ফেলিক্স কেরি
ফেলিক্স কেরি (ইংরেজি: Felix Carey (২০ অক্টোবর ১৭৮৬ - ১০ নভেম্বর, ১৮২২ ) ভারতে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার পথপ্রদর্শক। 'বিদ্যাহারাবলী' নামক ব্যবচ্ছেদবিদ্যা সম্পর্কিত গ্রন্থ বাংলায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সৃষ্টির ইতিহাসে তিনি স্মরণীয়। [১][২]
ফেলিক্স কেরি | |
---|---|
জন্ম | ২০ অক্টোবর ১৭৮৬ |
মৃত্যু | ১০ নভেম্বর ১৮২২ (বয়স ৩৬) শ্রীরামপুর |
পেশা | ধর্মপ্রচারক, অনুবাদক |
পিতা-মাতা |
সংক্ষিপ্ত জীবনী
সম্পাদনাফেলিক্স কেরির জন্ম ইংল্যান্ডে ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে অক্টোবর। তার পিতা বৃটিশ খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ও বাংলা ভাষায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক উইলিয়াম কেরি। তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। সাত বৎসর বয়সেই তিনি পিতার সঙ্গে বাংলায় আসেন এবং চোদ্দ বৎসর বয়সে শ্রীরামপুরে পিতার নিকট খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা নেন। পিতৃ-প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় পিতার সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর টেলর নামে এক চিকিৎসক শ্রীরামপুরে এলে ফেলিক্স তার কাছে চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্ত করতে থাকেন। ধর্মপ্রচারের চেয়ে বেশি উৎসাহ পেলেন রোগীর রোগ নিরাময়ে। একুশ বৎসর বয়সে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক হিসাবে ব্রহ্মদেশে গেলেন। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে পাদরিত্ব পরিত্যাগ করে ব্রহ্মদেশের রাজার পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পনের বছরে রাজনীতিচর্চা, ঐশ্বর্য আড়ম্বরের প্রতি আসক্তি, পর পর দুই স্ত্রীর মৃত্যুতে অস্থিরতা - তার জীবনে ঘটে যায়। ফলে তিন বছরের বেশি সময়ে পূর্ব ভারতের অরণ্য পর্বতে অজ্ঞাতবাসে কাটান। শেষে শ্রীরামপুরে ফিরে এসে আর পাদরিত্ব গ্রহণ না করে পিতার কাছে সংস্কৃত, পালি ও বাংলা ভাষার চর্চা শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করে অস্ত্রোপচার যথেষ্ট নিপুণ হাতে করতেন তিনি। ব্যবচ্ছেদবিদ্যা নিয়ে বাংলাভাষায় এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার পঞ্চম সংস্করণ থেকে অনুবাদ করতে শুরু করেন। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে চোদ্দ মাস ধরে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের এক তারিখে ৪৮ পৃষ্ঠা হিসাবে মোট ৬৩৮ পৃষ্ঠার প্রথম গ্রন্থ শেষ করেন। দ্বিতীয় গ্রন্থ স্মৃতিশাস্ত্র বিষয়ে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করেন। মার্চে দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। এই "বিদ্যাহারাবলী" ই হল বাংলা ভাষায় তার প্রথম ব্যবচ্ছেদ সম্পর্কিত জ্ঞানকোষ। এটিই তার প্রধান কীর্তি। একজন বিদেশি হয়ে দুরূহ স্মৃতিশাস্ত্রের তত্ত্ব তিনি বাংলাভাষায় ব্যক্ত করেছেন তা বিস্ময়কর। লেখক হিসাবে মাত্র চার বৎসর বাংলাভাষার সেবা করে গেছেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন বিনিয়ানের The Pilgrim's Progress গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেন "যাত্রিগণের অগ্রেসরণ বিবরণ" নামে। তিনি রামকমল সেনের সাথে ইংরাজী ও বাংলা অভিধানের কিছু কাজও করেছিলেন। কিন্তু ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই নভেম্বর মাত্র ৩৫ বৎসর বয়সেই পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ১৬১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ৫৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম