা লভিতে'। |
দুঃখবিনা সুখ হয় কি মহীতে২ | অবমিশ্র সুখ-দুঃখ হয় না; সুখের আড়ালে দুঃখ থাকে, দুঃখের আড়ালে সুখ। |
দুঃখিত হওয়ার চেয়ে নিরাপদ থাকা ভালো | বিপদে পড়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা ভা্লো; তুলনীয়- 'চলৎ একেন পাদেন তিষ্টতি বুদ্ধিমান'; প্রবাদটি বিচক্ষণতার প্রতি সওয়াল করে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'জীবনে ঝুঁকি নেওয়া উচিত, কারণ ভাগ্য সাহসীকে সমর্থন করে'। |
দুঃখী যায় সুখীর কাছে, দুঃখ যায় পাছেপাছে | দুঃখ দুঃখীর সঙ্গ ছাড়ে না; দুঃখীর অদৃষ্টে কোথাও সুখ লেখা নেই। |
দুঃখে অনুদ্বিগমনা সুখেচ বিগতস্পৃহ | দুঃখে অনুদ্বিগ্ন এবং সুখে স্পৃহাহীন থাকার প্রতি উপদেশ। |
দুঃখে শিয়াল কুকুর কাঁদে | এত দুঃখ যে তার অন্ত পাওয়া ভার। |
দুঃখের অংশীদার থাকলে মন হালকা হয় | দুঃখভার কমাতে পরস্পরের দুঃখের অংশভাগী হওয়া উচিৎ। |
দুঃখের উপর টনকের ঘা | কষ্টের উপর আরো বেশি কষ্ট। |
দুঃখের দিনগুলি খুব লম্বা হয় | দুঃখের দিনগুলি যেন কাটতে চায় না; দুঃখ উপভোগের নয়। |
দুঃখের পর সুখ আসে | দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ, পাওয়া না-পাওয়া, সফলতা-ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়েই জীবন; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'। |
দুঃখের ভাত সুখ করে খাওয়া | কষ্টেসৃষ্টে যা উপার্জন হয় তাতেই শান্তিতে থেকে খাওয়া পরা করা উচিৎ; শাকান্নে শান্তি বেশি। |
দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ছোটে | দুঃসংবাদ গোপন থাকে না; দুঃসংবাদ দ্রুত ছড়্যয়; পাঠান্তর- 'দুঃসংবাদের ডানা আছে'। |
দুটিগাছ একসাথে থাকে, দুটি পাহাড় একসাথে থাকে না | আমিত্ব তথা আত্মম্ভরিতা, অন্তরঙ্গতা তথা সমপ্রীতির পথে বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়; পাঠান্তর- 'দুটি বটগাছ পাশাপাশি থাকে না লাখো ঘাস পাশাপাশি থাকে'। |
দু’টাকা ধার দেওয়া থেকে একটাকা দান করা ভাল | ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় বসে থাকতে হয় না; ঋণ দেওয়া ও নেওয়া, দুইই মহাপাপ। |
দুটি পাখির/খরগোসের পিছনে ছোটা | অনিশ্চিতের পিছনে ছোটা; সমতুল্য- 'দুনৌকায় পা দেওয়া'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'যো ধ্রবাণি পরিত্যজ্য অধ্রুবাণি নিষেবতে, ধ্রুবাণি তস্য নশ্যন্তি অধ্রুবং নষ্টমেব চ'। |
দুধ কলা দাও যত, সাপের বিষ বাড়ে তত | সযত্নে মারাত্মক শত্রুকে অজ্ঞতাবশতঃ প্রতিপালন করা; খলকে যতই আদর কর-না-কেন, যতই তার উপকার কর-না-কেন সে স্বভাববশে তোমার অনিষ্ট করবেই; পাঠান্তর- 'দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা'। |
দুধকা জ্বলা মাঠা ফুঁক্ ফুঁক্ পিতা হৈ | গরমদুধে যার মুখ পুড়েছে সে ফুঁ দিয়ে ঘোল খায়; অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সতর্কতা; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়'। |
দুধকে দুধ জলকে জল১ | সব ঠিকঠিক নির্ণয় করা; হিসাবমত বুঝে নেওয়া; পাঠান্তর- \দুধকা দুধ পানিকা পানি'। |
দুধকে দুধ জলকে জল২ | বেশি জল মেশানো দুধ, দুধেরও কাজ করে, আবার জলেরও কাজ করে। |
দুধকে দুধ জলকে জলি৩ | কপটলোক বিভিন্ন লোকের সাথে বিভিন্ন আচরণ করে। |
দুধকে দুধ জলকে জলি৪ | ধান্ধাবাজ রাজনীতিক সবাইকে খুশি করতে চায়। |
দুধ মরে/মেরে ক্ষীর | বিষয়ের নির্যাস; সারাংশ |
দুধ রাখলেই পঞ্চামৃত১ | দুধ থেকে ক্ষীর ঘি দই ননী ও মাখন পাওয়া যায়। |
দুধ রাখলেই পঞ্চামৃত২ | লোককে ভালবাসলে তার কাছ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়। |
দুধে ভাতে থাকা | সচ্ছল অবস্থায় বা প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করা |
দুধে ভিজিয়ে রাখলেও নিম কখনও মিষ্টি হয় না | কালো কখনো সাদা হয় না; মন্দ কখনো ভালো হয় না। |
দুধের মাছি | সুসময়ের বন্ধু; সুদিনে এসে আত্মীয়তা করে এবং দুঃখের দিনে দূরে সরে যায়; সমতুল্য- 'বসন্তের কোকিল'; 'লক্ষ্মীর বরযাত্রী'; 'শরতের শিশির'; 'সুখের পায়রা' ইত্যাদি। |
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো | উৎকৃষ্টের পরিবর্তে নিকৃষ্ট দ্রব্যে সন্তুষ্ট থাকা। |
দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? | দুধ থেকে ঘোল হলেও ঘোলে দুধের গুণ থাকে না; নকল কখনো আসল হয় না; তুলনীয়- ভাতের খিদে কি ভাজায় মেটে?' |
দুনিয়াদারি মুসাফিরি, সিরিফ আনাগোনা/যানা | জীবনমৃত্যুর আসা-যাওয়া খেলা। |
দূর কা ঢোল সুহাবনে | দূরের জিনিস সব সুন্দর মনে হয়; তুলনীয়- 'দুরের বাদ্য শুনতে মিষ্টি'। |
দূরতঃ শোভতে মূর্খো লম্বশাটপটাবৃতঃ; তাবৎ শোভতে মূর্খো যাবৎ কিঞ্চিন্ন ভাষতে | দীর্ঘ পোশাকপরিচ্ছদভূষিত মূর্খ দূরে শোভা পাচ্ছে; ততক্ষণ সে শোভা পায়, যতক্ষণ-না সে কথা বলে। |
দুরসভা নিকটজল, নিকটসভা রসাতল- খনা | বর্ষাকালে মেঘের পাতলা আস্তরণে চাঁদকে ঘিরে সৃষ্ট জ্যোতির্বলয়কে চাঁদের সভা বলে; মেঘ খুব নীচুতে থাকলে সভা চাঁদ থেকে দূরে বসে; এর অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হবে; অপরপক্ষে মেঘ খুব উঁচুতে থাকলে চাঁদের সভা কাছে বসে; এর অর্থ বৃষ্টি হবে না। |
দূরের কেশ ঘন দেখায় | দূর থেকে দেখলে পাতলা চুলকেও ঘন মনে হয়; যাকে আমি দূর থেকে চিনি বা জানি সে মন্দ হলেও ভাললোক বলে মনে হয়। |
দূর্বাবনে খটাশই বাঘ | মুর্খের দলে অল্পজ্ঞানী গুরুত্ব পায়; সমতুল্য- 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'বৃক্ষহীন দেশে এড়েণ্ডাই বৃক্ষ'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল' ইত্যাদি। |
দুরারোহপরিভ্রংশবিনিপাতো হি দারুণ | যাহাতে আরোহণ করা দুস্কর তার থেকে পতন নিদারুণ হয়। |
দুর্গা বলে ঝুলে পড় | ঈশ্বরে র্বিশ্বাস রেখে সাহস করে কাজে নেমে পড়। |
দুর্জনেরে পরিহরি, দূরে থেকে নমঃ করি | দুর্জনব্যক্তিকে সবসময় ত্যাগ করা উচিৎ; সমতুল্য- 'দুর্জনঃ পরিহর্তব্'যঃ। |
দুর্ভাগ্য অনেক স্থলে সৌভাগ্যের কারণ হয় | অহিতে বিপরীত বা শাপে বর হয়। |
দুর্লভং প্রাকৃতং বাক্যং দুর্লভঃ ক্ষেমকৃৎ সুত; দুর্লভা সদৃশী ভার্যা দুর্লভঃ স্বজনঃ প্রিয়ঃ | যথার্থবাক্য দুর্লভ, সুখকর পুত্র দুর্লভ, সমানগুণসম্পন্না স্ত্রী দুর্লভ এবং মঙ্গলকারী আত্মীয়স্বজন দুর্লভ। |
দুশমনকে উঁচী পিড়িয়া | আত্মরক্ষার্থে শত্রুকে সর্বদা উচ্চস্থান দেওয়া প্রয়োজন। |
দুশ্চিন্তা ঝামেলায় না ফেললে দুশ্চিন্তার পিছু নিও না | অনাবশ্যক দুশ্চিন্তা করা নেই। |
দুষ্টগরুর চেয়ে শূন্যগোয়াল ভাল | দুষ্ট সন্তান থাকার থেকে না থাকা ভাল; বিরুদ্ধ উক্তি- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভাল'। |
দুষ্টের আঠারোগাছি পথ | কার্যসিদ্ধির জন্য দুষ্টের উপায়ের অভাব হয় না; দুষ্টলোকেরা নানা ছলছুতো ফন্দিফিকির জানে; সমতুল্য-'খলের ছলের অভাব হয় না'। |
দেওয়ালের লিখন না যায় খণ্ডন | ভবিষ্যৎপতনের আভাস; ভাগ্যে যে লেখা আছে তা ঘটবেই। |
দেওয়ালেরও কান আছে | গোপন রাখার শতচেষ্টা হলেও কোন কিছু গোপন থাকে না। |
দেখ্ তোর না দেখ্ মোর | নজরে না থাকলে পরের দ্রব্য আত্মসাৎ করার প্রলোভন ধান্ধাবাজি। |
দেখছি কত দেখব আর ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার | অযোগ্যের হাতে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দেখে খেদোক্তি। |
দেখতে পেলে শুনতে চায় না | অনেকে আছে যারা শুধু লোকমুখে শুনে তৃপ্ত হয় না। |
দেখবো কত কালে কালে গোঁফ রেখেছে তোবড়া গালে | বিসদৃশ রূপচর্চার প্রতি বিদ্রুপোক্তি। |
দেখলে পরে বিশ্বাস | ঘটনার শেষ না দেখা পর্যন্ত সন্দিহান; তুলনীয়- 'না আঁচালে বিশ্বাস নাই'। |
দেখেশুনে আক্কেল গুড়ুম | অসম্ভব ঘটনা দেখে ভীত ও হতভম্ব; পাঠান্তর- 'দেখেশুনে পিলে চমকায়'। |
দেখে শেখে আর এক ঠেকে শেখে | বুদ্ধিমান ঘটনা দেখে তার থেকে শিক্ষা নেয়; নির্বুদ্ধি ঘটনার ফেরে পড়ে তার থেকে শিক্ষা নেয়; সমতুল্য স্ংস্কৃত শ্লোক- 'ভূতে পশ্যন্তি বর্বরা'; পাঠান্তর- 'দেখে শেখে পণ্ডিত ঠেকে শেখে মূর্খ'। |
দেদোর(=দাদ রোগাক্রান্ত) মর্ম দেদোয় জানে | একমাত্র সমব্যথীরাই ব্যথার মর্ম বোঝে। |
দেনার চেয়ে পাপ নেই | অর্থ স্পষ্ট; একবার ঋণের আবর্তে পড়লে তার থেকে আর নিস্কৃতি নেই। |
দেবতার বেলা লীলাখেলা, পাপ লিখেছে মানুষের বেলা | দেবতাদের কেচ্ছা লীলা বলে বর্ণিত হয়; দেবতাদের মত ক্ষমতাশালীরাও অনেক পাপ করে শেষপর্যন্ত পার পেয়ে যায়; যত দোষ শুধু গরিবলোকেদের বেলায়। |
দেবতারা সৌরভ ভালবাসে | সুগন্ধ সকলের মনকে আমোদিত করে। |
দেবা ন জানন্তি কুতঃ মনুষ্যাঃ | দেবতারাই যখন জানেন না তখন মানুষ কোথায় লাগে? |
দেবালয়ের পিছনেই শয়তানের আবাস/আস্তানা | আলো ও অন্ধকার, ভালো ও মন্দের পাশাপাশি অবস্থান করে। |
দেবালয়ের যতকাছে দেবতা থেকে ততদূরে | আচার সর্বস্বতায় নিষ্টাভক্তির ছোঁয়া থাকে না। |
দেয় থোয় রাখে মান তার কয় যজমান | যে পুরোহিতকে যথেষ্ঠ দানধ্যান করে এবং সম্মান প্রদর্শন করে তাকে প্রকৃত যজমান বলে। |
দেরি হলেও সংশোধনের সময় থাকে। | সংশোধনের কোন সময়সীমা নেই। |
দেশগুণে বেশ/ দেশবুঝে বেশ, জমি/পাথার বুঝে চাষ১ | দেশের প্রথা অনুযায়ী পোশাক পরতে হয়; জমির অবস্থা বুঝে চাষবাস করতে হয়; সমতুল্য- 'যস্মিন দেশে যদাচারঃ'; 'যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান'। |
দেশে নেই যা ছেলে মাগে তা | অসঙ্গত আবদার। |
দেহি দেহি পুনঃপুনঃ | আছে কি নেই জানে না কেবল বলে- দাও দাও; |
দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ | কুবংশে সুসন্তান; (উৎসকাহিনী- দৈত্যরা চিরদিনই দেবদ্বেষী; দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু চরম বিষ্ণুবিদ্বেষী ছিলেন; বিপরীতে পুত্র প্রহ্লাদ বিষ্ণুর পরমভক্ত ছিলেন; তার থেকেই 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ' প্রবাদের জন্ম হয়। কুলের সংস্কারবিরুদ্ধ বা অসাধু বংশে কোন সাধু সন্তান জন্মালে লোকে তাকে 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ' বলে থাকে; সমতুল্য- 'গোবরগাদায় পদ্মফুল'। |
দৈব ও আকস্মিক ঘটনা অজ্ঞানের উক্তি | কোন ঘটনাই আকস্মিক নয়; প্রতিটি কার্যের পিছনে কারণ থাকে। |
দৈবজ্ঞ যদি ঠিক তবে মাগে কেন ভিখ? | দৈবজ্ঞ যদি ঠিক গণনা করতেই পারে তবে সে ভিক্ষা কেন চাইবে? আসলে দৈব বলে কিছু নেই, সব বুজরুকি। |
দৈবি বিচিত্রা গতি | দৈবের গতি অতি বিচিত্র। |
দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষা বদন্তি | 'ভাগ্যে থাকলে পাব'-এ কথা শুধু কাপরুষেরাই বলে। |
দোদেলবান্দা কল্মাচোর না পায় বেহেস্ত না পায় গোর | সংশয়ী এবং মন্ত্রচোরেরা (অধার্মিক) স্বর্গও পায় না কবরও পায় না; এদের দুকুল যায়। |
দোয়া গাইয়ের চাঁট সই | যে গরু দুধ দেয় তার লাথি সহ্য করতেই হয়; গরজ বড় বালাই'। |
দোষা বাচ্যা গুরোরপি শত্রোরপি গুণা বাচ্যা | গুরুর দোষগুলও ব্যন্ত করবে; শত্রূর গুণগুলিও ব্যক্ত করবে। সম্পর্কীত প্রবাদ- ‘রোষপরীতেন গুরুণা জায়তি গুণঃ'। |
দোষ স্বীকার করলে অর্ধেক দোষ স্খলন হয় | দোষ স্বীকার করলে আত্মশুদ্ধি হয়; আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে দোষ আংশিক স্খালন হয়। |
দোষী বিবেকের অভিযুক্তের প্রয়োজন হয় না | অনুশোচনার অনুভূতি শক্তিশালী হলে দোষী অপরাধ স্বীকার করে নেয়; ফলে অভিযোগ করার জন্য কারও প্রয়োজন হয় না। |
দৌড় ছাড়া হাঁটা নাই, বাড়ী যাইয়া দেখে কাম নাই | কোন কাজ না থাকলেও অযথা কাজের জন্য দৌড়ঝাঁপ; লোক দেখানো ব্যস্ততা। |
দ্বিধায় দ্বিধা বাড়ে | দ্বিধায় পড়লে পরপর ভুল পদক্ষেপ হয়। |
দ্রব্যং মূল্যেণ শুদ্ধতি | মূল্যপ্রদান করলে দ্রব্য শুদ্ধ হয়; দক্ষিণা না দিলে কোন কাজ সিসশ হয় না। |
ধ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ধনং ক্ষীণং ভবেদ্দানবিদ্যা দানাদ্বিবর্ধতে | দানে ধন ক্ষয় হয়; দানে বিদ্যা বর্ধিত হয়; সুতরাং বিদ্যা ধন থেকে বড়। |
ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি | অর্থনাশে দারিদ্রদশা উপস্থিত হলোে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। |
ধন জন পরিবার, কেউ নয় আপনার | আত্মাছাড়া আত্মর আপন কেউ নয়; কেউ সঙ্গে আসে না কেউ সঙ্গে যায়ও না। |
ধন জন যৌবন- জোয়ারের জল কতক্ষণ | অর্থ, আত্মীয় ও যৌবন জোয়ারের জলের মতই ক্ষণস্থায়ী। |
ধন থাকলেই সিঁধের ভয় | অর্থ থাকলেই অর্থ হারাবার ভয় থাকে। |
ধন দিয়ে মন বুঝে যৌবন দিয়ে আক্কেল বুঝে | টাকাকড়ি দিয়ে মনের গতিপ্রকৃতি বুঝে নেয়; যৌবন দান করে বিবেচনাবোধ বুঝে নেয়। |
ধন নেই কড়ি নেই নিধিরাম পোদ্দার | শূন্যহাতে বাহাদুরি; অক্ষমের আস্ফালন; নিজের অযোগ্যতাকে কথার মারপ্যাঁচে ঢাকার চেষ্টা। |
ধন পরিবাদও ভাল | ধনী বলে নিন্দিত হলেও মন্দ নয়, কারণ তাতেও ধনশালীর স্বীকৃতি ও ইজ্জৎ মেলে; তুলনীয়- বদনাম হয়েছে তো কি হয়েছে, নাম তো হয়েছে'। |
ধন বড় না ধর্ম বড়? | ধন নয়, ধর্মের মাহাত্য অনেক বেশি; ধনী থেকে ধার্মিক অনেক বেশি সম্মানীয়। |
ধন যৌবন আড়াই দিন, চাম চোখে মানুষ চিন্ | চর্মচক্ষুতে মানুষ চেনার কথা বলা হয়েছে। |
ধনসোহাগী মরে ক্ষুদের জাউ (ফেনভাত) খাইয়া/খেয়ে | হাড়কৃপণ; ধনের প্রতি মমতাপরায়ণ ব্যক্তি খরচের ভয়ে ভাল খাবারদাবার খেতে পারে না। |
ধনানি জীবিতঞ্চৈব পরার্থে প্রাজ্ঞ উৎসৃজেৎ | জ্ঞানীব্যক্তি, ধন ও জীবন পরের জন্য উৎসর্গ করেন। |
ধনীর চিন্তা ধন ধন, নিরানব্বুইয়ের ধাক্কা, যোগীর চিন্তা জগন্নাথ, ফকিরের চিন্তা মক্কা | ভোগীর ভোগবাদী চিন্তা, ত্যাগীর আধ্যাত্মিক চিন্তা, যে যেভাবে জীবনকে দেখে; যার যাতে অনুরাগ সে সেটাই চিন্তা করে। |
ধনীর মাথায় ধর ছাতি নির্ধনের (কুলের) মাথায় মারো লাথি | বংশ চুলোয় যাক, ধনী দেখলেই সমাদর কর; গরিব চুলোয় যাক ধনী ভজনা কর; তেলামাথায় তেল দিতে কে না চায়; সমতুল্য- 'তেলা মাথায় ঢালো তেল, রুখু/শুখনো মাথায় ভাঙ্গো বেল'; 'যে খেয়েছে সাত বার, তার জন্য ভাত বাড়ো, যে খায় নি একবার, তার জন্য চাল ঝাড়ো'। |
ধনুর্ভঙ্গ পণ | দৃঢ় ও ভীষণ প্রতিজ্ঞা; (উৎসকাহিনী-মিথিলার রাজা সীরধ্বজ জনক (কৌলিক পদবি) শিবের কাছ থেকে একটি ধনুক পেয়েছিলেন; সীতা হরধনুর সাহায্যে উঁচু গাছ থেকে ফল পাড়তেন; ব্যাপারটা সীরধ্বজকে অবাক করেছিল; কারণ হরধনু যে সে ধনুক নয়; তাই তিনি পণ করেছিলেন যে ব্যক্তি হরধনুতে গুণ পরাতে পারবে তার সাথেই সীতার বিয়ে দেবেন; এক যজ্ঞ অনুষ্ঠানে এসে রাম হরধনুতে ছিলা পরিয়ে ছেড়ে দিতেই তার টঙ্কার (জ্যা টেনে ছেড়ে দেওয়ায় উত্থিত শব্দ) দিতেই তার শব্দে ধনুকটা ভেঙ্গে যায়; সেইকারণে বাগধারাটির নাম হয় ‘ধনুর্ভঙ্গ পণ’; রাজা খুশিমনে তার প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন; বাগধারাটির আলঙ্কারিক অর্থ হল কঠিন বা অনড় প্রতিজ্ঞা, যেমন- দক্ষকন্যা সতী ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছিলেনে যে তিনি শিবছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না।) |
ধনে অহঙ্কার নয় অহঙ্কার মনে | ধনের অহঙ্কার আসল অহঙ্কার নয়, মনের অহঙ্কারই হল আসল অহঙ্কার। |
ধনে ধন দেখে | ধন থাকলে ধনের আগম হয়; সমতুল্য- 'টাকায় টাকা আনে'; তুলনীয়- ;বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মীঃ'। |
ধনে সুখ নয় সুখ মনে | ধনের সুখ ক্ষণস্থায়ী; মনের সুখ চিরস্থায়ী। |
ধন্য রাজার পূণ্য দেশ যদি বর্ষে মাঘের শেষ- খনা | মাঘমাসের শেষে বৃষ্টি হলে প্রচুর শস্য জন্মে; তুলনীয়- 'মাঘের মাটি সারের পাটি'। |
ধর কাছি তো ধরেই আছি | অনিচ্ছা সহকারে কারো আদেশ পালন করা, কাজে কোন মন নেই; তুলনীয়- 'দাদা বলেছে চষতে তাই চষতেই আছি'। |
ধর্ তক্তা মার্ পেরেক | দায়সারাভাবে দ্রূত কাজ শেষ করার চেষ্টা। |
ধর মাছ ভাগ আছে | তুমি প্রাণপণ পরিশ্রম কর, ভাগের বেলায় আমি কিন্তু আছি। |
ধর লক্ষ্মণ | কিছু না ভেবে অক্ষরে অক্ষরে আদেশ পালন করা; 'লক্ষ্মণের ফল ধরা' দ্রষ্টব্য। |
ধরলে চিঁ চিঁ করে ছাড়লে লম্ফ মারে | ধরা পড়লে কাকুতিমিনতি করে; ছাড়া পেলে আস্ফালন করে, দৌরাত্ম্য করে। |
ধরাকে সরা জ্ঞান করে | অহঙ্কারে কাউকে গ্রাহ্য না করে না; সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। |
ধরি মাছ না ছুঁই পানি | কিছুমাত্র বেগ না পেতে হয় এমন কৌশলে কার্যসিদ্ধি; তুলনায়- 'সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না'। |
ধরে আনতে বললে বেঁধে আনে | বাড়াবাড়ি করে ফেলা; জাহির দেখাতে গিয়ে আদেশের অতিরিক্ত কাজ করে ফেলা। |
ধরেছো তো ছেড়ো না | একবার কাজে হাত দিলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই কাজ ছাড়া নেই। |
ধরে বেঁধে পিরীত, ঘষে মেজে রূপ | কোনটারই পরিণতি সফল হয় না; শুধু বেগে কিছু হয় না আবেগ থাকা চাই। |
ধর্মদাসের ধর্মকর্মে ধর্মের কোন নাম নেই | পুঁথিপড়া ধর্ম-ব্যবসায়ীদের আচারসর্বস্বতার নির্দেশের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
ধর্মপুত্র যুধিষ্টির১ | প্রশংসার্থে- আদর্শ সত্যবাদী; কোনব্যক্তি প্রকৃত ধার্মিক হলে যুধিষ্টিরের উদাহরণ টানা হয় (যুধিষ্টির ধর্মরাজের পুত্র ছিলেন।) |
ধর্মপুত্র যুধিষ্টির২ | নিন্দার্থে- কোনব্যক্তি অতিশয় অধার্মিক হয়ে ধার্মিকের ভান করলে ব্যঙ্গার্থে তাকে ধর্মপুত্র যুধিষ্টির বলা হয়; (যুধিষ্টির জন্মসূত্রে ধর্মপুত্র হলোেও কর্মসূত্রে নন; যিনি ধর্মপত্নীকে বাজী রেখে পাশা খেলেন তিনি আর যাই হোন না কেন ধর্মপুত্ কিছুতেই নন।) |
ধর্মস্য কুটিলা/সূক্ষ্মা গতিঃ | কর্মের সাথে ধর্মের বিরোধের প্রতি ইঙ্গিত; বামনরূপী ভগবানকে সমগ্র ভূমণ্ডল দান করে বলীরাজ পাতালে গেলেন আর স্বল্পপরিমাণ ছাতু দান করে ঋচিকনামা মুনি স্বর্গে গেলেন; আবাল্যকাল অসতী হয়েও কুন্তী স্বর্গগামিনী হলেন আর চিরসতী হয়ে সীতা পাতালে প্রবেশ করলেন; অসতী হয়েও কুন্তী সতী আখ্যা পান আর সতী হয়েও সীতা সতী আখ্যা পান না; রাজধর্ম্ম পালন না করেও যুধিষ্টির ধার্মিক আখ্যা পান আর রাজধর্ম্ম পালন করেও দূর্যোধন ধার্মিক আখ্যা পান না; ধর্মযুদ্ধে পরাজিত কৌরবেরা স্বর্গে ইন্দ্রের ডানদিকে বসার জন্য আসন পান এবং পিছনে চাঁদোয়া পান, অন্যদিকে জয়ী পাণ্ডবেরা ইন্দ্রের বাঁদিকে বসার আসন পান এবং পিছনে চাঁদোয়া পান না ইত্যাদি। বিস্ময় লাগে রামচন্দ্র স্বয়ং ভগবান হয়েও বিধাতার কোপে পড়ে অশেষ দুঃখভোগ করেন; মহাভারতের মহানায়ক শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হয়েও গান্ধারীর অভিশাপে অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন; মহাভারতের আরেক মহানায়ক ভীষ্ম কাশীরাজের কন্যা অম্বাকে স্বয়ম্বরসভা থেকে জয় করে নিয়ে এসে বিয়ে না করেও কাপুরুষ হন না। এইরকম হাজার বৈষম্যে রামায়ণ মহাভারতে ভিড় করে আছে।সুতরাং ধর্মের গতি বোঝা ভার।) |
ধর্মস্য কুটিলা/সূক্ষ্মা গতিঃ২ | ধর্মের গতি অতি সূক্ষ্ম; কীভাবে ধর্ম পরিচালিত হবে এবং কীভাবে তার থেকে বিচার পাওয়া যাবে সাধারণের তা বোধগম্য নয়; বিশেষতঃ সাধারণ মানুষের বিচারের মাপকাঠিতে রাজধর্ম বিচার করা যায় না। |
ধর্মস্য কুটিলা গতিঃ৩ | সূক্ষ্মবিচারে ধর্মের হাত থেকে পাপের নিস্তার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই; যতই লুকাও-না-কেন পাপ একদিন প্রকাশিত হবেই; সমতুল্য- 'ধর্মের কল বাতাসে চলে/নড়ে'। |
ধর্মেণ হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ | অধার্মিক পশুর সমান; (আধুনিক চিন্তাধারা অনুসারী নয়; সমস্ত প্রাণীকুল শ্রেষ্ট প্রকৃতিকধর্ম মেনে চলে; প্রকৃতপক্ষে পশুরাই ধার্মিক; একমাত্র সুবিধাবাদী মানুষ ধর্ম আচরণ করে না।) |
ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি | একইসাথে অধর্ম করা ও ধর্ম রক্ষা করার ধান্ধাবাজী; যে সুবিধাবাদী দুমুখো মানুষেরা একইসাথে দুইপক্ষ অবলম্বন করে বা দুকুল রাখার চেষ্টা করে তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়; (উৎসকাহিনী- কথিত কথা যে রাজস্থানের একরাজা আফ্রিকা থেকে চিড়িয়াখানার জন্য় এক জিরাফ আনেন; এমন আজব জন্তু আগে কেউ দেখেনি বলে লোকে তাকে দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় জমায়; ঈর্ষাকাতর ধর্মগুরুরা বলতে থাকে যে এই জন্তু ঈশ্বর নয়, শয়তানের সৃষ্টি; ফলে ধর্মভীরু লোকেরা চিড়িয়াখানায় যাওয়া বন্ধ করে; রাজাও কম যান না; তিনি রাতে চিড়িয়াখানা খোলা রাখেন; এদিকে ধর্মগুরুরাও জিরাফ দেখতে উৎসুক ছিলেন; তাঁরা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জিরাফ দেখতে যেতেন; সেই থেকে এই প্রবাদের প্রচলন শুরু হয়।) |
ধর্মের ঘড়া ভেসে ওঠে পাপের ঘড়া তল যায় | সৎব্যক্তি বিপদে পড়লেও বিপদমুক্ত হয়; অসৎব্যক্তি বিপদে পড়লে তার বিনাশ হয়। |
ধর্মের কল বাতাসে চলে/নড়ে | ধর্ম এমনই এক কৌশল যে গোপনে অনুষ্ঠিত পাপকাজ কিছুতেই লুকানো যায় না; সত্য শেষপর্যন্ত উদঘাটিত হয়; (উৎসকাহিনী- সূর্য্য, বরুণ, বিষ্ণু, যম ও শিবকে ধর্মঠাকুর বলে মানা হয়; বাংলায় ধর্মঠাকুর হলোেন একজন গ্রাম্যদেবতা; বাঁকুড়ার বিষ্ণুপরের গ্রামাঞ্চলে কোন গাছতলায় একটি পাথর বা কাঠের ঘোড়া বসিয়ে ধর্মঠাকুরের পূজা করা হয়; প্রধানত নিম্নবর্ণের মানুষেরা ধর্মঠাকুরের পূজা করে থাকে; গাছের ডালে একটি ঘণ্টা বাঁধা থাকে; এই ঘণ্টা বাতাসের আন্দোলনে আপনাআপনি বাজে; কাউকে বাজাতে হয় না; বর্ধিষ্ণু গ্রামে ধর্মঠাকুরের মন্দির থাকে; মন্দিরে জয়ঢাক থাকে; সাধারণের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রচলিত যে ধর্মঠাকুরের মন্দিরে কেউ পূজা দিতে এলে মন্দিরে রক্ষিত জয়ঢাক আপনাআপনি বেজে উঠে, কোন ঢাকীর প্রয়োজন হয় না; এই বিশ্বাস থেকেই প্রবাদ দুটির উৎপত্তি হয়েছে।); পাঠান্তর- ধর্মের ঢাক/ভেরী আপনি বাজেে'। |
ধর্মের ঘরে কুটের অভাব নাই | মন্দির-মসজিদে ভণ্ডধার্মিক নেই এমন চিন্তা ভ্রান্ত; ধার্মিক সমাজেও কপটতা আছে; সমতুল্য- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার থাকে'। |
ধর্মের ঘরে পাপ সয় না | যে বংশে চিরকাল ধর্ম রক্ষিত হয়েছে সেই বংশে একটুও পাপ ঢুকলে পাপের ফল সঙ্গে সঙ্গে ফলে যায়। |
ধর্মের জয় অধর্মের ক্ষয় | সৎকাজ করলে এবং সৎপথে থাকলে জয় সুনিশ্চিত; অপরপক্ষে অসৎকাজ করলে এবং সৎপথ ধরলে পতন অনিবার্য। |
ধর্মের পথ বড়ই কঠিন | ধর্মের পথে চলতে গেলে অনুশাসন নিয়মশৃঙ্খলা মানার প্রশ্ন থাকে; অনেক অসুবিধা ভোগ করতে হয়; অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়; তাই মানুষ মনোরম সরল মন্দপথেই চলতে পছন্দ করে; (সুধি পাঠক রবীন্দ্রনাথের 'নিস্কৃতি' কবিতাটি পড়ে নেবেন।) |
ধর্মের ঘড়া/ভরা (বজরা) ভেসে ওঠে পাপের ঘড়া/ভরা তল যায় | ধার্মিক বিপদে পড়লে অন্যের সাহায্যে বিপদ কাটিয়ে ওঠে; অধার্মিক বিপদে পড়লে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না; ফলে সে ধ্বংস হয়। |
ধর্মের ষাঁড় | পরের ক্ষতি করে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- কোন মৃতের শ্রাদ্ধে উৎসর্গ করা ষাঁড় সকলের অনিষ্ট করে রাস্তায় রাস্তায় স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ায়; কেউ তাকে কিছু বলে না।) |
ধর্মের সূক্ষ্মগতি | ধর্মস্য সূক্ষ্মা গতিঃ দ্রষ্টব্য। |
ধর্মো রক্ষতি ধার্মিকম্ | ধর্মই ধার্মিককে রক্ষা করেন; ন্যায়বোধের বিচারক ঈশ্বর ধার্মিকের রক্ষাকর্তা। |
ধর্মোহপি জনাতি নরস্য বৃত্তং | ধর্ম মানবচরিত্র বুঝতে পারে। |
ধাইয়ের কাছে কোঁক (গর্ভ) ছাপা | ধাত্রীর কাছে গর্ভ গোপন রাখা কঠিন লক্ষণায় যে ঘরের সবকথা জানে, তার কাছে লুকাবার কিছু নেই বা লুকাবার চেষ্টা বৃথা। |
ধান একগুণ, ঘাস শতগুণ | ধানগাছ একটা দুটো হলে ঘাস শত শত হয় লক্ষণায় গুণ ও গুণী অল্প হয়; দোষ ও দোষী প্রচুর হয়। |
ধানকাঠের তক্তা | কোনকাজের নয়; অকর্মণ্য ব্যক্তি। |
ধানকাঠের মই বেয়ে চাঁদ পেড়ে আনা | আজগুবি কল্পনা। |
ধান খায় কাকে, ব্যাঙের পায়ে দড়ি | চরম বিশৃঙ্খলা; একের দোষে অন্যের শাস্তি; সমতুল্য- 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'। |
ধানগাছ চেনেন না? | যে জেনেশুনে অজ্ঞতা প্রকাশ করে তার প্রতি বিদ্রুপোক্তি। |
ধানগাছের কড়ি | উৎসকাহিনী- শহুরে বাবুরা গ্রামের লোকদের মূর্খ চাষা বলে; গ্রামের লোকেরাও অজ্ঞ শহরবাসীদের বিদ্রূপ করে মুর্খ বলে; এক শহরবাসী ধানগাছ কেমন দেখতে জানতে চাইলে গ্রামবাসী তাকে বলে, 'সে এক মস্তগাছ,এইগাছ থেকে কড়িকাঠ হয়'; নির্বোধের ভ্রান্তবিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করতে এই প্রবাদ বলা হয়। |
ধান দিয়ে লেখাপড়া শেখা | সামান্য ব্যয়ে অল্পসল্প বিদ্যালাভ। |
ধান নাই চাল নাই, আন্দিরাম মহাজন | বিফল ব্যবসায়ী, মহাজন না হয়েও মহাজনের মত আচার-আচরণ; অক্ষমের সুখকল্পনা; সমতুল্য- 'ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার'; 'ধন নেই কড়ি নেই নিধিরাম পোদ্দার'। |
ধান ভানতে শিবের গীত | বিশেষ আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা; কাজের কাজ ফেলে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট এবং প্রকৃত কাজের ক্ষতি করা। |
ধানের আগে উড়ি ফুলে | উড়ি একপ্রকার ইতর ধান; জমিতে ধান ফুলার আগেই আপনা-আপনি উড়ি ফুলে থাকে এবং আপনা-আপনি ঝরে যায়; সংসারে অসার ব্যক্তিদের বাড় বেশি; সমতুল্য- 'আগাছার বাড় বেশি'। |
ধান্য তার বসুন্ধরা যার | জমি যার ফসল তার; ন্যায়বোধের অধিকার; সমতুল্য- 'তরোয়াল যার জমি তার'; 'লাঠি যার ভৈঁসা তার' ইত্যাদি। |
ধান্যবৃক্ষ চেনেন না? | যে জেনেশুনে অজ্ঞতা প্রকাশ করে, তার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
ধামাধরা মানুষ | অত্যন্ত খোসামুদে চরিত্রের লোক, স্বার্থের কারণে যে বক্তার ন্যায় অন্যায় সব কথাতেই সায় দেয়। |
ধার করা জামা কখনও গায়ের মাপের হয় না | খাতকের কোন পছন্দ-অপছন্দ নেই যা পায় তাই মেনে নিতে হয়; তুলনীয়-'ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া'। |
ধার করে কানে সোনা | যারা কর্জ করে বাবুগিরি ফলায় পরে ধার শোধ করতে গিয়ে বিপন্ন হয় তাদের প্রতি প্রযোজ্য; পাঠান্তর- 'ধার করে হাতী কেনা'। |
ধার করে খায়, হেঁট মাথায় যায় | খাতকের কোন মান-ইজ্জৎ নেই। |
ধারে কাটে আর ভারে কাট১ে | অস্ত্রে ধার থাকলে সহজে কাটে; ধার না থাকলে অস্ত্রের ভারেও কাটা যায। |
ধারে কাটে আর ভারে কাটে২ | অর্থবল থাকলে সহজে কার্যসিদ্ধি হয়; অর্থবল তেমন না থাকলে ক্ষ্মতাবলের সাহায্য কার্যসিদ্ধি হয়। |
ধারে কাটে আর ভারে কাটে৩ | অর্থবল থাকলে সমাজে সম্মান প্রতিপত্তি পাওয়া যায়; অর্থবল না থেকে যদি ক্ষ্মতাবল থাকে তাতেও সমাজে সম্মান প্রতিপত্তি পাওয়া যায়। |
ধিয়া পশ্যতি পণ্ডিতঃ, ভূতে পশ্যতি বর্বরা | অভিজ্ঞতায় জ্ঞানী শেখে; পরিণাম দেখে মূর্খ শেখে। |
ধীর কিন্তু স্থিরগতি দৌড়ে জয়ী হয় | অটল কার্যকরী উদ্যম সাফল্য লাভ করে। |
ধীরগতি নদীর গভীরতা বেশি | জ্ঞানীপুরুষের প্রশান্তি বেশি। |
ধীরগতিতে বৃদ্ধির জন্য কোন চিন্তা করো না, শুধু চিন্তা করো স্থির দাঁড়িয়ে পড়লে কিনা | জড়তা মৃত্যুর সামিল; সচলতা জীবনের লক্ষণ। |
ধীর জল/পানি পাথর কাটে | বিন্দুবিন্দু জল পড়েও পাথর ক্ষয় কয়; ধীরেসুস্থে কাজ করলে অতি কঠিন কাজও সুসম্পন্ন হয়। |
ধীরে হাঁটে বসে না তার সাথে কেউ আঁটে না | কেউ লক্ষ্যে স্থির এবং অবিচল থাকলে ধীরগতিতে হাঁটলেও সফল অবশ্য হবে। |
ধুকড়ির (মোটা সুতোর থলি) মধ্যে খাসা চাল | দেখতে অসুন্দর কিন্তু অন্তর সুন্দর ও মাধুর্যভরা; সমতুল্য- 'ছেঁড়া বস্তায় খাসা চাল'। |
ধুলো-মুঠো ধরলে সোনা-মুঠো হয় | সৌভাগ্যের লক্ষণ; সৌভাগ্যবানব্যক্তি যে কাজেই হাত দেয় তাতেই লাভবান হয়; ভাগ্য প্রসন্ন হলে অলাভজনক বস্তু থেকে লাভবান হওয়া যায়। |
ধুন্ধুমারকাণ্ড | প্রচণ্ড গণ্ডগোল; (উৎসকাহিনী- পুরাণকালে ধুন্ধু নামে এক দৈত্য ছিল; দৈত্য হলে যা হয়; কোন-না-কোন দেবতার আশীর্বাদ পেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে; ধুন্ধুও সেইমত ব্রহ্মার বরে শক্তিশালী হয়ে স্বর্গ, মর্ত ও পাতালজূড়ে অত্যাচার শুরু করে; তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইক্ষ্বাকু বংশের রাজা কুবলাশ্ব তাকে সংহার করেন; ব্যাপারাটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না; কুবলাশ্ব ধুন্ধুর উপর যে অস্ত্রগুলি প্রয়োগ করেন ধুন্ধু সেগুলি হজম করে মুখ দিয়ে আগুনের অজস্র হলকায় বার করতে থাকে; সেই আগুনে ব্রহ্মাণ্ড ভষ্ম হয়ে যাচ্ছিল; শেষপর্যন্ত কুবলাশ্ব অজস্র জলধারায় সেই আগুন নেভান; এই কাহিনী থেকেই প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে; কোনস্থানে খুব মারপিট বা দাঙ্গাহাঙ্গামা চলতে থাকলে আমরা বলি- ওখানে ধুন্ধুমার কাণ্ড চলছে।) |
ধূপ নিজে পুড়ে অপরকে গন্ধ বিলায় | পরের কারণে আত্মবলিদান; তুলনীয়- 'মশাল নিজে পুড়ে অপরকে আলো দেখায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও'। |
ধূর্তে ধূর্তে ধূর্তামি | চতুর চতুরের সাথে ছলচাতুরী করে; তুলনীয়- 'সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি'। |
ধেনো হাটে ওল নামানো | হাট চিনয়ে ভুল করা; না বুঝে অকাজ করা। |
ধেয়ে ধেপে বারো, বসে মারে তেরো | একজন পরিশ্রম করে অল্প আয় করে; আরেকজন বিনা পরিশ্রমে বেশী আয় করে। |
ধৈর্য ধর যা তুমি চাও তাই পাবে | আপেক্ষা করার মূল্য আছে; কথায় বলে- 'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
ধৈর্যশীলতা হল উদ্বেগ-নিরসনের চাবিকাঠি | ধৈর্যশীলতা ঘায়ের ওপর মলম হিসাবে কাজ করে। |
ধোঁয়া চাপা থাকে না | সত্য গোপন থাকে না। |
ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে | অকারণে কিছু হয় না; কার্যের পিছনে কারণ থাকে; তুলনীয়- 'অকারণে গাছের একটি পাতাও নড়ে না'; পাঠান্তর- 'ধোঁয়া যেথায় আগুন সেথায়'। |
ধোঁয়ার হাত এড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরা | সামান্য বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে বেশী বিপদে পড়া; তুলনীয়- 'টকের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আমড়াতলায় বাস'; 'বিছের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে সাপের মুখে পতন'। |
ধোপা-ভাঁড়ারী/ভাণ্ডারী১ | ধোপার ভাঁড়ারে অনেক কাপড় অথচ তার নিজের কিছু নয়; সমতুল্য- 'চিনির বলদ'। |
ধোপা-ভাঁড়ারী/ভাণ্ডারী২ | ধোপার ভাঁড়ারে অনেক কাপড় যা পরে সে সহজেই বাবুগিরি করতে পারে; সমতুল্য- 'পরের ধনে পোদ্দারি'। |
ধোবি কা কুত্তা (কুতা?) না ঘরকা না ঘাটকা | সবাই অনাদর করে এমন মানুষ (উৎসকাহিনী- নদীর ঘাটে যে পাটায় ধোপা কাপড় কাঁচে তাকে হিন্দীতে কুতা বলে; সকালে কাপড় কাচার সময় ধোপা কুতাটি ঘাড়ে করে নদীর ঘাটে বয়ে নিয়ে যায় এবং বিকালে ফেরার সময় সেটি ঘাট থেকে আবার ঘাড়ে করে বাড়ী বয়ে নিয়ে আসে।) |
ধ্বনির অনুরূপ প্রতিধ্বনি আছে/থাকে | অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য- 'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে'; 'চড় মারলে চড় খেতে হয়' ইত্যাদি। |
ধ্রুবসত্য | চিরসত্য; উত্তরাকাশে নির্দিষ্টস্থানে ধ্রুবতারা প্রতিদিন দেখা যায় লক্ষণায় চিরসত্য কিছু বোঝাতে 'ধ্রুব সত্য' প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। |
ন
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ন অহংকারাৎ পরোরিপুঃ | অহঙ্কারের চেয়ে বড় শত্রু নেই। |
ন অসমীক্ষ্য পরং স্থানং পূর্বমায়তনং ত্যজেৎ | পরবর্তী পদক্ষেপের স্থান না দেখে পূর্বস্থান ছাড়া অনুচিত। |
নকল গয়নার জেল্লা বেশি | নকল নিজেকে আসল থেকে বেশি সুন্দর প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করে। |
ন কশ্চিৎ কস্যচিন্মিত্রং ন কশ্চিৎ কস্যচিদ্রিপুঃ | কারণবিনা কেউ কারো মিত্র বা শত্রু হয় না। |
ন কাষায়ৈর্ভবেৎ যতি (সাধু) | গৈরিকবসন ধারণ করলেই সাধু হয় না। |
ন কূপখননং কার্যং প্রদীপ্তবহ্নিনা গৃহে | ঘরে আগুন লাগিয়ে কূঁয়া কাটা যুক্তিযুক্ত নয়। |
নক্ষত্রভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ | চাঁদ তারারদের অলঙ্কার; স্বামী নারীর অলঙ্কার। |
নখের ছিদ্রে কুড়াল লাগানো | সামান্যকাজে বিরাট আয়োজন; সমতুল্য- 'কোদাল দিয়ে দাড়ি চাঁচা'; 'মশা মারতে কামান দাগা' ইত্যাদি। |
ন গণস্যাগ্রতো গচ্ছেৎ | সবার আগে যাওয়া নেই; ঝড়ঝাপ্টা আগুয়ানকেই সইতে হয়; প্রথমসারির সৈনিকের মৃত্যু অবধারিত; সমতুল্য- 'আগে গেলে বাঘে খায়'; বিপরীত উক্তি- 'ভোরের পাখি পোকা ধরে'। |
নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়? | আগুনের বাছবিচার নাই; বিপদ হলে সবার ক্ষতি হবে। |
ন গৃহং গৃহমিত্যাহু গৃহিণী গৃহমুচ্যতে | কেবল গৃহকেই গৃহ বলা যায় না; গৃহিণীর সাথে একত্র হয়ে পুরুষ যাবতীয় পুরুষার্থ উপভোগ করে থাকে বলে গৃহিণীকেই গৃহ বলে। |
ন চ অপত্যসমঃ স্নেহঃ | পুত্রস্নেহের সমান স্নেহ নেই। |
ন চ দৈবাৎ পরং বলম্ | দৈব থেকে শ্রেষ্ঠ বল নেই। |
ন চ বিদ্যাসমো বন্ধুঃ | বিদ্যার সমান বন্ধু নেই। |
ন চ ব্যাধিসমো রিপুঃ | ব্যাধির সমান শত্রু নেই। |
ন চলতি খলু বাক্যং সাধুনাং কদাচিৎ | সাধুদের বাক্যের কখনো অন্যথা হয় না। |
নজরে থাকা কড়ার দুধ উথলায় না | নজর রাখলে কিছুই নয়ছয় হয় না। |
ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি | কামীর কামনা উপভোগে বাড়ে বৈ কমে না। |
নড়া দাঁত পড়া ভাল | অসৎ সঙ্গ বর্জনীয়; কারো সাথে মনোমালিন্য হলোে তার সাথে সংশ্রব না রাখাই উচিৎ। |
নড়তে চড়তে বারো মাস | অত্যন্ত অলস; দীর্ঘসূত্রী। |
নড়তে পারে না কামান ঘাড়ে | পারে না অথচ ক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ করতে যায়; নিতান্ত বাড়াবাড়ি; পাঠান্তর- 'নড়তে পারে না কামান দাগে'। |
নড়ির হাতে শালগ্রামের বিনাশ | হীনের হাতে মহতের অপমান। |
নতুন নতুন খইয়ের মোয়া মচমচ করে | শুরুতে সববিষয়ে মানুষের উৎসাহ একটু বেশি থাকে। |
নতুন নতুন ন'কড়া, পুরানো হলোে ছ'কড়া | নতুন অবস্থায় আদর, পুরাতন অবস্থায় অনাদর; নতুন জিনিসের আদর/কদর বেশি হয়। |
নতুনযোগী ভিখ পায় না | শুরুতে কাজে দক্ষতা আসে না; শুরুতে অনভ্যাসের জড়তা থাকে বলে অকৌশলী স্বীকৃতি পায় না। |
নদী এক কূল ভাঙে আরেক কূল গড়ে | আশা-নিরাশায় ভরা সংসার; প্রতিনিয়ত একদিকে কারো উন্নতি হচ্ছে, আরেকদিকে কারো অবনতি হচ্ছে। |
নদীকূলে চ যে বৃক্ষা, পরহহস্তগতং ধনম, কার্যং স্ত্রীগোচরং যৎ স্যাৎ সর্বং তদ্বিফলং ভবেৎ | নদীপাড়ের বৃক্ষ, পরহস্তগত ধন এবং স্ত্রীলোক জানে, এমন ভবিষ্যৎকাজ সর্বদা বিফল হয়। |
নদীকূল/তীরেে বাস ভাবনা বারোমাস | আশঙ্কার মধ্যে থাকলে চিন্তা সবসময় তাড়া করে; নদীর তীরে বাস করলে সুবিধা যেমন আছ অসুবিধাও তেমন আছে। |
নদী দুকূল ভাঙে না | এককাজের দুই ফল একইরূপ হয় না; কিছু গেলে কিছু আসে; কিছু হারালে কিছু পাওয়া যায়। |
নদী না শুকালে জলের মূল্য জানা যায় না | না হারালে থাকার মূল্ যে কি তা জানা যায় না; তুলনীয়- 'দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না'। |
নদী, নারী, শৃঙ্গধারি, এই তিনে বিশ্বাস না করি | নদীতে কখন জল বাড়ে বা কমে জানা যায় নেই; নদীর কোথায় কি জন্তুজানোয়ার ঘোরাফেরা করে জানা নেই; লঘু চিত্তের স্ত্রীলোকদের কাছে বলা কথা গোপন থাকে না; আর যে পশুর শিং আছে তার কাছে না যাওয়াই ভালো, কারণ সে যেকোন সময় পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারে; এই তিনের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। |
নদী পার হলে কুমিরকে কলা | উপকার পেয়েই উপকৃত উপকারীকে ভুলে যায়; তুলনীয়- 'খাল পার হয়ে পাটনী শালা'। |
নদী শুখালেও রেখা থাকে১ | কৃতকর্মের দাগ থেকে যায়; কলঙ্ক মোছে না। |
নদী শুখালেও রেখা থাকে২ | ধনী দরিদ্র হলেও আভিজাত্যের ছাপ থাকে। |
নদীকে অনুসুরণ কর, সমুদ্রে পৌঁছে যাবে | লক্ষ্য স্থির থাকলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে হয় না। |
নদীর এক কূল ভাঙ্গে আর এক কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা- নজরুল | নদীর মতই সংসারের গতি বিচিত্র; একদিকে আনন্দ তো অন্যদিকে বেদনা; সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস,কারো সর্বনাশ'। |
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস; নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে'-রবীন্দ্রনাথ | অন্যে পেল, আমি পেলাম না- এই ভাবানুভূতি; নিজের সুখের চেয়ে অন্যের সুখ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে মনে করে মানুষ অতৃপ্ত হয়; ঈর্ষাকাতরতায় ভোগে। |
নদীর জল ঘোলাও ভালো, জাতের মেয়ে কালোও ভালো (খনা) | উৎস ভাল হলে নির্গত উপাদানও ভালই হবে। |
নদীর মুখে বালির বাঁধ | ক্ষণস্থায়ী/ভঙ্গুর প্রতিরোধ ব্যবস্থা; নিস্ফল প্রচেষ্টা। |
নদীর স্রোতের প্রায় সময় বহিয়া যায় | নদীর স্রোত ও সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। |
ন দুঃখং পঞ্চভিসহ | পাঁচজনের সাথে মিলেমিশে থাকলে দুঃখ অনুভব হয় না। |
ন দেবঃ সৃষ্টিনাশক | দেবতা কখনো সৃষ্টি নাশ করেন না। |
ন দেবায় ন ধর্মায়১ | দেবতারও নয়, ধর্মেরও নয়; |
ন দেবায় ন ধর্মায়২ | কোন কাজে লাগল না; কোন কর্মের নয়, অপদার্থ। |
নদের চাঁদ | বিদ্রূপে- লম্পট চরিত্রের লোক; (উৎসকাহিনী- দীনবন্ধু মিত্রের 'লীলাবতী' নাটকের পুরুষচরিত্র, যে কুলীনবংশের সন্তান হয়েও অশিক্ষিত, দুর্বৃত্ত, লম্পট; নেশাখোর; এই চরিত্র থেকে 'নদের চাঁদ' প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে।) |
নদের গোরাচাঁদ | বিদ্রূপে- সর্বপ্রধান ব্যক্তি। |
ন দোষ লভতি মহী | পৃথিবী কখনো জীবের দোষ ধরে না। |
ন ধর্মবৃদ্ধেষু বয়ঃ সমীক্ষ্যতে | ধার্মিকব্যক্তির বয়সের বিচার হয় না। |
ননদেরও ননদ আছে | কেউ পার পায় না; বাপেরও বাপ আছে; তিমি থাকলে তাকে গেলার জন্য তিমিঙ্গিল আছে; হিন্দি প |
ন নিম্বো মধুরায়তে | (নিরন্তর জল/দুধ ঢাললেও) নিমগাছ কখনো মিষ্ট হয় না; মূলপ্রবাদ-'পযসা সিঞ্চতে নিত্যং ন নিম্বু মধুরায়তে'। |
ননীর পুতুল নয় যে রোদে গলে যাবে | সন্তানের প্রতি অত্যধিক আদরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উক্ত প্রবাদ। |
ন পাপমনৃতাৎ পরম' | মিথ্যার চেয়ে বড়পাপ আর হয় না; |
নবং বস্ত্রং, নবং ছত্রং নব্যা স্ত্রী নুতনং গৃহম, সর্বত্র নুতনং শস্তং সেবকায়ে পুরাতনে | নতুন পোষাক, নতুন ছাতা, নতুন স্ত্রী, নতুন গৃহ ইত্যাদি নতুন সকলই প্রশস্ত; তবে চাকর ও ভাত পুরাতন হলেই ভাল হয়। |
নবকুমারকে বাঘে খায় | অকৃতজ্ঞ উপকৃত, যে উপকারীর ঋণ স্বীকার করে না; সমতুল্য- শংকরাকে বাঘে খেল, অন্যেরা সব কোথায় গেল?','স্বার্থছাড়া কেউ এক পা নড়ে না', বিরুদ্ধ উক্তি- 'পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি এজীবন মন সকলি দাও';'শুধু স্বার্থ নয়, স্বার্থত্যাগও আছে এ সংসারে', 'স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতে' ইত্যাদি। |
ন বাধতে স্কন্ধো যথা বাধতি বাধতে | দেবরাজ ইন্দ্রের অনুপস্থিতিতে নহুষকে স্বর্গের রাজা করা হয়েছিল; ইন্দ্রত্ব পেয়ে নহুষ খুব অহংকারী হয়ে পড়েন; অহংকারী হয়ে রাজা ঋষিবাহিত পালকি চড়ে পরিভ্রমণ করতেন; একদিন পথে ডুলিবাহক ঋষিরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে রাজা বলেন- 'ক্ষণং বিশ্রম্যতাং জাল্ম স্কন্ধোস্তে যদি বাধতি' অর্থাৎ বাহকগন কাঁধে যদি বেদনা বোধ কর তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম কর; প্রত্যুত্তরে বশিষ্টমুনি উপরের উক্তিটি করেন; তিন বলেন-রাজন কাঁধে ততটা বেদনাবোধ করছি না যতটা অশুদ্ধ 'বাধতি' শব্দটিতে কানে বেদনা পেয়েছি; এই উক্তির দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হলো- রাজা বিক্রমাদিত্য রাজ্য পরিক্রমায় বেরিয়েছেন; পথমাঝে একবাহক অসুস্থ হয়ে পড়লে পথচলতি একজনকে ধরে নিয়ে ডুলিতে জুড়ে দেওয়া হয়; অনভ্যস্ত ব্যক্তির চলতে অসুবিধা হওয়ায় রাজা প্রবাদ বাক্যটি বলেন; প্রত্যুত্তরে লোকটি মুনির উক্তিটি করেন; চমৎকৃত রাজা দ্রুত ডুলি থেকে নেমে এসে লোকটির কাছে পরিচয় জানতে চান; কুণ্ঠিত লোকটি বলে, 'আমি কেউ নই, আমি শুধু এক কবি'; এই কবি আর কেউ নন, তিনি হলেন স্বয়ং মহাকবি কালিদাস; রাজা বিক্রমাদিত্য কালিদাসকে নিয়ে রাজসভায় ফিরে গিয়ে তাঁকে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন করান। |
নবাব খাঞ্জাখান/ নবাব সিরাজদ্দৌলা | অতিবিলাসী, অমিতব্যয়ী ও স্বেচ্ছাপরাযণ ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা উচ্ছৃঙ্খল, অত্যাচারী স্বেচ্ছাপরায়ণপ্রকৃতির এবং যৌবনসুলভ ভোগবিলাসী ছিলেন বলে কথিত; তাঁর অত্যাচারে বাধা দেবার কেউ ছিলেন না; এমনই ভোগবিলাসী স্বভাবের আরেক নবাব ছিলেন নবাব খানজাহান খাঁ; অতিরিক্ত নবাবী চালচলনের জন্য তাঁরা প্রবাদে পরিণত হয়েছেন।) |
নবাবী চাল | চুড়ান্ত বিলাসিতা; কিংবদন্তী যে- নবাবেরা অতিসূক্ষ্ম সূতার জামাকাপড় পরতেন; রূপার গাড়ুতে গোসল করতেন; ঘিয়ে ভাজা ফুলকোলুচির উপরাংশ ক্ষীরসহযোগে নাস্তা করতেন; মুক্তাভস্মের চূণ দিয়ে পান খেতেন; রূপার গড়গড়ায় তামাক খেতেন; প্রতিবার গড়গড়ায় গোলাপ জল ভরে একশটাকা সেরের তামাক খেতেন; আরও কত কি করতেন কে জানে।) |
ন বিশ্বসেদবিশ্বস্তে মিত্রে চাপি ন বিশ্বসেৎ | অবিশ্বাসীকে কখনো বিশ্বাস করবে না; বন্ধুকেও বেশী বিশ্বাস করবে না। |
ন ভূতং ন ভবিষ্যতি | আগেও ছিল না পরেও হবে না। |
ন চন্দনো বনে বনে | সব বনে চন্দনগাছ হয় না; লনীয়- 'ন মাণিক্যং শৈলে শৈলে', |
ন মাণিক্যং শৈলে শৈলে | সব পর্বতে মূল্যবান পাথ্র পাওয়া যায় না। |
ন মৌক্তিকং গজে গজে | সব হাতীতে মুক্তা হয় না; তুলনীয়- 'ন মাণিক্যং শৈলে শৈলে'। |
ন মাতা শপতি পুত্রং | মাতা কখনো পুত্রকে অভিশাপ দেয় না। |
নয় দ্বার মাগিলেও যা সাত দ্বার মাগিলেও তা১ | সাত বাড়ী ভিক্ষা করে যা পাওয়া যায় তা যদি নয় বাড়ী ভিক্ষা করে যদি তাই পাওয়া যাত তবে নয় বাড়ী ঘোরা নিরর্থক। |
নয় দ্বার মাগিলেও যা সাত দ্বার মাগিলেও তা২ | দাবী যাই-হোক-না-কেন বরাদ্ধ স্থির; অল্প পরিশ্রম এবং বেশি পরিশ্রমের ফললাভ এক ও অভিন্ন। |
নয় মণ তেলও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না | যে অসম্ভব কাজ ঘটার নয় সেই সম্পর্কে স্পষ্টোক্তি; দাবীমত যে কার্যসিদ্ধি হবে না- সেই সম্পর্কে চেতাবনী। (উৎসকাহিনী- একবার এক পড়ন্ত জমিদারের পারিষদরা রাধানামে একসুন্দরী নাচনেওয়ালীর নাচ দেখার জমিদারের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করন; সুন্দরী বলে পাঠায়- জমিদারবাবু যদি নয় মণ তেল পুড়িয়ে আলো জ্বালার ব্যবস্থা করেন তবে সে নাচতে রাজী আছে; জমিদারবাবু কাষ্ঠহাসি হেসে প্রস্তাবে নিমরাজী হন; এটা বাস্তবসম্মত নয় বলে এক স্পষ্টবাদী পারিষদ এই উক্তি করেন; বাস্তবে তাই হয়েছিল।) |
নয়া যোগী ভিখ পায় না | নতুন কাজে প্রথম প্রথম ফল পাওয়া যায় না; পাঠান্তর- 'নয়া যোগীর ভিক্ষা নাই'। |
ন যযৌ, ন তস্থৌ | এগিয়ে যাওয়া যায় না, পিছিয়েও যাওয়া যায় না; কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা; (উৎসকাহিনী- কালিদাসের কুমারসম্ভব কাব্যের ছদ্মসন্ন্যাসীকে আরাধ্যদেবতা শিবমূর্তিতে সামনে দেখে লজ্জাসংকোচজড়িতা পার্বতী যাবার জন্য পা উঠানেল এবং সইভাবেই রইলেন; তখন তাঁর মনের এমন অবস্থা যে একপা এগুতেও পারছেন না আবার একপা পিছাতেও পারছেন না।) |
নরক গুলজার১ | নানাবিচিত্র চরিত্রের মানুষের সমাবেশে নরক সরগম; (উৎসকাহিনী- গল্পের এক ব্রাহ্মণ এক মদ্যপকে বলেন, ‘বাপু তুমি মদ খাওয়া ছেড়ে দাও, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে মদ খেলে নরকে যায়’; সন্দিগ্ধ মদ্যপ প্রশ্ন করে, ‘'রামবাবু যে খায়?’ ব্রাহ্মণ উত্তরে বলেন, ‘সে নরকে যাবে’; মদ্যপ আবার প্রশ্ন করে, ‘শ্যামবাবু যে খায়?’ ব্রাহ্মণ সহাস্যে উত্তরে বলেন, ‘যারা মদ খায় তারা সকলেই নরকে যাবে’; মদ্যপ আবার প্রশ্ন করে, ‘আর কি কি করলে লোকে নরকে যায়?’ ব্রাহ্মণের উত্তর, ‘মিথ্যাচার, চুরচামারিি, প্রবঞ্চনা, পরস্ত্রীতে গমন ইত্যাদি কারণে মানুষ নরকে যায়’; কুতুহলী মদ্যপ প্রশ্ন করে, ‘বেশ্যারা কি নরকে যায়?’ ব্রাহ্মণ উত্তর করেন, ‘হ্যাঁ’; প্রচণ্ড মানসিক চাপে মদ্যপ প্রশ্ন করে, ‘যারা বেশ্যালয়ে যায় তারাও?’; উত্তর, ‘তাদেরও একই গতি হয়’; আহ্লাদ আটখানা মদ্যপ নেচে ওঠে বলে, ‘তবে তো নরক গুলজার, যাও ঠাকুর আমি আরও মদ খাবো’।) |
নরক গুলজার২ | অসংযত স্ফূর্তিবাজদের আড্ডা; বহুজনের একত্র সমাগমে চরম বিশৃঙ্খলতা। |
নরকের দ্বার খোলা | উচ্ছন্নে যাওয়ার সব উপকরণ সাজানো আছে। |
নরমকাঠে ছুতোরের কারিগরি/বল | দুর্বললোক দেখলে সবাই পেয়ে বসে; শক্তের কাছে ঘেঁসে না; তুলনীয়- 'শক্তের ভক্ত নরমের যম'। |
নরম মাটিতে বেড়াল আঁচড়ায় | 'নরমকাঠে ছুতোরের কারিগরি/বল'- দ্রষ্টব্য |
নরমের বাঘ গরমের শিয়াল | দুর্বললোকের উপর হম্বিতম্বি করে এবং শক্তলোকের পাল্লায় পড়লে লেজ গুটায়; পাঠান্তর- 'শক্তের ভক্ত নরমের যম'। |
নরানাং নাপিতো ধূর্তঃ | মানুষের মধ্যে নাপিত ধূর্ত বলে প্রসিদ্ধ; সমতুল্য- 'নাপিতের ষোলচোঙা বুদ্ধি'; মূল চাণক্যশ্লোক- 'অরণ্যে শৃগালঃ ধূর্তং,পক্ষী ধূর্তং বায়সাঃ…’। |
নরানাং মাতুলক্রমঃ | মানুষ মাতুলের প্রকৃতিপ্রাপ্ত হয়; ভাগনা মামার অনুসারী হয়; (উৎসকাহিনী- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবপক্ষের সেনাপতি নকুল ও সহদেবের মামা শল্যকে নিরুৎসাহিত কর'তে কর্ণ বিদ্রূপে এই উক্তি করেছিলেন; অজ্ঞাতবাস কালে বিরাটরাজের সেবায় প্রথম তিনভাই উচ্চপদ পান; নকুল ও সহদেব পান অশ্বরক্ষক ও গোরক্ষকের; কর্ণের এই শ্লেষোক্তিই প্রবাদে পরিণত হয়।) |
নরুণে তালগাছ কাটা | ক্ষুদ্রউপায়ে বিরাটকাজ করার চেষ্টা; অসাধ্যসাধন করার চেষ্টা; সমতুল্য- 'কলার ভেলায় সাগর পার';'ঝিনুক দিয়ে জল সেঁচা'; 'মুড়া কোদালে দিঘি কাটা'; 'সাঁতার দিয়ে সাগর পার' ইত্যাদি। |
নরের মন নারায়ণ জানেন | সবই ঈশ্বর জানেন; কেবল অন্তর্যামী ঈশ্বরই মানুষের মনোগত ভাব বুঝিতে পারেন। |
নলিনীদলগতজলমতিতরলম ভবজ্জীবনমতিশয়চপলম | পদ্মপাতার জল যেমন চঞ্চল ও ক্ষণস্থায়ী জীবের জীবনও তেমনি চঞ্চল ও ক্ষণস্থায়ী। |
নসদিদং জগতিত্যবধারয় | জগৎটা নশ্বর বলে জেনো। |
ন সন্তোষাৎ পরম সুখম্ | সন্তোষের মত পরম সুখ নেই। |
ন সাহসমনারুহ্য নরো ভদ্রাণি পশ্যতি | বিনাসাহসে কোন মানুষ বিরাট কিছু করতে পারে না। |
ন স্বয়ং দৈবমাদত্তে পুরুষার্থমপেক্ষতে | পুরুষের চেষ্টা বিনা সিদ্ধি নাই। |
ন সুখং দুঃখৈর্বিনা লভিতে | দুঃখবিনা সুখ হয় না; কিছু পেতে গেলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়। |
ন স্বাতন্ত্র্যাৎ পরম সুখম | স্বাধীনতা অপেক্ষা বড় সুখ নেই। |
ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি | স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বাধীন হওয়া সম্ভব নয়। |
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে | (আত্মার) জন্ম নেই, মৃত্যুও নেই' (আত্মা) নিত্য, শাশ্বত; শরীরকে হত্যা করলেও, আত্মাকে হত্যা করা যায় না। |
ন হিংসা করতি সাধু | সাধুব্যক্তি কখনো হিংসায় প্রবৃত্ত হয় না। |
ন হি অবিদ্বান জানাতি বিদ্যোর্জনপরিশ্রমম | মূর্খ জানে না বিদ্যোর্জনের পরিশ্রম কিরূপ। |
ন হি দুস্করমন্তীহ কিঞ্চিৎ অধ্যবসায়িনাম | অধ্যবসায়ীব্যক্তির কাছে কোন কাজই দুস্কর নয়। |
ন হি তাপয়িতুং শক্যং সাগরম্ভিস্তৃণোন্ধয় | তৃণ ইত্যাদি পুড়িয়ে সাগরের জলকে উত্তপ্ত করা যায় না অর্থাৎ ধীরস্থির জ্ঞানব্যক্তিকে সহজে বিচলিত করা যায় না। |
ন হি বন্ধ্যা বিজানিয়াৎ গুর্বী প্রসববেদনা | প্রসববেদনা কি নিদারুণ তা বন্ধ্যানারীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। |
ন হি সর্ববিদ্ঃ সর্বে | সকলেই সবকিছু জানেন না। |
ন হি সাধবো সর্বত্র | সজ্জনপুরুষ সর্বত্র দেখা পাওয়া যায় না; তুলনীয়- 'ন মাণিক্যং শৈলে শৈলে'। |
ন হি সুখং দুঃখখৈর্বিনা লভ্যতে | সুঃখব্যতীত সুখলাভ হয় না; কষ্ট সহ্য না করলে কেষ্ট পাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'কণ্টকবিনা কমল হয় না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'সাধনা না করলে সিদ্ধি নাই'; 'সাধিকেই সিদ্ধি' ইত্যাদি। |
ন হি সুপ্তস্য সিংহস্য মুখে প্রবিশন্তি মৃগাঃ | ঘুমন্তসিংহের মুখে হরিণ প্রবেশ করে না; পরিশ্রমবিনা প্রাপ্তি নেই। |
না আঁচালে বিশ্বাস নেই | কার্যসিদ্ধিসম্পর্কে সন্দিহান; মূলপ্রবাদ- ঠগের বাড়ী নেমন্তন্ন না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; তুলনীয়- 'ঠোট ও কাপের মধ্যে বিস্তর ফারাক'। |
নাই কাজ তো খই ভাজ | অকাজে অলস সময় কাটানো। |
নাই ঘরে খাই বড়/বেশী১ | অভাবপীড়িত; অভাবের সংসারে পরিজনদের পেটুকপনা বেশি হয়; পাঠান্তর- 'নাইয়ের ঘরে খাই খাই'। |
নাই ঘরে খাই বড়/বেশী২ | ঘরে খাবার না থাকলে ক্ষুধার উদ্রেক বেশি হয়। |
নাই (লাই) দিলে কুকুর কাঁধে/ঘাড়ে চড়ে | প্রশ্রয় পেলে নগণ্য লোকও মাথায় ওঠে। |
নাই ধন তো যাও বন | গরিবকে কেউ পোছে না; সমাজে তার সম্মান নেই। |
নাই বললে সাপেরও বিষ থাকে না | গ্রাম্যবাংলায় 'নাই' শব্দটি অমঙ্গলসূচক বিবেচিত হয়; সাধারণতঃ লোকে সংস্কারবশতঃ 'নেই' না বলে 'বাড়ন্ত' বলে, যেমন- চাল না থকলে বলে 'ঘরে চাল বাড়ন্ত'। |
নাই ভাত নুন দিয়ে খাবো | অবাস্তব প্রত্যাশা; অসম্ভব কাজসম্পর্কে প্রবাদটি উক্ত হয়; সমতুল্য- 'এঁড়ে গরু টেনে দো'; 'ঘরে চাল নেই ভাতে ভাত রাঁধো'। |
নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো | একেবারে না পাওয়ার চেয়ে সামান্য কিছু পাওয়াও ভালো; কিঞ্চিত পাওয়া মন্দের ভালো; বিরুদ্ধ উক্তি- 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো'। |
না উঠতেই এককাঁদি | কাজে হাত দিতে-না-দিতেই কিঞ্চিৎ ফললাভ; মূল প্রবাদ- 'গাছে না উঠতেই এককাঁদি' |
না কথার বালাই নাই | 'না' কথাটির মধ্যে কোন বিপদ নাই; 'জানি না' বললে সব সমস্যা মিটে গেল; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বোবার কোন শত্রু নাই'। |
নাক নেই তার নথ নাড়া | আদিখ্যেতা; এদিক নেই ওদিক আছে; পাঠান্তর- 'নাক নেই তার গোঁফের বাহার'। |
নাকফোঁড়া বলদ | নাকদোঁড়া বলদকে যে দিকে খুশি চালানো যায় লক্ষণায়- আজ্ঞাবাহক; একান্ত বশংবদব্যক্তি, যে পরের হুকুমে উঠে বসে; হুকুমবরদার। |
নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমানো | আরামে দিন কাটানো; উদ্বেগের কারণ থাকতেও পরম নিশ্চিন্তে দিন কাটানো; (বৈদ্যমতে নাকে সরষেতেল দিয়ে ঘুমালে গাঢ় ঘুম হয়।) |
না খেলে যাবে দিন, ধার করলে হবে ঋণ | কখনো ঋণ করা উচিৎ নয়। |
না গজাতে ঘুণ ধরে, না উঠতেই আছাড় | কোন কাজ শুরুতেই নষ্ট হলে প্রবাদটি প্রযুক্ত হয়। |
নাগপাশের বন্ধন | দুশ্ছেদ্য বন্ধন (উৎসকাহিনী- উৎসকাহিনী- নাগপাশ বরুণদেবের অস্ত্র; এও অস্ত্রের প্রয়োগে অসংখ্য সাপ উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে যা ছিন্ন করা একান্ত অসম্ভব; মেঘনাথ স্বর্গ জয় করে ইন্দ্রের কাছ কাছ থেকে অস্ত্রটি পেয়েছিলেন; যার জন্য মেঘনাথের আরেক নাম ইন্দ্রজিত; তিনি অস্ত্রটি রাম ও লক্ষ্মণের উপর প্রয়োগ করেছিলেন; রাম গরুড়অস্ত্র প্রয়োগ করে উভয়কে নাগপাশ থেকে মুক্ত করেন; এমন কঠিন বন্ধনে কেউ আবদ্ধ হলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।) |
নাচ না আওয়ে/জানে অঙ্গন টেড়া | 'নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা'-দ্রষ্টব্য |
নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা/ উঠানের দোষ | নিজের অপটুতা ও অজ্ঞতার জন্য অন্যের উপর দোষারোপ করা; সমতুল্য- 'অকেজো মিস্ত্রি যন্ত্রের দোষ দেয়'; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাচ না আওয়ে/জানে অঙ্গন টেড়া'। |
নাচতে নেমে ঘোমটা টানা | মন্দকাজ করতে এসে লজ্জায় ইতঃস্তত করা। |
নাচুন্তির লাজ নাই দেখুন্তির লাজ | যে কুৎসিত কাজ করছে, তার কোন লজ্জা নেই, যে দেখছে তারই মাথা লজ্জায় কাটা যায়; নির্লজ্জ বেহায়ার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি; সমতুল্য- 'হাগুন্তির লাজ নাই দেখুন্তির লাজ'। |
নাচেন ভাল পাক দেয় উল্টো/মন্দ১ | ঘুরিয়ে নিন্দা করা। |
নাচেন ভাল পাক দেয় উল্টো/মন্দ২ | সরল কথা বলতে বলতে হঠাৎ কুটিল কথা বলা। |
নাচেন ভাল পাক দেয় উল্টো/মন্দ৩ | মিষ্টি কথার মাঝে একটা মর্মভেদী কথা বলা। |
না জানার মধ্যে কোন লজ্জা নাই না জানতে চাওয়াটাই লজ্জার | অননিসন্ধিৎসু মন মৃতের সামিল। |
না (নৌকা) ডুবুস্নে, না ভাল মনে করিয়েছিস্ | না-সূচক বাক্যে ইচ্ছা জাগিয়ে দেওয়া; সমতুল্য- পাগলা সাঁকো নাড়াস্ না, না ভাল মনে করিয়েছিস্'। |
নাড়াবনে কীর্তন | অনাবশ্যক স্থানে কার্য। |
নাড়ীনক্ষত্র টেনে বার করা | কৌশলে সব গুহ্যতথ্য জেনে নেওয়া। |
নাতির নাতি স্বর্গের বাতি | অতি দীর্ঘজীবী না হলে কারো পক্ষে নাতির নাতিকে দেখা সম্ভব নয়; সেই অর্থে এই ব্যক্তি পূণ্যবান এবং স্বর্গসুখ ভোগের অধিকারী। |
নাতোয়ানের দুনো ব্যয় | অভাবী লোক প্রয়োজনকালে ব্যয়ে অপারগ; পরে একই কাজে দ্বিগুণ ব্যয় হয়ে যায়; তুলনীয়- 'নূন দিয়ে রাঁধিত ভালই হয় আলুনি রাঁধতে তিনগুণ যায়'। |
নাথবতী অনাথবৎ | স্বামী থেকেও নেই; স্বামীসোহাগ থেকে বঞ্চিত নারী। |
না থাকলেই সোনার মূল্য, থাকলে সোনার মূল্য নেই | সহজলভ্য বস্তুর কোন কদর নেই। |
না-দেওয়া কাঁঠালের শাওনে (শ্রাবণমাসে) পাক | না দেবার ছল-ছূতো, বাহানা; পাঠান্তর- 'না-দেওয়া চাল আজ-না-কাল'; 'না-দেওয়া জাল সরষেভরা'। |
না দেখে যায় হোঁচট খায় | অসর্তকতার দণ্ড; বিবেচনা করে কাজ না করলে প্রতি পদক্ষেপে বিপদ হতে পারে। |
না দেখে ছিলেম ভাল, দেখতে গিয়ে বিপদ হল | কিছু করতে গেলেই নানা ঝুটঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। |
নানামুনির নানামত | মানুষ যন্ত্র নয়; প্রতিটি মানুষের আলাদা ব্যক্তিসত্তা হয়; বিভিন্নলোকের বিভিন্ন মতামত থাকে; সমতুল্য- 'ভিন্ন রুচিহি লোকাঃ'। |
নান্যপন্থা বিদ্যতে অয়নায় | এছাড়া (নিস্তারের) আর অন্যকোন উপায় বা পথ নেই। |
না পড়েই পণ্ডিত১ | শিক্ষাদিক্ষা নেই, উপাধি পণ্ডিত বলে পণ্ডিত; পণ্ডিত উপাধিধারী মূর্খব্যক্তি। |
না পড়েই পণ্ডিত২ | কোন বিষয় না জেনেই তাতে পণ্ডিতিগিরি করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'পুঁটিমাছের ফরফরনি'। |
নাপিত দেখলে নখ বাড়ে | কাজের লোক দেখলেই কাজের কথা মনে পড়ে; দেখনবাই; সমতুল্য- 'ঘোড়া দেখলে খোঁড়া হয়'; 'পথে পেলাম কামার, দা গড়ে দে আমার'। |
নাপিতের আসি, ধোপার বাসি | নাপিত 'এখনই আসছি' বলে চলে যায়, অনেক্ষণ আর দেখা পাওয়া যায় না; ধোপা বাসি কাপড় নিয়ে যায় এবং আজকাল করে বহুদিন পরে ফেরত দেয়। |
নাপিতের ষোলচোঙা বুদ্ধি | মানুষের মধ্যে নাপিত ধূর্ত বলে প্রসিদ্ধ; সমতুল্য- 'নরানাং নাপিতো ধূর্তঃ'। |
না বিয়ায়ে কানাইয়ের মা১ | মা যশোধার প্রতি তির্যোক্তি; কোন নারী পরের সন্তানকে নিজের সন্তান বলে দাবী করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
না বিয়িয়ে কানাইয়ের মা২ | যা হবার নয় তা হলেই লোকে এই প্রবাদ ব্যবহার করে; সমতুল্য- 'অবিয়ন্তির ঠুনকোর ব্যথা'। |
না বিয়িয়ে কানাইয়ের মা৩ | ঝক্কি সামলানো; পরের ছেলে মানুষ করার কষ্টস্বীকার। |
না বুঝে ছিলেম ভাল, আধেক বুঝে পরাণ গেল | আধা-পণ্ডিতের অনেক জ্বালা; যেকোন বিষয়ে আধা-জ্ঞান থাকা থেকে না থাকা ভাল অথবা পুরো-জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়; সমতুল্য- 'অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী'। |
নাম নিয়েছো তো শয়তান হাজির১ | যার কথা ভাবছি বা আলোচনা করছি কাকতালীয়ভাবে সে এসে উপস্থিত। |
নাম নিয়েছো তো শয়তান হাজির২ | অনেকসময় এমন হয় যে, একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতে বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল। |
নাম বড়া দর্শন থোড়া | যত নামডাক আছে ততটা কাজের নয়। |
না মরতেই ভূত | আগাম কল্পনা; কারণবিনা কার্যের সম্ভাবনা দেখে অতি বিস্মিত; তুলনীয়- 'নিবেদনের আগে প্রসাদ'। |
নামে গোয়ালা আমানি/কাঁজি (পান্তাভাতের জল) ভক্ষণ | নামমাত্র সার; কাজের কোন খোঁজ নেই; তাই আমানি খেয়ে দিন কাটে; আপনকাজে অষ্টরম্ভা; সমতুল্য- 'নামে ডাকে গগন ফাটে'। |
নামে ডাকে গগন ফাটে | নামডাক খুব কিন্ত কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা; পাঠান্তর- নামের চোটে গগন ফাটে'। |
নামে ডাকে গুরুমশাই লেজা মুড়োর জ্ঞান নাই | নামমাত্র সার; পেটে বিদ্যাবুদ্ধি কিছু নেই। |
নামে তালপুকুর ঘটি ডোবে না | নামমাত্র সার; বড়লোকের বংশ বটে, কিন্তু বর্তমানে ফুঁটোকড়ির সংস্থান নেই। |
নামে ধর্মদাস ধর্মের নাম/বালাই নেই | নামমাত্র সার; আচারের ধার ধারে না; নাস্তিকের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
নামের চোটে গগন ফাটে হাড়ি পাতিল কুত্তায় চাটে | চরম অপদার্থ; যতটা নাম ততটা কাজের নয়; সমতুল্য মুখের চোটে গগন ফাটে। |
নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ | দুর্বলব্যক্তি ধর্ম বা ব্রহ্মলাভে সমর্থ নয়। |
না যাইলে রাবণ বধে, যাইলে রাম | উভয়সঙ্কট, এগুলে রামে মারবে আবার পিছুলে রাবণে মারবে; মারীচ রামের হাতেই মরতে চেয়েছিল; পাঠান্তর- 'না যাইলে রাজা বধে, যাইলে ভুজঙ্গ', রাবণের হাতে যথা মারীচ কুরঙ্গ (মৃগ)'। |
না'র উপর গাড়ি, গাড়ির উপর না১ | নদী পার হতে গাড়ি নৌকা চড়ে; আবার স্থলপথে চলতে নৌকা গাড়ী চড়ে; যেক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরস্পরের সাহায্য লাগে সেক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাও পর গাড়ী, গাড়ী পর নাও'। |
না'র উপর গাড়ি, গাড়ির উপর না২ | আজ একজন প্রবল হয়ে অন্যের উপর অত্যাচার করছে; কাল আবার অত্যাচারিত ব্যক্তি অতাচারীর উপর অত্যাচার করতে পারে; সমতুল্য- 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'। |
নারদ নারদ | ঝগড়া চলতে থাকুক- এই কামনায় নারদের নাম উল্লেখ; (উৎসকাহিনী-দেবর্ষি নারদ কোন্দলের দেবতা বলে প্রসিদ্ধ; ঢেঁকি তার বাহন; নারদের কূটকৌশলে বিভ্রান্ত হয় শ্রীকৃষ্ণ নিজের সন্তান শাম্বকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন; তাথেকেই দুইপক্ষে ঝগড়া বাঁধাতে হলে 'নারদ নারদ' বলা হয়; কোন্দলের পরামর্শদাতা বা প্রবর্তক নারদ নানা ভূষণে ভূষিত হন, যেমন- নারদঠাকুর, নারদের ঢেঁকি, ঢেঁকি অবতার, ঢেঁকিবাহ্ন দেবতা ইত্যাদি। |
না-রাম না-গঙ্গা১ | কোন কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকা; কোন কিছুতেই নাই। |
না-রাম-না-গঙ্গা২ | ধর্মের ধার না ধারা; ধর্মীয় আচারাচরণের সাথে সম্পর্কহীন। |
নারী কুরূপা হলে পতিব্রতা হয় | নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোর চুরি করতে অক্ষম হলে সাধু হয়'; 'মানুষ রোগে পড়লে ভক্তিমান হয়্'; 'বেশ্যা বৃদ্ধা হলে তপস্বিনী হয়। |
নারুজস্য কিমৌষধেঃ? | যার রোগ নেই তার ঔষধের কি প্রয়োজন? |
নালা কেটে লোনা আনা | বিপদের কোন সম্ভাবনা ছিল না; ইচ্ছা করে নিজের বিপদ ডেকে না; তুলনীয়, 'খাল কেটে কুমির আনা'। |
নাস্তি গ্রাম্যঃ কুত সীমাঃ | নেই গ্রামের সীমানা আবার কী? সম্পর্কীত বিষয়ের একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটির উপস্থিতি অর্থহীন। |
নাস্তি জ্ঞানাং কুত মুক্তি | জ্ঞান নয়া থাকলে তার মুক্তি কোথায়? |
নাস্তি ত্যাগসমং সুখম | জমিজমা বাড়ীঘর টাকাপয়সা ইত্যাদি বস্তুর উপর অনুরাগ টান কমবে ততই সুখ বাড়বে। |
নাস্তি বিদ্যা কুত যশঃ | বিদ্যা না থাকলে তার যশ কোথায়? |
নাস্তি বিদ্যাসমং চক্ষু | বিদ্যা আমাদের চোখ খুলে সব দেখিয়ে দেয়; বিদ্যার মত চোখ নেই। |
নাস্তি ভক্তি কুত ধীঃ | ভক্তি না থাকলে তার জ্ঞানই বা কোথায়? তুলনীয়- 'শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম'। |
নাস্তি রাগসমং দুঃখম | জমিজমা বাড়ীঘর টাকাপয়সা ইত্যাদি বস্তুর উপর অনুরাগ টান বাড়বে ততই দুঃখকষ্ট বাড়বে। |
নাস্তি সতসমং তপঃ | যতরকমের তপস্যা আছে তার মধ্যে সত্যপালন তপস্যা শ্রেষ্ঠ। |
নাস্তি সত্যাৎ পরোধর্ম, ন পাপমনৃতাৎ পরম' | সত্যের চেয়ে বড় ধর্ম আর হয় না; মিথ্যার চেয়ে বড়পাপ আর হয় না। |
নাস্তিকের মুখে ধর্মকথা | যে ঈশ্বর মানে না, সে ঈশ্বরের কথা বলে; অবিশ্বাস্য ঘটনা; সন্দেহজনক বিষয়; কোন ধান্ধাবাজী থাকতে পারে। |
না হওয়া থেকে দেরীতে হওয়া ভাল | তবুতো কিছু হবে। |
নিকম্মা/নিকামায়ে দরজী ছেলের মুখ সেলাই করে | কাজের লোক কাজ না পেলে ভাল বা মন্দ একটা-না-একটা কাজে জড়িয়ে পড়ে; পাঠান্তর- 'নিকম্মা/নিকর্মা লোক খুড়োর গঙ্গাযাত্রা করে'। |
নিকুলে চুকুলে ঘর কামালে জমালে বর | ঝাড়পোছ করলে ঘর পরিষ্কার দেখায়; সাজগোজ করলে ব্যক্তি সুন্দর দেখায়। |
নিক্ষিপ্ত তীর/শর ফেরে না | যা গেছে তা গেছে; বলা কথা ফেরানো যায় না। |
নিগোঁসাইয়ের খোদাই রক্ষক | ঈশ্বর নিরাশ্রয়ের আশ্রয়; সমতুল্য- 'নিরাখালের খোদা রাখাল'। |
নিজবাড়ী নিজভুবন | ব্যক্তি নিজবাড়ীতে অতি স্বচ্ছন্দ; নিজের ইচ্ছামত যা খুশি করতে পারে। |
নিজে খুব ভালো, তাই পরকে বলে কালো | পরনিন্দুকের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
নিজে বাঁচলে বাপের নাম | পরের কথা পরে ভাবা যাবে, আগে নিজের কথা ভাবো; আত্মকেন্দ্রিকতার পক্ষে ওকালতি; যে ব্যক্তি নিজস্বার্থ আগে দেখে। |
নিজে শুতে ঠাঁই পায় না শংকরাকে ডাকে | নিজের ঘর না সামলে পরের ঘর সামলাতে চায়; সমতুল্য- 'আপনি খেতে ভাত পায় না শঙ্করাকে ডাকে'। |
নিজের অজ্ঞতার পরিমাণ জানাটাই আসল জ্ঞান- কনফুসিয়াস | জ্ঞানী জানেন যে তিনি অতি অল্প জানেন বা অনেক কিছুই জানেন না। |
নিজের উন্নতিতে ব্যস্ত থাকো যাতে অন্যের সমালোচনা করার সময় না পাও | নিজের কাজে মন দাও; পরনিন্দা পরচর্চা করা খুবই নিন্দনীয় কাজ; তুলনীয়- 'নিজের চরকায় তেল দাও'। |
নিজের কথা পাঁচ/সাতকাহন | অপরকে উপেক্ষা করে আত্মপ্রচারে ব্যস্ত। |
নিজের কেচ্ছা নিজেই গাওয়া | নিজের ঘরের দোষ বাইরে বলে বেড়ানো। |
নিজের কোলে ঝোল টানা | নিজের স্বার্থ আগে দেখা। |
নিজের গোবরগাদায় মোরগ বীর | পরিচিত পরিবেশে সবাই নিজের সাহসের গর্ব করে; পাঠান্তর- নিজের পাড়ায় কুকুর শের'। |
নিজের ঘোল/দই কেউ মন্দ বলে না | নিজের দোষ কেউ দেখে না; নিজের জিনিস মন্দ হলেও কেউ মন্দ বলে না। |
নিজের চরকায় তেল দাও | নিজের কাজে মন দাও; পরের কথায় থেকো না; পরের চর্চা করো না; পরের কাজে নাক গলিও না; তুলনীয়- 'নিজের উন্নতিতে ব্যস্ত থাকো যাতে অন্যের সমালোচনা করার সময় না পাও'। |
নিজের চেয়ে পর ভাল; পরের চেয়ে জঙ্গল ভাল | তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে নেতিবাচক উপলব্ধি। |
নিজের ঢাক/ঢোল নিজে পেটায় | আত্মপ্রশংসায় ব্যস্ত। |
নিজের ধন পরকে দিয়ে দেবকী মরে মাথাকুটে | ভুলকাজ করে পরে অনুশোচনা করা। |
নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা | নিজের ক্ষতি হবে জেনেও কোন কাজ করে অপরের ক্ষতিসাধন করা; সমতুল্য- 'সতীনের বাটিতে গু গুলে খাওয়া'। |
নিজের পরমায়ু ও পরের বয়স কেউ কম দেখে না | যে ধারণা মনে পোষণ করে তৃপ্তি পায় মানুষ সেটাই করে; পাঠান্তর- 'নিজের বুদ্ধি ও পরের ধন কেউ কম দেখে না'। |
নিজের পাঁঠা লেজে কাটি | নিজের ইচ্ছাই সব; নিজের ইচ্ছায় যা খুশি করা যায়; নিজের জিনিস যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়। |
নিজের পাছায় ন মন গু, আমারে বলে তোর খান ধু | নিজের ত্রুটিরদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই অথচ একইত্রুটি থাকার জন্য পরকে তিরষ্কার করে; সমতুল্য- 'চালুনি করে ছুঁচের বিচার', 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছে কেন ছ্যাঁদা'। |
নিজের পায়ে কুড়াল মারা | অবিবেচকের মত নিজের ক্ষতি নিজেই করা। |
নিজের বুদ্ধিতে ছিল ভাল, পরের বুদ্ধিতে পাগল হল | নিজের ওপর আস্থা রাখারপক্ষে ওকালতি; পাঠান্তর- 'নিজের বুদ্ধিতে তর, পরের বুদ্ধিতে মর'; 'নিজের বুদ্ধিতে ফকির হই, পরের বুদ্ধিতে বাদশা নই'। |
নিজের বেলায় আঁটিসাটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি/ চিমটি কাটি | নিজেরবেলায় সবকিছু, পরেরবেলায় কিছু না; নিজে আঁটি বেঁধে নেয়, পরকে দেওয়ার সময় এক চিমটিপরমাণ দেয়; নিজের গণ্ডা বুঝে নিতে অতি যত্ন নেয় পরের বেলায় হেলাফেলা। |
নিজের ভাই/বোন ভাত পায় না শালা/শালীর তরে মণ্ডা | কাছের লোক কাছের নয়; সমতুল্য- 'নিজের লোক নিজের নয়'; 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই'। |
নিজের ভাল দিকগুলো জেনে লাভ নেই | তাতে আত্মম্ভরিতা বেড়ে যায়; পরন্তু নিজের ত্রুটিগুলি নজর এড়ায়। |
নিজের ভালো পাগলেও বোঝে | নিজের ভালো সবাই বোঝে; সবাই আত্মসচেতন। |
নিজের মান নিজে রাখো, কাটা কান চুলদে ঢাকো | আত্মসম্মান বজায় রেখে চলার প্রতি ইঙ্গিত। |
নিজের লোক নিজের নয় | আপনজনেরা বেশি অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'আপন চেয়ে পর ভালো, পর চেয়ে জঙ্গল ভালো'; 'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি'; 'ভাইভাই ঠাঁইঠাঁই'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আপন কখনো পর হয় না'; 'বসূধৈব কুটুম্বম' ইত্যাদি। |
নিতে জানে দিতে জানে না | আত্মসর্বস্ব; সঙ্কীর্ণমনা; প্রতিদান দিতে পরাম্মুখ; পাঠান্তর- 'নিতে পারি, দিতে পারি নে'। |
নিত্যচাষার ঝি বেগুনগাছ দেখে বলে এ আবার কী | আত্মসম্মান বাড়াবার জন্য অজ্ঞতার ভান করা; (উৎসকাহিনী- নিত্য নামে একচাষীর মেয়ের ভাগ্যক্রমে বড়লোকের ঘরে বিয়ে হয়েছিল; একদিন বাড়ীর অন্যান্য স্ত্রীলোকদের সাথে বাগানে বেড়াতে বেরিয়েছিল; বাগানের একপাশে বেগুন খেত ছিল; যেন কোনদিন বেগুন দেখেনি এই ভান করতে সে বলে ওঠে, 'এগুলি কী?' তার এই কথা অসহ্য লাগায় এক ঝি এই প্রবাদবাক্যটি বলে।) |
নিদ নেই যোগীর আর নিদ নেই রোগীর | সাধনার জন্য যোগী ঘুমাবার সময় পায় না; অপরপক্ষে যন্ত্রণায় কাতর রোগী ঘুমাতে পারে না। |
নিদানকালে হরিনাম | মরণকালে ঈশ্বরের স্মরণ; সময়ের কাজ সময়ে না করে অসময়ে করাতে কোন ফললাভ হয় না; পণ্ডশ্রম। |
নিদানের বিধান নাই | পরমায়ু শেষ হলে কোন ওষুধ আর কাজ করে না। |
নিন্দা সৎলোকের কোন অনিষ্ট করতে পারে না। | সত্য কালিমালিপ্ত হয় না। |
নিবানো আগুন আর জ্বেলো না | পুরানো দুঃখের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দুখীর দুঃখ আর বাড়িয়ো না। |
নিবৃত্তরাগস্য গৃহং তপোবনম | আসক্তিহীন ব্যক্তির কাছে গৃহই তপোবন। |
নিবেদনমিদং এতৎ | নিবেদন এই যে |
নিবেদনের আগে প্রসাদ | দেবতাকে দ্রব্য নিবেদন না করলে প্রসাদ হয় না; সুতরাং ফললাভের আগেই ফলভোগের আগাম সুখকল্পনা কেউ করলে তার ক্ষেত্রে এই উক্তি প্রযোজ্য হয়; তুলনীয় 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছ না উঠতেই এককাঁদি'; 'রাবণের ছাদনাতলা'; 'রাম না হতে রামায়ণ' ইত্যাদি। |
নিম কখনো মিষ্টি হয় না | গাছে দুধ ঢাললেও তিম মিষ্টি হবে না লক্ষণায়- নির্গুণের চরিত্র বদলায় না, নির্গুণই থাকে; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'ন নিম্বো মধুরায়তে'। |
নিমতলা দিয়ে যাও নি, নিমফল কখনো খাও নি? | নিন্দার্থে- কোন কু-কর্মের কি ফল তুমি জানো না? জানা উচিৎ ছিল। |
নিম তিতা নিসিন্দে তিতা তিতা মাকালফল; তার চেয়ে তিতা কন্যে বোন সতীনের ঘর | আপনার লোকেরাই বেশি অনিষ্ট করে; যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি। |
নিম নিসিন্দে যেথা মানুষ মরে না সেথা | নিম নিসিন্দে গাছের দ্রব্যগুণ আছে; বাতাসও স্বাস্থ্যকর ও রোগনাশক; নিম নিসিন্দে গাছের উপস্থিতি অকালমৃত্যু রোধ করে। |
নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে | নিয়তিকে বাধা দেবার কেউ নেই; ভাগ্যকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; যা হবার তাই হবে; সমতুল্য- 'অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল'; 'ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন'। |
নিয়ম থাকলে নিয়মের ফাঁক/ব্যতিক্রম আছে | কোন নিয়মই নিশ্ছিদ্র নয়; একই নিয়ম সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা যায় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'লখিন্দরের বাসরঘরেও ছিদ্র থাকে'। |
নিয়ম বড় বালাই | নিয়মের নিগড় বড় যন্ত্রণাদায়ক; নিয়মকে শৃঙ্খলের সাথে তুলনা করা হয়; কেউ গলায় বকলস পড়তে চায় না। |
নিয়মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য নিয়ম | নিয়ম থেকে মানুষ বড়। |
নিরবতা হল প্রকৃত বন্ধু যে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না | নিরব থাকলে কখনো আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। |
নিরস্তপাদপদেশে এরণ্ডোহপি দ্রুমায়তে | যেদেশে গাছ নেই সেই দেশে ভেরেণ্ডাও গাছের স্বীকৃতি পায়; যেখানে গুণীব্যক্তি নাই সেখানে নির্গুণব্যক্তিও গুণবান বলে পূজিত হয়; অজ্ঞানের মাঝে অল্পজ্ঞানীরাও সমাদর পায়; সমতুল্য-'আদাড়বনে শিয়াল বাঘ'; 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'বাঁশবনে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল' ইত্যাদি। |
নিরাখালের খোদা রাখাল | অসহায়কে ঈশ্বর রক্ষা করেন; অসহায়ের সহায় ঈশ্বর; সমতুল্য- 'নিগোঁসাইয়ের খোদাই রক্ষক'। |
নিরানব্বয়ের ধাক্কা | সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি; অসঞ্চয়ীকে একবার সঞ্চয়ের নেশা পেয়ে বসলে সে আর ছাড়তে চায় না; (উৎসকাহিনী- এক ব্যবসায়ী তার এক পড়শীকে অল্পখেটে ‘যত্র আয় তত্র ব্যয়’ নীতি অনুসুরুণ ক’রে সুখেশান্তিতে থাক’তে দেখে তার অলক্ষ্যে একটা নিরানব্বই টাকার থলি তার বাসায় রেখে আসে; পড়শী সেই টাকা ফিরত দিতে গেলে ব্যবসায়ী তার 'নয় বলে' তাকে ফিরিয়ে দেয়; পড়শী ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দ-আনার মত’ নিরানব্বই টাকাকে একশটাকা ও একশ টাকাকে হাজারটাকা বানাবার লোভে বেশি খাট’তে থাকে এবং কম ব্যয় কর’তে থাকে; শেষপর্যন্ত লোভ তার স্বভাব পালটে দেয়; সারাজীবনে সে লোভ আর ছাড়তে পারে নি; এইরকম অবস্থায় কেউ পড়লে বলা হয় লোকটা ‘নিরানব্বইয়ের ধাক্কায়’ পড়েছে।) |
নির্গুণ পুরুষের তিনগুণ ঝাল | পচা আদার মত নির্গুণপুরুষের ঝাঁঝ বেশি হয়; গুণহীন পু;রুষের ক্রোধের মাত্রা অন্যের তুলনায় বহুগুণ বেশি হয়; তার কথাবার্তা বড় কর্কশ হয়। সমতুল্য- নির্বিষ সাপের কুলোপানা চক্কর'। |
নির্গচ্ছতি/নির্জগাম যদা গজভুক্তকপিত্থবৎ | গজপোকায় কাটলেে কয়েৎবেল যেমন সবার অলক্ষে সারশূন্ হয় তেমনই লক্ষ্মী সবার অলক্ষ্যে চলে যান; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আগচ্ছতি/আজগাম যদা লক্ষ্মীর্নারিকেলফলাম্বুবৎ'। |
নির্জনতা ঈশ্বরে পরিপূর্ণ | নির্জনতায় মানুষ ঈশ্বরের সান্নিধ্য খুঁজে পায়। |
নির্জীব ভক্ষকো গৃধঃ সজীবভক্ষকো বকঃ | রাম বলেছিলেন বকঃ পরমধার্মিক; রামের বিরুদ্ধাচরণ করে প্রবাদবাক্যটিতে লক্ষণ বলছিলেেন বক বড়নিষ্ঠুর, কারণ শকুন যেখানে শবদেহ ভক্ষণ করে, বক সেখানে সজীবপ্রাণীকে গলাধঃকরণ করে; সুতরাং বকঃ পরমদারুণঃ। |
নির্ধনস্য কুতঃ সুখম? | নির্ধনের সুখ কোথায়? কড়িহীনেরা সুখী হয় না। |
নির্ধনের ধন, অথর্বের যৌবন হলোে দিনে দেখে তারা | হঠাৎ বড়লোক এবং হঠাৎ যৌবন ফিরে পাওয়া ব্যক্তি প্রচণ্ড অহঙ্কারী হয়ে সকলকে তুচ্ছজ্ঞান করে এবং ধরাকে সরাজ্ঞান করে; তুলনীয় এক পয়সার তেঁতুলবিচি পেছন করে খিঁচিখিঁচি'। |
নির্বাণদীপে কিমু তৈলদানম | নির্বাপিত দীপে তেল দিয়ে কিছুই হবে না; গঙ্গাযাত্রী ফেরে না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চৌরে গতে কিমু সাবধানম'। |
নির্বিষ সাপের কুলোপানা চক্কর | গুণহীনপুরুষের শুধু মুখেই বড়াই; সমতুল্য- 'নির্গুণ পুরুষের তিনগুণ ঝাল'। |
নির্বুদ্ধি যদি উচ্চভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে | অজ্ঞানের কথায় জ্ঞানীব্যক্তি গুরুত্ব দেয় না। |
নিশাশেষোন্মেষোন্মুখকমলকোরকপমোত্তেজিতহৃদয়সূর্য-বঙ্কিমচন্দ্র | রাত্রিশেষে ফোটার জন্য উন্মুখ উত্তেজিত পদ্মকুঁড়ির মত পুরুষ হৃদয়; বহুবর্ণের গঠিত একটি দীর্ঘশব্দের উদাহরণ। |
নিশির ডাক | প্রবাদ এই যে, রাত্রিকালে প্রেতযোনির ডাকে নিদ্রোত্থিত মানুষ এদের অনুসরণ করে মারা যায়; ধারণাটা নিছকই কল্পনা; বাস্তবে আধা জগন্ত এবং আধা ঘুমন্ত অবস্থায় ঘুমের ঘরে মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। |
নিশ্চিন্তপুর যাওয়া | মৃত্যু হওয়া; তূলনীয়- বিক্রমপুর পাঠানো |
নিশ্বাসে বিশ্বাস নেই | যেকোন সময় মৃত্যু হতে পারে; যম খরব দিয়ে আসে না; যম অবশ্য খবর দিয়েই আসে; যমের খবর দেওয়া পদ্ধতি হল- চামড়া কুঁচকে যাওয়া; দাঁত নড়ে যাওয়া; চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি; |
নিষিদ্ধ ফল খেতে মিষ্টি | নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের চিরন্তন আকর্ষণ থাকে। |
নিঃসারস্য পদার্থেস্য প্রায়েণাড়ম্বরো মহান | সারহীন বস্তুর আড়ম্বর প্রায়ই বেশি হয়। |
নিঃস্পৃহস্য তৃণং জগৎ | বাসনাকামনাহীন লোকের কাছ জগৎ তৃণবৎ তুচ্ছ। |
নীচব্যক্তি শত্রু হলে অনিষ্ট করে, মিত্র হলে লোকনিন্দা হয় | নীচ সংসর্গ সর্বদা পরিতজ্য। |
নীচ যদি উচ্চ ভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হাসে | অজ্ঞরা কিছু দোষ করে ফেলতে পারে; জ্ঞানীরা সেই দোষ ধরে না; তুলনীয়- 'অজ্ঞানে বাপান্ত করে, জ্ঞানবানে তাই কি ধরে'। |
নীচো বদতি ন কুরুতে, বদতি ন সাধু করোত্যেব | নীচব্যক্তি বলে অনেক, কিন্তু করে না; সাধুব্যক্তি মুখে বলে না, কিন্তু কাজে প্রদর্শন করে। |
নীতিহীন মানুষেরা কাঁটাহীন ঘড়ির মত | নীতিহীন মানুষেরা লক্ষ্যহীন হয়।। |
