মির্জা বাকেরের উড়িষ্যা অভিযান

(বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪১) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মির্জা বাকেরের উড়িষ্যা অভিযান দ্বারা ১৭৪১ সালে বাংলার অধীন উড়িষ্যায় মির্জা বাকের বেগ এর আক্রমণকে বোঝানো হয়। ১৭৪১ সালের মার্চে বাংলার নবাব আলীবর্দী খান উড়িষ্যার বিদ্রোহী প্রাদেশিক শাসনকর্তা দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খানকে পরাজিত করে উড়িষ্যায় নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু একই বছরের আগস্টে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির জামাতা মির্জা বাকের বেগ মারাঠাদের নাগপুর রাজ্যের মহারাজা রঘুজী ভোঁসলের সহায়তায় উড়িষ্যা আক্রমণ করেন[]। মির্জা বাকেরের সৈন্যরা ১৭৪১ সালের আগস্টে সহজেই উড়িষ্যা দখল করে নেয়[], কিন্তু একই বছরের ডিসেম্বরে নবাব আলীবর্দী খান উড়িষ্যা পুনর্দখল করে নেন এবং মির্জা বাকেরকে বিতাড়িত করেন[][]

মির্জা বাকের বেগের উড়িষ্যা অভিযান
তারিখআগস্ট – ডিসেম্বর ১৭৪১
অবস্থান
উড়িষ্যা (তদানীন্তন বাংলার অন্তর্গত)
ফলাফল

বাংলার নবাবের বিজয়[][]

  • বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ব্যর্থ হয়[]
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
অপরিবর্তিত
বিবাদমান পক্ষ
বাংলা

দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খানের দল[]
সৈয়দ আহমদ খানের বিদ্রোহী সৈন্যদল[]
সহায়তাকারী:

মারাঠা সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
আলীবর্দী খান
মীর জাফর
শেখ মাসুম পানিপথী
রায় দুর্লভ
সৈয়দ আহমদ খান আত্মসমর্পণকারী
দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান
মির্জা বাকের বেগ
শক্তি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত

পটভূমি

সম্পাদনা

১৭৪১ সালের মার্চে নবাব আলীবর্দী উড়িষ্যার বিদ্রোহী শাসনকর্তা রুস্তম জঙ্গকে ('দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান' নামে অধিক পরিচিত) পদচ্যুত ও বিতাড়িত করেন[]। বিতাড়িত রুস্তম জঙ্গ প্রথমে হায়দারাবাদ রাজ্যের নিজাম এবং পরবর্তীতে তদানীন্তন মারাঠা সাম্রাজ্যের নাগপুর রাজ্যের শাসনকর্তা রঘুজী ভোঁসলের কাছে আশ্রয় নেন[] এবং উড়িষ্যা পুনর্দখল করার জন্য তাঁর সহায়তা প্রার্থনা করেন। রঘুজী তাঁকে সহায়তা করতে রাজি হন।

মির্জা বাকেরের উড়িষ্যা দখল

সম্পাদনা

এসময় উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন নবাব আলীবর্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র সৈয়দ আহমদ খান। তিনি ছিলেন উদ্ধত প্রকৃতির[] এবং তাঁর আচরণে তাঁর সৈন্যবাহিনীর অনেকেই ক্ষুদ্ধ ছিলেন। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির জামাতা মির্জা বাকের বেগ এসময় মারাঠা সৈন্যসহ উড়িষ্যার সীমান্তে ছিলেন। সুযোগ বুঝে তিনি উড়িষ্যা আক্রমণ করেন এবং উড়িষ্যার রাজধানী কটকের দিকে অগ্রসর হন[]। উড়িষ্যার শাসনকর্তা সৈয়দ আহমদের বিদ্রোহী সৈন্যরা তখন মির্জা বাকের ও মারাঠাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

১৭৪১ সালের আগস্টে মির্জা বাকের বেগ সহজেই সৈয়দ আহমদকে পরাজিত করেন এবং কটক অধিকার করেন। সৈয়দ আহমদ সপরিবারে বন্দি হন এবং তাঁকে বড়বাটি দুর্গে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়[][]। এভাবে মির্জা বাকের বেগ সহজেই উড়িষ্যা দখল করে নিতে সক্ষম হন।

বাংলার নবাবের উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার

সম্পাদনা

ইতোমধ্যে মির্জা বাকের কর্তৃক উড়িষ্যা দখলের সংবাদ মুর্শিদাবাদে পৌঁছায়। এ সংবাদ পেয়ে নবাব আলীবর্দী সসৈন্যে উড়িষ্যায় আসেন। ১৭৪১ সালের ডিসেম্বরে আলীবর্দী রায়পুরের যুদ্ধে মির্জা বাকেরের বাহিনী এবং সৈয়দ আহমদের বিদ্রোহী সৈন্যদের সম্মিলিত বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করেন[][] এবং উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার করেন। নবাবের সেনাপতি মীর জাফর বড়বাটি দুর্গ থেকে সৈয়দ আহমদ ও তাঁর পরিজনদের মুক্ত করেন[]। এরপর মির্জা বাকের উড়িষ্যা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন[]

উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার করার পর আলীবর্দী খান তিন মাস কটকে অবস্থান করেন এবং উড়িষ্যায় শান্তি-শৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শেখ মাসুম পানিপথীকে উড়িষ্যার নতুন প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন[] এবং রায় দুর্লভ তাঁর পেশকার নিযুক্ত হন। উড়িষ্যা প্রদেশে বাংলার কর্তৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠিত করে নবাব মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তন করেন।

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, (বাংলাদেশের ইতিহাস), নবাব আলীবর্দী খান, পৃ. ২৯২–২৯৩
  2. মোহাম্মদ শাহ (২০১২)। "মারাঠা হামলা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743