বরানগর মঠ
রামকৃষ্ণ মঠ, বরানগর বা বরানগর মঠ হল রামকৃষ্ণ সংঘের প্রথম মঠ। রামকৃষ্ণ পরমহংসের দেহত্যাগের পর গৃহী ভক্তেরা তার সন্ন্যাসী শিষ্যদের জন্য অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেন। সেই অবস্থায় স্বামী বিবেকানন্দ (সেই সময় নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে পরিচিত) ও অন্যান্য সন্ন্যাসী শিষ্যেরা বরানগরে একটি পোড়ো বাড়িতে তাঁদের নতুন মঠ স্থাপন করেন।[১][২] ১৮৯৭ সালে বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। ১৯৭৩ সালে সেই স্থানটি সংরক্ষণের জন্য বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি গঠিত হয়। ২০০১ সালে সেখানকার যাবতীয় সম্পত্তি বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের হস্তে অর্পিত হয়। এর কিছুকাল পরেই এটিকে মঠের অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক শাখাকেন্দ্র বলে ঘোষণা করা হয়। এই স্থানের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কাজ এখনও চলছে।[৩]
বরানগর মঠ | |
---|---|
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থা | সক্রিয় |
ধরন | ঐতিহ্যবাহী স্থান, সংগ্রহালয়, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শাখাকেন্দ্র |
ঠিকানা | ৪৪বি, প্রামাণিক ঘাট রোড, বরানগর
, কলকাতা - ৭০০০৩৬ |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৭′৫৪.৭″ উত্তর ৮৮°২২′৩″ পূর্ব / ২২.৬৩১৮৬১° উত্তর ৮৮.৩৬৭৫০° পূর্ব |
নির্মাণ শুরু | ১৮৮৬ |
সংস্কার | ১৯৭৩ |
স্বত্বাধিকারী | রামকৃষ্ণ মিশন |
Website | |
www |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে মঠ প্রতিষ্ঠা
সম্পাদনা১৮৮৬ সালের ১৬ অগস্ট রামকৃষ্ণ পরমহংস দেহত্যাগ করেন। এরপরে তার গৃহী ভক্ত ও অনুরাগীরা তার সন্ন্যাসী শিষ্যদের জন্য অর্থপ্রদান করা বন্ধ করে দেন। তার অনেক ভক্ত বাড়ি ফিরে গিয়ে গৃহস্থের জীবন যাপন করবেন বলে ঠিক করেন। তরুণ নরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সন্ন্যাসী শিষ্যগণ তখন একটি নতুন আশ্রয় অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারা বরানগরের একটি পোড়ো বাড়িতে তাঁদের নতুন মঠ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।[১][২] বাড়িটি ছিল অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার টাকির জমিদার পরিবারের সম্পত্তি।[৩]
বরানগর মঠের জীবন
সম্পাদনারামকৃষ্ণ পরমহংসের ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ মিত্র বাড়িটির ভাড়া মেটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।[৪] নরেন্দ্রনাথ ও তার গুরুভ্রাতারা[ক] তাঁদের দৈনিক খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে আনতেন মাধুকরী (সন্ন্যাসীদের শাস্ত্রসম্মত ভিক্ষাবৃত্তি) করে। মঠটি রাকমৃষ্ণ পরমহংসের সন্ন্যাসী সংঘ রামকৃষ্ণ মঠের প্রথম ভবনে পরিণত হয়।[৫] স্বামী বিবেকানন্দ পরবর্তীকালে বরানগর মঠের দিনগুলির স্মৃতিচারণা করে লিখেছিলেন:[৬]
আমরা বরানগর মঠে অনেক সাধনভজন করতাম। ভোর তিনটের সময় উঠে জপ-ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতাম। কী প্রবল বৈরাগ্যের দিনগুলিই না গিয়েছে! জগতের অস্তিত্ব আছে কি নেই, সে চিন্তা মনেও আসত না।
সন্ন্যাস গ্রহণ
সম্পাদনা১৮৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে বরানগর মঠেই নরেন্দ্রনাথ দত্ত ও রামকৃষ্ণ পরমহংসের আটজন অপর শিষ্য আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেন।[৭]
১৮৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্তি
সম্পাদনা১৮৯৭ সালে বরানগর মঠের জরাজীর্ণ ভবনটি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সেই সময় বাড়িটি পুনর্গঠনের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।[৩] উল্লেখ্য, সেই বছরই স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য ভ্রমণ শেষ করে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।[৮]
বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি গঠন (১৯৭৩)
