বখতিয়ার ভাহাবযাদেহ
বখতিয়ার ভাহাবযাদেহ (আজারবাইজানি: Bəxtiyar Vahabzadə; ১৬ আগস্ট, ১৯২৫ – ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯) ছিলেন একজন আজারবাইজানি কবি, নাট্যকার, গান রচয়িতা পাশাপাশি ছিলেন একজন কলেজের অধ্যাপক ও রাজনীতিবিদ। সামেদ ভুর্জুন এর পর তাকেই আজারবাইজানের শ্রেষ্ঠ সমসাময়িক কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বখতিয়ার ভাহাবযাদেহ | |
---|---|
জন্ম | নুখা | ১৬ আগস্ট ১৯২৫
মৃত্যু | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বাকু | (বয়স ৮৩)
জীবনী
সম্পাদনাভাহাবযাদেহ ১৯২৫ সালে নুখা ( বর্তমানে শেখি) তে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে বর্তমানে একটি সেন্ট্রাল স্কোয়ারে তার স্মৃতি পাওয়া যায়। ১৯৩৪ সালে তার পরিবার সহ তিনি বাকুতে চলে আসেন এবং পরবর্তীতে আজারবাইজান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত (মাঝে ১৯৬২-১৯৬৪ বাদে, জাতীয়তাবাদীতায় পক্ষপাতীত্ব করার দরুণ বহিষ্কৃত হওয়ায়) সেখানে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সময় তিনি তার স্ত্রীর অলংকার বিক্রি করে দারিদ্র্যতার থাবা থেকে বেঁচে থাকেন।[১] They had three children, Gulzar, Isfandiyar and Azer. Isfandiyar was named Azerbaijan's ambassador to Moldova.[২] তাদের তিন সন্তান ছিল-গুলজার, ইসফানদিয়ার এবং আজের। ইসফানদিয়ার নামকরণ করা হয় মলদোভার আজারবাইজানি দূতের নাম থেকে। ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভাহাবযাদেহ ৮৩ বছর বয়সে বাকুতে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি অংশগ্রহণ করেন।[৩]
সাহিত্য জীবন
সম্পাদনা১৯৫১ সালে ভাহাবযাদেহ তার ডক্টরাল থিসিস আজারবাইজানি কবি সামেদ ভুর্জুনের কাছে জমা দেন। তিনি ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে তার সোভিয়েত সিস্টেমের দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের এবং স্ট্যালিন দমন ভাব প্রবণতা প্রকাশিত হয়ে যাবে, তাই তিনি তার প্রাথমিক বেশিরভাগ কাব্যকর্মই ধ্বংস করে ফেলেছিলেন, তবে সেগুলোর ক্ষুদ্র নমুনা পান্ডুলিপিগুলো তার মায়ের নকল পায়ের ভিতর লুকিয়ে রাখতেন।[৪]
তার সারা জীবন ব্যপী তিনি অনেক বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিশেষতঃ আজারবাইজান দেশ সম্পর্কে, প্রকৃতি, পরিবার, ভাষা এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে।[৫] কয়েক বছর তার নিবন্ধন এবং কবিতার সমালোচনা তুর্ক ইদেবিয়াতিতে প্রকাশিত হয়েছে, তিনি ইয়েল কায়া'ন নে আপারি?'(বাতাস পাথর থেকে কী চুরি করে?)'র যা ছিল একটি নিবন্ধন (ভার্লিক প্রকাশিত হয়) এবং মধ্যযুগীয় কবি ফজলুল এর সমালোচনার উত্তর প্রদান করার জন্য এটি প্রকাশ করেন। এর জন্য তুরস্কে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
ভাহাবযাদেহ ১৯৭৪ সালে, চারু শিল্পী হিসেবে কাজ করার জন্য আজারবাইজান এসএসআর স্টেট পুরস্কার পান, ১৯৮৪ সালে পুরো ইউএসএসআর এ তিনি স্টেট পদক পান এবং পরের বছর জনকবি উপাধিতে ভূষিত হন।[৬] ২০০২ সালে, ভাহাবযাদেহ রমানীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে তার কবিতার বই বেনিম গারিবিম (আমার দারিদ্র্য) এর জন্য কমরেড মেডেল লাভ করেন।
কাব্য এবং দীর্ঘ পঙ্ক্তি