নীরবতা হিরণময় | কোন কোন পরিস্থিতিতে চুপ থাকাই শ্রেয়; সমতুল্য- 'বোবার শত্রু না'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'প্রতিবাদ হীরকসমান' |
নীরুজস্য কিমৌষধৈঃ | নীরোগব্যক্তির ঔষধের প্রয়োজন কি? |
নুড়িপাথর হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থাকলেও রসসিক্ত হয় না- নজরুল ইসলাম | নির্গুণ কোনদিন গুণী হয় নোয়; তুলনীয়- 'নিম কলহনো মিষ্টি হয় না'। |
নুতন নুতন ন'কড়া পুরাতন হলে ছ'কড়া | নতুন জিনিসের আদর বেশি; পুরাতন হলে আদর কমে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'নুতন যোগীর ভিক্ষা নাই'; 'পুরানো চাল ভাতে বাড়ে'; 'পুরানো বন্ধু ও পুরানো মদ সর্বোৎকৃষ্ট'; 'পুরানো বন্ধুর চেয়ে ভাল আয়না হয় না' ইত্যাদি। |
নুতন যোগীর ভিক্ষা নাই | কোন কাজের শুরুর দিকে তেমন ফল পাওয়া যায় না। |
নুন আনতে পান্তা ফুরায়১ | কাজের জোগাড় করতে করতেই কাজের প্রয়োজন শেষ; তুলনীয়- 'সাজ করতে দোল ফুরায়'। |
নুন আনতে পান্তা ফুরায়২ | দুখীর জীবনে অভাব মেটানোর চেষ্টাতেই সময় চলে যায়। |
নুন খাই যার গুণ গাই তার | উপকারীর উপকার করা; উপকারীর ঋণ স্বীকার করা; উপকারীর প্রতি উপকৃতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার। |
নুন খেয়ে নিমকহারামি | উপকার নিয়ে উপকারীর ঋণ অস্বীকার করা, যা মহাপাপ। |
নুন খেলে গুণ মানি | উপকার পেলে উপকারীর ঋণ স্বীকার করা উচিৎ; তুলনীয়- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'। |
নূন ছাড়া ঘি/ভাত মাটি | সবকিছুর পূর্ণতায় সহায় লাগে; প্রয়োজনে পরস্পরের সহযোগিতা লাগে। |
নূন দিয়ে রাঁধিত ভালই হয় আলুন (নূনছাড়া খাদ্য) রাঁধতে তিনগুণ যায় | অভাবীলোক প্রয়োজনকালে ব্যয়ে অপারগ; পরে একই কাজে দ্বিগুণ ব্যয় হয়; তুলনীয়- 'নাতোয়ানের দুনো ব্যয়'। |
নেই কাজ তো খই ভাজ | অবসরে অকাজ করা; একেবারে গুরুত্বহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপমা হিসেবেই প্রবাদটি চলে আসছে; সমতুল্য- 'জমির অভাবে উঠান চষা'। |
নেই নাক তার গোঁফের বাহার | বিসদৃশ বাড়াবাড়ি সাজ।; তুলনীয়- 'খাঁদা নাকে তিলক কাটা'; পাঠান্তর- 'খাঁদা নাকে গোঁফের বাহার'। |
নেই মাথা তার মাথাব্যথা | অকারণে পরের বিষয়ে নাক গলানো; অনধিকার চর্চা। |
নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভাল | শূন্য হাত ভালো নয়; একেবারেই কিছু না থাকার চেয়ে কিছু পরিমাণে থাকা ভালো; তুলনীয়- 'নেই রুটির চেয়ে অর্ধেক রুটি ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি-কিছু না-থাকাটাই সব থেকে ভাল'; 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল'; 'সহর থেকে জঙ্গল ভাল'। |
নেংটার গলায় মোতির মালা | ন্যাংটার গলায় মোতির মালা- দ্রষ্টব্য |
নেংটি ইঁদুর পাহাড় কাটে১ | অতি ক্ষুদ্রশক্তিও বিরাট কাজ কর'তে পারে। |
নেংটি ইঁদুর পাহাড় কাটে২ | অতি ক্ষুদ্র শক্তিও বিরাট ক্ষতি করতে পারে; তুলনীয়-'বিন্দুবিন্দু জলের ফোঁটা পাথর ফুটো করে'। |
নেকড়ার আগুন | ন্যাকড়ায় আগুন দ্রষ্টব্য |
নেচে কুঁদে নাওরে জাদু মনের সুখে কবে যেতে হবে শিঙে ফুঁকে | যত পার সুখভোগ ক'রে নাও, কারম এই সংসারে দুবার আসবে না; সমতুল্য- যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ', 'হেসে খেলে দুদিন বইতো নয় কে জানে কখন কার সন্ধ্যে হয়'। |
নেড়া বেলতলায় দু'বার যায় না | ন্যাড়া আর কখনো/কি বেলতলায় যায়?- দ্রষ্টব্য |
নেপোয় (নৃপতি বা বাটপাড়) মারে দই | ধূর্তলোকের ধান্ধাবাজী; একজনের পরিশ্রমের ফল অসৎ উপায়ে অন্য ভোগ করে। |
নেবু কচলালে তেতো হয় | ভালো জিনিসেরও পুনরাবৃত্তি বিরক্তি উদ্রেক করে; মিষ্টি কথা বারবার শুনতেও ভালো লাগে না। |
নেবার কুটুম অনেক আছে দেবার তরে কেউ নেই | স্বার্থান্বেষী মানুষ কেবল পেতে চায় দেবার কথা ভাবে নয়া; পাঠান্তর- 'নেবার কুটুম দেবার নয়'। |
নেয়ের এক নৌকা, না-নেয়ের/নিনেয়ের শতেক নৌকা | যারে নেই সে পরের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে কার্যোদ্ধার করে। |
নেশাতে বুক ফাটে, কুকুরে মুখ চাটে | নেশা না করতে পারলে নেশার জন্য বুক ফাটে; আবার নেশায় বুঁদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলে ক্কুরে এসে মুখ চাটে; নেশুড়ে গল্প। |
নেহ ঘটত নিত পর ঘর জায়ে | পরগৃহে নিত্য যাতায়াত থাকলে অর্থাৎ ঘনিষ্টতা বাড়লে আদর কমে যায়; তুলনীয়- 'পরিচিতি উপেক্ষার জন্ম দেয়'। |
ন্যাংটার গলায় মোতির মালা১ | অযোগ্যের হাতে মহার্ঘবস্তু; সমতুল্য- 'বানরের গলায় মুক্তার মালা'। |
ন্যাংটার গলায় মোতির মালা২ | যার যা সাজে না তাতেই তার সজ্জা। |
ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়১ | যার কিছু নেই, তার হারাবার কিছু নেই। |
ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়২ | নির্লজ্জের লোকনিন্দার ভয় নেই। |
ন্যাকা আদুরে/ঢঙী চালশে কানা, জল বলে খায় চিনির পানা | না-বোঝার ন্যাকামী; জেনেবুঝে লোককে বোকা বানাবার চেষ্টা; যদি কোন লোক জেনেশুনে উৎকৃষ্ট জিনিস নেয় এবং জিজ্ঞেস করলে বলে 'ভুল করে নিয়েছি', তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
ন্যাকড়ায় আগুন১ | যে আগুন ধিকিধিকি করে ভিতরে জ্বলে; যে আগুন সহজে নেবে না |
ন্যাকড়ায় আগুন২ | মনের ভিতরে ধিকিধিক করে জ্বলা চাপা থাকা রাগ যা সহজে পড়ে না। |
ন্যাকড়ায় আগুন৩ | ধীরে ধীরে চলা কাজ, যা শেষ হতে চায় না। |
ন্যাকা বোকা ঢলঢলে কাছা, এই তিনে প্রত্যয় করো না বাছা | যে জেনেবুঝে অজ্ঞতা প্রকাশ করে তাকে বিশ্বাস করা নেই; যে কিছু বোঝে না তাকে বিশ্বাস করা নেই; এবং যে সববিষয়ে আলগা ঢিলেঢালা তাকে বিশ্বাস করা নেই। |
ন্যাড়া আর কখনো/কি বেলতলায় যায়? | অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যে একবার ঠেকেছে সে দ্বিতীয়বার সেই কাজে এগোয় না; সমতুল্য-'একই ফাঁদে শিয়াল দুবার ধরা পড়ে না'; পাঠান্তর- ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়'; 'ন্যাড়া বেলতলা দু’বার যায় না'। |
ন্যাড়ামাথায় খোঁচার ভয় | যার ত্রুটি আছে সে তার ত্রুটিসম্পর্কে সচেতন থাকে। |
ন্যাড়া মাথায় খুশবু তেল | অনর্থক অর্থব্যয়; আদিখ্যেতা; বাড়াবাড়ি। |
ন্যাবা চোখ সব হলুদ দেখে | পক্ষপাতদুষ্ট লোকের কাছে সবই মন্দ। |
প
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
পকেট খালি তো মুখ কালি | অর্থের টানাটানিতে মন চিন্তায় পোড়ে। |
পকেট ভারি তো মন হালকা | অর্থ থাকলে কোন দুশ্চিন্তা হয় না; সব আকাঙ্খা মেটে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে। |
পঙ্কো হি নভসি ক্ষিপ্তঃ ক্ষেপ্তুঃ পততি মূর্ধানি | আকাশে পাঁক ছুঁড়লে সেটা যে ছোঁড়ে তার মাথায় এসে পড়ে। |
পঙ্গুও লঙঘায় গিরি | অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সব কঠিনকাজ সহজে সম্পন্ন হয়; তুলনীয়- 'পিঁপড়ে চলতে থাকলে শত যোজন এগুতে পারে'। |
পক্ষীর মধ্যে ওঁচা নাম কাদাখোঁচা | কাদাখোঁচা পাখীদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ভাবার্থে- সর্বদা নোংরা ঘেটে বেড়ানো লোক মন্দপ্রকৃতির হয় না। |
পচা আদা ঝালের গাদা | মন্দ লোকে লাফায় বেশিি; পাঠান্তর- পচা আদার ঝাল বেশি। |
পচা শামুকে পা কাটা১ | অতিসতর্ক থেকেও সামান্য ভুল করা; তুলনীয়- 'পানাপুকুরে ডুবে মরা'। |
পচা শামুকে পা কাটা২ | মন্দলোকদ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। |
পছন্দের বোঝা অনুভূত হয় না | স্বেচ্ছাকৃত কাজে আনন্দ আছেে কষ্ট নেই। |
পঞ্চভির্মিলিতৈ কিং যজ্জগতী হ ন সাধ্যতে | পাঁচজন মিলে করলে জগতে কোন কার্য না সিদ্ধ হয়? সম্পর্কীত প্রবাদ- 'দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ'; 'দশের লাঠি একের বোঝা'। |
পটল তোলা | ছ থেকে সব পটল একবারে তুলে নিলে গাছটির মৃত্যু হয় লক্ষণায়- মৃত্যমুখে পতিত হওয়া; সেইজন্ গাছ থেকে একটি দুটি করে পটল তুলতে হয়)। |
পট্টবস্ত্রে গুঞ্জফল মূল্য নাহি হয়, ছিন্নবস্ত্রে মোতির মূল্য নাহি হয় ক্ষয়১ | কুঁচফল দামীকাপড়ে থাকলেও সেটা দামী হয় না; মোতি ছেঁড়াকাপড়ে থাকলেও সেটার মূল্য কমে না। |
পট্টবস্ত্রে গুঞ্জফল মূল্য নাহি হয়, ছিন্নবস্ত্রে মোতির মূল্য নাহি হয় ক্ষয়২ | গুণহীনব্যক্তি দামীপোষাক পরে থাকলেও সম্মান পায় না; গুণীব্যক্তি সাধারণপোষাক পরে থাকলেও সমাদর পায়। |
পড়তা যখন হয়, ধুলিমুঠো করলে সোনা্মুঠো হয় | কপাল ভাল হলে অলাভজনক ব্যবসা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। |
পড়লে কথা বুঝতে নারে সেই বা কেমন পড়শী, ছিপ ফেললে মাছ খায় না সেই বা কেমন বঁড়শী | ঘনিষ্টপড়শীরা পরস্পরের মনোভাব জানতে পারে; বঁড়শী ভালো হলে মাছ অবশ্যই গাঁথবে। |
পড়লে কথা বুঝতে নারে সেই বা কেমন মেয়ে, হাল নাই কাছি নাই সেই বা কেমন নেয়ে | সাধারণতঃ মেয়েরা একটু চালাক-চতুর হয়; ইঙ্গিত-ইসারা সহজে বুঝতে পারে; সেক্ষেত্রে কোন মেয়ে যদি বুঝতে না-পারে তবে ধরতে হবে মেয়েটি অতি নির্বোধ; ভাল মাঝির কাছে ভাল হাল, কাছি ইত্যাদি থাকে। |
পড়লো কথা সভার/হাটের মাঝে, যার কথা তার গায়ে/বুকে বাজে১ | নাম না করে সমালোচনা করলেও যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, সে ঠিক বুঝে যায়। |
পড়লো কথা সভার/হাটের মাঝে, যার কথা তার গায়ে/বুকে বাজে২ | দোষ নিয়ে আলোচনাকালে কেউ যদি অসন্তোষ প্রকাশ করে বা প্রতিবাদ করে তবে ধরে নেওয়া যায় যে সেই আসলে দোষী। |
পড়লো ফাগুন তো উঠল আগুন১ | ফাগুনমাস এলেই গরম পড়তে শুরু করে। |
পড়লো ফাগুন তো উঠল আগুন২ | বসন্তকালে বিরহী-বিরোহিণীদের মন তাপিত হয়। |
পড়শী না বঁড়শি? | বাঁকাবঁড়শি মত কুটিলপড়শীও যন্ত্রণাদায়ক হয়; সাধারণতঃ প্রতিবেশীরা পরস্পরের ঘনিষ্ট হয় না, বরং বিদ্বেষপূর্ণ হয়। |
পড়শীর মুখ না আরশির মুখ? | পূর্বোক্তির বিরুদ্ধ মতে- কাছের মানুষ মনের মানুষ হয়; পরস্পর সমমনোভাবাপন্ন হয়; পড়শী যেমন ব্যবহার পাবে তেমনি ব্যবহার করবে। |
পড়িলে ভেড়ার শৃঙ্গে হীরার ধারও ভাঙে১ | একমাত্র ভেড়ার শিংয় আঘাতে শক্তহীরা ভাঙে লক্ষণায়- শক্তপাল্লায় পড়লে সেয়ানাও জব্দ হয়। |
পড়িলে ভেড়ার শৃঙ্গে হীরার ধারও ভাঙে২ | ভেড়ার কাছে যেমন হীরার কোন দাম নেই তেমনি নির্গুণের কছে গুণের কোন আদর নেই। |
পড়ে গিয়ে পদ্মনাভ | ইচ্ছা করে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম নয়; আকস্মিকভাবে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে; তাই প্রণাম স্বীকার; দায়ে পড়ে কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করে ফেলা; সমতুল্য- ' উচোট খেয়ে প্রণাম'; 'হুঁচোট/হোঁচট খেয়ে প্রণাম'। |
পড়েছি মোগলের/যবনের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে | চাপে/বিপদে পড়ে পরের মর্জিতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করা। |
পড়ে পাওয়া চোদ্দ-আনা | অযাচিত অর্থপ্রাপ্তি; অনায়াসলব্ধ অর্থ; বিনাপরিশ্রমে প্রাপ্ত অর্থ। |
পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার ষোল আনাই লাভ | অনায়াসলব্ধ অর্থের সম্পূর্ণটাই লাভ; পাঠান্তর- 'পড়ে পাওয়া টাকার ষোল আনাই লাভ'। |
পড়ে পাশা তো জেতে চাষা | কপাল ফিরলে হতভাগ্যও সৌভাগ্যবান হতে পারে বা নির্ধনও ধনী হতে পারে। |
পণেক পেলে ক্ষণেক গায়, কাহনেক পেলে দিনভর গায় | অল্প উপকার পেলে অল্পদিন মনে রাখে; বেশি উপকার পেলে দীর্ঘদিন মনে রাখে; এমন বিচিত্রলোকও আছে। |
পণ্ডিত শিখে দেখে, মূর্খ শিখে ঠেকে | পণ্ডিত অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়; নির্বোধ আক্কেলসেলামী থেকে শিক্ষা নেয়। |
পণ্ডিতঃ ধিয়েন পশ্যতি | পণ্ডিত বুদ্ধিদ্বারা দেখতে পান; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'রাজা কর্ণেন পশ্যতি'; 'পশু গন্ধেন পশ্যতি'; 'ভূতে পশ্যতি বর্বরা'; পাঠান্তর- ধিয়া পশ্যতি পণ্ডিতঃ'। |
পণ্ডিতেষু গুণাঃ সর্বে মূর্খে দোষা হি কেবলম্ | পণ্ডিত সব গুণের এবং মূর্খ সব দোষের আকর বা আধার। |
পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য১ | খরচ কমাবার জন্য তীর্থক্ষেত্রে পত্নী নিয়ে না নিয়ে যাওয়ার বাহানা, তির্যোক্তি। |
পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য২ | তীর্থযাত্রায় স্ত্রীলোক সঙ্গে থাকলে নানা ঝুটঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়; সেই কারণেও এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পথি নারী বিবর্জিতা'। |
পথ চলবে জেনে, কড়ি নেবে গুণে | ভেবেচিন্তে কাজ করার পরামর্শ; তুলনীয় 'চলত্যেকেন পাদেন তিষ্ঠত্যেকেন বুদ্ধিমান'। |
পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি; মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী- রবীন্দ্রনাথ | আত্মম্ভরিতায় কেউ 'আমি'র খোলস ছাড়তে পারে না। |
পথি নারী বিবর্জিতা১ | বাইরে অপরিচিতা নারীর সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ। |
পথি নারী বিবর্জিতা২ | সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ঝঞ্ঝাট এড়াতে চলার পথে আপন নারীকেও বাদ দিয়ে চলার পরামর্শ। |
পথে পেলাম কামার, দা গড়ে দে আমার | দেখনবাই; কাজের লোক নজরে পড়লেই কাজের কথা মনে পড়ে। |
পথে হাগে আবার চোখ রাঙায় | দোষ করে আবার বললে রাগ করে। |
পথের গু রথে যায় | পথে বিষ্ঠা থাকলে যাওয়ার সময় পথের বিষ্ঠা রথের চাকার সাথে জড়িয়ে যায় লক্ষণায় পরিষ্কার প্থে চলার পরামর্শ। |
পথের বাঁকে পথ শেষ হয় না, যদি না তুমি ফিরতে অক্ষম হও | জীবনে প্রতিপদে সমস্যা আসে; একটা সমস্যাতে জীবন শেষ হয় না; চলার কোন শেষ নেই; সমস্যাকে জয় করে এগিয়ে চলার প্রতি ইঙ্গিত। |
পবিত্র মন পাপমুক্ত থাকে | পবিত্র মনে পাপ প্রবেশ করে না; সম্পর্কীত প্রবাদ- পরিষ্কার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয় না'। |
পয়ঃ সিঞ্চতে নিত্যং ন নিম্বু মধুরায়তে | নিত্য দুধ ঢাললেও বা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও নিম কখনো মিষ্টি হয় না। |
পয়ঃনালি দিয়ে গঙ্গাজল বয় না | মন্দলোক ভাল কাজ করে না; মন্দলোকের মুখ দিতে কোন ভাল কথা বার হয় না। |
পয়ঃপানং ভুজঙ্গানাং কেবলং বিষবর্ধনং | সাপকে দুধ খাওয়ালে শুধু বিষ বৃদ্ধি পায়। |
পয়সা জমে টাকা হয় | সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি থাকা উচিৎ; তিল কুড়িয়ে তাল হয়; রাই কুড়িয়ে বেল হয়। |
পয়সা থাকলে বেয়াই-এর বাপের শ্রাদ্ধ হয়; না থাকলে নিজের বাপের শ্রাদ্ধ হয় না | অর্থ থাকলে বাজে খরচ করা যায়, অর্থাভাবে দরকারী খরচ হয় না। |
পয়সা দিয়ে খাই দই, কি করবে মোর গয়লা সই | ধারে খেলে ভয় বা সঙ্কোচ থাকে; যারা নগদ খায় তারা কারো পরোয়া করে না। |
পয়সা দিলে বাঘের দুধ মেলে | পয়সা থাকলে যেকোন দুস্প্রাপ্য জিনিস কেনা যায়। |
পয়সা পেলে কাঠের ঘোড়া (ধর্মরাজ) নড়েচড়ে/হাঁ করে | ভগবানও লোভের বশ; ঘুষের দাপট আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। |
পয়সায় পয়সা আসে | যার অর্থ আছে তার অর্থাগম হয়; সমতুল্য- 'জলে জল বাঁধে'। |
পয়সা লেচিতো/সিঞ্চতি নিত্যং ন নিম্বো মধুরায়তে | প্রতিদিন নিমগাছের গোড়ায় দুধ ঢালা যায় তাহলেও নিমগাছ মিষ্টি হয় না। |
পয়োগতে কিং খলু সেতুবন্ধনম | জল বেরিয়ে গেলে আর বাঁধ বাঁধার প্রয়োজন কি? সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। |
পর আর পরমেশ্বর | যার স্বজন কেউ নেই তার সহায় হল পর আর পরমেশ্বর। |
পর কখনও আপন হয় না | পরকে যতই যত্ন করা হোক-না-কেন সে সবসময় পরই থাকে, আপন হয় না; আত্ম ছাড়া কেউ আপন নয়। |
পর কি বোঝে পরের ব্যথা | যার যন্ত্রণা সেই বোঝে যন্ত্রণার জ্বালা কি; অন্যের পক্ষে সেটা অনুভব করা সম্ভব নয়। |
পরতরফে খায় ঘি, তার আবার খরচ কি? | ঘরজামাইয়ের খরচ নেই। |
পরদার পাপ বলে বাঁদী রাখে নাই; দুঃখভোগ হেতু হিন্দু করেছে গোঁসাই | পরনারী ভোগেরক্ষেত্রে সবজাতই বজ্জাত; সবধর্ম এক্সুরে বাঁধা; সবাই এক গোয়ালের গরু। |
পরদারাং পরদ্রব্যং পরীবাদং পরস্য চ পরিহাসং গুরোঃ স্থানে চাপল্যঞ্চ বিবর্জয়েৎ | পরস্ত্রী, পরদ্রব্য, পরনিন্দা, পরকে উপহাস এবং গুরুজনের সামনে চপলতা পরিত্যাজ্য। |
পরনিন্দা অধোগতি | পরনিন্দা করা মহাপাপ। |
পরবুদ্ধির্বিনাশায় | পরের বুদ্ধিতে চললে বিনাশ নিশ্চিত। |
পরপ্রত্যাশী দুপোর (দুইপ্রহর) উপোসী | পরে কখন খেতে দেবে সেই প্রত্যাশায় হাপিত্যেশ ক'রে বসে থাকলে বহুক্ষণ উপোসী হয়ে থাকতে হয়; পাঠান্তর-'পরপ্রত্যাশীর অন্ন জোটে না'। |
পরপ্রত্যাশী নর গাছে উঠে মর | যে সব বিষয়েই পরের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকে তার কোন কাজই সিদ্ধ হয় না; তার পক্ষে মরাই ভালো। |
পরবুদ্ধিঃ বিনাশায় | পরের বুদ্ধি বিনাশের কারণ; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আত্মবুদ্ধি শুভঙ্করী'; 'স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী'। |
পরভাতি তবু সয় পরঘরী কিছুতে নয় | গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য পরের উপর নির্ভর করা যায়, কিন্তু পরের ঘরে কিছুতেই থাকা নয়য় অর্থাৎ পরপুরুষের উপর নির্ভর করা উচিত নয়; সীতার মত পতিভক্ত স্ত্রীও রামের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন; পাঠান্তর- 'পরভাতি হলেও পরভাতারি হতে নাই'। |
পর রেখে ঘর নষ্ট | পরকে ঘরে আশ্রয় দিলে তার কুমন্ত্রণা ঘরের শান্তি নষ্ট হয়। |
পরশুরামের কুঠার | সর্বসংহারক অস্ত্র। |
পরশ্রীকাতর ব্যক্তি সব থেকে বেশি অসুখী হয়-আরবী প্রবাদ | হিংসুটে মানুষ বড় দুর্ভাগা হয়। |
পরহস্তং গতা গতাঃ | পরের হাতে কিছু ছাড়তে নেই; তাতে সব যাবে; মূলপ্রবাদ- 'লেখনী, পুস্তিকা জায়া পরহস্তং গতা গতাঃ'। |
পরহস্তং গতং যা ধনম পুস্তকস্থা চ বিদ্যা ন সা তদ্ধনম | পরের হাতে ধন ও বিদ্যা চলে গেলে (পুথিগত হলোে) সেই ধন ও বিদ্যা ধন ও বিদ্যা ব'লে বিবেচিত হয় না; পাঠান্তর- 'পুস্তকাস্থ চ যা বিদ্যা পরহস্তগতং ধনম্, কার্যকালে সমুৎপন্নে ন সা বিদ্যা ন তদ্ধনম'। |
পরহিংসা নরকবাস | পরের হিংসা করলে নরকে যেতে হবে। |
পরিচয়ে সতীত্ব নষ্ট | বহু পরিব্রতা সতী নারী আছেন যাদের মনের কথা প্রকাশ পেলে বোঝা যায় যে তারা আসলে অসতী। |
পরিচয়ে সত্যনাশ | ঘনিষ্টতায় সম্মানহানিকর গোপনকথা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। |
পরিচিতি উপেক্ষার জন্ম দেয় | বেশি ঘনিষ্টতা হলে আকর্ষণ হ্রাস পায়। |
পরিতে হবে শাঁখা, তবে কেন মুখ বাঁকা | ভালো জিনিস যখন পেতে চাও, তখন পরিশ্রমে বিমুখ কেন? |
পরিষ্কার বিবেক বজ্রপাতেও শান্তিতে ঘুমায় | পরিষ্কার বিবেকের মনের শান্তি কোনভাবে বিঘ্নিত হয় না। |
পরিষ্কার বিবেক মিথ্যা অভিযোগে হাসে | বিবেক পরিষ্কার থাকলে অন্যায় অভিযোগে ভয় পাওয়ার কিছু নাই; সম্পর্কীত প্রবচন- 'মনে এই দৃঢ় বিশ্বাস রেখো- জীবনে মরণে সৎলোকের কোন ক্ষতি হয় না'। |
পরিষ্কার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয় না | যে কোন ভুল করেনি তাকে ভুলস্বীকার করার বা ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই; হৃদয় ও চিন্তা শুদ্ধ রাখার জন্য এবং প্রলোভন এবং পাপ এড়ানোর জন্য এই প্রবাদ উক্ত হয়; সমতুল্য- 'পবিত্র মন পাপমুক্ত হয়'। |
পরিশ্রম সাফল্য চাবিকাঠি | পরিশ্রম না-করলে সফলতা পাওয়া যায় না; বিনা পরিশ্রমে কিছুই মেলে না; তুলনীয়- 'কষ্ট বই ইষ্ট নাই';'সাধিলেই সিদ্ধি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'পরিশ্রম সৌভাগ্যের মূল'; 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'। |
পরিশ্রমী কখনো দুঃখী হয় না | পরিশ্রমীকে ভাগ্যলক্ষ্মী সাহায্য করেন; তুলনীয়- 'লেগে থাকলে মেগে খায় না'। |
পরীক্ষা জানার আগ্রহকে মেরে ফেলে | পরীক্ষা কোনমতেই জ্ঞানবিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। |
পরুষ্কারেণ বিনা দৈব ন সিদ্ধতি | শুধু দৈব ভাগ্য ফেরাতে পারে না সঙ্গে দৈবনিরপেক্ষ প্রযত্ন বা উদ্যম থাকা চাই; সমতুল্য- 'অজ্ঞানে আকস্মিক ও দৈব ঘটনার যুক্তি খাড়া করে'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভাগ্যং ফলতি সর্বত্র, ন চ বিদ্যা ন পৌরুষম্।' |
পরে তসর (তসরের কাপড়) খায় ঘি, তার আবার খরচ কি | অর্থ স্পষ্ট; অতীতে এই দুই বস্তু বিনাব্যয়ে পাওয়া যেত; সেইকারণে এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়; বর্তমানে অচল। |
পরের অনিষ্ট করতে গেলে নিজের অনিষ্ট হয় | পরের অনিষ্ট চিন্তা করা পাপ।) |
পরের কথায় লাথিচাপড়, নিজের কথায় ভাতকাপড় | পরচর্চায় কেবল বাদবিসম্বাদ হয়; অপরপক্ষে নিজের চর্চায় অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। |
পরের কাজটা পরে করি | 'আগে ঘর পরে পর' ভাবনার অনুবর্তী মানসিকতায় পরকে গুরুত্ব না দেওয়া। |
পরের কাপড়ে ধোপার নাট | ধোপা পরের কাপড় পরে বাবুগিরি করে লক্ষণায় যে পরের জিনিস হাতে পেয়ে বাবুগিরি করে। |
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও, তার মতাে সুখ কোথাও কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও' | শুধু ব্যক্তিগত সুখ অন্বেষণ করে কেউ সুখী হতে পারে না; আমিত্ব নিয়ে বাঁচা যায় না; বাঁচতে গেলে সহায় চাই; সমতুল্য- 'স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে'। |
পরের গাছের আমটি মিষ্টি | পরের জিনিসের প্রতি লোভ; অলভ্যের কারণে আকর্ষণ বেশি করে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'নিজের সব ভাল পরের সব মন্দ'। |
পরের গোয়ালে গোদান | পরের ধন দান করে পূণ্য সঞ্চয় করা। |
পরের ঘরে খায় দায়, আঠারো মাসে বছর যায় | চিন্তাভাবনাহীন অপদার্থ; গোকুলের ষাঁড়। |
পরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার | অপরকে বিপদে ঠেলে দিয়ে কৌশলে নিজের কার্যসিদ্ধি। |
পরের ঘি পেলে প্রদীপে দেয় ঢেলে | পরের জিনিস পেলে যথেচ্ছভাবে অপব্যবহার করে; তুলনায়- 'কোম্পানীকে মাল দরিয়ামে ঢাল'; 'পরের জিনিস পায় হেগো পোঁদে খায়'। |
পরের ঘোল খাবার লোভে নিজের গোঁফ কামায় | লোভীচরিত্র; ভালো জিনিস দেখলে সকলেরই লোভ হয়; কিছু পাওয়ার আশায় উৎফুল্ল। |
পরের চাল পরের ডাল, নদে করেন বিয়ে | আড়ম্বরের সাথে পরের ধনে নিজের কার্যসিদ্ধি করা; (উৎসকাহিনী-এক গৃহস্থের নবদ্বীপ নামে এক চাকর ছিল; নিজের ঘরবাড়ী বলে চাকরের কিছু ছিল না; একদিন নবদ্বীপের বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়; দয়ালু গৃহস্থ বিয়ের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজী হন; নবদ্বীপ পরিচিত অপরিচিত সব আত্মীয়স্বজনদের আমন্ত্রণ করে ঘটা করে অনুষ্ঠান করে; গৃহস্থ বিরক্ত হলেও অতিথিদের যথোচিত আপ্যায়ন করেন; পরমতৃপ্ত নিমন্ত্রিতরা বলতে থাকে যে আয়োজনে কোন ত্রুটি ছিল না; নিমন্ত্রিতদের কথা শুনে এক ঠোঁটকাটা প্রতিবেশী উপরোক্ত উক্তিটি করেন।) |
পরের ছেলে/বিড়াল খায় বনে পানে চায় | পরের ছেলে বা বিড়ালকে যতই আদরযত্ন কর-না-কেন সুযোগ পেলেই সে পালাবে; তুলনায়- 'পর কখনো আপন হয় না'। |
পরের ছেলেটা খায় এতটা, বেড়ায় যেন বাঁদরটা; নিজের ছেলেটি খায় এতটি, বেড়ায় যেন লাটিম্টি | পরের ছেলের সব মন্দ; নিজের ছেলের সব ভালো; পরের ছেলে সুন্দর হলেও কুৎসিত আর নিকের ছেলে কুৎসিত হলেও সুন্দর; পরের সবকিছুই মন্দ এবং নিজের সবকছুই ভালো। |
পরের ছেলে মোটাই/হাঁদাই | পরের ছেলের সবকিছু মন্দ; পাঠান্তর- 'পরের ছেলের বুদ্ধি কম'। |
পরের পুতে বরের বাপ | পরের ছেলের বিয়েতে বরকর্তা সেজে কর্তৃত্ব করা। |
পরের জন্য গর্ত করে, নিজেই তাতে পড়ে মরে | পরের ক্ষতি/মন্দ করতে গেলে নিজের ক্ষতি/মন্দ হয়; পাঠান্তর- পরের জন্য ফাঁদ পাতে, আপনি পড়ে মরে তাতে'। |
পরের জিনিস পায়, হেগো পোঁদে খায় | পরের জিনিস পেলে সেটি হস্তগত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে; সম্পর্কীত প্রবাদ-'কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ঢাল'; 'পরের ঘি পেলে প্রদীপে দেয় ঢেলে'। |
পরের তরফে খায় ঘি, তার আবার খরচ কি | পরের আশ্রয়ে থেকে যে বাবুগিরি করে তার নিজস্ব খরচ কিছু নাই। |
পরের তেলে কাপড় নষ্ট | পরের দ্রব্য হাতে পেয়ে নিজের ক্ষতি করে তার যথেচ্ছ ব্যবহার। |
পরের দুঃখ কেউ বোঝে না | আত্মসর্বস্বতা; মানুষ নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। |
পরের দুধে দিয়ে ফুঁ, পুড়িয়ে এলেন নিজের মু | পরের কাজে ব্যস্ত থেকে নিজের কাজ নষ্ট করা; পরের ইষ্ট করতে গিয়ে নিজের অনিষ্ট করা; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আগে ঘর পরে পর'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'পরোপকারঃ পূণ্যায়'। |
পরের দেখে তোলে হাই, যা আছে তাও নাই | পরের উন্নতি দেখে ঈর্ষান্বিত হলে নিজের অবনতি বই উন্নতি হবে না; পরের সৌভাগ্য দেখে বসে থাকলে নিজের ভাগ্যও বসে থাকবে। |
পরের ধন আপন ছালা, যত ইচ্ছা ভরে ফেলা | মাগনায় জিনিস পেলে ঘরে এনে ভর্তি করা; যেন মাগনায় পেলে দাদের মলমও খাওয়া যায়- এমন মানসিকতা। |
পরের ধন নিজের বুদ্ধি কেউ কম দেখে না | একদর্শিতা; বিচারে এড়া; যে ধারণয় মন তৃপ্ত হয় সেটাই যেন ঠিক; সমতুল্য- 'নিজের বেলায় আঁটিসুটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি'; পাঠান্তর- 'পরের বয়স নিজের পরমায়ু কেউ কম দেখে না'। |
পরের ধনে পোদ্দারি১ | উঁচু মেজাজে পরের ধন খরচ করা; পাঠান্তর- 'পরের ধনে পোদ্দারগিরি লোকে বলে লক্ষ্মীশ্বরী'। |
পরের ধনে পোদ্দারি২ | পরের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে নিজেই সেই সম্পদ ভোগ করে বাবুগিরি করা। |
পরের ধনে পোদ্দারি৩ | অন্যের অর্থ অন্যকাজে খরচ করার সময় স্বেচ্ছামত কম বা বেশি খরচ বা দান করা। |
পরের ধনে পোদ্দারগিরি | অন্যের অর্থ অন্যকাজে খরচ করার সময় স্বেচ্ছামত কম বা বেশি খরচ বা দান করা। |
পরের ধনে বরের বাপ | মেয়ের বাপের কাছ থেকে বরপণ নিয়ে আড়ম্বরের সাথে বিয়েতে খরচ করে বরের বাপের বড়লোকি চাল দেখানো। |
পরের পিঠে বড় মিঠে | বিনাব্যয়ে পাওয়া জিনিস বড়ই আদরের হয়; পরের জিনিস পেতে লোভ হয়; তুলনীয়- 'পরের গাছের আমটা মিষ্টি'; পাঠান্তর- 'পরের বাড়ির/হাতের পিঠা খাইতে বড়ই মিঠা'। |
পরের পুতে বরের বাপ | পরের ছেলের বিয়েতে বরকর্তা হয়ে কর্তৃত্ব করা। |
পরের বয়স নিজের পরমায়ু কেউ কম দেখে না | একদর্শিতা; বিচারে এড়া; যে ধারণয় মন তৃপ্ত হয় সেটাই যেন ঠিক; সমতুল্য- 'নিজের বেলায় আঁটিসুটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি'; পাঠান্তর- পরের ধন নিজের বুদ্ধি কেউ কম দেখে না'। |
পরের ভাতে কুকুর পোষা | পরের পয়সায় শখ মেটানো। |
পরের ভাতে পুষলো যোগী উল্টে বলে পরবাস কি | পরের খেয়েপরে মানুষ সময় পেয়ে বলে পরাশ্রয় সেটা আবার কী; বিপদকালে উপকার পেয়ে সম্পদকালে সেই উপকার অস্বীকার করা। |
পরের ভাতে বেগুন পোড়া | মাগনায় জিনিস পেয়ে কিছু খরচ করে নিজের মনোমত করে নেওয়া। |
পরের মন্দ করতে গেলে নিজের মন্দ আগে হয় | পরকে বিপদে ফেলতে পাতা জালে অসৎ নিজেই জড়িয়ে পড়ে। |
পরের মন আঁধার কোণ | পরের মনে ঠিক কি খেলছে বোঝা দায়। |
পরের মাথা কেটে নাপিত | অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে পাঠ নেওয়া। |
পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজে খায় কোষ | অপরকে কষ্ট দিয়ে বা ঠকিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা। |
পরের মাথায় দিয়ে হাত কিরা/দিব্বি করে নির্ঘাত | কিরায় ক্ষতি হলোে অন্যের সেটা হোক, নিজের ক্ষতি না হলোেই হল। |
পরের মাথায় হাত বুলানো | পরের জিনিস আত্মসাৎ করা। |
পরের মুখে ঝাল খাওয়া | নিজে না বুঝে অন্যের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা। |
পরের লেজে পড়লে পা তুলোপানা ঠেকে, নিজের লেজে পড়লে পা আগুনপানা ঠেকে | পরের স্বার্থে সহজে নাক গলায়; নিজের স্বার্থে লাগলে ক্ষিপ্ত হয়; পরের উপর দৌরাত্ম করতে ভালোবাসে, নিজের উপর দৌরাত্ম হলে ক্রুদ্ধ হয়। |
পরের সুখ কাড়তে যেও না নিজের সুখ হারিয়ে যাবে | পরের ক্ষতি করতে নিজের ক্ষতি হয়। |
পরের সোনা দিও না কানে, কেড়ে নেবে হ্যাঁচকা টানে | পরের টাকা পয়সায় বাবুগিরি করা অনুচিৎ; শখ্যতা বিগড়ালে দু'কথা শুনিয়ে দিতে পারে; পাঠান্তর- 'পরের সোনা দিও না কানে, কান যাবে তোমার হ্যাঁচকা টানে;। |
পরের হাতে ধন, পেতে অনেকক্ষণ | পরের সাহায্যের ভরসায় বসে থাকলে কার্যসিদ্ধি হবে না। |
পরের হাতে ধন, যেতে কতকক্ষণ | পরের দায়িত্বে টাকাপয়সা থাকলে সেটা গেছেই ধরে নিতে হবে; তুলনীয়- 'পরহস্তং গতা গতাঃ'। |
পরোক্ষে কার্যহন্তারং প্রত্যক্ষে প্রিয়বাদিনম, বর্জয়েৎ তাদৃশ্যং বন্ধুং বিষকুম্ভং পয়োমুখম্ | যে বন্ধু সামনে মিষ্টিকথা বলে আর পিছনে ক্ষতি করে তার মনে বিষ ও মুখ মিষ্ট; এমন বন্ধু পরিত্যাজ্য। |
পরোপকার করে যাও কিন্তু কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা করো না | নিঃস্বার্থ সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। |
পরোপকারঃ পূণ্যায়, পাপায় পরপীড়নম্ | পরোপকার পূণ্যের কাজ; পরপীড়ন পাপ। |
পরোপদেশে পাণ্ডিত্যং সর্বেষাং সুকরং নৃণাম্ | মহাপুরুষেরা আগে নিজে মহৎ হয়েছেন তারপর শিক্ষা দিয়েছেন; দুঃখের বিষয় অনেক জ্ঞানপাপী জ্ঞানীপুরুষ আছেন যাঁদের কে শেখায় ঠিক নেই তাঁরা অন্যকে শেখাতেই ব্যস্ত; পাঠান্তর- 'পরোপদেশে পাণ্ডিত্যং সর্বেষামুপজায়তে'; সম্পর্কীত প্রবাদ-'আমি যা বলি তাই কর আমি যা করি তা নয়'; 'মাকড় মারলে ধোকড় হয়'। |
পর্বত মহম্মদের কাছে না গেলে মহম্মদ পর্বতের কাছে যাবে | উপকৃত নয় আসলে উপকারীই উপকৃতের কাছে যাবে এই ভাবার্থে প্রবচনটি ব্যবহৃত হয়। |
পর্বতের আড়ালে আছি | পর্বতের আড়ালে থাকলে ঝড়ঝাপটা গায়ে লাগে না লক্ষণায়- ভাল অভিভাবকের রক্ষণে থাকা, যাতে গায়ে কোন আঁচ না লাগে। |
পর্বতের মূষিক প্রসব | বিরাট কর্মকাণ্ডের অতি তুচ্ছ পরিণাম; সমতুল্য- 'অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার'। |
পর্বতো বহ্নিমান্ ধুমাৎ | ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে; সমতুল্য- 'অকারণে কিছু হয় না';'কার্য থাকলে কারণ আছে';'যত্র ধূম্র তত্র বহ্নি; ইত্যা্দি। |
পলকে প্রলয় | হঠাৎ একটা বিপর্যয়কর কাণ্ড ঘটে যাওয়া; তুলনায়- 'বিনামেঘে বজ্রপাত'। |
পলতাগাছে পটল ফলেছে | পলতা তেতো,পটল মিষ্ লক্ষণায়- কুবংশে সুসন্তান জন্মেছে; নির্গুণের ঘরে গুণী সন্তান জন্মেছে; সমতুল্য- 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ'; 'পাঁকের মাঝে পদ্ম ফুটেছে'। |
পশ্চিমে ধনু নিত্য খরা, পূর্বে ধনু বর্ষে ধারা- খনা | পশ্চিম আকাশে রামধনু উঠলে খরা হয়; পূব আকাশে রামধনু উঠলে অতিবৃষ্টি হয়। |
পশ্চিমে সূর্যোদয় | অসম্ভব ব্যাপার; যা কখনো হয় না; সমতুল্য- 'অশ্বডিম্ব'; 'আঁটকুড়ের ব্যাটা'; 'আকাশকুসুম'; 'এঁড়েগরুর দুধ'; 'কাঁঠালের আমসস্ত্ব'; 'ঘোড়ার ডিম' ; 'ভস্মকীট'; 'সোনার পাথরবাটি'; 'সোনার হরিণ'; 'সাপের পাঁচ-পা' ইত্যাদি। |
পহেলে দর্শনধারী, পিছে গুণবিচারী | রূপ আগে আকর্ষণ করে; গুণের বিচার তারপর হয়; সমতুল্য- 'ঠাঁট-ঠমকে বিকোয় ঘোড়া'; 'যো দেখতা হ্যায় উও বিকতা হ্যায়'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি'। |
পাঁকালমাছের গায়ে পাঁক লাগে না | নির্লিপ্তভাবে সংসারের কাজ করা; সাধুমনের সংসারীব্যক্তি সংসারের সমস্যায় নিজেকে জড়ায় না। |
পাঁকের গোঁজ | পাঁকের মধ্যে গোঁজা বাঁশ সহজে তোলা যায় না লক্ষণায় বড় এড়া লোক, যাকে সহজে বাগে আনা যায় না। |
পাঁকের মাঝে পদ্ম ফুটেছে | কুবংশে সুসন্তান জন্মেছে; নির্গুণের ঘরে গুণী সন্তান জন্মেছে; সমতুল্য- 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ'; 'পলতাগাছে পটল ফলেছে'। |
পাঁচ আঙুল সমান হয় না | সবলোক সমপ্রকৃতির হয় না; তুলনীয়- 'ভিন্নরুচির্হি লোকাঃ'। |
পাঁচদিন চোরের একদিন গৃহস্থের/সাধুর | অন্যায় করে কেউ কোনদিন পার পায় না; অন্যায়ের শাস্তি একদিন পেতেই হবে। |
পাঁচ নকলে আসল খাস্তা | কয়েকটি নকল ঠিক আছে; বহু নকল করতে গেলে মূল হারিয়ে যায়, খুঁজে আর পাওয়া যায় না; তখন নকলকে ভিন্নরূপের আসল মনে হয়; পাঠান্তর- 'সাত নকলে আসল ভেস্তা'। |
পাঁচ পাগলের ঘর, খোদা রক্ষা কর | কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার পথে সংখ্যাধিক্য বাধাস্বরূপ; পাঠান্তর- 'পাঁচ সতীনের ঘর খোদা রক্ষা কর'। |
পাঁচ রবি যে মাসে পায় ঝরা কিংবা খরায় যায়- খনা | যে বৎসর একমাসে পাঁচটি রবিবার পরে সেই মাসে অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি হবে। |
পাঁচহাত বুকের পাটা | অতি সাহসী ব্যক্তি। |
পাঁচো আঙ্গুলি ঘি মে | সবদিক থেকে লাভ। |
পাঁচশ জুতা গুণে খায়, ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যায় | অসংখ্য গালাগালি সহ্য করে, কিন্তু একটা কটুকথায় জ্বলে উঠে। |
পাঁড়ে জী পছ্তায়ে উওহী চানাগুড় খায়ে | সাধাসধি করা সত্বেও না খেয়ে পরে নিজে থেকে সেই খাবার খাওয়া; সমতুল্য- 'সাধলে জামাই খান না শেষে জামাই পান না'। |
পাঁশ (ছাই) পেড়ে কাটি, ভুঁয়ে না রক্ত পড়ে১ | ক্রোধের অভিব্যক্তি; খুব রাগের গালি। |
পাঁশ (ছাই) পেড়ে কাটি, ভুঁয়ে না রক্ত পড়ে২ | নির্মমভাবে শত্রু নির্যাতন করা; সমতুল্য- 'ছাই পেতে কাটা'। |
পাইলাম থালে দিলাম গালে; পাপ নাই তার কোনকালে | মালিকানাহীন পড়ে থাকা জিনিস যে পাবে তার। |
পাকলে ডুমুর পড়ে মর | পাকা ডুমুর কোন কাজে লাগে না, এই অর্থে- বৃদ্ধলোকের কোন দাম নেই; বৃদ্ধলোক বিদায় হোক। |
পাকা আম দাঁড়কাকে খায়১ | অযোগ্যের উত্তমসামগ্রী ভোগ করা দেখে খেদোক্তি। |
পাকা আম দাঁড়কাকে খায়২ | সুন্দরীনারীর কুৎসিত পুরুষসঙ্গী দেখে খেদোক্তি। |
পাকা আম দাঁড়কাকে ঠোকরায় | লোভীচরিত্র; ভালজিনিস দেখলে সকলেরই লোভ হয়; পাক বা না পাক, একবার পেতে চেষ্টা করে। |
পাকা ধানে মই দেওয়া১ | প্রায় শেষ হয়ে আসার মুখের কাজ পণ্ড করা; সাফল্যের মুখে অন্যের অনিষ্ট করা; লাভের মুখে ক্ষতি হওয়া; তুলনীয়- 'বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া'। |
পাকা ধানে মই দেওয়া২ | সাফল্যের মুখে অন্যের অনিষ্ট করা। |
পাকা ধানে মই দেওয়া৩ | লাভের মুখে ক্ষতি হওয়া। |
পাকা লোক ফাঁকা কথায় ভোলে না | চালাককে সহজে বোকা বানানো যায় না। |
পাখি উড়ে যায় তার পালকের গুণে | দক্ষব্যক্তি তার সহজাত দক্ষতার গুণে কাজ সুসম্পন্ন করে; দক্ষতা থাকলে কাজে অসুবিধা হয় না। |
পাখি চিনি গানে, ব্যক্তি চিনি কথায় | অর্থস্পষ্ট; তুলনীয় প্রবাদ- 'ঘোড়া চিনি কানে, দাতা চিনি দানে; মানুষ চিনি হালে, মণি চিনি জলে'; 'ঘোড়া চিনি কানে, রাজা চিনি দানে, নারী চিনি হাসে, পুরুষ চিনি কাশে'। |
পাখি চিনে উঁচু ডাল, মাছ চিনে গভীর জল | নিজনিজ পরিবেশে অভিজ্ঞতা লাভ হয়। |
পাখিপড়া মত পড়ানো | কাউকে এক বিষয়ে বারবার উপদেশ দেওয়া। |
পাখিমারার ঘরে চড়ুইয়ের বাসা | পাকা ব্যবসায়ীকে ঠকাতে যাওয়া। |
পাখির চোখ | নির্দিষ্ট লক্ষ্য; (উৎসকাহিনী- অস্ত্রশিক্ষায় পাণ্ডবপুত্ররা কিরকম পারদর্শী হয়েছে তা জানার জন্য দ্রোণাচার্য একদিন তাদের বনে নিয়ে যান; কাছে গিয়ে বনের দিকে ইঙ্গিত করে সকলের কাছে জানতে চান যে তারা প্রত্যেকে কি দেখছে; অর্জুন ছাড়া সব ভাইয়েরা বিভিন্ন বিষয়ের নাম উল্লেখ করেন; একমাত্র অর্জুন শুধু বলেন, 'আমি একটি পাখি ও তার একটি চক্ষু দেখতে পাচ্ছি'; দ্রোণাচার্য বুঝতে পারেন একমাত্র অর্জুনেরই অস্ত্রশিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে; তার লক্ষ্য স্থির; এই গল্প থেকে সৃষ্ট প্রবাদটির তাৎপর্য হল- লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তবে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।) |
পাখির পরিচয় তার গানে মানুষের পরিচয় তার কথায় | পাখিকে চিনি তার সুরেলা কণ্ঠ শুনে; মানুষকে চিনি তার কথাবার্তায়; সত্যকথা বললে সে সম্মানীয়; মিথ্যাকথা বললে সে মিথ্যাবাদী; তুলনীয়- 'ঘোড়া চিনি কানে, রাজা চিনি দানে, নারী চিনি হাসে,পুরুষ চিনি কাশে'। |
পাখির প্রাণ অল্পেই যান | ক্ষীণজীবী সহজে কাবু হয়। |
পাখির মধ্যে ওঁচা নাম কাদাখোঁচা | কাদাখোঁচা পাখীকে নিকৃষ্টতম ধরা হয়; সর্বদা নোংরা ঘেটে বেড়ানো মন্দপ্রকৃতির লোক কখনো ভালো হয় না। |
পাগল কি গাছে ফলে, আক্কেলেতে পাগল বলে | আক্কেল গেলেই লোকে পাগলামি করে; লোকে আক্কেলশূন্য লোককে পাগল বলে। |
পাগল না ছাগল | উভয়ই সমান; উভয়েরই কোন জ্ঞানগর্মী নেই, খাদ্য ও অখাদ্যের কোন বাছবিচার করে না। |
পাগলা ভাত খাবি, না হাত ধোব কোথায়? | পাগলকে কোন কাজের প্রস্তাব দিলে সে সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত। |
পাগলা সাঁকো নাড়িস নে, ভাল মনে করে দিয়েছিস | পাগলকে সাঁকো নাড়ারে বারণ করলে সে ঘনঘন নাড়ে আর জোরে জোরে সাঁকো নাড়ায়; অনেক বেয়াড়া লোক আছে যাদের যে কাজে আনন্দ সেই কাজ করতে নিষেধ করলে সেটা বেশি করে; না-সূচক বাক্যে প্রবৃত্তি জাগিয়ে দেওয়া। |
পাগলা নাও ঝুলাইস/দোলাস না; কী–আমি তো বাতায় খাড়া | সেয়ানা পাগল; বাতা খোলা চালের ঢালু মুখ; সুতরাং সে আরও বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। |
পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায় | কি যে বলা যায় আর কি যে বলা যায় না পাগল সেটা বোঝে না; কোনটা যে খাদ্য এবং কোনটা যে অখাদ্য ছাগল সেটা বোঝে না। |
পাগলের গোবধে আনন্দ | এড়ালোক অন্যায় কাজ করেও আনন্দ পায়; নির্বোধের পাপপূণ্যবোধ নেই; পাঠান্তর- 'অবোধের গোবধে আনন্দ'। |
পাগলের সাত খুন মাপ | পাগলের কোন শাস্তি হয় না;(উল্লেখ্য যে ইংরাজশাসনে জমিদারেরা সাতটা মানুষপর্যন্ত খুন করলে শাস্তি হত না'।) |
পাগের বড়াই মাগের কাছে | দুর্বলের যত হম্বিতম্বি তা সব তার বউয়ের কাছে করে; (উৎসকাহিনী- পাগ হল লাঠি খেলায় ওস্তাদ পাইক বা লেঠেল; এক দুর্বল পাগ লাঠি খেলা জানত না বা পারত না; তাই সে অন্যন্য পাগেদের কাছে ঘেঁষত না; যত হম্বিতম্বি ছিল তার বউয়ের কাছে। |
পাঠান মুঘল হদ্দ হল, ফারসি পড়ে তাঁতি | কঠিন কাজে অর্বাচীনের আগবাড়ানো দেখে বক্রোক্তি; সমতুল্য 'চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল, জোনাকি ধরে বাতি'। |
পা ঢাকে তো (চাদরে) মাথা ঢাকে না, মাথা ঢাকে তো পা ঢাকে না | অপ্রতুলতা; অর্থের টানাটানি; কৃচ্ছতার জন্য খেদোক্তি; সমতুল্য- 'কাছা দিতে কোঁচা আঁটে না, কোঁচা দিতে কাছা আঁটে না'। |
পাণৌ পয়সা দগ্ধে তক্রং ফুৎকৃত্য পামরাঃ পিবন্তি | গরমদুধে মুখ পুড়লে নির্বোধেরা ঘোলে ফুঁ দিয়ে খায়;
পূর্ব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থেকে অতিসতর্কত; নির্বোধের কোনদিন বুদ্ধি হয় না; তুলনীয়- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরের দুধে দিয়ে ফুঁ, পুড়িয়ে এলেন নিজের মু'। |
পাণ্ডববর্জিত দেশ | অতিনির্জন অঞ্চল; (উৎসকাহিনী- পঞ্চপাণ্ডব বারোবছর বনবাসকালে এবং একবছর অজ্ঞাতবাসকালে দেশের নানাস্থানে নানবনজঙ্গল ভ্রমণ করেছিলেন; অগম্য দুর্গম ও জনমানবশূন্য স্থানগুলিতে প্রয়োজন হয়নি বলে তারা পদার্পণ করেন নি বা বর্জন করেছিলেন; এই না-ঘোরা ও না-দেখা অঞ্চলগুলিকে প্রবাদে ‘পাণ্ডববর্জিত দেশ’ বলা হয়।) |
পাণডুবর্ণ ধারণ করা | ফ্যাকাসে মেরে যাওয়া (উৎসকাহিনী- বেদব্যাসের ঔরসে অম্বালিকার গর্ভে রাজা পাণ্ডুর জন্ম হয়; সহবাসকালে বেদব্যাসের দাড়িভর্তি ঘোরকালো মুখ দেখে অম্বালিকা ভয়ে ফ্যাকাসে মেরে যায়; সেই কারণে রাজা পান্ডু সাদা ফ্যাকাসে রং নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন; উল্লেখ্য এইসময়ে বেদব্যাসের ঔরসে এক দাসীর গর্ভে বিদুরের জন্ম হয় এবং অম্বিকার গর্ভে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়।) |
পাত কাটতে/পাড়তে দেরী সয় না | কোন কাজে অতিমাত্রায় ব্যস্ত হওয়া। |
পাততাড়ি গুটানো | অতীতে পাঠশালার ছেলেরা ছুটি হলেই তালাপাতার তাড়া গুটিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিত লক্ষণায় কোনস্থান থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস গুটালে বা ব্যবসাপত্র বন্ধ করলে পাততাড়ি গুটানো বলে। |
পাতাচাপা কপাল আর পাথরচাপা কপাল | পাতাচাপা কপাল হলে একটু চেষ্টাতেই সৌভাগ্য ফেরে; পাথরচাপা কপাল হলে হাজার চেষ্টাতেইও সৌভাগ্যের দেখা মেলে না। |
পাতের ভাত দে পুষলো যোগী উলটে বলে পরবাস কি | ঘরের অন্ন দিয়ে যোগীকে প্রতিপালন করা হল; যাবা সময় কিনা বলে, 'পরের আশ্রয়ে বাস সেটা আবার কি?' বিপদকালে উপকার নিয়ে সম্পদকালে তা অস্বীকার করা; নিমকহারামি। |
পাত্রপাত্রীর দেখা নাই, শুক্রবারে বিয়ে | আগাম পরিকল্পনা; সমতুল্য-'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছ না উঠতেই এককাঁদি'; 'রাম না হতে রামায়ণ'; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি। |
পাথর জলে গলে/পচে না১ | আকাটমূর্খ জ্ঞানী হয় না। |
পাথর জলে গলে/পচে না২ | শক্তিশালী সহজে বিনষ্ট হয় না। |
পাথর জলে হাজার বছর ডুবে থাকলেও রসসিক্ত হয় না | নির্গুণ কখনো গুণী হয় না। |
পাথরে ঘুণ ধরে না | গুণবানের- কুপ্রবৃত্তি মনে জাগে না; গুণ নষ্ট হয় না; বুদ্ধিনাশ হয় না ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'পাথরে মরচে পড়ে না'। |
পাথরে পাঁচ কিল১ | বারবার কিল মারলেও পাথরের কিছু হয় না; যার কপাল ভালো কোনদিক দিয়েই কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। |
পাথরে পাঁচ কিল২ | বারবার কিল মারলে পাথরের কিছু হয় না; যার কপাল খারাপ কোনভাবেই সে তার ভাগ্য ফেরাতে পারে না। |
পাথরে লেখা মোছে না | পরিশ্রমের ফল বৃথা যায় না। |
পাথরের সেতু পার হওয়ার আগে পাথরটা পরীক্ষা করে নিও | পরিণতির কথা চিন্তা করে কাজ করা উচিত; সমতুল্য- 'ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না'। |
পাদপানাং ভয়ং বাতাৎ পদ্মানাং শিশিরাদ্ভয়ম্, পর্বতানাং ভয়ং বজ্রাৎ সাধূনাং দুর্জনাদ্ভয়ম্ | বৃক্ষের ভয় ঝড়কে; পদ্মের ভয় শীতকালকে; পর্বতের ভয় বজ্রকে; আর সজ্জনের ভয় দুর্জনকে। |
পাদমেকং নঃ গচ্ছামি | কোথাও যাওয়ার তীব্র অনিচ্ছা প্রকাশ; নড়াচড়া করার একেবারেই ইচ্ছা নেই। |
পান পান্তা ভক্ষণ ঐ তো পুরুষের লক্ষণ আমি অভাগী তপ্ত খাই কোন দিন বা মরে যাই | এক চাষীর বৌ প্রতিদিন স্বামীকে পান্তাভাত খেতে দিত এবং নিজে গরমভাত রেঁধে খেত; এক প্রতিবেশিনী ব্যাপারটা লক্ষ্য করে কারণ জানতে চায়; চাষীবৌ বলে যে, পান ও পান্তা খাওয়া পুরুষমানুষ পছন্দ করে এবং স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল; সে অভাগিনী তাই গরমভাত খেয়ে রোগে পড়ে কবে না মরে যায়; কেউ নিজে ভাল খেয়ে এবং পরকে মন্দজিনিস দিয়ে সরলতার ভান করলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়। |
পান পুত্লে শ্রাবণে খেয়ে না ফুরায় রাবণে | শ্রাবণমাসে পান চাষ করলে এত পান জন্মে যে রাক্ষসের মত খেলেও শেষ হয় না। |
পান হতে চূন খসে না১ | যার কাজে সামান্যতম ভুলত্রুটি হয় না বা সহ্য করে না। |
পান হতে চূন খসে না২ | নিয়মের একটু এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। |
পানাপুকুরে ডুবে মরা | অতিসতর্ক থেকেও সামান্য ভুল করা; তুলনীয়- 'পচা শামুকে পা কাটা'। |
পা না ভিজলো যার, বড় কৈ মাছটা তার | পরের পরিশ্রমের ফলে ভাগদারীর অন্যায় আবদার; একটুও না খেটে বেশিভাগ পাওয়ার জন্য অন্যায় দাবী। |
পা বড় না পেট বড়? | পা চলে বলে অন্ন জোটে, নাকি অন্ন জোটে বলে পা চলে? সেই চিরকালের অমিমাংসিত প্রশ্ন- 'ডিম আগে না মুরগী আগে'। |
পানিতে/জলে কুমির ডাঙায় বাঘ | দুদিকেই বিপদ, রক্ষার কোনো পথ নেই; উভয়সঙ্কট। |
পানৌ পয়সা দগ্ধে তক্রং ফুৎকৃত্য পামরাঃ পিবন্তি | গরমদুধ খেয়ে মুখ পুড়লে মুর্খেরা ঘোলে ফুঁ দিয়ে খায়। |
পান্তাভাত ফুঁ দিয়ে খায় | অতীত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থেকে অতি সতর্কতা। |
পান্তাভাতে ঘি নষ্ট, বাপের বাড়ী ঝি নষ্ট | পান্তাভাত কেউ ঘি দিয়ে খায় না; বিবাহিতা মেয়ের বাপের বাড়ীতে দীর্ঘিদিন থাকা উচিত নয়। |
পান্তাভাতে নুন জোটে না, গরমভাতে/বেগুনপোড়ায় ঘি | অবস্থার অতিরিক্ত আশা করা; অযৌক্তিক আবদার। |
পাপ করলেই ভুগতে হয়, কথাটা যেন মনে রয় | মনে রেখো পাপের শাস্তি অনিবার্য। |
পাপ করলেই যমের ভয় | পাপী মরতে ভয় পায়; পূণ্যাত্মা নয়; পাঠান্তর- 'পাপমনে বড় ভয়'। |
পাপছাড়া সব কাজই ছোট আকারে শুরু হয় | অতি ক্ষুদ্রমাত্রার পাপও অতি ঘৃণ্য। |
পাপ বাপকেও ছাড়ে না | পাপ করলে শাস্তি পেতেই হবে। |
পাপও লুকায় না, সাগরও শুকায় না | যেমন সাগর শুকানো অসম্ভব তেমনই পাপ লুকানো অসম্ভব। |
পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয় | পাপ ঘৃণ্য, পাপী নয়; পাপ সংশোধন হয় না, পাপীর সংশোধন হয়। |
পা পিছলে পড়ে যাওয়া লজ্জার নয়, সময়মত উঠতে না পারাটা লজ্জার | পড়াটা অক্ষমতা নয়; উঠে দাঁড়াতে না পারাটায় অক্ষমতা, দৈন্যতা প্রকাশ পায়। |
পাপীদের দেখে জীবন কি জানা যায় | গাঢ় অন্ধকারে থেকে বোঝা যায় আলোর মূল্য কি। |
পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায় | অসৎপথে উপার্জিত ধন ভোগে আসে না, কুপথে বিনষ্ট হয়; তুলনায়- 'চিতপাতের কড়ি উৎপাতে যায়'। |
পাপের বোঝা বড় ভার | পাপীরও বিবেকমন থাকে; পাপ করলে বিবেকমনের উপর অসহ্য চাপ সৃষ্টি হয়। |
পাপের লেশ সুখের শেষ১ | বিন্দুমাত্র পাপ সঞ্চিত হলেই সুখ অন্তর্হিত হয়; মনের প্রশান্তির পরিসমাপ্তি। |
পাপের লেশ সুখের শেষ২ | মনে পাপ একবার বাসা বাঁধলে তার ধীরে ধীরে তাঢ় প্রসার হতে থাকে আর সুখ ক্রমশঃ অন্তর্হিত হ;তে থাকেি। |
পাবার আশে পুরুত ঘেষে | প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা থাকলে যজমানের বাড়িতে পুরুতের ঘনঘন যাতায়াত শুরু হয়। |
পায়স সিঞ্চতে নিত্যং ন নিম্বং মধুরায়তে | দুধে রোজ ডুবিয়ে রাখলেও নিম কখনো মিষ্টি হয় না। |
পায় না পচা পুঁটি খেতে চায় ঘি-রুটি | অযোগ্যের উচ্চাশা। |
পায় পায় শত্রু | চারিদিকে অনেক শত্রু। |
পায়ে ঠেলা | উপেক্ষা করা। |
পায়ের জুতা মাথায় চড়েছে | নীচব্যক্তির আকস্মিক সম্মানপ্রাপ্তি; (উৎসকাহিনী- অতীতে কাঁচারাস্তার জন্য গাঁয়ে লোকেরা খালিপায়ে চলাফেরাক করত; শহরে যাওয়ার থাকলে জুতা পড়ত; তবে জলকাদা মাড়িয়ে শহর যাওয়ার পাকা রাস্তায় না ওঠাপর্যন্ত জুতাজোড়া বুঁচকির মধ্যে ভরা থাকত; তার থেকেই এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে।) |
পায়ের পয়জার মাথায় চড়ে | কোন নীচব্যক্তি সম্মানীয় ব্যক্তিকে অসম্মান করলে প্রবাদটি উক্ত হয়। |
পায়ের যোগ্য মানুষ নয় গায়ে হাত দিয়ে কথা কয় | নিম্নস্তরের লোকের উচ্চস্তরের লোকের সাথে কথা বলা। |
পার (খাল) হ’লে পাটনি শালা | কৃতঘ্নচরিত্র; যতক্ষণ নৌকায় থাকা ততক্ষণ বাবা-বাছা করে তোষামোদ করা এবং মাটিতে নেমেই তুচ্ছতাচ্ছল্য করা; জেনেবুঝে উপকারীর ঋণ অস্বীকার করা;
তূলনীয়- 'কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালেই পাজি। |
পারা (=পারদ) আর পাপে কার সাধ্য চাপে | পারা খেলে একসময় গা ফুঁড়ে বেরুবেই; তেমনি পাপ কখনো লুকানো যায় না; তুলনীয়- 'পাপও লুকায় না, সাগরও শুকায় না'। |
পা রাখার জায়গা না দেখে/পেলে পা তুলো না | ভেবেচিন্তে কাজ করার উপদেশ; তুলনীয়- 'চলৎ একেন পাদেন তিষ্ঠতি একেন বুদ্ধিমানঃ'। |
পারের কর্তা হরি, দিবেন চরণতরি | সংসাররূপ সাগরের পারাপারের কর্তা শ্রীহরি; তাঁর চরণে আশ্রয় নিলে তিনি বৈতরণী নদী পার করে দেবেন। |
পালাতে না পেরে পোষ মানা | পালাবার সুযোগ না থাকলে অনুগত হয়ে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। |
পালাতে না পেরে মোড়লের বেহাই | কৌশলে কার্যোদ্ধার; কোন একটা দোহাই দিয়ে জাল কেটে বেরুনো শেষ চেষ্টা। |
পালাবো না তো কি ভয় করবো? | নির্লজ্জ বেহায়া; কোন কাজে অকৃতকার্য হয়ে লজ্জাবোধ করে না পরন্তু শ্লাঘাপ্রকাশ করে। |
পালে পালে মিশে গেছে১ | সমশর্মীরা একত্রিত হয়েছে; তুলনীয়- 'ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশেছে। |
পালে পালে মিশে গেছে২ | নিন্দার্থে- বদের দল, দল দেখে ভিড়ে গেছে; পাঠান্তর- 'পালের গরু পালে মিশেছে'। |
পালের গোদা | নিন্দার্থে- বদসঙ্গের সর্দার। |
পাশা কর্মনাশা | পাশা খেলা হল অকর্মাদের খেলা, যাতে সময় নষ্ট হয়; পূর্ণাঙ্গ প্রবাদ- 'তাস দাবা পাশা তিন কর্মনাশা'। |
পাশের বাড়ী বিয়ালো গাই, সেইসুত্রে চাচাতো/পাড়াতো ভাই | দূর আত্মীয়তাসম্পর্কে তাচ্ছিল্য প্রকাশ। |
পাষণ্ডের পাপবোধ নাই | যারা দুস্কর্ম করে বেড়ায় তারা পাপকে গ্রাহ্য করে না। |
পাষাণে মাথা কোটা/ঠোকা | নিস্ফল আবেদন; নির্দয়ের কাছে উপকার করারা জন্য অথবা অপকার না করার জন্য প্রার্থনা করা; তুলনায়- 'অরণ্যে রোদন'। |
পাহাড়ের আড়ালে থাকা | ভাল অভিভাবকের রক্ষণে থাকা ভালো যাতে গায়ে কোন আঁচ না লাগে। |
পাহাড়ের চূড়ায় চড়ো না, তাহলে চূড়া থেকে তুমি নীচের সকলকে ছোট দেখবে আর নীচের সকলে তোমাকেও ছোট দেখবে | খুব বড় হতে হবে না আবার খুব ছোট হতে হবে না; উভয়ক্ষেত্রেই সকলের থেকে বিরাট দূরত্ব সৃষ্টি হবে। |
পাহাড়ের চূড়ায় যে প্রথম চড়ে সে যেখানে খুশি বসতে পারে | শ্রেষ্ঠর নানাবিষয়ে নির্বাচন করার অনেক সুবিধা। |
পাহাড়ের চূড়ায় মাত্র কয়েকজনই চড়ে | শ্রেষ্ট হওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার; খুব অল্পজনই তা পারে; শ্রেষ্ট একমেবাদ্বিতীয়ম। |
পাহাড়ের মতই পুরাতন | অতিপ্রাচীন। |
পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর | ঘরে বসে সারা পাড়ার খবর রাখা; তুলনীয়- 'ঘরে বসে কেল্লা মারা'। |
পিঁপড়ে চলতে থাকলে শত যোজন এগুতে পারে | অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সব কঠিন কাজ সহজে সম্পন্ন হয়; তূলনীয়- 'পঙ্গুও লঙঘায় গিরি'। |
পিঁপড়ে যতক্ষুদ্রই হোক তার জীবনদায়ক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে | ক্ষুদ্রকে অবজ্ঞা করতে নেই। |
পিঁয়াজ পয়জার দুইই হল | পরিশ্রমের ফল পাওয়া গেল না উলটে অপমানিত হতে হল; (উৎসকাহিনী- এক চোর পিঁয়াজখেতে চুরি করতে গিয়ে খেত মালিকের হাতে ধরা পড়ে; খেতমালিক চোরের জুতা দিয়ে তাকে আচ্ছা করে জুতোপেটা করে; তাতেই চোর এই খেদোক্তি করে); পাঠান্তর- 'পিঁয়াজও গেল পয়জারও গেল'। |
পিঁয়াজ বলে রসুন ভাই তোমার বড় খোসা | নিজের দোষ দেখে না অপরের দো্ষকে কটাক্ষ করে; সমতুল্য- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছনে কেন ছ্যাঁদা?' |
পিঠা খায় পিঠের ফোঁড় গণে না | লোকে আস্কে পিঠে খাওয়ার সময় লক্ষ্য করে না আস্কের গায়ে কটা ফোঁড় আছে লক্ষণায়- যে ব্যক্তি খায় দায় আর দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ফুর্তি ক'রে ঘুরে বেড়ায়; সংসারের কাজে লাগে না কিন্তু ফলভোগ করে কিংবা সংসার কিভাবে চলছে তার খোঁজ নেয় না ভেবেও দেখে না কিভাবে কি হয়।। |
পিঠা খায় মিঠার জোরে/লোভে | যা মিষ্টি তাই উপাদেয় লক্ষণায়- কোন কাজে যদি ভাল প্রাপ্তিযোগ থাকে, তবে সেই কাজে আগে ছোটে অন্যথায় নড়ে না। |
পিঠে বলো মিঠা বলো ভাতের বাড়া নাই | ভাতের সাথে অন্য কোন খাদ্যের তূলনা চলে না; তুলনীয়- 'পিসী বল মাসী বল মার বাড়া নেই' |
পিঠে বেঁধেছি কুলো, কানে দিয়েছি তুলো | নির্বিকার, কোনকিছুতে ভ্রুক্ষেপ নেই; 'মারো আর ধরো...' দ্রষ্টব্য। |
পিড়েয় বসে পেঁড়োর খবর | কোন খবর না রেখে পাড়ার সব খবর বলে যাওয়া; তুলনীয়- 'ঘরে বসে কেল্লা মারা'। |
পিন্ডি পায় না, কেত্তন চায়/গায় | অবস্থার অতিরিক্ত বাসনা; মুল কাজ হয় কিনা সন্দেহ, তার আবার আড়ম্বরের বায়না; অতি বাড়াবাড়ি; আদিখ্যেতা তুলনীয়- 'বাপের বয়সে কলমা নেই গালভর্তি দাড়ি'। |
পিতলের কাটারি কাজে নেই ধার, ঝকমকই সার | পিতলের কাটারি দেখতে খুব সুন্দর কেবল চাকচিক্যই আছে, কিন্তু কাজে একেবারে অচল; তুলনীয়- 'মাকালফল'; 'রাঙামূলা'; 'শিমুলফুল'; হিন্দি পাঠান্তর- 'পিতলকা কটারী কামে নাহি আওলো, উপরহি ঝকমক সার'। |
পিতলের সরা জাঁকে ভরা | উৎকৃষ্টের গুমর; কাজ হোক-বা-না-হোক শব্দ আছে; কাজে কম, কথায় ঝাঁজ বেশি। |
পিতা রক্ষতি কৌমার্যে, ভর্তা রক্ষতি যৌবনে পুত্রশ্চ রক্ষতি স্থবিরে | বাল্যে পিতা, যৌবনে স্বামী এবং বার্ধক্যে পুত্র নারীকে রক্ষা করে। |
পিতাঃ স্বর্গ, পিতাঃ ধর্মঃ পিতা হিঃ পরমন্তপঃ, পিতরি প্রিতিমাপন্ন্যে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা | পিতা স্বর্গসমান; পিতা ধর্মসমান; পিতাই একমাত্র পরমপূজ্য; পিতা খুশী হলে সকল দেবতা প্রসন্ন হন। |
পিপাসার অন্ত নেই | আকাঙ্ক্ষা কামনা বাসনা ইত্যাদির শেষ নেই। |
পিপীলিকার পাখা/ডানা গজায় মরিবার তরে | পিঁপড়া উড়তে থাকলে পাখির খাদ্য হয় লক্ষণায় পতনের আগে বাড়বৃদ্ধি; বাড়াবাড়ি হলে সর্বনাশ হয়; সমতুল্য- 'মরণবাড় বাড়া'; পাঠান্তর- পিপীলিকার পাখা ওঠে মরণের তরে'। |
পি পু ফি শু | কুঁড়ের বাদশা; (উৎসকাহিনী- মাত্রাতিরিক্ত দুই অলস বন্ধু একসাথে এক কুঁড়েঘরে বাস করত; একদিন রাতে তাদের ঘরে আগুন লাগে; প্রথমকুঁড়ের গায়ে আগুনের তাপ লাগায় সে বলে ওঠে পি পু অর্থাৎ 'পিঠ পুড়ছের'; আলসেমির জন্য সে গোটা কথাটা বলতে চাইছিলো না; দ্বিতীয়কুঁড়েটিও আলসেমিতে কম যায় না; সে সংক্ষেপে বলে, 'ফি শু' অর্থাৎ ফিরে শোও তাহলে আর তাপ লাগবে না; এদিকে আগুন ক্রমশঃ বাড়তে থাকায় প্রথমকুঁড়ে ভাবে ভোর হয়ে গেছে; সে প্রশ্ন করে, 'কর রবি জ্বলেরে? চোখ মুদে দ্বিতীয়কুঁড়ে উত্তর দেয়,'কে বা আঁখি মেলেরে'। এই কুঁড়ের বাদশাদ্বয়কেে প্রবাদে পিপুফশু বলে। |
পিয়াদার আবার শ্বশুরবাড়ী | যে কাজে একটুও ফুরসত পায় না তার আমোদপ্রমোদের আশা দুরাশামাত্র। |
পিসী বল মাসী বল মার বাড়া নেই | মায়ের স্নেহের তুলনা হয় না; তুলনীয়- 'পিঠে বলো মিঠা বলো ভাতের বাড়া নাই'। |
পীত্বা কর্দমপানীয়ং ভেক মকমকায়তে | কাদাজল খেয়ে ব্যাঙ গর্বে মকমক করে; নির্গুণীরা বেশি লাফালাফি করে। |
পীর বরাবর নেড়ে, সোনার খুরে এঁড়ে | নীচ-মুসলমান পীরের নামেও দিব্বি কাটলেও তাকে বিশ্বাস করা নেই; ষাঁড়ের খুর সোনায় মুড়ে দেওয়া হলেও তাকে বিশ্বাস করা নেই। |
পীরিত বিনে সুহৃদ নেই | প্রীতি না জন্মালে বন্ধু হয় না; প্রণয়ই সবসময় বন্ধুর কাজ করে; প্রগাঢ় বন্ধুত্বের উৎস হল গভীর প্রণয়। |
পীরিত যেখানে বিচ্ছেদ সেখানে | অবিমিশ্র সুখ হয় না। প্রণয় থাকলে বিচ্ছেদের ভয় থাকে; গোলাপের কাঁটা আছে; পদ্মের কাঁটা আছে; চাঁদের কলঙ্ক আছে ইত্যাদি। |
পীরিতের নৌকা পাহাড়ে চলে | প্রণয় গাঢ় হলে দূরতিক্রম্য বাধাকে অনায়াসে অতিক্রম করা যায়। |
পীরিতি কাঁঠালের আঠা ধরলে পরে ছাড়ে না | জগত প্রেমময়; একবার প্রেমে পড়লে সবাই তার জোয়ারে ভাসে। |
পীরিতি গাছের ফল নয়, যেখান সেখানে মেলে না | খাঁটি প্রেম সহজলভ্য নয়। |
পীরিতের পেত্নী ভালো | ভালোবাসার কাছে কুৎসিতাও সুন্দরী; তুলনীয়- 'যার সাথে যার মজে মন, কিবা হাড়ি কিবা ডোম'। |
পীরের কাছে মামদোবাজী | বেশী বুদ্ধিমানের সঙ্গে চালাকি করা ঠিক নয়; তুলনীয়- 'সাত গেঁয়ের কাছে মামদোবাজী' । |
পীরের সঙ্গে মুখ বাঁকানি | বলীর সঙ্গে টক্কর নেওয়া সঠিক বুদ্ধিঢ় পরিচয় নয়; পীরের খপ্পরে পড়লে গতি কি হবে বলা যায় না। |
পুঁজি নেই তার পাঁজি আছে | কিছু করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই তার ধর্মকর্ম আছে; ভাবে পরিশ্রম করতে হবে না পূজাআর্চা করলে ভগবান পাইয়ে দেবেন। |
পুঁজিপাটা সব ফুরালো | যা কিছু সম্বল ছিল সব গেছে। |
পুঁজি ভেঙে খেতে ভালো ভেটেন গাঙে যেতে ভালো যত কষ্ট উজুতে আর বুঝুতে | মূলধন ভেঙে খাওয়া সহজ; ভাটির সময় নৌকা বাওয়া সহজ; কষ্ট শুরু হয় উজানে নৌকা বাইতে এবং মূলধন ভেঙে খাওয়ার হিসাব দিতে। |
পুঁজির উপর একটি১ | অতি/ফাজিল চালাক। |
পুঁজির উপর একটি২ | ডজনে তেরো; ফাওয়ের হিসাব। |
পুঁটিমাছের প্রাণ | অত্যল্প ক্ষমতাসম্পন্ন। |
পুঁটিমাছের ফরফরানি | অল্পবিদ্যা ও অল্পধনের জন্য অহ্ঙ্কার। |
পুঁড়োর (কৃষিজীবী জাতি) মেয়ে বেগুন চেনে না | জাতে উঠলে নিজের পূর্ব-পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে। |
পুঁথিগত বিদ্যা/ শিক্ষা | অধীতবিদ্যা হৃদয়স্থ না হলোে তাকে পুঁথিগত বিদ্যা বলে; অধীত বিদ্যা পুঁথিতেই থেকে যায় যদি প্রয়োগের সময় সে বিদ্যা মনে না পড়ে বা কাজে না আসে; এমন বিদ্যা নিস্ফল। |
পুড়লো মেয়ে উড়লো ছাই তবে তার গুণ গাই | স্ত্রীলোকের চরিত্র ক্ষণভঙ্গুর; যেকোন সময় তার চরিত্রে কলঙ্ক লেগে যায়; সুতরাং মরে ছাই হওয়া পর্যন্ত যদি সে নিস্কলঙ্ক থাকে তবেই তার গুণগান করা যায়। |
পুড়ে পুড়ে রাঁধুনি ছিঁড়ে ছুঁড়ে কাটুনি | কিছু শিখতে গেলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অনেক ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়। |
পুকুর কাত | নির্লজ্জ মোসাহেবি; (উৎস-পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে এক জমিদারের মনে হল দক্ষিণদিকের তুলনায় উত্তরদিকটা বেশি উঁচু; মোসাহেবের তাৎক্ষণিক উত্তর- 'তাই বটে দক্ষিণদিকে পুকুরটা একটু কাত।) |
পুকুর কেটে নাওয়া | ঘাটে নাইতে গিয়ে অনেক্ষণ দেরী করা, যেন পুকুর কাটার জন্য দেরী হয়েছে। |
পুকুর চুরি | বিরাট আকারের চুরি; বেমালুম আত্মস্মাৎ; (উৎসকাহিনী- কোন প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার কিংবা খনিজপদার্থ উত্তোলনের জন্য সরকারের পূর্তবিভাগ দেশের বিরাট অঞ্চল অধিকার করে এবং তারপর খননকার্য চালায়; যদি অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে কোন জলাশয় পড়ে তবে সেটিও এলাকার সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়; তখন পুকুরের আর কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকে না; এই ঘটনাকেই প্রবাদে ‘পুকুর চুরি’ অভিধা দেওয়া হয়েছে। |
পুকুরের আপদ/শত্রু পানা বাড়ীর আপদ/শত্রু কানা | পানা পুকরের জল ও মাছ নষ্ট করে; তাই সে আপদ; আর কোথাও যেতে পারে না বলে কানা সবসময় ঘরে বসে খিঁটখিঁট করে; তাই সে আপদ। |
পুত না ভূত | দামালছেলেকে সামলানো দায় কখন যে কি করে বসে। |
পুতুল যেমন পুতুল কাচে, যেমনি নাচায় তেমনি নাচে | আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়া; অলক্ষ্যে কাউকে চালানো। |
পুত্রভাগ্যে যশ ভরে; কন্যা ভাগ্যে লক্ষ্মী ঘরে | সুপুত্রে পরিবারের সুনাম বাড়ে; কন্যারত্ন লক্ষ্মীর সমান। |
পুনকে (=১/১৬ভাগ) শত্রু বড় আপদ | বড় শত্রুর সাথে লড়া যায় কিন্তু তুচ্ছ শত্রুর চোরা আক্রমণে নাজেহাল হতে হয়; শত্রু যত ক্ষুদ্রই হোক, তাকে তাচ্ছিল্য করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। |
পুনর্মূষিকো ভব | ‘হিতোপদেশ’ গ্রন্থের একটি গল্পশেষে উক্তি; আবার 'ইঁদুর হও' উক্তির ভাবার্থ- আগের হীনঅবস্থা প্রাপ্ত হও; বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি আগের হীন অবস্থা হয়; |
পুরানো চাল ভাতে বাড়ে পুরানো ঘিয়ে মাথা ছাড়ে | পুরানো জিনিস থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়; ঘরে বয়স্ক্লোক থাকা ভালো; পুরানো চাকর বেশি বিশ্বাসী হয়; (পাঠক কবিগুরুর 'পুরাতন ভৃত্য' কবিতাটি পড়ে নেবেন); পুরানো ঘি, পুরানো তেঁতুল, পুরানো মদ ইত্যাদি খুবই উপকারী। |
পুরানো পাপী | দাগী আসামী; আগে দুষ্ট ছিল; বর্তমানে সাধু হয়েছে, কিন্তু পুরানো অভ্যাস ছাড়তে পারছে না। |
পুরানো বসন ভাতি অবলাজনের জাতি | পুরানো কাপড় এবং স্ত্রীলোক সমান; সতর্কতার সাথে ব্যবহার না করলে পুরানো কাপড় ছিঁড়ে যেতে পারে; স্ত্রীলোকজাতির চরিত্র ক্ষণভঙ্গুর; যেকোন সময় তার চরিত্রে কলঙ্কের ছোঁয়া লাগতে পারে। |
পুরানো বন্ধু ও পুরানো মদ সর্বোৎকৃষ্ট | পুরানো জিনিস সোনার সমান। |
পুরানো বন্ধুর চেয়ে ভাল আয়না হয় না | পুরানো বন্ধুর কাছে সব ভালো জিনিস শেখা যায়। |
পুরুষের দশ দশা, কখনো হাতী কখনো মশা | পুরুষের ভাগ্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়; কখনো সুখ, কখনো বা দুঃখ। |
পুলিপিঠের লেজ গজানো | কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয; সমতুল্য- 'বেগুনের হাড় গজানো'। |
পুস্তকাস্থ চ যা বিদ্যা পরহস্তগতং ধনম্, কার্যকালে সমুৎপন্নে ন সা বিদ্যা ন তদ্ধনম | 'পরহস্তং গতং যা ধনম পুস্তকস্থা চ বিদ্যা ন সা তদ্ধনম'- দ্রষ্টব্য |
পূজায় মন নেই, নৈবিদ্যে চোখ/মন | কাজে মন নেই; খালি প্রাপ্তির দিকে নজর; বামুনের কপট আচারের প্রতি বক্রোক্তি। |
পূজার আগে প্রসাদ | পূজা শেষ না হলে নিবেদিত দ্রব্য প্রসাদ হয় না; সুতরাং ফললাভের আগেই ফলভোগের ইচ্ছা কেউ করলে তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
পূজার সঙ্গে খোঁজ/যোগ নেই, কপালজোড়া ফোঁটা | ভড়ংসর্বস্ব যজমানে বামুন; কাজের সঙ্গে যোগ নেই, অথচ জাহির করায় খামতি নেই। |
পূণ্যস্য ফলমিচ্ছন্তি পূণ্যং নেচ্ছন্তি মানবাঃ | মানুষ পূণ্যকর্মের ফল চায়, কিন্তু পুণ্যকর্ম করতে চায় না; সর্বত্র পাপকর্ম করে বেড়ায়। |
পূণ্যকর্ম পুরস্কারের অপেক্ষায় থাকে না | কর্মই তার পুরস্কার। |
পূবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ; উত্তরে কলা, দক্ষিণে খোলা/মেলা- খনা | বাড়ীর পূর্বদিকে পুকুর থাকবে, পশ্চিমদিকে বাঁশঝাড় থাকবে; উত্তরদিকে কলাবন থাকবে; এবং দক্ষিণদিক খোলা থাকবে। |
পূবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ, দক্ষিণে ছেড়ে উত্তরে বেড়ে বাড়ী করগে পোতা জুড়ে- খনা | পূর্বদিকে পুকুর, পশ্চিমদিকে বাঁশঝাড়, দক্ষিণদিকে ছাড় রেখে বাস্তুজমির সমগ্র উত্তরজুড়ে বসতবাটি গড়তে হবে। |
পূর্ণ আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়, সেই বছরে বন্যা হয়- খনা | সারা আষাঢ় মাস ধরে দক্ষিনা বাতাস বইলে সেই বছর বন্যা হবেই হবে। |
পূর্ণকুম্ভো ন করোতি শব্দম্ | ভরা কলসির আওয়াজ নেই; জ্ঞানীব্যক্তি বিদ্যার বড়াই করে না। |
পূর্ণচন্দ্র মাত্র একরাত্রি স্থায়ী হয় | সুখ ক্ষণকাল স্থায়ী হয়; সমতুল্য সংস্কৃত প্রবাদ- 'তিষ্ঠত্যেকাং নিশাং চন্দ্রঃ শ্রীমান সম্পূর্ণমণ্ডল'; সম্পর্কীত হিন্দি প্রবাদ-'চার দিনকা চাঁদনী ফির আঁধেরি রাত'। |
পূর্ণাঙ্গ মানুষ দুইপ্রকার-যারা মৃত এবং যারা জন্মায় নি | মানুষমাত্রই অপূর্ণাঙ্গ; দোষেগুণে মানুষ; তারা ভুল করে এবং ভুল সংশোধন করে। |
পূর্বাভাসে অর্ধেক বিপদ এড়ানো যায় | আগাম সতর্ক থাকলে বিপদ থেকে দূরে সরে থাকা যায়। |
পৃথিবী যেন একটি মই- কেউ ওপরে চড়ে কেউ নীচে নামে | জগত জুড়ে উত্থান-পতন ভাঙাগড়ের খেলা চলছে। |
পেঁয়াজও গেল পয়জারও হল | পরিশ্রমের কোন ফল পাওয়া গেল না; উপরন্তু অপমানিত হতে হল; (পিঁয়াজ পয়জার দুইই হল দ্রষ্টব্য) |
পেট একখান আর মুখ একখান | বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, ভাবে এক আর বলে এক; পাঠান্তর- 'পেটে এক মুখে এক'। |
পেট কাটলে মশাও মরে, হাতিও মরে | বিপদ ছোট-বড় সবার পক্ষেই সমান বিপদজনক; বিপদ কাউকে রেয়াত করে না। |
পেট খুঁজলে ক অক্ষর পাওয়া যায় না | মহামূর্খ; অক্ষরজ্ঞানশূন্য; পেটে বিদ্যা নেই। |
পেট জ্বলে ভাতে সোনার আংটি হাতে | অভাব লুকোতে বাবুগিরি; ঘরে যার উনুন জ্বলে না বাইরে তার আড়ম্বরের ঘটা; পাঠান্তর- 'পেট জ্বলে ভাতের তরে, সোনার আংটি হাতে পরে'। |
পেট পেট করে খেলি দই, পাছা বাড়ল ছেলে কই? | সন্তানহীনা নারীর প্রতি স্বামীর উক্তি। |
তখনই বলেছিলেম মিনসে বেড়াল পোষ, ইঁদুরেতে ছেলে খেলো আমার কি দোষ! | দোষ কাটাতে স্ত্রীর তির্যক উক্তি। |
পেট ভরলে আনন্দ, ভজ শ্রীরাধাগোবিন্দ | পেট ভরা থাকলে আমোদপ্রমোদ করা যায়; ঈশ্বরকেও ডাকা যায়; কিন্তু পেট খালি থাকলেই যত যন্ত্রণা। |
পেট ভরলে পাথরে গন্ধ | পেট ভরে গেলে- সব খাবারই বিস্বাদ মনে হয়; সব খাবারে দোষত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়; এমনকি খাবারের পাথরের থালাটাও বদগন্ধযুক্ত মনে হয়; পাঠান্তর- 'পেট ভরলে ভাজা মাছ গাছ গাছ/ঘাস ঘাস'; 'পেট ভরলে মণ্ডা তেতো'। |
পেট ভরলে মণ্ডার খোসা ছাড়ায় | আকাঙ্খা মিটে গেলে মূল্যবান জিনিসও হেলাফেলা করে ব্যবহার করে। |
পেট ভরে তো নজর/মন ভরে না | দৃষ্টিক্ষুধা; প্রয়োজন মিটে গেলেও আকাঙ্ক্ষার শেষ নাই। |
পেট ভালো নয় চালভাজা খায় | সহ্য হয় না এমন খাদ্য যদি কেউ খেতে চায় তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
পেট ভালো নয় ডাল রাঁধবো কার তরে১ | যারজন্য রাঁধি সেই যদি মুখ বাঁকায় তবে রেঁধে কি হবে? |
পেট ভালো নয় ডাল রাঁধবো কার তরে২ | যারজন্য কাজ করি তারই পছন্দ না হয় তবে কিসের সুখে কাজ করা? |
পেটে খিদে মুখে লাজ | পুরোমাত্রায় নেবার ইচ্ছা আছে কিন্তু লজ্জায় এগুচ্ছে না। |
পেটে খেলে পিঠে সয় | ফলভোগের সম্ভাবনা থাকলে কষ্ট স্বীকার করা যায়। |
পেটে বিদ্যে গজগজ করছে | লেখাপড়া না-জানা লোকের প্রতি প্রযোজ্য; পাঠান্তর- পেটে ক্ষ ষ্ণ গজগজ করছে। |
পেটে ভাত নেই ঠোঁটে আলতা/ দাঁতে মিশি/ ফোঁটায় দড় | ভেতরে অভাব বাইরে লম্বা চাল। |
পেটের আপদ/শত্রু মুড়ি বাড়ীর আপদ/শত্রু বুড়ি | মুড়ি খেলে পেটের অসুখ হয়; সারাদিন ঘরে বসে বুড়ি সবার কাজের খুঁত ধরে জ্বালাতন করে। |
পেটের আগুনে বেগুন পোড়ে | পেটে প্রচণ্ড খিদে কিন্তু ঘরে খাদ্য নেই। |
পেটের বাছা বাড়ির গাছা | পেটের সন্তান এবং বাড়ীতে বসানো গাছ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়। |
পেটের ভাত চাল হয় | প্রচণ্ড চিন্তা ও ভয়ের কারণ উপস্থিত। |
পেটের ভেতর হাত পা সেঁধোয় | ভয়ঙ্কর কিছু দেখে বা শুনে হতবুদ্ধিকর অবস্থা। |
পেটের ভেতর হাত পা সেঁধোয় | ভয়ঙ্কর কিছু দেখে বা শুনে হতবুদ্ধিকর অবস্থা। |
পেত্নীর হাতে রাঙা শাঁখা | কুৎসিত নারীর আরও কুৎসিত সাজ। |
পৈতে পুড়িয়ে ব্রহ্মচারী/সন্যাসী১ | দণ্ডী সন্যাসীরা পৈতা পুড়িয়ে ফেলে। |
পৈতে পুড়িয়ে ব্রহ্মচারী/সন্যাসী২ | যে বুদ্ধিদোষে সবদিক নষ্ট করে ফেলে। |
পোয়াবারো১ | পাশখেলায় একটি দান; তিন পাশার দানে দানে দুইছক্কার দুই ছয় এবং একছক্কার এক উপুর হয়; এটি পাশখেলায় সর্বোত্তম দান। |
পোয়াবারো২ | চরম সৌভাগ্য। |
পৌষের শীত মোষের গায়, মাঘের শীর বাঘের গায়- খনা | পৌষের শীতে মোষ কাতর হয় কিন্তু বাঘ জড়োসড় থাকে; মাঘের শীতে বাঘও কাতর হয়; মাঘে প্রচণ্ড শীত পড়ে। |
প্রজাপতির নির্বন্ধ | বিধির অলঙ্ঘ্য বিধানে যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার সাথেই বিয়ে হবে। |
প্রতি ডুবেই শামুক/শালুক উঠে না | প্রতিটি উদ্যমই সফল হয় না। |
প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিষেধ ভাল | রোগে ওষুধ যাতে খেতে না হয় তার জন্য নিরোগ থাকার প্রতি উপদেশ; পাঠান্তর- 'চিকিৎসা থেকে প্রতিষেধ ভাল'। |
প্রতীক্ষার পুরস্কার আছে/থাকে | কোন অপেক্ষাই বৃথা যায় না; সমতুল্য- 'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
প্রদীপের কোলেই/নীচেই অন্ধকার১ | পণ্ডিতের মূর্খ সন্তান; তুলনীয়- 'ওঝার ব্যাটা বনগরু'। |
প্রদীপের কোলেই/নীচেই অন্ধকার২ | এমন অনেক বিজ্ঞব্যক্তি আছেন যাঁদের উপদেশে অনেক লোকের চরিত্র সংশোধিত হয় অথচ তাঁরা নিজেরা আপন দোষ সংশোধন করতে পারে না; পাঠান্তর- 'চিরাগের নীচেই অন্ধকার'; 'চিরাগকা নীচে আঁধেরা'। |
প্রয়োজনে খোঁড়াও লাফায় | দরকার পড়লে অকর্মাও কাজে ঝাঁপায়; গরজে অকেজোও কেজো হয়; সমতুল্য- 'গরজ বড় বালাই'; 'গরজে গঙ্গাস্নান'। |
প্রহারেণ ধনঞ্জয় | মারের নাম ধনঞ্জয়; উৎসকাহিনী-এক ব্রাহ্মণের চার জামাই ঘর-জামাই হয়ে বাস করত; দীর্ঘদিন ধরে তাদের আদরযত্ন ক'রে শ্যালকরা আর পারছিল না; তাই তারা নানাভাবে অযত্ন অপমান করে বড় তিন জামাইকে বাড়ীছাড়া করে; ছোট জামাই ধনঞ্জয়কে কোনভাবেই নড়ানো যাচ্ছিল না; শেষে শ্যালকেরা তাকে লাঠিপেটা করে বাড়ীছাড়া করে; এই গল্প থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়।) |
প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ | ষোলবর্ষ পূর্ণ হলে ্পুত্রের সাথে বন্ধুর মত আচরণ কর। |
ফ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ফকিরে ফকিরে ভাই ভাই, ফকিরের রাজত্ব সব ঠাঁই | ফকির সর্বত্র সমাদ্রিত; জাগতিক স্পৃহা না থাকায় পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয় না এবং ঘর, বাড়ী গাছতলা হোক যেখানেই বাস করে সুখে বাস করে এবং তৃপ্তিবোধ করে। |
ফতো নবাব/বাবু | যে ব্যক্তির ভিতরটা ফোঁপরা কিন্তু বাইরে বাবুগিরি করে; অন্তঃসারশূন্য চটকদার ব্যক্তি; সম্পর্কীত প্রবাদ-'ফুটুনির মামা, ভিতরে কোপনি, উপরে জামা'। |
ফতোবাবুর গালগল্প সার | শুধু মুখেই ফুটান মারে কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। |
ফর্সা কাপড়ে মান বাড়ে | পোষাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়; সম্মান পেতে গেলে লামাকাপড়ে একটু চাকচিক্য থাকা দরকার। |
ফর্সা মুখ কালো হৃদয় লুকাতে পারে | দুঃখের বিষয় প্রায়শঃই এটা হয়; বহুলোক আছে যাদের রঙটা সুন্দর কিন্তু অন্তরটা কুৎসিত। |
ফল ও ছায়াযুক্ত গাছকে আশ্রয় করতে হয় | বড়র আশ্রয়ে থাকলে আহার ও বাসস্থান দুইই জোটে। |
ফল খেয়ে জল খায়; যম ডাকে আয় আয় | বৈদ্যের বিধানে ফল খেয়ে জল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষবৎ। |
ফল দিয়ে ভাত খায় | খোশগল্প। |
ফল ধরা | কিছু লোক আছে যাদের যতটুকু কাজ করতে বলা হয় ততটুকু কাজই করে, তার বেশি একটুও করে না; এদের লক্ষ্য করে বিদ্রূপে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; (উৎসকাহিনী- বনবাসকালে রামচন্দ্র প্রতিদিন লক্ষ্মণের হাতে ফল দিয়ে বলতেন, 'ধর'; লক্ষ্মণ ফলটি ধরতেন; রামচন্দ্র কোনদিন বলেন নি বখাও' তিনি খেতেন না।) |
ফল ফল কদলী ফল, সেবায় নারী আর ইন্দ্রজল | ফলের মধ্যে কলা শ্রেষ্ঠ; সেবায় নারী শ্রেষ্ঠ; আর জলের মধ্যে বৃষ্টির জল শ্রেষ্ঠ; তুলনীয়- 'ফলের মধ্যে আম্রফল, সেবায় নারী আর গঙ্গাজল'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ফুলের মধ্যে মালা, বাসনের মধ্যে থালা, কুটুম্বের মধ্যে শালা'। |
ফলেন পরিচীয়তে | একই জমিতে লম্বাদানার সুগন্ধী শালিধান এবং ছোটদানার বুনো শ্যামা ধা্ন- দুইই জন্মে; দুইগাছেরই রূপ এক; সুতরাং ফলেই গাছের পরিচয়; ব্যক্তির পরিচয় তার গুণে; পাঠান্তর- 'বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলেন পরিচীয়তে'। |
ফলের মধ্যে আম্রফল, সেবায় নারী আর গঙ্গাজল | ফলের মধ্যে আম শ্রেষ্ঠ; সেবায় নারী শ্রেষ্ঠ; আর জলের মধ্যে গঙ্গাজল শ্রেষ্ঠ; তুলনীয়- 'ফুলের মধ্যে মালা, বাসনের মধ্যে থালা, কুটুম্বের মধ্যে শালা'; পাঠান্তর- 'ফল ফল কদলী ফল, সেবায় নারী আর ইন্দ্রজল'। |
ফল্গুনদী অন্তঃসলিলা | অনেক চাপাস্বভাবের লোক আচে যারা বাইরে বেশ শান্তশিষ্ট, কিন্তু তাদের মনের মধ্যে কি খেলছে জানা যায় না। |
ফাঁক পেলে সবাই চোর | প্রলোভন এড়ানো খুবই কষ্টকর; চুরি করতে পারে না বলে সবাই সাধু; তুলনীয়- 'সাধু চোর নয় বোঁচকায় ঘটায়'; পাঠান্তর- 'ফাঁক পেলে সাধুও চুরি করে'। |
ফাঁকা আওয়াজ/বুলি | মুখে বড় বড় কথা বলে কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। |
ফাঁকা আওয়াজে/বুলিতে কাজ আদায় | মিষ্টিকথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে কার্যসিদ্ধি। |
ফাঁকা কথায়/বুলিতে পাকা লোক ভোলে না | মিষ্টিকথায় কাজ আদায় হয় না। |
ফাঁকাকলসি বাজে বেশি | গুণহীন ব্যক্তির গর্জন বেশি; সারশূন্য ব্যক্তির বাগাড়ম্বর বেশি; যে ব্যক্তির জ্ঞানবুদ্ধি কম সে জ্ঞানবুদ্ধি ধরে বোঝাতে আগ বাড়িয়ে বেশি কথা বলে; পাঠান্তর- 'ফাঁকাকলসির চোপর বেশ'; 'ফাঁপরা ঢেঁকির শব্দ বড়/বেশি'। |
ফাঁকা ময়দানে গোল করা | বিনা বাধায় কার্যসিদ্ধি; পাওয়া সুযোগ কাজে লাগানো; পাঠান্তর- 'ফাঁকা গোলে বল ঠেলা'। |
ফাঁকি দিলে ফাঁকে পড়তে হয় | কাউকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করলে অন্য কেউ তাকেও ফাঁকে ফেলার চেষ্টা করবে; ধান্ধাবাজী সমর্থনযোগ্য নয়। |
ফাঁদ পেতে ফাঁদে পড়া | পরের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে নিজের ক্ষতি হতে পারে। |
ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দে | বিপদে পড়ে নাজেহাল; তুলনীয়- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'কারে পড়ে গঙ্গাস্নান'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম' ইত্যাদি। |
ফাঁপা কলসির আওয়াজ বড় | 'ফাঁপা কলসির আওয়াজ বড়'- দ্রষ্টব্য |
ফাগুনে আগুন চৈতে মাটি বাঁশ রেখে বাঁশের পিতামহকে কাটি- খনা | ফাল্গুনমাসে সব বাঁশপাতা ঝরে পড়ে; পাতাসব আগুনে পোড়াতে হবে; চৈত্র মাসে বাঁশগাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে; এবং দুবছরের পুরানো বাঁশগাছকে কাটতে হবে; এতেই বাঁশ্বের ফলন ভালো হয়। |
ফাগুনে না রুলে ওল শেষে হবে গণ্ডগোল- খনা | ভাল ফসলের জন্য ফাল্গুন মাসে ওলের চাষ করতে হয়। |
ফাটা-কাঁসর বেসুরে বাজে | মন্দলোকের কথাবার্তা বেয়াড়া ধরণের হয়। |
ফিকিরে ফকির | ফেরেব্বাজ ভণ্ড ফকির, যে নানা ফন্দিফিকিরে অর্থ উপার্জন করে। |
ফুটনির মামা, ভিতরে কপনি উপরে জামা | যে ফটরফটর করে বেড়ায় তার মামার জামার তলায় শুধু কৌপীন আছে; ভাবার্থ- ঘরে খাবার জোটে না বাইরে লম্বাকোঁচা। |
ফুটলো কেশে ফুরালো বার্ষে- খনা | কাশফুল ফুটে গেছে; সুতরাং বর্ষা বিদায় নিয়েছে। |
ফুটোপয়সার মা-বাপ | অত্যন্ত কৃপণ, যে একটা ফুটোপয়সা (বৃটিশ আমলের ছ্যাঁদা এক পয়সা) খরচ করতেও দুবার ভাবে; পাঠান্তর- 'ছেঁদাপয়সার মা-বাপ'। |
ফুল তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয় | কষ্টবিনা কেষ্ট নাই। |
ফুলবাবুর ধরাচূড়াই সার | শুধু সাজেই আড়ম্বর কাজের বেলায় ঢুঁ ঢুঁ। |
ফুলে নাই গন্ধ, চক্ষু থাকতে অন্ধ | যে ফুলে গন্ধ নেই সেই ফুল বৃথা, আর যে চোখ থাকতেও দেখতে পায় না সেই চোখও বৃথা। |