সম্পাদনা১৯৭৩ সালের ২৫ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ সংঘের সন্ন্যাসী স্বামী রামানন্দের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় বরানয়রের স্থানীয় বাসিন্দারা "বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি" গঠন করেন। এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল যে স্থানটিতে বরানগর মঠ অবস্থিত ছিল সেই জায়গাটি সংরক্ষণ এবং মঠটির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। কালক্রমে অনেক বাড়ি, দোকান ও বস্তি গড়ে উঠেছিল সেই জায়গাটিতে। পুরনো বরানগর মঠ যেখানে ছিল সেখানকার বাগানের একটি অংশ দখল করতে সক্ষম হয় সমিতি। সেখানে সমিতির পক্ষ থেকে দাতব্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র, নিকটবর্তী বস্তির দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার (স্বামী বিবেকানন্দ চ্যারিটেবল কোচিং সেন্টার) ইত্যাদি সমাজসেবামূলক কাজ শুরু হয়। ক্রমে সেই ধরনের কাজের পরিসর বৃদ্ধি পায়। সমিতির তরফ থেকে "গদাধর শিশু বিকাশ কেন্দ্র" নামে ছোটোদের জন্য একটি অ-প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয় চালু হয়, একটি সাধারণ গ্রন্থাগার স্থাপিত হয় এবং নিয়মিত বক্তৃতা ও ধর্মালোচনার আয়োজন করা হতে থাকে।[৩]
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের হস্তে অর্পণ (২০০১)
সম্পাদনা২০০১ সালের অক্টোবর মাসে বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি হস্তান্তরিত হয় রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের হাতে। সেই সময় বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ[খ] বরানগরের স্থানীয় রামকৃষ্ণ মঠ কেন্দ্রটিকে সম্পত্তি তত্ত্বাবধানের নির্দেশ হয়। এই ঘটনার কিছুকাল পরেই একটি সভা আহূত হয়। সেই সভায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পরিচালন সমিতি ও অছি পরিষদ এই স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বের নিরিখে মঠটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে ২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি বরানগর মঠকে বেলুড় মঠের প্রাতিষ্ঠানিক শাখাকেন্দ্র বলে ঘোষণা করা হয়। স্বামী বামনানন্দ এই শাখার মঠাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। বরানগর মঠ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। মঠটির উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণের কাজ এখনও চলছে।[৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনাসূত্রনির্দেশ
সম্পাদনা- ↑ ক খ Sinha 2012, পৃ. 514
- ↑ ক খ Sil 1991, পৃ. 168
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Brief history of Baranagar Math"। Ramakrishna Mission, Baranagar। ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Nikhilananda 1953, পৃ. 39–47
- ↑ Prabhananda 2003, পৃ. 232
- ↑ Chetananda 1997, পৃ. 38
- ↑ Copley 2006, পৃ. 193
- ↑ Bharathi 1998, পৃ. 24
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Sinha, Debotosh (২০১২)। Social Welfare and Social Work। Concept Publishing Company। আইএসবিএন 978-81-8069-814-9।
- Sil, Narasingha Prosad (১৯৯১)। Rāmakṛṣṇa Paramahaṁsa: A Psychological Profile। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-09478-9।
- Prabhananda, Swami (২০০৩)। Profiles of famous educators: Swami Vivekananda (পিডিএফ)। Prospects। XXXIII। Netherlands: Springer। ১০ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩.
- Chetananda, Swami (১৯৯৭)। God lived with them: life stories of sixteen monastic disciples of Sri Ramakrishna। St. Louis, Missouri: Vedanta Society of St. Louis। আইএসবিএন 0-916356-80-9।
- Nikhilananda, Swami (১৯৫৩)। Vivekânanda: a biography (পিডিএফ)। Ramakrishna-Vivekananda Center। আইএসবিএন 978-0-911206-25-8।
- Bharathi, K. S. (১৯৯৮)। Encyclopaedia of Eminent Thinkers: The political thought of Vivekananda। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 24–। আইএসবিএন 978-81-7022-709-0।
- Copley, Antony R. H. (২০০৬)। A Spiritual Bloomsbury: Hinduism and Homosexuality in the Lives and Writings of Edward Carpenter, E.M. Forster, and Christopher Isherwood। Lexington Books। আইএসবিএন 978-0-7391-1465-0।