পেশাদারি কুস্তি

পেশাদার ক্রীড়াবিদদের সাথে মার্শাল আর্ট ইভেন্ট যারা থ্রো, জাম্প, গ্র্যাপলিং এবং স্ট্রাইকিং কৌশ
(পেশাদার কুস্তি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পেশাদারি কুস্তি (ইংরেজি: professional wrestling) এক প্রকারের ক্রীড়া পালা যেখানে পরিকল্পিত লড়াই অভিনীত হয়। বেশিরভাগ খেলাই ব্যবস্থাপক দ্বারা পূর্বপরিচালিত এবং প্রতিটি দৃশ্য ও ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত থাকে।[] উনিশ শতাব্দীর উৎসব সমারহে পার্শ্ব প্রদর্শনী হিসেবে এর উত্পত্তি হয়।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কিছু বিখ্যাত পেশাদার কুস্তি কোম্পানি হল- ডাব্লিউডাব্লিউই, অল এলিট রেসলিং (এইডাব্লিউ),নিউ জাপান প্রো রেসলিং (এনজেপিডাব্লিউ),রিং অফ অনার(আরওএইচ), ইমপ্যাক্ট রেসলিং, এসিস্টেনশিয়া এসেসরিয়া ওয়াই এডমিনিস্ট্রাশিয়ান(এএএ)।

পেশাদারী কুস্তি/Professional Wrestling
পেশাদারি কুস্তির একটি চিত্র
পূর্বসূরী আর্টসকার্নিভাল, ক্যাচ কুস্তি
উদ্ভূত সংস্কৃতি যুক্তরাজ্য
 আয়ারল্যান্ড
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
 কানাডা
 মেক্সিকো
 জাপান
 ব্রাজিল
 জার্মানি
উদ্ভূত যুগ১৯ শতক


পেশাদার কুস্তিতে প্রধানত শক্তিমত্তা ও শরীরী দক্ষতা প্রদর্শিত হয়। লড়াইয়ে অনেক মুভ যেভাবে শক্তিশালী রূপে দেখানো হয় বাস্তবে সেরকম হয় না এবং কুস্তিগির তথা কুস্তিগিররা ব্যাথা কম পাওয়ার জন্য কিছু কৌশল ও ব্যবহার করে। উদাহরণ, কোনো মুভ প্রয়োগ করার আগে প্রতিপক্ষকে ইশারা করে ইঙ্গিত করা যে, এখন সে কোন মুভ ব্যবহার করবে বা আস্তে করে ঐ মুভের জন্য প্রস্তুত হতে বলা।সমগ্র ম্যাচে ই কুস্তিগিররা নিজেদের মধ্যে ইশারা-ইঙ্গিতে এরকম কথোপকথন চালিয়ে যায়। অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে প্রতিটি মুভ প্রয়োগ,গতির সৃষ্টি করে। তবুও অনেক সময় বচ হওয়ার কারণে বা মুভের গতি সঠিক না হওয়ায় কুস্তিগিররা গুরুতর আঘাত, ব্যাথা পেয়ে থাকে এবং অনেকক্ষেত্রে আহত ও হয়।

ঐতিহ্যগত কুস্তি আর পেশাদারি কুস্তির নিয়মে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত পেশাদারি কুস্তির কোনো প্রধান পরিচালক কর্তৃপক্ষ নেই। যদিও প্রত্যেক সংগঠনকারী সংস্থারই নিজস্ব কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে তারপরও কিছু সাধারণ নিয়ম সকলেই মেনে থাকে।

সাধারণ কাঠামো

সম্পাদনা

দুই পক্ষের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। একজন কুস্তিগির, একটি দল অথবা কয়েকজন কুস্তিগির মিলে একটি পক্ষ তৈরি হয়। সকল প্রকারের খেলাতেই শুধুমাত্র একজন অথবা এক পক্ষ বিজয়ী হয়।খেলায় একজন রেফারী থাকে যে খেলা পরিচালনা করে।

জয়ের জন্য প্রতিপক্ষের পতন ঘটাতে হয়। সাধারণত যেসব অবস্থায় পতন হয় সেগুলো হল:

