প্রিসিলা প্রেসলি

মার্কিন অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ী

প্রিসিলা অ্যান প্রেসলি (ইংরেজি: Priscilla Ann Presley; জন্ম: ওয়েগনার, পূর্বে বোলিও, ২৪ মে ১৯৪৫) একজন মার্কিন ব্যবসায়ী ও অভিনেত্রী। তিনি প্রয়াত মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী এলভিস প্রেসলির সাবেক স্ত্রী এবং এলভিস প্রেসলি এন্টারপ্রাইজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারপারসন। অভিনয় জীবনে তিনি লেসলি নিয়েলসনের সাথে নেইকড গান চলচ্চিত্র ত্রয়ীতে জেন স্পেন্সার চরিত্রে এবং টেলিভিশন ধারাবাহিক ডালাস-এ জিনা ওয়েড চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

প্রিসিলা প্রেসলি
ইংরেজি: Priscilla Presley
২০১৯ সালে প্রেসলি
জন্ম
প্রিসিলা অ্যান ওয়েগনার

(1945-05-24) ২৪ মে ১৯৪৫ (বয়স ৭৯)
অন্যান্য নামপ্রিসিলা ওয়েগনার
প্রিসিলা বোলিও
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৭৩-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীএলভিস প্রেসলি (বি. ১৯৬৭; বিচ্ছেদ. ১৯৭৩)
সঙ্গীমার্কো গ্যারিবল্ডি (১৯৮৪-২০০৬)
সন্তান
আত্মীয়রাইলি কিও (নাতনী)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

প্রিসিলা অ্যান ওয়েগনার ১৯৪৫ সালের ২৪শে মে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ব্রুকলিন শহরের ব্রুকলিন নেভাল হসপিটালে জন্মগ্রহণ করেন।[][] তার মাতামহ আলবার্ট হেনরি আইভারসেন (১৮৯৯-১৯৭১) নরওয়ের এগারসুন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে তিনি স্কট-আইরিশ ও ইংরেজ বংশোদ্ভূত লরেইন ডেভিসকে (১৯০৩-১৯৮৪) বিয়ে করেন।[] তাদের একমাত্র কন্যা অ্যানা লিলিয়ান আইভারসেন (১৯২৬-২০২১), যার নাম পরবর্তীকালে সংক্ষিপ্তাকারে অ্যান করা হয়।[]

প্রেসলির পিতা মার্কিন নেভি পাইলট জেমস ফ্রেডরিক ওয়েগনার (১৯২১-১৯৪৫) ছিলেন পেনসিলভেনিয়ার শেরিট্রি শহরতলীর বাসিন্দা হ্যারল্ড ওয়েগনার (১৮৯৭-১৯৫৮) ও ক্যাথরিনের (১৯০১-১৯৯৫) পুত্র।[] ওয়েগনার তিন বছরের বেশির সময় অ্যানের সাথে প্রেম করার পর ১৯৪৪ সালের ১০ই আগস্ট তাকে বিয়ে করেন। ওয়েগনার ১৯৪৫ সালের ৩রা নভেম্বর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।[]


এলভিসের সাথে জীবন

সম্পাদনা

জার্মানি

সম্পাদনা

১৯৫৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বাড নাউহাইমে এলভিস প্রেসলির ভাড়াকৃত বাড়িতে এক পার্টিতে প্রিসিলার সাথে এলভিসের সাক্ষাৎ হয়। প্রিসিলার তখন বয়স ছিল ১৪ এবং এলভিসের ২৪। তার উপস্থিতিতে এলভিসকে অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল। সেই রাতে এলভিসের সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের পর প্রিসিলার দেরিতে বাড়ি ফেরায় তার পিতামাতা বিরক্ত হয়েছিলেন এবং তাকে আবার এলভিসের সাথে সাক্ষাৎ করতে মানা করেন। কিন্তু আরেকবার নির্দিষ্ট স্থানে সাক্ষাতের জন্য এলভিসের আগ্রহ ও দেরি না করানোর প্রতিজ্ঞার ফলে প্রিসিলার পিতামাতা তাদের আবার সাক্ষাৎ করা অনুমতি দেন। এরপর এলভিস ১৯৬০ সালের মার্চ মাসে পশ্চিম জার্মানি ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তারা একাধিকবার দেখা-সাক্ষাৎ করেন। এলভিস জার্মানি ত্যাগের পর বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য প্রিসিলার কাছে অনুরোধ আসতে থাকে। প্রিসিলা এলভিসের ভক্তদের কাছ থেকেও চিঠি পেতে থাকেন, তন্মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই ছিল। কিছু পত্রিকায় ন্যান্সি সিনাত্রার সাথে এলভিসের সম্পর্কের গুজব রটে, ফলে প্রিসিলা ধরে নেন এলভিসের সাথে তার সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে এবং তাদের আর সাক্ষাৎ হবে না।