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়১ | সামান্য কষ্টও সহ্য করতে পারে না। |
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়২ | সামান্য কারণে অস্থির হয়ে পড়ে। |
ফুলের মধ্যে মালা, বাসনের মধ্যে থালা, কুটুম্বের মধ্যে শালা | ফুল থেকে ফুলের মালার বেশি আদর; বাসনের মধ্যে থালার বেশি প্রয়োজন এবং কুটুমের মধ্যে শালর বেশি কদর; সম্পর্কীত প্রবাদ-'ফলের মধ্যে আম্রফল, সেবায় নারী আর গঙ্গাজল'। |
ফুলের শোভা ভোমরা, গাইয়ের শোভা চোমরা (চমরী গাই) | ভ্রমর বসলে ফুল সুন্দর দেখায় আর লোম থাকলে গরু সুন্দর দেখায়। |
ফুলের সোহাগে ছোটার (কলগাছের খোসায় তৈরী দড়ি) আদর | ছোটায় মালা গাথা হয় বলেই ফুলের সাথে ছোটাও লোকে গলায় পরে; প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অপরিহার্য সঙ্গী হিসাবে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বীকৃতি জোটে; ফুল সঙ্গে ফুলের সঙ্গী পোকাও শিবের মাথায় চড়ে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মার সোহানে বাপের আদর'। |
ফেন দিয়ে ভাত খায় গল্পে মারে দই মেটেহুঁকোয় তামাক খায় গড়গড়িটা কই১ | কাজে কিছু পারে না মুখে শুধু বড়বড় কথা। |
ফেন দিয়ে ভাত খায় গল্পে মারে দই মেটেহুঁকোয় তামাক খায় গড়গড়িটা কই২ | দৈন্যতা লুকোবার জন্য আসলকথা গোপন রেখে মিথ্যাকথা বলা। |
ফেলো কড়ি মাখ তেল, তুমি কি আমার পর? | কাজ কর; পয়সা নাও; কাজকারবারসম্পর্কে আত্মীয়তার সুযোগ নেই; আনুষ্টানিকসম্পর্কে কোন খাতির চলে না; আত্মীয়তা প্রকাশ করেও প্রতিদান আশা করে। |
ফোঁড়ন দেওয়া | কথার মধ্যে টিপ্পনী কাটা বা মন্তব্য করা; দুইজনের মধ্যে ঝগড়া চলছে সেই অবস্থায় তৃতীয়ব্যক্তি এসে ক্থার চিমটি কাটছে; যার ফলে ঝগড়া বেড়ে যাচ্ছে। |
ফোঁড়ার উপর বিস্ফোটক | কষ্টের উপর কষ্ট। |
ফোঁপর দালালি | অবাঞ্ছিত আযাচিত মধ্যস্থতা যা কেউ পছন্দ করে না। |
ফোঁপরা ঢেঁকির চোপর বেশি | কমজানা লোক বকে বেশি। |
ফোতোনবাব/বাবু | যে ব্যক্তির ভিতরটা ফোঁপরা কিন্তু বাইরে বাবুগিরি করে; অন্তঃসারশূন্য চটকদার ব্যক্তি; সম্পর্কীত প্রবাদ-'ফুটুনির মামা, ভিতরে কোপনি, উপরে জামা'। |
ফোতোবাবুর গালগল্প সার | শুধু মুখেই ফুটুফুটানি করে, কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। |
ব
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
বই খুব ভালো সঙ্গী, উপদেশ দেয় কিন্তু মানতে বাধ্য করে না | প্রকৃতবন্ধুর মত বই নিঃসঙ্গ পাঠককে নিঃশব্দে সঙ্গ দেয়। |
বই হল পকেটে নিয়ে ঘোরা আস্ত একটা ফুলবাগান | ফুলবাগান যেমন অপার রূপ রস ও গন্ধে পরিপূর্ণ থাকে বইও তেমনি সুধারসে পরিপূর্ণ থাকে। |
বইয়ে থাকা বিদ্যা আর পরের হাতে থাকা ধন সমান কথা | প্রয়োজনকালে যে বিদ্যা বা ধন পাওয়া যায় না সেটা কাজের নয়। |
বইয়ের মত বিশ্বস্ত কোন বন্ধু হয় না | একমাত্র বইই প্রকৃতবন্ধুর মত সৎপথে চলার উপদেশ দেয়। |
বউ গিন্নি হলে তার বড় ফরফড়ানি | বউ সংসারের দায়িত্ব পেলে বেশি গিন্নিপনা দেখায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বউ না বোবা, বউ না বাবা'। |
বউ জব্দ কিলে, ঝি জব্দ শিলে, পাড়াপড়শী জব্দ হয় চোখে আঙুল দিলে | মারলে বউ সংযত থাকে; বাটনা বাটতে দিলে মেয়ে সংযত থাকে; আর স্পষ্টকথা বললে পাড়াপড়শী সংযত থাকে। |
বউ না বোবা, বউ না বাবা | নতুন বউ কথা বলে না; পরে সংসারের কর্তৃত্ব হাতে পেলে ঝঙ্কার দিতে সুরু করে। |
বউ ভাঙলে চাড়া শাশুড়ী ভাঙলে খোলা | বউ সরা ভাঙলে গিন্নি পাড়াময় রাষ্ট্র করে বেড়ায়; গিন্নি কলসী ভাঙলে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে নয়; বাড়ীর কর্তা দোষ করলে সেটা দোষের নয় কিন্তু চাকর একটু দোষ করলে সেটা বিরাটমাপের দোষ হয়; পক্ষপাতমূলক' আচরণ; পাঠান্তর- 'বউ ভাঙ্লো সরা গেল পাড়া পাড়া, গিন্নি ভাঙলো নাদা, ও কিছু নয় দাদা'। |
বউয়ের কাছে চৌকিদারের বড়াই১ | থানায় দারোগার গালাগাল খেয়ে ঘর ফিরে চৌকিদার বউয়ের কাছে জাঁক করে; পাঠান্তর- 'মাগের কাছ পেগের বড়াই'; সমতুল্য- 'দরবারে মিলে না ঠাঁই ঘরে ফিয়ে বউ কিলাই'। |
বউয়ের কাছে চৌকিদারের বড়াই২ | বাইরে কেঁচো; ঘরে হম্বিতম্বি। |
বউয়ের রাগ বিড়ালের উপর বিড়ালের রাগ বেড়ার উপর | বিড়াল মাছ খাওয়াতে গিন্নি বউকে তিরস্কার করেন; তাই তার বিড়ালের উপর রাগ; বেড়া থাকায় বিড়াল মাছ খেয়ে পালাতে পারে না, তাই তার বেড়ায় উপর রাগ; ক্রোধ নিম্নগামী। |
বকধার্মিক | যে বাইরে ধার্মিকের আচরণ করে কিন্তু মনে পরের অনিষ্ট চিন্তা করে; (উৎসকাহিনী- বক বিলের ধারে গম্ভীরভাবে বসে থাকে যেন সে কত ধার্মিক; কিন্তু মাছ ভেসে উঠলেই চকিতে ছোঁ মারে।) |
বকধ্যানং | কপট ধ্যান; ধানের ভান। |
বকঃ পরমদারুণঃ | রাম বলেছিলেন বকঃ পরমধার্মিক; রামের উক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে লক্ষণ বলেন, 'কে বললে বক পরমধার্মিক?' বরঞ্চ বক বড়নিষ্ঠুর, কারণ শকুন যেখানে নির্জীবপ্রাণী ভক্ষণ করে, বক সেখানে সজীবপ্রাণী গলাধঃকরণ করে'। |
বকঃ পরমধার্মিকঃ | বকের সমান ধার্মিক হয় না; (উৎসকাহিনী-বনবাসকালে পম্পাসরোবরে বককে খুব সন্তর্পণে পা ফেলে চলতে দেখে রাম লক্ষণকে বলেন যে পাছে পায়ের চাপে জীব হত্যা হয় সেই আশঙ্কায় সে ধীরেধীরে পা ফেলছে; সুতরাং সে পরমধার্মিক।) |
বক বলে প্রাণে মলাম গৃহস্থ বলে আলুনি খেলাম | অসন্তুষ্টব্যক্তিকে কোনভাবেই সন্তুষ্ট করা যায় না। |
বক-বিড়ালে ব্রহ্মজ্ঞানী | বক ও বিড়াল, উভয়ই ভণ্ডধার্মিক; উভয়ই মৎস্যাশী এবং মনের ভাব গোপন রাখে। |
বক হাঁসের দলে শোভা পায় না | বিজ্ঞদের মাঝে অজ্ঞ শোভা পায় না; সুন্দরের মাঝে অসুন্দর শোভা পায় না। |
বকরা অপনে জানসে গয়া, খানেওয়ালা স্বাদহীন পায়া | প্রাণ দিয়ে সেবা করলেও অসন্তুষ্টব্যক্তিকে কখনো তুষ্ট করা যায় না; বাংলা পাঠান্তর- 'ছাগল বলে প্রাণে মলুম, গৃহস্থ বলে আলুনি খেলুম'; 'বক বলে প্রাণে মলাম গৃহস্থ বলে আলুনি খেলাম'। |
বকো আর ঝকো কানে দিয়েছি তুলো, মারো আর ধরো পিঠে বেঁধেছি কুলো | নির্বিকার চিত্তে সবকিছু এড়িয়ে যাওয়া; কোন পাত্তা না দেওয়া; গায়ে না মাখা। |
বক্তের বউ মরে কমবক্তের ঘোড়া মরে | বউ গেলে বউ পাওয়া যায় সঙ্গে গাঁটে পয়সাও আসে- সেই অর্থে সে ভাগ্যবান; ঘোড়া গেলে নতুন ঘোড়া পেতে গাটের পয়সা খরচ হয়- সেই অর্থে সে অভাগা; পাঠান্তর- 'ভাগ্যবানের বউ মরে অভাগার ঘোড়া মরে'। |
বক্তৃতা রূপালী, নীরবতা সোনালী | কথায় কথা বাড়ে, তর্কবিতর্ক হয়, কিন্তু চুপ থাকলে কোন সমস্যার উদ্ভব হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বোবার শত্রু নাই'; পাঠান্তর- বক্তৃতা রজতসম-নিরবতা হিরণময়'। |
বগলে কাস্তে/ছাতা/পুঁথি দেশময় খোঁজে | আপনখেয়ালী; ন্যালাভোলা কাছাছাড়ালোক; কিছুই মনে রাখতে পারে না; নিজেরর কাছে জিনিস রেখে চারিদিকে খুঁজে বেড়ায়; পাঠান্তর- 'কানে কলম ঘরময় খোঁজে'। |
বগলমে ছুরি মুহমে রামনাম | মুখে মিষ্টি বুলি অথচ অন্তর বিষের থলি; সমতুল্য- 'মুখে মধু অন্তরে বিষ'; বাংলা পাঠান্তর- 'বগলে ছুরি মুখে রামনাম'। |
বচন রজতসম, নীরবতা হিরণ্ময় | কথা রূপার সমান এবং নীরবতা সোনার সমান; 'বক্তৃতা রূপালী, নীরবতা সোনালী' দ্রষ্টব্য। |
বচনসর্বস্ব | কথার পণ্ডিত; বাক্যনবাব; কথা বেশি বলে কিন্তু কাজে কিছু না, অষ্টরম্ভা। |
বচনে জগৎ তুষ্ট, বচনে জগৎ রুষ্ট | শব্দ ব্রহ্ম; কথাতেই মানুষ সন্তুষ্ট হয়; আবার কথাতেই মানুষ ক্রুদ্ধ হয়; মিষ্টি কথাতে মানুষ তুষ্ট হয়; কটু কথাতে মানুষ রুষ্ট হয়। |
বচন থেকে কাজের গলা বেশি দরাজ | কথা থেকে কাজের ওজন অনেক বেশি; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজে না'। |
বচনে কো দরিদ্র | কাজে হোক বা না-হোক কথায় কারো অভাব হয় না। |
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো১ | একদিকে আঁটোসাঁটো, অন্যদিকে শিথিলতা; কড়াকড়ি চৌকি আইন; কঠোর ব্যবস্থার শিথিল প্রয়োগ; সমতুল্য- 'সদর খোলা, খিড়কি ফাঁক'। |
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো২ | কাজের আয়োজনের সময় খুব কড়াকড়ি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শিথিলতা। |
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো৩ | ছোটখাট ব্যাপারে নিয়মের বাড়াবাড়ি কিন্তু বড় বিষয়ে নিয়মে উদাসীনতা। |
বজ্রাঘাতে রামনাম | মানুষ বিপদে পড়লে ঈশ্বরের নাম নেয়; সম্পদে যাকে স্মরণ হয় না বিপদে তারই শরণাপন্ন। |
বজ্রাদপি কঠোরাণি মৃদুনি কুসুমাদপি | বজ্রের মত কঠোর, তৃণের মত কোমল; একাধারে দুই প্রকৃতি; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে এই প্রবাদটি বহুল ব্যবহৃত। |
বঞ্চনঞ্চাপমানঞ্চ মতিমান ন প্রকাশয়েৎ | চতুরলোক নিজের ঠকার কথা অতি গোপন রাখে; তুলনীয় 'শেয়ানে ঠকলে বাপকেও বলে না'। |
বটবৃক্ষ নিরস পাথর থেকেও রস আহরণ করে | বটবৃক্ষ হল রসিকচূড়ামণি; রসিক জানে রসের সন্ধান; কাস্তে জানে খেজুর রসের সন্ধান। |
বড় কেউ নয়, বড় কেটাও নয় | বড় অবজ্ঞার বিষয় নয়। |
বড় ক্ষুধায় পাটকেলে কামড় | প্রয়োজনে বেশি হলে যা পাওয়া যায় তাই গ্রহণ করা উচিত। |
বড় গাঁ তার মাঝের পাড়া১ | তির্যক অর্থে- বড় নয় ছোট গ্রাম; বড়র যা সাজে ছোট তা সাজে না; ছোটর প্রতি বক্রোক্তি; তুলনীয়- 'গাঁয়ের নাম একঘরা/তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া; পাঠান্তর- 'বড় ঘর তার ঢেঁকিশাল'; 'বড় বিয়ে তার দুপায়ে আলতা'। |
বড়গাছে কাছি বাঁধা | শক্তিশালীর আশ্রয়ে নিরাপদে থাকা যায়; বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকে; পাঠান্তর- 'বড়ঘাটে নৌকা বাঁধা'। |
বড়গাছেই ঝড় লাগে | সংসারের ঝড়ঝাপটা বাড়ীর কর্তাকেই সামলাতে হয়। |
বড়গাছের তলায় বাস, ডাল ভাঙলেই সর্বনাশ | আশ্রয়দাতা সঙ্কটে পড়লে বা বিমুখ হলে আশ্রিতের বিপদের আশঙ্কা থাকে। |
বড়গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়া | বড় পৃষ্ঠপোষকের আশ্রয়ে নির্ভয়ে থাকা যায়; তুলনীয়- 'বড়গাছে কাছি বাঁধা'। |
বড়ঘরের বড়কথা, গরিবের ছেঁড়াকথা | বড়ঘরে কোন সামান্য ব্যাপার ঘটে না; সামান্য ব্যাপার ঘটলেও অসামান্য হয়ে দাঁড়ায়; গরিবের ঘরের সব ঘটনাই তুচ্ছ। |
বড় জাহাজের গভীর জল চাই | বিরাটকাজের জন্য বিরাটক্ষেত্র চাই, বিরাট আয়োজন চাই। |
বড় নাক তার গোঁফের বাহার | তির্যকে ছোট নাক; যার যা সাজে না তাই তার করতে যাওয়া অনুচিত; সমতুল্য- 'খাঁদা।বোঁচা নাকে গোঁফের বাহার'। |
বড়বড় বানরের বড়বড় পেট, লঙ্কা ডিঙোতে সব মাথা করে হেঁট | দেখতে শুনতেই সব বিরাট ওজনদারব্যক্তি, কাজের বেলায় কোন কাজের নয়; সবার আগে পিছিয়ে যায়। |
বড়বড় বানরের বড়বড় লেজ | নামের চোটে গগন ফাটে; যতটা নাম ততটা কাজের নয়। |
বড় বাড় ভালো নয় | বাড়লেই ঝড় লাগবে এবং পড়তে হবে; তুলনায়- 'অত্যুচ্ছায়ঃ পতনায়'। |
বড়বাড়ী তার ঢেঁকিশাল/ বসার ঘর | তির্যক অর্থে- ছোট্টবাড়ী; বাড়ী তো এতটুকু তার ঢেঁকিশাল বা বসার ঘর আসবে কোথা থেকে? আদিখ্যেতা; সমতুল্য- 'গাঁয়ের নাম একঘরা/তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া'; 'বাড়ীর মধ্যে এক ঘর তার আবার সদর-অন্দর'। |
বড় বিয়ে তার দু'পায়ে আলতা | তির্যক অর্থে- নগণ্য বিয়ে; বড়কাজে যা থাকে ছোটকাজেও তাই করার আশা; সবারই মনে উচ্চাশা থাকে। |
বড়মাছের কাঁটা, ঘনদুধের ফোঁটা | ভালজিনিসের একটুও ভাল; মন্দজিনিসের বেশীও ভালো নয়। |
বড়মাছের কাঁটাও ভালো১ | বড়লোকের- তুচ্ছকথারও দাম আছে। |
বড়মাছের কাঁটাও ভালো২ | বড়লোকের তুচ্ছজিনিস ফেলে দেওয়ার নয়। |
বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে | সম্মান পেতে চাও তবে বিনয়ী হও; বিনীতলোক বেশি সমাদর পায়; পাঠান্তর- 'বড় হবে তবে ছোট হও'। |
বড়র পীরিতি বালির বাঁধ ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণে চাঁদ | বড়লোকের ভালবাসা বালির বাঁধের মত ক্ষণভঙ্গুর, ক্ষণস্থায়ী; কখনো প্রাণ নিয়ে টানাটানি করে কখনো-বা মাথায় তুলে নাচে; সম্পর্কীত প্রবাদ- বড়লোকের খেয়াল, ভাঙাদেয়াল ও খ্যাপাশেয়াল- এই তিনে বিশ্বাস নেই'। |
বড়লোকে কথা কয়, সবে বলে জয় জয় | ভালমন্দ বিচার না করেই সবাই বড়লোকের কথায় বাহবা দেয়; ক্ষমতাশালীর স্থাবকতা; নির্লজ্জ চাটুকারিতা। |
বড়লোকের/ বনেদীঘরের আস্তাকুঁড়ও ভালো | বড়লোকের খেয়ালে বাতিলযোগ্য জিনিসপত্রে অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকে; তুলনীয়- 'বড়মাছের কাঁটাও ভালো'। |
বড়লোকের খেয়াল, ভাঙাদেয়াল ও খ্যাপাশেয়াল- এই তিনে বিশ্বাস নেই | তিনই সমান বিপজ্জনক- প্রথমজন জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলতে পারে; দ্বিতীযটা আচমকা ভেঙে পড়তে পারে; এবং তৃতীয়টা কামড়াতে পারে; তুলনীয়- 'অসতী নারী, ফুটো হাঁড়ি ও ভগ্নপ্রায়বাড়ি পরিত্যাজ্য'। |
বড়লোকের ভুরিভোজ থেকে গরিবের শাকান্ন ভাল | ঐশ্বর্যের দেমাক থেকে অন্তরের টান অনেক বেশি আদরণীয়; সমতুল্য- 'আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন'; 'আদরের ডালভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না'; 'রাজার ভুরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি। |
বড়লোকের খাদ্য আছে, ক্ষিদে নেই; গরিবের ক্ষিদে আছে, খাদ্য নেই | প্রয়োজনের তুলনায় বড়লোকের অনেকবেশি সম্পদ আছে; গরিবলোক নিয়ত অভাবের জ্বালায় মরে; সম্পদের অসম বণ্টনেরবিরুদ্ধে বক্রোক্তি। |
বড় হবে তো ছোট হও | বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে'-দ্রষ্টব্য |
বৎসরের প্রথম ঈশান বয় হবেই বর্ষা খনা কয় | বৈশাখ মাসে ঈশানকোণ থেকে বাতাস বইতে শুরু করলে সে বছর প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা থাকে। |
বত্রিশদিনে মাস ফুরায় | অতিশয় দীর্ঘসূত্রিতা; সমতুল্য- 'আঠারো মাসে বছর ফুরায়'। |
বদনাম হয়েছে তো কি হয়েছে, নাম তো হয়েছে | নাম না থাকার চেয়ে বদনাম থাকা ভাল; তাতে লোকের কাছে পরিচিতি বাড়ে; বক্তার কাছে সম্মানের চেয়ে নামের কদর বেশি; তুলনীয়-'ধন পরিবাদও ভালো'। |
বদরোগ সারানো যায়, বদনাম তাড়ানো যায় না | কলঙ্ক একবার গায়ে লাগলে হাজার চেষ্টাতেও তা দূর হয় না; তুলনীয়- অঙ্গার শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'; 'কয়লা ধুলে ময়লা যায় না'। |
বদসঙ্গ থেকে নিঃসঙ্গতা ভালো | তাতে বদনাম কুড়াবার ভয় থাকে না; সমতুল্য- 'দুষ্টগরু থেকে শূন্যগোয়াল ভাল'; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভাল'। |
বদের আবার সৎসঙ্গ | অনাচারীর কাছে শাসন-অনুশাসন সব মূল্যহীন; সমতুল্য- 'ভূতের আবার গঙ্গাস্নান'। |
বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা | অজ্ঞানীর দলে অল্পজ্ঞানীরা যথেষ্ট সম্মান পায়; উৎসকাহিনী- প্রবাদে উল্লিখিত ‘বনগাঁ’ শব্দটি নিম্নবর্ণলোকের বসবাস করা গ্রামগুলির কথা বলা হয়েছে; গ্রামের নাম একঘরা, তেঘরা, সাতঘরা ইত্যাদি; এই গ্রামগুলিতে নির্দিষ্টসংখ্যক বর্ণহিন্দুর বাস ছিল। উচ্চবর্ণের সুবাদের তারা গ্রামের মোড়ল হয়। প্রবাদে এদের ‘বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা’ বলা হয়েছে। প্রবাদটি অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট; সমতুল্য- আদাড়বনে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল'; 'নিরস্তপাদপদেশে এণ্ডোহপি দ্রূমায়তে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'বাঁশবনে শিয়াল রাজা'। |
বন থেকে বেরুলো টিয়ে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে | হেঁয়ালী- আনারস এবং পাকা লঙ্কা বোঝাতে হেঁয়ালীটি ব্যবহৃত হয়। |
বন পোড়ে সবাই দেখে, মন পোড়ে কেউ না দেখে | অন্তর্জ্বালা অন্তরেই চাপা থাকে; সমতুল্য- 'কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে'। |
বনরক্ষক বাঘ, বাঘরক্ষক বন | টিকে থাকতে গেলে অপরের সাহায্য চাই; পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া বাঁচা যায় না; পাঠান্তর- 'বনরক্ষক শিব, শিবরক্ষক বন'। |
বনের পশু ধরে আনা যায়, তার মন থেকে বন তাড়ানো যায় না | বন্যপশু পোষ মানে না; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'বনের পশু/পাখি পোষ মানে'। |
বনের পশু/পাখি পোষ মানে | প্রেমের বন্ধনে সবাইকেই বাঁধা যায়। |
নের পশু/পাখি পোষ মানে না | বনের পশু ধরে আনা যায়, তার মন থেকে বন তাড়ানো যায় না; প্রকৃতি সহজে পালটায় না। |
বন্দর ক্যা জানে অদরকা (আদা) স্বাদ | নির্গুণ গুণীব্যক্তিকে চেনে না বা গুণের কদর বোঝে না। |
বন্দে মাতরম্ | জননী জন্মভূমি মা তোমাকে বন্দনা করি। |
বন্ধমুখে মাছি ঢোকে না১ | সতর্ক থাকলে ক্ষতি হয় না। |
বন্ধমুখে মাছি ঢোকে না২ | কমকথা বললে ঝামেলা এড়ানো যায়; বেশিকথা না বলাই ভালো। |
বন্ধু চেয়ো না, শত্রু চাও যে তোমার ভুলগুলি ধরিয়ে দেবে | দোষ ধরে দেওয়ার জন্য সমালোচক চাই; সেক্ষেত্রে বন্ধু নয় বিরুদ্ধলোক চাই। |
বন্ধুপ্রাপ্তি থেকে বন্ধু হারানো সহজ | প্রকৃতবন্ধু পাওয়া দুর্লভ; হাজারে একজন মেলে কিনা সন্দেহ। |
বন্ধু হারানো থেকে ঠাট্টায় হেরে যাওয়া ভাল | বন্ধু হারানো খুবই দুঃখজনক ঘটনা; সুকৃতির জোর না থাকলে সুহৃদ পাওয়া যায় না। |
বন্ধুকেও বিশ্বাস করবে না, বন্ধু যদি কখনও ক্রুদ্ধ হয়, সমস্ত গুপ্তকথা প্রকাশ করে দিতে পারে | বচনটি সর্বাংশে সত্য নয়; প্রকৃত বন্ধু কখনো শত্রু হয় না; গোপন কথা বন্ধুর কাছেই বলতে হয়। |
বন্ধুত্ব একবার ছিঁড়লে পৃথিবীর সব সুতো দিয়েও সেলাই হয় না | একবার বিশ্বাস ভাঙ্লে কখনো তা জোড়া লাগে না। |
বন্ধুত্ব ছাতার মত, বৃষ্টি যত প্রবল হয় ছাতার তত বেশি প্রয়োজন হয় | প্রয়োজনে সঙ্গে থাকা দেখেই প্রকৃত বন্ধুত্বের বিচার হয়। |
বন্ধুত্ব ছিন্ন করে অর্থ উপার্জন করতে যেও না বন্ধুত্বস্থাপন অর্থোপার্জনের প্রকৃষ্ট মাধ্যম | হাত ধরলেই উপকার আসে, হাত ছাড়লে নয়। |
বন্ধ্যানারী প্রসববেদনার কষ্ট কি জানে১ | মূর্খ বিদ্যার্জনের মর্ম বুঝতে পারে না। |
বন্ধ্যানারী প্রসববেদনার কষ্ট কি জানে২ | একমাত্র ভুক্তভোগীছাড়া কেউ কষ্টের তীক্ষ্ণতা বুঝতে পারে না; পাঠান্তর- 'বাঁজি জানে না প্রসববেদনা কি'। |
বন্ধ্যানারীর অন্ধপুত্র চাঁদ দেখতে পায় | অবান্তর/অবাস্তব কথা; পাগলের প্রলাপ; নিতান্তই অসম্ভব ঘটনা; অসম্ভব কিছু দেখলে বা শুনলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | জীবমাত্রই স্বাভাবিক অবস্থায় স্ব স্ব স্থানে সুন্দর ও মানানসই হয়; স্বনির্বাচিত স্থান থেকে সরিয়ে তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ব্যাহত করা উচিত নয়। |
বয়সে চুল পাকে, বুদ্ধি পাকে না | বয়সের সাথে বুদ্ধির কার্যকারণ সম্পর্ক নেই; তুলনীয়- 'যার ছয়ে হয় না তার ছিয়াত্তরেও হয় না'; 'যার সাতে হয় না, তার সাতাশীতেও হয় না ইত্যাদি। |
বয়সে নবীন বুদ্ধিতে প্রবীণ | অল্পবয়সেই বিজ্ঞতা অর্জন করেছে এমন। |
বয়সেতে বড়/বিজ্ঞ নয়, বড়/বিজ্ঞ হয় জ্ঞানে | জ্ঞানে বিজ্ঞতা যাচাই হয়, বয়সে নয়; সমতুল্য- 'কিবা জ্যেষ্ঠ কি কনিষ্ঠ, যেই বুঝে সেই শ্রেষ্ঠ'। |
বয়সের গাছপাথর নেই | এত প্রাচীন যে সমকালীন গাছ বা পাথরও খুঁজে পাওয়া যায় না; বয়োবৃদ্ধব্যক্তি |
বয়োগতে কিং বনিতাবিলাস | যৌবন চলে গেলে নারীসঙ্গের আর প্রয়োজন বা সুখ কি? সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বৃদ্ধস্য তরুণীভার্যা বিষম'। |
বরং অবসন্ন হবে তবু হীনতা স্বীকার করবে না | মরবে তবু হীনতা স্বীকার করবে না; সমতুল্য- 'ভাঙবে তবু মচকাবে না'। |
বরং চ পণ্ডিতঃ শত্রু ন চ মূর্খেণ মিত্রতা | পণ্ডিত শত্রু সেও ভাল মূর্খের সাথে বন্ধুত্ব করে লাভ নেই। |
বরং ভিক্ষাশিত্বং ন চ পরধনাস্বাদনসুখম | ভিক্ষা করে খাওয়া সেও ভাল, তবুও পরের ধনে সুখভোগ করা নেই। |
বরং রামশরোগ্রাহ্য ন চ বৈভীষনং বচ | রাবণ বলেছিলেন- বরং রামের বাণের আঘাত সহ্য করা যায়, কিন্তু বিভীষণের বাক্যবাণ সহ্য করা যায় না। |
বরং রামান্ন রাবণাৎ | অধম অপেক্ষা উত্তমের হাতে মৃত্যুও শ্রেয়; (উৎসকাহিনী- সীতাহরণকালে মারীচ কর্তৃক উক্ত বাক্য; মারীচ জানতো যে রাবণের আদেশ না মানলে তার হাতে মৃত্যু লেখা; আবার রাবণের আদেশ মানলে রামের হাতে মৃত্যু অনিবার্য; মারীচ রামের হাতেই মরতে চেয়েছিলো।) |
বরং হি মানিনো মৃত্যুর্ন দৈন্যং স্বজনাগ্রত | মানীলোকের মৃত্যুও ভাল তবুও স্বজনের কাছে দৈন্যতা প্রকাশ করা ভালো নয়। |
বর-কনের দেখা নাই শুক্কুরবারে বিয়ে | অতি আগাম পরিকল্পনা; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল'; গাছে না উঠতেই এককাঁদি; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি। |
বরঞ্চ পণ্ডিতঃ শত্রু ন চ মূর্খেণ মিত্রতা | পণ্ডিত শত্রু হয় সেও ভাল কিন্তু মুর্খের সহিত বন্ধুত্ব কখনো নয়। |
বরমেকো গুণীপুত্রো ন চ মূর্খ শতান্যপি/শতৈরপি | শত মূর্খপুত্রের চেয়ে এক গুণীপুত্র শ্রেয়। |
বরের ঘরের পিসী, কনের ঘরের মাসী | সম্পর্কস্থাপনে বা দ্বন্দ্ব মিমাংসায় উভয়দিকের স্বার্থ দেখে এমনব্যক্তি। |
বর্ণচোরা আম১ | যে ব্যক্তির বয়স বোঝা দায়; বয়সকালে আকৃতিতে বিশেষ তারতম্য হয় না। |
বর্ণচোরা আম২ | উপরে সুন্দর ভিতরে ভীষণ; কপটাচারী; ধোঁকাবাজ; সমতুল্য হিন্দি- 'সুরৎ হারাম'। |
বর্ণচোরা ঠাকুর | শ্রীকৃষ্ণ। |
বর্ণচোরা ঠাকুর এলো রসের নদীয়ায় | গৌরাঙ্গরূপে শ্রীকৃষ্ণের নদীয়ায় আবির্ভাব। |
বর্ণানাং ব্রাহ্মণ গুরু | সকলবর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণ গুরু বা শ্রেষ্ঠ। |
বর্ষণ নেই গর্জন সার | কাজ নেই আড়ম্বর আছে। |
বল বল আপনার বল; জল জল ইন্দ্রের জল | নিজের বলই যথার্থ বল; বৃষ্টির জলই প্রকৃত জল; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'বলং বলং বাহুবলং'। |
বল, বুদ্ধি/বৃদ্ধি, ভরসা- তিন তিরিশে ফরসা | বয়স ত্রিশবছর হলোে অর্থাৎ যৌবন অতিক্রান্ত হলোে এই তিনটি বিষয় ক্রমশঃ কমতে থাকে। |
বলং বলং বাহুবলং | একমাত্র নিজের বাহুবলই পদবাচ্য; অন্যের উপর নির্ভর করলে কাজ প্রায়ই বিফল হয়; বাংলা পাঠান্তর- 'বল বল আপনার বল'। |
বলদ থাকতে করে না চাষ, তার দুঃখ বারো মাস- খনা | ঘরে বলদ থাকতেও যে মায়া করে খাটায় না তার বলদ শুধু ঘরে বস েবসে খায়; তার জমিতে চাষ হয় না; ফলে ঘরে অন্নাভাব থেকে যায়। |
বলতে গেলে জাত থাকে না | মন্দকাজ গোপন থাকে না, প্রকাশ হয়ে পড়ে; মন্দ দাগ হয়ে যায়। |
বলতে জানলে ঠকি না, বসতে জানলে উঠি না | কথা গুছিয়ে বলতে পারলে কেউ সহজে বোকা বানাতে পারবে না; সঠিক স্থান নির্বাচন করে বসলে কেউ উঠাতে পারবে না। |
বলতে/কইতে পারি, সইতে পারি না | এড়া লোক, যে কথা শোনাতে পটু কিন্তু শুনতে নারাজ। |
বল মা তারা দাঁড়াই কোথা | কোথাও আশ্রয় নেই; নিতান্ত অসহায়ের কাতর উক্তি। |
বললাম কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে | ইঙ্গিতে কাউকে দোষী বলে চিহ্নিত করা; আভাসে কিছু বললে কেউ প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করলে বুঝতে হবে সেই দোষী; সমতুল্য- 'গাছ থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ সাত, যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত'। |
বললে মা মার খায়, না বললে বাবা এঁটো খায় | যেখানে কথা বললেও দোষ, না বললেও দোষ; উভয়সঙ্কট; কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা; (উৎসকাহিনী- একব্যক্তি খেতে বসেছিল; তার ভাতে আগে বিড়াল মুখ দিয়েছিল; অন্নাভাবে উপায়ন্তর না দেখে স্ত্রী তাকে ঐ ভাত খেতে দেয়; ভাতে বিড়ালের মুখ দেওয়ার ঘটনাটা ছেলে দেখেছিল; সে ভাবে-ঘটনাটা সে যদি বাবাকে জানায় তবে বাবা মাকে ধরে পেটাবে; আর যদি না জানায় তবে বাবা বিড়ালের এঁটো খাবে।) |
বলা ও করা, সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন বিষয় | বলতে কোন পরিশ্রম লাগে না; করতে গেলে পরিকল্পনা করতে হয়; তাছাড়া বলার কোন খরচ নেই, কিন্তু করার খরচ আছে; পাঠান্তর- 'বলা সহজ, করা কঠিন'। |
বলা কথা ফেরে না | পরিবর্তনের আর কোন সু্যোগ নেই; সমতুল্য- 'ছোঁড়া তীর/ঢিল ফেরে না'; 'ভাত সিদ্ধ হয়ে গেছে'; বিরুদ্ধ প্রবাদ 'মরার আগে পর্যন্ত ফিরে আসার সুযোগ থাকে'। |
বলার মুখ আর চলার পথ কেউ বন্ধ করতে পারে না | কারও বশ্যতা মানুষ স্বীকার করতে চায় না; তুলনীয়- স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে কে বাঁচিতে চায়'। |
বলীর ঘাম, নির্বলীর ঘুম | পরিশ্রম করে কর্মঠব্যক্তি ঘামে; অলস কেবল ঘুমিয়ে কাটায়। |
বলে- আরে মোর তুমি, তোমার জন্য চাল ভিজিয়ে খেয়ে মরি আমি | তুমি আমার বড় আপনার; তোমার জন্য আমার ভাবনার অন্ত নেই; ভেবে ভেবে আমি চাল ভিজিয়ে রাখি আর খাই; যেখানে শুধু মুখে ভালোবাসে, আন্তরিকভাবে নয় সেখানে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
বলে নয় ছলে | যে কাজ শক্তিতে সিদ্ধ হয় না সেই কাজ কৌশলে সিদ্ধ করতে হয়; পাঠান্তর- 'বলে না হয় ছলে'। |
বসতে জানলে উঠতে হয় না | নির্বাচন সঠিক হলে কাজে কোন অসুবিধা হয় না'; পাঠান্তর- 'বসতে জানলে উঠি না'। |
বসতে জায়গা পেলে, শোবার জায়গা মেলে | একটু উপায়/সুযোগ পেলে আরও উপায়/সুযোগ করায়ত্ব হয়। |
বসতে দিলে/পেলে শুতে চায় | আশ্বাস পেলে আবদার করে; একটু পেলে বেশি পেতে চায়; আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই; পাঠান্তর- 'বসতে দিলে খেতে চায়, খেতে দিলে শুতে চায়'। |
বসবি তো ছেলে ধর, উঠবি তো কাঠ কাট্ | একটা না একটা ফরমাশ লেগেই আছে; কাজে ফুরসত নেই। |
বসে খেলে কলসির জল ফুরায় | আয়ের উৎস না থাকলে অল্পদিনেই সঞ্চয় শেষ হয়; পাঠান্তর- 'বসে খেলে কুবেরের ভাণ্ডারও ফুরায়'। |
বসে খেলে কুলোয় না, করে খেলে ফুরোয় না | আয়ের উৎস না থাকলে যতই সম্পদ থাকুক তাতে কুলাবে না; আয়ের উৎস থাকলে সেই ভাবনা থাকে না। |
বসে না থাকি বেগার খাটি/যাই | অকাজে খাটলে আয় না হলেও পরিশ্রমের কারণে শরীর ভালো থাকে। |
বসে বসে লেজ নাড়া | কাজ না করে শুধু কাজের সমালোচন করা। |
বসুধৈব কুটুম্বম্ | বিশ্বই আমাদের ঘর; জগতজোড়া আত্মীয়। |
বহু সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট | নানামতের চাপে আসলকাজ পণ্ড; অনেকলোকের ভিড়ে কাজে নানা গণ্ডগোল শুরু হয়; সমতুল্য- 'সাত পাগলের ঘর খোদায় রক্ষা কর'। |
বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া | ঘটা করে শুরু অল্পেতে শেষ; অধিক আড়ম্বর ও আস্ফালনে কাজ অল্প। |
বাঁকারে বাঁকায় চেনে | মন্দের সাথে মন্দের মিতালি হয়; তুলনীয়- 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই'। |
বাঁচলে কত দেখবো আর, ছুঁচোর/বাঁদরের গলায় চন্দ্রহার | যে ভালো জিনিসের কদর/দাম বোঝে না তাকে ভালো/দামি জিনিস দেওয়া দেখে খেদ; অযোগ্যের হাতে মহার্ঘবস্তু দান দেখে খেদোক্তি; পাঠান্তর- 'বানরের গলায় মুক্তমালা'। |
বাঁচার জন্য খাও, খাওয়ার জন্য বেঁচো না১ | খাওয়াটাই সব নয়; তৃপ্তি পাওয়া চাই। |
বাঁচার জন্য খাও, খাওয়ার জন্য বেঁচো না২ | গোগ্রাসে খাওয়া নেই, তাতে স্বাস্থ্যের হানি হয়। |
বাঁজি জানে না প্রসববেদনা | একমাত্র ভুক্তভোগী জানে জ্বালাযন্ত্রণার স্বরূপ কি। |
বাঁজির পুতের হাঁচির ঘা সয় না | বন্ধ্যানারীর পুত্র হলে সে অত্যন্ত আদরে মানুষ হয়; ফলে সামান্য অসুখ হলেই সে কাবু হয়ে পড়ে। |
বাঁদরকে কলা দেখানো১ | কাউকে লোভ দেখিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করা। |
বাঁদরকে কলা দেখানো২ | কাউকে ফাঁকি দেওয়া। |
বাঁদী পরের পা ধোয়, নিজের ধোয় না | কেউ কেউ আছে যারা পরের জন্য যে কাজ করতে পারে নিজের জন্য সেই কাজ করতে পারে না; পরাধীন বান্দার মানসিকতা আর কি। |
বাঁদী মারতে মঙ্গলবার | কোন নগণ্য কাজ করতে দিনক্ষণ শুভাশুভ বিচারের প্রয়োজন হয় না। |
বাঁধা দেবে না বেচে খাবে উকিল পাঠাবে না নিজে যাবে | কোন জিনিস বাঁধা দিলে যদি ছাড়াবার সম্ভাবনা অল্প থাকে তবে সেই জিনিস বেচে দেওয়াই ভালো; যেখানে নিজে গেলে কার্যসিদ্ধির সম্ভাবনা বেশি সেখানে লোক না পাঠিয়ে নিজে যাওয়াই ভালো। |
বাঁশ কেন ঝাড়ে, আয় আমার ঘাড়ে | অকারণে নিজের ইচ্ছায় বাইরের বিপদ ঘরে ডেকে আনা; সমতুল্য- 'খাল কেটে বেনোজল ঢোকানো'; 'সুখে থাকতে ভূতে কিলায়' ইত্যাদি। |
বাঁশতলাতে বিয়ালো গাই সেইসম্পর্কে মামাতো ভাই | মামাদের বাঁশতলায় ওদের গরু প্রসব করেছে; সেইসম্পর্কে তারা বক্তার মামাতো ভাই; সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন বা অতি দূরসম্পর্কের আত্মীয়তা। |
বাঁশবনে ডোম কানা | উৎকৃষ্টের মেলা থেকে একটি উৎকৃষ্ট বাছা খুব কঠিন কাজ; অভিজ্ঞব্যক্তিও একপ্রকার দ্রব্যের গুণাগুণ নির্ণয়ে অসমর্থ হয়; সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দিশেহারা। |
বাঁশবনে শিয়াল রাজা | অজ্ঞানীর দলে অল্পজ্ঞানীরা যথেষ্ট সম্মান পায়; সমতুল্য- 'আদাড়বনে শিয়াল রাজা'; 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল' ইত্যাদি। |
বাঁশ বাকস্ বামণ/বামন- তিন জমি নেওয়ার যম | একবার কোন জায়গায় বাঁশগাছ পুঁতলে জায়গাজুড়ে বাঁশঝাড়ে পরিণত হয়; বাকস্গাছও সেইভাবেই বাড়ে; ব্রাহ্মণ কোন জায়গায় বসতি করলে আশেপাশের জমিগুলো ব্রহ্মোত্তর করে নেবার চেষ্টা করে। |
বাঁশ মরে ফুলে, মানুষ মরে ভুলে | বাঁশগাছে ফুল এলে বাঁশগাছের মৃত্যু হয়; সেইবছর দেশে মড়ক লাগে; মানুষ ভুলবশতঃ এখানে ওখানে ছোটাছুটি করে মরে; (এখানে উল্লেখ্য যে ৩ থেকে ১৫০ বছর অন্তর একবার বাঁশফুল ফোটে এবং কিছু সম্ভাব্য কারণে সেই বছর বাশঁবনে মড়ক লাগে; বাঁশঝাড় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়।) |
বাঁশ যদি পরে জলে, কি করতে পারে তালে | বাঁশকে জলে পচালে তালকাঠ থেকে বেশি শক্ত হয়। |
বাঁশি হারিয়ে শিঙায় ফুঁ১ | সব হারিয়ে শেষ; মৃত্যুপথযাত্রী। |
বাঁশি হারিয়ে শিঙায় ফুঁ২ | প্রধান-উপায় নষ্ট করে সামান্য উপায়ে নির্ভর করা; তুলনায়-'শিঙে হারিয়ে কাঁকুড়ে ফুঁ'। |
বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়১ | বাঁশ থেকে কঞ্চি শক্ত হয়; আসললোকের চেয়ে তার অনুচরের আস্ফালন বেশি; মালিকের চেয়ে কর্মচারীর দাপাদাপি বেশি; সমতুল্য- 'তালৈয়ের চেয়ে পুতরা ভারি'; 'দারোগার চেয়ে চৌকিদারের হাঁক বেশি'; 'সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি' ইত্যাদি। |
বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়২ | বাপের চেয়ে ছেলে অথবা গুরুর চেয়ে শিষ্য বেশি চতুর বা তীক্ষ্ণ বা দক্ষ হয়। |
বাই হুক অর বা বাই ক্রুক | সৎ বা অসৎ যে কোনো উপায়ে; বাংলা রূপান্তর- 'যেন তেন প্রকারেণ'। |
বাইরে কোঁচার পত্তন ভিতরে ছুঁচার কেত্তন | বাইরে ফুটানি ভিতরে টানাটানি; বাইরে বাবুগিরি ঘরে ভাত জোটে না; সংগতিহীন হয়েও বড়মানুষি ভাব; সমতুল্য- 'আসলে মুষল নেই হেঁসেলে চাঁদোয়া'; 'ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইতে কোঁচার পত্তন'; পাঠান্তর- বাইরে কোঁচা লম্বা ভিতরে অষ্টরম্ভা'; 'বাইরে চিকনচাকন ভেতরে খড়ের গাদন'। |
বাইরে দেখতে সাদা সাজ ভিতরে আছে ঢাকাই কাজ | বাইরে কোন আড়ম্বর নেই, কিন্তু ভিতরে অনেক সৌন্দর্য আছে এমন বিদুষীরমণী। |
বাইরে হাশিখুশি ভিতরে গরলরাশি | মুখে মধু/মিষ্টি, অন্তরে বিষ; তুলনীয়- 'বিষকুম্ভ পয়োমুম'। |
বাইরের জামাই কৃষ্ণকান্ত/মধুসূদন ঘরের জামাই কেষ্টো/মেধো | ঘরজামাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা; ঘরজামাইয়ের আদর/সম্মান নেই। |
বাউলের ঘরের গরু১ | বাউলগৃহিণী। |
বাউলের ঘরের গরু২ | বাউলরা একপ্রকার উদাসীন সম্প্রদায়; ঘরকন্না করার দিকে তারা বিশেষ মন দেয় না; সুতরাং তাদেরপক্ষে গরু পালা অসম্ভব। |
বাকপটু আর নির্বোধের সাথে তর্কে যেও না | বাকপটুর কাছে তর্ক করে হারবে; নির্বোধের সাথে তর্ক করে মনে কষ্ট পাবে। |
বাক্যেতে পর্বত, কার্যে তূলাকার | যখন বলে বেশ ভারিভারি কথা বলে; যখন করে তখন অল্পমাত্রায় কাজ করে; তুলনায়- 'মুখে মারিতং জগৎ'। |
বাগানে গাছার সাথে আগাছাও থাকে | কোনকিছুই অবিমিশ্র শুদ্ধ হয় না। |
বাঘ নেই বাঘিনীর উৎপাত | পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের লাফালাফি। |
বাঘ পালাল বিড়াল এল, শিকার করতে হাতি | অর্বাচীনের বাহাদুরি; সমতুল্য- 'পাঠান মোগল হদ্দ হলে ফারসি পড়ে তাঁতি'। |
বাঘ-ভালুকের রাজ্যে থাকি, মনের কথা মনেই রাখি | প্রবলের ভয়ে জড়সড়। |
বাঘে গরুতে একঘাটে জল খায় | প্রবলশাসনের দাপটে বিবাদ ভুলে মিলেমিশে একসাথে থাকে। |
বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা | বাঘের দাঁতে ও নখে এমন বিষ আছে যে একবার শরীর ছুঁলে নানাস্থানে ঘা দেখা দেয় লক্ষণায়- বিপজ্জনক বিষয়ের সংস্পর্শ এড়িয়ে থাকার উপদেশ; বিপদে একবার জড়িয়ে গেলে নানাদিক থেকে আরও বিপদ এসে জড়িয়ে ধরে। |
বাঘে বাঘে যুদ্ধ হয় নলখাগড়ার প্রাণ যায় | দুই প্রবল বলশালীর লড়াইয়ে মধ্যে পড়লে সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়ে টানাটানি হয়; তুলনীয়- 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, সাধারণের প্রাণ যায়'; পাঠান্তর- 'বাঘে মোষে যুদ্ধ হয় নলখাগড়ার প্রাণ যায়'। |
বাঘের আড়ি | যে প্রবল শত্রুতা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন; কেউ যদি শত্রুতা ত্যাগ না করে প্রতিনিয়ত অনিষ্ট করে যেতে থাকে তখন এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়। |
বাঘের আবার গোবধ | যারা দুস্কর্ম করে বেড়ায়, তাদের কোন পাপবোধ নেই। |
বাঘের খাঁচায় না ঢুকলে বাঘের বাচ্চা পাওয়া যায় না | কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়, বিনা পরিশ্রমে কিছু হয় না; সমতুল্য- 'জলে না-নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার'; 'হাঁটিতে শিখে না কেহ না-খেয়ে আছাড়'। |
বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা | ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে শক্তিশালী স্বজনের ঘরে দুর্বলআত্মীয়ের গোপন আস্তানা; (উৎসকাহিনী- ঘোগ বুনো কুকুর হতে পারে, হায়েনাজাতীয় প্রাণীও হতে পারে; ঘোগের প্রধান খাদ্য বাঘের বাচ্চা; ঘোগ বাঘের বাসার কাছাকাছি কোনস্থানে বাসা বাঁধে এবং সুযোগ বুঝে বাঘের বাচ্চা চুরি করে; এই কারণে বাঘের সাথে ঘোঘের ভীষণ শত্রুতা; ঘোগ বাঘের তুলনায় কম শক্তিধর; ধরা পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও খাদ্যের লোভে বাঘের বাসার কাছাকাছি বাসা বাঁধে; এই ধারণা থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি; কোন দুর্বল সবলের মুখোমুখি হওয়ার দুঃসাহস দেখালে বলা হয়- বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা পেয়েছো? |
বাঘের আবার চক্ষুলজ্জা | কপটলজ্জা দেখানোর জন্য নির্লজ্জের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি; (উৎসকাহিনী- সুন্দরবনের বাঘের আচরণ লক্ষ্য করে দেখা গেছে বাঘ সবসময় পিছন থেকে তার শিকারের ওপর লাফিয়ে পড়ে; বাঘের সামনে পড়ে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকলে বাঘ আক্রমণ করে না; চোখ না সরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে; বাঘের এই আস্বাভাবিক আচরণকে লক্ষ্য করেই সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারীরা পিছনদিকে মুখোশ লাগিয়ে বনে প্রবেশ করে; বাঘের এই আচরণকে চক্ষুলজ্জা মনে করে প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে; প্রবাদটির প্রতিপাদ্য হল যেকোন মন্দকাজ করতে গেলে একটু চক্ষুলজ্জা থাকা প্রয়োজন, যেমন কোন ব্যক্তিকে আমরা সরাসরি নির্লজ্জ না বলে একটু ঘুরিয়ে বলি- 'বাঘেরও চক্ষুলজ্জা আছে, তোমার তাও নেই'।) |
বাঘের দেখা সাপের লেখা | বাঘের নজরে পড়লে মৃত্যু অবধারিত; অদৃষ্টে লেখা থাকলে সাপের কামড়ে মৃত্যু অনিবার্য। |
বাঘের পাছায় ঘা | নিজের দোষে সামান্য বিপদকে বড় করে তোলা (উৎসকাহিনী- দেখা গেছে পাছায় ঘা হলোে বাঘ সেটা গাছে ঘষে ঘষে বড় করে তোলে। |
বাঘের পিছনে ফেউ | ফেউ হল ফেউফেউ করে ডাকা খেঁকশিয়াল; বাঘ লোকালয়ে ঢুকলে খেঁকশিয়াল বাঘের পিছু নেয় এবং তাকে উত্যক্ত করে মারে; বাঘ ফেউয়ের নাগাল পায় না; ফলে সে বাঘের কিছু করতে পারে না; এই লক্ষণায় পিছনে লেগে কাউকে প্রতিনিয়ত উত্যক্ত করা হলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
বাঘের ভয় যেখানে সন্ধ্যে হয় সেখানে | যার ভয়ে মরি সেই এসে মূর্তিমান হাজির; ভয় বেশি পেলে ভয় এসে জড়িয়ে ধরে। |
বাঘের মাসী | বিড়ালকে বাঘের মাসী বলে; (উৎসকাহিনী- গল্পে আছে বিড়াল বাঘের কাছ থেকে 'আসি' বলে চলে এসেছিল; আর ফিরে যায় নি; সেইকারণে কেউ ফিরে আসতে দেরী করলে এই প্রবাদ বলা হয়।) |
বাঘের যোগ্য বাঘিনী | ভীষণপ্রকৃতির পুরুষের ভীষণপ্রকৃতির স্ত্রী; তুলনীয়- 'খাণ্ডারের যোগ্য খাণ্ডারনী'। |
বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো | বোকা বানানোর চেষ্টা (উৎসকাহিনী- ব্রিটিশ আমলে বাঙ্লায় শুধু কলকাতাকেই হাইকোর্ট ছিল; কোলকাতা বেড়াতে আসা কোন পূর্ববঙ্গবাসী হাইকোর্টভবন দেখতে চাইলে তাকে বহুতল উঁচু কোন বাড়ী দেখিয়ে দিয়ে বলা হত- এই তো হাইকোর্ট।) |
বাঙালীর ইজ্জত যাওয়ার আগে প্রেস্টিজ যায়- রবীন্দ্রনাথ | বাঙালীর ইংরাজীয়ানারপ্রতি প্রবলপ্রীতির বিরুদ্ধে কবিগুরুর বিদ্রুপোক্তি। |
বাছা শাকে পোকা বেশী | বেশী খুঁতখুঁতানি করলে ভালো কিছু আশা করা যায়না। |
বাছার আমার এত বাড়ি ছ-আনার কাপড়ে ন-আনার পাড়ি | ছেলের এত বাড়াবাড়ি যে ছ-আনার কাপড়ে ন-আনার পাড় বসায়; মূলবিষয় থেকে আনুসঙ্গিক বিষয়ে খরচ অনেক বেশি; কাজ থেকে আড়ম্বর বেশি। |
বাজাতে বাজাতে বায়েন, গাইতে গাইয়ে গায়েন | দক্ষতা অর্জনে নিবিড় চর্চা লাগে; দক্ষতা অভ্যাস ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। |
বাজারে আগুন লাগলে পীরের ঘর মানে না | আগুনের বাছবিচার নেই; অসতের পাল্লায় পড়লে সাধুরও শাস্তি হয়। |
বাজারে বাজার বসে | পণ্য বিক্রি করতে হলে বাজারে গিয়ে বসতে হয়। |
বাজারে যাচ্ছেন? না, বাজারে যাচ্ছি; ও আমি ভাবলাম বাজারে যাচ্ছেন | দুই বদ্ধকালার সম্ভাষণালাপ। |
বাজিভোর | খেলার হারজিত হয়ে যাওয়া। |
বাজিমাত | ঈস্পিত কার্যে সিদ্ধিলাভ। |
বাড়ন্তরা বেশি খায় | বাড়ার মুখে বেশি খিদে হয়। |
বাড়া ভাতে ছাই১ | প্রস্তুত অন্ন গ্রহণকালে বিনষ্ট। |
বাড়া ভাতে ছাই২ | সফল হওয়ার মুখে কাজ বিনষ্ট; লাভের মুখে ক্ষতি; সিদ্ধকাজ ভোগের সময় বিনষ্ট; তুলনীয়- 'পাকা ধানে মই'। |
বাড়া ভাতে নেড়া গিন্নী | কিছু না করে সিদ্ধকাজের ফলভোগে বা সাফল্যে প্রশংসালাভে উদ্যত বা উন্মুখ নারী। |
বাড়া ভাতে শত্রু বাড়ে | বাড়া ভাত ফেলে রাখতে নেই; অল্পসময়ের মধ্যে নানাবিঘ্ন এসে উপস্থিত হতে পারে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ঠোঁট ও পেয়ালার মাঝে বিস্তর ফারাক থাকে'। |
বাড়ীতে পায় না শাক সজিনা হাঁক দিয়ে বলে ঘি আন না | হাভাতের বাবুগিরি; নিজের বাড়িতে শাকভাত জোটে না পরের বাড়ীতে গিয়ে দই-মিষ্টি খেতে চায়। |
বাড়ীর আপদ/শত্রু কানা পুকুরের আপদ/শত্রু পানা | কোথাও যেতে পারে না বলে কানা সবসময় ঘরে বসে খিঁটখিঁট করে বলে সে আপদ বা শত্রু; পানাপুকরের জল ও মাছ নষ্ট করে বলে সে আপদ বা শত্রু। |
বাড়ীর আপদ/শত্রু বুড়ি পেটের আপদ/শত্রু মুড়ি | বাড়ীর বুড়িকে সবাই আপদ মনে করে কেননা সে সবসময় খিঁটখিঁট করে; আর মুড়ি খেলে পেটের গোলমাল লেগেই থাকে। |
বাড়ীর মধ্যে এক ঘর, তার আবার অন্দরমহল/সদর-অন্দর১ | আদিখ্যেতা, বাড়াবাড়ি; বড়র যা সাজে ছোটর তা সাজে না; সমতুল্য- 'বড় বাড়ী তার আবার বসার ঘর'। |
বাড়ীর মধ্যে এক ঘর, তার আবার অন্দরমহল/সদর-অন্দর২ | কষ্ট করে গুছিয়ে নেওয়া দোষণীয় নয়; একমাত্র সম্বলকে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। |
বাড়ীর কাছে কামার, দা গড়ে দে আমার | কাজের লোককে হাতের কাছে পেলে সব কাজ করিয়ে নেবার ইচ্ছা হয়; পাঠান্তর- 'পথে পেলাম কামার দা গড়ে দে আমার'। |
বাড়ির গরু উঠানের ঘাস খায় না1 | ঘরের জিনিসের কদর নেই; তুলনীয় 'ঘরককা মুরগী দাল বরাবর'। |
বাড়ির গরু উঠানের ঘাস খায় না২ | প্রতিবেশীর জিনিসের প্রশংসা করা; তুলনীয়- 'পরের গাছের আমটা মিষ্টি'। |
বাড়ির গাছা পেটের বাছা | বাড়ীতে তরিতকারীর গাছ আর ঘরের ছেলে কাছে থাকলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। |
বাণিজ্য করতে গেল দরিয়ার কূল কেউ করলো দুনোলাভ কেউ হারালো মূল | একই কাজের ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ লাভবান হয় আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী | ব্যবসায়বাণিজ্য লক্ষ্মী বাস করেন; ব্যবসায়বাণিজ্য থেকে লক্ষ্মীলাভ হয় অর্থাৎ প্রচুর অর্থাগম হয়; ব্যবসায়বাণিজ্যই লক্ষীলাভের প্রকৃষ্ট উপায়; বাংলা পাঠান্তর- 'বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস'। |
বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী; তদর্ধং কৃষি-কর্মণি, তদর্ধং রাজসেবায়াৎ ভিক্ষায়াৎ নৈব নৈব চ | ব্যবসায়-বাণিজ্য থেকে লক্ষ্মী লাভ হয়; চাষবাস থেকে তার অর্ধেক আয় হয়; চাকরী করে তারও অর্ধেক আয় হয়; ভিক্ষাবৃত্তি থেকে কোন আয় নেই। |
বাত কহো তো বাত বনে | কথা বললে বার্তার সৃষ্টি হয়; কথা বললে ভাবের আদান-প্রদান হয়; ঘরের কোণে আবদ্ধ থাকার কোন অর্থ হয় না. |
বাতাস আগুন জ্বালায়, প্রদীপ নেভায় | স্বভাব্বৈশিষ্ট্যে মানুষ সবলকে সাহায্য করে দুর্বলকে আঘাত করে; তুলনীয়- 'শক্তের ভক্ত নরমের যম'; হিন্দি পাঠান্তর- পবন জগাওতে আগকো দীপহিঁ দেত বুজায'। |
বাতাসে ফাঁদ পাতা১ | অসম্ভব কাজ; অবাস্তব কল্পনা; বুজরুকি। |
বাতাসে ফাঁদ পাতা২ | চতুরের আশ্চর্যজনক কার্যকলাপকে বাতাসে ফাঁদ পাতা বলে; যা হওয়া অসম্ভব তাই করে দেখানো। |
বাতাসে ফাঁদ পেতে চাঁদ ধরা | অসম্ভব কাজ করে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করে এই প্রবাদ বলা হয়। |
বাতাসের সঙ্গে ঝগড়া/লড়াই করা১ | নানা অজুহাত দেখিয়ে কাল্পনিক লোকের সাথে ঝগড়া করা; সমতুল্য- 'ছায়ার সাথে কুস্তি করা'। |
বাতাসের সঙ্গে ঝগড়া/লড়াই করা২ | পণ্ডশ্রম; বৃথা শক্তিক্ষয়। |
বাতাসের সঙ্গে ঝগড়া/লড়াই করা৩ | বিনাকারণে ঝগড়া করা |
বাতির নীচেই অন্ধকার১ | পণ্ডিতের মূর্খ সন্তান; তুলনীয়- 'ওঝার ব্যাটা বনগরু'। |
বাতির নীচেই অন্ধকার২ | কিছু বিজ্ঞব্যক্তি আছেন যাঁরা মানুষকে চরিত্র সংশোধন করতে উপদেশ দেন অথচ নিজেরাই সংশোধিত হন না; পাঠান্তর- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। |
বাদ থেকে প্রতিবাদ, প্রতিবাদ থেকে সম্বাদ | তর্কবিতর্ক, সূক্ষ্মবিচার বিশ্লেষণের পর সঠিক সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া। |
বাদ দিয়ে বর্ষা খনার বচন ফর্সা, শনি সাত মঙ্গল তিন এর সব দিন দিন- খনা | বর্ষাকাল বাদ দিয়ে অন্য সময়ে বৃষ্টি- শনিবারে শুরু হলে সাতদিন, মঙ্গলবারে শুরু হলে তিনদিন ধরে চলে; বাকী সবদিন একদিনমাত্র স্থায়ী হয়। |
বাদল, বামুন, বান দক্ষিণা পেলে যান- খনা | দক্ষিণা বাতাস বইলে বাদল থামে; দক্ষিণা পেলে যজমানী বামুন প্রস্থান করে; আর দক্ষিণদিকে পথ পেলে (বাংলায়) বন্যা হ্রাস পায়। |
বাদুরচোষা তাল | কোন জিনিস একেবারে নিরস করে ত্যাগ করা। |
বাধা মানে না গাধা | যে ভালমন্দ শুভাশুভ বিচার করে না সে নির্বোধ গাধা ছাড়া আর কিছু নয়। |
বানরের গলায় মুক্তামালা১ | অপাত্রে মহার্ঘবস্তু দান; সমতুল্য- 'অস্থানে তুলসী অপাত্রে রূপসী'। |
বানরের গলায় মুক্তামালা২ | অজ্ঞের কাছে গুণের কদর নেই; বানর গলার মালা ছিঁড়ে ফেলে; দামী জিনিস পেয়ে অজ্ঞতাবশতঃ নষ্ট করা। |
বানরের সম্পত্তি গালে১ | বানর যা পায় তাই গালে দেয় লক্ষণায় যে সঞ্চয় করে না, যা আয় করে সব খেয়ে ফেলে; সমতুল্য- 'কপোতবৃত্তি'। |
বানরের হাতে খন্তা | হাতে কোন অস্ত্র পেলে যে সব কিছু কাটতে থাকে, তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
বানুরে বুদ্ধি | বানরের মাথায় সবসময় দুর্বুদ্ধি খেলে; বুদ্ধিদোষে যে ব্যক্তি নিজেকে বিপন্ন করে, তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
বানের আগে জেলেডিঙি | বানের মুখে পড়লে জেলেডিঙি অসহায়ভাবে ভেসে যায় লক্ষণায় প্রবল বাধার সামনে পড়লে সামান্য প্রতিকার টেঁকে না। |
বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া, কুছ না হোবে তো থোড়া থোড়া | সব না হলেও বাবার কিছু গুণ ছেলের মধ্যে এবং সিপাহীর কিছু চালচলন ঘোড়ার মধ্যে বর্তায়; সমতুল্য- 'বাপগুণে বেটা সিপাহিগুণে ঘোড়া'; 'যেমন বাপ তেমন বেটা'। |
বাপ খেদানো মায় তাড়ানো ছেলে | উচ্ছন্নে যাওয়া কুলাঙ্গার ছেলে। |
বাপ গুণে পো মা গুণে ঝি | বাপের গুণ ছেলে এবং মায়ের গুণ মেয়ে পায়; পাঠান্তর- বাপের গুণে পো, মায়ের গুণে ঝি'। |
বাপ জানে না সুরতি (জুয়া) খেলা, বেটা তীরন্দাজ | ছেলে বাপ থেকে বেশি বাহাদুর বা বাপের চেয়ে ছেলে বেশি বাহাদুরি দেখাতে যাওয়া। |
বাপ-মা মরা দায় | পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হিন্দুঘরের বাবা বা মা-হারা ছেলে সমাজের কাছে দায়গ্রস্ত থাকে, যাকে পিতৃদায় বা মাতৃদায় বলে; এই ভাবার্থে-কোনকাজে লোকের কাছে হীনতা স্বীকার করাকে যেন 'বাপ মা মরা দায়' বলে। |
বাপ ভালা না ভাইয়া ভাইয়া, সবসে অচ্ছা রূপাইয়া | টাকা থাকলে কি না হয়; টাকা টাকা বল ভাই, টাকার মত জিনিস নাই, টাকাবিনে সংসারেতে সব যন্ত্রণা; তুলনীয়- 'কড়ি পেলে কাঠের ঘোড়া হাঁ করে'। |
বাপের উপরোধে সৎমায়ের পায়ে গড় | সাধারণতঃ সৎমারা সন্তানের মঙ্গলাকাঙ্খী হয় না লক্ষণায় বাপ বলল তাই সৎমাকে প্রণাম; তুলনীয় 'উপরোধে ঢেঁকি গেলা'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম'। |
বাপেরও বাপ আছে | কেউই অসীম ক্ষমতাশালী নয়; প্রবল থাকলে প্রবলতর আছে; সমতুল্য- 'তিমি থাকলে তিমিঙ্গিল আছে, তিমিঙ্গিল থাকলে তিমিঙ্গিলগিল আছে'; 'ননদেরও ননদ আছে'; 'শমনদমন রাবণরাজা রাবণদমন রাম' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'বাবারও বাবা আছে'। |
বাপের গাঁতি না ধাপের গাঁতি যে রেখে খেতে পারে তারই গাঁতি | পৈত্রিক সম্পত্তি সম্পত্তিই নয়; পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তিই হল আসল সম্পত্তি; সেই সম্পত্তি পরিমিত খরচ করে যে সঞ্চয় করতে পারে সেই সম্পত্তি ভোগ করতে পারে। |
বাপের চেয়ে ছেলে কড়া | ছেলে বাবার চেয়ে বেশি বাহাদুর; সমতুল্য- 'আসলের চেয়ে নকল ভারি'; 'তালৈয়ের চেয়ে তালৈয়ের পুতরা ভারি'; 'বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়' ইত্যাদি। |
বাপের জন্মে/বয়সে কলমা নেই; গালভর্তি দাড়ি | বাপ-দাদারা কলমা পড়েনি, ছেলের মোল্লা সাজার ইচ্ছা; বাপ-দাদা থেকে বেশি গুণী জাহির করার প্রবল চেষ্টা। |
বাপের জন্মে চড়িনি ডুলি ভেঙে গেল মোর পাছার খুলি | অনভ্যাসবশতঃ ভাল জিনিস ব্যবহারে অপারগ; সমতুল্য- 'অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে'। |
বাপের জন্মে নেইকো গাই, চালুনি নিয়ে দুইতে যাই | নতুন জিনিস হাতে পেয়ে ব্যবহার না জানায় ব্যস্তসমস্ত হয়ে পড়া। |
বাপের জন্মে নেইকো চাষ কার ধান কাটতে যাস? | অনধিকার চর্চা করা। |
বাপের জন্মে নেইকো চাষ, ধানকে বলে দূর্বাঘাস | অতি ব্যবহার্য জিনিস প্রথম দেখে চিনতে না পারা। |
বাপের বাড়ীর ঝি পান্তাভাতে ঘি | স্বামীর ঘরই বয়স্থা মেয়েদের গৌরব বা সম্মানের স্থান; বয়স্থা মেয়েদের বাপের বাড়ী পান্তাভাতে ঘিয়ের মতই বিস্বাদ। |
বাপের বোন পিসি ভাতকাপড় দিয়ে পুষি মায়ের বোন মাসি কাদায় ফেলে ঠাসি | অতীতে কৌলিন্যপ্রথা থাকার জন্য বহু মহিলা শ্বশুরঘর না করে বেশিরভাগ সময় বাপের বাড়িতে থাকত; বহুবিবাহিতা কুলীনের বউ হিসাবে বাপের বাড়িতে তার যথেষ্ট আদরযত্ন খাতির ও প্রতিপত্তি ছিল; যৌথপরিবার ভেঙে যাওয়ার পর পিসিদের সেই রমরমা আর নেই; বর্তমানের এককপরিবারে মার সোহাগে মাসিরই আদর বেশি। |
বাবাজীকি বাবাজী, তরকারীকি তরকারী | বেগুনের বোঁটা টিকির মত দেখতে হওয়ায় সেটা বৈষ্ণবও হয় আবার তরকারীর মত সব্জীও হয়; এই ভাবার্থে- যাকে দিয়ে একসাথে দুটো কাজ হয় বা করা যায়। |
বাবা পেটে, মা হাঁটে, আমি তখন বছর আটে | বাবা তখন মায়ের পেটে ছিলেন; মা সবে হাঁটতে শিখেছেন; আমার বয়স তখন আট; আগড়মবাগড়ম বক্তব্য; উদ্ভট বা কৌতুককর কিছু দেখলে সেক্ষেত্রে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'বাবা পেটে, মা হাটে, আমি তখন বছর আটে'। |
বাবা পেটে, মা হাটে, আমি তখন বছর আটে | যখন আমার বয়স আট তখন বাবা আমায় পেটাতো আর মা বাজারহাট করতে যেত বা হাটে বাজারে পসরা বেচতে যেত। |
বাবু পান না, তাই খান না | বাবু ঘি খান না; কেন খান না? পান না তাই খান না; তুলনীয়- 'অলভ্য জিনিস মন্দ'; 'আঙুর ফল টক'। |
বাবু মরেন শীতে আর ভাতে | গরমকালে অল্প জামাকাপড়ে ফুঁটোবাবুর বাবুগিরি চলে যায়, কিন্তু শীতকালে মূল্যবান গরম জামাকাপড়ের অভাবে তিনি মারা পড়েন; অর্থের অভাবে সারাবছর তিনি শাকপাতা খেয়েও তিনি মৃতপ্রায়। অভাগাবাবুর প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
বাবু যত বলে, পারিষদ বলে তার শতগুণ | মোসাহেব বেশি তড়পানি; তুলনায়- বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। |
বামন (বেঁটেলোক) হয়ে চাঁদ ধরতে চায় | দুর্লভবস্তুর প্রতি অযোগ্যের লোভ; সম্পর্কীত প্রবাদ-'আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয়'; 'ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয়'; 'মশা এসে হাতীর ওজন জানতে চায়' ইত্যাদি। |
বামণ/বামন/বামুন গেল ঘর তো লাঙ্গল তুলে ধর | নজরদারির অভাবে কাজে ফাঁকি; মালিকের অনুপস্থিতিতে কর্মচারীদের কাজে অবহেলা করে; তুলনায়- 'বিড়াল দূরে/সরে গেলে ইঁদুরেরা খেলে বেড়ায়'। |
বামণ/বামন/বামুন পরের জন্য নয়, বাউড়ি ঘরের জন্য নয় | স্বার্থপর ব্রাহ্মণ যেমন নিজের পরিবারের চিন্তা ছাড়া কিছু জানে না তেমনি বাউড়ি সম্প্রদায় নিজের পরিবারের কথা একদম ভাবে না। |
বামণ/বামন/বামুন বাদল বান দক্ষিণা পেলেই যান- খনা | ব্রাহ্মণ যেমন দক্ষিণা পেলেই বিদায় হন তেমনি বাদল ও বান দক্ষিণা বাতাস পেলেই চলে যায়। |
বামণ/বামন/বামুন মন্ত্র পড়ে, পাঁঠার কলায় শুনে | যাকে উপদেশ দেওয়া হচ্চে, তার কানে কিছুই যাচ্ছে না। |
বা্মণের/বামনের/বামুনের গরু খায় অল্প, নাদে বেশি, দুধ দেয় কলসি কলসি | কমদামে এবং অল্পখরচে বেশি কাজ পাওয়ার ইচ্ছা। |
বামণের/বামনের/বামুনের নজর নৈবদ্যের কলায় | যার যা স্বভাব; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মলে।। |
বামণের/বামনের/বামুনের ভাতে আছে | বামুন চাষবাস করে না; সেকারণে তার চাকরের কাজকর্ম কম থাকে; চাকরের খাটনি নেই, খায় দায় সুখে আছে। |
বারেবারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবারে তোমায় আমি/ঘুঘু বধিব পরাণ | বেশিদিন চালাকি করা যায় না; একদিন-না-একদিন সে ধরা পরেই এবং শাস্তি পায়। |
বারাঙ্গনা বৃদ্ধা হলে তপস্বিনী হয় | নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোর চুরি করতে অক্ষম হলে সাধু হয়'; 'নারী কুরূপা হলে পতিব্রতা হয়'; 'মানুষ রোগে পড়লে ভক্তিমান হয়' ইত্যাদি। |
বারোটা ঝাড়লুম/দেখলুম তেরোটা মল, তুই না মরে অপযশ হল | নিতান্ত হাতুড়ে ডাক্তার/বৈদ্য। |
বারোটা বেজেছে | উচ্ছন্নে গেছে; নষ্ট হয়ে গেছে; সর্বনাশ হয়েছে ইত্যাদি। |
বারোবছর চোঙার মধ্যে থাকলেও কুত্তার লেজ সোজা হয় না | শতচেষ্টাতেও মন্দকে ভালো করা যায় না; সমতুল্য- কুকুরের লেজে ঘি মাখলেও সোজা হয় না'। |
বারোবছরে ফলে তাল যদি না লাগে গরুর লাল- খনা | গরু পাতা না খেলে বারো বছরেই গাছে তাল ফলে; বিরুদ্ধ বচন- 'এক পুরুষে রোপে তাল, পর পুরুষে করে পাল'। |
বারো মাস ত্রিশদিন | সর্বদা; সর্বক্ষণ। |
বারোমাসে বারোফল, না খেলে যা রসাতল- খনা | সময়ের ফল সময়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী। |
বারোমাসে তেরোপার্বণ | হিন্দুদের ঘরে উৎসবের ছড়াছড়ি; মূলতঃ বাঙালীর ঘরে ঘরে সারা বছরধরেই নানারকমের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পূজাপার্বণ বা উৎসব লেগেই আছে। |
বারো রাজপুতের তেরোহাঁড়ি কেউ খায় না কারো বাড়ি | পাঁচজন লোকের সাতরকম মত; তীব্র রেষারেষি; নানা অন্তর্দ্বন্দ্ব; কাছাকাছি থাকলে লাঠালাঠি হয়; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল, পর থেকে জঙ্গল ভাল'; 'কাছের মানুষ কাছের হয় না'; 'ভাইভাই ঠাঁই ঠাঁই'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি। |
বারোহাত কাঁকুড়ের তেরোহাত বীচি১ | মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ। |
বারোহাত কাঁকুড়ের তেরোহাত বীচি২ | মূলবিষয় থেকে আনুসঙ্গিক বিষয় অনেক বেশি; কাজ থেকে আড়ম্বর বেশি; সমতুল্য- 'ছ-আনার কাপড়ে ন-আনার পাড়'; 'ছেলের থেকে ছেলের ঘুনসি বড়'; 'মিঞা থেকে মিঞার ডিঙি ভারি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'বারোহাত কাপড়ের তেরোহাত দশী/ছিলা'; 'বারোহাত পুকুরে তেরোহাত মাছ'। |
বালকেই চাঁদ ধরতে চায় | নির্বোধেই অসম্ভবের প্রত্যাশা করে। |
বালানাং রোদনাং বলং১ | অবলাদের ক্রন্দনই বলস্বরূপ; কথায় বলে কেঁদে জেতা। |
বালানাং রোদনাং বলং২ | শিশুদের ক্রন্দনই বল; শিশুদের ক্রন্দন স্বাস্থের পক্ষে অপরিহার্য। |
বালির বাঁধ | ক্ষণস্থায়ী/ভঙ্গুর প্রতিরোধব্যবস্থা, যা একটু বাধা পেলেই ভেঙে পড়ে। |
বালির বাঁধ শঠের পীরিতি এই দুইয়ের একই রীতি | বালির বাঁধের মত শঠের পীরিতি দু'দিন বা তার বেশি টেকে না। |
বাসনায় সন্তোষ থাকা বিধেয় | বাসনায় তৃপ্তি থাকা উচিৎ; অতৃপ্তি মনে বিকার আনে। |
বাসনায় অর্ধেক ফল | সব বাসনার পূরণ হয় না; অর্ধেক হলেই মানুষ সন্তুষ্ট হয়; যথালাভ। |
বাসরঘরে বিড়াল মারা | স্ত্রীর কাছে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার করার ক্ষেত্রে স্বামীর কৌশল; পাঠান্তর- 'বিড়াল প্রথমরাত্রেই মারতে হয়'। |
বাস্তবচিত্র অনেক সময় কল্পনা/গল্পকেও হার মানায় | অনেকসময় এমন কিছু ঘটনা ঘটে যে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হত; চমৎকৃত হওয়ার মত ঘটনা। |
বাস্তুঘুঘু | অতি দুষ্ট ও ধূর্ত লোক যে স্থায়ীভাবে বন্ধু হিসাবে গৃহে প্রবেশ করে এবং পরে গৃহস্থকে সর্বশান্ত করে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখনি'। |
বাহাত্তুরে | বার্ধক্যের কারণে কাণ্ডজ্ঞানহীন/বুদ্ধিলোপ হওয়া/ভীমরতিতে পাওয়া; অতিবৃদ্ধের বুদ্ধিনাশ |
বাহিরে সাদা সাজ, ভিতরে ঢাকাই কাজ | বাহ্যিক কোন আড়ম্বর নেই কিন্তু ভিতর গুণে পরিপূর্ণ, এমন নারী। |
বাহিরে হাসিখুশি অন্তরে গরলরাশি | খল বাইরে হাসিখুশির ধরে রাখে অন্তর কিন্তু তার বিষে ভরা; তূলনীয়- 'বিষকুম্ভ পয়োমুখম'। |
বাহিরের জামাই মধুসূদন ঘরের জামাই মধো | ঘর জামাইয়ের আদর নেই। |
বিকারী রোগীর জলপান | বিকারীরোগী ঘনঘন জল খায়; তার যেমন তৃষ্ণার শেষ নেই; তেমনি সংসারীলোকের কামনা বাসনার শেষ নেই। |
বিক্রমপুর পাঠানো | কোন জিনিস বিক্রয় বা নষ্ট করা; তুলনীয়- 'নিশ্চিন্তপুর যাওয়া'। |
বিক্রীতে করিণি, কিমঙ্কুশ বিবাদঃ | হাতী বিক্রি হয়ে গেলে তার অঙ্কুশ নিয়ে বিবাদ করা বৃথা; যেখানে মূল অনুপস্থিত, সেখানে আনুসঙ্গিক বিষয়ের কোন মূল্য নেই। |
বিচার করে দেখ ভাই এক ছাড়া দুই নাই | ঈশ্বর বা চৈতন্যের বিভাজন হয় না, তার একটাই রূপ হয়; জাতের ধর্ম, ধর্ম নয়; আমার র্ধম তোমার ধর্ম বলে আলাদা কিছু হয় না। |
বিচারে এড়া, আচারে বাড়া | যুক্তিবিচারের ধার ধারে না, কিন্তু আচারে এক পা আগে। |
বিছার ভয়ে পালিয়ে এসে সাপের মুখে পতন | ছোট বিপদ এড়াতে গিয়ে বড় বিপদে পড়া; সমতুল্য- 'টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস'; 'তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ'; 'ধোঁয়ার হাত এড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরা' ইত্যাদি; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'বৃশ্চিকভিয়া পলায়মানেস অহিমুখে নিপাতঃ'। |
বিজ্ঞ যেথায় ভয় পায়, অজ্ঞ সেথায় আগে ধায় | অর্বাচীনের বাহাদুরি; নিজের ওজন না বুঝে মূর্খ সবতাতে আগে বাড়ে। |
বিড়াল কাঠের হোক, ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো | কাজ নিয়ে কথা; কাজের কাজ হলোেই হলো। |
বিড়াল দূরে/সরে গেলে ইঁদুরেরা খেলে বেড়ায় | কাজের জায়গায় দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপস্থিত না থাকলে কাজের লোক ফাঁকি মারে; সমতুল্য- 'বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর'। |
বিড়াল তাড়িও না বরং খাবার থালা সরাও | সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে উচিত ফল পাওয়া যায় না। |
বিড়াল তপস্বী | ভণ্ড; কপট ব্যক্তি; সাধুর বেশে দুষ্ট লোক। |
বিড়াল থলির বাইরে এলো | গোপন কথা প্রকাশিত হলো। |
বিড়াল প্রথমরাত্রেই মারতে হয় | উদ্ভবের সম্ভাবনা থাকলে সঙ্কট অঙ্কুরে বিনষ্ট করা উচিত। |
বিড়াল বনে গেলে বনবিড়াল (বাঘ) হয় | অবস্থার পরিবর্তন হলে স্বভাবেও পরিবর্তন আসে। |
বিড়াল বলে মাছ খাব না, আঁশ ছোব না, কাশী যাবো | ভণ্ডের ভণিতা; এমন মিথ্যা যা মেনে নেওয়া যায় না। |
বিড়াল বৈরাগ্য | বিড়াল মার খেলে পালায়; কিছুক্ষণ পর মারের কথা ভুলে গিয়ে আবার সেইস্থানে ফিরে আসে লক্ষণায়- ক্ষণস্থায়ী কামনা-বাসনা; |
বিড়াল ভীরু হলে ইঁদুর বাহাদুর | শাসন কঠোর না হলে দুস্কৃতিরা রাজত্ব করে। |
বিড়ালকে মাছ খাইতে শিখাইও না | ক্ষতিকারককে ইন্ধন যুগিয়ো না; সঙ্কটকে ঘরে ডেকো না; তুলনায়- 'পাগলকে সাঁকো নাড়াতে না করো না'। |
বিড়ালের আড়াই পা | দোষ করে বিড়াল মার খায়, কিন্তু আড়াই পা গিয়ে সব ভুলে যায় আবার ফিরে আসে- লক্ষণায়- যার মান-অপমানবোধ নেই; অল্পসময়ের মধ্যে যে সব মান-অপমান, অভিমান, ক্রোধ ইত্যাদি ভুলে যায়। |
বিড়ালের কপালে টিকা | যার যা করা সাজে না তার সেই কাজ করা; নিছক ভণ্ডামি, যা মেনে নেওয়া যায় না। |
বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা | দুঃসাহসী সহজ করা; কোনো প্রয়োজনীয় কিন্তু আপাত-অসম্ভব বা বিপজ্জনক কাজের গোড়াপত্তন করা; নিজে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কোনো দুঃসাহসিক কাজ করে অন্যদের রক্ষা করা। |
বিড়ালের পেচ্ছাবে আছাড় খাওয়া | বিশ্রিভাবে বিপদগ্রস্ত হওয়া। |
বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া | হঠাৎ কপাল ফেরা; যা পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না তাই ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাওয়া। |
বিদুরের ক্ষুদকুঁড়া/শাকান্ন | দীনজনের শ্রদ্ধামিশ্রিত সামান্য দান; (উৎসকাহিনী- ধর্মপ্রাণ বিনয়ী বিদুরের ভক্তিভরে প্রদত্ত অতিসামান্য আহার খেয়ে শ্রীকৃষ্ণ পরিতৃপ্ত হয়েছিলেন; সেই ঘটনা থেকেই 'বিদুরের খুদকুড়া' প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে।) |
বিদেশে বন্ধুলাভো হি মরাবমৃতনির্ঝর | বিদেশে বন্ধুলাভ মরুভূমিতে অমৃতপ্রাপ্তির সমান। |
বিদ্যয়া পূজ্যতে লোকে বিদ্যয়া সুখমন্নতে | বিদ্যাকে লোকে পূজা করে; বিদ্যাদ্বারা লোকে সম্মান লাভ করে। |
বিদ্যা কামদুঘা ধেনু | বিদ্যা কামধেনুর মত সর্বাভিষ্টদায়িনী। |
বিদ্যা ও বিত্ত কখনো সমান হয় না | বিদ্যার মত বিত্তের গুণ নেই; বিদ্যার সাথে বিত্তের তুলনা হয় না; তুলনায়- 'বিদ্যা ধনাদপি গরীয়সী'। |
বিদ্যাতুরাণাং ন সুখং ন নিদ্রা | বিদ্যার্জনে ব্যাকুল ব্যক্তির সুখানুভূতি বা নিদ্রা থাকে না। |
বিদ্যা বিনয়ং দদাতি | বিদ্যা বিনয় দান করে। |
বিদ্যাদিগ্গজ | হস্তীমূর্খ; (উৎসকাহিনী- গজপতি বিদ্যাদিগগজ বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী-এর কৌতুকপ্রদ ব্রাহ্মণচরিত্র; বুদ্ধির স্থূলতা ও বিদ্যার অভাবে কথায় ও কাজে পদে পদে হাস্যাস্পদ হয়েছেন; তার মেধার পরিচয় পেয়ে বিরক্ত হয়ে চতুষ্পাঠীর পণ্ডিত তাকে বিদ্যাদিগগজ উপাধি দিয়ে বিদায় করেন; সেই থেকে 'বিদ্যাদিগ্গজ' শব্দটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে।) |
বিদ্যা ধনাদপি গরীয়সী | বিদ্যা বিত্ত থেকে বড় ও মহান। |
বিদ্যান সর্বত্র পূজ্যতে | বিদ্যানব্যক্তি দেশেবিদেশে সর্বত্র সমাদৃত হয়; বিদ্বানের কাছে কোন দেশই বিদেশ নয়। |
বিদ্যা, বিনয়, ভদ্রতাছাড়া কোন জিনিসই অতিরিক্ত ভালো নয়। | বিদ্যা, বিনয়, ভদ্রতা ইত্যাদি মানুষের চারিত্রিক গুণ, সকলের ভূষণল |
বিদ্যা মিত্রং প্রবাসে চ মাতা মিত্রং গৃহেষু চ | বিদেশে বিদ্যাই হল বন্ধু, গৃহে মাতাই হল বন্ধু। |
বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নাই, ব্যাধির চেয়ে শত্রু নাই | বিদ্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু; বিদ্যা মানুষকে সৎ পথে চালিত করে; ব্যাধিই মানুষের প্রধান শত্রু; ব্যাধিতে ধরলে বিনাশ অনিবার্য। |
বিদ্যারত্নং মহাধনম | বিদ্যারত্নের সাথে কারো তুলনা হয় না; বিদ্যারত্ন শ্রেষ্ঠ ধন, যার বৃদ্ধি আছে কিন্তু ক্ষয় নাই; বণ্টন করলে বিদ্যা বাড়ে; বিদ্যা চুরি যাবার ভয় নাই। |
বিদ্যা শুভকরী কিন্তু স্বল্পাবিদ্যা ভয়ঙ্করী | জ্ঞান শুভদায়ক, কিন্তু সামান্য জ্ঞানে অশুভ হয় বেশি। |
বিদ্যাশূন্য ভট্টাচার্য নাকি বিদ্যাসুন্দর ভট্টাচার্য | দর্শনশাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ ভট্টাচার্য উপাধি পেয়ে থাকেন; এই ব্রাহ্মণ কি শাস্ত্র না পড়ে পণ্ডিত নাকি পড়ে পণ্ডিত? |
বিদ্যা স্তব্ধস্য নিস্ফলা | যে ব্যক্তি কথা বলতে ভয় পায়, তার বিদ্যা নিস্ফল হয়; যে বিদ্যার প্রয়োগ নেই সেই বিদ্যা নিস্ফল। |
বিদ্যাহীনা ন শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকাঃ | বিদ্যাহীন পুরুষ গন্ধহীন পলাশফুলের মত অসার। |
বিদ্বত্বঞ্চ নৃপত্বঞ্চ নৈব তুলং কদাচন, স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে | বিদ্যাবত্তা ও নৃপত্ব কখনোই সমান হয় না; রাজা কেবল নিজদেশেই সম্মান পান, বিদ্যান দেশবিদেশ সর্বত্র সাম্মানার্হ। |
বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকর | জ্ঞান থেকে গুণের সৃষ্টি হয়; অজ্ঞতা থেকে সব দোষের জন্ম হয়; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'পণ্ডিতেষু গুণাঃ সর্বে মূর্খে দোষা হি কেবলম্'। |
বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে | বিদ্বান সর্বত্র পূজিত বা সম্মানিত হন।. |
বিধবার একাদশী | যে কাজ করলে প্রশংসা/লাভ নেই,কিন্তু না করলে নিন্দা/ক্ষতি আছে সেই কাজ সম্পর্কে প্রযোজ্য প্রবাদ। |
বিধাতার বাজী, কেউ খায় পলান্ন কেউ খায় কাঁজি | বিধাতার ইচ্ছায় কেউ বা রাজা কেউ বা ফকির; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয়, ছাদ ফুইড়া দেয়'। |
বিধি বাদী দুই সমান | বিধাতা আশায় জল ঢালছে, শত্রুও অনিষ্ট করছে; সকলদিক থেকে কাজ বাধাপ্রাপ্ত হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
বিধি যখন চাইবেন তখন ছুটি পাইবেন | মৃত্যু ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়, বিধাতার ইচ্ছাধীন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'জন্ম, মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে'; 'নিশ্বাসে বিশ্বাস নেই'। |
বিধি যখন মাপায় অল্প-অল্প/উপরি-উপরি চাপায় চাপায় | বিধি যখন কাউকে দান করা শুরু করে তখন উপর্যপুরি দান করে চলে; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুইড়া দেয়'; 'সৎকল্যাণপরম্পরা'। |
বিধি যদি করে মন, তুষ্ট হতে কতক্ষণ | বিধি চাইলে সৌভাগ্যলক্ষ্মী ঘরে এসে উপস্থিত হন। |
বিধি যদি বিপরীত, কেবা করে তার হিত | বিধি বিরূপ হলে হাজার চেষ্টাতেও সৌভাগ্য আসবে না; পোড়া মাছও পালাবে; পাঠান্তর- 'বিধির বিধান/বিধি খণ্ডাবে কে'; 'বিধির লিখন না যায় খণ্ডন'; 'বিধির মনেতে যা নিশ্চয়ই ঘটিবে তা'। |
বিধির বিধান/লিপি কপালজোড়া/কপালে লেখা | বিধাতা সকলের কপালে তার ভাগ্যলিপি লিখে দিয়েছেন; ভাগ্যলিপি কপালের চামড়ায় ঢাকা থাকে; পাঠান্তর- 'বিধির বিধান/লিপি চর্মে ঢাকা'। |
বিধির বিপাক | দৈবদুর্ঘটনা।; নির্দিষ্টকাজে সহসা কোন বাধা এসে উপস্থিত। |
বিনয়ীরা সুবিধাবাদী হয়, সুবিধাবাদীরা বিনয়ী হয় | বিনয়ীরা নানাসুবিধা ভোগ করে; কপটেরা সুবিধা ভোগ করার জন্য বিনয়ী হয়। |
বিনাকারণে কাউকে দোষারোপ করো না, সে যখন তোমার কোন ক্ষতি করে নি | অযথা কারো বিরুদ্ধাচরণ করো না। |
বিনাকারণে কেউ কারও বন্ধু নয়, কেউ কারও শত্রু নয় | স্বার্থছাড়া কেউ এক পা নড়ে না; তুলনীয়- নবকুমারকে বাঘে খায়'; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি এজীবন মন সকলি দাও'; 'শুধু স্বার্থ নয়, স্বার্থত্যাগও আছে এ সংসারে'; 'স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতে' ইত্যাদি। |
বিনাদানে মথুরা পার | অনায়াসে বা বিনাব্যয়ে কার্যসিদ্ধি (উৎসকাহিনী- শ্রীীকৃষ্ণ পারানির কড়ি না নিয়ে ব্রজগোপীবালাদের যমুনানদী পার করাতেন।) |
বিনা বজ্রপাতে কেউ রামনাম নেয় না | সম্পদকালে কেউ ঈশ্বরকে স্মরণ করে না; তূলনীয়- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'চাপ পড়লেই বাপ'; 'সাধে কি আর বাবা বলি গুঁতোর ঠেলায় বাবা বলায়' ইত্যাদি। |
বিনাবাতাসে গাছের পাতা নড়ে না | কারণছাড়া কোন কাজ হয় না; সবকাজের পিছনে কোন-না-কোন কারণ থাকে। |
বিনামেঘে বজ্রপাত | হঠাৎ একটা বিপর্যয়কর কাণ্ড ঘটে যাওয়া; হঠাৎ বিপদ এসে উপস্থিত; তুলনায়- 'অকস্মাৎ বজ্রপাত'; 'পলকে প্রলয়'। |
বিনামেঘে বর্ষণ | কারণ নেই কার্য এসে উপস্থিত; সমতুল্য- 'না চাইতেই জল'। |
বিনা যুদ্ধেন কেশব | সহজে কিছু দিচ্ছি না; (উৎসকাহিনী- শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবপক্ষের হয়ে সন্ধিপ্রস্তাব নিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে উপস্থিত হলে দুর্যোধন বলেছিলেন, 'হে কেশব সূঁচের ডগায় যে পরিমাণ মাটি ওঠে তার অর্ধেক পরিমাণ জমিও আমি বিনাযুদ্ধে পাণ্ডবদের দেব না'; অধিকার কেউ আপনাহতে ছাড়ে না। |
বিনা রক্তপাতে পাপ ধোয় না | রক্তক্ষয়ে মানুষের চেতনা ফেরে; যুদ্ধের পরে শান্তি আসে; কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, কলিঙ্গের যুদ্ধ, দুই বিশ্বমহাযুদ্ধ থেকে এই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। |
বিনাশকালে বিপরীতবুদ্ধি১ | মরণকালে ভালকে মন্দ এবং মন্দকে ভাল মনে হয়; তুলনীয়- 'আসন্নকালে বিপরীতবুদ্ধি'। |
বিনাশকালে বিপরীতবুদ্ধি২ | উচ্ছন্নে যাওয়ার সময় লোকের মন্দবুদ্ধি বেশি কাজ করে। |
বিনাশকালে ভগবান | বিপদে পড়লেই মানুষের ভগবানের আশ্রয় খোঁজেে; সমতুল্য-'মরার সময় হরিনাম'। |
বিনাশ্রয়ং ন তিষ্ঠন্তি কবয়োবনিতা লতাঃ | কবি, নারী ও লতা পৃষ্ঠপোষক, প্রতিপালক ও অবলম্বন ছাড়া বাঁচতে পারে না। |
বিনাসম্বলে পথ চলতে নাই | পাথেয়ছাড়া পথে বেরুতে নেই। |
বিনাস্বদেশীভাষা মেটে কি আশা | মাতৃভাষার স্বাদই আলাদা; মাতৃভাষার তুলনা হয় না; মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মত। |
বিন্দু বলে আয়রে বিন্দু গড়ে তুলি মহাসিন্ধু | সব বিশাল সৃষ্টির পিছনে অসংখ্য ক্ষুদ্রের সহযোগিতা থাকে; তুলনীয়- 'তিলেতিলে তাল হয়'; 'রাই কুড়িয়ে বেল হয়' ইত্যাদি; পাঠান্তরে- 'বিন্দুবিন্দু বৃষ্টি, করে সিন্ধু সৃষ্টি'। |
বিন্দুবিন্দু জল পাথর ফুটো করে১ | দৈর্য ও অধ্যাবসায় থাকলে সব অসাধ্য কাজ সহজসাধ্য হয়। |
বিন্দুবিন্দু জল পাথর ফুটো করে২ | বিপদ আসবার আগেই সাবধান হওয়া ভাল; প্রতিক্রিয়া জানানোর চেয়ে পূর্বাভাস দেওয়া এবং তার জন্য প্রস্তুত থাকার পক্ষে প্রবাদটি সওয়াল করে। |
বিন্দুবিন্দু বৃষ্টি করে পুকুর সৃষ্টি | অল্প অল্প করে জমালেও প্রচুর অর্থ জমা হয়। |
বিপদ একা আসে না | বিপদ একা আসে না, দলবেঁধে আসে; একটা বিপদ এলে চারিদিক থেকে নানাবিপদ এসে উপস্থিত হয়; একটা দুর্ভাগ্য আরেকটা দুর্ভাগ্যের সুত্রপাত ঘটায়; পাঠান্তর- 'বিপদ একা আসে না, দোসর খোঁজ'; 'ে বিপদ সঙ্গে দোসর আনে'। |
বিপদই মানুষের প্রকৃত কষ্টিপাথর | বিপদে পড়লেই বুঝা যায় মানুষ বিপদ কাটিয়ে উঠার শক্তি ও বুদ্ধি ধরে কিনা। |
বিপদকালে ছাগলও চাট মারে | বিপদে পড়লে সামান্য লোকেও কটু কথা শোনায়; সমতুল্য- 'হাতী কাদায় পড়লে চামচিকেও লাথি মারে'। |
বিপদকালে বন্ধুর পরীক্ষা | বিপদকালে যে বন্ধু সঙ্গ ত্যাগ করে না সেই প্রকৃত বন্ধু। |
বিপদকালে বুদ্ধিনাশ | বিপদের সময় বুদ্ধি খোলে না। |
বিপদকালে মধুসূদন/হরিনাম১ | মানুষ বিপদে পড়লে ঈশ্বরের কথা মনে পড়ে |
বিপদকালে মধুসূদন/হরিনাম২ | মানুষ বিপদে পড়লে অপরের শরণাপন্ন হয়, সম্পদে হয় না। |
বিপদকে ডেকো না বিপদ তোমার পিছু নেবে | প্রতি পদেই বিপদের হাতছানি থাকে; এড়াতে না জানলে বিপদ ঘাড়ে পড়বেই। |
বিপদ জেনেও যে পদক্ষেপ নেয় না, সেই প্রকৃত মূর্খ | শুধু অলস অক্ষমেরাই বিপদ না এড়িয়ে বিপদকে কাছে টানে। |
বিপদে পড় নেই ভয়; অভিজ্ঞতায়/বুদ্ধিবলে হবে জয় | প্রতি পদেই বিপদ আছে; সাহসের সাথে লড়লে সব বিপদকে এড়ানো যায়।। |
বিপদে পড়ে রামনাম/শ্রীমধুসূদন১ | বিপদে পড়লে সবাই ধার্মিক; বিপদে পড়লে সবাই ঈশ্বরকে স্মরণ করে; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'চাপে পড়ে বাপ'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম' 'ঠেলায় পড়ে ঠাকুরদাদি'; দায়ে পড়লে দাদাজী' ইত্যাদি। |
বিপদে/বিপাকে পড়ে রামনাম/শ্রীমধুসূদন | সম্পদে তাকে অবজ্ঞা করে, বিপদে পড়লে তারই শরণাপন্ন হয়। |
বিপদে বন্ধু চেনা যায় | প্রকৃত বন্ধুরা বিপদের সময় পাশে এসে দাঁড়ায়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়; পাঠান্তর-' বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু'। |
বিপদ বলে কয়ে আসে না | নিপদ সম্পূর্ণ আকস্মিক ব্যাপার; অনিশ্চিত ঘটনার কোন আগাম খবর থাকে না। |
বিপদে যে হতবুদ্ধি হয় না সে বিপদ কাটিয়ে ওঠে | বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখা প্রয়োজন; বুদ্ধিমান বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখে। |
বিপদে শালগ্রাম, নইলে শিলা১ | ভয় থেকেই ভগবানে ভক্তি আসে; বিপদে পড়লে সবাই ধার্মিক সাজে; সমতুল্য- 'বিপদে পড়ে রামনাম/শ্রীমধুসূদন পাঠান্তর- 'বিপদে শিবের গোঁড়া, সম্পদে শিব তো নোড়া'। |
বিপদে শালগ্রাম, নইলে শিলা২ | বিপদে পড়লে পায়ে এসে পড়ে; বিপদ কেটে গেলেই আরত মানে না। |
বিবাহ প্রেমের গোরস্থান, কিন্তু শান্তির আস্তানা | প্রেম, বিরহ, ভয়, মাধুর্য ইত্যাদিতে নানা রঙ মেশানো থাকে; সংসারজীবন সাদাজলের মত সহজ সরল। |
বিবি যখন বড় হবে মিঁয়া তখন কবর যাবে | সময়ের কাজ বিলম্বে করলে ফলভোগ হয় না। |
বিবি সেজে বসে আছে, ডুলি/কাহারের দেখা নেই | কাজের লোক হাজির কিন্তু কাজের দেখা নাই; কারণের আগেই কার্য; সমতুল্য- 'রামের আগেই রামায়ণ'; হিন্দি পাঠান্তর- 'ডোলী ন কহার, বিবি হৈ তৈয়ার'; |
বিভীষণ | গৃহশত্রু; (উৎসকাহিনী- রাক্ষসরাজ রাবণের ছোটভাই বিভিষণের মুখমণ্ডল ছিল বিরাট ও ভীষণাকার; সেইকারণে তার নাম বিভীষণ; তার থেকে প্রবাদের সৃষ্টি- 'মুখ/মূর্তি যেন বিভীষণ'; দাদার দুর্ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি রামের পক্ষে যোগ দেন এবং ক্রমাগত ঘরের সন্ধান দিয়ে রাবণকে সমূলে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হন; তারথেকে 'বিভীষণ' শব্দের আলংকারিক অর্থ দাঁড়ায় গৃহশত্রু; প্রবাদে এও বলা হয়- 'ঘরশত্রু বিভীষণ','ঘরসন্ধানী বিভিষণ'; ঘরসন্ধানে লঙ্কা ছারখার হয়; তার থেকে আরও একটি প্রবাদ সৃষ্ট হয়, যেমন- 'ঘরভেদে/সন্ধানে রাবণ নষ্ট'।) |
বিয়ে কর কালো তাই গৃহস্থের ভালো | নানাদিক বিচার করে গৃহস্থকে কালোমেয়ে বিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া হয়; তুলনীয়-'জাতের নারী কালাও ভালা'। |
বিয়ে করতে কড়ি ঘর ছাইতে দড়ি | উপযুক্ত কাজের উপযুক্ত অনুসঙ্গ লাগে। |
বিয়ে ফুরালে ছাদনাতলায় লাথি | কাজ ফুরালে উপকারীকে গ্রাহ্য না করা; কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায়; সমতুল্য-'কাজের সময় কাজি কাজ ফুরালেই পাজি'; 'গলার নীচে গেলে আর কিছু মনে থাকে না'; 'খাল পেরুলে কুমিরকে কলা'; 'খাল পেরুলে পাটনী শালা' ইত্যাদি। |
বিয়ে ফুরালে বাজনা বাজে | কাজ ফুরালেই বাতিলের দলে; সমতুল্য- 'কাজের সময় কাজি কাজ ফুরালে পাজি'। |
বিয়ে হলে ঘর চলে না | বিয়ে যখন হয় নি তখন ঘরের সব কাজ সব ঠিকঠাক হত; বউ আসার পর সবক্ষেত্রেই সে ছাড়া আর চলে না; তাকে দিয়েই সব কাজ করিয়ে নেওয়া। |
বিলম্বে কার্যসিদ্ধি | ধৈর্য ধরে থাকলে লাভ হয়; সমতুল্য- 'সবুরে মেওয়া ফলে'; 'যে সয় সে রয়' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভোরের পাখি পোকা ধরে'; 'শুভস্য শীঘ্রম' ইত্যাদি। |
বিলম্বিত বিচার অবিচারের সমান | বিলম্বিত বিচারে নির্দোষ অন্যায়ভাবে অনাবশ্যক শাস্তিভোগ করে। |
বিলম্বিত স্বীকৃতি থেকে তৎক্ষনাৎ অস্বীকৃতি ভাল | ভালো হোক মন্দ হোক, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া কালের হাতে ছেড়ে দেওয়া নেই; দীর্ঘসূত্রিতা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। |
বিল শুকালে বকের আমোদ | একের বিপদে অন্যের সুখভোগ; কারো দুঃখ কারোবা সুখ; সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ'; 'গোমড়কে মুচির পার্বণ'। |
বিল শুকালে বকের আমোদ২ | ধান্ধাবাজেরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। |
বিলেত ঘুরে মক্কা যাওয়া | অনাবশ্যক দেরী করা, ঘুরিয়ে নাক দেখানো; বাঁকাপথে কাজ করা; তুলনীয়- 'অমরকণ্টক ঘুরে অমরনাথ যাত্রা'; 'কামাক্ষা ঘুরে কাশীধাম যাওয়া' ইত্যাদি। |
বিশিষ্টৈচ বিশিষ্টাতাম | বিশিষ্টলোকের সাথে থাকলে বিশিষ্ট হওয়া যায়; চন্দনগাছের সংস্পর্শে এসে সাধারণগাছ চন্দনগাছের সুগন্ধ পায়। |