  • প্রতিপক্ষের কাঁধ তিন সেকেন্ড অবধি মেঝেতে ছুয়ে থাকলে এবং রেফারী তা গণনা করলে
  • প্রতিপক্ষ পরাস্ত হলে
  • প্রতিপক্ষ পরাজয় স্বীকার করে নিলে
  • কোন কারণে প্রতিপক্ষ খেলা থেকে বহিস্কৃত হলে
  • অথবা প্রতিপক্ষ কুস্তি-মঞ্চের বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে (কাউন্টআউট)

স্টোরিলাইন

সম্পাদনা

স্টোরিলাইন (ইংরেজি: Storyline) হল একজন কুস্তিগিরের সাথে আরেকজন কুস্তিগির কি ধরনের ফিউড করে তার বৃত্তান্ত। এক্ষেত্রে স্টোরিলাইন আগে থেকেই সাজানো থাকে,অনেকটা নাটক-সিনেমার মতো।

 
২০০৯ সালের ডাব্লিউডাব্লিউই মানি ইন দ্যা ব্যাংক ল্যাডার ম্যাচের একটি দৃশ্য

এইসব কুস্তিকে আধুনিক যুগের পেশাদারি কুস্তি হিসেবেও অবহিত করা হয়ে থাকে।

দ্বন্দ্ব

সম্পাদনা

নির্দিষ্ট দুই বা ততোধিক কুস্তিগিরের মধ্যে শত্রুতা, কাহিনী গড়ে ওঠাকে দ্বন্দ্ব বা ফিউড বলে। দ্বন্দ্ব সাধারণত তৈরি হয় ফেস (হিরো চরিত্র) এবং হিল (খারাপ চরিত্র, ভিলেন) চরিত্রের মধ্যে।

গিমিক(ইংরেজি: Gimmick) একজন পেশাদার কুস্তিগির তথা কুস্তিগিরের কোনো বিশেষ চরিত্র যেই চরিত্রে ঐ কুস্তিগিরকে কুস্তি তথা কুস্তি করতে হয়।এক্ষেত্রে তার এ চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত আলাদা সাজ-সজ্জ্বা, অঙ্গভঙ্গি এবং মাঝে মাঝে ভিন্ন আচরণ ও যুক্ত করা হয়।

প্রমো কাটিং

সম্পাদনা

কুস্তিয়ে (ইংরেজি: Promo) হচ্ছে “Promotional Interview" বা "প্রচারমূলক সাক্ষাতকার" এর সংক্ষিপ্ত রূপ।এ প্রমো হতে পারে বিভিন্ন কথোপকথন বা নাটকাদি(অভিনয়ে ব্যবহৃত বাক্যাবলি)র সমষ্টি।এধরনের প্রমো ব্যবহার করা হয় স্টোরিলাইনকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয়ভাবে চালিয়ে নেয়ার সুবিধার্থে। আর "প্রমো কাটিং" বলতে বুঝায় কোনো কুস্তিগির কর্তৃক অন্য কুস্তিগিরকে বা কুস্তি সম্পর্কিত কোনো বিষয়াবলি নিয়ে স্টোরিলাইনের সুবিধার্থে বলা বিশেষ বাক্যবলিকে,অনেকটা অভিনয়ে ব্যবহৃত ডায়ালগের মতো।

