আলোকচিত্র
আলোকচিত্র (ফটো বা ফটোগ্রাফ) বলতে কোন আলোকসংবেদী তলের উপর আলো ফেলার মাধ্যমে নির্মীত ছবিকে বোঝায়। আলোকসংবেদী তলটি ফটোগ্রাফিক ফিল্ম হতে পারে, আবার সিসিডি বা সিমস চিপের মত কোন ইলেকট্রনিক ছবি নির্মাণকারীও হতে পারে। সাধারণত ক্যামেরা দিয়ে আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়। ক্যামেরার লেন্স এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আলোকচিত্র গ্রহণ করার শিল্প বা কাজকে আলোকচিত্রগ্রহণ বা ফটোগ্রাফি বলে। একে আলোকচিত্রশিল্প-ও বলা যায়।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রথম স্থায়ী আলোকচিত্রটি ১৮২২ সালে নিসেফোর নিপেসের দ্বারা বিকাশিত বিটুমেন-ভিত্তিক "হেলিওগ্রাফি" প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। তবে বাস্তব পৃথিবীর কোন দৃশ্যের প্রথম ছবি তোলা হয়েছিল আরও কয়েক বছর পরে ১৮২৬ সালে ফ্রান্সের লে গ্রাসে, যা একটি ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, তবে নিপসের প্রক্রিয়াটি ব্যবহারিক হওয়ার মতো যথেষ্ট সংবেদনশীল ছিল না:ছবি তুলতে একটি ক্যামেরার কয়েক ঘন্টা বা কোন ক্ষেত্রে সারা দিন লাগত।[২] ১৮২৯ সালে নিপস লুই দাগেরের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হয় একই রকম, তবে আরও সংবেদনশীল কিংবা উন্নত প্রক্রিয়া তৈরি করতে সহযোগিতা করেন।
১৮৩৩ সালে নিপেসের মৃত্যুর পর, দাগের সিলভার হ্যালাইড-ভিত্তিক বিকল্প পদ্ধতি আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন। তিনি একটি রূপালী-ধাতুপট্টাবৃত তামার পাতকে আয়োডিন বাষ্পে উন্মুক্ত করেন, যা আলোক-সংবেদনশীল সিলভার আয়োডাইডের একটি স্তর তৈরি করে; কয়েক মিনিটের জন্য তা ক্যামেরায় রাখেন; ফলে অদৃশ্য সুপ্ত প্রতিচ্ছবি তৈরি হয় যা পারদ ধোঁয়ার উপস্থিতিতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে; তারপর অবশিষ্ট সিলভার আয়োডাইড অপসারণের জন্য তিনি প্লেটটিকে একটি গরম লবণের দ্রবণে ডোবান, এতে ফলাফল দ্রুততর হয়। তিনি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার এই প্রথম ব্যবহারিক প্রক্রিয়ার নাম দেন দাগেরোচিত্রগ্রহণ, নিজের নামে। এটির অস্তিত্ব ৭ জানুয়ারী, ১৮৩৯ সালে বিশ্বের কাছে ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু একই বছরের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত কাজের বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। অন্যান্য উদ্ভাবকরা দ্রুতই বেশ উন্নতি করতে শুরু করেন যা প্রয়োজনীয় পরিমাণ এক্সপোজার সময়কে কয়েক মিনিট থেকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে হ্রাস করে, এই সময়ে প্রতিকৃতি আলোকচিত্র পপ্রকৃতপক্ষে ব্যবহারিক এবং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
দাগেরোচিত্রগ্রহণ প্রক্রিয়ার ত্রুটি ছিল, যেমন আয়নার মতো চিত্রের পৃষ্ঠের ভঙ্গুরতা এবং চিত্রটি সঠিকভাবে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যাবস্থা। প্রতিটি আলোকচিত্র ছিল একটি অনন্য অস্বচ্ছ পজিতিভ যা শুধুমাত্র একটি ক্যামেরা দিয়ে অনুলিপি করে নকল করা যেত। ফলে উদ্ভাবকরা উন্নত প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা আরও ব্যবহারিক হবে। ১৮৫০ এর দশকের শেষের দিকে দাগেরোচিত্রগ্রহণকে কম ব্যয়বহুল এবং আরও সহজে ব্যবহারযোগ্য অ্যামব্রোটাইপ এবং টিনটাইপ প্রতিস্থাপিত করে, যা সম্প্রতি চালু হওয়া কোলোডিয়ন প্রক্রিয়ায় কাজ করত। অ্যালবুমেন পেপারে প্রিন্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত গ্লাস প্লেট কোলোডিয়ন নেগেটিভ শীঘ্রই মানুষের পছন্দের ফটোগ্রাফিক পদ্ধতিতে পরিণত হয় এবং ১৮৭১ সালে আরও সুবিধাজনক জেলটিন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পরেও বহু বছর ধরে সেই অবস্থান ধরে রাখে। জেলটিন প্রক্রিয়ার আজ পর্যন্ত সাদাকালো আলোকচিত্র গ্রহন যেক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায় ইমালশনের সংবেদনশীলতা এবং ব্যবহৃত সহায়ক উপাদানের কারণে। সহায়ক উপাদান হিসেবে প্রথম দিকে মূলত কাচ ব্যবহৃত হত, তারপরে বিভিন্ন ধরণের নমনীয় প্লাস্টিকের ফিল্ম, চূড়ান্ত প্রিন্টের জন্য বিভিন্ন ধরণের কাগজের ব্যবহার শুরু হয়।
রঙিন ফটোগ্রাফি প্রায় সাদা-কালোর মতোই পুরানো, কিন্তু বহু বছর ধরে রঙিন ফটোগ্রাফি একটি পরীক্ষাগারের গণ্ডি পার হইনি। ১৮৪২ সালে জন হার্শেলের অ্যান্থোটাইপ প্রিন্ট, ১৮৬০-এর দশকে লুই ডুকস ডু হাউরনের অগ্রণী কাজ এবং ১৮৯১ সালে লিপম্যান প্রক্রিয়া উন্মোচন করেন। তবে ১৯০৭ সালে অটোক্রোম প্লেট প্রবর্তনের সাথে এটি প্রথম একটি ব্যাপক বাণিজ্যিক বাস্তবতায় পরিণত হয়, কিন্তু প্লেটগুলি খুব ব্যয়বহুল ছিল এবং হাতে ধরা ক্যামেরা দিয়ে নৈমিত্তিক স্ন্যাপশট নেওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। 1930-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক মাল্টি-লেয়ার ক্রোমোজেনিক টাইপ আবিষ্কৃত হলে প্রথম সহজে ব্যবহারযোগ্য রঙিন ফিল্ম কোডাক্রোম এবং অ্যাগফাকলর নিউ-এর প্রচলন দেখা যায়। এই প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলি স্লাইড প্রজেক্টর এবং প্রদর্শন যন্ত্র ব্যবহার করে স্বচ্ছ চিত্র প্রদর্শন করতে পারত, কিন্তু 1940-এর দশকে ক্রোমোজেনিক রঙিন প্রিন্ট পেপার প্রবর্তনের পর রঙিন প্রিন্টগুলি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মোশন পিকচার ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন মেটাতে বেশ কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া এবং সিস্টেম পরবর্তীতে উদ্ভাবিত হয়, সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত প্রক্রিয়াটি ছিল থ্রি-স্ট্রিপ টেকনিকালার প্রক্রিয়া যা বর্তমানে অপ্রচলিত।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Online Etymology Dictionary"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "The First Photograph - Heliography"। web.archive.org। ২০০৯-১০-০৬। Archived from the original on ২০০৯-১০-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-০১।