বিশ্বকর্মা কেমন কারিগর তা জগন্নাথদেবেই প্রকাশ | কাজ দেখে কারো কর্মক্ষমতার স্বরূপ বুঝতে পারা যায়। |
বিশ্বকর্মার সূঁচ গড়া | দক্ষ কারিগরকে সামান্য কাজের বরাত দেওয়া। |
বিশ্বকর্মার বেটা বিয়াল্লিশ কর্মা | বেটা, বাপ থেকে বেশি বাহাদুরি দেখাতে গেলে ব্যঙ্গচ্ছলে প্রবাদটি বলা হয়। |
বিশ্বাসঘাতক নিজের মৃত্যু ডেকে আনে | বিশ্বাসঘাতককে কেউ সহায়তা করে না। |
বিশ্বাসেই সিদ্ধি | দৃঢ়বিশ্বাস থাকলে যেকোন কাজে সিদ্ধিলাভ করা যায়; তুলনীয়- ' বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর'। |
বিশ্বাসে পাহাড় টলে | দৃঢ়বিশ্বাস থাকলে অসাধ্যসাধন করা যায়। |
বিশ্বাসে পেট ভরে না, খাদ্য লাগে | বিশ্বাস কোন ক্রিয়াশক্তি নয়; কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়; ফাঁকা আওয়াজ/বুলিতে পেট ভরে না; বিরুদ্ধ উক্তি- বিশ্বাসে মিলায় বস্তু/কৃষ্ণ, তর্কে বহুদূর। |
বিশ্বাসে ভাত সিদ্ধ হয় না, আগুন লাগে | বিশ্বাসে পেট ভরে না, খাদ্য লাগে-এর অনুরূপ। |
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু/কৃষ্ণ, তর্কে বহুদূর | তর্কে তর্ক বাড়ে; সিদ্ধান্তে আসতে সময় লাগে; ভাববাদী চেতনা। |
বিশ্বাসো নৈব কর্তব্যঃ | কাউকে বিশ্বাস করা উচিৎ নয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো মহাপাপ'। |
বিষকুম্ভম পয়োমুখম | ব্যক্তির মুখে মধু অন্তরে বিষ; বাইরে মিষ্টি ভিতর তিতা; এককথায়- দাগাবাজ, বিশ্বাসঘাতক; প্রবৃত্তি শরীর থেকে ভিন্ন হয় না। |
বিষ খেয়ে বিশ্বম্ভর | সংসারের জ্বালাযন্ত্রণায় তিতিবিরক্ত হয়েও যে ধীরস্থির গম্ভীর হয়ে আছে; যার অন্তরজ্বালার কোন বহিঃপ্রকাশ নেই। |
বিষ থেকেও অমৃত নেওয়া যায় | ক্ষেত্রবিশেষে বিষ অমৃত হতে পারে। |
বিষদাঁত ভাঙা | যে যে শক্তির জোরে ক্ষতি করে সেই শক্তি নষ্ট করা। |
বিষ নেই তার কুলোপানা চক্কর | অক্ষমের তর্জনগর্জন সার; অক্ষমের বৃথা আস্ফালন; ক্ষমতাহীনব্যক্তির মৌখিক আস্ফালন; বিরুদ্ধ উক্তি- 'বিষহীন সাপকেও ফণা ধরতে হয়'। |
বিষবৃক্ষোপি সংবর্দ্ধ্য স্বয়ং ছেত্তুমসাম্প্রতম | নিজহাতে পালন ও পুষ্ট করা বৃক্ষ বিষবৃক্ষ হলেও নিজহাত তাকে কাটা নেই। |
বিষয় বুঝে ব্যবস্থা | কাজের ধরণ বুঝে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ; সমতুল্য- 'কাজ বুঝে সাজ'। |
বিষস্য বিষসৌধম | বিষই হলো বিষের একমাত্র ওষুধ; বিষ দিয়ে বিষ নিবারিত হয়; কানে জল দিলে কানের জল বার হয়; বাংলা পাঠান্তর- বিষে বিষে বিষক্ষয়; সমতুল্য- 'কণ্টকেনৈব কণ্টকম'; 'জলে জল টানে'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'জলে জল বাড়ে'; 'তর্কে তর্ক বাড়ে' ইত্যাদি। |
বিষহারা ঢোঁড়া গর্জন মুল্লুকজোড়া | অক্ষমের মৌখিক আস্ফালন বেশি হয়; তুলনীয়- 'সফরীর ফরফরানি'। |
বিষহারা/হীন সাপকেও ফণা ধরতে হয় | ফণার ভয়ে সবাই ভীত হয় লক্ষণায় প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে হয়; শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন- 'ফণা ধরবে কামড়াবে না'। |
বিষাদপ্যমৃতং গ্রাহ্যমমেধ্যাদপি কাঞ্চনম | অমৃত বিষ থেকেও গ্রহণ করা চলে, সোনা অশুচিস্থল থেকেও গ্রহণ করা চলে। |
বিষে বিষে বিষক্ষয় | কাঁটা দিয়েই কাঁটা ওঠে; 'বিষস্য বিষসৌধম'-এর অনুরূপ |
বিষ্ঠায় ঢিল/ঢেলা মারলে নিজের গায়ে ছিটকে পড়ে | নীচমনার সাথে বিবাদ করলে নিজেকে অপমানিত হতে হয়। |
বিসমিল্লায় গলদ | কাজের পরিকল্পনাতেই ভুল; গোড়ায় গলদ; কাজের শুরুতেই কোন ভুল হলে প্রবাদটি উক্ত হয়। |
বিস্তরে বাড়ে পতন | বেশি বাড় বাড়লে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'অতিদর্পে হত লঙ্কা'; 'অত্যুচ্ছায় পতনায়'; 'সর্বমত্যন্তমগর্হিতম' ইত্যাদি। |
বীর বক্কেশ্বর | ভিতরে ভীরু বাইরে সাহসী; উৎসকাহিনী- দীনবন্ধু মিত্রের 'কমলে কামিনী' নাটকের এক পুরুষচরিত্র; মনিপুর রাজকুমার ময়ূরকেতনের বয়স্য; সে অন্তরে অতি ভীরুপ্রকৃতির লোক কিন্তু বাইরে বীরত্ব দেখায়; সেই চরিত্র থেকে 'বীর বক্কেশ্বর' প্রবাদের সৃষ্টি। |
বীরভোগ্যা বসুন্ধরা | বসুন্ধরা বীরকে বরণ করে; বীর সর্বত্র আদরণীয়, বরণীয়; সমতুল্য- 'জিস্কী লাঠি উস্কী ভৈঁস'; 'জিস্দা তেগ উস্দা দেগ'; 'জোর যার মুল্লুক তার'; যার লাঠি তার মাটি' ইত্যাদি; (লেখক দীপ্তেন্দ্র সান্যাল ব্যঙ্গার্থে বলতেন- 'তদবিরভোগ্যা বসুন্ধরা'। |
বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না | মনের আকুলতা ব্যক্ত করতে অপারগ; স্ত্রীজাতি মনের কথা সহজে ব্যক্ত করতে পারে না। |
বুকে ঢেঁকির পাড় পড়া | বুক ঢিপ ঢিপ করা; মনে দারুণ আঘাত পাওয়া; রক্ত চঞ্চল হওয়া। |
বুকে বসে দাড়ি উপড়ানো | আশ্রয়দাতা বা প্রতিপালকের অনিষ্ট সাধন করা; সমতুল্য- 'যার খায় তারেই গালায়'; 'যার খায় যার পরে তারই আবার ক্ষতি করে'। |
বুকের পাটা পাঁচ হাত | অতিসাহসী ব্যক্তি। |
বুজরুক বামুনের ভড়ং বেশি | ভণ্ডবামুনের পূজায় আচারে-বিচারে বিস্তর ঘটা থাকে। |
বুঝ আয় কর ব্যয় | আয়ের অনুরূপ ব্যয় করার উপদেশ; সমতুল্য- 'চাদর বুঝে পা ছড়াও'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটো' ইত্যাদি। |
বুঝতে নারি তোমার ঠার বল এক কর আর | যে ব্যক্তির কথায় ও কাজে সামঞ্জস্য নেই তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য। |
বুঝলাম তোমার গিন্নিপনা, তেল থাকে তো নুন থাকে না | সংসারের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করতে অক্ষম নারীর প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
বুড়োদাদাকে গায়ত্রী শিখানো | অভিজ্ঞলোককে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখানো। |
বুড়োবয়সে চূড়াকরণ | বেশিবয়সে অল্পবয়সোচিত কাজ করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো'। |
বুড়োবয়সে ধেড়েরোগ১ | বৃদ্ধবয়সে সখ বা সৌখনীতায় আগ্রহ। |
বুড়োবয়সে ধেড়েরোগ২ | নিন্দায়- বৃদ্ধবয়সে সহবাসের প্রবল ইচ্ছা। |
বুড়োবয়সে ভীমরতি | বুড়ো হলোে প্রত্যেকের কাজকর্মেই নানা ভুলত্রুটি হয়; তুলনীয়- 'বুড়ো হলে বাহাত্তুরে পায়'। |
বুড়োবোকারা বোকার সেরা | বয়স্কপ্রেমিকদের উদ্দেশে কৌতুকচ্ছলে বলা হয়। |
বুড়ো মেরে খুনের দায়১ | বুড়োকে দুচার ঘা দিলে সে মরে যাবে তখন খুনের দায়ে পড়তে হবে ভাবার্থে- তুচ্ছকাজ করে বদনাম কুড়ানো। |
বুড়ো মেরে খুনের দায়২ | হালকাদোষ করে কঠোরশাস্তি পাওয়া। |
বুড়োয় বুড়োয় কথা প্রতিকথায় কাশি, যুবায় যুবায় কথা প্রতিকথায় হাসি | বার্ধক্য ও যৌবনের তুলনা। |
বুড়োর নেই কাজ (বেড়া) ভাঙে আর বাঁধে, বুড়ির নেই কাজ চালধান ফেলে আর বাছে | বুড়োবয়সে কিছু কাজ করার থাকে না বলে বুড়োবুড়ী বাজে কাজ করে সময় কাটায়। |
বুড়োশালিক পোষ মানে না | শিশুর মত আচরণকারী বুড়োকে সহজে প্রতিপালন করা যায় না। |
বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ | বুড়োশালিকের ঘাড়ে শিশু শালিকের মত রোঁয়া থাকে না; বৃদ্ধবয়সে শিশু বা যুবকের মতো আচরণ। |
বুড়ো হলো বক চেনে না | বুদ্ধিহীনতায় বা স্মৃতিশক্তির ক্ষীণতায় বৃদ্ধলোক অতি সাধারণ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করে; বেশি বয়সে কেউ কোন সাধারণ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
বুড়ো হলে বাহাত্তুরে পায় | বুড়োবয়সে কাজকর্মে নানা ভুলত্রুটি হয়; তুলনীয়- বুড়ো বয়সে ভীমরতি'। |
বুদ্ধিগুণে হা-ভাত, বুদ্ধিগুণে খা-ভাত | মানুষ- দুর্বুদ্ধি হলে বিপদে পড়ে; সুবুদ্ধি হলে সুখস্বচ্ছন্দে থাকে। |
বুদ্ধিতে বৃহস্পতি১ | সদর্থে- দেবগুরু বৃহস্পতির মত তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্নব্যক্তি;(উৎসকাহিনী- দেবতাদের গুরু হলেন বৃহস্পতি; বুদ্ধিতে তিনি শ্রেষ্ঠ; তাঁর বুদ্ধিবলেই দেবতারা দৈত্য দানবদের পরাজিত করে বিজয়লক্ষ্মী আয়ত্ব করেছেন; তার থেকেই 'বুদ্ধিতে বৃহস্পতি' প্রবাদের সৃষ্টি।) |
বুদ্ধিতে বৃহস্পতি২ | কদর্থে বিদ্রূপে- আকাট মূর্খ |
বুদ্ধি না থাকলে বাপের পুকুরে ডুবে মরে | বুদ্ধিহীনে নিজের কাজে নিজেই বিপন্ন হয়; তুলনীয়- 'সখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা দোষ কারো নয় গো মা'। |
বুদ্ধি ব্যবহার করলে বুদ্ধির বৃদ্ধি হয় | চর্চা করলে বুদ্ধির ধার বাড়ে অন্যথায় ধার কমে যায় বা বুদ্ধিতে জঙ ধরে; পাঠান্তর- 'বুদ্ধি ব্যবহার না করলে বুদ্ধির ক্ষয় হয়'। |
বুদ্ধিমান কাজ শুরু করলে কাজ শেষ করে | বুদ্ধিমান কাজের শেষ না দেখে ছাড়ে না। |
বুদ্ধিমানলোকের কাছে সুখ একটি বিরল বিষয় | সাধারণতঃ বুদ্ধিমান লোক বেশি চিন্তা করে; ফলে তারা সুখের সন্ধান পায় না। |
বুদ্ধিমান সমস্যার সমাধান করে; প্রতিভাবান সমস্যা প্রতিরোধ করে | বুদ্ধিমানেরা প্রত্যুৎপন্নপমতি; তারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়; প্রতিভাবানেরা অনাগতবিধাতা, তারা আগাম চিন্তা করে। |
বুদ্ধিমানের কাছে ছোট্ট একটা ইঙ্গিতই যথেষ্ট | বুদ্ধিমানকে বোঝাতে সময় লাগে না। |
বুদ্ধি যার বল তার | বুদ্ধির জোরে দুর্বলও যুদ্ধে জয়ী হয়; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'বুদ্ধির্যস্য বলং তস্য'। |
বুদ্ধি যার যশ তার | ঙ্খ্যাতি প্রতিপত্তি সম্মান ইত্যাদি অর্জন শরীরের শক্তি দিয়ে হয় না মেধাশক্তির জোরের হয়। |
বুদ্ধির আগে বোকার জিভ ছোটে | বোকার কথাবার্তায় বুদ্ধির ছাপ থাকে না। |
বুদ্ধির সীমা আছে, বোকামীর কোন সীমা নেই | অজ্ঞানেরা কাণ্ডজ্ঞানবর্জিত হয়ে থাকে। |
বুদ্ধির্যস্য বলং তস্য, নির্বুদ্ধিস্য কুতো বলং | বুদ্ধি যার বল তার; যার বুদ্ধি আছে, তার শক্তিও আছে; বুদ্ধিই শক্তির উৎস; বুদ্ধি না থাকলে শুধু শারিরিক শক্তিতে কাজ হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- ' অসি থেকে মসী বড়'। |
বুদ্ধিহীনতাই সর্ববাধিক দারিদ্র | অজ্ঞানের সারা জীবনটা বৃথা যায়। |
বুনলাম ধান, হল তিল | একরকম কাজের অন্যরকম ফল। |
বুনলাম ধান, হল তিল, ফলল রুদ্রাক্ষ, খেলাম কিল | অর্থহীন আবোলতাবোল উক্তি; অসংলগ্ন কথাবার্তা। |
বুনোহাঁসের পিছনে ছোটা | অনিশ্চিতের পিছনে দৌড়ানো; উচিৎ কাজ নয়। |
বুভুক্ষিত কিং দ্বিকরেণ ভুঙ্তে | খুব খিদে পেলে কি লোকে দু'হাতে খায়? |
বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচীয়তে১ | ফলের ভালমন্দ দেখেই কাজের ভালমন্দ বিচার করা যায়; পাঠান্তর- 'বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে'। |
বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচীয়তে২ | মানুষের পরিচয় তার প্রকৃতিতে, তার আচার-ব্যবহারে। |
বৃক্ষহীনদেশে ভেরেণ্ডাও বৃক্ষ | অজ্ঞানীর দলে অল্পজ্ঞানীরা যথেষ্ট সম্মান পায়; সমতুল্য- 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'বাঁশবনে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল' ইত্যাদি। |
বৃথা আড়ম্বরে কাজ হারানো | আয়োজন করতে করতে কাজ হাতছাড়া; সমতুল্য- 'সাজতে গুজতে দোল ফুরালো'। |
বৃদ্ধস্য তরুণী বিষং | বৃদ্ধলোকের পক্ষে তরুণী ভার্যা বিষতুল্য; যুবতী স্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে সে চলে এবং সেই কারণে সমাজে উপহাসের পাত্র হয়; তুলনীয়- 'বয়োগতে কিং বনিতাবিলাসঃ'। পাঠান্তর- 'বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা বিষম'। |
বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা | বৃদ্ধের পক্ষে তরুণী স্ত্রী দুর্লভ; বৃদ্ধের কাছে তরুণী স্ত্রী পরম আদরণীয়। |
বৃদ্ধস্য বচনং গ্রাহ্যং | বহুদর্শী বৃদ্ধলোকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ; সমতুল্য- 'তিনমাথা যার বুদ্ধি নেবে তার'। |
বৃদ্ধস্য বচনং গ্রাহ্যমাপৎকালে হ্যপস্থিতে | বিপদকালে বৃদ্ধের উপদেশ গ্রহণ করবে। |
বৃন্দেদূতী | গুপ্তপ্রেমের দূতী, যে লুকিয়ে চিঠি চালাচালি করে; (উৎসকাহিনী- শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় এলে বৃন্দাবুড়ি তাঁর কাছে রাধার হয়ে অনুযোগ জানিয়েছিল।) |
বৃশ্চিকভিয়া পলায়মানেস অহিমুখে নিপাতঃ | বিছার ভয়ে পালিয়ে সাপের মুখে পড়া; সমতুল্য- 'টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস'; 'তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ'।) |
বৃষ্টি অঝোরে ঝরে | দুর্ভাগ্যগুলি সর্বদা একত্রিত হয়। |
বৃষ্টি অঝোরে ঝরে না | কখনও ঢালা বৃষ্টিপাত হয় না; জীবনে সুখ বা দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে'। |
বেঁচে থাক মোর চুড়াবাঁশি মিলবে মেলা রাণীদাসী | আকর্ষণী শক্তি থাকলে অনেকেই আকৃষ্ট হয়। |
বেঁচে থাকলে বাপের নাম | নিজেকে বাঁচানোই আগে দরকার, তারপর অন্য কথা; স্বার্থপর চরিত্র। |
বেঁটে লোক হেঁট হয় | বেঁটেলোকের পক্ষে হেঁট হওয়া সহজ; যে বিনয়ী সে সহজেই বিনয়াবনত হয়। |
বেঁড়েকে (লেজহীন) চমরা (সুন্দর লেজযুক্ত) বলা১ | অসুন্দরকে সুন্দর বললে তার খুব গর্ব হয়; হীনকে প্রশংসা করলে সে গর্বে স্ফীত হয়; |
বেঁড়েকে চমরা বলা২ | কার্যসিদ্ধির জন্য গুণহীনকে গুণবান বলে তোষামোদ করা। |
বেঁড়ে গরুর ওকড়া (কাঁটাফল) বনে ভয় নেই১ | লেজহীন গরু কাঁটাফলের বনে যেতে ভয় করে না। |
বেঁড়ে গরুর ওকড়া (কাঁটাফল) বনে ভয় নেই২ | ভাললোকেরা অস্থানে কুস্থানে যেতে ভয় পায়; মন্দলোক, যাদের দুর্নামের ভয় নেই, তারা যেখানে সেখানে সচ্ছন্দে যায়। |
বেঁড়ে গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পার হওয়া/ স্বর্গে যাওয়া | অকর্মণ্যকে দিয়ে কার্যোদ্ধার করতে যাওয়া। |
বেঁধে মারে সয় ভাল১ | অল্প তিরস্কার সহনীয়। |
বেঁধে মারে সয় ভাল২ | উপায়ন্তর না থাকলে অসহনীয় বিষয় সহ্য করাই ভাল। |
বে-আক্কেলরে আক্কেল দিলে নিজের আক্কেল ক্ষয়, আক্কেল্রে আক্কেল দিলে আরো আক্কেল হয় | বুদ্ধিহীনকে সুপরামর্শ দিলে কোন কাজে লাগেনা; বুদ্ধিমানকে সুপরামর্শ দিলে নিজেরও কিছু বুদ্ধি বৃদ্ধি হয়। |
বেকারের চেয়ে বেগার ভাল | কিছুনা করা থেকে বিনাবেতনের কাজ করা ভাল; তাতে অন্তুতঃ স্বাস্থ্য ভালো থাকে; পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; পাঠান্তর- 'বসে না থাকি বেগার খাটি'। |
বেগম চেনে না বেগুন | হঠাৎ বড়লোকের বেটির সাধারণ জিনিস না চেনার ভান করা। |
বেগার খাটবে তো বেকার থাকবে না | 'বেকারের চেয়ে বেগার ভাল'-এর অনুরূপ। |
বেগারের দৌলতে গঙ্গাস্নান১ | বিনাবেতনে গঙ্গাযাত্রীর কাজ করে গঙ্গাস্নান। |
বেগারের দৌলতে গঙ্গাস্নান২ | সামান্যের পরিবর্তে অসামান্য লাভ। |
বেগুনগাছে আঁকশি১ | অপ্রয়োজনে বা নগণ্যকাজের জন্য আড়ম্বর করা হলে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয। |
বেগুনগাছে আঁকশি২ | কোন ব্যক্তির ক্ষুদ্রত্ব প্রচার করতে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয। |
বেগুনের হাড় গজানো | কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয; সমতুল্য-'পুলিপিঠের লেজ গজানো'। |
বেড়া নেড়ে গৃহস্থের মন বুঝা১ | চোর বেড়া নেড়ে বুঝে নেয় গৃহস্থ জেগে আছে কিনা। |
বেড়া নেড়ে গৃহস্থের মন বুঝা২ | কথার আভাসে অন্যের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করা; সমতুল্য- 'জল নেড়ে জোঁকের বোল বোঝা'। |
বেড়ার ওপর বসে১ | দ্বিধা-দ্বন্দ্বে কোন সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ; সমতুল্য-'কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা'। |
বেড়ার ওপর বসে২ | দুই দলের গোলমালে নিরপেক্ষ থাকা; কোন পক্ষে যোগ না দেওয়া; সমতুল্য-'ত্রিশঙ্কু অবস্থা'। |
বেদনাবোধ না থাকার অর্থ তুমি মানুষ নও | মানুষ অনুভূতিপ্রবণ মানুষের মন সুখুদুঃখে আলোড়িত হয়। |
বেদে কি চেনে কর্পূরের গুণ শুঁকে শুঁকে বলে সৈন্ধব নূন | সামান্যলোকে মহার্ঘবস্তুর গুণ বুঝতে পারে না। |
বেদে চেনে সাপের হাঁচি | অভিজ্ঞ চোখ সবকিছু জানে; অভিজ্ঞ চোখকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব; অভিজ্ঞ চোখে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিবর্তনও ধরা পড়ে। |
বেদের মরণ সাপের হাতে | বিপজ্জনক কাজে ঝুঁকি থাকে; সমতুল্য- 'গোঁয়ারের মরণ খোঁয়ারে'; 'গোঁয়ারের মরণ গাছের আগায়'। |
বেনাবনে মুক্তা ছড়ানো১ | উলুঘাসের জঙ্গলে মুক্তা ছড়ালে তার সৌন্দর্য কারো নজরে পড়বে না, কেউ তা উপভোগ করতে পারবে না। |
বেনাবনে মুক্তা ছড়ানো২ | অপাত্রে উপদেশ দেওয়া; অযোগ্যকে মুল্যবান দ্রব্য দেওয়া; সমতুল্য- 'বানরের গলায় মুক্তাহার'; 'লেঙ্গুরকা অঙ্গুটি' ইত্যাদি। |
বেনের কাছে মেকি চালানো | অভিজ্ঞচোখকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা; অভিজ্ঞচোখকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। |
বেনোজল ঢুকিয়ে খরজল বার করা১ | ঘরে বাজে জিনিস ঢুকিয়ে কাজের জিনিস বার/নষ্ট করা। |
বেনোজল ঢুকিয়ে খরজল বার করা২ | নতুন কাজে পুরানো কাজের ক্ষতি করা। |
বেয়ানে বাদল বাদল নয় মায়ে ঝিয়ে কোঁদল কোঁদল নয় | সকালবেলার মেঘে বৃষ্টি হলে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না; মা-মেয়ের ঝগড়াও স্বল্পস্থায়ী হয়। |
বেল পাকলে কাকের কি? | উপভোগে অক্ষমব্যক্তির পক্ষে উৎকৃষ্ট বস্তুর প্রতি লোভ করা নিষ্ফল; ভোগের অতীত হলে ভোগ্যবস্তুর ভালমন্দতে ব্যক্তির কিছু যায় আসে না; যাতে নিজের কোন উপকার হয় না সেটা ভালই হোক আর মন্দই হোক সেটা দেখার কোন প্রয়োজন নেই। |
বেশি কৌতুক করলে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়, বেশি হাসলে প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয় | কৌতুকপ্রিয় লোক হালকা চরিত্রের হয়; গাম্ভীর্য শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে। |
বেশি কচলালে লেবু তিতা/তেতো১ | কোন বস্তু বারবার ব্যবহার করলে বিক্রিয়ায় তার গুণ হ্রাস নষ্ট হয়। |
বেশি কচলালে লেবু তিতা/তেতো২ | কোনাে কিছু বারবার করলে একসময় সেটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে চলে যায়। |
বেশি কচলালে লেবু তিতা/তেতো৩ | একই কথার বারংবার উক্তি বিরক্তি উৎপাদন করে; তুলনীয়- 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'। |
বেশি জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট | অল্পজ্বালে রান্না ভালো হয় না। |
বেশি টানলে সূতা ছেঁড়ে১ | কোন কাজে বেশি কড়াকড়ি ভাল নয়; তুলনীয়- 'বেশি কচলালে লেবু তেতো'। |
বেশি টানলে সূতা ছেঁড়ে২ | জোর করে প্রণয় হয় না। |
বেশি তাড়াহুড়া করলে বিলম্ব হতে পারে | তাড়াআড়ি করলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে; তাতে শেষপর্যন্ত কাজে দেরী হতে পারে; তুলনীয়- 'ধীর এবং অবিচল গতি শেষপর্যন্ত প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়'; 'বিলম্বে কার্যসিদ্ধি'। |
বেশি যদি খেতে চাও, কম খাও তবে | পরিমিত আহারে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। |
বেহায়ার বালাই নেই | বেহায়ার লাজলজ্জা, মান-অপমানবোধ এসবের বালাই নেই; পাঠান্তর- 'বেহায়ার দু'কান কাটা'। |
বেহায়ার নেই লাজ নেই অপমান সুজনের এককথা মরণ সমান | বেহায়া কোন কিছুতেই লজ্জা বা অপমান বোধ করে না; ভাললোককে একটা রূঢ় কথা বললে সে মরমে মরে যায়। |
বৈদ্যনাথের ষাঁড় | নিস্কর্মা লোক; বিনাকাজে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়; সমতুল্য- 'গোকুলের ষাঁড়'। |
বৈরিতা অন্যকে আঘাত করে, কিন্তু নিজে আহত হয় | শত্রুতায় কোনপক্ষেরই মঙ্গল হয় না; তুলনীয়- 'ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়'। |
বোকা কথা বলে জ্ঞানী শোনে | বোকা ভাবে সে সব জানে অন্য কিছু জানে না তাই তার অন্যকে শোনানোর আগ্রহ বেশি; জ্ঞানী ভাবে সে কিছু জানে না তাই অন্যের কাছ থেকে তার শোনার আগ্রহ বেশি হয়; পাঠান্তর- 'বোকা কথা বলে বেশি শোনে কম, জ্ঞানী কথা বলে কম শোনে বেশি'। |
বোকা তার বোকামির জন্য শাস্তি পায় জ্ঞানী তার জ্ঞানের জন্য পুরস্কৃত হয় | অর্থ স্পষ্ট |
বোকাবন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমানশত্রু থাকা ভাল | বোকাবন্ধুর কাছে থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে; উপকার করতে এসে বেশ অপকার করে ফেলে। |
বোকায় বিশ্বাস করে জ্ঞানী বিচার করে | বোকা যা শোনে তাই বিশ্বাস করে জ্ঞানী যা শোন তাে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে গ্রহণ করে। |
বোকা সহজেই রেগে যায়, জ্ঞানী ধৈর্যশীল হয় | অর্থ স্পষ্ট |
বোকা সাজতে গেলে বুদ্ধিমান হতে হয় | বোকা হওয়ার জন্য কোন কসরৎ লাগে না, কিন্তু বোকা সাজার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়। |
বোকা হাসে অন্যের হাসি দেখে | বোকা না বুঝে দলে পড়ে হাসে; দেখন হাসি। |
বোকার কাছে টাকা থাকে না | টাকা খরচে বোকা চিন্তাভাবনা করে না; বোকারা বেশিদিন অর্থ ধরে রাখতে পারে না, তা সে প্রতারিত হোক বা সহজভাবে সব খরচ করুক। |
বোকার জিভ/মুখ বুদ্ধির আগে ছোটে | আবোলতাবোল/ ভুলভাল বকার জন্য বুদ্ধির কোন প্রয়োজন হয় না। |
বোকার সাথে মোকাবিলা করা বোকামি | সেক্ষেত্রে অনর্থ ঘটতে পারে |
বোঝার ওপর শাকের আঁটি১ | অনেক বোঝার উপর আরও কিছু চাপানো; বড়কাজের সাথে ছোটকাজ চাপানো। |
বোঝার উপর শাকের আঁটি২ | বিপুলভারের উপর অতিরিক্ত সামান্যভারও অতিভারী মনে হয়। |
বোঝার উপর শাকের আঁটি৩ | বিপুলভারের উপর অতিরিক্ত সামান্যভার কিছুই মনে হয় না; তুলনীয়- 'উনিশ-বিশ'; 'যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন'। |
বোধা যেদিকে যেতে সাহস করে না অবোধা সেদিকে ধায় | চালাক এক পা এগুতে দুবার ভাবে; বোকার ভাবাভাবির আপদ বালাই নেই; সে ভাববার আগেই পা বাড়ায়। |
বোধারে বোঝানো যায় আকারে প্রকারে; অবোধারে বোঝাতে হয় চড়-চাপড়ে | আকার ইঙ্গিতেই বুদ্ধিমান বুঝতে পারে; বোকাকে বারবার পাখি পড়ানোর মত শিখাতে হয়। |
বোবা কালার একগুণ বাড়া | কালা শোনে না, কিন্তু বলতে পারে; বোবা কিছুই পারে না। |
বোবা যখন পুডিং খায় সে জানে কটা খেয়েছে | কোন ঘটনার নীরব দর্শক সবকিছু জানে। |
বোবার শত্রু নেই১ | পরের বিষয়ে নাক না গলালে কারো বিরাগভাজন হতে হয় না; তুলনীয়- নিরবতা হিরণ্ময়'। |
বোবার শত্রু নেই২ | যে প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে তার সমালোচক নাই। |
বৌ না বোবা বৌ না বাবা | নতুন-বউয়ের মুখে কথা সরে না; গৃহিণী হলেই তার ঝঙ্কারে সবাই ব্যতিব্যস্ত। |
ব্যক্তিত্বহীন মানুষের শিরদাঁড়া নেই | ব্যক্তিত্বহীন মানুষ প্রতিবাদী হয় না; সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। |
ব্যতিক্রম নিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করে | ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে নিয়ম হয় না; বিশৃঙ্খলা থেকে অনুশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। |
ব্যর্থ মানুষ দুইপ্রকার- একদল চিন্তা করে নি কাজ করেনি; আরেক দল চিন্তা করেছে কাজ করেনি | কাজ না কর'লে বা কার্যসিদ্ধি না হলোে সাফল্যের প্রশ্ন নেই। |
ব্যর্থতা সাফল্যের ভিত্তি/সোপান | ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সাফল্য আসে; প্রথমবারে সাফল্য নাও আসতে পারে; দ্বিতীয়বার চেষ্টা করা উচিত; 'একবার না পারিলে দেখ শতবার। |
ব্যবহারে মানুষকে চেনা যায় | মানুষের পরিচয় তার ব্যবহারে। |
ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন; বৃষ্টি হবে শীঘ্র জান- খনা | ঘন ঘন ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
ব্যাঙ বলে সাপকে কারও কড়ি ধারি না | অক্ষমের নিষ্ফল আস্ফালন; বাগাড়ম্বর। |
ব্যাঙ মারতে তীরধনুক/সোনার কাঁড় (তীরধনুক) | সামান্য কাজে বিরাট আয়োজন; সমতুল্য- 'মশা মারতে কামান দাগা', 'শানকির উপর বজ্রাঘাত'। |
ব্যাঙের আধুলি১ | সামান্য ধনের গর্বে গর্বিত; (উৎসকাহিনী- একদিন এক ব্যাঙ একটা আধুলি কুড়িয়ে পায়; সে আধুলিটা উপর বসে থাকত; পথ দিয়ে যে যেত অহঙ্কারে তাকেই সে লাথি মারত; একদিন এক পথিককে লাথি মারায় সে তার কারণ খুঁজে বুঝতে পারে আধুলিটাই তার গর্বের কারণ; সেই অহঙ্কারে সে সবাইকে লাথি মারে; ব্যাঙ ঘুমিয়ে পড়লে পথিক আধুলিটা চুরি করে নিয়ে যায়; তারপর থেকে ব্যাঙ লাথি মারা বন্ধ করে; সামান্য ধন পেয়ে কেউ অতিরিক্ত গর্বিত হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।) |
ব্যাঙের আধুলি২ | যে ঋণ কোনদিন পরিশোধ হয় না; (উৎসকাহিনী- এক বোকাব্যাঙ একদিন একটা আধুলি কুড়িয়ে পায়; আধুলিটা পেয়ে নিজেকে বিরাট ধনী ভাবতে শুরু করে; সে মহাজনী কারবারে নামিতে চায়; এক চতুরলোক বোকাব্যাঙের কাছ থেকে আধুলিটা ঋণ নেয় এই সর্তে যে পরের দিন থেকে প্রতিদিন বাকী ঋণের অর্ধেক সে চিরদিন ধরে দিয়ে যাবে; বোকাব্যাঙ সানন্দে লোকটাকে আধুলিটা ঋণ দেয়; খাতক প্রথমদিন- একসিকি ফেরত দেয়, সিকি বাকী থাকে; দ্বিতীয়দিন দুআনা ফেরত দেয়, দু-আনা বাকী থাকে; তৃতীয়দিন একআনা ফেরত দেয়, একআনা বাকী থাকে; চতুর্থদিন দুপয়সা ফেরত দেয়, দুপয়সা বাকী থাকে; পঞ্চমদিন একপয়সা ফেরত দেয়, একপয়সা বাকী থাকে; ষষ্টদিন আধপয়সা ফেরত দেয়, আধ-পয়সা বাকী থাকে; সপ্তমদিন সিকি-পয়সা ফেরত দেয়, সিকি-পয়সা বাকী থাকে; এই ভাবে দেখা যায় লাভ করা দূরে থাকুক বোকা ব্যাঙ তার আধুলিটাই ফেরত পায় নি। |
ব্যাঙের মাথায় ছাতি ধরে | সাহায্যের প্রয়োজন নেই তবু করা চাই; তুলনীয়- 'তেলামাথায় তেল দেওয়া'। |
ব্যাঙের শোকে সাপের চোখে জল | মেকি শোকপ্রকাশ। |
ব্যাঙেরা যেখানে মকমক করে সেখানে চূপ করে থাকাই শ্রেয় | অজ্ঞানের সুরে সুর মেলাতে নেই; মূর্খের দলে নাম লেখাতে নেই। |
ব্যাধিতস্যৌধং পথ্যম | রোগীর পক্ষে ওষুধই পথ্য। |
ব্যাধিতস্যৌধং পথ্যম নিরুজস্য কিমৌষধে | রোগীর পক্ষে ওষুধের প্রয়োজন; সুস্থব্যক্তির ওষুধের কি প্রয়োজন। |
ব্যাধির চেয়ে আধি হল বড়ো | মনের অসুখ থেকে শরীরে অসুখ বাঁধে; মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে অসুখ উৎপন্ন হয়। |
ব্রণ চুলকে ঘা করা | সামান্য বিষয়কে নাড়াচাড়া করে গুরুতর বিষয় করে তোলা; তুলনীয়- 'বাঘের পাছায় ঘা'। |
ব্রহ্মহাহপি নরঃ পূজ্যো যস্যাস্তি বিপুলং ধনম্ | ধনশালীব্যক্তিও যদি ব্রহ্মঘাতীও হয়, লোকে তাকে মেনে চলে। |
ব্রাহ্মণ আর চণ্ডালে হাতী আর বিড়ালে | উত্তমের সাথে অধমের তুলনা চলে না; সমতুল্য- 'কিসে আর কিসে, সোনা আর সিসে'; 'কোথায় রাজা ভোজ আর কোথায় গঙ্গুতেলী'। |
ব্রাহ্মণস্য ব্রাহ্মণো গতি | ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণের আশ্রয় নেবে; তার থেকে স্বজাতিই স্বজাতির শরণ্য; স্বজাতিতত্বের প্রতি যুক্তি। (বর্তমানে অচল এবং পরিত্যজ্য।) |
ভ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ভক্তবিটেল | ভণ্ডভক্ত। |
ভক্তিতে ভগবান তুষ্ট | ভক্তি পেলেই ভগবান তুষ্ট হন; তোষামোদে সবাই তুষ্ট। |
ভক্তিহীন ভজন আর লবনহীন ব্যঞ্জন/রন্ধন | লবণহীন ব্যঞ্জন যেমন বিস্বাদ, ভক্তিহীন ভজন তেমনই নিস্ফল। |
ভক্ষ্যমাণো নিরুদর সুমেরুরপি হীয়তে | আয় না করে সঞ্চয় ভেঙে খেতে থাকলে সুমেরুপর্বতের মত সঞ্চয়ও ফুরিয়ে যাবে। |
ভক্তের ভগবান | ভক্তের কাছে ভগবান বাঁধা; ভক্তের ডাকে ভগবান সাড়া দেন। |
ভগবৎ কৃপাহি কেবলম্ | ঈশ্বরের করুণাই একমাত্র কাম্য। |
ভগবতি বসুধে কথং বহসি | ধরিত্রী, বদপ্রকৃতির মানুষে ভরে গেছে; তাদের ভার তুমি মা আর বহন করছো কেনো? বক্তার খেদোক্তি; সমতুল্য- 'ও গঙ্গা তুমি বইছো কেন?' |
ভগবান অন্ততঃ ব্যয়বহুল পাপ করা থেকে গরিবকে রক্ষা করেন | অভিজ্ঞতায় বলে বড়লোকের আড়ম্বরে অসৎ মানসিকতার প্রতিফলন বেশি ঘটে; গরিবলোকেরা বেশি সৎ হয়। |
ভগবান তৎক্ষনাৎ সব জায়গায় উপস্থিত হতে পারেন না, তাই তিনি মা সৃষ্টি করছেন | মা হলেন পার্থিবজগতে জগৎজননীর প্রতিনিধি; 'মা' শব্দটি হল ভাবজগতের সবথেকে ছোটশব্দ এবং সবথেকে ব্যাঞ্জনাময় বড়শব্দ। |
ভগবান ভূততাং গতঃ | চক্করে পড়লে দুর্ভোগ সকলকে পোহাতে হয়, যেমন দশচক্রে পড়ে ভগবান নামে ব্রাহ্মণের যে দশা হয়েছিল; স্বার্থের জগতে একজনকে তুষ্ট করলে হয় না সঙ্গে যে দুষ্টচক্র আছে তাদেরকেও সন্তুষ্ট করতে হয়;'দশচক্রে ভগবান ভূত' দ্রষ্টব্য। |
ভগবান মানুষকে দুটো কান একটা মুখ দিয়েছেন; সুতরাং শোন বেশি, বল কম | ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে জ্ঞানীব্যক্তিরা বলেন কম শোনেন বেশি। |
ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন | ঈশ্বরের ইচ্ছা অনিচ্ছা বিষয়ে আমরা জানি না, তবে ভগবানে বিশ্বাস রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হয় না। |
ভগবানে ভক্তি, ভয় ও স্বার্থের ভালবাসার কারণে জন্ম নেয় | মৃত্যুভয় না থাকলে ভগবানের জন্ম হত না; কলেরা, বসন্তে মানুষ মারা যায়; সেইকারণে শীতলা মা ওলাবিবির জন্ম হয়েছে; সর্দি বা কাশিতে মানুষ মারা যায় না; সেইকারণে সর্দিদেবী, কাশিবিবির জন্ম হয় নি। |
ভগবানের আসন বটপত্র | সাধারণ ঘরে গণ্যমান্যব্যক্তি এলে গৃহস্থ অনন্যোপায়ে অতিথিকে একটি সাধারণ আসন এগিয়ে দিয়ে এই কথা বলে; (উৎসকাহিনী- প্রলয়শেষে ভগবান শ্রীবিষ্ণু অনন্যোপায় হয়ে প্রলয়সলিলে বটপাতায় শুয়েছিলেন।) |
ভগবানের দেখা নাই বলে ভগবানের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা | সহজলভ্য হলোে ভগবান আমাদের মত সাধারণ মানুষ হয়ে যেতেন; সোনা সহজে পাওয়া যায় না বলে সোনার দাম। |
ভগবানের মার দুনিয়ার বার | বিধির বিধান এড়ানো যায় না; অমোঘ পরিণাম অনিবার্য; তুলনীয়- মারে কৃষ্ণ রাখে কে? |
ভগ্নগৃহে বাস দুঃখ বারোমাস | ভাঙা ঘরে থাকলে- গ্রীস্মকালে গরমে পুড়তে হয়; বর্ষাকালে বৃষ্টির জলে ভিজতে হয়; শীতকালে উত্তরে হাওয়ার ঠাণ্ডায় জমে যেতে হয়; কষ্ট দুঃখীর সঙ্গ ছাড়ে না, সবসময় আঠার মত লেগে থাকে; পাঠান্তর- 'ভাঙ্গাঘরে বাস ভাবনা বারোমাস'। |
ভজন নেই ভোজন আছে | ঈশ্বর উপাসনা নামমাত্র; ভোগসামগ্রীর উপকরণে উপাসনাস্থল পরিপূর্ণ থাকে; ভোগবাদীদের ভোগসর্বস্বতার প্রতি তির্যকোক্তি। |
ভজনের খোঁজ নেই, ভোজন ছত্রিশ জেতের | ধর্মের ভাণকারী সম্প্রদায়বিশেষের প্রতি তির্যোক্তি। |
ভটচায্যির পাঁতি (পাঁজি/পুঁথি) বর্ষার ছাতি | পাঁজি বৃষ্টিতে ছাতার কাজ করে; ছাতা কুকুর তাড়াতে কাজে লাগে; যোগ্যবস্তুর অসদব্যবহার। |
ভণ্ড ব্রাহ্মণের ভড়ং বেশি | বেশি ধার্মিকতা দেখাতে ভণ্ড ব্রাহ্মণ বেশি সাজগোজ করে, বেশি আচার করে; তুলনীয়- 'অব্রাহ্মণের দীর্ঘফোঁটা'। |
ভদ্রলোক গাছে ফলে না। | মার্জিত, পরিশীলিত লোক খুব কম হয়, গাছের ফলের মত সহজলভ্য নয়। |
ভদ্রলোক গায়ে লেখা থাকে না | আচরণে বোঝা যায়- কে ভদ্রলোক এবং কে ভদ্রলোক নয়। |
ভদ্রলোকের আস্তাকুঁড় ভালো | ভদ্রলোকের আশ্রয়ে থাকা ভালো তাতে সম্মান হানি হয় না। |
ভদ্রলোকের সাথে শখ্যতা সাফা জলের মত স্বাদহীন | ভদ্রলোকেরা পরস্পরের মধ্যে পরিশীলিত দূরত্ব বজায় রেখে চলে; পরস্পরে্র মধ্যে নিবিড় অন্তরঙ্গতার ছোঁয়া থাকে না। |
ভবচন্দ্র রাজার গবচন্দ্র মন্ত্রী | হাঁদারাম রাজার গাধারাম মন্ত্রী; পাঠান্তর- 'হব রাজার গব মন্ত্রী'; (উৎসকাহিনী- প্রবাদের ভবচন্দ্র কামরূপের রাজা গোবিন্দচন্দ্রের পুত্র; আসল নাম উদয়চন্দ্র; ডাকনাম ভবচন্দ্র; তিনি চালাকচতুর ছিলেন না; তাঁর মন্ত্রীও ছিলেন তাঁরই মত হাবাগবা; সেইজন্য ভবের যায়গায় হব (হাবারাম অর্থে) এবং মন্ত্রীর নির্বুদ্ধিতার জন্য গব (গবারাম অর্থে) প্রবাদটার উতপত্তি, যার আলঙ্কারিক অর্থ- ব্যক্তি ও তার অনুচর, দুজনেই সমান গবেট, সমান অপদার্থ।) |
ভবতি বিজ্ঞতম ক্রমশো জনঃ | ক্রমশঃ অভিজ্ঞতার মাধমে মানুষ বিজ্ঞে পরিণত হয় অর্থাৎ হঠাৎ করে কেউ একদিনেই বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে না; সমতুল্য- 'গাইতে গাইতে গায়েন বাজাতে বাজাতে বায়েন'। |
ভবন্তু্যদয়কালে হি সৎকল্যাণপরম্পরাঃ | উন্নতির কালে সৎকাজগুলি পরপর আসতে থাকে। |
ভবানীন্দ্রকুটভঙ্গিম ভবো বেত্তি ন ভূধরঃ১ | পাৰ্ব্বতীর ভ্রুভঙ্গী একমাত্র শিবই বোঝেন পৰ্ব্বতরাজ বোঝেন না। |
ভবানীন্দ্রকুটভঙ্গিম ভবো বেত্তি ন ভূধরঃ২ | প্রকৃত মৰ্ম্মজ্ঞই মর্মীর মনের কথা বুঝতে পারেন; তুলনীয়- 'কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে'। |
ভবি ভুলিবার নয় | কারো জেদ ভাঙা না গেলে বা কাউকে প্রতিজ্ঞা থেকে টলানো না গেলে প্রবাদটি উক্ত হয়; (উৎসকাহিনী- ভবানী নামে এক বাচ্চামেয়ে কিছু পাওয়ার জন্য বায়না করছিল; বাবা-মা নানারকম জিনিস দিয়ে তার জেদ ভাঙার চেষ্টা করে; এমনকি শেষপর্যন্ত মারধরও করে; কিন্তু নাছোড়বান্দা মেয়ে কিছুতেই তার জেদ ছাড়ছিল না; সে খালি বলে- 'তেল দাও, সিঁদুর দাও ভবি ভোলার নয়'; তার থেকেই 'ভবি ভোলার নয়' প্রবাদের সৃষ্টি; পাঠান্তর- 'ভবিকে ভোলানো যায় না'। |
ভবিতব্যং ভবত্যেব | যা হবার তাই হবে। |
ভবিতব্যানাং দ্বারাণি ভবন্তি সর্বত্র | ভবিষতের দ্বার সর্বত্র উন্মুক্ত; যা অবশ্যম্ভাবী তা যেকোন স্থানে, যেকোন কালে যেকোন অবস্থায় ঘটতে পারে; তুলনীয় 'ললাটের লিখন কে করে খণ্ডন'। |
ভবিষৎকে জানার জন্যই অতীত জানা উচিত | অতীতের পাতায় ভবিষ্যতের ঠিকানা লেখা থাকে; অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায়। |
ভবের ভবানী পান্তাভাতে আমানি | দরিদ্র মানুষগুলির আহারের সম্বল একমাত্র জলে ভিজানো বাসি ভাত; ভবের সাথে ভবানীর যেমন সম্পর্ক দরিদ্র মানুষগুলির সাথে আমানিরও তেমন সম্পর্ক। |
ভবের খেয়া উজান বাওয়া | জীবনলীলা; বেঁচে থাকার লড়াই। |
ভবের খেলা শেষ | ভবলীলা সাঙ্গ; সংসারের খেলা শেষ; মৃত্যু; পাঠান্তর- 'ভবের বাজি ভোর'। |
ভয় পেলে ভয় পিছু নেয় | ভয় মনের কোণে গোপনে বাসা বাঁধে; না তাড়ালে নিজের ইচ্ছায় ভয় নড়ে না। |
ভয়ে পিঁপড়ার গর্তে লুকানো | কিছু ভয় নেই বা কিছুমাত্র ভয় করি না অর্থে ব্যবহৃত হয়। |
ভরা কলসী নড়ে না | জ্ঞানীব্যক্তিদের জ্ঞানের জাহির নেই; তুলনীয়- 'পূর্ণকুম্ভো ন করোতি শব্দম্'; পাঠান্তর- 'ভরা কলসি বাজে কম'। |
ভরাডুবির মুঠা লাভ | যার সবদিক বিনষ্ট হচ্ছে তার একটা দিক কোনরকমে রক্ষা করা। |
ভরাথলি খাড়া থাকে | জ্ঞানীব্যক্তি মাথা নোয়ায় না। |
ভরানদী ছোটে না | জ্ঞানীব্যক্তি ভেবেচিন্তে ধীরেসুস্থে কাজ করে; পাঠান্তর- 'ভরা নদী ধীরে বহে'। |
ভরাপেটে মণ্ডা তেতো | আকাঙ্ক্ষা মিটে গেলে ভোগের জিনিস মন্দ লাগে। |
ভরাপেটে মুড়ি শান্ত | ক্ষিদে পেলে মাথা ঠিক থাকে না। |
ভরাভাতে দাগা দেওয়া | কাজ শেষ হয়ে আসার মুখে বাধা দিয়ে তাকে নষ্ট করা। |
ভরাহাত কাক/চিলকে ডাকে | লোভজনকবস্তু সামনে থাকলে লোভী আকৃষ্ট হবেই; লোভের আকর্ষণ এড়ানো দুঃসাধ্য। |
ভরার (বজরাজাতীয় নৌকা) মেয়ে | নীচবর্ণের মেয়ে; (উৎসকাহিনী- ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলে কৌলিন্যপ্রথার জন্য উচ্চবর্ণের মেয়ে পাওয়া দুর্লভ ছিল; ফলে নানা অঞ্চল থেকে বজরা করে সেখানে মেয়ে এনে বিয়ে দেওয়া হত; এদের বলা হতো 'ভরার মেয়ে'; সাধারণতঃ এরা নীচুবর্ণের বা ভিন্নধর্মের সুন্দরী মেয়ে হতো; সেইকারণে 'ভরার মেয়ে' বললে নীচুবর্ণের মেয়ে বোঝাত।) |
ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ | ছাইচাপা আগুনের মত; সামান্য বাতাসে ছাই সরলেই আগুন বেরিয়ে পড়ে; তুলনীয়- 'গজভুক্তকপিত্থবৎ'; 'মেঘান্তরিতরৌদ্রবৎ'। |
ভস্মে ঘি ঢালা১ | অপ্রয়োজনে মহার্ঘবস্তু নষ্ট করা; আগুনে ঘি ঢাললে আগুন জ্বলে ওঠে; আগুনে পুড়ে ঘি আহুতির কাজ করে; কিন্তু ভস্মে ঘি ঢাললে সেই ফললাভ হয় না; কাজে সময় কাজ না করে কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর কাজ করলে কোন ফললাভ হয় না। |
ভস্মে ঘি ঢালা২ | অযোগ্যেকে মহার্ঘবস্তু দান করা। |
ভাঁড়ে নেই ঘি, ঠকঠকালে হবে কি১ | ঘরেতে অন্নাভাব; তার জন্য হাহুতাশ। |
ভাঁড়ে নেই ঘি, ঠকঠকালে হবে কি২ | ভিতরে বিন্দুমাত্র সারবস্তু নেই এবং তা জানাবার ব্যর্থ প্রয়াস। |
ভাঁড়ে মা ভবানী | ঘরে কিছুমাত্র অন্ন বা অর্থের সংস্থান নেই; সংস্কারবশতঃ হিন্দু মালক্ষ্মীরা 'নেই' শব্দটা ব্যবহার করেন না; চাল ফুরালে বলেন ঘরে 'চাল বাড়ন্ত'; ঘরে অন্ন বা অর্থের সংস্থান না থাকলে বলেন- 'ভাঁড়ে মা ভবানী') |
ভাই বড় ধন রক্তের বাধঁন, যদিও পৃথক হয় নারীর কারণ | রক্তের টান বড় টান কেউ তা অস্বীকার করে না; বাইরে থেকে নারী এসে সেই বাঁধন ছেঁড়ে। |
ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই | নিজের লোক নিজের হয় না; প্রায়শঃই ভাইয়ে ভাইয়ে মিল থাকে না; ঝগড়াঝাঁটি করে হাঁড়ি আলাদা করে; নিকট আত্মীয়দের মধ্যে নিত্য ঝগড়াঝাঁটি লেগে থাকে; সমতুল্য-'আন সতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে'; 'আপন কখনো আপন হয় না'; 'কাছের মানুষ কাছের নয়'; 'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- ভাই বড় ধন রক্তের বাধঁন; পাঠান্তর- 'ভাইয়ের শত্রু ভাই মাছের শত্রু ছাই'; 'ভাইয়ে ভাইয়ে লাঠালাঠি'। |
ভাই ভাই মেরে যাই তো ফিরে চাই | ভাতৃস্নেহ সম্পূর্ণ এক ভিন্নস্বাদের অনুভূতি; ভাই ভাইকে মারে আবার চলে যাওয়ার সময় সহানুভূতির টানে একবার পিছনফিরে তারদিকে ফিরে তাকায়; যত বিবাদই থাক-না-কেন ভাই বিপদের পড়লে ভাই মুখ ফিরিয়ে থাকে না, কাছে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে; তুলনীয়- 'জলের চেয়ে রক্ত গাঢ়'; 'রক্তের টান বড় টান'। |
ভাইয়ের ভাই ডানহাত দিলে বাঁহাত পাই | পরস্পরের সহযোগিতায় আমরা বাঁচি; লোককে সাহায্য কর লোকে তোমাকে সাহায্য করবে; সমতুল্য- 'আমার হাতটা ধর তহলেই তোমার হাতটা আমার ধরা হবে'। |
ভাইয়ের ভাত ভাজের হাত | যে বোন ভাইয়ের অন্নে প্রতিপালিত হয় সে ভাই-বৌয়ের কর্তৃত্ব মেনে নেয়। |
ভাইয়ের শত্রু ভাই মাছের শত্রু ছাই | 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই' দ্রষ্টব্য। |
ভাগাড়ে গরু পড়া | ভাগাড়ে যেমন মরাগরুর মাংসের লোভে শকুন চারদিকে উড়তে থাকে তেমনি লোভজনকবস্তু লাভের আশায় বহুলোক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। |
ভাগাড়ে মড়া পড়ে, শকুনির টনক/মাথা নড়ে১ | ভাগাড়ে মড়া পড়া দেখলেই শকুন তৎক্ষনাৎ জানতে চেষ্টা করে ব্যাপারটা কী। |
ভাগাড়ে মড়া পড়ে, শকুনির টনক/মাথা নড়ে২ | কোনবিষয়ের আয়োজন হচ্ছে দেখে গ্রাহকরা আপনাহতেই আগে থেকে এসে উপস্থিত। |
ভাগের কড়ি সাঙ্গা (সঙ্গী) বয় | টাকার থলি যত ভারীই হোক হারাবার ভয়ে ব্যক্তি নিজে বহন করে; কিন্তু থলির অর্থে যদি ভাগীদার থাকে তবে সে স্বচ্ছন্দে ভারীর মাথায় চাপায় কারণ গেলে সবার যাবে, আর থাকলে সবার থাকবে। |
ভাগের ভাগ পেলে না খেয়েও চিবিয়ে ফেলে১ | লোকে ভাগের জিনিস কিছুতেই ছাড়ে না; খেতে যদি না পারে তবে সেই খাবার চিবিয়ে ফেলে দেবে। |
ভাগের ভাগ পেলে না খেয়েও চিবিয়ে ফেলে২ | প্রয়োজন না থাকলেও ভাগের অংশ অন্য ভাগীদারকে দেবে না বরং অন্যত্র ফেলে দেবে; ন্যায্যভাগ কিছুতেই ছাড়া নেই। |
ভাগের মা গঙ্গা পায় না১ | ভাগাভাগির সংসারে একাধিক সন্তানের মা শেষসময়ে গঙ্গাযাত্রা করার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মারা যায়; সন্তানেরা একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলার জন্য শেষপর্যন্ত তার আর গঙ্গালাভ হয় না। (উৎসকাহিনী- অতীতে গঙ্গাজল স্পর্শ করে মরার জন্য হিন্দুঘরের মুমূর্ষুব্যক্তিকে অন্তিমসময়ে গঙ্গাতীরে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার জলে পা ডুবিয় রাখা হতো।) |
ভাগের মা গঙ্গা পায় না২ | ভাগাভাগির কাজ কেউ আন্তরিকভাবে দেখে না বলে কাজ নষ্ট হয় বা সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয় না। |
ভাগ্যং ফলতি সর্বত্র, ন চ বিদ্যা ন পৌরুষম্ | বিদ্যা নয়, পৌরুষ নয়, ভাগ্য সর্বত্র ফলবতী হয়, যেমন- সমুদ্রমন্থনে বিষ্ণুর হয় লক্ষ্মীলাভ; ব্রহ্মার হয় সরস্বতীলাভ; আর শিবের জোটে গরল; বিরুদ্ধ উক্তি- 'উদ্যোগি্নাং পুরুষসিংহম উপৈতি লক্ষ্মী'; 'পরুষ্কারেণ বিনা দৈব ন সিদ্ধতি; 'অজ্ঞানে আকস্মিক ও দৈব ঘটনার যুক্তি খাড়া করে'; 'লক্ষ্মী দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষা বদন্তি' ইত্যাদি। |
ভাগ্যবানের বউ মরে অভাগার গরু মরে | বউ গেল নতুন বউ পাওয়া যায় সঙ্গে গাঁটে কিছু পয়সাও আসে- সেই অর্থে সে ভাগ্যবান; গরু মরে গেলে নতুন গরু পেতে গাঁটের পয়সা খরচ করে কিনতে হয়- সেই অর্থে সে অভাগা। |
ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়১ | ভাগ্যবানের কাজ বিনা আয়াসে সম্পন্ন হয়; পাঠান্তর- 'ভাগ্যবানের নৌকা ভগবানে বায়'। |
ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়২ | লক্ষ্মীর কৃপায় সৌভাগ্যশালীরা কখনো বিপদে পড়ে না। |
ভাগ্য মানুষকে একত্রিত করে | বিপদে পড়লে বাঁচার তাগিদে মানুষ- এককাট্টা হয়; সঙ্ঘবদ্ধ হয়; পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে; ডানহাত বাঁহাতকে ধরতে চায়। |
ভাগ্য সবার দ্বারে একবার আসে, উপযাজক হয়ে নয়, আহ্বানে | মানুষ ডাকলে সৌভাগ্যদেবী সবাইকে সু্যোগ দিতে একবারই আসেন; সেই সুযোগ নিতে হয়। |
ভাগ্য সাহসীর পক্ষে/সঙ্গে থাকে | পরিশ্রমীদের প্রতি ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্না; যারা ঝুঁকি নিতে সাহস করে তারা জীবনে সফল হয়; তুলনীয়- 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'। |
ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন | অদৃষ্টে যা আছে তা ঘটবেই; সমতুল্য- 'অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল'; 'নিয়তি কেন বাধ্যতে'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভাগ্যের ফের কাপুরুষের উক্তি'; 'ভাগ্যং ফলতি সর্বত্র, ন চ বিদ্যা ন পৌরুষম্' দ্রষ্টব্য। |
ভাগ্যের ফের কাপুরুষের উক্তি | অক্ষম অকর্মণ্যরা ভাগ্যের দোহাই দেয়। |
ভাঙবে তবু মচকাবে১ | প্রশংসার্থে- অবসন্ন হবে তবু হীনতা স্বীকার করবে না; কোনো অবস্থাতেই নতি স্বীকার বা আপোস করবে না; মনের জোর থাকলে সংকল্প থেকে টলে না; তুলনীয়- 'থিয়ে তল যাবে তবু নুয়ে ডুব দেবে না'; 'মরে তবু মর্যাদা হারে না'; 'প্রাণ যায় মান না যায়' ইত্যাদি; বিপরীত প্রবাদ- 'মচকায় কিন্তু ভাঙে না'; পাঠান্তর- 'ভাঙে তবু মচকায় না'। |
ভাঙবে তবু মচকাবে না২ | নিন্দার্থে- গোঁয়ারব্যক্তি সদুপদেশ নেয় না। |
ভাঙাগাঁয়ের মোড়ল | গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ায় যে গ্রামে লোক নেই বললেই চলে তার মোড়ল ভাবার্থে- নগণ্যব্যক্তি। |
ভাঙাঘর ছেয়ে দেওয়া | বিপদে সাহায্য করা; সমতুল্য- 'ছাতা দিতে মাথা বাঁচানো'। |
ভাঙা ঘরে চাঁদের/জোছনার আলো, যেদিন যায় সেদিন ভালো | কষ্টেসৃষ্টে দিন চালানো; একটা দিন সুখে কাটলে সেটা মন্দের ভালো। |
ভাঙাঘরে বাস দুঃখ/ভাবনা বারোমাস১ | সারাবছর গরম, ঝড়বৃষ্টি ও শীতের প্রকোপের আশঙ্কায় দিন কাটাতে হয়; তুলনীয়- 'নদীতীরে বাস ভাবনা বারোমাস'। |
ভাঙাঘরে বাস দুঃখ/ভাবনা বারোমাস২ | অর্থের টানাটানিতে সবসময়ে মনোকষ্ট থাকে। |
ভাঙাঘরে ভূতের বাসা | বুড়োবয়সের অশক্ত শরীরে নানাব্যাধি এসে বাসা বাঁধে। |
ভাঙা পা খানায় পড়ে | অক্ষমের ভুল বেশি হয়; বিপদ ঘরে ঢোকার জন্য যেন গর্ত বা ফাটল খোঁজে; যেদিকে গর্ত পায় সেইদিকেই বিপদ ঢোকে; পাঠান্তর- খোঁড়ার পা গর্তে পড়ে'। |
ভাঙাবন্ধুত্ব জোড়া লাগে না | মন একবার বিগড়ালে আর ভালো হয় না; সম্পর্ক একবার ভাঙলে পুরানো অবস্থায় ফেরে না। |
ভাঙা মঙ্গলচণ্ডী কুস্বপনের গোড়া১ | মঙ্গলদায়িনী মঙ্গলচণ্ডী মা এমনিতে ভালো কিন্তু মুর্তি ভেঙে গেলে তিনি নানা কুস্বপ্ন দেখিয়ে সেবকের মনের শান্তি নষ্ট করেন। |
ভাঙা মঙ্গলচণ্ডী কুস্বপনের গোড়া২ | ভালোলোকের মাথা একবার বিগড়ালে নান অনর্থ বাঁধায়। |
ভাঙাশাঁখা জোড়া লাগে না১ | একবার চরিত্র কলঙ্কিত হলে পুরানো সম্মান ফিরে পাওয়া যায় না। |
ভাঙাশাঁখা জোড়া লাগে না২ | একবার মন বিক্ষিপ্ত হলে পুরানোস্থানে ফিরে আসে না। |
ভাঙাশাঁখা জোড়া লাগে না৩ | ভাঙাসম্পর্ক মেরামত করা যায় না। |
ভাঙাহাটে ঢাক পেটানো | ভাঙা হাটে লোক থাকে না লক্ষণায় শোনার কেউ নেই; ব্যর্থ প্রয়াস। |
ভাঙাহাটের খরিদ্দার | নগণ্যক্রেতা। |
ভাঙে তবু মচকায় না১ | প্রশংসার্থে- দৃঢ়চরিত্রের লোক কখনো মাথা নোয়ায় না। |
ভাঙে তবু মচকায় না২ | নিন্দার্থে- গোঁয়ার কোন উপদেশ নেয় না। |
ভাঙে না মচকায়১ | বিনয়ী ভদ্রলোক অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। |
ভাঙে না মচকায়২ | বিনয়ী ভদ্রলোক অপরের উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করে। |
ভাজা খেতে সাধ হয় তেলে বড় কড়ি | ভাল খাওয়া বা পরার সাধ আছে তবে পয়সা নেই বা পয়সা খরচে কাতর। |
ভাজা বল ভুজো বল ভাতের সমান নয় মাসি বল পিসি বল মায়ের মত নয় | ভাতের সমান কোন খাবারই নয়; মায়ের স্নেহের সাথে কার স্নেহের তুলনা হয় না। |
ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না | সরলতার ভাণ করে; তলেতলে সব জানে ও বোঝে কিন্তু এমন ভাণ করে যেন কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না; চুড়ান্ত ন্যাকামি; তুলনীয়- 'ন্যাকা আদুরে চালশে কানা, জল বলে খায় চিনির পানা'। |
ভাজে ঝিঙা বলে পটল১ | একগুণ কাজ করলে তিনগুণ বলে; সামান্য কাজ করে বিরাট করে বাড়িয়ে বলে। |
ভাজে ঝিঙা বলে পটল২ | একরকম কাজ করে, বিভ্রান্ত করতে আরেক রকম বলে। |
ভাত কখনও পেট খোঁজে না | যার প্রয়োজন সেই আগ বাড়াবে; তুলনীয়- 'তৃষ্ণাই জল খোঁজে জল তৃষ্ণা খোঁজে না'। |
ভাতকাপড়ের কেউ নয়, কিল মারার গোঁসাই | দায়িত্বপালনের যোগ্যতা নেই যন্ত্রণা দিতে মুখিয়ে থাকে; ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় না অথচ খাটাতে তৎপর; যার প্রতি যেরকম ব্যবহার করা উচিত তা না করে কেবল কর্তৃত্ব ফলানো; পাঠান্তর- 'ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল দেবার গোসাঁই'। |
ভাত খাই কাঁসি বাজাই, রগড়ের কিছু জানি না | সাদাসিদেলোক কূটকচালি/ঝুটঝামেলার মধ্যে নেই; (উৎসকাহিনী- এক ব্যক্তি কবির লড়াইয়ে ঢুলির সাথে কাঁসি বাজাতো; একদিন কোথাও কবি গাওনের পর এক শ্রোতা তাকে জিজ্ঞাসা করে, হ্যাঁ হে কাল নাকি কবির সাথে ঢুলির খুব রগড় হয়েছিল?' সে উত্তরে বলে, 'আমি ভাত খাই কাঁসি বাজাই রগড়ের ধার ধারি না'; অর্থাৎ রগড়ের কিছুই সে জানে না বা বোঝে না; যে লোক নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে পরের বিষয়ে কোন খোঁজখবর রাখে না তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়।) |
ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না১ | অন্ন দিলে বহু অনুচর আপনা থেকেই কোথা থেকে জুটে যায়। |
ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না২ | পয়সা থাকলে জিনিসের বা লোকের অভাব হওয় না। |
ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না৩ | সাধারণ লোকেরা বিত্তবানকে ঘিরে থাকে। |
ভাত দেবার ভাতার নন কিল মারার গোঁসাই | 'ভাতকাপড়ের কেউ নয়, কিল মারার গোঁসাই' দ্রষ্টব্য। |
ভাত নেই যার জাত (মান) নেই তার | যার অন্নের সংস্থান নেই যে পরের অনুকম্পার উপর নির্ভরশীল তার কোন সম্মান নেই। |
ভাত পায় না টঙ্কা বুড়ি খাট্টা খেতে চায় | ভাত জোটে কিনা সন্দেহ অথচ খাওয়ার ফর্দ প্রস্তুত। |
ভাত পায় না ব্যঞ্জন চায় | ভাত জোটে কিনা সন্দেহ তার উপর অতিরিক্ত তরিতরকারী পাওয়ার আশা; অভাগার দুরাকাঙ্খার প্রতি শ্লেষ; তুলনীয়- 'পেটে ভাত নেই কোঁচা লম্বা'; 'পেটে ভাত নেই ঠোঁটে আলতা';'পেটে ভাত নেই দাঁতে মিশি'; 'পেটে নাইকো ভাত কানে কেয়াপাত' ইত্যাদি। |
ভাত পায় না ভাতার চায় | পেটে ভাত জোটে না কিন্তু সুখের প্রত্যাশা করে; পাঠান্তর- 'ভাত পায় না গয়না চায়'। |
ভাত রোচে না রোচে মোয়া, চিড়া রোচে পোয়া পোয়া১ | যে খাবার উপকারী সেটা খাবে না, যেটা উপাদেয় সেটা বেশি খাবে। |
ভাত রোচে না রোচে মোয়া, চিড়া রোচে পোয়া পোয়া২ | যাতে ফল হয় সেই কাজ করতে পারে না বাজে কাজ করতে খুব আগ্রহ। |
ভাত সেদ্ধ হয়ে গেছে | পরিবর্তনের সু্যোগ নেই; পিছনে ফেরার সুযোগ নেই; সমতুল্য- 'বলা কথা ফেরে না', 'ছোঁড়া তীর ফেরে না'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মরার আগে পর্যন্ত ফিরে আসার সুযোগ থাকে'। |
ভাতের খিদে ভাজায় মেটানো | উৎকৃষ্টের পরিবর্তে নিকৃষ্ট দ্রব্যে সন্তুষ্ট থাকা। |
ভাতের খিদে কি ভাজায় মেটে? | প্রধানখাদ্য ভাতের অনুসঙ্গ হল ভাজা; ভাজাভুজি উপাদেয় কিন্তু ভাতের মত উপকারী ও অপরিহার্য্য নয়; সুতরাং ভাতের কাজ ভাজার দ্বারা করা সম্ভব নয়; তুলনীয়-'দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে?' |
ভাতের চাল চিবাতে যায় | যে কাজের জন্য জিনিস সংগ্রহ সেই কাজে ব্যবহার করার আগেই অন্য ব্যবহারে শেষ। |
ভাতের দ্বিগুণ কলমি/কোষ্টা (পাট) শাক | প্রয়োজনীয় জিনিসের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় জিনিসের আধিক্য; তুলনীয়- 'আগাছার বাড় বেশি'। |
ভাদুরেমেঘ বিপরীতে বয়, আসিনে ঝড় বৃষ্টি হয়- খনা | ভাদ্রমাসের মেঘ উত্তরের হাওয়ায় দক্ষিণে বইলে আশ্বিনমাসে ঝড়বৃষ্টি লেগেই থাকে। |
ভাদুরেমেঘ বিপরীত বয়, সেদিনই বৃষ্টি হয়- খনা | ভাদ্রমাসের আকাশে যদি মেঘ থাকে এবং হাওয়া উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়, সেদিন বৃষ্টি অবধারিত। |
ভাদ্রমাসের তাল | ভাদ্রমাসে কেউ তালগাছতলা দিয়ে গেলে তার মাথায় ধুপ করে পাকাতাল পড়ে; অতর্কিতে কারো পিঠে প্রচণ্ড কিল মারা হলে বলা হয়- ভাদ্রমাসের তাল পড়ল। |
ভাবি এক হয় আরেক | ভাবনায় বিভ্রান্তি; মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে দুস্তর ফারাক হয়। |
ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন | কার্যসাধন করা যাবে কিনা আগের থেকে ভেবে নিয়ে কাজে নামা উচিত; তুলনীয়- 'ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না'। |
ভাবিলে ভাবনায় ঘেরে | চিন্তায় চিন্তা বাড়ে। |
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না১ | ভেবেচিন্তে কাজ না করলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে; যেকোন কাজ করার আগে ভাবনাতে আগে কাজটা সারতে হয়। |
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না২ | ভেবেচিন্তে কাজ না করলে ভুল সংশোধনের সুযোগ নাও পাওয়া যেতে পারে; হাতের তীর বেরিয়ে গেলে আর ফেরে না। |
ভাবে গদগদ/ডগমগ তেলাকুচা/কুচো | পটলের মত দেখতে ছোট তেলাকুচা ফল পাকলে রক্তবর্ণ হয়; সেই আনন্দেই সে গদগদ বা ডগমগ; নির্গুণ ব্যক্তির আড়ম্বর; তুলনায়- 'রূপে ঢলঢল গুণে পসরা'। |
ভাবের ঘরে চুরি১ | মনে একরকম ব্যবহারে আরেক রকম। |
ভাবের ঘরে চুরি২ | মন্দকাজের জন্য অজুহাত। |
ভাবের ঘরে চুরি৩ | মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা। |
ভারত ছাড়া কথা নাই | মহাভারত মহাকাব্য সকল বিষয়ের আধার; এই কাব্যে ধর্মনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, গুণ-নির্গুণ, পাপ-পূণ্য ইত্যাদি সকল বিষয়ের কথা বলা আছে; কথায় বলে- 'যাহা নাই ভারতে তাহা নাই ভারতে'। |
ভারী নইলে ভার বয় কে১ | যে যে কাজে অভ্যস্ত বা যোগ্য সে সেই কাজ করবে। |
ভারী নইলে ভার বয় কে২ | যোগ্যের কাজ অযোগ্যদ্বারা হবার নয়। |
ভাল ওষুধ তেতো হয়১ | কড়া কথার মত কড়া ওষুধ তেতো হয়। |
ভাল ওষুধ তেতো হয়২ | কিছু ভাল পেতে গেলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়। |
ভালকথায় মানুষ বশ | মিষ্টিকথায় জগৎ তুষ্ট। |
ভালকথার ঝুটাও ভাল | মিথ্যা হলেও ভালকথায় মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না। |
ভাল করতে পারি না, মন্দ করতে পারি | ঈর্ষা, দ্বেষ, পরশ্রীকতরতার ইত্যাদি রিপুর কারণে সাধারণ মানুষ অপরের অনিষ্টটাই বেশি করে। |
ভাল করতে পারি না, মন্দ করতে পারি কি দিবি দে | দুস্কৃতির আস্ফালন- 'ভালয় ভালয় দিয়ে দে নইলে মেরে হাড়গোড় গুড়িয়ে দেব'। |
ভাল করলে মন্দ হয় | ভালো করতে চাইলেও ভাগ্যদোষে বিপরীত হয়ে যায়। |
ভালকাজ পুরস্কার প্রত্যাশা করে না | কাজটাই ভালকাজের পুরস্কার; সাফল্যই সাফল্যের পুরস্কার; পাঠান্তর- 'ভালকাজের ইনাম নেই'। |
ভাল জিনিসের অল্প ভালো | ভাল জিনিস বেশি হয় না; ভাল জিনিস বেশি ব্যবহার করা নেই; |
ভালঘোড়াকে একচাবুক ভাললোককে এককথা | ভালঘোড়ার গায়ে একবার চাবুক ঠেকালে সে ঠিক বোঝে যেতে হবে; এককথাতেই ভদ্রলোকের চৈতন্য হয়। |
ভাল নয় অতিশয় বুদ্ধি হলেই পড়তে হয় | বেশি বাড়াবাড়ি ভাল নয়; চালাকি করলে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'। |
ভালবাসায় জল যথেষ্ট, বিনা-ভালবাসায় খাদ্যও সন্তুষ্ট করে না | আপ্যায়নে আদরযত্ন থাকলে অন্যবিষয় নিয়ে কেউ গুরুত্ব দেয় না; সমতুল্য- 'বড়লোকের ভুরিভোজ থেকে গরিবের শাকান্ন ভাল'। |
ভালবাসার এমন গুণ পানের সঙ্গে যেমন চুন; কম হলে লাগে ঝাল বেশি হলে পোড়ে গাল | মাত্রাবোধ ঠিক না থাকলে ভালবাসাতেও অনর্থ হতে বেশিক্ষণ লাগবে না। |
ভালবাসার নাইকো ভার | ভালাবাসার পাত্র/পাত্রীর জন্য সব কাজ করা যায়; পাঠান্তর- 'ভালবাসার নৌকা পাহাড় বাহিয়া যায়'। |
ভালমনের মানুষ ভাল দেখতে হয় | মন ভাল হলোে চেহারায় তার প্রতিফলন হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভালমানুষের মন মুখোশের আড়ালে থাকে'। |
ভালমানুষকে ভাল কথা বজ্জাতকে কিল | ভালমানুষকে ভালকথা বলে রাজী করাতে হয় এবং মন্দমানুষকে প্রহার করে রাজী করাতে হয়। |
ভালমানুষের বাপ আটকুঁড়া | ভালোমানুষ জন্মায় না; সুতরাং তার বাবা নেই বা বাবা অপুত্রক। |
ভালমানুষের মন মুখোশের আড়ালে থাকে | ভালমানুষকে চেনা দায়। |
ভালর কোন সীমা নেই | গুণ পরিমাপযোগ্য বিষয় নয়। |
ভালর ভাগী মন্দের কেউ নয় | সুখের সময়ে সকলে ঘিরে থাকে দুঃসময়ে সবাই পালায়; সমতুল্য- 'সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয় অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়'; 'সুখের পায়রা'; সুসময়ের সখা অসময়ে চলে যায়'। |
ভালর ভাল সর্বকাল মন্দের ভাল আগে | গুণীলোকের ব্যবহার আগেও ভালো থাকে শেষেও ভাল থাকে; মন্দলোকের ব্যবহার আগে ভাল থাকে কিন্তু শেষের দিকে খারাপ হয়ে যায়। |
ভালর ভাল সবঠাঁই মন্দের ভাল কোথাও নাই | গুণীলোক সর্বত্র সমাদৃত হন এবং সববিষয়ে তার ভাল হয়; মন্দলোকের কোথাও স্থান হয় না এবং তার কিছুই ভাল হয় না। |
ভাললোকের কিল চুরি | ভদ্রলোক অপমানিত হলেও লজ্জায় প্রকাশ করে না। |
ভাল হতে পয়সা খরচ হয় না | শিষ্টাচার ভিতর থেকে আপনা-হতেই আসে, আমদানী করতে হয় না। |
ভাষার আধিক্যে/চাতুর্যে ভাব লুকায় | বাগাড়ম্বরে আসল কথা হারিয়ে যায়; তুলনায়- 'কথার গুণে বার্তা নষ্ট'। |
ভাসুর-ভাদ্রবৌ সম্পর্ক১ | হিন্দুসমাজে ছোটভাইয়ের বৌ ভাসুরের ছায়াও মারায় না। |
ভাসুর-ভাদ্রবৌ সম্পর্ক২ | মুখ দেখাদেখি নেই; দুজনের মধ্যে বিশেষ কোন কারণে কথাবার্তা একদম বন্ধ। |
ভাসুর-ভাদ্রবৌ সম্পর্ক৩ | শত্রুসম্পর্ক থাকার জন্য পরস্পরের ছায়া মাড়ায় না। |
ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয় | অনধিকার চর্চা; নগণ্যের বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'আদার ব্যাপারী জাহাজের খোঁজ নেয়'; 'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চায়'; 'মশা এসে হাতীর ওজন জানতে চায়' ইত্যাদি; হিন্দি পাঠান্তর- 'মাঁগৈ ভিখ, পুঁছৈ গাঁওকা জমা'। |
ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও | কোনরকমে সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাতর প্রার্থনা; আমি আর উপকার চাই না, শুধু নিস্কৃতি চাই; সমতুল্য- 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি'। |
ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া | দয়ার দানে পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নেই; পরপ্রত্যাশীর কোন পছন্দ নেই; বিনামূল্যে যা পাওয়া যায় তাই লাভ; মাগনায় পাওয়া জিনিসের গুণাগুণ বিচার চলে না। |
ভিক্ষুক কখনো দেউলিয়া হয় না | ভিক্ষুক পরিশ্রম করে না তাই কিছু পায় না; যার কিছু নাই তার কিছু হারাবার ভয় নাই, অর্থাৎ দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; সমতুল্য- 'মাথা নেই তার মাথাব্যাথা'। |
ভিক্ষুকের এক দুয়ার বন্ধ, হাজার দুয়ার খোলা১ | ভিক্ষুকের নিজের দরজা বন্ধ করে পরের দরজা ভিক্ষা করতে যায়। |
ভিক্ষুকের এক দুয়ার বন্ধ, হাজার দুয়ার খোলা২ | একজন বিরূপ হলে খেটে খাওয়া মানুষ অন্য অনেকের কাছে কাজ পায়। |
ভিজে বেড়াল১ | বিড়াল ভিজলে দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু হিংস্রতা ছাড়ে না। |
ভিজে বেড়াল২ | দেখতে নিতান্ত ভালোমানুষ, কিন্তু পেটে পেটে বজ্জাতি; দেখতে শান্তশিষ্ট, কিন্তু সুযোগ পেলেই পরের অনিষ্ট করে; কারে পরে ভালমানুষ সাজা ব্যক্তি। |
ভিজে মাটিতে বেড়াল আঁচড়ায় | দুর্বল চিত্তের লোকের উপর সবল অত্যাচার করে। |
ভিটায় ঘুঘু চরানো১ | কারো ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে মাঠে পরিণত করে ঘুঘু চড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। |
ভিটায় ঘুঘু চরানো২ | কারো যথাসর্বস্ব নষ্ট করা; সমতুল্য- 'ভিটায় সরষে বুনে খাওয়া'; 'ভিটেমাটি চাটি করা'। |
ভিটায় সরষে বুনে খাওয়া১ | ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে ক্ষেতে পরিণত করে চাষ করে খাওয়া। |
ভিটায় সরষে বুনে খাওয়া২ | যথাসর্বস্ব নষ্ট করা; সমতুল্য- 'ভিটায় ঘুঘু চরানো'; 'ভিটেমাটি চাটি করা'। |
ভিটা/ভিটে কামড়ে পড়ে থাকা | প্রতিকূল অবস্থাতেও বাস্তুভূমি কিছুতেই ত্যাগ না করা। |
ভিটেমাটি চাটি করা | যথাসর্বস্ব নষ্ট করে বাস্তুকে মাঠে পরিণত করা; সমতুল্য- 'ভিটায় ঘুঘু চরানো'; 'ভিটায় সরষে বুনে খাওয়া'। |
ভিতরে গরল বাইরে সরল | অন্তরে বিষ বাইরে অমায়িক; সমতুল্য- 'বিষকুম্ভ পয়োমুখম্'। |
ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন বাইরে কোঁচার পত্তন | ঘরে অনটন, বাইরে ফিটফাট; বাইরে বাবুগিরি ঘরে ভাত জোটে না; সংগতিহীন হয়েও বড়মানুষি চাল; সমতুল্য- 'আসলঘরে মশাল নেই, হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া'; 'ঘরে নেই ভাত কোঁচা তিনহাত' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ভিতরে অষ্টরম্ভা বাইরে কোঁচা লম্বা'। |
ভিতু কুকুর বাতাসের শব্দে ভড়কায় | ভিতুরা সবসময় আতঙ্কিত হয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়'; হিন্দি পাঠান্তর-'অত্তাস কুত্তা বত্তাস ভূঁকৈ'। |
ভিন্নরুচির্হি লোকাঃ | ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির লোকের ভিন্ন ভিন্ন রুচি হয়। |
ভীমরুলের চাকে খোঁচা দেওয়া | প্রতিশোধপরায়ণ জনমণ্ডলীকে উত্তেজিত করা। |
ভীরুরা মরার আগে বারেবারে মরে; সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে- সেক্সপিয়ার | ভীতুরা প্রতিপদে ভয় পায় আর মড়ার মত শুকিয়ে যায়; জীবনের প্রতিপদে থাকা সমস্যা সাহসীরা মোলাবেলা করে এবং সহজে জয় করে। |
ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ গেল শল্য হল রথী; চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকির পাছে বাতি | বড়বড় ক্ষমতাবানেরা যেখানে হেরে যায় সেখানে ক্ষদ্র ক্ষমতাবানেরা বড়াই করে এগিয়ে যায়; সমতুল্য- 'হাতী ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল'। |
ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা | অনড় অবিচল প্রতিজ্ঞা, যে প্রতিজ্ঞার কোন নড়চড় হয় না; (উৎসকাহিনী- মহাভারতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র গঙ্গাপুত্র ভীস্ম। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজীবন কুমার থাকবেন; এই প্রতিজ্ঞা করার পেছনে একটা কারণ ছিল; ভীষ্মের পিতা শান্তনু একবার যমুনাতীরে বেড়াতে গিয়ে দাসরাজকন্যা সত্যবতীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চান; দাসরাজ জানান যে সত্যবতীর সন্তানকে রাজ্যপাঠ দেবার অঙ্গীকার করলে তবেই এই বিয়েতে সম্মতি মিলবে; প্রস্তাবে শান্তনু রাজি হতে পারেন নি; এইসময় পূর্বোক্ত কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে আসেন ভীষ্ম; তিনি দাসরাজের কাছে গিয়ে জানান যে তিনি রাজ্যের অধিকার ত্যাগের পাশাপাশি আজীবন কৌমার্য রক্ষা করে চলবেন এও প্রতিজ্ঞা করছেন; ভীস্মের প্রতিজ্ঞা শুনে স্বর্গ থেকে পুস্পবৃষ্টি শুরু হয়; কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শান্তনু ভীষ্মকে ইচ্ছামৃত্যুর বরদান করেন; এই কাহিনী থেকেই কেউ কোনও কঠিন কাজের প্রতিজ্ঞা করলে বলা হয় ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা।) |
ভুঁড়ি আর মুড়ি সকল রোগের গুঁড়ি | পেট আর মাথা হল সকল রোগের উৎসস্থল। |
ভুজঙ্গস্য বিষং দন্তে, সর্বাঙ্গং দুর্জনে বিষং | সাপের দাঁতে বিষ থাকে, দুর্জনের সর্বাঙ্গ বিষময়। |
ভুল করলে সংশোধন করতে ইতস্ততঃ করো না | মানুষমাত্রেরই ভুল হয় এবং ভুল থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। |
ভুল করাটা দোষণীয় নয়, ভুল আঁকড়ে থাকাটা দোষনীয় | ভুল করাটা ভুল নয়; ভুল হবেই; মানুষ ভুলথেকেই সঠিক পথ খুঁজে পায়। |
ভুল মানুষমাত্রেরই হয় | কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই ভুল হতে পারে; সমতুল্য- 'মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম'। |
ভুল সংশোধনের কোন সময়সীমা নেই | কখন করব সেটা নয়, ভুল সংশোধন করাটাই বড় কথা; তুলনীয়- 'শেখার কোন বয়স নেই'। |
ভূঁই না পেলে উঠান চষে | কাজ না পেলে অকাজ করে; সমতুল্য- 'নেই কাজ তো খই ভাজ'। |
ভুঁইশূন্য রাজা ক্ষেত্রমোহন | 'কিছু নেই তবু আছে' বলে দাবী কর এমনে আত্মপ্রচারসর্বস্ব ব্যক্তি; বিষয়হীন ব্যক্তির বিষয়ীর মত বাগাড়ম্বর। |
ভূত দিয়ে ভূত ছাড়ানো/তাড়ানো | সমতুল্য- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'; 'শত্রু দিয়ে শত্রু নাশ'; 'কণ্টকেনৈব কণ্টকম'। |
ভূতে পশ্যতি বর্বরা | মূর্খ পরিণাম দেখে শেখে, আগে শেখে না; তুলনীয়- 'দেখে শেখে আর এক ঠেকে শেখে'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'রাজা পশ্যতি কর্ণাভ্যাং'; 'ধিয়া পণ্ডিতঃ পশ্যতি'; 'পশু গন্ধেন পশ্যতি'। |
ভূতের আবার গঙ্গাস্নান | অনাচারীর কাছে আচার-অনুষ্ঠান সব মূল্যহীন; সমতুল্য- 'বদের আবার সৎসঙ্গ'। |
ভূতের আবার জন্মদিন | ভূতের জন্মদিন কে জানে? ভূতের জন্মদিন কে স্থির করবে? অপোগণ্ডের জন্মদিনে কি আসে যায়? |
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ১ | কোনকাজে অনেক কর্তার উপস্থিতিতে চরম বিশৃঙ্খলা; (উৎসকাহিনী- একদিন কিছু ভূত সিদ্ধান্ত করে, মানুষদের মত তারাও তাদের বাপের শ্রাদ্ধ করবে; সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা এক মাঠে অনুষ্টানের আয়োজন করে; শ্রাদ্ধ করতে হলে পুরোহিত চাই; মাঠ দিয়ে এক পুজারী ব্রাহ্মণ যাচ্ছিল; ভূতেরা তাকে পৌরহিত্য করতে ধরে নিয়ে এলোে; ব্রাহ্মণ তো ভয়ে অস্থির; সাহসভরে তিনি ভূতদের সাথে অনুষ্ঠানস্থলে গেলেন; মাথায় তাঁর একটাই চিন্তা, কিভাবে এই ভূতদের হাত থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যায়; ভূতেরা শ্রাদ্ধের সব উপকরণ এনে হাজির করলে ব্রাহ্মণ বললেন,'সব ঠিক আছে, এবার বল তোমাদের কার বাপের শ্রাদ্ধ হবে’; ভূতেরা সমস্বরে চিৎকার শুরু করে, ‘আমার বাপের’, আমার বাপের’; ব্রাহ্মণ তাদের নিরস্ত করে বলেন, 'একসঙ্গে তো সবার বাপের শ্রাদ্ধ হতে পারে না; তোমাদের মধ্যে যে প্রধান তার বাপের শ্রাদ্ধ আগে হবে'; শোনামাত্র সকলেই ‘আমি প্রধান’, ‘আমি প্রধান’ বলে চিৎকার শুরু করে দেয়; একসময় সেই চিৎকার মারামারিতে পরিণত হয়; তখন সত্যিই ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ শুরু হয়; সুযোগ পেয়ে ব্রাহ্মণ ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগায়।) |
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ২ | কোন কাজে অর্থের যথেষ্ট অপচয়; বাজে কাজে অর্থব্যয়। |
ভূতের বেগার খাটা | ফলশূন্য কাজে বৃথা পরিশ্রম করা। |
ভূতের বোঝা বহা | কোন সম্পর্ক নেই এমন দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার নেওয়া। |
ভূতের মুখে রামনাম | স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ; অবিশ্বাস্য কথা; অচিন্তনীয় ব্যাপার। |
ভূমের্গরীয়সী মাতা স্বর্গাদোচ্চতর পিতা, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদোপি গরীয়সী | মাতা মর্তে মহান, পিতা স্বর্গ থেকে উচ্চতর, জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও অধিকতর পূজনীয়। |
ভূষণ্ডী কাক১ | অতিবৃদ্ধ জ্ঞানীপুরুষ; (উৎসকাহিনী- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধশেষে অর্জুনের মনে নিজেকে মহাবীর বলে গর্বের উদয় হয়; একসন্ধ্যায় বেড়াতে বেরিয়ে তিনি একগাছের কাছে এসে উপস্থিত হন; তিনি দেখেন নীচে এক কাক বসে আছে; তিনি তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন; কাক বলে, ‘আমার নাম ভূষণ্ডী; সত্যযুগ থেকে আমি পৃথিবীর অবস্থা দেখে আসছি’; কৌতুহলী অর্জুন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কুরুক্ষেত্রের মত ভীষণ যুদ্ধ আর কি কখনো দেখেছেন?’ উত্তরে কাক বলে, ‘সেই দুঃখের কথা আর কি বলব; সত্যযুগে শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধে মুষলধারে রক্তবৃষ্টি হয়েছিল; আমি মাথা উঁচু করে মনের আনন্দে সেই রক্ত পান করেছি; ত্রেতাযুগে রাম-রাবণের যুদ্ধে রক্তের নদী বয়েছিল; আমি মাথা নিচু করে সেই রক্ত পেটভরে খেয়েছি; লক্ষ্মীছাড়া কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে রক্ত খেতে গিয়ে আমার ঠোঁট ভোঁতা হয়ে গেছে’; কাকে কথা শুনে অর্জুনের গর্ব দূর হয়।) |
ভূষণ্ডী কাক২ | অতি বৃদ্ধ এবং নানাকারণে যার মৃত্যু কাম্য তার সম্পর্কে এই উক্তি প্রযোজ্য। |
ভেক না ধরলে ভিক মেলে না | পেশার উপযোগী বেশভুষা চাই; কাজের পরিবেশের সাথে একাত্ম হতে হলোে নির্দিষ্ট পোষাক প্রয়োজন; সাঘু-সন্ন্যাসীদের ভেকের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক দুর্বলতা আছে; পাঠান্তর- 'ভেক না ধরলে/নিলে সাধু হওয়া যায় না'। |
ভেকো মকমকায়তে | ব্যাঙ গর্বে মকমক করছে ভাবার্থে- নির্গুণেরা নিজেদের গুণ প্রচারে ব্যস্ত; তুলনীয়- 'সফরী ফরফরায়তে'। |
ভেটে লোক হেঁট হয় | ভেট ঠিক ঘুষ নয় তবে ঘুষেরই মত; ভেট হল দর্শনী- দর্শনের জন্য দক্ষিণা; ভেট দেওয়ার পিছনে কিছু প্রত্যাশা থাকে; ভেটে মাথাটা একটু নীচু হয়; ভাটদাতার প্রতি ভেটগ্রহীতার একটু মানসিক বাধ্বাধকতা থাকে; ফলে ভেটদাতাও কিছু উপকার পেয়ে থাকে। |
ভেড়া করে রাখা/ ভেড়াকান্ত | ভেড়া অতি নিরীহ প্রাণী; তাকে যে দিকে চালাও সে সেইদিকে চলে; এই লক্ষণায়- বশীভূত করে রাখা; একান্ত বসম্বদ। |
ভেড়া দিয়ে যব মাড়া | সক্ষমলোকের কাজ অক্ষমলোক দিয়ে করানো; সমতুল্য্- 'ছাগল দিয়ে চাষ করা'; 'ছাগল দিয়ে হাল টানা'। |
ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগা | গোয়ালে আগুন লাগলে ভেড়ার দল বিন্দুমাত্র পালাবার চেষ্টা করে না, কেবল চিৎকার করতে থাকে, লক্ষণায়- বিপদে প্রতিকারের চেষ্টা না করে কেবল কোলাহল করা। |
ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল | মুর্খের দলে অল্পজ্ঞানীরা গুরুত্ব পায়; যেখানে বিজ্ঞ লোক নেই সেখানে অল্পজ্ঞানীরা মাতাব্বরি করার সুযোগ পায়; সমতুল্য- 'উলুবনে খটাশ বাঘ'; 'বাঁশবনে শিয়াল রাজা'; 'বৃক্ষহীনদেশে এড়েণ্ডাও বৃক্ষ'। |
ভেড়ার পাল | অন্ধভাবে অনুসরণকারী গোষ্ঠী; ব্যক্তিত্বহীন একদল লোক; যাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ নেই, যাদের একজন যেদিকে যায় না বুঝে সবাই সেদিকে যায়। |
ভেড়ার বেশে নেকড়ে বাঘ | প্রচ্ছন্ন শয়তান; ছদ্মবেশী শত্রু; বাইরে দেখতে ভালো, ভিতরে মন্দ। |
ভেনি, ভিডি, ভিসি- জুলিয়াস সিজার | আমি এলাম; আমি দেখলাম; আমি জয় করলাম; একটি দ্রুত চূড়ান্ত বিজয় বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছ। |
ভেবেচিন্তে কাজ কর, লক্ষ্মী ঘরে চিরতর | অপচয় না করলে অভাব হয় না; সতর্ক থাকলে বিপদ হয় না। |
ভেবে করা আর করে ভাবা | ভেবে কাজ করলে ফল একরকম হয়; আর কাজ করে ভাবলে ফল অন্যরকম হয়; বুদ্ধিমান লোক ভেবেচিন্তে কাজ করে; পাঠান্তর- 'ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। |
ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয় মিছেই ফেরো ভূমণ্ডলে | আত্মা ছাড়া আত্মর আপন কেউ নয়; কেউ সঙ্গে আসে নি, কেউ সঙ্গে যাবেও না; সংসার মায়াময়; সমতুল্য- 'দারা-পুত্র-পরিবার তুমি কার কে তোমার'। |
ভেয়ের (ভেড়া) শত্রু ভেয়ে নেয়ের শত্রু নেয়ে | ঘরের/নিজের লোক বেশি শত্রুতা করে; তুলনীয়- 'একই শ্রেণির দুই লোক কখনো একমত হয় না'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি'। |
ভেরেণ্ডা গাছও বৃক্ষ হয় | নগণ্যের উচ্চভাবের প্রতি বক্রোক্তি। |
ভেলায় চড়ে সিন্ধু পার | অসাধ্যসাধন; পরিশ্রমের বিকল্প কিছু নেই; পাঠান্তর- 'কলার ভেলায় সাগরপার'। |
ভৈঁস্কে আগে বীণ বাজৈে ভৈঁস ঠাঢ় পগুরায় | মোষের কাছে বীণা বাজে, মোষ জাবর কাটতেই থাকে; অবোধের কাছে গুণের কথা কদর নাই বা জ্ঞানের কথা বলা বৃথা; সমতুল্য- 'অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম'; 'উলুবনে/বেনাবনে মুক্তা ছড়ানো'। |
ভোগবাসনায় বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয় | রিপুর তাড়নায় মানুষের বিবেক, বুদ্ধি সব লোপ পায়। |
ভোগের আগে প্রসাদ | খাবার আগেই খাবারের স্বাদ পাওয়ার ইচ্ছা; আগাম সুখকল্পনা; তুলনীয়- গাছে না উঠতেই এককাঁদি'। |
ভোগের কর্তা ভগবান | ভাগ্যে থাকলে সুখভোগ আছে না থাকলে নেই। |
ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্টমন্দিরে | এখানে-সেখানে খাওয়া, হাটেবাজারে শোয়া এবং মৃত্যু ভাগাড়ে এমন চালচুলোহীন ভবঘুরে চরিত্রের ব্যক্তির ভাগ্যলিপি অতি করুণ; সম্পর্কীত প্রবাদ- মরণং গোমতীতীরে অপারম্বা কিং ভবিষ্যতি।। |
ভোজনে পেট বাড়ে | যত বেশি আহার করা যায় ততই আহারের স্পৃহা বৃদ্ধি পায়। |
ভোজনে সন্তোষ বিধেয় | পরিমিত ভোজন স্বাস্থের পক্ষে মঙ্গল। |
ভোরের পাখি পোকা ধরে | ভাল কাজে অপেক্ষা করতে নেই; সমতুল্য- 'কাল কখনো আসে না'; 'শুভস্য শীঘ্রম অশুভস্য কালহরণম' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়'; 'সবুরে মেওয়া ফলে' ইত্যাদি। |
ম
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না | কাছে আছিে, যেদিন খুশি গেলেই হবে, এই গয়ং-গচ্ছ মনোভাব থেকে দেখা হয় না; সমতুল্য- 'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না'; 'কালিঘাটের মানুষের কালীদর্শন হয় না'; 'গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না' ইত্যাদি। |
মগের মুল্লুক | অরাজক দেশ, যেখানে আইনের অনুশাসন সম্পূর্ণ অনুপস্থিত; (উৎসকাহিনী- মগেরা ছিল মায়নামারের আরাকান অঞ্চলের এক দুর্ধর্ষজাতি; অতীতে তারা নৌকাযোগে এসে দক্ষিণ বাঙ্লা অঞ্চলে যথেচ্ছ লুটতরাজ করত; তাদের সঙ্গে থাকত পোর্তুগীজ হার্মাদবাহিনী; বাঙ্লার নবাব শায়েস্তা খাঁ এদের দমন করেন; কেউ কারো প্রতি অন্যায় জুলুম করলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
মচকায় কিন্তু ভাঙে না | বিনয়ী ভদ্রলোক অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; পরের উপদেশ নেয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভাঙে তবু মচকায় না'। |
মজুরের কপালে খেজুরের চাটাই | গরিবের ভাগ্যে দামী জিনিস জোটে না। |
মটরের চাপে মসূরি চ্যাপ্টা | প্রবলের দাপটে দুর্বল বিধ্বস্ত। |
মড়া ঘোড়াকে চাবুক মারা | যে কাজের কোন ফল নেই তার জন্য উদ্যোগ; নিস্ফল প্রচেষ্টা। |
মড়া পোড়ে চিতায়; জ্যান্ত পোড়ে চিন্তায় | হিন্দুদের মড়া জ্বালিয়ে সৎকার করা হয়; লক্ষণায় জ্যান্ত মানুষ চিন্তায় চিন্তায় নিয়ত দগ্ধ হয়। |
মড়া মেরে খুনের দায় | দুর্বলের উপর অত্যাচার করলে সুনাম হয় না বরং বদনামই হয়; পাঠান্তর- 'বুড়ো মেরে খুনের দায়'। |
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা১ | কষ্টের উপর কষ্ট; যে কষ্ট ভোগ করছে তাকে আরও কষ্ট দেওয়া। |
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা২ | অকাজ করা; অযথা সময়ের অপব্যয় করা; তুলনীয়- 'মরা ঘোড়াকে চাবুক মারা'। |
মণিকাঞ্চন যোগ | সোনার উপর মণি বসালে উভয়েরই ঔজ্বল্য বৃদ্ধি পায় লক্ষণায় উপযুক্ত মিলন; যোগ্যের সঙ্গে যোগ্যের সার্থক মিলন; দুই গুণের মিলন হলে সকল দিক থেকে শুভ হয়। |
মণিহারা ফণী | প্রিয়জন হারানোর শোকে মৃতপ্রায়; (উৎসকাহিনী- জনশ্রুতি যে সাপের মাথায় মণি থাকে; সেই মণি চুরি গেলে সাপ উন্মত্তের মত মণি খুঁজে বেড়ায়; কিছুতেই খুঁজে না পেলে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে; আসলে সাপের মাথায় মণি হয় না; বিষধর সাপ বুড়ো হলে তার বিষথলি শুকিয়ে স্বচ্ছ স্ফটিকের মত পাথরে পরিণত হয়; এটাই মণি বলে ভ্রম হয়।) |
মৎস চিনে গভীর গম্য পক্ষী চিনে ডাল; মা জানে পুতের দরদ ছাতি বিদরে যার | মাছ জলে বাস করে, সুতরাং সে জানে জল কোথায় কত গভীর; পাখী গাছে থাকে, সুতরাং সে জানে কোন ডালটা কেমন ভারসহ; সন্তানের জন্য মায়ের বুক ফাটে, সুতরাং সে জানে সন্তানের ব্যথা কোথায়। |
মতান্তর হতে পারে মনান্তর কখনো নয় | মনোমালিন্য কখনোই কাম্য নয়। |
মতিরেব বলাদ গরীয়সী | বল থেকে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ। |
মতের মিলে সঙ্গী হয়, মনের মিলে বন্ধু হয় | সঙ্গী সাথে অনুগমন করে; বন্ধু অন্তরের সাথে সংযুক্ত হয়। |
মদ্দ/মরদ বড় তেজী ধরবেন বনের বেজী | বেজী ধরতে বেশি শক্তি লাগে না লক্ষণায় সামান্যকাজের জন্য বৃথা আস্ফালন। |
মদেরও তলানি আছে | জগতে নির্দোষ কিছু হয় না; সমতুল্য 'গোলাপেরও কাঁটা আছে'; 'চাঁদেরও কলঙ্ক আছে' ইত্যাদি। |