তাছাড়া কুস্তিয়ে এই প্রমো কাটিংয়ের গুরুত্ব ও অপরিসীম। একজন কুস্তিগিরের কুস্তি সংক্রান্ত গুণাবলীর মধ্যে এটাকে ও একটা গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইন-রিং(In-Ring) স্কিলে ঘাটতি থাকা সত্ত্বে ও প্রমো-কাটিং বা মাইক স্কিলে(Mic Skill)পারদর্শীতার কারণে অনেক কুস্তিগির কুস্তি ভুবনে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পেরেছেন।উপরন্তু কোনো কুস্তিগির যদি 'বেবি-ফেইস'(Baby-Face) হিসেবে তার কুস্তি ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই প্রমো-কাটিং বা মাইক স্কিলে পারদর্শী হতে হবে।দর্শকদের আকর্ষণ করা,তাদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি করা একজন 'বেবি-ফেইস' কুস্তিগিরের জন্য অবশ্য কর্তব্য বিষয়। যদি ও অনেক হিল(Heel) এবং এন্টি-হিরো(Anti-Hero) কুস্তিগিরকে ও প্রমো কাটিংয়ে তাদের পারদর্শীতা দেখাতে দেখা যায়,এটা তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা যা তাদেরকে তাদের নিজেদের খলচরিত্র এবং প্রতিভা বহিঃপ্রকাশের সীমাবদ্ধতাকে ও পিছনে ফেলে কুস্তি অঙ্গনের দর্শকদের হৃদয়ে অমর করে রেখেছে। ইতিহাসের কিছু সফল প্রমো-কাটার বা মাইক স্কিলে পারদর্শী কুস্তিগির হলেন-হাল্ক হোগান , কেভিন ন্যাশ,জিম কর্নেট,শন মাইকেলস,মিক ফলে,স্টিভ অস্টিন,রডি পাইপার, দ্য রক, জন সিনা প্রমুখ।

স্ক্রিপট রাইটার

সম্পাদনা

কুস্তিয়ের জন্য যারা স্ক্রিপ্ট লিখেন তাদেরকে স্ক্রিপ্ট রাইটার(ইংরেজি: Script-Writer) বলে। কুস্তিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের লিখিত স্ক্রিপ্ট দ্বারাই একটি কুস্তি অনুষ্ঠানের স্টোরিলাইন,ম্যাচ, প্রমো সহ যাবতীয় প্রায় সব কিছু সাজানো হয়। তাই এক্ষেত্রে তাদের ভুল বা খাম-খেয়ালীপনার জন্য একজন কুস্তিগিরের ক্যারিয়ার (career) ধ্বংস হয়ে থাকে, একটি কুস্তি কোম্পানী পর্যন্ত দেউলিয়া হতে পারে।

ফেস/বেবিফেস কুস্তিগির

সম্পাদনা

যারা কুস্তিয়ে ভালো চরিত্রে অভিনয় করে তাদেরকে ফেস/বেবিফেস((ইংরেজি: Face/Babyface))বলা হয়। তারা সাধারণত ধোঁকা দিয়ে, অসদুপায় অবলম্বন করে ম্যাচ জিতবে না, অন্যায়ভাবে কাউকে মারবে না। সততার সাথে প্রত্যেক ম্যাচ খেলবে। দর্শকদের তোষামদ করবে।লেজেন্ড(Legend)কুস্তিগিরদের শ্রদ্ধা করবে।নিজে ম্যাচ হারার পরও প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাবে এবং অন্য কুস্তিগিরদের বিপদে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। অর্থাৎ অনেকটা সিনেমা,নাটকের হিরোর মত। আর তাদের এ ধরনের বৈশিষ্ট্য স্টোরিলাইন,গিমিকের কারণে হয়,বাস্তবে তারা এরকম নাও হতে পারে। যেমন- হাল্ক হোগান, দ্য রক, জন সিনা রা হলো অন্যতম বেবিফেস কুস্তিগির।

হিল কুস্তিগির

সম্পাদনা

কুস্তিয়ে যেসব কুস্তিগিররা খারাপ স্বভাবের চরিত্রে অভিনয় করে তাদেরকে হিল((ইংরেজি: Heel)) কুস্তিগির বলা হয়। এক্ষেত্রে অনেক হিল কুস্তিগির হয় ভয়ানক মারকুটে,কাউকে দয়া দেখায় না,সামঞ্জস্যপূর্ণ (fair) খেলে না। আবার অনেক হিল কুস্তিগির হয় ধোঁকাবাজ,চুর চরিত্রের। কিন্তু এসব ই স্টোরিলাইন,গিমিকের কারণে হয়,এতে তাদেরকে যেরূপ খারাপ আচরণ,বিদ্রুপাত্মক কথাবার্তা বলতে বলা হয় তারা ঠিক সেরূপ ই বলে,করে। অর্থাৎ আচরণের ক্ষেত্রে অনেকটা নাটক, সিনেমার ভিলেনের মত অভিনয়।যদিও বাস্তব জীবনে তারা স্বভাবগত ও আচরণগত দিক দিয়ে এরকম নাও হতে পারে। যেমন- ট্রিপল এইচ, রেন্ডি অরটন রা হলো অন্যতম হিল কুস্তিগির।

