পুনর্মিলন (নাট্যগ্রন্থ)
পুনর্মিলন বুদ্ধদেব বসু রচিত মে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত একটি নাট্যগ্রন্থ। এটি রচনা করা হয়েছিলো ১৯৬৯ সালে। পুনর্মিলন-এর প্রথম লেখন দেশ পত্রিকায় ১৯৬৯ পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর পরিশোধন এবং নতুন অংশ যোগের মাধ্যমে কলকাতা বইমেলায় দে'জ পাবলিশিং কর্তৃক ১৯৯১ সালে এটি পুনঃমুদ্রিত হয়।[১][২]
লেখক | বুদ্ধদেব বসু |
---|---|
প্রচ্ছদ শিল্পী | পূর্ণেন্দু পত্রী (প্রথম দে'জ সংস্করণ) |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | নাটক |
প্রকাশিত |
|
প্রকাশক | সুভাসচন্দ্র দে |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ (হার্ড কভার) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১৩৯ (প্রথম দে'জ সংস্করণ) |
এই নাটকে কোনো অঙ্কবিভাগ করা হয়নি। নাটকটি শুরু হয় কোনো এক শীতরাতের পুরোনো কোনো স্টিমার ঘাটের যাত্রীরুমে স্টিমারের অপেক্ষায় থাকা চারজন যাত্রীর বেঞ্চে শুয়ে বসে থাকার বর্ণনার মধ্য দিয়ে।[১][৩]
এই নাটকে বুদ্ধদেব বসু জীবনের অর্থহীনতা, অসঙ্গতিসমূহ, শূন্যতা, আদর্শবাদ এবং অবক্ষয়কে স্বচ্ছ ভাষায়-ভঙ্গিতে, পারম্পর্য রক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এই নাটকে বিশ্বভাবনার রূপ দেখতে পাওয়া যায়, যা অনেকটা জাঁ জিরাদু, আন্যুই, সালক্রু, জাঁ পল সার্ত্রে বা আলব্যের কাম্যুর মতোন নাট্যকারদের সাথে সম্পর্কিত বলা যায়।[১]
চরিত্র
সম্পাদনানাটকটিতে মোট ছয়টি চরিত্র রয়েছে:[১][৪]
- নীলকণ্ঠ
- জয়া
- শিবু (শিবেন্দু)
- মদন পাল
- অরুণা
- বৃদ্ধ চা-ওলা
কাহিনীসংক্ষেপ
সম্পাদনানীলকণ্ঠদের বাড়িতে শৈশব থেকে আশ্রিতা ছিলো জয়া। সেখানে সে রাঁধুনি বামুন দিদির মেয়ে হিসেবে থাকতো। বামুন দিদি মারা যাবার পর জয়াকে নীলকণ্ঠদের পরিবারের মেয়ের মতোই লেখাপড়া শেখানো হয়। এভাবে নীলকণ্ঠ এবং জয়ার সম্পর্ক ঘন হতে থাকে, বাঁক নেয় প্রেমের সম্পর্কে। সময়ের সাথে এই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্টরূপ নেয়। সামাজিক বৈষম্যের কথা বিবেচনা করে সন্তানসম্ভবা জয়া নীলকণ্ঠদের পরিবার থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় তার মায়ের বৃদ্ধ বাবার নিকট। সেখানে জয়ার এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়ায় সে জীবনধারণের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। চকরির জন্যে যায় অন্য এক শহরে। সেখানে অফিসের বড়কর্তা হলেন মদন পাল। জয়ার ছেলের নাম শিবেন্দু। এদিকে জয়াকে সে মা হিসেবে নয়; জানে মাসি হিসেবে; অন্যদিকে বাবার পরিচয় সে জানে না। এভাবেই জয়া শিবেন্দুর নিকট সম্পূর্ণ ঘটনা গোপন রাখে। এরপর ঘটনাক্রম শিবেন্দু অসুস্থ হওয়ায় তার রোগ সারাতে টাকার প্রয়োজনে ভিন্ন এক সম্পর্কে মদন পালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে জয়া। বিনিময়ে মদন পাল শিবেন্দুর চিকিৎসা এবং লেখাপড়ার খরচ বহন করেন। শিবেন্দু বড় হবার পর মদন পালের বাসায় তার যাতায়াত শুরু হয়। সেখানে দেখা হয় দাম্পত্যজীবনে অবহেলিত মদন পালের স্ত্রী অরুণার সাথে। অরুনাকে কাকি বলে ডাকে শিবেন্দু। বয়সের অসমতা থাকা সত্বেও শিবেন্দু ও অরুণার মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে মদন পাল বিষয়টা জানতে পেরে কৌশলে হত্যা করে অরুণাকে। এবং শিবেন্দুকে প্ররোচনা দেয় নেশার দিকে। অপরদিকে এক ট্রেনভ্রমণে দেখা হয়ে যায় নীলকণ্ঠ ও জয়ার। একই ট্রেনে ছিলো মদন পাল ও শিবেন্দু। একসময় সেখানেই শিবেন্দু জানতে পারে নীলকণ্ঠ তার বাবা। এরপরই ট্রেন থেকে পড়ে নীলকণ্ঠ মারা যায়। নীলকণ্ঠের মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না জয়া ও শিবেন্দু। বিষয়টা ভালো চোখে দেখে না মদন পাল। একসময় শিবেন্দু চলে যায় যুদ্ধে। সন্তানের প্রতীক্ষায় থাকা জয়া একসময জানতে পারে যুদ্ধে মারা গেছে শিবেন্দু। এই শোকে এক শিশি পিল খেয়ে আত্মহত্যা করে জয়া। অপরদিকে মদন পালের মৃত্যু হয় নিজ-গাড়ি চালানোর সময় সড়ক দূর্ঘটনায়।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ ফেরদৌস মাহমুদ (নভেম্বর ০৮, ২০১৩)। "বুদ্ধদেব বসুর 'পুনর্মিলন' নাটকে সার্ত্রের ছায়া"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ০৩, ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "পুনর্মিলন"। রকমারি। ১৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ০৩, ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ বুদ্ধদেব বসু (১৯৯১)। পুনর্মিলন। কলকাতা: দে'জ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৫।
- ↑ বুদ্ধদেব বসু (১৯৯১)। পুনর্মিলন। কলকাতা: দে'জ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৭।