মধু খেতে গেলে মাছির হুল সইতে হয় | কিছু পেতে গেলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়; সমতুল্য- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নেই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'মাছ ধরতে গেলে কাদা মাখতে হয়' ইত্যাদি। |
মধু তিষ্ঠতি জিহ্বাগ্রে হৃদয়ে তু হলাহলম | জিভের ডগায় মধু থাকে, মনের মধ্যে বিষ। |
মধুপান করতে পারি, মাছির কামড় সইতে নারি | ফলভোগ করতে রাজি, কষ্টস্বীকার করতে নারাজ। |
মধুরেণ সমাপয়েৎ | সকল কাজ সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পন্ন করা উচিত; তুলনীয়- 'সব ভাল যার শেষ ভাল; 'শেষ রক্ষাই আসল রক্ষা'। |
মধুসূদন দাদার দৈ-এর ভাণ্ড | অফুরন্ত সাহায্যের আশ্বাস। |
মধ্যপন্থা শ্রেষ্টপন্থা | অতি বাড় ভাল নয়, আবার অতি বিনীতভাবও ভাল নয়; খুব কাছে হলে ক্ষতি, আবার খুব দূরে হলে ফল শূন্য হয়; সুতরাং মধ্যপন্থাই শ্রেষ্ঠপন্থা। |
মধ্বভাবে গুড় দদ্যাৎ | কোন কার্যোদ্ধারে উৎকৃষ্ট বস্তু না পেলে নিকৃষ্ট বস্তু ব্যবহার কর; তুলনীয়- দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো'। |
মনঃপূতং সমাচরেৎ | মন যা চায়, মন যাতে পবিত্র হয় সেইরকম আচরণ করা উচিত। |
মন এব মনুষ্যাণাং কারণাং বন্ধমোক্ষয়োঃ | মনই সংসারের বন্ধন ও মোক্ষ বা মুক্তির কারণ। |
মনকে চোখ ঠারা১ | জেনেবুঝে দোষ করে বাজে অজুহাতে মনকে প্রবোধ দেওয়া। |
মনকে চোখ ঠারা২ | ন্যায়-অন্যায় বিচারের অন্তর্নিহিত শক্তি বিবেককে ধোঁকা দেওয়া; মন জানলেও মনকে তা গোপন করার জন্য ইসারা করা। |
মন চল নিজ নিকেতনে | পঞ্চভূতের শরীর আসল নয়; আসল সুখ অন্য কোথাও অন্য কোন খানে আছে; কাল্পনিক স্বর্গসুখের বাসনা। |
মন চলে তো চলে যা | বিবেক ভালমন্দ পরিষ্কার বুঝতে পারে; সুতরাং মন চাইলে যে কোন কাজ স্বচ্ছন্দে করে ফেলা যায়। |
মন চাঙ্গা তো কটরায়/কেঠোয় জলও গঙ্গা | মনে দৃঢ় বিশ্বাস ও ভক্তি থাকলে ঘরে বসেই দেবদর্শন হয়, তীর্থদর্শনের ফললাভ করা যায়; (উৎসকাহিনী- দক্ষিণদেশী এক মহিলা সূর্যগ্রহণের সময় গঙ্গাস্নান করতে কাশীধাম যাত্রা করেন; বহু অনুনয় করা সত্বেও তিনি ছেলের বউকে সঙ্গে নিতেে রাজী হন নি; ক্ষুব্ধ বউ গ্রহণের সময় ঘরে বসে কাঠের গামলার জলে স্নান করতে করতে যুক্তকরে গঙ্গার উদ্দেশে বলে, ‘মা গঙ্গা এই গামলার জলে তুমি আবির্ভূত হও, আমি এই জলে স্নান করে মনের সাধ মিটাই’; স্নান করার সময় গামলার তলায় একটা সোনার আংটি বউয়ের নজরে পড়ে; সে আংটিটি যত্নকরে একটা কৌটায় ভরে রেখে দেয়; শাশুড়ি দেশে ফিরে এলে বউ তাকে আংটিটি দেখায়; বিস্মিত শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এই আংটি তুমি পেলে কোথায়? মণিকর্ণিকার ঘাটে স্নান করার সময় আংটিটি জলে পড়ে যায়; অনেক খুঁজেও সেটা পাই নি’; বউ বলে, ‘আমার প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে মা গঙ্গা কেঠোর জলে আবির্ভূত হয়ে এটি আমাকে দিয়ে গেছেন।); হিন্দি পাঠান্তর- 'মন চঙ্গা তো কটৌতী মে গঙ্গা'। |
মন চায় এক হয় আর এক | সবার সব ইচ্ছা পূরণ হয় না; তুলনীয়- 'মানুষ প্রার্থনা করে বিধাতা মীমাংসা করে'। |
মন চায় ধন, দেবে/দেয় কোন জন | ধন বা সুখ চাইলেই পাওয়া যায় না; কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়; তাছাড়া সৌভাগ্যলক্ষ্মীর আনুকূল্য থাকা চাই; তুলনীয়-'কষ্ট না করলে কেষ্ট নাই'। |
মন চায় বাদশা হতে খোদা দেয় না মেগে/মেঙে খেতে | মন অনেক কিছুই চাইতে পারে; ঈশ্বর না চাইলে বড় হওয়া যায় না; ঈশ্বরের অনুকম্পা না থাকলে কিছুই পাওয়া যায় না। |
মন চায় ভাজা খেতে তেলে বড় কড়ি | পয়সার অভাবে ভালমন্দ ভোগ করা হয় না বলে খেদোক্তি। |
মন ছাড়া পাপ নাই মা ছাড়া বাপ নাই | মা যেমন জানে সন্তানের বাপ কে তেমনি বিবেক জানে কোনটা পাপ কোনটা পূণ্য; বিবেকের কাছে পাপ লুকানো যায় না; পাঠান্তর- 'মনের অগোচরে পাপ নেই, মায়ের অগোচরে বাপ নেই'। |
মনটি শখের বটে হাতে কিন্তু পয়সা নাই | মনটা পুরোমাত্রায় বাবুগিরি করতে চায় কিন্তু অর্থের অভাবে তা সম্ভব হয় না। |
মন না মুড়ালে, মুড়ালে কেশ গুরু না চিনিলে, ভ্রমিলে দেশ | মন সংযত না কর শুধু মাথা মুড়িয়ে সাধু হাওয়া যায় না; গুরুর উপদেশ মেনে তীর্থদর্শন করতে হয়; অন্যথায় সব পরিশ্রম ব্যর্থ হয়; |
মন ভাল নয় তীর্থ কর মিছে কাজে ঘুরে মর | মন সংযত না করে তীর্থ করে বেড়ালে কোন ফললাভ হয় না। |
মন যেন জিলিপির পাক | কুটিলপ্রকৃতির লোকের মন জিলিপির প্যাঁচের মত হয়। |
মন সন্তুষ্ট থাকলে কেইবা ধনী কেই বা দরিদ্র | অর্থের মাপকাঠিতে ধনী দরিদ্রের বিচার হয় না। |
মনসা চিন্তিতং কর্ম বচসা ন প্রকাশয়েৎ | কাজের পরিকল্পনা মনে থাকবে- মুখে যেন প্রকাশ না পায়; সেই কাজে সাফল্য আসে না যে কাজের কথা অন্যলোক আগেই জেনে ফেলে। |
মনস্বী কার্যার্থী ন গণয়তি দুঃখম, ন চ সুখম | কার্যকালে মহামনাব্যক্তি সুখ দুঃখ গ্রাহ্য করে না। |
মনিব গেলে ঘোল পায় না চাকরকে পাঠায় দুধের তরে | যেখানে নিজের অনুরোধ রক্ষা হয় না সেখানে অপরকে দিয়ে কোন কাজ করার ব্যর্থ চেষ্টা। |
মনে করি করি করী, ঘোড়া বই হয় না | মনে মনে খুব বড় কাজ করার ইচ্ছা হয়, কিন্তু নানা বাধায় ছোট কাজ ছাড়া কিছু হয় না; তুলনীয় কবিগুরুর খেদোক্তি- 'আমি নাবব মহাকাব্য সংরচনে ছিল মনে, ঠেকল কখন তোমার কাঁকনকিঙ্কিণীতে কল্পনাটি গেল ফাটি হাজার গীতে'। |
মনে বড় সাধ চড়বো বাঘের কাঁধ | অসম্ভব চিন্তা; দুরাশার নামান্তর। |
মনে মধু মুখে বিষ | বাইরে মিষ্টি ভিতর তিতা; প্রবৃত্তি শরীর থেকে ভিন্ন নয়; সমতুল্য -বিষ কুম্ভং পয়োমুখম |
মনে মনে লঙ্কাভাগ | ঘটনা ঘটার আগেই লাভের হিসাব; হেতুর আগেই কার্য; কালনেমির লঙকাভাগ দ্রষ্টব্য। |
মনের অগোচরে পাপ নেই, মায়ের অগোচরে বাপ নেই | 'মন ছাড়া পাপ নাই মা ছাড়া বাপ নাই'- দ্রষ্টব্য |
মনের কথা ফুটিলে লোকে বলে পাগল | মনে কতরকম সম্ভব অসম্ভব চিন্তা ঘুরপাক খায়; সবকথা প্রকাশ করা যায় না; শুনলে অবশ্যই লোকে পাগল বলবে। |
মনের কষ্ট শরীরের যন্ত্রণার চেয়েও খারাপ | মনোকষ্টে মানুষ পাগল হয়; তুলনীয়- 'অজুহাত মিথ্যার চেয়েও খারাপ'; 'কপট বন্ধুত্ব প্রকাশ্য শত্রুতা থেকে খারাপ' ইত্যাদি। |
মনের শান্তি সব মন্দভাব দূর করে | চিন্তামুক্ত থাকতে পারলে চিত্ত বিচলিত হয় না প্রশান্ত থাকে। |
মনের সব কথা প্রকাশ করা নেই | লোকে তাহলোে পাগল ভাববে। |
মন্ত্রের সাধন অথবা শরীরপাতন | সাধনায় সিদ্ধিলাভ করবো নতুবা মৃত্যুবরণ করবো; প্রাণপণে সঙ্কল্প করা; তুলনীয়- 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে'। |
মনের সুখই সুখ | মনের শান্তিই বড় শান্তি; মনে সুখ না থাকলে ধন জন সম্পদ কিছু থেকেই সুখ পাওয়া যাবে না। |
মন্থরার মন্ত্রণা | কুচক্রীর কুপরামর্শ/বদবুদ্ধিদান; (উৎসকাহিনী- কুঁজী মন্থরা ছিল ভরতজননী কৈকেয়ীর দাসী; সে ছিল ঈর্ষাপরায়ণা, কূটবুদ্ধিসম্পন্না; কুমন্ত্রণা দানে নিপুণা; তার কুমন্ত্রণায় রামকে চৌদ্দবছর বনবাসে যেতে হয়েছিল; তার থেকেই 'মন্থরার মন্ত্রণা' প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে।) |
মন্দ কখনো ভালো হয় না | মন্দ চিরকালই মন্দ থাকে; কালো কাক কখনো সাদা বক গয় না; তেতো নিম কখনো মিঠে হয় না। |
মন্দ খবর মিথ্যা হয় না | অশুভ খবর প্রায়শঃই সত্য হয়। |
মন্দ চিন্তিলে মন্দ হয় | অশুভচিন্তার পরিণতি অশুভই হয়। |
মন্দবাতাস কারো জন্য ভাল কিছু বয়ে আনে না | তুলনীয়- 'মন্দ কখনো ভালো হয় না'। |
মন্দ সকাল সুন্দর সকালে পরিণত হতে পারে | মন্দ কখনো ভাল হতে পারে; খারাপ পরিস্থিতিতে প্রেরণা যোগাতে প্রবাদটি উক্ত হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'সকাল দেখলে দিন কেমন যাবে জানা যায়'। |
মন্দিরে গেলেই সাধু হয় না | বাহ্যিক আড়ম্বরে ধার্মিক হওয়া যায় না; অন্তরে ভক্তি ও নিষ্ঠা থাকা প্রয়োজন; পাঠান্তর-'মন্দিরে যারা যায়, তারা সবাই সাধু নয়'; সমতুল্য- 'আলখাল্লা পরলেই মোল্লা হয় না'; 'চকচক করলেই সোনা হয় না'; 'তিলক কাটলেই বৈষ্ণব হয় না'; 'পৈতা থাকলেই বামুন হয় না' ইত্যাদি। |
মন্দের চোখে সবই মন্দ | অসৎ কাউকে সৎ ভাবে না। |
মন্দের ভালো | সব মন্দ নয়, কিছুটা ভালো; মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। |
মন্যে দুর্জনচিত্তহরণে ধাতাপি ভগ্নোদ্যম | দুর্জনব্যক্তির মনোভাব বিধাতাও জানতে পারেন না। |
ময়না টিয়ে উড়িয়ে দিয়ে খাঁচায় পোষে কাক | গুণবানকে ছেড়ে দিয়ে নির্গুণকে আদর করে। |
ময়রা সন্দেশ খায় না১ | সহজলভ্য জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে না বা আসক্তি কম থাকে; সমতুল্য- 'শুঁড়িরা মদ খায় না'; পাঠান্তর- 'ময়রার ছেলে মিষ্টি খায় না'। |
ময়রা সন্দেশ খায় না২ | কেউ নিয়ত যে কাজ করে তার প্রতি তার আসক্তি থাকে না। |
ময়লা কাপড়ে ধোপার ভয় | মনে পাপ ঢুকলে নানা আশঙ্কা জন্মে। |
ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতারপাখি নাচে | গুণীর গুণপনা দেখে নির্গুণও অনুকরণ করতে চায়; অনুকরণপ্রিয়তার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি; পাঠান্তর- 'ময়ূরের নৃত্য দেখে লেজ নাড়া দেয় ছাতারপাখি'; সমতুল্য- 'এ্যাঙ যায়, ব্যাঙ যায়, খলসে বলে আমিও যাই'। |
মরণকামড় দেওয়া | মৃত্যু কাছে নিশ্চিত জেনে প্রাণের আশা ছেড়ে দিয়ে অনিষ্টকারীর অনিষ্টসাধন করা; প্রত্যাঘাতের শেষ চেষ্টা করা। |
মরণকালে ঔষুধ নাই | মৃত্যু বৈদ্যকে অস্বীকার করে। |
মরণকালে গঙ্গাজলে/পানে পা১ | মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত; অন্তর্জলিযাত্রায় মুমূর্ষুর পা গঙ্গা জলে ডুবিয়ে রাখা;গঙ্গার দিকে পা করে শুয়ে রাখা। |
মরণকালে গঙ্গাজলে/পানে পা২ | মা গঙ্গা দেবতাজ্ঞানে পূজিত হয়; সাধারণভাবে তার দিকে পা রাখা বা বাড়ানো হয় না; সুতরাং 'মরণকালে বুদ্ধিনাশ'। |
মরণকালে বুদ্ধিনাশ১ | পতনের সময় দিশেহারা; |
মরণকালে বুদ্ধিনাশ১ | বিনাশদশা উপস্থিত; মৃত্যু সমাসন্ন। |
মরণকালে হরিনাম১ | সময়ের কাজ সময়ের না করে পরে তার চেষ্টা বৃথা। |
মরণকালে হরিনাম২ | বিপদে পড়ে উদ্ধারকর্তার খোঁজ। |
মরণকালে হরিনাম৩ | সারাজীবন পাপ করে শেষমুহূর্তে অনুশোচনা করা বৃথা। |
মরণ নাই কোনকালে গোঁফ রেখেছে তোবড়া গালে | যেন কোনকালে মৃত্যু হবে না- এই ভেবে বুড়ো চুপসানো গালে বাহারি গোঁফ রেখে হাসির খোরাক হওয়া। |
মরণবাড় বাড়া | অতিরিক্ত অহঙ্কারী হয়ে ওঠা; তুলনীয়- 'পিপীলিকার পাখা ওঠে মরবার তরে'। |
মরণরে তুঁহু মম শ্যামসমান- রবীন্দ্রনাথ | মরণকালেও জীবনের সুখ বা স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়। |
মরদ কি বাত্ হাতী কি দাঁত | হাতীর দাঁত যেমন মুখের ভিতর প্রবেশ করে না, তেমনি পৌরুষ কথা দিয়ে কথা গেলে না; পুরুষের কথা হাতীর দাঁতের মতই মূল্যবান।' সমতুল্য- 'যে কথা সেই কাজ'; 'যে কথা সেই কিরে'। |
মরবার/মরার অবকাশ/ফুরসত নেই | কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকলে এই প্রবাদবাক্য ব্যবহার করা হয়; তুলনীয়- 'নিশ্বাস ফেলার অবকাশ নেই'। |
মরবার/মরার ওষুধ গলায় বেঁধেছে | যে কাজে অমঙ্গলের আশঙ্কা সেই কাজে অগ্রসর; তুলনায়- 'পিপীলিকার ডানা গজায় মরিবার তরে'। |
মরবে মেয়ে উড়বে ছাই তবে মেয়ের গুণ গাই | মরার পর চিতায় পুড়ে ছাই হওয়াপর্যন্ত যদি কোন মেয়ে নিস্কলঙ্ক থাকে তবেই তার গুণগান করা যায়। |
মরবে সীতা ঘুচবে দুঃখ | সীতার মত বাঁচা হলোে সারাজীবন দুঃখভোগ ক'রে যেতে হবে; মৃত্যু হলোে পরেই অভাগীর দুঃখভোগ শেষ হবে; পাঠান্তর- 'যাবৎ সীতা তাবৎ দুঃখ'। |
মরমীর মর্মব্যথা একমাত্র মর্মজ্ঞই বুঝতে পারে। | দুঃখ কষ্টের জ্বালা কি একমাত্র দুখীরাই বুঝতে পারে। |
মরাকাকের আবার চড়কের ভয়১ | যে কাক মরে গেছে তার আবার বাজপাখির ভয় কি? |
মরাকাকের আবার চড়কের ভয়১ | যার সর্বনাশ হয়ে গেছে তার আর বিপদের ভয় কি? |
মরাকাকের আবার মড়কের ভয়২ | অন্নচিন্তায় প্রতিদিন যে তিলেতিলে মরছে তার মরার ভয় আর থাকে না। |
মরাগরুতে ঘাস খায় না | যুক্তিবাদীরা বলে যে মরে গেছে সে শ্রাদ্ধে পিণ্ড খায় না। |
মরাগরুর ঘাস কাটা | অকাজ করা; যে বিষয় শেষ হয়ে গেছে তার জন্য চেষ্টা করা; সমতুল্য- 'ঘোড়ার ঘাস কাটা'; 'মরা ঘোড়াকে চাবুক মারা'। |
মরাঘোড়াকে চাবুক মারা | অকাজ করা; অযথা সময়ের অপব্যয় করা; নিস্ফল কাজ। |
মরাবাঘের দাঁতখামাটি/খিঁচানি | বাঘ মরে গেছে তবু দাঁত খিঁচিয়ে আছে; শক্তি নেই তবু আস্ফালন ছাড়ে না এমন লোক; তুলনীয়- 'মুণ্ডমালার দাঁতখামাটি'। |
মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল টেকো মাথায় উঠলো চুল১ | অতি খারাপ অবস্থা থেকে ভাল অবস্থায় উন্নীত হওয়া। |
মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল টেকো মাথায় উঠলো চুল২ | বুড়োবয়সে আইবুড়ো নাম কাটানো। |
মরার আগে কাপুরুষ বারবার মরে- সেক্সপীয়ার | ভীরুরা ভয়েই সবসময় আধমরা হয়ে থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সাহসী একবার বই দু'বার মরে না'। |
মরার উপর খাঁড়ার ঘা | 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'- দ্রষ্টব্য |
মরার বাড়া গাল নেই | মানুষের মৃত্কামনা করে গালমন্দ করা উচিত নয়। |
মরাহাতি লাখটাকা১ | হাতীর হাড়, চামড়া দাঁত ইত্যাদি বহুমূল্যে বিক্রি হয়। |
মরাহাতি লাখটাকা২ | গুণী বা বিত্তশালী ব্যক্তি দুরাবস্থায় পড়লেও তার কাছ থেকে নানাভাবে উপকার পাওয়া যায়। |
মরার সময় মকরধ্বজ | অন্তিমমূহুর্তে বাঁচার ক্ষীণ আশাসঞ্চারের শেষ চেষ্টা। |
মরে তবু মর্যাদা হারে না | দৃঢ়চরিত্রের লোক, যে মাথা নীচু করে না; সমতুল্য-'ভাঙ্গে তবু মচকায় না'। |
মলমের মধ্যে মাছি | সুন্দর পরিবেশ নষ্টকারী অনাকাঙ্খিত বস্তু বা ব্যক্তি। |
মলাট দেখে বই বিচার করো/হয় না | বাইরের আবরণ দেখে ভিতর চেনা বা জানা যায় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মাকালফল'। |
মশা মারতে কামান দাগা/পাতা | সামান্যকে মারতে বিরাট আঘাত; সামান্যকাজে বিরাট আয়োজন; সমতুল্য- 'ব্যাঙ মারতে তীরধনুক/সোনার কাঁড়'; 'শানকির উপর বজ্রাঘাত'। |
মশা মারতে গালে চড় | অন্যের ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করা; তুলনীয়- নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ'। |
মশা/মাছি মেরে হাত কালো | দুর্বলের উপর অত্যাচার করে বদনাম কুড়ানো; বাজে কাজ করে দুর্নাম কেনা। |
মশা হাতীর ওজন জানতে চায় | নগণ্যের বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'আদার ব্যাপারী জাহাজের খোঁজ নেয়'; 'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চায়'; 'ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয়' ইত্যাদি। |
মশাল নিজে পুড়ে অপরকে আলো দেখায় | পরার্থে আত্মত্যাগ; গুণী আপন-আলোকে অজ্ঞানকে পথ দেখায়; তুলনীয়- 'ধূপ নিজে পুড়ে অপরকে গন্ধ বিলায়'। |
মশালটি আপনি কানা১ | যে সবার দোষত্রুটি খুঁজে পায় নিজের দোষত্রুটি খুঁজে পায় না। |
মশালের আগে চেরাগের/প্রদীপের আলো১ | জ্ঞানীর আগে স্বল্পজ্ঞানীকে নিস্প্রভ লাগে। |
মশালের কাছে চেরাগের/প্রদীপের আলো২ | বিরাট ও নগণ্যের মধ্যে তুলনা হয় না; মহানের পাশে সাধারণ নজরে পড়ে না। |
মহৎ লোকেদের ভাবনা অভিন্ন | মহৎভাবনা ভিন্ন হয় না;; সাধারণতঃ একই বিষয়ে একই সময়ে দুটি চিন্তাধারা কাকতালীয়ভাবে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হলে এই প্রবাদ উক্ত হয়। |
মহাগজা পলায়ন্তে মশকানাং তু কা গতিঃ | যেখানে বড় বড় হাতী পালাচ্ছে সেখানে মশা তোর কি দশা হবে; বাংলা পাঠান্তর- 'কত হাতী গেল তল মশা বলে কত জল'। |
মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ | মহাজনেরা যে পথে হেঁটেছেন সেই পথ সকলের অনুসরণ করা কর্তব্য। |
মহান মহতেব্য করোতি বিক্রম | মহৎ মহতের কাছেই বীরত্ব প্রকাশ করে। |
মহানপি প্রসঙ্গেন নীচং সেবিতুমিচ্ছতি | মহৎব্যক্তিও কার্যানুরোধে নীচব্যক্তির তোষামোদ করে থাকেন। |
মহানাং বিনয়ো হি ভূষণং | মহৎব্যক্তিদের কাছে বিনয়ই ভূষণস্বরূপ। |
মহাভারত একদিনে রচিত হয়নি | সব মহৎসৃষ্টি বহুদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠে; তুলনীয়- 'তাজমহল একদিনে গড়ে ওঠে নি'; 'রোম একদিনে গড়ে উঠেনি'। |
মাঁগৈ ভিখ, পুঁছৈ গাঁওকা জমা | ভিক্ষে করতে এসে গ্রামের জমিজমার খোঁজ নেয়; সমতুল্য- আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেওয়া; বাংলা পাটান্তর- 'ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয়' |
মাকড় মারলে ধোকড় হয় | পক্ষপাতদুষ্ট বিচার; যে দোষে পরের বেলায় শাস্তি, নিজের বেলায় পুরস্কার; (উৎসকাহিনী- এক যজমান তার পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করে, 'ঠাকুর মাকড়সা মারলে কি হয়'? ভয়ার্তভাবে পুরোহিত বলেন, 'সর্বনাশ মাকড়সা মারলে মহাপাপ হয়; ব্যয়সাধ্য প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়'; শুনে যজমান বলে, 'ঠাকুর আমি মারিনি আপনার ছেলে মেরেছে'; তখন পুরোহিত হেসে বলেন, 'মাকড় মাড়লে ধোকড় হয়'; অর্থাৎ জামাকাপড়প্রাপ্তি (ধোকড়>মোটা কাপড়) হয়; আসল কথা হল স্বার্থ থাকলে বিধিব্যবস্থা উল্টায়; প্রবাদের নির্যাস- মাকড়সা মারলে ব্রাহ্মণেতর জাতির পাপ হয় এবং তারজন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় এবং ব্রাহ্মণজাতির মাকড়সার জালবোনার গুণ থাকায় তার বস্ত্রলাভ হয়; আমাদের মেয়েলী সংস্কার হল গায়ে মাকড়সা বসলে বস্ত্রলাভ হয়; তাই থেকে প্রবাদের উৎপত্তি।) |
মাকাল ফল | বাহ্যতঃ দেখতে সুন্দর লালটুকটুকে অন্তঃসারশূন্য ফল লক্ষণায় সুদর্শন অথচ অন্তঃসারশূন্য নির্গুণব্যক্তি। |
মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং, হরতি নিমেষাৎ কালঃ সর্বা | ধন, জন, যৌবনের গর্ব করো না; মহাকাল এক নিমেষেই তা হরণ করতে পারে। |
মা গঙ্গা১ | কিছু নেই, ফাঁকি; তুলনীয়- মা কুরু (করো না।); মা নিষাদ (না ব্যাধ না এমন সর্বনাশ কেউ করে না।); মা ভৈঃ (ভয় করো না।) |
মা গঙ্গা২ | পেটে কিছু নেই; বিদ্রূপে- অজ্ঞব্যক্তি। |
মা গুণে ঝি, গাই গুণে ঘি | মেয়েরা মায়ের প্রকৃতি পায়, ছেলেরা বাবার প্রকৃতি পায়; পাঠান্তর- 'মা গুণে ঝি, বাপ গুণে বেটা'। |
মাগনার/মাঙনার উপর টাকনা | ভিক্ষা করে পাওয়া জিনিসে ভাগ বসানো। |
মাগের কাছে পেগের বড়াই১ | থানার দারোগার গালাগাল শুনে পাগ অর্থাৎ চৌকিদার ঘর ফিরে এসে বউয়ের কাছে বীরত্ব প্রকাশ করে; পাঠান্তর- 'বউয়ের কাছে চৌকিদারের বড়াই'; সমতুল্য- 'দরবারে ঠাঁই নাই ঘর ফিরে বউ কিলাই'। |
মাগের কাছে পেগের বড়াই২ | বাইরে অকর্মণ্য ঘরে বসে জাঁক করে এমন লোক; |
মাঘের মাটি সারের পাটি | মাঘমাসে বৃষ্টিতে জমি অত্যন্ত উর্বর হয় বলে প্রচুর শস্য জন্মে। |
মাঘের শীত বাঘের গায় ক্ষীণের শীত সর্বদায় | মাঘমাসের শীতে বাঘপর্যন্ত কাবু হয়; দুর্বলব্যক্তি বারোমাসই শীতে কাতর হয়। |
মাছ চিনে গভীরজল পাখি চিনে উঁচুডাল | নিজ নিজ পরিবেশ অভিজ্ঞতা লাভ হয়; পাঠান্তর- 'মৎস চিনে গভীর গম্য পক্ষী চিনে ডাল'। |
মাছ জালে পড়লে বেশি লাফায় | বিপদে পড়লে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। |
মাছ ধরতে গেলে কাদা সইতে হয়/ গায়ে কাদা লাগে১ | কিছু পেতে গেলে কষ্ট স্বীকার করতে হয়; সমতুল্য- 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'মধু খেতে গেলে মাছির হুল সইতে হয়'। |
মাছ ধরতে গেলে কাদা সইতে হয়/ গায়ে কাদা লাগে২ | মন্দ কাজ করতে গেলে অপবাদ শুনতে হয়। |
মাছ ধরার আগে মাছ বিক্রি করো না | আগাম সুখকল্পনা করা অনুচিত; তুলনীয়- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; পাঠান্তর- 'মাছ ধরার আগে মাছভাজা খেয়ো না'। |
মাছ ধুলে মিঠে মাংস ধুলে শিঠে | মাংস ধুয়ে রাঁধা ঠিক নয়। |
মাছ না পেয়ে ছিপে কামড | উদ্দেশ্যসাধন না হওয়ায় রাগের বশে উপায় নষ্ট করতে উদ্যত। |
মাছ মরেছে বিড়ালের শোক | যার ক্ষতি করতে পারলে আনন্দ তার ক্ষতিতে দুঃখপ্রকাশ; কপট শোকপ্রকাশ; পাঠান্তর- 'মাছের শোকে বিড়াল কাঁদে'। |
মাছি মারতে কামান দাগা | সামান্যকাজে অসামান্য উদ্যোগ; পাঠান্তর- 'মশা মারতে কামান দাগা'। |
মাছি মারতে মাস্কেট পরা | তুলনীয়- 'মাছি মারতে কামান দাগা'। |
মাছিমারা কেরাণী | হুবহু নকলনবিশ; ভালোমন্দ না-বুঝে নির্বোধের মতো যেমন দেখে তেমন লেখে; (উৎসকাহিনী- কথিত যে কোন একসময় এক নকলনবিশ দপ্তরে খাতার মাঝে একটা শব্দের উপর একটা মরা মাছি লেগে আছে দেখেছিল; খাতার ঐ পাতায় লেখার সময় হয়তঃ একটা মাছি বসেছিল; কেরাণী খাতা বন্ধ করার সময় মাছিটি পাতার মাঝে আটকে যায়; নকলনবিশ ভাবে খাতার পাতায় যখন আছে নিশ্চয় মাছিটি লেখার বস্তু; সেটাৎ;লেখার বিষয়ের সাথে নকল করা উচিত; যা ভাবা তাই কাজ; নকলনবীশ ঠি্ক সেই যায়গায় একটা মাছি মেরে সেটে দেয়।); তুলনীয় সংস্কৃত প্রবাদ- 'যদ্দৃষ্টং তদ্লিখিতং'। |
মাছের কাঁটা গলায় বিঁধলে বেড়ালের পায়ে গড়১ | লোকে বিশ্বাস করে যে বিড়ালকে নমস্কার করলে গলায় আটকে থাকা কাঁটা নেমে যায়। |
মাছের কাঁটা গলায় বিঁধলে বেড়ালের পায়ে গড়২ | বিপদে পড়লে মানুষ নগণ্যকেও খোষামোদ করে; তুলনীয়- 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম'; 'ঠেলার নাম বাবাজী' ইত্যাদি। |
মাছের টোপ গেলা | লোভের বশবর্তী হয়ে পাতা ফাঁদে পা দেওয়া। |
মাছের তেলে মাছ ভাজা১ | কিছু মাছ আছে যেগুলি ভাজতে তেল খরচ হয় না, যেমন- ইলিশ মাছ। |
মাছের তেলে মাছ ভাজা২ | আনুসঙ্গিক খরচ বাঁচিয়ে কার্যোদ্ধার; সমতুল্য- 'গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা'। |
মাছের তেলে মাছ ভাজা৩ | পরের খরচে পরোপকার করা। |
মাছের পচন মাথা থেকে শুরু হয় | বাড়ির কর্তা যদি সঠিকভাবে সংসার পরিচালনা না করেন তবে পরিবার শেষপর্যন্ত চরম ধ্বংসের দিকে যায়; (ধন্দ লাগছে যদুবংশ ধ্বংস কি শ্রীকৃষ্ণের দোষে হয়েছিল?) |
মাছের মধ্যে রুই শাকের মধ্যে পুঁই | মাছের মধ্যে রুইমাছ শ্রেষ্ট; শাকের মধ্যে পুঁইশাক খুব মিষ্টি। |
মাছের মায়ের কান্না/পুত্রশোক১ | মাছ ডিম পাড়ে আবার খেয়েও ফেলে, সেক্ষেত্রে তার পুত্রশোক অস্বাভাবিক। |
মাছের মায়ের কান্না/পুত্রশোক২ | প্রতিনিয়তঃ পরের ক্ষতি করে বেড়ায় এবং তারজন্য শোকপ্রকাশ করে এমন প্রকৃতির লোক; কপট শোকপ্রকাশ। |
মাছের শোকে বিড়াল কাঁদে | যাকে মারলে আনন্দ হয় তারজন্য শোকপ্রকাশ; অস্বাভাবিক ঘটনা; কপট শোকপ্রকাশ। |
মাজো, ঘষো, কর ক্ষয়, কালো কি কখনো ধলো হয়?১ | কয়লা হাজার ঘষলেও সাদা হবে না; পাঠান্তর- 'মেজে ঘষে হল ক্ষয়, কালো কখনো ধলো হয়'? |
মাজো, ঘষো, কর ক্ষয়, কালো কি কখনো ধলো হয়২ | মন্দ কখনো ভালো হয় না; মানুষের প্রকৃতি বদলায় না; তুলনীয়- স্বভাব যায় না মলে, ইল্লত যায় না ধুলে'। |
মাটিতে থাপ্পড় পরলে গুনাহগার চমকে ওঠে | পাপ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পাপীরা সবসময় আশঙ্কায় থাকে; সমতুল্য- 'চোরের মন চৌকিদারে'। |
মাটির মানুষ | মাটি সব সহ্য করে; সর্বংসহা ধরিত্রী; এই ভাবার্থে- যে মানুষ সকল উপদ্রব সহ্য করে; নিরীহ/শান্ত/সরলপ্রকৃতির গোবেচারা লোক। |
মাঠে ধান ভাত চড়াও | যার কোন কাজে দেরী সয় না ' বড় ব্যস্তবাগিশ। |
মাঠে মারা গেল১ | কোন কাজে না লাগায় বস্তুটি নষ্ট হলো। |
মাঠে মারা গেল২ | কারো সাহায্য না পেয়ে উদ্যোগ ফলপ্রসু হল না। |
মাণিকে মাণিক চেনে রসিকে চেনে রসিক১ | গুণীব্যক্তি গুণীকে চিনতে পারে/ |
মাণিকে মাণিক চেনে রসিকে চেনে রসিক২ | ব্যঙ্গার্থে- মন্দ মন্দল্র দহজে চিনতে পারে; তুলনীয়- 'রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু'; 'শালুক চিনেছে গোপালঠাকুর'। |
মাণিকের খানিক ভাল | ভাল জিনিসের অল্প ভাল। |
মাতঙ্গ পড়িলে দহে পতঙ্গ লাথি মারে১ | হাতী কাদায় পড়লে ফড়িঙও লাথি মারে। |
মাতঙ্গ পড়িলে দহে পতঙ্গ লাথি মারে২ | প্রবল লোক বিপদে পড়লে দুর্বলও তাকে অপমান করে। |
মাতালে দাঁতালে বিশ্বাস নেই | মাতালকে আর দাঁতওয়ালা জন্তুকে কখনো বিশ্বাস করা নেই; কখন কি করে বলা যায় না। |
মাতৃদোষে শিশু নষ্ট | মায়ের সঠিক শাসনের অভাবে সন্তান নষ্ট হয়। |
মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্টবৎ, আত্মবৎ সর্বভূতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিত | যিনি পরস্ত্রীকে মায়ের মত, পরদ্রব্যকে ঢেলার মত এবং সকল জীবকে নিজের মত দেখেন তিনিই প্রকৃত পণ্ডিত। |
মাথা কাপুড়ে লোক | ভীরু দুর্বলচেতা লোক মেয়েদের মত মাথায় কাওর দিয়ে চলে। |
মাথা গরম হলে বুদ্ধি গলে | রেগে গেলে বিচারবুদ্ধি নষ্ট হয়। |
মাথা ঢাকলে (চাদরে) পা ঢাকে না, পা ঢাকলে মাথা ঢাকে না | প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়; টানাটানির সংসার; অপার বিস্ময় প্রকৃতির সংসারেও সবসময় টানাটানি চলে। |
মাথা নেই তার মাথাব্যথা | অকারণ মাথাব্যথা; অস্তিত্বহীন বিষয় নিয়ে দুর্ভাবনা; সমতুল্য-'কাশীধামে কাক মরেছে কালীঘাটে হৈচৈ'। |
মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢালা | চুড়ান্ত অপমান করা; (উৎসকাহিনী- অতীত মহিলা সংক্রান্ত নিন্দিত কাজের জন্য দোষীকে কারাদণ্ড দেওয়া হত না; পরিবর্তে দোষীর মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে সহরময় ঘোরানো হত।) |
মাথায় পা দেওয়া১ | সম্মানীয়কে অসম্মান করা। |
মাথায় পা দেওয়া২ | সর্বনাশের পথে ঠেলে দেওয়া; সর্বশান্ত করা; (উৎস-কাহিনী বামনরূপে নারায়ণ বলীর মাথায় পা দিয়ে তাকে পাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।) |
মাথায় রাখলে উকুনে খায় ভূঁয়ে রাখলে পিঁপড়েতে খায়১ | অতি আদরে সম্মান নষ্ট। |
মাথায় রাখলে উকুনে খায় ভূঁয়ে রাখলে পিঁপড়েতে খায়২ | রাখাত কোন নিরাপদ স্থান নেই; তুলনীয়- 'জলে কুমির ডাঙায় বাঘ'। |
মাথার ঘাম পায়ে পড়া/ফেলা | বিরামহীন কঠোর পরিশ্রম করা। |
মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল | ভীষণবিপদে পড়ে নাজেহাল অবস্থা; নানাবিষয়ের দুর্ভাবনায় ব্যতিব্যস্ত; প্রতিকারহীন অবস্থায় পড়ে ছূটাছুটি করা; অপ্রতিবিধেয় বিপদে পড়লে মানুষ পাগল হয়। |
মান আর হুঁস থাকলে মানুষ হয়- রামকৃষ্ণ | যার মান ইজ্জৎ এবং ভালমন্দ বোধ আছে সেই একমাত্র মনুষ্যপদবাচ্য। |
মা নয় যে তাড়িয়ে দেবো, বাপ নয় যে ভাত দেবো না, পরের মেয়ে রাখি কোথা | বউ-ভেড়ুয়া, বউয়ের কথায় উঠে বসে; (এক বউ-ভেড়ুয়ার বউ বাড়ীর সকলের উপর অত্যাচার করত; সবাই অনুযোগ করলে সে এই উক্তি করে।) |
মান বড় না প্রাণ বড় | চিরকালীন দ্বন্দ্ব, যার সহজ উত্তর নেই; পা বড় না পেট বড়? |
মানলে শিব, না মানলে শিলা | যার যা বিশ্বাস, যার যাতে শান্তি; তুলনীয়- 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর'; পাঠান্তর- 'মানলে শিব, না মানলে শিলনোড়া'। |
মা নাই যার ঘাটে না নাই তার | ঘাটে নৌকা না থাকলে যেমন নদী পার হওয়া যায় না, তেমনি মা না থাকলে সংসার নদী পার হওয়া যায় না। |
মানুষ অভ্যাসের দাস/বশ | অভ্যাস মানুষের দ্বিতীয় প্রকৃতি। |
মানুষ আর মহামানুষের মধ্যে পার্থক্য শুধু মনুষ্যত্বের | মহামানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব পূর্ণ বিকশিত হয়; সাধারণমানুষ রিপুর বশ; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভালো লাগছে'। |
মানুষ ইচ্ছা করে বিধাতা পূরণ করে | মানুষ পরিকল্পনা করে একরকম বিধির বিধান হয় অন্যরকম; মানুষের কাজের সাফল্য-অসাফল্য ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন; পাঠান্তর- 'মানুষ গড়ে বিধাতা ভাঙে'; 'মানুষ সংকল্প করে, বিধাতা মিমাংসা করে'। |
মানুষ একবারইমাত্র মরে | সাহসী মানুষ মরার আগে মরে না। |
মানুষ কর্মে বাঁচে বর্ষে নয় | মানুষের কর্মের মধ্য দিয়ে পরিচিত হয়; পরিণত হয়। |
মানুষ ক্ষমতার বাইরে কিছু করতে পারে না | প্রত্যেক মানুষেরই সীমাবদ্ধতা আছে। |
মানুষ খড়কুটো পেলেও আঁকড়ে ধরে | বিপদে পড়লে মানুষ অতি নগণ্যেরও সাহায্য নেয়। |
মানুষ গড়ে বিধাতা ভাঙে | মানুষ এক ভেবে কাজ করে ফল হয় অন্যরূপ। |
মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত | প্রকৃত কঠিন নিয়মের নিগড়ে বাঁধা; ্মানুষ সেই নয়ম মানতে বাধ্য। |
মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে | সৌভাগ্যলক্ষ্মী অনাহ্বা্নে কারো দ্বারে এসে উপস্থিত হয় না; শুয়ে থাকলে সৌভাগ্যদেবী স্বারে এসে কড়া নাড়বে না; তুমি চল ভাগ্য তোমার সাথে চলবে। |
মানুষ প্রবৃত্তির দাস/বশ | সাধারণ মানুষ রিপুর তাড়নায় চলে। |
মানুষ বনে গেলে বনমানুষ হয় | বদসঙ্গে পড়লে শিক্ষার বিকৃতি ঘটে; সৎচরিত্রের মানুষ দুশ্চরিত্র হয়। |
মানুষ বাঁচে তার কর্মে বয়সে নয় | মানুষের জীবনের মূল্য তার কার্যে মাপা হয়, বয়সে নয়। |
মানুষ ভগ্নাংশের মত; লব সে নিজে, হর নিজেেকে সে যা ভাবে | যে যত নিজেকে বড় ভাবে সে তত ভগ্নাংশের মত ছোট হতে থাকে; সমতুল্য- 'আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বড় যদি হতে চাও চোট হও তবে'। |
মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক | মানুষের ইচ্ছায় জগৎ চলে না; বিধির বিধান মানুষের ইচ্ছাধীন নয়। |
মানুষ মনের ভাব লুকাতে পারে না | মুখচ্ছবি মানুষের মনের আয়না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মানুষের মুখে মুখোশ আঁটা থাকে'; পাঠান্তর- 'মানুষ স্বভাব লুকাতে পারে না'। |
মানুষ মরে মড়া হয়, কৃষ্টি মরে আচার হয় | অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে। |
মানুষ মানুষের কাছে অচেনা- ভাবে আসে, চরিত্রগুণে মানুষ সবার চোখে বাসে | স্বাভাবিকভাবেই দুই অচেনা মানুষ চরিত্রগুণে পরস্পরের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে তোলে; একজন অন্যের হাত ধরলে পরস্পরের হাত ধরা হয়। |
মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য | মানুষ সামাজিক জীব; একা মানুষ বাঁচতে পারে না; পাঠান্তর- 'মানুষ মানুষের সঙ্গ চায়'। |
মানুষ মারে আর শুধু মরে- রবীন্দ্রনাথ | প্রেমহীন, প্রীতহীন, নিষ্ঠাহীন ধর্মান্ধ মানুষেরা শুধু পরস্পর কাটাকাটি হানাহানি করে ধ্বংস হয়। |
মানুষ রোগে পড়লে ভক্তিমান হয় | নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোর চুরি করতে অক্ষম হলে সাধু হয়'; 'নারী কুরূপা হলে পতিব্রতা হয়'; 'বেশ্যা বৃদ্ধা হলে তপস্বিনী হয়'। |
মানুষ সংকল্প করে, বিধাতা মিমাংসা করে | মানুষ পরিকল্পনা করে একরকম বিধির বিধান হয় অন্যরকম' |
মানুষকে সম্মান করলে তার হৃদয়-দরজার চাবি পাওয়া যায় | সম্মানিত মানুষ সম্মানকারীকে চিরদিন মনে রাখে। |
মানুষমাত্রই ভুল করে | ভুল করা একটি স্বাভাবিক ধর্ম; স্নগস্কৃত পাঠান্তর- 'মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম'। |
মানুষ যেদিন পূর্ণাঙ্গ হবে সেদিন মন্দির মসজিদের শেষপাথর শেষ পুরোহিত, মোল্লার মাথায় ভেঙে পড়বে | চেতনায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হলে মানুষ দেবতা হবে; সেদিন মন্দির মসজিদ পুরোহিত মোল্লার আর প্রয়োজন হবে না; সম্পর্কীত প্রবচন- 'পূর্ণাঙ্গসংখ্যার মতই পূর্ণাঙ্গমানুষ অত্যল্প হয়'; 'মানুষ আর মহামানুষের মধ্যে পার্থক্য শুধু মনুষ্যত্বের'। |
মানুষে মানুষ চেনে, শূয়োরে চেনে কচু | গুণীমানুষ গুণীমানুষকে চিনতে পারে; নির্গুণ নির্গুণকে চিনতে ভুল করে না; যার যেমন প্রকৃতি সে সেই প্রকৃতির মানুষকে সহজে চিনিত্বে পারে; তুলনীয়-'শালুক চিনেছে গোপাল ঠাকুর'। |
মানুষের অন্ততঃ কৌতূহলের জন্য বেঁচে থাকা উচিত | আগ্রহ না থাকলে জ্ঞানার্জন হয় না; কৌতূহল জ্ঞান অর্জনের প্রথম সোপান; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'কৌতুহল সব আবিস্কারের জননী'। |
মানুষের কুটুম এলে গেলে | পরস্পরের ঘরে যাতায়াত থাকলে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে; তুলনীয়- 'চোখের আড়াল তো মনের আড়াল'। |
মানুষের চিন্তাই জ্বর | চিন্তাজ্বর মানুষেকে বিপর্যস্ত করে; জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু চিন্তাজ্বর থেকে নিস্কৃতি নেই; সংস্কৃত পাঠান্তর-'চিন্তা জ্বরো মনুষ্যাণাং'। |
মানুষের সঙ্গ মানুষ চেনায় | ভাললোক ভালসঙ্গ খোঁজে, মন্দলোক মন্দসঙ্গ খোঁজে; সাধু খোঁজে সাধুসঙ্গ; চোর খোঁজে চোরের সঙ্গ। |
মানে মানে বেঁচে/ভাল আছি | কোনমতে মানসম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে আছি। |
মানে মানে থাকলে ভাল | যার যেমন অবস্থা সেইরকম থাকা উচিৎ; অবস্থার অতিরিক্ত গিয়ে চালিয়াতি করতে গেলে বিপত্তি। |
মানে ম্লানে কুত সুখম | মান মলিন হলে অর্থাৎ মর্যাদা নষ্ট হলে সুখ আর রইলো কোথায়? |
মানের গোড়ায় ছাই | মানগাছের গোড়ায় ছাই দিলে মান ভাল হয়; এই ভাবার্থে- কারও মানসম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে এই প্রবাদ উক্ত হয়। |
মান্ধাতার আমলের কথা | অতি পুরাণো কথা; (উৎসকাহিনী- ইক্ষাকুবংশীয় মান্ধাতা দশরথের পূর্বপুরুষ ছিলেন; সুতরাং তিনি ছিলেন সত্যযুগের মানুষ; তা থেকে বহু প্রাচীনকাল বা বহুদিন আগের কথা- অর্থে প্রবাদে 'মান্ধাতার আমল' বলা হয়।) |
মা পুরুষতন্ত্রের শ্রেষ্ট শহীদ | সংসারযন্ত্রে মা সব থেকে বেশি নিস্পেষিত হয়। |
মাপো তিনবার, কাটো একবার | ভেবেচিন্তে কাজ করার প্রতি ইঙ্গিত; তুলনীয়- 'ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না'। |
মা পায় না কাঁথা সেলাইয়ের সূতো, ছেলের পায়ে চোদ্দসিকার জুতো | ঘরে অন্ন নেই, বাইরে বাবুয়ানা। |
মা বলেছে আমার নাকি মাথা ধরেছে | কৌশলে কিছু করতে অনিচ্ছা প্রকাশ; ধরা পড়ে যায় এমন বাজে অজুহাতে মিথ্যা কথা বাজে। |
মা বেচে খায় কলমি শাক, ছেলের মাথায় ফরমেশে পাগ | গরিবের ছেলের উঁচু চাল; গরিব ছেলের বাবুগিরি। |
মা ব্রুয়াৎ সত্যম অপ্রিয়ম | কখনো অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না। |
মামা কানা, আমি চোখে দেখিনে | দুজনেই সমান অপদার্থ। |
মামা কানা, আমি চোখে ঝাপসা দেখি | তুলেমূলে দুজনেই সমান অপদার্থ। |
মামার গোয়ালে বিয়ালো গাই সেই সূত্রে মামাতো ভাই | কোন সম্পর্ক নেই অথবা অতি দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা; তুলনীয়- 'মাসীর মায়ের বকুলফুলের বোনপো-বউয়ের বোনঝি-জামাই'। |
মামার জয় | চরম সুবিধাবাদ; কারো বিরাগভাজন হতে অনিচ্ছুক; জয়কেতে; (উৎসকাহিনী- এক মোষ ও এক বাঘকে এক শিয়াল মামা বলত; শিয়ালের প্ররোচনায় বাঘ ও মোষের মধ্যে একদিন লড়াই লেগে যায়; শিয়াল দুজনের লড়াই দেখছিল এবং মাঝে মাঝে ‘মামার জয়’ বলে চিৎকার করে উঠছিল; বাঘ ও মোষ দুইই ভাবে ভাগনা তার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে; আসলে শিয়াল তার নিজের ভাগ্যকে বাহবা দিচ্ছিল; শিয়াল ভালোই জানে- যেই জয়ী হোক তাতেই তার লাভ আছে।) |
মামীর মায়ের বকুল- ফুলের বোনপো-বউয়ের বোনঝি-জামাই | বিন্দুমাত্র আত্মীয়তসম্পর্ক নেই; অতিদূরসম্পর্কের আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝাতে প্রবাদটি উক্ত হয়। |
মায়ে ঝিয়ে কোন্দল কোন্দল নয়, সকালের বাদল বাদল নয় | মা মেয়েরে ঝগড়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, কিছুক্ষণের মধ্য উভয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে; সুতরাং ওটা ঝগড়া নয়; সকালের বৃষ্টিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। |
মায়ের অগোচরে বাপ নেই মনের অগোচরে পাপ নেই | সন্তানের বাবা কে একমাত্র মা-ই জানে; বিবেকের কাছে কিছুই অজানা থাকে না। |
মায়ের কাছে মামারবাড়ীর/মাসির গল্প | জানা বিষয় জানাতে আসা। |
মায়ের চেয়ে মাসি মিঠে | আদর আছে শাসন নেই। |
মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি | মাসীর অতিরিক্ত দরদের প্রতি বক্রোক্তি; পাঠান্তর- 'মায়ের পোড়ে না মাসীর পোড়ে, পাড়া পড়শীর কেতন ওড়ে'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মা’র চেয়ে যার দরদ বেশি তারে বলে ডাইন'। |
মায়ের ছা রায় বর্তায় | ছেলের গলা শুনলেই মা বুঝতে পারে। |
মায়ের নাম পোঁটাচুন্নি ছেলের নাম চন্দনবিলাস১ | মা বাজারে মাছের পোঁটা বিক্রি করে পেট চালায়; তাই তার নাম পোঁটাচুন্নি; এদিকে ছেলে মায়ের কষ্টার্জিত অর্থে বাবুগিরি করে বেড়ায়। |
মায়ের নাম পোঁটাচুন্নি ছেলের নাম চন্দনবিলাস১ | অযোগ্যের যোগ্যতা অর্জনের হাস্যকর প্রয়াস; তুলনীয়- কানাছেলের নাম পদ্মলোচন'; 'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; পাঠান্তর- 'ঘুঁটেকুড়ানির ছেলের নাম চন্দনবিলাস। |
মায়ের নাম ফেকুবাঁদী পুতের নাম সুলতান খাঁ | বাঁদির চেহারা বিবর্ণ বলে তার নাম ফেকু; পরের বাড়ী গোলামী করে বাবা-মা কষ্টসৃষ্টে দিন চালা্য; শৌখিন ছেলে মায়ের আয়ে বাবুগিরি করে বেড়ায়। |
মায়ের পেটে ভাত নাই, বউয়ের গলায় চন্দ্রহার | বউ-ভেড়ুয়া ছেলে, যে মাকে খেতে দেয় না অথচ বউয়ের যত্নের সীমা নেই, তার প্রতি তিরস্কার। |
মায়ের পেটের ভাই কোথায় গেলে পাই | বউ বা বন্ধু খুঁজলে পাওয়া যাবে কিন্তু সহোদরের মত আত্মীয় কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না; তুলনীয়- 'দেশেদেশে কলত্রাণি দেশেদেশে চ বান্ধবাঃ; তন্তু দেশং ন পশ্যামি যত্র ভ্রাতা সহোদরঃ' তুলনীয়- 'ভাই লক্ষ্মণ[। |
মায়ের বোন মাসি কাদায় ফেলে ঠাসি বাপের বোন পিসি ভাতকাপড় দে পুষি | অতীতে কৌলিন্যপ্রথার জন্য বহু মেয়ে শশুর ঘর না করে বেশিরভাগ সময় বাপেরবাড়ী থাকত; কুলীনের বউ হিসাবে বাপের বাড়িতে তার যথেষ্ট প্রতিপত্তি ও খাতির ছিল; যৌথপরিবার ভেঙে যাওয়ায় সেই অবস্থা আর নেই; আধুনিককালে একক-পরিবারে মার সোহাগে মাসির আধিপত্য বেশি। |
মায়ের মায়াই আসল মায়া, অশত্থের ছায়াই আসল ছায়া | মায়ের স্নেহ আর বটগাছে ছায়ার কোন তুলনা হয় না। |
মায়ের শাসনই আসল শাসন, আর সব দুঃশাসন | মায়ের স্নেহমিশ্রিত কড়াশাসনে প্রকৃত সন্তান গড়ে উঠে; অন্য সব শাসন কুশাসনের নামান্তর। |
মার চেয়ে যার দরদ বেশি তারে বলে ডাইন | মার চেয়ে বেশি আদর কারো হতে পারে না; হলে সেটা কপট বা মেকি ভালবাসা হবে। |
মার সোহাগে বাপের আদর | মা আছে বলেই বাবা সন্তানকে স্নেহ করে; মায়ের স্থান বিমাতা নিলে বাপের সোহাগ উবে যেত; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ফুলের সোহাগে ছোটার আদর'। |
মারা তীর ফেরে না | মুখের কথা একবার বেড়িয়ে গেলে আর ফেরানো যায় না; কোন কাজ একবার হয়ে গেলে আর ফিরে যাওয়া যায় না; ভেবেচিন্তে কিছু বলা বা করা উচিৎ। |
মারি তো গণ্ডার/হাতী লুটি তো ভাণ্ডার১ | বিরাট দাঁও মারা। |
মারি তো গণ্ডার/হাতী লুটি তো ভাণ্ডার২ | কাজ করলে বিরাটমাপের কাজই বেছে নেওয়া উচিৎ; লক্ষ্য সবসময় উঁচু রাখা কর্তব্য। |
মারীচের দশা/মরণ/মায়া | এদিকে গেলেওে বিপদ ওদিকে গেলেও বিপদ; এগিয়ে গেলে রাম পিছিলে গেলে রাবণ; উভয়সঙ্কট; (উৎসকাহিনী- সীতা হরণকালে রাবণ মারীচকে মায়ামৃগ সেজে রামের সম্মুখে যেতে বলেছিলেন; মারীচ অসম্মত হলে রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন; মারীচ দেখলো রাবণের আদশে মানলে রামের হাতে তার মৃত্যু হয়; আর অস্বীকার করলে রাবণের হাতে তার মৃত্যু হয়); পাঠান্তর- 'রাবণের হাতে যথা মারীচ কুরঙ্গ'; 'রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব'। |
মারের উপর ওষুধ নাই | লাঠ্যোষুধির মত ভালো ওষুধ হয় না; প্রহার করলে শাসন বজায় থাকে; সমতুল্য- 'মারের চোটে ভূত পালায়'; 'মারের নাম ধনঞ্জয়/বাবাজী'। |
মারের সাবধান নাই; সাবধানেরও মার নাই | অদৃষ্টবাদীরা বলেন, 'ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন'; যা হবার তাই হবে; বাস্তববাদীরা বলেন, 'সাবধান থাকলে বিপদ এড়ানো যায়'; তূলনীয়- মারে হরি রাখে কে? রাখে হরি মারে কে? |
মারে হরি রাখে কে? | রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তবে কেউ তাকে বাঁচাতে পারে না। |
মারে হরি রাখে কে? রাখে হরি মারে কে? | ঈশ্বর যাকে মারবে ভাবে কেউ তাকে বাঁচাতে পারে না; ঈশ্বর যাকে বাঁচাবে ভাবে কেউ তাকে মারতে পারে না; ঈশ্বরই রক্ষক, আবার ঈশ্বরই ভক্ষক। |
মারো আর ধরো পিঠে দিয়েছি কুলো, বকো আর ঝকো কানে দিয়েছি তুলো | সববিষয়ে নির্বিকার নিস্পৃহ; কোন হেলদোল নেই। |
মা লক্ষ্মী ঘরে এসো অলক্ষ্মী বিদায় হও | দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে ঘরে লক্ষ্মীপূজার সময় গৃহলক্ষ্মীর উচ্চারিত অঞ্জলি। |
মা লক্ষ্মী ভিক্ষা মাগে | আর্থিক দৈন্যদশা; অর্থশালীর কাঙালীপনা; যার যে বস্তু আছে সে যদি সেই বস্তু অন্যের কাছে চায় তবে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
'মা' সব থেকে ছোট শব্দ, 'মা' সব থেকে বড় অনুভূতি | সাগরের তল খুঁজে পাওয়া যায়, মাতৃহৃদয়ের তল খুঁজে পাওয়া যায় না। |
মাসামাসি গেছে, সাঁঝাসাঁঝি আছে | নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেছে,কের হাতে আছে শুধু আজকের সন্ধ্যেটা; খুব অল্পসময় বেঁচেে থাবলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। |
মাসীর যদি গোঁফ থাকত, তবে সে মেসো হত | যদি, তবে ইত্যাদি অজুহাতের জট। |
মিছরির ছুরি | যে ব্যক্তির মুখে মিষ্টি কথা কিন্তু অন্তর বিষে ভরা তাকে 'মিছরির ছুর' আখ্যা দেওয়া হয়; সমতুল্য- 'বিষকুম্ভ পয়োমুখম'। |
মিছরির টুকরাও ভাল; মুড়ির আড়িও ভাল নয় | ভালো জিনিসের অল্প ভাল, মন্দ জিনিসের রাশিও কিছু নয়। |
মিছে কথা সেঁচা জল বেশিক্ষণ নয় | মিছ কথা বেশিক্ষণ টেঁকে না; একটু চাপাচাপিতে সত্যকথা বেরিয়ে পড়ে; সেঁচা জল বেশিক্ষণ নয় স্থায়ী হয় না; অল্পক্ষণেই শুকিয়ে যায়। |
মিছে কর আম্বা আম্বা, যা করেন জগদম্বা | বৃথা আখাঙ্ক্ষা, আস্ফালন বা বড়াই করা নিরর্থক; বেশি আকাঙ্খা করো না, ঈশ্বর যা দিয়েছেন তার বেশি পাবে না। |
মিছে কাজে কাটনি কামাই | বাজে কাজে ব্যস্ত থেকে আসল কাজ নষ্ট করা। |
মিছে ডুমুর বড়াই করে পাকলে ডুমর ঝরে পড়ে | পরে যার কিছুতেই গর্ব থাকবে না তার গর্ব করা সাজে না। |
মিঞা থেকে মিঞার ডিঙি ভারী | তুলনায় বেশি বাহারী; আসলবিষয় ছেড়ে তুচ্ছবিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'ছেলের চেয়ে ছেলের গু ভারী'; 'ছেলের থেকে ছেলের ঘুনসি বড়'; 'বারোহাত কাঁকুড়ের তেরোহাত বীচি'; 'বারোহাত কাপড়ের তেরোহাত দশী'; 'বারোহাত পুকুরে তেরোহাত মাছ'। |
মিঞা-বিবি রাজী তো কিয়া করেগা কাজী | বিবাদ নেই, সুতরাং বিচারেরও কোন প্রয়োজন নেই। |
মিড়মিড়ে আলো আর নিড়বিড়ে বউ দুইই সমান | ক্ষীণ আলো আর দীর্ঘসূত্রী বউ দুইই বিরক্তিকর। |
মিত ভোজনে স্বাস্থ্যলাভ | অল্প আহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। |
মিতং চ সারং চ বচোহি বাগ্মিতা | পরিমিত ও সারযুক্ত বচনই প্রকৃত বাগ্মিতা। |
মিথ্যা, ডাহামিথ্যা, স্ট্যাটিসটিক্স- রবীন্দ্রনাথ | মিথ্যার অতিশায়ন বা মাত্রাভেদ- অল্পমিথ্যা, মাঝারি-মিথ্যা ও চূড়ান্তমিথ্যা; পরিসংখ্যান সর্বোচ্পর্যায়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে; যেন দিনকে রাত করে। |
মিথ্যাবাদীর স্মৃতিশক্তি ভাল হয় | বানানো কথা কখন কি বলেছে মনে রাখতে না পারলে মিথ্যাবাদী ধরা পড়ে যায়। |
মিলেতো ভালা না মিললে একলা একলা ভালা | সঙ্গে থাকলে ভাল না থাকলেও ক্ষতি নেই; কেউ যদি ডাকে সাড়া না দেয় তবে একলা চলতে হবে। |
মিষ্টভাষীর কাছে কেউই পর নয় | মিষ্টভাষী তার স্বভাবগুণে সকলকে আপন করে। |
মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ/ মিষ্টান্মম ইতরে জনাঃ | বিয়েবাড়ী সম্পর্কীত উক্তি; কন্যা চায় বরের রূপ; মা চায় বরের ঐশ্বর্য; বাবা চায় বরের বিদ্যা; স্বজন চায় বরের কুলমর্যাদা; বাকিরা সব ভোজনপ্রত্যাশী; তারা সব মিষ্টি খেতে চায়। |
মিষ্টি আম খেলে কি আঁটি শুদ্ধ খায়? | সবতাতেই পরিমিতিবোধ থাকা উচিত। |
মিষ্টি আমে পোকা ধরে | ভালোলোক পেলে মন্দলোক তাকে ফাঁকি দেয়। |
মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজে না | বিনা পারিশ্রমিকে কোন কাজ হয় না; পাঠান্তর- 'মিষ্টি কথায় পেট ভরে না'। |
মিষ্টি কথায় জগৎ তুষ্ট | মিষ্টিকথায় সবাই তুষ্ট হয়; পাঠান্তর- 'মিষ্টি কথায় মন ভিজে'। |
মিষ্টি কথায় সৃষ্টিনাশ | মিষ্টিকথায় লোককে বোকা বানানো যায়; দুষ্ট মিষ্টিকথায় ভুলিয়ে লোকের সর্বনাশ করে। |
মিষ্টি কথার খরচ নেই | পয়সা খরচ করে মিষ্টি কথা শিখতে হয় না, অন্তর থেকে উৎসারিত হয়। |
মিষ্টি মানুষ পাকলে তিতা | বয়স বাড়লে মানুষ ধৈর্যশীলতা হারায়; মেজাজ খিটখিটে হয়। |
মিষ্টি হইয়ো না সবাই খাবে, তিক্ত হইয়ো না সবাই থুতু ছিটাবে | বেশি নরম হওয়া ভাল নয় আবার বেশি কড়াও হওয়াও ভাল নয়। |
মুক্তা-দাঁতী, হরিণ-চোখী, লম্বা মাথার চুল, সেই নারী করিলে বিয়া ঘরে ফুটে ফুল | দাঁত মুক্তার মত ঝকঝকে, চোখ হরিণের মত দিঘল, কেশরাশি সুদীর্ঘ এমন লক্ষ্মীস্বরূপা নারী্কে বিয়ে করলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। |
মুখখানি যেন ক্ষুরের ধার | অতি কটুভাষী; অত্যন্ত রুক্ষ ও মর্মভেদী কথা বলে। |
মুখখানি যেন তলোহাঁড়ি (মাটির বড়হাঁড়ি) | কেউ মুখ গোমরা করে থাকলে প্রবচনটি প্রযোজ্য হয়। |
মুখখানি যেন ভাজনা খোলা | চড়বড় করে কথা বলে। |
মুখচোরা বামুন, কেশোরোগী চোর | লাজুক বামুনকে যজমান উপেক্ষা করে এবং কশোচোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে; সুতরাং দুজনেই কাজে অনুপযুক্ত এবং সমান অপদার্থ। |
মুখ না থাকলে শিয়ালে খেতো১ | মুখ আছে বলে মানুষ বলে চেনা যায়; তা না হলে শিয়াল মাংসপিণ্ড মনে করে খেয়ে ফেলতো। |
মুখ না থাকলে শিয়ালে খেতো২ | মুখসর্বস্ব কাজে অষ্টরম্ভা বাচালের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি। |
মুখ পুড়িয়ে লঙ্কায় আগুন | নিজের ক্ষতি করে পরের ক্ষতি করার চেষ্টা। |
মুখ বড় মিঠে, নিম-নিসিন্দে পেটে | মুখে মিষ্টি কথা বলে কিন্তু মনে ঈর্ষা দ্বেষ পোষণ করে; তুলনীয়-'মুখে মধু হৃদে ছুরি'; 'বিষকুম্ভ পয়োমুখম'। |
মুখ বন্ধ কান খোলা রাখ | কম কথা বল এবং বেশি কথা শোন। |
মুখ মনের আয়না/মুকুর | মুখ দেখলে মন পড়া যায়। |
মুখে এক মনে আর/আরেক | মুখে এক কথা বলে, মনে আরেক কথা ভাবে। |
মুখে মধু মনে বিষ | তুলনীয়- 'মুখে খুব মিঠে, নিম-নিশিন্দে পেটে'। |
মুখে মধু হৃদে ছুরি | ক্রুর চরিত্রের লোক; এদের কাছ থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা বেশি থাকে। |
মুখে চুণকালি | মন্দকাজ করে সম্ভ্রম নষ্ট; লোকের হাস্যাস্পদ হওয়া। |
মুখের কথা ফেরেনা | একবার বলে ফেললে সেই কথা আর গেলা যায় না; সমতুল্য- 'ছোঁড়া তীর ফেরে না'। |
মুখে রাজা উজির মারা | বাক/মুখসর্বস্ ব্যক্তি; মুখে খালি লম্বাচওড়া বুলি, কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা; সমতুল্য- নামের চোটে গগন ফাটে; পাঠান্তর- 'মুখেন মারিতং জগৎ'; 'মুখের চোটে গগন ফাটে'। |
মুখে রামনাম বগলে ছুরি | মুখে ধর্মকথা বল কিন্তু মনে মনে অনিষ্ট চিন্তা করে। |
মুখে হরি বল হাতে কাজ কর১ | সংসারের কাজ করতে গিয়ে ঈশ্বরচিন্তা ভুলো না। |
মুখে হরি বল হাতে কাজ কর২ | ঈশ্বরের নাম নিয়ে লোক ঠকাও; ধান্ধাবাজী; তুলনীয়- 'কেশব গোপাল হরিহরি হরহর'। |
মুঘল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়েন তাঁতী | পণ্ডিত যেখানে তল পায় না মূর্খ সেখানে ফরফর করে; মূলপ্রবাদ- 'চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকি ধরে বাতি; মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি'। |
মুচির নেই নাক শুঁড়ির নেই কান১ | শুঁকে শুঁকে চামড়ার দুর্গন্ধ মুচির নাকে আর লাগে না; মাতালের কটু কথা শুনতে শুনতে শুঁড়ির আর কটু মনে হয় না। |
মুচির নেই নাক শুঁড়ির নেই কান২ | কিছু না বুঝা না শোনার বাহানা। |
মুড়া কোদালে দীঘি কাটা | অনুপযুক্ত উপায়ে বিরাট কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা; সমতুল্য-'কলার ভেলায় সাগর পার'; 'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'নরুণ দিয়ে তালগাছ কাটা' ইত্যাদি। |
মুড়ি আর ভুঁড়ি সকল রোগের গুঁড়ি | মাথা আর পেট বিগড়ালেই সব রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। |
মুড়ি মিছরির একদর১ | গুণের কদর নেই; ভালমন্দের সমান বিচার। |
মুড়ি মিছরির একদর২ | নিয়ম অনুশাসনের বালাই নেই; তুলনীয়- 'আন্ধানগরী চৌপাট রাজা, টাকা সের ভাজি টাকা সের খাজা'। |
মুড়ি রেখে কোপ | নিজস্বার্থের দিকে নজর রাখা; (উৎসকাহিনী- ছাগ বলিদানে মাথার দিকে একটু বেশি মাংস রেখে কামার কোপ মারে, কারণ মাথাটা তার প্রাপ্য।) |
মুণ্ডমালার দাঁতখামাটি | তুলনীয়- 'মরাবাঘের দাঁতখামাটি'। |
মুনিনাঞ্চ মতিভ্রমঃ | কার না ভুল হয়? মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়; মুনীদেরও মাঝেমাঝে ভুল হয়। |
মুনির মন টলে | এমন সব সুন্দর এবং লোভনীয় নারী যে জিতেন্দ্রীয় মুনি মনও টলে যায়; সবাই রিপুর দাস; তুলনীয়- 'তন দেখল সত্যনাশ, তল দেখলে সর্বনাশ'। |
মুরগীর পোঁদে তেল হলে মোল্লার দোর দে' রাস্তা | যে সর্বনাশ করতে পারে অহঙ্কারে তাকেই অবজ্ঞা করা; অতি বাড় বাড়া; তুলনীয়- 'ধরাকে সরা জ্ঞান করা'। |
মুরাস্তৃতীয়ঃ পন্থাঃ | স্বতন্ত্রপ্রকৃতির লোকেদের সবকিছুই অন্যের অননুরূপ হয়; সমতুল্য-'কানাগরুর ভিন্ন গোঠ'। |
মুরোদের নাই সীমে রথ দিয়েছে নিমে | নিমে নামের লোকটার ক্ষমতা কিছু নেই; শুধু বাহবা কুড়াতে রথ প্রতিষ্টা করেছে; নামের লোভে ক্ষমতার বাইরে কাজ করতে যাওয়া। |
মুল্লা কা দৌড় মসজিদ তক | তুলনীয়- 'মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত'। |
মুসলমানের মুর্গী পোষা | স্বার্থের জন্য কৃত্রিম দরদ দেখানো; স্বার্থসাধনের জন্য আদরযত্ন করা। |
মূর্খ একঘণ্টায় বহু প্রশ্ন করে জ্ঞানী তার উত্তর দিতে একবছর সময় নেয় | অজ্ঞানেরা বকে বেশি। |
মূর্খ আগে কথা বলে পরে চিন্তা করে, জ্ঞানী আগে চিন্তা করে পরে কথা বলে | মুর্খ ভাবার আগে বলে; জ্ঞানী বলার আগে ভাবে। |
মূর্খরাও বুদ্ধিমান হয় যখন তারা চুপ থাকে | বুদ্ধিমান লোকেরা বেশি কথা বলে না। |
মূর্খলোকেরা সেখানে ছুটে যায় যেখানে জ্ঞানীলোকেরা যেতে ভয় পায় | মূর্খলোকেরা চিন্তা না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়; পাঠান্তর- মূর্খলোকেরা সবার আগে ছোটে। |
মূর্খ বলে বেশি শোনে কম | মূর্খ নিজেকে ভারি জ্ঞানী মনে করে তাই তার জ্ঞানার্জনে অনীহা বেশি। |
মূর্খশ্চ পুত্রো বিনাগ্নিনা সংদহতে শরীরম | মুর্খ পুত্র আগুন ছাড়াই সর্বাঙ্গ দগ্ধ করে। |
মূর্খস্য নাস্ত্যৌষধম | মুর্খের কোন ঔষধ নাই। |
মূর্খস্য লাঠ্যৌষধি | মুর্খকে তাড়না ব্যতীত উপায় নাই; 'মূর্খস্য নাস্ত্যৌষধম' বিকৃত পাঠ। |
মুর্খে দোষা হি কেবলং | মুর্খ কেবল দোষই করে; পাঠান্তর- 'মুর্খের দোষ পদে পদে'। |
মূর্খেরও অভিমান আমি বড় বুদ্ধিমান | মুর্খও নিজেকে অতিশয় বুদ্ধিমান মনে করে অহঙ্কারী হয়ে থাকে। |
মূর্খের কথার উত্তর না দেওয়াটা তার উত্তর | মূর্খের কথায় চুপ থাকা শ্রেয়। |
মূর্খের কাছে টাকা থাকে না | ্খরচের ব্যাপারে মূর্খ বড় বেহিসাবী। |
মূর্খের কাছে মুর্খতাই শেখা যায় | মূর্খের কিছু শেখাবার নেই। |
মূর্খের জিভ বুদ্ধির আগে | সাধারণজ্ঞনের অভাব থাকায় ভাবে কম বকে বেশি। |
মূর্খের দোষ পদেপদে | মূর্খ পদেপদে দোষ করে থাকে; সমতুল্য- 'মুর্খে দোষা হি কেবলং'। |
মূর্খের মুখ মূর্খতা ঢেলে দেয় | মূর্খমাত্রই বেশি কথা বলে। |
মূর্খের সম্পদ কড়ি, জ্ঞানীর সম্পদ জ্ঞান | অজ্ঞলোকেরা অর্থ ও কাম খোঁজে; জ্ঞানীলোকেরা ধর্ম ও মোক্ষ খোঁজে। |
মূর্খের সাথে তর্ক করো না, মানুষ তোমাকে মূর্খ ভেবে ভুল করতে পারে | মূর্খ ছাড়া কেউ মুর্খের সাথে বিবাদ করে না। |
মূর্খের স্বর্গবাস | মিথ্যা আশা ও আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অলীক সুখকল্পনা করা। |
মূলা খেলে মূলার ঢেঁকুর উঠে | ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে; কু কখনো সু হয় না; সমতুল্য- 'আদা শুকালেও ঝাল যায়না'; 'কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না'; 'রসুন খেলে মুখে রসুনের গন্ধ ছাড়ে'; 'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি। |
মূলাচোরের ফাঁসি | যত-না-দোষ তার থেকে শাস্তি বেশি; সমতুল্য- 'লঘুপাপে গুরুদণ্ড'। |
মূলার চেয়ে ধেড়ে মোটা | মূলা থেকে তার পাতার ডাঁটা বেশি মোটা; আয়োজন থেকে আড়ম্বর বেশি; প্রয়োজনীয় বিষয় থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বেশি'; সমতুল্য- 'মিঞা থেকে মিঞার ডিঙ্গি ভারি'। |
মূলে অশুদ্ধ তিবড়িই (উনুন) গোবর | সবই যখন অশুদ্ধ তখন গোবর প্রলেপ দিলে উনুন শুদ্ধ হবে না। |
মূলে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভাল | একেবারে না হওয়ার থেকে দেরীতে হওয়া ভাল; সমতুল্য- 'নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল'। |
মূলে নেই লক্ষ্মীপূজা, একেবারে দশভুজা | ছোট কাজ করতে পারে না বড় কাজ করার উদ্যোগ করে; আদিখ্যেতা, নিতান্ত বাড়াবাড়ি। |
মূলে মাদুর নেই তার উত্তর শিয়র | উত্তরে মাথা রেখে শোয়া নিষিদ্ধ; যার শোয়ারই জায়গাই নেই তার আবার উত্তর দক্ষিণ কি? যার ভয়ের কোন কারণ নেই, সেই বিষয়ে অকারণ চিন্তা। |
মৃণালেরও কণ্টক আছে | জগতে কোন কিছুই বিশুদ্ধ নয়; প্রতিটি বিষয়ের কিছু-না-কিছু ত্রুটি আছে; সমতুল্য- 'চাঁদেরও কলঙ্ক আছে'; 'গোলাপেরও কাঁটা আছে'। |
মৃত সিংহ হওয়ার চেয়ে জীবিত কুকুর হওয়া ভালো | মৃত সে যত মহৎই হোক তার কিছু দেওয়ার নেই; জীবিত সে যত ক্ষুদ্রই হোক তার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা থাকে। |
মৃত্যু কাউকে রেয়াত করে না | যমের হাত থেকে মুক্তি নেই; নিয়তিকে বাধা দেবার কেউ নেই; তূলনীয়- 'নিয়তি কেন বাধ্যতে'। |
মৃত্যু জন্মের মতই স্বাভাবিক | জীবনে জন্মের মতো মৃত্যুও অবধারিত; গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, যাঁর জন্ম হয়েছে, তাঁর মৃত্যু হবেই; তাই মৃত্যুর কথা ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; পাঠান্তর- 'জন্ম মৃত্যুর সামিল'। |
মৃত্যু পাঁজি রাখে না | পরমায়ু কবে শেষ হবে তা একমাত্র বিধাতাই জানেন; পাঠান্তর- 'মৃত্যুর সময় অসময় নেই'; সমতুল্য- নিশ্বাসে বিশ্বাস নেই'; পাঠান্তর- 'মৃত্যু বলে কয়ে আসে না'। |
মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন মানুষকে সুখী বলো না | জীবন এতই কঠোর ও নির্মম যে সারাজীবন কেউ সুখী হতে পারে না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চাদরে মাথা ঢাকে তো পা ঢাকে না'; 'চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়'; 'সুখ স্বপনে, শান্তি শ্মশানে' ইত্যাদি। |
মৃত্যু পালাবার পথ নয় | সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে হলোে না পালিয়ে সঙ্কটের মোকাবিলা করা উচিত। |
মৃত্যুরেব ন সংশয় | মানষমাত্রই মরণশীল; জন্মের মত মৃত্যুও অতি স্বাভাবিক ঘটনা। |
মৃত্যু সকলকে সমান করে | অমোঘ মৃত্যু উচ্চনীচ গরিব বড়লোক সবাইকে এক আসনে বসায়; সবারই এক পরিণতি- চিতা/কবর। |
মেকি টাকার ঘন নিশান | নকলের চাকচিক্য আসল থেকে বেশি হয়। |
মেকি ব্রাহ্মণের ভড়ং বেশি | অক্ষম দৈন্যতা লুকাতে বেশি আচার-আচরণ করে; তুলনীয়- 'অব্রাহ্মণের দীর্ঘ ফোঁটা'। |
মেঘ আছে বলেই সুর্যের কদর | অন্ধকার আছে বলেই আলোর কদর। |
মেঘ চমকালেই বৃষ্টি হয় না | যারা ফরফরায় তাদের কর্মক্ষমতা কম হয়; পাঠান্তর- 'মেঘ যত গর্জায় তত বর্ষায় না'। |
মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়,আড়ালে তার সূর্য হাসে- রবীন্দ্রনাথ | মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে; দুঃখের আড়ালেই সুখ আছে; সমতুল্য- 'আজ আমীর কাল ফকির'; 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুঃখানি চ সুখানি চ'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; 'ঝড় থেমে গেলে সব কিছু শান্ত হয়'; বৃষ্টি অঝোরে ঝরে না' ইত্যাদি। |
মেঘ না চাইতেই জল | কোন জিনিস পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়ামাত্রই প্রাপ্তি; সমতুল্য- 'গাছে না উঠতেই এক কাঁদি'। |
মেঘান্তরিতরৌদ্রবৎ | মেঘবিহীন আকাশের রৌদ্রতাপের মত; জ্ঞাতিদের কথাবার্তা মেঘবিহীন আকাশের রৌদ্রতাপের মত অসহ্য লাগে; তূলনীয়- 'গজভুক্তকপিত্থবৎ'; 'ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ'। |
মেঘে মেঘে বেলা গেল/যায় | চেহারা দেখে বোঝবার উপায় নেই যে বয়স হয়েছে। |
মেঘে শীত না মাঘে শীত? যত্র বায়ু তত্র শীত | মেঘে বা মাঘে শীত হয় না; শীতের বায়ু বইলেই শীত পড়ে। |
মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে | দুঃখের আড়ালে সুখ থাকে; দুখের পরে সুখ আসে। |
মেঘের কোলে সৌদামিনী | কৃষ্ণবর্ণ সুন্দরবস্তুর পাশে উজ্জ্বল সুন্দরবস্তুর উপস্তিতি নয়নাভিরাম। |
মেঘের ছায়া | অল্পক্ষণস্থায়ী সুখানুভূতি; সুখ-সম্পদ স্বল্পস্থায়ী। |
মেঘের মতো জল নেই, অন্নের মত খাদ্য নেই | দুইই সমান অতুলনীয়, আদরনীয়। |
মেজে ঘষে কর ক্ষয়, কালো কভু ধলো নয় | কালো কখনো ফর্সা হয় না; তুলনীয়- 'কাক কখনো বক হয় না'। |
মেজে ঘষে রূপ আর ধরে বেঁধে পীরিত | মাজাঘষা করলে রূপ বাড়ে না; জোর করে কারো ভালবাসা আদায় করা যায় না। |
মেনিমুখো | যে ঘরের কোণে বসে থাকতে ভালবাসে; অত্যন্ত লাজুকপ্রকৃতির পুরুষ যে সবার সামনে বেরুতে চায় না। |
মেয়েমানুষের বাড় কলাগাছে বাড় | কৈশোরে মেয়েরা কলাগাছের মত দ্রুত বেড়ে ওঠে। |
মেয়ের মায়ের পাঁচটা প্রাণ | মেয়েদের শ্বশুরবাড়ী থেকে মেয়ের মাকে নানা কটুকথা গঞ্জনা শুনতে হয়; একটা প্রাণ হলে কবেই সে মরে যেত- এই ভাবনা থেকে প্রবাদের সৃষ্টি। |
মেয়েদের রূপ ছেলেদের প্রতিভা একই জিনিস | উভয়ই জন্মগত প্রাপ্ত এবং ধংসাত্মক প্রভাবশালী। |
মেরে তুলোধুনা করা | কাউকে নির্দয়ভাবে প্রহার করা। |
মেরেছে মেরেছে কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না? | প্রীতিপ্রেমের পূণ্যবন্ধনে মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে উঠে; তুলনীয়- 'তুমি অধম হইলেও আমি উত্তম হইব না কেন'? |
মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসী পড়ে তাঁতী, বাঘ পালালো বিড়াল এলো শিকার করতে হাতি | যেখানে জ্ঞানীরা যেতে ভয় পায় সেখান অজ্ঞানীরা ছুটে যায়; সমতুল্য- চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল, জোনাকি ধরে বাতি; মোগল পাঠান হদ্দ হল, ফারসি পড়ে তাঁতি। |
মোটা ভাত মোটা কাপড় | অতি সাদাসিধা খাওয়াপড়া, কোন বাবুয়ানা নেইল কোন বাহুল্য নেই। |
মোটে মা রাঁধে না, তার তপ্ত ও পান্তা১ | অস্তিত্বহীন বস্তুর গুণাগুণ বিচার চলে না। |
মোটে মা রাঁধে না, তার তপ্ত ও পান্তা২ | যেখানে কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই সেখানে বিশেষ দাবীর প্রশ্ন নেই। |
মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত | মোল্লার প্রতিদিনের যাতায়াত বাড়ী থেকে মসজিদ পর্যন্ত; মোল্লার কাজ নামাজ পড়া ও পড়ানো; তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা এই ছোটো গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ; তার বাইরের খোঁজ তিনি রাখেন না; সেই ভাবার্থেই যে যা কাজ করে সেই পর্যন্তই তার জ্ঞনের সীমা; মোল্লাকে কোন প্রশ্ন করাতে তিনি যদি তার উত্তর দিতে না পারেন তবে এই প্রবাদ বাল হয়। |
মৌনং সম্মতি লক্ষনম্ | মৌনতা সম্মতির লক্ষণ; চুপ থাকলে সম্মতি আছে বোঝা যায়। |
মৌনীনঃ কলহো নাস্তি | মৌনব্যক্তির সাথে কারো ঝগড়া হয় না; সমতুল্য- 'বোবার শত্রু নেই'। |
ম্যাও ধরে কে | সাহসিক কাজের গুরুদায়িত্ব কে নেবে? সমতুল্য- 'বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে'? |
য
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
যক্ষের/যখের চোখে ঘুম নেই | অতিশয় কৃপণব্যক্তি সবসময় টাকা আগলিয়ে রাখার দুশ্চিন্তায় কখনো ঘুমাতে পারে না। |
যক্ষের/ঝখের ধন | খুব কৃপণলোকের ধন যা কখনোই ব্যয় হয় না; (উৎসকাহিনী-দূর অতীতে ধনশালীরা সম্পদ নিরাপদে লুকিয়ে রাখার জন্য মাটির নীচে ঘর বানিয়ে সেখানে কলসিভরে মোহর সোনাদানা ইত্যাদি রেখে একটি ছেলেক সারাজীবনে পাহারা দিতে আটকে রেখে দিত; এই ধনকে যক্ষের ধন বলে।) |
যখন আদর জুটে, ফুটকলাই দিয়ে ফুটে; যখন আদর টুটে, ঢেঁকি দিয়ে কুটে | আদর বা তিরস্কার করার কোনটারই মাত্রা নেই; আদর ফুটকড়াইয়ের মত খোলা ভরে দেয়; আবার তিরস্কার ঢেঁকিতে চাল কোটার মত করে)। |
যখন লক্ষ্যে পৌঁছান যাবে না নিশ্চিত তখন লক্ষ্যের সাথে আপোষ না করে উপায়ের সাথে আপোষ কর | লক্ষ্যে অবিচল থাকা উচিত; সাফল্য একদিন আসবেই; তুলনীয়- 'লক্ষ্যহীনব্যক্তি লাগামাছাড়া ঘোড়ার মতই দিশাহারা'। |
যখন কপাল বাঁকে দূর্বাবনে বাঘ ঝাঁকে | কপাল মন্দ হলে যেখান থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই সেখান থেকে বিপদ এসে উপস্থিত হয়। |
যখন কপাল মন্দ হয়, বন্ধুলোকে মন্দ কয়১ | কপাল খারাপ হলে বন্ধুবান্ধব মন্দকথা শোনায়। |
যখন কপাল মন্দ হয়, বন্ধুলোকে মন্দ কয়২ | কপাল খারাপ হলে বন্ধুবান্ধবের ভালকথাও কানে খারাপ লাগে। |
যখন গাধা খায়, জল ঘোলা করেই খায় | বোকা সুষ্ঠভাবে কাজ করতে অপারগ। |
যখন তখন করে পাপ, সময় বুঝে ফলে শাপ | শাস্তি এড়ানো যায় না; সময় হলোেই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে। |
যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান | যে দেশে তুমি আছ সেই দেশের আচার অনুসারে আচরণ করা উচিৎ; সমতুল্য- 'যখন যেমন তখন রেমন';'যস্মিন দেশে যদাচারঃ'। |
যখন তোমার হারাবার কিছু নেই, তখন জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয় | পিছুটান বা বাধ্যবাধকতা না থাকলে যে কোন বিষয়ে অতি সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। |
যখন প্রতিকূলতা আসে তখন অনুকূলতার সাথে গ্রহণ করো | বিপদ এলে সাহসের সাথে মোকাবিলা কর। |
যখন বিধি মাপায় উপরি উপরি মাপায় | বিধি একবার দান করতে শুরু করলে উপুর্যপুরি দিতে থাকে; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুঁইড়াই দেয়'। |
যখন যার কপাল বাঁকে দূর্বাবনে বাঘ ঝাঁকে | ভাগ্য মন্দ হলোে সবদিক থেকে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ-'শনির দৃষ্টি হলে পোড়া শোলমাছ পালায়'; পাঠান্তর- 'যখন যার কপাল পোড়ে, শুকনো ডাঙায় পিছলে পড়ে'। |
যখন যা তখন তা | যখন যেটা উপযোগী বা গ্রহণযোগ্য মনে হবে তখন সেটা করা উচিৎ; পাঠান্তর- 'যখনকার যা তখনকার তা'। |
যখন কপাল ধরে, শুকনো ডাঙায় ডিঙি সরে | সৌভাগ্যলক্ষ্মী সঙ্গে থাকলে অসম্ভবও অসম্ভব হয়; তুলনীয়- 'তুঙ্গে যার বৃহস্পতি তারে আর পায় কে'? পাঠান্তর- 'যখন যার পড়তা হয়, ধুলিমুঠো সোনামুঠো হয়'। |
যখন যার তখন তার | একদল লোক আছে যারা সবসময় সবার মন জুগিয়ে চলতে চায়; সবার মন বুঝে কথা বলে। |
যখন যার পড়তা হয় ধূলা ধরলে সোনা হয় | ভাগ্য ভাল হলে অতি বাজে ব্যবসাও লাভজনক হয়ে ওঠে। |
যখন যেমন তখন তেমন | পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা; অবস্থার উপযোগী কাজ করা; অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া; সমতুল্য- 'যস্মিন দেশে যদাচার'; 'যে বনে যাই সেই ফল খাই'। |
যজমানী বামুনের হাজা/শুকা/শুখা নাই১ | হাজা হলে কষ্ট হয়; আবার অনাবৃষ্টি হলে অন্নাভাব হয়; যজমানী বামুনের কিন্তু কোন কষ্ট নেই; যজমানরাই বামুনের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়। |
যজমানী বামুনের হাজা/শুকা/শুখা নাই২ | অন্নসংস্থানের জন্য যাকে পরিশ্রম করতে হয় না বা অর্থ ব্যয় করতে হয় না তার কোনদিন অন্নাভাব হয় না। |
যা জানে জাঁতা জানে, যে পিষে সেই জানে১ | পেষাইয়ের সময়- শস্য বুঝতে পারে কতটা চাপ তার উপর পড়ছে; জাঁতা বুঝতে পারে তার কতটা শক্তি ক্ষয় হচ্ছে; পেষাইকারী বুঝতে পারে তার কতটা পরিশ্রম হচ্ছে। |
য' জানে জাঁতা জানে, যে পিষে সেই জানে২ | কাজের সাথে যারা যুক্ত থাকে একমাত্র তারাই বুঝতে পারে কাজের পরিশ্রমের পরিমাণ কি। |
যত আনি তত নাই, না ঘুচিল খাই খাই- রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র | মানুষের লোভ-লালসার কোন সীমা-পরিসীমা নাই। |
যত ইচ্ছা তত যাও ক্রোশ অন্তর পা ধোও | কিছুদূর চলার পর পা ধুয়ে নিলে পথের ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়। |
যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভালো লাগছে | মানুষের চেয়ে কুকুরের বিশ্বাসযোগ্যতা শতগুণ বেশি; সমতুল্য- 'কৃতজ্ঞতা বোধে কুকুর মানুষ অপেক্ষা শ্রেয়'। |
যত কয় তত নয় | একটা কথা মুখেমুখে ঘুরলে সেটা ফুলেফেঁপ বিরাট আকার ধারণ করে; কার্যতঃ বিষয়টা অতটা গভীর নয়; তুলনীয়- 'গল্পের গরু গাছে চড়ে'। |
যত কর আতুপুতু/পুতুপুতু তত হবে ছোলার ছাতু | যত বেশি আদরযত্ন করা হয় তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়; বেশি আদরযত্ন ভালো নয়; তুলনীয়- 'আদরে বাঁদর'। |
যত কর তাড়াতাড়ি তত পায়ে বেড়াবেড়ি | যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই বেশি ভুলভ্রান্তি হয় এবং কাজে দেরী হয়; তুলনীয়- 'এড়া কাজে বেড়া বেশি'। |
যত কুয়ো আমের ক্ষয়, তাল তেঁতুলের কি বা হয়১ | কুয়াশা হলে আমের বৌল ঝরে যায়; তাল বা তেঁতুলের কোন ক্ষতি হয় না। |
যত কুয়ো আমের ক্ষয়, তাল তেঁতুলের কি বা হয়২ | কোথাও ঝঞ্ঝাট বাঁধলে ভাললোকের ক্ষতি হয় মন্দলোকের কিছু হয় না। |
যতক্ষণ থামছ না কিছু আসে যায় না কত আস্তে তুমি হাঁটছ | জীবনে চলাটাই মূল কথা; সুতরাং এগিয়ে চল, এগিয়ে চল। |
যতক্ষণ যোগ ততক্ষণ ভোগ | শুভাশুভ কর্মের সাথে যতক্ষণ যোগ থাকবে ততক্ষণ কর্মের ফলভোগ করে যেতে হবে; বিরুদ্ধ প্রবচন- 'কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন'। |
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ১ | শ্বাস থাকা পর্যন্ত জীবনের আশা ছাড়া নেই; শেষপর্যন্ত বাঁচাবার চেষ্টা করে যেতে হবে; পাঠান্তর- 'যাবৎ শ্বাস তাবৎ আশ'। |
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ২ | কখনো নিরাশ হতে নেই; উপায় থাকলে চেষ্টা করে যেতে হবে। |
যত গর্জে তত বর্ষে না১ | মেঘ যত ডাকে তত বৃষ্টি হয় না; সমতুল্য- 'অতিমেঘে অনা/ফোঁটাবৃষ্টি'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'উনাকলসীর দুনাশব্দ'; 'ঘেউঘেউ করা কুত্তা কদাচিৎ কামড়ায়'; পাঠান্তর- 'অধিকগর্জনে অল্পবর্ষণ'; 'অনেকগর্জনে ফোঁটাবৃষ্টি'; 'বর্ষণ নেই গর্জন সার'; |
যত গর্জে তত বর্ষে না২ | আড়ম্বর অনুসারে কার্যসিদ্ধি হয় না। |
যত গর্জে তত বর্ষে না৩ | যে বেশি বকে, সে কাজে বেশিদূর এগোয় না। |
যত গুড় তত মধুর১ | ব্যবহার যত মিষ্টি হবে সম্পর্ক তত মধুর হবে। |
যত গুড় তত মধুর২ | যত টাকা ঢালা যাবে তত ভাল কাজ পাওয়া যাবে। |
যত ঘর তত দ্বার | কাজ যাইহোক না কেন, প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার নানা উপায় আছে; উপায়হীন কাজ নেই। |
যত চতুর তত ফতুর | বেশি চালাক ফাঁকিতে পড়ে; সমতুল্য- 'অতি চালাকের গলায় দড়ি'। |
যত চায় তত পায় | ভাগ্যবানের পাওয়ার কোন শেষ নেই। |
যত ছিল নাড়াবুনে সব হলো কীর্তুনে | যত চাষী ছিল ভোল পালটে সবাই কীর্তনীয়া হয়েছে; কাস্তে ভেঙে করতাল গড়েছে; হুজুগে পড়ে যোগ্য ও অযোগ্যরা সব একত্রিত হয়েছে। |
যত জ্ঞান বাড়বে তত জানবে তুমি কিছু জানো না | জানার কোন শেষ নাই; সম্পর্কীত প্রবাদ- জ্ঞান-সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আমরা কিছু নুড়ি কুড়িয়েছি'। |
যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট, তত জ্বালে ভাত নষ্ট | সব জায়গায় একধরণের পদ্ধতির প্রয়োগে কাজ সফল হয় না। |
যত তক্ক তত নরক্ক | যত বেশি বাদ-বিসম্বাদ হবে তত বেশি মনোমালিন্য; তর্কে সত্যের মিমাংসা হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর'। |
যত তুমি শিখাবে তত তুমি শিখবে | জ্ঞানদানে জ্ঞানবৃদ্ধি হয়। |
যতদিন তুমি অসৎ ততদিন তোমার কোন শত্রু নেই। | সমাজে অসৎলোকের ভিড় বেশি; স্বার্থের কারণে অসৎলোকেরা সম্পর্ক গড়ে তোলে। |
যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি | শেখার কোন নির্দিষ্ট বয়স বা সময়সীমা নেই। |
যতদিন যায় তত কাজ বাড়ে | একটা কাজ করতে করতে সবাই ভাবে কাজটা শেষ হলে কয়েকদিন একটু বিশ্রাম নেবে; সে আর হয়ে ওঠে না; একটা কাজ শেষ হলে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আরেকটা ঘাড়ে এসে পড়; কাজ কেবল বেড়েই চলে। |
যতদূর পা ছড়াও ততদূর মাদুর | শুয়ে গড়াগড়ি দিলেও পা মাদুরের বাইরে যায় না এমন বড় মাদুর; ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা খুব ভালো; ঐশ্বর্যের সীমা নেই। |
যতদূর মাদুর ততদূর পা ছড়াও | আয় বুঝে ব্যয় কর; ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ কর; যা পেয়েছো তাতেই সন্তুষ্ট থাকো; ক্ষমতার বেশি প্রত্যাশা করো না; সমতুল্য- 'কাপড় বুঝে জামা কাটো'; পাঠান্তর- 'যতদূর চাদরে পা ঢাকে ততদূর পা ছড়াও'। |
যত দোষ নন্দঘোষ | অযথা দোষারোপ; যে যেখানে দোষ করুক না কেন একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে সব দোষের ভাগীদার করা; (ঊৎসকাহিনী- ছেলেবেলায় শ্রীকৃষ্ণের দুরন্তপনায় তিতিবিরক্ত হয়ে প্রতিবেশীরা পালকপিতা নন্দঘোষের কাছ গিয়ে অনুযোগ করত; ক্রমে কোথাও কোন দোষের কাজ হয়েছে দেখলেই সবাই বলত, 'এ কাজ নিশ্চই নন্দঘোষের ব্যাটা করেছে'। |
যত দোস্তি তত কুস্তি | অতিরিক্ত মাখামাখির ফল শেষপর্যন্ত শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। |
যতন নহিলে না মিলয়ে রতন | চেষ্টা করলে তবে ফললাভ হয়; সমতুল্য- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'ন হি সুখং দুঃখখৈর্বিনা লভ্যতে'; 'সাধিলেই সিদ্ধি'; পাঠান্তর- 'যতনে রতন মেলে'। |
যত পায় তত চায় | মানুষের লোভের কোন শেষ নেই। |
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা | কথা বলার সময় লঘুগুরু বিচার না করে অনুচিত কথা বলে; বয়স/অবস্থার অতিরিক্ত স্পর্ধিত কথাবার্তা; তুলনায়- 'ছোট মুখে বড় কথা'। |
যত মত তত পথ | সব ধর্মের লক্ষ্য অভিন্ন- ঈশ্বরকে পাওয়া; একাধিক পথ সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়; সব নদী শেষপর্যন্ত সাগরে গিয়ে মিশে। |
যত মন্দিরের কাছে তত ঈশ্বর থেকে দূরে | সহজলভ্য জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বা তার মূল্য কম হয়; সমতুল্য-'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না', 'কালিঘাটের মানুষের কালীদর্শন হয় না','গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না','মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না' ইত্যাদি। |
যত রক্তের কাছে তত বেশি রক্তারক্তি- সেক্সপিয়ার | আত্মীয়রা বেশি অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'আন সতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে';'কাছের লোক কাছের নয়'; 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই' ইত্যাদি। |
যত শেষ তত বেশ | কাজের শুরুতে কাজ তেমন ভাল লাগে না; কাজ ক্রমশঃ এগুতে থাকলে কাজটা পছন্দসই হয়ে যায়। কাজে ছন্দ আসে। |
যত সয় তত বয় | যে যতটা ভার বইতে পারে, সে ততটা ভার বইবে। |
যত সয় তত রয় | ধৈর্য ও সহনশীলতার জোরে মানুষ টিকে থাকে। |
যৎ সারভূতং তদুপাসিতব্যম, হংসো যথা ক্ষীরমিবাম্বুমিশ্রম | হাঁস যেমন জল ফেলে সারবস্তু গ্রহণ করে তেমনি অসার বাদ দিয়ে সারবস্তু গ্রহণ করা কর্তব্য। |
যত হাসি তত কান্না বলে গেছেন রাম সন্না | রামশর্মা নামে এক বিজ্ঞব্যক্তি বলে গেছেন সারাজীবনে হাসিকান্নার পরিমাণ সমান; সুতরাং বেশি সুখ-আহ্লাদ করলে দুঃখও সেই পরিমাণে বাড়বে। |
যতো ধর্মস্ততো জয় | যেখানে ধর্ম সেখানে জয় অবশ্যম্ভাবী; যা সত্য, ন্যায়সঙ্গত তা প্রতিষ্ঠিত হবেই। |
যত্ন না করলে রত্ন মেলে না | পরিশ্রম না করল ফললাভ হয় না; তুলনীয়- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'; 'সাধিলেই সিদ্ধি'। |
যত্নে কৃতে যদি না সিধ্যতি কোহত্র দোষঃ | সবিশেষ যত্ন করার পরেও যদি কার্যসিদ্ধি না হয় সেটা দোষনীয় নয়। |
যত্নের তৃণ কাষ্ঠখান রহে যুগকাল পরিমাণ | যত্ন নিলে যামান্য ঘাস/কাঠ বহুকাল থাকে; যত্ন না নিলে স্থায়ী জিনিসও নষ্ট হয়। |
যত্নের মধু পিঁপড়ায় খায়১ | ব্যবহারের জিনিস বেশি যত্ন করে তুলে রেখে দিলে শেষে ভোগ আর হয় না। |
যত্নের মধু পিঁপড়ায় খায়২ | যার বেশি যত্ন নেওয়া হবে সকলে মিলে তাকে নষ্ট করে দেয়। |
যত্র আয় তত্র ব্যয়১ | যা আয় হয়, তার সব খরচ হয়ে যায়; অপরিহার্য দ্রব্য কিনতেই সব খরচ হয়ে যায়, কিছুই সঞ্চয় হয় না। |
যত্র আয় তত্র ব্যয়২ | টাকাপয়সার ব্যাপারে উড়ণচণ্ডী, যা আয় করে সব খরচ করে। |
যত্র ধূম তত্র বহ্নি | যেখানে ধোঁয়া সেখানে আগুন; আগুন না থাকলে ধোঁয়া হয় না; কার্য থাকলে নিশ্চয়ই তার কারণ আছে; সমতুল্য- 'পর্বতো বহ্নিমান ধূমাৎ'; |
যত্র বাতাস তত্র শীত | বাতাস বইলে শীতের প্রকোপ বাড়ে। |
যত্রাকৃতিস্থত্র গুণাঃ বসন্তি | সৌম আকৃতির মধ্যে সদগুণ থাকে। |
যথা দৃষ্টং তথা লিখিতং লেখকে নাস্তি দূষণং | যেমন দেখেছে তেমন লিখেছে; লেখকের কোন দোষ নেই; নকলে ভুল থাকল আসলে নিশ্চই ভুল আছে; তুলনীয়- 'মাছি মারা কেরানী'। |
যথা ধর্ম তথা জয় পাপ করলে ভুগতে হয় | যেপক্ষে ধর্ম থাকে সেইপক্ষের জয় হয়; পাপ করলে তার জন্য শাস্তি হয়; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'যতো ধর্মস্ততো জয়'। |
যথা নিযুক্তোহস্মি তথ করোমি | ঈশ্বর যেভাবে আমাকে চালাচ্ছে আমি সেইভাবে চলছি। |
যথা পূর্বং তথা পরং | আগেও যেমন পরেও তেমন; ভাগ্যের কোন পরিবর্তন নেই; পাঠান্তর- 'যথাপূর্বস্তথা পরঃ। |
যথারণ্যং তথা গৃহম | সংসারহীন লোকের কাছে বনও যা ঘরও তা- দুই-ই তার কাছে সমান। |
যদধাত্রা নিজভাল পট্টলিখিতং তত প্রোজ্ঝিতুং কঃ ক্ষম | বিধাতা কপালে যা লিখে দিয়েছেন তার অন্যথা করার ক্ষমতা কারো নেই। |