বিবাহ ও গর্ভধারণ

সম্পাদনা
 
১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নবজাতক লিসা ম্যারিকে নিয়ে এলভিস ও প্রিসিলা

১৯৬৬ সালের বড়দিনের পূর্বে এলভিস প্রিসিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৭৩ সালে লেডিজ' হোম জার্নালে এক সাক্ষাৎকারে প্রিসিলা বলেন তিনি ও এলভিস একসাথে থেকেই সুখী ছিলেন, কিন্তু সে সময়ে লোকজনের জন্য শুধু একসাথে থাকাই যথেষ্ট ছিল না।[] এলভিসের রাঁধুনি আলবার্টা ও বন্ধু মার্টি ল্যাকনারের মতে এলভিস বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছিলেন না এবং অন্য কোন বিকল্প না থাকায় বিপর্যস্ত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে জো এস্পোসিতো বলেন এলভিস প্রিসিলাকে বিয়ে করার জন্য উতলা ছিলেন।[]

১৯৬৭ সালের ১লা মে লাস ভেগাসের আলাদিন হোটেলে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। টম পার্কারের আয়োজিত এই বিয়েতে অল্প কয়েকজন অতিথি ছিল এবং মাত্র আট মিনিটেই তা সম্পন্ন হয়।[] অতিসত্ত্বর একটি প্রেস কনফারেন্স হয় এবং ১০,০০০ মার্কিন ডলারের ব্রেকফাস্ট রিসেপশন হয়, যেখানে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও এমজিএম, আরসিএ ও উইলিয়াম মরিস এজেন্সির ব্যবসায়িক সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।[] এই বিয়ের ফলে এলভিস ও রেড ওয়েস্ট-সহ তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরে, কারণ তাদের মূল বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। যদিও এর পুরো দায়ভার পার্কারের, বছরের পর বছর ধরে এই অসন্তোষ রয়ে যায়।[]

প্রিসিলা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর এমন দ্রুত গর্ভধারণের জন্য কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন।[১০] তিনি এলভিসকে আগেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। এছাড়া তিনি গর্ভপাতের কথাও বিবেচনায় আনেন এবং এলভিসের সাথে আলোচনা করেন, কিন্তু তারা দুজনেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে গর্ভপাত করলে তারা কেউই একে অপরের সাথে থাকতে পারবেন না। তাদের একমাত্র সন্তান লিসা ম্যারি ১৯৬৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ের নয় মাসের দিন জন্মগ্রহণ করেন।[১০]

বিচ্ছেদ ও তালাক

সম্পাদনা
 
১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রেসলি দম্পতি

প্রিসিলা এলভিসের প্রেরণায় কারাতে ক্লাসে ভর্তি হন। তিনি ১৯৭২ সালে এলভিসের কনসার্টের মঞ্চে কারাতে প্রশিক্ষক মাইক স্টোনের সাথে পরিচিত হন এবং তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।[১১] তিনি অতিসত্ত্বর তার সাথে সম্পর্কে জড়ান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি তখনও এলভিসকে খুব ভালোবাসতাম, কিন্তু পরের কয়েক মাসে আমি বুঝতে পারি আমার ভাগ্য নিয়ে আমাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"[১২]

প্রিসিলা ও এলভিস ১৯৭২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি আলাদা হয়ে যান এবং তারা দুজন ২৬শে জুলাই আইনগতভাবে বিচ্ছেদের জন্য মামলা করেন।[১৩] এলভিস ১৯৭৩ সালের ৮ই জানুয়ারি তার ৩৮তম জন্মদিনে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। এই মাসের শেষভাগে মাইক স্টোনকে নিয়ে এলভিসের মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে। ডাক্তার ও অধিক মাত্রার ঔষধ দিয়েও তার তীব্র ক্ষোভ থামানো যাচ্ছিল না। তবে তার দেহরক্ষী তাকে ভাড়াটে খুনীর ব্যবস্থা করতে বললে তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হননি।[১৪] ১৯৭৩ সালের ৯ই অক্টোবর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়।[১৫]