সম্পাদনাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় দীর্ঘ পঙ্ক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম ইয়োলার-অগুলার (রাস্তা-পুত্র) আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আজারবাইজানের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরকার উযেইর হাসিবেয়লিকে উত্সর্গ করা হয়। তার অনেক কাব্যেই রাজনৈতিক পট রয়েছে যেগুলো ইউএসএসআর এর পশ্চিমা শত্রুদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও গৃহ সমস্যার অনুনাদের ব্যাপারে মানুষের মনে সমালোচনার মনোভাব তৈরী করে। একইভাবে ল্যাটিন লিলি (ল্যাটিন ভাষা, ১৯৬৭), রচিত হয়েছিল মরক্কো দর্শনের সময় মরোক্কর স্থানীয় বাসিন্দা যেমন- আযেরি, এউএসএসআর এর মানুষদের কীভাবে মাতৃভাষা ছেড়ে অন্য এক ভাষা (আরবি'র পরিবর্তে ফ্রেঞ্চ) ব্যবহার করতে জোর করা হয় তার পতিক্রিয়া হিসেবে। ল্যাটিন ডিলি ভাগ্যের পরিহাসকে তুলে ধরেছে এই বিষয়ে যে- ল্যাটিন ভাষা বর্তমান কোনো সংস্কৃতির অংশ না হওয়া সত্ত্বেও এটি এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কারণে ভাহাবযাদেহ কেজিবি এর সাথে সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছিল কিন্তু এটা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি যে এই কবিতাটি মরোক্কর না বরং আজারবাইজানি ( তার দাবি অনুযায়ী)। একইভাবে, ১৯৭২ সালে তার কবিতা ডওন -শান্তিবাদী বিজ্ঞানী লিনাস পলিং এর উপর যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা'র ম্যাকার্থী-যুগের আক্রমণের বিষয়ে লেখা হয় যা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিকৃত রাজনীতিকে পরোক্ষভাবে প্রতিফলিত করে।[৭]
তার অন্যান্য জনপ্রিয় কাব্যকর্মঃ
- মেনিম দোস্তলারিম (আমার বন্ধুরা, ১৯৪৯)
- বাহার (বসন্ত, ১৯৫০)
- দোস্তলাগ নাগমেসি (বন্ধুত্বের বই, ১৯৫৩)
- এবেদী হেয়কেল (অনন্ত মূর্তি, ১৯৫৪)
- সিনার (সমতল গাছ, ১৯৫৬)
- সাদে আদামলার (সাধারণ মানুষ, ১৯৫৬)
- সেয়রান (মুদ্রা, ১৯৫৭)
- আয়লি গেসেলার ( চাঁদে রাত্রি, ১৯৫৮)
- সারিনি কিটাপানাসি (কবি'র পাঠাগার, ১৯৬১)
- ঈতিরাফ (স্বীকারোক্তি, ১৯৬২)
- ইনসান ভে জামান (মানুষ ও সময়, ১৯৬৪)
- সেকিলমিস এসেরলার (চিহ্নিত কাজ, ১৯৬৭)
- কোকলার-বুদাগলার (মূল ও শাখা, ১৯৬৮)
- দেনিয-সাহিল (সমুদ্র-উপকূল, ১৯৬৯)
- বিন্দোরতাইউযোনালতি (চৌদ্দ ষোল, ১৯৭০)
- ড্যাম ইয়েরি ( ছাদের উপর, ১৯৭৪)
- সেকিলমিস এসেলারি (চিহ্নিত কাজ, ২ খন্ড, ১৯৭৫)
- ইয়েচেলিকতে তেনহালিক (এমিনেন্সে শান্তি, ১৯৯৮)
- বেনিম গারিবিম (অপরিচিত আমি, ২০০২)
নাটক
সম্পাদনাতার সেরা নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ ইকিনিসি সেস (দ্বিতীয় শব্দ,১৯৯১), ইয়াগিসদান সোনরা ( বৃষ্টি শেষে), আরতিগ আদাম (ফালতু মানুষ) এবং ভিসদান (বিবেক)।
তার কিছু নাটক (ইকিনিসি সেস সহ) ইয়াভাজ বুলেন্ট বাকিলার তুর্কিতে অনুবাদ করেন। অনুদিত অন্য নাটকগুলো হলোঃ
- ফেরয়াত ( কান্না, পঙ্ক্তি আকারে)
- নেরেয়ে গিদিয়র বু দুনয়া ( বিশ্ব যেখানে যাচ্ছে, ১৯৯১)
- অযুমুযু কেসেন কিলিচ-গোকতুর্কলার (আমাদের পথ-গোকতুর্ক এর হাঁতিয়ার, ১৯৯৮, স্টেট থিয়েটার কর্তৃক মঞ্চিত হয়েছে, সিনাসি হল, ২০০০-২০০১)
- রেকাবেত
অনুবাদ
সম্পাদনা১৮১৩ সালে তুরস্ক সফর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লর্ড বায়রন এর সাহিত্যকর্ম ব্রাইড অব আবিডন কে আজারবাইজানি ভাষায় আবিডোস গেলিনি নামে অনুদিত করেন। ভাহাবযাদেহ এর নিজস্ব অনেক কবিতা সোভিয়েত ইউনিয়ন, তুরস্কের অনেক ভাষায় এবং জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও পার্সিয়ান ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