যদি আকাশ নামে তবে চাঁদে চড়ব | অসম্ভবের আশা; আকাশকুসুম কল্পনা। |
যদি আছে কাজ তবে সকাল সকাল সাজ | যদি কাজ থাকে তবে সকাল সকাল সেই কাজ সেরে ফেলাই ভাল। |
যদি আমড়াতলায় আম পাই তবে আমতলায় কেন যাই | সহজে কোন কার্যসিদ্ধি হলোে অনর্থক কষ্টকর পথ অবলম্বন করার কোন অর্থ হয় না। |
যদি ইচ্ছা থাকে, তবেই পূরণ হয় | যদি কাজ করার সদিচ্ছা থাকে তবে কার্যসিদ্ধি হবেই হবে, অন্যথায় নয়। |
যদি একাগ্রচিত্তে কাজ কর তবে পাহাড় টলাতে পারো | মনে অদম্যশক্তি থাকলে অসাধ্যসাধন করা যায়; তুলনায়- 'পঙ্গুও লঙ্ঘায় গিরি'। |
যদি কঠোর পরিশ্রম কর তবে রড ঘষে সূচ বানাতে পারো | চেষ্টায় কিনা হয়; ঘষতে ঘষতে পাথরও ক্ষয় হয়। |
যদি কর তাড়াতাড়ি ভুলের হবে বাড়াবাড়ি১ | তাড়াতাড়ি করলে নজর এড়িয়ে কাজে অনেক ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
যদি কর তাড়াতাড়ি ভুলের হবে বাড়াবাড়ি২ | বেশি তাড়াহুড়ো করলে কাজে গতি কমে যায়; তুলনীয়- 'এড়া কাজে বেড়া বেশি'। |
যদি কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্ন হোক চাও তবে কাজ নিজে কর | নিজের কাজ পরকে দিয়ে করানো উচিৎ নয়; পরের নিষ্ঠা নিজের মত নিখাদ হয় না। |
যদি কাটে কালসাপে কি করবে রোজার বাপে | প্রতিকারহীন বিপদ থেকে কাউকে উদ্ধার করা যায় না। |
যদি কামড়াতে না পারো তবে দাঁত দেখিয়েও না | বৃথা ভয় দেখিয়ে নিজেকে হাস্যাস্পদ করো না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কামড়িয়ো না ফোঁস কর'। |
যদি গব্য থাকে আগে পাছে, কি করে তার শাকে মাছে | যদি প্রথমপাতে ঘি এবং শেষপাতেে দুধ থাকে তবে শাকসব্জি ও মাছের প্রয়োজন হয় না; |
যদি জগৎকে নতুন কিছু দিতে না পারো, তবে তুমি জগতের বোঝাস্বরূপ | অথর্বরা সংসারের বোঝাস্বরূপ; বোঝাস্বরূপ হয়ে বাঁচার সম্মান নেই। |
যদি থাকে নসিবে আপনি আপনি আসিবে | ভাগ্যে লেখা থাকলে বিনা পরিশ্রমেই ফললাভ হয়। |
যদি দুটি পাখির পিছনে ছোট তবে একটিও পাবে না | লক্ষ্য স্থির না হলোে কার্যসিদ্ধি হয় না; ইতস্ততঃ করলে ফললাভ হয় না; সম্পর্কীত সংস্কৃত প্রবাদ- 'যো ধ্রবাণি পরিত্যজ্য অধ্রুবাণি নিষেবতে, ধ্রুবাণি তস্য নশ্যন্তি অধ্রুবং নষ্টমেব চ'। |
যদি দেখ মাকুন্দচোপা এক পাও এগিয়ো না বাপা | সকালে গোঁফদাড়িবিহীন লোকের মুখ দেখলে দিনটা ভালো যায় না- এমনই লোকের বিশ্বাস। |
যদি নাচো তবে বাজনাদারদের পয়সা দিও | উপকারীকে ভুলো না। |
যদি না থেমে যাও কিছু এসে যায় না কত আস্তে তুমি হাঁটছো | এগিয়ে যেতে হবে এটাই জীবনের ধর্ম; থামার কোন সুযোগ নেই; থামলেই সব আশা শেষ; তুলনীয়- 'চরৈবেতি চরৈবেতি'। |
যদি না হয় আগনে বৃষ্টি, তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি- খনা | অঘ্রাণমাসে বৃষ্টি না হলে গাছে কাঁঠাল ধরে না। |
যদি পড়ে পাশা তবে জেতে চাষা | ভাগ্য ভাল হলোে নির্গুণও কাজ হাসিল করে লাভবান হতে পারে। |
যদি পোত ফাগুনে কলা, কলা হবে মাস ফসলা- খনা | ফাগুন মাসে কলাগাছ পুতলে প্রতিমাসেই কলা ফলে। |
যদি বর্ষে আগনে, রাজা যায় মাগনে- খনা | অঘ্রাণমাসে বৃষ্টি না হলে পোকামাকড় ফসল নষ্ট করে; ফলে রাজস্ব আদায় কম হয়; দেশে চারিদিকে অভাব দেখা দেয় এবং আকালের অবস্থার সৃষ্টি হয়। |
যদি বর্ষে চৈতে বৃষ্টি তবে হবে ধানের সৃষ্টি- খনা | চৈত্রমাসে বৃষ্টি হলোে ধানের ফসল ভাল হয়। |
যদি বর্ষে পৌষে, কড়ি হয় তুষে- খনা | পৌষমাসে বৃষ্টি হলোে তুষ বেচেও অঢেল অর্থ আয় হয়। |
যদি বর্ষে ফাগুনে, ফসল হবে দ্বিগুণে- খনা | ফাল্গুনমাসে বৃষ্টিপাত হলে চাষবাস খুব ভাল হয়। |
যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূণ্য দেশ- খনা | মাঘের শেষের বৃষ্টিপাতে প্রচুর রবিশস্য উৎপন্ন হয়; চাষীর হাতে পয়সাকড়ি আসে; অভাব অনটন থাকে না; সকলের কল্যাণ হয়। |
যদি বাঁচতে চাও, তবে হাসতে শেখো | হাসতে পারলে মনের কালিমা মুছে যায়; মনে রোগ জন্মে না; প্রাণখোলা হাসিতে আধিব্যাধি কম হয়; এক মিনিট হাসলে দশমিনিট আয়ু বাড়ে। |
যদি বিবেককে বড় কর শত্রু বাড়বে, যদি হৃদয়কে বড় কর বন্ধু বাড়বে | বিবেকসম্পন্ন লোকের কাছে দোষেগুণে গড়া মানুষ সহজে ঘেঁষে না। |
যদি বোকার মত কোন কাজ না কর তবে কেউ তোমাকে কামড়াতে আসবে না | উত্যক্ত না করলে কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে না; তুলনীয় 'ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়'। |
যদি ভবিষৎ জানতে চাও তবে অতীত থেক শিক্ষা নাও | অতীতের পাতায় ভবিষ্যতের ঠিকানা লেখা থাকে; অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথে পা রাখতে হয়। |
যদি ভুল কর এবং সংশোধন না কর তবে সেটাই হবে প্রকৃত ভুল | মানুষমাত্রই ভুল করে; সচেতন মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সংশোধন করে। |
যদি মন তুষ্ট থাকে তবে কেবা ধনী কেবা দরিদ্র | মনের প্রশান্তি বড় কথা; মন তৃপ্ত থাকলেই স্বর্গসুখ অনুভব করা যায়। |
যদি মাথা নত করতেই হয় তবে একটু নত করো | সবসময় মাথা উঁচু করে চলাই উচিত প্রয়োজনের স্বার্থে মাথা সামান্য ঝুঁকাতে হয়। |
যদির কথা নদীতে | অনিশ্চিত বিষয় নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় না। |
যদি শুয়োর কথা বলতে পারতো তবে ভগবান শুয়োরের মত দেখতে হত | নাস্তিকেরা বলে ভগবান মানুষ সৃষ্টি করে নি, পরন্তু মানুষই ভগবান সৃষ্টি করেছে; ভগবান মানুষের কল্পনা; সেইকারণে ভগবান মানুষের মত দেখতে হয়। |
যদি সৎসঙ্গতিরতো ভবিষ্যসি ভবিষ্যসি, অথ দুর্জনসংসর্গে পতিষ্যসি পতিষ্যসি | যদি সৎসঙ্গ কর, তবে উন্নতি হবেই হবে; আর যদি অসৎসঙ্গ কর তবে পতন হবেই হবে। |
যদি সামনের রাস্তাসম্পর্কে জানতে চাও তবে যারা ফিরছে তাদের কাছে খোঁজ নাও | অভিজ্ঞলোকের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত। |
যদি সেরা জিনিস না পাও তবে যা পেয়েছো তাকেই সেরা বানাও | তৃপ্তি সন্তুষ্টি ইত্যাদি সবই নিজের ইচ্ছাধীন; সবসময় সেরা জিনিস পাওয়া যায় না; সুতরাং যা জুটেছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। |
যদি হয় কুজন, নয় ঘরে/পিঁড়িতে একজন/ন’জন | দু'জন মন্দলোক পাশাপাশি থাকতে পারে না। |
যদি হয় সুজন, এক ঘরে/পিঁড়িতে দু'জন/ন’জন | মিলেমিশে থাকলে কোন অসুবিধাই অসুবিধা নয়। |
যদি হরিপদে থাকে মন তবে হৃদয় মাঝে বৃন্দাবন | মনে ভক্তি থাকলে হরির দর্শন হৃদয়েই মেলে, বৃন্দাবনে যেতে হয় না; তুলনীয়- 'মন চাঙ্গা তো কেঠোয় গঙ্গা'। |
যদ্দৃষ্টং তদ লিখিতং লেখকে নাস্তি দোষণং | যথা দৃষ্টং তথা লিখিতং লেখকে নাস্তি দূষণ- দ্রষ্টব্য |
যদ্যপি আমার গুরু শুড়িবাড়ি যায়, তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়১ | মন্দ গুরুর মন্দ শিষ্য। |
যদ্যপি আমার গুরু শুড়িবাড়ি যায়, তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায় | গুরু দোষ করলেও শিষ্য যেন গুরুর দোষ না দেখে; একনিষ্ঠ শিষ্যের কাছে গুরু সবসময় প্রণম্য। |
যঃ পলাতি/পলায়তি সঃ জীবতি | অন্যায়-অবিচার দেখে যে পালায় সে রক্ষা পায়; শত্রুর সাথে পাল্লা দিতে না পারলে পকলানোই শ্রেয়; তুলনীয়- 'আত্মানং সততং রক্ষেৎ'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'পালিয়ে বাঁচা যায় না'; পাঠান্তর- 'যঃ পৈরেতি সঃ জীবতি'। |
যম (জন) জামাই ভাগনা, এ তিন নয় আপনা | এই তিনজনকে যতই আদরযত্ন কর-না-কেন এরা কোনদিন আপনজনের মত ব্যবহার করে না। |
যমের অরুচি | এমন দুষ্টলোক যে যমেও ছুঁতে ঘেন্না করে; কোন দুষ্টলোক বেশিদিন বেঁচে থাকলে মানুহ ঘেন্নায় এই উক্তি করে তাকে গাল পাড়ে। |
যমের খাতায় তলব পড়া | কারো মৃত্যু আসন্ন হলে লোকরা এই প্রবাদ বলে। |
যমের দক্ষিণদুয়ার দেখা/দেখানো | মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া; কারো মৃত্যু কামনা করে এই উক্তি করে গালি দেওয়া হয়। |
যমের দোসর | যমের সঙ্গী দ্বিতীয় যম; মতই দেখতে ভয়ানকব্যক্তি। |
যমের বাড়ি যাওয়া | মৃত্যু কামনা করে গালি দেওয়া |
যমের বাড়ির পথ সবাই চেনে | সবাই জানে সকলে মরতে হয় এবং মরার পর তাদের গন্তব্যস্থল যমালয়। |
যশবানের বিনাশ নাই | যশবান চিরদিন মানুষের মনে জাগরুক থাকে; তুলনীয়- 'কীর্তি যস্য স জিবতি'। |
যশোদা মা ভাগ্যবতী পরের পুতে পুত্রবতী | প্রসব না করেও পুত্রের মাতা (উৎসকাহিনী- নন্দপত্নী যশোদা দেবকীর পুত্র কৃষ্ণকে পুত্রজ্ঞানে পালন করে 'মা যশোদা' আখ্যা পেয়েছিলেন এবং পুত্রবতীর সম্মান পেয়েছিলেন।) তুলনীয়- 'না বিইয়ে কানাইয়ের মা'। |
যস্মিন দেশে যদাচারঃ | যে দেশে যে নিয়ম পরম্পরাসিদ্ধ তা মেনে চলা উচিত; সমতুল্য- 'যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান'; 'যখন যেমন তখন তেমন'; 'যে দেশের যে ভাও, উল্টো করে ডিঙি বাও'; 'যে বনে যাই সে ফল খাই' ইত্যাদি। |
যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো, যা নেই তার জন্য আক্ষেপ করো না | আশা কুহকিনী; আশার ছলনায় ভুলো না; আশার পিছনে ছোটার কোন অর্থ হয় না। |
যাইলে রামে বধে না যাইলে রাবণ বধে | কালনেমির উভয়সঙ্কট; কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। |
যাক প্রাণ থাক মান | প্রাণ দিয়েও সম্মান রক্ষা করা উচিৎ। |
যাক শত্রু পরে পরে | অপরের দ্বারা শত্রু নিপাত হোক এটাই মনোগত ইচ্ছা। |
যাকে/যারে দেখতে না পারি তার চলন বাঁকা | অপছন্দলোকের ত্রুটিশূন্য কাজও ত্রুটিযুক্ত মনে হয়; |
যাকে/যারে রাখ সেই রাখে১ | অতি সামান্য জিনিস যত্ন করে তুলে রাখলে একসময় সেটা কাজে দেয়। |
যাকে/যারে রাখ সেই রাখে২ | উপকার করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। |
যা কেউ সন্দেহ করে না, তা কখনো প্রমাণ করতে যেও না | লোকে ভুল ভুঝতে পারে, সন্দেহ করতে পারে। |
যা চকচক করে, তাই সোনা নয় | সোনা ছাড়া সোনার মত রাংতাও চকচক করে। |
যাচনান্তং হি গৌরবম | যাচঞা/ভিক্ষা করলে গৌরব নষ্ট হয়। |
যাচ্লে জামাই কাঁঠাল খান না, না যাচলে ভোঁতাও পান না | অনেকে আছে, যাদের কোন জিনিস খেতে বা নিতে সাধাসাধি করলে উপেক্ষা করে; পরে তারা সেই জিনিস পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে; পাঠান্তর- 'যাচলে জামাই খান না, শেষে আমানিও পান না'। |
যাচ্লে মাণিক বিকায় না১ | সাধাসাধি করে কোন জিনিস দিতে গেলে তার কদর থাকে না। |
যাচ্লে মাণিক বিকায় না২ | যেচে কোন জিনিস বিক্রি করতে গেলে তার গুণসম্পর্কে সন্দেহের উদ্রেক হয়; ফলে ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'যাচ্লে সোনা রাঙ্ হয়'। |
যাচা ভাত কাচা কাপড় | যাচা অন্ন ছাড়তে নেই; কাচা কাপড় পেলে ময়লা কাপড় পড়তে নেই। |
যা চোখে দেখ না, তা মুখে আবিস্কার করো না | রূঢ় বাস্তবজগতে কল্পনার কোন অবকাশ নেই; রঙ চড়িয়ে কিছু বলো না। |
যা ছোঁয় তাই সোনা | যাতে হাত দেয় তাতেই চরম সাফল্য; চরমসৌভাগ্য; তুলনীয়- 'তুঙ্গে বৃহস্পতি'। |
যা জানে জাঁতা জানে, যে পিষে সেই জানে১ | যে কাজ শেষ করে সেই একমাত্র জানে কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়েছে। |
যা জানে জাঁতা জানে, যে পিষে সেই জানে২ | যারা পরিশ্রম করে তারাই একমাত্র বুঝতে পারে কঠোর পরিশ্রমের কষ্টটা কি। |
যা' নেই ভারতে তা' নেই ভারতে | মহাভারতে যে বিষয়ের বর্ণনা নেই ত ভারতের কোথাও পাওয়া যাবে না। |
যা পাল্টানো যায় না তা মেনে নেওয়াই ভাল | স্রোতের বিপরীতে না যাওয়াই ভাল; তাতে কোন বিপত্তি হবেে না। |
যাদৃশী ভাবনা যস্য, সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী | যে যেমন চিন্তা করে সে তেমন ফল পায়; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
যাবৎ চন্দ্রদিবাকরৌ | যতকাল পর্যন্ত চন্দ্রসূর্য আছে। |
যাবৎ জীবন তাবৎ চিকিৎসা/চেষ্টা | যতক্ষণ জীবন থাকবে ততক্ষণ জীবনের আশা না ছেড়ে চিকিৎসা করে যেতে হবে। |
যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋণং কৃত্বয়া ঘৃতং পিবেৎ | যতদিন বাঁচো সুখে বাঁচো; ঋণ করেও ঘি খাও; সমতুল্য- 'নেচেকুঁদে নাওরে জাদু মনের সুখে, কবে যেতে হবে শিঙে ফুঁকে'; 'হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয় কে জানে কখন কার সন্ধ্যে হয়'। |
যাবৎ ভুঁই তাবৎ গড়গড়া | জমি থাকলে গড়গড়া থাকবেই, অর্থাৎ দেহ থাকলে দুঃখকষ্ট রোগভোগ ইত্যাদি থাকবেই। |
যাবৎ শ্বাস তাবৎ আশ | যতক্ষণ কোন কাজের একটু আশা থাকবে ততক্ষণ চেষ্টা করে যেতে হবে। |
যাবৎ সীতা তাবৎ দুঃখ | সীতার মত বাঁচা হলোে সারাজীবন দুঃখভোগ করেই যেতে হবে; মরলে পরেই দুঃখ ঘুচবে; অভাগীরা সারাজীবন দুঃখভোগ করে যায়; পাঠান্তর- মরবে সীতা ঘুচবে দুঃখ'। |
যায় শত্রু পরে পরে | পরের দ্বারা শত্রু নিপাত হয়ে যায় |
যা যস্য প্রকৃতি স্বভাবজনিতা কেনাপি ন তজ্যতে | যার যা স্বভাব সে কখনোই তা পরিত্যাগ করে না; সমতুল্য- 'স্বভাব যায় না মলে'। |
যার আকাঙ্ক্ষা বিশাল, সেই আসল দরিদ্র | মনের দিক থেকে চিরদিনে কাঙাল থেকে যায়। |
যার আছে আগে পাছে, কি করে তার শাকে মাছে | যে প্রথমপাতে ঘি এবং শেষপাতে দুধ মেখে খায় তার তরকারী ও মাছ ইত্যাদি খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। |
যার আছে কিছু তার হও কিছু যার নাই কিছু তার যাও কিছু | যার না পেলেও চলে তার আরও হয়; যার চলার মত কিছু নেই সে যেটা আছে সেটাও হারায়; তুলনীয়- 'তেলামাথায় তেল দেওয়া'। |
যার উত্থান নেই, তার পতনও নেই | উত্থান ও পতন ওতপ্রোতভাবে জড়িত; উঠলেই পতনের প্রশ্ন উঠে; যে চলে না সে পড়ে না। |
যার এককান কাটা সে গাঁয়ের বার দিয়ে যায় যার দু'কান কাটা সে গাঁয়ের মাঝ দিয়ে যায় | ভাললোক মন্দকাজ করলে লজ্জিত হয়; বেহায়ালোক মন্দকাজ করে কিছুমাত্র লজ্জিত হয় না। |
যার কর্ম/কাজ তারে সাজে, অন্যলোকের লাঠি বাজে | যে যে কাজে দক্ষ সে সেই কাজ করবে; অদক্ষ লোকের হাতে পড়লে সেটা ভার মনে হবে। |
যার খাই তার গাই | উপকারীর গুণকীর্তন করা এবং তারপ্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো; পাঠান্তর- 'যার নুন খাই তার গুণ গাই। |
যার খায় তারেই গালায় | আশ্রয়দাতা ও প্রতিপালকের ক্ষতি করে; কৃতঘ্নচরিত্রের লোক উপকারীর উপকার স্বীকার করে না; সমতুল্য- 'বুকে বসে দাড়ি উপড়ায়'; পাঠান্তর- 'যার খায় যার পরে তারই আবার ক্ষতি করে'। |
যার গরু কাদায় পড়ে তার দুনো বল হয় | বিপদে পড়লে লোকে দ্বিগুণ উদ্যোমে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে চেষ্টা করে। |
যার গোপনীয়তা প্রকাশ পায়, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় | কাজের কথা মনেই থাকা উচিৎ; অপরে জানলে কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মনসা চিন্তিতং কর্ম বচসা ন প্রকাশয়েৎ'। |
যার গোলায় ধান তার কথায় টান | বিত্তবানেরা দেমাকভরে কথা বল; সমতুল্য- 'যার ট্যাঁকে টাকা, তার কথা বাঁকা'। |
যার ছয়ে হয় না তার ছিয়াত্তরেও হয় না | বয়সের সাথে বুদ্ধির সহসম্পর্ক নেই; বয়সে চুল পাকে, বুদ্ধি পাকে না; পাঠান্তর- 'যার সাতে হয় না তার সাতাত্তর/সাতাশীতে হয় না'। |
যার ছেলে কুমীরে খায় সে ঢেঁকি দেখলে ডরায় | যার ছেলেকে কুমিরে খেয়েছে সে জলে ঢেঁকি ভাসতে দেখলেও তাহকে কুমীর ভেবে ঘাবড়ে যায়; বেদনাদায়ক পূর্ব-অভিজ্ঞতার সূচনা দেখলে মানুষ ভয় পায়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'; 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; 'দগ্ধশিশু আগুন দেখলে ভয় পায়'। |
যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর | কারো মঙ্গলের জন্য মন্দকাজ করলে সে যদি উপকারীর নিন্দাবাদ করে সেক্ষেত্রে এই প্রবাদ উক্ত হয়; মঙ্গলের উদ্দেশ্যে মন্দকাজ করলে তার নিন্দা করা উচিত নয়। |
যার জ্বালা সেই জানে | একের অন্তরের জ্বালা অপরের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। |
যা রটে তার কিছু বটে | চারিদিকে যা রটে তার সম্পূর্ণটা অমূলক নয়; রটনারও কিছু সত্যতা থাকে; সম্পূর্ণ কাল্পনিক কিছু হয় না; পাঠান্তর- 'যেটা রটে সেটা বটে'। |
যার ট্যাঁকে টাকা, তার কথা বাঁকা | বিত্তশালীরা অহঙ্কারী হয়, কর্কশভাষী হয়; সমতুল্য- 'যার গোলায় ধান তার কথায় টান'। |
যার তলোয়ার তার দেশ | শক্তিই ক্ষমতার উৎস; সমতুল্য- 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'লাঠি যার মাটি/মোষ তার'। |
যার দৌলতে রামের মা তারেই তুমি চেন না | যারদ্বারা কার্যোদ্ধার তাকেই শেষে অস্বীকার; তুলনীয়- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'; 'খাল পেরুলে কুমীরকে কলা'। |
যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই১ | উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিককে বঞ্চিত করে অনধিকারী ভোগ করে। |
যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই২ | শাসনের নামে রাজা প্রজাগণের সম্পত্তি লুট করে। |
যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই৩ | সৎব্যক্তির পরিশ্রমলব্ধ ফল অসৎব্যক্তি ভোগ করে। |
যার নাম চারকড়া তার নাম একগণ্ডা | নামবিভ্রাট; নাম আলাদা হলেও দুটি বিষয়ের পরিমাণ/মান সমান; পাঠান্তর- 'যার নাম বারোবুড়ি তার নাম তিনপণ'। |
যার নাম চালভাজা তার নাম মুড়ি | নামবিভ্রাট; নাম আলাদা হলেও দুটি বিষয় এক; সমতুল্য- 'যার মাথায় পাকা চুল তার নাম বুড়ি'। |
যার নিয়তি/মরণ যেখানে কে খণ্ডাকে সেখানে | অদৃষ্টে যা লেখা আছে তাই হবে; নিয়তিকে বাধা দেবার কেউ নেই; সমতুল্য- 'নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'। |
যার নূন খাই তার গুণ হাই | যে আমাকে অন্ন যোগায় করে তার আমি গুণগান করি; পাঠান্তর- 'যার খাই তার গাই'। |
যার পাঁঠা, সে লেজের দিকে কাটে | নিজের জিনিস যেমন খুশি ব্যবহার করা যায়। |
যার প্রতিবিধান নেই, তা সহ্য করা উচিৎ | মিলেমিশে থাকতে হলে মানিয়ে নেওয়া উচিৎ; সৌজন্যের আরেক নাম সহনশীলতা। |
যার বিয়ে তার খেয়াল/খোঁজে নেই পাড়া-পড়শির ঘুম নেই | যার কাজ সে উদ্যোহী নয় অন্যলোকে বেশীি উদ্যোগী। |
যার বোঝা তার ঘাড়ে | যার দায়িত্ব সেই কাজ সম্পন্ন করবে; পাঠান্তর-'যার বোঝা সে বয়'। |
যার ভাত নাই তার জাত নাই | যে দ্বারেদ্বারে ভিক্ষা করে খায় তার কোন মানসম্মান নেই। |
যার মনে যা লয়১ | যার যেমন অভিরুচি; কেউ মদ বিক্রি করে দুধ খায়, আবার কেউ দুধ বিক্রি করে মদ খায়। |
যার মনে যা লয়২ | সুখ-দুঃখমিশ্রিত জীবন; যে যেভাবে জীবনকে দেখে; সমতুল্য- 'সংসার আনন্দময় যার মনে যা লয়'। |
যার মন্দ সহ্য করার ক্ষমতা নেই সে ভালো দেখার জন্য বেঁচে থাকে না | সুখভোগ করতে চাইলে দুঃখকেও বরণ করতে হয়। |
যার মরণ যেখানে | যার যেরকম নিয়তি সে সেইরকম কাজ করে। |
যার মাটি তার সাথে না আঁটি | শক্তিমানের সাথে লড়া যায় না। |
যার মাথায় পাকা চুল তার নাম বুড়ি | নাম আলাদা হলেও বিষয়দুটি অভিন্ন; সমতুল্য- 'যার নাম চালভাজা তার নাম মুড়িি'। |
যার মাদুর নেই তার উত্তর শিয়র | যার শোবার কোন জায়গাই নেই সে কোনদিকে মাথা রেখে শুবে সেই প্রশ্ন অবান্তর (উত্তর দিকে মাথা রেখে শোয়া নিষেধ)। |
যার মান নেই সে মানীর অপমান দেখলে খুশি হয় | মাৎসর্য রিপুর শিকার; ঈর্ষামানসিকতা। |
যার যখন কপাল ফেরে শুকনো ডাঙায় ডিঙি চরে | ভাগ্য ভাল হলোে অসম্ভব বিষয়ও সম্ভব হয়। |
যার যা রীত না ছাড়ে কদাচিৎ | কেউ স্বভাব ছাড়তে পারে না; সমতুল্য- 'স্বভাব যায় না মলে'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'স্বভাব দ্বিতীয় প্রকৃতি'। |
যার যে কথা নহে, সে কেন কথা কহে | অনধিকারচর্চা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়; সীমার বাইরে যাওয়া অনুচিত। |
যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত | পাঁচজনের মধ্যে দোষারোপসম্পর্কিত কোন আলোচনা হলোে যার সাথে আলোচ্য বিষয় মিলে যায় সে মনে করে তাকে উদ্দেশে বলা হচ্ছে। |
যার যেমন মতি তার তেমন গতি | যার যেমন বুদ্ধি সে তেমন ফলভোগ করে। |
যার যেমন মন তার তেমন ধন | যার যেমন ব্যবহার সে তেমন ফলভোগ করে; সহজ সরল হলে সুন্দর ব্যবহার পায়; কুটিল হলে দুর্ব্যবহার পায়। |
যার লাঠি তার মাটি | যার শক্তি আছে সেই সমস্ত বিষয়ের অধিকারী হয়; শক্তি ক্ষমতার উৎস; সমতুল্য- 'জিস্ কী লাঠি উস্কী ভৈঁস'; 'জিস্দা তেগ উস্দা দেগ'; 'জোর যার মুল্লুক তার'। |
যার শিল তার নোড়া, তারই ভাঙ্গি দাঁতের গোড়া | অধিকারীর জিনিস দিয়ে অধিকারীর অনিষ্ট করা। |
যার শুরু ভাল তার শেষ ভাল | কোন কাজ ভালভাবে শুরু হলে শেষটাও ভাল হয়। |
যার শেষ ভালো, তার সব ভালো | ভাল জিনিস ভালভাবে সম্পন্ন করা উচিৎ; সমতুল্য- 'মধুরেণ সমাপয়েৎ'; পাঠান্তর- 'সব ভালো যার শেষ ভাল'। |
যার সাতে হয় না তার সাতাশীতেও হয় না | বয়সের সাথে বুদ্ধির সহসম্পর্ক নেই; বয়সে চুল পাকলেও বুদ্ধি পাকে না; পাঠান্তর- যার ছয়ে হয় না তার ছিয়াত্তরেও হয় না'। |
যার সাথে যার মজে মন কিবা হাড়ি কিবা ডোম | প্রেমপ্রণয় জাত বিচার করে হয় না; যার মন যাতে অনুরক্ত তার কাছে সেটাই মনোহর; সমতুল্য সংস্কৃত প্রবচন- 'তস্য তদেব মধুরং যস্য মনো যত্র সংলগ্নম'। |
যার হাত জলে আছে আর যার হাত আগুনে আছে উভয়ে সমান নয় | শান্তমনের সাথে উগ্রমনের তুলনা হয় না। |
যার হাতে খাই নি সে বড় রাঁধুনী | দূর থেকে দেখলে সব ভাল মনে হয়; ব্যবহার করলে প্রকৃত সত্য জানা যায়; তুলনীয়- 'দূরের গাছের আমটা মিষ্টি'; 'যাকে চিনি না সে ভদ্রলোক'। |
যারা অর্থশালী তাদের কাছে আইন আকাশের মত, যারা অর্থহীন তাদের কাছে আইন মাকড়সার জালের মত | আইন বড়লোকদের রক্ষক এবং গরিবদের সংহারক। |
যারা ঘটনা ঘটায় তাদের চেয়ে দর্শক বেশি বোঝে | যারা কোন ঘটনায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে না তারা ঘটনার দোষত্রুটি দিকে তীক্ষ্ণ নজর দেয়। |
যারা জন্মেছে তাদের প্রতি ঈর্ষা করো না যারা জন্মায়নি তাদের প্রতি ঈর্ষা কর | যারা জন্মেছে তারা সব দুর্ভাগা; যারা জন্মায় নি তারা প্রকৃতপক্ষে ভাগ্যবান; ঈর্ষা করতে হলে ভাগ্যবানদের প্রতি করাই উচিত। |
যারা জন্মেছে তারা সব দুর্ভাগা; যারা জন্মায় নি তারা ভাগ্যবান | যারা জন্মায় নি, তাদের সংসারের জ্বালাযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না; ভূতের বেগার ঠেলতে কে চায়? |
(চোখ থাকতে) যারা দেখে না, তাদের মত অন্ধ নেই | দেখার জন্য পাওয়া দুটিচোখে যারা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে না তারা জন্মান্ধ থেকে অধম; তুলনীয়- 'চোখ থাকতে অন্ধ'। |
যারা মন্দিরে যায়, তারা সবাই সাধু নয় | মন্দিরে যারা যায় তাদের অধিকাংশের গায়ে সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থের নামাবলী জড়ানো থাকে। |
যারা মিষ্টি কথা বলে, তারা সব বন্ধু নয় | যারা শুধু মিষ্টি কথা বলে, তারা প্রয়োজনে স্পষ্ট কথা বলতে পারে না; সুতরাং তারা প্রকৃত বন্ধু নয়। |
(কান থাকতে) যারা শোনে না, তাদের মত কালা আর নেই | শোনার জন্য পাওয়া দুটো কানে যারা প্রকৃতির গুঞ্জন শোনে না, তারা বদ্ধকালা থেকেও অধম; পাঠান্তর- 'যারা শুনতে চায় না, তাদের মত বধির আর নেই'। |
যারে কাটে/খায় কালসাপে কি করে তার ওঝার বাপে | প্রতিকারহীন বিপদ থেকে কাউকে উদ্ধার করা যায় না। |
যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা | যার প্রতি ঈর্ষা বা দ্বেষি আছে তার ত্রুটিহীন কাজেও ত্রুটি খুঁজে বার করে নিন্দা করা। |
যারে না বামুন বলি তার গায়ে নামাবলি | ভণ্ড তিলককাটা ব্রাহ্মণ; যে বামুনের ব্রাহ্মণত্ব বলে কিছু নেই; তুলনীয়- 'অব্রাহ্মণের দীর্ঘফোঁটা'। |
যারে নারি হাতে, তারে মারি ভাতে | পরোক্ষে শাস্তি দেওয়া; তিলেতিলে দগ্ধ করা; হাত থেকে ভাতে মারা অনেক নিষ্ঠুরতার পরিচায়ক। |
যা শত্রু পরে পরে | অপরের সাহায্য শত্রুনিধন হোক; পরের ওপর দিয়েই ঝামেলাটা যেন যায় এমন ইচ্ছা; তুলনীয়- 'ষাঁড়ের শত্রু বাঘে খায়'। |
যা হবার তা হবে১ | অদৃষ্টে যা লেখা আছে তা ঘটবেই এই ভাব নিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা; প্রতিবিধানের চেষ্টা না করা; কুঁড়ের মানসিকতা। |
যা হবার তা হবে২ | ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে এখন মাথা খারাপ করার কিছু নেই; যখন ঘটবে তখন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে; দুঃসাহসী বেপরোয়া মনোভাব। |
যা হবার হবে, ভাবনা কেন তবে | অদৃষ্টে যা লেখা আছে তা ঘটবেই; তারজন্য চিন্তা করা বৃথা; যা খণ্ডানো যাবে না তা মেনে নেওয়াই উচিৎ; তুলনীয়- নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'; 'ভবিতব্যং ভবত্যেব'; 'যার যেখানে মরণ'। |
যাহা চাই তাহা পাই না | সকলের সব ইচ্ছা সবসময় মেটে না। |
যাহা নাই ভারতে তাহা নাই ভারতে | মহাভারত মহাকাব্য সকল বিষয়ের আধার; এই কাব্যে ধর্মনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, পাপ-পূণ্য ইত্যাদি সকল বিষয়ের কথা বলা আছে; পাঠান্তর- 'ভারত ছাড়া কথা নাই'। |
যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন১ | ইতস্ততঃভাব; কিছুদূর এগিয়ে মাখপথে কাজ ছেড়ে দিয়ে পরে আবার তেড়ে ধরা। |
যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন২ | সামান্য কমবেশীতে কিছু যায় আসে না; তুলনীয়- 'উনিশ-বিশ পার্থক্য'; 'বোঝার ওপর শাকের আঁটি'। |
যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন৩ | দোষ যখন করেইছি তখন একটু বেশি করলে তিিরিক্ত দোষ হবে না, এমন বেপরোয়া ভাব; (উৎসকাহিনী- বাহান্নটি খুনের এক পাপী একদিন নদীঘাটে এক নারীর সতীত্বনাশে উদ্যত এক দুস্কৃতিকে দেখতে পেয়ে তাকে এইভেবে খুন করে যে বাহান্নটি খুনের যে শাস্তি হবে তিপ্পান্নটি খুনেরও সেই একই শাস্তি হবে।) |
যাহা যায় তাহা যায় | যা যায় চিরদিনের মত হারিয়ে যায়; যে কাল গত সেটা ফিরে আসে না; নদী কখনো উৎসমুখী হয় না; ছাড়া তীর হাতে ফিরে আসে না ইত্যাদি। |
যিনি সকল জীবকে নিজের মত দর্শন করেন, তিনিই প্রকৃত পন্ডিত | পণ্ডিতব্যক্তি সবার মধ্ নিজেকে খুঁজে পান; তুলনায়- 'আত্মবৎ সর্বভূতেষু যঃ প্শ্যতি স পন্ডিত'। |
যুক্তিযুক্তমুপাদেয়ং বচনং বালকাদপি | যুক্তিসঙ্গত হলোে বালকের মন্তব্যও আদরণীয়। |
যুক্তিহীন বিচারে তু ধর্মহানি প্রজায়তেঃ | যুক্তিহীন বিচারে ধর্মের হানি হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিবির্ণয়ঃ'। |
যুক্তিহীন লোক বাজি ধরে | যুক্তিহীন লোকেরা ভাগ্য বিশ্বাস করে। |
যুদ্ধের পর সিপাই হাজির | কাজ সমাধার পর সাহায্যকারী হাজির; সমতুল্য- 'চোর চলে গেলে চৌকিদার হাজির'। |
যুদ্ধের শুরু ভালো তো অর্ধেক বিজয় | পরিকল্পনামত সুন্দরভাবে শুরু হলে কাজের অর্ধেক সাফল্য হয়ে যায়। |
যুবায় যুবায় কথা প্রতি কথায় হাসি; বুড়োয় বুড়োয় কথা প্রতি কথায় কাশি | যৌবনের সাথে বার্ধক্যের তুলনা করা। |
যে অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করা হয়, তা বিফলে যায় না | মানুষ বাঁচার জন্য লড়ে এবং লড়াই করে বাঁচে। |
যে অনুপস্থিত সিংহকে হত্যা করে সে উপস্থিত ইঁদুরকে ভয় পায় | আস্ফালনকারীরা আসলে ভীতুপ্রকৃতির হয়। |
যে অবস্থায় আছে তাই থাকা ভালো, হস্তক্ষেপ করলে খারাপ হতে পারে | যদি কেউ ভালোভাবে একা থাকতে বলে, তবে সে কোন কিছুতে হস্তক্ষেপ না করতে বলছে; কারণ এটি এমনিতে ঠিক আছে; কেউ হস্তক্ষেপেে এটি আরও খারাপ হতে পারে; পরের ব্যাপারে নাক গলাস্নো ঠিক নয়। |
যে অলস, তার অলব্ধ-লাভ হয় না | যে কিছু করে না, সে কিছু পায় না; কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়। |
যে অল্পেতে সন্তষ্ট, তার কাছে সবকিছুই সহজ | মনের প্রশান্তি সবথেকে বড় কথা; অতৃপ্তি মনে জ্বালা ধরায়। |
যে আগুন খাবে সে অঙ্গার বর্ষাবে | যে পাপ করবে সে পাপের ফল ভোগ করবে। |
যে আশা ত্যাগ করে, সে মরতে শুরু করে | আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আশা কুহকিনী'; 'আশায় মরে চাষা'; 'আশাবধিং কো গতঃ'। |
যে আসে/যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ/রাক্ষস১ | শাসক বদলায় তার শোষণ বদলায় না; যে মেসিন রক্ত খায়, সেটা রাবণ চালালেও খাবে, রামে চালালেও খাবে; সব শোষকের অভিন্ন চরিত্র। |
যে আসে/যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ/রাক্ষস২ | মানুষ যে অঞ্চলে যায় সেই অঞ্চলের লোকের প্রকৃতিপ্রাপ্ত হয়। |
যে একজনও শত্রু তৈরি করতে পারেনি, সে কারও বন্ধু নয় | সবাই বন্ধু হয় না বা শত্রু হয় না; বন্ধু থাকলে শত্রুও আছে। |
যে কথা অন্তর থেকে বেরোয় তা অন্তর স্পর্শ করে, যে কথা শুধু মুখ থেকে বেরোয় তা কান অতিক্রম করে না | অন্তরের কথা ফাঁকা বুলি হয় না; অন্তরের কথা কেউ শোনে না উপলব্ধি করে। |
যে কথা রটে সে কথা বটে | যে কথা চারিদিকে রাষ্ট্র হয় তার মধ্যে কিছু সত্যতা অবশ্যই থাকে; পাঠান্তর- 'যা রটে তা বটে'; 'যে কথা রটে আর কিছু বটে'। |
যে কথা সেই কাজ | মুখে যেমন বলা কাজেও তেমন করা। |
যে কথা সেই কিরে | যে কথা মুখ দিয়ে একবার বেরুবে সেটাই শপথ বাক্য হিসাবে পালন করা উচিত; স্বতন্ত্র শপথ নিস্প্রয়োজন; সমতুল্য- 'মরদ কি বাত হাতীকা দাঁত'। |
যে করে চক্ষুদান, তারেই কর অপমান | উপকারীর উপকার স্বীকার করার পরিবর্তে তাকে অপদস্থ করা; তুলনীয়- 'যার দৌলতে কানাইয়ের মা তারেই তুমি চেন না'। |
যে করে দুঃখভোগ তার হয় সুখভোগ | যে প্রথমে কষ্টভোগ করে শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে সূখভোগ লেখা থাকে; সমতুল্য- 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; এই প্রবাদের অনেক বিরুদ্ধ উক্তি আছে |
যে কহে বিস্তর সে কহে বিস্তর | যে বেশি কথা বলে সে বাজে কথা বলে। |
যে কাঁটায় মাপ সেই কাঁটায় শোধ | যে কাঁটায় মেপে ধান ঋণ নেওয়া হয়েছে সেই কাঁটাতেও মেপে ঋণ শোধ করা হয়েছে; যেমন ব্যবহার করবে, তেমন ব্যবহার পাবে; সমতুল্য- 'সমতুল্য- 'আয়না যে মুখ দেখে সেই মুখ দেখায়'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
যে কাউকে বিশ্বাস করে না, কেউ তাকে বিশ্বাস করে না | সন্দিগ্ধমনা লোকের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। |
যে কাজ কাল করার কথা, সেটা আজ নয় কেন? যে কাজ আজ করার কথা, সেটা এখন নয় কেন? | শুভ কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখা অনুচিৎ; আগামীকাল সেই কাজ করার সুযোগ নাও থাকতে পারে; তুলনীয়- 'শুভস্য শীঘ্রম, অশুভস্য কালহরণম'। |
যে কাজের কথা অন্যে আগেই জেনে ফেলে সে কাজে সাফল্য আসে না | সংকল্প গোপন রাখা উচিত, তা না হলে কাজে বিঘ্ন ঘটে। |
যে কাঠ খায় সে আঙরা হাগে | উনুনে কাঠ খায় কাঠকয়লা নিঃসরণ করে; যে মন্দকাজ করে সে মন্দফল ভোগ করে; তুলনীয়- 'যে আগুন খাবে সে আঙরা বর্ষাবে'। |
যে কাল যায় সেই কাল ভালো ছিল | অতীত মানুষের মনকে বেশি টানে; হাতে থাকা জিনিসটার চেয়ে হাতছাড়া জিনিসটার প্রতি টান হয় বেশি; তুলনীয়- 'যে শোলটা পালিয়েছে সেটা বড় ছিল'; 'স্মৃ্তি সততঃ সুখের'। |
যে কুকুর গভীর গর্ত খোঁড়ে সে হাড় খুঁজে নেয় | পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; নিষ্ঠাভরে কাজ করলে সাফল্য আসবেই। |
যে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে সে কামড়ায় না | যে আস্ফালন করে সে ক্ষতি করে না। |
যে কুকুর ডাকে না সে বড় খতরনক | চাপামনের লোককে চেনা দায়; দুস্কৃতিরা নিঃসাড়ে কাজ সারে। |
যেখানে আঁটাআঁটি সেখানেই খিটিমিটি/ফাটাফাটি | যেখানে নিজের প্রাপ্য বুঝে নেবার যত্ন থাকে সেখানে বেশি গোলমাল দেখা দেয়। |
যেখানে উৎপত্তি সেখানে নিস্পত্তি | যে ব্যাপার থেকে গোলযোগের শুরু হয় সেই ব্যাপারেই গোলযোগের মিমাংসা হয়। |
যেখানে গভীরতা সব থেকে কম সেখান দিয়ে খাল পেরুবে | যেখানে বিপদের আশঙ্কা সব থেকে কম তার মধ্য দিয়ে কার্যসিদ্ধি করবে। |
যেখানে গুড় সেখানে পিঁপড়ে | যেখানে প্রাপ্তির আশা থাকে সেখানে লোকেরা ভিড় জমায়; সমতুল্য- যেখানে ধন সেখানে মন। |
যেখানে জল পড়ে সেখানে ছাতা/ছাতি ধরা১ | যেদিকে অভাব বা কষ্ট তখনই তা মোচন করা। |
যেখানে জল পড়ে সেখানে ছাতা/ছাতি ধরা১ | যেখানে বিপদের আশঙ্কা থাকে সেখানে প্রতিকারের চেষ্টা করা। |
যেখানে জল সেখানে মাছ, যেখানে পাখী সেখানে গাছ | আশ্রয়স্থল বা আশ্রয়দাতা থাকলে আশ্রিতরা আসবেই; আশ্রিতরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়। |
যেখানে জীব, সেখানে শিব | ঈশ্বর সব জীবের মধ্যে অবস্থান করেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। |
যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া/উলটাইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন | কিছুই অবহেলাযোগ্য নয়; হয়তঃ কোন অবহেলার বস্তু থেকেই বিরাট প্রাপ্তি হতে পারে। |
যেখানে ধন সেখানে মন | যেখানে লাভের আশা থাকে মন সেইদিকেই ছোটে; সমতুল্য- 'যেখানে গুড় সেখানে পিঁপড়ে'। |
যেখানে নাই আসল মায়া সেখানে বেশি আহা আহা | আন্তরিক স্নেহমমতা অনুপস্থিত, শুধুই কৃত্রিম ভালাবাসার অভিব্যক্তি। |
যেখানে বসে সেখানে কি চষে? | উৎসস্থলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা নেই; যেখান থেকে সাহায্য পাওয়া যায় সেটা যেন অস্থির না হয়। |
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয় | ভয় পেলেই ভয় পেয়ে বসে; যার ভয়ে ভীত সেই এসে উপস্থিত; যে সমস্যায় ভীত সেই সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়া। |
যেখানে বায়না-রথ সেখান সিদ্ধির পথ | বাসনা থাকলে তার সিদ্ধির একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবেই; তুলনীয়- 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়'। |
যেখানে ভাই ভাই সেখানে ঠাঁই ঠাঁই | অধিকাংশক্ষেত্রে ভাইয়ে ভাইয়ে মিল থাকে না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'দেশে দেশে কলত্রাণি দেশে দেশে চ বান্ধবাঃ তন্তু দেশং ন পশ্যামি যত্র ভ্রাতা সহোদরঃ'। |
যেখানে যেমন সেখানে তেমন১ | যেখানে যা আচরণ পাবে সেখানে সেই আচরণ করবে; সমতুল্য- 'আয়না যে মুখ দেখে সেই মুখ দেখায়'। |
যেখানে যেমন সেখানে তেমন২ | যেখানে যেভাবে আচরণ করা উচিৎ সেখানে সেইভাবে আচরণ করবে; সমতুল্য- 'যস্মিন দেশে যদাচার'। |
যেখানে সাধু যেতে ভয় পায়, সেখানে বোকা ছুটে ধায় | জ্ঞানীরা যে পথ মাড়ায় না, অজ্ঞানীরা সেই পথে আগে হাঁটে। |
যেখানে সূঁচ চলে না সেখানে শাবল চালায়১ | যেখানে কোন কৌশলই খাটে না সেখানেও ধূর্ত লোকেরা উপায় বার করে কার্যসিদ্ধি করে নেয়। |
যেখানে সুঁচ চলে না সেখানে শাবল চালায়২ | অসম্ভবকে সম্ভব করার ব্যর্থ প্রয়াস। |
যে খায় চিনি তারে যোগান চিন্তামণি১ | যার যা প্রয়োজন ভগবান তাকে সেটা দিয়ে থাকেন। |
যে খায় চিনি তারে যোগান চিন্তামণ২ | সৎকাজের জন্য অর্থ ও উপায়সম্পর্কে কিছু ভাবতে হয় না, ঈশ্বরের কৃপায় তা আপনিই জুটে যায়। |
যে খেয়েছে সাতবার তার জন্য ভাত বাড়ো, যে খায় নি একবার তার জন্য চাল ঝাড়ো | সকলেই সবলের সহায়, দুর্বলের কেউ নয়; তেলামাথায় তেল দিতে কে না চায়; সমতুল্য- 'তেলামাথায় ঢালো তেল, রুখু/শুখনো মাথায় ভাঙ্গো বেল'; 'ধনীর মাথায় ধর ছাতি, নির্ধনেরে মার লাথি'; 'যার আছেে কিছু তার হও কিছু,'যার নাই কিছু তার যাও কিছু'। |
যে খেলে সে কানাকড়িতেও খেলে | আস্তকড়িতে খেলা যায়; কারণ হাতের কৌশলে সেগুলিকে উপুড়/চিৎ করা সম্ভব; কানাকড়িতে তা পারা যায় না; তারজন্য বিশেষ দক্ষতা চাই; এই ভাবার্থে- কোন খেলায় জিততে হলে দক্ষ খেলোয়াড় হওয়া চাই। |
যে গরু দুধ দেয় তার চাঁট সই | যে উপকার করে, তার দুটো কটু কথা শুনতে হয়। |
যে গর্ত খোঁড়ে সেই গর্তে পড়ে | যে পরের অনিষ্ট করতে চায় তার নিজেরও অনিষ্ট হয়; সমতুল্য- 'যে ফাঁদ পাতে সে ফাঁদে পড়ে'। |
যে গাধা প্রতিবাদ করে না, তারই উপর ওজন চাপে | সকলেই দুর্বলতার সুযোগ নেয়; তুলনীয়- 'নরম মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়'। |
যে গিঁট খুলতে পারবে না, সে গিঁট বাঁধতে যেও না | অযথা নিজেকে সমস্যায় জড়িয়ো না; বিপদকে ঘরে ডেকে এনো না। |
যেচে মান কেঁদে সোহাগ | প্রার্থনা করে পাওয়া মানের কোন মূল্য নেই; কান্নাকাটি করে সোহাগ জোটে না। |
যে ছা ওড়ে সে বাসায় ধড়ফড় করে | কাজের লোক নিস্ক্রিয় হয়ে চুপচাপ ঘরের কোণে বসে থাকতে পারে না। |
যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোনের বাতি; আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশিথে প্রদীপ ভাতি | সম্পদের অপব্যবহার করা নেই;মোমবাতির দুদিক জ্বালানো নেই; অপচয় অনটন ডেকে আনে; অমিতব্যয়ী লোকেরা দুঃখকষ্টের শিকার হয়; সুখের দিগুলিতেে দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় করা আশু কর্তব্য। |
যে জানে না উত্তর পূব, তার মনে সদাই সুখ | যে ভালমন্দের কিছু বোঝে না বা খবর রাখে না সে সকল অবস্থাতেই সুখী থাকে। |
যে জুতা পরেছে সেই জানে কাঁটা কোথায় বিঁধছে | কাজ যে করেছে সেই বুঝতে পারে কোথায় কাজের ত্রূটি আছে। |
যে জেগে ঘুমায়, তাকে জাগানো দায় | যে শিখতে চায় না তাকে কিছু শিখানো যায় না। |
যে জেতে ষে হাসে | মাঝপথে উদ্যম/হিম্মত হারিয়ো না, শেষ হাসি তুমিই হাসতে পারো। |
যেটা রটে সেটা বটে | তুলনীয়- 'যে কথা রটে সে কথা বটে' এর অনুরূপ। |
যে টিপ সেই ফোড় | নামে তফাৎ কাজে এক; তুলনীয়- 'যার নাম চালভাজা তার নাম মুড়ি'। |
যে ডাল ধরে সেই ডাল ভাঙে১ | যাকে আশ্রয় করে সেই আশ্রয় বিপদগ্রস্ত হয়। |
যে ডাল ধরে সেই ডাল ভাঙে২ | যে কাজে হাত দেয সেটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
যে ডালে বসে সেই ডাল কাটে | যার কাছে সাহায্য পাওয়া যায় তারই অনিষ্ট করে; চুড়ান্ত আহাম্মক; সমতুল্য- 'যে পাতে খায় সে পাত ছিঁড়ে'। |
যেতে ছাগল আসতে পাগল | আসার জন্য লালায়িত আবার যাবাএ জন্য ছটফট করা; চুড়ান্ত অস্থিরমস্তিস্ক। |
যে তোমার হাত ধরে আর মন ছুঁয়ে থাকে, সেই প্রকৃত বন্ধু | প্রকৃত বন্ধু মরমী হয়, হৃদয়স্পর্শ করে থাকে; প্রকৃত বন্ধু মানুষের দ্বিতীয় সত্তা। |
যে দল/দাম (জলজ তৃণ) টানে সে খায় কই | যে পরিশ্রম করে সেই ফলভোগের প্রকৃত অধিকারী। |
যেদিকে জল পড়ে সেইদিকে ছাতা ধরে১ | যেদিকে অভাব বা কষ্ট তখনই তা মোচন করা। |
যেদিকে জল পড়ে সেইদিকে ছাতা ধরে২ | যেদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকে সেইদিক প্রতিকারের চেষ্টা করা। |
যেদিন মানুষ মানুষ হবে সেদিন মন্দির মসজিদ ইত্যাদির শেষপাথর শেষ পুরোহিত/মোল্লাদের মাথায় ভেঙে পড়বে | পুরোহিত মোল্লারা মানুষকে বোকা বানায়; চেতনা সম্পূর্ণ বিকশিত হলে মন্দির মসজিদ ইত্যাদির আর প্রয়োজন হবে না। |
যে দিন যায় সে দিন আসে না | গত দিন আর ফিরে আসে না; তুলনীয়- 'যাহা যায় তাহা যায়'। |
যে দিন যায় সেই দিন ভাল | হাতের জিনিসটার চেয়ে হাতছাড়া জিনিসটার জন্য আমাদের আক্ষেপ বেশি হয়; তুলনীয়- 'যে শোলটা পালিয়েছে সেটা বড়'। |
যে দুটি পাখির/খরগোসের পিছনে ছোটে সে একটাও ধরতে পারে না | লক্ষ্য স্থির না হলে কার্যসসিদ্ধি হয় না; একসঙ্গে দুটো কাজ ঠিকভাবে হয় না; তূলনীয়- 'দুনৌকায় চড়ে যে উপুড় হইয়া মরে সে'; 'যো ধ্রবাণি পরিত্যজ্য অধ্রুবাণি নিষেবতে, ধ্রুবাণি তস্য নশ্যন্তি অধ্রুবং নষ্টমেব চ'। |
যে দেখালে জো তারেই দেখায় ভোঁ | যে উপায় বাতলায় তাকেই ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা; তুলনীয়- 'উপকারীকে/নবকুমারকে বাঘে খায়'। |
যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট | যে যেমন আপ্যায়নে তুষ্ট তাকে সেইভাবে আপ্যায়ন করা। |
যে দেশে কাক নেই সেই দেশেও রাত পোহায় | যার কাছ থেকে কিছু সাহায্য আসছিল সেটা বন্ধ হলেও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে না, যেমন চলছিল তেমনই চলবে। |
যে দেশে বৃক্ষ নেই সেই দেশে ভেরেণ্ডাও বৃক্ষ হয় | গুণীজন না থাকলে অল্পজ্ঞানীরা প্রশংসিত হয়; সমতুল্য- 'দূর্বাবনে খটাশ বাঘ'; 'বনগাঁয়ে/বাঁশবনে শিয়াল রাজা'; পাঠান্তর- 'বৃক্ষহীন দেশে এড়েণ্ডাও বৃক্ষ'। |
যে দেশের যে ভাও, উল্টো করে ডিঙি বাও | যে দেশের যে রীতি; পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা; সমতুল্য- 'যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান'; 'যখন যেমন তখন তেমন'; 'যষ্মিন দেশে যদাচার' ইত্যাদি। |
যেন-তেন প্রকারেণ | যেকোন উপায়ে; যেকোনো ব্যবস্থা অবলম্বন করে; যো-সো করে। |
যেনতেন প্রকারেণ কার্যসিদ্ধি গরিয়সী | ভাল হোক মন্দ হোক যেকোন উপায়ে কার্যসিদ্ধি করাই হলো মূলকথা। |
যে নদীর গভীরতা বেশি তার চলার শব্দ কম | জ্ঞানীপুরুষেরা ধীরস্থির হয়; তুলনীয়- 'গভীর জলের মাছ নিঃসাড়ে সরে'; 'ভরা কলসীর শব্দ কম'। |
যে নিজেকে অজুহাত দেয় সে নিজেকে দোষারোপ করে | বিবেকের দংশনে যে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে স্বীকার করে যে তার কিছু ভুল হয়েছে। |
যে নিজেকে জানে না সে একটি মূর্খ | মানুষের শক্তির উৎস তার আত্মবিশ্বাস; আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়; সেইকারণে জ্ঞানীরা আগে নিজেকে জানে; মূর্খের সে সব বালাই নেই। |
যে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সেই অভাগা | মনের দিক থেকে অভাগারা শুধু আমি আমি, আমার আমার করেই মরে। |
যে নিজের সম্মান বোঝে না সে অপরকে সম্মান দেয় না | আত্মমর্যাদাবোধহীন ব্যক্তিরা সম্মান দিতে জানে না নিতেও জানে না। |
যে নিজের নিন্দা প্রথমে করে, তার নিন্দা কেউ করে না | আত্মসমালোচনা সবসময় প্রশংসিত হয়। |
যে পয়সা নিয়ে ঈশ্বরের পূজা করে সে বেশি পয়সা পেলে শয়তানের পূজা করবে | অসতের ন্যায় অন্যায়, ভালমন্দ বোধ নেই। |
যে পরেছে সেই জানে জুতা কোথায় চিমটি কাটে | কাজ যে করেছে সেই বুঝতে পারে কোথায় কাজের ত্রূটি আছে; পাঠান্তর-'যে পরেছে সেই জানে জুতার কোথায় কাঁটা আছে'। |
যে পরের দ্রব্যকে মূল্যহীন পাথরের টুকরা মনে করে সে যথার্থ জ্ঞানী | জ্ঞানীব্যক্তিরা পরের দ্রব্যে লোভ করে না। |
যে পরের ছিদ্র খোঁজে তার ছিদ্র বেশি থাকে | মন্দলোকেরা পরের দোষ দেখে বেড়ায়; তুলনীয়- 'আপন ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খোঁজে'। |
যে পাখিটা তুমি ছেড়ে দিয়েছো সে আবার ফিরে আসতে পারে, যে কথাটা মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে সেটা আর ফিরিবে না | ছোঁড়া তীর আর বলা কথা কখনো ফিরে আসে না। |
যে পাতে খায় সে পাত ছিঁড়ে | যার কাছে উপকার পায়, তার অনিষ্ট করে; সমতুল্য-'যে ডালে বসে সেই ডাল কাটে; পাঠান্তর- যে পাতে খায় সে পাত মাড়ায়'; 'যে পাতে খায় সে পাতে হাগে'। |
যে পাহাড় নড়ায়, সে প্রথমে কয়েকটি পাথর সরায় | সব কাজই ক্ষুদ্রাকারে শুরু হয়। |
যে প্রকৃতিকে ঠকায় প্রকৃতি তাকে ঠকায় | প্রকৃতিবিরোধী ব্যক্তিরা প্রকৃতির আশ্রয়/সাহায্য পায না। |
যে প্রশ্ন করে সে কিছুক্ষণের জন্য মূর্খ যে প্রশ্ন করে না, সে সারাজীবনের জন্য মূর্খ | অজ্ঞানের মনে কোন প্রশ্ন জাগয়ে না; সে কখনো কিছু জানতে চায় না। |
যে ফাঁদ পাতে, সেই ফাঁদে পড়ে | যে পরের অনিষ্ট চায় তার নিজের অনিষ্ট হয়; যে গর্ত খোঁড়ে সে গর্তে পড়ে; সমতুল্য- ' যে গর্ত খোঁড়ে সেই গর্তে পড়ে'। |
যে বনে যাই সেই ফল খাই | অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ; পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে চলা উচিত; সমতুল্য- 'যস্মিন দেশে যদাচার'; 'যখন যেমন তখন তেমন'। |
যে বাতাসে দাবানল বাড়ে, সেই বাতাসেই প্রদীপ নেভে | একই লোকের বিভিন্ন রূপ হয; সবার মধ্যেই ভালমন্দ গুণ থাকে। |
যে বিপদ খোঁজে, সে কখনো ব্যর্থ হয় না | চারিদিকে বিপদ ওঁত পেতে থাকে কাছে গেলেই পেঁচিয়ে ধরে। |
যে বিয়ের যে মন্ত্র | যেমন কাজ তেমন আয়োজন/ব্যবস্থা। |
যে বেশি বকে, সে বাজে বকে | বেশিকথায় বাজেকথা বেশি থাকে। |
যে বন্ধু বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে তার বন্ধুত্ব পুনরায় কামনা করা মৃত্যুর সামিল | বিশ্বাসহন্তাকে কখনো বিশ্বাস করা নেই। |
যে ভুল করে সে মানুষ, যে ভুল করে ভুলের ওপর স্থির থাকে সে শয়তান | মানুষমাত্রই ভুল করে এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেয়; শয়তানেরা ক্ষুদ্রস্বার্থে ইচ্ছা করে ভুলকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। |
যেমন আদাড়ে কচু তেমন বাঘাটে তেঁতুল | যেমন আপরাধ তেমনি শাস্তি; যেমন দুষ্ট তেমন শাসক; সমতুল্য-'যেমন কঠিন রোগ, তেমন কড়া ঔষধ';'যেমন কুকুর তেমন মুগুর'; 'যেমন শঠ তেমন শাস্তি'; 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল'। |
যেমন আরশি তেমন পড়শী | পাড়াপড়শীরা সমান মনোভাবাপন্ন হয়। |
যেমন উনুনমুখী দেবতা তেমন ঘুঁটের নৈবদ্য | যেমন লোক তার তেমন রুচি; যেমন লোক তার তেমন প্রাপ্তি; পাঠান্তর- 'যেমন চুলোমুখী দেবতা তেমন পাঁশের (মাস কলাই) নৈবদ্য'। |
যেমন কন্যা রেবতী তেমন পাত্র জোলাতাঁতী | নিন্দার্থে- কুরূপা কন্যার কুৎসিত পাত্র; তুলনীয়- 'যেমন দেবা তেমনি দেবী'। |
যেমন কন্যা রেবতী তেমন পাত্র গদাহাতী | প্রশংসার্থে- যোগ্যপাত্রের যোগ্যা পাত্রী; (উৎসকাহিনী- শ্রীকৃষ্ণের হাতে যেমন সুদর্শনচক্র থাকত বলরামের হাতে তেমন গদা থাকত; বলরামের পত্নীর নাম ছিল রেবতী।) |
যেমন কর্ম তেমন ফল | যে যেমন কাজ করে, সে তেমন ফলভোগ করে; ভাল কাজ করলে ভাল ফল পাবে, খারাপ কাজ করলে খারাপ ফল পাবে; কর্মফল মানতেই হবে; সমতুল্য- 'যেমন কাজ তেমন পারিশ্রমিক'; 'যেমন চাষ তেমন ফসল'; 'যেমন দেবে তেমন পাবে'; 'যেমন বপন তেমন কর্তন'; 'যাদৃশী ভাবনা যস্য, সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী'; 'যেমন শয্যা তেমন শয়ন' ইত্যাদি। |
যেমন কর্ম তেমন ফল মশা মারতে গালে চড় | কাউকে জব্দ করতে গিয়ে নিজে জব্দ হওয়া। |
যেমন কুকুর তেমনি মুগুর১ | দুষ্টলোকের উপযুক্ত শাসক। |
যেমন কুকুর তেমনি মুগুর২ | দুষ্টলোকের উপযুক্ত শাস্তি; সমতুল্য- 'যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল'; শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ'। |
যেমন ক্ষেপা তেমনি ক্ষেপি | দুজনেই সমান বদমেজাজী। |
যেমন গাওনা তেমনি পাওনা | কাজ অনুসারে পারিশ্রমিক। |
যেমন গুরু তেমন চেলা, গুরু বোবা, শিষ্য কালা | দু'জনই সমান অপদার্থ ভাবার্থে বক্রোক্তি; সমতুল্য- 'চ'তে গুরু 'ম'তে শিষ্য'। |
যেমন দান তেমন দক্ষিণা১ | দক্ষিণা দানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তির্যকোক্তি; অনেকে আছে যারা তামার কলসী দান করে একটাকাও দক্ষিণা দিতে চায় না; আবার অনেকে আছে যারা কাঁসার কলসী দান কর একশটাকা দক্ষিণা দেয়। |
যেমন দান তেমন দক্ষিণা২ | কাজের মূল্যের বিচারে পারিশ্রমিক দেওয়া বিধেয়। |
যেমন দেবতা, তেমন পূজা | ব্যক্তির প্রত্যাশিত সম্মান। |
যেমন দেবতা, তেমন বাহন | যেমন লোক তার তেমন অনুচর। |
যেমন দেবা তেমনি দেবী | তির্যক অর্থে- পাত্র যেমন কুতসিৎ পাত্রীও তেমন কুরূপা; তুলনীয়- 'যেমন কন্যা রেবতী তেমন পাত্র জোলাতাঁতী'। |
যেমন দেবা তেমনি বাহন | তির্যক অর্থে- যেমন দরের লোক তেমন দরের অনুচর। |
যেমন দেবে তেমন পাবে | কাজ অনিযায়ী পারিশ্রমিক। |
যেমন দেশ, তেমন বেশ১ | বিভিন্ন দেশের পোষাকপরিচ্ছদ বিভিন্ন ধরনের হয়। |
যেমন দেশ, তেমন বেশ২ | দেশাচার অনুযায়ী পোষাকপরিচ্ছদ পরিধান করা বিধেয়। |
যেমন পাপ তেমন শাস্তি | মন্দ কাজ করতে গিয়ে নিদারুণ দলবভহোগ করা। |
যেমন বাপ তেমনি ব্যাটা | ছেলে বাপের প্রকৃতি পায়; সু-অর্থে যোগ্য পিতার যোগ্যপুত্র; কু-অর্থে- বদবাপের বদছেলে; সমতুল্য- 'যেমন মা তেমন ছা';'যেমন মুরগী তেমন ছানা'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বাপগুণে বেটা,সিপাইগুণে ঘোড়া'। |
যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল | দুষ্টের সাথে দুষ্টামি করে তাকে জব্দ করা; সমতুল্য- 'যেমন কঠিন রোগ, তেমনি তীব্র ঔষধ'; 'যেমন কুকুর তেমন মুগুর'; 'যেমন শঠ তেমন শাস্তি'; 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- যেমন আদাড়ে কচু তেমন বাঘা তেঁতুল'। |
যেমন বেণী তেমনি রবে চুল ভিজাবো না | বিনাকষ্টে কার্যোদ্ধার, ধান্ধাবাজী; সমতুল্য- 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'। |
যেমন বৃক্ষ তেমন ফল | সন্তান পিতামাতার প্রকৃতি পায়। |
যেমন মতি তেমন গতি | যার যেমন প্রকৃতি বা প্রবৃত্তি হয়, সে তেমন গতিপ্রাপ্ত হয়। |
যেমন মনিব তেমন চাকর | তির্যক অর্থে- দুজনই সমান অপদার্থ। |
যেমন মা তেমন ছা | সন্তান মায়ের প্রকৃতি পায়; সমতুল্য- যেমন বাপ তেমনি ব্যাটা; |
যেমন মা তেমন ছা | ব্যঙ্গার্থে- দুজনেই মন্দপ্রকৃতির; পাঠান্তর-'যেমন মুরগী তেমন ছানা'। |
যেমন শয্যা তেমনই শয়ন | মানুষ নিজের কাজের জন্য দায়ী থাকে; মানুষকে কর্মফল মানতেই হবে; তুলনীয়- যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
যেমন সাপ তেমনই লাঠি | যেমন ক্রুরপ্রকৃতির লোক তেমন তার কড়াপ্রকৃতির শাস্তি। |
যেমন হাঁড়ি তেমনই সরা১ | পাত্র ও পাত্রী দুজনেই বেশ গোলগাল বর্তুলাকার। |
যেমন হাঁড়ি তেমনই সরা১ | বিরুপার্থে- খারাপ কন্যার মতই খারাপ বর হওয়া। |
যে মরতে ভয় পায় সে বাঁচতে শেখেনি | প্রতিনিয়তঃ মরণপণ সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। |
যে মাথা নোয়ায়, সে মাথা খোয়ায় না১ | বিনীত চরিত্রের লোকের সম্মানহানি হয় না। |
যে মাথা নোয়ায়, সে মাথা খোয়ায় না২ | যে শাসনের কাছে নত হয় সে শাস্তি এড়ায়। |
যে মানুষ প্রশ্ন করে সে একমুহূর্তের জন্য মুর্খ, আর যে মানুষ প্রশ্ন করে না সে সারাজীবনের জন্য মুর্খ- কনফুসিয়াস | যার মনে কোন প্রশ্ন জাগে না সে একটা আকাট মুর্খ। |
যে মানুষ বলে সে পারে এবং যে মানুষ বলে সে পারে না, তারা উভয়ই সত্য কথা বলে | সবাই সবকিছু পারে এমন হয় না; সবাই সবকিছু পারে না এমনটাও হয় না; সবাই কিছু কিছু পারে এবং কিছু কিছু পারে না। |
যে মানুষ সামান্যতম দুর্ভাগ্য সহ্য করতে পারে না, সে কোন বড় কাজ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করতে পারে না | জীবনসংগ্রামের ছোট ছোট তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বড় হয়। |
যে মুলোটা বাড়ে তা পত্তনেই বুঝা যায় | পরিণতি কি হবে তা কাজের শুরু দেখেই বোঝা যায়। |
যে মেঘ গর্জায়, সে মেঘ বর্ষায় না | যার হাঁকডাক বেশি সে কাজে অষ্টরম্ভা। |
যে মেয়ে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে | বড়কাজের অজুহাত দিয়ে কোন ছোটকাজ না করলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
যে যত অসৎ সে তত সাধুতার ভান করে | মেকি জিনিসের চাকচিক্য বেশি; তুলনীয়- 'ভণ্ড বামুনের ভড়ং বেশি'। |
যে যত খায়/পায় সে তত চায় | খেতে খেতে বা পেতে পেতে মানুষের লোভের মাত্রা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে; আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ নাই। |
যে যত বড় সে তত ছোট | উদারমনের লোকেরা বিনম্র হয়; ('মানুষ ভগ্নাংশের মত...' দ্রষ্টব্য) |
যে যন্ত্র রক্ত খায় সে রাম চালালেও খাবে রাবণ চালালেও খাবে | শোষণের শাসনব্যবস্থায় শাসকের চরিত্র বদলায় না। |
যে যা খায় তাই তার ঢেঁকুর ওঠে | লোকের প্রকৃতি তার চালচলনে ফুটে ওঠে। |
যে যাতে রত কহে তার মত | যে যার প্রতি অনুরক্ত সে তার পক্ষ হয়ে কথা বলে। |
যে যায় লঙ্কায় সেই হল রাক্ষস/রাবণ১ | কোনস্থানে গিয়ে কেউ সেই অঞ্চলের প্রকৃতিপ্রাপ্ত হলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
যে যায় লঙ্কায় সেই হল রাক্ষস/রাবণ২ | ক্ষমতার স্বাদ পেলে ভাল মানুষও উৎপীড়ক হয়; তুলনীয়- ' যে যন্ত্র রক্ত খায় সে রাম চালালেও খাবে রাবণ চালালেও খাবে'; 'শাসন পালটায় শোষণ পালটায় না'। |
যে যার সে তার১ | আপনার লো্ক আপনারই থাকে পর হয় না। |
যে যার সে তার২ | সকলেই নিজের স্বার্থ দেখুক এটাই কাম্য। |
যে যেমন ঢেমনি জগত দেখে তেমনি | যার যেমন চরিত্র সে সবাইকে তেমনি ভাবে; সাধুর চোখে সবাই সাধু, চোরের চোখে সবাই চোর। |
যে রক্ষক সেই ভক্ষক১ | আগে এককথা কথা বলত এখন বিপরীত কথা বলে; রূপবদল |
যে রক্ষক সেই ভক্ষক২ | রক্ষাকর্তাই অনিষ্টকারী; সমতুল্য-'শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার'। |
যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে | 'যে মেয়ে রাঁধে সে চুলও বাঁধে' দ্রষ্টব্য |
যে লেগে থাকে সে মেগে খায় না | পরিশ্রম করলে কারো কাছে হাত পাততে হয় না; তুলনীয়- 'কষ্ট করলে কেষ্ট পাওয়া যায়'; 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'। |
যে শেষহাসি হাসে, সে সবচেয়ে ভালো হাসে | সাফল হওয়ার আনন্দই আলাদা; তুলনীয়- 'সব ভালো যার শেষ ভালো'; 'সাফল্যের মত অন্য কিছু সফল হয় না'। |
যে শোলটা পালিয়ে যায় সেটা বড়১ | হস্তচ্যুত জিনিসটার জন্য মনে আক্ষেপ হয়। |
যে শোলটা পালিয়ে যায় সেটা বড়২ | যা পেয়েছি তার তুলনায় যা পায়নি সেটা ভাল মনে হয়; না পাওয়ার অতৃপ্তি; তুলনীয়- দূরের গাছের আমটা মিষ্টি'। |
যে সকলের বন্ধু সে কারোরই বন্ধু নয়১ | বন্ধুত্বের ভাগ-বাটোয়ারা হয় না। |
যে সকলের বন্ধু সে কারোরই বন্ধু নয়২ | একসাথে সকলকে সন্তুষ্ট করা যায় না। |
যে সঞ্চয় করে সে কষ্ট পায় না | সঞ্চয়কারীর কখনো অর্থকষ্ট হয় না। |
যে সৎ হয় নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না | কালো আলোকে তাড়ায় না; আলো কালোকে তাড়ায়। |
যে সব প্রশ্নের উত্তর জানে তাকেও সব প্রশ্ন করা হয় না | জানার কোন শেষ নেই; 'জ্ঞানসমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আমরা কিছু নুড়িপাথর কুড়িয়েছি মাত্র'। |
যে সব বাসনা ত্যাগ করে, সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় | আশায় মানুষ বাঁচে; কামনা বাসনার ত্যাগ মৃত্যুর সামিল। |
যে সম্মান দিতে জানে সে সম্মান পায়। | সম্মানকারীর সম্মানহানি হয় না। |
যে সয় সে রয় | যে কষ্ট সহ্য করে সে টিকে থাকে; যে টিক্রে থাকেে সে সুখভোগ করে; ধৈর্য ও সহনশীলতা মানুষকে অন্তরের শক্তিতে বলীয়ান করে; ধৈর্য ধরে থাকলে উত্তম ফল পাওয়া যায়; সমতুল্য- 'আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়', 'সবুরে মেওয়া ফলে' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কাল কখনো আসে না', 'শুভস্য শীঘ্রম অশুভস্য কালহরণম', 'সকাল/ভোরের পাখি পোকা ধরে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'যে সহে সে রহে'। |
যে সর্ষেতে ভূত ছাড়ে সেই সর্ষের মধ্যে ভূত | যে উপায়ে প্রতিকার হয় সেই উপায়টাই ত্রুটিপূর্ণ। |
যে সামনে নিন্দা এবং পিছনে প্রশংসা করে সেই প্রকৃত বন্ধু | প্রকৃত বন্ধু কঠোর সমালোচক হয়। |
যে স্বেচ্ছায় তোমার দিকে আঙুল বাড়ায় সে তোমার দিকে পুরো হাত বাড়াবে | উপকারীর হৃদয় অনেক বড় মাপের হয়। |
যে হাঁস সোনার ডিম দেয় তাকে মেরো না | অন্যায় দাবী কখনো পূরণ হয় না; এখন কেউ বেশি দাবী করলে ভবিষ্যতে সে কিছুই পাবে না। |
যে হাসতে জানে, সে বাঁচতে জানে | হাসতে জানলে মানসিক যন্ত্রণা হয় না; আধি না থাকলে ব্যাধি হয় না। |
যে হিংসা করে সে সবার আগে নিজের ক্ষতি করে | হিংসায় পরের কিছু হয় না, নিজের অন্তর পোড়ে। |
যেহেতু আমি চাকর হব না, সেহেতু আমি মনিব হব না- এব্রাহাম লিঙ্কন | সমানাধিকারের প্রতি উচ্চকণ্ঠ; মানবতাবাদের পরাকাষ্ঠা। |
যোগীর চিন্তা জগন্নাথ, ফকিরের চিন্তা মক্কা | মোক্ষলাভে যে ধর্ম যে পথ খোঁজে; তুলনায়- 'যত মত তত পথ'। |
যোগ্যং যোগ্যেন যুজ্যতে | যোগ্যপাত্রের সাথে যোগ্যপাত্রের মিলন হয়; যোগ্যব্যক্তির যোগ্য সঙ্গী জুটে যায়। |
যো দেখতা হায়, উও বিক্তা হায়১ | সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। |
যো দেখতা হায়, উও বিক্তা হায়২ | বাজারে গুণে নয় জমকে জিনিস বিক্রি হয়; বাহ্যিক ভড়ং দেখে লোকে বেশি ভোলে; সমতুল্য-'আগে দর্শননধারী, পিছে গুণবিচারী'; 'ঠাঁট ঠমকে বিকোয় ঘোড়া' ইত্যাদি। |
যো ধ্রবাণি পরিত্যজ্য অধ্রুবাণি নিষেবতে, ধ্রুবাণি তস্য নশ্যন্তি অধ্রুবং নষ্টমেব চ | যে ব্যক্তি নিশ্চিত বিষয় ত্যাগ করে অনিশ্চিতের পিছনে ছোটে, তার নিশ্চিত ও অনিশ্চিত, উভয়বিষয় হাতছাড়া হয়; যে দুটিপাখির পিছনে ছোটে সে একটি পায় না। |
যৌবন জোয়ারের জল | যৌবন ক্ষণস্থায়ী; তুলনীয়- 'যৌবন পদ্মপাতার জল'। |
যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালি- মধুসূদন | যে মানুষ আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যয় করে না তার অশেষ দুর্গত হয়; সময় থাকতে সাবধান হওয়ার পরামর্শ; ভুলপথে বেশী দূর চলে গেল শেষে অনুতাপ করতে হবে; সমতুল্য- 'আগে না বুঝিলে বাছা যৌবনের ভরে, পশ্চাতে কাঁদিতে হবে নয়নের ঝোরে'; 'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি'। |
র
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলে | মাথা গরম হলে বুদ্ধি কাজ করে না। |
রক্ত জলের থেকে বেশি গাঢ় | রক্তের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন। |
রক্তবীজের বংশ/ঝাড় | যা শেষ হয় না এমন; (উৎসকাহিনী- দেবতার বরে রক্তবীজ নামে এক অসুরের রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়লেই তার থেকে আরেক অসুর জন্ম নিত; ফলে তাকে ধ্বংস করা সহজ ছিল না; মা দুর্গা কৌশলে রক্তবীজের বংশকে ধ্বংস করেন; রক্তবীজের প্রতিটি রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার আগেই কালী রূপে মা দুর্গা তা পান করেন; এভাবেই ‘রক্তবীজের ঝাড়’ ধ্বংস হয়। |
রক্তপাত ছাড়া পাপ ধোয় না | রক্তক্ষয়ে মানুষের চেতনা ফেরে; রামায়ণ মহাভারত, ইলিয়াড ওডিসি ইত্যাদি যত মহাকাব্যে সেই সত্যই বিবৃত হহেছে; প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব মহাযুদ্ধের পর পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। |
রক্তের টান বড় টান | রক্তসম্পর্ক বা জ্ঞাতিত্বের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন; রক্তের টান আত্মীয়সম্পর্ক গড়ে উঠে; পারিবারিকসম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; সমতুল্য- 'জল থেকে রক্ত গাঢ়'। |
রক্তের টানে রক্তারক্তি | ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি লাগে; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল'; 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই' ইত্যাদি। |
রক্ষক যারে ভক্ষণ করে, কে তারে রাখতে পারে? | রক্ষাকর্তা মারলে তার থেকে রক্ষা নেই; আশ্রয়দাতা অনিষ্ট করলে বাঁচার কোন পথ নেই; তুলনীয়- 'মারে আল্লা/কৃষ্ণ/হরি রাখে কে? |
রঙ থাকলে রঙে কড়ি, রঙ ফুরোলে গড়াগড়ি | রূপ থাকলে আদর আছে; রূপ হারালে আদর গেল। |
রঙ্গপ্রিয় লোকেরা সর্বদাই বিষন্ন | বাইরে হাসিখুশি লোকেরও মনের গভীরে দুঃখ লুকিয়ে থাকে। |
রণমুখো সেপাই ঘরমুখো বাঙালী | যুদ্ধ শুরু হলেই বেপরোয়া সেপাইরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে; বাঙালীরা ঘরের কোণ ছেড়ে বেরুতে চায় না; (উল্লেখ্য বাঙালীর এই বদনাম ঘুছেচে।) |
রণের ঘোড়া | যুদ্ধের দামামা বাজলে যুদ্ধের ঘোড়ার ছটফটানি শুরু হয়; কাজের কথা শুনলে যে আর স্থির থাকতে পারে না। |
রতনে রতন চেনে১ | প্রশংসার্থে- গুণী গুণীলোককে চিনতে পারে; গুণী গুণীলোকের কদর ক'রে/বোঝে। |
রতনে রতন চেনে২ | শ্লেষার্থে- নির্গুণ নির্গুণকে সহজে চিনতে পারে। |
রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু | অসৎলোক আর একজন অসৎলোককে সহজে চিনতে পারে এবং তার সঙ্গে হাত মেলায়; সমতুল্য- 'শালুক চিনেছে গোপাল ঠাকুর'। |
রতনে রতন চেনে, রসিকে চেনে রসিক | গুণীব্যক্তি গুণীকে চিনতে পারে; নির্গুণ নির্গুণকে ভালভাবেই চেনে; জ্ঞানীব্যক্তি জ্ঞানীর সমাদর করে। |
রত্ন খণ্ডিত হয় না | রত্ন একটি অখণ্ড ধারণা। |
রত্নগর্ভা/প্রসবিনী১ | প্রশংসার্থে- সুসন্তানের জননী। |
রত্নগর্ভা/প্রসবিনী২ | শ্লেষার্থে- কুসন্তানের জননী। |
রত্নগর্ভের প্রথমসন্তান১ | প্রশংসার্থে- সুন্দরীরমণীর সুন্দরসন্তান। |
রত্নগর্ভের প্রথমসন্তান২ | নিন্দার্থে- সুন্দররমণীর কুতসিৎসন্তান। |
রত্নগর্ভের প্রথমসন্তান৩ | শ্লেষার্থে- মা ও সন্তান উভয়ই কুতসিৎ। |
রথ দেখা কলা বেচা | এককাজের উপলক্ষে আরো একটি কাজ সম্পন্ন করা; এককাজ করতে গিয়ে দুইকাজ সম্পন্ন করা; সমতুল্য- 'একঢিলে দুইপাখি মারা'; 'ঘটি কেনা গঙ্গাস্নান'। |
রন্ধনে দ্রৌপদী | অসাধারণ ভাল রাঁধুনী; (উৎসকাহিনী- পাণ্ডবদের বনবাসকালে একবার দুর্বাসামুনি দশহাজার শিষ্সহ পাণ্ডবদের কুঠিরে উপস্থিত হন; অপ্রস্তুত দ্রৌপদী সূর্যের কৃপায় একাকী রান্না করে সকলকে পরিতৃপ্ত করেন; এই অসাধারণ রন্ধন-নৈপুণ্যের জন্য 'রন্ধনে দ্রৌপদী' বা 'দ্রৌপদীর মত রাঁধুনী' প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। |
রন্ধনের চাউল চর্বণে যায়১ | এককাজের জন্য সংগ্রহ অন্যকাজে ব্যবহার। |
রন্ধনের চাউল চর্বণে যায়২ | কাজ শুরু হওয়ার আগেই অকাজে উপাদানের অপব্যবহার। |
রবি গুরু মঙ্গলের ঊষা, আর সব ফাসাফুসা- খনা | রবি, বৃহস্পত, মঙ্গলবারের ঊষাকালে যাত্রা করা শুভ; অন্যান্য দিন যাত্রা করলে শুভ ফল না পাওয়াই সম্ভব। |
রম্যাণি বীক্ষ্য মধুরাংশ্চ নিশম্য শব্দান পৰ্য্যুৎসুকী ভবতি যৎ সুখিতোহপি জন্তুঃ | প্রকৃতির সুন্দরবস্তু দেখে এবং মধুরশব্দ শুনে পশুপাখিরাও আনন্দে উদ্বেল হয়। |
রসমূলা হি ব্যাধয়ঃ | রস (জলের আধিক্যহেতু দেহে সৃষ্ট রোগবিশেষ) সকল ব্যাধির মূল। |
রসাতলে দেওয়া/যাওয়া | অধঃপাতে পাঠানো/যাওয়া; উচ্ছন্নে যাওয়া; একেবারে নষ্ট করা বা হওয়া। |
রসুন খেলে রসুনের গন্ধ ছাড়ে | ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে; কু কখনো সু হয় না; সমতুল্য- 'আদা শুকালেও ঝাল যায়না'; 'কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না'; 'মূলো খেলে মূলোর ঢেঁকুর ওঠে', ইত্যাদি। |
রসুন বলে পিঁয়াজ ভাই তোমার বড় খোসা | নিজের তালপ্রমাণ দোষের দিকে না তাকিয়ে পরের তিলপ্রমাণ দো্ষকে কটাক্ষ করা; সমতুল্য- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছনে কেন ছ্যাঁদা?'; চালুনি বলে খইচালা তুমি বড় ফুটো'; 'ঝাঁঝরি বলে চালনি তুই বড় ছেঁদা'; 'হাঁড়ি বলে কড়াই তোর পিছনটা বড়া কালা' ইত্যাদি। |
রসের ঘরেই গৌর নাচে১ | চর্বচোষ্য-লেহ্যপেয়র ব্যবস্থা থাকলে সেখানে গিয়ে গৌরাঙ্গ সংকীর্তনে নাচেন। |
রসের ঘরেই গৌর নাচে২ | গাঁটে/ট্যাকে/হাতে পয়সা থাকলেই আমোদপ্রমোদ ফূর্তি করা যায়, অন্যথায় যায় না। |
রসের নাগর রূপের সাগর যদি ধন পাই, আদর ক'রে করি তারে বাপের জামাই | খুব সুপুরুষ, রসিক ও ধনাবান হলে তাকে বাপের জামাই করি অর্থাৎ বিয়ে করি-মেয়েদের সুপ্ত কামনার প্রতিফলন; তুলনীয়- 'কন্যা বরয়তে রূপম'। |
রাই কুড়িয়ে বেল | বৃহৎমাত্রই অসংখ্য ক্ষুদ্রের সমষ্টি; অল্পঅল্প করে সঞ্চয় করে গেলে একদিন যথেষ্ট অর্থ জমা হয়; সমতুল্য-'তিল কুড়িয়ে তাল'; 'তিলেতিলে তাল'; 'তিলেতিলে তিলোত্তমা; 'বিন্দুবিন্দু বারিকণায় মহাসিন্ধু' ইত্যাদি। |
রাক্ষসের উপর খোক্কস | খোক্কস রাক্ষস জাতীয় কাল্পনিক জীববিশেষ; রাক্ষস মানুষকে খায়; খোক্কস আবার মানুষকে খায়; প্রবাদের নির্গলিতার্থ- প্রবলকে শাসন করার জন্য প্রবলতরও আছে; প্রবলের উপর কেউ বল প্রয়োগ করতে পারলে এই প্রবাদ বলা হয়; তুলনীয়- ‘তিমির উপর তিমিঙ্গিল’; ‘বোয়ালের উপর রাঘববোয়াল’ ইত্যাদি। |
রাক্ষসের বেটা খোক্কস | বাপের চেয়ে বেটা অথবা দাদার চেয়ে ভাই আরও খতরনক নৃশংস; দাদাকে শায়েস্তা করতে বড়দাদা আছে; পাঠান্তর- 'রাক্ষসের ভাই খোক্কস'। |
রাখে আল্লাহ/হরি তো মারে কে | ঈশ্বর সহায় থাকলে কেউ ধ্বংস করতে পারে না। |
রাখে হরি তো মারে কে, মারে হরি রাখে কে | ঈশ্বরের ইচ্ছা না হলে কেউ কাউকে মারতে পারে না বাঁচাতেও পারে না। |
রাগকে শাসন কর, নইলে রাগ তোমায় শাসন করবে | রাগ সংযত কর, অন্যথায় বিবেকবুদ্ধি সব নষ্ট হবে এবং পশুত্ব মাথা চাড়া দেবে। |
রাগ চড়লে পরিণামের কথা চিন্তা করো | রাগরিপু একধরণের পাগলামী; রাগ মূর্খতা দিয়ে শুরু হয় এবং অনুশোচনায় শেষ হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলতে শুরু করে'। |
রাগ না চণ্ডাল | রাগ ভয়ানক শত্রু; চণ্ডালের যেমন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না রাগ হলে তেমনি মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। |
রাগ হলে একশ গোন | রাগ প্রশমনের ওষুধবিহীন বৈদ্যবিধান। |
রাঙতাই গরিবের গহনা/সোনা | গরিব অল্পেই তুষ্ট। |
রাঙামূলা | রাঙামূলা দেখতে সুন্দর কিন্তু বড্ড বেশি ঝাল-এই ভাবার্থে দেখতে রূপবান কিন্তু গুণহীন এমনপুরষ। |
রাজদ্বারে শ্মশানে চ য তিষ্টতি স বান্ধবঃ | আদালতে ও শ্মশানে যে সহায়তা করে সেই প্রকৃত বন্ধু। |
রাজা কর্ণেন পশ্যতি | চরের মাধ্যমে রাজা দেখেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পণ্ডিতঃ ধিয়েন পশ্যতি'; 'পশু গন্ধেন পশ্যতি'; 'ভূতে পশ্যতি বর্বরা'; পাঠান্তর- 'রাজা পশ্যতি কর্ণাভ্যাং'। |
রাজাদের ঘুড়ি এক বিয়ানে বুড়ি১ | রাজাদের মাদী ঘোড়া একবার বাচ্চা পাড়লে বাতিল হয়ে যায়। |
রাজাদের ঘুড়ি এক বিয়ানে বুড়ি২ | কোনজিনিস একটু পুরানো হলোে বড়লোকেরা সেটা আর ব্যবহার করে না। |
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় | দুই প্রভাবশালব্যক্তির লড়াইয়ে মধ্যে পড়ে সাধারণলোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'খলঃ করোতি দুর্বৃত্তং, নূনং ফলতি সাধুষু'; 'রাম রাবণের যুদ্ধ হয় সাগর সেতুবন্ধনে বাঁধা পড়ে'। |
রাজার আছে রাজপাট যোগী/মুনির আছে কাঁথা | যে যার মনোমত জিনিস পেয়ে তুষ্ট; উভয়েরই সুখানুভূতি সমান; পাঠান্তর- 'রাজার আছে রাণী কানার আছে কানী'। |
রাজারও রায়ত নয় সাধুরও খাতক নয়১ | রাজার জমিতে বাস করে না মহাজনের কাছেও ধারে না। |
রাজারও রায়ত নয় সাধুরও খাতক নয়২ | যুযুধান দুইপক্ষের কোনদিকেই থাকে না। |
রাজার গুয়ে গন্ধ নাই | ক্ষমতাশালীরা দোষ করলেও সেটা দোষনীয় নয়; তারা সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে; তুলনীয়- 'রাধাপ্যারীর দোষ নাই'। |
রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট | সুশাসন না হলে দেশের সর্বনাশ হয়; সমতুল্য- 'গৃহিণীর দোষে সংসার নষ্ট'। |
রাজার নন্দিনী প্যারী যা করে/বলে তা শোভা পায় | প্যারী হল রাধাপ্যারী; শ্রীকৃষ্ণসোহাগিনী শ্রীরাধিকা; সুতরাং তাঁর ত্রুটি ত্রুটিই নয়; তাঁকে কিছু বলার উপায় নেই; তার থেকেই এই প্রবাদের সৃষ্টি; তুলনীয়- 'রাজার গুয়ে গন্ধ নাই'; পাঠান্তর- 'রাধাপ্যারীর দোষ নাই'। |
রাজার বেটা/মা ভিক্ষা মাগে | কপালদোষে হাভাত; ধনীর নির্ধন সাজার চেষ্টা। |
রাজার ভূরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্নও ভাল | আড়ম্বরপূর্ণ জীবন থেকে সরলজীবন ভাল; সমতুল্য- 'আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন'; 'আদরের ডাল-ভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না'; 'বড়লোকের ভুরিভোজ থেকে গরিবের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি। |
রাজার রাজপাট যোগীর ঝুলিকাঁথা | যা যার বিষয় তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট থাকে। |
রাজার রাণী কানার কানী | সকলেই নিজের পছন্দমত জিনিস পায়। |
রাত নামলে লোকে দিনের প্রশংসা করে | থাকলে পরে খেয়াল হয় না; না থাকলে খোঁজ পড়ে। |
রাতের তারা থাকে দিনের আলোর আড়ালে | ঐশ্বর্যের আড়ালে দীনদুঃখীরা হারিয়ে যায়। |
রাতেরও একসময় অবসান হয় | দুঃখও একসময় শেষ হয়; সুখ বা দুঃখ কোনটাই অন্তহীন হয় না। |
রাতের বেলা ভূতের ভয় | অন্ধকার নামলেই ভূতের ভয় জড়িয়ে ধরে; আলোতে ভূত দেখা যায় না। |
রান্না দেখে কান্না পায় | খাওয়ার অযোগ্য কুৎসিত রান্না। |
রান্নার চাল চিবাতে যায়১ | এককাজের জন্য সংগ্রহ অন্যকাজে ব্যবহার। |
রান্নার চাল চিবাতে যায়১ | কাজ শুরুর আগেই উপাদান শেষ। |
রাবণের চিতা | যে শোকানলজ্বালা কখনো মন থেকে মুছে না; (কথিত যে রাবণের চিতা কখনো নিভে না) |
রাবণের দোষে সমুদ্রবন্ধন | রাবণ সীতাকে হরণ করে আনলো; সেই দোষে সমুদ্রের বন্ধন হল; একের দোষে অন্যের শাস্তিপ্রাপ্তি; পাঠান্তর- 'রাম রাবণে যুদ্ধ হয় সাগর সেতুবন্ধনে বাঁধা পড়ে'। |
রাবণের স্বর্গের সিঁড়ি | যেকাজ কোনদিন সম্পন্ন হয় না; (উৎসকাহিনী- রাবণ সশরীরে স্বর্গে যাবেন বলে মনস্থ করছিলেন; কিন্তু করছি করবো ক'রে সেই কাজ আর করে উঠতে পারেন নি; কেউ যদি 'আজকাল করে' কোন কাজ ফেলে রাখে তবে সেই দীর্ঘসূত্রীকে রাবণের সাথে তুলনা করে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।) |
রাবণের হাতে যথা মারীচ কুরঙ্গ | উভয়সঙ্কটে পড়া; উৎসকাহিনী- রাবণ পরিকল্পনা করেছিল মারীচের সাহায্যে সীতাকে হরণ করবে; মায়াবিদ মারীচ সোনারহরিণের রূপ ধরে সীতাকে প্রলুব্ধ করবে; রাম সীতার অনুরোধে সোনার হরিণ ধরতে ছুটবে; এই সুযোগে রাবণ সীতাহরণ করবে; মারীচ আগেই রামের হাতে একবার মরতে বসেছিল; তাই জীবনমরণের প্রশ্নে সে রাবণের প্রস্তাব নাকচ করে; রাবণ তাকে হত্যা করবে ভয় দেখালে মারীচ উভয়সঙ্কটে পড়ে- এগুলে রাম তাকে মারবে পেছলে রাবণ তাকে মারবে- মরতে তাকে হবেই; সে সিদ্ধান্ত করে রামের হাতেই মরবে); সমতুল্য- 'জলে কুমির ডাঙায় বাঘ'; শাঁখের করাত';পাঠান্তর- 'মারীচ দশা'; 'রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব'। |
রাম না জন্মাতেই | যে ঘটনা ঘটে নি তার বর্ণনা; কোন কাজের শুরুর আগেই তার প্রচার; কারণের আগেই কার্য; (উৎসকাহিনী- কথিত জে রাম জন্মাবার ষাটহাজার বছর আগে বাল্মিকী রামায়ণ রচনা করেছিলেন এবং তিনি যেভাবে লিখেছিলেন রাম সেভাবেই আচরণ করেছিলেন।); পাঠান্তর- 'রাম না হতে রামায়ণ'। |
রাম বলে লক্ষণ, লক্ষণ বলে এইক্ষণ | আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ অনুগতের প্রতিপালন; তুলনীয়- 'রামের ভাই লক্ষ্মণ'। |
রাম ভজি কি রহিম ভজি | দুকূল রক্ষা করার ধান্ধাবাজী। |
রাম ভালো হ’লে রহিম ভাল হয় | ভালোর ছোঁয়ায় সবাই ভাল হয়; চন্দনের ছোঁয়ায় চন্দন হয়; ভালোর সঙ্গী ভালো হয়। |
রামরাজত্ব১ | সুঅর্থে- অতি সুশাসনব্যবস্থা (কথিত যে, রামের শাসনকালে দেশে অনাচার, অবিচার, দুর্ভিক্ষ, রোগ ইত্যাদি কিছুই ছিল না।) |
রামরাজত্ব২ | বিদ্রূপে- এমন নরম শাসনব্যবস্থা যেখানে দুস্কৃতিরা অবিচার করার অবাধ অধিকার ভোগ করে। |
রাম রাবণের যুদ্ধ | সাংঘাতিক ঝগড়াঝাঁটি; হুলুস্থূল ব্যাপার; সমতুল্য- লঙ্কাকান্ড। |
রাম রাবণের যুদ্ধ হয় সাগর সেতুবন্ধনে বাঁধা পড়ে | দুই প্রভাবশালব্যক্তির লড়াইয়ে মধ্যে পড়ে সাধারণলোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'খলঃ করোতি দুর্বৃত্তং, নূনং ফলতি সাধুষু'; 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়'; পাঠান্তর- 'রাবণের দোষে সমুদ্রবন্ধন'। |
রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব | উভয়সঙ্কটে পড়া; দুই দিকেই বিপদ; বাগধারা ‘রাবণের হাতে যথা মারীচ কুরঙ্গ’ দ্রষ্টব্য। |
রামের বাণ | মোক্ষম আঘাত; তুলনীয়- 'অর্জুনের গাণ্ডীব'; 'ইন্দ্রের বজ্র'; 'শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্র' ইত্যাদি। |
রামের বাণ সহ্য হয় বানরের দাঁতখিচুনি নয় | গুণীলোকের সমালোচনা সহ্য করা যায়; হীনলোকের কথা অসহ্য; তুলনীয়- সূর্যের তাপ সহ্য করা যায়, বালির তাপ সহ্য হয় না'। |
রামের ভাই লক্ষ্মণ১ | প্রশংসায়- দাদার একান্ত অনুগত ছোটভাই; তুলনীয়- 'রাম বলে লক্ষণ, লক্ষণ বলে এইক্ষণ'। |
রামের ভাই লক্ষ্মণ২ | শ্লেষে- দাদার বিদ্বেষী ছোটভাই। |
রামের মত স্বামী লক্ষ্মণের মত দেবর | প্রতিটি মেয়ে কামনা করে যেন সে রামের মত আদর্শ স্বামী এবং লক্ষ্মণের মত আদর্শ ভাবীভক্ত দেবর পায়। |
রামের হনুমান১ | প্রশংসায়- একনিষ্ঠ সেবক। |
রামের হনুমান২ | শ্লেষে- প্রভুভক্ত চাকর। |
রাহুর দশা | অত্যন্ত কষ্টকর ও সংকটময় সময়। |
রিপুস্বপি হি ভীতেষু লাজুকম্পা মহাশয়াঃ | মহৎব্যক্তিরা ভীতশত্রুর প্রতিও দয়ালু হন। |
রুক্ষমাথায় তেল দেয় না, তেলামাথায় ঢালে তেল | চাটুকারিতা, তৈলমর্দন; প্রয়োজনে সাড়া দেয় না, অপ্রয়োজনে এগিয়ে আসে; যেখানে অভব শেখানে সাহায্য নেই, যেখানে প্রাযুর্য সেখানে অঢেল সাহায্য। |
রুচেপুচে খা মন চলে তো যা | যদি রুচি থাকে তো খাও কোন ক্ষতি হবে না; যে কজে মন টানে সেই কাজ কর। |
রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে | প্রচণ্ড রেগে গেছে; (উৎসকাহিনী- শিবের সংহারমূর্তি রুদ্র এক রুক্ষস্বভাবপন্ন ধ্বংসকারী দেবতা।) |
রূপ নিয়ে ধুয়ে খা | শুধু রূপে কাজ হয় না সঙ্গে গুণ থাকা দরকার; রূপের সঙ্গে গুণ না থাকলে ফল হয় না। |
রূপে ঢলঢল গুণে পসরা | রূপবান ও গুণবান ব্যক্তি; তুলনীয়- 'ভাবে ডগমগ তেলাকুচা'। |
রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি | স্ত্রী হিসাবে নারী নির্বাচনে গুণবতী কালো হলেও ভালো; গুণহীনা রূপবতী হলেও মূল্যহীন; সমতুল্য- 'কালা কাজলের মাটি, তা'র লাগি ছ'মাস হাঁটি'; 'সুন্দর ধুতুরাফুল তা'র নাই কড়ার মূল';'জাতের নারী কালাও ভালা, নদীর পানি ঘোলাও ভালা' ইত্যাদি। |
রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী | খুব সুন্দরী এবং গুণসম্পন্না বিদুষী নারী। |
রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি | শুধু দেখতে ভাল হলেই চলে না গুণ থাকা চাই; তাই কবিগুরু বলেছেন- রূপে তোমায় ভোলাবো না ভালবাসায় ভোলাবো'; বিরুদ্ধ প্রবাদ-'আগে দর্শনদারী পরে গুণবিচারী'; 'ঠাটঠমকে বিকোয় ঘোড়া'। |
রূপের বালাই নিয়ে মরি | রূপের কারণে বিপদের আশঙ্কা; সুরূপা ও কুরূপা উভয়ক্ষেত্রে প্রাযোজ্য। |
রূপোর বদলে রাং/রাংতা | সারবস্তুর অভাবে অসারবস্তু গ্রহণ; তুলনীয় 'দুধের বদলে ঘোল/পিটুলিগোলা'। |
রেকো গুণঃ খলু নিহন্তি সমস্ত দোষান | একটিমাত্র গুণ সমস্ত দোষকে বিনষ্ট করে; একফোঁটা চোনা এককড়া দুধ নষ্ট করে। |