এন্টি-হিরো কুস্তিগির

সম্পাদনা

এধরনের কুস্তিগিররা ফেস [Face] এবং হিল [Heel] এই দু'টো বৈশিষ্ট্যের কুস্তিগিরদের সংমিশ্রণ।কুস্তি জগতে এই চরিত্রের কুস্তিগিরদের সংখ্যা কম। দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই স্ক্রিপ্ট রাইটাররা এধরনের চরিত্রের আর্বিভাব ঘটিয়েছে।অনেক কুস্তিভক্ত আছে যারা চায় না তাদের প্রিয় ও পছন্দের কুস্তিগির অহেতুক মার খাক,অপমানিত হয়ও 'Face' দের মতো ভালো আচরণ করুক বা চুপ থাকুক। তারা চায় তাদের প্রিয় কুস্তিগির ও যেনো প্রতিপক্ষকে "ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়" এই প্রবাদ বাক্য হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেয়। অর্থাৎ যেসব কুস্তিগিররা এরকম বৈশিষ্ট্যের, তারা ই হল এন্টি-হিরো। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেস কুস্তিগির হিসেবেই থাকে তবে হিল কুস্তিগিরের মতো মুভ ব্যবহার করে,তেমন মহানুভবতা দেখায় না। অপ্রত্যাশিত পরাজয় হলে বা রাগ উঠলে প্রতিপক্ষকে মারে।

কুস্তি রিং

সম্পাদনা

কুস্তি-রিং গুলো কাঠের তৈরী হয়,যার উপরে থাকে কয়েক স্তরের প্রসারণ-সংকোচণ ক্ষমতাসম্পন্ন, হালকা, শক্ত ফোম। রিংয়ের নিচে অনেকগুলো স্প্রিং বসানো থাকে,যা কুস্তিগিরদের কিছুটা লাফানোর ক্ষমতা দান করে। রিং গুলো চারকোণা হয়ে থাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। অনেক কুস্তি প্রমোশন তথা কোম্পানী আবার মাঝে মাঝে ছয়-কোণা বিশিষ্ট কুস্তি রিং ও ব্যবহার করে। যেমনঃ টিএনএ , এএএ। রশি গুলো মূলত ভিতরের দিকে রাবার কিংবা প্লাস্টিকের তার দিয়ে তৈরী আর বাইরের দিকে কয়েক স্তরের ফোম দিয়ে আবৃত।বিম গুলো স্টিলের,তবে পাতলা। টার্নবাকলও হালকা বাকানো পিতল কিংবা লোহার তৈরী। কুস্তিগিররা যাতে আঘাত না পায় সে জন্য টার্নবাকলে ফোম লাগানো থাকে।

কুস্তি রিং এর পাশের খালি জায়গা শক্ত পুরু ফোমের ম্যাট দিয়ে তৈরী। ম্যাটগুলা ৩-৪ ইঞ্চি পুরু হয় যা ইটের মেঝে থেকে কুস্তিগিরদের নিরাপদ রাখে। ব্যারিকেডেও একই ম্যাট ব্যবহার করা হয়। রিংয়ের নিচে গোপনীয়ভাবে স্পিকার লাগানো থাকে,যা সামান্য শব্দকে ও বর্ধিত করে উচ্চ আওয়াজ দান করে।

