বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী
এই নিবন্ধটি মেয়াদোত্তীর্ণ। |
২০১১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীতে সংবিধানে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়।[১] ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই সংশোধনীটি আংশিক অবৈধ বলে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।[২][৩]
ইতিহাস
সম্পাদনাসংবিধান সংশোধনের জন্য ২০১০ সালের ২১ জুলাই ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়।[৪] সাবেক রাষ্ট্রপতি,সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিন সাবেক প্রধান বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সম্পাদক এবং সুশীল সমাজের সদস্যসহ ১০৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনার পর ২০১১ সালের ২৯ মার্চ কমিটি সুপারিশ করে। পরের দিন কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে, পরবর্তীতে কমিটি তার সুপারিশে কিছু পরিবর্তন আনে। কমিটির ৫১টি সুপারিশ অবিকৃত রেখে ২৫ জুন ২০১১ সালে তা বিল আকারে সংসদে আনা হয়। পরে উক্ত বিল ২ সপ্তাহের মধ্যে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট প্রদানের জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।[৫] ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে বিলটি পাস হয়। ১৮ আগস্ট ২০২৪ সালে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই সংশোধনী বাতিল চেয়ে রিট করেন। এরপর বেশ কিছুদিন শুনানি শেষে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।[৬][৭]
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
একই সঙ্গে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পঞ্চদশ সংশোধনী ছিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর নিয়ে আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত রায়ের পরিপন্থি।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোট হতে হবে। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা সংক্রান্ত ৭(খ) অনুচ্ছেদ যথার্থ নয় বলেও হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।[৮]
সংশোধনী
সম্পাদনা- ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চারটি মূল মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি পুর্নবহাল করা হয়।
- সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা বর্তমান ৪৫ থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়।
- অনুচ্ছেদ ৭-এর মধ্যে সংবিধান বহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল শেষ করার জন্য ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত কর। ধারা ৭(খ) অনুযায়ী, সংবিধানের মৌলিক বিধানগুলিকে "অসংশোধনযোগ্য" ঘোষণা কর। অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়।
- পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও উন্নতির জন্য অতিরিক্ত বিধান।
- উপজাতি, নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায় এবং ছোট জাতিদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য বিধান যুক্ত করা হয়।
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে যা ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েছিল।
- শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
- সংবিধান থেকে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল।
- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
- জরুরি অবস্থা ১২০ দিনের বেশি চলতে পারে না।
- সংবিধানের শেষে তিনটি নতুন তফসিল সন্নিবেশিত করা হয় যা হল শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, ২৫ মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "তত্ত্বাবধায়ক বিলুপ্তির বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন বিল পাস"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৩০ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২৩।
- ↑ "সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ"। দৈনিক ইনকিলাব। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ: হাইকোর্ট"। দৈনিক যুগান্তর। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "প্রশ্নের মুখে '১৫তম সংশোধনীর সাংবিধানিকতা'"। দৈনিক মানবজমিন। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২৩।
- ↑ "সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপিত"। দৈনিক সংগ্রাম। ২৬ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২৩।
- ↑ "ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা"। দৈনিক জনকণ্ঠ।
- ↑ "রায়ে ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা হাইকোর্টের"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল: হাইকোর্ট"। একাত্তর টিভি। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।