রোখা কড়ি চোখা মাল | নগদ পয়সা দিয়ে ভাল জিনিস কিনবো। |
রোগ কেবল ভুঁড়িতে আর মুড়িতে | পেট ও মাথা থেকেই সব রোগের উৎপত্তি হয়। |
রোগের শেষ রাখতে নেই | রোগ নির্মূল না করল ফের বেড়ে যেতে পারে; সমতুল্য- 'আগুনের শেষ রাখতে নেই'; 'ঋণের শেষ রাখতে নেই';'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'। |
রোগী তুষ্ট অম্বলে, যোগী তুষ্ট কম্বলে | অর্থ স্পষ্ট; যার যাতে সন্তুষ্টি; উভয়েই অল্পে সন্তুষ্ট। |
রোগী মরলে বৈদ্য আসে | দরকারের সময় সাহায্য নেই, পরে এসে উপস্থিত হয়; সমতুল্য- চোর পালালো, চৌকিদার/কোতোয়াল হাজির'; 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে' ইত্যাদি। |
রোগে পড়লে মানুষ ভক্তিমান হয় | নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চুরি করতে অক্ষম হলে চোর সাধু হয়'; 'কুরূপা হলে নারী পতিব্রতা হয়'; 'বৃদ্ধা হল গণিকা তপস্বিনী হয়'। |
রোজা নিজের ভূত ছাড়াক | বৈস্য আগে নিজের ঘরে চিকিৎসা করুক; আগে নিজের ঘর সামলানোর উপদেশল তুলনীয়- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'। |
রোজার ঘাড়ে বোঝা/ভূত | বিপদ থেকে যার উদ্ধার করার কথা সে নিজেই কাজের চাপে বিপদাপন্ন। |
রোদ উঠলে ধান শুকাও | সুযোগ বুঝে ব্যবস্থা নাও; সময়ের কাজ সময়ে করার উপদেশ। |
রোদে ধান ছায়ায় পান- খনা | রোদে ধান ভাল উৎপন্ন হয়; ছায়ায় পানের চাষ করতে হয়। |
রোদের তাপ সয় বালির তাপ সয় না | আসলের কথা সহ্য হয় কিন্তু অনুচরের চিমটি কাটা কথা সহ্য হয় না; তুলনীয়- 'রামের বাণ সহ্য হয় বানরের দাঁতখিচুনি নয়'। |
রোমনগরী একদিনে গড়ে হয় নি | কোন বিরাটকাজ বাতাবাতি করা সম্ভব হয় না; মহাভারত একদিনে লেখা হয় নি; তুলনীয়- তিলে তিলে তাল হয়'; 'তিলে তিল তিলোত্তমা হয়'। |
রোমে বাস করে পোপের সাথে বিবাদ | প্রভাবপ্রতিপত্তিসশালীর এলাকায় বাস করে তারই সাথে বিবাদ; যার অধীনে বাস তার সাথে বিবাদ করা চলে না; সমতুল্য- 'জলে বাস করে কুমীরের সাথে বিবাদ'। |
রোষপরীতেন গুরুণা জায়তি গুণঃ | রোষবশে কিছু বললেও গুরু গুণের কথা বলেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- ‘শত্রোরপি গুণা বাচ্যা দোষা বাচ্যা গুরোরপি’। |
ল
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
লক্ষঘাস মিলেমিশে থাকে, দুটি বটগাছ একসাথে থাকে না | দুই প্রবল শক্তিধরের পাশাপাশি থাকা সম্ভব নয়; সমতুল্য- 'এক আকাশে দুই সূর্য থাকে না', |
লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব হলে লক্ষ্য ছেড়ো না, কাজের ধারা পাল্টাও | স্থির লক্ষ্যে অবিচল থাকা উচিত; লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সাফল্য অনিবার্য; |
লক্ষ্মণের ফল ধরা | প্রশ্নহীন আনুগত্যে নির্দ্বিধায় আদেশ পালন করা অথবা যতটুকু কাজ করতে বলা হয় ততটুকু করা, তার বেশি একটুও কাজ না করা; (উৎসকাহিনী- বনবাসকালে রামচন্দ্র প্রতিদিন লক্ষ্মণের হাতে ফল দিয়ে বলতেন,'ধর'; লক্ষ্মণ ফলটি হাতে নিতেন এবং যত্নের সাথে তুলে রেখে দিতেন; বনবাস থেকে ফিরে এলে লক্ষণ জমিয়ে রাখা সব ফল রামের হাতে তুলে দেন; বিস্মিত হয়ে রাম এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষণ উত্তরে বলেন, আপনি তো আমাকে ফল ধরতে বলেছিলেন খেতে বলেন নি; তাই আমিও খাই নি'); পাঠান্তর- 'ধর লক্ষণ। |
লক্ষ্মণের মত দেবর | লক্ষণ ভাতৃজায়া সীতার অত্যন্ত হিতাকাঙ্খী ছিলেন; তিনি চাইতেন সীতার যেন সবসময় মঙ্গল হয়; সেইকারণ প্রতিটি নারী কামনা করে তার ভাগ্যে যেন লক্ষণের মত একজন গুণবান দেবর জোটে। |
লক্ষ্মণের মত ভাই | ছোটভাই বড়ভাইয়ের একান্ত অনুগত হলে প্রবাদে বলা হয় 'লক্ষ্মণের মত ভাই' বা 'রামের ভাই লক্ষ্মণ আর কি'; এত আদর্শবান অনুগত ভাই বাস্তবে দেখা যায় না; রাম পিতৃসত্য পালন করতে বনবাসে গিয়েছিলেন; আর লক্ষ্মণ ভাতৃসত্য রক্ষা করার জন্য জীবন দিয়েছিলেন; সীতার পাতালে প্রবেশের পর রামের সব পার্থিব কাজ শেষ হয়; এইসময় কালপুরুষ ঋষির ছদ্মবেশে রামের কাছে উপস্থিত হয়ে বলেন, 'যদি নিজের মঙ্গল চাও তবে আমার কথা মন দিয়ে শোন;যদি কেউ আমাদের কথা শুনে বা আমাদের একসাথে দেখে তবে সে তোমার বধ্য হবে'; রাম কালপুরুষের সর্তে রাজী হন; লক্ষ্মণকে কালপুরুষের সর্তের কথা জানিয়ে রাম তাঁকে দ্বাররক্ষা করতে বলেন; এইসময় রামের সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে দুর্বাসামুনি রাজদ্বারে উপস্থিত হন; লক্ষ্মণ মুনিকে কিছুসময় অপেক্ষা করতে বলেন; এতে ক্রুদ্ধ হয়ে মুনি সবাইকে অভিশাপ দিতে শুরু করেন; লক্ষ্মণ ভাবলেন সকলের ক্ষতি না হয়ে শুধু তাঁর ক্ষতি হোক; তিনি দুর্বাসাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেন; দুর্বাসা আর অভিশাপ না দিয়ে রামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; দুর্বাসা চলে গেলে লক্ষ্মণ রামকে বলেন, 'দুঃখ করবেন না; প্রতিজ্ঞা পালন করুন'; রাম দুঃখিত মনে ভাইকে বর্জন করেন; অযোধ্যা ছেড়ে সরযূনদী তীরে গিয়ে লক্ষ্মণ যোগমগ্ন হয়ে প্রাণত্যাগ করেন।) |
লক্ষ্মী আসতে কি দুয়ারে আগল/খিল | কেউ উপকার করতে চাইছে অথচ উপকৃত উপকারীর কাজে বাধা দিচ্ছে এমনক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
লক্ষ্মী নিঃসাড়ে আসেন যান | মালক্ষ্মী নিঃশব্দে চলাফেরা করেন; তাঁর আসা যাওয়া জানা যায় না; তিনি আড়ম্বর পছন্দ করেন না; এই বিশ্বাসে লক্ষ্মীপূজায় ঢাকঢোল কাঁসরঘণ্টা বাজে না শুধু শাঁখ বাজে। |
লক্ষ্মীছাড়ার ঝক্কি বড় | ছন্নছাড়ারা বড়বেশি উৎপাত করে। |
লক্ষ্মীছাড়ার দাঁতে বিষ | ছন্নছাড়ারা অত্যন্ত রূঢ়ভাষী হয়। |
লক্ষ্মীর ঘরে কালপেঁচা | সোনার সংসারে কুলাঙ্গার সন্তান। |
লক্ষ্মীর কৃপা হওয়া/দশা/দৃষ্টি পড়া | ভাগ্য অনুকূল হওয়া। |
লক্ষ্মীর পো/মা ভিখ মাগে১ | ভাগ্যদোষে ধনীব্যক্তি দরিদ্রে পরিণত হয়েছে। |
লক্ষ্মীর পো/মা ভিখ মাগে২ | ধনীলোকের কাঙালীপনা; খালি নাই নাই করে। |
লক্ষ্মী হয়ে ভিক্ষা মাগে | অকল্পনীয় ব্যাপার; অসম্ভব অর্থে ব্যবহৃত হয়। |
লক্ষ্য নির্ধারণে কোনো বিপদ নেই, লক্ষ্য ভুলে যাওয়াটাই বিপদ | ছোট বা বড় প্রত্যেকের জীবনে একটা-না-একটা লক্ষ্য থাকা উচিত। |
লঘু পাপে গুরুদণ্ড | সামান্য অপরাধে কঠিন শাস্তি। |
লঙ্কায় গেলেন দরিদ্রা নিয়ে এলেন হরিদ্রা | যে যে অবস্থার লোক সে সেই অবস্থার বস্তুকে মূল্যবান মনে করে; তুলনীয়- 'গরিবের কাছে রাংতাই সোনা'। |
লঙ্কাকাণ্ড | সাংঘাতিক ঝগড়াঝাঁট; হুলুস্থূল ব্যাপার; সমতুল্য- 'রাম রাবণের যুদ্ধ'। |
লঙ্কাভাগ | ঘটনা ঘটার আগেই লাভের হিসাব; কালনেমির লঙকাভাগ দ্রষ্টব্য। |
লঙ্কায় মরল রাবণ, বেহুলা কেঁদে সারা | কষ্টকল্পনা; প্রলাপোক্তি; বক্তব্যের কোন মাথামুণ্ড নেই; তুলনীয়- 'দিনদুপুরে চাঁদ উঠেছে রাত পোহালো তার, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠে নি দুপুর অন্ধকার'; পাঠান্তর- লঙ্কায় মরল রাবণ, বেহুলা হলো রাঁড়'। |
লঙ্কায় সোনা সস্তা১ | একটি দুরবর্তী সমৃদ্ধিশালী দেশ যেখানে নানা লোভের হাতছানি আছে। |
লঙ্কায় সোনা সস্তা২ | যে দেশে যে জিনিস প্রচুর পাওয়া যায় সেই দেশে সেটা সস্তা হয়; মানুষের বিশ্বাস যে রাবণের রাজ্যে সোনার প্রাচুর্য আছে এবং সেটা আনা সম্ভব নয়; এই ভাবার্থেই প্রবাদটি উক্ত হয়। |
লজ্জা, ঘেন্না, ভয়, তিন থাকতে নয় | এই তিন গুণ থাকলে কোন কার্যসিদ্ধি হয় না। |
লাজ নেই যার রাজা হারে তার | নির্লজ্জের সাথ কেউ পেরে ওঠে না। |
লড়ে ফৌজ, নাম সর্দারের- হিন্দী প্রবাদ | খাটে সাধারণ মানুষ, নাম হয় উপরওয়ালার; তাজমহল বানালো কারিগরেরা নাম হল শাজাহানের। |
লবণহীন ব্যঞ্জন আর ভক্তিহীন ভজন, দুই-ই সমান | উভয়ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। |
লবণান্নকটুঞ্চানি বিদাহীনি যাতি চ তু, তদ্দোষং হর্তুমাহারং মধুরেণ সমাপয়েৎ | নুন, টক ও গরম খাবার শেষে খেলে পেটে জ্বালা করে; এই সব দোষ নিবারণের জন্য মিষ্টি খেয়ে খাওয়া শেষ করবে। |
লম্বাকোঁচা ফতোজারি | ভিতরে কিছু নেই বাইরে বাবুগিরি; তুলনীয়- 'বাইরে বাবুয়ানা ভিতরে খড়ের বেনা'। |
ললাটরেখা ন পুনঃ প্রয়াতি | ভাগ্যে লেখা থাকলে দুর্ভোগ পোহাতেই হয়; কপালের লেখা খণ্ডন করার শক্তি কারো নেই; সমতুল্য- 'অদৃষ্ট ছাড়া গতি নাই'; 'ভবি তব্যানাং দ্বারাণি ভবন্তি সর্বত্র'; পাঠান্তর- 'অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল'; পাঠান্তর- 'ললাটের লিখন না হয় খণ্ডন'। |
লাই দিলে কুকুর মাথা ওঠে | প্রশ্রয় পেলে নীচ প্রশ্রয়দাতার অনিষ্ট করে; পাঠান্তর- 'লাই কুত্তার পাতে ভাত'। |
লাউশাকের বালি আর অন্তরের কালি | লাউশাকের বালি হাজারবার ধুলেও যায় না; তেমনি মনের ময়লা কখনো ধোয়া যায় না; তুলনীয়- 'অঙ্গার শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'। |
লাখটাকায় বামুন ভিখারি | কাঙালীপনা করা যজমানী বামুনের প্রবৃত্তি; স্বভাবভিখারি; সমতুল্য- 'স্বভাব যায় না মলে'। |
লাখকথা নইলে বিয়ে হয় না | অনেক কথা চালাচালি না হলে সম্বন্ধ করে বিয়ের কথা পাকা হয় না। |
লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন | অর্থের যথেচ্ছ অপব্যবহার; চাইলেই যার কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায় এমন ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- অতীতে কোলকাতায় গৌরীকান্ত সেন নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি বাস করতেন। তাঁর আদিনিবাস ছিল হুগলির বালিতে (মতান্তরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে); তাঁর আমলে দেনার দায়ে যারা জেলে যেতো তারা দেনা শোধ না হওয়া পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকত; এদের অর্থ সাহায্য করে গৌরী সেন দেনার দায় থেকে মুক্ত করাতেন; দাতা কর্ণ বা দাতা কর্ণসেনের মতই তাঁর নামে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে; ব্যঙ্গার্থে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; অর্থাৎ টাকার প্রয়োজন হলে ব্যক্তি বেঁচে গেল; তাকে আর খরচ বহন করতে হবে না; সব গৌরী সেন বহন করবেন।) |
লাগে তাক না লাগে তুক | ভাগ্যগুণে প্রচেষ্টা সফল হলোে লক্ষ্যবিদ্ধ বা বাহাদুরী হল, তা-না-হলোে অভ্যাস বা আমোদ হল; কপাল ঠুকে কোন কাজে নামার আগে উক্তি; (উৎসকাহিনী- তুক/তুক্ক হল ভোঁতাতীর, যাতে ফলা লাগানো থাকে না; তীরছোঁড়ার শিক্ষাকালে তুক ব্যবহৃত হয়; 'ঢিল ছোঁড়া' গোছের কাজ; লাগলে কাজ সার্থক হল; না লাগলেও অভ্যাস হল।); পাঠান্তর- 'লাগে তুক না লাগে তাক'। |
লাঙলে ভালো খুঁড়লে মাটি, ফসল হয় ফাটাফাটি- খনা | ভালফসল তুলতে হলে জমিতে ভালভাবে লাঙল চালাতে হয়। |
লাজের মাথায় পড়ুক বাজ, সারো গিয়ে নিজের কাজ- খনা | লাজলজ্জা ভুলে গিয়ে সময়মত নিজের কাজ কর; লজ্জা করলে কার্যসিদ্ধি হবে না; সমতুল্য- 'লজ্জা, ঘেন্না, ভয়, তিন থাকতে নয়'। |
লাঠি যার মাটি তার | যে শক্তি ধরে, সে ভোগ করে; সমতুল্য- 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'শক্তি যার দখল তার'; পাঠান্তর- 'লাঠি যার ভৈসা তার' |
লাঠির আগে ভূত ভাগে | লাঠির আঘাতকে সবাই ভয় করে; তুলনীয়- 'মূর্খস্য লাঠ্যৌষধি'। |
লাথ সয় তো বাত সয় না | বাগাড়ম্বরে বিরক্তি; বড়বড় কথা একেবারে সহ্য হয় না। |
লাথি মেরে পায়ে ধরে১ | ইচ্ছা করে অপমান করে পরে ক্ষমা চাওয়া; (অল্প বা সমবয়সী ব্রাহ্মণের গায়ে পা লাগলে 'বিষ্ণবে নমঃ' বলা হয়); তুলনীয়- 'একহাত গলায় একহাত পায়ে'; পাঠান্তর- 'লাথি মেরে বিষ্ণবে নম'।ঃ |
লাথি মেরে পায়ে ধরে২ | দোষ করে ফেলে শুধরানোর ব্যর্থ প্রয়াস; তুলনীয়- 'গোড়া কেটে আগায় জল'। |
লাথি মেরে বিষ্ণবে নমঃ | তুলনীয়- লাথি মেরে পায়ে ধর (অল্প বা সমবয়সী ব্রাহ্মণের গায়ে পা লাগলে 'বিষ্ণবে নমঃ' বলা হয়) |
লাথির ঢেঁকি চড়ে ওঠে না | যে পদাঘাতের বশ সে চড়্কে লঘু মনে করে; যেখানে কঠোর শাসন প্রয়োজন সেখানে মৃদুশাসনে কাজ হয় না। |
লাথির ঢেঁকি মাথায় চড়ে | প্রশ্রয় পেয়ে নগণ্যলোক মাথা উঠতে চায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'লাই পেলে কুকুর মাথায় ওঠে'। |
লাফাবার আগে তাকিয়ে দেখো, লাফিয়ে তাকিও না | পরিণতি বিবেচনা না-করে তড়িঘড়ি কিছু করতে যেয়ো না; তুলনীয়- 'চলত্যেকেন পাদেন, তিষ্ঠতি বুদ্ধিমান'; 'ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না'। |
লাফিয়ে চাঁদ ধরতে চায়১ | সাধ্যের অতীত কাজে অগ্রদর হওয়া; তুলনায় 'কলারভেলায় সাগর পার'; 'খড়মপায়ে গঙ্গা পার'; মুড়া কোদালে পুকুর কাটা' ইত্যাদি। |
লাফিয়ে চাঁদ ধরতে চায়২ | লক্ষ্য সবসময় উঁচু রাখা উচিত; তা-না-হলে বড় হওয়া যায় না। |
লাভ পরং গোবধঃ | প্রাপ্তি কিছুই নেই উলটে প্রচণ্ড বিপত্তি; (উৎসকাহিনী-এক মূর্খরোগীকে এক বৈদ্য গোক্ষুর পাঁচনের বিধান দেন; গোক্ষুর একরকম বৃক্ষফল বুঝতে না পেরে রোগী তার পরিবর্তে গরুর ক্ষুর বুঝে গোহত্যা করে তার ক্ষুর সিদ্ধ করে পাচন বানিয়ে সেবন করে; যথারীতি সে ভাল হয় না; ফলে একদিকে বৈদ্যের বদনাম হয়, অন্যদিকে গোহত্যার পাপের ভাগীদার হতে হয়; এই ঘটনা থেকেই প্রবাদের উৎপত্তি।) |
লাভে লোভ বাড়ে১ | প্রশংসার্থে- লাভ হলোে কাজে উৎসাহ বাড়ে। |
লাভে লোভ বাড়ে২ | নিন্দার্থে- যত লাভ বাড়ে তত লোভ বাড়ে। |
লাভে লোহা বয় | লাভের সম্ভাবনা থাকলে দুরুহ কাজ করতে কঠোর পরিশ্রম করা যায়। |
লাভের অঙ্ক শূন্য | কোন কাজের ফল একেবারেই লাভজনক নয়। |
লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়১ | একদিকে যে লাভ হয় অন্যদিকে সেই পরিমাণ লোকসান হয়; (উৎসকাহিনী-একব্যক্তি অল্প মূলধন নিয়ে একদিন গুড়ের ব্যবসা শুরু করে; গুড় বিক্রি ক’রে আসল উঠে আসার পর কিছু গুড় থেকে যায়; ব্যবসায়ী সেই গুড় নিজে খাবে বলে রেখে দেয়; কিন্তু কয়েকদিন পর সে দেখে সব গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে নিয়েছে; এই ঘটনা থেকেই প্রবাদটির সৃষ্টি হয়।) |
লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়২ | অনায়াস লব্ধ বা অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ অকাজে নষ্ট হয়। |
লালচ বুরি বলা হৈ | লোভ অভিশাপ, মানুষের পরমশত্রু; সবমন্দের উৎস হল লোভ; তুলনীয়-'লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু'। |
লালয়েৎ পঞ্চবর্ষাণি, দশবর্ষাণি তাড়য়েৎ, প্রাপ্তে তু ষোড়শবর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ | পুত্রকে প্রথম পাঁচবছর লালন কর; পরের দশবছর শাসন কর; ষোল পূর্ণ হলে তার সাথে বন্ধুর মত আচরণ কর। |
লিখতে পারে না পো তো সভায় নিয়ে থো | ছেলে লেখাপড়া শিখুক বা না শিখুক তাকে জ্ঞানীদের মাঝে রেখে দেবে; তাতে সে অনেক জ্ঞান লাভ করবে। |
লিখতে লিখতে সরে | ক্রমাগত লিখে গেলে হাতের লেখা ভাল হয়। |
লিখিব পড়িব মরিব দুখে, মৎস মারিব খাইব সুখে | অকর্মার মনস্কামনা; লেখাপড়ায় অমনযোগী ছেলেদের প্রতি শ্লেষবাক্য। |
লুব্ধস্য নশ্যতি যশঃ | লোভীর যশ নাশ হয়। |
লেখনী পুস্তিকা, জায়া পরহস্তং গতা গতা | কলম, বই ও স্ত্রী অপরের হাতে যাওয়া অর্থ চিরকালের জন্য যাওয়া; আগের অবস্থায় সেগুলি ফেরত পাওয়া যায় না। |
লেখা নয় যেন আরশোলার পায়ের ছাপ | কুৎসিত হস্তাক্ষর। |
লেখাপড়া করে যেই গাড়ীঘোড়া চড়ে সেই | কষ্ট করলে ফল আছেই; ছেলেদের লেখাপড়ায় মনযোগী করতে উৎসাহবাক্য। |
লেখিব পড়িব মরিব দুখে মৎস মারিব খাইব সুখে | অর্থ স্পষ্ট; লেখাপড়ায় অমনযোগী ছেলেদের প্রতি শ্লেষোক্তি। |
লেগে থাকলে মেগে খায় না | চেষ্টার ফল বৃথা যায় না; তূলনীয় 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'। |
লেঙ্টার নেই বাটপাড়ের ভয় | লেঙ্টার ডাকাতের হাতে পড়ার ভয় নেই; যার কিছু নাই তার হারাবার কিছু ভয় নাই |
লেজকাটা শেয়াল দোসর খোঁজে | মন্দলোক অন্যদের মন্দ চায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'শনিবারের মড়া দোসর খোঁজে;। |
লেবু কচলালে/চটকালে/রগড়ালে তেতো হয় | একই কথা বারবার বললে তেতো লাগে; কোন কাজের জন্য বারংবার অনুরোধ করলে বিরক্তির উদ্রেক হয়। |
লোকে বলে আছে ভালো শালুক খেতে দাঁত কালো | সবাই ভাবে অন্য খুব সুখে আছে ভালো আছে; আসলে সকলেরই সমান সঙ্গীন অবস্থা। |
লোকে মানে না আপনি মোড়ল১ | অযাচিতভাবে নগণ্যব্যক্তির মাতব্বরি করা; পাঠান্তর- 'গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল'। |
লোকে মানে না আপনি মোড়ল২ | লোকে ভাবে নগণ্য/সাধারাণব্যক্তি, নিজে ভাব ওজনদার/তালেবর ব্যক্তি। |
লোকে কান বন্ধ করার আগে নিজের মুখ বন্ধ কর | অসার কথাবার্তা বলা বন্ধ কর; নিরস কথাবার্তায় মানুষ বিরক্ত হয়। |
লোকে কান খোলার আগে নিজের কান খোল | লোক কি বলতে চায় আগে শোন তারপর তোমার কথা বলবে। |
লোকে বলে আছে ভাল, শালুক খেয়ে দাঁত কালো | ঘরের প্রকৃত অবস্থা না জেনে লোকে বলে বেশ ভাল আছে; আসলে ভাল নেই খুব কষ্টে আছে- এমন অবস্থা বুঝাতে এই উক্তি করা হয়। |
লোকে কারো নিন্দা করলে প্রায় সকলেই তা বিশ্বাস করে | লোকে অপরের নিন্দা শুনতে মুখিয়ে থাকে; পরনিন্দা পরচর্চা বেশ মুখরোচক। |
লোকে কারো প্রশংসা করলে খুব কম লোকই তা বিশ্বাস করে | লোকে অপরের প্রশংসা শুনতে চায় না; লোকের ধারণা কোথাও ভাললোক নেই; |
লোকে যেমন চায় তেমন তার সাথে আচরণ কর, নিজের পছন্দমত করো না | অধিকাংশ লোকের যা চায় সেটাই রীতি বা ধর্ম; ধর্মসুলভ আচরণ কর। |
লোকের কথায় কান দিতে নেই | অজ্ঞানলোকে অবান্তরকথা বলে, যার কোন মূল্য নেই। |
লোকের কথায় চলতে নেই | অজ্ঞানলোকে সঠিক কথা বলে না; লোকের কথায় চললে নিজের বিচারবুদ্ধি যুক্তিবোধ থাকে না। |
লোটা কম্বল না থাকলে সাধু হওয়া যায় না | ভেক না ধরল কেউে ভিখ পাওয়া যায় না; সাশুর পরিচইয় লোটাকম্বলে। |
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু | লোভ মানুষের পরমশত্রু; লোকে লোভে পড়ে নান দুস্কর্মে জড়িয়ে পড়ে; লোভ করলে তা পূরণের জন্য পাপকর্মে লিপ্ত হতে হয়; পাপ করলে ধ্বংস অনিবার্য। - |
লোভী লোকের হাত লম্বা হয় | অভাবীলোক চুরি করতে প্রলুব্ধ হয়। |
লোম বাছতে কম্বল উজাড় | যেখানে মন্দলোকের ভিড় সেখানে ভালোলোক খুঁজে পাওয়া কঠিন; তুলনীয়- 'ঠগ বাছতে গঁ উজাড়'। |
লোহা পাথরে যুদ্ধ করে শোলাদিদি পুড়ে মরে১ | লোহাতে চকমকি পাথর ঠুকে আগুনের ফুলকি তুলে পাটকাঠিতে আগুন ধরানো হয়। |
লোহা পাথরে যুদ্ধ করে শোলাদিদি পুড়ে মরে২ | দুই বলবানের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে দুর্বলের প্রাণ যায়; সমতুল্য- 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়'। |
লোহা লোহাকে কাটে | শক্তলোককে জব্দ করতে শক্তলোকের প্রয়োজন হয়। |
ল্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয় | যার কিছু নাই তার কিছু হারাবারও ভয় নেই। |
শ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
শকুন যতই উপরে উঠুক নজর তার নীচের দিকে | কুব্যক্তির নজর কখনো সু হয় না; নীচব্যক্তির নজর সবসময় নীচুই হয়। |
শকুনের অভিশাপে গরু মরে না | দুষ্টের কামনা পূর্ণ হয় না; দুষ্টের কামনায় সুষ্ট বিনষ্ট হয় না। |
শকুনের দৃষ্টি ভাগাড়ে | নীচুমন উঁচুভাবনা ভাবতে পারে না; যার যা স্বভাব; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মলে'। |
শকুনিমামা | কুমন্ত্রণাদাতা সর্বনাশকর ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- শকুনি ছিলেন গান্ধারীর ভাই এবং কৌরবদের মামা; বুদ্ধিমান, ধূর্ত এবং কপট ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তিনি চিত্রিত; শকুনি দুর্যোধনকে সবসময় সমর্থন করতেন; মামা শকুনির সাথে মিলে দুর্যোধন পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে সবসময় ষড়যন্ত্রে ্লিপ্ত থাকতেন; শকুনির পরামর্শেই দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান; কপট পাশাখেলায় কারসাজি করে শকুনি যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত করেন; ফলে রাজসভায় দ্রৌপদী চরম অপমানিত ও লাঞ্ছিত হন; পাণ্ডবদের বারোবছর বনবাসে ও একবছরের অজ্ঞাতবাসে থাকতে হয়; সেইকারণেই কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ; যুদ্ধে সহদেবের হাতে শকুনি নিহত হন; লোকে কুচক্রীকে বিদ্রূপে 'শকুননিমা' বলে থাকে।) |
শক্তকথায় হাড় ভাঙে না | শক্তকথা শরীরে নয় মর্মে আঘাত করে; শক্তকথা গায়ে মাখতে নেই। |
শক্ত মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায় না | শক্তলোককে কেউ ঘাটায় না; নরমমনের লোক পেলে জোর খাটায়; দুর্বলের কাছে পেশীবল দেখায়, সবলের কাছে ঘেঁসে না। |
শক্তের ভক্ত নরমের যম | সবলের কাছে নত থাকে; দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে; সবলের কাছে বিনীত দুর্বলের কাছে সিংহবিক্রমী; তুলনীয়- 'নরমমাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়'। |
শক্তের তিনকুল মুক্ত | সক্তকে কেউ ঘাঁটাতে চায় না। |
শঙ্খবণিকের করাত আসতে কাটে যেতেও কাটা১ | যার থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যায় না; সমতুল্য- এগুলে রাম, পেছুলে রাবণ; 'জলে কুমির ডাঙায় বাঘ'; পাঠান্তর- 'শাঁখের করাত'। |
শঙ্খবণিকের করাত আসতে কাটে যেতেও কাটা২ | যে দুদিক থেকেই ক্ষতি করে ('সুজনের সাথে আনের পিরিতি কহিতে পরান ফাটে, শঙ্খবণিকের করাত যেমন আসিয়ে যাইতে কাটে।') |
শজনে শাক সকল শাকের হেলা, খোঁজ পর তার টানাটানির বেলা | যখন কোন শাক জোটে না তখন সবাই হেলাফেলার শজনে শাক খায়; অন্যসময়ে যাকে হেয় জ্ঞান করা হয় কিন্তু অসময়ে তার খোঁজ পড়ে না তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়; সমতুল্য- 'ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো'। |
শজনে শাকে নুন জোটে না মটর/মুসুর ডালে ঘি | অবস্থার অতিরিক্ত পাওয়ার আবদার; সঙ্গতিশূন্য ব্যক্তির সঙ্গতিশীল দেখাবার প্রবল ইচ্ছা; সমতুল্য- 'পান্তাভাতে নুন জোটে না গরমভাতে ঘি'। |
শঠ হওয়ার চেয়ে বোকা হওয়া ভাল | বোকা অসৎ হয় না; বোকামি পাপ নয়; অসৎ শঠ অসৎ, শয়তানের প্রতিনিধি; শঠতা পাপ। |
শঠ বন্ধুর সঙ্গে এবং সর্পগৃহে বাস মৃত্যুরই সামিল | শঠ কখনো বন্ধু হয় না; শঠ বন্ধু বিষবৎ পরিত্যজ্য। |
শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ | অসতের সাথে অসততাই হলো সঠিক আচরণ; সমতুল্য- 'চতুরের সাথে চতুরালি'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন'। |
শঠের ভালবাসা মুসলমানের মুরগী পোষা | ঘরের মুরগীর প্রতি মুসলমানের দরদ যেমন কৃত্রিম কপট ভালবাসাও তেমনি কৃত্রিম। |
শঠের মায়া তালের ছায়া | তালগাছের ছায়া মাটিতে পড়ে না; সেইরকম শঠের ভালবাসা বলে কিছু হয় না। তুলনীয়- 'তালপাতার ছায়া মিথ্যা কর মায়া'। |
শতং জীব | তোমার শতবৎসর পরমায়ু হোক; দীর্ঘজীবী হও- আশীর্বাদোক্তি। |
শতম্ বদ মা লিখ | যতখুশি বল, কিন্তু লিখো না; লিখে কোন কাজের প্রমাণ রেখো না; গোপন কথা গোপন রাখাই যুক্তিযুক্ত। |
শতমারী ভবেৎ বৈদ্যঃ, সহস্রমারী চিকিৎসকঃ | শতরোগী মারলে হাতুড়েবৈদ্য হয় আর হাজারোগী মারলে নামীচিকিৎসক বলে পরিচিত হয়। |
শতমূর্খ একত্র হলেও একজন বুদ্ধিমানের কাজ করতে পারে না | একশ শূন্যের যোগফল এক হয় না শূন্যই হয়। |
শতমূর্খ পুত্র থেকে এক গুণীপুত্র ভাল | নির্গুণের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। |
শত্রু দিয়ে শত্রুনাশ | কাটা দিয়ে কাঁটা তোলাই প্রকৃত পথ। |
শত্রু বন্ধু সেজে এলেও তার পরামর্শ হিতকর হয় না | শত্রু শত্রুই থাকে বন্ধু হয় না; শত্রুর প্রশংসায় ভুলতে নেই; শত্রুর প্রশংসা বিপজ্জনক। |
শত্রু বলবান হলে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয় | শক্তিতে না কুলালে বুদ্ধিবলের সাহায্য নিতে হয়। |
শত্রু মরে গেলেও আনন্দ করার কারণ নেই | শত্রুসৃষ্টির কারণগুলি যতক্ষণ বর্তমান ততক্ষণ শত্রু মরেনি; সুতরাং আনন্দের কোন অবকাশ নেই। |
শত্রুর গুণগুলি ব্যক্ত করবে | গুণ মঙ্গলময়; গুণ সবজায়গা থেকে গ্রহণীয়' সম্পর্কীত উক্তি- 'গুরুর দোষগুলি ব্যক্ত করবে'। |
শত্রুর পতনে আনন্দ করো না | পতন হলেও শত্রু কিন্তু মরে নি; কথায় বলে 'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'। |
শত্রুর মুখে ছাই | কুদৃষ্টি এড়ানোর উক্তি; অনিষ্টকারী শত্রুর ইচ্ছা যেন অপূর্ণ থাকে সেই প্রার্থনা; মূলতঃ সন্তানের প্রতি কুদৃষ্টিপাতকারী বা তার অমঙ্গলকামীর মৃত্যু কামনা করে সন্তানের স্বাস্থ্য কামনা করার মেয়েলি দিব্বি কাটা। |
শত্রুর শত্রু তোমার মিত্র | শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে শত্রুর শত্রুর সাহায্য কাজে লাগে; তুলনীয়- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'। |
শত্রুর শেষ রাখতে নাই | বিনাশ না হলে শত্রুর পুনরুত্থান হয়; সমতুল্য-'আগুনের শেষ রাখতে নেই'; 'ঋণের শেষ রাখতে নেই'; 'রোগের শেষ রাখতে নেই'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'একজন বন্ধু থাকার চেয়ে একজন শত্রু থাকা ভাল'। |
শত্রুর স্মিতহাসি থেকে বন্ধুর তিরস্কার/ভ্রুকুটি অনেক ভাল | প্রকৃতবন্ধু তোষামুদি করবে না পরন্তু দোষত্রুটি ধরিয়ে দেবে; ফলে চরিত্র সংশোধন করা যায়; সময়মত সতর্ক হওয়া যায়। |
শত্রোরপি গুণা বাচ্যা দোষা বাচ্যা গুরোরপি | শত্রূর গুণগুলি ব্যক্ত করবে এবং গুরুর দোষগুলিও ব্যন্ত করবে; সম্পর্কীত সংস্কৃত প্রবাদ- ‘রোষপরীতেন গুরুণা জায়তি গুণঃ'। |
শনিবারের মড়া দোসর খোঁজে/চায়১ | প্রবাদে বলে শনিবারে কেউ মরলে সে সঙ্গী নিয়ে যেতে চায় অর্থাৎ আরও একজম মরুক সেই কামনাই সে করে; (শাস্ত্রমতে শনিবারে মরলে যে দোষ পায় তা অন্যের মৃত্যুর কারণ হয়)। |
শনিবারের মড়া দোসর খোঁজে/চায়২ | বিপন্নলোক অন্যকে বিপদে ফেলতে চায়; অসৎব্যক্তি সৎলোককে নিজের দলে টানতে চায়। |
শনির দশা/দৃষ্টি হলে পোড়া শোল পালায় | ভাগ্য খারাপ হলে অনেক অসম্ভব ঘটনা দুরদৃষ্টকে আরও বিড়ম্বিত করতে পারে; (উৎসকাহিনী গল্পে আছে শ্রীবৎসরাজা শনির কোপে পড়ে রাজ্যপাট হারিয়ে রাণীকে নিয়ে বনবাসী হয়েছিলেন; একদিন বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি একটা শোলমাছ পান; সেটা পুড়িয়ে নিয়ে জলাশিয়ে ধুতে গেলে শনির কৌশলে মাছটা প্রাণ ফিরে পায় এবং রাজার হাত থেকে লাফিয়ে গভীর জলে তলিয়ে যায়।) |
শনি সাত মঙ্গল তিন এর সব দিন দিন | খনার গণনানুযায়ী বর্ষাকাল বাদ দিয়ে অন্য মাসগুলিতে বৃষ্টি- শনিবারে শুরু হলে সাতদিন, মঙ্গলবারে শুরু হলে তিনদিন ধরে চলে; এবং বাকীদিনগুলিতে একদিনমাত্র স্থায়ী হয়। |
শনৈঃ পর্বতলঙ্ঘনম্ | ধীরগতিত পর্বত লঙ্ঘন করতে হয়; অল্প অল্প চলতে চলতে একসময় পর্বত অতিক্রম করা যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ধীরগতির জল পাথর কাটে'। |
শনৈঃ শনৈঃ চরৈবেতি | ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে চল। |
শমনদমন রাবণরাজা, রাবণদমন রাম | ঐশ্বর্য,প্রতাপ, বাহুবল ইত্যাদিতে রাবণ অদ্বিতীয় ছিলেন; তিনি যমকে পর্যন্ত পরাজিত করেছিলেন; এই প্রতাপই শেষপর্যন্ত তাঁর কাল হয়; সীতাহরণ করে তিনি নিজের পতন ডেকে আনেন এবং রামের হাতে নিহত হন; তার থেকে নানা প্রবাদের সৃষ্টি হয়, যেমন- 'অতিদর্পে হত লঙ্কা'; 'শমনদমন রাবণ রাজা, রাবণদমন রাম'; সোনার লঙ্কা ছারখার' ইত্যাদি; সুতরাং কেউ অপরাজেয় নয়; সমতুল্য- 'তিমি থাকলে তিমিঙ্গিল আছে'; 'ননদেরও ননদ আছে'; বাপেরও বাপ আছে' ইত্যাদি। |
শয়তান এসে কড়া নাড়লে দরজা খুলো না | মন্দলোকের সংস্পর্শে কখনো এসো/থেকো না। |
শয়তান কখনো সাধু হয় না | মন্দ কখনো ভালো হয় না; কথায় বলে- 'একদিন শয়তান তো চিরদিন শয়তান'। |
শয়তান সবসময় তোমার পিছনেই ঘোরাফেরা করে | কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি ছয়রিপুরূপ শয়তান মনের মধ্যে সবসময় আনাগোনা করে, ঘোরাফেরা করে। |
শয়তান ততটা কালো নয় যতটা ভাবা হয়১ | শয়তানেরও নানা ভালোদিক আছে; শয়তান অলস মস্তিস্ককে সচল করে (অলস মস্তিস্ক শতানের বাসা।); শয়তান মানুষকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইয়ে চেতনাসম্পন্ন করেছে; শয়তানের পছন্দ ক্ষিপ্রতা ইত্যাদি। |
শয়তান ততটা কালো নয় যতটা ভাবা হয়২ | দোষেগুণে মানুষ; যতটা ভাবা হয় একটা মন্দলোক ততটা মন্দ নয়। |
শয়তানের পছন্দ ক্ষিপ্রতা, করুণাময় ঈশ্বর সবসময় ধীর১ | শয়তান ক্ষতি করতে সবসময় মুখিয়ে থাকে, মঙ্গলময় ঈশ্বরের আশীর্বাদ বৃষ্টিধারার মত ধীরেধীরে বর্ষিত হয়। |
শয়তানের পছন্দ ক্ষিপ্রতা, করুণাময় ঈশ্বর সবসময় ধীর২ | মন্দলোক চিন্তা ভাবনা করে না; জ্ঞানী চিন্তাভাবনা করে ধীরেধীরে কাজ করে। |
শয়তানের মায়া বোঝা ভার | শয়তান যে কোন্ ছলে এসে মানুষকে প্রলুব্ধ করে তা বোঝা যায় না। |
শরীরং ব্যাধিমন্দিরম | দেহ সকলব্যাধির আধার; শরীর সকল রোগের আশ্রয়স্থল, বাসা। |
শরীরপাত কিংবা কর্তব্যসাধন | প্রাণপাত করে করণীয় কাজ সম্পন্ন করবো নতুবা মরবো; তুলনীয়- 'মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীরপাতন'। |
শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম | শরীর রক্ষা করাই হলো প্রথম ধর্মসাধনা; শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে করা যায় না। |
শরীরকে আরামে রেখে জ্ঞানার্জন হয় না | শরীরপাত করে জ্ঞানার্জন করতে হয সাধনার কণ সহজ পদ্ধতি নেই। |
শরীরের নাম মহাশয় যা সহাইবে তাই সয়১ | শারীরিক ক্ষমতা তার চেষ্টার উপর নির্ভরশীল। |
শরীরের নাম মহাশয় যা সহাইবে তাই সয়২ | সদাশয়ব্যক্তিরা যেমন সব উৎপাত সহ্য করেন তেমনি শরীরও সব কষ্ট সহ্য করে; আয়েস করলে আয়েসী, কষ্ট করলে কষ্টসহিষ্ণু এবং বিলাস করলে বিলাসী হয়। |
শ ষ স হয়েছে হ ক্ষ দেখবো | তিন/বারবার অত্যাচার সহ্য করেছি; এবার তার শেষ/পরিণাম দেখবো। |
শসা খেয়ে জলকে টান তেমনি ভাইয়ের বোনকে টান | শসা খেয়ে জল খেতে ইচ্ছা করে না; তেমনি ভাই বোনকে পছন্দ করে না; বিপরীতে ;চিনি খেয়ে জলকে টান তেমনি বোনের ভাইকে টান'। |
শাঁখের করাত | উভয়সঙ্কট; যে দুদিক থেকেই ক্ষতি করে; পাঠান্তর- 'শঙ্খবনিকের করাত'। |
শাঁখের করাত আসতেও কাটে যেতেও কাটে | সামনে পিছনে- দুইদিকেই বিপদ; সমতুল্য- 'এগুলে রাম, পেছুলে রাবণ'; 'এগুলে সর্বনাশ পিছুলে নির্বংশ'; 'জলে কুমির ডাঙায় বাঘ'। |
শাক অম্বল পান্তা, তিন ওষুধের হন্তা | বৈদ্যের বিধান অনুসারে ওষুধ খেলে এই তিনটি খাবার খাওয়া নেই। |
শাকচোরকে শুলে | অল্পদোষে কঠিন শাস্তি; সমতুল্য- 'লঘুপাপে গুরুদণ্ড'। |
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা | খারাপ কাজ গোপন করার আপ্রাণ চেষ্টা; ধোপে টিকবে না এমন কৌশল বা ছুঁতায় অপরাধ গোপনের ব্যর্থচেষ্টা; (উৎসকাহিনী- এক বিধবামহিলা লুকিয়ে মাছভাত খাচ্ছিল; এমনসময় ঘর কেউ ঢুকে পডলে বিধবা তাড়াতাড়ি থালার শাকে মাছ ঢাকা দিয়ে শাকভাত খেতে শুরু করে; কিছুক্ষণের মধ্যে শাক শেষ হয়ে গেলে মাছ বেরিয়ে পড়ে; ফলে বিধবার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যায়।) |
শাককে শাক পাছায় মূলো | মূলো কিনলে শাকও পাওয়া যায়, সব্জীও পাওয়া যায়; এককাজে দুইদিকে কাজ হয়- অপকারও হয় বা উপকারও হয়। |
শানকির (ছোট থালা) পর বজ্রাঘাত | সামান্যকে সংহার করতে বিরাট আঘাত; সমতুল্য-'ব্যাঙ মারতে তীরধনুক'; 'মশা মারতে কামান দাগা'। |
শান্ত ও স্থির দাঁড়িয়ে থাকা গরুর দুধ দোহানো সহজ | শান্ত ও স্থির থাকা সোজা নয়- অনেক মানসিক শক্তি লাগে। |
শান্তজল ধীরগামী | শান্প্রকৃতির লোক উছল হয় না; জ্ঞানীব্যক্তির অনুভূতি, ভাবনা ইত্যাদির বহিঃপ্রকাশ নেই; পাঠান্তর- 'শান্তনদী ধীরে বহে'। |
শান্তনদী দক্ষ মাঝি তৈরী করে না | বিক্ষুব্ধ জীবনে লড়াইয়ের মধ্যে না পড়লে অভিজ্ঞতা অর্জন হয় না। |
শান্ত বিবেক বজ্রপাতে ঘুমায় | বিবেস্ক পরিষ্কার থাকলে মন বিক্ষুব্ধ হয় না; মন বিক্ষুব্ধ না হলোে ঘুমের ব্যাঘাত হয় না। |
শান্তি বাইরে খুঁজতে যেও না | শান্তি অন্তরের অনুভূতি; নিজে শান্ত না হলে কোথাও শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। |
শাপে বর | অনিষ্টের মধ্যে ইষ্টলাভ; (উৎসকাহিনী- একদিন রাজা দশরথ মৃগয়ার বেরিয়েছিলেন; বনের প্রান্তে এক অন্ধমুনির আশ্রম ছিল; দশরথ হরিণভেবে ভুল করে মুনির পুত্রকে তীরবিদ্ধ করেন; পুত্রশোকাতুর মুনিও তৎক্ষণাৎ মারা যান; মৃত্যুর আগে তিনি দশরথকে এই বলে অভিশাপ দেন- দশরথের যেন তাঁর মর পুত্রশোকে মৃত্যু হয়; রাজা দশরথ অপুত্রক ছিলেন; পুত্র না থাকলে পুত্রশোকে কিভাবে মৃত্যু হয়? ফলে মুনির অভিশাপ প্রকারান্তরে দশরথের পক্ষে শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছিল); বিপরীত প্রবাদ- 'হিতে বিপরীত'। |
শামুক দিয়ে পুকুর কাটা | ক্ষুদ্র উপায়ে বিরাট কাজ করার চেষ্টা; সমতুল্য়- 'কলার ভেলায় সাগর পার', 'খড়মপায়ে গঙ্গাপার' ঝিনুজ দিয়ে সাগর সেঁচা ইত্যাদি। |
শালগ্রাম পোড়ায়ে খেয়ে নুড়িপাথর দেখে ভয় | অতীতে বহু দুস্কর্ম করার পর বুড়োবয়সে এসে সামান্য দোষে পাপের ভয়। |
শালগ্রামশিলার শোয়া বসা সমান | গোল নুড়ী পাথরের আকারের শালগ্রামশিলা কে বসালেও যেমন দেখায় শোয়ালে তেমন দেখায় লক্ষণায় অবস্থার পরিবর্তনে যার কোন পরিবর্তন হয় নি; আগে যে দুরবস্থা ছিল, এখনও সেই একই দুরবস্থা আছে; যাদের কষ্টের সীমা-পরিসীমা ঙেই তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; তুলনীয়- 'অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত্রি'। |
শালুক চিনেছে গোপালঠাকুর | যে যেমন গুণের অধিিকারী তার সেইরকম পছন্দ; সমতুল্য- 'রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু'; 'রতনে রতন চেনে, রসিকে চেনে রসিকজনা'। |
শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে | শাসনে সোহাগের মিশ্রণ না থাকলে সুশাসন হয় না। |
শাসন পালটায় শোষণ পালটায় না | ক্ষমতার স্বাদ পেলে ভালমানুষও উৎপীড়ক হয়; তুলনীয়- ' যে যন্ত্র রক্ত খায় সে রাম চালালেও খাবে রাবণ চালালেও খাবে'; ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’। |
শাস্তি না দিলে শাসন হয় না | শাসনবিনা অনুশাসন হয় না; তাড়না না থাকলে শিশুর স্বভাব নষ্ট হয়; তুলনীয়- 'আদরে বাঁদর বনে'। |
শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে/পালে | বয়স্কলোকের ছেলেদের সাথে মেলামেশা করা; বয়স্কদের ছেলেমানুষী করে; তুলনীয়- 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'। |
শিকল কাটা টিয়া/পাখী পোষ মানে না১ | অবাধ্য বেয়াড়াছেলেকে বাগে আনা যায় না; উচ্ছৃঙ্খলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায় না। |
শিকল কাটা টিয়া/পাখী পোষ মানে না২ | যে একবার স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে সে আর বশ্যতা স্বীকার করে না। |
শিকারী বিড়ালের গোঁফ দেখে চেনা যায় | কাজের লোকের দক্ষতা তার আচার-আচরণে, চলনবলনে বোঝা যায়। |
শিখণ্ডী খাড়া করা | কাউকে আড়াল করে অন্যায় কাজ করা। |
শিখলি কোথা? না ঠেকলুম/দেখলুম যেথা | বুদ্ধিমান দেখে শিখে নিতে পারে; আনপড় ঠেকলে পরে শেখে। |
শিখানো কথা নিয়ে দরবারে যায়, কথা ফুরালে কী কয়? | কেবল শিখানো বুলি দিয়ে কোন কাজ উদ্ধার হয় না; তোতাবুলিতে বেশদিন চলে না; পাঠান্তর-'শিখানো কথায় কয়দিন চলে?' |
শিঙে হারিয়ে কাঁকুড়ে ফুঁ | আসল কাজ নষ্ট করে বাজে কাজে ফললাভের চেষ্টা। |
শিব গড়তে বানর গড়া | ভালকাজ করতে গিয়ে মন্দকাজ করে ফেলা। |
শিবরক্ষক বন, বনরক্ষক শিব | পরস্পরের সাহায্যব্যতিরেকে বাঁচা যায় না। |
শিবের কন্যা শিবকে দান | গাঁজাখোর শ্বশুরের গাঁজাখোর জামাই; মনিকাঞ্চন যোগ। |
শিবের সঙ্গে খোঁজ নাই গাজনের ঘটা ভারী | আসল কাজে নজর নেই আড়ম্বর বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'আসরে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া'। |
শিয়াল একফাঁদে দুবার ধরা পড়ে না | চালাকব্যক্তি একই ভুল দুবার করে না; সমতুল্য- 'নেড়া দুবার বেলতলায় যায় না'। |
শিয়াল তার চামড়া পালটায় অভ্যাস পালটায় না | শঠ কৌশল পরিবর্তন করে অভ্যাস বদলায় না। |
শিয়ালের/শেয়ালের কাছে মুর্গী বর্গা | চোর/ডাকাত/বাটপাড়ের কাছে সম্পত্তি গচ্ছিত রাখা; চোরকে চৌকিদারের দায়িত্ব দেওয়া; আহাম্মকী কাজ; সমতুল্য- 'শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার'। |
শিয়ালের বেটা সিংহ হয় না | আপনপ্রকৃতিকে কেউ অতিক্রম করে না; তুলনীয়- 'শুয়োর বড় হলেও হাতি হয় না'। |
শিয়ালের যুক্তি | কোন কাজ করতে খালি সিদ্ধান্ত করা এবং সেই সিদ্ধান্ত মত কাজ না করা; (গল্পে আছে- ছোট একগর্তে এক শিয়াল বাস করত; রাতে পেটপুরে খেয়ে যখন সে বাসায় ফিরত স্ফীত উদরের জন্য গর্তে ঢুকতে কষ্ট হত; তখন ভাবত কাল সকালে গর্তটা সে বড় করবে; সকালে ক্ষীণ উদরের জন্য গর্ত থেকে বেরুতে কষ্ট হত না; ফলে গর্ত বড় করার কথা ভুলে যেত; এতে তার গর্ত আর বড় করা হয় না।) |
শিরনি দেখে এগোয় কোঁৎকা দেখে পেছোয় | লাভের আশায় এগিয়ে যায়, পরিশ্রমের ভয়ে পিছিয়ে যায়। |
শিরঃ নাস্তি শিরোপীড়া | মাথা নেই তার মাথাব্যথা; পাঠান্তর- 'শিরো নাস্তি শিরোব্যথা'। |
শিরে হলোে সর্পাঘাত, তাগা বাঁধবে কোথায়? | বিপদ চরম অবস্থায় পৌঁছালে প্রতিকারের আর কোন উপায় থাকে না। |
শিলা হলেই শালগ্রাম হয় না | বিশেষ গুণ না থাকলে বিশিষ্টতা অর্জন করা যায় না। |
শিশু সব মানুষের পিতা | প্রাপ্তবয়সে আমরা যে আচরণ করি তা শৈশবে অর্জিত হয়। |
শিশুরা এমন হাজারটা প্রশ্ন করতে পারে যার উত্তর সবচেয়ে জ্ঞানীলোকও জানে না | শিশুদের মনের গতিপ্রকৃতি মনোবিজ্ঞানীরাও ধরতে পারে না। |
শিশুরা বলে তারা কি করতে পারে | অর্থ স্পষ্ট; বয়স্করা বল-ে তারা কি ভাবে; বৃদ্ধরা বলে- তারা কি দেখেছে ও শুনেছে। |
শিশুর বল কান্না | কান্না দিয়েই শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। |
শীতকাল তোমায় জিজ্ঞাসা করবে সারা গ্রীস্ম কি করেছিলে | সময়ের কাজ সময়ে না করলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। |
শীলং সর্বত্র ভূষণং | সর্বত্র চরিত্র লোকের ভূষণহিসাবে বিবেচিত হয়। |
শীলং হি বিদুষাং ভুষণম | সদব্যক্তিরা সর্বত্র অলঙ্কারস্বরূপ বিবেচিত হন; চরিত্রই পণ্ডিতগণের অলঙ্কারস্বরূপ। |
শুঁটকির নাওয়ের (নৌকার) বিলাই (বিড়াল) চৌকিদার | শঠের কাছে সম্পত্তি গচ্ছিত রাখা; চোরকে চৌকিদারের দায়িত্ব দেওয়া; চোরকে চুরি করতে না বলা; সমতুল্য- 'শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা'; 'যে রক্ষক সেই ভক্ষক'; পাঠান্তর- 'শুঁটকির বাজারে বিল্লাই চৌকিদার'। |
শুঁড়ির কান নেই১ | মাতালের কটু কথা শুনতে শুনতে আর তত কটু বোধ হয় না; সমতুল্য- মুচির নাক নেই। |
শুঁড়ির কান নেই২ | এড়িয়ে যাবার বা না শোনার বাহানা। |
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল১ | মাতালদের সঙ্গে শুঁড়ির কারবার; শুঁড়ি সবসময় মাতালদের নিয়ে থাকে; সুতরাং তার যা কিছু ঘটে মাতালরাই সব দেখে এবং তারাই শুঁড়ির হয়ে মামলায় সাক্ষ্য দেয়। |
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল২ | দুষ্টের সহায়ক দুষ্ট লোকই হয়; সে পক্ষ টেনে কথা বলে; স্বার্থদুষ্ট সাক্ষী; সমতুল্য- 'চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা'। |
শুঁড়িরা মদ খায় না | যে নিয়ত যে কাজ করে তার প্রতি তার আশক্তি কম থাকে; সমতুল্য- 'ময়রা মিষ্টি খায় না'। |
শুকনো আদার ঝাঁঝ মরে না১ | দ্রব্য তার নিজগুণ হারায় না। |
শুকনো আদার ঝাঁঝ মরে না১ | মানুষ তার চরিত্র বদলায় না; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মলে, ইল্লত যায় না ধুলে'। |
শুকনা কাঠ ভাঙে তবু নোয় না | মূর্খ নিজের সর্বনাশ করে তবু গোঁ ছাড়ে না; তুলনীয়-'ভাঙে তবু মচকায় না'। |
শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজে না | শুধু মুখের কথায় কাজ হয় না, পরিশ্রম করতে হয় অথবা অর্থ ব্যয় করতে হয়; পাঠান্তর- শুধু কথায় চিঁড়ে ভিজে না। |
শুকনো কলসী বাজে বেশি | মূর্খেরা বেশি কথা বলে। |
শুকনো কাঠে/গাছে জলসেঁচা | নষ্ট কাজের জন্য বৃথা চেষ্টা। |
শুকনো কাঠে ব্রহ্মশাপ১ | কষ্টের উপর কষ্ট; সমতুল্য- 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'; পাঠান্তর- 'শুস্ককাষ্ঠে ব্রহ্মশাপ'। |
শুকনো কাঠে ব্রহ্মশাপ২ | মৃতব্যক্তিকে কোন অভিশাপ লাগে না। |
শুকনো ঘায় আকন্দের আঠা১ | ঘা শুকিয়ে গেছে আবার আঠা লাগিয়ে ঘা করা। |
শুকনো ঘায়ে আকন্দের আঠা২ | বুদ্ধিদোষে পুরানো বিপদ ডেকে আনা। |
শুকনো ডাঙায় আছাড় খাওয়া | যেখানে বিপদের আশঙ্কা ছিল না সেখানে বিপদ এসে হাজির; পাঠান্তর- 'শুকনো ডাঙায় ভরাডুবি'। |
শুকনো জমি জল শুষে নেয় | অভাবের সংসারে কিছু সঞ্চয় হয় না। |
শুকনো পাছায় আকন্দের আঠা | পাছার ব্যাথা মরে গেছে; সুতরাং ওষুধের আর কোন প্রয়োজন নেই। |
শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না | কেবল বাগাড়ম্বরে কাজ হয় না, কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয়; তুলনীয়- 'শুধু মেঘে মাটি ভেজে না'। |
শুধু কানাই নয়, দাদা বলাই | যেখানে একজন হলোেই চলে সেখানে দুজন হাজির; পাঠান্তর- শুধু গৌর নয়, সঙ্গে হরি'। |
শুধু গৌর নয় গৌরহরি সমাদ্দার | কোন হেলাফেলার লোক নয়; যথেষ্ট ওজনদার ব্যক্তি। |
শুধু টাকায় যে বড়লোক হতে চায় সে নিতান্তই গরিব | অর্থের মানদণ্ডে মহত্বের বিচার হয় না। |
শুধু পলতা পায় না ধনে পলতা চায় | একেই কিছু জোটে না সঙ্গে অতিরিক্ত চায়; সমতুল্য- 'একে মা রাঁধে না তায় তপ্ত আর পান্তা'; 'শজনে শাকে নুন জোটে না মটর ডালে ঘি'। |
শুধু বিজ্ঞতম এবং মহামূর্খরাই পরিবর্তিত হয় না | উভয়েই একবগগা ও গোঁড়া হয়; উভয়েই আচরণে পক্ষপাতের আতিশয্য থাকে। |
শুধু মেঘে মাটি ভেজে না | কেবল বাগাড়ম্বরে কাজ হয় না, কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয়; সমতুল্য- 'শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না'।' |
শুধু হাত মুখে ওঠে না | হাতে খাবার না থাকলে হাত মুখের কাছে যায় না; বিনা পারিশ্রমিকে কাজ হয় না; সমতুল্য- 'শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না'। |
শুনলে সাড়া তো নিলে পাড়া১ | একটু গোলমালের আভাস পেতেই পাড়াশুদ্ধ লোক ঝেঁটিয়ে সেখানে হাজির। |
শুনলে সাড়া তো নিলে/ভাঙলে পাড়২ | গোলমালের একটু গন্ধ পেলেই দুর্জনলোকেরা পাড়াময় রাষ্ট্র করে বেড়ায়। |
শুভ সূচনা হলে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয় | পরিকল্পনাতে অর্ধেক সময় ব্যয় হয়। |
শুভংকরের ফাঁকি | আসল কথা গোপন রেখে ছলনা করা। |
শুভস্য শীঘ্রম্ অশুভস্য কালহরণম্ | শুভকাজে বিলম্ব করা অনুচিত; অশুভ কাজে কালহরণ করা উচিত; অন্যথায় ফল বিষম হতে পারে; (উৎসকাহিনী- স্বশরীরে স্বর্গে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি গড়ার মত একটি শুভকাজ করবেন বলে রাবণ মনস্থ করেছিলেন; কাল করব বলে ফেলে রাখায় সেটা আর হয়ে ওঠেনি; এই শুভকাজটা শীঘ্র করা উচিত ছিল তাহ’লে সকলের মঙ্গল হ’ত; অপরপক্ষে সীতাহরণের মত অশুভকাজ রাবণ পরে করলেও পারতেন; কিন্তু কালবিলম্ব না ক’রে সেই কাজ করার দোষে সোনার লঙ্কা ছারখার হয়।) |
শুয়ে শুয়ে লেজ নাড়া | আলস্যে সময় নষ্ট করা। |
শুয়োর বড় হলেও হাতি হয়না | আপন প্রকৃতি অতিক্রম করার সাধ্য কারো নেই; সমতুল্য- ;শিয়ালের বেটা সিংহ হোয় না'। |
শুয়োর যদি কথা বলতে পারত, তবে ঈশ্বর শুয়োরের মত দেখতে হতো | ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেন নি, মানুষই ঈশ্বর সৃষ্টি করেছে; ঈশ্বর মানুষের কল্পনা। |
শুয়োরে চেনে কচু আর ঘেচু | মন্দলোক মন্দজিনিস ভাল চেনে, ভালজিনিস চেনে না; সমতুল্য- 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই'; 'শালুক চেনে গোপাল ঠাকুর'। |
শুয়োরের কপালে গঙ্গামাটির ফোঁটা১ | অপবিত্রকে পবিত্র করার বৃথা চেষ্টা। |
শুয়োরের কপালে গঙ্গামাটির ফোঁটা২ | মন্দলোকের ভালো সাজার অপচেষ্টা। |
শুয়োরের কপালে সিঁদুর লাগে না | মন্দলোক কখনো ভালো হয় না। |
শুয়োরের মুখে শাঁকালু/শাঁখালু | বিসদৃশ ব্যাপার; তুলনীয়- 'খাঁদা নাকে নথ'; 'গোদাপায়ে মল'। |
শুরু খারাপ হলে শেষও খারাপ হয় | খারাপ শুরু পরবর্তী কাজকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে; ফলে কোন কাজ খারাপভাবে শুরু করলে তা শেষ করতে অনেক বেশি সময় লাগ। |
শুরু ভাল হলে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন | পরিকল্পনা করে এগুলে সুন্দরভাবে কাজ সুসম্পন্ন হয়; তুলনীয়- 'শুরু ভাল হলে শেষ ভালো হয়'। |
শুরুতে সবকিছু কঠিন মনে হয় | অচেনাকে চিনতে কিছুটা সময় লাগে; তুলনীয়- অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করে'। |
শুস্ককাষ্ঠে ব্রহ্মশাপ | শুকনো কাঠে ব্রহ্মশাপ দ্রষ্টব্য |
শুষ্কং মাংসং স্ত্রিয়ো বৃদ্ধা বালার্কস্তরুণং দধি। প্রভাতে মৈথুনং নিদ্রা সদ্যঃ প্রাণহরাণি ষট্ ।। (চাণক্য) | শুকনো মাংস খাওয়া, বৃদ্ধা স্ত্রীর সঙ্গে মিলন, শরতের রোদ গায়ে লাগানো, সদ্য পাতা দই (যে দই জমেনি) খাওয়া, ভোরে স্ত্রীসঙ্গম, ভোরে ঘুমানো- এই ছয়টি সদ্যপ্রাণঘাতক। |
শূন্য কলসী, শুকনা না (নৌকা), শুকনা ডালে ডাকে কাক, যদি দেখ মাকুন্দ চোপা, এক পা না যেও বাপ- খনা | যদি যাত্রাকালে শূন্য কলসী, শুকনা নৌকা, শুকনা ডালে কাক ডাকতে দেখো কিংবা দাড়ি গোফহীন মাকুন্দ লোককে দেখতে পাও, তাহলে যাত্রা করা উচিত নয়। (যাত্রাকালীন অশুভ লক্ষ্মণ) |
শূন্যকলসি শুকনা না | ফাঁপালোক বেশি বাজে কথা বলে। |
শূন্যকলসি বাজে বেশি | ফাঁপালোকের আওয়াজ বেশি; সমতুল্য- 'ফাঁকাঢেঁকির শব্দ বড়' |
শূন্য থেকে কিছুই আসে না | ফাঁকি দিয়ে কিছু লাভ হয় না; পরিশ্রম না করলে ফললাভ হয় না। |
শেওড়াগাছের পেত্নী | অতি কুরূপা রমণী |
শেখার কোন বয়স নেই | বৃদ্ধবয়সেও শেক্ষা যায়; মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিন শেখে। |
শেয়ানা ঘুঘুর ছা ফাঁদে দেয় না পা | চতুর লোককে সহাজে আয়ত্বে আনা যায় না। |
শেয়ানে ঠকলে বাপকেও বলে না | চতুর লোক নিজের ঠকার কথা অতি গোপন রাখে; সমতুল্য- 'বঞ্চনঞ্চাপমানঞ্চ মতিমান ন প্রকাশয়েৎ'। |
শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি১ | চতুরের সাথে চতুরালি; দুই চতুর পরস্পরকে ঠকাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কোলাকুলি করে। |
শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি২ | বাদী ও প্রতিবাদী উভয়ই বুদ্ধিমান। |
শেষ খড়কাঠি উটের পিঠ ভাঙে | সবকিছুরই সহ্যের একটা সীমা আছে; সাধ্যাতীত কিছু করা য্যয় না। |
শেষ রক্ষাই আসল রক্ষা১ | সকল কাজ সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পন্ন করা উচিত; তুলনীয়- 'মধুরেণ সমাপয়েৎ'; 'সব ভাল যার শেষ ভাল'; পাঠান্তর- শেষ ভাল যার, সব ভাল তার'। |
শেষ রক্ষাই আসল রক্ষা২ | সব খারাপ হয়েও যার শেষ ভাল হয় সেই সফল হয়। |
শেষ সুখই সুখ | আগে দুঃখ পরে সুখ হলে সেই সুখ বড় আনন্দদায়ক হয়; আগে সুখ পরে দুঃখ হলে সেই দুঃখ বড় কষ্টকর হয়। |
শৈলে শৈলে ন মাণিক্যং মৌক্তিকং ন গজে গজে, সাধবো ন হি সর্বত্র চন্দনো ন বনে বনে | সব পর্বতে মণিমাণিক্য মেলে না; সব হাতীতে মুক্তা হয় না; সজ্জনপুরুষ সর্বত্র দেখা পাওয়া যায় না; সব বনে চন্দন থাকে না। |
শোকো নাশয়তে ধৈর্য্যং, শোকো নাশয়তে শ্রুতম্ শোকো নাশয়তে সর্বং নাস্তি শোকসম রিপুঃ | শোক ধৈর্য নাশ করে; শোক বিদ্যা নাশ করে; শোক সবকিছুই নাশ করে; শোকের মত শত্রু নেই। |
শোল বোয়ালের পোনা, যার যারটা তার কাছে সোনা | সবমায়ের কাছে তার সন্তান শ্রেষ্ঠ |
শ্যাম রাখি না কুল রাখি | দুইবিরুদ্ধ ঘটনাচক্রের চাপে পড়ে কোনটা রাখবে কোনটা ছাড়বে ঠিক করতে অপারগ; (উৎসকাহিনী- কৃষ্ণপ্রেমে পাগল রাধা মানসিকদ্বন্দ্বে বিদ্ধস্ত; শ্যামকে রাখতে হলে কুল থাকে না; আবার কুল রাখতে হলে শ্যামকে ছাড়তে হয়; একদিকে শ্যামের প্রতি আকর্ষণ প্রবল; অপরপক্ষে কুলকামিনীর কুল রাখা অপরিহার্য; এইরকম উভয়সংকটে পড়ার অবস্থা।) সমতুল্য- 'দুই নৌকায় পা'। |
শ্বশুরবাড়ী মথুরাপুরী তিনদিন পর ঝাঁটার বাড়ি | শ্বশুরবাড়ীত জামাইয়ের বেশিদিন থাকা নেই; তাতে আদরযত্নে টান ধরে; সম্মানহানি হয়। |
শ্বেতচামর আর কোষ্টাপাট | বহির্সাদৃশ্য দেখে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্টের মধ্যে তুলনা করা; (চমরীগরুর লেজে চামর পাখা তৈরি হয়; কোষ্টাপাট হলো পাটেরগুচ্ছ; সমতুল্য- 'কিসে আর কিসে সোনা আর সিসে'; 'কোথায় রাজা ভোজ আর কোথায় গঙ্গুতেলি'। |
শ্বেতহস্তী পোষা | অনাবশ্যক অতিরিক্ত খরচ বহন করে কিছু টিকিয়ে রাখা; মুলতঃ কোন পোষ্যের জন্য ব্যয়বাহুল্যের ঘটা হলে প্রবাদটি ব্যবহৃয় হয় |
শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম | কোন বিষয়ে শ্রদ্ধা না থাকলে সেই বিষয়ে জ্ঞানলাভ হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ-'নাস্তি ভক্তি কুত ধীঃ'। |
শ্রদ্ধার ছাই হাত পেতে খাই | শ্রদ্ধার সাথে দেওয়া জিনিস পেতে খুব ভাল লাগে; সমতুল্য- 'শ্রদ্ধার শাকান্নও ভাল, অশ্রদ্ধার পরমান্নও ভাল নয়'; পাঠান্তর 'শ্রদ্ধার যা পাই হাত পেতে খাই'। |
শ্রাদ্ধ গড়ায় | অবাঞ্ছিত ব্যাপার; যে সংঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠেছে; (উৎসকাহিনী- এক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মন্ত্রপড়ার সময় পুরোহিত যজমানকে এই নির্দেশ দেন যে তিনি যা বলবেন যজমানও যেন তাই বলেন; পুরোহিতের কথায় মাত্রাদোষ ও মুদ্রাদোষ, দুইই ছিল; ফলে তিনি যখন মন্ত্র উচ্চারণ করছিলেন তখন তাঁর উচ্চারিত মন্ত্রের সাথে মাত্রা ও মুদ্রাদোষজনিত অকথ্য কথাও যুক্ত হচ্ছিল; যজমান নির্বিচারে সেগুলি উচ্চারণ করে যাচ্ছিলেন; পুরোহিত এতে ক্রুদ্ধ হন; মেজাজের ব্যাপারে যজমানেরও সুখ্যাতি ছিল না; ফলে পুরোহিতের মেজাজের সাথে যজমানের মেজাজও সমানতালে চড়তে থাকে; উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়; প্রথমে মুখেমুখে ঝগড়া শুরু হয়; ক্রমে সেটি হাতাহাতিতে এবং জড়াজড়ি গড়ায়; চূড়ান্তপর্যায়ে গড়াতেগড়াতে উভয়ে গোবর ছড়ান শ্রাদ্ধানুষ্ঠান স্থান থেকে বাইরে এসে পড়েন; যজমানের স্ত্রী শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন; এমনকাণ্ড তিনি কখনো দেখেন নি; দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে যান; তিনি বলেন- শ্রাদ্ধ যে এত দূর গড়াবে তিনি তা অনুমান কর’তে পারেন নি; জানলে তিনি অনুষ্ঠানস্থলের আরও কিছুদূর গোময় করে রাখতেন; এই ঘটনাকেই প্রবাদে ‘শ্রাদ্ধ গড়ানো’ আখ্যা দেওয়া হয়; কোন ঝগড়াঝাটি চূড়ান্তপর্যায়ে পৌঁছালে প্রবাদটি উচ্চারণ করা হয়।) |
শ্রেয়মানুষ নিজের মধ্যে যা খোঁজে, হীনমানুষ অন্যদের মধ্যে তা চায় | মহৎব্যক্তি জানে সবার ভিতরে সোনার খনি আছে; তাই সে নিজের মধ্যে সোনা খোঁজে; হীনব্যক্তি সেটা জানে না; তাই সে ঘরের জিনিস বাইরে খোঁজে। |
শ্রেয়সি কেন তৃপ্যতে | ভাল পেয়ে কেইবা তৃপ্ত হয়; যত ভালই পাক আরও ভাল তার চাই। |
শ্রেয়াংসি বহুবিঘ্নানি | ভাল সৎকাজে বহু বাধাবিঘ্ন এসে উপস্থিত হয়। |
শ্রোতব্যঃ শ্রুতিবাক্যেভ্যো মন্তব্যশ্চোপপত্তিভিঃ | যা শুনছো সব কথাই শুনবে কিন্তু প্রমাণসহ সব গ্রহণ করবে। |
ষ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
ষটকর্ণে মন্ত্রভেদ | মন্ত্রণার কথা ছয় কান হলোে অর্থাৎ তিনজন শুন'লে সেটা আর গোপন থাকে না, প্রকাশিত হয়ে পড়ে; সুতরাং মন্ত্রণা তৃতীয়ব্যক্তির সামনে করা উচিৎ নয়; পাঠান্তর- 'ষট কর্ণো ভিদ্যতে মন্ত্রঃ'। |
ষড়রিপু জয়ী বিশ্বজয়ী | কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, ও মাৎসর্য-এই ছয় রিপু শরীরকে ধ্বংস করে; ষড়রিপুকে জয় করতে পারলে জগৎ জয় করা যায়। |
ষণ্ডামার্কা গুরু | ষাঁডের মত গোঁয়ার গুরু; (উৎসকাহিনী- 'ষণ্ডামর্ক' শব্দ থেকে প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে; দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের দুই ছেলের নাম ছিল ষণ্ড ও অমর্ক; উভয়কে একত্রে ষণ্ডামর্ক বলা হত; দুইভাই হিরণয়কশিপুর পুত্র প্রহ্লাদের শিক্ষাগুরু ছিলেন; প্রহ্লাদ যেন কৃষ্ণনাম উচ্চারণ না করে তারজন্য দুইগুরু প্রহ্লাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছিলেন।) |
ষন্ডা সবসময় কাপুরুষ | ষাঁড়ের মতো গোঁয়ার ব্যক্তি সবসময় দুর্বলকে ভয় দেখায় কারণ সে সবলের সাথে লড়তে ভয় পায়। |
ষত্ব-ণত্ব জ্ঞান নেই | কোন বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব। |
ষাঁড়ের গোবর | ষাঁড়ের গোরর কোন কাজে ব্যবহৃত হয় না লক্ষণায় অকর্মণ্য, অপদার্থ লোক। |
ষাঁড়ের শত্রু বাঘে খায় | এক শত্রু অন্য শত্রুদ্বারা শাসিত বা বিনষ্ট হওয়া; (গল্পে আছে এক ষাঁড়ের সাথে এক মোষের শত্রুতা ছিল; মোষকে বাঘে হত্যা করে; ফলে ষাঁড় নিস্কণ্টক হয়।) সমতুল্য- 'যা শত্রু পরে পরে'। |
ষাঁড়ে ষাঁড়ে যুদ্ধ | প্রবলের সাথে প্রবলের সংঘর্ষ; সমতুল্য- 'সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি'। |
ষাটের/ষেটের বাছা ষষ্টীদাস১ | সু-অর্থে- মাষষ্টীর অনুগৃহীত পুরুষ; বাচ্চাছেলে সম্পর্কে কেউ কোন অমঙ্গলসূচক কথা বললে ছেলের মা স্নেহবশতঃ প্রবাদটি উচ্চারণ করেন। |
ষাটের/ষেটের বাছা ষষ্টীদাস২ | ব্যঙ্গার্থে- বয়স্ক অকর্মণ্য ব্যক্তি। |
ষোলআনা বাজিয়ে নেওয়া | সবদিক দিয়ে যাচাই করা। |
ষোলআনাই উসুল/লাভ | পুরোটাই আদায়/লাভ। |
ষোলআনা ভূয়া | সম্পূর্ণটাই অসার। |
ষোলআনা মালিক | সম্পূর্ণ মালি্কানা। |
ষোলকড়া কানা | সমস্তটাই ফাঁকি। |
ষোলকলা পূর্ণ | বিদ্রূপে- সব বদগুণের অধিকারী হয়েছে; (চাঁদের পূর্ণাবয়ব ১৬টি কলায় বিভক্ত হয়) |
স
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
সংকল্পের কথা প্রকাশ করা উচিৎ নয় | অভিপ্রায় অন্য জানলে কাজ বিনষ্ট হয়। |
সংসর্গজা দোষগুণা ভবন্তি | সঙ্গের কারণেই দোষগুণ হয়; সঙ্গগুণে সাধু হয়; সঙ্গদোষে চোর হয়; তুলনীয়- 'সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ'। |
সংসার অনিত্য, তুমি কার, কে তোমার? | ক্ষণস্থায়ী সংসারে কেউ কারো সঙ্গে আসেও নি, কারো সঙ্গে যাবেও না; তুলনীয়- 'দারা, পুত্র, পরিবার কেউ নয় আপনার'। |
সংসার/জগৎ আনন্দময়; যার মনে যা লয় | সুখদুঃখে জড়িতে জীবনে আনন্দ খুঁজে নিতে হয়; যার মনে আনন্দ আছে, সে আনন্দ খুঁজে পায়; যার মনে দুঃখ আছে, সে দুঃখে ডুবে থাকে। |
সংসার উদ্যানে পুষ্প অপেক্ষা কীট বেশি | সমাজে মন্দলোকের ভীড় বেশি। |
সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে | ঘরণী লক্ষ্মীমতী হলোে সংসারে সুখের সন্ধান পাওয়া যায়। |
সকলকে খুশি করতে চাইলে কাউকেই খুশি করা যায় না | সবাই অভিন্ন প্রকৃতির হয় না; পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে; ফলে সবাইকে একসাথে খুশি করা যায় না। |
সকলকে পারা যায়, পায়ে-পড়াকে পারা যায় না | সবাইকে শাসন করা যায়, কিন্তু অতি বিনীতকে শাসন করা যায় না। |
সকলগুণভূষা চ বিনয়ঃ | বিনয়ই সকলগুণের ভূষণস্বরূপ। |
সকাল দিনের আভাস দেয় | শৈশবাবস্থায় মানুষের গুণগুলি তার আচরণের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে; সমতুল্য- 'উঠন্তি মূলা পত্তনেই চেনা যায়'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মন্দ সকাল সুন্দর সকালে পরিণত হতে পারে'। |
সকালবেলার আমির রে ভাই ফকীর সন্ধ্যাবেলা | সুখেদুঃখে মিশ্রিতজীবন উত্থান পতন আছে; আজ যে রাজা কাল সে ভিখারি হতে পারে; সমতুল্য- 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'। |
সকালে ক্ষিরা ক্ষিরা, দিনে ক্ষিরা হীরা রাতে ক্ষিরা জিরা/পীড়া | খাওয়ার পর শসা- সকালে খেলে কোন কাজ হয় না; দুপুরে খেলে খাদ্য জীর্ণ করে; রাতে খেলে খাদ্য অজীর্ণ রাখে। |
সকালে পিঁয়াজ খেলে বিকেলে ঢেঁকুর ওঠে | বাজে কাজ করলে একসময় বাজে প্রতিক্রিয়া হবেই। |
সকালে শোয়, সকালে ওঠে তার কড়ি বৈদ্য না লোটে | বেশি রাত না করে শোয়া এবং ভোরে ওঠা স্বাস্থ্যের পক্ষে মঙ্গল। |
সকালের পাখি পোকা ধরে | যে প্রথমে থাকে সে বেশি সুযোগ পায়; সমতুল্য-'শুভস্য শীঘ্রম, অশুভস্য কালহরণম'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়'; 'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
সক্ষমব্যক্তির কাছে কোন কাজই কঠিন নয় | অদম্য ইচ্ছা থাক'লে সাফল্য আসবেই; তুলনীয় 'পঙ্গুও লঙ্ঘায় গিরি'। |
সখের প্রাণ গড়ের মাঠ | সখ মেটাতে অর্থব্যয়ে কেউ কার্পণ্য করে না, কোন কষ্ট অনুভব করে না; সখের ব্যাপারে সবারই দিল দরিয়া। |
সঙ্কীর্ণমনা আত্মকেন্দ্রিক হয় | সঙ্কীর্ণমনা শুধু নিজের কথাই ভাবে; তারা নিজের গণ্ডির বাইরে যায় না। |
সঙ্গ মানুষ চেনায় | সঙ্গী দেখে মানুষের স্বভাব জানা যায়; সুজনের সঙ্গী সুজন হয়; কুজনের সঙ্গী কুজন হয়; পাঠান্তর- 'মানুষের সঙ্গ মানুষ চেনায়'। |
সঙ্গদোষে কিনা হয়, ছুঁচো ছুলে ছুঁচো হয় | সঙ্গ মানুষেকে চোর বানায়; আবার সঙ্গ মানুষকে সাধু বানায়; পাঠান্তর-'সঙ্গদোষে কিনা হয়, ছুঁচো ছুলে গন্ধ বয়'। |
সঙ্গদোষে লোহা ভাসে | চরিত্রগঠনে সঙ্গপ্রভাব অপরিসীম; লোহা জলে ডুবে যায়, কিন্তু কাঠের সঙ্গে থাকলে লোহা জলে ভাসে; তুলনীয়- 'সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ'। |
সজনে শাক সকল শাকের হেলা, খোঁজ তার কেবল টানাটানির বেলা | শুধু প্রয়োজনের সময় নগণ্যের খোঁজ পড়ে; তুলনীয়- 'ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো। |
সজনে শাকে নুন জোটে না, মটরডালে ঘি | ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রত্যাশা করা অনুচিত। |
সঞ্চয়ী নাবসীদতি | যে অর্থ সঞ্চয় করে সে অবসাদগ্রস্ত হয় না বা কষ্ট পায় না। |
সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা | সততা হল সেই বীজ যার থেকে সব মহৎ বিষয়ের সৃষ্টি হয়। |
সততা বেশি থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয় | স্বার্থের সংঘাতের কারণে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। |
সতর্ক কুকুর অকারণ চিল্লায় না | কাজের লোক অকারণে কোন কাজ করে না। |
সতীসাবিত্রী১ | প্রশংসায়- সাবিত্রীর মত পতিব্রতা সাধ্বীনারী; (উৎসকাহিনী- মহাভারতে বর্ণিত এক উল্লেখযোগ্য নারীচরিত্র হলো সাবিত্রী; তিনি মহাকাব্যে বর্ণিত পঞ্চসতীর মধ্যে পড়েন না যারা হলোেন মহাভারতের অহল্যা, দ্রৌপদী, কুন্তী এবং রামায়ণের তারা ও মন্দোদরী; যুধিষ্ঠির মার্কণ্ডেয়মুনিকে একবার জিজ্ঞাসা করেন-এমন কোন নারী চরিত্র আছে কি না যার পতিপ্রেম, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় দ্রৌপদীর সাথে মিলে যায়; মার্কন্ডেয় তাঁকে সাবিত্রী সত্যবানের কাহিনী শোনান; সাবিত্রীর প্রেম এবং স্বামী সত্যবানের প্রতি তার ভক্তির জন্য এই দম্পতি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে; রাজকন্যা সাবিত্রী সত্যবান নামে একজন নির্বাসিত রাজকুমারকে বিয়ে করেন; সত্যবানের অকালমৃত্যু হবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী ছিল; বুদ্ধি প্রেম ও মনের দৃঢ় ইচ্ছার জোরে সাবিত্রী স্বামীকে যমের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।) |
সতীসাবিত্রী২ | নিন্দায়- আচারে সতীপনা, আচরণে ঠিক বিপরীত, এমন নারী। |
সৎকর্ম বৃথা যায় না | যত তুচ্ছই হোক সৎকর্ম কখনও বৃথা যায় না। |
সৎকল্যাণপরম্পরা | উন্নতির সময় কল্যাণকর বিষয়গুলি পরপর আসতে থাকে; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুইড়া দেয়'; 'ঈশ্বার যখন দেয় দু'হাত ভরে দেয়'; 'বিধি যখন মাপায় উপরি উপরি মাপায়'। |
সৎকাজে বহু বাধাবিঘ্ন আছে | মন্দলোক সৎকাজে নানাপ্রকারে বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করে। |
সৎপুত্র কুলদীপকঃ | সুসন্তান বংশের সম্মান বৃদ্ধি করে। |
সৎলোককে অবিশ্বাস করে ঠকার চেয়ে অসৎলোককে বিশ্বাস করে ঠকা শ্রেয় | সৎলোক হাজারে একজন পাওয়া যায়; একবার পেয়ে হারালে দ্বিতীয়বার নাও জুটতে পারে। |
সৎলোকের শত শত্রু থাকে | সংসারে মন্দলোকের সংখ্যা বেশি; তারা সবসময় সতের বিরোধিতা করে। |
সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ | সঙ্গগুণে সাধু হয়; সঙ্গদোষে চোর হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সংসর্গজা দোষগুণা ভবন্তি'। |
সত্য কখনো গোপন/চাপা থাকে না | সত্য সূর্যের আলোর মত ভাস্বর; সূর্যের আলো ঢাকা যায় না; তুলনীয়- 'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে'; 'সমুদ্র শুকায় না পাপ লুকায় না'। |
সত্যং কণ্ঠস্য ভূষণম | সত্যবাক্য কণ্ঠের ভূষণস্বরুপ। |
সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়াৎ, ন ব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম | সত্য কথা বলা উচিৎ; প্রিয়কথা বলা উচিৎ; অপ্রিয় সত্যকথা বা প্রিয় অসত্য কথা বলা উচিৎ নয়। |
সত্যকথার ডালপালা নেই | সত্য অতিি সহজ ও সরল কথা; সত্যকথা বলতে ধানাইপানাই করার কোন প্রয়োজন হয় না। |
সত্যের কাটাছেঁড়া হলে সত্য স্পষ্টতর হয় | বিশ্লেষিত হলোে সত্য আরও পরিমার্জিত হয়ে উদ্ভাসিত হয়; তুলনীয়- 'সলতে কাটা হলোে লম্ফের আলো উজ্জ্বলতর হয়'। |
সত্যবাদী দুইজন অজ্ঞ ও বালকগণ | অল্পবুদ্ধি বা কুটিল না হওয়ার কারণে শিশু ও অজ্ঞরা মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে না। |
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির১ | যুধিষ্ঠির সত্যবাদী ছিলেন বলে খ্যাত; অদ্বিতীয় সত্যবাদিতার জন্য প্রবাদে বলা হয় 'ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির'; বর্তমান এমনে পরম সত্যবাদীচরিত্র দুর্লভ; তাই কেউ সত্য কথা বলছেন বলে দাবী করলে বিদ্রূপ করে তাকে বলা হয় 'সত্যবাদী যুধিষ্ঠির'। |
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির২ | যুদ্ধে অশ্বথামার মৃত্ হয়েছে ঘোষণায় যুধিষ্ঠির যে ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন তাতে তাঁকে সত্যবাদী বললে সত্যের অপলাপ করা হয়; সেইকারণে কেউ সত্যকথা বলছেন বলে মিথ্যা দাবী করলে বিদ্রূপ করে তাকে বলা হয় 'সত্যবাদী যুধিষ্ঠির'। |
সত্যম্ পরম্ ধীমহি | সত্যই চুড়ান্ত, সত্যকে পরম বলে ধারণ করা এবং ধ্যান করা উচিত; পাঠান্তর-'সত্যম্ পরমোধর্ম'; তুলনীয়- 'ঈশ্বরই একমাত্র সত্য'। |
সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্ | সত্য মঙ্গলময় ও সুন্দর। |
সত্যমেব জয়তে | সত্যকথা বললে বিপদে পড়তে হয় না; বাংলা পাঠান্তর সত্যের জয় সর্বত্র'। |
সত্যের দ্বারে আগড় নাই | সত্যের কোন আড়াল নেই; শত চেষ্টাতেও সত্য চাপা রাখা যায় না; সত্য স্বতোদ্ভাসিত, আপনা থেকেই প্রকাশিত হয়; তুলনীয়- 'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে'। |
সত্যের নাই ধানাইপানাই | যা ঘটে তাই সত্য; সুন্দরবাক্যের মোড়কে ঘটনাকে সুন্দরতর করে পরিবেশন করতে হয় না। |
সত্যের বাড়া ধর্ম নাই মিথ্যার বাড়া পাপ নাই | সত্যের চেয়ে বড়ধর্ম আর হয় না; মিথ্যার চেয়ে বড়পাপ আর হয় না; তুলনীয় সংস্কৃত প্রবাদ- 'নাস্তি সত্যাৎ পরোধর্ম, ন পাপমনৃতাৎ পরম'। |
সদর বন্ধ খিড়কি ফাঁক | নিয়মকানুনে বাহ্যিক কড়াকড়ি আছে এবং নিয়মকানুনের মধ্যে নানাফাঁকও আছে; বাইরে আঁটোসাট, ভিতরে আলগা; সমতুল্য-'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো'; পাঠান্তর- সদর দিয়ে মশা/মাছি গলে না, খিড়কি দিয়ে হাতি গলে'; 'সদর দিয়ে সুঁচ ঢোকে না, খিড়কি দিয়ে শাবল চালায়'। |
সন্তানমাত্রই পুরুষের পিতা | প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যে আচরণ করে তার পাঠ শিশুবয়সেই নেয়। |
সন্তোষো নন্দনং বনম | সন্তোষ নন্দনবনের মত সুখকর। |
সন্দেশওয়ালা মুড়ি খায় | ব্যবসায়ী নিজের জিনিস ভোগ করে না; করলে ব্যবসায় চলে না; তুলনীয়- 'ময়রা মিষ্টি খায় না'। |
সন্দেশের খোসা ফেলে খাওয়া | ঐশ্বর্যগর্বের অভিব্যক্তি। |
সন্ধ্যা হলে সকলে দিনের গান গায় | অতীতস্মৃতির রোমন্থন সততঃ সুখের। |
সন্তোষের মত পরম সুখ নেই | অর্থ স্পষ্ট; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'ন সন্তোষাৎ পরম সুখম্'। |
সন্নিপাতের তৃষ্ণা | বার্ধক্যজনিত নানারোগের কারণে মৃত্যু আসন্ন হলোে মানুষের ভোগলিপ্সা তীব্র আকার ধারণ করে। |
সন্ন্যাসী চোর নয় বোঁচকায় ঘটায় | ঘটনাচক্রে নির্দোষের দোষী সাব্যস্ত হয়; (উৎসকাহিনী- এক সন্ন্যাসী গাছতলায় বসে জপ করছিল; সেইসময় ধরা পড়ার ভয়ে এক চোর চুরির বোঁচকাটা সন্ন্যাসীর পাশে ফেলে রেখে পালায়; চৌকিদার এসে সন্ন্যাসীর কাছে বোঁচকাটা দেখে তাকে চোর সাব্যস্ত ক'রে ধরে নিয়ে যায়।) |
সন্ন্যাসীর অল্পছিদ্র গায় সর্বজন, শুভ্রবস্ত্রে মসীবিন্দু দেখায় যেমন | সাধারণলোকে কতদোষ করে সেদিকে কেউ নজর করে না; অথচ সন্ন্যাসীর একটু দোষ হলেই সকলে তার নিন্দা করা শুরু করে; আসলে ময়লাকাপড়ে হাজার কালির দাগ থাকলেও কারো দৃষ্টিতে পড়ে না কিন্তু ধবধবে সাদা কাপড়ে একবিন্দু কালির ছিটা পড়লে সেটা তৎক্ষনাৎ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। |
সন্ন্যাসীর তুম্ব নাড়া | অভ্যাস বা পূর্ব-সংস্কার পরিত্যাগ করা বড়ই কঠিন ব্যাপার; (উৎসকাহিনী- এক চোর কারাদণ্ড ভোগ করার পর ছাড়া পেয়ে সন্ন্যাসী হয়; কিন্তু পূর্ব অভ্যাসবশতঃ নিজের লাউ খোলাটা কিছুক্ষণ পরপর এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় সরিয়ে রেখে চুরির অভ্যাস বজায় রাখে।) |
স পাপিষ্ঠস্ততোধিক্য | সে আবার তার থেকে সেয়ানা পাপী। |
সফরী ফরফরায়তে | পুঁটিমাছ অল্পজলে নেচে বেড়ায়; তেমনই অল্পবিদ্যানরা বেশি বিদ্যার জাহির করে; তুলনীয়- 'ভেকো মকমকায়তে'। |
সবকাজ ছোট আকারে শুরু হয়, শুধু পাপ ছাড়া | কোন পাপই লঘু নয়; অঙ্কুরে বিনষ্ট না করলে ক্ষুদ্রপাপ ক্রমে বিশাল আকার ধারণ করে। |
সবকাজের কেষ্টা কোন কাজের নয় | সবকাজই একটু একটু জানে, তবে কোনকাজেই দক্ষ নয়; সমতুল্য- 'সবজান্তা সব বিষয়ের ওস্তাদ নয়'। |
সবকায়দায় ফয়দা নাই | চালাকিদ্বারা সবকাজ সিদ্ধ হয় না। |
সবকিছু সবসময় হিসাবমত হয় না | সব পরিকল্পনামাফিক সফল হয় না; সম্পর্কীত পরবাদ- 'মানুষ পরিকল্পনা করে ঈশ্বার মিমাংসা করে'। |
সবকিছুরই সৌন্দর্য আছে, কিন্তু সবাই সেটা দেখতে পায় না | মন সুন্দর হলে সবকিছু সুন্দর মনে হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- সংসার আনন্দময় যার মনে যা লয়'। |
সব গজের/হাতীর মোতি নেই | মহার্ঘ বস্তু অল্পই হয়।; তুলনীয়- সব পাথরে মণি থাকে না'। |
সব গাধা কান নাড়ে | সবাই একইগোত্রের বা সমদোষে দুষ্ট; সমতুল্য- এক গাঙের চিল'; এক গোয়ালের গরু'; এক বনের শিয়াল' ইত্যাদি। |
সব চুলে চামর হয় না | সবারদ্বারা সব কাজ হয় না; তুলনীয়- সব শুক্তিতে মুক্তা থাকে না'। |
সব চেয়ে চুপ ভাল | অর্থ স্পষ্ট; তুলনীয়- 'নীরবতা হিরণ্ময়'; 'বোবার শত্রু নেই'। |
সব জন্তু মোট বয়, ধরা পড়ে গাধা | সকলেই দোষ করে কিন্তু একজনই দোষী সাব্যস্ত হয়'; তুলনীয়- 'সব পাখিতে মাছ খায় মাছরাঙার কলঙ্ক'। |
সব জানা আবশ্যক নয়, কিন্তু যা জানছো তার সব জানা আবশ্যক | ভাসাভাসা জ্ঞান সার্থক জ্ঞান নয়; এমন জ্ঞানের কোন উপলব্ধি নেই। |
সব জানা আবশ্যক নয়, শুধু জানো জানার বিষয় কোথায় জানা যাবে- | মূল্যবান মস্তিস্ক অসারতথ্য জমা করার প্রকৃষ্ট স্থান নয়। |
সব জানার চেষ্টা করলে কিছুই জানা যায় না | পল্লবগ্রাহী পাণ্ডিত্য সার্থক জ্ঞান নয়। |
সব ঝিনুকে/শুক্তিতে মুক্তা মিলে না | মহার্ঘবস্তু অল্পই পাওয়া যায়; তুলনীয়- 'সব হাতীতে মুক্তা হয় না'। |
সব থেকে কঠিন কাজ হলো অন্ধকার ঘরে অনুপস্থিত কালোবিড়াল খোঁজা | অসম্ভবের পিছনে ছোটা বৃথা। |
সবনুড়ি শালগ্রাম নয়১ | সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয় না। |
সবনুড়ি শালগ্রাম নয়২ | সবাই সাধু নয়। |
সব নৈবেদ্যে ঠোকর মারে | সব কাজ হাতে নেয় কিন্তু কোন কাজ শেষ করে না; তুলনীয়- 'সবকাজের কেষ্টা কোনকাজের নয়'। |
সব নোড়াই যদি শাল্গ্রাম হয় তবে হলুদ বাটি কিসে? | সবাই যদি সাধুসন্ন্যাসী হয় তবে সংসারী কারা হবে? |
সব পথ মাড়িয়ে চলা১ | সবদিক সামলে চলা। |
সব পথ মাড়িয়ে চলা২ | সবদিকে নজর রেখে ধীরে ধীরে চলা। |
সব পাখিতে মাছ খায় মাছরাঙার কলঙ্ক | মাছ খায় বলে তার নাম মাছরাঙা; অনেকেই দোষ করে বদনাম হয় শুধু বিশেষ একজনের; তুলনীয়- 'সব মাছ গু খায়, দোষের ভাগী শোল'। |
সব বাঁশেতে বাঁশি হয় না | তরলাবাঁশ থেকে বাঁশি হয়; সবারদ্বারা সবকাজ হয় না; তুলনীয়- 'সব চুলে চামর হয় না'। |
সব বাঁশে বংশলোচন (শর্করাজাতীয় বস্তু) হয় না | সবাই সমান গুণসম্পন্ন নয়; সবাই সাধু হয় না। |
সব বিড়ালকে অন্ধকারে ধূসর দেখায় | বিষয় অস্পষ্ট হলোে অনুমান করতে ভুল হয়। |
সব বিড়াল মাছ পছন্দ করে কিন্তু পা ভিজাতে পছন্দ করে না | সবাই সাফল্য চায়, কিন্তু অনেকেরই পরিশ্রম করতে বিমুখ। |
সব বিষয়ই সহজ হওয়ার আগে কঠিন থাকে | অনভ্যাসের কারণে সব বিষয় প্রথমে কঠিন মনে হয়। |
সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বেড়ে ব্যাটাকে ধর | সবাইকে ছেড়ে দিয়ে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা; যেন সেই-ই যত নষ্টের গোড়া। |
সব ভাল ওষুধ তেতো হয় | অনুশাসন কারোরই পছন্দ হওয়ার কথা নয়। |
সব ভাল যার শেষ ভাল | সকল কাজ সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পন্ন করা উচিত; শেষ বেশ; তুলনীয়- 'মধুরেণ সমাপয়েৎ'; 'শেষ রক্ষাই আসল রক্ষা'। |
সব মাছ গু খায়, দোষের ভাগী শোল | সকলেই দোষ করে কিন্তু একজনই দোষী সাব্যস্ত হয়; তুলনীয়- 'সব জন্তু মোট বয়, ধরা পড়ে গাধা'। |
সব রসুনের একই কোয়া | সবাই সমদোষে দুষ্ট বা সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু'; এক জলাশয়ের মাছ' ইত্যাদি। |
সব শিয়াল খেলো কাঁঠাল বকের ঠোঁটে আঠা | কুকর্ম করে সব দোষীরা প্রমাণাভাবে ছাড়া পেলো কেবল এক বোকা সংস্পর্শে এসে ধরা পড়ে সাজা পেলো। |
সব শিয়ালের এক রা১ | একজন যে মত সকলের সেই মত। |
সব শিয়ালের এক ডাক/ রা২ | কুকাজে সবার ঐক্যমত |
সবশিলা শালগ্রাম নয়১ | শিলা গোল হলেই শালগ্রাম হয় না; একমাত্র গণ্ডকীনদীজাত শিলা যাতে বিষ্ণুর শঙ্খচক্র আঁকা ছিদ্র থাকে সেটাই শালগ্রাম আখ্যা পেয়ে থাকে; মহার্ঘ বস্তু অল্পই হয়। |
সব শুক্তিতে মুক্তা হয় না | মহার্ঘবস্তু অল্পই হয়। |
সব হাতীর মোতি হয় না | দুর্লভবস্তুর দর্শন কদাচিৎ হয়। |
সবাই ইচ্ছুক ঘোড়ার উপর বোঝা চাপায় | অতি পরোপকারী ব্যক্তির দুর্বলতার সুযোগ সবাই নেয়। |
সবাই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে না | সবাই পাহাড়ের পাদদেশে ভিড় করে কিন্তু চুড়ায় ওঠে মাত্র একজনব্যক্তি; একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হয় না। |
সবাইকে পারা যায় শুধু পায়ে-পড়াকে পারা যায় না | প্রতিনিয়ত কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে শাসন করা যায় না। |
সবাই গেল আলায় আলায় বুড়ি মরে আপন জ্বালায় | খুব ভুগছে কিন্তু মরছে না এমন বৃদ্ধা সম্পর্কে প্রযোজ্য। |
সবাই নিজের কোলে ঝোল টানে | সবাই নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে। |
সবার জীবনেই সৌভাগ্য বা সাফল্যের একটা সময় থাকে। | কোন জীবনই বৃথা যায় না। |
সবার প্রতি এমন ব্যবহার করো যেন তুমি একজন অতিথি বরণ করছো | সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। |
সবার বন্ধু কারো বন্ধু নয় | সবাইকে একসাথে খুশি করা বাস্তবে সম্ভব নয়; সবার স্বার্থ দেখতে গেলে কারো স্বার্থ দেখা যায় না। |
সবার ব্যবসা কারো ব্যবসা নয় | সবার দায়িত্ব থাকলে কেউ দায়িত্ব পালন করে না; একে অপরের ঘাড় দায় ঠেলে; সমতুল্য-'ভাগের মা গঙ্গা পায় না'। |
সবার সাথে মানিয়ে চলার যোগ্যতা হল সভ্যতা | সভ্যমানুষ অপরের প্রতি সহনশীল হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলে'। |
সবারে বাসরে ভালো নইলে মনের কালি ঘুচবে না- অতুলপ্রসাদের গান | ভালোবাসায় সবাইকে আপন করা যায়। |
সবুরে মেওয়া ফলে | ধৈর্য ধরে থাকলে ফল পাওয়া যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আগ গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়'; 'যে সয় সে রয়'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভোরের পাখি পোকা ধরে'; 'শুভস্য শীঘ্রম অশুভস্য কালহরণম' ইত্যাদি। |
সবে তো কলির সন্ধ্যা১ | কোনবিষয় আরম্ভের সাথে সাথেই অধৈর্য হয়ে পড়া। |
সবে তো কলির সন্ধ্যা২ | পাপের ঘড়া এখনও ভর্তি হয়নি; সর্বনাশ এখনও সম্পূর্ণ হয় নি; রসাতলে এখনও যায় নি। |
সবে ধন নীলমণি১ | একমাত্র অবলম্বন/আশ্রয়/সম্বল; একমাত্র সন্তান বা জীবিত বংশধর; সমতুল্য- 'শিবরাত্রির সলতে'; (উৎসকাহিনী- শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গচ্ছটা নীলাভ বলে 'নীল'; বিষ্ণুর অবতার বলে শ্রেষ্ঠপুরুষ হিসাবে মণি্রত্ন; নন্দরাজ ও যশোধার আদরের ধন ছিলেন বলে প্রবাদে তিনি 'সবে ধন নীলমণি' প্রবাদে আখ্যাত হন; কারো একমাত্র অবলম্বন বা একমাত্র সন্তান বা একমাত্র জীবিত বংশধর থাকলে তাকে 'সবে ধন নীলমণি' বলা হয়। |
সবে ধন নীলমণি২ | প্রিয়বস্তু বলার মত মাত্র একটি আছে |
সবৈ সহায়ক সবলকে কৌ ন নিবল্ সহায়, পবন জগাওতে আগকো দীপহিঁ দেত বুজায় | সবাই সবলের সহায়, সুর্বলের সহায় কেউ নয়; বাতাস সবল আগুনকে সাহায্য করে এবং দুর্বল দীপকে নিভায়; তুলনীয়- 'নরমমাটি পেলে বিড়াল আঁচড়ায়'; 'শক্তের ভক্ত নরমের যম'। |
সময় ও স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না | মহাকালের নিয়মে সময় চলে, কারও নির্দেশে নয়; পাঠান্তর- 'সময় বহিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়'। |
সময় কাহারো নয় | সময় কারো হাত ধরা নয়; আপনি সে আসে আপনি চলে যায়, কারো জন্য অপেক্ষা করে না; পাঠান্তর 'সময় কারো গোলাম নয়'; 'সময় কারো সঙ্গী নয়'। |