চলচ্চিত্রের তালিকা

সম্পাদনা
বছর চলচ্চিত্রের শিরোনাম চরিত্র টীকা
১৯৮০-১৯৮১ দোজ অ্যামেজিং অ্যানিমেলস সহ-উপস্থাপক
১৯৮৩ লাভ ইজ ফরেভার স্যান্ডি রেডফোর্ড টিভি চলচ্চিত্র
দ্য ফল গাই সাবরিনা কোল্ডওয়ে পর্ব: "ম্যানহান্টার"
১৯৮৩-১৯৮৮ ডালাস জিনা ওয়েড ১৪৩ পর্ব
বিজয়ী: রাত্রীকালীন সোপ অপেরায় নবীন অভিনেত্রী বিভাগে সোপ অপেরা ডাইজেস্ট পুরস্কার (১৯৮৪)
১৯৮৮ দ্য নেইকড গান: ফ্রম দ্য ফাইলস অব পুলিশ স্কোয়াড! জেন স্পেন্সার
১৯৯০ দি অ্যাডভেঞ্চার অব ফোর্ড ফেয়ারলেন কলিন সাটন
১৯৯১ দ্য নেইকড গান +: দ্য স্মেল অব ফিয়ার জেন স্পেন্সার মনোনীত: শ্রেষ্ঠ চুম্বন বিভাগে এমটিভি মুভি পুরস্কার
১৯৯৩ টেলস ফ্রম দ্য ক্রিপ্ট জিনা পর্ব: "ওয়ল'স ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল"
১৯৯৪ নেইকড গান ৩৩+: দ্য ফাইনাল ইনসাল্ট জেন স্পেন্সার ড্রেবিন
১৯৯৬ মেলরোজ প্লেস নার্স বেনসন পর্ব: "পিটার্স এক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার" "ফুল মেটাল বেটসি" "ডেড সিস্টার্স ওয়াকিং"
১৯৯৭ টাচড বাই অ্যান অ্যাঞ্জেল ড. মেগ সল্টার পর্ব: "লেবার অব লাভ"
১৯৯৮ ব্রেকফাস্ট উইথ আইনস্টাইন কিলিন টিভি চলচ্চিত্র
১৯৯৯ স্পিন সিটি ম্যারি প্যাটার্নো পর্ব: "ডিক ক্লার্ক'স রকিন' মেক-আউট পার্টি '৯৯" ও "ব্যাক টু দ্য ফিউচার ৪: জাজমেন্ট ডে"
হেইলি ওয়েগনার, স্টার সু ওয়েগনার টিভি চলচ্চিত্র
২০০৮ ড্যান্সিং উইথ দ্য স্টারস স্বয়ং ৮ম স্থান অর্জন করেন
২০১৯ ওয়েডিং অ্যাট গ্রেসল্যান্ড স্বয়ং টিভি চলচ্চিত্র
২০২৩ এজেন্ট এলভিস স্বয়ং সহ-নির্মাতা, নির্বাহী প্রযোজক

গ্রন্থতালিকা

সম্পাদনা
  • প্রেসলি, প্রিসিলা (১৯৮৫)। Elvis and Meআইএসবিএন 0-399-12984-7 
  • প্রেসলি, প্রিসিলা; প্রেসলি, লিসা ম্যারি (২০০৫)। Elvis by the Presleysআইএসবিএন 0-307-23741-9 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ক্লাইন, জেনিফার। "Priscilla Presley, 72, makes rare appearance in New York for new Elvis documentary"। এওএল। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  2. "Priscilla Presley: Timeline"টাম্বলার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  3. গ্রিমেন, বিয়োর্ন (১৪ মার্চ ২০০৮)। "Egen plass i bestefars fødeby"এনআরকে (নরওয়েজিয়ান বোকমাল ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  4. ফিনস্টাড ১৯৯৭, পৃ. ৯।
  5. "Is Elvis' Priscilla Area Woman's Kin?"দ্য টিটুসভিল হেরাল্ড। ১৬ মার্চ ১৯৬০। পৃষ্ঠা ২। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ – নিউজপেপার্স.কম-এর মাধ্যমে। 
  6. "Cherrytree Man Dies in Crash"দ্য ব্লিজার্ড। ৫ নভেম্বর ১৯৪৫। পৃষ্ঠা ৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ – নিউজপেপার্স.কম-এর মাধ্যমে। 
  7. প্রেসলি, প্রিসিলা (আগস্ট ১৯৭৩)। "For the First Time... Elvis Presley's ex-wife Tells All - My Life With and Without Elvis Presley" (সাক্ষাৎকার)। সাক্ষাত্কার গ্রহণ করেন স্যান্ড্রা শেভি। লেডিজ হোম জার্নাল – এলভিস অস্ট্রেলিয়া-এর মাধ্যমে। 
  8. ব্রাউন ও ব্রোয়েস্ক ১৯৯৮, পৃ. ৩১৩।
  9. গুরালনিক ১৯৯৯, পৃ. ২৬১–২৬৭।
  10. ব্রাউন ও ব্রোয়েস্ক ১৯৯৮, পৃ. ৩২৩-৩৩৫।
  11. প্রেসলি ১৯৮৫, পৃ. ২৯৫।
  12. প্রেসলি ১৯৮৫, পৃ. ২৯৭।
  13. গুরালনিক ও ইয়োর্গেনসেন ১৯৯৯, পৃ. ৩১০।
  14. গুরালনিক ২০০০, পৃ. ৪৯০।
  15. গুরালনিক ও ইয়োর্গেনসেন ১৯৯৯, পৃ. ৩২৯।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:এলভিস প্রেসলি টেমপ্লেট:লিসা ম্যারি প্রেসলি