প্রথম ওরহান

উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক

উসমানুগলু উরহান গাজি (উসমানীয় তুর্কি: اورحان غازی, তুর্কি: Orhan Gazi; ১৩ সেপ্টেম্বর ১২৮১ – মার্চ ১৩৬২) ছিলেন উসমানীয় বেয়লিক নামে পরিচিত উদীয়মান উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সুুুুলতান। তিনি ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে সুগুতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম উসমান ও তার ২য় স্ত্রী মালহুন খাতুনের পুত্র।

উরহান গাজি
اورحان غازی
বে
গাজি
২য় উসমানীয় সুলতান (বে)
রাজত্বকাল২৯ জুলাই ১৩২৬ ‒ ১৩৬২
পূর্বসূরিপ্রথম উসমান
উত্তরসূরিপ্রথম মুরাদ
জন্ম১২৮১
সুগুত
মৃত্যুমার্চ ১৩৬২ (বয়স ৮০-৮১ বছর)
বুরসা
সমাধি
স্ত্রীনিলুফার খাতুন
আসপোরচা খাতুন
থিওডোরা খাতুন
এফতানদিস খাতুন
রাজবংশউসমানীয় রাজবংশ
(উসমানলি হানেদানি)
পিতাপ্রথম উসমান
মাতামালহুন খাতুন
ধর্মইসলাম
তুগরাপ্রথম ওরহান স্বাক্ষর

শাসনের শুরুর দিকে উরহান উত্তরপশ্চিম আনাতোলিয়া জয়ের উপর মনোযোগ দেন। এই অঞ্চলের অধিকাংশ বাইজেন্টাইন শাসনের অধীনে ছিল। বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় আন্ড্রোনিকোস পেলেইওলোগোসের বিরুদ্ধে তিনি পেলেকেননের যুদ্ধে বিজয়ী হন। ওরহান এছাড়াও বালিকেসিরের কারাসি ও আঙ্কারার আহিস অঞ্চলও অধিকার করেন।

নয় বছর বয়সী সম্রাট পঞ্চম জন পেলাইওলোগোসের উত্তরাধিকার নিয়ে সৃষ্ট ধারাবাহিক গৃহযুদ্ধ ওরহানের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। ১৩৪১-১৩৪৭ সালের বাইজেন্টাইন গৃহযুদ্ধে রাজ অভিভাবক ষষ্ঠ জন কান্টাকুজেনস তার মেয়ে থিওডোরাকে ওরহানের সাথে বিয়ে দেন এবং উসমানীয় সেনাদেরকে প্রতিপক্ষ সম্রাজ্ঞী অ্যানার বিরুদ্ধে নিযুক্ত করেন। ১৩৫২-১৩৫৭ সালের বাইজেন্টাইন গৃহযুদ্ধে কান্টাকুজেনস উসমানীয় সেনাদেরকে পঞ্চম জনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন এবং ১৩৫২ সালের দিকে চিম্পের ইউরোপীয় দুর্গ ব্যবহারের জন্য তাদের অনুমতি দেন।[][] দুই বছর পর একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে গেলিপলি বিধ্বস্ত হয় এবং উরহানের পুত্র সুলাইমান পাশা শহর অধিকার করেন। ফলে উসমানীয়রা ইউরোপীয় মূল ভূখন্ডের দিকে আক্রমণের শক্ত ভিত্তিস্থান লাভ করে।

ক্ষমতা লাভ

সম্পাদনা

পিতার উত্তরসূরি হওয়ার পর উরহান তার ভাই আলাউদ্দিন আলিকে প্রস্তাব দেন যে তারা উদীয়মান সাম্রাজ্য ভাগাভাগি করবেন। কিন্তু আলাউদ্দিন এই যুক্তিতে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে তাদের পিতা ওরহানকে একমাত্র উত্তরসূরি মনোনীত করে গিয়েছেন এবং সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করা যাবে না। তিনি শুধু বুরসার নিকটে একটি গ্রামের রাজস্ব নিজের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন।

এরপর ওরহান তার ভাই আলাউদ্দিনকে উজির হওয়ার প্রস্তাব দেন। ঐতিহাসিকদের মতে আলাউদ্দিন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। অন্যান্য উজিরদের মত আলাউদ্দিন প্রায়ই সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিতেন না। তবে তিনি রাষ্ট্রের সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠান গঠন ও ব্যবস্থাপনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

কারো কারো মতে আলাউদ্দিনের পরামর্শে উসমানীয়রা সেলজুকদের অনুগত রাজ্যের অবস্থান থেকে সরে আসে, তারা সেলজুক শাসকদের মুদ্রা ব্যবহার বন্ধ করে দেয় এবং খুতবায় তার নামোল্লেখ থেকেও বিরত হয়। অন্যান্যরা এসকল পরিবর্তনকে উসমানের সাথে সম্পর্কিত করলেও অনেকে এই বিষয়ে একমত যে আলাউদ্দিন নিয়মিত বাহিনী গঠন ও এর জন্য অর্থের ব্যবস্থা করেছিলেন।