কুস্তি অস্ত্রপাতি বেশিরভাগ ই আসল। স্টেপ্স গুলো স্টীলের,তবে হালকাভাবে তৈরী। চেয়ারগুলো ও হালকা ধাতুর এবং অল্প আঘাতে শব্দ বেশি হবে এমনভাবে তৈরী,এরজন্য মাঝে মাঝে আবার চেয়ারে গোপন ছোট্ট মাইকও লাগানো থাকে।কিন্তু তবুও চেয়ারের আঘাতে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে কুস্তিগিররা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যথা কম পাওয়ার জন্য। যথাঃশট নেয়ার আগে পিঠ টান করে থাকা, প্রচুর কায়িক ব্যায়াম করা,মাথায় চেয়ারের আঘাতের আগে হাত দিয়ে ঢাকা। তবে অনেক কুস্তিগির সরাসরি মাথায় চেয়ার শটের আঘাত ও নেয়। যেমনঃ ক্রিস বেনোয়া। এজন্য তাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক ড্রাগ ব্যবহা্র করতে করতে হত। কিন্তু পেশাদার কুস্তির বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় কোম্পানী ডাব্লিউডাব্লিউই তে এখন মাথায় চেয়ার শট নিষিদ্ধ এবং জরিমানা যোগ্য অপরাধ।

কুস্তিয়ে ব্যবহৃত মইগুলো স্টিলের তৈরী তবে হালকা, ভিতরের দিকে কিছুটা ফাঁপা থাকে। টেবিলগুলোও অল্প শক্তি প্রয়োগে মাঝখানে আঘাত করলে ভেঙ্গে যাবে এমন নরম কাঠ দিয়ে তৈরী। কেন্ডো স্টিক (একধরনের বাঁশের লাঠি) গুলো ও ফাঁপা কাঠ দিয়ে তৈরী। তবে এতে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয়।

কুস্তি অনুযায়ী পেশাদার কুস্তিগিরদের শ্রেণিবিভাগ

সম্পাদনা
Technical: এ শ্রেণীর কুস্তিগির হল তারা যারা কুস্তিয়ে শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়,অন্য প্লেয়ারের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে এবং ক্রমাগত করতেই থাকে যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ তার আয়ত্ত্বে চলে আসে। এক্ষেত্রে তারা 'Reverse-grapple Moves' গুলোতে বেশি পারদর্শী হয়।শক্তি কম ব্যয় করে প্রতিপক্ষের শক্তি দিয়ে উল্টো প্রতিপক্ষকে ই ঘায়েল করা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।তাদের শক্তিশালী এমেচার ব্যাকগ্রাউন্ড(Amateur Background) আছে। বিশেষ করে তারা সাবমিশন কৌশল্গুলোতে(Submission Maneuver)বেশি দক্ষ হয়ে থাকে।
*Brawler: এ শ্রেণীর কুস্তিগির হলো তারা যারা সোজা-সুজি স্ট্রাইকিং,পাঞ্চিং,এটাকিংয়ে চলে যায়। অনেকটা স্ট্রিট ফাইটের মতো। এবং মুভ ব্যবহার করে যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ পুরোপরিভাবে ঘায়েল হয়ে যায়।

*Powerhouse: এরা মূলত ফিজিক্যাল কুস্তিগির।কার্যকরী তথা স্লাম,পাওয়াবোম্ব জাতীয় মুভস বেশি ব্যবহার করে। দৌড়ক্ষমতা(agility) এবং স্কিল কম থাকলেও শারীরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ায় তারা শক্ত প্রতিপক্ষ অন্য যেকোনো শ্রেণীর কুস্তিগিরদের জন্য।

*Hardcore: এ শ্রেণীর কুস্তিগির বলা হয় তাদের যারা কুস্তিয়ে অহরহ অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে, এদের সহ্য শক্তি প্রবল। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় মারাত্মক অস্ত্রসমূহের বারি খেয়ে,জোরে আঘাত পেয়ে ও সহ্য করতে পারে।

*High-Flyer: এ শ্রেণীর কুস্তিগিরদের নামের সাথে তাদের বৈশিষ্ট্যের প্রায় পুরোটাই মিল। এধরনের কুস্তিগিরদের মূল বৈশিষ্ট্য হল তারা এরিয়াল তথা হাই ফ্লায়িং মুভস, হাই-রিক্স ম্যানুভার বেশি ব্যবহার করে। এরা দৌড়ক্ষমতা ও স্কিল সমৃদ্ধ হয়ে থাকে ব্যাপকভাবে।

