পুরাজ্যোতির্বিদ্যা
পুরাজ্যোতির্বিদ্যা (ইংরেজি: Archaeoastronomy) বলতে প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে যেভাবে প্রথাগত জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে চর্চা করা হয়েছে সেগুলোকে তাদের দৃষ্টিকোণ ও উপায়-উপকরণের সাপেক্ষে অধ্যয়ন করাকে বুঝায়। মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিক প্রমাণাদির মাধ্যমে এই গবেষণা করা হয়। সমকালীন বিভিন্ন সমাজে আকাশ পর্যবেক্ষণ কীভাবে করা হয় তার অধ্যয়নকে অনেক সময় নৃজ্যোতির্বিদ্যা (ethnoastronomy) নামে আখ্যায়িত করা হয়। অবশ্য নৃজ্যোতির্বিদ্যা পুরাজ্যোতির্বিদ্যারই একটি অংশ না সম্পূর্ণ পৃথক সে নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পুরাজ্যোতির্বিদ্যার সাথে ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, এছাড়া এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসের। ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞান হচ্ছে জ্যোতিষ্কসমূহের ঐতিহাসিক উপাত্ত পর্যালোচনার মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার বিদ্যা, আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস হচ্ছে লিখিত দলিলসমূহ পর্যালোচনার মাধ্যমে অতীতের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহের মূল্যায়ন করার বিজ্ঞান।
প্রাচীন কালের মানুষদের জ্যোতির্বিদ্যা অনুশীলনের চিহ্ন আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, যেমন প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, ইতিহাস ইত্যাদির কৌশল প্রয়োগ করা হয়। এত শত কৌশলের সার্থক সমন্বয় করতে গিয়ে অনেক বিতর্কের জন্ম হয় যা এখনও পুরাজ্যোতির্বিদদের জন্য একটি বড় সমস্যা। ক্লাইভ রাগলসের মতে পুরাজ্যোতির্বিদ্যাকে ঠিক প্রাচীন মানুষদের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ক গবেষণা বলা যাবে না, কারণ বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি শাখা, কিন্তু প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিদ্যার সাথে জ্যোতিষ শাস্ত্রের তেমন কোন পার্থক্য ছিল না এবং আকাশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তখন মূলত মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হতো। আকাশ পর্যবেক্ষণ, তার সাথে জীবনের মিল খোঁজার চেষ্টা এবং বিভিন্ন সংকেতসমৃদ্ধ সংস্কৃতি- সবকিছুই পুরাজ্যোতির্বিদ্যা খতিয়ে দেখে।
ভূদৃশ্য প্রত্নতত্ত্ব এবং বোধাত্মক প্রত্নতত্ত্বকে বেশকিছু দিক দিয়ে পূর্ণ করে পুরাজ্যোতির্বিদ্যা। কোন অঞ্চলে পুরাত্ত্বিক নিদর্শনের সাথে আকাশপটের কিছু বিন্যাসের মিল পাওয়া গেছে, অনেক সময় ভূমির নকশার মাধ্যমে প্রাচীন মানুষেরা প্রকৃতির চক্র সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস ফুটিয়ে তুলতো, মায়া সভ্যতার জ্যোতির্বিদ্যা এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপনের সাথে মহাজাগতিক নিয়মের সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে যাকে সম্পর্কিত করা হয়েছে বোধ ও ভূদৃশ্যের সাথে।
সকল যুগের সকল সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে পুরাজ্যোতির্বিদ্যা। আকাশের অর্থ একেক সংস্কৃতির মানুষের কাছে একেক রকম। তথাপি কিছু ধ্রুব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে আকাশ সম্পর্কে কারও ধারণা অনেকটাই জানা সম্ভব। তবে পুরাজ্যোতির্বিদ্যায় বিতর্কের অবকাশ অনেক বেশি। সমাজ, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়। এজন্যই পুরাজ্যোতির্বিদ ক্লাইভ রাগলস এর মতে, পুরাজ্যোতির্বিদ্যায় একদিকে যেমন সূক্ষ্নাতিসূক্ষ্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা আছে অন্যদিকে আবার আছে লাগামহীন অনুমান।