রাজনৈতিক ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনা১৯৫১ থেকে তার অবসরপ্রাপ্তি ১৯৯০ পর্যন্ত, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাহাবযাদেহ আজারবাইজান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সমসাময়িক সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন (মাঝের দুই বছর বাদে)। ১৯৮০ সালে তিনি আজারবাইজান আকাডেমি অব সায়েন্স এর সদস্য এবং আজারবাইজান এসএসআর এর মিলি মাজলিস (সংসদ) এর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন। সোভিয়েত আজারবাইজানে তার রাজনৈতিক উত্থানকে তার ১৯৭৬ সালের লেনিনলে সোহবেত শিরোনামে ধরা হয়। কিন্তু তিনি বেশিদিন উল্লেখযোগ্য জাতীয়তাবাদী হিসেবে থাকতে পারননি, বরং মাঝখানের দুই বছর তার কবিতা গুলুস্তান প্রকাশিত হওয়ার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৮১৩ সালের "ট্রিটি অব গুলিস্তান" এর বিষয়ে তিনি গুলুস্তান রচনা করেন যাতে তিনি আজারবাইজানি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন।[৮][৯] ভাহাবযাদেহ আজারবাইজানি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের এক অনন্য নজির কারণ তার ১৯৮৮ সালের এক মত প্রদান শামাক্ষি জেলার আজারবাইজানি এবং আর্মেনিয়ান জনগণের মনে এক পীড়া সৃষ্টি করে এবং যার ফলে শামাক্ষি জেলা অবশেরষ কেরাকঞ্চ গ্রামে পরিণত হয়। ১৯৮০ সালে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সুপ্রীম সোভিয়েতের এক সংসদীয় প্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে, ভাহাবযাদেহ তার সংসদীয় কাজ কর্ম চালিয়ে যান (আজারবাইজানের ১৯৯৫ এবং ২০০০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার কাজ উল্লেখযোগ্য)। ১৯৯৫ সালের ১৫ এপ্রিল ভাহাবযাদেহ তার জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদানের জন্য আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি হায়দার আলিয়েভ কর্তৃক সম্মানিত ইস্টিগলাল অর্ডার লাভ করেন।[১০]
বখতিয়ার ভাহাবযাদে কুচ, বাকু'র ইয়াসামাল বিভাগের এক অন্যতম প্রধান সড়ক, ভাহাবযাদেহ এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তুরস্কের আদনার একটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়না এবং আনকারা তে অবস্থিত উদ্যান তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। বেলগ্রাদ এবং সাইবেরিয়ার- বেনজিকা এবং মিজাকোভাকের সংযোগকারী সড়কের নাম হলো- "উকিকা বাহতিজারা ভাগাবযাদে"। এর নিজস্ব ই-বার্ড হটস্পট পাতাও আছে।[১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Azerbaijan International Magazine interview with Vahabzadeh in the Autumn 2002 edition (10.3)
- ↑ IB Vahabzade as ambassador to Moldova
- ↑ President Ilham Aliyev at Vahabzadeh's commemoration in 2009
- ↑ Vahabzadeh's early poems destroyed or hidden in mother's false leg
- ↑ KONUR,Erdem,"Vatan,Millet ve Anadili Şairi Vahapzade",www.edebi.net
- ↑ Visions magazine article on Vahabzadeh
- ↑ Latin Dili
- ↑ Visions magazine article on Vahabzada/eh
- ↑ Vahabzade showing an original copy of the 1959 Sheki Worker newspaper in which his Gulustan poem was published
- ↑ "B. M. Vahabzadənin"İstiqlal" ordeni ilə təltif edilməsi haqqında AZƏRBAYCAN RESPUBLİKASI PREZİDENTİNİN FƏRMANI" [Order of the President of Azerbaijan Republic on awarding B. Vahabzade with Istiglal Order]। ২০১২-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।Cite uses deprecated parameter
|trans_title=
(help) - ↑ http://ebird.org/ebird/hotspot/L3887811?yr=all&m=&rank=hc
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- vahabzade.net Official Website
- Facebook Page
- Extensive album of materials related to Vahabzadeh including family photos
- article on Vahabzade in Visions Magazine
- Vahabzade's political poems in Azerbaijan International magazine
- Azerbaijan International portrait of Vahabzadeh's life including links to related articles