রাজ্য বিস্তার

সম্পাদনা
 
১৩৫৫ সালের দিকে ওরহানের শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য।

ওরহান আনাতোলিয়ায় বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। প্রথমে ১৩২১ সালে তিনি মার্মা‌রা সাগরে বুরসার বন্দর মুদানিয়া অধিকার করেন। এরপর তিনি কোনুর আল্পের অধীনে পশ্চিমের কৃষ্ণসাগরের উপকূল এবং আকুয়েদার অধীনে ইজমিত জয়ের জন্য সেনাদল প্রেরণ করেন। শেষে মার্মা‌রা সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূল অধিকার করেন। এরপর কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তিনি বুরসা অধিকার করে। বুরসা দুর্গের কমান্ডার এভ্রোনোস বে হালকা অশ্বারোহী বাহিনীর একজন কমান্ডার হন এবং তার পুত্র ও নাতিরা বলকানের অনেক অঞ্চল জয়ে উসমানীয়দের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছে। বুরসা শহর জয়ের পর ওরহান বসফরাসের দিকে সেনাদল প্রেরণ করে মার্মা‌রা সাগর উপকূলের বাইজেন্টাইন শহরগুলো অধিকার করেন।

বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় এন্ড্রোনিকাসের সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়ে বর্তমান দারিজা শহরের ওরহানের বাহিনীর মুখোমুখি হয়। যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয়। এভাবে ১৩২৯ সালের পেলেকেনোনের যুদ্ধের পর বাইজেন্টাইনরা কোচাইলির অঞ্চল পুনরুদ্ধারের ধারণা পরিত্যাগ করে।

নাইসিয়া শহর ১৩৩১ সালে আত্মসমর্পণ করে। ১৩৩৭ সালে ইজমিত বা নিকোমেডিয়া অধিকার করা হয়। ওরহান তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুলাইমান পাশাকে শহরের নিয়ন্ত্রণভার প্রদান করেন। ইতিপূর্বে সুলাইমান শহর অবরোধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৩৩৮ সালে উসকুদার জয়ের মাধ্যমে অধিকাংশ উত্তর আনাতোলিয়া উসমানীয়দের হাতে আসে।

১৩৪৫ সালে ওরহান পার্শ্ববর্তী তুর্কি রাজ্য কারেসি (বর্তমান বালিকেসির ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) জয় করেন। কারেসির আমির মারা যাওয়ার পর সিংহাসন নিয়ে তার দুই পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে লড়াই শুরু হয়। ওরহান এসময় কারেসি আক্রমণ করে তা অধিকার করে নেন।

কারেসি জয়ের ফলে প্রায় সমগ্র উত্তরপশ্চিম আনাতোলিয়া উসমানীয় বেয়লিকের আওতায় চলে আসে। বুরসা, ইজমিত, ইজনিক ও বেরগামা শহরগুলো উসমানীয়দের শক্তিশালী ঘাঁটি হয়ে উঠে।

ক্ষমতা সংহতকরণের যুগ

সম্পাদনা

কারেসি অধিকারের পর বিশ বছর শান্তিকালীন অবস্থা বজায় ছিল। এসময় বিভিন্ন বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠান সংগঠিত করা হয়, আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয় এবং মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। আহিসদের কাছ থেকে আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ছাড়া ওরহান আর কোনো অভিযান চালাননি।

মৃত্যু

সম্পাদনা
 
বুরসায় ওরহান গাজির মাজার
 
মাজারের বহির্ভাগ

ওরহান ১৩৬২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বুরসায় দাফন করা হয়।

ওরহানের শাসনকাল উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্যতম একটি সাফল্যের যুগ। তার শাসনের মাধ্যমে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের শুরু হয়। এছাড়াও তিনি নতুন সালতানাতের বিস্তৃতি ও সুসংহতকরণেও অবদান রেখেছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Nicolle, David and Hook, Adam. Ottoman Fortifications 1300-1710 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে. Osprey Publishing, 2010. Retrieved 3 Sep 2011.
  2. Goffman, Daniel. The Ottoman Empire and Early Modern Europe. Cambridge University Press, 2002. Retrieved 3 September 2011.
  • Incorporates text from "History of Ottoman Turks" (1878)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
প্রথম ওরহান
জন্ম: ১২৮১ মৃত্যু: ১৩৬২
শাসনতান্ত্রিক খেতাব
পূর্বসূরী
প্রথম উসমান
উসমানীয় সুলতান (বে)
২৯ জুলাই ১৩২৬ – ১৩৬২
উত্তরসূরী
প্রথম মুরাদ