ফজলুল হক সেলবর্ষী
ফজলুল হক সেলবর্ষী (১৮৯৩-১৯৬৮) ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী নেতা। সাংবাদিকতা ও লেখালেখি ছিলো তার পেশা। বিপ্লবী জেহাদ পার্টি প্রতিষ্ঠা করে তিনি তরুণ মুসলিমদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।[১]
ফজলুল হক সেলবর্ষী | |
---|---|
জন্ম | ১৮৯৩ ইং |
মৃত্যু | ৮ নভেম্বর ১৯৬৮ ইং সেলবরষ, সুনামগঞ্জ |
শিক্ষা |
|
পেশা | সাংবাদিকতা |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক, লেখক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন |
পিতা-মাতা |
|
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাফজলুল হক ১৮৯৩ সালে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিংধা মাইনর স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯১৫ সালে সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি কলকাতায় চলে যান, সেখানেই ১৯১৬ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কলকাতা রিপন কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। তবে, তিনি তার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত না করেই সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে পড়েন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাফজলুল হক ১৯১৭ সালের কোনো একসময়ে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশায় তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সম্পাদক হিসেবে দৈনিক নবযুগ, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক আল-মুসলিম এবং সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় কাজ করেন। এছাড়াও, ১৯৩৫ সালে তিনি দৈনিক তাকবির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তবে, সরকার বিরোধী ভূমিকার কারণে পত্রিকাটি সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তিনি আরও বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে ফজলুল হক ঢাকায় এসে দীর্ঘকাল দৈনিক সংবাদ ও নেজামে ইসলাম পত্রিকায় কাজ করেছিলেন।[১]
রাজনীতি ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
সম্পাদনাছাত্রজীবন থেকেই সেলবর্ষী বিপ্লবী ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। তিনি বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ও আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুসলিম মতবাদের উদ্যোক্তা সাইয়্যিদ জামালুদ্দিন আফগানীর প্যান-ইসলামিজম মতাদর্শের কট্টর অনুসারী ছিলেন। নিজের সভাপতিত্বে আনোয়ার পাশা ছাত্র সমিতি নামে কলকাতায় একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এছাড়াও, কলকাতায় ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় ১৯১৬ সালে জেহাদ পার্টি নামে একটি গোপন বিপ্লবী দল গঠন করেন। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি সেলবর্ষী সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য কয়েকবার গ্রেফতার হন। ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে ১৯২১ সালে তাকে গ্রেফতারের জন্য ব্রিটিশ সরকার পর পর তিনটি আদেশ জারি করে। কয়েকমাস আত্মগোপনে থাকার পরে সেলবর্ষী তার গোপন কার্যক্রম চালিয়ে যান। পরবর্তীতে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের প্ররোচনায় ১৯২২ সালে বাংলা ছেড়ে ব্রিটিশ বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার নিরাপদ স্থল হিসেবে বিবেচিত আফগানিস্তানে চলে আসেন। পরবর্তীতে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের পেশোয়ার যাওয়ার সময় পেশোয়ার সীমান্তে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।পেশোয়ার সেনানিবাসে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাকে ৪৮ দিন বন্দি রাখা হয়। পরে আদালতে বিচারের জন্য তাকে সিলেটে আনা হয় এবং রাজদ্রোহের অপরাধে সেলবর্ষীকে তিন বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পর ১৯২৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।[১]
রচনা ও প্রকাশনা
সম্পাদনাবিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে ফজলুল হকের বহুসংখ্যক নিবন্ধ ও রচনা প্রকাশিত হয়েছে। সেলবর্ষীর বেশিরভাগ রাজনৈতিক নিবন্ধ দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও, বৈপ্লবিক রচনাবলির অধিকাংশই প্রকাশিত হয় কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকায়। ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তার লেখা কবিতা সেন্ট হেলেনা, ওকবা এবং আল্লামা ইকবালের তারানা-ই-মিলীর কাব্যানুবাদ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছিল। তার রচিত দুটি গ্রন্থ আনোয়ার পাশা এবং শহীদে আযম প্রকাশিত হয়নি।[১]
সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৬৭ সালের ২৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিশ সুনামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরী হলে ফজলুল হক সেলবর্ষীকে গণসংবর্ধনা প্রদান করে।[১]
মৃত্যু
সম্পাদনাসেলবর্ষী ১৯৬৮ সালের ৮ নভেম্বর নিজ গ্রাম সেলবরষে মৃত্যুবরণ করেন।[১]