সময় ক্ষত শুকায় | প্রকৃতির আশীর্বাদে সময়ের অতিক্রমণে মানুষ দুঃসহ সব ঘটনা ভুলে যায়; তা-না-হলে মানুষ পাগল হতো। |
সময় গুণে আপন পর, খোঁড়া গাধার ঘোড়ার দর | সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছুর ওলটপালট হয়- পর আপন হয়, আপন পর হয়; দময়গুণে অকেজো জিনিসও চড়ামুল্যে বিকিয়ে যায়। |
সময় স্বর্ণসমান, তবুও সোনা দিয়ে সময় কেনা যায় না | সময় অমূল্যসম্পদ কিন্তু সোনার মত বিনিময়যোগ্য পণ্য নয়। |
সময়ে না দেয় চাষ তার দুঃখ বারোমাস- খনা | সময়ের কাজ সময়ে না করলে সারাজীবন দুঃখভোগ করে যেতে হয়। |
সময়ে সব বন্ধু হয় অসময়ে কেউ নয় | মেকীবন্ধুরা সুদিনের সময় পাশে এসে ভিড় করে এবং দুর্দিনের সময় সরে পড়ে। |
সময়ের এক কথা অসময়ের দশ কথা | সময়ে এক কথা বললে যে কাজ হয় অসময়ে সেই কাজ করতে বহু কথা ব্যয় করতে হয়। |
সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশফোঁড় | সময়ের কাজ সময়ে না করলে কাজের ঝক্কি বা পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়; সময়মতো কাজ করে রাখলে তা ভবিষ্যতের বহু কাজের কষ্ট বাঁচিয়ে দিতে পারে; তুলনীয়- 'প্রস্তুতির আরেক নাম সভ্যতা, বর্বরতা সববিষয়ে অপ্রস্তুত'। |
সমস্যা ভাগাভাগি করলে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয় | দশের লাঠি একের বোঝা; দশে মিলে কাজ করলে সবাই সমস্যার অংশভাগী হয়। |
সমানে সমানে দোস্তি, সমানে সমানে কুস্তি | মিত্রতাই হোক আর শত্রুতাই হোক দ্বন্দ্ব সবসময় সমানে সমানে হয়। |
সমুদ্রে পাদ্য অর্ঘ্য১ | বিশাল সমু্দ্রে একফোঁটা জল পড়লে তা হিসাবের মধ্যেই আসে না; পাঠান্তর-'সমুদ্রে বিন্দুপাত'। |
সমুদ্রে পাদ্য অর্ঘ্য২ | প্রয়োজন যেখানে বিপুল পরিমাণ সেখানে অতি অল্প সরবরাহ মূল্যহীন। |
সমুদ্রে বাস করে শিশিরে ভয় | যে নানাবিপদে জড়িয়ে আছে সে কোন সামান্য ভয়ে মরে না; পাঠান্তর- 'সমুদ্রে যার বাস শিশিরে কি তার ভয়'। |
সমুদ্রের জল বাড়েও না কমেও না | বিশাল আকারের অত্যল্প পরিমাণ পরিবর্তন নজর কাড়ে না বা তেমন পরিমাণ পরবর্তনে কিছু যায় আসে না। |
সমৈশ্চ সমতামেতি বিশিষ্টৈচ বিশিষ্টাতাম | (লোক) সমানের সাথে সহবাস করলে সমান হয় এবং উত্তমের সাথে সহবাস করলে উত্তম হয়। |
সম্পদ অর্জন করা সহজ, রক্ষা করা কঠিন | একবারের পরিশ্রমেই সম্পদ অর্জিত হয়, কিন্তু সম্পদ রক্ষা করত ধারাবাহিক পরিশ্রম করে যেতে হয়। |
সম্পদ আসে কচ্ছপের মত আর যায় হরিণের মত | সম্পদ অর্জিত হয় তিলেতিলে এবং ক্ষয় হয় দ্রুতলয়ে; সৃষ্টি তিলেতিলে গড়ে উঠে কিন্তু নিমেষের প্রলয়ে ধ্বংস হয়। |
সম্পদে বন্ধু লাভ বিপদে পরীক্ষা | বন্ধুত্ব আসল না নকল বিপদের দিনে তা জানা যায়। |
সম্মান ও স্বার্থ এক থলিতে থাকে না | দুটি বিষম বিষয়ের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। |
সম্পূর্ণকুম্ভো ন করোতি শব্দম্ | ভরা কলসি বাজে না। |
স’য়ে থাকলে র’য়ে যায়১ | ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে ফল পাওয়া পায়, অধৈর্য হলোে সব নষ্ট; তুলনীয়- 'সবুরে মেওয়া ফলে'; পাঠান্তর- 'যে সয় সে রয়'। |
সয়ে থাকলে রয়ে যায়২ | সব কষ্ট সহ্য করে যে সংসারে থাকতে পারে সে টিকে যায়; যে কষ্ট করে, সে সুখভোগ করে; যে অস্থির হয় সে বিনষ্ট হয়। |
সরফরাজি | অনাবশ্যক/অoবাঞ্ছিত কর্তাগিরি; (উৎসকাহিনী- অতীতে বাংলায় সরফরাজ নামে এক নবাব ছিলেন; তিনি সববিষয়ে কর্তৃত্ব ফলাতেন বা জাহির করতেন অথবা পরের বিষয়ে অনাবশ্যক নাক গলাতেন; তাঁর এই মাতব্বরি স্বভাবকে সদ্গুণই বলে মনে করা হত; তবে অনুকরণ করার ক্ষেত্রে এই অনাবশ্যক কর্তাগিরিকে বদ্গুণ মনে করেই প্রবাদটির উদ্ভব হয়, যেমন- কেউ মাতব্বরি করছে দেখলে আমরাে বলি- ‘লোকটা সরফরাজি করছে’। |
সরসা বিরসায়তে | বলপ্রয়োগে রস আস্বাদনের চেষ্টা হলে সেটা বিরস হয়ে পড়ে। |
সর্পঃ ক্রূরঃ খলঃ ক্রূরঃ সর্পাৎ ক্রূরতরঃ খলঃ | সাপ ক্রূর, খলও ক্রূর, সাপ থেকে খল বেশি ক্রূর; ওষধিতে সাপকে বশ করা যায়; খলকে দমন করা অসাধ্য। |
সর্ব অঙ্গে ঘা/ব্যাথা ঔষধ দেবো কোথা | সবখানে গলদ থাকলে দূর করা যায় না; যার হাজার দোষ, তাকে সংশোধন করা যায় না; পাঠান্তর- 'সর্ব অঙ্গে ব্যাথা তাগা বাঁধবো কোথা?' |
সর্ব্বং পরবশং দুঃখং সর্ব্বমাত্মবশং সুখং | যা পরের অধীনে আছে তা দুঃখজনক; যাকিছু নিজের অধীনে আছে তা সুখদায়ক। |
সর্ব্বঃসহা ধরিত্রী | মা ধরিত্রী সন্তানদের সব অন্যায় অত্যাচার মুখবুজে সহ্য করেন। |
সর্ব্বঃ কান্তম আত্মীয়ং পশ্যতি | সবাইকে আত্মীয় দেখি; তুলনীয়- 'আত্মবৎ সর্বভূতেষু য পশ্যতি সে পণ্ডিত'; 'বসুধৈব কুটুম্বকম' ইত্যাদি। |
সর্ব্বঃ স্বার্থং সমীহতে | সকলেই নিজের স্বার্থ খোঁজে বা দেখে। |
সর্বঘটের কাঁঠালী কলা | সবকাজে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত; সমতুল্য- 'ঝালে, ঝোলে, অম্বলে'; 'সবকাজের কাজি'। |
সর্বত্র নুতনং শস্তং সেবকায়ে পুরাতনে | জামাকাপড় ঘরভাড়ী ইত্যাদি নতুন প্রশস্ত; তবে চাকর ও চাল পুরাতন হলেই ভাল হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পুরানো চাল ভাতে বাড়ে'। |
সর্বদেবময়োহতিথি | অতিথি দেবতা বা গুরুর মতই পূজনীয়; সমতুল্য- 'অতিথি সর্বময় গুরুঃ'। |
সর্ব্বম অত্যন্তম গর্হিতম্ | বেশি ভালো, ভালো নয়; বেশি তাড়াতাড়ি করলে পতন অনিবার্য; তার সাক্ষ্য- 'অতিদর্পে হতা লঙ্কা'; অতিমানে চ কৌরবা; অতিদানে বলির্বদ্ধ; তুলনীয়- 'অত্যুচ্চায় পতনায়'; 'কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে'। |
সর্ব্বস্যৌষধমস্তি খাস্ত্রবিহিতং মূর্খস্য নাস্ত্যৌষধম | শাস্ত্রে সকল রকম রোগের ঔষধের বিধান আছে কিন্তু মুর্খের কোন ঔষধ নাই। |
সর্ব্বোনাশো সমুৎপন্নে অর্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ | ঘোর বিপদে পড়লে জ্ঞানীব্যক্তি অর্ধেক ত্যাগ করেন। |
সর্ষের মধ্যে ভূত | যে উপায় বিপদ প্রতিকার করে সেই উপায় ত্রুটিপূর্ণ। |
সলতে কাটা হলোে লম্ফের আলো উজ্জ্বলতর হয় | কাটাছেঁড়া হলে সত্য স্পষ্টতর হয়। |
সসর্পে চ গৃহবাসঃ মৃত্যুরেব না সংশয়ঃ | ক্রূর খলপ্রকৃতির লোক ঘরে থাকলে ধ্বংস নিশ্চিত। |
সসেমিরা হয়ে আছে | বাকস্ফূর্তিহীন, বাহ্যজ্ঞানহীন অবস্থায় আছে; (উৎসকাহিনী-‘বত্রিশ পুতুল’ গল্পসঙ্কলনের একটি গল্পে আছে এক রাজপুত্র ও তার বন্ধু ভল্লুক বনে ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়ে ফেলে; সন্ধ্যা হয়ে আসায় তারা একগাছের উঁচু ডালে চড়ে বসে; অজানা আশঙ্কায় তারা স্থির করে একজন ঘুমাবে এবং অন্যজন জেগে পাহারা দেবে; সেই হিসাবে প্রথমরাতে রাজপুত্র ঘুমিয়ে পড়ে এবং ভল্লুক জেগে পাহারা দেয়; গভীর রাতে এক বাঘ গাছের নীচে এসে উপস্থিত হয়; উপরে খাদ্য দেখে বাঘ রাজপুত্রকে ফেলে দেবার জন্য ভল্লুককে বলে; ভল্লুক তার কথায় কর্ণপাত করে না; বাঘ অপেক্ষা করতে থাকে; শেষরাতে ভল্লুক ঘুমিয়ে পড়ে এবং রাজপুত্র জেগে পাহারা দেয়; এবার বাঘ ভল্লুককে ফেলে দেওয়ার জন্য রাজপুত্রকে বলে; বাঘের ভয়ে সন্তস্ত্র হয়ে রাজপুত্র ভল্লুককে ঠেলে ফেলে দেয়; ভল্লুক পড়তে পড়ত গাছের নীচের একডাল ধরে আত্মরক্ষা করে; ভোরবেলায় বাঘ চলে গেলে রাজপুত্র ও ভল্লুক গাছ থেকে নেমে আসে; তখন ভল্লুক সসেমিরা বলে ্রাজপুত্রের গালে এক চড় কষায়; প্রচণ্ড চড় খেয়ে রাজপুত্র পিশাচে পরিণত হয়; অপ্রকৃতস্থ রাজপুত্র বাকশক্তি হারিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসে; সে শুধু এই চার-অক্ষরের শব্দ ছাড়া আর কিছু বলতে পারছিল না; রাজা তার অনেক চিকিৎসা করান; তাতে কোন ফল হয় না; সসেমিরা শব্দটি চারটি সংস্কৃতস্লোকের প্রথম চারবর্ণ নিয়ে গঠিত; এই সংস্কৃতশ্লোগুলিতে বিশ্বাসঘাতকতার পাপ ও পাপস্খালনের বিধি বলা আছে; কবি কালিদাস প্রায়শ্চিত্তবিধি বুঝিয়ে দিলে রাজপুত্র শাপমুক্ত ও প্রকৃতস্থ হন।) |
সস্তায় জিনিস কেনা ভাল | সস্তায় জিনিস কিনে রাখলে পরে লাভবান হওয়া যায়; বিরুদ্ধ উক্তি-'সস্তার জিনিস মাঙ্গা পড়ে'; 'সস্তার তিন অবস্থা'। । |
সস্তায় বস্তা ভরে | বাজেমালের প্রাচুর্য বেশি; সুলভমূল্যে প্রচুর জিনিসপত্র কেনা যায়। |
সস্তার তিন অবস্থা | সস্তার জিনিসেের- গুণমান ঠিক থাকে না; স্থায়িত্ব অল্পদিন হয়; এবং হেলাফেলা-ব্যবহারে প্রচুর অপচয় হয়; ফলে বারবার জিনিস কিনতে অর্থনাশ হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'সস্তার মাটি কেনাও ভাল'; পাঠান্তর-'সস্তার জিনিস মাঙা পড়ে'। |
সহজ হওয়ার আগে সব বিষয়ই কঠিন থাকে | নতুন অজানা বিষয়ে অভ্যস্ত হতে প্রথমে একটু অসুবিধা হয়। |
সহনশীলতা সভ্যতার মাপকাটি | যে মানুষ যত বেশি বিনীত সে তত বেশি ভদ্র। |
সহায়ঃ বলবত্তর | সহায় শক্তি যোগায়, বাড়ের জন্য সহায় লাগে তা সে যত ক্ষুদ্রই হোক; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'তুষহীন তণ্ডুলের অঙ্কুরোদ্গম হয় না'। |
সহিলে সম্পত্তি না সহিলে বিপত্তি | দুঃখকষ্ট সহ্য করে থাকতে পারলে উন্নতি আছে; দুঃখকষ্টে অস্থির হলে বিপদ ঘটে; তুলনীয়- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'যে সয় সে রয়'; 'সয়ে থাকলে রয়ে যায়'। |
সাঁচ কো আঁচ নহী | সৎলোকের ভয় পাওয়ার কিছু নেই; সৎলোকের কোন ক্ষতি হয় না। |
সাঁতার দিয়ে সাগর/সিন্ধুপার | অল্পপ্রচেষ্টায় বিরাট কাজ করা; অসম্ভবের জন্য ব্যর্থপ্রয়াস; সমতুল্য-'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'নরুণ দিয়ে তালগাছ কাটা'; 'মুড়া কোদালে পুকুর কাটা'; পাঠান্তর- 'কলারভেলায় সাগর পার'; 'ডিঙি নৌকায় সাগর পার' ইত্যাদি। |
সাঁতার না জানলে এঁদো পুকুরে/ডোবায় ডুবে মরে | অভিজ্ঞতা বা কৌশল না-জানা থাকলে নিজের কাজে বিপন্ন হয়। |
সাক্ষীগোপাল | নিন্দার্থে- নিষ্ক্রিয় দর্শক; (উৎসকাহিনী- পুরীর কাছেই সাক্ষীগোপালের মন্দিরে জগন্নাথদেবের মূর্তি আছে; পুরী গেলে সবাই সাক্ষীগোপাল দর্শন করে; কথিত যে তীর্থ করতে এসে এক প্রৌঢ় সাক্ষীগোপাল মন্দিরের ভিতরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়নে; সঙ্গী এক তরুণ শুশ্রূষা করে তাঁকে সুস্থ করে; তাতে কৃতজ্ঞ হয়ে প্রৌঢ় মন্দিরে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেন তাঁর মেয়ের সাথে ্তিনি তরুণের বিয়ে দেবেন; গ্রামে ফিরে এসে তিনি প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যান; শ্রীক্ষেত্রে উচ্চারিত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হলে প্রৌঢ় অভিশপ্ত হবেন, এই চিন্তা ক'রে তরুণ তাঁকে প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দেন; প্রৌঢ় বলেন সেই উক্তির কোন সাক্ষী আনতে পারলে তিনি কথামত তার সাথে কন্যার বিয়ে দেবেন; তরুণ পুরীতে এসে জগন্নাথদেবকে অনুরোধ করে যাতে সাক্ষী হিসাবে তিনি তার সঙ্গে যান; গোপাল সাক্ষী হতে রাজী হয়ে বলেন তিনি তরুণের পিছুপিছু যাবেন এই সর্তে যে সে পিছন ফিরে তাকাবে না; তাকালেই তিনি থেমে যাবেন; তরুণ জানতে চায় সে কিভাবে জানবে যে জগন্নাথ তার পিছুপিছু আসছেন; গোপালঠাকুর জানান তাঁর পায়ের নূপুরের ধ্বনি সেই জানান দেবে; পথ চলতেচলতে নটখটের মাথায় এক বদবুদ্ধি চাপে; মুহূর্তের জন্য তিনি থেমে যান; নূপুরধ্বনিও থেমে যায়; আওয়াজ শুনতে না পেয়ে আতঙ্কিত তরুণ পিছন ফিরে তাকাতেই গোপাল সেখানেই দাঁড়িয়ে যান; কোন অঘটন সামনে ঘটতে দেখেও যে নিষ্ক্রিয় থাকে তাকেই ‘সাক্ষীগোপাল’ অভিধা দেওয়া হয়।) |
সাগরও শুকায় না পাপও লুকায় না | পাপ কখনো গোপন থাকে না; তুলনীয়- 'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে'। |
সাগর সেঁচা মাণিক | পরম আদরের প্রিয়পাত্র/সন্তান; তুলনায়- 'সাত রাজার ধন এক মাণিক'। |
সাজতে গুজতে দোল ফুরালো | আয়োজন করতে করতে কাজ নষ্ট; সমতুল্য- 'বৃথা আড়ম্বরে কাজ হারানো'। |
সাজতে গুজতে ফিঙে রাজা | আড়ম্বরহীন কাজ অতি আদরণীয়; (উৎসকাহিনী- বিধাতা একদিন সব পাখিকে ডেকে বলেন, 'কাল সকালবেলায় যে পাখি সেজেগুছে আমার কাছে প্রথম এসে উপস্থিত হবে তাকে রাজা করে দেব'; পাখির দল ভোর থেকে নানারঙে সাজতে বসে যায়; ফিঙেপাখি সারাগায়ে কালি ঢেলে সাত তাড়াতাড়ি বিধাতার কাছে এসে উপস্থিত হয়; বিধাতা তাকেই রাজা ঘোষণা করেন;) |
সাজার মা গঙ্গা পায় না | সাজার কাজ (ভাগের কাজ) কেউ করে না, একের দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়ে চুপ ক'রে বসে থাকে; পাঠান্তর- 'ভাগের মা গঙ্গা পায় না'। |
সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার নাম/বাপ/ভাই/ভার্যা/মাসী | হয় অত্যন্ত বোকা, আদ্যন্ত জেনেশুনে কোন বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করছে বা অত্যন্ত চালাক ইচ্ছা করে কিছু না জানার ভান করছে; তুলনীয়- 'ন্যাকা ঢঙী চালশে কানা, জল বলে খায় চিনির পানা'; পাঠান্তর- 'সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতার নাম জানকি'। |
সাতকুঁড়ের ঘর, গোঁসাই রক্ষা কর | সংসারের সবাই অকর্মণ্য, অলস; ঈশ্বর ছাড়া এদের বাঁচাবার কেউ নেই; তুলনীয়- অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট'; পাঠান্তর- 'সাত পাগলের ঘর, খোদা রক্ষা কর'; 'সাত সতীনের ঘর, খোদা রক্ষা কর'। |
সাতখুন মাপ | প্রিয়লোকের কোন দোষ খুঁজে না পাওয়া; সবদোষ থেকে অব্যাহতি; (উৎসকাহিনী- ইংরাজ শাসনে জমিদাররা জমিদারী রক্ষার স্বার্থে সাতটা পর্যন্ত মানুষ খুন করে আইনের হাত থেকে রেহাই পেত; তারজন্য তখন কোন শাস্তিবিদান ছিল না।) |
সাতগেঁয়ের কাছে মামদাবাজী | ভুল করে সবলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না-নামার জন্য দুর্বলের প্রতি সতর্কবাণীি; (উৎসকাহিনী- অতীতে বাংলার কোথাও সপ্তগ্রাম নামে এক হিন্দুপ্রধান বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল; গ্রামের লোকেরা খুব চতুর ও ক্ষমতাশালী বলে প্রসিদ্ধ ছিল; সপ্তগ্রামের পাশেই মহম্মদাবাদ নামে এক মুসলমানপ্রধান গ্রাম ছিল; তারাও অত্যন্ত চতুর ও বলশালী ছিল; তবে মহম্মদাবাদের লোকবল সপ্তগ্রামের তুলনায় কম ছিল; উভয়গ্রামের মধ্যে সবসময় রেষারাষি লেগে থাকত; মহম্মদাবাদের লোকেরা সংখ্যাল্পতার কারণে সপ্তগ্রামের লোকেদের সাথে দ্বন্দ্বে পেরে উঠত না; এই কাহিনী থেকেই প্রবাদটির সৃষ্টি।) |
সাতঘাটের কড়ি | অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। |
সাতঘাটের জল একঘাটে করা১ | নানাধরনের লোককে একত্রিত করা। |
সাতঘাটের জল একঘাটে করা২ | নানা কৌশল প্রয়োগ করে কার্যসিদ্ধি করা। |
সাতঘাটের জল খাওয়া১ | নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করা। |
সাতঘাটের জল খাওয়া২ | নানাস্থানে চাকরি করা। |
সাতঘাটের জল খাওয়া৩ | নাজেহাল হওয়া। |
সাতঘাটের জল খাওয়ানো | নানাস্থানে ছুটিয়ে বা নানাকাজে ব্যস্ত রেখে কাউকে নাস্তানাবুদ করা। |
সাতচড়ে মশা মারা১ | বিরাট হইচই করে ছোট্ট কাজ করা; তুলনীয়- 'বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া'। |
সাতচড়ে মশা মারা২ | সামান্য কাজে অত্যন্ত বেগ পাওয়া। |
সাতচড়ে রা কাড়ে/বেড়োয় না | অত্যন্ত সাদাসিধা নিরীহপ্রকৃতির লোক। |
সাতচোঙার বুদ্ধি একচোঙায় ঢোকাবে | সবার বুদ্ধি নিয়ে কোন কাজ করা। |
সাতনকলে আসল খাস্তা/ভেস্তা | বহুবার নকল হলোে আসল আর নকলের সাদৃশ্য হারিয়ে যায়; ফলে নকল সম্পূর্ণ ভিন্নবস্তু হয়ে যায়; পাঠান্তর- 'পাঁচ নকলে আসল খাস্তা'। |
সাতপাঁচ খতিয়ে মনে চাষ করে না সোনার বেনে | হিসাবীলোক লাভলোকসান বিচার নকা করে কোন কাজে অগ্রসর হয় না; তুলনীয়- চলত্যেকেন পাদেন তিষ্ঠতি বুদ্ধিমান'। |
সাতপাঁচ ভেবে কাজ করা | অনেক ভেবেচিন্তে ধীরেসুস্থে কাজ করা; তুলনীয়- 'ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিও না'। |
সাতপাগলের ঘর খোদা রক্ষা কর | নানা চরিত্রের সদস্যের মতবিরোধে সংসারে চরম বিশৃঙ্খলা; পাঠান্তর- 'সাত কুঁড়ের ঘর খোদা রক্ষা কর'; 'সাত সতীনের ঘর খোদা রক্ষা কর'। |
সাতমণ তেলও পুড়বে না রাধাও নাঁচবে না | যে অসম্ভব ঘটনার প্রত্যাশায় বসে থাকা তা কোনদিন পূর্ণ হবে না; পাঠান্তর- নয় মণ তেলও পুড়বে না রাধাও নাঁচবে না'-প্রবাদটি দ্রষ্টব্য। |
সাত রাজার ধন এক মাণিক | পরম আদরের প্রিয়পাত্র/সন্তান; তুলনায়- 'সাগর সেঁচা মাণিক'। |
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার | বহু দূরদেশে অবস্থিত। |
সাত সতীনের ঘর খোদা রক্ষা কর | বহু সতীনের ঝগড়ায় সংসারে চরম বিশৃঙ্খলা; পাঠান্তর- 'সাত পাগলের ঘর খোদা রক্ষা কর'। |
সাতেও না পাঁচেও না | কোন কিছুতেই নেই। |
সাতেও হুঁ পাঁচেও হুঁ১ | ন্যায় অন্যায় বিচার না করে সব্তাতে মত দেওয়া বা সবকাজে সমর্থন করা। |
সাতেও হুঁ পাঁচেও হুঁ২ | ন্যায় হোক আর অন্যায় হোক সংক্ষিপ্ত উত্তরে এড়িয়ে যাওয়া। |
সাতেও যার হয় না সাতাশীতেও তার হয় না | একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বুদ্ধির বিকাশ হয় না; পাঠান্তর- 'ছয়েও যার হয় না ছিয়াত্তরেও তার হয় না'। |
সাদা আঙুরের মত কালো আঙুরও সমান মিষ্টি | বাইরের চামড়ার রঙ বস্তুর ভিতরের পরিচয় নয়; বাইরেরটা দেখে কিছুই বিচার করা উচিত নয়; তুলনায়- 'সব রক্তের রঙ লাল'। |
সাদাকে কালো এবং কালোকে সাদা করা | একনাগাড়ে মিথ্যা কথা বলা; তুলনায়- দিনকে রাত রাতকে দিন করা'। |
সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা | স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলা। |
সাদা মনে কাদা নেই | ভাললোক মন্দকাজ করে না। |
সাদা মনে কালি দেওয়া | কুমন্ত্রণা দিয়ে সরলমনকে কুটিল করে তোলা। |
সাদা মুল্লুক জাদা | বিভিন্নরঙের মধ্যে সাদারঙ শ্রেষ্ঠ। |
সাদার উপর কালির দাগ | ভাললোক মন্দকাজ করলে সকলের নজর পড়ে। |
সাধ করে শাল নেওয়া | বোকামি ক'রে বিপদ ঘরে ডেকে আনা; সমতুল্য- 'খাল কেটে কুমির আনা'; 'বাঁশ কেন ঝাড়ে আয় মার ঘাড়ে'। |
সাধ কত ছিল রে চিতে বেগুন গাছে আঁকশি দিতে | পাগলপানা ভাবনা; ভাবনার কোন মাথামুণ্ড নেই। |
সাধ কত ছিল রে চিতে মলের উপর চুটকি দিতে | অক্ষমের অসঙ্গত মনস্কামনা। |
সাধ করে বাদশা/সেকেন্দার হতে খোদা দেয় না মেগে খেতে | অনেক উচ্চ আশা নিয়ে বসে আছে কিন্তু বিধাতা ভিক্ষা করেও খাবার যোগাড় করতে দেয় না; তুলনায়- 'মানুষ সঙ্কল্প করে বিধাতা মিমাংসা করে'। |
সাধ করে বৈষ্ণব হতে প্রাণ যায় মোচ্ছব দিতে | সুখকর ভেবে কিছু পেতে হাত বাড়ায় কিন্তু কষ্টের কথা মনে করে পিছিয়ে আসে। |
সাধনা বিনা সিদ্ধি নাই | অনায়াসে কিছু পাওয়া যায় না; কিছু পেতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়; তুলনীয়- 'কণ্টকবিনা কমল হয় না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'খালি দুয়ায় পুয়া হয় না'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; পাঠান্তর- 'সাধিলেই সিদ্ধি'। |
সাধলে জামাই খান না, না-সাধলে পান না | সাধাসাধি করলে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়; পরে আগ বাড়িয়ে কাজ করতে এসে কাজ নষ্ট করে; পাঠান্তর- 'সাধলে জামাই কাঁঠাল খান না, শেষে জামাই ভোঁতা পান না'। |
সাধিলে রাধার মান বাড়ে | অভিমানক্ষুব্ধ মনকে সাধাসাধি করা হলোে অভিমান বেড়ে যায়। |
সাধিলেই সিদ্ধি অর্জিলেই নিধি | সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয়; পাওয়ার চেষ্টা করলে রত্নও পাওয়া যায়; তুলনীয়- 'যতনে রতন মেলে'। |
সাধু যার সঙ্কল্প ঈশ্বর তার সহায় | সঙ্কল্প সাধু হলোে সিদ্ধি অনিবার্য। |
সাধুর পরিচয় লোটা কম্বলে | ভেক না ধরলে জাত চেনা যায় না। |
সাধে কি আর বাপ বলি; গুঁতোর চোটে বাপ বলায় | বেকায়দায় পড়ে বশ্যতাস্বীকার; চাপের কাছে নতি স্বীকার; সমতুল্য- কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'গরজ বড় বালাই'; 'চাপের নাম বাপ'; ঠেকায় পড়লে ঠাকুরদাদি'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম'; ঠেলার নাম বাবাজী' ইত্যাদি। |
সাধে বিঁধলাম কান কাঠি দিতে যায় প্রাণ | সখ মিটাতে কোন কাজ ক'রে পরে ব্যতিব্যস্ত হওয়া। |
সাধের কমল তুলতে গিয়ে সোনার হাতে ফুটল কাঁটা | ইচ্ছা করে কষ্ট ডেকে আন; সমতুল্য- 'সাধ করে শাল নেওয়া'; সাধের কাজল পরতে গিয়ে কাজলনয়না হল কানা। |
সাধের কাজল পরতে গিয়ে কাজলনয়না হল কানা | তুলনীয়- 'সাধের কমল তুলতে গিয়ে সোনার হাতে ফুটল কাঁটা'। |
সানকির উপর বজ্রাঘাত | দুর্বলের উপর প্রবল আঘাত। |
সানুকূলে জগন্নাথে বিপ্রিয়ঃ সুপ্রিয়ো ভবতি | ঈশ্বর সহায় থাকলে অনিষ্ট হতেও ইষ্টলাভ হয়। |
সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে | বুদ্ধির জোরে এমন কৌশলে কাজ করা যাতে কার্যসিদ্ধি হয় এবং যার দ্বারা কার্যসিদ্ধি হলো তারও যেন ক্ষতি না হয়; তুলনীয়- 'ধরি মাছ ন ছুঁই পানি'। |
সাপকে পোষ মানিয়ে থলিতে পোড়া | কৌশলে শত্রুকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। |
সাপকে দুধ খাওয়ালে শুধু বিষ বাড়ে | যার যা ধর্ম; মন্দ তার স্বভাব কখনো ছাড়ে না; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মরে'। |
সাপকে মারলে শিবের লাগে১ | সাপ শিবের আশ্রয়ে থাকে ভাবার্থে- আশ্রিতকে আঘাত করতে নেই। |
সাপকে মারলে শিবের লাগে২ | সাপ মারা নেই; সাপ মানুষের উপকারে আসে; সাপ মারলে মঙ্গল হয় না। |
সাপ নিজের ছায়া দেখে চমকে দাঁড়ায় সেদিক বেঁকে | খলব্যক্তি কাউকে বিশ্বাস করে না; পাঠান্তর- 'সাপ নিজের ছায়ায় ছোবল মারে'। |
সাপ মরলে সোজা | খল মরলে খলতা শেষ হয়। |
সাপ হয়ে কাটে/কামড়ায় রোজা হয়ে ঝাড়ে | একই সাথে শত্রুতা করে আবার মিত্রতাও করে। |
সাপা ডরায় ব্যাঙাকে ব্যাঙা ডরাই সাপাকে১ | শত্রুসম্পর্কের জেরে পরস্পর শত্রু পরস্পরকে ভয় করে। |
সাপা ডরায় ব্যাঙাকে ব্যাঙা ডরাই সাপাকে২ | কেউ অপরাজেয় নয়। |
সাপে নেউলেসম্পর্ক | চিরস্থায়ী স্বভাব-শত্রুতার সম্পর্ক; তুলনীয়- কুকুর-বিড়ালেসম্পর্ক; পাঠান্তর- 'সাপ যেখানে নেউল সেখানে'। |
সাপের ছুঁচো গেলা১ | ইঁদুর ভেবে সাপ ছুঁচো ধরে; কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে ছুঁচোকে গিলতে পারে না আবার অন্ধ হয়ে যাবার ভয়ে ছাড়তে পারে না (প্রবাদ যে সাপ ছুঁচো ধরে ছেড়ে দিলে কানা হয়ে যায়।); যেখানে ছাড়লেও বিপদ আবার না ছাড়লেও বিপদ। |
সাপের ছুঁচো গেলা১ | ইঁদুর ভেবে সাপ ছুঁচো ধরে; কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে গিলতে পারে না আবার বাঁকা দাঁতের মধ্য দিয়ে উগরাতেও পারে না ভাবার্থে-ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাপারের সঙ্গে যুক্ত থাকা; উভয়সংকটে পড়া। |
সাপের দাঁতে বিষ দুর্জনের সর্বাঙ্গে বিষ | মানুষের মত বিষাক্ত জীব প্রাণীজগতে দ্বিতীয় আর হয় না। |
সাপের পাঁচ পা দেখা | অত্যন্ত স্পর্ধা প্রকাশ করা; কেউ বেয়াড়া ধরণের বাড়াবাড়ি করলে এই প্রবাদ বলা হয়। |
সাপের মুখে ঈষার মূল | ঈষার মূল সামনে ধরলে তার তীব্রগন্ধে সাপ অবসন্ন হয়ে পড়ে লক্ষণায়- তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়লে দুর্দান্ত চরিত্রের লোকও নেতিয়ে যায়; সমতুল্য- জোঁকের মুখে চুন/নুন। |
সাপের লেজে পা দেওয়া | দুর্দান্তচরিত্রের লোককে খোঁচা মেরে ক্ষেপিয়ে দিয়ে নিজের বিপদ সৃষ্টি করা; পাঠান্তর- 'সাপের গায়ে বারি মারা'। |
সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে | অভিজ্ঞচোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না; অভিজ্ঞব্যক্তি বস্তু চিনতে ভুল করে না; দুষ্টলোকের গতিবিধি বুদ্ধিমান ব্যক্তির বুঝতে কষ্ট হয় না; যার যে বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে সে সে বিষয় ভাল বোঝে; সমতুল্য- 'গাড়োয়ানের চুমকুড়ি গরু চেনে'। |
সাপের হাঁড়ি | অতিশয় কোপনস্বভাবা নারী। |
সাপের হাতে বেদের মরণ | বিপদকে নিয়ে নাড়াচড়া করলে বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
সাফল্য সাফল্য আনে | একবার সাফল্য এলে সাফল্য পরপর আসতে থাকে; তুলনীয়- 'সৎকল্যাণপরম্পরা'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ব্যর্থতা সাফল্যের জননী'। |
সাফল্যের কোন বিকল্প নেই | সাফল্যই সাফল্যের পুরস্কার; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অধ্যাবসায় সাফল্যের জননী'। |
সাফল্যের জন্য অপেক্ষা কর, প্রত্যেকেরই দিন আছে | সবার জীবনেই সৌভাগ্য বা সাফল্যের একটা সময় থাকে; তুলনীয়- 'সবুরে মেওয়া ফলে'। |
সাবধানের মার নেই | সদাসতর্ক লোক কখনও বিপদে পড়ে না; সমতুল্য- 'গোনাগরু বাঘে ধরে না'; 'জাগন্ত ঘরে চুরি নাই'; সম্পর্কীত প্রবাদ- চলত্যেকেন পাদেন তিষ্টতি বুদ্ধিমান'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মারের সাবধান নেই'। |
সামনে দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয় | মানুষমাত্রই রিপুর দাস/বশ; সমতুল্য- 'আলগা দিলে সন্ন্যাসীও মাতে'। |
সামনে দিয়ে মশা/মাছি/সূঁচ গলে না পিছন দিয়ে হাতী গলে | নিয়ম যতই কড়া হোক-না-কেন নিয়মের কিছু ফাঁক থেকে যায়; পাঠান্তর-'সদর দিয়ে মাছি গলে না, খিড়কি দিয়ে হাতি গলে'। |
সামনে দিয়ে আসা ভেড়াকে ভয় কর, পিছন দিয়ে আসা ঘোড়াকে ভয় কর, চতুর্দিক দিয়ে আসা মানুষকে ভয় কর | মানুষ সব থেকে বেশি হিংস্রপ্রাণী; তুলনীয়- কুকুর/সাপের দাঁতে বিষ, মানুষের সর্বাঙ্গে বিষ'। |
সারল্যং সরলে কুর্যাৎ, শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ | যে সরল ব্যবহার করে তার সাথে সরল ব্যবহার করবে এব যে শঠতার আশ্রয় নেয় তার সাগে শঠতা করবে; সমতুল্য- 'চতুরের সাথে চতুরালি'। |
সারাদিন থাকব নায় (নৌকা) কখন খড়ম দেব পায় | এককাজে ব্যস্ত থাকায় অন্যকাজ করতে অসমর্থ। |
সারাদিন বঁড়শি হাতে সন্ধ্যাবেলা আমড়া ভাতে | উদয়াস্ত পরিশ্রমের নীটফল শূন্য। |
সারাদিনের রূপরেখা ভোরবেলাতেই টানা হয় | কাজের সুষ্ঠ প্রাকপরিকল্পনা থাকে; পরিকল্পনা সুষ্ঠ হলে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। |
সাহসের ভরা (বজরা) ডোবে না | সাহস করে কোন কাজে হাত দিলে পরিশ্রম নিস্ফলা হয় না। |
সিংহের লেজ হওয়া থেকে ইঁদুরের/কুকুরের মাথা হওয়া ভাল | হীনভাবে বাঁচা যায় না; সমতুল্য- 'দাসত্ব মেনে সুখভোগ করা থেকে স্বাধীনভাবে দুঃখভোগ করা ভালো'; 'স্বর্গে দাসত্ব অপেক্ষা নরকে প্রভুত্ব ভাল'। |
সিংহ শিকার ধরে, ফেউ এসে ভাগ বসায় | বিনাপরিশ্রমে কার্যসিদ্ধি; ঘটনাচক্রে উত্তমের ভাগ অধমে খায়; সমতুল্য- 'উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ'; পাঠান্তর- 'সিংহের ভাগ শিয়ালে খায়'। |
সিকি পয়সার মা বাপ | অতি কৃপণলোক যে অত্যল্প পরিমাণ অর্থও খরচ করতে কাতর হয়। |
সিকেই তোল | বাদ দেও; রেখে দাও; ও সব কথা তোলার আর কোন প্রয়োজন নেই। |
সিজারের পত্নী সন্দেহের ঊর্ধ্বে | রাষ্ট্রনেতারা সবসময় সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকবেন। |
সিধা/সোজা আঙুলে ঘি উঠে না১ | সোজা উপায়ে কোন কাজ হয় না; হিন্দি পাঠান্তর- 'সিধি উঁগলি সে ঘি নহী নিকলতি'। |
সিধা/সোজা আঙুলে ঘি উঠে না২ | নরম শাসনে গরম বশীভূত হয় না। |
সিন্ধুকের কাছে ধার করা১ | প্রশংসায়- অত্যন্ত হিসাবীলোক যে অর্থের অপব্যয় করে না। |
সিন্ধুকের কাছে ধার করা১ | নিন্দায়- অতি কৃপণলোক যে নিজের টাকার সিন্ধুককে পর মনে করে; প্রয়োজনে সিন্ধুকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সুদসহ ফেরত দেয়। |
সিন্ধুতে বিন্দু | প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প পরিমাণ; পাঠান্তর- 'সাগরে একফোঁটা'। |
সিদ্ধি খেলে বুদ্ধি বাড় গাঁজা খেলে লক্ষ্মী ছাড়ে | দুই নেশাখোরের কৌতুকপ্রদ মধ্যে দ্বন্দ্ব; সিদ্ধিখোরের যুক্তি তার নেশাতে দোষ হয় না। |
সিন্নি দেখে এগোয় কোঁৎকা দেখে পেছোয় | লোভের বশবর্তী হয়ে এগোয় আবার শাস্তির ভয়ে পেছোয়; আগুপিছু না ভেবে লোভে পরে কাজ করা। |
সুখ যদি কপালে, কাঁথা কেন বগলে | কপাল বলে কিছু নেই; অলস লোকেরা ভাগ্যবলের কথা বলে; বিনাপরিশ্রমে সুখ মিলে না। |
সুখস্যানন্তরং দুঃখং দুঃখস্যানন্তরন সুখং | সুখের পর দুঃখ আসে, দুঃখের পর সুখ; সুখ ও দুঃখ চক্রের ন্যায় পরিবর্তিত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুঃখানি চ'। |
সুখ স্বপনে শান্তি শ্মশানে | কঠোর বাস্তবজীবনে স্বপ্নের মত চাইলেই সব পাওয়া যায় না; কঠোর পরিশ্রম করতে হয়; মরার পর সংসারের জ্বালাযন্ত্রণা আর ভোগ করতে হয় না। |
সুখে থাকতে ভূতে কিলায়১ | সুখের মর্যাদা না বুঝে স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণ করা। |
সুখে থাকতে ভূতে কিলায়২ | অকারণে দুঃখ ডেকে আনে; সমতুল্য- '\খাল কেটে কুমির আনা'; 'ঝাড়ের বাঁশ ঘাড়ে'। |
সুখের ঘরে রূপের বাসা | সুখ থাকলে শ্রীও থাকে; সুখী পরিবারের সবাই সুশ্রী হয়। |
সুখের চেয়ে/থেকে স্বস্তি ভাল | ঐশ্বর্যের আড়ম্বর থেকে নিড়াম্বর জীবনের স্বস্তি অনেক ভাল। |
সুখের পায়রা | সম্পদের সময়ে পাশে থাকে বিপদের সময়ে সরে যায়; সুদিনের বন্ধু; দুর্দিনের কেউ নয়; সমতুল্য- 'দুধের মাছি'; 'ফুলের ভ্রমরা'; 'বসন্তের কোকিল'; 'শরতের শিশির' ইত্যাদি। |
সূচনা শুভ হলোে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয় | কাজের পরিকল্পনাতে অর্ধেক সময় ব্যয় হয়। |
সুজনপিরীত সোনা ভেঙ্গে গড়া যায়, কুজনপিরীত কাঁচ ভাঙ্গিলে ফুরায় | সুজনের সঙ্গে প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করা যায় এবং সোনার গহণা ভেঙ্গে নতুন গহণা গড়া যায়; কুজনের সাথে প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না এবং কাঁচ একবার ভাঙ্গলে আর জোড়া দেওয়া যায় না; তুলনীয়- 'সূঁচ সোহাগা সুজন ভাঙা গড়ে তিনজন'। |
সুদিনের বারো ভাই, দুর্দিনের কেউ নাই | অনেকেই সুখের ভাগী হতো ভিড় জমায় দুঃখের ভাগী হয় না। |
সুদৃঢ়স্যাপি বন্ধস্য পুর্ব্বাবন্ধ্যঃ শ্লথায়তে | কড়াবাঁধনের উপর আরো বাঁধন দিলে আগের বাঁধন আলগা হয়; তুলনীয়- 'বেশি টানলে সূতা ছেঁড়ে'। |
সুনাম তিলেতিলে অর্জিত হয় আর একলহমায় নষ্ট হয় | যেকোন সৃষ্টি ধীরে ধীরে গড়ে উঠে এবং ধ্বংস তড়িৎদতিতে সম্পন্ন হয়। |
সুন্দর ঘোড়া অসুন্দর রঙের হয় না | সুন্দরের সবকিছু সুন্দর হয়। |
সুন্দরবনে বাঁদর রাজা | যেখানে ভাল লোক নেই সেখানে সাধারণেরা প্রভুত্ব করে; সমতুল্য- 'বাঁশবনে শিয়াল রাজা'; 'বৃক্ষহীনদেশে এরণ্ড বৃক্ষ'; পাঠান্তর- 'সোঁদরবনে বাঁদর রাজা'। |
সুন্দর মুখের আড়ালে কুৎসিত হৃদয় লুকিয়ে থাকে | সবার ভ্রান্ত ধারণে যে সুন্দর দেখতে হলেই যে তার ব্যবহার সুন্দর হবে; বাস্তবে অনেকসময় তা হয় না; তুলনীয়- 'মুখোশের আড়ালে কুতসিৎ মুখ লুকায়'। |
সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র | সুন্দরকে কে না-পছন্দ করে; তুলনীয়- 'যো দেখ্তা হায় উও বিক্তা হায়'। |
সুন্দর সত্য, সত্য সুন্দর | সৃষ্টির সবকিছু সুন্দর; যেখানে সুন্দর আছে সেখানেই সত্য লুকিয়ে আছে; আবার যেখানে সত্য আছে সেখানেই সুন্দর লুকিয়ে আছে। |
সুন্দরের পূজারী সুন্দর হয় | গুণী গুণের কদর করে। |
সুবিধাবাদীরা বিনয়ী হয়, বিনয়ীরা সুবিধাবাদী নয় | অসতেরা ভান করে; সতেরা কখনো ভান করে না। |
সুযোগ একবার এসে দ্বারে কড়া নেড়ে চলে যায়, ফিরে আসে না | বারবার সুযোগ পাওয়া যায় না; সুতরাং পাওয়া সুযোগ নষ্ট করতে নেই। |
সুযোগ পেলে সবাই চোর | লোভহীন লোক নেই; পাঠান্তর- 'সুযোগ পেলে সাধুও চোর হয়'। |
সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয় | সুখের সময় অনেকে এসে ভিড় জমায়, বিপদের সময় তারাই প্রথম সরে দাঁড়ায়; সমতুল্য- 'ভাগের ভাগী মন্দের কেউ নয়'; পাঠান্তর- 'সময়ের বন্ধু অসময়ে কেউ নয়'। |
সুস্থ দেহে সুস্থ মন | সুস্থ মন পেতে হলে আমাদের শরীর সুস্থ রাখা দরকার। |
সুঁচ গড়তে পারে না বন্দুকের/শাবলের বায়না নেয় | ছোট কাজ করার ক্ষমতা নেই বড় কাজের বরাত নেয়। |
সুঁচ চলে না বেটে (মোটা দড়ি) চালায় | যেখানে ছোট কাজও হওয়ার কথা নয় সেখানে কৌশলে বড় কাজ ক'রে ফেলা। |
সূঁচ সোহাগা সুজন ভাঙা গড়ে তিনজন | এই তিনজন সৃষ্টির কারিগর; সুঁচ ছেঁড়া কাপড়কে সিলাই করে নতুন করে; সোহাগা ভাঙা গহণা জুড়ে নতুন করে এবং সাধুব্যক্তি চরিত্রগুণে শত্রুকে মিত্র করে; তুলনীয়- 'সুজনপিরীত সোনা ভেঙ্গে গড়া যায়, কুজনপিরীত কাঁচ ভাঙ্গিলে ফুরায়'। |
সূঁচ হয়ে ঢোকে ফাল (লাঙলের ফলা) হয়ে বেরোয়১ | সামান্য হয়ে প্রবেশ করে পরে বিশাল আকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। |
সূঁচ হয়ে ঢোকে ফাল হয়ে বেরোয়২ | বন্ধু সেজে অন্তরঙ্গ হয়, পরে বন্ধুর দুর্বলতা জেনে নিয়ে তার বিনাশ করে। |
সূর্যের আলোয় চাঁদ লুকায় | বিরাটের সাথে নগণ্যের তুলনা হয় না; বিরাট সামনে থাকলে সামান্য আড়ালে চলে যায়; তুলনীয়- 'চাঁদের কাছে জোনাকি, ঢাকের কাছে টেমটেমি'। |
সূর্যের চেয়ে বালি গরম/তপ্ত বেশী | আসলের চেয়ে নকলের হম্বিতম্বি বেশী; সমতুল্য- 'গুরু থেকে শিষ্য তীক্ষ্ণ'; 'দারোগার চেয়ে চৌকিদারের হাঁক বেশি'; নেতার চেয়ে অনুচরের লম্ফঝম্ফ বেশী';' বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়'; 'বাপের চেয়ে ছেলে কড়া' ইত্যাদি। |
সৃষ্টির সবকিছু সুন্দর কিন্তু সকলে সেটা দেখতে পায় না | সুন্দরকে অনুভব করতে গেলে সুন্দর চোখ/মন থাকা চাই। |
সেই গাধা জল খায় তবু গাধা ঘুলিয়ে খায় | না-ঘুলিয়ে গাধা জল খায না লক্ষণায়- মন্দলোক কুপ্রবৃত্তি ছাড়তে পারে না; সমতুল্য- 'স্বভাব যায় না মলে'। |
সেই তো নথ/মল খসালি তবে কেন লোক হাসালি | আগে অস্বীকৃত হয়ে পরে উপযাজক হয় কোন কাজ করতে রাজী হওয়া; অনর্থক ভণিতা করা; সমতুল্য- 'সেই বুড়ি নাচে কত কাচ কাচে'। |
সেইদিন আর এইদিন | দুই সময়ের মধ্যে কোন তুলনা হয় না; সেইদিনগুলি বড় ভালো ছিল, এখনকার দিনগুলি বড় মন্দ; সমতুল সংস্কৃত প্রবাদ- 'তে হি নো দিবসা গতাঃ'; পাঠান্তর- 'সেই একদিন আর এই একদিন'। |
সেইদিন আর নাইরে নাতু (নাতি) খাবলা খাবলা খাবা ছাতু | প্রাচুর্যের দিনগুলি চলে গেছে এখন কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন চলবে; পাঠান্তর- 'সেইদিন আর নাইরে নাতি খাবোরে খাবোরে বলে নাচি'। |
সেই ধান সেই চাউল, গিন্নিবিনা আউল-ছাউল | সংসারে সবকিছু আগের মতই আছে, কিন্তু গিন্নীর অভাবে সব নষ্ট হতে বসেছে; পাঠান্তর- 'সেই ধানে সেই চাল, গিন্নিবিনে আলথাল'। |
সেই বুড়ি নাচে কত কাচ কাচে | প্রথমে অনুরোধ না রাখার নানা বাহানা দেখিয়ে পরে আগবাড়িয়ে অনুরোধ রক্ষা করা; সমতুল্য- 'সেই তো নথ/মল খসালি তবে কেন লোক হাসালি'। |
সেই সবচেয়ে শক্তিশালী যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে | রাগ রিপুকে সংযত রাখা সব থেকে কঠিন কাজ। |
সেকরাবাড়ীর বেড়াল টুকটুকনিতে ভয় পায় না | যে একবিষয় বারংবার দেখে অভ্যস্ত সে বিস্মিত বা ভীত হয় না। |
সেকরার কাছে মেকি চালনো | উপরচালাকি; চতুরের সাথে চাতুরী; অভিজ্ঞ চোখকে ফাঁকি দেওয়া সোজা নয়; তুলনীয়- 'কামারের কাছে লোহা চুরি'; পাঠান্তর- 'বেনের কাছে মেকি চালান'; 'সেকরা কাছে সোনা চুরি'। |
সেকরার টুকটাক কামারের এক ঘা | কামারের এক ঘা সেকরার শত ঘায়ের আঘাতের সমান; বারবার উত্যক্ত হয়ে কেউ যদি এক আঘাতেই উত্যক্তকারীকে ঠাণ্ডা করে তবে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'সৌ সুনার কী এক লোহার কী'। |
সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর | বেশি কথায় আজেবাজে কথা বেশি থাকে। |
সে কাল গেছে বয়ে এঁটে কচুঘেচু খেয়ে | চলেও যাওয়া দুঃখের দিনগুলির কথা ভুক্তভোগী সুখের দিনগুলিতে স্মরণে আনতে চায় না। |
সে গুড়ে বালি | যে আশা করছো তা সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। |
সেতু পার হতে হলে আগে সেতুর কাছে পৌঁছাও | আগাম অনুমান করা অনুচিত; কার্যক্ষেত্রে না নামলে কাজ সম্পন্ন হয় না। |
সেধে পেড়ে ভাব মেজে ঘষে রূপ | সাধাসাধি করে প্রণয় আর ঘষামাজা করে রূপ বেশিদিন টেকে না। |
সেধো ভাত খাবি? না হাত ধুয়ে বসে আছি১ | কাজ করার জন্য আগাম প্রস্তুত। |
সেধো ভাত খাবি? না হাত ধুয়ে বসে আছি২ | লোভীর প্রতীক্ষা। |
সে বড় কঠিন ঠাঁই গুরু শিষ্যে দেখা নেই১ | কোনস্থানে নিষেধের কড়াকড়ি বা বাড়াবাড়ি থাকলে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
সে বড় কঠিন ঠাঁই গুরু শিষ্যে দেখা নেই২ | শিক্ষার পরিবেশ না থাকলে দেশে দুর্দিন আসন্ন। |
সে রামও নাই, সে অযোধ্যাও নাই | রামের মত সুশাসক নেই তাই সুশাসন নেই; সেই সুখ আর নাই, সুখের দিনগুলি এখন অতীত; কোন বিষয়ের অধঃপতন হলোে পূর্বাবস্থার স্মরণে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। |
সেবকায়ে পুরাতনে | নতুন জামাকাপড়, বাড়ীঘর ভাল, কিন্তু অন্ন ও ভৃত্য পুরাতন হলেই ভাল; তুলনীয়- 'পুরানো চাল ভাতে বাড়ে'। |
সেয়ানা ঘুঘুর ছা, ফাঁদে দেয় না পা | খুব চতুরব্যক্তিকে সহজে বশীভূত করা যায় না। |
সেয়ানা ঠকলে বাপকেও বলে না | চতুরব্যক্তি তার লজ্জার কথা খুব গোপন রাখে, এমনকি নিজের অতি কাছের লোককেও বলে না। |
সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি/মিতালি | দুই শঠের মধ্যে সদ্ভাবের আড়ালে শত্রুতা; সামনে হাসি, পিছনে ছুরি |
সেরকে পশুরি চুরি | একসের দিতে গিয়ে পাঁচসের চুরি; বিরাট আকারের জোচ্চুরি; তুলনীয়- 'দিনে দুপুরে ডাকাতি'। |
সোঁদর বনে বানর রাজা | যেখানে বিদ্বান লোক নেই সেখানে অল্প বিদ্বানেরা পাণ্ডিত্য ফলায়; সমতুল্য- 'দূর্বাবনে খটাশই বাঘ'; 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল'; 'নিরস্ত পাদপদেশে এড়েণ্ডোহপি দ্রূমায়তে' ইত্যাদি। |
সোজা আঙুলে ঘি ওঠে/বেরোয় না | ভাল কথায় কাজ হয় না; নরম ব্যবহারে বশীভূত করা যায় না; কড়া শাসনে লোক নিয়ম মেনে চলে; হিন্দি পাঠান্তর- 'সিধি উঁগলি সে ঘি নহী নিকলতা হৈ'। |
সোজা পা কখনো বাঁকা জুতাকে ডরায় না | সজ্জন কখনো দুর্জনকে ডরায় না। |
সোনা বলে জ্ঞান ছিল কলিতে পিতল হলো | আগে গুণীব্যক্তি বলে ধারণা ছিল কিন্তু ব্যবহারে জানা গেল অতি সাধারণব্যক্তি। |
সোনা বাইরে ফেলে আঁচলে গেরো | সন্তানের অমঙ্গলের আশঙ্কায় তুকতাক; সন্তান দুরদেশে থাকলে তার মঙ্গল কামনায় মায়েরা কোল-আঁচলে গিঁট দেয়। |
সোনায় সোহাগা | উপযুক্ত মেলবন্ধন; শুভ সংযোগ; যে দুটি বিষয়ের মিলন সার্থক হয়। |
সোনার অঙ্গ কালি হলো | প্রচণ্ড খাটুনিতে উজ্জ্বল শরীর মলিন। |
সোনার আংটি বাঁকা আর সোজা | গুণীর বিচার রূপে হয় না গুণে হয়। |
সোনার উপর মিনের কাজ | সৌন্দর্যের সৌন্দর্যবৃদ্ধি; মণিকাঞ্চনযোগ। |
সোনার ওজন কুঁচের সহিত১ | উৎকৃষ্টের সাথে নিকৃষ্টের তুলনা করা; সমতুল্য- 'কিসে আর কিসে সোনা আর সিসে'; 'কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকির তলা'; 'কোথায় রাজা ভোজ আর কোথায় গঙ্গু তেলি'। |
সোনার ওজন কুঁচের সহিত২ | উৎকৃষ্টেরও নিকৃষ্টের সহায়তা লাগে। |
সোনার জলে গিলটি করা | সোনার মতো চকচকে করে তোলা; রঙের জেল্লায় রাঙিয়ে দেওয়া। |
সোনার থালে ক্ষুদের জাউ | উত্তমের সাথে অধমের অনুচিত অসঙ্গত বা বিষম মিলন; পাঠান্তর- 'সোনার হাতায় যবের ছাতু'; 'সোনার দাঁড়ে দাঁড়কাক'। |
সোনার পাথরবাটি | অবাস্তব কথা, যা কখনো হতে পারে না; সমতুল্য- 'কাঁঠালের আমসত্ব'। |
সোনার লঙ্কা ছারখার | সুখসমৃদ্ধিপূর্ণ সংসারের সম্পূর্ণ বিনাশ; পাঠান্তর- ‘রাবণের পুরী ছারখার’। |
সোৎসাহানাং নাস্ত্যসাধ্যং নরাণাং | উৎসাহীব্যক্তির অসাধ্য কিছুই নেই। |
সৌ সুনার কী এক লোহার কী | বলবানের এক ঘা দুর্বলের একশ ঘায়ের সমান; সমতুল্য- 'সেকরার টুকটাক, কামারের এক ঘা'। |
সৌজন্যের কাছে সব দরজা খোলা | সুজন সবাইকে আপন ভেবে বরণ করে; সুজনের কাছে 'বসুধৈব কুটুম্বম'। |
সৌজন্যের খরচ নেই, লাভ আছে অনেক | শালীনতা শেখানোর শিক্ষায়তন নেই; আপনগুণে ব্যক্তি শালীন হয়। |
সৌন্দর্য চামচ দিয়ে খাওয়ার জিনিস নয় | সৌন্দর্য খাওয়ার নয়, অনুভব করার জিনিস; মুগ্ধনয়নে সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। |
সৌন্দর্য ত্বকের গভীরে বিদ্যমান | মানুষের হৃদয়ে সৌন্দর্যের রূপ ধরা পড়ে। |
সৌভাগ্য পাওয়া সহজ, ধরে রাখা কঠিন | সৌভাগ্য আপনা হতেই আসে; তাকে ধরে রাখতে হলোে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। |
সৌভাগ্যদেবী সাহসীকে বরণ করে | যে ঝুঁকি নিতে সাহসী হয় সেই সফল হয়। |
সৌরভে ভ্রমর মজে | পদ্মমধু খেতে গিয়ে ভোমরা রাতের বেলায় পদ্মের মাঝে আটকা পড়ে লক্ষণায় রূপের জালে আটকা পড়া; সুখ মিটাতে গিয়ে বিপন্ন হওয়া। |
সৌ সুনার কী এক লোহার কী | কামারের এক ঘা সেকরার শত ঘায়ের আঘাতের সমান; বারবার উত্যক্ত হয়ে কেউ যদি এক আঘাতেই উত্যক্তকারীকে ঠাণ্ডা করে তবে এই প্রবাদ উক্ত হয়; বাংলা পাঠান্তর- 'সেকরার টুকটাক কামারের এক ঘা'। |
স্তব্ধস্য বিদ্যা নিস্ফলা | প্রয়োগহীন বিদ্যা নিস্ফল; যেব্যক্তি অধীত বিদ্যা দান করে না, তার বিদ্যার্জন ব্যর্থ। |
স্তোত্রং কস্য ন তুষ্টয়ে | প্রশংসাবাণী শুনে কেইবা না তুষ্ট হয়? |
স্ত্রিয়া নাস্তি স্বতন্ত্রতা | স্ত্রীলোক- শৈশবে পিতার অধীন, যৌবনে স্বামীর অধীন এবং বৃদ্ধবয়সে পুত্রের অধীনে থাকে; সুতরাং স্ত্রীলোকের স্বাধীনতা নেই। |
স্ত্রিয়াশ্চরিত্রং পুরুষস্য ভাগ্যং দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যাঃ | স্ত্রীলোকের প্রকৃতি ও পুরুষের ভাগ্য দেবতারাই জানে না, মানুষ তো কোন ছার। |
স্ত্রীবুদ্ধিঃ প্রলয়ংকারী | বুদ্ধিহীনা নারী বিপথে নিয়ে যায়; তার বুদ্ধিতে চললে পদেপদে বিপদের আশঙ্কা থাকে। |
স্ত্রীভাগ্যে ধন পুরুষভাগ্যে জন | স্ত্রীর অদৃষ্ট ভাল হলে ধনলাভ হয়; পুরুষের অদৃষ্ট ভাল হলে পুত্রলাভ হয়। |
স্ত্রীর রুচিবোধকে খাটো করো না যে তোমাকেই প্রথম পছন্দ করেছে | রত্নস্বরূপা স্ত্রী পরম আদরণীয় আত্মীয়, হেলাফেলা করার বস্তু নয়। |
স্ত্রীরত্নং দুস্কুলাদপি | কন্যা গুণবতী হলে নীচুঘরের সাথেও সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। |
স্ত্রীলোকের আবরণ চরিত্র | দুশ্চরিত্রা নারী সমাজে সম্মান পায় না। |
স্ত্রীলোকের লজ্জাই ভূষণ | লজ্জা স্ত্রীলোকের অলঙ্কারস্বরূপ। |
স্থানস্থিত কাপুরুষোহপি সিংহঃ | স্থানবিশেষে থাকলে কাপুরুষও সিংহের বিক্রম দেখায়। |
স্নেহ অতি বিষম বস্তু | স্নেহ অন্ধ হলে বিষমবস্তুতে পরিণত হয়; তার সাক্ষ্য- ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধ স্নেহে কৌরববংশ ধ্বংস হয়। |
স্নেহ নিম্নগামী | অল্পবয়সীরা বয়স্কদের স্নেহধন্য হয়; বাৎসল্য রস সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
স্পষ্ট কথায় কষ্ট নাই | খোলা জবাবে কষ্ট হয় না; সত্যকথা বলতে কোন দ্বিধা বা বিড়ম্বনা নেই; খোলা জবাবে ক্ষতি হয় না; পাঠান্তর- 'স্পষ্ট কথার মার নেই'। |
স্পষ্ট কথা স্পষ্টাস্পষ্টি বলাই ভাল | সত্য কথা সোজাসুজি বলা উচিৎ। |
স্পষ্ট কথায় বুদ্ধিমান তুষ্ট, আহাম্মক রুষ্ট | গুণী সত্যকথা শুনতে পছন্দ করে এবং নির্গুণ শুনে করুদ্ধ হয়। |
স্পেডকে স্পেড বল | যা বলতে চাও তা সোজাসুজি বল। |
স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হয় | ক্ষেত্র অগ্নিগর্ভ হলোে সব জ্বালিয়ে পুড়িতে দিতে একটা দেশলাই কাঠি যথেষ্ট। |
স্মৃতি সততঃ সুখের১ | অতীতের ঘটনার রোমন্থন করতে সবাই ভালবাস। |
স্মৃতি সততঃ সুখের২ | হাতে থাকা জিনিসটার চেয়ে হাতছাড়া জিনিসটার জন্য আক্ষেপ বেশি হয়; তুলনীয়- 'যে কাল যায় সেই কাল ভালো ছিল'। |
স্বকর্ম ভোগং কুরুতে জীবং কপালমূলং খলু সর্বদুঃখম | জীব স্বকৃতকর্মফল ভোগ করে; কপালই সব দুঃখকষ্টের মূলকারণ; সম্পর্কীত প্রবাদ-'কিংবা স্বয়ম্ভূ শিবশক্তিবিষ্ণুঃ কপালদুঃখং ন করোতি দূরম্'। |
স্বখাত সলিল ডুবে মরা | নিজের দোষে শাস্তিভোগ; তুলনীয়- 'নিজের কাটা গর্তে পড়ে পা খোঁড়া'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। |
স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্ব্বত্র পূজ্যতে | রাজা শুধু নিজের দেশে সম্মান পায়; গুণী দেশ বিদেশ দর্বত্র সম্মান পায়। |
স্বদেশের ঠাকুর ফেলে, বিদেশের কুকুর ভজে | পরাধীন জাতের দাসসুলভ মানসিকতায় বিদেশের সবকিছু ভাল এই মনোভাব। |
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ | আত্মধর্মে মৃত্যুও শ্রেয় তবুও পরধর্ম গ্রহণ করা নেই; নিজধর্মে বিশ্বাস থাকা উচিৎ; পরধর্মে আস্থা নিন্দনীয়। |
স্বনামা পুরুষো ধন্য | যে পুরুষ সুকীর্তির জন্য বিখ্যাত তিনি ধন্য। |
স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো,স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।’ | বড় হওয়ার আকাঙ্খাই সব থেকে বড় স্বপ্ন। |
স্বপ্নেরও অগোচর | স্বপ্নে সচরাচর আমরা অসম্ভব ঘটানাগুলি দেখি; কিন্তু এমন ঘটনা স্বপ্নেও দেখা সম্ভব নয়; অতি অসম্ভব ঘটনা। |
স্বভাব যায় না মলে | যার যা স্বভাব সে তা কখনো ত্যাগ করে না; কুলোক কখনো কুপ্রবৃত্তি ছাড়ে না; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'স্বভাবো মূর্ধ্নি বর্ততে'; 'স্বভাবো যাদৃশো যঃ ন জহাতি কদাচন'; সমতুল্য- 'অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি';'আদা শুকালেও ঝাল যায়না';'কয়লা ধুলে ময়লা যায় না'; 'কুকুরের লেজে ঘি মাখলেও সোজা হয় না; ইত্যাদি। |
স্বভাব যায় না মলে ইল্লৎ যায় না ধুলে; | অপবিত্র জিনিস সেমন পবিত্র হয় না তেমনি নোংরা মন ধুলে পরিষ্কার হয় না। |
স্বভাবে করে না অভাবে করে | অভাব হলোে অবস্থার চাপে ভালমানুষও অসৎ হয়; সৎ থাকা খুবই কষ্টকর; সমতুল্য- 'অভাবে স্বভাব নষ্ট'। |
স্বয়ং অসিদ্ধঃ কথং পরাণ্ সাধয়েৎ | যে নিজেই সিদ্ধ নয় সে অন্যকে সিদ্ধিদান করবে কীভাবে? |
স্বর্গে বাতি দেওয়া১ | মৃত পূর্বপুরুষের উদ্দেশে আকাশপ্রদীপ (কার্তিকমাসে সন্ধ্যাকালে উঁচুবাঁশের মাথায় জ্বেলে রাখা বাতি) জ্বালা। |
স্বর্গে বাতি দেওয়া২ | বংশরক্ষা করা। |
স্বর্গের দাসত্ব অপেক্ষা নরকের প্রভুত্ব/রাজত্ব ভাল | পরাধীনভাবে সুখভোগ করা থেকে স্বাধীনভাবে দুঃখভোগ করা অনেক ভাল; সমতুল্য- সিংহের লেজ হওয়া থেকে ইঁদুরের/কুকুরের মাথা হওয়া ভাল'। |
স্বল্পাবিদ্যা ভয়ঙ্করী | সামান্য বিদ্যার জোরে কোন কাজে হাত দিলে অর্থ থেকে অনর্থ হয় বেশি। |
স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় | দাসত্বের শৃঙ্খল কেউ পরতে চায় না; তুলনীয়- 'চলার পথ বলার মুখ কেউ বন্ধ করতে পারে না'। |
স্বামী ভাল হলে স্ত্রী ভালো হয় | পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে শ্রদ্ধা পাওয়া যায় না। |
স্বামীর হাতে ধন থাকলে স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী | বিশ্বাস যে স্ত্রীভাগ্যেই স্বামী অর্থসঞ্চয়ে সমর্থ হয়েছে; তুলনীয়-'স্ত্রীভাগ্যে ধন পুরুষভাগ্যে জন'। |
স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে সে কভু শেখেনি বাঁচিতে | আমিত্ব নিয়ে বাঁচা যায় না; বাঁচতে গেলে সহায় চাই; আত্মসুখমগ্ন মানুষের কাছে জীবনের আনন্দ অধরা থেকে যায়; সমতুল্য- 'পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি এ জীবন মন সকলি দাও'; 'শুধু স্বার্থ নয়, স্বার্থত্যাগও আছে এ সংসারে'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আগে আমি পরে বাপ'; 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'নবকুমারকে বাঘে খায়'; 'স্বার্থছাড়া মানুষ পা নড়ে না' ইত্যাদি। |
স্বার্থের টানে জগৎ চলে | বিনাস্বার্থে কেউ এক পা নড়ে না; কেউ কারো বন্ধু নয়, শত্রু নয়। |
স্বাস্থ্যই সম্পদ | স্বাস্থ্যই সকল সুখের উৎস; স্বাস্থ্য ভালো তো মন ভালো; মন ভালো তো ব্যাধি দূর। |
স্রোতে গা ঢালা/ স্রোতে ভাসা | সচেষ্ট হয়ে কিছু না করা; কোন ঘটনার উদ্ভব হলোে যা-হচ্ছে-হোক এই মনোভাব নিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা। |
হ
প্রবাদ-প্রবচন | অর্থ |
---|---|
হওয়া ছেলে যায় গড়াগড়ি পেটের ছেলের জন্য বালা গড়ি | যেদিকে নজর প্রয়োজন সেদিকে নজর নেই, যেদিকে নজরের
প্রয়োজন নেই সেদিকে বেশি নজর; আসন্ন প্রয়োজন নিয়ে ব্যস্ততা; আগাম সুখকল্পনা; সমতুল্য- 'রাবণের ছাদনাতলা'; 'হবু ছেলের অন্নপ্রাশন'। |
হওয়া ভাতে কাঠি | কাজ শেষ হয়ে গেলে তাতে সাহায্য করতে আসা; সমতুল্য- 'চোর চলে গেলে চৌকিদার হাজির'। |
হংসমধ্যে বকো যথা | হাঁসের পালের মধ্যে বকের উপস্থিতি যেমন বিসদৃশ তেমনি গুণীজনের মাঝে মূর্খের উপস্থিতি বিসদৃশ। |
হক কথায় আহাম্মক রুষ্ট | উচিত/সত্য কথা বললে নির্বোধ ব্যক্তিরা রুষ্ট হোয়; অপরপক্ষে বুদ্ধিমান সন্তুষ্ট হয়। |
হক কথায় দেবতা তুষ্ট, হক কথায় মানুষ রুষ্ট | দেবতুল্যলোক উচিৎ কথা শুনে সন্তুষ্ট হন, কিন্তু সাধারণ মানুষেরা উচিৎ কথা শুনে ক্ষেপে যায়। |
হক কথায় বন্ধু বেজার | সত্যকথা বললে আপনজনও অপছন্দ করে; সুতরাং মা ব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম; পাঠান্তর- 'গরমভাতে বিড়াল বেজার, উচিৎকথায় বন্ধু বেজার'; 'হক কথায় মামা বেজার'। |
হক কথার ভাত নেই | উচিত/সত্য কথা শুনতে নারাজ। |
হক কথার মার নেই | সত্য কথা বলায় বিঘ্ন নেই। |
হতা রূপবতী বন্ধ্যা | রূপবতী নারী বন্ধ্যা হলে তার রূপের কোন মূল্য নেই। |
হবচন্দ্র রাজার গবচন্দ্র মন্ত্রী | যেমন হাঁদারাম রাজা তেমনি গাধারাম মন্ত্রণাদাতা; অকর্মণ্য ব্যক্তির ততোধিক অযোগ্য দোসর; নির্বোধ লোকের নির্বোধ পরামর্শদাতা; মূলপ্রবাদ- ভবচন্দ্র রাজার গবচন্দ্র মন্ত্রী; (উৎসকাহিনী- কামরূপের রাজা গোবিন্দচন্দ্রের পুত্র উদয়চন্দ্রের ডাক নাম ছিল ভব; তিনি ছিলেন অচতুর; তাঁর মন্ত্রীও ছিলেন তাঁর মত সমান নির্বোধ; সেইজন্য হাবারাম অর্থে- ভব হয়েছেন হব বা হবু এবং গবারাম অর্থে- মন্ত্রী হয়েছেন গব বা গবু; পাঠান্তর্- 'হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী’। |
হবুছেলের অন্নপ্রাশন | আগাম সুখকল্পনা; পরে কি হবে জানে না আগে থেকেই প্রস্তুতি; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'রাবণের ছাদনাতলা'; রাম না হতেই রামায়ণ' ইত্যাদি। |
হ-য-ব-র-ল | পঞ্চবর্ণ ‘য-ব-র-ল-হ’ ক্রমের বিভ্রাটে ‘হ-য-ব-র-ল’ হয়েছে; কোন কাজে বিশৃঙ্খলা হলোে বা গোলমাল দেখা দিলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। |
হয় না-হয় বিয়ে, ঢাক বাজাও গিয়ে | বিয়ের ঠিক নেই তারজন্য আগাম ব্যস্ততা; আদিখ্যেতা, বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'বর-কনের দেখা নাই শুক্কুরবারে বিয়ে'; 'হবু ছেলের অন্নপ্রাশন'। |
হয় যদি তিলটা, কয় তবে তালটা | ঘটনার বর্ণনায় অযথা বাড়াবাড় করা। |
হর চমকনেওয়ালী চিজ সোনা নহি হোতী | যা কিছু চমকায় তার সবই সোনা নয়; বাংলা পাঠান্তর- 'যা চকচক করে তাই সোনা নয়'। |
হরি ঘোষের গোয়াল | নিস্কর্মা লোকেদের আড্ডাস্থল; (উৎসকাহিনী-অতীতে কোলকাতানিবাসী হরি ঘোষ নামে এক ধনীব্যক্তি নিস্কর্মা আত্মীয়দের প্রতিপালন করতেন; কোন নিস্কর্মা ব্যক্তি একবার তাঁর শরণ নিলেই আশ্রয় পেয়ে যেত; এইসব লোকের আবাসস্থল হওয়ায তাঁর বাড়ির নাম হয়েছিল- 'হরি ঘোষের গোয়াল'; কথায় বলে- 'হরি ঘোষের গোয়াল পেয়েছে'; 'হরি ঘোষের গোয়াল বানিয়ে ফেলেছে'।) |
হরিণের শত্রু তার মাংস | মাংসের লোভে বাঘ হরিণ মারে; হরিণ নিজেই নিজের শত্রু;যখন কোন ভালকাজ খারাপ কাজে পরিণত হয় তখন এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'আপনা মানসে হরিণী বৈরী'। |
হরিণের শিঙে মাছি বসে না | সদা চঞ্চল হরিণের শিঙে মাছি বসতে পারে না; এই লক্ষণায়-গতিশীল মনে ময়লা ধরে না; সমতুল্য- 'গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না'; স্রোতস্বিনী নদীতে ঝাঁঝি জমে না'। |
হরিনামে খোঁজ নেই স্ফটিকের রাঙা থোপ (গুচ্ছ) | মুখে হরির নাম নেই; অথচ গলায় স্ফটিকের মালা পরে আছে; অকাজের লোকের আড়ম্বর বেশি; তুলনীয়- 'অকর্মা নাপিতের থলিভরা ক্ষুর'। |
হরি বড় দয়াময়, কথায় বটে কাজে নয় | কোন ব্যক্তিকে লোকে দয়ালু বলে জানে অথচ অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে। |
হরি বাঁচান প্রাণ, বৈদ্যের বাড়ে মান | একজন কাজ করে; অন্যজন তার সুখ্যাতি কুড়ায়; কাকতালীয়ভাবে কেউ কোন কাজের কৃতিত্ব পেলে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য- 'ঝড়ে কাক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে'। |
হরি মটর খেয়ে থাকা | উপবাসে থাকা; যেদিন অন্নের কোন সংস্থান থাকে না সেই দিন লোকে বলে, 'আজ হরিমটর খেয়ে থাকতে হবে'। |
হরির খুড়ো মাধাই দাস | কোন সম্পর্ক নেই এমন অনধিকারচর্চাকারী ব্যক্তিকে অবজ্ঞা করে বলা হয় 'কে হে তুমি হরির খুড়ো মাধাই দাস'; তুলনীয়- 'দামু ঘোষের ছেলে শিশু পাল'। |
হরিষে বিষাদ১ | আনন্দময় অনুষ্ঠানে হঠাৎ দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব; সুখের মাঝে দুঃখ এসে হাজির। |
হরিষে বিষাদ২ | আশা পেয়ে আশা ভঙ্গ। |
হরিস্মৃতি সর্ববিপদবিনাশিনী | ঈশ্বরের নাম নিলে সব বিপদ কেটে যায়। |
হরিহর আত্মা | অভিন্নহৃদয়ের বন্ধু; সমতুল্য- 'জগাই-মাধাই'। |
হরেদরে কাশ্যপ গোত্র | অজ্ঞাত কুলশীলব্যক্তি; সমতুল্য- 'জাত খুইয়ে কাশ্যপ গোত্র'; পাঠান্তর- 'হারায়ে মারায়ে কাশ্য়প গোত্র'। |
হরেদরে হাঁটুজল | কখনো একটু লাভ; কখনো একটু ক্ষতি; আয়ব্যয় মোটামুটি সমান। |
হর্তা-কর্তা-বিধাতা | সর্বোতভাবে প্রভুত্বের অশিকারী, যিনি রাখলে রাখতে পারেন আবার মারলে মারতে পারেন, অফিসের উপরওয়ালা, বিচারক, শাসক; সমতুল্য- 'দণ্ডমুণ্ডের কর্তা'। |
হলদে চোখে (=ন্যাবা) সব মন্দ দেখে | মন্দলোক সবাইকে মন্দ ভাবে। |
হলুদ খেলে রাঙা ছেলে হয় না | বাহ্যিক আড়ম্বরে অন্তরের কালিমা ঘুচে না। |
হলুদ জব্দ শিলে, বউ/ঝি জব্দ কিলে, পাড়াপড়শি জব্দ হয় চোখে আঙুল দিলে | শিলে হলুদ পিষ্ট হয়; শাসনে স্ত্রী/কন্যা সংযত থাকে এবং স্পষ্টকথায় পাড়াপড়শী সংযত থাকে। |
হলুদ গুঁড়ো/হলুদের গুঁড়া | সবকাজের কাজি; যে লোক সব কাজেই লাগে; সমতুল্য- 'সর্বঘটের কাঁঠালী কলা'। |
হলেও বাঁশ, মলেও বাঁশ১ | দৈনন্দিন জীবনের অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু; অতীতে বাঁশের ছুরি দিয়ে শিশুর নাড়ি কাটা হতো এবং বাঁশের খাটিয়ায় মড়া শ্মশানে যেত। |
হলেও বাঁশ, মলেও বাঁশ২ | জন্মালেই যন্ত্রণা সুরু, মরেও শান্তি নেই। |
হয়ত পুত নয়ত ভূত | সন্তান হয় সুপুত্র হয়ে মা-বাবাকে দেখবে নয় কুপুত্র হয়ে জ্বালাতন করবে; ভাগ্যে কি আছে রি হবে। |
হাঁ করলেই বোঝা যায়১ | কথা শুরু করলেই বক্তব্য বোঝা যায় বা সব খবর জানা যায়; পাঠান্তর- 'হাঁ করলেই গাঁর উদ্দেশ জানা যায়'। |
হাঁ করলেই বোঝা যায়২ | চতুরলোক কয়েকটা কথা শুনেই সমগ্র ব্যাপারটা বুঝে নিতে পারে। |
হাঁচি জেটি পড়ে যবে, অষ্টগুণ তার লভ্য না হবে- খনা | যাত্রাকালে হাঁচি অথবা টিকটিকি পড়লে যাত্রা না করাই ভালো; পাঠান্তর- 'হাঁচি টিকটিকি বাধা, যে না মানে সে গাধা'। |
হাঁটু জলে ডুবে মরা | সামান্য বিপদে নাজেহাল হওয়া। |
হাঁড়ি বলে কড়া তুই বেজায় কালা | নিজের দোষ দেখতে পায় না পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- 'আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে'; 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে ছেঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'; 'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা' ইত্যাদি। |
হাঁড়ির খবর | ভিতরের খবর। |
হাঁড়ির ভাত একটা টিপলেই সবার খবর মেলে | দলের একজনকে চিনলেই সবাইকে চেনা যায়। |
হাঁড়ির মুখের মতো সরা | যেমন কুরূপা কন্যা তেমন কুরূপ বর, দুজনেই সরেস। |
হাঁড়ির হাল | সংসারের আর্থিক দৈন্যাবস্থা। |
হাঁসের দলে বক শোভা পায় না | বিজ্ঞদের মাঝে মূর্খ বেমানান; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'হংসমধ্যে বকো যথা'। |
হা হতোহস্মি | হায় আমি মরলাম। |
হাঁ মুখে মাছি ঢোকে১ | অসতর্ক থাকলে বিপদে পড়তে হয়; সমার্থক নঞর্থক উক্তি- 'বন্ধ মুখে মাছি ঢোকে না'; সমতুল্য- 'গোনা গরু বাঘে খায় না'। |
হাঁ মুখে মাছি ঢোকে২ | বাদ থাকলেই বাদানুবাদ হয়; ফলে ঝামেলায় পড়তে হয় যায়; বেশি কথা না বলাই ভালো। |
হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না | বিচারকের পরিবর্তন হয়, কিন্তু বিচারক একবার যে আদেশ দেয় তার কোন পরিবর্তন হয় না।; বিচারকের হুকুমের অন্যথা হয় না; পাঠান্তর- 'হাকিম ফেরে তো হুকুম ফেরে না'। |
হাগার নাই বাঘার ভয়১ | প্রকৃতির ডাক এলে বাছবিচার করার সময় থাকে না। |
হাগার নাই বাঘার ভয়২ | সমূহ বিপদের সময় কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। |
হাগুন্তির লাজ নেই দেখুন্তির লাজ | যে মন্দকাজ করছে তার লজ্জা হচ্ছে না, যে দেখছে সে লজ্জা পাচ্ছে;
তুলনীয়- 'বেহায়ার দু'কান কাটা' |
হাজার তেল মালিশ করলেও কুত্তার লেজ সোজা হয় না | নিস্ফল প্রচেষ্টা; মন্দ কখনো ভালো হয় না; তুলনীয়-'ঘি দিয়ে ভাজো নিমের পাতা তবু যায় না জাতের জাতা'; 'স্বভাব যায় না মলে'। |
হাজার বছর ঝরণার জলে নেয়েও নুড়িপাথর রসজ্ঞ হয় না | নিরসব্যক্তিকে কখনো রসসিক্ত করা যায় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অরসিকেসু রস নিবেদনম'। |
হাজার বই পড়া থেকে হাজার মাইল হাঁটা ভাল | প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় অনেক বেশি জ্ঞান অর্জিত হয়। |
হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক বেশি কাম্য | পরিমাণ দেখে গুণের বিচার হয় না; পরিমাণে গিণের মাত্রা বৃদ্ধি হয় না। |
হাজারে বেজার নেই | কিছুতেই বিরক্তি নেই। |
হাটকানা | হাটে নানারকম জিনিসপত্র দেখে যার তাক লেগে যায়, কোনটা কিনবে ঠিক করতে পারে না; সমতুল্য- 'বাঁশবনে ডোম কানা'। |
হাটে কলা নৈবিদ্যায় নমোঃ | প্রয়োজনীয় সামগ্রী না পাওয়া গেলে কোনভাবে কাজ শেষ করা; (উৎসকাহিনী-
যজমান বলল নৈবেদ্যে কলা দেওয়া হয় নি, হাটে আনতে গেছে; পুরোহিতের তাড়াতাড়ি ছিল; 'তাতে কি আছে' বলে সে প্রবাদটি বলে পূজা সারল।) |
হাটে হাঁড়ি ভাঙা | সর্বজনসমক্ষে গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়া। |
হাটে কি দর চাউল, না মামার ভতে আছি | নিস্কর্মা দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিসম্পর্কে প্রযোজ্য, যে খায় দায় ফুর্তি করে বেড়ায় সংসারে কিসে কি হচ্ছে তার খবর রাখে না। |
হাটেবাজারে লজ্জা নাই ঘরে লজ্জাবতী/ ফুলেরকুঁড়ি | নির্লজ্জ মানুষ যখন লজ্জাশীলের মত আচরণ করে তখন এই প্রবাদ বলা হয়। |
হাটের দুয়ারে আগড় নাই | হাটের জিনিসপত্রের দর সবার মুখে মুখে ফেরে; হাটের দর গোপন থাকে না; পাঠান্তর-' হাটের দর আর পেটের ছেলে লুকানো যায় না'। |
হাটের নেড়া হুজুগ চায়১ | যে শুধু হাটে ঘুরে বেড়ায় সে হুজুগ চায়; হুজুগে গোলমাল শুরু হলোে চুরির সুবিধা হবে। |
হাটের নেড়া হুজুগ চায়২ | যে কেবল গোলমাল খুঁজে বেড়ায় এবং সেই সুযোগে কিছু কামাবার অপেক্ষায় থাকে। |
হাড় এক ঠাঁই মাস এক ঠাঁই করা | প্রচণ্ড প্রহারে ক্ষতবিক্ষত করা। |
হাড় খাব মাস খাব, চাম দিয়ে ডুগডুগি বাজাব১ | কারো সর্বস্ব এক এক ক'রে কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা। |
হাড় খাব মাস খাব, চাম দিয়ে ডুগডুগি বাজাব২ | তীব্র প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা। |
হাড়পেকের বোঝা | কষ্টকর কাজ, গুরুভার (উৎসকাহিনী- বাঁকুড়ার কোন কোন অঞ্চলে অতীতে ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত পক্ষের মাথায় শাস্তিস্বরূপ বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হতো; এই অবস্থায় তাকে ক্রমাগত পাক খেতে হতো; এই কষ্টকর কাজ থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে।) |
হাড়ভাঙা দ | 'দ' অক্ষরটা দেখলে মনে হয় যেন ভেঙেচুরে গেছে; এই ভাবার্থে কাউকে প্রচণ্ড মারধোর করা হলে বলা হয়, 'মেরে হাড়ভাঙা দ করে দেওয়া হয়েছে'। |
হাড়ির ঘরের লক্ষ্মী শুঁড়ির ঘরে যায় | হাড়ি সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রচণ্ড মদ খেয়ে অর্থের অপচয় করে; ফল তার
ঘরে লক্ষ্মী থাকে না, শুঁড়ির ঘরে গিয়ে আসন নেয়। |
হাড়ে দূর্বা গজানো১ | জমি অনাবাদে পড়ে থাকলে দূর্বা গজায় লক্ষণায়- অত্যন্ত অলস; আলসেমির মাত্রা এমন যে দূর্বাও হাড়ে গজানোর সুযোগ পায়। |
হাড়ে দূর্বা গজানো২ | এমন করুণ মৃত্যু হবে যেন সৎকারের অভাবে মড়ার হাড় মাটিতে মিশে যায় এবং সেই হাড়ে দূর্বা জন্মায়। |
হাড়ে নাড়ে জ্বালানো | চারিদিক থেকে ব্যতিব্যস্ত করা। |
হাড়ে ভেলকি দেখায়/লাগে | মানুষের হাড়ের সাহায্যে বাজিকরেরা ভেলকি দেখায়- এই ভাবার্থে অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির লোক। |
হাত আলস্যে গোঁফ নষ্ট১ | আলস্যে গোঁফে তা না-দেওয়ার জন্য তার বাহার নষ্ট। |
হাত আলস্যে গোঁফ নষ্ট১ | আলস্যের কারণে বা সামান্য পরিশ্রমের অভাবে কাজ নষ্ট। |
হাত ছোট আম বড় | ছোটহাতে আম ধরতে অসুবিধা হয় এই লক্ষণায় কর্মক্ষমতার চেয়ে কাজ বড়।
কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কাজের অনুপযুক্ত হলোে প্রবাদটি বলা হয়। |
হাত ঝাড়া দিলে পর্বত | ধনাঢ্যব্যক্তির ধনাধিক্যের নিদর্শন; নেই নেই বললেও যার কাছ থেকে প্রচুর সাহায্য পাওয়া যায়। |
হাত থাকতে মুখোমুখি কেন | মুখে গালাগালি না দিয়ে হাতাহাতিতে লেগে যাওয়ার প্ররোচনা। |
হাত দিয়ে জল গলে/সরে না | আঙুলের মাঝে এমন ফাঁকও নেই যাতে জল গলে; অত্যন্ত কৃপণব্যক্তি। |
হাত দিয়ে হাতি ঠেলা | অসম্ভব ব্যাপারকে সম্ভব করার চেষ্টা করা; ক্ষুদ্র উপায়ে বৃহৎ কাজ সম্পন্ন করার ব্যর্থপ্রয়াস। |
হাতি আড় হলে চামচিকেও লাথি মারে | প্রবল বিপাকে পড়লে দুর্বলও এসে অপমান করে; পাঠান্তর- 'হাতি কাদায়/গর্তে/পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে'; 'হাতি পড়েছে দকে ঠোকর মারে বকে'। |
হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া/মশা বলে কত জল১ | বিজ্ঞরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে নির্বোধ এসে নাক গলায়। |
হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া/মশা বলে কত জল২ | সবল যে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, দুর্বল সেই কাজ করতে এগিয়ে যায়; তুলনীয়-'মোগল পাঠান হদ্দ হলো ফারসি পর তাঁতী'। |
হাতি পাঁকে পড়লে হাতি উদ্ধার করে | প্রবল বিপাকে পড়লে প্রবল এসে তাকে বাঁচায়; তুলনীয়- 'সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি'। |
হাতি বুড়ো হলেও দাঁত দিয়ে মাটি খোঁড়া ছাড়ে না | সদ্বংশজাত ব্যক্তি-অবস্থাবিপর্যয়েও চরিত্রগুণ হারায় না। |
হাতি মরলেও লাখ টাকা | মহার্ঘ বস্তু সবসময় মহার্ঘ থাকে; পাঠান্তর- 'মরা হাতি লাখ টাকা'। |
হাতি যেমন খায় তেমনি নাদে | বড়লোকের যেমন আয় তেমনি ব্যয়। |
হাতি কি দাঁত মরদ কি বাত্ | হাতির দাঁত যেমন মুখের ভিতর প্রবেশ করে না, তেমনি পৌরুষ কথা দিয়ে কথা গেলে না; পুরুষের কথা হাতির দাঁতের মতই মূল্যবান; সমতুল্য- 'যে কথা সেই কিরে'। |
হাতির কাঁধে আসে যায়, হাম্বা রবে মুর্ছা যায় | বিরাট কাজ সাফল্যের সাথে করে এসে ছোট্ট কাজে ভয় পায়। |
হাতির খাওয়ার দাঁত এক দেখাবার আরেক | কাজের বস্তু দেখানোর হয় না, আবার দেখানোর বস্তু কাজের হয় না; হিন্দি পাঠান্তর- 'হাতিকা দাঁত খানে কা আঔর, দিখানে কা আঔর' |
হাতির খোরাক | কেউ প্রচুর পরিমাণে খেলে প্রবাদে বলে 'হাতির খোরাক'। |
হাতির গলায় ঘণ্টা১ | খুব বড় কিছুর সাথে খুব ছোট কিছু জুড়ে দেওয়া। |
হাতির গলায় ঘণ্টা২ | তির্যকে-বয়স্কব্যক্তির অল্পবয়স্কা স্ত্রী; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা'। |
হাতির দর্প চূর্ণ পাহাড়ের কাছে | প্রবল পরাজিত হয় একমাত্র প্রবলতরের কাছে; সমতুল্য- 'বাপেরও বাপ আছে'; 'ননদেরও ননদ আছে'। |
হাতির পাঁচ পা দেখা | অহঙ্কারীব্যক্তির দাম্ভিক আচরণ। |
হাতির মিনমিন ঘোড়ার দৌড় | ঘোড়া দৌড়ে যতদূর যায় হাতি ধীরে ধীরে চলেও ততদূর যায়; কেউ দ্রুত যে কাজ শেষ করে অন্য কেউ ধীরলয়ে সেই কাজই করে; যার যেমন পদ্ধতি। |
হাতির মুখে দূর্বাঘাস | পেটুকের জন্য সামান্য খাদ্যের আয়োজন; প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প পরিমাণ ব্যবস্থা। |
হাতে কড়ি পায়ে বল তবে চল/যাই নীলাচল | যখন রেলপথ ছিল না তখন শারীরিক শক্তি ও অর্থবল থাকলে পরে জগন্নাথ দর্শনে যাওয়া যেত বলে এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়; বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক। |
হাতে কালি মুখে কালি বাছা আমার লিখে এলি | ছেলে লিখুক বা না লিখুক হাতে মুখা কালি থাকলে মায়েরা ভাবে ছেলে তার লিখে পড়ে এসেছে। |
হাতে জল গলে না | অত্যন্ত কৃপণ ব্যক্তি; পাঠান্তর-'হাত দিয়ে জল গলে না'। |
হাতে দই পাতে দই তবু বলে কই কই | প্রমাণ দেখানো সত্বেও দোষ অস্বীকার করার অপচেষ্টা। |
হাতে না মেরে ভাতে মারা১ | প্রহার না করে কেবল উপবাসী রেখে দুর্বল করা; পাঠান্তর- 'হাতে না মেরে ভাতে মারা'। |
হাতে না মেরে ভাতে মারা২ | সরাসরি অনিষ্ট না করে অন্নসংস্থানের উপায় বন্ধ করা। |
হাতে পাঁজি মঙ্গলবার১ | বৃথা তর্ক না করে হাতের কাছে সন্দেহ-নিরসনের যে উপায় আছে তা অবলম্বন করা হোক; হাতে হাতে প্রমাণ। |
হাতে পাঁজি মঙ্গলবার২ | সঙ্গে প্রমাণ কাছে থাকতে অনুমান করার কোন অর্থ হয় না। |
হাতে পাঁজি মঙ্গলবার৩ | হাতে উপায় থাকতে অন্যের কাছে উপায় খোঁজা নিরর্থক। |
হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই১ | সহজ উপায়ে কাজ উদ্ধার হলোে জটিল পথ ধরার প্রয়োজন নেই; তুলনীয়-
আমড়াতলায় আম পেলে আমতলায় কেবা যায়'। |
হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই২ | নিজেই কাজ করতে পারলে অন্যের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই। |
হাতের একটি পাখি বনের দুটি পাখির সমান | অনিশ্চয়তার পিছনে ছুটা নেই; অনিশ্চিতের তুলনায় নিশ্চিতের দাম বেশি; হাতের জিনিস ফেলে দূরের জিনিস নিতে নেই; সমতুল্য- 'উপস্থিত অন্ন ত্যাগ করতে নেই'; 'একটি আজকাল দুটি আগামীকালের সমান'; 'গাছের দশটা থেকে পাতের একটাই ভাল' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'হাতের জিনিস ফেলে দূরের জিনিস নিতে নেই'; 'হাতের পাখি ছাড়তে নেই'। |
হাতের ঢিল, ছুঁড়লে ফেরে না | সুযোগ একবার হাত ছাড়া হলোে সেই সুযোগ ফিরে আসে না; তুলনীয়= 'ছাড়া সুযোগ ফেরে না'। |
হাতের পাঁচ | শেষ উপায়/সম্বল; (তাস খেলা থেকে প্রবাদটির উৎপত্তি) |
হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয় | ঘরের সকলে একরকম নয়; দোষ-গুণে কেউ বেশি কেউ কম; তুলনীয়- 'এক জুতা সব পায়ে গলে না'; 'নানা মানুষ নানা মত'। |
হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা | সৌভাগ্যে পাওয়া সুযোগ বুদ্ধিদোষে নষ্ট করা। |
হাতের শাঁখা আয়নায় দেখা | সহজ পথ ছেড়ে ঘুর বা বাঁকাপথে কাজ করা; সমতুল্য- 'অমরকণ্টক ঘুরে অমরনাথ যাওয়া'; 'কামাক্ষ্যা ঘুরে কাশীধাম যাওয়া'; লণ্ডন ঘুরে মক্কা যাওয়া'। |
হাতেরও যাবে পাতেরও যাবে | একূল ওকূল উভয় কূল হারানোর সম্ভাবনা। |
হাভাতের দুনো গ্রাস | হাড়হাভাতে লক্ষ্মীছাড়াদের দ্বিগুণ খিদে। |
হাম ছোড়া লেকিন কমলি ছোড়তা নেহি | কেউ জড়িয়ে থাকা বিরক্তিকর কোন বিষয় থেকে মুক্তি চাইছে কিন্তু মুক্তি পাচ্ছে না; (উৎসকাহিনী- একদিন নদীতীরে বেড়াবার সময় দুইবন্ধুর নজরে পড়ে একটা কম্বল নদীতে ভেসে যাচ্ছে;একবন্ধু কম্বলটা পেতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে কাছে পৌঁছে যায়; কম্বলটাকে ধরতে সেটাও তাকে জড়িয়ে ধরে; তীরের বন্ধু বুঝতে পারে কম্বলটা আসলে একটা ভল্লুক; নদীর জলে ভেসে যাচ্ছে; প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে সে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরেছে; কিছুতেই ছাড়ছে না; বিষয়টা বুঝতে পেরে সে চিৎকার করে বন্ধুকে কম্বল ছেড়ে তীরে উঠে আসতে বলে; প্রত্যুত্তরে বন্ধুটি বলে, 'আমি তো কম্বল ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু কম্বল আমায় কিছুতেই ছাড়ছে না; 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থার উক্তিটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে।) |
হায়রে আমড়া কেবল আঁটি আর চামড়া১ | দেখে আদর করে নিয়ে পরীক্ষায় অসারত্ব উপলব্ধি করা। |
হায়রে আমড়া কেবল আঁটি আর চামড়া১ | বাইরে চাকচিক্য ভিতরে সারবস্তুহীন ব্যক্তি। |
হারামের পয়সায় আরাম নেই | অসদুপায়ে অর্জিত অর্থের কোন মূল্য নেই। |
হারায়ে মারায়ে কাশ্য়প গোত্র | জীবমাত্রই কশ্যপমুনির বংশধর; কোন মানুষ নিজের গোত্র হারিয়ে ফেললে বা বলতে না পারলে পুরোহিত কাশ্যপ গোত্রের উল্লেখ করেন; পাঠান্তর- 'হরেদরে কাশ্য়প গোত্র'। |
হাল ছেড়ে দেওয়া | ঝড় দেখলে নৌকার হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকা; আশা ত্যাগ করা; বিপদের সম্ভাবনা দেখলে তার মুকাবিলা না করে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা। |
হাল যদি ধরি ঠেসে যায় কি তরী তুফানে ভেসে | সংসারের কর্তা ঠিক থাকলে সংসার ভেসে যায় না। |
হালে পানি পাওয়া | হাল জল/পানি না পেলে নৌকা চলে না; সেক্ষেত্রে জল বা পানি পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়; সূযোগ পেয়ে উৎরিয়ে যাওয়া। |
হালে পানি পায় না | ক্ষমতায় কুলায় না। |
হালে বয় না, তেড়ে গুঁতোয় | লাঙ্গলে জুড়ে দিলে বলদে হাল টানে না কিন্তু গুঁতোতে ছাড়ে নঢ় এই ভাবার্থে- কাজে এড়া অকাজে দেড়া। |
হাসতে হাসতে কপালে ব্যাথা | অতিশয় আনন্দও ভাগ্যে সহ্য হয় না; তুলনীয়- 'অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে'। |
হাসিও পায় দুঃখও ধরে এমন কথা বলি কারে | আনন্দেরও বটে আবার দুঃখেরও বটে এমন অদ্ভূত কথা শুনতেও হচ্ছে। |
হিতং মনোহারি চ দুর্লভং বচঃ | হিতকারী অথচ প্রিয় এমন বাক্য দুর্লভ। |
হিতে বিপরীত | ভাল করতে গিয়ে মন্দ হওয়া। |
হিসাবের গরু বাঘে খায় না | হিসাব করে চললে ভাল বই মন্দ হয় না; পাঠান্তর- 'গোনা গরু বাঘে খায় না'। |
হীনসেবা ন কর্ত্তব্যা কর্ত্তব্যো মহোদাশ্রয় | নির্গুণের সেবা করা উচিৎ নয়; মহতের আশ্রয় নেওয়া উচিৎ। |
হীয়তে হি মতিস্তাত হীনৈসহ সমাগমাৎ | (লোক) হীনের সাথে সহবাস করলে হীন হয। |
হুঁ হুঁ দেয়ং, হাঁ হাঁ দেয়ং দেয়ঞ্চ শিরশ্চালনে; হস্ত চালনে দেয়ং, না দেয়ং ব্যাঘ্রঝম্পটে | অতিথি আপ্যায়ন পদ্ধতি কি হওয়া উচিৎ তার ব্যাখ্যা |
হুঁচোট/হুচোট/হোঁচট খেয়ে প্রণাম | ইচ্ছা করে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম নয়; আকস্মিকভাবে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে; তাই প্রণাম স্বীকার; দায়ে পড়ে কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করে ফেলা; সমতুল্য- 'উচোট খেয়ে প্রণাম'; 'পড়ে দিয়ে পদ্মনাভ'। |
হুকুমে হাকিম চলে | আইনমাফিক হাকিমকেও চলতে হয়, নিয়মমত সবার চলা উচিৎ; কারো স্বেচ্ছাচারী হওয়ার অধিকার নেই। |
হুজুর মা বাপ, আমরা সব শুয়োর-কা-বাচ্চা | পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসম্পন্নব্যক্তিকে হীন বলে গালি দেওয়া। |
হুজুরের মজুর ভাল | বড়লোকের তাঁবেদারী করার সুবিধা অনেক; তোষামোদকারী। |
হুজ্জতে বঙ্গাল, হিকমতে চীন | কুটকচালীতে বাঙ্গালীর তুলনা নেই; ফন্দিফিকিরে চীনা চিরপ্রসিদ্ধ। |
হৃদয় দিয়ে মানুষ যেমন ভাবে তার প্রকৃতিও তেমন হয় | চরিত্রগুণে মানুষ চেনা যায়। |
হেলাস্যাৎ কার্যনাশায় বুদ্ধিনাশায় নির্ধনম্ | অবহেলায় কার্যনাশ হয়, দারিদ্র্যে বুদ্ধিনাশ হয। |
হেলে ধরতে পারে না কেউটে ধরতে যায় | সহজ কাজ পারে না, জটিল কাজে হাত দেয়; ক্ষমতার বাইরে যাওয়া অনুচিত; সাধ্যাতীত কিছু করা নেই। |
হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয়, কে জানে কখন কার সন্ধ্যা হয় | ক্ষণকালের জীবনে যত পারো সুখভোগ করে নাও; সমতুল্য- 'খাই দাই তবলা বাজাই, দুদিন বইতো নয়','নেচেকুঁদে নাওরে জাদু মনের সুখে, কবে যে যেতে হবে শিঙে ফুঁকে'। |
হেসে চাকি পাটে বসে সে বছর শস্য নয় মোটে- খনা | যে বছর আষাঢ়মাসে অস্তগামী সূর্য দেখা জ্যায় সে বছর শস্য মোটেই জন্মায় না। |
হেসে হেসে কথা কয় এ হাসি তো ভাল নয় | কুটিলব্যক্তি হেসে হেসে কথা বললে মনে সন্দেহ জাগে। |
হোঁচট খেয়ে পদ্মনাভ/ প্রণাম | উল্টে পড়ে গিয়ে প্রণাম স্বীকার; প্রণাম না করেও প্রণাম; কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করা; সমতূল্য-'উচোট খেয়ে প্রণাম'। |
হোঁতা (থোতা) মুখ ভোঁতা হলো | দর্পচূর্ণ হলো। |
হোক-না-কেন কাঠের বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো | উপায় যাই হোক-না-কেন কার্যসিদ্ধি হলোেই হলো। |
হোদল বনে শিয়াল রাজা | অজ্ঞানীদের মাঝে অল্পজ্ঞানী যথেষ্ঠ সম্মান পায়; সমতুল্য- 'ভেড়ার দলে বাছুর মোড়ল'। |
হোমারও সময়সময় মাথা নোয়ান | মহত্তম ব্যক্তিরাও ছোটখাটো ভুলের ঊর্ধ্বে নন; সমতুল- 'মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম;। |
হোসেনশাহর আমল | বহুদিন আগের কথা; সমতুল্য- 'বাবরের আমল'; 'মান্ধাতার আমল'। |
হ্যাঁ ও না সবথেকে ছোট দুইকথা বলতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে | অতিসহজে কোন বিষয়ে সমর্থন বা অসমর্থন করা যায় না। |
হ্যাপায় পড়ে স্রোতে ভাসা১ | দমবাজিতে হেরে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া। |
হ্যাপায় পড়ে স্রোতে ভাসা২ | দায়ে পড়ে কাজ করা। |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
উৎস
- শ্রীসুশীলকুমার দে, বাংলা প্রবাদ ছড়া ও চলতি কথা, এ.মুখার্জী এন্ড কোং লি, কলকাতা, প্রথম সংস্করণ - আশ্বিন ১৩৫২
- Rev. W .Morton, দৃষ্টান্তবাক্য সংগ্রহ, A collection of Proverbs, Bengali & Sanskrit with their Translation and Application in English, The Baptist Mission Press, Calcutta, 1832