*Showman: এরা মূলত এন্টারটেইনিং কুস্তিগির।তারা কোনো মুভ ব্যবহার করে শো-অফ তথা দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টির জন্য।
*Puroresu-Style Wrestler: এ বিভাগের কুস্তি স্টাইল মার্শাল আর্টস,সত্যিকার পাঞ্চিং,স্ট্রাইকিং,কিকস,টেইকডাউন,হার্ডকোর মুভস এবং সাবমিশন ম্যানুভারের সমন্বয়ে গঠিত।যারা এরকম বৈশিষ্ট্যের কুস্তিয়ের প্রতিনিধিত্ব করে তাদেরকে বলা হয় Puroresu Wrestler. এধরনের কুস্তিয়ের গোড়াপত্তন হয় জাপানে।এ স্টাইলের কুস্তিকে বিখ্যাত করেন জাপানী লেজেন্ড কুস্তিগির Rikidozan.
 একই কুস্তিগির আবার একসাথে একাধিক বৈশিষ্ট্য ও ধারণ করতে পারে অর্থাৎ মিক্সড ক্যাটাগরির ও হতে পারে।

কুস্তিয়ে রেফারী ও ধারাভাষ্যকার

সম্পাদনা

কুস্তি-য়ে ম্যাচ চলাকালে প্রতিযোগী কুস্তিগিরের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কুস্তিয়ের রেফারীরা। প্রধানত পর্দায় তাদেরকে নিয়মানুযায়ী ও সততার ম্যাচ পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে একটি ম্যাচে তাদের কাজ ও ভূমিকা আরো বেশি ব্যাপক এবং অপরিহার্য।ম্যাচ চলাকালীন কুস্তিগিরদের গতি-বিধি,মুভ প্রয়োগ,পিন,ট্যাপ-আউট প্রভৃতি বলতে গেলে প্রায় সবকিছু ই তাদের প্ররোচনায় হয়ে থাকে। কিন্তু এসব দর্শকদের চোখ এড়িয়ে যায় স্বাভাবিক ক্ষেত্রে। রেফারীরা কোনো কুস্তিগিরকে ফেইক-ব্ল্যাড ক্যাপসুল সরবরাহ করে নকল রক্ত দেখাতে কিংবা ব্লেড জাতীয় জিনিস দিয়ে শরীরের কোনো অংশ কেঁটে বা ছিঁড়ে আসল রক্ত বের করতে,কোন সময় কোনো প্লেয়ার কোন মুভ ব্যবহার করবে,কে কাকে পিন করবে তা ও চুপিসারে তারা বলে দেয় কুস্তিগিরদের,নিজেদের দুর্বলদের মতো উপস্থাপন করে,বয়রা,কালার মতো ও অভিনয় করে মূলত কুস্তি ম্যাচকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করার সুবিধার্থে।ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যকারদের বেল বাজাতে বলে এবং পর্দার সামনে বিজয়ী(যদিও তা আগে থেকেই নির্ধারিত করা থাকে) ঘোষণা করে। ম্যাচ শেষ করার ক্ষেত্রে ধারাভাষ্যকারদের ও কিছু ভূমিকা রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে তারাও কুস্তিগিরদের বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করে,ম্যাচ ও দর্শকদের আগ্রহ বুঝে Booker এর নির্দেশে কত সময় ধরে কোনো ম্যাচ চলবে,কখন পিন করতে হবে তা বিভিন্ন ইশারা-ইঙ্গিতে রেফারীদের জানিয়ে দেয়।

৫তারকা [5★] কুস্তি ম্যাচ

সম্পাদনা

পেশাদার তথা প্রো-কুস্তি এর কোনো ম্যাচের সর্বোচ্চ রেটিংকে ৫তারকা দ্বারা খচিত করা হয়ে থাকে। এ ৫তারকা প্রদান করেন আমেরিকার বিখ্যাত জার্নালিস্ট ও প্রো-কুস্তি ইতিহাসবেত্তা ডেইভ মেল্টজার (Dave Meltzer)। ম্যাচ রেটিংয়ের ক্ষেত্রে মূলত পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় আনা হয়।সেগুলো হল যথাক্রমে--

