পোলার স্থানাংক ব্যবস্থা

গণিতে পোলার স্থানাংক ব্যবস্থা (ইংরেজি: Polar coordinate System) এক ধরনের দ্বিমাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থা যেখানে সমতলের প্রতিটি বিন্দুর অবস্থান একটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও একটি নির্দিষ্ট অক্ষরেখার সাপেক্ষে নির্নয় করা হয়। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে পোলার স্থানাংক ব্যবস্থার সাপেক্ষ বিন্দু ও নির্দিষ্ট রেখাটিকে সাপেক্ষ রেখা বলে।

পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় একটি বিন্দু। এখানে "O" পোলার স্থানাংক ব্যবস্থার সাপেক্ষ বিন্দু বা মূল বিন্দু এবং "L" স্থানাঙ্কের সাপেক্ষ অক্ষ বা মূল অক্ষ। সবুজ রঙের বিন্দুটি (৩,৬০) পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় প্রকাশিত একটি বিন্দু যেখানে ব্যাসার্ধ ভেক্টর r=৩, এবং ব্যাসার্ধ ভেক্টরের সাথে মূল অক্ষের ধনাত্বক কোণ ৬০ ডিগ্রি। চিত্রে (৪,২১০) পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় প্রকাশিত অপর একটি বিন্দু

মূল বিন্দুকে পোলার স্থানাংক ব্যবস্থায় সাপেক্ষ বিন্দু এবং একটি নির্দিষ্ট অনুভুমিক অক্ষ L কে পোলার স্থানাংক ব্যবস্থার মূল অক্ষ বা সাপেক্ষ অক্ষ হিসাবে ধরা হয়। মূল বিন্দু থেকে স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় প্রকাশিত বিন্দুর দুরত্বকে ব্যাসার্ধ ভেক্টর বা ব্যাসার্ধ বলা হয় যা r দ্বারা প্রকাশ করা হয় (উল্লেখ্য ব্যাসার্ধ ভেক্টর r একটি ধনাত্বক স্কেলার সংখ্যা) এবং r এর সাথে সাপেক্ষ বা মূল অক্ষ L এর উৎপন্ন ধনাত্বক কোণকে ভেক্টরিয়াল কোণ বলে যা θ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি বিন্দুকে পোলার স্থানাংক ব্যবস্থায় (r,θ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।[]

প্রকাশের উপায়

সম্পাদনা
 
বিভিন্ন কোণের মাধ্যমে ষাট মূলক পদ্ধতিতে একটি পোলার স্থানাংক ব্যবস্থা

ব্যাসার্ধ ভেক্টরকে r এবং উৎপন্ন কোণকে θ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। কোন বিন্দুর পোলার স্থানাংক (r, θ) দ্বারা প্রকাশিত হয়।

পোলার স্থানাংক ব্যবস্থায় কোণকে ষাট মূলক এককে ডিগ্রিতে এবং বৃত্তিয় রেডিয়ান এককে রেডিয়ানে প্রকাশ করা হয়। কোণ প্রকাশে ষাট মূলক পদ্ধতি সাধারনত নেভিগেশন, সার্ভে সহ অনেক ফলিত পদ্ধতিতে একক হিসাবে ধরা হয় যেখানে বৃত্তিয় পদ্ধতি গণিত এবং গাণিতিক পদার্থ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়।[]

সাধারণত একটি ধনাত্বক কোণ উৎপন্ন হয় যখন কোণটি স্থানাংকের অক্ষের সাথে ঘড়ির কাটার বিপরীতে নির্নয় করা হয়। গাণিতিক সংস্কৃতিতে পোলার স্থানাংকের মূল অক্ষকে অনুভুমিক ভাবে আঁকা হয় এবং অক্ষ রেখাটি ডান দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রতিটি বিন্দুর সতন্ত্র পোলার স্থানাংক ব্যবস্থা

সম্পাদনা

কোণের প্রতিটি মানের সাথে প্রতিবার ৩৬০ ডিগ্রি বা ২π কোণ যুক্ত করলে যেকোন বিন্দুর দিক অপরিবর্তিত থাকে। আবার ব্যাসার্ধ ভেক্টরের মান ঋনাত্বক হলে তা বিপরীত দিকে দুরত্ব বুঝায়। সে ক্ষেত্রে একই বিন্দুকে অসীম সংখ্যাক মান দ্বারা প্রকাশ করা যায় যেমন: (r, θ ± n×৩৬০°) অথবা (−r, θ ± (২n + ১)১৮০°) যেখানে n যে কোন পূর্ন সংখ্যা।[] এক্ষেত্রে একই পোল বা বিন্দুর জন্য একাধিক স্থানাংকের মান পাওয়া যায়। এই ত্রুটি নিরসনের জন্য ব্যাসার্ধ ভেক্টরের মান সিমাবদ্ধ এবং তা অঋনাত্বক বাস্তব সংখ্যা গুলোর মাঝে আবদ্ধ (r ≥ ০)। এবং কৌনিক ব্যবধানের মান ষাট মূলক পদ্ধতিতে [০, ৩৬০°) এবং বৃত্তিয় পদ্ধতিতে [০, ২π) এর মধ্যে সিমাবদ্ধ রাখা হয়। [] স্থানাংক নির্নয়ের জন্য সতন্ত্র অক্ষ রেখাও প্রয়োজন। সতন্ত্র অক্ষ রেখাটিই মূল অক্ষ বা সাপেক্ষ অক্ষ যেখানে θ = ০। পোল বা বিন্দুর স্থানংক (০,০) হলে এর ব্যাসার্ধ ভেক্টর ও ভেক্টরিয়াল কোণ উভয়ই শূন্য।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Brown, Richard G. (১৯৯৭)। Andrew M. Gleason, সম্পাদক। Advanced Mathematics: Precalculus with Discrete Mathematics and Data Analysis (ইংরেজি ভাষায়)। Evanston, Illinois: McDougal Littell। আইএসবিএন 0-395-77114-5 
  2. Serway, Raymond A.; Jewett, Jr., John W. (২০০৫)। Principles of Physics (ইংরেজি ভাষায়)। Brooks/Cole—Thomson Learning। আইএসবিএন 0-534-49143-X 
  3. "Polar Coordinates and Graphing" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৬-০৪-১৩। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২২ 
  4. Stewart, Ian; David Tall (১৯৮৩)। Complex Analysis (the Hitchhiker's Guide to the Plane) (ইংরেজি ভাষায়)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0-521-28763-4