  • স্টোরিটেলিং
  • ইন-রিং এক্সিকিউটিং
  • ম্যাচ সাইকোলজি
  • ইনোভেশন
  • টাইমিং

প্রো-কুস্তিয়ের ইতিহাসে এ পর্যন্ত অফিসিয়াল ৫তারকা রেটিংপ্রাপ্ত ম্যাচের সংখ্যা ৭০ টি।

WWE তে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫তারকা ম্যাচ হয়েছে মোট ৫ টি।

সবচেয়ে বেশি ৫তারকা ম্যাচ খেলেছেন জাপানী প্রো-কুস্তি লেজেন্ড মিতসুহারো মিশায়া (Mitsuharu Misawa)। তার ৫তারকা রেটিং প্রাপ্ত ম্যাচের সংখ্যা ২৬ টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫তারকা রেটিং প্রাপ্ত ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আরেক জাপানী লেজেন্ড কেনতা কোবাশি (Kenta Kobashi)। তার ৫তারকা রেটিং প্রাপ্ত ম্যাচের সংখ্যা ২৩ টি। এর মধ্যে Misawa র ১৯৯৫ সালে তথা কেবল একবছরে ই ৫তারকা ম্যাচ খেলার রেকর্ড WWE র ইতিহাসের ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলা মোট ৫তারকা ম্যাচের সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫ টি। আর Kenta র একাই ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ যথাক্রমে দু-দু'টি বছর ৫ টি করে ৫তারকা ম্যাচ খেলার বিরল রেকর্ড রয়েছে।২০১৭ সালে জাপানী কুস্তি প্রমো NJPW এর সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম র‍্যাসেলকিংডম(WrestleKingdom) থেকে প্রো-কুস্তিয়ের ইতিহাসের প্রথম অফিসিয়াল ৬তারকা [6★] ম্যাচ উপহার দেয়া হয়। IWGP চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য কেনি ওমেগা(Kenny Omega) এবং কাজুচিকা ওকাডা(Kazuchika Okada) র মধ্যকার ম্যাচটিকে ডেইভ মেল্টজার ৬তারকা রেটিং দেন। পরবর্তীতে তিনি ৬তারকা+ রেটিং ও দিয়েছেন কিছু ম্যাচকে। যদিও ৫তারকা কেই প্রামাণ্য ধরা হয়।

বুকার(ইংরেজি: Booker) বলতে কুস্তিয়ে ঐ ব্যক্তিকে বুঝান হয় যে কোনো কুস্তি প্রমোশনের ম্যাচগুলো,ম্যাচের বিন্যাশ,ম্যাচে কি থাকবে,ম্যাচ কিরকম হবে,কে জিতবে,কে হারবে প্রভৃতি নির্ধারণ তথা এগুলার একটি ধারবাহিক 'প্লটলাইন' তৈরী করে।অর্থাৎ বুকার হলো কোনো প্রমোশনের দালাল। এমনকি কোনো প্রমোশনের বুকার তাতে ব্যাকস্টেজ,ইন-রিয়ে কি থাকবে,কুস্তিগিরদের ইন-রিং ও ব্যাকস্টেজ প্রমোগুলো কি হবে তাও নির্ধারণ করে দেয়।অর্থাৎ কোনো বুকার হলো ঐ প্রমোশনের 'মূল' নীতিনির্ধারক। কোন ক্ষেত্রে কোনো প্রমোশনের মালিক ই সেটার বুকারের দায়িত্ব পালন করে আবার কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিক বেতন দিয়ে অন্য কাউকে নিযুক্ত করে এই "Booker" এর কাজে।

এই বুকাররা ই কুস্তি ম্যাচকে মজাদার ও আকর্ষণীয় করার সুবিধার্থে ফেইক ক্রাউডের(নিজেদের পাতানো লোক) ব্যবস্থা করে,ক্রাউডকে নিজেদের বানানো বিভিন্ন স্টিকার,প্লে-কার্ড সরবরাহ করে। যারা হিল কুস্তিগিরদের বু দেবে,তাদের প্রতি বিদ্রুপাত্মক প্লে-কার্ড প্রদর্শন করবে কিংবা বুকারের নির্দেশনা মোতাবেক সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরনের পজিটিভ(Posotive),নেগেটিভ(Negative) চ্যান্ট করবে।তবে বর্তমানে এ পথার চলন অপ্রতুল।

Booking(বুকিং) বলতে কোনো স্টোরিলাইনের ম্যাচগুলোকে সাজানো,কীভাবে সাজালে তার ফলাফল কি আসবে,ঐ স্টোরিলাইনের কোন সময় কি ঘটবে,ম্যাচটি কিরূপ হবে, ম্যাচে কোন ধরনের কৌশল,কি ধরনের মুভস ব্যবহার করা হবে প্রভৃতি নির্ধারণ করাকে বুঝায়।অর্থাৎ ম্যাচ ও স্টোরিলাইনের ইতিবৃত্ত নির্ধারিত করাকে সংক্ষেপে Booking (বুকিং) বলে। কোনো কুস্তি প্রমোশনে এই বুকিং কাজের জন্য যে বিশেষ ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয় তাকে "Booker" বলে বা এই কাজের জন্য একটি বিশেষ গ্রুপ থাকে,যাদেরকে "ক্রিয়েটিভ কর্মকর্তা" বলা হয়।অনেক ক্ষেত্রে কুস্তিগিররা ও এই বুকিং কাজে অংশগ্রহণ করে তাদের "ক্রিয়েটিভ কর্মকর্তা" দের ক্ষমতা বলে।কোনো কুস্তিগিরের কুস্তি ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য,দর্শকদের মাঝে তাকে জনপ্রিয় করে তুলার জন্য এই "বুকিং" অপরিহার্য।কারণ এই বুকিং ই নির্ধারণ করবে তার পরবর্তীকালীন কুস্তি ভবিষ্যত।উপরন্তু যদি কোনো কুস্তিগির ক্রমাগত বাজেভাবে বুকড(Booked) হতে থাকে,তাহলে তার 'জবার'(Jobber) কুস্তিগিরে পরিণত হয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

বচ (ইংরেজি: Botch) এর শাব্দিক বাংলা অর্থ হল 'কলঙ্কচিহ্ন'। কুস্তি এর পরিভাষায় বচ অর্থ হচ্ছে 'ভুল করা'। কুস্তিগিরদের শারীরিক অদক্ষতার জন্য বা ভুলবশত কোন মুভ প্রয়োগ করতে গিয়ে সেটা ঠিকমত করতে না পারাই হচ্ছে বচ করা। এই বচে মারাত্মক ইঞ্জুরি হয়া সহ কুস্তিগিরদের ক্যারিয়ার ও শেষ হতে পারে।এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়ার ঝুঁকি থাকে। উদাহরণ হিসেবে কুস্তিগির ওয়েন হার্ট এর কথা বলা যায়। এই বচের কারণে ই কুস্তি রিংয়ে তার মৃত্যু ঘটে। কুস্তিগির স্টিভ অস্টিন কে বাধ্য হয়ে কুস্তি থেকে অবসর নিতে হয়।

বচ দুই প্রকার।যথা: ইচ্ছাকৃত (পূর্বপরিকল্পিত) এবং অনিচ্ছাকৃত (অপরিকল্পিত)। তবে বেশির ভাগ বচ ই প্রধানত অনিচ্ছাকৃত ভুল। যদিও বচ পূর্বপরিকল্পিত ও হয় ক্ষেত্রবিশেষে। আর এই ইচ্ছাকৃত বচ অনেকটা প্রতিপক্ষের কাছে নিজেকে মার খাওয়ার জন্য সপে দেয়া,প্রতিপক্ষকে জেতানোর জন্য কোন মুভ প্রয়োগ করতে গিয়ে সেটায় ইচ্ছা করে ভুল করে ফেলা ইত্যাদি। এরকম করা হয় কুস্তি ম্যাচকে আরো জমজমাট করতে, দর্শকদের সহানুভূতি পেতে। তবে এ ধরনের বচে সাধারণত ইঞ্জুরি হয় না।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা